রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প ২

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ২

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ২: গত পর্বে আমরা দেখছি মাহি ও তার ভাইয়ের বন্ধুর পরিচয়পর্ব এবং কথোপকথন। আজ পর্ব ২ তে দেখি কি হয় তাদের সম্পর্কের?

একনজরে মাহির পরিচয়

কলেজে যাবার জন্য মাহি রেডি হচ্ছে। আজ কলেজে ‘প্যারেন্টস মিটিং’ আছে। তাই মাহির মা বাবাকে যেতে হবে কলেজে। কিন্তু বাবার সময় নেই তাই মাহির মা একাই গেলো মাহির সাথে।

ও পরিচয়টা মনে হয় দেয়া হয়নি এখনো আমার, আমি মাহি। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পরছি, খুব ভালো ছাত্রী না হলেও মোটামোটি আছি। আর এতে আমি সন্তুষ্ট, কারণ সবাইকে যে গোল্ডেন প্লাস পেতে হবে এমন কথা না। যাই হোক, আমার বাড়ির সবার মাথা ব্যথা আর একটু ভালো করে পড়লে আরো ভালো করতি। তাদের বুজিয়ে লাভ নাই। আমার যতটুকু সম্ভব আমি চেষ্টা করি ভালো করার। আমার মতে আমি ভালো করেছি।

আমরা ২ ভাইবোন। আমার বড় ভাই শফিক। যে আমার লাইফটাকে হেল করে রাখে। পড়াশুনা শেষ করে চাকরীর জন্য ওয়েট করছে। কিছু ভালো জায়গায় ইন্টাভিউও দিয়েছে। ভাইয়া সিয়র এর মধ্যে কোন এক জায়গায় চাকরী হয়ে যাবে। সারা দিন কোন কাজ নাই বলে আমার পিছে লেগে থাকে। বাবা মা ও এতো শাসন করে না, যতোটা ও করে। ভাইরা কি এমন হয়! নাকি আল্লাহ আমাকেই এমন একটা ভিলেন ভাই দিছে।

মাহি ও মাহির মা কলেজে এসে পৌছাল। তারা ওয়েট করছে, মাহির রোল অনুযায়ী ভেতরে ডাকবে। মাহি কিছুটা চিন্তিত। কারণ এবারের পরীক্ষাগুলো তেমন ভালো করে দেয়নি। এমনিই আমাকে বকে। আমি নাকি পড়া চোর, তার উপর আজ যদি আফরোজা ম্যাডাম মা কে কিছু বলে তাহলে বাড়িতে গিয়ে মার একটাও নিচে পরবে না। সব আমার গালে! মাহি এগুলো ভাবছে গালে হাত দিয়ে। কিছুক্ষণ পর মাহির রোল ডাকা হলে ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে মাকে নিয়ে আফরোজা ম্যাডাম এর কক্ষে গেলো। তাদের বসতে দিয়ে আফরোজা ম্যাডাম মাহির মাকে জিজ্ঞেস করলো বাড়ীতে সবাই সুস্থ আছে কিনা। মাহির মা কিছুটা অবাক হলো এমন প্রশ্নে। তাৎক্ষণিক জবাব দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কেন ম্যাডাম হঠাৎ এমন প্রশ্ন।

মা ও মাহি

আসলে মাহি মোটামোটি ভালো ছাত্রী। কিন্তু এবার পরীক্ষাগুলো তেমন ভালো হয়নি। তাই জানার জন্য বাড়িতে কেউ অসুস্থ ছিলো কিনা যার কারণে পড়তে পারেনি। তাই হয়তো পরীক্ষাগুলো খারাপ হলো কিনা!

আসলে ম্যাডাম পরীক্ষার কিছুদিন আগেই ওর প্রাইভেট টিচার টা চলে গিয়েছিলো। তখন একা পড়তে একটু সমস্যা হচ্ছিলো। তাই হয়তো কিছুটা বিশৃঙ্খল হয়ে পরেছিলো।

হয়তো.. এমনেই ওর কোন সমস্যা নেই। কিন্তু ফাইনাল পরীক্ষার বেশী দিন বাকি নাই। তাই ওকে এখন পড়াশোনায় অনেক মনোযোগী হতে হবে। আপনারাও একটু খেয়াল রাখবেন। তাহলেই হবে।

ওকে ম্যাডাম আমি সব বুজেছি, এবার আসি।

ওকে….। (আফরোজা ম্যাডাম)

ম্যাডাম এর কক্ষ থেকে বের হয়ে দেখলাম মা আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম- মা কি হইছে? এমন করে কি দেখছো আমায়? এর আগে দেখনি বুঝি।

মা রেগে গিয়ে বললো আজ আসিছ বাসায়! আর এমন মিস্টি কথা গুলো তোর ভাই আর বাবার জন্য বাঁচিয়ে রাখ। শফিক ঠিকই বলেছে তুই একটা পড়া চোর হয়ে গেছিস। দিন দিন মানুষের উন্নতি হয়, আর তোর অবনতি হচ্ছে। আমার তো তকে নিয়ে গর্ব করার কথা।

মায়ের কথা শুনে মাহির সুন্দর মুখখানি মলিন হয়ে গিয়েছে। আর মাকে পটানোর বৃথা চেষ্টা করছে সে। যাতে মা বাসায় গিয়ে তার ভাইকে আর বাবাকে কিছু না বলে। কিন্তু লাভ হয়নি। ওর মা কোন কথাই শুনতে রাজি না। তাই মাহিও রেগে গিয়ে বললো… হুমমমম। আমার তো মনে হয় তুমি আমার মা না, শুধু শফিক ভাইয়ের মা। তাইতো তোমার মাঝে দয়া মায়া কম। আমার মা হলে আমার মতো দয়ালু হতে।

মাঃ দেখ মাহি, বাজে কথা বাদ দে। আর বাসায় এসে নিজেকে কিভাবে বাঁচাবি সেটা ভাব? আমি গেলাম বাসায়, তুই ক্লাসে যা।

ক্লাসে গিয়ে মাহি রুহি কে সব বললো। আর ওর থেকে বুদ্ধি চাইলো আজকে কিভাবে বাঁচা যায় তা নিয়ে? রুহি তো একদম না বলে দিলো।

মাহি ও রুহি

রুহিঃ তোর কি মাথা খারাপ হইছে? তোর ভাই যদি শুনে আমি তোকে কোন উল্টা পাল্টা বুদ্ধি দিই, তাহলে আমাকে মাথায় তুলে একটা আছার মারবো। আর আমিতো এই ভয়ে আছি আবিরের কথা জানলে আমায় কি করে, আমার সেদিন মৃত্যু দন্ড নিশ্চিত। রাতে এ চিন্তায় ঘুম হয় না। জানোস, হারামি সব তোর জন্য।

মাহিঃ এতো চিন্তা করোস কেন? আমি কি ওর সাথে প্রেম করে বেরাইছি? ভালো লাগতো, তাই একটু আকটু কথা বলতাম। আর কি করছি?

রুহিঃ প্রেম করার ইচ্ছা না থাকলে এখানেই স্টোপ যা। আর আগে বারিস না। তা না হলে…থাক আর বলবো না।

মাহিঃ আরে বাদ দে। আগে বল এখন কি করবো? আমি কোথাও পালিয়ে গেলে কেমন হয় বলতো?

রুহিঃ তোর মাথার সব নাট বল্টু কি ঢিলা হয়ে গেছে বলতো?

মাহিঃ অবাক হয়ে বললো নাতো! কেন তুই এমন বলছিস?

রুহিঃ তাহলে কি বলবো? তুই জানিস যে, তুই এমন করলে তোর ভাই তোকে যেখান থেকে পারুক খুঁজে এনে একটা রিকশাওয়ালার সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে। তাহলে ভালো হবে, তাই না!

রুহির কথা শুনে মাহি গভীর চিন্তায় মগ্ন হলো। আসলেই তো আমার ভাই এটা করতেই পারে। ওর কোন ভরসা নাই, এমনেই বলে পরীক্ষায় খারাপ করলে নাকি বিয়ে দিয়ে দিবে। তার উপর এটা করলে আমার কপালে রিকশাওয়ালাই জুটবে। না না না.. বলে চিৎকার করলো মাহি।

রুহিঃ চিন্তা বাদ দে! যা হবার হবে। ভাইয়া হয়তো একটু বকবে। খেয়ে নিস। এতো কিছু খেতে পারছ, একটু বকা খেলে কি হবে?

মাহিঃ হুমমমমম।

মাহি ও বাবা

কলেজ থেকে সোজা বাসায় গেলো। ওর আজ বাসায় যেতেও ভয় লাগছে। বাসায় গিয়ে সোজা রুমে গিয়ে ফ্রেস হলো, কিছু খেয়ে বিশ্রাম নেবার জন্য বিছানায় পিঠ লাগাতেই ঘুমিয়ে পড়লো। সন্ধ্যায় মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো।

মাহিঃ কি হইছে মা এতো ডাকাডাকি কেন করছো।

মাঃ তোর বাবা আর শফিক ডাকছে তোকে, ড্রয়িংরুম এ আস।

এ কথা শুনে আমার কলিজার পানি সব শুকিয়ে গেছে। তবুও আস্তে আস্তে ড্রয়িংরুম এর দিকে পা বাড়ালাম।

বাবাঃ মাহি এসব কি মা! তোর মা যা বলছে তা কি সত্য। এভাবে খরাপ করার কারণ কি বল? তোমার সমস্যা না জানলে সমাধান কি করে করবো?

ভাইয়া আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আমি কি বলি তা জানার জন্য হয়তো?

মাহিঃ আসলে বাবা তিন মাসে তিনটা টিচার আসছে। আর নতুন টিচার এসেই পুরানো টিচারের সব বদলে নতুন করে সব দেয়। যার কারণে সব কিছু উলট পালট লাগতো আমার। পড়াগুলো ঠিকমতো কভার করতে পারনি। আর পরীক্ষাও সামনে এসে পরেছে। তাই এমন হলো বাবা।

একদমে কথাগুলো বলে চুপ হয়ে যায় মাহি।

বাবাঃ ঠিক আছে বুজলাম। কিন্তু এই সমস্যার কথাগুলো আগে বললে এমন হতো না। আমরা কিছু না কিছু ব্যবস্থা করতাম।

মাহি ও শফিক ভাই

শফিক তখনো চুপ। কিছুই বললো না। ও হয়তো সমস্যাটা বুঝতে পেরেছে মাহির।

বাবাঃ শফিক তুমি কালই ওর জন্য ভালো একটা টিচার এর ব্যবস্থা করবে। আর পরীক্ষার আগ পর্যন্ত যাতে আর টিচার বদলাতে না হয়, তেমন ভাবে দেখে আনবে।

শফিক ভাইঃ ঠিক আছে বাবা।

মাহি দেখলো ওর ভাই ওর দিকে এখনো ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

মাহিঃ ভাইয়া তুমি কি আমায় কিছু বলবে?

শফিক ভাইঃ না, তেমন কিছু না। এমনেই তোর কাজে আমরা অনেক গর্বিত। আর কিছু বলে তোকে ফুলিয়ে দিতে চাই না।

মাহিঃ ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে গেলো ভাইয়ের এমন কথা শুনে।

শফিক ভাই ও তার বন্ধু

রাতের খাবারের পর শফিক ভাবছে, কার কাছে দিলে তার আদরের বোনটি সুরক্ষিত থাকবে। আর পড়াতেও পারবে। কারণ এর আগের তিনটা টিচারের মধ্যে দুটারি চরিত্র ভালো ছিলো না। তা কিছুদিনের মধ্যেই শফিক বুঝতে পারলো। আর সাথে সাথে না করে দিলো। এর মধ্যে নীলয় ছেলেটা ভালো ছিলো। কিন্তু ওর ভালো চাকরী হওয়াতে মাহিকে পড়াতে পারেনি। শফিক সিগারেট টানছে আর ভাবছে। এতো আর্জেন্ট একটা ভালো টিচার কই পাবে? ওর ফ্রেন্ডস এর অনেকেই টিউশনি করে কিন্তু তাদের স্বভাবও তেমন ভালো না। এমন সময় নাবীল ফোন করলো।

নাবীলঃ কি রে খুব টেনস মনে হচ্ছে। (শফিককে জিজ্ঞেস করলো)

শফিকঃ সব বললো। এখন কি করি বলতো?

নাবীলঃ আরে ভাবিস না কাল দেখবো নি, কি করা যায়? এখন ঘুমা। রাখি।

নাবীল ফোন কাটার পর শফিক ভাবতে লাগলো নাবীল হলে মন্দ হতো না। কিন্তু নাবীল কি রাজি হবে? ওর কোন কিছুর অভাব নেই। ওকে কোন মুখে বলবো মাহিকে পড়াতে, যদি রাজি না হয়। ধুর কাল দেখবোনি। মানলে মানবে, তা না হলে অন্য কিছু ভাববো। চলবে…

আরো পড়ুন: রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ৩

সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *