আমার প্রেম কাহিনী – সত্য প্রেমের গল্প

আমার প্রেম কাহিনী – সত্য প্রেমের গল্প: আমিও উনার ভালোবাসার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম। কারণ, ততদিনে আমি উনার জন্যে একদম পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।


মূ্লগল্প

আচ্ছা! আজকে আমি আপনাদের একটা কাহিনী শোনায়। আমার এবং আমার উনার কাহিনী। বোরিং লাগবে অনেক, জানি। তাও, অনেকেই জানতে চাও আমাদের কাহিনী। তাই ভাবলাম, আজ বলেই ফেলি।

আমাদের পরিচয়টা শুরু হলো ফেসবুক থেকেই। আমি অনেক ভোলা ভালা একটা মেয়ে। ফেসবুক একাউন্ট খুলেছিলাম ২০১৬এর দিকে। তখন শুধুমাত্র কিছু ফ্যামিলি মেম্বার আর বাকিসব আমার ফ্রেন্ডরা আমার সাথে এড ছিলো। আমি যেহুতু অনেক ভোলাভালা মেয়ে ছিলাম তাই আমি কখনো অপরিচিত কোনো মানুষকে এড করতাম না।

কিন্তু, ২০১৭সালের প্রথম দিকে আমাকে একটা ছেলে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দেয়। আমি খুব নরমাল ভাবেই তার ফেসবুক প্রোফাইল চেক করি। যেমনটা আমি বাকিদের রিকোয়েস্ট চেক করতাম, তেমনই। ঐ ছেলের প্রোফাইল দেখে আমার খুব ভালো লেগেছিলো। কারণ, সেখানে কিছু নারীদেরকে নিয়ে উনার ভালো পোস্ট দেখেছিলাম আমি। আমি অনেক খুশি হলাম এই জিনিসটা দেখে যে..ছেলেটা মেয়েদের সম্মান করতে জানে।

জানিনা কেনো, উনিই প্রথম অপরিচিত মানুষ ছিলেন যার রিকোয়েস্ট আমি একসেপ্ট করলাম।

ওহ! একটা কথা না বললেই নয়, আমি উনার ছবি দেখে ফিদা হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ, উনি অনেক লম্বা ছিলেন আর চোখজোড়া ছিলো পুরোই মায়াতে ভরপুর। আর লম্বা ছেলে আমি অনেক বেশি পছন্দ করতাম। (এখনো করি তবে শুধু উনাকে)। রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেই আমি চলে গেলাম কোচিং এ।

আমি কোচিং করতাম তখন দুপুর তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। আমি তখন ইন্টার প্রথম বর্ষে ছিলাম। কোচিং এ মোবাইল নিলেও আমি ফেসবুকে যেতাম না। কিন্তু, সেদিন আমার মন বড্ড আনচান করছিলো একটু ফেসবুকে গিয়ে দেখতে, যদি উনি আমাকে মেসেজ দেয়! অদ্ভুত এক মায়া কাজ করছিলো উনার প্রতি। বসেই ছিলাম উনার মেসেজের আশায়।

কিন্তু নাহ! গেলাম না আর মেসেজ দেখতে। একেবারে কোচিং শেষ করে বাসায় আসতে আসতে ছয়টা ত্রিশ বাজলো। আমি নাস্তা করে বাসায় বাকি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। রাতের নয়টার দিকে আমি মোবাইল ডাটা অন করে মেসেজ চেক করতে বসলাম। কিন্তু আমি পুরোই অবাক। সে আমাকে মেসেজ দেয়নি। কেনো যেনো খুবই কষ্ট লাগলো আমার ব্যাপারটা। ইচ্ছে করছিলো উনাকে গিয়ে একটা ঘুষি মেরে আসি।

এইদিকে নিজেও যেঁচে মেসেজ দিতে পারছি না উনাকে। কারণ, মেয়েরা কখনোই ছেলেদের আগে মেসেজ দেয় না। এইরকম একটা ধারণা ছিলো আমার মনে। কিছুক্ষণ উনার প্রোফাইল চেক করলাম আবারও। একদম লাস্ট পর্যন্ত চেক করেছি। যতটুকু বুঝে ছিলাম, উনার লাইফে ফ্রেন্ডের অভাব নেই। ছেলে মেয়ে, অনেক অনেক ফ্রেন্ড ছিলো উনার। যাক সেদিকে আর মন না দিয়ে আমি আমার বাকি কাজে মন দিলাম। রাতের খাবার খেয়ে আবারো আমি মোবাইল নিলাম তখন আমি যা দেখেছি আমার সেটা বিশ্বাস হয়নি।

উনি আমাকে মেসেজ দিয়েছেন, “হাই”। কি বুঝেছিলাম আমি আল্লাহ্ জানে! মোবাইল নিয়েই নাচানাচি শুরু করে দিয়েছিলাম। উফফ..যদিও আমি অনেক খুশি ছিলাম। কিন্তু উনার মেসেজ সিন করেছিলাম প্রায় এক ঘন্টা পর, রাত বারোটায়। একটা মেসেজ দিয়েই আমি ফেসবুক থেকে বেরিয়ে এলাম। সারাদিন কলেজ, কোচিং নিয়ে টায়ার্ড ছিলাম তাই খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিন আর মোবাইল নিলাম না। একেবারে ফেসবুকে এলাম রাতে। দেখি উনার মেসেজ আবারও। এইবার আমি দ্রুত রিপ্লাই করলাম।

আমি রিপ্লাই দেওয়ার সাথে সাথেই দেখি উনিও আমাকে মেসেজ দিলেন আবারও। উনার সাথে আবারো কিছুক্ষণ চ্যাট করে আমি মোবাইল রেখে দিলাম। উনার সাথে কথা বলাটা আমার আস্তে আস্তে বেড়ে যাচ্ছিলো। আমার এক প্রকার অভ্যাসে পরিণত হচ্ছিলেন উনি। একটু দেরীতে উনি রিপ্লাই দিলেই আমার মেজাজ খারাপ হতো। তবে, একটা জিনিস আমি খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছিলাম, আমাকে আগে উনি দেখেছেন কোথাও। কিন্তু, আমি উনাকে বাস্তবে দেখিনি কখনোই।

এইভাবে যাচ্ছিলো দিনকাল। তবে, হঠাৎ একদিন আমার জন্যে প্রপোজাল আসে বিয়ের তখন আমি ব্যাপারটা আমি উনাকে জানায় মজার ছলেই। কিন্তু, উনি সেটা খুবই সিরিয়াসলি নেন এবং আমার উপর অনেক রাগ দেখান। তখন কিন্তু আমরা কোনো রিলেশন এ ছিলাম না। আমাকে বকা দেওয়ার কারণে আমি অনেক রাগ করি উনার সাথে।

আমি উনার মেসেজ সিন করতাম বাট রিপ্লাই দিতাম না। এর তিনদিন পরেই, কলেজ থেকে আসার সময়..হঠাৎ আমার সামনে এসে দাড়ালেন উনি। উনাকে দেখে আমি একদম হা করে ছিলাম। উনাকে সেদিনই আমি প্রথম দেখেছিলাম। ছবিতে যা লম্বা ভেবেছিলাম, তার চেয়েও অনেক লম্বা উনি। উনার কণ্ঠ শুনে আমি আরো বেশি অবাক হয়ে গেলাম। সেদিন প্রথম উনার কথা শুনেছিলাম আমি।

“তোমার সাহস তো কম না। কোন সাহসে তুমি আমার সাথে কথা বলছো না! “(খুবই আস্তে কথাগুলো আমাকে বলেছেন উনি। আসে পাশে নানা মানুষ থাকলেও কেউ আমাদের দিকে তাকাচ্ছে না। কারণ, কলেজে ছেলে মেয়ের এক সাথে কথা বলাটা নতুন কিছু না। আর আমার সাথে আমার কোনো বান্ধুবি ছিলো না, সবাই বাসায় চলে গিয়েছিলো। কিন্তু অফিসে আমার কিছু কাজ থাকার কারণে আমার দেরী হয়ে গেলো)।

উনাকে দেখে আমার মুখ দিয়ে কথা বের হওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। তাও কষ্ট করে বললাম,
“ক…কই?”

“কাহিনী আমার পছন্দ না। মেসেজের উত্তর যেনো দাও। চলো তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসি।” (উনি)
আমার কথার উত্তরের আগেই উনি উনার পাশে দাঁড়ানো কিছু ছেলেকে “আসি দোস্ত, পরে ট্রিট নিয়ে নিস আমার থেকে”কথাগুলো বললেন। ছেলেগুলোকে আমি না চেনার নয়। কারণ, ছেলেগুলো আমাদের কলেজের সিনিয়র ছাত্র।

আমাকে গাড়িতে উঠতে বললেই, আমি উনাকে বললাম,

“আমাকে বাবা নিতে আসবে। বাবা কলেজের সামনের মার্কেটে আছে।”
“চলো, তবে ঐখানে দিয়ে আসি।” (উনি)

“নাহ! বাবা দেখলে বকা দিবে আমাকে। খারাপ ভাবতে পারে।” (আমি)

কিন্তু না, উনি নাছোড়বান্দা আমার সাথে ঠিক ঠিকই মার্কেটে গেলেন। মার্কেটের গেইটে আমি বাবাকে দেখতে পেলাম। আমি পাশ ফিরে দেখি নেই। কিন্তু আমি বাবার কাছে পৌঁছানোর আগেই দেখি উনি বাবার সামনে গিয়ে হাজির। আমি গিয়ে বাবার পাশে দাঁড়ালাম।

গিয়ে দেখি বাবা উনার সাথে হেসে হেসে ভালো করে কথা বলছেন। আমি যেতেই বাবা আমাকে উনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।

“এই যে মা, ও আমার এক বোনের ছেলে। আগে আমাদের এলাকায় থাকতো। তবে ও অনেক ছোট ছিলো তখন। ওরা সেখানের জায়গা বিক্রি করে এখন ওদের নিজেদের অন্য জায়গায় করা বাড়িতে আরেক জায়গায় থাকে। খুবই ভালো মহিলা ওর মা।”(বাবা)

বাবার কথায় উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। আর আমি উনার হাসি দেখে মনে মনে আরো বেশি ক্রাশড হলাম উনার প্রতি।

যতটুকু জানলাম, আমার জন্মের আগে থেকে বাবা উনাকে চিনেন। আর বাবার বিজনেসের নানা কাজেও উনার সাথে বাবার দেখা হয়েছে। তাই বাবা উনাকে ভালো করে চিনেন। উনারা আগে আমাদের এলাকায় থাকতেন। সেই হিসেবেই বাবা চিনেন উনাদের, আর উনারা আমাদের চিনেন। কিন্তু, আমি কখনো উনাদের বাসায় যায়নি। আর উনারা আমাদের বাসায় আসেননি কখনোই।

সেদিনের মতো বাবার সাথে আমি বাসায় চলে এলাম। উনার সাথেও নিয়মিত কথা বলতাম তখন থেকে। কেনো যেনো উনার সাথে কথা না বলে থাকতেই পারতাম না। একদিন হঠাৎ উনি বললেন, “আমাকে ভালোবাসেন উনি”। কথাটা শুনে আমি কি পরিমান কান্না করেছি সেটা একমাত্র আমি জানি। আমিও উনার ভালোবাসার প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম। কারণ, ততদিনে আমি উনার জন্যে একদম পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।

আর উনার কেয়ার, আমার প্রতি উনার টান সব কিছুই আমার অনেক ভালো লাগতো। তাই আমিও “হ্যাঁ” করে দিয়েছিলাম। রিলেশনের অনেকদিন পরেই জানতে পারলাম, “উনার মা আমার জন্যে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।” কথাটা আমি উনার মুখের শুনলাম। কিন্তু, বাবা বলেছেন আমার বিয়ে দিতে দেরি আছে। আর উনারও আরো ভালো করে কাজে মন দিতে হবে এখন। তাই আমাদের বিয়েটা হবে আমার গ্র্যাজুয়েশন এর পর। এইসব কথা আমি উনার কাছ থেকেই শুনেছি। তবে আজ পর্যন্ত বাসায় আমার বিয়ে নিয়ে কখনো কোনো কথা উঠেনি। আমি জিজ্ঞেস করিনি কখনোই বিয়ের কথা।

তবে মা আমাদের রিলেশনের কথাটা হালকা আন্দাজ করতে পারে। এইতো এইভাবেই আমাদের সম্পর্ক চলছে। ওহহ! মজার কথা হলো আমি উনাকে ভাইয়া ডাকতাম, এখনো ডাকি। যেহুতু উনার মাকে আমার বাবা বোন মানেন, তাহলে উনি আমার ফুফাতো ভাই। আগেও উনাকে ভাই ডাকতাম, তখন কিছু বলতো না। কিন্তু এখন ভাই ডাকলেই একদম ফায়ার হয়ে যান। ঝগড়া, রাগ, খুনসুটি, রাগ ভাঙ্গানো, উনার রাগী মেজাজ সামলানো এইভাবেই বেশ চলছে আমাদের সম্পর্ক।

দেখা যাক, সামনে কি হয়। আল্লাহ্ এর উপর সব। দোআ করবেন সবাই আমাদের জন্যে। আরো অনেক কাহিনী আছে আমাদের। বলে শেষ করা যাবে না।

লেখিকা: সালসাবিল সারা

সমাপ্ত

(অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, “আপু আপনি বলেছিলেন উনি আপনার কাজিন।”

উত্তরঃ হ্যাঁ, আমার বাবা উনার মাকে বোন মানলে উনি আমার ফুফি হোন, সো আমার ফুফুর ছেলে আমার ভাই তো হবেনই।

তখন আমি সবাইকে এত বিশ্বাস করতাম না। তাই শর্টকাট ব্যাবহার করতাম। কিন্তু, এখন আমি তোমাদের সবাইকে অনেক বিশ্বাস করি এবং অনেক ভালোবাসি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আগে আমি কাকে কি বলেছি মনে নেই। তবে উপরের কাহিনীটি সত্য এবং উনি আমার আপন কাজিন বা আত্মীয় না। আমাদের পরিচয় ফেসবুক থেকেই। তবে হ্যাঁ, আমি উনাকে এখনো ভাই ডাকি আর উনার বকাও শুনি। )

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “আমার প্রেম কাহিনী – সত্য প্রেমের গল্প” টি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ। )

আরো পড়ূন – পিংক কালারের বিষ – একটি ছোট্ট প্রেমের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *