পাজরের টানে (সিজন ১ – ১ম খণ্ড) – Gopon valobashar kotha bangla

পাজরের টানে (১ম খণ্ড) – Gopon valobashar kotha bangla: এক ঠোটের উপর আরেক ঠোঁট দিয়ে পুরো বাচ্চা দের মত ঘুমোচ্ছে। এত্তগুলা কিউট লাগছে। তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছা করছে শুধু আমিও বোকা বনে গিয়ে তাকিয়েই আছি। আর ভাবছি আমার বর এত্তো গুলা সুন্দর।


পর্ব ১

রোজ সকালের মত আজও ঘুম ভাঙল খালামনির চিল্লাচিল্লিতে। আম্মু মারা যাওয়ার পর থেকে এই চিল্লাচিল্লিই আমার সকাল বেলার ওয়েলকাম টিউন।

খালামনির অহেতুক গালিস্বরুপ মিষ্টি কথা গুলোতে আগে হার্ড হলেও এখন চামড়া ভেদ করে রক্তে মিশ্রিত হয়ে গেছে।

মনে হয় আমি যদি হটাৎ করে কোন সকালে এই মধু ঝরা কথা গুলো না শ্রবণ করিতে পারি তাহলে হয়ত অনেক মিস করব। হাত মুখ ধুয়ে নামায আদায় করে বাইরে বের হলাম। বের হয়েই শুনতে হল মিষ্টি মধুর কয়েক গোছা বাক্য রচনা।

“এত ক্ষনে নবাবজাদীর উঠার সময় হল তাহলে। রান্নার কাজে তো কখনো একটু সাহায্য করিস না। বোন টার পরীক্ষা চলতেছে একটু পড়া দেখিয়ে দিবি তাও না। একটু পরেই তো আবার ডেং ডেং করে কলেজ যাবি। আসবি সেই বিকাল গড়িয়ে।

এসেই গিলবি। হেরে আমাকে কি তোর চাকর মনে করিস? মামার আদরের ভাগনি হয়েছিস বটে। টাকা পয়সা দিচ্ছে ঐটা দিয়েই চুমুর চুমুর করে শহরের কলেজে পড়ছিস। ছোট বোনের খরচাপাতি তো আর দেয় না তাই বাপু শহরে পড়াতে পাড়ি না।”

খালামনি তার ভাষণ মনে হচ্ছে শেষ করল। খুব ইচ্ছে করছে জবাব গুলো দিয়ে দিতে। কিন্তু এই মহিলার সাথে কথা বলাই বেগার। একে বলা আর হাতি কে বলা একি কথা। কিন্তু আজ আমি জবাব দিব কারন আমার বাপ টাও আজ বাড়িতে। তার জানা উচিত তার বড় মেয়ে ঠিক কি কি করে। সামনে এসে বললাম,

“খালামনি এখন ভোর ৫ ৩০। রান্না বাড়িতে থাকলে আমিই করি। ক্ষুণাক্ষরেও তোমার দেখা মিলে না রান্না ঘরে। বোন টাকে আমিই পড়িয়ে আসছি শুরু থেকে। প্রাইভেট তো আর পড়াও না শুধু শুধু আব্বুর কাছ থেকে টাকা নেও। আর মামার আদরের হয়েছি জন্যই তো এখনও বেচে আছি নইত আব্বু কে যেভাবে হাত করেছ আমায় মেরে ফেললেও আমার বাপের কোন মাথা ব্যথাই থাকত না।”

এরি মধ্যে আব্বু ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ~”এই কি হয়েছে? এত কিসের কথা?”
“ওগো তোমার মেয়ে দেখ কিসব বলছে। আমি নাকি তাকে মেরে ফেলব ওরে তুই যে আমার বোনের মেয়ে তোকে কেন মারব আমি? হাই হাই রে এই কথাও আমার শোনতে হল গো।”

নাহ এখানে আর থাকা যাবে না। তাড়াতাড়ি ঘরে চলে গেলাম। পিংক কালার গাউনটা পরে হুয়াইট কালার হিযআপ করলাম। আমার এসব জামা কাপড় প্রসাধনী জিনিস সব মামাই দেয়। মামা সুদূর সৌদি আরব থাকে। পৃথিবীতে আমার মামা ফরহাদ ই এক মাএ আমার সুভাকাঙ্খী। যার ছায়ায় আমি বড় হচ্ছি। মামার দেওয়া বিদেশী ব্যাগ টা কাধে যুলিয়ে নিলাম। বেড়িয়ে গেলাম কলেজের উদ্দেশ্যে।

কলেজ শেষে আমি আর নুপুর বাসায় ফিরছি। উফ আজ গাড়ি ও পাচ্ছি না। চল হাটি। হাটতে হাটতে এগুচ্ছি দেখি পথে পানু দাদি বসে কান্না করছে আর টাকা তুলছে। তাড়াতাড়ি করে পানু দাদির কাছে গেলাম।
~ কিগো দাদি কি হয়েছে? কাদছ কেন?

~ আপু মনি গো আমার ছোট নাতিডায় গাছ থাইকা পড়ে পা ভাইঙ্গা ফেলাইছে এহন মেলা টেহা লাগব পা ভালা হইতে।
পানু দাদির কথা শুনে খুব খারাপ লাগলো। আহারে এই বুড়ো বয়সে নাতিটা অসুস্থ। ব্যাগ টা নুপুরের হাতে দিয়ে দাদির জন্য রাস্তায় নেমে পরলাম। দেখা দেখি আরো দুইটা লোক যোগদান করল। হটাৎ দেখি ৪ টা প্রাইভেট কার একসাথে আসছে। খুব বড়লোক তো নিশ্চয়ই। এগিয়ে গিয়ে গাড়ি দাড় করালাম।

গাড়ির গ্লাস খুলে দিয়ে একটা লোক বলল ~ হেই লেডি। এভাবে গাড়ি দাড় করানোর মানে।
কথা শেষ না করেই হা করে তাকিয়ে আছে। ভিখারী রা যেমন খাবার জন্য হা করে থাকে তেমন ভাবে। বড় লোক না হলে দশ টাকা দিয়ে একটা রুটি কিনে দিতাম।

এবার মুখ খুললাম। আসসালামু আলায়কুম। কটা টাকা দিয়ে একটু হেল্প করুন গরীব দুঃখী কে। ভেতর থেকে একটা মেয়ে বলে ওঠে~ poor girl তানভীর বেইপি।

~ উহু আগুন সুন্দরী। কত লাগবে?
বুঝতে আর বাকি রইল না বললাম ~”দেখুন আমার জন্য না। ওইযে পানু দাদি তার নাতির পা ভাল করার জন্য চাইছি। ওনি ও তো অসুস্থ তাই সাহায্য করছি।”

পেছনের গাড়ি থেকে একজন মহিলা বের হয়ে আসল। আমার আর চিনতে বাকি রইল না। আমাদের গ্রামের খান বাড়ির গিন্নি সোহানা খান ইনি। সালাম দিলাম
~আসসালামু আলায়কুম।

~ ওয়ালাইকুম সালাম। কি নাম তোমার?
~ লাবিবা তানহা।
~ তুমি তো খুব ভালো একটা কাজ করছ। আজকাল তো এমন কাউকে দেখাই যায় না। তুমার পানু দাদির নাতির চিকিৎসার সব খরচ আমার। তানভির উনাকে পর্যাপ্ত টাকা দিয়ে দাও। আর মিশু ঠিক করে কথা বলবে।

বড় লোক দের বড় বড় আজব কারবার। কি আর বলব আছে তাই দিছে। আমার থাকলে আমি আরো বেশী দিতাম।
এই লাবিবা চল বেশি দেরি হলে তোর সৎ মা আমাকেও কথা শুনাবে।
খালামনি হয় আমার। সৎ মা বলিস না।
চলে এলাম ওখান থেকে।

~ সরোয়াজ
~ জি মম
~ মেয়েটার খোজ নাও। কোথায় থাকে কি করে সব।

~ মম তুমি কি
~ হা। আমি এই আগুন সুন্দরী কে আমার তানভীরের বউ করতে চাই। এত দিন থেকে আমি যা খুজছি তা পেয়ে গেছি। এরকম একটা মেয়ে আমার তানভীরের জিবনে প্রয়োজন। ওই মিশু টিশু কে একদমি সহ্য করতে পারছি না।
~ ওকে মম।

আজ কলেজ নেই। নুপুরের সাথে নদীতে গিয়েছিলাম গোসল করতে। মামা অবশ্য নিষেধ করে দিয়েছে। পরিস্থিতির চাপে একটু আধটু এদিক সেদিক হতেই হয়। গোসল করে ভিজা কাপড়ে তাড়াতাড়ি বাসায় পৌছালাম।

উঠোনে যেতেই দেখি বারান্দায় দু জন মহিলা আর তিনজন পুরুষ আব্বুর সাথে বসে কি নিয়ে যেন কথা বলছে। তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে দরজা দিলাম। পেছন ঘুরে দেখি মুখে হাসির রেখা টেনে হাতে একটা শাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে। বুঝতে পেরে বললাম
~ দর দাম ঠিক করে তারপর আমাকে শাড়ী পরতে বলবে খালামনি।

~ দর দাম ঠিক করা হয়ে গেছে রে। ওর তোকে আগেই দেখেছে। তোর রুপে তো ছেলে পাগল। আমাদের কাছে কিচ্ছু নিবেনা রে। উল্টো আরো ১ লক্ষ টাকা দিয়ে তোকে নিয়ে যেতে চাইছে।

খালামনির কথা শুনে কষ্টে বুক ধরে আছি। আমাকে মাত্র ১ লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতে চাচ্ছে। আমার মামা তো আমার ভরণ পোষন করছে। ওদের তো কোন টাকা খরচ হচ্ছে না।

তাহলে এমন কেন করছে? মা মরলে বাপ হয় তালই এইটা হারে হারে বুঝতে পারছি। ঘৃণা হচ্ছে খুব। একোটা টাকা আমার মূল্য? আমি কোন পণ্য দ্রব্য নই যে বিক্রি করবে আমায়। একথা বলে কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম।

অনেক্ষণ পর রুমে এসে শুনি ওই ছেলে নাকি আবার আসবে আমায় দেখতে। সেদিন বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করবে। আমার কি তাতে?

রাতে মামাকে ফোন দিলাম। অনেক্ষণ কথা হল। খুশিতে বাকবাকুম পায়রা হয়ে গেলাম মাখা দেশে ফিরবে এ কথা শুনে। কিন্তু পরক্ষণেই আমার রাজ্যে সন্ধ্যা নেমে আসল। মামা আমাকে সু পাত্রে দান করার জন্য দেশে আসছে।

পরদিন সকালে কলেজে যাচ্ছি। দেখি একজন ছেলে আর এক জন মেয়ে আমার সামনে এসে দাড়াল। ওমা এই ছেলেকে তো আমি দেখেছি। খান গিন্নির সাথেই ছিল। মেয়েটি এসে বলল
~হাই আমি মিম খান আর ও আমার হাজবেন্ড সরোয়াজ খান। তুমি ভারী মিষ্টি দেখতে। কিউট কিউট গুলুমুলু।

আমি তো লজ্জায় শেষ এটুকুতেই। আমার আবার লজ্জা একটু বেশিই বেশি। গাল দুটো টমেটো হয়ে যায়।
~”ওরেএএ বাবা আগুন সুন্দরীর এত লজ্জা। ভাবা যায় এল্গা?”। কলেজ যাচ্ছ বুঝি? তোমাদের কলেজ দেখতে চাই নিয়ে যাবে আমাদের?

~ of course Why not? Let’s go
~ আমাদের সাথে গাড়িতে উঠ।

আমি আজ প্রথম গাড়িতে উঠলাম। এসি গাড়িতে উফফ। What a feeling
মিম আপু আর সরোয়াজ ভাইয়াও অনেক মিশুক। ওদের কে নিয়ে পুরো কেম্পাস ঘুরে দেখালাম। সাথে মাই ফেভারিট কলি মামার দোকানের বিকালের স্পেশাল দুধ চা। আমি আগেও শুনেছি খান।


পর্ব ২

সন্ধ্যা সময় মাগরিবের আজান দিয়েছে। এখনও বাড়ি পৌছোতে পারি নি। ঘুরাঘুরি করতে করতে কখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে বুঝতেই পারি নি। তিন ওয়াক্ত নামায আজ কাযা পরতে হবে।

বাড়ি পৌছতেই সামনে সবুজ আর শামীমের সাথে ধাক্কা খাইতে খাইতেও খাইলাম না। এদের দেখলে পায়ের নিচে চুলকানি শুরু হয়। ইচ্ছে করে মারি একটা কিক। শয়তান দুটো কিছু বলল না। শয়তানি হাসি দিয়ে এখান থেকে পগাতপার। যাই হোক আমার কি?

এগুতে নিলেই দেখি আমার ডেভিল খালামনি আর মেরুদন্ডহীন আব্বু দাড়িয়ে আছে। দুজনকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছে। রেগে থাকুক আমার কি? কোন দিন কি আমার খোঁজ খবর নিয়েছে যে আজকে একটু দেরি হয়ে গিয়েছে তাই এই অগ্নিমূর্তি দেখাবে।

খালামনি তেড়ে এসেহিযআপের উপর দিয়েই চুলের মুঠি ধরে টেনে ঘরে নিয়ে এসে দরজা আটকে দেয়। ব্যথায় চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে। খালামনি রেগে চিৎকার করে বলতে থাকে
~ কলঙ্কিনী হারামজাদি কার সাথে গাড়ি করে ঘুইরা আসলি?

এর জন্য কলেজ যাস আর আমাগো কস পরতে যাস। অন্ধ পাস আমাদের। ঐ পুলা দুইডা না কইলে তো জানতামি না তোর নষ্টামির কথা। রাইতের বেলা বাড়ি ফিরস। বিয়ে দিতে চাইলেও করস না এইসব করার জন্য। আজ থাইকা বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ। লাগবোনা আর লেখা পড়া। বেশি বেশি করলে ভাত ও পাইবি না। ঐ দে মোবাইল দে। মামার নাম কইরা পোলাগো সাথে কথা কও তুমি। আজ থেকে ঐটাও বন্ধ।

খালামনি বলেই হন হন করে চলে গেল। কত বিশ্রী ভাবে কথা বলে গেল। উত্তর দিতে পারলাম না। এত জোরে চুল টেনেছে যে এখনও মাথা ঝিম ঝিম করছে। মাথায় হাত চেপে বসে আছি। আমার চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে। চিৎকার করে আম্মু কে ডাকছি। কেন করলে এমন আম্মু। আমি তো ছিলাম। আমার কথা একটুও ভাবলে না। কেন চলে গেলে।

আট দিন থেকে কলেজ যাই না। নুপুর নোট গুলো দিয়ে যায়। ঠিক ভাবে খাইতে পারি না। খাইতে ইচ্ছা করে না। ছোট বোন দোলা জোর করে খাইয়ে দেয় প্রতিদিন। মামার সাথে কথা বলতে পারি না। খালামনি ফোন ভেঙে ফেলছে। আর মামাকে বলছে আমি নাকি খারাপ হয়ে গেছি। আমি জানি মামা কখনো বিশ্বাস করবে না।

বাইরে থেকে অনেকের কথা কানে আসছে। আজো হয়ত খালামনি কারো কাছে আমার দরদাম করছে। একদমি মাথা ঘামাব না এসব ব্যাপারে। একদমি কান দিব না। বই নিয়ে পড়তে বসলাম।

এর মধ্যে দোলা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল। পাগলী বোন আমার। আমাকে অনেক ভালবাসে। আমি ও জড়িয়ে ধরলাম। আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
~ আপুই জানিস অনেক বড় ঘর থেকে তোর বিয়ের সমন্ধ আসছে। কোটি পতি লোক। এবার আর তোর বিনিময়ে টাকা দিতে চাচ্ছে না। তোকে রাজরাণী করে রাখবে। তোকে দেখে খুব ….

কথা শেষ করতে পারলো না। হুরমুর করে একপ্রকার দৌড়েই রুমে ডুকল খালামনি। খুশি খুশি মুখ। এসেই হালকা জড়িয়ে নিল। ছেড়ে দিয়ে কপালে চুমু দিল। এই মহিলার কখন কি হয় আল্লাহই জানে। বহুরূপী মহিলা। গদগদ করতে করতে বলল
~ আল্লাহ চোখ তুলে তাকিয়েছে।

এবার আর আমার দোলাকে নিয়ে কোন চিন্তাই থাকল না। বিশাল বড় ঘর। রাজরানী হবিরে। কত ধন ধৌলত তোর হবে। জীবন পাল্টে যাবে আমার। আর কষ্ট করে দিন চলতে হবে না। তোর বাপের ঐ কটা টাকায় সংসার চলে নাকি?

হুম। এতক্ষণে বুঝলাম এত খুশি হওয়ার কারন। এই মহিলা আর যাই করুক স্বার্থ ছাড়া কিছু বোঝে না। সবকিছু তে দোলাকে টানে। আরে দোলা আমার কলিজা। ওকে তো আমি নিজের সবটা দিয়ে দেখে রাখব। এটা কেন বোঝে না।

মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে বললাম
~ এখন নিশ্চয় ওদের সামনে যেতে বলবে? যাব না আমি। করবনা বিয়ে। আমার মামার সাথে কথা বলব।
~ ওরেএ তোর মামাইতো সমন্ধ নিয়ে আসছে। দেশে ফিরেছে তোকে বিয়ে দেবার জন্য।
~ কিহ মামা এসেছে আর তুমি এখন বলছ?

দৌড়ে গিয়ে মামাকে জড়িয়ে ধরলাম। মামাও আমি বুঝতে পেরে জড়িয়ে ধরল। ছেড়ে দিয়ে মুখ তুলে বলল ~ দেখি দেখি সুবহানল্লা আমার মা টা ছবির থেকে অনেক সুন্দর।
~ তুমি কখন এসেছ? আমাকে ডাকনি কেন?

~ অনেকক্ষণ এসেছি। তোমার হবু শ্বশুর বাড়ির মানুষ এসেছিল তো। ওদের সাথে কথা বলছিলাম। ওরা তোমায় আগেই দেখেছে তাই আর দেখাতে হয়নি। তোমায় স্ব পাত্রে দান না করা পর্যন্ত আমি তো চিন্তা মুক্ত হতে পারছি না।

~ সবাই শুধু বিয়েই দিতে চায়।
~ হা হা হা পাগলী মা আমার। চল জমিয়ে খাওয়া হবে আজ। দোলা মা চল।
~ হামম।

মিসেস সোহানা খান সোফায় বসে আছে। তার পাশে বসে আছে সরোয়াজ, মিম, তানভীর।

সোহানাঃ ছবিটা সামনে পড়ে আছে অনেক্ষণ যাবৎ। দেখছোনা কেন? অবশ্য না দেখলেও সমস্যা নেই। মেয়ে যথেষ্ট স্মার্ট। অনেক সুন্দরী।

তানভীরঃ মম আমার পক্ষে সম্ভব না। মেয়েটার সাথে আমার লেভেল যায় না মম। আমার সাথে ৯ বছরের ডিফারেন্স। আর যতই সুন্দরী হোক। আমি পারব না।
সোহানাঃ আমি কথা দিয়ে আসছি ইভান( তানভীর )।

তানভীরঃ মম আমি তানভীর ইভান খান। ইন্ডাস্ট্রিতে সব থেকে বড় বিজনেস মেন দের মধ্যে একজন। তুমি কিভাবে একটা গ্ৰামের মেয়েকে আমার পার্টনার করার চিন্তা করো?
সোহানাঃ আমি তোমার মম ইভান। তোমার থেকে ভালো মন্দ টা আমি একটু হলেও বেশী বুঝি। আমার পর আমার জায়গাটা নেওয়ার জন্য যোগ্য কাউকেই আনব। এ ব্যপারে নিশ্চিত থাক।
তানভীরঃ মম আমি মিশু কে ভালবাসি।

সোহানাঃ চুপ কর তুমি। আর একবার এই ভুলটা করবে না। তুমি আমার ছেলে ইভান। তোমার বাবার মত ভ্রম দেখছি তোমারো হচ্ছে। তুমি ভালোবাস না ইভান। জাস্ট একটা রিলেশন তৈরী করার চেষ্টা করছ। ঐ মেয়েকে কোন দিন আমি আমার বাড়ির বউ করবনা।

তানভীরঃ কিন্তু কেন মম? কি সমস্যা মিশুকে মেনে নিলে?
সোহানাঃ সেটা সময় মত তুমি নিজেই যেনে নিবে। আমার কথার অবাধ্য হলে আমার মরা মুখ দেখবে বলে দিলাম।
সরোয়াজ~মিম~তানভীরঃ মমমমমম।
সোহানাঃ এটাই আমার শেষ কথা।

পনের দিন পর আমার বিয়ে ঠিক করেছিল সেদিন মামা। মামার কথা মানেই আমার জন্য আশীর্বাদ। তাই আর না করিনি। মামা আমার জন্য বেস্ট টাই দেখবে। দেখতে দেখতে পনেরদিন কেটে গেল। এর মধ্যে একবার ও জানতে চায়নি যে কোথায় বিয়ে হচ্ছে। অনুভূতি কাজ করে নি। ভাবনা অনুভব সব অন্যদিকে যে অনুভূতি কাজ করবে কি করে?

একয়দিন একটা ঘোর এর মধ্যে ছিলাম। যে আব্বু খালামনিকে বিয়ে করার পর একবার ও মাথায় হাত পর্যন্ত রাখে নি সে এখন আমায় তার বুকে টেনে নেয়। ব্যপার টা কি রকম অনুভূতি জাগায় তা বলে বোঝানোর ক্ষমতা হয়ত আমার নেই। খালামনি যে আমাকে অনেকদিন না খাইয়ে রেখেছে এখন সে আমায় খাইয়ে দেয়। ভাবা যায় এগুলা? কত খাতির যত্নই না করল আমায়। কিসের জন্যে? আমি চলে যাবো তাই নাকি আমি বড় বাড়ির বউ হব তাই?

আজ আমার গায়ে হলুদ। কাচা হলুদ রঙে একটা শাড়ি আটপৌরে করে পরিয়ে দিয়েছে মামনি। বড় তাজা গুচ্ছ গাদা আর গোলাপ ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে আমায়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকেই শুধু দেখছি। সবাই বলে আমি নাকি আগুন সুন্দরী যা প্রত্যেক টা ছেলে কে জালা ধরিয়ে দেয়। কখনো নিজেকে এভাবে দেখিনি। আজ খেয়াল করছি আমি তো সত্যিই আগুন সুন্দরী। কিন্তু আমি তো প্রত্যেক টা ছেলেকে জালা ধরিয়ে দিতে চাই না। আমি তো আমার একান্ত নিজের পুরুষ টাকে এই আগুনে পুড়িয়ে ছাই করতে চাই।

দোলা আর মামী আমাকে ধরে উঠোনে যেখানে হলুদের জন্য সাজিয়েছে সেখানে এনে বসিয়ে দিল। ওরাও শাড়ি পরে সেজেছে। খুব মিষ্টি লাগছে আমার বোনটাকে।

গায়ে হলুদ ছোঁয়া বাড়িতেই করল। খুব কম আয়োজনে। আব্বু নাকি খরচ করেছে হলুদে। আমার মাসে ১১ হাজার মাইনে পাওয়া বাবার এই টুকু খরচ করা খুবই কষ্ট সাধ্য ব্যপার। আব্বুকে খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে। বিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে হবে। বিয়ের সমস্ত খরচা মামা দিচ্ছে। ওমন কোটিপতি পরিবারে ভাগনির বিয়ে দিচ্ছে ওদের সাথে মানানসই আয়োজন করতে হিমশিম খাচ্ছে মামা। তুমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম মামা।

একে একে সবাই আমায় হলুদ ছুইয়ে দিচ্ছে। প্রথমে আব্বু তারপর একে একে মামা খালামনি মামনি দোলা মামা~ মামনির পুচকে দু’টো টোটো আর টুকু। মিষ্টি খেতে খেতে আমার অবস্থা খারাপ। এমনিতেই মিষ্টি খাইনা আমি। সামান্য একটু গুলুমুলু তার জন্য। কিন্তু আজ কেউই এসব শুনলনা। ভালোই আনন্দ উল্লাসে আমার হলুদ অনুষ্ঠান হয়ে গেল।


পর্ব ৩

পাল্লার থেকে ২ ঘন্টা আগে আসছি। পাক্কা ৪ ঘন্টা লাগিয়েছে সাজাতে। তার পর আবার ২ ঘন্টা থেকে বসে আছি। অথচ আমার বিয়ে পড়ানোর কোন খবরই নেই। জামাইকেও বসানো হয়েছে পাশের হলে। দেখতেও পাচ্ছি না। এখন একটু একটু ফিল হচ্ছে যে আমার বিয়ে। হবে নাইবা কেন যেভাবে সাজানো হয়েছে বলতে গেলে সিনেমার নায়িকাদের ও এভাবে সাজাতে দেখি নি। মেরুন~ডার্ক চকলেট কালার ছড়ানো লেহেংগা পরিয়েছে। শুনলাম এটার দামি নাকি সাড়ে সাত লাখ টাকা। আর গ্রিন ডায়মন্ডের গহনা।

ডায়মন্ড হুয়াইট কালার দেখেছি সুন্দর কিন্ত গ্রিন ডায়মন্ড যে এত সুন্দর কি আর বলব নিজেকে দেখে আজ নিজেই প্রেমে পড়ে যাচ্ছি। অন্য সবাই তো তাকিয়ে থাকবেই। কাজী নিয়ে এসে আমার থেকে সই আর কবুল বলিয়ে নিয়ে গেল। খুব কান্না পাচ্ছে কিন্তু নুপুর টা কিসব বলছে কান্না উড়ে গিয়ে এখন আমার হাসিও পাচ্ছে লজ্জাও লাগছে।

ফোটোগ্ৰাফাররা একেক পোজ দিতে বলছে আমিও সেই ভাবে পোজ দিচ্ছি। ভির ঠেলে মামা আব্বু আরো সবাই আমার দিকে আসছে। সাথে জামাই সাজে একজন মানে এটাই আমার জামাই। কাছে আসতেই তো আমি অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে আছি সাথে আমার জামাইটাও। আমাদের দেখে আশেপাশের গেস্টরাও তো হা।

আয়নায় মুখ দেখানোর জন্য জামাই নিয়ে আসছে আর আমি তো আয়নায় না দেখে স্বচক্ষে হা করে জামাই দেখতেছি। লজ্জা বালাই কিছুই টের পাচ্ছি না। আমার সামনে যে সেদিন রাস্তায় হটাৎ দেখা হয়ে যাওয়া খান বাড়ির ছেলে তানভীর মানে ঐ মিশু না টিশুর বেইপি দাড়িয়ে। ও আমার আল্লাহ এই বেইপি আমার জামাই। মধ্যযুগের রাজপুত্র আর এ যুগের বলিউড হিরো।

হিরো জামাইয়ের সাথে অনেক গুলা ছবি উঠলাম। আয়নায় আর মুখ দেখা হইল না আমার। সরাসরিই তো দেইখা ফেলছি। শাশুড় বাড়ির পুরো পরিবার দেখে তো আমি শকড সরোয়াজ ভাইয়া আমার একমাত্র দেবর আর মিম আপু আমার জা। আর শাশুড়ি কে চিনিই।

জামাইয়ের দিকে বার বার আড়চোখে তাকাচ্ছি। কিন্তু একি মেঘ জমে আছে পুরো মুখে। এই মুহূর্তে আমি ভয় পেতে শুরু করেছি। ও আমার আল্লাহ কোন ভুল কিছু হয়ে গেল না তো? মিশু কোথায়? খুজে পাচ্ছি না তো। বিরহে কি সে চেন্না মেরে আ মেরে আ গান গাইতেছে নাকি। আমাকে কি উনি ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করল? আমার জন্য কি দুটি ভালবাসার মানুষ এক হতে পারবে না?

সব অনুষ্ঠান শেষ করে বিদায় দিতে এল সবাই আমাকে। এখন আর কি বিদায় দিবে বিদায় তো নিয়েই এসেছি সকালে আমার জন্মস্থান থেকে। বিদায় যে কতটা কষ্টকর তা একমাত্র মেয়েরাই জানে। কষ্টে বুকটা ছিড়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কান্না টাই আজ আমায় ভর করেছে। কাদতে কাদতে শরীর অবশ হয়ে গেছে।

চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে। আমার কান্না দেখে সবাই কাঁদছে। গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে মামা হো হো করে কেদে দিল। নিজের কান্না ভূলে আমি মামার কান্না দেখতে লাগলাম। লোকজন ভির ঠেলে মামাকে নিয়ে চলে যায়। আর আমি সেই পানে তাকিয়ে আছি।

গাড়ির পেছনের সিটে আমি আর তানভীর বসেছি। সামনের সিটে তানভীরের এক কাজিন আর তার পিচ্চি একটা মেয়ে। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে। বেশী কাদার জন্য মাথা ধরেছে খুব। কাল রাত থেকে খাওয়া হয়নি। সিটের সাথে গ এলিয়ে দিলাম। রাস্তা কিছুক্ষণ পর পরই খারাপ হয়ে আছে। ঝাঁকুনি তে আরো খারাপ লাগছে।

মনে হচ্ছে কারো উপর শরীর টা ছেড়ে দিতে পারতাম। কিন্তু কাল উপর দিব আমার পাশে যে বসে আছে সে ফোনে চ্যাটিং এ বিজি। আমার দিকে তার কোন খেয়াল নেই। না সহ্য করতে পেরে উনার শেরওয়ানির এক কোনা হাত দিয়ে খিচে ধরলাম। কিছু বলতে পারলাম না। আস্তে আস্তে চোখ বুজে গেল।

পানির ঝাপটায় আর কারো নরম হাতের হালকা হালকা চড়ে হুস হচ্ছে আমার। আস্তে আস্তে তাকিয়ে দেখি আমার উনি আমার গালে চড় দিচ্ছে আর বলছে
“Hey girl Wake up Wake up please O shit What i doing Now bro Since 30 minutes she is scenseless”
আমার চোখ খোলা দেখে তিনি দীর্ঘশ্বাস নিলেন। পিচ্চি টা আমার পাশে বসে দেখছে শুধু আমায়।

ওনার কাজিন ভাইটা বললেন ~”ভাবি জুস টা খেয়ে নেন শক্তি পাবেন।”ভাইয়া টা জোর করে জুস সহ একটা আপেল আর একটা ব্রেড ও খাওয়ালেন আমায়। এখন একটু ভাল লাগছে। কিন্তু কোন কথা বলছিনা। উনি ওনার মত আবার ফোনে নিজেকে সপে দিয়েছে।

পিচ্চি টা নানান রকম কথা বলছে। আমি শুধু চুপচাপ শুনে যাচ্ছি। চোখে মুখে প্রশ্নের ছাপ একে বলছে
~ সুইট মামনি সুইট মামনি তুমি ঘুমিয়ে কেন পরেছিলে গো? তুমি বুঝি রাতে ঘুমাও না? আমার মত চোখ বন্ধ করে থাক বুঝি? তুমি জুসটা সব টুকু খেলেনা কেন? জান না সব টুকু না খেলে রাক্ষসীরা রাতে এসে হাওমাও করে। তুমি কত সুন্দর সেজেছ তুমি বুঝি কথা বলতে পার না? ওহ তাহলে তুমি ডল? বড় ডল?

ও আঙ্কেল ( তানভীর কে ডেকে ) তোমার এই সুন্দর বড় ডল টাকে আমায় দিবে? আমি বাসায় নিয়ে গিয়ে খেলব।
এবার আমি হেসে দিলাম। আমার হাসি শুনে একবার আমার দিকে তাকিয়েই আবার চোখ ঘুরিয়ে নিল।

শশুর বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামিয়েছে। শাশুড়ি সহ অনেকে নিয়ম নীতি মেনে আমায় গাড়ি থেকে নামাল। দোতালা বিশাল বাড়ি। অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। দেখতে দেখতেই ভিতরে ডুকলাম। গেস্টরা যে যার মত বাসায় চলে যাচ্ছে।

মিম আপু আমায় নিয়ে উনার রুমে পৌছিয়ে দিয়ে বলে
~ শোন এটা আজ থেকে তোমার আর ভাইয়ার রুম। যদিও বড় জা হও তবুও বয়সে ছোট জন্য তুমি করেই বলছি। মাইন্ড কর না।

~ না আপু কি বল এসব? আমি কিন্তু তোমায় আপু বলেই ডাকব। না করতে পারবে না।
~ যাক এ বাড়িতে আমার একটা জা না বোন নিয়ে আসলাম।
~ হুমম।
~ ওকে তুমি ফ্রেস হও আমি গেলাম।
~ ওকে।

আপু চলে গেল। আমি রুম টাকে দেখছি। অসম্ভব সুন্দর রুম। লাক্সারি ফার্নিচার দিয়ে সাজানো বড় সড় একটা রুম। সাড়া ঘর জুড়ে গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো। বেডের পাশে বড় করে বাধানো উনার একটা ছবিতে চোখ আটকে যায়। ব্লাক ব্লেজার পড়া, হাতে ব্লাক ওয়াচ, চুল গুলো হালকা ব্রাউন কালার করা, মেকি স্মাইল দিয়ে একচোখ উচু করে তাকানো। উফ আই এম ক্রাসিত।

নিচ থেকে কি জানি পরার শব্দ শুনলাম। হা আবার পাচ্ছি। আস্তে আস্তে এগিয়ে শিড়ির কাছে যেতেই ড্রয়িং রুমে যেতেই দেখি তানভীর জিনিস পত্র ছোড়া ছুড়ি করছে। রাগের চোটে মুখ রক্তিম বর্ণ ধারন করেছে। কপালে ছোট ছোট ঘামের কণা জমেছে।

তানভীরঃ তোমার কথা অনুযায়ী ঐ মেয়েটাকে বিয়ে করেছি। হেপি তো তুমি। এখন আমায় যেতে দাও।
সোহানাঃ বিয়ে করলেই সব হয়ে যায় না ইভান। দায়িত্ব নিতে হয়। বাসর রাতে নিজের বউকে রেখে অন্য মেয়ের কাছে যাচ্ছ। লজ্জা করে না তোমার?

তানভীরঃ মম মিশুর কি অবস্থা বোঝতে পারছ তুমি? আমাকে যেতে হবে তার কাছে।
সোহানাঃ তোমার বউ তোমার জন্য ওয়েট করছে। কত সপ্ন নিয়ে ও তোমার জীবনে এসেছে এটা কি তুমি বুঝছ না? তুমি চলে গেলে কি হবে তার?

তানভীরঃ আমাকে যেতে দাও মম। মিশু কাঁদছে।
সোহানাঃ মিশু নাইট ক্লাবে ফুর্তি করছে। কোথাও যাবে না তুমি। ঘরে গিয়ে দেখ। তোমার জন্য কত সুন্দর ফুল তুলে নিয়ে এসেছি আমি।

আর কিছু শুনতে চাইনা আমি। দৌড়ে রুমে চলে এলাম। মামা এ কোথায় বিয়ে দিলে তুমি আমার জীবন টা কি এভাবেই যাবে? আম্মু চলে যাওয়ার পর আব্বুর ভালবাসাটাও হারিয়েছি।

একমাত্র শুধু তোমার ভালবাসা পেয়েছি তাও দূর থেকে। আজ আমার স্বামী আমাকে না অন্য কাউকে ভালবাসে। আমি কিছুই পেলাম না। হেরে গেলাম আমি। ও আমার আল্লাহ আমার জন্য কি কিছুই রাখনি তুমি? আমি যে শূণ্য।

আমি কোথায় গিয়ে দাড়াব এবার যে আশ্রয় ছেড়ে এসেছি সেখানে আর কখনও জায়গা হবে না আমার। এখানেও হল না। কোথায় যাব আমি? যে মামা এত আশা করে বিয়ে দিল আমায় তার সামনে কি জবাব দিব আমি?
কাদতে কাঁদতে রুমের এককোণে বসে পরলাম। কিছুক্ষন পর ওভাবেই ঘুমিয়ে পরেছি।


পর্ব ৪

ঘুম থেকে জেগে দেখি বিছানায় শুয়ে আছি। গায়ে রেশমি চাদর জড়িয়ে আছে। পরিবেশ একদম শান্ত। শুধু শিরশিরানী হাওয়া গায়ে লাগছে। কিন্ত খালামনি ও আমার আল্লাহ আমি যে ভুলেই গেছি আমার বিয়ে হয়ে গেছে। মাঝখানে একটি দিনের পার্থক্য। গত কাল আমি ঐ বাড়ি তে ছিলাম আজ এ বাড়িতে।

জীবন কত বৈচিত্র্যময় কাল এসময়ে ছিলাম মিস আর আজ আমি মিসেস। এক জনের জীবনের সাথে নিজেকে মিশিয়ে ফেলেছি। কিন্ত সে যে আমায় আলাদা করে দিতে চায় কথা টা মনে পড়তেই দু চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। কিন্ত গালের সাথে জল মিশে গড়াতে পারল না এর আগেই কেউ হাত দিয়ে লুফে নিল। তাকিয়ে দেখি আমার শাশুড়ী মা।

আমার পাশে এসে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
~ এখন কেমন লাগছে? খারাপ লাগছে খুব? কাঁদছিস যে
তার মমতা ভরা কথা শুনে খুব জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করছে কেন করলেন এমন? আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করিনি সব জেনেও নিজের ছেলের সাথে বিয়ে দিলেন। আমার কোন আশ্রয় নেই প্রতিবাদ করার কেউ নেই কিছু বলার কেউ নেই এজন্য কি? হয়তবা তাই।

পরম যত্নে আমার মাথা নিজের কাধে নিয়ে বললেন
~ আমি যেমন ইভানের মম তেমন তোর ও মম। মমের সাথে সব কষ্ট শেয়ার করতে হয়। নইত মম বোঝবে কি করে যে তার মেয়ের কোথায় কি জন্য কষ্ট হচ্ছে?

এত ভালবাসা পেয়ে এক প্রকার শব্দ করেই কাঁদতে লাগলাম। কি বলব আমি? গলা জড়িয়ে ধরে বললাম
~ বাড়ির জন্য মন খারাপ তো তাই
~ একদম না। বাড়ির জন্য একদম মন খারাপ করতে পারবিনা। তুই কতটা হেপি ছিলে ঐ বাড়িতে আমি খুব ভালো করেই জানি। কাল যখন তোকে বরণ করে নিয়েছি তখন তোকে বউ না মেয়ে হিসেবে বরণ করেছি। আমি তোর মম।

পারবিনা আমাকে মমের আসনে বসাতে?
~ আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম।
উনি এবার আমাকে উঠে ফ্রেশ হতে বলে চলে গেলেন।

নিচে নামছি খুব ক্ষুধা লাগছে উঠেছিই ৯টায়, এখন প্রায় দশটা বাজতে চলল। না জানি কি মনে করেছেন তারা নতুন বউ কই সকালে উঠে সবার মন জয় করার কাজে নামবে তা নয়তো ৯টায় ঘুম থেকে উঠছে। কেউ নেই নিচে। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছি বাড়িটাকে। আমাকে দেখে মিম আপু এগিয়ে এলেন। হয়ত আশেপাশেই ছিল।

এসেই কপালে হাত দিয়ে বললেন
~ জর তো নেই। তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তুমি কতটা দুর্বল। এসো
আমার জর আর আমিই জানি না। আমাকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসিয়ে দিলেন। খাবার এনে সামনে রেখে একটা চেয়ার টেনে নিজেও বসলেন।

আমি খাচ্ছি আর আপু কথা বলছে
~ তোমার জর অথচ আমি যখন তোমার সাথে ছিলাম বললেনা কেন? ভাইয়ার ডাকে গিয়ে দেখি বেড এ অজ্ঞান হয়ে শুয়ে আছ। শরীর জরে পুড়ে যাচ্ছে। বিয়ের লেহেংগাটাও খুল নি। আমি আর মম অনেকক্ষণ মাথায় পানি ঢালার পর জর কমেছে।

এতক্ষণে আমার মনে পরল আমি তো ফ্লোরে ছিলাম তার মানে উনি আমায় বেডে নিয়ে গেছেন। ইসসস আমি ওনার জীবনে না জেনে একটা উটকো ঝামেলা হয়ে আসলাম। কিন্তু কোথায় উনি?

দিন গড়িয়ে রাত হয়ে গেছে তবুও উনার দেখা মিলল না। সারাদিন মিম আপুর সাথে গল্প করেই কাটল। উনার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। উনি নাকি বাইরে শক্ত ভিতরে নরম। উনাকে একমাত্র মম ই দমাতে পারে। কাজের ব্যাপারে অনেক সিরিয়াস। দেশের শ্রেষ্ঠ বিজনেসমেন দের মধ্যে একজন। তানভীর ইভান খান তরুণ ব্যবসায়ীর উজ্জ্বল মুখ। কলেজ লাইফে নাকি রাজনিতীও করেছে। আরো অনেক কিছু।

খাবার টেবিলে সবাই একসাথে বসে খাচ্ছে। একটু আগেই বাসায় এসেছে উনি। কেন জানিনা উনাকে দেখেই আমার কান্না পাচ্ছে। পাশাপাশি বসে খাচ্ছি বিয়ের পরের দিন কত না ভালোলাগায় ভরপুর হত এ সময়টা অথচ আজ আমি ভিতরে ভিতরে কেদে মরছি। খাবার গলা দিয়ে খুব কষ্টে নামাচ্ছি। না খেলে আবার কি মনে করবে উনারা তাই।

মম ~ আম্মু আই এম সরি। আমি তোর রিসিপসনের অনুষ্ঠান করার চেষ্টা করেছি বাট পারলাম না। তোর বাপের বাড়িতে বলেছিলাম আজ রিসিপসন এ আসতে। হল না তাই সকালে না করে দিয়েছি। আমার খুব ইচ্ছা ছিল টাস্ট মি। প্লিজ কষ্ট নিস না।

মমের কথা শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। ফুপিয়ে কেদে উঠলাম। উনি আমার কান্না কিছুক্ষণ চুপ করে দেখে উঠে চলে গেলেন। উনার চলে যাওয়া দেখে মম ও পিছু পিছু চলে গেলেন। সোরোয়াজ ভাই আর মিম আপু আমায় শান্ত করার চেষ্টা করছে।

মমঃ খাবার ছেড়ে রুমে চলে এলে। মেয়েদের চোখের জল মানে কি জানো? কারণে অকারণেও যদি কোন পুরুষের জন্য কোন নারীর চোখের একফোটা জল গড়ায় তাহলে তার জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত হয়ে যায়। এরকম জল আমিও ফেলেছি। তার সাক্ষী তুমি নিজেই। তোমার পাপাকে আমি ক্ষমা করেছি। কিন্ত তোমার বউ কি তোমায় ক্ষমা করবে?

তানভীরঃ মম আমিইইই
মমঃ আমি কিছু শুনতে চাইনা। পরকিয়া থেকে দূরে থাক।
মম চলে গেল।

তানভীরঃ আমি কি করবো মম। আমার জন্য যে আরেকজন পাগল প্রায় আমাদের কত বছরের friendship 1year relationship ওকে কিভাবে নাহ পাগল হয়ে যাবো আমি। আমি কারো চোখের জলের কারণ হতে চাই না। আগুন সুন্দরীর তো নয়ই। ওই মেয়ে যে পবিত্র। ওকে কষ্ট দিয়ে আমি নিজেও শান্তি পাচ্ছি না। অস্থির লাগছে সব কিছু।

শোবার জন্য রুমে এলাম। উনি সোফায় ল্যাপটপ নিয়ে বসেছেন। আমি চুপচাপ দাড়িয়ে ভাবছি কোথায় শোব বেডে শুব? ওনি যদি কিছু বলেন? নিজেকে খুব অসহায় লাগছে কি করব?

উনি ল্যাপটপ এ তাকিয়েই বলল
~ অসুস্থ শরীরে রাত জাগার কোন মানে হয় না। ঘুমিয়ে পরো। এভাবে দাড়িয়ে আছো কেন? যাও বেডে গিয়ে শুয়ে পড়।

ওনার কথায় আমার হৃদয় শান্ত হয়ে গেল। বেড়ে গিয়ে একপাশে শুয়ে পরলাম। ঘুমের রাজ্যে ডুবে গেলাম।

সকালে ঘুম ভাঙল আযানের আওয়াজে। মসজিদ টা মনে হয় খুব কাছেই কোথাও। সোফায় চোখ যেতেই দেখি উনি ল্যাপটপ কোলে নিয়েই হালকা ঝোকে ঘুমিয়ে আছেন। চাদরটা নিয়ে তার দিকে এগিয়ে গেলাম। চোখ থেকে চশমাটা খুলে চাদর জড়িয়ে দিলাম গায়ে। কত সুন্দর ঘুমোচ্ছে।

এক ঠোটের উপর আরেক ঠোঁট দিয়ে পুরো বাচ্চা দের মত ঘুমোচ্ছে। এত্তগুলা কিউট লাগছে। তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছা করছে শুধু আমিও বোকা বনে গিয়ে তাকিয়েই আছি। আর ভাবছি আমার বর এত্তো গুলা সুন্দর। তাহলে বুড়ো দাদি গুলো যে বলেছিল আমার বর কাল হবে।

সুন্দর মেয়ে মানুষের নাকি কালো জামাই হয়। হহুহহহহ যত্তসব মিথ্যা কথা। ইচ্ছে করছে এখনি বুড়িগুলাকে ধরে এনে দেখাতে যে দেখ আমার জামাই কত্ত ফর্সা, সুন্দর টমেটোর মত। ইচ্ছে করছে কামড় দেই একটা। কিন্ত আমি তো টমেটো খাই না তাহলে এইটা কেন কামড় দিতে ইচ্ছা করছে?

বিকালে বাড়িটা একেবারে ভরে গেল। আব্বু, খালামনি, দোলা, টোটো, টুকু, মামা মামনি সবাই এসেছে। সবাই মমের সাথে গল্পে মেতেছে। টোটো আর টুকু সরোয়াজ ভাইয়ের সাথে দুষ্টুমি করছে। দোলা এসে আমার গলা জড়িয়ে ধরেছে আর ছাড়ার নাম নেই।

দোলাঃ আপুই আমার ঘুম হয় না।
আমিঃ কেন সোনা ঘুমাও না কেন?
দোলাঃ তুমি ছাড়া ঘুম আসে না। তোমায় জড়িয়ে না ধরলে ঘুম আসে না। ফাকা ফাকা লাগে খুব।

আমিঃ আমি খালামনিকে বলে দিব কোল বালিশ দিতে কেমন?। কি করবি সোনা এখন তো আমি নেই।
দোলাঃ আচ্ছা।
আমিঃ হামম।
খালামনি আমার কাছে এসে আমায় নিয়ে রুমে চলে এলো।

খালামনি ~ বাহ চমৎকার রুম। এইখানে তুই থাকবি। শোন জামাইবাবা কি দিল রে তোকে? তোরে যত্ম নেয়?
আমিঃ হা খালামনি অনেক ভালো উনি। যত্ন নেয়।
খালামনিঃ কার ভাগনি দেখতে হবে না আমার মত সুন্দরী হয়ছস তাই তো এতবড় বাড়িতে বিয়ে হয়ছে। সব এই রুপের জোর বুঝলি।

আমিঃতাহলে তুমি কেন আমার আব্বু কে বিয়ে করলে? অনেক বড় বাড়ির বউ হতে পারতে।
খালামনিঃ কাশতে কাশতে কিছু না বলে বেড়িয়ে গেল।

নিচে আমিও আসি। দেখি ওনার সাথে মম কি জানি বলছে আর বাকিরাও বলছে।
তানভীরঃ Mom it’s not possible I can’t go I have much pressure in my business
মমঃ it’s rules evan Please try to understand
তানভীরঃ sorry mom Sorry uncle ( মামা )।

উনি রুমে চলে গেলেন। মম এসে বলল
~ তোর যাওয়া উচিত আম্মু।

~ মম উনি না গেলে আমি কিভাবে যাই?
আমি ওদের বিদায় দিয়ে উপরে চলে আসলাম।

পর্ব ৫

তানভীরঃ মিশু মিশু মিশু please try to understand dear আমি যানি না এখন আমার কি করা উচিত।
মিশুঃ এখনও তুমি ভাবছ কি করা উচিত? এই তুমি ভালোবাসো আমাকে? তানভীর তুমার জন্য শুধু মাত্র তোমার জন্য আমি বিডি তে একা পরে আছি। আমার ফেমেলি ইউ এস এ তে। এখানে নিজের বলতে শুধু মাত্র তুমি আছ।

তাও তুমি বিয়ে করে নিলে। কিসের অভাব আছে আমার মধ্যে। কি নেই আমার মধ্যে যা তুমার বউয়ের মধ্যে পেয়েছ? আমি আসছি। কি দেখে পাগল হলে আমিও দেখতে চাই।
তানভীরঃ না মিশু না আসবেনা তুমি শোন হ্যালো হ্যালো। উফ dammit

রুমে ঢুকতে গিয়ে উনার ফোনে বলা কথা গুলো শুনলাম। মিশুর সাথে কথা বলছে। স্বামী তার স্ত্রীকে রেখে জি এফ এর সাথে কথা বলছে। এটা যে কতটা যন্ত্রণা দায়ক একজন স্ত্রীর কাছে তা একমাত্র সেই স্ত্রী জানে। বিয়ে হয়েছে আজ পাঁচদিন।

কই আমার সাথে তো প্রয়োজন ছাড়া কোন কথা বলে নি। আমি কি ভাল ভাল কথা বলতে পারি না নাকি আমার গলাই কাকের মত যে তার শুনতে ইচ্ছা করে না? কোনটা?
আমাকে দাড়িয়ে থাকা দেখে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।

উনার রুমের সুন্দর একটা বেলকনি আছে। দুটো মোড়া আর ছোট্ট একটা টি টেবিল বসানো। কিছু নাম না জানা গাছ ও আছে। মিম আপুর থেকে জানতে পারলাম তার নাকি গাছ অনেক পছন্দের। এই গাছ গুলো নাকি কয়েকটা কান্ট্রি থেকে এরেঞ্জ করেছে। ছাদে নাকি তার পুরো একটা বাগান রয়েছে। পুল ও আছে। ছাদে নাকি উনিই বেশি যায়।

অন্যরা প্রয়োজন ছাড়া যায় না। ছাদে আমার যাওয়া হয়নি। বাড়ির বাইরে থেকেও বোঝা যায় না। পরন্ত বিকালে রেলিং ধরে বিশাল আকাশের সাদা মেঘেদের খেলা দেখছি। তখনি ভিতর থেকে মেয়েলি আওয়াজ পেলাম। এটা তো মিম আপুর গলা নয়। কৌতুহল বশত রুমের দিকে এগিয়ে এলাম।

মিশু আপু পাগলের মত বিহেব করছে আর উনি তাকে থামানোর চেষ্টা করছে।

~ মিশু কি হচ্ছে টাকি? কন্টোল ইউরসেল্ফ। পাগলের মত বিহেব কেন করছ তুমি?
~ পাগল তো পাগলের মত বিহেব করবেই এটাইতো নরমাল তাই নয় কি? আমি পাগল আমি তোমার জন্য পাগল। আমাকে পাগল করে তুমি কি করে অন্য কাউকে নিয়ে ফুর্তি করছ? 😡😡
~ ঠাসসস
~ তুমি আমায় মারলে?

~ হা মারলাম। আমি তোমাকে ভালবাসি। তুমি আমাকে ভালোবাসো। এটাই যথেষ্ট নয় কি? বিয়ে টা আমি বাধ্য হয়ে করেছি এটা তুমি ভাল করেই জানো। তানভীর ইভান খানের মেয়ের অভাব হয় না। ফুর্তি করার হলে অনেক আগেই তোমার সাথে করতাম। আর ঐ মেয়ে অন্য কেউ না আমার বিয়ে করা বউ। ক্লিয়ার?
~ বাহ কি চমৎকার। তোমার বউ তোমাকে এমনি মধু খাওয়াল যে আমার গায়ে হাতও তুলে ফেললে।
~ ঠিক করে কথা বলো।

তখনি আমাকে দেখে মিশু।
~ এই মেয়েটা কোথায় যেন দেখেছি ইয়েস। তোমার গ্রামের বাড়ি দেখতে গিয়ে দেখেছিলাম। একে বিয়ে করেছ তুমি এই ভিখারী টাকে হা হা হা হা হা এর জন্য আমার সাথে সাতদিন থেকে কন্ট্রাক্ট কর না? হাউ ফানি

মিশুর হাসিতে আমার শরীরে জালা ধরে গেছে। মনে হচ্ছে কেউ কাচা মরিচ বেটে খুব যত্ন নিয়ে আমার সর্বাঙ্গে লাগিয়ে দিচ্ছে। একবার উনার দিকে তাকাতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু না আমি তাকাব না। সেই অধিকার দেখানোর পরিবেশের মৃত্যু ঘটেছে। দোষ আসলে আমারি। বামুন হয়ে চাদে হাত বাড়াতে চাইছি। আমি যে ভিখারী তা মিশু প্রমাণ করে দিল।

নইত যখন উনাদের সম্পর্কের কথা জানতে পারলাম তখনি আমার চলে যাওয়া উচিত ছিল। কিসের লোভে পরে আছি আমি? এখানে থাকার স্বার্থ কি? কিন্তু কোথায় যাব আমি? আমার কি যাওয়ার জায়গা আছে কোথাও? বাপের বাড়ি যাব কিভাবে?

বাবা যে আমার নেই। এখন সেখানে গেলে যে নরপশু গুলো আমাকে ভোগ করার জন্য উঠে পড়ে লাগবে আমার খালামনি যে তাদেরি দলে এতদিন নিজের জোরে টিকেছি এখন যে আর পারবনা আমার রুপ আজ আমার কাল হয়ে দাড়িয়েছে।

ফ্লোরে বসে ভাবছি কথাগুলো। চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে। আশে পাশে কে আছে কিচ্ছু খেয়াল নেই। শরীর অসাড় হয়ে যাচ্ছে।

মাঝরাতে চোখ খুললাম খুব কষ্টে। মাথা টা ঝিম ঝিম করছে। বিছানায় নিজেকে দেখতে পেলাম। বাড়ির সবাই ঘিরে রেখেছে আমায়।

ডাক্তারঃ এইতো মামনি চোখ খুলেছে। ভাল লাগছে?
আমিঃ হুমম। মাথায় পেইন হচ্ছে।
ডাক্তারঃ শোন আমি এবাড়ির অনেক পুরোনো ডাক্তার। তোমার শশুর আমার ফ্রেন্ড ছিলেন।
আমিঃ জি আংকেল।

ডাক্তারঃ মেন্টালি প্রেসার বেশি নেওয়ার জন্য সেন্স চলে গিয়েছিল। এটা শরীরের জন্য খুবই খারাপ। ঠিক মত খাওয়া দাওয়া কর না। প্রেসার একদম লো। ভাবি ( মম ) নতুন বউ কে বেশি বেশি খাওয়াবেন শরীর একদম দুর্বল।

ডাক্তার সহ সবাই চলে গেল। এতক্ষণ আমার চোখ যে একজন কেই খুজে চলেছে কিন্তু কোথায় উনি? উনি কি মিশুর কাছে? তখনি ওনি রুমে এলেন। এসেই আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। সামনে এসে জিজ্ঞাসা করলেন
~ কিছু বলবে?

~ আপনি এখানে? মিশুর।
হায় হায় মুখ ফসকে প্রশ্ন করে দিলাম যে
~ মিশুর কাছে গেলে তুমি হেপি হবে?

ওর কথা শুনে মাথায় যেন শরীরের সব রক্ত উঠে গেল। হারামি একটা ওই ডংগির কাছে গেলে তুই হেপি হবি আমি না। তুই যাবি আর ওই শাঁকচুন্নী তোর ঘার মটকাবে। কত বড় কথা আমার হেপি হওয়ার চিন্তা করছে হুহহ। ওই চুন্নির সাথে তোকে দেখলেই মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়। ইচ্ছা করে কলিজার মধ্যে ঢুকিয়ে আচল দিয়ে ঢেকে রাখি যাতে ঐ রাক্ষসী খুজেও না পায়। আফসোস ঐ বান্দরী আগেই তোর দিকে নজর দিয়ে বসে আছে।

রেস্টুরেন্টে সামনা সামনি বসে সোহানা আর মিশু।
সোহানাঃ কত টাকা হলে আমার ছেলের পিছু ছাড়বে?
মিশুঃ কত টাকা দিবেন আপনি?
~ যত চাও ততই পাবে এক কোটি, দুই কোটি, পাচ কোটি, দশ কোটি বল কত চাও?

~ কুল মিসেস সোহানা খান এত হাইপার হবেন না। সরাসরি কোটি অফার করলেন? গ্ৰেট।
~ হেয়ালি না করে বল কত হলে আমার ছেলের পিছু ছাড়বে?
~ (চেয়ার থেকে উঠে এসে সোহানার সামনে মুখ নিয়ে ) Do you know Mrs sohana khan Your son is an item boomm So so so much Handsome And Also very very hot মাল টাকে ছাড়ার কোন প্রশ্নই আসে না।

~ মিশুউউউউ
~ আস্তে। আমি বিজনেসমেন। বিজনেসটা ভালোই বুঝি। খান প্রোপার্টির মালকিন হতে চাই। প্রোপার্টির মালিক তো টোপ মাত্র। হা হা হা হা
~ আমি বেঁচে থাকতে কখনোই তোমার সপ্ন পুরন হবে না। দেখে নিও। গুড বাই।

এ বাড়িতে সার্ভেন্টের অভাব নেই। সব কাজের জন্য লোক রাখা। মিম আপু আর আমি সারাদিন গল্প করে ফুর্তি করে দিন কাটাই। তাই খারাপ লাগে না। কিন্তু বসে বসে বোর হয়ে যাচ্ছি। আপুকে রাজি করিয়ে কিচেনে গেলাম। ঠিক করলাম ডিনারে বিরিয়ানি করব। এবাড়ির সবাই ডায়েট ফুড খায়। একদিন একটু অন্যরকম হলে ক্ষতি কি? একদিন খেলে কিচ্ছু হবে না।

ডিনারে সবাই গম্ভীর ভাবে বসে আছে। খাবার দেখে আবহাওয়া কোন দিকে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। ভয়ে আত্মা উড়ে যায় যায় অবস্থা আমার। কিছুক্ষন পর উনি বলে উঠলেন
~ এই কাজ কে করেছে?

কারো মুখে কথা নেই। আমি আর আপু মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি।
~ মুখের বুলি বের হবে কি হবে না?
ও আমার আল্লাহ, একি করলাম আমি? রান্নার আগে জেনে নেওয়া উচিত ছিল। আপু আমার কানে কানে বলল উনি নাকি এসব বেঙ্গলী রিচ ফুড কখনো বাসায় করতে দেয় না। ইতালিয়ান ফুড বেশি লাইক করে।

সবাইকে অবাক করে দিয়ে উনি বিরিয়ানি র প্লেট নিজের দিকে নিয়ে ঘ্রাণ নিতে থাকে। তারপর নিজেই প্লেটে নিয়ে খেতে থাকে। কিচ্ছু মুখে না বলে পুরো চার প্লেট বিরিয়ানি সাবার করে দিল। যে ব্যক্তি এক প্লেটের বেশি খাবার খায় না সে চার প্লেট বিরিয়ানি খেয়ে নিল ভাবা যায় এগুলা?

খেয়ে দেয়ে উনি চলে গেলে আমরা সবাই খেয়ে নেই।
রুমে গিয়ে দেখি উনি নেই। বারান্দার দরজা খুলা দেখে বারান্দায় গেলাম। দেখি উনি ফোনে কথা বলছে আর কোক খাচ্ছে। কথার ধরণ দেখেই ফোনের ওপাশে মিশুর উপস্থিতি বোঝে গেলাম। মন খারাপ হল না। সয়ে যাচ্ছে মনে হয়। ফোন রেখে উনি আমার দিকে কোকের বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল
~”drink it By the way, বিরিয়ানিটা দারুণ ছিল।”

উনার কৃতজ্ঞতা জানানোর স্টাইল দেখে ফিক করে হেসে দিলাম। আমার হাসি দেখে উনি তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
~ আমি আরো ভেবেছিলাম আপনি না খেয়েই উঠে আসবেন।
~ মাঝে মাঝে এরকম কিছু করতে পারো।

বাব্বা মাঝে মাঝে করতে বলছে মিশু ডংগীর সাথে যে প্রেম কদিন পর না আমাকে ডিভোর্স ই দিয়ে দেয়। এর আগে ফেন্টাসি নিতে চাচ্ছে। করবনা হুহহ আমার কিসের ঠেকা। অবশ্য আমিই তো খেতে পারি না। যাই হোক ঘুম আসতেছে। ঘুমাইগা।

পর্ব ৬

একটা সকালেও উনার মুখ দেখে বিছানা থেকে উঠতে পারি না। একমাসের বেশি হয়ে গেল এই রুমে আছি। একদিনো ঘুম থেকে উঠে ওনাকে দেখতে পায় নি। আজ ফজরের আযানের পর পরি উঠেছি। তাও পেলাম না। আজ নামায একটু পরেই পরব। উনাকে খুজার মিশনে নেমে গেলাম। পুরো দশ মিনিট ধরে খুঁজেও পেলাম না। আশাহত হয়ে ড্রয়িং রুমে সোফায় ধপ করে বসে পরলাম। ওমা একি দেখি আমি আমার উনি বাসায় ঢুকল।

সাদা পাঞ্জাবি পাজামা পড়া মাথায় সাদা টুপি ঘুম থেকে উঠা ফ্রেস লুক। এ তো সেই পুরুষ যাকে নিয়ে আমি জেগে জেগে কল্পনার পথ পাড়ি দিতাম যার সাথে জান্নাতে অফুরন্ত ভালবাসা নিয়ে বাঁচতে চাইতাম। উনি নামায আদায় করেন এই প্রথম দেখলাম। কিন্তু আফসোস কি দেখে যে ঔই ডংগির প্রেমে পড়েছে আল্লাহই জানে। পর্দা তো করেই না তারমধ্যে আবার ছোট ছোট জামাকাপড় পরে। একদম আনমেচড। আহারে আমার জামাইটার ভাগ্য টাই খারাপ।

ভাবনার জগৎ এ এতটাই ভিভোর আমি যে উনি বার বার আমায় ডাকছে তার দিকে নজর নেই। একমনে চোখ ভরে দেখছি তাকে। না পারতে হালকা একটু ধাক্কা দেয় আমায়। ধাক্কা খেয়ে তারাতারি করে উঠে রুমে চলে এলাম। ইসস কি নিলজ্জ আমি কিভাবে তাকিয়ে ছিলাম। কিন্তু আমার যে আবার তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে এটুকু দেখায় কি চোখের তৃষ্ণা মিটে? আমার চক্ষু যে উনাকে দেখার জন্যে এত উতলা আমি তো জানতামি না।

নামায সেরে আবার উনাকে খুজছি। যতক্ষণ বাসায় থাকে উনি থাকে কোথায়? আমি কেন উনাকে দেখতে পাই না? উনি সামনে থাকলেই শান্তি লাগে। শান্তি টা খুবই বিষাক্ত শান্তি। বেশির ভাগ সময় ঐ মিশুর সাথে ফোনে কথা বলে। তবুও তার কাছাকাছিই থাকি। তার কথা শুনি। কত সুন্দর করে কথা বলেন উনি। আমার সাথে একটু বললে কি এমন ক্ষতি হতো? খুব ভালো লাগে উনার কথা। উনি যখনি কথা বলে সবসময় আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলে।

সেই মুহুর্তে মনে হয় কথা গুলো আমাকে বলছে অদ্ভুত ভাললাগা কাজ করে। আবার যখনি মনে পড়ে ফোনের ওপাশে কারো জন্য এই কথা গুলো উৎসর্গ করা হচ্ছে তখনি বুকের ভেতর চিন চিন করে ব্যথা অনুভব করতে থাকি। এই ব্যথা আর ভালো লাগা মিলে এক ভয়ংকর অনুভূতি সৃষ্টি করে যা অসহ্য যন্ত্রণা দেয়। আল্লাহ আমাকে ধৈর্য দান করুন।

কোথাও খুঁজে পেলাম না। কোথায় উনি? তখনি মনে হল ছাদের কথা। কিন্ত ছাদে তো আমি যায় নি কখনো। ছাদে নাকি উনিই আসে অন্যরা প্রয়োজন ছাড়া আসে না।

একপা দুপা করে সিড়ি দিয়ে উঠছি। ছাদের ডোর খুলা দেখে বুঝতে পারলাম উনি ছাদেই আছেন। ছাদে পা রেখে বুঝতে পারছি না কোথায় এলাম। একবার মনে হচ্ছে বাগান বিলাসে এসেছি আরেকবার মনে হচ্ছে মুক্ত আকাশের নিচে সবুজ ঘাসের বুকে দাড়িয়ে আছি সামনে সুন্দর একটা পুল দেখে মনে হচ্ছে সুইমিং করতে এসেছি। কিন্তু আমি তো সুইম পারিই না করব কিভাবে?

ভিতরে ঢুকে ছাদ টা দেখতে লাগলাম। অসম্ভব সুন্দর ভাবে সাজানো। অনেক ফুল ফলের গাছ। ফুল গাছ গুলো তে প্রচুর ফুল ফুটেছে। আর ফল কি বলব গো আমি অনেক গুলো পাকা আম ধরে আছে গাছে। কি সুন্দর লালচে রঙ বারমাসি আম গাছ। তখনি উনি
~ খেতে ইচ্ছা করলে পেরে খেতে পার।

পেছনে ঘুরে দেখি ওনি এক্সারসাইজ করছে। ওনাকে দেখে আমার মরে যাই যাই অবস্থা। কি মাসল রে বাবা বডি বিল্ডার। বিন্দু বিন্দু ঘামে জমা পিঠ হালকা রোদের আলোয় চিক চিক করছে। আর আমার বুকের ভিতর ঢিপ ঢিপ করা শুরু করেছে। উনি একটু একটু আমার দিকে এগিয়ে আসছে আর আমার পা সহ পুরো শরীরে কম্পন সৃষ্টি করছে।

দুটো আম পেরে আমার হাতে ধরিয়ে দিল। আমি তো জানি ওনার এই ছাদের সম্পদে কেউ হাত দিতে পারে না। এমনকি এই পুলেও কখনো এ বাড়ির লোক পা ভিজানোর সাহস পায়নি। আর আমাকে একটা না দুটো আম পেরে দিয়ে দিল।
~ যা নিতে ইচ্ছে করে নিতে পারো। বাগান টা খুব যত্ন নিয়ে করেছি। আমার হবি এটা।

~ আপনার বাগানের ফল আমায় দিলেন যে।
~ এই বাগানের মালি আমি। আনফোরচুনেটলি তুমি মালিনী ভাগ তো তোমার প্রাপ্য তাই নয় কি?

হাসি পেয়ে গেল। একটু ভালোকিছু হলেই খুশি হয়ে যাই আমি। হেসে দিলাম
~ হাসলে রক্ত জবা আরো গাড় রঙ ধারণ করে। কাঁদলে কাল রঙে পরিণত হয় খারাপ লাগে। কাঁদো কেন? আমি কি কখনো কাঁদতে বলি? নাকি কাঁদার মত বিহেব করি?

উনি চলে গেলেন। আর সেখানে দাড়িয়েই ভাবতে লাগলাম আমি সত্যিই তো উনি কখনোই আমার সাথে খারাপ আচরণ করে নি। আমাকে বলে নি কখনো যে উনি আমাকে না অন্যকাউকে ভালবাসে। উনি আমাকে আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে নি। তাহলে আমি কেন মনে মনে কষ্ট পেয়ে যাচ্ছি? আমি কেন আমার অধিকার ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করছি? উনি তো আমার স্বামী আমি অন্যকাউকে কেন দিব? উনি শুধু আমার। শুধুই আমার।

গোসল করে নিচে আসলাম। দেখি উনি আর মম বসে কথা বলছে।
মমঃ বউকে নিয়ে তো একটু বাইরে যেতে পার ওর মনে হয় কিছু শপিং করতে হবে।
তানভীরঃ তুমি যখন যাও তখন নিয়ে গেলেই তো পার
মমঃ ওর যাবতীয় সব কিছু তোমার দেখার দায়িত্ব ইভান।

তোমাদের মাঝে যে এখনও ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে নি তা ভাল করেই জানি। এভাবে কষ্ট দিও না পরে এমন না হয় ক্ষমাই পেলে না।
তানভীরঃ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে ওকে রেডি হতে বল আমি রেডি হচ্ছি।

আমি তো এক লাফে রুমে চলে এসেছি। শপিং এ যাব কি মজা। আই লাভ শপিং। কিন্তু কি পরব? কিভাবে সাজব? ও আমার আল্লাহ আমি তো কিছুই ঠিক করতে পারছি না। মম রুমে এলেন।

~ আম্মু তুমি একবারো শপিং এ গেলে না তাড়াতাড়ি রেড়ি হয়ে নাও ইভানের সাথে শপিং এ যাবে।
~ ওকে মম। আমি তো জানিই শপিং এ যাব কিন্তু মমকে বুঝতে দিলাম না।

মম নিজে আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিল। সুন্দর করে সাজিয়ে দিল।

আমি আর উনি পাশাপাশি বসে মলে যাচ্ছি। উনি ড্রাইভ করছে আর বার বার আমায় দেখছে। আর আমি ওনার তাকানো দেখে লজ্জায় মাথা নিচু করে আছি। উনার আর আমার সেম কালার ড্রেস। এককথায় আমাদের পারফেক্ট ম্যাচ লাগছে।

মলে ডুকেই উনি আমার হাত ধরে হাটতে লাগলেন। আমার লুকানো ফিলিংস গুলো ভালবাসি ভালবাসি রবীন্দ্র সংগীত গাইতে লাগলো। প্রথমেই একটা জুতার শো রুমে নিয়ে গেল। শো রুমের লোক গুলোর কথা শুনে বুঝতে পারলাম উনি এখানকার রেগুলার কাস্টমার। লোক গুলো কেমন যেন আমার দিকে বার বার তাকাচ্ছে। আমার উনি আমাকে বসিয়ে সুন্দর করে জুতা পরিয়ে পরিয়ে দেখছে কোনটা ভালো লাগে। একটা লোক এইবার প্রশ্ন করেই বসল
~ স্যার মিশু ম্যাম আসেনি? আর এই ম্যাম?

প্রতিত্তুরে উনি রাগী দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে তিনজোড়া জুতা প্যাক করতে বলে আমাকে নিয়ে চলে এলেন।
তারপর আমরা একটা জুয়েলারির শো রুমে ঢুকলাম। উনি বেশ কয়েকটা নেকলেস দেখছেন আমার জন্য।

একটা নেকলেস এ আমার চোখ আটকে গেল। নিখুঁত সুন্দর। আমি এগিয়ে যাচ্ছি নেকলেস টি নিতে। তখনি ম্যানেজার এসে নেকলেস টি নিয়ে উনার সামনে এসে
~ স্যার। মিশু ম্যাম এই নেকলেসটি অর্ডার করেছিল। আজ ইভিনিং এ নিয়ে যাবে বলেছেন। আপনি যখন এসেছেন পেমেন্ট করে নিয়ে যান।

~ ওকে আমি পেমেন্ট করে দিচ্ছি আপনি ওকেই নেকলেসটা দিয়ে দিবেন।
~ ওকে স্যার। ম্যাম আপনি দেখুন আরো লেটেস্ট ডিজাইন দেখাচ্ছি আপনাকে।

আমি বললাম ~ thank you but no need Excuse me
উনাকে বললাম আমি নেকলেস নিব না। আমার পছন্দ হয়নি কোনটা। উনি আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বুঝার চেষ্টা করে বেরিয়ে এলেন। রাগে আমার গা জলে যাচ্ছে। নিজেকে মিশুর জায়গায় দেখে ঘৃণা হচ্ছে। মনে হচ্ছে এই স্থান আমার নয়।

এটা মিশুর স্থান। তবুও উনার সাথে হাঁটছি। উনি একটা শো রুমে গেলেন। উনাকে দেখেই একটা মেয়ে সালাম দিয়ে ড্রেস দেখতে বললেন। মেয়েটি ওই মিশু ডংগীর গায়ের জামার মত জামা বের করে দিচ্ছে। আমি আর এসব সহ্য করতে পারছিনা।

খুব খুব অপমানিত বোধ করছি। এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে উনি ইচ্ছে করে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন। অন্য কোথাও নিয়ে গেলে তো এরকম অপমান করতে পারত না। আমাকে দেখাতে এসেছে যে আমি অন্যএকজনের জায়গা নিতে এসেছি।

এক ঝটকায় উঠে হন হন করে বাইরে চলে আসলাম। আমার এভাবে চলে আসা দেখে উনিও আমার পিছু পিছু এসে জিজ্ঞাসা করল
~ এভাবে চলে এলে যে।
~ বাসায় যাব।

~ বাসায় তো যাব বাট শপিং শেষ করো।
~ শপিং মিশুকে করে দিবেন আমাকে না।
রাগে আমার চোখ সহ পুরো শরীর লাল হয়ে যাচ্ছে। এই প্রথম আমি এভাবে রেগে যাচ্ছি। উনি আমার এই রুপ দেখবে ভাবতে পারে নি।

~ পাবলিক প্লেসে সিনক্রিয়েট কর না।
আমি উনার উত্তর না দিয়ে চলে আসতে লাগলাম। উনিও আমার সাথে আসলেন। গাড়িতে একটা কথাও বললাম না। খুব ঘৃণা হচ্ছে। উনার উপর না নিজের উপর। বাসায় এসে সরাসরি রুমে চলে এলাম।

রাতে ঘুমাতে এসে দেখি বেডের উপর চারটা ট্রলি ব্যাগ। এগুলো এখানে কে রাখল? কৌতুহল বশত একটা ব্যাগ খুললাম। ওমা এগুলো তো সব শাড়ি। এত্তো কিউট শাড়ি। আরেকটা ব্যগ খুললাম। এখানে সব কিউট কিউট গাউন রাখা। আরেকটা খুলে দেখি এটাতেও গাউন। সর্ব শেষ টাও খুললাম। এখানে বেশ কিছু জুয়েলারি আর জুতো রাখা। এগুলো কি ওনি এনেছেন? কিন্তু এতগুলো কেন। গুনতে শুরু করলাম ১৪ টা শাড়ি, ৫৬ টা গাউন ৬ জোড়া জুতো এত্তগুলা কেন?

দরজায় দেখি উনি হেলান দিয়ে আমার অবস্থা দেখছেন আর মিটি মিটি হাসছেন। প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম
~ আপনি কি আমাকে সারাজীবনের কাপড় একবারেই দিয়ে দিলেন? সব কিছু মানা যায় কিন্তু ৫৬ টা গাউন
~ প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিন তো গাউন পরে ছিলে তাই ভাবলাম তুমি গাউনেই কমফরটেবল। আর গাউন কী কম হয়ে গেছে? নো প্রবলেম ৫৬ দিন একটা একটা করে পড় তারপর না হয় আরো এনে দিবে।

এই বেটা নিশ্চিত কিছু খাইছে। থাক বাবা আমি আর কিছু বলবনা। আলমারিতে এক এক করে গুছিয়ে তুললাম কাপড় গুলো। জুয়েলারি গুলো তুলতেই একটা বক্স নিজের হাতে নিয়ে নিল। আমাকে মিররের সামনে দাড় করিয়ে মাথা থেকে ওরনা ফেলে দিয়ে একটা নেকলেস পরিয়ে দিল। গ্ৰিণ ডায়মন্ড আবার। ঐ চুন্নির টা থেকে হাজার হাজার গুন বেশী সুন্দর এই নেকলেস। আমার খুশি আর দেখে কে? ও হা ভুলেই গেছি উনি সামনে আছেন। তার মানে উনিই দেখতেছেন।

পর্ব ~৭

প্রায় দেড় মাস পর বাপের বাড়ি যাচ্ছি আমি। মম চায় আমি এখন থেকে উনার কাছে থেকেই পড়াশুনা করি। তাই কলেজ থেকে টি সি নিতে পাঠালো। ড্রাইভার আমাকে রেখে আবার গাড়ি সহ ব্যাক করবে। আসার সময় গাড়ি ভর্তি জিনিস দিয়ে দিয়েছে। কি কি দিয়েছে আমি নিজেই জানিইনা। সব মম প্যাক করেছে। বেয়াই বাড়ি ঘরের বউকে পাঠাচ্ছে যেমন তেমন জিনিস দিলে কি আর হয়? মমের উক্তি।

বাড়ি পৌঁছে দোলা বলে ডাক দিতেই এক দৌড়ে আমার কোলে। কত দিন পর কলিজা টাকে বুকে নিয়েছি ভিডিও কলে দেখে কি আর শান্তি লাগে?
খালামনি আর আব্বু ও বেড়িয়ে আসল। আমাকে নিয়ে ঘরে গেল। মমকে জানিয়ে দিলাম আমি চলে আসছি। ড্রাইভার এসে জিনিস গুলো ঘরে রাখল। এত জিনিস দেখে খালামনি তো সেইরকম খুশি। উনার খুশি দেখে আমিও খুশি। ড্রাইভার কে খাইয়ে আবার শশুর বাড়ির উদ্দেশ্য পাঠিয়ে দিলাম।

আমার যত্মান্ন্তির যেন শেষ নেই। আমার আসার কথা শুনে নুপুরিও হাজির। দু বান্ধবী মিলে জমিয়ে গল্প জুড়ে দিলাম।
অফিসে
মিশুঃ বেইপি তুমি এত আপসেট কেন? তোমার সামনে তোমার চারমিং হট গার্ল ফ্রেন্ড বসে আছে কই তোমার ফোকাস এখানে থাকবে তা নইত চুপ করে বসে আছো anything wrong?।

তানভীরঃ no Nothing Actually I have a little headache ( wrong তো বটেই। বার বার ঐ ডল টার কথা মনে পড়ছে। কিচ্ছু ভাললাগছে না। মনে হচ্ছে ডল টাকে না দেখলে দম বন্ধ হয়ে মরে যাবো। )
ল্যাপটপ চালু করল। ল্যাপটপ এ অনেক গুলা লাবিবার ছবি। ঘুমন্ত অবস্থায় প্রতিদিন ছবি তুলে তানভীর। ছবি দেখে মন ভরায়।

রাতে ছাদে বসে আছে তানভীর। মম এসে পাশে বসল।
মম কে দেখে জিজ্ঞাসা করল
~ ঘুমাও নি যে
~ অনেক দিন পর আগের ইভানকে দেখছি। রাত দুটো সময় ছাদে।
~ না এমনি রুমে ভাল লাগছে না। কেমন যেন ফাকা ফাকা
~ মিস করছো কাউকে?

~ হা হা হা হা। তোমার শূণ্য জীবণ পরিপূর্ণ করার লোক এসে গেছে। সুযোগ দাও তাকে। অন্যদিকে সময় নষ্ট না করে জীবন টা কে গুছিয়ে নাও।
~ মম আমি জানি না কিছু।

~ সব জানো। তোমার বুকের পাঁজর দিয়ে তৈরি সে শরীরের অঙ্গ ছাড়া হলে তো পূর্ণ হবে না বুকে ব্যথা করছে বুঝি?
~ ফিক করে হেসে দিয়ে মম তুমিও না। মজা নিও না
~ আমি বললেই তো মজা হয় তাইনা? আর অন্য জনের যে ব্যথা
~ মম যাওতো তুমি।
সোহানা হেসে চলে গেলেন।

পরদিন অফিসে
স্টাফঃ স্যার কুল ডাউন প্লিজ।

তানভীরঃ কিভাবে কুল হব আমি? দুদিন পর পর কোম্পানি থেকে ফাইল চুরি হয়ে যায় কিভাবে? কে এই কাজ করে? এখনো কেন ধরতে পারলে না তাকে? প্রত্যেকটা রুমে রুমে সিসি ক্যামেরা লাগানো। সিসি ফুটেজে কেন ধরা পড়ছে না?
স্টাফঃ স্যার শুধু ফাইল না টাকাও ট্রান্সফার হয়।

তানভীরঃwhat? এত দিন বলেননি কেন আমাকে? সমস্ত ডিটেইলস চাই আমার।
স্টাফঃ স্যার
তানভীরঃ সেট আপ। আমি যানি আপনারা যানেন এসব। আমার কাছে কাজ করে আমার সাথে শত্রুতা করে যাচ্ছেন আপনারা? আমার টা খেয়ে আমার সাথে নিমুক হারামি

স্টাফঃ স্যার আর যাই বলুন নিমুক হারামি বলবেন না। অনেক বছর থেকে আপনার কোম্পানি তে জব করি আপনি আমাদের সম্পর্কে জানেন।
তানভীরঃ what I doing Mr Rimon? আমার কেবিন থেকে ফাইল চুরি কিভাবে সম্ভব?

মিসেস সোহানা খান একটা কাজে বের হয়েছিল। পথিমধ্যেই মনে হল তানভির কে নিয়েই যাই। তাই অফিসে চলে এল। এসেই দেখে তানভীর স্টাফদের সাথে চেঁচামেচি করছে।

সোহানাঃ ইভান হচ্ছে টাকি? এভাবে বিহেব কেন করছ ওদের সাথে?
তানভীরঃ mom, do you know? Regular আমার কেবিন থেকে ফাইল পায়না আমি। আমার কোম্পানি থেকে টাকা ট্রান্সফার হয়।

সোহানাঃ ঠান্ডা মাথায় খুঁজে বের কর কে করছে এমন মাথা গরম করে তো লাভ নেই।
তানভীরঃ yeah mom Sorry Sorry everyone
সোহানাঃএক ঘণ্টা টাইম দিচ্ছি। এর মধ্য কোন একাউন্ট এ টাকা যায় তার রিপোর্ট, সিসি টিভি ফুটেজ সব দেখতে চাই।

আধ ঘন্টা পর
ম্যানেজার সিসি ফুটেজ দেখাচ্ছে
তানভীরঃ যে এই কাজ করছে সে অনেক ভালো খেলোয়াড়। মাঝখান থেকে কিছু ফুটেজ ডিলিট করা হয়েছে। এই অফিসেই আছে সে। আমাদের সামনে থেকে আমাদের ক্ষতি করছে অথচ আমরা টেরই পাচ্ছি না।
মমঃ মি রিমন মানি ট্রান্সফার রিপোর্টে কখন আসবে?

মি রিমনঃ ম্যাম হাতে পাওয়ার মাত্রই আমি আপনার বাসায় পৌঁছে দিব।
তানভীরঃ ওকে মম কোথায় নাকি যাবে চল
সোহানাঃ হুমম।

কলেজে এসেছি কতদিন পর ওয়েট করতে করতে জান শেষ প্রিন্সিপাল স্যার একটা মিটিং এ আছেন। সময় লাগবে শেষ হতে। নুপুর টা তো জালিয়ে মারছে আমায়। ওর বাসায় যেতে হবে। ওকে বাধ্য হয়ে বাসায় পাঠিয়ে একাই রইলাম। কলেজ টাকে ঘুরে ঘুরে দেখছি। গাছের পাতা গুলো সব পড়ে গেছে।

কৃষ্ণচূড়া গাছে থোকায় থোকায় ফুল ধরে আছে। কয়েকটা বাচ্চা গাছ থেকে ফুল পেড়ে বিক্রি করছে। আমায় দেখেই কয়েকটা ফুলের ডাল দিয়ে দিল। ওদের থেকে আগেও ফুল কিনেছি আমি। ফুল গুলো হাতে নিয়ে ক্যাম্পাসে বসে মালা গাথছি। তখনি হৃদয় নামের এক ছেলে বাইক দিয়ে তার দলবল নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াল। এই বখাটেটা আগে থেকেই আমার পিছু লেগে আছে।

খুব ডিস্টার্ব করত
হৃদয়ঃ কি ফুল পরি অনেক দিন পর তোমার রুপ দেখার সৌভাগ্য অর্জন করলাম তাহলে
ওর এক চেলাঃ ভাই বিয়া করছে তাই আসতে পারে নাই
হৃদয়ঃ ইসসসসরে দিলি তো আগুন জালিয়া আগুন সুন্দরী এত দিন তোমার পিছু পিছু ঘুরলাম পাত্তা দিলা না ঠিক আছে। কিন্তু যে আমাগো মুখের সামনের খাবার কাইরা নিল তার খোঁজ তো পাইলাম না সুন্দরী বউ একলা একলা ছাইরা দিল

রাগ হচ্ছে না একদমি। ভয় হচ্ছে। কারণ তারা যখন তখন যার তার গায়ে হাত দেয়। অনেক টা সাহস যুগিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বড় বড় পা ফেলে চলে আসলাম। মরার প্রিন্সিপালের সাথে পরে যোগাযোগ করব। আজ আর পারবনা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলল তাই তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এলাম।

রুমে ঢুকেই দেখি দোলা একটা কাগজ উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখছে। আমার আসা দেখেই ব্যাগে ঢুকিয়ে দিল। খানিকটা খটকা লাগলো।
~ দোলা কি লুকালি রে?

~ ককক ইই আপুই কিছু না তো।
~ একটা কাগজ ছিল। দেখি কি ওটা।

~ না না আপুই কিছু না তো। এমনি কাগজ।
বুঝতে পারলাম এভাবে কাজ হবে না। এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। নরম সুরে বললাম
~ আপুই অনেক কষ্ট পেয়েছে। বিয়ে হয়ে গেছে বলে পর করে দিলি? আমার থেকেও লুকাচ্ছিস?
~ সরি আপু। আর কিচ্ছু লুকাবোনা। এই নাও।

কাগজ টা নিলাম। ও আমার আল্লাহ আমি এটা কি দেখছি? আমার বোন লাভ লেটার পাচ্ছে।
ওর দিকে তাকিয়ে তো আরও হা আমি। আমি হলে ভয়ে লুকিয়ে যেতাম এতক্ষণে আর ওনি লজ্জায় গাল দুটো টমেটো বানিয়ে দাড়িয়ে আছে।
~ কয়টা পেয়েছিস এই পর্যন্ত?

~ এটা নিয়ে ছয় টা।
~ কে দিচ্ছে এগুলো? বাহক কে?
~ কেওনা। যার চিঠি সেই দেয়।

~ হুম বুঝলাম। এর পর থেকে কারো চিঠি নিবি না। আরেকটু বড় হ তোর ভাইয়ার মত একটা হিরো দেখে বিয়ে দিয়ে দিব।
~ হিরো ভাইয়ার মত সত্যিই
~ তুই এগুলাও বুঝিস
~ যাহ
~

একটু আগে রিমন রিপোর্ট টা দিয়ে গিয়েছে। সোহানার রাগে চোখ দুটো বন্ধ করে আছে। বার বার নিজেকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করছে। তানভীর ভীষন কনফিউজড। মম কে জিজ্ঞাসা করে
~ কে এই তাসলিমা নূর?

~ তোমার গার্ল ফ্রেন্ডের একাউন্ট এটা।
~ আবোল তাবোল কথা বলো না মম। মানছি ওকে তুমি পছন্দ কর না। তাই বলে
~ ঠাস ঠাস ঠাস।
~ মমম গালে হাত রেখে।

~ বউ লাগে ওই মেয়ে তোমার? সব জায়গায় বউয়ের পরিচয় দিয়ে রেখেছ বউই যদি হয় বিয়েই যদি করে থাক আমাকে আগে বলতে পারতে। আমি তোমাকে আবার বিয়ে দিতামনা। দুশ্চরিত্র হচ্ছো পাপার মত?
~ মম এমন কিছুই না। আমি কেন ওকে বউয়ের পরিচয় দিব?

~ তোমার সব কিছুর ব্যপারে কেন জানিয়েছ ওকে তোমার পাসওয়ার্ড ওকে কেন দিয়েছ? ও তোমার বিজনেস পার্টনার ইভান। তার শেয়ার থাকবে এইটা ঠিক বাট যে সাইটে কোন শেয়ার নেই সেখানে কেন ওর হাত থাকবে? এটা বিজনেস ইভান খেলার জিনিস নয়।

~ মম আমি আসছি।
~ কোথায় যাচ্ছ তুমি? ইভান ইভান দাড়াও।

তানভীর গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। মিশু এসে
~ কি হয়েছে এভাবে বাসার নিচে আসতে বললে যে।
~ গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করল ~ তাসলিমা নূর নামে ব্যাংকে তোমার একাউন্ট আছে?
~ কেকেকেন?

~ তোতলাচ্ছ কেন? আমার একাউন্ট থেকে তোমার জন্য অনেক খরচ করি। তুমি তো ভিখারী নও তাহলে আমার কোম্পানি থেকে টাকা ট্রান্সফার করছ কেন? তোমার যদি এতই টাকা দরকার আমাকে বলতে আমার কোম্পানির দিক নজর দিয়েছ কেন?

~ তুমি এভাবে বলতে পারলে আমায়? ( ন্যাকা কান্না করে ) আমাকে লোভি ভাব তুমি? আমি তোমাকে ভালবাসি তানভীর। তোমার টাকার উপর আমার ফোকাস না তোমার উপর আমার ফোকাস। যা তোমার তাই আমার। এটা ভেবেই আমি টাকা নিই। আমি এক্ষুনি বলে দিচ্ছি সব টাকা ফেরত দিতে। দাড়াও ফোন করছি।

~ এনাফ ঐ টাকা আর চাই না আমার। এই প্রজেক্ট টা শেষ হলে তোমার সাথে আমার বিজনেসের এখানেই ইতি।
~ এমনটা করে না তানভীর। প্লিজ। আমি তোমার সব টাকা ফেরত দিচ্ছি।
~ বললাম না দরকার নেই। ওগুলো তোমাকে দান করলাম। বাই।

পর্ব ~৮

রুমটা অন্ধকার হয়ে আছে। তুমি থাকলে এই রুম এখন আলোয় ভরা থাকতো। তুমি ছাড়া বড্ড ফাকা ফাকা লাগছে। কবে আসবে তুমি? নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে আমার। খুব অস্থির লাগছে। এই মূহুর্তে তোমায় প্রয়োজন খুব করে। তোমার কোলে মাথা রেখে একটু ঘুমাতে ইচ্ছা করছে।

(চোখ পড়ে বেডের একপাশে রাখা টেডির দিকে। মুচকি হেসে টেডি টা কোলে তুলে নেয়। )
জানো তুমি না তুমার এই টেডির মতই কোমল। আমার মনে হয় তোমার হৃদয় এর থেকেও বেশী কোমল। জানো তোমার হাসি টা দেখলে আমার হৃদয় জুড়িয়ে যায়। তোমার মিষ্টি কন্ঠে আমি আরও প্রাণোচ্ছল হয়ে উঠি।

প্রতিরাতে যখন তুমি এসে আমার বুকে মাথা রাখ খুব শক্ত করে তোমার মাথাটা চেপে ধরে ঘুমোই আমি। খুব ভালো ঘুম হয় আমার। কেন হয় এগুলো? তুমি আমার বউ বলে? মিশুকে তো আমি ভালোবাসি। কই ওকে দেখে তো আমার হৃদয় জুড়ায় না। বুকের ভিতর শান্তি বিরাজ করে না।

বার বার কল এসে বেজে যাচ্ছে। তানভীর এর সেদিকে খেয়াল নেই। বউকে মিস করতে সে ব্যস্ত। খেয়াল হওয়ার পর ফোনের স্ক্রিনে নাম দেখে খুব বিরক্ত বোধ করছে। একদমি ধরতে ইচ্ছা করছে না। এভাবে একের পর এক বেজেই যাচ্ছে। লাস্ট ফোন টা পিক করে তানভীর। ভিডিও কল দিয়েছে মিশু।

~ প্রবলেম টা কি তোমার? বার বার বিরক্ত করছো কেন? ফোন কেটে দিয়েছি দেখে বূঝতে পার নি যে তোমার সাথে কথা বলতে চাই না?

~ তানভীর I am sorry again আমি তোমার সব money return দিয়ে দিয়েছি।
~ প্রয়োজন নেই আমার।
~ আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না তানভীর। প্লিজ এবারের মত মাফ কর। তোমার অনুমতি ছাড়া আর কিচ্ছু তে হাত দিব না প্রমিজ।

~ আমার কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।
~ দেখ তুমি যদি আমার সরি এক্সেপ্ট না কর আমি আমি কিন্তু আমি এই ছুরি দিয়ে গলা কেটে ফেলবো।
~ মিশু হচ্ছেটাকি? ছুরি নামাও বলছি।
~ সরি এক্সেপ্ট করবে কিনা।
~ ছুরি নামাও প্লিজ।

~ বল সরি এক্সেপ্ট করেছ
~ হ্যাঁ করেছি। তুমি ছুড়ি নামাও প্লিজ।
~ আই লাভ বলো
~
~ বলো
~ আই লাভ ইউ।
~ আই লাভ ইউ থ্রু। ঘুমাও জান। বাইইইই।

যত্তসব ফালতু Dammit

সকালে সোহানা মাত্রই নামায আদায় করে এসেছেন। সরোয়াজ আর মিম ও এসে সোফায় বসেছেন। তখনি তানভীর রেডি হয়ে নিচে নামে।

সোহানাঃ এত ভোরে কোথায় যাচ্ছ?
তানভীরঃ জামালপুর।

সরোয়াজঃ সিরিয়াসলি ভাইয়া তুমি ভাবি কে আনতে যাচ্ছ?
তানভীরঃ হুমম। মম আমি বেরোচ্ছি। but mom help me please কি নিয়ে যাওয়া উচিত আমার? After all frist যাচ্ছি।

সরোয়াজঃ আরে ভাইয়া মম কি help করবে? মমের কোন experience আছে নাকি? আমি তোমাকে হেল্প করছি। এদিকে আস।

তানভীরঃ হুমম বল
সরোয়াজঃ তুমি যাস্ট এই ভিডিও টা দেখ। এখানে বলা আছে প্রথম শশুর বাড়ি গেলে কি কি নিয়ে যেতে হবে।
ভিডিও দেখে রাগে ফায়ার হয়ে যায় তানভীর।

~ বেদ্দপ ছেলে আমাকে কি তোর বাদাইমা মনে হয়? কচু নিয়ে যাব আমি
~ হেল্প করলাম তো
~ কচু তুই তোর শশুর বাড়ি নিয়ে যাস। ওটাতে তোকেই মানাবে।

জামা কাপড় বের করছি। কলেজে যাব বলে। কিন্তু ভয় ও পাচ্ছি। আজকেও মনে হয় সেইভাবে আমার পিছু লাগবে। কাল যেভাবে চলে এলাম। এর মধ্যেই বাইরে খালামনির চেঁচামেচি শুনে বাইরে এলাম।
এ যে আমার হ্যান্ডসাম জামাই দাড়িয়ে আছে। তার মানে উনি আমাকে নিতে এসেছে। তারাতারি করে উনার সামনে গেলাম। আমাকে একবার দেখে খালামনিকে বলল গাড়ি থেকে জিনিস গুলো বের করতে।

ওরে বাবা আমার খালামনি তো সেই খুশিতে গাড়ির দিকে চলে গেল। দোলা এসে উনাকে ভিতরে নিয়ে গেল। খালামনি একা একা তাই আমিও গেলাম। বাবা গো বাবা কতগুলো প্যাকেট গুনতে শুরু করলাম। খালামনির পেন পেনানিতে গুনা শুধু ভুল হচ্ছে। থাক বাবা গুনবই না।
প্যাকেট গুলো নিয়ে ভেতরে চলে আসলাম।

উনাকে হালকা নাস্তা দিয়েছে দোলা। ওগুলো খাচ্ছে। আমায় দেখে বলল
~ সব কিছু প্যাকেজ করে নাও। আমরা ব্যাক করবো।
~ কিন্তু আমার তো টি সি নেওয়াই হয় নি।

~ তো এতদিন কি করলে?
~ মাত্র দুদিন হল আসছি।
~ ঐ হল আর কি। রেডি হও কলেজ যাব।

~ হুমম।
মেঘ না চাইতেই জল। ওনার সাথে কলেজে যাব। হাউ লাভলি। যাক বাবা আমার আর ভয় নেই। কেউ আমার ধারে কাছেও আসতে পারবে না।

উনার সাথে কলেজে আসলাম। ক্যাম্পাসে গাড়ি নিয়ে ডুকতেই সবার নজর এদিকে চলে এলো। আসবেনা বাই কেন? উনার কার দেখে তো আমিই প্রেমে পড়ে গেছি বাকি রা তো নজর দিবেই। Red ~chocolate colour car how cute। অনেকেই আছে ক্যাম্পাসে। উনি নেমে ঘুরে এসে আমার দিকে গেট খুলে দেয়।

আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়া। আমি উনার হাতে হাত রেখে গাড়ি থেকে নেমে আসি। সবার নজর আমাদের দিকে। একবার ঐ বখাটে হৃদয়ের
দিকে তাকালাম। বেটা একচোখ উপরে তুলে হা করে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছে করছে সামনে যেয়ে দেখিয়ে আসতে যে দেখ সুন্দরী বউকে একা ছাড়ে নি। হাত ধরেই আছে। huhh

Principal এর রুমে গিয়ে সব পেপার রেডি করলাম। উনি সাথেই ছিলেন। উনাকে নিয়ে বেরিয়ে এলাম। সব মেয়েরে হা করে তাকিয়ে আছে। হি হি হি থাকবেনাইবা কেন আগুন সুন্দরীর হ্যান্ডসাম জামাই।

কোয়ালিটি আসে বস। সবার তাকানো দেখে আমার যে ইত্তু ইত্তু ভাল্লাগতেছে কি আর বলব,
আরেকটু ক্লোজ হয়ে শক্ত করে হাত ধরলাম। উনি একবার তাকিয়ে হাটা ধরলেন।
বিকাল পড়ে যাচ্ছে। উনাকে বললাম
~ চা খাবেন?

~ কোথায়?
~ এখানেই এক মামার দোকানে দুধ চা হেব্বি টেস্ট।

~ এই সব বাইরে
জানি কি বলবে তাই আর বলতে না দিয়ে
~ একবার যাস্ট একবার টেস্ট করুন। ইমোশনাল হয়ে কাল তো চলেই যাবো।
~ ওকে।

দুজনে বসে আছি টঙ্গে। মাটির কাপে উনি চুমুক দিচ্ছে আর আমি উনাকে দেখছি। সব কিছু সপ্ন মনে হচ্ছে।
~ তুমি কি রেগুলার এই চা খেতে?
~ হুম। মজা না?
~ হুমম। ভালোই।

~
~ চল এবার বাসায় যাওয়া যাক।
~ হুমম। চলেন।

বাসায় আসতে আসতে এশার আযান দিয়ে দিয়েছে। উনি ফ্রেস হয়ে আব্বুর সাথে মসজিদে চলে গেলেন। আমি নামায পড়ে খালামনির সাথে ডিনার রেডি করতে ব্যস্ত হয়ে পরলাম। অনেক গুলো আইটেম করা হয়েছে। হবেই তো জামাই আদর বলে কথা। গুনতে শুরু করলাম। এর মধ্যেই উনি এসে
~ কতদিনের অভ্যাস এটা?

~ কোনটা?
~ এইযে গুণা~গুনি। প্রায় দেখি গুনা শুরু কর।

~ একদমি না।
~ তো সেদিন ৫৬ টা গাউন কি আমি গুনেছি? আর এখন যে আইটেম গুনতেছ।
এইরে মিথ্যা বলে ধরা পড়ে গেলাম। পেসটিজ পেয়াজো হয়ে গেল।

উনি আর আব্বু একসাথে বসে খেয়ে নিল। আমাকে ওদের সাথে বসতে বলেছিল কিন্তু এত খাবারের ফ্লেভারে দেখে আমার গা গুলিয়ে যাচ্ছে। খাবারের প্রতি গ্রেট অনীহা আমার। তবুও আমি গুলুমুলু। যত্তসব হুহ

ক্ষিদে লাগছে খুব। কিন্তু এসব আর খেতে পারব না। তাই একপ্লেট ভাত, চারটা শুকনো মরিচ ভাজা, পেঁয়াজ কুচি, একটু সরিষার তেল, লবণ নিয়ে ভাত মাখালাম। উফ ধ কত্ত দিন খাই না। আমি নিশ্চিত অনেক রিডার্সের জিভে জল এসে গেছে।

আমি খাচ্ছি আর উনি তাকিয়ে আছে।
উনিঃ কি খাচ্ছ এগুলো?

দোলাঃ ভাইয়া special Red rice Yummy
আমিঃ চুপ থাক।
দোলাঃ ভাইয়া একটু টেস্ট করে দেখুন। জীবনেও ভুলবেননা।
উনি ~ রিয়েলি?

খালামনি ডাক দেয়। দোলা চলে যায়।
আমিঃ হুম অনেক মজা। দুষ্টুমি মাথায় চেপে বসেছে আমার। উনাকে খাওয়াব এটা।
আমিঃ নিন হা করুন। হা
উনিঃ কেমন খেতে এটা?

আমিঃ খেয়েই দেখুন।
উনি কিছু ভেবে মুখে নিলেন। লুকমা শেষ করেই
~ আহ ঝাল এটা কি খাচ্ছ তুমি? কিভাবে খাও? পানি।

~ হায় হায় উনি তো লাল হয়ে গেছে। আমার তো মনেই ছিল না উনি ঝাল খেতে পারে না। কি করি এখন?
উনাকে পানি দিলাম। দিচ্ছি আর উনি খাচ্ছে কিন্তু ঝাল কমার নাম নেই। উনার চেহারা দেখে আমি কেদে দিব দিব ভাব। সমানে লাফাচ্ছি কি করি কি করি। সিরিয়ালে তো দেখেছি হিরো হিরোইনের লিপ কিস হলে ঝাল চলে যায়। এখন কি করি আমি? ঝাল কিভাবে কমাবো?

আমি তো ইচ্ছা মত লাফাচ্ছি আর বক বক করতেছি। উনি আমার হাত ধরে টেনে কাছে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে। ঘটনা এত দ্রুত ঘটেছে যে আমার চোখ বড় হয়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম। উনি সুন্দর ভাবে উনার কাজ করে যাচ্ছে আর আমি উনাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি। উনি আরো জোরে আমায় চেপে ধরেন।

বেশ কিছুক্ষণ পর উনি আমার ঠোঁট ছেড়ে সরে দাড়ান। মিররের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার ঠোঁট ঝালে লাল টক টকে হয়ে আছে। নিচের দিকে তাকিয়েই কাপা কাপা গলায় বললাম
~ এটা কি হল?
~ তুমি তো বললে লিপ কিস করতে
~ কিহ?
~ হুমম।

পর্ব ৯

বাড়ি থেকে আসার পর আমার খুবই মন খারাপ থাকে। কিচ্ছু ভালো লাগে না। আমার উনি তো জমিয়ে প্রেমিকার সাথে প্রেম প্রেম খেলা করে যাচ্ছে। বাসায় থাকলেই ফোন কানে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর চলছে তো চলছেই। now, I am অনেকগুলা jealous খাইতেছি। কেন যে জীবনে প্রেম করলাম না প্রেম করলে আমি ও ফোন কানে নিয়ে দেখিয়ে দিতাম যে দেখ আমিও প্রেম করতে পারি। হুহহ

আরে বাবা আমি তো তোর বউ নাকি? বিয়ে করে আনছিস তো? একটু ভেবে দেখতেতো পারিস আমারো খারাপ লাগতে পারে একটু। কই একটুতো লাগে না অনেকটাই লাগে একদম ভিতরে গিয়ে।

মাঝরাতে হটাৎ ঘুম ভেঙে গেল। খুব খারাপ একটা সপ্ন দেখেছি আমি। ঘামতে শুরু করেছি। উঠতে যাব কিন্তু উঠতে পারছি না। উনার বুকে মুখ গুঁজে আছি আমি। উনি দুহাতে জড়িয়ে আছে আমায়।

নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে আমার। ধাক্কা দিয়ে উঠে বসে পড়লাম। উনি জেগে গেছেন। উনার দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ দুটো লাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। এবার আমার অবস্থা আরো খারাপ। ও আমার আল্লাহ আমি এটা কি করলাম?

আমি উনার বুকে গিয়ে শুয়ে আছি? উনি কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করল কি হচ্ছে তারপর জিজ্ঞাসা করল
~ কি হয়ছে? এভাবে ঘামছ কেন? আর ঘুমের মধ্যে এভাবে কেউ ধাক্কা দেয়?
~ আমি আপনার বুকে ঘুমিয়ে ছিলাম
~ সেটা তো তুমি প্রতিদিনই থাকো।

~ এ্যা
~ হ্যাঁ।
ও আমার আল্লাহ বলে কি? তারমানে আমি উনাকে দোলা ভেবে প্রতিদিন বুকে শুয়ে থাকি?

সকালে ব্রেকফাস্ট করে আমি আর মিম আপু ড্রয়িং রুমে বসে আছি। দরজায় নক শুনে মিম আপু যেতে চাইলে আমি তাকে বসিয়ে দিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেই। দরজা খুলতেই এক প্রকার দৌড়েই ভিতরে ঢুকে মিম আপুকে বসা থেকে দাড় করিয়ে ঘোরাতে থাকে।

~ ও মিম মিম মিম Many many happy returns of the day
~ thank you so much mihsu dear
~ it’s for you ( একটা ফুলের বুকি এগিয়ে দিয়ে )
~ again thank you Evening এ পার্টিতে থাকছ তো?

~ of course Full day stay your home
~ oh thank you
আমার দিকে একবার তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে উপরে আমার রুমে চলে গেল।

ওখানে উনি আছেন। উনার সাথে আজ সারাদিন থাকবেন। মিম আপুর সাথে কত ভাব মিশুর র। এ বাড়ির বউ হয়ে এলে দু জা খুব ভালো মানাতো। আমি কেন এদের মধ্যে দেয়াল হয়ে দাড়াচ্ছি? না আমার জন্য ওরা আলাদা হয়ে থাকবে সেটা হতে দেওয়া যায় না। চলে যাব আমি থাকবনা আর এখানে।

পুরো বাড়ি লাইটিং করা হয়েছে। এমন লাইনিং দেখেছিলাম আমার বিয়ের সময়। অনেক গেস্ট এসেছে। সবাই সেজে গুজে ইনজয় করতে ব্যস্ত। মিম আপুকে অনেক সুন্দর লাগছে। সবাই একসাথে দাড়িয়ে ছবি তুলছে। আমি এক কোনায় দাড়িয়ে এসব দেখছি। মম এসে আমায় তার রুমে যেতে বললেন।

আমি মমের পিছু পিছু ঊনার রুমে আসলাম।
~ এখানে আয় তো। দেখি বাহ শাড়ি টাতে খুব সুন্দর লাগবে তোকে। আমি পরিয়ে দিচ্ছি আয়।
~ মম তুমি কেন আমায় এভাবে সাজিয়ে দাও? আমি তো বড় হয়েছি নাকি?

~ কে বলল তুই বড় হয়েছিস? তুইতো বেবি ডল আমার। তোকে সাজাতে গেলে মনে হয় আমার ছোট্ট মেয়েকে সাজাচ্ছি। বাহ একদম ডল লাগছে আমার মা টাকে। চল নিচে আয়
~ মম তুমি যাও আমি আসছি।
~ তারাতারি আয়।
~ হুমম।

মমকে যেতে বলে নিজের রুমে চলে এলাম। খুব কান্না আসছে আমার। একটু আগেও এই রুমে উনি আর মিশু এক সাথে ছিল। আমি বারবার ঘুরঘুর করেছি দরজার সামনে দিয়ে। কিন্তু কখনো উকি দেওয়ার সাহস পায়নি। বুক চিন চিনে ব্যথা শুরু হয়েছিল। শুধু মনে হচ্ছিল ভেতরে এসে যদি উনাদের দুজনকে একসাথে দেখি তবে সেই মুহুর্তে আমার মৃত্যু ঘটবে।

এই মুহুর্তে মিম আপুর কেক কাটতে যেতেও ইচ্ছে করছে না। খুব রাগ হচ্ছে। মম বলেছিল এটা নাকি আমারো বাড়ি। কিন্ত আমার বাড়িতে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী একজনকে সম্মানীয় জায়গা দিয়ে রাখা হয়েছে আর আমি কিছুই করতে পারছি না।

তবুও বাড়ির বড় বউ বলে কথা যেতেই হবে। আয়নায় আরেক বার নিজেকে দেখে নিচে নামলাম। এনাউন্স করা হল এখন কেক কাটা হবে। আমি একজন গেস্ট এর সাথে কথা বলছিলাম। কেক কাটার কথা শুনে ওদিকে এগোতে থাকলাম। কিছুদূর এগিয়ে আমার পা আটকে গেল। আমি আর এগুতে পারলাম না।

ইয়া বড় কেক। কেকের পাশে সবাই দাড়িয়ে আছে। আর আমার জাযগায় স্বয়ং মিশু দাঁড়িয়ে মিম আপুর সাথে নাইফ ধরে আছে। আমি এগুচ্ছি দেখে উনি একটানে কেক এ নাইফ ডুকিয়ে দিল। আর আমার উনি এদিক সেদিক বার বার তাকাচ্ছে।

পাঠকরা বলবে যে উনি আমাকে খুজছে। কিন্তু দেখ আমি যে বাড়ির বড় হয়ে অনুষ্ঠানে নেই এতে কারো কিছু যায় আসল না। আমি তো লেট করিনি। আমার জন্য কয়েকটা সেকেন্ড ওয়েট করতে পারল না খুঁজে কি লাভ?

রান্না ঘরে এখনো রান্নার কাজ চলছে। আমি রান্না দেখছি বলতে গেলে তদারকি করছি। ওখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে রান্না ঘরে খাবারের গন্ধে পেট ফুলানো অনেক ভালো। এমনিতেই সেই সকালে খেয়েছিলাম। এখন রাত ৯টা। মিশু আপু একবার রান্না ঘরে এলেন। এই মহিলা আবার রান্না ঘরেও তদারকি করতে এসেছে নাকি? মাথা ঘামালাম না একদম। দেখি চলে গেল। যাকগা আমার কি?

আমি বাবুর্চি কে হেল্প করছি। পেছন থেকে একজন বলে উঠে,
~ আগুন আগুন ছোট মালকিং এর শাড়িতে আগুন।

পেছনে ফিরে দেখি আমার শাড়ির অনেক টা উপরে আগুন উঠে গেছে। আল্লাহ তুমি রক্ষা করো। শাড়ি খু‌লতে পারছিনা। আগুন আগুন বলে চিৎকার করছি। ইতিমধ্যে সবাই এখানে চলে এসেছে কেউ আমার কাছে আসতে পারছে না। উনি এসে একটানে আমার শাড়ি খুলে ফেললো। আমি দু হাত দিয়ে আমার বুক ঢেকে নিলাম।

উনি এসে উনার কোর্ট আমার গায়ে জড়িয়ে শক্ত করে বুকে টেনে নিলেন। আমার শরীর যেন অবশ হয়ে আসছে উনি আমায় ওভাবেই কোলে নিয়ে উপড়ে উঠছেন সিড়ি বেয়ে বুঝতে পারছি। আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে গেলাম।

মিশু কিচেনে লাবিবাকে দেখে জ্বলে যায়।
~ এই ভিখারী টার জন্য তানভীর আমার সাথে আগের মতো ভালো ভাবে কথা বলে না। আমার থেকে দুরে সরে যাচ্ছে।

রুপ দেখিয়ে আমার থেকে তানভীর কে কেরে নিতে চাইছিস তাই না? কি যেন বলে? ও হ্যাঁ আগুন সুন্দরী। এই আগুনেই তোর রুপ হারাবি আজ। দেখ তোর কি অবস্থা করি আজ

কিচেনে ঢুকে দেখে লাবিবা কাজ করছে। সেই সুযোগে দিয়াশলাই নিয়ে হাতের মুঠোয় লুকিয়ে ফেলে। পানি খাওয়ার বাহানায় লাবিবার কাছে এসে সবার চক্ষুর অগোচরে আগুন জালিয়ে ফ্লোরে পড়ে থাকা শাড়ির আচলে জলন্ত কাঠি ফেলে দিয়ে বেরিয়ে যায়।

বৌপাখি চোখ খুলো প্লিজ। আর কত ঘুমাবে? কষ্ট হচ্ছে কি খুব? তুমি সকাল থেকে খাওনি কেন হা? তুমি যদি ষ্টং থাকতে তাহলে তো আর আগুনে সেন্সলেস হতে না। এত কেয়ারলেস কেন তুমি? নিজে একটু সাবধান থাকতে পারো না?

কে বলেছিল তোমাকে রান্না করতে? তুমিই যদি রান্না করবে তাহলে আমি এত টাকা দিয়ে এতজন সার্ভেন্ট রেখেছি কেন হ্যাঁ? কেক কাটতে গেলে না কেন? কত খুজেছি তোমায় চোখ খুলো না প্লিজ তোমার এই ঘুমন্ত মুখটা যে আমি নিতে পারছি না।

আহ মাথাটা প্রচন্ড রকমের ব্যথা করছে। চোখ খুলতে কষ্ট হচ্ছে। শরীরে শক্তি পাচ্ছি না। শুধু বুঝতে পাচ্ছি আমার মুখে কেউ ছুয়ে দিচ্ছে। চোখ খুললাম ধীরে। খুলে দেখি উনি ভাবলেশহীন ভাবে আমার মুখে একনাগাড়ে চুমু খাচ্ছে।

আমার যে জ্ঞান ফিরেছে সেই দিকে তার হুস নেই। শার্টের কলার হাত দিয়ে চেপে ধরলাম। এবার উনি তাকালেন আমার দিকে। চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। আমার সাধ্য নেই সেই চোখে তাকানোর। চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম।

উনি নরম সুরে আমায় ডাকলেন”বৌপাখি”

কলিজার মধ্যে ব্যাথা মোচর দিয়ে উঠল। উনার শার্ট আরো জোরে খামচে ধরলাম। এই প্রথম উনি আমাকে বৌ বলে ডাকছেন। এই বৌ ডাকটা যে কত টা মধুর তা একমাত্র একজন স্ত্রীই জানে। আমি এই মাধুরতা নিতে পাচ্ছি না। খুব কষ্ট হচ্ছে।

~ বৌপাখি ঠিক আছ তুমি? তাকাও আমার দিকে।
আমি চোখ খুলে উনার দিকে তাকালাম। কিছুক্ষন আগের লাল চোখ জোড়া এখন খুব শান্ত। জানিনা এর মানে কি
~ খারাপ লাগছে খুব?

মাথাটা একটু তুলে আমার সামনে এক গ্লাস জুস নিয়ে এলেন।
~ নাও হা কর।

আমিও চুপ চাপ জুসটা খেয়ে নিলাম। তার পর আমার সামনে পাসতার ডিস এনে খেতে বললেন। কিন্তু আমি খেলাম না। এমনিতেই পেট ফুলে আছে।
~ বৌ পাখি এমন কেন করো হামম? একটু সাবধানে চলতে পার না? আজ যদি কিছু হয়ে যেত? কি হতো ভাবতে পারছো একবার?
~ কি আর হতো? মরে যেতাম।

~ ঠিক করে কথা বলো। এই কথা আর কখনোই বলবে না। কখনো যদি না শুনি। তুমি মরে গেলে আমার কি হবে বৌপাখি? কেন এসব বলছ বলো (নরম সুরে)।
~ আপনি বেচে যাবেন। মিশুর সাথে সংসার করবেন। অনেক গুলো বেবি হবে।
~ shut up

রাগ দেখিয়ে রুম থেকে চলে গেল। সারারাত আর রুমে আসেনি।

লেখা – লাবিবা তানহা লিজা

চলবে

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “পাজরের টানে – Gopon valobashar kotha bangla” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – পাজরের টানে (শেষ খণ্ড)- Gopon valobashar kotha bangla

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *