বউয়ের ভালোবাসা ৩

বউয়ের ভালোবাসা – স্বামীর বিয়ে – পর্ব ৩ | Bouer Valobasha

বউয়ের ভালোবাসা – স্বামীর বিয়ে – পর্ব ৩: বলছিলাম আমাদের ভালবাসার কথা, হাসপাতালে রুগি হওয়া এই মানুষটির প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া ডাক্তারের লুকোচুরি ভালবাসা আর এক্সট্রা কেয়ার। তার চোখেমুখে আমি দেখছি আমার সর্বনাশ। তারপরের গল্পটা আজ বলি।

ডাক্তার বাবুর মনের কথা

অনেক ভালোবেসে ফেলেছি নীলিমাকে প্রথম দেখাতেই। রোগী দেখা শেষ করে বাড়িতে ফিরলাম।

বাড়িতে ফিরেই,
কাব্যঃ মা…মা…ও মা কই তুমি?

পেছন থেকে আনোয়ারা বেগম বললো,

মাঃ বাড়িতে এসেই ভুমিকম্প শুরু করে দিলি।

কাব্যঃ তোমার সাথে কথা আছে, আগে বসো তো।

মাঃ এতো খুশি। লটারি পাইছিস নাকি?

কাব্যঃ মা আমি একজনের প্রেমে পরে গেছি। তুমি বলেছিলে বিয়ে করতে। কিন্তু আমি মনের মতো কাউকে পাইনি। নীলিমাকে প্রথম দেখায় ভালো লাগেছে।

মাঃ তুই পড়েছিস প্রেমে! বিশ্বাসে করতে পারছি না! তো কে এই নীলিমা?

কাব্যঃ ও আমার রোগী ছিল। আজ বাড়িতে নিয়ে গেছে। তোমার ছেলের পছন্দ নিশ্চয়ই খারাপ হবে না।

মাঃ হুম, তা জানি। ঠিকানা নিয়েছিস মেয়েটির বাড়ির। তোর বাবাকে রাজি করিয়ে প্রস্তাব পাঠাই।

কাব্যঃ ঠিকানা তো নেই নি। তবে হাসপাতালের রিসেশনে পেয়ে যাবো। তুমি বাবাকে প্লিজ রাজি করাও।

মাঃ তোর বাবা শুনলে আরো খুশি হবে অনেক। এখন যা ফ্রেশ হয়ে আয় খাবার বেরে দিচ্ছি।

কাব্যঃ আচ্ছা দেও। আমি আসছি।

খাওয়া শেষ করে রুমে শুয়ে শুয়ে ভাবছি কবে আবার নীলিমার দেখা পাব। ওকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারছি না। কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি।

বিয়ের গল্প

এরপর ঘুম ভাঙলো মায়ের ডাকে।

মাঃ কাব্য উঠ, হাসপাতালে যাবি না?

কাব্যঃ হুম আর একটু ঘুমিয়ে নেই, প্লিজ মা।

মাঃ ৬টায় রোগী দেখার সময়। ফ্রেশ হবি কখন, আর যাবি কখন? তুই উঠবি না পানি ঢেলে দিব।

কাব্যঃ আচ্ছা উঠছি, আমি কি এখনও ছোট আছি। শান্তিতে একটু ঘুমাতেও দেও না।

মাঃ তোর উপর এখন অনেক দায়িত্ব। তুই ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি নাস্তা রেডি করি।

কাব্যঃ হুম, আচ্ছা।

ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে হাসপাতালে আসলাম।

এদিকে নীলিমা শুয়ে শুয়ে ভাবছে কবে সুস্থ হবে পুরোপুরি, দিন যেন কাটছেই না।

কাব্য হাসপাতালে এসে সোজা রিসেশনে গেল নীলিমার বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলো।

এই হাসপাতালের ডাক্তার সে। তাই নীলিমার বাড়ির ঠিকানা পেতে কোনো সমস্যা হয়নি।

কেবিনে এসে সব রোগী দেখা শেষ করে বাড়িতে আসলাম।

কাব্যঃ মা, ও মা কই তুমি?

মাঃ এসেই চিল্লাইতে শুরু করে দিলি?

কাব্যঃ বাবা এসেছে কি?

মাঃ হুম এসেছে। খাওয়া করে বাজারে গেল।

কাব্যঃ বাবাকে কি তুমি সবটা জানাইছো?

মাঃ হ্যা, সব বললাম। তোর বাবাও রাজি আছে। তার ছেলের পছন্দ ভালো থাকাই সব।

আর বলেছে মেয়ের বাসার ঠিকানা দিতে সামনের সপ্তাহে মেয়েকে দেখতে যাবে।

(পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে)

কাব্যঃ এই হচ্ছে নীলিমার বাড়ির ঠিকানা। বাবাকে দিও।

মাঃ আচ্ছা, হাতমুখ ধুয়ে আয় চা দিচ্ছি।

কাব্যঃ আচ্ছা, আমার লক্ষি।

বিয়ের সম্বোধন

রাতে খাবার টেবিলে বাবা বললো,

বাবাঃ পরশুদিন আমরা মেয়ে দেখতে যাবো। কিন্তু তুই যেতে পারবি না। আমরা আগে কথা বলি।

কাব্যঃ হুম, তোমরা যা ভালো বুঝো।

বাবাঃ তোকে প্রথম দিন নিয়ে যাওয়াটা ঠিক হবে না। মান সম্মানের একটা ব্যাপার আছে।

কাব্যঃ হুম।

তারপর সবাই নিরবতা। খাওয়া শেষ করে রুমে আসলাম।

অস্থির লাগছে সবকিছুই সব ঠিকঠাক ভাবে হবে তো। এই দুইটা দিন যেন কাটছেই না।

আজ সেই দিন।

বাবা-মা রেডি হয়ে নীলিমাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল।

কাব্য একা বাড়িতে কী হবে না হবে সেই ভেবে অস্থির সে।

নীলিমা বেলকনিতে বসে বই পড়ছিল।

হঠাৎ দেখলো একটা গাড়ি তাদের বাড়িতে ঢুকলো। কিন্তু তার উঠে যেতে একটুও মন চাইছে না।

কাব্যের বাবা-মা দরজায় দাঁড়িয়ে কলিং বেল চাপতেই নীলিমার মা দরজা খুললো।

নীলিমার মাঃ কে আপনারা? আপনাদেরকে তো ঠিক চিনলাম না?

কাব্যের বাবাঃ আমি আমজাদ চৌধুরী আর উনি আমার মিসেস আনোয়ারা বেগম। বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখবেন?

নীলিমার মাঃ আসুন, ভেতরে আসুন। আপনি কী নীলিমার বাবার কোনো বন্ধু?

কাব্যের বাবাঃ না। আমরা একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছি আপনাদের কাছে।

ওদের কথা শুনতে পেয়ে নীলিমার বাবা, নীলিমার ভাই-ভাবী আসলো ড্রয়িং-রুমে।

শাশুড়ীর ইশারায় নীলাসা রান্নাঘরে গেল নাস্তা আনতে।

নীলিমার বাবা সাইফুল ইসলাম বললেন,

আপনাদের তো ঠিক চিনলাম না, ভাই?

(নীলিমার মা নাজমা বেগম সবটা বললেন)

তখন মি.আমজাদ চৌধুরী বললেন,

কাব্যের বাবাঃ হঠাৎ করে এভাবে আসার জন্য দুঃখিত। কিভাবে কথাটা বলবো সরাসরি বলে ফেলি?

বিয়ের পাকা কথা

আপনার মেয়েকে আমরা আমাদের ছেলের বউ করে নিয়ে যেতে চাই। আমার ছেলে আপনার মেয়েকে খুব পছন্দ করে। যদিও আমরা আপনার মেয়েকে দেখিনি। তবুও আমার ছেলের পছন্দে আমাদের পছন্দ।

নীলিমার বাবাঃ সবই বুঝলাম, কিন্তু আপনার ছেলে আমার মেয়েকে কই দেখলো? আর আমরা তো আপনাদের সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না। আপনার ছেলে কী করে?

কাব্যের বাবাঃ আমাদের পরিবার সম্পর্কে খোঁজ নিলে সবটা জানতে পারবেন। আর আমার ছেলে একজন হার্ট বিশেষজ্ঞ ডক্টর। আর আপনার মেয়ের ট্রিটমেন্ট আমার ছেলেই করেছেন।

পাশ থেকে নীল বলে উঠলো,
নীলঃ ও আপনারা মি.কাব্য চৌধুরীর বাবা-মা।

কাব্যের বাবা-মাঃ হ্যা। হাসপাতালে আপনার মেয়েকে দেখে ওর ভালো লেগেছে। অনেকদিন থেকেই ওর জন্য মেয়ে দেখছি। কিন্তু ওর মনের মতো মেয়ে পছন্দ হচ্ছে না। আর এখন বিয়েও করতে চাচ্ছে না। আপনার মেয়েকে ওর ভালো লেগেছে। তাই ওর মাকে জানায় ওর মা আমাকে জানায়। তাই দেরি না করে ঠিকানা নিয়ে সোজা আপনাদের বাসায় আসলাম।

নীলিমার বাবাঃ আমাদের কিছুদিন সময় দিন। ভেবে দেখি আমরা। একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা।

কাব্যের বাবাঃ তা ঠিক। সময় নেন সমস্যা নেই। আপনাদের মতামত কী সেটা জানাবেন।

এদিকে নীলিমা লক্ষ করলো অনেকক্ষণ হলো গাড়িটা আসার কিন্তু এখনও বের হয়নি।

কে এসেছে তা দেখার জন্য ড্রয়িংরুমে গেল।

কিছু না দেখেই বলতে লাগলো,

নীলিমাঃ মা কে এসেছে?

নীলিমার মাঃ মেহমান আসছে, মা। তুই রান্নাঘরে গিয়ে তোর ভাবির কাছ থেকে নাস্তা নিয়ে আয় তো?

নীলিমাঃ আচ্ছা, মা।

আনোয়ারা বেগম বলে উঠলেন,

কাব্যের মাঃ মাশাআল্লাহ। আমার ছেলের পছন্দ আছে। খুব লক্ষি মেয়ে আপনাদের।

এরপর সবাই অনেকক্ষণ গল্প করে বিয়ে নিয়ে আলোচনা করে।

নাস্তা শেষ করে মি.আমজাদ চৌধুরী বললেন,

কাব্যের বাবাঃ আজ আমরা আসি। চলবে…

পরের পর্ব- বউয়ের ভালোবাসা – স্বামীর বিয়ে – পর্ব ৪

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *