কালো মেয়ে

কালো মেয়ে – সত্যিকারের ভালোবাসার গল্প | Real Love Story

কালো মেয়ে – সত্যিকারের ভালোবাসার গল্প: আমরা সবাই ভালবাসা আর প্রেম বলে কত কিছুই না উদাহরণ দেই। কত উদারতা আর ভালবাসা দেখাই কিন্তু আসলে আমরা কি চেহারা না দেখে মনকে ভালবাসাতে পারি? উত্তর নাহ। কারণ আমরা ভালবাসা বলতে সৌন্দর্য, দেহ, যোগ্যতা আর অর্থবিত্ত বুঝি। আমরা যেটাকে প্রেম ভালোবাসা বলি সেটা নিছক শিশুতোষ খেলা মাত্র। তবে এমন কিছু মানুষ আছে যারা মন দেখেও ভালবাসতে পারে, এরকম একটি ছোট ভালবাসার গল্প শোনাব আজ আপনাদের। চলুন তবে শুরু করা যাক।

কালো মেয়ে সুন্দর ছেলে

ক্লাসের সবচেয়ে কালো মেয়ে আর সবচেয়ে ফর্সা ছেলেটির কথোপকথন ছিল ঠিক এরকম। মেয়ের নাম- লিমা আর ছেলের নাম ইমন সবাই ইমু বলে ডাকে।

মেয়েঃ আমি তো কালো মেয়ে। কি দেখে ভালো লাগলো আমাকে?

ছেলেঃ কেন, কালো মেয়েদের কি ভালো লাগতে পারে না?

মেয়েঃ হ্যাঁ পারে, কিন্তু তাই বলে যে আপনার ভালো লাগবে এটা কখনো ভাবিনি?

ছেলেঃ কার কখন যে কাউকে ভালো লেগে যায় এটা কি কেউ বলতে পারে?

মেয়েঃ তা পারে না। কিন্তু আপনিই প্রথম যে আমাকে ভালো লাগার কথা বললেন।

ছেলেঃ আপনার বাসায় আয়না আছে?

মেয়েঃ হ্যাঁ, কেন?

ছেলেঃ আজকে বাসায় গিয়ে নিজেকে একটু নিঁখুতভাবে আয়নায় দেখবেন বাকিটা কাল বলবো।

লিমাকে কথাটা বলেই চলে আসে ইমু। কারণ ক্লাসের সবচেয়ে কালো মেয়েটা হলো লিমা। যার দিকে কোন ছেলে ভুল করেও তাঁকায় না। আর ক্লাসের সবচেয়ে সুদর্শন ছেলেটা হলো ইমু। যার দিকে কোন মেয়ে ভুল করেও না তাঁকিয়ে পারে না। কিন্তু ইমুর ভালো লেগে যায় কালো মেয়ে লিমাকে, কি অদ্ভুদ!

লিমাঃ আপনার কথামত নিজেকে আয়নায় দেখলাম।

ইমুঃ হ্যাঁ, কোন কিছু অনুভব করলেন?

লিমাঃ অন্যদিনের চেয়ে কাল একটু অন্যরকম মনে হলো যেটা আগে কখনো হয়নি।

ইমুঃ কি রকম মনে হলো?

লিমাঃ নিজেকে ভালো লাগতে শুরু হলো। এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি আমি অসুন্…

ইমুঃ আচ্ছা, যখন আপনি আয়নায় নিজেকে দেখছিলেন তখন কি কাউকে মনে পড়ছিলো?

লিমাঃ ইয়ে মানে আপনার কথাই মনে পড়ছিলো।

ইমুঃ শুধু কি মনেই পড়েছিলো? একবারও কি হাসি দেন নাই?

লিমাঃ একবার না, বহুবার হাসি দিয়েছি।

ইমুঃ শুধু আয়না দেখেই হাসলে হবে না, এমনিতেও হাসতে হবে আর হাসলে মন ভালো থাকে।

লিমাঃ হা হা হা! কি যে বলেন, কালো মেয়েদের হাসি কেউ দেখতে জানে নাকি?

একটু অন্যভাবে দেখা

এটা শুনেই ইমু নিশ্চুপ। কারণ এটা যে আসলেই সত্য। আজকাল কালো মেয়েদের হাসি দেখা তো দূরের কথা ঠিক মতো ফিরেও তাঁকায় না কেউ। সবাই সুন্দরের পুজারী। কালো মেয়েরা যে কতটা মায়াবতী হতে পারে তা খুব কম সংখ্যক ছেলেই বুঝতে পারে।

ইমুঃ কেউ যদি আপনার হাসি দেখে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে বুঝতে হবে সে আগে কখনো কারোর হাসি দেখে প্রশংসা করতে পারেনি।

লিমাঃ কি যে বলেন?

ইমুঃ শুধু আপনার হাসিই না, আপনার চোখ, মুখ, নাক, সবকিছুই তো সুন্দর

লিমাঃ এবার কিন্তু সত্যিই আমি লজ্জা পাচ্ছি।

ইমুঃ আরেকটা কথা, আপনি লজ্জা পেলে আরো বেশি সুন্দর লাগে।

লিমাঃ আচ্ছা, ক্লাসে এতো মেয়ে থাকতে আমাকেই কেন আপনার এতো ভালো লাগলো?

ইমুঃ কারণ ক্লাসের সব মেয়েই সুন্দর, কিন্তু কেউ আপনার মতো মায়াবতী হতে পারেনি।

লিমাঃ আচ্ছা চলেন ক্লাসে যাই, সময় হয়ে গেছে।

সত্যিকারের ভালোবাসা

প্রতিটা মেয়ে তখনই নিজেকে সুন্দর ভাবতে শুরু করে যখন কেউ তার প্রশংসা করে তার সৌন্দর্যের বর্ণনা দেয়। মেয়েরা প্রশংসায় খুশি হয় আর যদি সেই প্রশংসা কোন কালো মেয়েকে করেন তাহলে সে আরো বেশি খুশি হয়। কারণ কালো মেয়েরা সহজে কারো প্রশংসা পায় না। তাই যখন প্রশংসা পায় আর যে করে দুটোই অনেক বেশিদিন মনে রাখে তারা।

এরপর ক্লাস শেষে লিমা বললো –

লিমাঃ আপনার কালো মেয়ে পছন্দ, তাই না?

ইমুঃ কালো মেয়ে পছন্দ কিনা জানি না তবে মায়াবতী মেয়ে পছন্দ।

লিমাঃ বাহ, আজকাল সবাই রূপবতী মেয়ে খুঁজে আর আপনি মায়াবতী।

ইমুঃ সব রূপবতী মেয়ে মায়াবতী হতে পারে না। কিন্তু প্রতিটা মায়াবতী মেয়ে রূপবতী ও মায়াবতী দুটোই হতে পারে।

আর এভাবেই শুরু হয়ে গেল ইমু আর লিমার অপার ভালোবাসা। যে ভালোবাসায় সিক্ত হলো তারা দুজনেই। গভীরভাবে একে অপরকে কাছে টেনে নিল। অন্তরে শ্রদ্ধাবোধ আর গুণ দেখার মত চোখ থাকলে যে কাউকে আপনার পছন্দ হতে পারে। তাই যাকে ভালোবাসবেন অবশ্যই অন্তর দিয়ে দেখবেন। রুপ দেখে কাউকে ভালোবাসা উচিত নয়। কেননা, সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে।

আরো পড়ুন- সত্যিকারের ভালোবাসা – হোম কোয়ারেন্টিনের দিনগুলিতে প্রেম

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *