হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প ১৭

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ১৭ | Love Story

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ১৭: গত পর্বে আমরা প্রিয়ন্তির মায়াভরা চোখের আকুল আবেদন দেখেছি, যেটা নীলে বুঝেও যেন না বোঝার ভান ধরে আছে। তবে দুজনে খুব সুন্দর একটি সন্ধ্যার স্মৃতি এঁকেছে, যেটার জন্য দুজনে একে অপরের প্রতি কৃতজ্ঞ। তো চলুন দেখি এরপর কি হয়?

মনের মেঘলা আকাশে চাঁদের উঁকি

প্রিয়ন্তী নীলের ম্যাসেজের রিপ্লাই দিল। তারপর বেশ অনেক্ষন ম্যাসেজেই কথা হলো ওদের।
প্রিয়ন্তী বেশ শান্তির এক ঘুম দিল। ভোরে ছয়টায় ফোন বেজে উঠল।মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ওর।
ঘুম চোখেই ফোন রিসিভ করে ধরতেই শুনল নীলের কন্ঠে শুভ সকাল!
নীল ওর ঘুম ভাঙ্গাতে ফোন করেছে? ওর বিশ্বাস হচ্ছিল না!
বারবার সেই গানটা মনে হচ্ছিল ওর,
তুমি না থাকলে সকালটা এতো মিষ্টি হতোনা!
তুমি না থাকলে ভালোবাসার সৃষ্টি হতো না!

চোখের পলকেই যেন সব বদলে গেল প্রিয়ন্তীর জীবনে! সুখের বন্যায় ভাসছে ও। যে বন্যায় হারিয়ে যেতেও দ্বিধা নেই! এটুকুই তো চেয়েছিল ও!
নীল একটু বুঝুক ওকে।
আর আজ যখন বাস্তবে এসব হচ্ছে ওর যেন বিশ্বাস হচ্ছেনা।
বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গেল ও। পাখিদের মিষ্টি মধুর কিচিরমিচির শব্দে মনে হচ্ছে একটাই কথা ভাসে,
“নীল শুধু প্রিয়ন্তীর শুধুই প্রিয়ন্তীর।”

নাস্তা করে ক্যাম্পাসে চলে গেল প্রিয়ন্তী। নিহা,রাকা বসে আছে। সবাইকে গিয়েই ও খুশির খবরটা দিল। রাকা রীতিমতো ট্রিট চাইতে লাগলো। ফাইনালি দে হ্যাভ গট দেয়ার দুলাভাই আহ জোস ব্যাপারটা!

আজ রাকার উনিও আসছে ক্যাম্পাসে ওদের সাথে আড্ডা দিতে। তাই নিহা তানুকেও ডেকেছে আর প্রিয়ন্তীকেও বলল তার ডাক্তারবাবুকে ডাকতে। কিন্তু প্রিয়ন্তীর একটু দ্বিধা কাজ করছিল। বেচারা হয়তো ব্যস্ত!রোজ রোজ কিভাবে বলে সে!

কিছুক্ষনেই অর্ন ও এসে ওদের সাথে জয়েন করল।
প্রিয়ন্তী নীলকে টেক্সট দিল,
: আপনি কি খুব ব্যস্ত?
: জ্বী না মিস প্রিয়ন্তী। বলুন কোন দরকার এই অধমকে?
: না মানে বিকালে আমরা সবাই আড্ডা দিব তো আমার ফ্রেন্ডরা বলছিল আপনাকেও ডেকে নিতে!
: তার মানে তোমার ফ্রেন্ডরা চাচ্ছে আমি আসি কিন্তু তুমি?
: ইয়ে মানে আমি আবার কি? আমি না চাইলে কি আর বলতাম আপনাকে? এতোটুকু বোঝেন না নাকি!
: না বুঝালে কি করে বুঝব বলো?
: হয়েছে থাক তো আপনার কি সময় হবে?
: হ্যা অবশ্যই হবে। আমার ডিউটি শেষ করেই আমি তোমায় ফোন দিচ্ছি।
: জ্বী আচ্ছা।

প্রিয়ন্তীর হাসি হাসি মুখ দেখে নিহাদের বুঝতে বাকী রইল না যে নীল আসছে!

অপেক্ষার প্রহর

বিকেল হয়ে গেল। প্রথমে তানু এলো ক্যাম্পাসে। এরপর এলো রাকার বফ।
এসেই ওদের সাথে পরিচিত হতে লাগলো সে।
নিহা: হ্যাই ভাইয়া আমি নিহা।হি ইজ তানু,মাই ফিয়ন্সে।
: ওহ হ্যালো। আমি সাব্বির। একজন ছোটখাটো সার্জন।
একে একে অর্ন এবং প্রিয়ন্তীও পরিচিত হয়ে গেল। বেশ লাজুক ধরনের সাব্বির। তাই কিছু হলেই রাকার দিকে তাকিয়ে থাকছে ফ্যালফ্যাল করে।

ওরা সবাই টি এস সি গিয়ে বসল। এদিকে সন্ধ্যা নেমে এলো। নীলের খবর নাই। প্রিয়ন্তীর মনটাই খারাপ হয়ে গেল। এই মানুষ কি আসলেও আসবে! ভাবতে ভাবতেই নীলের ম্যাসেজ এলো,
: মিস প্রিয়ন্তী আজ না আসি? বাইরে বৃষ্টি তো। আসলে ভিজে ভিজে আসতে হবে।
ম্যাসেজটা দেখেই প্রিয়ন্তীর মন খারাপ হয়ে গেল। এ আর এমন কি বৃষ্টি !
এতটুকুতেই আসা ক্যান্সেল করে দিল নীল! ধ্যাত!
তারপর ও রিপ্লাই দিল-
: আচ্ছা না আসলে আর কি? থাকেন সমস্যা নাই।
: প্লিজ তুমি মাইন্ড করোনা।
: হুম।
: তো কি করছো?
: কি আর করব? ওরা কাপল কাপল প্রেম করছে। আজ আশেপাশে ও সব কাপল। আমি একা সবাইকে দেখি।
: তুমিও বফ নিয়ে যেতা!
(প্রিয়ন্তীর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। কি বদ ছেলেরে বাবা! নিজে আসেনাই আর বলে কি না বফ নিয়ে আসতে! কচু উনি না এলে বফটা আসবে কোন গ্রহ থেকে)
: তার অত সময় নেই আমার জন্য।
: খুব কষ্ট?
: প্লিজ আসেন না, আমার একা একা লাগছে।
: বৃষ্টিতে ভিজেই?
: আচ্ছা দরকার নেই। সামনে কিছু ভাইয়া বসে বসে এদিকে তাকিয়ে আছে।ওনাদেরই দেখি!
: আসতেছি, পনেরো মিনিট লাগবে।
এদিকে এই ম্যাসেজিং অর্ন দেখছিল। ও হেসে হেসে শেষ। আর প্রিয়ন্তীকে বলতে লাগল,
: দেখেছিস? ছেলের কত জ্বলে? বাবা এক কথায় পুরা জ্বলে ছাড়খার।
প্রিয়ন্তীরও মনে মনে খুশি খুশিই লাগল।

প্রায় বিশ মিনিট পরে নীল এলো। অর্ন ততক্ষনে চলে গেছে। দুই কাপল আর প্রিয়ন্তীই বসে ছিল। নীল একটা রয়্যাল ব্লু কালারের পাঞ্জাবী পড়ে এসেছে।
প্রিয়ন্তী এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইশশ এই ছেলে ওকে পাগল বানিয়ে দেবে। কি মারাত্মক সুন্দর লাগছে পাঞ্জাবীতে।
আসলেই ছেলেদের পাঞ্জাবীতে ডেঞ্জারাস হ্যান্ডসাম লাগে। আজ কাকতলীয় ভাবেই তানু আর সাব্বির ও পাঞ্জাবী পড়েই আছে। তাও সবারটা সবার সাথে ম্যাচ হয়ে গেছে কালার।

নীল এসে বসেই সাব্বিরকে দেখে অবাক বনে গেল। সাব্বির ওর কলেজ জীবনের বন্ধু। এতদিন পরে দেখা হয়ে দুজনেই চমকে গেল!
পরে জানতে পারল সে রাকার বফ। বেশ আড্ডা জমে গেল সবার। প্রিয়ন্তীর খুব আনন্দ লাগছে। এমনটাই তো চেয়েছিল সে।
সবাই একসাথে এভাবে থাকুক আজীবন।
আড্ডা শেষে নীল প্রিয়ন্তীকে বাসায় দিয়ে এলো।
প্রিয়ন্তী রাতে নীলকে ফোন দিয়েও পেল না। বোধ হয় স্যার ঘুমিয়েই গিয়েছে! (চলবে)

পরের পর্ব- হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ১৮

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *