অবুঝ ভালোবাসা

অবুঝ ভালোবাসা – চাচাতো ভাইয়ের সাথে প্রেম

অবুঝ ভালোবাসা – চাচাতো ভাইয়ের সাথে প্রেম: ভালোবাসাগুলো এমনি হয়। যাকে প্রেমে পড়ি তাকে ছাড়া আর কিচ্ছু ভালো লাগে না। তাকে নিয়ে ঘুরতে ইচ্ছে করে, তার হাতে হাত রাখতে ইচ্ছে করে, তার ঘাড়ে মাথা রেখে একটু জিরোতে ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে চোখ না বুঝে সারাদিন রাত তাকে নয়ন ভরে দেখি। এমনই এক গল্প নিয়ে আজকের আয়োজন।

পর্ব ১

অনেক তো হলো ছেলেদের শরীর দেখানো, আর কতো দেখাবি? নিজের স্বামীর জন্য কিছু জমা রাখ।
(কথাটা শুনেই চমকে পিছনে তাকালাম, তাকিয়ে দেখলাম রিফাত ভাইয়া। (আমার চাচাতো ভাই)

কী বলছো কী, এই সব ভাইয়া?
কী বলছি বুজতে পারিসনি? (দাঁতে দাঁত চিপে কথাটা বললো)
আসলে ভাইয়া (আর কিছুই বলতে পারলাম না, ভাইয়া পুরো ভার্সিটির সামনে আমাকে টানতে টানতে নিয়ে গাড়িতে বসালো)

চলেন, আপনাদের সাথে পরিচিত হয়।

আমি রিপা এবার ইন্টার থার্ড ইয়ার এ পড়ি। আসলে করোনাই পরিক্ষা দিতে পারছিনা তাই বললাম, আর যে আমার সাথে এই ভাবে কথা বললো সে হলো রিফাত ভাইয়া। আমার চাচাতো ভাই। আমার মা ছোট বেলাই মারা গেছে, আর বাবা আর একটা বিয়ে করে বাহিরে চলে গেছে। ছোট থেকে কাকিমা আর কাকুর কাছেই মানুষ হয়েছি। ওরা সকলেই আমাকে খুব ভালোবাসে, শুধু এই রিফাত ভাইয়া ছাড়া। আর রিফাত ভাইয়া পড়াশোনা কমপ্লিট করে কাকুর ব্যবসা সামলাচ্ছে। আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে বাড়িতে চলে আসলাম, আর গাড়িতে ভাইয়া আমার সাথে একটা কথাও বলেনি।

গাড়ি থেকে নামিয়ে টানতে টানতে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলো।
বসার রুমে কাকিমা আর রোমান বসে ছিলো। (রোমান, রিফাত ভাইয়ার ছোট ভাই, ফোর এ পড়ে)

কাকিমার সামনেই আমাকে টানতে টানতে নিজের রুমে নিয়ে গেলান। পিছন থেকে কাকিমা বললো,
কী হয়েছে রিপাকে এমন গরুর মতো টেনে আনছিস কেনো?

কাকিমার কথাই কোনো উওর দেইনি ভাইয়া।
ভাইয়া রেগে গেলে কারো সাথে কথা বলে না, চুপ চাপ থাকে।

ভাইয়ার ঘরে দাড়িয়ে আছি। আর ভাইয়া বসে বসে আমাকে দেখছে। আমার খুব বিরক্ত লাগছে।
হঠাৎ ভাইয়া উঠে আলমারি থেকে একটা ব্যাগ বের করে আমার হাতে দিয়ে বললো,

এর পড় থেকে যেখানেই যাবি এটা পড়ে যাবি, আর কোনো দিন যদি এমন টাইট ফিটিং জামা পড়ে বাইরে বের হতে দেখেছি, সেদিনি তোর বাড়ি থেকে বের হওয়ার শেষ দিন হবে। এবার যা ঘর থেকে বের হ।

আমিও আর কথা না বাড়িয়ে নিজের ঘরে চলে আসলাম।
আসলে ভাইয়া আমাকে বোরখা দিয়েছে আর কাল থেকে বোরখা পড়েই বাইরে যেতে বলেছে।

রাতে সকলে এক সাথে টেবিলে বসে খাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে কাকু বললো, আমাদের রিপা মার জন্য একটা ভালো বিয়ের পস্তাব এসেছে, ছেলে ভালো জব করে। কাল দেখতে আসবে।
কাকুর কথা শুনে মাথা নিচু করে বসে আছি, খুব কষ্ট হচ্ছে, কিছু বলতে পারছি না, খাবার গলা দিয়ে নামছে না।

হঠাৎ কাকিমা বললো রিপা তুই কী কাউ কে ভালোবাসিস।
আমি শুধু মাথা নারলাম না, তার পরেই ওখান থেকে চলে আসলাম। কারণ আর একটু থাকলেই সকলে আমার চোখের পানি দেখে নিতো। খুব কান্না পাচ্ছে, কী করে বলবো তোমাদের আমি যে তোমাদের ছাড়া থাকতে পারবো না।

কান্না করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়েছি।
হঠাৎ মনে হলো কেউ আমাকে টেনে তুলে নিজের কোলে বসালো।

তারা তারি চোখ খুলে দেখলাম রিফাত ভাইয়া। অনেকটা অবাক হলাম। কারণ রিফাত ভাইয়া খুব একটা দরকার ছাড়া আমার রুমে আসে না। তাও আবার আমাকে নিজের কোলে বসিয়েছে। আমি সরে আসতে চাইলাম। তখনই ভাইয়া আমার হাত ধরে আবার বসালো আর বললো,

না খেয়ে চলে আসলি কেনো। আর এতো কান্না করার কী আছে। দেখতেই তো আসবে বিয়ে করতে তো না। এবার আমি আবার কান্না করে দিলাম। তখন রিফাত ভাইয়া আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে জোরিয়ে ধরে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
হয়েছে আর কান্না করতে হবে না।

হা কর আর সব টুকু খাবার শেষ কর।
এই প্রথম রিফাত ভাইয়া আমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দিলো আর এতো ভালো ব্যবহার করলো। খুব অবাক লাগছে। যে কী না আমাকে দেখতেই পারে না, সে আজ আমার কষ্ট টুকু বুজতে পেরেছে।

এই সব ভাবছিলাম। হঠাৎ রিফাত ভাইয়া আমাকে জরিয়েই কম্বলের নিচে শুয়ে পড়লেন।
আর আমার মাথাই হাত বুলাতে বুলাতে বললো,

আর কোনো কথা না। এবার চুপচাপ ঘুমা।
আমি বুজতে পারছিলাম না কী হচ্ছে আমার সাথে।


পর্ব ২

আমি কিছুই বুজতে পারলাম না, কী হচ্ছে আমার সাথে।

এই সব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে কাকিমার ডাকে ঘুম ভাঙলো। ঘড়িতে দেখলাম ৮:৪০ বাজে। আসে পাশে কোথাও রিফাত ভাইয়া কে দেখলাম না। হয় তো অনেক আগেই চলে গেছে, মানুষটা কখন কী করে বোঝা যায় না। একদম রেডি হয়ে খাবার টেবিলে গেলাম, ওখানে রিফাত ভাইয়া সহ সকলেই আছে আমিও খেতে বসলাম।
কিরে তুই কোথাই যাচ্ছিস।

কলেজ যাবো কাকিমা, প্রতিদিন এই সময় তো কলেজেই যায়।
আজ কলেজ যেতে হবে, আজ ও বাড়ি থেকে তোকে দেখতে আসবে।

কথাটা শুনে আবার মন খারাপ হয়ে গেলো। টেবিল ছেরে চলে আসতে চাইলাম তার আগেই পাশের চেয়ার থেকে রিফাত ভাইয়া আমার হাতটা ধরে আবার বসালো।
আর চোখের ইশারায় টেবিলে বসে খেতে বললো,

আমি আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে রুমে চলে আসলাম। আসার সময় কাকিমা হাতে একটা শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বললো এটা পড়তে। তখই রিফাত ভাইয়া বললো,
সং সেজে অন্য কাউকে দেখাতে হবে না। নরমাল ড্রেস পড় যা। কাকিমাও আর কিছু বলতে পারলো না।

রুমে এসে বসে আছি। আর ভাবছি সত্য এরা আমাকে পর করে দেবে। আচ্ছা আমি না থাকলে ওদের কষ্ট হবে না। ওদের মন খারাপ হবে না। আজ কাকু আর ভাইয়া অফিসে যায়নি, মেহমান আসবে তাই।

দুপুরের দিকে আসার কথা ছিলো। কিন্তু তারােফোন দিয়ে আসবে না বলে দিয়েছে। কারণ জানতে চাইলে এমন সব আজগুবি কথা বললো যা আমাদের সকলের মাথার উপর দিয়ে চলে গেছে।

কারণ আপনার এক মেয়েকে কয় বার বিয়ে দিতে চান।

কাকুঃ কী বলতে চান কী আপনি, আমার মেয়ের কীসের বিয়ে দিয়েছি। মাথা ঠিক আছে আপনার।
লোকটিঃ হুম ঠিক আছে, আজ সকালে একটা ছেলে আমাদের বাড়িতে এসেছিলো। দেখতে শুনতে ভালোই, ছেলেটা বললো, তার আর রিপার আপনারা বিয়ে দিয়েছেন।
কিন্তু এখন মেনে নিচ্ছেন না। তাই আমরা আর এই বিষয় নিয়ে আগাতে চাই না, ভালো থাকবেন বলেই ফোন কেটে দিলেন।

মামুর মাথাই যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো।
তখন রিফাত ভাইয়া বললো,

আব্বু এতো চিন্তা করার কী আছে। তোমরা কী রিপাকে ঘাড় থেকে নামাতে চাইছো।

কী সব বলছিস মাথা ঠিক আছে তোর রিফাত। রিপা আমার মেয়ে ওকে কোনো দিন ও বোঝা মনে করিপা যে ঘাড় থেকে নামাবো।
আমার কথা হলো এমন বাজে কথা কে ছড়ালো। আর কেনোই বা ছড়ালো।

আমি ও তাই চিন্তা করছি কী করলো কাজটা, তবে করেছে ভালোই করেছে। আমার এখন বিয়ে করার কোনো শখ নাই। আর না এই পরিবার ছাড়ার কোনো শখ আছে। হঠাৎ রিফাত ভাইয়া বললো,

হয় তো কেউ একজন চাই না রিপার বিয়ে হক। হয় তো সে রিপাকে ভালোবাসে তাই এমন করেছে।
রিপাকে ভালোবাসে সেটা তো আমাদের একবার বলতে পারতো আমরা দেখতাম। কীন্তু এই সব বাজে কথা ছরাবে কেনো?

হয় তো তার বলার এখন ও সময় হয় নাই। বাদ দাও আব্বু যা হয় ভালোর জন্যই হয়।
বলেই রিফাত ভাইয়া রুমে চলে গেলো।

আমি ও রুমে চলে আসলাম। খুব খুশি খুশি লাগছে মনে হচ্ছে যে এই কাজটা করেছে তাকে ধরে কয়েক টা চুমু দিয়ে দি। ইস আজ তার জন্য আমি বেঁচে গেলাম।

বিকেলে ছাদে গিয়ে দেখি রিফাত ভাইয়া দাড়ি আছে। পরিবেশ টা খুব সুন্দর, হালকা বাতাস, কালো মেঘ, খুব সুন্দর।

আমি আবার নিচে নেমে আসলাম এসে দুটো কফি করে নিয়ে গেলাম। রিফাত ভাইয়ার সামনে কফির মগটা ধরলাম।
রিফাত ভাইয়া কোনো কথা না বলে কফির মগটা নিয়ে খেতে শুরু করলো।

দুজনেই চুপ হঠাৎ রিফাত ভাইয়া বললো,

কিরে আজ মনে হচ্ছে খুব খুশি তুই।
হুম আজ আমি খুব খুশি কারণ আমাকে কেউ দেখতে আসেনি।
কেনো বিয়ে করতে চাস না? কাউকে কী ভালোবাসিস?

কথাটা শুনেই ভাইয়ার দিকে তাকালাম। কারণ কোনো দিন ও ভাইয়া আমার সাথে এই ভাবে কথা বলেনি।
আমার ভাবনার মাঝেই ভাইয়া আবার বললো,
কিরে কাউকে ভালোবাসিস।

না ভাইয়া কাউকে ভালোবাসি না।

তাহলে বিয়ে করতে চাস না কেনো?
আসলে ভাইয়া আমি এই পরিবার টাকে ছাড়তে চাই না। আর ছেরে থাকতেও পারবো না।
মা যখন মারা যায়, বাবাও ছেড়ে চলে গেলো তখন।

তারপর থেকে কাকু, কাকিমা নিজের মেয়ের মতো নিজেদের বুকে আগলে রেখেছে। তাদের ছাড়া যে থাকতে পারবো না। কথা গুলো বলতেই চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করলাম।

রিফাত ভাইয়া আমার দুবাহু ধরে তার দিকে ঘুরিয়ে চেখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
আর কান্না করতে হবে না।

তোকে কোথাও যেতে হবে না। তুই সারা জীবন আমাদের বুকেই থাকবি। আমার বাবা, মার রাজকন্যা হয়ে। রোমান এর বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে। আর আমার বকাঝোকার মানুষ হয়ে।
বলে আর এক মিনিট ও দারালেন না ছাদ থেকে চলে গেলেন।

আমি তার কথার আগা মাথা কিছুই বুজতে পারলাম না।
রিফাত ভাইয়ার ব্যবহার কিছু দিন হলো কেমন পরিবর্তন লাগছে।


পর্ব ৩

সকালে নাস্তা করে কলেজ চলে এলাম। আজ বোরখা পড়ে এসেছি। এটা নিয়ে আমার ফ্রেন্ডরা অনেক হাসা হাসি করছে।
ক্লাস করে বাড়িতে যাবার উদ্দেশ্য বের হতেই দেখি রিফাত ভাইয়া বাইক নিয়ে দাড়িয়ে আছে।

আমি কাছে যেতেই বললো, বাইকে উঠ, আমি আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ বাইকে উঠলাম।
একটু পরে দেখি ভাইয়া বাড়িতে না গিয়ে উল্টো পথে যাচ্ছে।
ভাইয়া এটা তো বাড়ির রাস্তা না। আমরা কোথাই যাচ্ছি।

মা, বাবা সকালে মামা বাড়িতে চলে গেছে। আর আমাকে বলছে তোকে নিয়ে যেতে আর তোকে কিছু মার্কেট করে দিতে। কাল রিমার বিয়ে (রিফাত ভাইয়ার মামাতো বোন)।

কথাটা শুনেই আমার মন টা খারাপ হয়ে গেলো, কারণ ও বাড়ির মামা ছাড়া আমাকে কেউ দেখতে পারে না। এটা নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছে এর আগে। রিফাত ভাইয়া হয় তো আমার মনের কথাটা বুঝতে পারেছে। তাই বললো,

এতো চিন্তা করতে হবে না। ও বাড়ির কারো কথা কানে নিবি না তাহলেই তো হলো। আর সব সময় আম্মুর সাথে থাকবি ঠিক আছে।
হুম।
রিফাত ভাইয়া আমাকে অনেক গুলো ড্রেস কিনে দিয়েছে। তারপরে আমরা মামাদের বাড়িতে গেলাম। গিয়ে মামাকে সালাম দিলাম। মামার সাথে কথা বলার মাঝেই মামি চলে এসে বললো,

রিফাত এই ঝামেলা টা তোরা সব জায়গাতে নিয়ে আসিস কেনো?
কেনো মামি ও কী খুব জ্বালাচ্ছে তোমাকে। তাহলে বলো আমি ওকে নিয়ে চলে যায়।

মামি আর কিছু না বলে ওখান থেকে চলে গেলো।
আর রিফাত ভাইয়া আমাকে নিয়ে কাকিমার রুমে দিয়ে আসলো।

রিপা মা আজ রিমির গায়ে হলুদ। তারা তাড়ি রেডি হয়ে নে ওকে।
ঠিক আছে কাকিমা। বলেই ফ্রেস হতে চলে গেলাম।

সন্ধ্যায় রিফাত ভাইয়ার কিনে দেওয়া হলুদ গাউনটা পড়ে, হালকা সাজলাম। এমন সময় কাকু রুমে আসলো।
বাহ আমার মেয়েটা কে তো এই টুকু সাজেই হুরপরীর মতো লাগছে।

আমি কাকুকে জোড়িয়ে ধরে বললাম ধন্যবাদ কাকু।
বাহিরে এসে দেখি অনেক মানুষ মেয়েরা সকলে হলুদ শাড়ি পড়েছে, আর খুব সেজেছে। আর ছেলে কাচা হলুদ পাঞ্জাবি পড়েছে।
হঠাৎ রিফাত ভাইয়ার দিকে চোখ গেলো।

ভাইয়াকে দেখে মনে হচ্ছে কাচা হলুদ পাঞ্জাবি টা যেনো শুধু ওর জন্যই। এতো কিউউট লাগছে ওকে।
একটু পরে একে একে সকলেই রিমি আপুকে হলুদ মাখিয়ে দিলো। আমি হলুদ দিতে গেলেই রিমি আপু আমার হাতটা ধরে বললো
আমি যার তার হাতে হলুদ দি না।

আপুর কথাই খুব লজ্জা পেলাম। কাকিমার দিকে তাকালাম। কাকিমা চোখের ইশারায় চলে আসতে বললো আমি ও চলে আসলাম।
সব শেষে মামি রিফাত ভাইয়া কে বললো, কিরে রিফাত ওখানে বসে আছিস কেনো? এখানে আই আর রিমি কে হলুদ দে।

আসলে মামি আমি যার তার গায়ে হলুদ মাখি না।
বলেই চলে গেলো, সকলেই তার চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে। আর কাকিমা, কাকু মুচকি মুচকি হাসছে। হয় তো তারা খুশি হয়েছে।
রাতে সকলে মেহেদী পড়ছে। আমি ও সকলে সাথেই বসে আছি। তখন একটা পিচ্চি মেয়ে এসে আমাকে বললো,

আপু তুমি মেহেদী পড়বে না।
আমি কিছু বলার আগেই মামি বললো্‌,

যার চাল নাই চুলো নাই তার আবার কীসের মেহেদী পড়া হে। যা এখান থেকে।
আমি কিছু না বলেই কাকিমার রুমে চলে আসলাম। কাকুর সাথে কিছু ক্ষন গল্প করে খাওয়া দাওয়া করে রিমি আপুর রুমে গেলাম ঘুমতে। কারণ এ বাড়িতে ৫ টা রুম একটাতে কাকিমা, কাকু, একটাতে মামা, মামি।

একটাতে বড়রা, আর রিমি আপুর রুমে ছোটরা,
আর বাকী একটা রুমে রিফাত ভাইয়া। রিফাত ভাইয়া ওর রুম কারো সাথে সেয়ার করে না।

রিমি আপুর রুমে যেতেই আমাকে যা নই তাই বলে বের করে দিলো। রাত ও অনেক হয়েছে, তাই মন খারাপ করে ছাদে চলে আসলাম। কারণ সকলেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
ছাদে এক কোণে দাড়িয়ে ভাবছি। যার বাবা, মা নেই তার হয় তো দুনিয়াতে কোনো দাম নেই। এই বাড়িতে থাকতে আমার একটুও ভালো লাগছে না, কীন্তু কিছু বলতেও পারছি না।

হঠাৎ কেউ একজন পিছন থেকে আমাকে কোলে তুলে নিলো। খুব ভয় পেয়ে তার দিকে তাকাতেই দেখলাম রিফাত ভাইয়া।
আমি বুঝতে পারি না এই মানুষ টা কী চাই, এই মরিচের গুঁড়ো তো এই পানি।
আমাকে দোলনাতে বসিয়ে দিয়ে আমার পাশে বসে বললেন।

কী হয়েছে এখনও ঘুমাসনি কেনো।
আমি মাথা নিচু করে নিলাম। কারণ কী বললো, যে রিমি আপু আমাকে রুমে ঢুকতে দেই নি।

হুম বলতে হবে না বুজতে পারছি। এবার হাতটা দে।
আমি হা করে তার দিকে তাকিয়ে আছি। আমার হাত দিয়ে উনি কী করবে।
আমার ভাবনার মাঝেই ভাইয়া আমার হাত টা নিয়ে মেহেদি পড়ানো শুরু করলো।

মেহেদী পড়ানে দেখে আমার চোখ দুটো আপনা আপনি বড় হয়ে গেলো। এতো সুন্দর করে মেহেদী পড়িয়ে দিলো। তার পরে আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই আমাকে কোলে তুলে নিয়ে হাটা সুরু করলেন।

একটু পরে রিফাত ভাইয়ার রুমে নিয়ে ঘাটে বসালেন। বসিয়ে বললেন তুই ঘুমিয়ে পড়।
আমি অবাক হয়ে মাথা নিচু করে বললাম।

ভাইয়া আমি এখানে ঘুমালে তুমি কোথাই ঘুমাবে? আর তাছাড়া এখানে ঘুমালে লোকে খারাপ বলবে।

আমার কথাটা মনে হয় ভাইয়ার পছন্দ হয়নি। তাই আমাকে একটা ধুমক দিয়ে ঘুমাতে বললেন আর নিজে সোফায় সুয়ে পড়লেন।


পর্ব ৪

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ভাইয়া আমার আগেই উঠে পড়েছে।
তাই আমিও উঠে বাইরের পরিস্থিতি দেখে ধিরে ধিরে কাকিমার রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলাম।

হালকা নাস্তা করে, বাহিরে গেলাম যেখানে স্টেজ সাজানো হচ্ছে।
সকলেই কাজে ব্যস্ত। মামার এক মাত্র মেয়ে তাই কোনো কিছু তে কমতি রাখছে না।

হঠাৎ কোথা থেকে একটা ছেলে এসে বললো,
হাই আমি রিয়াদ রিমির খালাতো ভাই।

হাই আমি রিপা রিফাত ভাইয়া চাচাতো বোন।
ওও তো কেমন আছো?

জী ভালো। আপনি?
ভালো, ও হে তোমাকে কাল খুব সুন্দর লাগছিলো। আর এখন নরমাল ড্রেস এও তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।

ধন্যবাদ বলেই তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওখান থেকে চলে আসলাম।

কিরে মা তোর হলো? কতে করে বললাম সকলে পার্লারে গেলো তুই ও যা। আমার কথা তো কানে নিবি না।
উফ কাকিমা, এই দেখো আমি রেডি।

হুম আমার মেয়েটাকে খুব সুন্দর লাগছে। আমার মেয়েটা দেখি একাই একশো।
বলেই চলে গেলো।

আমিও চলে গেলাম কাকিমার পিছু পিছু। হঠাৎ রিফাত ভাইয়া আমার হাত ধরে টানতে টানতে রুমে নিয়ে এসে দরজা বন্দ করে দিয়রে আমাকে খাটের ওপর বসিয়ে আমার পাশে বসে কোনো কথা না বলেই আমার মাথা দু হাত দিয়ে ধরে কাছে নিয়ে ঠোঁট এ ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন।

হঠাৎ এমন হওয়ায় সব কিছু আমার কাছে বাসি দরকারির মতো লাগছিলো। মানে এলোমেলো লাগছিলো।
একটু পরে আমাকে ছেরে দিয়ে খোঁপা করা চুল গুলো খুলে দিয়ে চলে গেলো। আর যাওয়ার আগে বলে গেলো, চুল গুলো খোলাই থাক আর ঠোঁট এর লিপস্টিক মুঝে ফেল। নয়লে এখন যেটা হলো সেটা বার বার হবে।

আমি এখনও সে ভাবেই বসে আছি। ভাই কেনো আমার সাথে এমন করে, কখনও মেঘ তো কখনও বৃষ্টি। আবার কখনও সাত রং তো কখনও কালো রং।

একটু পরে বাহিরে চলে গেলাম। বর যাত্রী চলে এসেছে।
বাড়িতে অনেক মানুষ। খাওয়া দাওয়া শেষ এবার বিয়ে পরানো শুরু করলো।

খুব মজার ব্যপার হলো রিমি আপু খুব হাসি খুশি ভাবে কবুল বলে দিয়েছে।

আমি এক কোনে দাড়িয়ে আছি। হঠাৎ কোথা থেকে একটা ছেলে এসে আমার কোমরে হাত রেখে আমাকে বললো,
you are looking sooo hot baby.

আমি কোনো কিছু না ভেবেই ঘুরে উঠে লোক টার গালে সজোরে একটা থাপ্পর মেরে দিলাম।
স্টেজ এর সব মানুষ এখন আমাদের দিকে তাকিয়ে ভাবছে কী হলো।

কোথা থেকে রিফাত ভাইয়া দৌড়ে এসে বললো,
কী হয়েছে রিপা?

আমি রিফাত ভাইয়া কে দেখেই তাকে জোরিয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।
কাকু কাকিমা এসে বললো কী হয়েছে।

আমি কাকিমাকে জোরিয়ে ধরে সব বললাম। সাথে সাথে রিফাত ভাইয়া লোকটাকে মারতে শুরু করলো।
তখন মামু, মামি সকলে এসে রিফাত ভাইয়া কে থামালো।

মামি, রিমি আপু সকলেই আমাকে দোষ দিচ্ছে।
রিমি আপু বললো বিড়াল এর সামনে মাঝ রাখলে সে তো নজর দেবেই।

মামি বললো আমার চরিত্রের নাকী দোষ আছে। তখনই রিফাত ভাইয়া চিৎকার করে বললো অনেক বলে ফেলেছো মামি আর বলো না। তাহলে আমিও ভুলে যাবো তুমি আমার মামি হও।

আর হে রিমি তোকে বলছি নিজেকে বিড়াল মনে করিস ঠিক আছে। নিজের মতো আর কাউকে মনে করিস না।

বলেই আমার হাত ধরে হাটা শুরু করলো। আর কাকিমাকে বললো, আম্মু আমি রিপা কে নিয়ে বাড়ি চলে গেলাম। তোমরা আসো।
বলেই আমাকে নিয়ে চলে আসলো।

বাড়িতে এসে আমি নিজের রুমে চলে এসে কান্না করছিলাম। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছিলো। কাকু ফোন দিয়ে বলেছে আজ আসতে পারবে না।
খুব ক্লান্ত লাগছে তাই গোসল করে রান্না করতে গেলাম।

কী রান্না করিস।
পিছনে ঘুরে দেখি রিফাত ভাইয়া।

ছোট মাছ, আলু ভাজি আর ভাত।
ওও এখন ও মন খারাপ করে আছিস। দেখ যে যেমন সে তো অন্য দেরকেউ তেমনই ভাববে। এই সব নিয়ে আর চিন্তা করিস না। আমাকে এক কাপ কফি দিবি।
হুম।

ভাইয়াকে কফি বানিয়ে দিয়ে আমি রান্নায় মন দিলাম। ভাইয়াও আমার পাশেই দাড়িয়ে ছিলো, কারণ ভাইয়া জানে আমি বিদুৎ চমকালে ভয় পাই। আর বেশির ভাগ সময় বৃষ্টি হলে কাকু ভাইয়ার কাছে থাকে আর আমি কাকিমার কাছে কাকিমার বুকের মাঝে থাকি।

রান্না শেষ হতে হতেই ৮:৩০ বেজে গেলো।
তারপরে দুজনে খাওয়া দাওয়া করে আমি রুমে চলে আসলাম।

ভাইয়াও আমার পিছু পিছু এসে বললো,
বই নিয়ে আমার রুমে আই আমার রুমে বসে পড়বি।

আমিও আর কথা না বাড়িয়ে ভাইয়ার রুমে চলে গেলাম।
১১টার দিকে ভাইয়া কে বললাম রুমে যাবো। ভাইয়া বললো এখানেই খাটে সুয়ে পড়।

আর তুমি?
এই ঘরে তো ছোট সোফা সুতে পারবো না। আমি এখানেই বসে ঘুমাবো তুই ঘুমা।

আমি তো একা ঘুমাতে পারবো না। বৃষ্টির জন্য তাই বান্ধ্য হয়ে ভাইয়াকে বললাম। ভাইয়া তোমার খাট টা অনেক বড়। আমি এই পাশে সুয়ে পড়ছি তুমি ওই পাশে সুয়ে পড়ো।

ভাইয়া যেনো এই কথারই অপেক্ষাই ছিলো আমার বলতে যতোটা না দেরি হয়েছে ভাইয়ার খাটে এসে সুয়ে পড়তেও এতো সময় লাগেনা।
রাতে খুব জোরে জোরে বিদুৎ চমকাচ্ছে।

খুব ভয় করছে, কাকিমাকে খুব মিস করছি। এখন কাকিমা থাকলে আমি তার বুকের মাঝে চলে যেতাম।
হঠাৎ রিফাত ভাইয়া আমাকে টেনে ওর বুকের সাথে মিশে নিলো। আমি কিছু বলতে পারছিলাম না। বরফ এর মতো চুপচাপ আছি, নিশ্বাস টাও যেনো নিতে ভুলে গেছি।
রিফাত ভাইয়ার কথাই আমার ধ্যান ভাঙলো।

কিরে নিশ্বাস টা ফেল নয়লে তোর মৃত্যুর জন্য আব্বু আম্মু আমাকে জেলে পাঠাবে।

ভাইয়ার কথাই খুব লজ্জা পেলাম। চুপচাপ ওর বুকে থেকে সরে আসতে চাইলে ও আমাকে আরো শক্ত করে জোরিয়ে ধরে বললো, বিশ্বাস রাখতে পারিস, খারাপ কিছু করবো না। আমি জানি তুই ভয় পাচ্ছিস। আর আমি জানি তুই ভয় পেলে আম্মুর বুকের মাঝে সুয়ে থাকিস।

এখন তো আম্মু নেই। তাই না হয় আমার বুকেই সুয়ে থাক।
আমি আর কোনো কথা বললাম না। চুপচাপ ভাইয়ার বুকে সুয়ে আছি।

হঠাৎ ভাইয়া বললো,
জানিস রিপা, তোর পাশে আমি কাউকে দেখতে পারি না। তুই যখন কোনো ছেলের সাথে হাসতে হাসতে কথা বলিস তখন আমার নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়।

তোর মনে আছে ক্লাস 8 এ একটা ছেলে তোকে চিঠি দিয়েছিলো। ওই ছেলে যখন তোর সাথে মিশতো কথা বলতো। তখন আমার খুব কষ্ট হয়। তাই নিজের কষ্ট টা দূর করতে কিছু দিন বন্ধুর বাড়িতে চলে গেছেছিলাম। কিন্তু দুদিন থাকার পরে বুজতে পারি তোকে ছারা আমি থাকতে পারবো না। তোকে না দেখেও আমি থাকতে পারবো না।

তাই পরের দিন বাড়িতে এসে ওই ছেলেটাকে আগে এই এলাকা থেকে তারাই। তার পর থেকে তোর কাছে কাউকে আসতে দিনি।

জানিস তোর অনেক গুলো বিয়ে আসছিলো আমার কাছে। আমি তাদের বাড়ি পর্যন্ত আসতে দিনি। এই গুলোকে তুই কী বলবি আমি জানি না। তবে আমি বলবো আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না। সারা জীবন তোকে আমার পাশে চাই।

দেখ ভালোবাসার কথা কী ভাবে বলতে হয় আমি জানি না। কিন্তু আজ এতো কিছু হয়ে গেছে, যে আমার মনে হচ্ছে তোকে এখন এইসব না বললে আমি তোকে সারা জীবন এর জন্য হারিয়ে ফেলবো।

এতক্ষণ আমি ভাইয়ার কথা গুলো মন দিয়ে শুনছিলাম। হঠাৎ ভাইয়া কে বললাম তার মানে সেদিন কাকুর বন্ধু বাসাই গিয়ে তুমি বলেছো আমি তোমার বউ?

হুম। কী করবো বল, আব্বু যেমন করছিলো যেনো সেদিনই তোর বিয়ে দিয়ে দেই।

আমি আর কিছু বলতে পারছিলাম না। কেমন একটা লাগছিলো। তাই ভাইয়ার বুক থেকে সরে আসতে চাইলাম, তখন ভাইয়া আরো শক্ত করে জোরিয়ে ধরে বললো,

দেখ রিপা, আমি তোকে জোর করবো না আমাকে ভালোবাসতে। কিন্তু আমি তোকে অন্য কারো হতেও দেবো না। আর আমার বুক থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা ও করিস না খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।

আমিও আর কিছু বললাম না। মনে মনে ভাবছি আমার বান্ধবীরাও প্রেম করে ওদের কাছে শুনেছি ওদের বয়ফ্রেন্ড ওদের গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করেছে। আর ভাইয়া এটা কী করলো। প্রপোজ করলো নাকী ওর কাছে থাকার জন্য থ্রেট দিলো। এই সব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

পাঠক আপনাদের জন্যই আমরা প্রতিনিয়ত লিখে থাকি। আপনাদের আনন্দ দেয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ। তাই এই পর্বের “অবুঝ ভালোবাসা” র গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো পড়া শেষে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি রিফাত ভাইয়া নেই। তাই উঠে আমার রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলাম। রান্না ঘরে গিয়ে দেখি রিফাত ভাইয়া রান্না করছে।
আমাকে দেখেই বললো,
ঘুম ভাঙলো তাহলে তোর। আচ্ছা এতো ঘুমাস কী করে বলতো। সারা রাত নাক ডেকে ঘুমালি আমাকে ঘুমাতে দিলি না।

আমি কিছু বললাম না, রাতের কথাটা মনে পরে লজ্জা করছিলো। তার মানে ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে।
আচ্ছা ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে, আমি কী ভাইয়াকে ভালোবাসতে পারবো?

কিরে কী এতো ভাবছিস, চল নাস্তা করি। তারপর তোকে কলেজ দিয়ে আমি অফিস এ যাবো। কিছু দিন পরেই তো তোর পরিক্ষা এখন থেকে পড়াশোনাটা ঠিক ভাবে কর।
নাহলে তো আমার বাচ্চা গুলো শিক্ষিত মা পাবে না। আর জীত ও শিক্ষিত শিশু পাবে না।

ভাইয়ার এমন কথাই আমার মাটির নিচে চলে যেতে ইচ্ছে করছে।
কলেজ এ বসে আছি। ক্লাস করতে ইচ্ছে করছে না। ক্লাস এ মনটাকে বসাতে পারছিনা। মনটা তো রিফাত ভাইয়ার বলা কথা গুলোতে পড়ে আছে।

কিরে কী এতো ভাবছিস? (নিরুপা আমার বান্ধবী)

কিছু নারে।

রাস্তা দিয়ে হাটছি, উদ্দেশ্য বাড়িতে যাবো। হাটতে হাটতে কখন যে রাস্তার মাঝে চলে আসছি বুজতেই পারিপা।

হঠাৎ কেউ একজন আমাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে ফেলে দিলো, কপালে একটু কেটে গেছে। কপালে হাত দিয়ে রাস্তার দিকে তাকাতেই দেখলাম অনেক লোকের ভীর। ভীর ঠেলে
ওখানে গিয়ে দেখি রিফাত ভাইয়া রাস্তায় পড়ে আছে মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে।

রি, ফাত ভা, ইয়া (আর কিছু বলতে পারলাম না মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম।
চোখ মিলে তাকিয়ে দেখি আমি হসপিটালের বেডে সুয়ে আছি। পাশে তাকাতেই দেখলাম রিফাত ভাইয়া সুয়ে আছে।

ভাইয়ার মাথাই হাত দিতেই চোখ খুলে আমার দিকে তাকালো। মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো,
কিরে হাত, পা ভাঙ্গলো আমার আর পুরো একদিন বেডে ঘুমালি তুই।

ভাইয়ার কথাই খুব অবাক হলাম।
পুরো একদিন আমি বেহুশ ছিলাম।

ভাইয়াকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই কাকিমা রুমে এসে বললো,
কিরে তোর সেন্স ভিরলো তাহলে। দুজনে তো আমাকে পাগল করে ছারবি।

তার পরে কাকিমার কাছে জানতে পারলাম রাস্তা দিয়ে হাটার সময় পিছন থেকে একটা গাড়ি এসে আমাকে ধাক্কা দিচ্ছিলো তখনই রিফাত ভাইয়া এসে আমাকে সরিয়ে দেই আর গাড়িটার সাথে ভাইয়া বারি খেয়ে রাস্তাই পড়ে যায়।
কথাটা শুনে খুব খারাপ লাগছিলো। আমার জন্য ভাইয়ার আজ এই অবস্থা।

কাকিমা আমাদের দুজনকে খাইয়ে দিয়ে চলে গেলো আর যাওয়ার আগে বলে গেলো। একটু পরেই ভাইয়াকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে।

আমি ভাইয়ার পাশে বসে আছি।
i am sorry ভাইয়া আমার জন্য আজ তোমার এই অবস্থা।

it’s ok. কীন্তু তুই কী এমন ভাবছিলি যে রাস্তাই আমি এতো বার ডাকলাম তুই শুনলি না। আর একটু হলেই তো গাড়িটা তোকে পিসে রেখে যেতো।
কী এতো ভাবছিলো।
কী আর ভাববো তোমার কথাই ভাবছিলাম! (এইরে কী বলে ফেললাম)

রিফাত ভাইয়া দেখি মুচকি মুচকি হাসছে।
আমি চলে আসতে চাইলাম আর আমার হাত ধরে তার কাছে বসিয়ে দিয়ে আমার কোলে মাথা রেখে বললো,

কিছু দিন পরে পরিক্ষা এখন আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না, নিজের পরিক্ষা টা নিয়ে ভাব বুজলি। আমাকে নিয়ে ভাবার জন্য সারা জীবন পাবি।
আমি কিছু বললাম না।
হঠাৎ উনি আমার কোমর জোরিয়ে ধরে বললো একটু চুল টেনে দেতো।

আমার হাতটা আনমনেই ভাইয়ার মাথাই চলে গেছে। তাই চুল টানতে শুরু করলাম।
এমন সময় রুমে কাকিমা ঢুকে পড়লো। আসি লজ্জাই সরে আসতে চাইলে ভাইয়া আমার কোমর টা আরো জোরে ধরে বললো এতো নরাচরা করিস কেনো?

কাকিমার দিকে তাকিয়ে বললো,
আম্মু কিছু বলবে?

কাকিমা মুচকি হেসে বললো,
হুম বললো তো, এতো রোমান্স পরে করিস এখন বাড়িতে চল।

কাকিমার কথাই খুব অবাক হলাম। কাকিমা এই সব কী বলছে। তারমানে রিফাত ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে এটা কাকিমা জানে?
আমার ভাবনার মাঝেই কাকিমা বললো আমি তোর কাকুর সাথে চলে যাচ্ছি তুই আর রিফাত রেডি হয়ে চলে আই বলেই চলে গেলো।

আমি রিফাত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।
রিফাত ভাইয়া হয়তো আমার মনের কথা বুজতে পারেছে। তাই সে বলতে শুরু করলে।

এতো ভাবতে হবে না। তুই তো জানিস আমার জীবনে যায় হক সব কিছু আমি আম্মুকে বলি। এটাও বলেছি। আম্মু আগে থেকেই জানে আমি তোকে ভালোবাসি। আর আজ আব্বু ও জানে আম্মু বলছে।

তবে হে কেউ তোকে জোর করবে না আমাকে বিয়ে করার জন্য। (একটু ভাব নিয়ে) আর আমি জানি জোর করতেও হবে না তুই নিজেই আমাকে বিয়ে করতে চাইবি আর ভালোও বাসবি। আমার মতো সুন্দর একটা ছেলেকে ভালো না বেসে পারা যায় বল।

আমি কিছুই বলতে পারছি না। কী বা বলবো।
তার পরে বাসাই চলে আসলাম।

বাড়িতে আসার পরে আর এক অত্যাচার শুরু হলো। সেটা হলো রিফাত শুধু কাকু কাকিমাকে বলে দিয়েছে সে যতো দিন না সুস্থ হবে ততো দিন তার কাছে আমাকে থাকতে হবে।
তার সব সেবা আমাকেই করতে হবে। কারণ জানতে চাইলে বলেছে আমার জন্যই তার এই অবস্থা তাই।

কাকিমা অনেক বার মানা করেছে কারণ আমরা দুজনেই বড় হয়েছি। বিয়ে ছাড়া এক ঘরে কী ভাবে থাকবো।
তখন রিফাত ভাইয়া বললো,

ওকে থাকতে হবে না তবে একটা শর্ত আছে।
তার কথা শুনে আমি, কাকিমা, কাকু প্রশ্ন সূচক মুখ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি।

একটু পরে ভাইয়া বললো আমার শর্ত হলো যতো দিন না রিপা আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করবে ততো দিন আব্বু ও আম্মুর কাছে থাকতে পারবে না, আমার সাথে থাকতে হবে।
তোমরা রাজি থাকলে এক চাপো নয়লে দুই চাপো।

এমন কথা শুনে আমি আর নিজের হাসি দমনিয়ে রাখতে পারিপা। খিল খিল করে হেসে উঠেছি।
একটু পরে হাসি থামিয়ে আসে পাশে দাকিয়ে দেখি কাকিমা আর কাকু আমার দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে।

তাদের মুখ টা টমেটোর মতো হয়ে গেছে। সেটা দেখে আমি আবার ও হেসে উঠলাম।

কাকু অসহায় ভাবে রিফাত ভাইয়া কে বললো, বাপরে বাপের সাথে কী কেউ এমন করে বল। এমন করিস না।

ওকে বাবা করবো না, রিপার কে বলো আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করতে, ও আমাকে বিয়ে করলেই আমি তোমাদের ঘর ফুল দিয়ে সাজিয়ে দেবো কথা দিলাম।

এবার যেনো কাকু একটু লজ্জা পেলো। আর আমি হাসতে হাসতে রুমে চলে আসলাম।

দুদিন হয়ে গেলো, কাকু রিফাত ভাইয়ার সাথে থাকে আর আমি কাকিমার সাথে। কাকু না পারছে আমাকে কিছু বলতে না পারছে কাকিমার কাছে আসতে।
কলেজ শেষ করে বাড়িতে আসছিলাম। রিফাত ভাইয়া কোথা থেকে এসে আমাকে টেনে গাড়িতে বসিয়ে সীট বেল্ট লাগিয়ে দিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করলো।

ভাইয়া আমরা কোথাই যাচ্ছি?

ভাইয়া আমি তোমাকে কিছু বলেছি, আমরা কোথাই যাচ্ছি?

বলবো যদি তুই আমার কথা রাখিস।

কী কথা?
আজ থেকে আর আমাকে ভাইয়া ভাইয়া করবি না। আমার নাম ধরে ডাকবি।

কী, তোমার মাথা ঠিক আছে। তুমি আমার এতো বড় আর আমি কী না তোমাকে নাম ধরে ডাকবো।

আচ্ছা রিপা আমার জন্য কী তোর মনে একটুও জায়গা নেই।

হঠাৎ ভাইয়ার এমন প্রশ্নে আমব চুপ মেরে গেলাম। কী বলবো জানি না। তবে এই কই দিনে এটা বুঝে গেছি রিফাত ভাইয়া কাছে কাছে থাকতে আমার ও ভালো লাগে। তার আমার প্রতি ভালোবাসাটা আমার জন্য ভালো লাগা হয়ে দাড়িয়েছে। তবে এই ভালো লাগাটা ভালোবাসাই পরিপূর্ণ হবে কী না জানি না।
আমার ভাবনার মাঝেই হঠাৎ গাড়ি থেমে গেলো। তাকিয়ে দেখি।


পর্ব ৫

গাড়িটা এসে একটা পার্কে থামলো।
আমাকে নামতে বলে রিফাত ভাইয়া ও গাড়ি থেকে নেমে গেলো।

আমি আর ভাইয়া নদীর কিনারাই পাশা পাশি বসে আছি। হঠাৎ কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে বললো,
হাই রিফাত।

আমি আর ভাইয়া পিছন দিকে তাকালাম।
ভাইয়া মেয়ে টিকে দেখে বললো,

ও হাই তিথি, এসো বসো।
হুম তো রিফাত কেমন আছো?

এই তো ভালো তুমি।
ভালো। তো রিফাত ওই পিচ্চি মেয়েটা কে? [আমার দিকে তাকিয়ে]

ও হলো আমার চাচাতো বোন রিপা। আর রিপা ও হলো তিথি। আম্মুর বান্ধবীর মেয়ে।
আম্মু তিথির সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে, সামনের মাসের ১৫ তারিখে।

ভাইয়ার এমন কথা বলবে আমি কল্পনাতেও ভাবিনি। কখন যে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে গালে পড়েছে বুজতেই পারিপা।

কিরে তোর আবার কী হলো কান্না করছিস কেনো?

কই কিছু না ভাইয়া, ওই তো চোখে মনে হয় কিছু পড়েছে। বলেই চোখের পানি মুঝে নিলাম।
মুখে একটু হাসির রেখা টেনে বললাম,

আচ্ছা ভাইয়া তোমরা কথা বলো আমি বাড়ি চলে যায়। ওদের আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে আসলাম।
বাড়িতে এসে রুমের দরজা বন্দ করে দিয়ে অনেক কাদলাম।

কেনো এমন খারাপ লাগছে আমার কিছুই বুজতে পারছি না। আমি তো ভাইয়াকে ভালোবাসি না। তাহলে ভাইয়ার বিয়ের কথা সুনে আমার এতো খারাপ লাগছে কেনো?
এভাবেই দিন কাটছিলো। কাল থেকে আমার পরিক্ষা শুরু। কাকিমা ভাইয়াকে বললো আমাকে কলেজ এ দিয়ে আসতে ভাইয়া সটান না বলে দিলো।

বললো এখন নাকী তিথির সাথে দেখা করতে যাবে তাই আমার সাথে যেতে পারবে না। অথচ কাল সারা রাত আমাকে পড়াইছে।
ভাইয়া আমাকে না নিয়েই চলে গেলো।

কাকু আমাকে কলেজ এ পৌঁছে দিলো।
এভাবেই আমার পরিক্ষা গুলো শেষ হয়ে গেলো।

প্রতি রাত ভাইয়া আমার সামনে বসে থাকতো আমার পড়া দেখতো। আর সকাল হলেই উধাও হয়ে যেতো। পরশু ভাইয়ার বিয়ে।
আজ সকলে মিলে মার্কেট করতে এসেছি। তিথি আপুও এসেছে।

ভাইয়া আর আপু খু হাসা হাসি করে কেনা কাটা করছে। ওদের দেখে যেনো আমার কষ্ট দিগুন বেড়ে গেলো।
কাকিমা আমাকে বললো জামা নিতে কিন্তু আমার কিছুই ভালো লাগছে না তাই কিছুই কিনি নাই।

আজ ভাইয়ার গায়ে হলুদ কাকিমা আমাকেও জোর করে হলুদ শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে। সকলেই ভাইয়াকে হলুদ দিয়ে দিলো। নিজেকে আর সামলাতে পারছি না। খুব কষ্ট হচ্ছে। আজ বার বার মনে হচ্ছে। ভালোবাসা পেয়েও হারিয়ে ফেললাম। কান্না করতে করতে রুমে চলে আসলাম। রাতে আর ঘর থেকে বের হয়নি।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হতে গিয়ে আয়নাতে দেখতে পেলাম। আমার গালে হলুদ লাগানো। আর কোমরের এক সাইডে মেহেদি দিয়ে লেখা i love u. এমন টা কে করতে পারে ভাবতে ভাবতে ফ্রেস হয়ে বাহিরে চলে এলাম। সকলেই বিয়ের কাজে ব্যস্ত। আজ ওদের মনে কতো আনন্দ। আর আমার মনে ১০বালতি বেতনা। রিফাত ভাইয়াও কতো খুশি। কিন্তু একদিন ভাইয়া নিজেই বলেছিলো। আমাকেই বিয়ে করবে। আর যখন আমি তাকে ভালোবাসবো তখন আমাকে বিয়ে করবে।

অথচ আজ আমি আমার সব টা দিয়ে তাকে ভালোবাসতে চাইছি, আর আজ উনি আমার মনটাকে ভেঙ্গে দিয়ে স্বার্থপরের মতো তিথি আপুকে বিয়ে করছে।
আমি আর কিছুই ভাবতে পারছিলাম না সকলের মাঝেই কাকিমাকে জোরিয়ে ধরে জোরে জোরে কান্না করছিলাম।


পর্ব ৬

সকলেই বলা বলি করছিলো আমার কী হয়েছে।
রিফাত ভাইয়া ও আমার কাছে এসে বললো,

কিরে কী হয়েছে তোর। এমন করে কান্না করছিস কেনো।
আমি আর ওখানে এক মিনিট ও দাড়ালাম না। দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।

রিফাত ভাইয়া কাকিমা অনেক বার ডেকেছে।
একটু পরেই রিফাত ভাইয়ার বিয়ে। আমি এখন ও ঘরে বসে আছি। নিজেকে আজ আর নিজের কাছে ভালো লাগছে না। নিজের কাছে নিজেকে আজ বোঝা মনে হচ্ছে।

কিছু না ভেবেই একটা চিঠি লিখতে বসলাম। লেখা শেষ এ বিষ এর বোতল টা হাতে নিয়ে বসে আছি।
একটু পরেই বোতল এর সব টুকু বিষ খেয়ে ফেললাম। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। বাইরে থেকে অনেক বার ডাকা ডাকি করে যখন আমার কোনো সারা পাই নাই। তখনই রিফাত ভাইয়া দরজাটা ভেঙে ফেললো।

রিফাত ভাইয়া দৌড়ে আমার কাছে এসে আমার নাম ধরে বার বার ডাকছে। কিছু বলার শক্তি টুকুও আজ আমার নেই। চোখ দুটো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসলো। তার পরে কী হয়েছে আর বলতে পারবো না।

চোখ খুলে নিজেকে রিফাত ভাইয়ার বুকে আবিষ্কার করলাম, ঘুমিয়ে আছে রিফাত ভাইয়া। কিছু সময় তার বুকে থেকে বোঝার চেষ্টা করলাম কী হয়েছে আর কোথাই আমি। একটু নরে চরে উঠতেই ভাইয়া ধরপরিয়ে উঠলো। আমাকে দেখেই জোরিয়ে ধরে বসে আছে তার চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে। কিছু বলতেও পারছে না।

একটু পরেই রুমে কাকিমা, কাকু আসলো আমাকে এমন দেখে যেনো তারা তাদের প্রাণ ফিরে পেলে।
রিফাত ভাইয়া একপাশে মাথা নিচু করে বসে আছে। আর ডাক্তার আমাকে চেক-আপ করছে। একটু পরে ডাক্তার বললো,

আর কোনো চিন্তা নেই। আপনাদেে মেয়ে এখন সুস্থ। ওকে আপনারা বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। বলেই চলে গেলো।

কাকু, কাকিমা আমার পাশে বসে আছে। রিফাত ভাইয়া আমার বেডের এক সাইডে চুপ করে বসে আছে।
হঠাৎ কাকু আমার হাতটা ধরে বলতে শুরু করলো,

আমাকে ক্ষমা করে দে মা।
আমি কাকুর হাত দুটো ধরে বললাম, এই সব কী বলছো কাকু। তুমি কেনো ক্ষমা চাইছো?

আসলে মা তিথি হলো তোর কাকিমার বান্ধবীর মেয়ে কাল ওর বিয়ে ছিলো। তবে সেটা রিফাত এর সাথে না, আমাদের অফিস এর শাওন এর সাথে। ওদের বিয়ের কথা শুনেই আমি ওদের বলি বিয়ে টা যেনো আমাদের বাড়ি থেকে হয়।

আর সকল কে তোর সাথে অভিনয় করতে বলেছিলাম। যেনো তুই তোর মনের কথাটা নিজে বুজতে পারিস। আর আমার কথা মতোি রিফাত তোকে বলে রিফাত এর সাথে তিথির বিয়ে, তবে বিশ্বাস কর মা। তুই এমন কিছু করবি আমি কখন ও ভাবি নাই।

আমি তোদের এক করতে গিয়ে তোদের জীবনটা শেষ করে দিতে গিয়েছিলাম। আমাকে মাফ করে দে (কাকু কথাগুলো বলছিলো আর কান্না করছিলো)

আমি কী বলবো কিছুই বুজতে পারছিলাম না। হঠাত কাকিমা বললো কাল থেকে আজ পর্যন্ত দুই এই বেডে শুয়ে ছিলি। তোর কাছ থেকে আমার ছেলেকে কেউ সরাতে পারেনি। এই দুদিনে এক ফোটা পানি ও খাইনি।

আমাদের কারো সাথে কথাও বলছে না। তুই প্লিজ ওকে একটু বুঝিয়ে শুনে খাওয়া, এই যে খাবার। খাবার টা আমার পাশে রেখেই কাকু কাকিমা চলে গেলো।
আর রিফাত ভাইয়া এখন ও আগের মতোই দাড়িয়ে আছে।

হঠাৎ আমার কাছে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে পড়তে শুরু করলি।

প্রিয় রিফাত ভাইয়া

যখন তুমি আমার মনের কথাগুলো জানতে পারবে তখন হয়তো আমি আর এই দুনিয়ায় থাকবো না। জানো ভাইয়া তোমাকে না তিথি আপুর সাথে খুব মানিয়েছে। কিন্তু বিশ্বাস করো তোমাদের এক সাথে দেখে আমি যে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিনা। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার নিশ্বাস টাও নিতে পারছি না।

শপিংমল এ যখন তুমি তিথি আপুকে জোরিয়ে ধরলে তখন যেনো আমার পুরো পৃথিবী টাই অন্ধকার হয়ে গেয়েছিলো। আচ্ছা ভাইয়া তুমি তো বলেছিলে তুমি আমাকেই বিয়ে করবে, আর তখনই বিয়ে করবে যখন আমি তোমাকে ভালোবাসবো। তবে কেনো আজ তিথি আপুকে বিয়ে করছো? তবে কী তোমার বলা কথা গুলো সব মিথ্যা ছিলো। আচ্ছা ভাইয়া আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে তুমি কী বুজতে পারছো না।

এই কষ্ট টাকে তুমি কী নাম দেবে আমি জানি না। তবে আমি তোমাকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি। তাই আমি বেঁচে থাকতে তোমাকে অন্য কারো পাশে দেখতে পারবো না।
প্রথম এবং শেষ বার তোমাকে বলে যাচ্ছি ভাইয়া।

i love u, i really love u.

ভালো থেকো।

ইতি
তোমার না পাওয়া ভালোবাসা।

চিঠি টা আমার লেখে, আমি ভাইয়া দিকে তাকাতে পারছিনা, খুব ভয় করছে। ভাইয়া চিঠিটা পড়ে আমার দিকে তাকালো। আমি সাথে সাথে মাথা নামিয়ে নিলাম।

ভাইয়া আমাকে কিছু বলার আগেই আমি ভাইয়াকে অসহায় ভাবে বললাম।

ভাইয়া আমার না খুব খুদা লাগছে।

ভাইয়া আর কিছু না বলে প্লেট এ খাবার নিয়ে নিজ হাতে আমাকে খাওয়াতে শুরু করলো। আমি কিছু না ভেবেই প্লেট টা হাতে নিয়ে এক লোকমা খাবার ভাইয়ার মুখের কাছে ধরলাম। ভাইয়াও কোনো কথা না বলে খেয়ে নিলো।

খাওয়া শেষ করে ভাইয়া বললো,

এর শাস্তি তুই পাবি। নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করার শাস্তি তো তুই পাবিই। আর এই চিঠির শাস্তি ও তুই পাবি। বলেই চলে গেলো। আর আমি ভয়ে চুপসে গেলাম।

একটু পরে কাকিমা এসে আমাকে চেন্স করে দিয়ে গেলো তার একটু পরেই ভাইয়া রুমে এসে কোনো কথা না বলেই আমাকে কোলে নিয়ে হাটা শুরু করলো।
হসপিটালের অনেকেই আমাদের দেখে আসছে।

খুব লজ্জা লাগছে। আর ভাইয়ার যেনো কোনো দিকে খেয়াল নেই, আমাকে কোলে করে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।

বাড়িতে এসে আমাকে আমার রুমে যেতে না দিয়ে ভাইয়ার রুমে নিয়ে গেলো আর কাকিমাকে ডেকে বললো বিকেলে যেনো কাজি বাড়িতে চলে আসে। না আসলে কী করবো তুমি তো তা জানোই আশা করি।

অনেকে গল্প ছোট নিয়ে আমাকে অনেক কথা শোনালে, একটা জিনিস কী জানো তোমাদের গল্প পড়তে ভালো লাগে আর আমাদের লিখতে। বাট আমাদের সুযোগ সুবিধাও তো তোমরা একটু দেখবে।

বিকেলে সুয়ে আছি কোথা থেকে আমার বান্ধবী নিরুপা এসে কিছু না বলেই আমার হাতে একটা নীল রং এর শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বললো এটা পড়ে ৫মিনিট এর মধ্যে নিচে চলে আয়, নয়লে রিফাত ভাইয়া তোর কপালে শনি ডেকে আনবে। বলেই চলে গেলো।

কিছুই বুজতে পারলাম না।

একটু পরে শাড়িটা পড়ে নিচে চলে গেলাম। নিচে গিয়ে আমাদের কিছু কাজিনদের দেখতে পেলাম। বুজতে পারছিনা কী হচ্ছে।
কাকিমা আমাকে টেনে রিফাত ভাইয়ার পাশে বসিয়ে দিলো, একটু পড়েই কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিলো।

আমার মাথাই যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। কী হচ্ছে আমার সাথে। আজ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলাম আর আজিই বিয়ে।

কখন থেকে কাজি সাহেব বলেই যাচ্ছে বলো মা কবুল। আমি কিছু বলতে পারছিলাম না।

হঠাৎ একটা শীতল হাত, সকলের চোখের আড়ালে আমার শাড়ির নীচ দিয়ে আমার পেট টা চাপ দিয়ে ধরলো।
ভয়ে আপনা আপনি মুখ দিয়ে কবুল বের হয়ে গেলো।

কবুল বলে রিফাত ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া মুচকি মুচকি হাসছে। কারণ হাতটা রিফাত ভাইয়ার ছিলো।
আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলো।

এভাবে বিয়ে হবে কখনও ভাবিনি।
রাতের মধ্যে সকল কাজিনরা খাওয়া দাওয়া করে চলে গেলো।

আর আমি চুপ করে বসে আছি। বাড়িতে আসার পর থেকে রিফাত ভাইয়া আমার সাথে একটা কথাও বলেনি।
রাতে তিথি আমাকে বউ সাজিয়ে রিফাত ভাইয়ার রুমে বসিয়ে দিয়ে গেলো।

আমি বসে বসে চিন্তা করছি কোথা থেকে কী হয়ে গেলো।

নিজের বিয়ে আর নিজেই জানি না। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে দরজার দিকে তাকালাম রিফাত ভাইয়া দরজা বন্দ করে ভেতরে এলো।
আমি উঠে তার পা ধরে সালাম দিলাম। যতোই হক এটা তো নিয়ম।

রিফাত ভাইয়া আমার বাহু ধরে দার করিয়ে বললো,

অনেক রাত হয়েছে যা চেন্স করে নে।
আমি আর কোনো কথা না বলে। ফ্রেস হতে চলে গেলাম। ঘরে এসে দেখি রিফাত ভাইয়া নেই।

তাই বেলকুনিতে চলে গেলাম। রিফাত ভাইয়ার পিছনে দাড়াতেই আমাকে না দেখেই বললো,

তোর উপর শুধু আমার অধিকার আছে আর কারণ না তোর নিজের ও না।
জানিস রিপা ভালোবাসার মানুষ টাকে কাছে পেয়েও না পাওয়ার কষ্ট টা কত বেদনার।

জানিস না। আজ থেকে তোকে বোঝাবো। সেই কষ্টটা কাকে বলে। আমি তোর সাথেই থাকবো তবে তুই আমাকে তোর সাথে মিশে পাবি না।
নিজেকে শেষ করে দেওয়ার শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে সুইটহার্ট। বলেই আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে আসলো।

আমাকে খাটে সুয়ে দিয়ে নিজে আমার উপর সুয়ে পড়ে নিজের সব টুকু ভর ছেরে দিলো।
কতক্ষণ আমার দিকে চেয়ে থেকে আমার ঠোঁট এ নিজের ঠোঁট টা ডুবিয়ে দিলো।

দুজন কতক্ষণ ধরে এমন ছিলাম জানি না।
আমার সারা মুখে পাগল এর মতো চুমু দিচ্ছিলো। গলাই মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বললো, এবার তুই বুজবি কাছে এসেও না আসার যন্ত্র না কতো টুকু।
বলেই বুকে জোরিয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে গেলো।

ভাইয়ার এমন আচরণে আমি শুধু অবাক হচ্ছি।
এই ভালোবাসা দেখাচ্ছে তো এই ভিলেন গিরি দেখাচ্ছে। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি রিফাত ভাইয়া নেই। তাই উঠে ফ্রেস হয়ে নিচে চলে গেলাম। নাস্তার টেবিলে হঠাৎ রিফাত ভাইয়া বললো,

তো আব্বু সারপ্রাইজ টা কেমন ছিলো?

আব্বু কিছুই বললো না শুধু মুচকি হাসলো আর বললো,
তুই কী সত্যি আমাদের ছেলে নাকী বন্ধু।
রিফাত ভাইয়াও কিছু না বলে হাসলো।

আমি বললাম।

কীসের সারপ্রাইজ কাকু।
তখন পিছন থেকে নিরুপা বললো,

আরে তুই জানিস না, কাল তো আন্টিদের রুম রিফাত ভাইয়া ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছিলো। সেটা আন্টিরা জানতো না।

আমি নিরুপার কথা শুনে রিফাত ভাইয়ার দিকে একবার তাকালাম।

আর মনে মনে বললাম মানুষ টা পারেও বটে বাবা মার ফুলসোজ্জার খাট সাজিয়ে দিয়েছে ভাবা যায়।
রুমে বসে আছি রিফাত ভাইয়া সোফায় বসে ল্যাপটবে কাজ করছে।
এমন সময় আমাদের এক চাচাতো ভাই এর বউ রুমে এসে বললো,

কী গো নতুন জামাই বউ কী করো।

আরে ভাবি আসেন ভিতরে আসেন। (রিফাত)

ভাবি তুমি, এসে বসো। (আমি)

হুম বসবো তো। আর কাল রাতের সব কথা শুনবো। তো রিফাত সাব কাল রাতে কী বিড়াল মারতে পেরেছেন নাকী পারেন নাই।

কী যে বলেন ভাবি বিড়াল মারার রাত তো একটাই, না মেরে থাকি কী ভাবে ভাইয়ার কথাই ভাবি হেসে উঠলো।

আর আমার দিকে তাকিয়ে বললো তো কী আমি চাচি আম্মা হচ্ছি কবে।
আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই রিফাত ভাইয়া বললো,

খুব তারা তারি হবেন চিন্ত করেন না ভাবি। কী বলিস রিপা বলেই চোখ মারলেন আমাকে।


পর্ব ৭

বউ ভাতের অনুষ্ঠান খুব ভালোভাবে শেষ হলো।
ভাইয়া সকলের সাথে খুব হাসি খুশি ভাবে কথা বলছে। শুধু আমার সাথেই কথা বলছে না।
আমি রিফাত ভাইয়া কে ভাইয়া ডাকি এটা নিয়ে রিফাত ভাইয়ার বন্ধুরা খুব হাসা হাসি করলো।

রাতে খাওয়া দাওয়া করে যে যার মতো চলে গেলো। আমি রুমে এসে ফ্রেস হয়ে আধ সোয়া হয়ে সুয়ে আছি।
একটু পরে রিয়ার ভাইয়া কোথা থেকে এসে আমাকে কোলে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো। ছাদে নিয়ে এসে আমাকে দোলনাতে বসিয়ে দিয়ে আমার কোলে মাথা রেখে চোখ বুজে সুয়ে পড়লো।

আমি চুপচাপ আছি কিছু বলতে পারছি না

একটু পরেই আমার পেট থেকে শাড়িটা সরিয়ে দিয়ে পেটে স্লাইড করতে শুরু করলো। তার এমন কাজে যেনো আমি আইস লোলি হয়ে গেলাম।
একটু সরে আসতে চাইতেই আর এক হাত দিয়ে আমার কোমর টা জোরিয়ে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসলো।

আমার পেটে একটা চুমু দিয়ে বললো,
আজ থেকে যতো বার ভাইয়া ডাকবি ততো বার তার শাস্তি তোর এই মেদ ছাড়া পেট টা পাবে। (পেটে স্লাইড করতে করতে বললো)

আমি কিছুই বলতে পারছিলাম না, আমার তখন এমন অবস্থা
ছেরে দে মা কেঁদে বাঁচি। একটু পরে আমাকে আবার কোলে তুলে রুমে চলে এলেন, আমাকে সুয়ে দিয়ে নিজেও আমাকে জোরিয়ে ধরে সুয়ে পড়লেন।

এভাবেই দিন গুলো কাটছিলো।
আজ আমার রেজাল্ট দিয়েছে। আমি খাটের এক কনে বসে আছি আর আমার সামনেই রিফাত ভাইয়া মাথা নিচু করে বসে আছে।

তাকে দেখে মনে হচ্ছে আমি নির্ঘাত ফেল মেরেছি।
খুব ভয় করছিলো, ভয়ে কান্না করে দিলাম, আমার কান্না দেখে রিফাত ভাইয়া হেসে দিলো তার পরে আমাকে বুকে জোরিয়ে নিয়ে বললো আরে পাগলি কান্না করছিস কেনো।
তুই কী জানিস তুই জেলা ফাস্ট হয়েছিস।

এবার আমাকে কী খাওয়াবি আর কী দিবি সেটা বল?
রিফাত ভাইয়া কথা শুনে কান্না মুখে হেসে ফেললাম। খুশিতে রিফাত ভাইয়ার গালে একটা কিস করে দিলাম, এতে যেনো রিফাত ভাইয়া পুরু শেষ, আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আমি লজ্জাই মাথা টা নিচু করে নিলাম।

কারণ এটাই আমার তাকে করা ফাস্ট কিস।
তখনি আম্মু রুমে আসলো হাতে মিষ্টি নিয়ে।

এভাবেই খুনশিটিতে আমাদের জীবন চলছিলো।
আমাদের বিয়ের ৩ বছর চলছে।

আজ আমি খুব খুশি, নিজের খুশিটা ধরে রাখতে পারছিলাম না।
আজ অনেক রান্না করেছি সব রিফাত এর পছন্দের খাবার।

রিফাত আসতে আসতে রাত ১০ টা বেজে গেলো।
আমি নিজের ঘরে বসে আছি, আমাদের বউ ভাতের দিন যেমন বউ সেজে বসে ছিলাম সেই ভাবে বসে আছি।

রিফাত রুমে এসে লাইটটা অন করতেই খুব অবাক হয়ে রিপার কাছে গিয়ে রিপার পাশে বসে বললো,
আজ আমার বউটার কী হয়েছে, আজ নিজে থেকে এমন সেজে গুজে বসে আছে কারণটা কী?

আমি কিছু না বলে রিফাত এর বুকে মুখ গুজে রিফাত এর সামনে দুটো পিচ্চি দের জুতো ধরলাম।
রিফাত কিছু সময় চুপ থেকে আমার মুখটা একটু উচু করে বললো,

তুমি যেটা বলতে চাইছো সেটা কী সত্যি।

হুম।

এই রিফাত ভাইয়া তুমি কান্না করছো কেনো। আমাদের বেবি হবে শুনে তুমি খুশি হওনি।

আরে পাগলি তোকে কী ভাবে বোঝাবো এটা আমার জীবনের সেরা উপহাস। আমি বাবা হবো উফ কী যে ভালো লাগছেরে পিচ্চি আমি আমি বাবা হবো আর তুই মা।
পেটে একটা চুমু দিয়ে বললো,

এখানে এই খানে আমার বেবিটা ধীরে ধীরে বড় হবো উফফ কী করে বোঝাবো তোকে আমি কতো টা খুশি।

এই রেদোয়ান দারাও নয়লে এবার ধরতে পারলে খুব মার খাবে বলে দিলাম।

মামুমি তুমি আমাকে ধরতে পারবে না।

তখনই রিফাত ভাইয়া এসে রেদোয়ান কে কোলে নিয়ে বললো,

বাবা মামুনির সাথে কেউ এমন করে বলো, মামুনির দৌড়াতে কষ্ট হয় তো।

রিপা খাবার টা আমার কাছে দাও আমার ছেলে কে আজ আমি খাওয়াবো।

হুম এই নাও ভাইয়া তোমার ছেলেটাকে খাওয়া ও আমার দাড়া হবে না। তখনই রেদোয়ান আমাকে বললো তো ফুপিমনি তুমি কবে থেকে বাবাইকে ভাইয়া ডাকাটা বাদ দেবে।
ছেলের মুখে ফুপি ডাক শুনে রাগে রিফাত এর দিকে তাকালাম।

তখনই রিফাত হেসে বললো আমার কী দোষ বলো তুমি যদি আমাকে ভাইয়া বলো তো আমি তো আমার ছেলেকে তোমাকে ফুপি ডাকতে সেখাবই।
এটাই আমাদের সুখে ভরা সংসার।

হে রেদোয়ান আমার আর রিফাত এর ছেলে আমাদের ছেলে হয়েছে। খুব দুষ্টু, আর রাগটা পেয়েছে বাবার মতো।

সকলে দোয়া করবেন যেনো আমরা সারা জীবন এই ভাবে সুখে শান্তিতে থাকতে পারি।

যদি আপনারা পড়েন তবেই লিখবো। যদি গল্পটা পড়তে চান তো প্লিজ কমেন্ট এ জানাবেন।

সমাপ্ত

আরো পড়ুনঃ হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *