রহস্যময় প্রেমের গল্প

রহস্যময় প্রেমের গল্প – ইফরীত জ্বীনের প্রেম | Vuter Golpo

রহস্যময় প্রেমের গল্প – ইফরীত জ্বীনের প্রেম: প্রিয় পাঠকগণ, আজ আমি আপনাদের এমন একটি ভৌতিক প্রেমের গল্প বলব, যা শুনে আপনার শরীর ছমছম করবে। শক্ত হয়ে বসুন, হাতের কাছে পানি রাখুন। চলুন শুরু করি।

রহস্যময় প্রেমের গল্প দৃশ্যপট

একজন মেয়ে তার ধর্ষণের জন্য আপন ভাই এবং বাবাকে সন্দেহ করছে। বিষয়টা অনেকটা ভয়াবহ। কিন্তু এখানে প্রশ্নটা হলো – কেন মেয়েটা তার ভাই এবং বাবাকে সাসপেক্ট বলতেছে? রিসেন্টলি এ ঘটনাটা ঘটেছে ব্রিটেনে, নোরা নামের এক মাতৃহীন মেয়ের সাথে। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নোরা নিজেকে বিবস্ত্র আবিষ্কার করে। শরীরে বিভিন্ন জায়গায় কামড়,আচঁড় ও লাল লাল দাগ। বুঝতে বাকি থাকেনা সে কীসের স্বীকার হয়েছে। অথচ রাতে তার রুমের দরজা বন্ধ ছিল এবং সেটা সকাল অব্দি বন্ধ অবস্থাতেই ছিল।

লজ্জা এবং দ্বিধায় সে কারো সাথে বিষয়টি শেয়ার করতে পারেনা। আসলে ঘটনাটা বলার মতোও না। টানা বেশ কয়েকদিন এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে সে সরাসরি তার বাবার সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও তার আগে সে যথেষ্ট প্রমাণ হাতে রাখতে চেয়েছিল। তাই একদিন সে ঠিক করলো সে রাত জাগবে এবং পুরো বিষয়টা সে ভিডিওতে ধারণ করবে। রাত যখন ১ টা বাজে তখন হঠাৎ সে খেয়াল করলো তার শোবার কক্ষ আতরের গন্ধে ভরে উঠেছে। ধীরে ধীরে অন্ধকারের মতো একটা অবয়ব তৈরী হচ্ছে। হীম শীতল বায়ুতে রুমটা গুমোট হয়ে গিয়েছে। নোরা মুগ্ধ হয়ে সেই অবয়বের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। অবয়বটা দেখতে এরকম ছিল যে নোরা সেটার উপর থেকে চোখ ফেরাতে পারেনি। একসময় অবয়বটি তার কাছে আসে। তার শরীরে তীব্র কম্পণ অনুভূত হতে থাকে।

সহজ কথায়, তার সাথে অবয়বটি মিলনে লিপ্ত ছিল। সেদিন সকালেই নোরা তার বাবা ও ভাইকে এই প্যারানরমাল বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করে। তারা জিনিসটা নিকটস্থ চার্চের ফাদারকে বলে এবং ফাদার এজন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দেয়। কিছুদিন ঠিক থাকলেও কয়েকদিন পর নোরার আধখাওয়া লাশ কবরস্থানে পাওয়া যায়। পুরো বিষয়টা নিয়ে একটা প্রতিবেদনও রয়েছে।”

গল্পের বিবরণ

পুরো রুমটাতেই পিনপতন নিরবতা। সকলে টানটান উত্তেজনা নিয়ে ঘটনাটি শুনছিলো। এরপর কি হলো সেটা জানার জন্য সকলে উৎসুক হয়ে প্রফেসরের দিকে একদৃষ্টে তাঁকিয়ে রয়েছে। শুধু ইফতি বাদে। তার মনোযোগ ক্লাসের বাহিরে।

ইফতি এর অমনোযোগীতা প্রফেসর ওয়ালটারের দৃষ্টি এড়াতে পারলো না। সে একটু মুচকি হেসে বলল-

“নোরার সাথে ঠিক কি ঘটেছিল – বিষয়টা ব্যাখ্যা করবে ইফতি?”

নিজের নাম হুট করে শুনে বেশ অবাক হলো ইফতি। প্রফেসর ওয়ালটারকে তার কেন যেন অন্যরকম লাগে। তার সাথে কথা বলতে বেশ অন্যরকম অনুভূত হয়।

“আর ইউ ওকে, ইফতি?”

“ইয়েস প্রফেসর। “

“তাহলে এটা বলো নোরার সাথে কি হয়েছিল?”

“জ্বীন দ্বারা আক্রান্ত ছিল, মেবি।”

“আর মৃত্যুর রহস্য?”

“চার্চের ফাদার এর থেকে পরামর্শ নেওয়ার দরুণ হয়তো তাকে মেরে ফেলেছে সে জ্বীনটা।”

“নো ডিয়ার। মিলিত হওয়ার সক্ষমতা রয়েছে ইফ্রীত্ব প্রজাতির কিন্তু তারা নরখাদক নয়।”

“তাহলে?”

ইফতির প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ঠিক পূর্ব মহুর্তে প্রফেসর দেয়াল ঘড়ির দিকে তাঁকালো। তার আজকের বরাদ্দকৃত সময় শেষ। এই সময়ের অধিক তিনি থাকেননা।

“বাকীটা কালকে শুনিও।”

কথাটা শেষ হতে না হতেই প্রফেসর ক্লাস থেকে বের হয়ে গেল। রোজকারমতো আজকেও ইফতি প্রফেসরকে নিজের কথাগুলো বলতে পারলো না। মনে কিছুটা রোদ, কিছুটা বৃষ্টি জমিয়ে সে নিউইয়র্কের রাস্তা ধরে হেঁটে চলেছে। বড্ড এলোমেলো কিছু চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

ইফতি ও ইফ্রিত জ্বীন

প্রায় দুই মাস ধরে সে একটা জিনিসের সম্মুখীন হচ্ছে। যা তাকে অনেকটা ভাবিয়ে তুলেছে। প্রফেসর ওয়ালটার বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত একজন মার্কিন নাগরিক। তিনি পেশায় একজন সাইকোলজিক্যাল টিচার। বয়স চল্লিশ পেড়িয়েছে অনেক আগেই। অতি প্রাকৃতিক বিষয়ে বা মানসিক সমস্যা নিয়ে তার যথেষ্ট এলেম আছে। এজন্য ইফতি রোজ এক ঘন্টা তার ক্লাস করে। এই এক ঘন্টার ক্লাসে, সে সবথেকে বেশী কথা বলে “আফারীত” সম্পর্কে। ইফতির শুনতে ভালো লাগেনা এগুলো। অথচ তার সমস্যাটাও গুরুতর।

ইফতি এর জন্ম বাংলাদেশে। চৌদ্দ বছর বয়সে তার মা মারা যায়। তার বাবা আমেরিকার এক কোম্পানিতে কর্মরত ছিল। আর সেজন্যই তিনি ইফতিকে আমেরিকাতে নিয়ে আসেন। সম্প্রতি তার বাবা মারা গিয়েছে। সে থেকেই মূলত এ সমস্যাটার সৃষ্টি। যার সমাধান প্রফেসর ওয়ালটার করতে পারবে বলে আশা করে সে।

দিনটি ছিল শনিবার। গ্রোসারী শপ থেকে কিছু জিনিস কিনে রাস্তা ধরে বাড়ীর দিকে এগিয়ে চলছে ইফতি। বাড়ীতে যাওয়ার পথে একটা ছোট কবরস্থান পড়ে রাস্তায়। যদিও কখনো এটা নিয়ে ভয় পায়না সে। সূর্য অস্ত যাওয়ার আগ মূহুর্ত এখন। চারপাশ ধীরে ধীরে নিরব হয়ে আসছে। কবরস্থানের গেটের সামনে হুট করে দাঁড়িয়ে পড়লো ইফতি। তার চোখ ভেতরে আঁটকে গিয়েছে।

একটা অন্তত সাদা পশমের নীল চোখের বিড়াল খুবই রাজকীয় ভঙিতে বসে রয়েছে একটা কবরের উপর। ইফতি রোজ এ বিড়ালটাকে দেখে। হুট করে আজ কেন যেন তার বিড়ালটাকে ধরতে মন চাইলো। গেট খুলে সে কবরস্থানে প্রবেশ করলো। তাকে দেখে বিড়ালটা একটুও বিচলিত হলোনা। বরং তার দিকে মোহময় দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রইলো। বিড়ালটাকে ধরতে যাবে ঠিক সে মুহূর্তে বিড়ালটা লাফ দিয়ে গাছে উঠে গেলো। একটা হতাশামূলক শব্দ ইফতির মুখ থেকে বেড়িয়ে আসলো।

ইফতি ও ইফ্রিতের পরিচয়

হতাশ হয়ে ফিরে যাবে এসময় একটা ঠক ঠক শব্দ ভেসে আসলো তার কানে।

পিছন ফিরে তাঁকিয়ে দেখে একটা কবরের উপর কালো কাপড় পড়ে একজন বসে রয়েছে। হুডির মতো পোশাক এবং নিচেরটুকু বোরখার মতো একদম পা পর্যন্ত আবৃত। একটা হাতুড়ি দিয়ে কবরে বাড়ি দিয়ে এমন শব্দ করছে সে। কৌতুহল হয়ে ইফতি তার দিকে এগিয়ে চলল।

“হ্যালো। হোয়াট আর ইউ ডুয়িং হেয়ার?”

তার প্রশ্নের কোন উত্তর আসলো না। এদিকে সে এগিয়েই চলেছে। পুনরায় সে বলল-

“আর ইউ হেয়ারিং মি? হোয়াট আর ইউ ডুয়িং হেয়ার?”

কথাটা বলে ইফতি উক্ত ব্যক্তির কাঁধে হাত রাখতে যাবে তখুনি হুট করে একটা ঠান্ডা হাত তার হাতের কবজি ধরে ফেললো। ভয়ে ইফতি জোড়ে চিৎকার দেওয়া শুরু করাতে একটা বলিষ্ঠ কণ্ঠের কোমল স্বর শুনতে পেলো সে। “স্টপ!”

একটু ধাতস্থ হয়ে ইফতি চোখ তুলে তাঁকালো সামনের ব্যক্তির নীল চোখের দিকে। তুষার ন্যায় শুভ্র,অদ্ভুত মোহময় দুটি নীল আঁখি তাও ঘনপল্লবে ঘেরা, কেশর রঙের ঠোঁট বিশালকার দেহ এবং অন্যরকম ঠান্ডা দুটো হাত।

ইফতির সাথে কথোপকথন

পুরো পরিবেশ আলাদা আতরের গন্ধে ভরে গিয়েছে। হালকা করে ইফতি শুধু নামটা উচ্চারণ করলো “ক্লিনটন”! তাকে কোন জবাব না দিয়ে ক্লিনটন সামনে বসে থাকা অবয়বের উদ্দেশ্য আরবিতে বলল-

” আখরাজ মীন হুনা (এখান থেকে যাও)।”

তখুনি শান্তধীরে অবয়বটি উঠে গেলো। এবার সে ইফতির উদ্দেশ্য বলল-

“মেয়ে আপনার সাহস তো কম নয়?”

“একথা কেন বলছেন প্রফেসর? আমি এখানে একটা বিড়ালের জন্য এসেছিলাম।”

“আহা! তা বিড়ালটা আপনাকে পাত্তা দিলো না তো?”

“তা নয় অবশ্য। আপনি এখানে কি করেন?”

“বাড়ী ফিরে যান।”

কথাটা বলে ক্লিনটন একটু ঝুঁকে আসলো তার উপর। তার ঘাড়ে কাছে মুখ নিয়ে বলল-

“আপনার রক্ত অনেক মিষ্টি হবে।”

ইফতি ক্লিনটনের বুকে ধাক্কা দিয়ে তাকে সরিয়ে বলল-

“আপনি কি ভ্যাম্পায়ার?”

“হুহ। “

“ন্যাকা কোথাকার।”

“তা ঠিক অবশ্য। দেশ থেকেই তো চিনেন ন্যাকা। এখন এখান থেকে চলে যাওয়া আপনার জন্য অনেক মঙ্গলজনক হবে।”

ইফতি ক্লিনটনের দিকে হালকা করে একটু ঝুঁকে আসলো এবং বলল-

“আমাকে ছেড়ে দেয়া যায় না প্রফেসর ক্লিনটন?”

ক্লিনটন পুনরায় ইফতির মুখের উপর ঝুঁকে এসে বলল-

“আপনাকে যদি এই কবরস্থানে এখন মেরে ফেলি আমি?”

“আপনি আসলে ইফরীত জ্বীনের বংশধর।”

ইফতি একথা শুনার পর জ্ঞান হারালো। পরের দিন সে নিজেকে বাসার পিছনে পুকুরপাড়ে আবিষ্কার করল।

ইফ্রিতের প্রেমের শেষ পরিণতি

পানির ছলছল শব্দ হচ্ছে। হালকা দুলছে ইফতির শরীর। হঠাৎ চোখ খুলে দেখে সে নৌকায় শুয়ে রয়েছে। অথচ সে তো নিজের বিছানায় ঘুমিয়েছিল। ভালোভাবে চোখ মেলে দেখে সামনে নৌকা চালাচ্ছে সন্ধ্যায় কবরস্থানে দেখা সেই অবয়বটি।

“হু আর ইউ? এন্ড হোয়াট এম আই ডুয়িং হেয়ার?”

এবার অবয়বটি মুখ খুললো-

“ইনহো কাদীমূন।” (সে আসছে)

“হোয়াট আর ইউ সে?” (কি বলছ?)

হুট করে অবয়বটি ইফতির সামনে আসলো। বিদঘুটে অবয়ব। তার হাতে একটি আধ খাওয়া জীবন্ত বাচ্চা। তার মধ্যে মুরগীর রানের মতো একটা কামড় বসিয়ে সে বলল-

“ইনহো কাদীমূন।” আমাকে ভালবাস, আমাকে জড়িয়ে ধরো।

ভয়ে ইফতি একটা চিৎকার দিলো। গগনবিদায়ী চিৎকার। তারপর তার জ্ঞান হারিয়ে গেল। পরের দিন সকালে ইফতিকে এক পার্কের পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। একদল স্থানীয় লোক তাকে হাসপাতালে ভর্তি করায়। তারপর থেকে প্রায় ইফতি বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকে আর কেউ না কেউ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়। নিত্য ঘটে যাওয়া এই ঘটনার রহস্য শুধু রহস্যই থেকে যায়।

আরো পড়ুন: কষ্টের প্রেমের গল্প – অসমাপ্ত ফেসবুক প্রেম

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *