আমার মায়াবতী (শেষ খণ্ড) – লোভনীয় প্রেমের গল্প

আমার মায়াবতী (শেষ খণ্ড) – লোভনীয় প্রেমের গল্প: ইনি বিনির কথা শুনে নাহিদ আর অমিত বসা থেকে উঠে দাড়ালো। দুজনে একবার মুখ চাওয়াচাওয়ি করে ঢোক গিললো। বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে ইশান আরু! এই বলেই বাচ্চাদের কোলে উঠিয়ে একরকম দৌড়ে পালালো দুজনেই, আর তাদের পিছু পিছু ছুটলো দু বোন।


পর্ব ১২

আরুর কথা শুনে মামি মাথা নেড়ে বলল,
~ হ্যা রে পরি! তুই একদম ঠিক কথা বলেছিস।

আরু মুচকি হাসলো। মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
~ সরি মা, তোমাদের এতোটা টেনশনে রাখার জন্য!

নাইমা বেগম ~ পাগলি আমার, এভাবে করে কেন বলছো মা? তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে হবে না?
~ হ্যাঁ মা!

পরেরদিন সকালেই ডাক্তার আরুকে চেকআপ করে সব নরমাল আছে বলে রিলিজ দিয়ে দিলেন।

আরুতো মহাখুশি, হসপিটাল মানেই হলো দমবন্ধ পরিবেশ। আস্ত একটা বিরক্তির কারখানা বলে মনে হয়! আর অন্যদিকে আগামীকাল নবীন বরন অনুষ্ঠান, সেটা মিস করার কোনো প্রশ্নই আসে না। তার উপর আবার কনার নাচ আছে।

সেটা তো দেখতেই হবে! যদিও তারও গান গাওয়ার কথা হয়েছিলো কিন্তু ইশানের এক চোখ গরমে সেটা বাদ। আরুর মাঝে মাঝে ইশানকে মানুষ বলেই মনে হয়না!

আর মামা মামির ছেলে বলে তো একদমই মনে হয়না! কারন তার মামা খুবই শান্ত মেজাজের একজন মানুষ, আর মামি__? সে তো আরো নরম মনের মানুষ, আর ইশান এমন ঘাড়ত্যাড়া, রগচটা, রাক্ষস কি করে হলো?

কার মতো যে হয়েছে ছেলেটা কেউই বলতে পারে না। মামার কাছে জানতে চাইলে সে তো এককথায় বলে দেয় তার জন্মের সময় হয়তো ঘাড়ের কোনো একটা রগ বেঁকে গিয়েছিলো, আর তাইতো ও এমন ঘাড়ত্যাড়া হয়েছে, ব্যস এটুকু বলেই মামা ভুবন কাঁপানো হাসিতে ফেটে পড়ে।আবার কখনো মামিকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে,

~ বুঝলি পরি, ইশানের জন্মের সময় বোধহয় ডাক্তার দু’তিন টা মার ওকে বেশি দিয়েছিলো। আর তাই ওর এই ভয়ংকর রাগের উৎপত্তি বোধহয় তখন থেকেই হয়েছিলো।

একথা বলে মামিও খানিক হেসে দেয়।

কিন্তু আরুর এদের কারোর কথায়ই মন ভরেনা। তার মনে হয় ইশান হয়তো কোনো অন্য দেশের প্রানী। এলিয়েনদের বাচ্চাও হতে পারে। হয়তো এলিয়েনরা ইশানের জন্মের পর ওকে নিয়ে দেশ ভ্রমণে বের হয়েছিলো কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ওকে এখানেই ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলো।

আচ্ছা এলিয়েন রা কি মানুষের মতো এতো শৌখিন হয়? দেশ ভ্রমণ করে? _হ্যাঁ করতেই পারে!তারপর হঠাৎ একদিন রাস্তার পাশে একটা বড় বটগাছের নিচে ইশান কে দেখতে পেয়ে মামা মামি নিয়ে আসলো।

হ্যাঁ_সেটাই হবে! তাই হয়তো এই ছেলে এমন অদ্ভুত আচরন করে, হিহি আরু তুই তো দেখি মহা ইন্টেলিজেন্ট হয়ে গেছিস! সাব্বাশ মাই গার্ল সাব্বাশ, আচ্ছা মাই গার্ল হবে নাকি মাই বাচ্চা?

আরুর ভাবনার সুতো ছিঁড়লো ইশানের হাসির শব্দে। ইশান হাসতে হাসতে একদম গড়াগড়ি খাচ্ছে! হাসতে হাসতে পেট চেপে বসে পড়লো আরুর ঠিক সামনে!

ইশানের এমন হাসিও যেন বড় অদ্ভুত ঠেকছে আরুর কাছে! তৎক্ষনাৎ চারপাশে একবার চোখ বুলালো, কি এমন ঘটলো যার কারনে ইশান এভাবে হাসছে! কিন্তু সেরকম কোনো কিছুই যে তার চোখে পড়লো না!

, আচ্ছা এলিয়েনরা কি অকারণেই এভাবে ভুবন কাঁপানো হাসি হাসে? , হবে হয়তো! আরু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ইশানকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।

ইশান এখনো হেসেই যাচ্ছে, থামা থামির কোনো নামই নিচ্ছেনা! আরুর সেটা দেখে যেন আরো মায়া হচ্ছে, আহারে বেচারা ইশান ভাইয়া!

উনি যেদিন জানতে পারবে যে উনি মামা মামির ছেলে নয় বরং কোনো এলিয়েনের সন্তান, তখন নিশ্চয়ই খুব দুঃখ পাবেন, সবাইকে ছেড়ে যাওয়ার সময় নিশ্চয়ই খুব কান্না কাটি করবেন!

ইশশ সেদিনের কথা ভাবতেই যেন এখনই চোখে জল চলে আসে! ইচ্ছে করছে মাথায় হাত বুলিয়ে একটু শান্তনা দিতে!
ইশানের হাসি থামাতে থামাতে খুব বেগ পেতে হলো। দুইবার জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে আরুর দিকে তাকালো। আরু এখনো তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

সেটা দেখে আরেকটু হেসে নিলো ইশান। ভ্রু নাচিয়ে বলল,
~ হ্যা রে আরু? __হসপিটালে একদিন থেকেই কি মাথার তার দুই একটা লুস হয়ে গেলো?

আরু কপাল কুঁচকে তাকালো। ইশানের কথার কোনো আগা গোড়া না বুঝে তাকিয়ে রইলো। ইশানের সব কিছুই যে আরুর খুব অদ্ভুত ঠেকছে কি করে বলবে তাকে?

ইশান আবারো ভ্রু নাচিয়ে ফিক করে হেসে দিলো। গলা খাকারি দিয়ে বলল,

~ কি রে কথা বলছিস না কেন? তাহলে আমার ধারনা কি ভুল? তার দুই একটা লুস হয়নি নাকি? _পুরোটা ছিড়ে গেছে তাই না রে? আচ্ছা শোন পাবনায় কি সিট বুক করবো? , হাহাহা,

আরুর কপালের ভাজটা আরেকটু সরু হয়ে এলো। কিছু বলবে তার আগেই ইশানের পেছন দাঁড়িয়ে মামা বলে উঠলেন,

~ ইশান কি হয়েছে? সেই কখন থেকে দেখছি তুই হেসেই যাচ্ছিস তো হেসেই যাচ্ছিস। ব্যাপার খানা কি বল দেখি?
~ বাবা তোমার আদরের আরু পাগল হয়ে গেছে!
মামা ভ্রু কুঁচকালেন সাথে আরুও।

মামা বললেন,
~ কি সব উল্টো পাল্টা কথা বলছো?

ইশান আবারো হেসে পড়লো। বলল,
~ হ্যাঁ বাবা, সত্যি বলছি! আমি বলছি তোমায় পুরো ব্যাপারটা। আমি একটু আগেই বাসায় ফিরলাম, ফোনের দিকে তাকিয়েই এদিকে হেঁটে আসছিলাম তো হঠাৎ করে কানে এলো কে যেন আস্তে আস্তে কথা বলছে! আমি চারপাশে খুজতে লাগলাম! হঠাৎ দেখি আরু কি কি যেন বিরবির করছে আবার আপন মনেই হেসে উঠছে।

মামা ইশানের কথা গুলো শুনে যেন হতবাক। চোখ বড় বড় করে একবার আরুর দিকে তাকিয়ে আবার ইশানের দিকে তাকালেন, বললেন,

~ বলিস কি রে!তারপর?
ইশান আরো উৎসাহ নিয়ে বলতে লাগল,
~ তারপর আমি এগিয়ে আসলাম ওর দিকে, ভাবলাম মে বি ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে।

কিন্তু না..ও একা একাই বির বির করছে। শেষে কি করলো জানো?

~ কি করলো?
~ নিজেই নিজের কাঁধ চাপড়াচ্ছে আর সাব্বাশ দিচ্ছে ! ভাবো একবার,

কথাটা বলেই আবার হেসে দিলো, এবার মামাও যোগ হলো ইশানের সাথে, সেও তাল মিলিয়ে হো হো করে হেসে দিলেন।

আরুর এবার বেশ রাগ লাগছে, ইশান তাকে পাগল বলছে? বেটা নিজেই তো আস্ত একটা এলিয়েন, আবার অন্যকে পাগল বলা হচ্ছে!

কোথায় সে কি না ইশান এলিয়েনদের বাচ্চা ছিলো বলে দুঃখ প্রকাশ করছে আর এদিকে ইশান তার এভাবে মজা উড়িয়ে তাকেই পাগল প্রমান করে দিলো!

! নাহ এখানে আর থাকা যাবে না, জায়গা ছেড়ে উঠে হনহন করে নিজের রুমে চলে গেলো আরু। নীচ থেকে এখনো তাদের হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে।ইচ্ছে তো করছে ঐ ইশানের মাথার সব চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে।

রাত ১টা। আরু তার রুমের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সমানে পায়চারি করে যাচ্ছে।

বিছানায় দুই ঘন্টা যাবত এপাশ ওপাশ করে অবশেষে চরম বিরক্তি নিয়ে উঠে গেলো। সকালে ইশানের উপর রাগ করে রুমে এসেই ঘুমিয়ে পড়েছে।

দুপুর বেলা মায়ের জোরাজোরিতে উঠে নিজের রুমে বসেই মায়ের হাতে খেয়ে ঔষধ খেয়ে আবার ঘুমিয়েছে।

এতো ঘুমানোর জন্য রাতের ঘুমটা এখন হারাম হয়ে গেলো। এখন নিজের উপরই সে চরম বিরক্ত, এই রাত বিরেতে না ঘুমোলে আগামী কালের নবীন বরন অনুষ্ঠান যাওয়ার পুরো মুডটাই যে নষ্ট হয়ে যাবে।

রাতে ঘুম না হওয়ার কারনে যে সারাদিন মেজাজ থাকবে সপ্তমে চড়ে। তখন বাধ্য হয়েই অনুষ্ঠানে যাওয়ার সমস্ত প্লান ক্যান্সেল করতে হবে।

আর তা তো সজ্ঞানে থাকতে আরু কিছুতেই হতে দিবে না।উদ্দেশ্য এখন জোর করে হলেও ঘুমোতে হবে। ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানার দিকে এগিয়ে আসতেই ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো। ইশান দাঁড়িয়ে আছে।

পকেটে হাত গুজে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে আরুকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।

সাদা টি~ শার্টের উপর কালো পাতলা ওড়নাটা জড়িয়ে রেখেছে। লম্বা কালো চুল গুলো আজ পুরোটাই খোলা, অদ্ভুত মায়াবতী লাগছে মেয়েটাকে।

আরুর কথায় দৃষ্টি নামিয়ে নিলো ইশান। আরু কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বলল,
~ কিছু দরকার?

ইশান ঘোর লাগানো কন্ঠে বলল,
~ হু

~ কি দরকার?
~ মা..য়া..বতী কে দরকার!

~ অ্যা? ভাইয়াআআ কি বলছেন?
ইশান গলা খাকারি দিয়ে শুকনো ঢোক গিললো। ভারী পল্লব ফেলে বলল,

~ দেখতে আসলাম তোকে!
ইশানের কথা শুনে আরুর কুঁচকানো ভ্রুটা খানিক জাগিয়ে বলল,
~ আমাকে দেখতে এসেছেন, মানে?

ইশান আরুর দিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলল,
~ না, মানে! তোকে দেখতে আসলাম বলতে বুঝালাম, ঐ যে সকালের ব্যাপারটা মনে নেই?

তোর কার্যকলাপ দেখে তো মনে হয়েছিলো, তোর মাথায় বোধহয় ডিস্টার্ব দিয়েছে!আর তখন যে রাগ করে চলে এলি আর তো একবারও নিচে দেখা পেলাম না! তাই ভাবলাম, মাথায় প্রবলেম টা সত্যি সত্যি দিলো কি না।

কথাটা বলেই খানিক হেসে নিলো ইশান। যেটা দেখে আরুর গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে, আরু রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ইশানকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই ইশান আরুর হাত ধরে ফেলে!

নিজের সামনে দাড় করিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিয়ে বলে,
~ বলছিলাম যে, তোকে না একদম পেত্নী পেত্নী লাগছে! আর পেত্নীদের মতো এভাবে খোলা চুলে ঘুরছিস কেন?

সবাইকে হার্ট ফেল করিয়ে মারার ফন্দি আঁটছিস নাকি? , বেয়াদপ

আরুর বোকার ন্যায় তাকিয়ে আছে! কি বলে এই ছেলে? সে পেত্নীদের মতো চুল খুলে ঘুরে বেড়ায়? ,

, আবার তাতে মানুষের হার্ট ফেল ও হবে? ,
নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আরু ক্ষেপা গলায় বলে উঠলো,
~ বেশ করি!তাতে আপনার কি?

~ আমার অনেক কিছু, তোকে কেন বলবো?
~ গুড, বলার কোনো দরকার নেই! যান তো..
..
ইশান আবারো ঘোর লাগা কন্ঠে বুকের বা পাশে হাত রেখে বলে উঠলো,

~ তোকে দেখলেই হার্ট টা এতো দ্রুত বিট করে কেন বলতো? কি আছে তোর মাঝে, যা আমাকে টানে?

আরু হা করে তাকালো। ছেলেটা কি পাগল হয়ে গেলে নাকি? কি না কি বলছে?

আরু ইশানের চোখের সামনে তুরি বাজিয়ে বলল,
~ কি হয়েছে বলুন তো আপনার?

ইশান সচেতন দৃষ্টিতে তাকালো। গলা খাকারি দিয়ে নিজের মনেই বকে উঠলো,

~ (ইশান, কি হচ্ছে টা কি? কি করছিস? , যা বলতে এসেছিস তা বলে বিদায় হ)
আরু আবারো বলল,
~ কি হলো বলুন?

~ বলছিলাম যে, আব, আম, স, সরি!
ইশানের মুখে সরি শুনতেই আরু বিষম খেলো। একহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। সে যে নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না!

~ কি বললেন আপনি?
ইশান এবার শান্ত৷ কন্ঠে বলল,
~ সরি!

আরু ঠোঁট উল্টে তাকালো। সে কি সত্যি শুনছে নাকি ভুল শুনছে? ইশান আরুকে সরি বলছে, তার তো মাথা ঘুরছে! কেমনে কি?

ইশান আরুর ভাব দেখে হেসে ফেললো। মনে মনে আওড়াতে থাকলো,

~ হায়রে আমার ড্রামাকুইন


পর্ব ১৩

আরুঃ ভাইয়া আপনার শরীর ঠিকাছে তো? জ্বর~ টর আসেনি তো আবার?

ইশান ভ্রু কুঁচকালো। চোখ দুটো সরু করে বলল,
~ হঠাৎ জ্বর আসতে যাবে কেন? _আর শরীর খারাপই বা কেন হবে?

আরু দাঁত কেলিয়ে বলল,
~ না মানে স্বয়ং ইশান চৌধুরী সরি বলছে~ তাও আবার আরুকে! ভাবা যায় এগ্লা? (সারাদিন থাপড়ায়েই তো দিক পায় না)
ঈশান ধমকের সুরে বলল,

~ কেন? ইশান চৌধুরী কি মানুষ নয়?

ইশানের মুখে মানুষ নয় কথাটা শোনা মাত্রই আরু ফিক করে হেসে দিলো। ইশান হঠাৎ আরুর হাসির কারন বুঝতে না পেরে তাকিয়ে রইলো। ভ্রু কুঁচকে বলল,

~ কি হলো, এখানে হাসার কি হলো? হাসছিস কেন তুই?
~ (হাসি চেপে)(আমি তো সকাল থেকে এটাই ভাবছি ইশান চৌধুরী মানুষ নয়, আস্ত একটা এলিয়েন)।না না ভাইয়া! আসলে আমার হঠাৎ খুবই অস্থির একটা জোক্স মনে পড়ে গেলো। যার জন্য হাসি থামাতে পারলাম না।

ইশান এবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো, বলল,
~ আমি এদিকে তোকে সরি বলছি আর তুই কি না তোর জোক্স মনে করে হাসছিস ইডিয়ট, (ধমক দিয়ে) আমাকে দেখে কি তোর জোকার বলে মনে হয়?

~ (জোকার!হ্যাঁ ব্যাপারটা মন্দ নয়, এলিয়েন+জোকার=এজোলিকায়েন, হিহি), এমা ছি ছি ভাইয়া, এসব আপনি কি বলছেন! আমি কি একবারও সেটা বলেছি!

আচ্ছা বাবা সরি! এবার বলুন আপনি কেন হঠাৎ আমাকে সরি বললেন?

ইশান হঠাৎ রেগে গেলো।

কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
~ ইচ্ছে হয়েছে তাই বলেছি! এখন কি তোকে রিজন বলতে হবে নাকি? (ধমক দিয়ে), যা ঘুমা।

কথাটা বলেই রুম থেকে হনহন করো বের হয়ে গেলো। আর আরু খাম্বার ন্যায় দাঁড়িয়ে ইশানের যাওয়ার পানে হা করে তাকিয়ে রইলো। কি হলো হঠাৎ!

রাস্তার সাইডে দাঁড়িয়ে আছে আরু। রিক্সার অপেক্ষা করতে করতে বেচারি বিরক্ত হয়ে উঠেছে।

কিন্তু হায়__রিক্সার যে কোনো খবরই নেই! পুরো রাস্তা ফাঁকা পড়ে আছে, বারে বারে শাঁ শাঁ করে দুই একটা গাড়ি আসছে যাচ্ছে।
নীল নকশার নীল শাড়ী, এক হাত ভর্তি নীল কাঁচের চুড়ি, কপালে ছোট কালো টিপ, চোখে গাঢ় কাজল, ঠোঁটে হালকা লাল+গোলাপি মিক্স লিপস্টিক,

গলায় ঝুলছে সোনার পাথরের ছোট একটা লকেট।এই সোনার লকেট সহ চেইন টা তার বাবার দেওয়া শেষ উপহার, শেষ বারের জন্মদিনে বাবা তাকে দিয়েছিলো।

লকেট টাতে আরুর জান আটকে থাকে সব সময়, পাছে কোনো ভাবেই যেন হারিয়ে না যায় তাই এটা না পরে লকারে তুলে রাখে! যখন বাবাকে ভীষণ মিস করে ঠিক তখনই এটা বের করে গলায় পরে নেয়। এটা পরলেই যেন বাবাকে সে ফিল করতে পারে!

বাবার সাথে কথা বলতে পারে!মনে হয় যেন বাবা পরম যত্নে তাকে জড়িয়ে রেখেছে।

পাশ থেকে কেউ ডেকে উঠলে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো আরু। মধ্যবয়স্ক এক রিকশাওয়ালা তার দিকেই তাকিয়ে হাসি হাসি মুখ করে বলল,
~ আম্মা কই যাইতেন?

আরু মুখে হাসির রেখা টেনে বলল,
~ এই তো মামা, সামনেই আমার ভার্সিটি।

ওখানেই যাবো, কিন্তু আধঘন্টা যাবত দাঁড়িয়ে আছি কোনো রিক্সাই চোখে পড়লো না।
~ আইচ্ছা আম্মা আহেন।

রিকশাওয়ালার মুখে আম্মা ডাকটা শুনে যেন মনটাই ভরে উঠেছে। আরু মাথা নেড়ে উঠে পড়লো। ভার্সিটি পর্যন্ত আসতে আসতে লোকটি অনেক কথাই বললেন।

আরুর হাতের ব্যান্ডেজটার ব্যাপারেও হঠাৎ বিচলিত হয়ে উঠলেন, সাবধানে হাঁটা চলা করতে বলেছেন! আর অদ্ভুত ভাবেই লোকটির প্রতিটি কথার সাথে আম্মা কথাটি জুড়ে রেখেছিলেন অতি স্নেহের সাথে।

ভার্সিটির গেট~ এ রিকশাটি থামতেই কনা দৌড়ে আসলো। আরুর হাত ধরে খুবই সাবধানতার সাথে নামালো।

রিকশাওয়ালা লোকটির ভাড়া দেওয়ার সময় আরো পাঁচশ টাকা হাতে দিয়ে বলল,

~ মামা, তোমারও নাকি আমার মতো একটা রাজকন্যা আছে, এই টাকাটা রাখো, আজ তোমার রাজকন্যার জন্য যা ইচ্ছে হয় কিনে নিয়ে যেয়ো। তোমার সাথে এতোক্ষণ থেকে সত্যিই মনটা ভরে গেলো। তুমি সত্যিই একজন অসাধারণ বাবা!

আরুর কথায় লোকটির চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। ধন্যবাদ দিতে চাইলে আরু থামিয়ে দিয়ে বলল,

~ ধন্যবাদ দিয়ে আমায় ছোট করোনা প্লিজ! (মিষ্টি হেসে)তবে আমার জন্য একটু দোয়া করে দিতে পারো।

লোকটি হেসে আরুর মাথায় হাত রাখলো। মনে মনে কি যেন একটা দোয়া পড়ে মাথায় ফুঁ দিয়ে বলল,

~ সবসময় খুব ভালা থাকেন আম্মা, খুব! আরো অনেক দুর যাইন, অনেক বড় হইন আলহামদুলিল্লাহ।
লোকটির কথায় আরু এবং কনা দুজনেই মিষ্টি হাসলো। লোকটিও মাথা নেড়ে আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো।

ভার্সিটির মাঠে দাঁড়াতেই চোখ ধাঁধিয়ে এলো।

, চারপাশের পুরো জায়গা জুড়ে বিভিন্ন ফুল, লাইটিং এ সাজানো হয়েছে।

বিশাল মাঠটির এক কোনে বড় করে মন্ঞ্চ সাজানো হয়েছে, সব সময়ের মনের মধ্যেকার স্বপ্নের ভার্সিটি টা আজ প্রথম বারের মতো সামনে থেকেও স্বপ্ন বলেই ঠাওর হচ্ছে।

আজ নিউ স্টুডেন্ট রা সবাই নীল পরেছে, ছেলেরা নীল পাঞ্জাবি আর মেয়েরা নীল শাড়ী।

সেকেন্ড ইয়ারের সকল স্টুডেন্ট রা পরেছে মেরুন কালারের পাঞ্জাবি এবং শাড়ী। থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্টরা পরেছে খয়েরী সিল্ক শাড়ি এবং খয়েরী পাঞ্জাবি, লাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্টরা পরেছে কচু পাতা রংয়ের শাড়ী পাঞ্জাবি।

সব টিচার্সরাও আজ ভিন্য পোশাকে এসেছেন, সব স্যাররা সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট এবং কালো ব্লেজার, আর সব ম্যাডামরা আকাশী কালারের শাড়ী।

সব মিলিয়ে জাস্ট অসাধারণ লাগছে, আরু চারপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে মুখে হাসির রেখা টেনে বলল,

~ দেখ দোস্ত, চারপাশটা কতটা মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠেছে।
কনা মাথা নাড়লো, হাসি মুখ করে বলল,

~ জাস্ট ওয়াও, আর দেখ প্রতি ইয়ারের স্টুডেন্টদের এভাবে আলাদা আলাদা ড্রেসআপে কতটা ফুটেছে!
~ হ্যাঁ একদমই তাই।

~ আরু?
পেছন থেকে কারো কন্ঠ ভেসে আসতেই,

পর্ব ১৪

পেছন থেকে কারো কন্ঠ ভেসে আসতেই ঘুরে দাড়ালো দুজনে। শিহাব হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে, আরু তাকাতেই মুখের হাসিটা আরেকটু দীর্ঘ করে এগিয়ে এসে বলল,

~ আরু কেমন আছো? আর হাতের কি অবস্থা এখন?
আরু হাতের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
~ আগের থেকে বেটার।

~ এখন কোনো প্রবলেম হচ্ছে না তো?
~ (হালকা হেসে), প্রবলেম তো অল্প হচ্ছেই,
~ দেখো, সাবধানে চলাফেরা করো।

এখানে অনেক মানুষ চারপাশে। ভাবি(কনা) খেয়াল রাখবেন আপনার ফ্রেন্ডের প্রতি।
কনা মুচকি হেসে মাথা নেড়ে বলল,

~ সে কি আর বলতে ভাইয়াা, অবশ্যই রাখবো।
হঠাৎ আরু শিহাবকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে বলল,
~ ভাইয়া আপনারাও নীল পড়েছেন? কিন্তু আমি যতটুকু জানি, শুধু ফার্স্ট ইয়ারের জন্য অলওয়েজ নীল রঙটা বরাদ্দ থাকে! তাহলে আপনাদের,

শিহাব নিজেকে একবার দেখে আরুর দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে পাঞ্জাবি টা ঠিক করতে করতে বলল,

~ হ্যাঁ! আসলে আমাদের ভার্সিটির তো এটাই নিয়ম, প্রতি ইয়ারের স্টুডেন্টসদের জন্য আলাদা আলাদা কালার, তাছাড়া এখানে প্রত্যেকটি প্রোগ্রামের জন্যই অলওয়েজ আলাদা করে দেওয়া হয়! টিচার্সদের জন্যও সেইম রুলস। আর সব থেকে ইন্টারেস্টিং পার্ট হলো তোমাদের ড্রেসআপ,

আই মিন ফার্স্ট ইয়ারের এন্ড মাস্টার্স স্টুডেন্টদের ড্রেসআপ সেইম হয়।

শিহাবের কথা শুনে আরু আর কনা দুজনেই একবার মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো।

আরু কৌতুহলোদ্দীপক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
~ সেইম হয়! আচ্ছা অলওয়েজ কি এমন হয়?
~ হ্যাঁ অলওয়েজ এমন হয়। আর প্রত্যেকটা প্রোগ্রামই এমন সেইম ক্যাটাগোরিতে হয়।

~ কিন্তু কেন?
শিহাব হালকা হাসলো। হাসি মুখেই বলল,
~ এর কারন টা আমারও অজানা, তবে আমার ধারনা মতে ফার্স্ট ইয়ারদের নার্ভাসনেস দুর করতেও হতে পারে বা কোম্পানি দেওয়ার জন্যও হতে পারে।

আরু মুচকি হেসে বলল,
~ হবে হয়তো।
~ চলো সামনে যাই।
~ হু।

তিনজনেই সামনের দিকে হাটা ধরলো। হাটতে হাটতে শিহাব আবার বলল,

~ শাড়ী পড়ে কিন্তু তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে আরু।
আরু মুখে হাসির রেখা টানলো। কনা চটপট করে বলে উঠলো,
~ হ্যা রে আরু,

আজ যে চুল গুলো খুলে এসেছিস তাতে আরো বেশি কিউট লাগছে। আর এই লম্বা খোলা চুলের মাঝে এই বেলীফুলের মালাটার জন্য যেন তোর সৌন্দর্য আরো কয়েকগুন করে বাড়িয়ে দিয়েছে।

কনার কথায় আরু মুখ কুঁচকে বলল,
~ ডাক্তারি প্রেমের ডোজ ইদানীং একটু বেশী পরে মনে হচ্ছে! তাই সব কিছু এতো সুন্দর সুন্দর লাগে তাই না?

শিহাব মুখ টিপে হেসে অন্যদিকে তাকালো। কনা অসহায় মুখে একবার আঁড়চোখে শিহাবের দিকে তাকিয়ে আরুকে বলল,
~ সত্যি বলছি, বিশ্বাস হচ্ছে না তো দ্বারা,
আরু মুচকি হেসে বলল,

~ তুই বলবি আর আমার বিশ্বাস হবেনা, তা কি করে হয়? বাই দ্যা ওয়ে তোকেও ভীষণ মিষ্টি লাগছে।

তোর হাড়ের ডাক্তার আজ তোকে দেখে নির্ঘাত ফিট খাবে।
,
কনা লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বলল,
~ যাহ্, কিসব যা~ তা বলছিস!
আরু চোখ পিট পিট করে বলল,
~ বাব্বাহ্, তুই দেখি আবার লজ্জাও পাশ।

শিহাব এবার শব্দ করেই হেসে উঠলো সাথে আরুও যোগ দিলো, আর দুজনের হাসি দেখে তো কনা লজ্জায় দিশেহারা।


আর দুই মিনিট বাদেই কনার নাচের পারফরম্যান্স শুরু হবে, ওর আগের পার্টিসিপ্যান্টের নাচ মাত্রই শেষ হলো, এখনি কনার নাম ডাকা হবে।

আরুর বেশ এক্সাইটমেন্ট হচ্ছে। মনে মনে কাউন্ট করতেও শুরু করে দিয়েছে, 1, 2, 3…….আর কাউন্ট করার সুযোগ হলো না, তার আগেই কেউ তাকে হেঁচকা টেনে ভার্সিটির কমন রুমে নিয়ে

গেলো। এভাবে টানা হেঁচকার জন্য সামনে থাকা মানুষ টা কে দেখার আর সুযোগ হলো না,

, কিন্তু এখন সে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

তাই পা থেকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।

কালো জুতা, সাদা প্যান্ট, ঠিক সাদা নয়!, নীল পাঞ্জাবি, হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা, বাম হাতে কালো ব্রান্ডের ঘড়ি, ডানা হাতে কালো সুতোর মতো কিছু একটা পেঁচানো সাথে একটা কার্ডও ঝুলছে, পাঞ্জাবির তিনটা বোতামের একটা খোলা, নাহ ছেলে ভদ্র বেশেই আছে।

আর তাকানোর সুযোগ হলো না, তার আগেই ঝড়ের গতিতে গালের উপরে এক চড় বসে গেলো।

আরু টাল সামলাতে না পেরে দু’পা পিছিয়ে গিয়ে গালে হাত দিয়ে সামনে তাকালো।

ইশান রাগে যেন লালা টমেটো হয়ে আছে। চোখ দুটো ভীষণ রকমের লালা হয়ে আছে, সেদিকে আরুর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই যেন,

!তার মস্তিষ্ক কেবল এটাই জানান দিচ্ছে নীল পাঞ্জাবিটা না পরলে যেন আজ অনেক বড় ভুল করে ফেলতো ইশান, অনেক বড় ভুল।
ইশান আবারো হেচকা টেনে আরুকে নিজের সাথে চেপে ধরলো। রাগে কটমট করতে করতে বলল,
~ শাড়ী পড়েছিস কেন তুই?

আরু ভ্রু কুঁচকে তাকালো ~ (এমা এটা আবার কেমন প্রশ্ন হলো)
~ কেন পড়েছিস বল? আমি বলেছি তোকে শাড়ী পড়তে? __পড়েছিস বেশ ভালো কথা,

, পেট কেন বের করেছিস? বল, (চিল্লিয়ে!? ওহ আচ্ছা ছেলেদের দেখানোর জন্য তাই না?

ইশানের কথা শুনে আরুর চোখ কপালে উঠে গেলো! বলে কি ছেলে? ঝড়ের গতিতে ইশানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কমন রুমের বিশাল আয়নাটির সামনে দাড়ালো। যা দেখলো তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না!

বেশ কতখানি জায়গা থেকে শাড়ীটা সরে গিয়েছে, যার ফলে পেটের মাঝ বরাবর কালো তিলটা পর্যন্ত বেরিয়ে এসোছে! ছিঃছিঃ, কি একটা কান্ড! এর জন্যই বোধহয় বা পাশের ছেলে গুলো বার বার শিষ বাজাচ্ছিলো। অথচ তার একবারও খেয়াল হলো না!

হাতে ব্যাথা নিয়ে যথেষ্ট সুন্দর করে সে শাড়ী টা পড়েছে, কিন্তু ইশানের কথা শুনে মনে হচ্ছে সে ইচ্ছে করেই এভাবে পড়েছে।
ইশান পাশ থেকে আবারো ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো,

~ হ্যাঁ, ঐ সাদা পেটখানা আর তার মাঝে ঐ তিলটা বাইরের ঐ ছেলেগুলোকে দেখিয়ে শান্তি হয়েছে তো? মজা পেয়েছিস? , ওরা ক্ষুধার্ত কুকুরের মতো লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে যে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলো, শান্তি হয়েছে? নাকি আরো বাকি আছে? তাহলে

বল, শাড়ীটা আমি নিজ হাতে খুলে দেই! তারপর ঐ ক্ষুধার্ত কুকুর গুলোর খাবার হয়ে যা, যা(চিল্লিয়ে), (শক্ত করে বাহু দুটো চেপে ধরে নিজের মুখোমুখি করে নিলো আরুকে), শাড়ী যখন ভালো করে পড়তে পারিসনা তো

কেন পরেছিস বল? (ধাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে দিয়ে)কোনো দরকার নাই তোর শাড়ী পড়ার, খুলে ফেল! খোল বলছি, (চিৎকার করে)! ইচ্ছে তো খুন করে ফেলি! (বেন্ঞ্চে সজোরে লাথি মেরে)।

ইশানের প্রত্যেকটা কথাই যেন কাঁটার মতো শরীরে বিঁধছে আরুর। চোখ দুটো ভরাট হয়ে এলো। চোখের পানি গুলোও বাঁধ মানতে চাচ্ছে না, মুক্তোর ন্যায় ঝড়ে পড়লেই তাদের শান্তি!

টুপ করে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লেও আড়াল করে নিলো। ইশানের সামনে এই মুহুর্তে দাঁড়িয়ে থাকার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই। পারলে দৌড়ে পালিয়ে যায় কোথাও, কিন্তু!

শাড়ীটা তাড়াতাড়ি করে ঠিক করতে নিলেই হাতে চাপ লাগে! ব্যাথাটা সহ্য করার জন্য ঠোঁট কামড়ে ধরলো, কিন্তু ব্যাথার কাছে অসহায় হয়ে কুকিয়ে উঠলো, আরুকে হাত চেপে কুকিয়ে উঠতে দেখেই ইশান দৌড়ে আসলো! ব্যস্ত কন্ঠে বলল,

~ কি হলো! ব্যাথা করছে হাতে? আবার ব্যাথা পেয়েছিস! ইডিয়ট একটা দেখে কাজ করবি না? ঠিক ব্যাথা পেলি! তুই এতো ছটফটে কেন বলতে পারিস? শান্ত হয়ে কোনো কাজ করার তো নামই নিস না! দেখি হাতটা! খুব ব্যথা করছে বুঝি!

পর্ব ১৫

আরু চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, ইশানের প্রত্যেকটা কথাতেই যেন রাগ আর ঘৃনা ফুটে উঠছে!এই মুহুর্তে তার একটা কথাও শুনতে চায় না আরু, একটা কথাও নয়!

ইশান আরুর হাত ধরেই কাউকে একটা ফোন করলো।
~ একটা ফাস্ট~ অ্যাইড বক্স নিয়ে তাড়াতাড়ি কমন রুমে চলে আয়।
ফোনটা পকেটে রাখতে রাখতে আরুর দিকে তাকালো। মুখের সামনে চলে আসা ছোট চুল গুলো সরিয়ে দিতে চাইলে, তার আগেই আরু তাড়াতাড়ি করে চুল গুলো সরিয়ে নেয়। তার দৃষ্টি এখনো মেঝেতে স্হীর! সে যে কোনো ভাবেই ইশানের চোখে চোখ রাখতে

চায়না! যার চোখে তার জন্য এতোটা ঘৃনা সে কেন তাকাবে তার দিকে? কেন দেখবে তাকে?

~ খুব ব্যাথা করছে তাইনা? যন্ত্রনা হচ্ছে তাই না? কেন এমন করিস বলতো? কেন নিজের ভালোটা নিজে বুঝিস না? কেন বুঝিসনা কোনটা তে তোর ভালো আর কোনটা তে মন্দ? এখনো না বুঝলে কবে বুঝবি? কেন বুঝিস না আমি তোকে,
~ ইশান?

কারোর কন্ঠ ভেসে আসতেই পেছন ফিরে তাকালো ইশান। শিহাব, পিয়াস আর কনা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ইশান ইশারা করতেই তারা একপ্রকার দৌড়ে আসলো।

আরুর হাতের সাদা ব্যান্ডেজের প্রায় অর্ধেকটাই লাল হয়ে উঠছে, সেটা দেখে কনা আরুর সামনে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে দাড়ালো।

, শিহাবের হাত থেকে ফার্স্ট~ অ্যাইড বক্সটা নিয়ে পিয়াস পাশের ছোট টুল টা টেনে আরুর সামনে বসলো। ইশান এখনো আরুর হাতটা ধরে আছে, পিয়াস ওভাবেই আরুর হাতের ব্যান্ডেজটা খুলে ভালো করে ড্রেসিং করে আবার ব্যান্ডেজ করে দিলো।
শিহাব অস্থিরতার সুর টেনে বলল,

~ আরু, কি করে কি করো বলোতো!? হাতের এমন অবস্থায় তোমার তো আরো সাবধানে থাকা দরকার ছিলো!
ইশান শান্ত কন্ঠে বলল,
~ ব্যাথা কি করছে এখনো?

কনা আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
~ চিন্তা করিসনা সোনা, উনি ভালো করে ড্রেসিং করে আবার ব্যান্ডজ করে দিয়েছেন।

এখন আর ব্যাথা করবে না!
আরু ইশানের থেকে নিজের হাত গুটিয়ে নিয়ে উঠে দাড়ালো। শাড়ী টা চোখের পলকে ঠিক করে নিয়ে শিহাবকে উদ্দেশ্য করে বলল,
~ হ্যাঁ ভাইয়া! আমাকে তো আরো কত কিছুই করা উচিৎ যা আমার মাথা থেকেই বের হয়ে যায়, তবে হ্যাঁ আমি সত্যিই কিছু ইচ্ছে করে করিনি!

ইশান বুঝতে পারলো আরু কথা টা তাকেই বলেছে! কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরু আবারো বলে উঠলো,
~ আমি বাসায় ফিরবো কনা।

কনা ইশানের দিকে একবার তাকিয়ে আরুর দিলে তাকালো। বলল,

~ এত তাড়াতাড়ি! আচ্ছা শরীর কি খুব খাবার লাগছে?
~ না আমি একদম ঠিকাছি!
~ তাহলে কেন যেতে চাচ্ছিস আরু!প্লিজ যাস না সোনা! আজ আমরা কত কিছু প্লান করে এসেছি! ভুলে গেলি তুই? চলে গেলে তো স,

~ আমার এখানে দমবন্ধ লাগছে! প্লিজ আমাকে জোর করিসনা!
পিয়াস কনার দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে শান্ত হতে বলে আরুর দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

~ আরু আর কিছুক্ষণ কি থাকা যায় না? দেখো এই প্রোগ্রাম টা তো মূলত তোমাদের জন্যই বলো? আর তুমি যদি চলে যাও তাহলে,
শিহাব বলল,

~ হ্যাঁ আরু! তুমি হঠাৎ চলে গেলে আমাদেরও খারাপ লাগবে!
আরু কোনো কথা বলল না, চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। ইশান ঠিক বুঝতে পারলো তখন ওভাবে কথা গুলো বলাতে আরু খুব কষ্ট পেয়েছে,

আরুর চোখের জল সে যতই আড়াল করতে চাক না কেন, ইশান ঠিক দেখে নিয়েছে, কিন্তু রাগের মাথায় আরুকে সামলানোর জন্য হাত বাড়াতেই ভুলে গেছে সে।

এখন তার নিজের মধ্যেই যেন ঝড় শুরু হয়েছে।

তার আরু তার কথার জন্য কষ্ট পাবে সেটা যে সে দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেনা। সে আরুর দিকে এক পা বাড়াতেই আরু তাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।

কনা আরুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলল,
~ এই আরু, দ্বারা! কোথায় যাচ্ছিস? শোন?

এই বলে কনাও ছুটলো আরু পেছন পেছন। কনাকে যেতে দেখে পিয়াসও গেলো তার সাথে।

ইশান একটা বেন্ঞ্চ ধরে বসে পড়লো। শিহাব ইশানের দিকে তাকিয়ে সেও চলে গেলো তাদের সাথে।

ইশান দু~ হাত দিয়ে একবার পুরো মুখ মালিশ করে নিলো। বড় করে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে আপন মনেই হেসে উঠলো। মাথার সিল্কি চুল গুলো পেছনের ঠেলে দিয়ে বলল,

~ আমার মায়াবতীর ভীষণ অভিমান হয়েছে আমার উপর! সরি মায়াবতী, ইশান এই কান ধরে সরি! রাগের মাথায় তোমায় উল্টো পাল্টা না জানি কি বলে ফেলেছি,

! আম রিয়েলি সরি! প্লিজ এবারের মতো মাফ করো! কি করতাম বলো? তোমার শাড়ীটা যে কতখানি সরে গিয়েছে তার কোনো হুঁশ ছিলো তোমার? ঐ ছেলে গুলো কেমন করে তাকাচ্ছিলো!

, আমার একদম সহ্য হচ্ছিলো না। ওদের তো ব্যবস্থা করেই এসেছি! তবুও রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনি বলে এমন করেছি! তুমি শুধু আমার, আর আমার জিনিসে কারোর হক তো দুরে থাক কারোর নজরও সহ্য হয়না আমার।

দরকার পড়লে খুন করে ফেলবো!
_
সবসময় আমার সাথে এমন করে! বলা নেই কওয়া নেই ঠাটিয়ে লাগিয়ে দেয় থাপ্পড়, কেন রে? বলি কেন_

আমায় কি মানুষ বলে মনে হয়না, হ্যাঁ? নাকি নিজের মতো আমাকেও এলিয়েন ভাবে বেটা বজ্জাত কোথাকারে!

শুধু বজ্জাত না বেটা রাক্ষস, এলিয়েন, পেত্নীর জামাই!দেখিস তোর জীবনে বিয়ে হবে না, আর হলেও তোর বউ বাসর রাতে ভেগে যাবে! আর যদি সেটাও না হয় তাহলে_

? তাহলে, হ্যাঁ তাহলে তোর বউ একশো জনের সাথে পরকিয়া করতে গিয়ে ধরা খাবে দেখে নিস, তারপর দেখিস কেমন লাগে? তারপর? তারপর তোর বউ! তোর বউ..

..! ধুর বাল মনেও আসছেনা কিছু! হ্যাঁ হ্যাঁ তোর বউ বাসর রাতে দশ জনের সাথে পালাবে দেখিস! আচ্ছা দশজনের সাথে কি করে যাবে? দশজন কি একসাথে আসবে নাকি আলাদা আলাদা?

? আলাদা আলাদা আসলে তো হবে না!(নিজের উপরই বিরক্ত হয়ে) ইইইই আরু কি হচ্ছে টা কি? ইশানের বউ দশ বেটার সাথে ভেগে যাবে কি করে_? আলাদা আসবে নাকি একসাথে আসবে সেটা তাদের ভাবতে দে না!

আমায় কত কথা শুনিয়ে দিলো খামখা! আমি কি ইচ্ছে করে পেট বের করেছি নাকি? শয়তানের নাতি, বদের হাড্ডি!

হ্যাঁ যদি ইচ্ছে করেও বের করি তাতে বেটা তোর কি? হ্যাঁ বল তাতে তোর কি? মায়ের পেট থেকে পরে যা না শুনেছি ঐ বেটা এলিয়েনের থেকে তার থেকেও বেশি শুনতে হয়,

! তোর বাপ মা একবার আসুক না, তোর এলিয়েনের বংশধর! একবার আসুক!একদম ধরে, বেঁধে, মেরে তোকে ওদের সাথে দিয়ে দিবো দেখে নিস।

একদম হাত পা বেঁধে!
একা একা বকবক করছে আর হাঁটছে, পেছন থেকে যে কনা, পিয়াস, শিহাব এতো করে ডেকে চলেছে সেটা আরুর কান পর্যন্ত এসে পৌঁছচ্ছে কিনা সন্দেহ।

কনা~ আরু? আরু শোন? এই দেখ আন্টি কল করেছে! আরু_?

মায়ের কল করার কথা শুনে আরু দাঁড়িয়ে পড়লো। পেছন ফিরে বিরক্ত ভরা চোখে তাকালো।

~ কিরে এতো করে ডাকছি, শুনছিসই না?
আরু ভ্রু কুঁচকে বলল,

~ কি প্রবলেম বল?
কনা দু’তিনবার জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
~ তোর ফোন যে আমার কাছে রেখেছিস মনে আছে? আন্টি সেই কখন থেকে ফোন করে যাচ্ছে!

~ হ্যাঁ, এখন শুধু মায়েরই কম ছিলো!
ফোনটা কনার হাত থেকে নিয়ে কানে ধরলো! ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

~ মা_কি হয়েছে বলো?
~ আরু, কি হয়েছে? কোথায় ছিলে তুমি? এতোক্ষণ ধরে কল করছি,
~ মা ওয়াসরুমে ছিলাম, বলো তুমি?

~ তোমার গলাটা এমন লাগছে কেন? কি হয়েছে মা?
~ (কি আর হবে! সবই কপাল,

! )কিছু হয়নি মা! চারপাশে অনেক মানুষজন তো তাই হয়তো ভয়েসটা একটু অন্যরকম লাগছে!

~ ওহ! আচ্ছা শুনো যার জন্য ফোন করা,
~ হু বলো?

~ তুমি আর ইশান ভার্সিটি থেকে সোজা রুনা আপাদের বাসায় চলে এসো কেমন? আমরা এখন ওখানেই যাচ্ছি।
~ (ভ্রু কুঁচকে) রুনা আপা কে মা?

~ ইশানের বড় খালা!ভুলে গেলে নাকি?
~ ওপস সরিইইই!

~ আচ্ছা শোনো যা বলছিলাম, ইশানের সাথে সাবধানে এসো কেমন? আমি ইশানকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি!

~ (আবার ইশান! কখনো যাবোনা ঐ বদ ছেলের সাথে! ), ওকে মা!
~ ওকে মা রাখো তাহলে!
~ হু!

পর্ব ১৬

আধঘন্টা যাবত নদীর পাড়ে হাঁটছে সবাই।

ঘড়িতে ৫ টা ৪৫মিনিট~ । ভার্সিটি থেকে বের হয়ে আগে কোথায় যাবে, ঠিক করতে করতেই খানিক সময় পার হয়ে গেলো। ২টার দিকে বের হয়ে প্রথমে পার্কে গিয়ে ঘন্টা দুই আড্ডা জমালো, অল্প সল্প খাবারেরও আয়োজন ছিলো।

সবাই বেশ মন খুলে কথা বললেও আরু বেশ চুপচাপই ছিলো! আর সেটাই যে বার বার করে পোড়াচ্ছিলো ইশানকে! কি করলে আরু একটু কথা বলবে, কিন্তু প্রতি বার~ ই সে ব্যর্থ হলো। অবশেষে তার মাথায় এলো আরু নদীর পাড়ে হাটতে খুব ভালোবাসে।

নদীর পাড়ে অর্ধেক পা পানিতে ভিজিয়ে বসে সে প্রকৃতির স্বাদ নিয়ে মাতাল হতে ভালোবাসে।

প্রকৃতি তখন ভালোবেসে আরুকেও তার মাঝে নিতে চায় যেন!শীতল বাতাসে আরু চোখ দুটো বন্ধ করে নিয়ে তাতে ভাসতে ভালোবাসে।

চারপাশের এতো মনোমুগ্ধকর পরিবেশ দেখে আরু আবারো চন্ঞ্চল হয়ে উঠলো!তার ভিতরে চন্ঞ্চলতার অস্তিত্ব আবারো মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো। কারোর দিকে তাকানোর সময় না করে সে আগেই গিয়ে বসে পড়লো পাড়ে! পা ঝুলিয়ে পানির মধ্যে পা নাচাতে

লাগলো!পানির ছলত ছলত আওয়াজে আরু খিল খিল করে হেসে উঠলো। তার ঠোঁটের কোনে সেই দুষ্ট হাসির রেখা আবারো ফুটে উঠলো! __হ্যাঁ ইশান স্বার্থক তার আরুর মুখে হাসি ফোঁটাতে।

আরুর এই স্বভাবে ইশান আর কনা পূর্ব পরিচিত হলেও শিহাব আর পিয়াস একদমই নতুন!আরুকে দেখে কনাও পিয়াসের হাত ধরে আবেগ মাখানো কন্ঠে বলে উঠলো,

~ চলুন না পাড়ে পা ঝুলিয়ে বসি? আমার অনেকদিনের ইচ্ছে ছিলো, কিন্তু ভয়ের জন্য কখনো করতে পারিনি! তবে আজ আর ভয় হচ্ছে না, আজ সত্যি খুব ইচ্ছে করছে আপনার সাথে একসাথে পা ঝুলিয়ে বসতে, আসুন না!

পিয়াস কপালের ভাজ সরু করে বলল,
~ এই একদম না, পানি অনেক ঠান্ডা! তাছাড়া পা ঝুলিয়ে বসলে হাঁটু পর্যন্ত ভিজে যাবে! যেটা এই মুহুর্তে আমার কাছে চরম অস্বস্তির কারন হবে!

পিয়াসের কথা শুনে নিমিষেই কনার মুখ ভার হয়ে এলো। বলল,

~ ধুর আপনি একটুও রোমান্টিক নন!কোথায় খুশিতে গদোগদো হয়ে বলবেন চলো, তা না করে কি বলছেন? পানি অনেক ঠান্ডা, পানিতে হাঁটু পর্যন্ত ভিজে যাবে যা আপনার অস্বস্তি লাগবে!

পিয়াস হাসলো। হাসির রেখা আরেকটু দীর্ঘ করে বলল,
~ আচ্ছা তাই বুঝি? আমি একটুও রোমান্টিক নই?
কনা কপোট রাগ দেখিয়ে বলল,
~ হয়েছে, আর ঢং করতে হবেনা! থাকুন আপনি!

এই বলেই কনা গটগট করে হেঁটে চলল। পিয়াস বেচারা কতক্ষন তাকিয়ে থেকে হেসে ফেললো। উপায় অন্তর না পেয়ে সেও কনার পেছন পেছন চলল।

ইশান দুজনের কান্ড দেখে মনে মনে হাসলো। আরুও কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার পানিতে মনোযোগ দিলো। শিহাব হেসে উঠে বলল,

~ প্রেম করার সাইড ইফেক্ট।

শিহাবের কথা শুনে ইশান মুচকি হেসে মাথা নেড়ে একবার আরুর দিকে তাকালো। শিহাব আবারো বলে উঠলো,

~ দোস্ত ৬~ টা বাজতে চললো। আমায় এখন যেতে হবে!
~ এখনি যাবি? বাকি প্লান গুলো?
~ তুই একটু দেখে নিস প্লিজ।
আমি আসি!
~ ওকে!

~ আরু ~ আসলাম?
আরু ঘাড় ফিরিয়ে নাথা নাড়তেই শিহাব মুচকি হেসে চলে গেলো। শিহাব চলে যেতেই ইশান আরুর পাশে পা ঝুলিয়ে বসে পড়লো।

, আরু ইশান কে পাত্তা না দিয়েই মনের সুখে পা দুলাচ্ছে। সেটা দেখে ইশানের রাগ হলো বটে, কিন্তু সে রাগকে পাত্তা না দিয়ে চুপ করে বসে প্রকৃতি দেখতে লাগলো।

আরু ভাবতে লাগলো কনার কথা__কনার প্রেম করার ব্যাপারটা এখনো তার কাছে অবিশ্বাস্য লাগে! সেই ছোট বেলা থেকেই তাদের বেস্ট ফ্রেন্ড সম্পর্ক।

কনা ছোট থেকেই আরু বলতে পাগল। কোনো কারন ছাড়াই সে আরুকে ভীষণ ভালোবাসে।

তাদের দুজনের একসাথে করা এমন অনেক অদ্ভুত কান্ড আজও আরুর এলবামের প্রতিটি পৃষ্ঠায় সযত্নে স্থান জুড়ে আছে।

কনা গুনে গুনে সব কিছুতে পার্ফেক্ট হলেও ছেলেদের সে কোনো কালেই বেশি পছন্দ করতো না, আর তার এই ব্যাপারটাতেই তার হাড়ের ডাক্তার তার প্রেমে পড়েছে।

আরুর মুখে হাসি থাকলেও কথা নেই! আর সেই জিনিসটাই ইশান নিতে পারছেনা! একটু কথা বললে কি এমন ক্ষতি বুঝেনা সে? কথা বললে কি তার সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটাই হারিয়ে যাবে? উফফ! না আর নেওয়া যাচ্ছেনা!কথা আগে আমিই শুরু করি! পরে যা হবার হবে।

ইশান গলা খাকারি দিয়ে বলল,
~ অনেক্ষন হয়েছে পা ভিজিয়ে আছিস, পরে তো পা ব্যাথা করবে!
আরু ঠোঁট উল্টে তাকালো, কিছু একটা বলতে চেয়েও বলল না!অর্ধেক ভেজা শাড়ীর দিকে একবার তাকিয়ে আবারো পানিতে পা নাচাতে লাগলো।

ইশান আরুর বাচ্চামো দেখে মনে মনে খানিক হেসে আবারো বলল,

~ অনেক্ষন হয়ে গেছে, এখনো কিছু খাওয়া হয়নি! খেতে হবে না?
আরু এবার ভ্রু কুঁচকালো। ইশানের পায়ের দিকে একবার তাকিয়ে দেখে নিলো, তার পা~ ও প্রায় অর্ধেক ভিজে আছে কিন্তু প্যান্ট ভিজেনি একটুও! কারন প্যান্ট তো প্রথমেই হাঁটু পর্যন্ত গুটিয়ে রেখেছে।

এখন যদি তার প্যান্টটাও অর্ধেকটা ভিজে যেতো তাহলে এই বাহানা করেও বাসায় যাওয়ার কথা বলে খাবার থেকে বাঁচা যেত!

রেস্টুরেন্টে চেয়ারে পিঠ এলিয়ে বসে আছে আরু।

তার পাশে ইশান!আর তাদের দুজনের সামনে কনা আর পিয়াস। খাবার অর্ডার করে চারজনেই অপেক্ষা

করছে!পিয়াস খাবার আসে কি না সেটা দেখার ভান ধরে চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে, কিছু একটা খুজছে হয়তো!ইশান পিয়াসের ব্যাপারটা বুঝতে পেরে গলা খাকারি দিলো।

আরু তার দিকে তাকাতেই তাদের টেবিল থেকে খানিক দুরের টেবিলটা দেখিয়ে বলল,

~ আমরা ঐ টেবিলটাতে বসি চল? __ওখানের এসির বাতাস টা ভালো আসছে,
আরু ভ্রু কুঁচকে বলল,

~ কেন_? এখানেও তো ঠিক আছে!
ইশান আরুর হাত ধরে বলল,
~ আমার প্রচুর গরম লাগছে, চল তুই!

আরুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিয়ে গেলো ইশান। আরু হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,

~ আপনার গরম লাগছে তো আপনি বসুন না এখানে, আমাকে কেন সাথে নিয়ে আসলেন?

~ আরে আস্তে কথা বল ইডিয়ট! এতো জোরে কথা বললে সবাই ভাববে আমি তোকে কিডন্যাপ করে এনেছি! (আরু কপাল কুঁচকে তাকাতেই) পিয়াস আর কনার একটু প্রাইভেসির জন্য তোকে এখানে নিয়ে আসলাম।

ফ্রেন্ড হয়ে ফ্রেন্ডের দুঃখ বুঝিসনা!
~ এখানে দুঃখের কি হলো?

~ অনেক কিছু হয়েছে, তুই বুঝবি না। কি খাবি অর্ডার কর?
~ (মুখ কুঁচকে) ওখানে তো একবার অর্ডার করলেন? আবার কেন অর্ডার করবো?

~ ওখানে সবাই যার যার পছন্দের অর্ডার করেছে, আপনি তো পটের বিবি সেজে মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিলেন!

~ আমি কিছু খাবোনা! আপনার ক্ষিধে লাগলে আপনি খান! (ইশান চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই), না মানে কি করে খাবো? হাতে তো ব্যাথা,

~ কি করে খাবি সেটা পরে ভাবিস, আগে খাবার অর্ডার কর।
আরু আর কথা বাড়ালো না।

মেনু কার্ড হাতে তুলে নিজের মুখ ঢাকলো। এই এলিয়েন ছেলে যে যেকোনো উপায়ে তাকে খাইয়ে ছাড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

তাই কথার পিঠে কথা বাড়িয়েও যে কোনো লাভ হবে সেটা ভাবাও নিতান্ত বোকামি।

মনের অনিচ্ছা সত্ত্বেও খাবার অর্ডার দিলো।
গুনে গুনে ঠিক ১৫ মিনিটের মাথায় সব খাবার এসে হাজির হলো টেবিল ভর্তি করে। আরু খাবারগুলোর দিকে একবার বিরক্তভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

~ নিন, সব খাবার এসে গেছে! এখন বলুন এই ব্যাথা হাত বাদ দিয়ে অন্য একটা হাত দিয়ে খাবো কি করে? (সব সময় শুধু ঘাড়ত্যাড়া মার্কা কথা)

ইশান কিছু বলল না। একটা পানির বোতল খুলে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে খাবারের প্যাকেট গুলো পাশে নিয়ে খুলতে লাগলো। খুলতে খুলতে আরুর দিকে আঁড়চোখে বার কয়েক তাকালো। খাবারের এক টুকরো হাতে তুলে আরুর মুখের সামনে ধরে বলল,

~ এভাবে খাবি! নে হা কর?
ইশানের এহেম কান্ডে আরু রীতিমতো অবাকের শীর্ষে অবস্থানরত। চোখ বড় বড় করে ইশানের দিকে তাকালো। তার মাথায় ঠিক কি চলছে সেটাই বোঝার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু বারংবার ব্যার্থই হচ্ছে সে। আরু যে সত্যিই এই মানুষ টা কে বুঝে পায় না।

এই তো সকালেই, কি নিদারুণ রেগে গিয়ে থাপ্পড় লাগিয় দিলো, সাথে এতো এতো কথা, আর এখন? সেই মানুষ টা~ ই খাবার তুলে তাকে খাওয়াচ্ছে?

আরুকে এভাবে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশান চোখ দুটো সরু করে বলল,

~ এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? খাবার নিবি তো মুখে? দেখ আমার কিন্তু প্রচুর ক্ষুধা লাগছে, পেট জলছে এখন!
আরু চোখ নামিয়ে নিলো, চোখের ভারী পল্লব ফেলে বলল,
~ হ, হ্যাঁ

~ (খাবার মুখে দিয়ে) হাতে কি ব্যাথা করছে?
আরু খাবার চিবোতে চিবোতে না সূচক মাথা নাড়লো। তার মানে এখন আর ব্যাথা করছেনা!

~ হু গুড, শোন এখান থেকে বের হলে জানিনা ওদের কোনো প্লান আছে কিনা? থাকলে তো যেতে হবে আর না থাকলে বাসায় ফিরবো কেমন? সেই সকাল থেকে বাইরে আছিস! একটু রেস্টের দরকার তোর!
~ হু।

ইশান আর কিছু না বলে আরুকে খাইয়ে আবার নিজেও খেয়ে নিলো। আর সেই পুরোটা সময়ই আরু শুধু তাকে আঁড়চোখেই দেখে গিয়েছে।

মানুষ টা কে আরুর প্রয়োজনের চেয়েও বেশি পার্ফেক্ট বলে মনে হয়! ব্যাস এই কেয়ারিং মানুষটার প্রেমেই ডুবতে চাচ্ছে আরু, এমন শান্ত, চুপচাপ, কেয়ারিং মানুষ টা কে একটু ছুঁয়ে দিলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে?

পর্ব ১৭

সন্ধ্যে ৭টা বাজতেই বাসায় ঢুকলো ইশান আর আরু।

ড্রয়িং রুমে বসে সবাই বিয়ের ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করছিলো। তাদের দেখতেই নাইমা বেগম উঠে আসলেন মেয়ের কাছে।

দুজনকেই উদ্দেশ্য করে বললেন,

ইশান ক্লান্তি ভরা চোখে একবার আরুর দিকে তাকালো। আরু বলল,
~ মা প্রোগ্রাম শেষ হলো পাঁচটার পরে, আর…
ইশান আরুর কথার মাঝেই বলে উঠলো,

~ আর মনি প্রোগ্রাম শেষে টিচার্সদের সাথে আধঘন্টার একটা ছোট মিটিং ছিলো, যার জন্য,
নাইমা বেগম স্মিত হাসলেন।

বললেন,
~ কোনো ব্যাপার নয়। দুজনকেই ভীষণ টায়ার্ড লাগছে, যাও আগে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নাও।

কেমন?
ইশান আরু দুজনেই একবার চোখাচোখি করলো, মাথা নেড়ে দুজনেই নিজেদের বরাদ্দ রুমে চলে গেলো।


লিনার বিয়ের বাকি আছে আর মাত্র ৫ দিন।

কালকে সকাল থেকেই তাদের আত্নীয় স্বজনরা সব আসতে শুরু করে দিবে।

তাই আজ থেকে সবার রুম গুলো আলাদা করে গুছিয়ে রাখা হয়েছে। লিনার বড় দুই বোন, ইনি আর বিনি। তাদের দুজনেরই বাচ্চা আছে, ইনির এক ছেলে নাম শাহাদ আদিল, বয়স ৮ এর কাছাকাছি, আর বিনির এক মেয়ে নাম আইরা সিদ্দিকী বয়স পাঁচ।

তারা দুই বোনই পরশু দিন আসবে! তাই দুর্ভাগ্যবশত আরুকে আগে ভাগেই ইনির আপুর রুম ত্যাগ করতে হয়েছে। বাড়িটা দোতলা ভবন।

বেশ বড় বলায় যায়, নীচ তলায় ৪ টা রুম আর উপর তলায় ৪টা। নীচতলার এক রুমে থাকে লিনার বাবা মা।

বাকি তিন টা তে আজ থেকে থাকবে ইশানের বাবা মা আর আরেকটিতে থাকবে ইশানের ছোট খালা মাইরা বেগম।

তার হাজবেন্ড দেশে নেই বিধায় বিয়েতে আসতে পারবেনা। মাইরা বেগম হলেন তিন সন্তানের জননী, এক মেয়ে (নাবিলা) আর জমজ দুই ছেলে (নিহান~ দিহান)।

মাইরা বেগম আজ রাত ১০ টা নাগাদ চলে আসবেন।

নীচ তলার বাকি আরেকটা রুমে বিনি আর তার হাজবেন্ড এবং তাদের মেয়ে থাকবে।

উপর তলার প্রথমটাতে ইনি, তার হাজবেন্ড আর তাদের ছেলে থাকবে, তার পাশের টা তে লিনা, আরু আর নাবিলা থাকবে, তার পাশেরটা তে থাকবে ইশান আর নিহান, দিহান।

জনরা থাকবে।


ইশান ফ্রেশ হয়ে এক হাতে টাওয়াল আর অন্য হাতে মাথার চুল গুলো ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বের হলো ওয়াশরুম থেকে।

সারাদিনের ক্লান্তি এক শাওয়ারেই অনেকটা কেটে গেছে।

টাওয়ালটা হাত থেকে টেবিলের উপর রাখতেই চোখ গেলো দরজার দিকে।

লিনা হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।

তার মুখের হাসিটা যথেষ্ট স্বাভাবিক হলেও ইশানের কাছে মোটেই সেটা স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে না।

বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো। ফোনটা হাতে নিয়ে লিনাকে বলল,

~ কি রে এভাবে দাঁড়িয়ে পেত্নীদের মতো করে দাঁত কেলাচ্ছিস কেন? কিছু বলবি?

লিনা মুখ কুঁচকে এগিয়ে এসে কাঁধের উপর মার দিয়ে বলল,
~ বেয়াদব ছেলে! আমি দাঁত কেলালাম কখন? আবার বলছিস পেত্নী!
ইশান কাঁধ ডলে বলল,

~ আহ্ কুত্তি! দাঁত কেলাসনি তুই?
~ না,

~ অহ তাহলে কি কেলালি?

~ কিছুই কেলাইনি, তবে তুই যে এখন আমার হাতে কেলানি খেয়ে বট গাছের ভূত হবি সেটা নিশ্চিত।

~ এই নাআআ, বইন আমার! তোর হাতে ধরি পায়ে ধরি, এখন এমন কিছুই করিসনা, তোর সাথে এখন মারামারি করার এই টুকুও এনার্জি নাই!

লিনা মুখ টিপে হাসলো, বলল,
~ আচ্ছা তাই বুঝি? তা এনার্জি থাকবে কিভাবে শুনি,

, সারাদিন মনের মানুষটার সাথে পার্কে, নদীর পাড়ে, দেন রেস্টুরেন্টে আরো কতকত জায়গাতে নিয়ে এমন ভনভন করে ঘুরলে কি আর এনার্জি থাকে?

লিনার কথায় ইশান বিষম খেলো।

গলা খাকারি দিয়ে বলল,
~ কি আজেবাজে বকছিস? যা তো এখান থেকে! আমাকে একটু রেস্ট নিতে দে,

লিনা ভ্রু উঁচিয়ে বলল,

~ আচ্ছা? আমি আজেবাজে বকছি? তুই সত্যি করে বলতো, তুই আরুকে নিয়ে পার্কে, নদীর পাড়ে, রেস্টুরেন্টে যাসনি?
ইশান ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

এই মেয়ে সব দেখি গরগর করে বলে দিচ্ছে! এতো কিছু কি করে জানে, আল্লাহ ভালো জানে।

~ আরে মা চুপ কর! এতো জোরে কেন কথা বলছিস! আস্তে বল কেউ শুনতে পাবে,

~ (ভ্রু নাচিয়ে) তার মানে তুই গিয়েছিস সেটা স্বীকার করছিস?
ইশান মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে বলল,
~ না মানে, হ্যাঁ! আসলে,

লিনা মৃদু চিৎকার করে বলল,
~ ঠিক জানতাম, আচ্ছা তাহলে নিচে মিথ্যা কেন বললি?
ইশান মাথা চুলকে বলল,

~ আসলে ওর মনটা খুব খারাপ ছিলো, মুলত আমার জন্যই! পরে পিয়াস আর কনার প্লানে ওকে নিয়ে গেলাম! আর নিচে মিথ্যে বলেছি কারন মনি যদি কোনো কারনে আমাকে ভুল বুঝে,

~ আহাম্মক ছেলে, তোর মনি তোকে ভুল বুঝবে? প্রশ্নই আসে না। আর তাছাড়া আরুর ব্যাপারে মনি তোর উপর যতটা ভরসা করে, তার এই টুকুও ভরসাও আরুর ফিউচার হাজবেন্ডের উপর করবে না! বুঝলে মামু?

কথাটা বলেই ফিক করে হেসে দিলো লিনা। ইশান কপাল কুঁচকে বলল,

~ যা ভাগ মজা নিস না!
~ হিহি সে তো যাবোই। আচ্ছা যা তুই রেস্ট নে, আর না জ্বালাই তোকে।

~ হ্যাঁ যা ভাগ,


পরের দিন রাত ১২ টার দিকে সবাই মিলে পিকনিকের প্লান করলো, লীনার শশুড় বাড়ী যাওয়ার আগে এটাই তার ব্যচেলার লাইফের শেষ ধাপ! আর এটা সারাজীবন মনে করার মতো সবাই মিলে ছোট খাটো একটা স্মৃতি তৈরী করাই যায়।

, যদিও ছোট করে পার্টির কথা আগে হয়েছিলো, কিন্তু আরু কোনো একটা কারনে যেকোনো পার্টিই খুব অপছন্দ করে, তাই ইশান শুনতেই বারন করে দিলো।

এরপর এলো পিকনিকের কথা, ইশানই সবটার আয়োজন করলো, মেনুতে হবে ভুনাখিচুড়ি + মাংস।
জমিয়ে একটা খাওয়া দাওয়া।

পিকনিকের মেম্বারসরা হলো লিনার হবু বর ইভান, তার ছোট ভাই সাফিন আর তাদের একমাত্র বোন এশা। এশা আর আরু ব্যাচমেট, তবে ভার্সিটি আলাদা।

, এরপর হলো ইশানের সব ফ্রেন্ডস নূর, মাহিয়া, শিহাব, পিয়াস, রাতুল, শান্ত, সাকিব, নিরব।

নিরবের আসার কথা না থাকলেও আরুর জন্যই তার আসা। যেহেতু এখানে সবাই খুব মজা করবে সেখানে নিরব পা ভেঙ্গেছে বলে আসতে পারবে না ভেবেই তার মন খারাপ হয়ে গেলো, আর তাই ইশানের অর্ডারে নিরবকে সবার আগে আনা হলো।

, অন্যদিকে কনা এতো মানুষের কথা শুনে প্রথমেই বারন করে বসলো সে আসবে না! পরে অবশ্য আরুর ধমকে পিয়াসের সাথে সুর সুর করে চলে আসলো। বাড়ির ছোটরাও আছে অবশ্য, নাবিলা, আর নিহান দিহান।

মোটামুটি বেশ বড় করেই পিকনিকের আয়োজন হলো। রান্না বান্না সব গার্ডেনের পাশে হলো, গল্প +হই হুল্লোড় এ এক অন্যরকম আমেজে ভরে উঠেছে পরিবেশটা।

এখানের প্রত্যেকটা মানুষই ভীষণ মিশুক আর প্রাণোচ্ছল। একে অপরের সাথে মিশতে তাদের যেন কারোর দুদন্ড সময় লাগেনা।

গল্পের মাঝে কনা থেমে গিয়ে বলে উঠলো,

~ এই আরু আমি তো বলতেই ভুলে গিয়েছি! তোর রাতের খাবার আগের ঔষধ খেয়েছিস কিনা আন্টি জানতে চেয়েছিলো!
আরু জিভ কেটে বলল,

~ ইশশ আমি তো একদম ভুলেই গিয়েছি! আচ্ছা তুই থাক আমি ঔষধ টা গিয়ে চটপট খেয়ে আসি!

~ ওকে যা।
আরু যেতে নিলেই এশা ডেকে উঠলো,
~ আরু কোথায় যাচ্ছো?

আরু যেতে যেতেই জবাব দিলো,
~ আসছি গো পাঁচ মিনিট, তোমরা গল্প করো!

এই বলে আরু চলে গেলো। ছাঁদের ডান পাশের সিড়ি ধরে নামতে কারোর হাতে হাত স্পর্শ হতেই অস্বস্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো সে। পেছন ফিরে তাকাতেই দেখলো সাফিন মুখে বাঁকা হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আরু ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে নিলো। যেটা দেখা মাত্রই আরুর মেজাজ চড়ে গেলো। ইচ্ছে তো করছে হাতুড়ি দিয়ে এক এক করে সব গুলো দাঁত ভাঙ্গতে, তবে সেটাও যে সম্ভব না!

আজ কাল দেখি কোনো কিছুই আর সম্ভব হচ্ছেনা। সাফিনের দাঁত গুলো হাতুড়ি দিয়ে ভাঙ্গার জন্য মনে হাজারো সুপ্ত বাসনা থাকলেও পাশে তুলে রেখে দিলো। কখনো সম্ভব হলে ঠিক ভেঙ্গে দিবে।

ছোট্ট একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে মুখের ভাব টা কে স্বাভাবিক করে নিলো।

সাফিন দাঁত কেলিয়েই হাত বাড়ালো আরুর দিকে,
~ হাই আমি সাফিন,

আরু শুঁকনো একটা হাসি দিয়ে বলল,
~ হাই ভাইয়াআআ!

ভাইয়া শুনে ছেলেটা যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।

নিজের বাড়িয়ে রাখা হাতটির দিকে একবার তাকিয়ে হাত গুটিয়ে নড়েচড়ে বলল,

~ কেমন আছেন আপনি? অনেক দিন পর আবার আপনার দর্শন পেলাম, এক’দিন আপনাকে দেখার জন্য,
সাফিনকে থামিয়ে দিয়েই আরু বলে উঠলো,

~ ভালে আছি ভাইয়া, আপনি কেমন আছেন ভাইয়াআআ? বাসার সবাই ভালো ভাইয়াআআ?

আরুর মুখে এক্সট্রা ভাইয়া ডাকে সাফিনের মুখটা মলিন হয়ে গেলো। তবুও হাসার চেষ্টা করে বলল,

~ আপনি আমাকে সাফিন বলে ডাকতে পারেন, আই ডোন্ট মাইই,

আরু আবারো থামিয়ে দিলো সাফিন কে।

~ ইশশ কি বলছেন আপনি এসব ভাইয়া?

আপনি ইশান ভাইয়া কে চিনেন না? উনি যদি দেখে আমি আমার থেকে বড় কাউকে ভাইয়া না বলে নাম ধরে ডাকছি তাহলে সে নিশ্চিত আমার গুষ্টির তুষ্টি করে দিবে!

(এহহ এরকম দামড়া গন্ডারকে নাকি আবার নাম ধরে বলতে হবে, হায়রে শান্তির মা! ইশান ভাইয়ার মতে একে আবলা পাবলিকের খেতাব টা নির্দিধায় দেওয়া যায়), দেখুন ভাইয়া,

পর্ব ১৮

~ আসলে ভাইয়াআ আমি হলাম আপনার ছোট বোনের মতো, আর ছোট বোন হয়ে ভাইকে তো ভাইয়াআআই বলবো তাই না বলুন? আর নয়তো পরে দেখা যাবে মুগুর নিয়ে আপনি আমার পিছে ধাওয়া করেছেন, নাম ধরে ডাকার অপরাধে!

আরুর কথায় সাফিন ভ্যাবাচ্যাকার উপর ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। বেচারার মুখটা দেখার মতো হয়েছে একদম! আরু তার হাসিটা কোনো মতে চেপে রেখে আস্তে করে কেটে পড়লো।

সাফিন আরুকে যতটা না চালাক ভেবেছিলো মেয়েটা তার দিগুন প্রমান করে দিয়ে চলে গেলো।
~
রুমে এসে আরু তার ঔষধ খুজছে, কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না! ড্রয়ের উপরেই সব ঔষধ গুলো রাখা ছিলো! তার মা~ ই সব তার সামনে বসে গুছিয়ে রাখলো।

সব তো এখানেই থাকার কথা! তাহলে কোথায় গেলো, একটা ঔষধের পাতাও তো চোখে পড়ছে না! উফফ! কোথায় গেলো বাবা!
~ কি খুঁজছিস?

হঠাৎ কারোর কন্ঠ পেয়ে পেছন ফিরে তাকালো। ইশান দরজার সাথে হেলান দিয়ে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে।

। লাইট টা মাথার উপর থাকাতে তার ফেসটা খুব ঘাঢ়ো লাগছে।

অফ হোয়াইট শার্ট পরে আছে ইশান, কপালের উপর আসা চুল গুলো বাতাসে বার বার উড়ে এসে আবারো কপালের উপরই পরছে।

সব সময়ের মতো আজ ক্লিন সেভ করা নেই। মুখ জুড়ে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি গুলোতে মানুষ টা কে মাশাআল্লাহ অসাধারন লাগছে।

~ কি খুজছেন ম্যাডাম?
ইশানের কথায় ঘোর কাটলো আরুর! চোখের ভারী পল্লব ফেলে বলল,

~ ও, ঔষধ! ঔষধ খুজছিলাম।

কথাটা বলেই উল্টো দিকে ঘুরে গেলো। আবার ঔষধ খোজায় মন দিলোও তার মনটা আরেকটি বার ইশানকে দেখতে চাওয়ার তীব্র ইচ্ছের আবেদন জানাচ্ছে।

ইশান আরুর দিকে একভাবেই তাকিয়ে আছে। মেরুন কালারের চুরিদারটাতে অসম্ভব মায়াবতী লাগছে আরুকে।

আরুর নড়ে চড়ে উঠাতে লম্বা বিনুনিটাও তাল মেলাচ্ছে বারে বারে, কপালের ছোট মেচিং টিপটা পরাতেই আকর্ষণ আরো দিগুন বাড়িয়ে তুলল।

এই রঙে সত্যিই খুব মানিয়েছে তার মায়াবতী কে।
ইশান এগিয়ে গেলো আরুর দিকে।

ডান হাত টা আরুর বরাবর বাড়িয়ে দিতেই আরু চমকে উঠে এক পা পিছিয়ে গিয়ে কানের পাশ থেকে ঝুলে আসা চুল গুলো কানে গুজে দিলো।

একবার ইশানের দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিয়ে ফ্লোরে স্থির করলো।

ইশান মনে মনে হেসে উঠলো, ড্রয়ারের উপরে রাখা একগুচ্ছ চাবি হাতে নিয়ে নিলো।

শেষ মাথার একটা ড্রয়ার খুলে আরুর ঔষধের বক্সটা বের করতে করতে বলল,

~ বাড়িতে এতো লোকজন, আর আস্তে আস্তে তাদের সংখ্যা বাড়বে বৈ কমবে না।

তাই কখন কে কোনটায় হাত দেয় সেটা ভেবে মনি তোর সব ঔষধ আর কিছু দরকারী জিনিস লিনা আপুর এই খালি ড্রয়ারটাতে রেখেছে।

তোকে বলবে বলে খুজছিলো কিন্তু তখন তুই ছাদে ছিলি, আর আমাকে সামনে পেয়ে সব বুঝিয়ে বলে দিলো।

~ মা এগুলো এখানে কখন রাখলো? ড্রয়ারের উপর ঔষধের বক্সটা তো আমার সামনেই রেখেছিলো,

ইশান ঔষধের পাতা থেকে ঔষধ বের করে আরুর হাতে দিলো, পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বলল,

~ হ্যাঁ, পরে আবার কি মনে করে এসে দেখে যে লিনার আপুর দাদি এটা লিনার আপুর ঔষধের বক্স মনে করে ওলট পালট করে মাথা ব্যাথার ঔষধ খুঁজছিলেন।

আর সেটা দেখে তো মনি হালকা রেগে গেলেন, যদিও উনার সাথে কোনো রাগ দেখাননি।

শান্ত হয়ে সব বুঝিয়ে দিলেন। আর তারপরই এখানে রেখেছে।

আরু হালকা হাসলো, হাসি মুখেই বলল,
~ দেখতে হবে না মা~ টা কার?
ইশান মুখ কুঁচকে বলল,

~ মা~ টা কার মানে? তুই কি বলতে চাচ্ছিস, তুই আমার মনির মতো হয়েছিস?

~ অবশ্যই আমি আমার মায়ের মতো হয়েছি, সেটা আবার বলতে হয় নাকি?

ইশান ফিক করে হেসে দিলো, আরুর মাথায় চাটি মেরে বলল,
~ জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা না বন্ধ কর বুঝলি! আমার মনির মতো হতে না তোর আবারো সাত বার জন্মানো লাগবে।

বুঝেছিস?

আরু রেগে বলল,
~ কিইই? আমার মায়ের মতো হতে আমার আরো সাতবার জন্মানো লাগবে? !?

~ জ্বী হা। আরো সাতবার জন্মেও আমার মনির মতো হতে পারবি কি না, সন্দেহ আছে।

কথাটা বলেই ইশান হাসতে হাসতে চলে গেলো। আর আরুতো রেগে ফায়ার,

~ বেটা পেত্নীর জামাই, তোর তো সন্দেহ হয় আর আমি তো নিশ্চিত যে তুই হলি একটা এলিয়েন! এলিয়েনের বাচ্চা এলিয়েন, হুহ!


পিকনিকের সব রান্না~ বান্না কমপ্লিট। এখনি খাওয়া দাওয়া শুরু হয়ে যাবে।

ছাদের অর্ধেক জায়গাতে পাটি বিছানো হয়ছে, শান্ত আর সাকিব প্লেট সাজাচ্ছে, শিহাব আর পিয়াস লাইটিং ঠিক করছে যেন খাবারের জায়গাটাতে আলোটা বেশি পরে।

এই কথা নিয়ে এক দফা হাসাহাসিও হয়ে গেলো।

এশা, কনা আর লিনা খাবার বাড়ছে প্লেট গুলোতে আর আরু, নাবিলা বলে দিচ্ছে কোনটাতে কম হয়েছে আর কোনটাতে বেশি।

এক এক করে সব কাজই হয়ে গেলো, তাই সবাই আসন পেতে বসে পড়লো।

বিপত্তি হলো আরুর~ অসহায় মুখ করে একবার খাবারের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার ব্যাথা হাতের দিকে।

আর তার সামনে থেকে একজন তাকে দেখে ছোট্ট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে গেলো।

দুই মিনিটের মাথায় একটা ছোট চামচ নিয়ে এনে আরুর ডান হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

~ কষ্ট করে একটু খেয়ে নে কেমন?

হঠাৎ পাশ থেকে চামচ বেরিয়ে আসতে দেখে চমকে উঠলেও পরে ইশানের কন্ঠ পেয়ে ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো।

ইশান মুচকি হেসে উঠে গিয়ে আবার বসে পড়লো।

আরু চামচে খাবার উঠিয়ে মুখে নিয়ে আঁড়চোখে একবার ইশানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসলো, ইশানের দিকে তাকাতে দেখলো ইশানের ঠোঁটের কোনেও ঝুলছে মিষ্টি হাসির রেখা।

পর্ব ১৯

খাওয়া~ দাওয়া শেষে সবাই আড্ডায় বসে পড়লো।

খুব হই হুল্লোড় হচ্ছে। হাসাহাসিতে ফেটে পড়ছে এক একজন।

এর মাঝেই ইশান বার বার তার মায়াবতী আঁড়চোখে দেখে নিচ্ছে, অন্যদিকে সাফিনও বার বার আরুর দিকে তাকাচ্ছে, তাকাচ্ছে কম চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে বেশি।

যার কারনে আরুর খুবই অস্বস্তি হচ্ছে, ইচ্ছে তো হচ্ছে ছেলেটা কে চড়ায়ে সব দাঁত ফেলে দিতে।

কিন্তু আনফরচুনেটলি সেটা তো সম্ভব নয়!

হঠাৎ শান্ত আমোদিত গলায় বলে উঠলো,
~ এই ইশান, দোস্ত একটা জব্বর গান ধরতো,
সাব্বির শান্তর কথার রেশ টেনে উৎফুল্ল হয়ে বলল,
~ হ্যাঁ হ্যাঁ দোস্ত, একটা গান ধর!
ইশান ছাড়া কন্ঠে বলল,
~ গান?

শিহাব এক ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
~ ভালো বলেছিস তো।

ইশান, শুরু কর!
শিহাবের সাথে বাকিরাও একদিকে জোয়ার দিয়ে চিল্লিয়ে বলে উঠলো,
~ হ্যাঁ হ্যাঁ হয়ে যাক একটা গান।
ইশান হাসলো।

আঁড়চোখে একবার আরুকে দেখে নিয়ে বলল,
~ গান তো গাইবো, বাট গিটার?
পিয়াস পাশ থেকে বলল,
~ এই যে, ধর।

ইশান পিয়াসের থেকে গিটার নিয়ে বাজাতে বাজাতে গান ধরলো,
সেইভটি পিনে না, না বন্ধু ঘরে না,
বৃষ্টি দিনে না, না কোনো বাহানা।

তোমায় আঁটকে গেছে মন, কি করি এখন”’
আঁটকে গেছে মন কি করি এখন”

বলছে সবাই আমি নাকি অনেক বদলেছি,
তোমার ভিতর ডুবতে ডুবতে নিশ্ব হয়ে গেছি,
আমার যত সময় আজ, বানের দামে বেঁচি।

আঁটকে গেছে মন, কি করি এখন”’
ধীরে ধীরে তোমার ভিতর ডানা আমি মেলি,
একটু একটু তোমার প্রেমে আপষ করে ফেলি।
মুঠোয় মুঠোয় এক আকাশ, তোমায় আমি চাহি।

তোমায় আঁটকে গেছে মন, কি করি এখন
আঁটকে গেছে মন, কি করি এখন,
তোমায় আঁটকে গেছে মন, কি করি এখন?
(আরুর দিকে তাকিয়ে)
(মায়াবতী)
গান শেষ হতেই কর~ তালিতে ঘোর কাটলো ইশানের। সাব্বির উত্তজনা ধরে রাখতে না পেরে হাত তালি দিতে দিতে দাঁড়িয়ে গেলো।

। ইশানকে একবার ঝাপটে ধরে বলল,
~ ভাই কি দারুণ গাইলি মাইরি,
শান্ত দাঁত কেলিয়ে বলল,

~ বুঝতে হবে মামু, তার মন আঁটকেছে,
সাব্বির শান্তকে তাল দিয়ে বলল,
~ ভাই সত্যি করে বলতো?

? কার উপর মন আঁটকেছে? হু হু, বল?

সাব্বির আর শান্তর কথাতে সবাই বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকালো ইশানের মুখের দিকে, হয়তো ইশান তার মায়াবতীর নামটা নিলেও নিতে পারে, আরু একভাবেই তাকিয়ে আছে, তার বার বার কেবল এটাই মনে হচ্ছে ইশান এই গানটা তার জন্যই গেয়েছে!

! গান গাওয়ার পুরো সময়টাতে যে মানুষটার চোখ দুটো বার বার এক কথায়ই প্রকাশ করে যাচ্ছিলো, তোমায় আঁটকে গেছে মন, কি করি এখন?
কিন্তু কেন? _

_ছোট্ট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইশানের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো!

~ (ধুর আমিও যে কি ভাবি না!

! ইশান ভাইয়া আমাকে কোন দুঃখে এতো সুন্দর একটা গান ডেডিকেট করতে যাবে? উনার যেনো খেয়ে দেয়ে আর কোনো কাজ নেই! আরু, আহাম্মকের মতো চিন্তা করা বন্ধ কর!

! বি পজিটিভ আরু, বি পজিটিভ)
ইশান সাকিবের পেট বরাবর গুঁতো দিয়ে বলল,
~ আবে শালা কি বলছিস এসব? গান তো গানই হয়।
শান্ত মুখ কুঁচকে বলল,
~ না মামা না, এটা তো মানতে পারলাম না।

যেখানে আমাদের রকস্টার সাহেব অলওয়েজ রকস্টার টাইপ গান গায় সেখানে আজ সে কি গাইলো? তার মন আঁটকেছে,
~ তোরা দুটিতে এবার কিন্তু মার খাবি আমার হাতে!

পিয়াস বলল,
~ এই তোরা দুটিতে চুপ কর না এবার!তো নেক্সট কি হবে? এবার কে গাবে?

ইশান ঘোর লাগানো কন্ঠে বলে উঠলো,
~ আমার মায়াবতী গাইবে,
ইশানের কথা শুনে সবাই অবাক চোখে তাকালো।

শান্ত কিছু বলতে নিবে তার মাঝেই ইশান গলা খাকারি দিয়ে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
~ ন, না মানে! মায়াবতী গ, গানটার কথা বলছিলাম। হ্যাঁ, তো নেক্সট কে যেন, আ..আরু? তুই একটা গান ধর না?

ইশানের মুখে নিজের নামটা শুনে আরু নড়েচড়ে উঠলো। খানিক অস্বস্তি নিয়ে বলল,
~ আ, আমি!

সবাই আবার একসাথে বলে উঠলো,
~ হ্যাঁ হ্যাঁ আরু, শুরু করো প্লিজ!
আরুও ভীষণ ভালো গায়, তবে সেটা সবসময় নিজের বন্ধ ঘরেই আবদ্ধ থাকে।

এতোগুলো মানুষের সামনে গাইতে হবে ভাবতেই কেমন এক অস্বস্তির পুরো ড্রাম নিয়ে ভর করলো যেন! আরুর এমন অস্বস্তি দেখে লিনা তার কাধে হাত রেখে বলল,
~ আরু, নো টেনশন ডিয়ার, সুন্দর দেখে একটা গেয়ে দে তো।
কনাও হাসি মুখে বলল,
~ হ্যাঁ আরু।

আরু মুখে শুকনো হাসির রেখা টেনে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে গান ধরলো,
জানি পুড়ে যাবো, আমি তোমার প্রেমে
শ্রাবণ দিনের বরষায়।

তবু মেঘের ডানায়, উড়বো আমি,
কোমল রোদের ইশারায়,
হৃদয় আমায় তোমার হলো
হারিয়ে ফেলোনা যেন,
হাত ছেড়োনা বন্ধু আমার
যত দূরে যাওনা কেন।

তারা জ্বলা রাতে, এক ফোঁটা চাঁদ
তোমায় দিলাম প্রিয়,
রঙিন হাওয়া রং মেখে কিছু
শুধু ভালোবেসে যেও।

পর্ব ২০

এমনের খুব গভীরে ছুঁয়ে দেখ তুমি,
শুধু অনুভবে শোনো ||

হৃদয় আমার তোমার হলো
হারিয়ে ফেলোনা যেন,
হাত ছেড়োনা বন্ধু আমার
যত দূরে যাওনা কেন ||

লাল আগুন ধরে খুব কাছে এসে,
ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিও ||
মন পাখি তুমি, প্রেম হয়ে উড়ো,
চিরসাথী করে নিও ||

এ মনের খুব গভীরে ছুঁয়ে দেখ তুমি,
শুধু অনুভবে শোনো,
হৃদয় আমার তোমার হলো
হারিয়ে ফেলোনা যেন ||

হাত ছেড়ো না বন্ধু আমার
যত দূরে যাওনা কেন,
হৃদয় আমার তোমার হলো
হারিয়ে ফেলোনা যেন |||,

( হৃদয় আমার)
গান শেষ হতেই সবাই গলা বেঁধে বলে উঠলো,
~ অসাধারণ আরু, অসাধারণ।

কনা হাত তালি দিতে দিতে বলল,
~ জাস্ট অসাধারণ গেয়েছিস দোস্ত।

সবাই আবার একসাথে করতালি দিয়ে উঠলো।

ইশান মুচকি হেসে আনমনে মাথা নাড়লো।

~ (তাঁরা জ্বলা রাতে এক ফোঁটা চাঁদ তোমায় দিলাম প্রিয়,
রঙ্গিন হাওয়া রং মেখে কিছু, শুধু ভালোবেসে যেও, হায়! মায়াবতী আর কত পাগল করবে আমায়? )
~
আড্ডা শেষ হতে হতে রাত তিনটে ছাড়িয়ে গেলো।

তাই আর কেউ এতো রাত করে বাড়ি ফিরতে পারেনি।

ইশান তার সব ফ্রেন্ডদের নিয়ে বাকি রাত টুকুও আড্ডা দিয়ে পার করলো।

আর বাদ বাকি সব মেয়েদের লিনা তাদের গেস্ট রুমে নিয়ে গেলো। সবাই বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজ্যে পারি জমালো। এদিকে আরুও চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো।

এতো রাত পর্যন্ত জাগার দরুন চোখ দুটোতে একঝাঁক ঘুমেরা ভর করতেই সেও ঘুমের রাজ্যে পা রাখলো।

হঠাৎ ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে যেন কেউ তার কপালের সাথে কপাল ঠেকাচ্ছে, সময়ের পরিবর্তনে বার বার কপালে চোখে চুমুও খাচ্ছে, তার গরম নিশ্বাসে বার বার আরুর শরীর রেসপন্স করছে, কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এতো রাতে এই বন্ধ ঘরের মধ্যে কে আসবে?

শোয়ার আগে তো লিনা আপু তার সামনেই গেট লক করলো, তাহলে? ,

, হঠাৎ চোখ খুলে তাকালো আরু! চোখ খুলতে একটা শীতল বাতাসে আবার চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো সে, মনের মধ্যে এক অজানা ভয় দানা বেঁধে বসেছে, আবারো চোখ খুলে তাকালো আরু! কে এসেছে এই ঘরে?

, চারপাশে খুব সতর্কতার সাথে চোখ বুলালো! পুরো ঘরময় এক শুনশান নীরবতা বিরাজ করছে। এই অন্ধকারে কেউ ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকলেও যে বোঝার কোনো পথ নেই! তবুও উঠে বসলো আরু, হঠাৎ মনে হলো ব্যালকনির পর্দাটা নড়ে উঠলো।

ভ্রু কুঁচকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো সেদিকে, তাহলে মানুষটা কি ওখানেই লুকিয়ে আছে? ,

, পুরো ঘর অন্ধকার থাকলেও ব্যালকনিটাতে চাঁদের আলোতে বেশ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো আরু, কে হবে এখানে? পর্দাটা ক্ষপ করে টান দিতেই দেখলো ফাঁকা, কেউ নেই!

আবারো সেই শীতল বাতাস আঁচড়ে পড়লো তার পুরো শরীর জুড়ে, আকাশে মেঘ জমেছে, খন্ড খন্ড ধূসর কালো মেঘ, বৃষ্টি হবে হয়তো! তাই বাতাসটাও এমন শীতল হয়ে ধরা দিচ্ছে। আরু দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো।

যেহেতু কেউ নেই তাহলে তো এটাই প্রমাণ হয় যে পুরোটাই তার স্বপ্ন ছিল।

আজকাল স্বপ্ন গুলোও বড় অদ্ভুত লাগে!


সকাল আট টা নাগাদ সবাই নাস্তা করেই যে যার বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।
আর মাত্র তিনদিন বিয়ের বাকি।

সব কিছু মোটামুটি কমপ্লিট হলেও বিয়ের শপিং টা এখনো সম্পুর্ন করে উঠতে পারলো না। টানা দুই ঘন্টা ধরে বিয়ের শপিংএর লিস্ট বানালো ইশান। বেচারা লিখতে লিখতে হাঁপিয়ে উঠছে যেন।

সোফায় পিঠ ঠেকিয়ে আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বড় খালাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

~ মনে হচ্ছে সবই লিখতে পেরেছি! তুমি একবার মিলিয়ে দেখো! খালুকেও দেখাও, দেখে বলো আর কিছু বাদ পড়লো কি না?
বড় খালা লিস্টটা হাতে নিয়ে বড় খালুর দিকে ঘুরে বসে এক এক করে সব মেলালেন!

বড় খালু ইশানের দিকে তাকিয়ে বললেন,
~ না রে বাবা সব কিছুই হয়েছে। এখন তোরা এক কাজ করিস, ইনি বিনি তো দুপুরের দিকেই চলে আসবে।

ওদের সাথে আর বাড়ির সব বাচ্চাদের নিয়ে চলে যাস!আর আমরা বাড়ির বড়রা দশটার দিকে চলে যাবো।

কেমন?
~ ওকে খালু! তুমি টেনশন নিও না, আমরা চলে যাবো।

দুপুর ১ টা বেজে ২৫ মিনিটে ইনি আর বিনি বাসায় ঢুকলো। দুবোনই যথেষ্ট স্মার্ট।

কথা বার্তাতেও বেশ ইংলিশ জুড়ে দেন।

লন্ডনে থেকে ড্রেসআপের চেঞ্জ হলেও ভাষায় তেমন চেঞ্জ করতে পারেনি।

সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো তাদের দুবোনের বাচ্চারা।

তাদের জন্মই হয়েছে লন্ডনে, অথচ তারা দুজনেই একদম খাঁটি শুদ্ধ বাংলা বলে।

যদিও লন্ডনের দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে বাংলা নির্ধারিত হয়েছে অনেক সময় যাবত। তাই হয়তো এই বাচ্চা দুটোও এতো সুন্দর বাংলায় কথা বলতে পারে।

তাদের পোশাকও যথেষ্ট মার্জিত।
সারা দুপুর তারা রেস্ট নিয়ে বিকেলে বসলো ফ্যামিলির সাথে আড্ডা জমাতে।

সবাই কাজ~ বাজ রেখে একদম মুখিয়ে বসেছে তাদের দুবোনের সামনে। লন্ডন থেকে এসেছে, সে কি চারটি খানি কথা?

ইনি বিনিও বেশ মজা পায় ব্যাপারটায়, নিজেদের এভাবে সবার থেকে একটু আলাদা ফিল হওয়ার যেন এক অন্যরকম পৈচাশিক আনন্দ রয়েছে।

আরু, নাবিলা, ইশান বা লিনা কারোর কাছেই ব্যাপারটা ভালো লাগছে না। তাই তারা তাদের দুবোনের সাথে একবার কুশল বিনিময় করেই কেটে পড়েছে।

লিনার মতে তার দুবোনই খুব ভোগ বিলাসী।

আর সেই বিলাসীতা অন্যকে দেখিয়েই তাদের যত তৃপ্তি।

আর তার দুই দুলাভাই~ ই একদম মাটির মানুষ। খুবই আন্তরিক মানুষ দুজনই। তাই তো বউদের রেখে তারাও কাট্টি মেরেছে।

লিনাদের সাথে ছাদে বসে আড্ডা জমিয়েছে। সাথে তাদের ছেলে মেয়ে রা~ ও।


সন্ধ্যা ৭ টার দিকে বাড়ির সব ছেলেমেয়েরা শপিং~ এ বের হলো।
শপিংএ যাওয়ার জন্য ৪ টা গাড়ি ঠিক করলো।

দুটো তে এখন ছোটরা যাবে আর বাকি দুটোতে গুরুজনেরা খানিক বাদে আসবেন। এর মধ্যে ছোট গাড়িটা তে ইনি বিনি আর তাদের হাসবেন্ডরা বসেছে।

শাহাদ আর আইরা~ কে তাদের সাথে নিতে চাইলে তারা এক কথায় জবাব দিলো~ আমরা তোমাদের সাথে যাবো না, আরু আন্টিদের সাথে যাবো।

একথা শুনে তারাও আর বাঁধ সাধলেন না।
ইশানদের গাড়িটা বড় দেখেই নিলো।

কারন ইশান খুব ভালো করেই জানতো এই ছোট দল তাদের সাথেই যাবে।

শাহাদ আর আাইরা আরুকে নিয়ে বসতে চাইলে বাঁধ সাধলো ইশান।

বলল,
~ আরুর হাতে ব্যাথা আর তোমাদের সাথে বসলে হই হুল্লোড়ে ওর হাতে লেগে যেতে পারে! তাই ও সামনের এখানে বসবে।

ব্যাপারটা সবাই ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখলো, হ্যাঁ ঠিক। কিন্তু লিনা ঠিকই বুঝে ফেললো ইশান আরুকে তার পাশে বসিয়েই পুরো রাস্তা যেতে চায়।

তাই মুচকি হেসে বলল,
~ হ্যাঁ রে আরু! তুই বরং ইশানের সাথেই ওখানে বস, হাতে যদি লেগে যায়!

আরু প্রথমে অমত করলেও পরে লিনার কথায় ইশানের পাশেই বসলো। তার যে ভীষণ রাগ হচ্ছে, এই ছেলে কি তার খুশিতে একটু খুশি হতে পারেনা নাকি? সব সময় সব কিছুতে বাগড়া দেওয়া চাই~ ই চাই। পেত্নীর জামাই একটা, উজবুক!

আরু হঠাৎ চমকে উঠে সিটের সাথে লেগে গেলো! ইশান তার মুখোমুখি হয়ে আছে! ইশানের চোখ জোড়া কিছু একটা জানান দিয়ে চলেছে! এতো গুলো মানুষের মাঝে কি এই মানুষ টা আবার সেদিনের মতো করে, এটুকু ভাবতেই আরু ঢোক গিললো!

আল্লাহর কাছে হাজার মর্জি পেশ করতে লাগলো, এমন যেন না হয়! ইশান আরেকটু এগিয়ে আসতেই আরু চোখ বন্ধ করে সিটের সাথে আরো মিশে গেলো! ডান হাতে সিটটা খামচে ধরে বির বির করে আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলো।

~ আন্টিইই কি হয়েছে তোমার? চোখ বন্ধ করে আছো কেন?
শাহাদের কন্ঠটা কানে বাজতেই আরু চোখ খুলে তাকালো।

তার সামনে কিছুই নেই, পাশে তাকাতে দেখলো ইশান স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছে, কি হলো ব্যাপারটা? ইশান তো এই কয়েক সেকেন্ড আগেও এখানে ছিলো, তা, হ, লে?

পাশে তাকাতেই বোকা বনে গেলো! ইশানের পাশে বসে তো সিট বেল্ট লাগানো হয়নি! তার মানে ইশান তাকে সিটবেল্ট লাগিয়ে দিতে হঠাৎ এগিয়ে এসেছিলো!

কি ছেলে ভাই, সিটবেল্ট লাগাবে বললেই হয়, তা না হুটহাট এতো কাছে চলে যে আসে যে দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার পালা!

শাহাদের প্রশ্ন মাখা মুখের দিকে চোখ পড়তেই আরু একটা শুকনো ঢোক গিলে মুখে জোরপূর্বক হাসির রেখা টেনে বলল,
~ ক, কিছু না বাবা!
আরুর জবাবে ইশান ঠোঁট চেপে হাসলো।

আরুর ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই সে আরুকে আরেকটু ভয় দেখানোর চান্স টা কোনো ভাবেই যে মিস করতে চায়নি! তাইতো যতটুকু দরকার ছিলো তার থেকেও বেশি এগিয়ে গিয়েছিলো।

পর্ব ২১

সবাই শপিং করছে উড়া ধুরা।
যাদর যেটা ভালো লাগছে সে সেটা নিয়ে নিচ্ছে।

নিহান দিহান যা নিচ্ছে সব একজোড়া করে। নাবিলাও তার বেশির ভাগ ড্রেসই ভাইদের সাথে ম্যাচিং করে নিচ্ছে। ইনি বিনি ড্রেস নিচ্ছে আর দুলাভাই রা ব্যাগ বোঝা টানছে।

শাহাদ আর আইরাও নিজেদের পছন্দের জিনিস নিচ্ছে, তবে তাদের দুজনের মধ্যে একটা ব্যাপার আরু ইশানকে অবাক করতে বাধ্য হলো, সেটা হলো আইরার কোনো ড্রেস শাহাদ একবার বারন করলে সে আর সেটা নেয়নি! আবার শাহাদের কোনো ড্রেস আইরার পছন্দ না হলো শাহাদও মুচকি হেসে সেটা নির্দিধায় রিজেক্ট করে দেয়।

তাদের দুজনের এমন কান্ডে আরু ইশান দুজনেই আনমনে হেসে উঠলো।

আরু এবং ইশান দুজনের কেউই এখন পর্যন্ত কিছু নিলোনা! আরু লিনার সাথে ঘুরে ঘুরে তার সব দরকারী জিনিস কিনে দিচ্ছে, আর অন্য দিকে ইশান বাচ্চাদের সামলাচ্ছে।

রাত দশটার দিকে বাড়ির বড়রা আসলো। তারা কম বেশি কেনা কাটা করছে, ইনি বিনি অবশেষে টায়ার্ড হয়ে বাচ্চাদের নিয়ে বাসায় ফিরলো।

দুবোন চলে যাওয়াতে বাকিরা যেন দম ছেড়ে বাঁচলো।
লিনা আরুকে বলল,
~ আরু অনেক হয়েছে, আমার সাথে থেকে আমায় অনেক হেল্প করেছিস,

এবার যা নিজের জন্য কিছু কিনে নে,
আরু মাথা নেড়ে বলল,
~ ওকে নিচ্ছি, বাট তোমার তো এখনো…
~ আমার যা যা বাকি আছে সেসব তোর কেনার পরই আবার কিনবো। এখন যা তো।

(ইশানের দিকে তাকিয়ে) তা ইশান মহাশয়, আপনাকেও কি আলাদা করে নোটিশ দিয়ে বলতে হবে?
ইশান মুখ কুঁচকে বলল,
~ আগ্গে নাহ্!

এতক্ষণ বাচ্চা দুটো ছিলো বলে, কেনা হয়নি! এখন গিয়ে কিনে নিচ্ছি।
লিনা মুচকি হেসে বলল,
~ হ্যাঁ যা।
_
আরু বেশ কিছুক্ষন ধরে একটা ড্রেস নিয়ে বেশ কনফিউশানে ভুগছে।

ড্রেসটা হলো দু~ পার্টের একটা লেহেঙ্গা। মিষ্টি কালারের উপর সাদা ভারী পাথরের কাজ করা।

খুবই সুন্দর ড্রেসটা।

আরুর একবার দেখতেই খুব ভালো লেগে গেলো, কিন্তু প্রবলেম টা হলো ফিটিং নিয়ে।

ফিটিং টা ঠিক আছে নাকি চেঞ্জ করতে হবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেনা।
আরুর কনফিউশানের মাত্রা যখন চরমে তখন পাশ থেকে একজন বলে উঠলো,
~ তোর চয়েজ কবে থেকে ভালো হলো বলতো?

আরু পাশ ফিরে তাকাতে দেখলো ইশান এক ভ্রু উঁচিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
~ মানে?

আরুর প্রশ্নে ইশান ড্রেস টা দুহাতে নিয়ে আরুর সামনে ধরে জিজ্ঞেস করলো,
~ অনেক্ষন ধরে লক্ষ্য করছি ড্রেসটা নিয়ে আকাশ পাতাল ভেবে চলেছিস, কি প্রবলেম?

? পছন্দ হচ্ছে না নাকি?
~ না মানে ভাবছিলাম যে ফিটিং টা ঠিকাছে কি না,
ইশান ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

মুখ বাকিয়ে বলল,
~ তুই ইডিয়ট তা তো জানতাম, তাই বলে এতোটা! আরে গাধা ট্রায়াল রুমে গিয়ে দেখলেই তো হয়!

এতো ভাবার কি আছে?

আরু একটা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
~ ওহ্ হ্যাঁ তাইতো! আমিও কি না কি ভাবছিলাম, ট্রায়াল রুমের কথা তো মাথাতেই আসে নি!

~ আসবে কিভাবে! মাথায় গোবর ছাড়া আর কিছু আছে বলে তো মনে হচ্ছে না!

আরু ইশানের কথার কোনো জবাব দিলো না। ড্রেসটা হাতে নিয়েই ট্রায়াল রুমের দিকে চলে গেলো। ভিতর ঢুকতেই আবার হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে আসলো।

সোজা ইশানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।

এই গেলো আর এই এলো দেখে ইশান কপাল কুঁচকে বলল,
~ কি হলো?

আরু একটু নিচু স্বরে বলল,
~ আসলে, আমার মনে হয় পাশের ট্রায়াল রুমে কোনো ছেলে আছে!
ইশান একবার সেদিকে দেখে নিলো, পাশের টা ছেলেদের ট্রায়াল রুম। মুখ কুঁচকে বলল,

~ হ্যাঁ তো? ছেলেদের ট্রায়াল রুমে তো কোনো ছেলেই থাকবে, নাকি কোনো মেয়ে থাকবে!
ইশানের কথা শুনে আরু অসহায় চোখে তাকালো।

বলল,
~ আমি কি তা বলেছি নাকি? আসলে, আমার ওখানে চেঞ্জ করতে খুব আনকমফোর্টেবল লাগছে!

ইশান আরুর দিকে তাকিয়ে ছোট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আশেপাশে খুজে একটা প্যান্ট নিলো, সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো ট্রায়াল রুম থেকে ছেলেটা বের হয়ে গেছে। তা দেখে আরুকে বলল,
~ চল।

আরু ইশানের কারবার কিছুই বুঝে উঠতে পারলোনা, তার আগেই ইশান তার হাত ধরে নিয়ে গেলো। মেয়েদের টায় আরুকে ঢুকিয়ে দিয়ে পাশের টায় নিজে ঢুকে পড়লো।


প্রায় ৩০ মিনিট হতে চললো, ট্রায়াল রুমে বসে ঝিমোচ্ছে ইশান আর ওদিকে আরুর বের হওয়ার যে কোনো নামই নেই।

এতক্ষণ এসে ট্রায়াল রুমে অযথা বসে থাকার দরুন যদি এখন বের হতেই এখানকার লোকেরা মিলে গণপিটুনি দেয় কে বাঁচাবে তাকে? আর গণপিটুনির মার সহ্য করতে না পেরে আমি হসপিটালে! কাল খবরের কাগজে উদ্ভট এক নিউজ পাবলিশড হবে

শপিং মলে এসে এক যুবক অযথা ট্রায়াল রুমে বসে থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য সেখানকার কতৃপক্ষরা সবাই মিলে তাকে দিলো গনপিটুনি!

ভাবা যায় এগুলা! নাহ এভাবে ঝিমানোর থেকে বরং মহারাণীকে একটা মেসেজ দেই। বেচারী এই ড্রেস পরার চক্করে না ঘুমিয়েই পড়লো।

১০ মিনিট যাবত সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও লেহেঙ্গার উপরের পার্ট টার পেছনের মাঝ বরাবরে চেইনটা কিছুতেই টেনে উপরে তুলতে পারলো না।

হাত দুটো যথাসম্ভব পিছনে মুড়ে নিলেও কাজ হলোনা। এতক্ষণ ধরে চেষ্টা করেও যখন হলো তখন একরাশ বিরক্তি নিয়ে দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে এলিয়ে দাড়ালো! ইচ্ছে তো করছে লেহেঙ্গাটা কেটে কুটি কুটি করে ফেলতে, দরকার নেই এমন ঘাড়ত্যাড়া…

ভাবনায় ছেদ পড়লো মেসেজের টোনে! ফোনটা হাতে নিতেও যেন বিরক্ত লাগছে, মেসেজ আসতেই ফোনের স্ক্রিনে পেত্নীর জামাই নামটা ভেসে উঠেছে।

যার দরুন কপালের ভাজটা আরেকটু সুক্ষ্ম হয়ে এলো।

ফোনটা হাতে তুলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মেসেজটা ওপেন করতেই মনে হলো ইশান তার সামনে বসেই যেন ধমকে বলে উঠলো,
~ ঐ কি করছিস এতক্ষণ ধরে? একটা ড্রেস চেঞ্জ করতে এতো টাইম লাগে ইডিয়ট!

মেসেজ টা পড়েই একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো।

এখন সে কি বলবে এই মানুষ টা কে? সে তো তার জন্যই এতক্ষণ যাবত ট্রায়াল রুমে আঁটকে আছে! আর কিছু না ভেবে আরু মেসেজ টাইপ করলো,

~ একটু প্রবলেম হয়েছে! তাই লেট হচ্ছে
ইশান আচমকাই আরুর সামনে এসে দাঁড়ালো। ইশান হঠাৎ চলে আসাতে যেন আরু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। পাঁচ সেকেন্ডও হলো না ইশানকে মেসেজটা পাঠিয়েছে, আর এর মাঝেই সে হাজির!

আচ্ছা এটা কি সত্যিই ইশান নাকি ভূত,
আরু বার কয়েক ঢোক গিলে ইশানকে আঁড়চোখে দেখতে লাগলো, ইশানের সেদিকে যেন কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই! সে শান্ত গলায় প্রশ্ন করলো,

~ কি প্রবলে হয়েছে?
ইশনের কন্ঠে আরু চমকে উঠলো, কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
~ আ..আপনি ক..ককে?

আরুর এমন প্রশ্নে ইশান অবাক চোখে তাকালো! কি বলে এই মেয়ে, আধাঘন্টা ট্রায়াল রুমে থেকে কি মাথায় ডিস্টার্ব দিলো নাকি?
~ ক..কি হলো? কথা ব..বলছেন না ক..ককেন!
~ আমি ভূত, কোনো সমস্যা?

আমি ভূত কথাটা কান পর্যন্ত আসতেই ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো আরু।

দেয়ালের সাথে লেগে গিয়ে বলল,
~ ভ..ভভূউউউউউউতত….
ইশান চোখ বড় বড় করে আরুর দিকে এগিয়েই তার মুখ চেপে ধরলো।

~ আবে কি করছিস! চিল্লাসছিস কেন?
~ উউউউমমমমম
~ উউউমমম কি?

~ (ডান হাত দিয়ে নিজের মুখ ছাড়িয়ে নিয়ে) ভভূত ভ..ভাই আ..আমাকে প্লিজ মারবেন না! আ..আপনি ইইইশান ভাইয়াকে মা..মারুন, আমি কিছু ক..করিনি!
ইশান ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

মানে আরু তাকে ভূত ভাবছে?

~ মাথার তার কি আবার লুজ হয়ে গেছে? কি সব বকছিস?
~ আ..আপনি কেন আ..আমার কাছে এসে, ছেন বলুন তো ভ..ভূত ভাই?

~ আরু(ধমক দিয়ে) টেনে দিবো এক চড়,
~ (ঠোঁট উল্টে কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকালো )

~ আবে ইডিয়ট আমি ভূত কেন হবো? কি সব বলছিস?
~ ত..তাহলে এখানে কি করে এলেন! দ..দরজা তো লক করা!
~ উড়ে এসেছি।
~ অ্যা?

~ হ্যাঁ! এখন তাড়াতাড়ি বল কি প্রবলেম হয়েছে?
আরু শুকনো ঢোক গিললো। চোখ দুটো এপাশ ওপাশ ঘুরিয়ে আমতা আমতা করে বলল,
~ আসলে!
~ কি?
~ না মানে, ব..ব্যাকসাইডের…
~ ব্যাক সাইডের! ব্যাক সাইডের কি?

~ ব্যাক সাইডের চ..চেইন টা লাগাতে প..পারছি না!
ইশান একবার আরুর হাতের ব্যান্ডেজটার দিকে তাকিয়েই অন্যহাত ধরে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।

পর্ব ২২

এভাবে হেঁচকা টানে টাল সামলাতে না পেরে আরু একদম ইশানের বুকের সাথে লেপ্টে গেলো, ভয়ে চোখ জোড়া আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে গেলো।

আবারও সেই মাতাল করা শরীরের গন্ধ। এই নেশায় বারবার মত্ত হতে চায় সে, বার বার।

হঠাৎ~ ই দরজায় ঠাস ঠাস বারি পড়তেই হকচকিয়ে তাকালো আরু। সামনে তাকাতে দেখে ইশান নেই, বুকের ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠলো যেন, মাত্র কয়েক সেকেন্ডেের ব্যবধানে ইশান গেলো কোথায়।

এদিক ওদিক দেখলো কিন্তু ইশান নেই। পেছন থেকে আয়নার দিকে চোখ পড়তেই দেখলো ড্রেসটার চেইন টা লাগানো। সেটা দেখতেই ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসির ঝলক ফুটে উঠলো।

ফোনটা হাতে নিয়েই দরজা খুলে বের হলো।
কট করে দরজা খোলার আওয়াজে কারোর মনোযোগ নষ্ট হলো। লিনার সাথে কোনো এক ব্যপার নিয়ে হাসাহাসি করছিলো বেশ, কিন্তু আরুর দিকে চোখ পড়তেই কথা আটকালো।

আরুর পরনে মিষ্টি কালারের লেহেঙ্গাটায় কম বেশি সবাই বেশ আকৃষ্ট হয়ে তৃপ্তি নিয়ে দেখতে লাগলো তাকে।

ইশানের ঘোর লেগে আসছে যেন তার মায়াবতীকে দেখে।

আরু বেচারী সবার এমন অদ্ভুত চাহনিতে অস্বস্তিতেই পড়ে গেলো।

লিনা আর নাবিলা আরুর দিকে এগিয়ে এসে বলল,
~ অসম্ভব সুন্দর লাগছে ডিয়ার। (লিনা)
~ আপুইইই সেই লাগছে কিন্তু, (নাবিলা)
আরু ইশানের দিকে একবার আঁড়চোখে তাকালো।

ইশানের ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে থাকাতে আরু মনে মনে হাসলো।

আর দাঁড়িয়ে না থেকে আবারে ট্রায়াল রুমে ঢুকে পড়লে।

সবার ড্রেস কেনা কমপ্লিট হতেই আবার সবাই জুয়েলার্সের দোকানে গেলো।

লিনা, আরু, নাবিলা, আর বাদ বাকি মহিলারা সবাই যার যার দরকারি সব কিছু কিনে নিয়ে অবশেষে রাত আড়াইটা নাগাদ বাড়ি ফিরতে পারলো।

আজ লিনার গায়ে হলুদ, পুরো ছাদের প্রতিটি কোনায় কোনায় ফুলে ফুলে সাজানো হয়েছে, এক কোনে বেশ খানিক জায়গা জুড়ে তৈরি হয়েছে এক ছোট খাটো মন্ঞ্চ। যেখানে বসে কনে কে হলুদ মাখানো হবে।

পার্লার থেকে দুজন মেয়েকে আনা হলো কনে কে সাজানোর জন্য। কিন্তু বিপত্তি হলো ইনি আর বিনি কে নিয়ে। কনের হলুদে কনেকে আগে সাজতে না দিয়ে তারা দুজনে বসে পড়লো সাজতে।

এটা নিয়ে মা আর মেয়েদের মাঝে কয়েক দফা কথা কাটাকাটিও হয়ে গেলো।

বড় খালা দুই মেয়ের এমন কান্ডে ভিষন রেগে গেলেন। যার বিয়ে তাকে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে তারা যে নিজেদেরকে নিয়েই বিদিব্যস্ত। লিনা মায়ের রাগ দেখে বলল,

~ আচ্ছা মা, কি হচ্ছে হ্যাঁ? আজকের দিনে অন্তত তুমি এভাবে রাগারাগি করো না প্লিজ, তুমি তো জানোই তোমার মেয়েরা কেমন, তবুও কেন রাগারাগি করছো?
বড় খালা লিনার কথা বুঝছেন ঠিকই।

কিন্তু তার দুই মেয়ের কাজ কারবারে রাগ একটু কমাতে পারলেননা। সে রাগ করেই চলে গেলেন।

এদিকে পার্লারের মেয়ে দুটিকে সমানে বকে যাচ্ছে ইনি আর বিনি। তাদের এরকম সাজ নাকি কারোরই পছন্দ হচ্ছে না।

তাই তারা নিজেদের ইচ্ছে মতো সাজাতে বলল, আর মেয়ে দুটোও বকা খাওয়ার ভয়ে তাদের বলাতেই ঠিক তেমন করে সাজাতে লাগলো।
পার্লার থেকে মেয়ে দুটিকে আনানো হয়েছে মুলত ইনি বিনির জোরাজোরিতেই।

তাই ইনি বিনি বাদে তেমন কেউই ঘেঁষল না সেখানে। আরু আর নাবিলা দুজনে নিজেদের সাজ নিজেরাই করেছে।

বিনি তার মেয়েকে পার্লারের মেয়েদের থেকে সাজাতে চেয়েছিলো কিন্তু আইরা নাকি দৌড়ে পালিয়েছে। হঠাৎ করে বাচ্চা মেয়েটা যে ওভাবে দৌড়ে পালালো, তার সঠিক কোনো ধারনা কেউই করতে পারলো না।

মেয়ের ওভাবে দৌড়ে পালানো তে বিনি কতক্ষণ খাম্বার ন্যায় দাঁড়িয়ে থেকে মেয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে ছিলো।

মায়ের ভয়ে মেয়ে দৌড়ে পালিয়েছে কথাটা কানে আসতেই আরু খানিক হেসে নিলো। গায়ে হলুদের জন্য রেডি হয়ে আইরা কে খুজতে লাগলো।

উদ্দেশ্য আইরার মুখ থেকে সবটা শোনা। সারা বাড়িতে সব জায়গাতে খুজলেও কোথাও দেখা মিলল না বাচ্চাটার।

তাই সব শেষে ছাদে চলে আসলো, খানিক বাদে বাড়ির বাকিরাও সবাই এখানে এসেই জোট বাঁধবে গায়ে হলুদের জন্য।

ছাদে উঠতেই আরুর মুখে হাসির ঝলক ফুটে উঠলো। ছাদ টাকে ছাদ বলে মনেই হচ্ছেনা।

চারপাশ টা একদম মনোমুগ্ধকর লাগছে। চারপাশে চোখ বুলাতেই চোখে পড়লো আইরা আর শাহাদ কে।

তাদের থেকেই একটু দূরে ক্যামেরা হাতে দাঁড়িয়ে আছে ইশান। সাদা সুতোয় কাজ করা হলুদ একটা পাঞ্জাবি পড়ে আছে সে।

হাতা কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে রেখেছে।পাঞ্জাবির চারটা বোতামের দুটো বোতাম খুলে রেখেছে।

চারপাশে বাতাসের সাথে তাল মিলিয়ে কপালে পড়ে থাকা চুল গুলো আবার উড়ে উড়ে কপালের উপরেই পড়ছে।

উপরের ঠোঁটের সহিত নিচের ঠোঁট টা মৃদু চেপে ধরে দুহাতে ক্যামেরা নিয়ে দৃষ্টি টা সেদিকেই স্থীর করে রেখে তাকিয়ে আছে।

আইরার ডাকে আরুর ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে মুখে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে তাকালো আইরার দিকে।

এগিয়ে আসতে আসতে ইশান আইরার দৃষ্টি অনুসরন করে তাকাতেই বুকের বা পাশের সেই চিন চিনে ব্যাথাটার অনুভব করলো।

ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস টেনে আরুকে দুচোখ ভরে দেখতে লাগলো।

হলুদ কাপড়ের উপর লাল রঙের কাজ করা শাড়ী পড়েছে আরু। অন্য সময়কার মতো আজ কুঁচি দিয়ে নয় বরং গ্রাম্য মেয়েদের স্টাইলে।

কোমরের অনেক নিচে চলে যাওয়া সিল্কি চুল গুলো আজ খুলেই রেখেছে।

কানের দুপাশ থেকে অল্প চুল নিয়ে পেছনের মাঝ বরাবর আটকে তাতে বেলীফুলের মালা ঝুলিয়েছে। কোমরের সাথে পেট স্পর্শ করে ঝুলছে এক কোমর বন্ধনী, চোখ জোড়ায় আজও মোটা কাজলের রেখা পড়েছে, আর ঠোঁট জোড়ায়…
শাহাদের টানে হকচকিয়ে তাকালো ইশান।

পাশে তাকাতেই দেখলো প্রশ্ন সূচক মুখ করে তাকিয়ে আছে তিনজনেই। আইরা পাশ থেকে পাঞ্জাবির হাতা ধরে টানতে টানতে বলল,
~ ও মামা, কি হয়েছে তোমার?

? কথা বলছো না কেন?

ইশান গলা খাকারি দিয়ে ক্যামেরার দিকে একবার তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই শাহাদ বলে উঠলো,
~ মামা কি ভাবছো তুমি?

ইশান মাথা চুলকে মুখে জোরপূর্বক হাসির রেখা টেনে বলল,
~ ভ..ভাবছি, আরে না! ভাবছি না তো মামা। বলো কি হয়েছে, কি যেন বলছিলে?

আইরা ইশানের মুখের দিকে অসহায় মুখ করে বলল,
~ তুমি কিছু শুনোনি?

ইশান স্মিত হাসলো।

বলল,
~ হ্যাঁ মামনি শুনেছি তো..

আইরা আরুর দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল,
~ জানো আন্টি আমি না আমার মা কে খুঁজে পাচ্ছি না!
পাশ থেকে শাহাদও একই সুর টেনে বলল,
~ আমিও না!

দুজনের এমন কথাতে ভ্রু জুগল কুঁচকে এলো আরু ইশানের। দুজনে একবার মুখ চাওয়াচাওয়ি করে একাসথেই বলে উঠলো,
~ মানে?

আইরা মুখ ফুলিয়ে বলল,
~
~ হ্যাঁ, আর জানো কি হয়েছে? একজন সাদা মহিলা আমাকে ডেকেছিলো, একদম ভূতের মতো দেখতে, তাকে দেখে আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম! উনি আমাকে ডেকে বলল~ এসো তোমাকে সাজিয়ে দেই।
শাহাদ বলল,

~ আমাকেও এরকম একজন মহিলা ডেকেছিলো! উনি কিছু বলার আগেই আমি পালিয়ে এসেছি।

আর তারপর থেকেই আমরা দুজনেই এখানে বসে আছি!আইরা খুব ভয় পেয়েছে গো!

~ হ্যাঁ আমি খুব ভয় পেয়েছি!

ইশান চিন্তিত কন্ঠে বলল,
~ সাদা দেখতে মহিলা ভূতের মতো, কে?

আরু আইরা আর শাহাদকে কাছে টেনে বলল,
~ আচ্ছা বাবা এতো ভয় পেতে হবে না! একবার পরুক ওরা আমাদের সামনে, একদম মেরে তক্তা করে দিবো দেখে নিয়ো আইরা সোনা।

কতো বড় সাহস আমাদের কলিজার টুকরো দুটোকে ভয় দেখায়,
ইশান বলল,

~ হ্যাঁ তাইতো! কে হতে পারে বুঝতে পারছি না! একবার সামনে পরুক, মজা দেখিয়ে দিবো।
~ হু একদম।

আচ্ছা শুনো আমার বাচ্চারা, এতো ভয় পেতে হয়না বুঝেছো।

বেশি ভয় পেলে সবাই আমাদের কলিজা দুটোকে ভীতু বলবে সেটা কি শুনতে ভালো লাগবে বলো? লাগবে না তো, তো এখন আমরা কি করবো?

আইরা আর শাহাদ দুজনেই একসাথে বলে উঠলো,
~ এখন আমরা ছবি তুলবো, ইয়েয়!
~ হু একদমই তাই।

তো চলো।
ইশানও মুচকি হেসে তাদের তিনজনের ছবি তুলে দিতে লাগলো। ছবি তুলতে গিয়েও আইরা আর শাহাদের কান্ড দেখে ইশান আর আরু মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ছিলো।

হঠাৎ ছবি তোলার মাঝেই আচমকা আইরা আর শাহাদ চেঁচিয়ে উঠলো। আইরা আরুকে ঝাপটে ধরলো আর শাহাদ ইশান কে! ঘটনার আকস্মিকতায় দুজনেই চমকে উঠলো।

কিছু বুঝে উঠার আগেই কারো কন্ঠ ভেসে আসলো কানে।

ঘাড় ফিরিয়ে তাকাতেই আরেক বার চমকাতে হলো! কারা এরা? আর এ কেমন সাজ! গরমে ঘামে পুরো মেক~ আপ লেপ্টে গিয়ে একদম বিশ্রী লাগছে! আরুর এদের চিনতে অবশ্য দু’দন্ড সময় লাগলো না।

আইরাকে উঠিয়ে বলল,
~ আইরা এই তো তোমার মা, শাহাদ ঐ যে তোমার মাও এসেছে।

দেখোনা ইনি আপু, বিনি আপু তোমাদের ছেলে আর মেয়ে নাকি তোমাদের কোথাও খুজে পাচ্ছেনা! আর কোন এক মহিলা নাকি ওদের ভয় দেখিয়েছে!

আরুর মুখে ইনি আপু~ বিনি আপু শুনে ইশান যেন বোকা বনে গেলো।

তাদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে ভ্রু কুঁচকে আরুকে ধমক দিয়ে বলল,
~ কিহ্!

! এই কি বলছিস তুই এসব? উনারা কারা? আমি উনাদের এর আগে কখনো দেখেছি বলে তো মনে হচ্ছে না!
আরু ইশানের দিকে তাকালো।

কিছু বলতে যাবে তার আগেই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো অমিত(বিনির বর), আর তার পেছন পেছন নাহিদ (ইনির বর)।

দুজনেই অসহায় মুখ করে একবার ইশানের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার আরু দিকে।

ইশান অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
~ কি ব্যাপার দুলাভাই? তোমরা এভাবে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলে, কিছু কি হয়েছে?

নাহিদ হাঁপাতে হাঁপাতে বলল

~ আর বলো না ইশান, তোমার ইনি আপাকে, বিনি আপাকে কাউকেই খুজে পাচ্ছি না!

আইরা অমিতের গলা জড়িয়ে বলল,

~ হ্যাঁ বাবা আমিও মাকে কোথাও খুজে পাচ্ছিনা!
অমিত মেয়েকে আগলে বলল,

~ কেথায় গেলো বলোতো এই দুই বোন! পেত্নীরা আবার বান্ধবী ভেবে তুলে নিয়ে গেলো নাকি?

অমিতের কথায় নাহিদ ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,
~ তা যা বলেছো!

ইনি আর বিনি এখনো খাম্বার ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ অমিতের বলা কথায় চরম ক্ষেপে গেলো। বিনি ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো,

~ কি বললে তুমি? পেত্নী আমাদের বান্ধবী ভেবে তুলে নিয়ে গেছে!

বিনির কথায় আরু বাদে মোটামুটি সবার চোখই আলুর সেপের আকার ধারন করলো। আর আরু পাশে দাঁড়িয়ে মুখ টিপে টিপে হাসতে লাগলো।

নাহিদ অবাক কন্ঠে বলল,
~ আপনারা কারা?

ইনি রেগে গিয়ে বলল,
~ কি বললে তুমি?

তুমি আমাকে চিনতে পারছো না? ইয়ার্কি মারছো?

~ ধুর মশাই আমি খামখা আপনার সাথে ইয়ার্কি কেন মারবো? কে আপনি,

ইনি~ আমি ইনি, তোমার বউ!
বিনি~ আমি বিনি!

ইনি বিনির কথা শুনে নাহিদ আর অমিত বসা থেকে উঠে দাড়ালো। দুজনে একবার মুখ চাওয়াচাওয়ি করে ঢোক গিললো। বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে ইশান আরু! এই বলেই বাচ্চাদের কোলে উঠিয়ে একরকম দৌড়ে পালালো দুজনেই, আর তাদের পিছু পিছু ছুটলো দু বোন।

এতো কান্ড দেখে আরু হাসতে হাসতে পেট চেপে বসে পড়লো। আর ইশান রেগে গিয়ে বলল,
~ ডিজগাস্টিং, হোয়াট ইজ দিস ইয়ার!

লেখিকা – মৌমিতা মেহরা

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “আমার মায়াবতী (শেষ খণ্ড) – লোভনীয় প্রেমের গল্প” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – আমার মায়াবতী (১ম খণ্ড) – লোভনীয় প্রেমের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *