ভালোবাসার পরিনতি (১ম খণ্ড) – New Pratilipi Bengali love story

ভালোবাসার পরিনতি (১ম খণ্ড) – Pratilipi bengali love story: রাফিসা নিয়ে অন্য রুমে চলে গেলাম। চার মাস ধরে আমরা আলাদা ঘুমাই। মাঝে মাঝে রোহান আমার রুমে এসে ওর শারীরিক চাহিদা মিটিয়ে চলে যেতো।


পর্ব ১

“রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছেলেদের সাথে নষ্টামি করতে লজ্জা লাগে না,তোর এতোটা অধপতন হয়েছে। আজকে তুই বাড়ি চল তারপর দেখবি তোর হাল কি করি।”

“স্যার আপনি ম্যাডামকে ভুল বুঝছেন, উনি তো ফুল কিনতে এসেছে।”
“কতো টাকায় তোর ম্যাডামকে কিনেছিস যে দরদ উথলায় পড়ে।”
“না স্যার এমন কিছু না, সত্যি উনি ফুল কিনতে এসেছে।”

আমার হাত টেনে নিয়ে রিকশা উঠালো। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,
~ তুমি আমাকে যা বলার বাসায় এসে বলতে বা কি হয়েছে যেটা জেনে নিয়ে,
~ একদম চুপ তোর মতো মেয়েকে আমি খুব ভালো করে চিনি।

আমি সাহস করে আর কিছু বলতে পারলাম না। বাসায় এসে রোহন ওর প্যান্টের বেল্ট খুলে আমাকে খুব মারলো। রুমের একটা কোনায় শুয়ে রয়েছি, ব্যাথার যন্ত্রণায় নড়তে পারিনি।

আমার চার বছরের পিচ্চি মেয়েটা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আম্মু আমি দুষ্টুমি করি বলে আব্বু তোমাকে মেরেছে তাই না? আমি আর দুষ্টুমি করবো না।”
মেয়েটাকে শক্ত করে বুক জড়িয়ে বললাম,
“না মা তুমি তো আমার লক্ষী সোনা, চলো এখন খেয়ে নিবে।”
“না আম্মু আামার ক্ষুধা নেই, আমি ঘুমাই।”
“না একটু খেতে হবে।”

মেয়েটাকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। রোহানকে খেতে ডাকার জন্য ওর কাছে গিয়ে বললাম,
~ খেতে এসো।
~ তুই যা আমি আসছি।
~ আচ্ছা।
রোহানকে খেতে দিয়ে আমি টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে আছি।

~ তুই কি এবোয়শন করবি না?
~ না
~ তোকে ভালো মতো বলেছি এবোয়শন কর নয়তো বাঁচতে পারবি না।
~ মরে যাবো তাও আমার সন্তানকে মেরে ফেলতে দিবো না।

~ অন্যের সন্তান আমার নামে চালিয়ে দিবি সেটা আমি মেনে নিবো না।
~ নিজের সন্তানকে অন্যের সন্তান বলতে লজ্জা লাগে না? কেমন বাবা তুমি?
~ মুখে মুখে এতো কথা বলে খাওয়া ছেড়ে রোহান আমার গালে ঠাসসসস্ ঠাসসস্ কয়েকটা থাপ্পড় মেরে চলে গেলো।
রাতে আমার খাওয়া হলো না। ব্যাথার যন্ত্রণায় জ্বর খুব জ্বর হলো।

সকালে এক গ্লাস পানি আমার মুখের উপর ছুঁড়ে মারলো।
~ নবাবজাদী তুই এখনও ঘুমাস? রাতে কি অন্য কারো কাছে গিয়েছিলি
আমার মেয়ে।”রাফিসা”বললো,
~ আব্বু দেখো আম্মু গায়ে অনেক জ্বর, ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

~ ওসব জ্বর টর কিছু না, যত্তসব ঢং।
আমার হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বললো,
~ যা গিয়ে আমার জন্য নাস্তা রেডি কর।

আমি কিছু বলতে পারলাম না শুধু চোখ থেকে পানি পরতে থাকলো। কোনো মতো রুটি আর ডিম ভেজে দিলাম। রোহান খেয়ে অফিসে যাওয়ার আগে বললো,
~ সন্ধ্যা রেডি থাকিস তোকে হসপিটালে নিয়ে যাবো।
~ এবোয়শন করবো না।
দরজায় লাথি মেরে রোহান চলে গেলো।

মনে পরে গেলো পাঁচ বছর আগে আমি প্রথম মা হওয়ার খরব রোহানকে দেই তখন ও খুশিতে সারা বাড়ি আমাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘুরছে। আমার মা~ বাবা, শশুড়~ শাশুড়ি তাদেরকে আমার কাছে এনে রেখেছে। ওর একটাই কথা ছিলো যে।”পুরো একবছর আমাদের সাথে থাকতে হবে।।”আমার বাবা মা রোহানকে খুব ভালোবাসতো তাই ওর কথা ফেলতে পারে নি৷ আর ওর বাবা মা গ্রামে থাকতে পছন্দ করে তাও ছেলের খুশির জন্য থেকেছে।

রোহান অফিসে গেলে একটু পর পর কল করে বলতো, আমার অসুস্থ লাগছে কি না?খাবার খেয়েছি কি না? বাবু নড়াচড়া করছে কি না?আরও কতো কিছু। আবার ভিডিও কল দিতো। অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময় খাবার নিয়ে আসতো৷

প্রতিদিন আমার পছন্দের খাবার রান্না করতো আমার মা আর শাশুড়ী। আমাকে রান্না ঘরে যেতে দিতো না। আমি ওয়াস রুমে গেলে রোহান বাইরে দাড়িয়ে থাকতো। এমন কি সকালে আমাকে ঘুৃম থেকে তুলে ব্রাশ করিয়ে দিতো। আমি কিছু চাওয়ার আগে আমার সামনে হাজির করতো। সবাই আমাকে বলতো আমি অনেক ভাগ্য করে রোহানের মতো স্বামী পেয়েছি।

এখন রোহান কেনো এমন করছে? কেনো আমাদের সন্তানকে পৃথিবীতে আসতে দিতে চায় না? যে রোহান আগে কখনও আমারকে ঝাড়ি মেরে কথা বলে নি আর সে এখন আমার গায়ে হাত তুলে।
পুরোনো কথা মনে পরায় বেশ কিছুক্ষণ কেঁদে মন হাল্কা করলাম।

রাফিসা আমাকে এসে বলে,
~ আম্মু তুমি কেঁদো না। আমি বড় হয়ে ডাক্তার হবো তখন তোমার জ্বর হলে আমি ওষুধ দিবো।
~ হ্যাঁ মা তুই বড় হলে আমার আর কোনো কষ্ট থাকবে না।
~ আচ্ছা আম্মু জ্বর হলে কি ওষুধ জেনে খায়?
~ কেনো? তুই জেনে কি করবি?

~ আহ্ এতো কথা বলো না তো, যা জিজ্ঞেস করছি তা বলো।
~ নাপা ওষুধ।
রাফিসা দৌড়ে গিয়ে ফাস্টবক্স এনে বললো,
~ N A P A. নাপা ওষুধ তাই না।
~ হুম।

আবার দৌড়ে গিয়ে বিস্কুট আর কলা এনে বললো,
~ আম্মু এগুলো খেয়ে নেও তারপর ওষুধ খেতে হবে।
মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
~ তুই অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস।
~ হুম। আমার জ্বর হলে তুমি তো আমাকে কিছু খাইয়ে দিয়ে ওষুধ খাওয়াও।
~ হুম।

রাফিসাকে রুটি কলা খাইয়ে দিলাম তারপর নিজে একটু খেয়ে ওষুধ খেয়ে দুপুরের জন্য রান্না করলাম। মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে তাই গোসল করেছি।
রাফিসা আগের মতো আর দুষ্টুমি করে না। অনেক শান্ত হয়ে গেছে। সারাক্ষণ বই নিয়ে থাকতে পছন্দ করে।
সন্ধ্যায় রোহান বাসায় এসে আমাকে বললো,
~ এই কাগজ টা দেখ।


পর্ব ২

“তুই আমাকে ডিভোর্স দিবি নয়তো এবোয়শন করবি, এখন তুই ডিসিশন নে কি করবি।”
“তুমি কেনো এমন করো? কি সমস্যা আমাকে খুলে বলো?

“আমার সমস্যা তুই। তোকে আমার ভালো লাগে না।”
“সত্যি কি আমাকে ভালো লাগে না আমাকে ভালোবাসো না?

“তোকে আর কতো বার বলবো, যে তোকে আমি ভালোবাসি না।”
“আচ্ছা, আমি তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো তাও এবোয়শন করবো না।”
“রাফিসার দায়িত্ব আমি নিতে পারবো না যাওয়ার সময় ওকে ও নিয়ে যাবি। তোর দুটা বাচ্চার দায়িত্ব কে নিবে?”

“আমার বাচ্চাদের দায়িত্ব আমি নিতে পারবো।”
“ডিভোর্স পেপারে সিগনেচার করে এখনই আমার বাসা থেকে বের হ্।”
“দুটো দিন তোমার কাছে সময় চাই তারপর আমি চলে যাবো।”
“দুটো দিন পরে আবার কোনো যাবে না করবি না?”

“কথা দিচ্ছি কোনো ঝামেলা করবো না, তুমি শুধু মেয়েটার সামনে কোনো খারাপ আচরণ করো না।”
“তোর মেয়েকে তুই সামলে রাখবি আমার কাছে জেনো না আসে।”
“ও তো ছোটো বাচ্চা, তোমার সন্তান তাহলে ওর সাথে কেনো খারাপ ব্যবহার করো?”
“তোর এতো কথা শুনতে আমার ভালো লাগে না। যা গিয়ে আমার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আয়।”
“হুম।”

আমি চা বানিয়ে টেবিলের উপর রেখে দিলাম তখন কলিং বেল বাজে। আমি দরজা খোলার আগে রোহান দরজা খুললো। ডেলিভারি ম্যান একটা পার্সেল নিয়ে এসে বললো,
~ ইভা ইসলামের নামে একটা পার্সেল এসেছে, উনাকে ডেকে দিবেন।
~ জ্বি আমি ওর হ্যাসবেন্ড আমাকে পার্সেলটা দিতে পারেন।
~ আচ্ছা।

পার্সেলটা নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে আমাকে বললো,
“আজকাল তোর অনেক লোক হয়েছে বাসায় পার্সেল পর্যন্ত পাঠিয়েছে।”
“ওটা আমি অনলাইন ওর্ডার করেছি।”
“আমাকে একদম মিথ্যা বলবি না তোর যে আরও প্রেমিক পুরুষ আছে তা জানি।”
“আমার প্রেমিক পুরুষ থাকলে তোমার কি? তুমি তো ডিভোর্স পেপার সিগনেচার করে দিয়েছো শুধু আমার সিগনেচার করা বাকি তারপর তো আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।”

“তুই আমার বাড়িতে থেকে আমার সাথে মুখে মুখে তর্ক করবি এটা হতে পারে না খুব বার বেড়েছিস।”
“দুটো দিন আমাকে সহ্য করে নেও তারপর তো আমি চলে যাবো।”
রাফিসা দরজার কোনায় দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনে বললো,
“আম্মু আমার দু দিন পর কোথায় যাবো।”
“সুখের দেশে যাবো।”

“তুই আর তোর মেয়ে আমার চোখের সামনে থেকে সরে যা।”
রাফিসা নিয়ে অন্য রুমে চলে গেলাম। চার মাস ধরে আমরা আলাদা ঘুমাই। মাঝে মাঝে রোহান আমার রুমে এসে ওর শারীরিক চাহিদা মিটিয়ে চলে যেতো। এখন পর্যন্ত জানতে পারি নি কেনো রোহান পাল্টে গেলো? আমাকে সন্দেহ করে মারধর করা শুরু করলো তখন থেকে প্রতিবাদ করা শুরু করি কিন্তু প্রতিবাদ করতে গেলে বেশি মারধর করে তাই নিরবে সহ্য করি। বেশি মারধর করা শুরু করে দ্বিতীয় সন্তানের কথা শুনে। আগে ও বলতো আল্লাহ চাইলে আমি চার সন্তানের বাবা হতে চাই আর এখন কোনো সন্তানই চায় না।

মেয়েটা আমাকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে শুয়ে আছে। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,
~ তুমি কি তোমার বাবার সাথে থাকতে চাও নাকি আমার সাথে থাকতে চাও?
~ দুজনের সাথে থাকতে চাই।
~ সেটা তো হবে না মা যে কেনো একজনের সাথে থাকতে হবে।

~ তাহলে আমি তোমার সাথে থাকবো। আব্বু আমাকে একটুও ভালোবাসে না শুধু বকে।
~ বাবা মা সব সময় সন্তানদের ভালোবাসে। বাবা সারাদিন অফিস থেকে কষ্ট করে তো তাই একটু রাগ দেখায়।
~ পাশের বাসার ইরার বাবাও তো অফিসে যায় তাও ওকে কতো ভালোবাসে চকলেট কিনে দেয়।
~ তোমার বাবাও দিবে।

বাইরে চিৎকার চেচামেচির শব্দ শুনে গিয়ে দেখি রোহান একটা গ্লাস ভেঙ্গেছে। আর হাতে একটা কাগজ নিয়ে আরেক হাত দিয়ে আমার চুলের মুঠো ধরে বললো,
“আমাকে ডিভোর্স দিতে না দিতে অন্য কারো জন্য লেখালিখি শুরু করেছিস এতো প্রেম।”
“আমার চুলে ব্যাথা লাগছে ছাড়ো।”
“না বল তোর প্রেমিক কে?”
“সত্যি বলছি কেউ নেই।”
“তাহলে এসব কি?”

“আমি তোমার জন্য তোমাকে নিয়ে লিখেছি।”
রাফিসা দৌড়ে এসে রোহানের হাতে কামড় দিলো তাতে রোহানের রাগ আরও বেড়ে গেলো। রাফিসাকে দুটো থাপ্পড় দিলো।
“তুই যেমন ডাইনি রাক্ষসী তোর মেয়েও তেমন। এখন তো মনে হয় এটা অন্যের পাপ আমার ঘাড়ে চাপিয়েছিস।”
“ছিঃ নিজের সন্তানকে নিয়ে এই নোংরা কথাটা বলতে মুখে বাজলো না।”

“না না না তোরা যতোদিন আমার বাসা থেকে না যাবি ততোদিনে আমার শান্তি হবে না আর তোরাও শান্তি পাবি না।”
“দয়া করে দুটো দিন আমাকে ভিক্ষা দেও দুটো দিন আমাকে শান্তি দেও।”
ওর সামনে যতো থাকবো ততো আমাকে কষ্ট দিবে তাই রুমে চলে যাবার জন্য পা বাড়ালাম কিন্তু আমাকে আটকে দিয়ে বললো,
~ টেবিলে খাবার দে।
~ হুম দিচ্ছি।

রোহানের খাওয়া শেষে কোনো মতে রাফিসাকে খাইয়ে দিলাম। আমার খাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই তাই শুয়ে পরলাম। অনেক ঘুমানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুতে ঘুম এলো না তাই রোহানের রুমের কাছে গিয়ে দাড়াতে শুনে পেলাম কার সাথে যেনো হেসে হেসে কথা বলছে।


পর্ব ৩

আমি বুঝতে পেরেছি আমার ভালোবাসার মানুষটি আর আমার নেই সে অন্য জনের হয়ে গেছে। কেনো আমাকে ঠকালো? আমি তো ভালোবাসার কমতি রাখি নি। সব সময় ওকে খুশি করার জন্য যা করতে হয় তাই করেছি তাহলে কেনো এমন করলো?একটা বারও কি আমাদের সন্তানের কথা ভাবলো না?
মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন কথা ঘুরপাক খাচ্ছে, কোনো কিছুর হিসেব মেলাতে পারছি না। কেঁদে কেঁদে সারারাত পাড় করলাম।
সকালে রান্নাঘরে বসে রুটি বানাচ্ছি তখন কলিং বেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দেখি অনেক সুন্দরী একটা মেয়ে।
“রোহান কোথায়?”

“ও ঘুমাচ্ছে কিন্তু আপনি কে?”
“আমি ওর হবু বৌ”
আমাদের কথা শুনে রোহন এসে বললো,
“নিশিতা তুমি আজকে আমার বাসায় আসবে তা জানিয়ে আসবে তো

“ভাবলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দেই তাই না জানিয়ে চলে এসেছি।”
“আচ্ছা ভিতরে এসে।”
“হুম, এই মেয়েটি কে?”

“ও আমাদের বাসার কাজের লোক, বাবা মা কিছু দিন পরে আসবে তাই পরিচিত মেয়েটিকে আগে পাঠিয়ে দিয়েছে।”
“মেয়েটি বেশ সুন্দরী কিন্তু।”
“তোমার থেকে বেশি সুন্দরী না।”

“হাহাহাহা।”
“ইভা তুই গিয়ে আমাদের জন্য নাস্তা নিয়ে আয়।”
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, আমি কি ঠিক শুনেছি যে আমার স্বামী আমাকে কাজের লোক বানিয়ে দিলো। এতোটা কিভাবে পরিবর্তন হলো? শুধু মাত্র মেয়েটা সুন্দরী বলে ও সুন্দরের পূজারী হয়ে গেলো? ভালোবাসার পরিনতি কি এমন কষ্টের হয়? আমি ঠায় দাঁড়িয়ে আছি হেঁটে রান্না ঘরে যাবো তার শক্তিটুকু পাচ্ছি না।

রোহান এসে বললো,
“তোকে সেই কখন থেকে ডেকেছি কথা কি কানে যায়?”
“না মানে আর কি, বলো কি লাগবে?”
“নিশিতার সামনে আমাকে তুমি করে বলবি না আপনি বলবি, তুই আমার বৌ ছিলি এখন আর না। তুই ডিভোর্স পেপারে সিগনেচার করে বিদায় হ্।”
“কালকেই চলে যাবো আর তুমি নিশ্চিত থাকো নিশিতা আমাদের সম্পর্কে কিছু জানতে পারবে না।”
“হ্যাঁ বিদায় হলে ভালো, এখন যা নাস্তা রেডি কর।”

“হুম।”
নাস্তা রেডি করে টেবিলে রেখে রোহানের রুমের দরজায় টোকা দিলাম। নিশিতা বিরক্তি নিয়ে বললো,
“প্রাইভেট টাইমে কাউকে ডিসটার্ব করতে হয় না তা জানো না?”
“নাস্তা রেডি করেছি তাই আপনাদের ডেকেছি।”
“হ্যাঁ যাও আসছি কিন্তু আর নেক্সট টাইম আমাদের রুমে নক দিবে না, প্রয়োজন হলে আমি তোমাকে ডেকে নিবো।”
“আচ্ছা।”

দৌড়ে নিজের রুমে এসো কান্না করতে লাগলাম। মেয়েরা আর যাই হোক নিজের স্বামীর সঙ্গে অন্য কোনো মেয়েকে সহ্য করতে পারে না। রোহানের এতো টা নিচে নামতে একটুও রুচিতে বাঁধলো না, ঘরে বৌ বাচ্চা থাকতে অন্য মেয়েকে নিয়ে রুমে সময় কাটায়। রাফিসা ঘুম থেকে উঠে আমাকে কাঁদতে দেখে বললো,
~ আম্মু তুমি কাঁদছো কেনো? কি হয়েছে?

~ কিছু হয় নি।
~ ও আম্মু বলো না কি হয়েছে? তুমি তো বলেছিলে আমরা সুখের দেশে যাবো তাহলে এখন কেনো কাঁদছো?
~ সুখের দেশে গেলে আর কাঁদতে পারবো না তাই এখন একটু কেঁদে নিচ্ছি।
রোহান আমাকে ডাকছে,
~ ইভা এই ইভা, খাবার টেবিলে আয়।
~ আসছি।

~ খাবার টেবিলে রেখে দিয়ে চলে গিয়েছিস কেনো?খাবার বেড়ে দিবে কে?
~ আপনারা এখানে ছিলেন না তো তাই আর কি।
~ কথা কম বলে প্লেটে খাবার দে।
~ হুম।

রাফিসা এসে বললো,
~ আব্বু আমাকে একটু খাইয়ে দেও।
রোহান রাফিসাকে ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বললো,
~ তোকে কতো দিন বলেছি তোর মেয়ে আমাকে যেনো আব্বু না বলে।
~ আহ্ রোহান ও বাচ্চা মানুষ না বুঝে বলে ফেলেছে। (নিশিতা)
~ বাচ্চা বলে তো অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না।

আমি রাফিসাকে কোলে নিয়ে বললাম,
~ স্যার ও ভুল করে বলে ফেলেছে, ক্ষমা করবেন।
~ আম্মু আমি ভুল কিছু বলি নি তো। (রাফিসার)
আমি রাফিসার গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে বললাম,

~ তোর বাবা মরে গিয়েছে, উনি তোর বাবা না আর কোনোদিন কাউকে বাবা বলবি না।
~ উফফফ্ রোহান তোমার বাসায় তো একটুও শান্তি নেই, ওদের কাজে রাখতে হবে না (নিশিতা)
~ আচ্ছা তুমি না চাইলে ওদের রাখবো না।
~ কিন্তু মেয়েটার রান্না খুব ভালো করে।
~ এমন ভালো রান্না অনেকে করতে জানে, তুমি চিন্তা করো না নতুন কাজের লোক রাখবো।

~ হুম।
রোহান, নিশিতা খেয়েদেয়ে বাইরে চলে গেলো। সারাদিন মা,মেয়ে মিলে অনেক কেঁদেছি। চোখের পানি একটা বেইমানের জন্য কেনো পরে? কেনো আমি ওর মতো ভালো থাকতে পারি না? উফফ ওর কথা ভাবতে ভাবতে মাথা ব্যাথা হয়ে গেছে।
রাতে রোহান ড্রিংক করে বাসায় ফিরে এসে আমাকে খুব মারলো তার কারন কেনো রাফিসা ওকে বাবা বলেছে? নিশিতার নাকি একটু সন্দেহ হয়েছে যে আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে কি না? এতো মার খাওয়ার পরও আমি সকালে উঠে রোহানের জন্য ওর সব পছন্দের রান্না করেছি।


পর্ব ৪

আজ রোহানের জন্মদিনে ওর বেস্ট গিফট হবে ডিভোর্স। দুটো দিন সময় চাওয়ার কারন ছিলো ওর জন্মদিনে শেষ বারের মতো নিজে ওর পছন্দ মতো সব রান্না করে খাওয়াবো আর কোনোদিন তো সুযোগ পাবো না।

বরাবর ও যা চেয়েছে তাই দিয়েছি ওর সুখে আমি সুখ পেয়েছি কিন্তু ও আমাকে নিয়ে কোনোদিন সুখী হতে পারবে না। প্রিয় মানুষটি যে আমার নেই। রোহান দ্বিতীয় সন্তান কেনো চাইছে না তা এখন আমার কাছে স্পষ্ট। আমি যদি এখন ডিভোর্স না দিয়ে দেই তাহলে যেকোনো মূল্যে আমার সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখতে দিবে না, মা হয়ে সন্তানকে মেরে ফেলতে পারবো না।

যাই হোক আমার ভালোবাসার মানুষ তো আমার সন্তানদের বাবা তো তাই রোহানের পছন্দের একটা শাড়ি পরলাম। ও রুমের দরজা লক করে ঘুমায় যাতে আমি বা রাফিসা কেউ ডিসটার্ব করে না পারি কিন্তু আজকে দরজা লক করে নি রাতে ড্রিংক করে এসেছিলো তাই আমি রুমে ঢুকে ডাক দিলাম,
~ রোহান এই রোহান উঠো।
~ সাতসকালে তোর হয়েছে কি? চিল্লাছিস কেনো?

~ Many Many Happy Returns Of The day Happy BirthDay To U Rohan
কথাটা শুনে রোহান আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল তারপর বললো,
~ এভাবে রংচং লাগিয়ে সেজে দাড়িয়ে আছিস কেনো? তোকে কে বলেছে আমার জন্মদিনে উইস করতে? তোর মুখ দেখলে এমনি দিন খারাপ যায় আজকে না জানি কি হবে?

~ আমাদের এতো দিনের ভালোবাসা আর সন্তানদের জন্য কি আমরা একসাথে থাকতে পারি না? তুমি চাইলে সব হবে।
~ না না না পারি না তোকে চাই না,আমি ডিভোর্স চাই।

কিছু না বলে রোহানের রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। আমার রুমে এসে নিজেকে আয়নায় ভালো করে দেখতে লাগলাম, যে আমি দেখতে খুব খারাপ তাই স্বামীর মন পাই নি। এর মধ্যে রাফিসা ঘুম থেকে উঠে আমাকে বলে,
“আম্মু তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে, প্রতিদিন তুমি এমন সুন্দর শাড়ি পরবে।

“হ্যাঁ মা পড়বো, তুমি এখন যাও ব্রাশ করে এসো তারপর একটা জায়গায় নিয়ে যাবো”
“আচ্ছা।”
রাফিসাকে রেডি করে নিজে রেডি হয়ে রোহানের রুমের কাছে গিয়ে বললাম,
“টেবিলে খাবার বেড়ে রেখেছি খেতে এসো।”
“যা আসছি।”

রোহান ডাইনিং টেবিলে এসে বললো,
“তুই যতোই আমার মন পাওয়ার জন্য এসব নেকামি করিস কোনো লাভ হবে না, আমি নিশিতাকে বিয়ে করবো। তুই আজকে ডিভোর্স পেপারে সিগনেচার করে বিদায় হ্।”
রোহানের সামনে ডিভোর্স পেপার এনে সিগনেচার করে দিলাম৷ সিগনেচার করার সময় ভেবেছিলাম রোহান বলবে সিগনেচার করো না, আমাকে ক্ষমা করে দেও আবার নতুন করে সব শুরু করবো। কিন্তু না আমি বার বার ভুল করি।
“সিগনেচার করে দিয়েছি এবার খুশি তো?”

“হুম।”
“এখন তোমাকে কিছু কথা বলি,মনে আছে আমি ফুল কিনতে গিয়েছিলাম সেদিন আমাকে নষ্টা মেয়ে বলেছো কিন্তু সেটা আমি তোমার জন্য হয়েছি। তোমাকে আজকের দিনে ফুলেরতোড়া দিবো তাই সেদিন ওই ছেলেটাকে বলেছিলাম আজকে যেনো বাসায় ফুলেরতোড়া দিয়ে যায়।

আবার ডেলিভারি ম্যান বাসায় পার্সেল দিয়ে গিয়েছিলো সেটা আমি তোমার জন্য কয়েকটা জিনিস অনলাইনে ওর্ডার দিয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে বললে আমার প্রেমিক দিয়েছে একটা বার যদি পার্সেলটা খুলে দেখতে তাহলে আমাকে খারাপ কথা বলতে রুচিতে বাজতো। আর দুটো দিন সময় চাওয়ার কারন ছিলো আজ তোমার জন্মদিনে তোমার বেস্ট গিফট দিবো দেখো তোমার বেস্ট গিফট দিয়ে দিয়েছি।”
“ইভা তুমি আমার জন্য এতোকিছু করেছো আর আমি তোমার সাথে কি না খারাপ ব্যবহার করেছি হাহাহাহা তুই কি ভাবলি আমি এখন তোকে মেনে নিবো? তা কখনো ভাবিস না।”

রোহানের কথা শুনে চোখের পানি পড়তে লাগলো। প্রিয় মানুষের খারাপ রুপ সহ্য করা যায় না।
“আমাকে ভোলানোর জন্য এসব নাটক করার কোনো দরকার নেই। এখন তোরা মা মেয়ে আমার বাসা থেকে চলে যা।”
“হুম চলে যাবো, এখন তুমি খেয়ে নেও।”
“তোদের যতো যা কিছু আছে সব নিয়ে যাস।”
“আচ্ছা।”

আমার আর রাফিসার সব কিছু প্যাক করে নিলাম। আড়াল থেকে দেখলাম রোহান তৃপ্তি সহকারে আমার রান্না করা খাবার খাচ্ছে। ঘুম থেকে উঠে মেয়েটা কিছু খায় নি তাই আমাকে বললো,
~ আম্মু আমার ক্ষিদে পেয়েছে।
~ বাইয়ে গিয়ে খেয়ে নিবে এখন চলো।

~ আচ্ছা।
রোহানের খাওয়া শেষ তখন আমি গিয়ে বললাম,
~ আমরা চলে যাচ্ছি, তুমি নিজের খেয়াল রেখো।
~ হুম যা।

রাফিসা রোহানের হাত ধরে বললো,
~ আব্বু তোমাকে আমি খুব জ্বালিয়েছি এখন থেকে আর কেউ তোমাকে জ্বালাবে না কিন্তু আব্বু তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমার খুব কষ্ট হবে। তুমি আমাদের সাথে থাকো।
~ তোদের মা, মেয়ের নাটক আর সহ্য হচ্ছে না।
~ ও বাচ্চা মানুষ ওর কথায় রাগ করো না আমরা চলে যাচ্ছি।

পাঁচ বছরের সংসার শেষ করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। ছোটো মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি যাওয়া ছাড়া আর কোনো জায়গা নেই তাই বাবার বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। রাফিসাকে পথে খাওয়ানোর জন্য কেক,কলা পানি কিনে নিয়েছি। মেয়েটা বাসে উঠলে ঘুমিয়ে পড়ে কিন্তু আমার যে ঘুম আসে না। পুরোনো স্মৃতি বার বার মনে পড়ে যায়। রোহানের সাথে বিয়ের পর থেকে আমি বাবার বাড়িতে দু তিনদিনের বেশি থাকতে পারতাম না।

একবার ও আমাকে বাসস্টপে পৌঁছে দিতে কান্না শুরু করলো আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না তাই ও আমার সাথে বাবা বাড়ি এলো। একটু চোখের আড়াল হলে ইভা ইভা বলে চিল্লাপাল্লা শুরু করতো আর আজ সারাজীবনের জন্য ওকে ছেড়ে চলে এলাম তাও কষ্ট পেলো না ভালোবাসার পরিনতি কি শুধু একতরফা কষ্ট পায়, অন্য জন সুখে থাকে এটা কেমন নিয়তি?
ওর হাজারো স্মৃতি ভাবতে ভাবতে বাবার বাসায় পৌঁছে গেলাম। কলিং বেল বাজাতে মা দরজা খুললো, মাকে দেখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি নি। মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।

~ কি হয়েছে মা তোর? তুই কাঁদছিস কেনো?
বাবা এসে রাফিসাকে কোলে নিয়ে বললো,
~ নানু ভাই তোমার আম্মু এতো কাঁদছে কেনো?

~ আমরা বাবাকে ছেড়ে চলে এসেছি।
মা আমাকে ভিতরে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসালো। আমি শুধু কেঁদে যাচ্ছি কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই। মা এক গ্লাস পানি খাইয়ে বললো,
~ একটু শান্ত হ্ মা তারপর খুলে বল তোর কি হয়েছে?
নিজেকে একটু শান্ত করে রাফিসাকে বললাম,
~ তুমি একটু নানুর রুমে গিয়ে শুয়ে থাকো নয়তো ক্লান্ত হয়ে পরবে।

রাফিসা বাধ্য মেয়ের মতো চলে গেলো তারপর মা বাবাকে সবকিছু বললাম৷ বাবা মা দুজনেই খুব কষ্ট পেয়েছে আমি তাদের আদরের একমাত্র মেয়ে আমার সব কথা শুনেছে কোনো দিন আমার অমতে কিছু করে নি এবং আমিও তাদের সব কথা শুনে ~ মেনে চলেছি আর আমি আজ সুখী হতে পারি নি। আমার দু ভাই আছে তারাও বিয়ে করে সুখী আছে। আমার বাবা মায়ের সাথে থাকে। একজন শশুড় বাড়িতে গিয়েছে আর অন্য জন আমার ফুপির বাসায় গিয়েছে আমি এসেছি শুনে ওরা কালকে চলে আসবে কিন্তু আমি ভাবতেছি কি করে দুটো সন্তান নিয়ে থাকবো? কি করে খরচ চালাবো? সারাদিন রাত বাবা মা আমাকে অনেক বুঝিয়েছে তারা আমার পাশে আছে। পরের দিন ভাইয়া ভাবিরা বাসায় আসলো।

[গল্পটির মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে আমাদের দেশে এখনও হাজার হাজার নারী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তারপরও তারা সন্তানদের কথা ভেবে সহ্য করার ক্ষমতা রাখে এবং সমাজেরহীন দৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য স্বামীর সংসার করে যায় কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না।


পর্ব ৫

“তোদের সংসারে এতো ঝামেলা হয়েছে যে শেষ পর্যন্ত ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছিস আর আমাদের জানানোর প্রয়োজন বোধ মনে করিস নি।”(বড় ভাই)
“হ্যাঁ আমরা সবাই বুঝিয়ে বললে হয়তো রোহান তোর সাথে থাকতো।”(ছোট ভাই)
“কম চেষ্টা তো করি নি ওর সাথে থাকার জন্য আর তোমরা যেনো ওর সাথে এসব নিয়ে কথা না বলো তা আমাকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে তাই তোমাদের অপমান করতে চাই নি।”(ইভা)

“একমাত্র আদরের বোন তোকে কোনো দিন একটা থাপ্পড় পর্যন্ত দেই নি আর ও তোর সাথে এতো নিষ্ঠ ব্যবহার করেছে আর তুই আমাদের অপমানের কথা চিন্তা করে কিছু না জানিয়ে ভুল করেছিস।”(বড় ভাই)
“আমি মনে করি ইভা তোমাদের না জানিয়ে কোনো ভুল করে নি কারন কোনো মেয়ে চায় না তার বাবার বাড়ির লোকজনকে শশুড় বাড়ির কেউ অপমান করুক।”(বড় ভাবি)

“তোমাদের কিছু বলতে গেলে আমার উপর, রাফিসার উপর নির্যাতন বেশি হতো। তোমার ভাবতে পারবে না রোহানের খারাপ রুপ কতোটা ভয়ানক।”(ইভা)
“রোহানের বাবা মায়ের সাথে কথা বললো, ওনার ছেলের এতো সাহস হয় কিভাবে যে আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলে এমন কি দুধের বাচ্চার গায়ে হাত তুলতেও ছাড়ে নি। (বাবা)

“না বাবা ওর বাবা মা এসব কিছু জানে না আর ওনারা খুব ভালো। তাদের ছেলে খারাপ হয়ে থাকলে তাদের তো কোনো দোষ নেই। (ইভা)
“ওদের তো ডিভোর্স হয়ে গেছে। এখন আমাদের কোনো অধিকার নেই রোহান ভাইয়ের সাথে এসব বিষয়ে কথা বলার। আর যে নিজে থেকে সংসার করতে চায় না। তাকে হাজার বার বুঝিয়ে কোনো লাভ হয় না। এখন থেকে ইভা শুধু ওর সন্তানদের কথা ভেবে নিজেকে শক্ত করবে। (ছোট ভাবি)”
আমি ওদের কথা শুনে কান্না করে দিলাম, আল্লাহ বোধহয় আমাকে পুরোপুরি একা করে দেয় নি আমার পরিবার আমার পাশে আছে। মা আমাকে বুকে জড়িয়ে বললো,

“মা তুই কোনো চিন্তা করিস না আল্লাহ যা করে ভালো জন্যই করে, আমরা সবাই তোর সাথে আছি।”
“সকাল থেকে এসে শুধু কথা শুনে যাচ্ছি, খাওয়া দাওয়া যে করতে হবে তা কি কারো মনে আছে? সবাই খেতে এসো।”(বড় ভাবি)
“আমি কিছু খাবো না এখন একটু ঘুমাবে।”(ইভা)

“শোনো বাপু আমাদের বাসায় থাকতে হলে আমাদের কথা শুনে চলতে হবে, এখন খেতে চলো। (ছোট ভাবি)
“তুই বিকেলে রেডি হয়ে থাকিস ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো।”(ছোট ভাই)
“না ভাইয়া দু দিন পরে যাবো মন মেজাজ একদম ভালো লাগছে না।”(ইভা)
“এবার তোর কথা শুনলাম এর পরে আর না।”(ছোট ভাই)
আমার খাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই তাও মা জোর করে খাইয়ে দিলো।

রাফিসার খেলার সাথী তিন্নি, তিয়াসকে পেয়ে খুব খুশি। ও ভাবে ওর বাবা কিছু দিন পরে আমাদের নিতে আসবে কিন্তু ওর ভাবনা যে সত্যি হওয়ার না।
তিন্নি বড় ভাইয়ের মেয়ে, চতুর্থ শ্রেনীতে পড়ে আর তিয়াস ছোট ভাইয়ের ছেলে, দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ে।

আমি শুয়ে শুয়ে ভাবতেছি রোহানের সাথে প্রথম দেখা। ওর বাবা~ মা, কাকা~ কাকি, মামা~ মামি, বন্ধুরা, কাজিনরা আর ও আমাকে দেখতে এসে এনগেজমেন্ট হলো। বাবা~ মাকে বলেছিলাম তাদের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করবো তাই দেখতে এসে এনগেজমেন্টে কোনো আপত্তি করি নি। সেদিন আমি লাল রংয়ের শাড়ি পরে ছিলাম আর ও কালো রংয়ের শার্ট। সুন্দর মানুষদের কালো রংয়ে বেশি সুন্দর লাগে।

দুজনে আলাদা ভাবে কথা বলতে গেলাম তখন ও বললো,
~ আপনি পরিবারের চাপে পড়ে বিয়ে করবে না, যদি নিজের ইচ্ছে থেকে বিয়ে করতে চান তাহলে আমার সাথে বিয়ে হবে নয়তো না।
~ না, আমি কারো চাপে পড়ে বিয়ে করতে যাচ্ছি না। নিজের ইচ্ছে।
~ তাহলে আমারও বিয়ে করতে সমস্যা নেই।
~ আপনার পছন্দের কেউ আছে নাকি?

~ আরে না না আপনাকে পছন্দ করে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি।
~ আমাকে আপনি আগে থেকে চিনেন কিভাবে?

~ আপনি কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলেন তখন আপনাকে দেখে ভালো লাগে তারপর আপনি যে রিকশায় ছিলেন ওটা ফলো করে আপনার বাড়ির ঠিকানা পেয়ে যায়।
~ হাহাহাহ্ হতেও তো পারতো আমি বাসায় না এসে অন্য কোথাও গেলাম সেখানেও কি আপনি আমাকে ফলো করে যেতেন?
~ যাওয়ার দরকার হতে অবশ্যই যেতাম।

~ ওহ্ আচ্ছা। (একটু মুচকি হেসে)
~ ওভাবে হাসবেন না বুকে লাগে, এতো সুন্দর হাসি।
~ হাহাহাহ্।
দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ওর একটা বন্ধু বললো,
~ আর কতো কথা বলবি, বাসার রাতের জন্য কিছু কথা তুলে রেখে এখন চল। সবাই তোদের জন্য অপেক্ষা করছে।
~ হুম চল।

কয়েক দিনের মধ্যে আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো। কতো সুন্দর ছিলো পাঁচ বছরের স্মৃতিগুলো, ভালোবাসাও কোনো কমতি ছিলো না। একে অপরের ছায়া হয়ে থাকতাম সব সময়। বাসর রাতে ও আমাকে একটা ব্রেসলেট দিয়ে বলেছিলো সারাজীবন যেনো হাতে রাখি। আমার হাতে এখনও আছে শুধু মানুষটি নেই।

রাফিসা আমার কাছে এসে বললো,
~ আম্মু দেখো আমাকে এতোগুলো চকলেট, চিপ দিয়েছে।
~ কে দিয়েছে?

~ তাকে চিনি না তো।
~ তোমাকে বলেছি না যে অপরিচিত কেউ কিছু দিলে নিবে না।
~ উনি তো নানাদের বাসায় এসেছে তারপর আমাকে দেখে এসব দিয়েছে।
~ এমন কে এসেছে, চলো তো গিয়ে দেখি।


পর্ব ৬

ছয় বছর পরে তিহান ভাইয়ের সাথে দেখা। আগের থেকে বেশ পরিপাটি হয়েছে। আসলে সময়ের সাথে সবকিছু পরিবর্তন হয়। আমার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তাই আমি বললাম,
~ উহুম উহুম তিহান ভাই।
~ হ্যাঁ হ্যাঁ বল, কেমন আছিস?

~ এইতো আছি ভালো, তুমি কেমন আছো?
~ হুম ভালো।
~ দেশে কবে এসেছো?

~ একমাস হলো।
~ ভাবি কেমন আছে?
~ আরে আমি তো বিয়ে করি নি।
~ সে কি এখনও বিয়ে না করলে আর কবে বিয়ে করবে?

~ আমার কথা বাদ দে। তোর কথা বল, সংসারে কে কে আছে? কেমন দিন যাচ্ছে সে সব বল।
সংসারের কথা শুনে চোখে পানি চলে এলো তাও নিজেকে কিছুটা কন্ট্রোল করে বললাম ,
~ ভালো, তুমি বসো মাকে ডেকে আনি।
~ মামির সাথে দেখা হয়েছে, তুই বস।

~ ওহ্
~ তোর মেয়েটা দেখতে খুব মিষ্টি হয়েছে একদম তোর মতোই।
~ আমার মেয়ে তো আমার মতোই হবে।

রাফিসা আমরা ফোনটা হাতে করে নিয়ে এসে বললো,
~ আব্বুকে একটু কল দেও আমি কথা বলবো।
~ না সোনা এখন কথা বলা যাবে না।
~ কেনো যাবে না?

~ ব্যস্ত আছে তো তাই, তুমি যাও গিয়ে খেলা করো।
~ না আমি আব্বুর সাথে কথা বললো,
~ মেয়েটা এতো জেদ করছে যখন তাহলে একটু কথা বলিয়ে দে। (তিহান)
~ সেটা সম্ভব নয়, বলে আমি উঠে গেলাম। আড়ালে গিয়ে চোখে পানি মুছে রান্না ঘরে গিয়ে ছোট ভাবিকে।
বললাম,
~ ভাবি।
~ তোমাকে কি ডেকেছি নাকি?

~ নাহ্, আমি নিজে থেকে এসেছি। ফল, সরবত আমি বানিয়ে দেই।
~ তোমার কোনো কাজ করতে হবে না, আমার সব কাজ করা কম্পিলিট।
~ একটু রান্না তো করতে পারি?
~ না পারো না, আমার সাথে এসো।
~ হুম।

তিহান ভাইয়া দেশের আসার পর আজ প্রথম আমাদের বাসায় এসেছে তাই আজকে না খেয়ে, থেকে যেতে পারবে না। বাসায় রান্নাবান্নার আয়োজন চলছে কিন্তু আমাকে কোনো কাজ করতে দিচ্ছে না। আমার চার মাসে প্রেগন্যান্সি চলছে। এর মধ্যেও আমার স্বামী গায়ে হাত তুলতো আর পরিবারের কেউ আমাকে সামান্য কাজও করতে দেয় না। প্রতিটা পরিবার যদি মেয়েদের অসহায় সময়ে শক্তি দেয় তাহলে মেয়েরা সব কষ্ট ভুলতে সক্ষম হয়।

ওহ্ হ্যাঁ আপনাদের বলতে ভুলেই গেয়েছি, তিহান হচ্ছে ইভার মামাতো ভাই।
তিহান আসার কারণে সবার ভালো লাগছে। তিহান খুব মিশুকে যায় জন্য সবাইকে অতি সহজে আপন করে নেয়।

ওদিকে রোহান আজকে নিশিতাকে বিয়ে করেছে। নিশিতার বাবার অফিসে রোহান জব করে। রোহান দেখতে যেমন সুন্দর তেমন স্মার্ট। যে কেউ দেখলে ক্রাশ খাবে। নিশিতা মাঝে মাঝে অফিসে এসে রোহানের সাথে গল্প করতো। রোহানে নিয়ে বড় ক্লাবে পার্টিতে যেতো। নিশিতা সারাক্ষণ টাকার অহংকার নিয়ে থাকতো সাথে রোহানকে বুঝাতো টাকা ছাড়া কিছু হয় না। রোহানও আসতে আসতে নিশিতার বিলাসিতায় আসক্ত হলো। রোহান ভাড়া বাসা ছেড়ে নিশিতাদের বাসায় গিয়েছে।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ইভাদের বাসার সবাই তিহানের সাথে গল্প করতে আছে।

সবাই ইভার মন ভালো করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করে। ইভা সবার সাথে বসে থাকলেও তার মন পরে আছে রোহানের স্মৃতিতে। সব কথায় ইভা হুম, হ্যাঁ বলে যাচ্ছে। তিহান বললো,
~ ইভা তোর বরের সাথে আমাকে মিট করিয়ে দিবি না? এক দিনের ছুটি নিয়ে আসতে বল।
তিহানের কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেলো। কে কি উত্তর দিবে তাই ইভা বললো,
~ না ভাইয়া, আমাদের ডিভোর্স হয়েছে।

কথাটা বলে ইভা ওর রুমে চলে গেলো। রাফিসা রোহানের ছবি সামনে নিয়ে শত কথা বলে যাচ্ছে এই দৃশ্য দেখে ইভার চোখের পানি বাধ মানলো না। ইভার কান্না দেখে পিচ্চি মেয়েটাও চুপ করে আছে। সত্যি কারের ভালোবাসা বোধহয় ভুলে থাকা যায় না। বেশ কিছুক্ষণ পর তিহান ইভার রুমে আসে। ইভা শুয়ে আছে তিহানকে দেখে উঠে বসতে চাইলে তিহান বাঁধা দিয়ে বলে,
~ সবার কাছ থেকে জানতে পেরেছি তোর জীবনে এখন একটা খারাপ সময় যাচ্ছে, তাই ওসব শুনে বলে তোকে আর কষ্ট দিতে চাই না।
~ কষ্টের পথ তো সবেমাত্র শুরু।
~ কিসের কষ্ট বল?

যে তোর ভালোবাসার মূল্য দিলো না, সন্তানদের কথা ভাবলো না, স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারে নি তার জন্য কষ্ট পাওয়ার কোনো মানে হয় না। সে তো ঠিকই ভালো আছে।
~ আমি ভালো থাকতে পারছি না আমার অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে।

~ তোর সন্তানের কথা তো ভাবতে হবে?
~ পারছি না, যে মানুষটা আমাকে ছাড়া অন্য কিছু বুঝতো না সেই চেনা মানুষ অচেনা হয়ে গেলো।
~ তুই নতুন করে সব শুরু কর দেখবি তোর থেকে ভালো কেউ নেই।
~ হয়তো কোনো এক দিন।

ইভার মা এক গ্লাস দুধ এনে বললো,
~ এটা খেয়ে এখন ঘুমা।
~ মা দুধ খেতে ভালো লাগে না।
~ তোর কোনো কথা শুনতে চাই না এটা খেয়ে নে।
~ উফফ।
~ তিহান তুই ও গিয়ে একটু ঘুমা।

~ না মামি আমি ঘুমাবো না। বিকেলে যেতে হবে তো(তিহান)
~ কয়টা দিন থেকে যা বাবা, কতো বছর পরে দেশে এলি আবার কবে তোর দেখা পাবো?
~ মামি তুমি এতো ইমোশনালি হয়ে কথা বলো যে কথা না রেখে উপায় নেই।
~ আমি যতোদিন বেঁচে আছি ততোদিন বলবো ,
ইভা গ্লাসটা মায়ের দিকে ধরে বললো, খেয়েছি এবার শান্তি।

~ হুম তোরে আল্লাহ সুখী করলে আমার শান্তি হবে তার আগে না।
ইভার বাবার সাথে ইভার শশুড়, শাশুড়ী ইভার রুমে আসে। ওনাদের দেখে ইভা অবাক হয়ে যায়! ওনারা এখানে কেনো এসেছে?


পর্ব ৭

“আমার ছেলে যে অন্যায় করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য,
আমার ছেলের হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তোমার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো তাতে তো আমি কিছু করতে পারলাম না তাবে আমি তোমাকে দোয়া করি তুমি যেনো সুখী হও আর মাঝে মাঝে আমাদের সাথে কথা বলো আর নাতিদের দেখতে দিও এটা তোমার কাছে অনুরোধ।”
রোহানের বাবা আমাকে এই কথাগুলো বলে কান্না করে দিলো। তিনি অনেক অনুতপ্ত বোধ করছে। তার কান্না দেখে আমিও কান্না করে দিলাম।

রোহানের মা বললো,
“এই সময়ে একটুও কাঁদবে না। যে তোমাকে ঠকিয়ে ভালো আছে তার জন্য একটুও চোখের পানি ফেলবে না। তোমার কষ্ট হলে তো আমার নাতিনাতনিদেরও কষ্ট হবে। বুড়া বয়সে ওরা তো আমাদের শক্তি হবে। একটামাত্র ছেলে থাকতেও এখন নেই।”

আমার মা বললো,
“আপনাদের সাথে রোহান যোগাযোগ করতে চাইতে যোগাযোগ করবেন শত হলেও তো ও আপনাদের ছেলে। আমার মেয়ের যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে তা ফিরিয়ে আনা যাবে না। সন্তানেরা ভুল করলেও তাদের অশিকার করা যায় না।”
“আপা আমরা অনেক ভাগ্য করে আপনাদের মতো পরিবার পেয়েছি, বৌ পেয়েছি কিন্তু আমার ছেলে বুঝলো না। আপনার এতোকিছুর পরেও আমাদের সাথে ভালো ব্যবহার করছেন তাতে আমরা কৃতজ্ঞ।

“(রোহানের মা).
“না মা আপনারা নিজেদের দোষী ভাববেন না, যা হয়েছে সব আল্লাহর ইচ্ছেতে হয়েছে। আপনারা শুধু আমার জন্য দোয়া করবেন যেনো আমার সন্তানদের ভালো ভাবে মানুষ করতে পারি।”(ইভা)
“হ্যাঁ মা তোমাদের জন্য সব সময় দোয়া করি।”(রোহানের মা)
রাফিসা আমার কাছে ঘুমাচ্ছিলো সবার কথার আওয়াজ শুনে ঘুম থেকে উঠে গেলো। দাদা,দাদীকে দেখে খুব খুশী হয়েছে।

কিছুক্ষণ আমাদের সাথে সময় কাটিয়ে বিকেলে ওনারা চলে গেলো।
সারাদিন সবার সাথে থেকে ভালো লেগেছে। সন্ধ্যায় সবাই চা খেয়ে টিভি দেখতে বসেছে। আমার টিভি দেখতে একদম ভালো লাগছে না তাই নিজের রুমে শুয়ে সেই রোহানের স্মৃতিতে চলে গেলাম।

পাঁচ বছরের স্মৃতিতে কম কিছু নেই, এগুলো ভুলে থাকা সম্ভব নয়। রোহান অফিসে থাকাকালীন সময়ে মাঝে মাঝে ভয়েস মেসেজ দিতো
।”লক্ষ্মী সোনা পাখিটা এখন খেয়ে নেও আমি খেয়েছি।”
“আজকে শাড়ী পরে রেডি থেকে, ঘুরতে নিয়ে যাবো”
“খুব মিস করছি আমার মিষ্টি বৌটাকে”
ভয়েস মেসেজগুলো শুনছি আর চোখের পানি পড়ছে।

তিহান ভাইয়া আমার রুমে এসে বললো,
“দেখ যে হারে আমাদের দেশে ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে তাতে সবাই দুর্ভোগে পরেছে তুই আর চোখের পানি দিয়ে ঘরে বন্যা তৈরি করিস না।”
“ভাইয়া আমার ভালো লাগছে না, তুমি এখন মজা করো না তো”

“তোকে যে ভালো থাকতে হবে নয়তো আমি ভালো থাকতে পারবো।”
“আমাকে নিয়ে এতো ভেবো না, যাও সবার সাথে গিয়ে গল্প করো।”
“আমি তোর সাথে গল্প করবো।”
“আচ্ছা শুনি তো কি এমন গল্প করবে।”

“ছোটবেলায় আমি একবার গাছ থেকে পড়ে হাত ভেঙ্গে গিয়েছিল। আম্মু সারাক্ষণ খেয়াল রাখতো আমার কখন কি দরকার পরে। স্কুলে গেলেও আম্মু স্কুলে গিয়ে বসে থাকতো। আমি ব্যাথা পেয়ে কান্না করলে আমার কষ্ট দেখে আম্মু কাঁদতো, সন্তানেরা ভালো না থাকলে বাবা~ মা ও ভালো থাকে না। দেখ রাফিসা অসুস্থ হলে তোর কতো কষ্ট হয় ঠিক তেমন মামা~ মামিরও তোর জন্য কষ্ট হয়।

তোর জীবন তো এখনও পরে আছে। আল্লাহ তোকে কম কিছু দেয় নি তো তোর পরিবার তোর সাথে আছে, একটা মিষ্টি মেয়ে আছে আবার একজন তোর কোল আলো করে আসবে। ছোট্ট হাতদিয়ে তোকে আদর করবো। দুটো বাচ্চা সারাক্ষণ তোকে মা মা বলে ডাকবে এর থেকে তোর আর কি চায়? তুই আল্লাহর কাছে তোর সকল অভিযোগ বলবি উনি তোকে ভালো রাখবে।”
তিহানের কথা শুনে চোখে পানি চলে এলো সত্যি তো আমাকে আল্লাহ অনেক কিছু দিয়েছে।

“হ্যাঁ ভাইয়া তুমি একদম ঠিক বলেছো, আমি ভালো থাকবো আর কারো জন্য কষ্ট পাবো না।”
বড় ভাবি আর ছোট ভাবি আমার রুমে এসে বললো,
“আমার একটা মাত্র ননদকে মন মরা দেখতে ইচ্ছে করছে না তাই চলে এলাম লুডু খেলতে। (বড় ভাবি)”
“সাথে আমের আচার নিয়ে এসেছি ইভার জন্য।”(ছোট ভাবি)
“তোমার দেখি আমার কথা ভুলে গেছো।”(তিহান)

“এতো স্মার্ট দেবরের কথা কি ভুলে থাকা যায়, তোমার জন্য চানাচুর নিয়ে এসেছি।”(বড় ভাবি)
“না আমার আমের আচারের ভাগ চাই।”(তিহান)
“ছোটবেলার অবভ্যাস তোমার গেলো না আমার জিনিসে খালি ভাগ বসাও।”(ইভা)
“ঝগড়া তোলা থাক এখন লুডু খেলা শুরু করি।”(ছোট ভাবি)
চারজন মিলে লুডু খেলে কখন যে সময় পাড় করলাম সেটা বুঝতে পারি নি। রাতে খাওয়া শেষে করে ঘুমাতে গেলাম, রাফিসা আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমালো। আজকে মা ও আমার সাথে ঘুমাবে। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম নিজেও বুঝতে পারি নি।

সকালে ফুপি এলো মানে তিহানের মা। সবার থেকে আমাকে একটু বেশি ভালোবাসে তা নিয়ে তিহান ভাইয়ার সাথে কতো ঝগড়া হতো। তিহান ভাইয়াকে ডাকতে গেলাম, গিয়ে দেখি সে ঘুমাচ্ছে তাই ডাক না দিয়ে চলে আসবো তখন চোখ গেলো একটা ডায়েরির ওপর। আমি ভাবলাম বাবার ডায়েরি ভুলে এখানে রেখে গিয়েছে তাই ডায়েরি হাতে নিলাম। ডায়েরির প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা।””ইভার ডায়েরি”।”

লেখাটা দেখে চমকে উঠলাম কারন এটা বাবার ডায়েরি না এটা তিহান ভাইয়ার ডায়েরি হবে কিন্তু কেনো আমার নামে এসব লেখা? কৌতুহল হলো তাই ডায়েরি নিয়ে নিজের রুমে আসবো তখন শুনতে পেলাম ফুপি বাবাকে বলছে,
“ইভাকে আমার ছেলের বৌ করতে চাই, ভাইয়া আপনি আমার আবদারটা রাখেন।”
কথা শুনে খুব রাগ হলো কেনো সব সময় আমার সাথে এমন হচ্ছে? আমি আর কারো ভালোসায় জড়াতে চাই না।
রুমে এসে দরজা লক করে ডায়েরি নিয়ে বসে পড়লাম।

পর্ব ৮

“তোকে সেই ছোট বেলা থেকে ভালোবাসি, তুই কি আমার ভালোবাসা বুঝিস না।”
“তোর মুখে ভাইয়া ডাকটা একদম সহ্য হয় না।”
“তোকে খুব বেশি ভালোবাসি।”
“তুই হাসলে মনে হয় আমি খুব সুখী।”
“আজকে অনেক সাহস নিয়ে তোকে প্রোপজ করতে গিয়েছিল কিন্তু শুনলাম তুই বিয়ে করতে রাজি হয়েছি।”
“চলে যাচ্ছি প্রিয় মানুষকে ছেড়ে।”

“এতো বছর পরে তোকে দেখতে পেয়ে যতোটা ভালো লেগেছে ঠিক ততো বেশি কষ্ট পেয়েছি তোকে কষ্ট পেতে দেখে।”
“খুব ইচ্ছে করছে তোকে বৌ করে পৃথিবীর সুখ এনে দেই কিন্তু আমি যে নিরুপায়।”
তিহানের ডায়েরিতে হাজার টা কথা লেখা আছে শুধু মাত্র ইভাকে নিয়ে। তিহান সব সময় ডায়েরিটা সাথে নিয়ে ঘুরে আর ঘুম থেকে উঠে ডায়েরির ভেতর ইভার একটা পিক আছে সেটা দেখে। আজকে ঘুম থেকে উঠে ডায়েরিটা দেখতে না পেয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগলো। ইভার রুমের দরজায় নক করলো,
~ এই ইভা দরজা খুল, তাড়াতাড়ি দরজা খুল তো।

ইভা দরজা খুলে বললো,
~ কি হয়েছে কি?
~ সামনে থেকে সর।
~ কেনো?

~ আমার দরকারী জিনিস খুঁজছি।
~ সেটা কি এটা? (ডায়েরি টা দেখিয়ে বলছে)
খপ করে ডায়েরিটা তিহান হাতে নিয়ে বললো,
~ তুই আমার ডায়েরিতে কেনো হাত দিয়েছিস? অন্যের পারসোনাল কোনো কিছু দেখতে নেই তা জানিস না?
~ ভাইয়া তুমি কেনো এমন করছো? তুমি কেনো বুঝো না তোমার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।

~ আমার জীবন নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না, আগে কোনো দিন ভাবিস নি এখন ভেবে করবি কি? যত্তসব।
তিহান রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো। ইভা খাটের উপর ধপাস করে বসে পরে।

এসব কি হচ্ছে? এতো বছর পর কেনো তিহানের ভালোবাসার কথা জানলাম? শুধু মাত্র আমার জন্য তিহান ভাইয়া সবাই ছেড়ে দূরে থাকে? আবার এখনও আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছে, আমি তার চোখের সামনে থাকলে বেশি কষ্ট পাবে। না আমি দ্বিতীয় বারের মতো কারো ভালোবাসায় জড়াবো না। আমি চলে গেলো সবাই ভালো থাকবে?

তিহানের মা ইভার মাথায় হাত রাখতে ইভা ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে বলে,
“কিছু কি বলবে?

“তোকে কিছু কথা বলবো মন দিয়ে শোন, যে স্বামী তোকে প্রেগনেন্ট অবস্থায় ডিভোর্স দিয়েছে তাকে কেনো আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকবি? প্রেগনেন্ট অবস্থায় ডিভোর্স দেওয়া যাবে না, সন্তান পৃথিবীতে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ডিভোর্স দিতে পারবে কিন্তু সে তোকে এতোটুকুও সময় দেয় নি, সন্তানকে অশিকার করেছে।

তোর এখনও অনেক দূর পথ চলা বাকি। সিঙ্গেল মাদার হয়ে বেঁচে থাকা অনেক কঠিন। সমাজ তোকে ভালো ভাবে থাকতে দিবে না প্রতিদিন তোকে লড়াই করতে তাতে তোর সন্তানদের উপর খারাপ প্রভাব পরবে তাই আমি তোকে আমার ছেলের বৌ করতে চাই।”
“না ফুপি এটা হয় না।”
“কেনো হয় না?

তোর কি মনে হয় তিহানক তোকে ভালোবাসবে না?”
“তিহান ভাইয়া আমাকে এখন ভালোবাসলে সেটা হবে আমাকে দয়া করে ভালোবাসা আর আমার সন্তানদের কখনও বাবার ভালোবাসা দিতে পারবে না। সমাজও অনেক কথা বলবে।”
“না রে মা, তিহান তোকে সত্যি খুব ভালোবাসে, তোর সন্তানদের ও কখনও বাবার অভাব বুঝতে দিবে না।

তুই রাজি হয়ে যা মা।”
“না না না এটা হয় না”
ইভার মা এসে বললো,
“আমার তো তোর ভালো চাই, তুই সুখী হবি।”
“না মা এসব হয় না, আমি কি তোমাদের কাছে বোঝা হয়ে গেছি।”
“তোর মাকে এভাবে বলিস না কষ্ট পাবে। তাদের কোনো দোষ নেই, আমি নিজে চেয়েছি তোকে বৌ করতে।”(ফুপি)
“তোমাদের কারো আমার কথা ভাবতে হবে না।

এখন আমাকে একা থাকতে দেও।”
ফুপি আর মা চলে গেলো। রাফিসার খেলার সাথী পেয়ে আমাকে জ্বালায় না, আগের মতো আবদার করে না আম্মু এটা এনে দেও, এটা করো। এখন সে বুঝে গেছে তার মা কিছু করতে পারবে না কিন্তু আমার সামনের দিনগুলো সন্তানদের নিয়ে থাকতে হলে কিছু করতে হবে।

এমন অবস্থায় কিছু করা যাবে না বলে আমাকে তিহান ভাইয়ার ঘাড়ে চাপিয়ে আপদ বিদেয় করতে চাইছে। তারা কেনো বুঝে না আমি কারো মায়ায় জড়িয়ে থাকতে চাই না। ভাবতে ভাবতে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে তাই শুয়ে রয়েছে। কিছুক্ষণ পর বড় ভাইয়া এসে বললো,
~ বিকেলে রেডি হয়ে থাকিস তোকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো।

~ আচ্ছা।
সকালের ও~ ই ঘটনার পর থেকে তিহান ভাইয়ার সাথে দেখা হয় নি।

বিকেলে রেডি হয়ে ডক্টরের কাছে যাবো তখন তিহান ভাইয়ার সাথে দেখা। আমার সাথে কোনো কথা না বলে চলে যেতে লাগলো তখন বড় ভাইয়া বললো,
~ তিহান তুই কোথাও কি যাচ্ছিস?
~ হ্যাঁ ভাইয়া, সামনে রাস্তার কাছে একটু ঘুরতে।
~ তাহলে তুই ইভাকে নিয়ে ডক্টরের কাছে যা।
~ আচ্ছা।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিহান ভাইয়ার সাথে গেলাম। যাওয়ার পথে কোনো কথা বলি নি।
ডক্টর দেখিয়ে আসার পথে ফুসকা দেখে খেতে ইচ্ছে করলো কিন্তু সাহস করে কিছু বললাম না। তিহান রিকশা থামাতে বলে, গিয়ে অনেক ফুসকা কিনে আনলো। বাসায় এসে সবাই একসাথে ফুসকা খেতে লাগলাম তখন আবার সেই এক প্রশঙ্গ শুরু হলো তিহানের সাথে বিয়ে নিয়ে।
রুমে এসে নিজের আর রাফিসার টুকিটাকি জিনিস গুছিয়ে রাখলাম।

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই ঘুমাতে গেলো। আমার চোখে ঘুম নেই সবাই ঘুমাবে সেই অপেক্ষা করতে আছি। এই বাড়িতে থাকলে কেউ আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না তাই আজকে রাফিসাকে নিয়ে চলে যাবো।

[আমাদের সমাজে এখনও অনেক পুরুষ আছে তারা সন্তানদের কথা না ভেবে ডিভোর্স দিয়ে দেয়। তাদের লোভ লালসা জন্য মস্তিষ্ক বিকৃত ঘটে। আমাদের উচিৎ সে সব মেয়েদের সাপোর্ট করা তারা যেনো অতিত ভুলো সামনের দিনগুলোতে সুখী হতে পারে।

পর্ব ৯

সবাই ঘুমিয়ে গেছে এখনই পালানোর সময়। রাফিসা ঘুমাচ্ছে তাই ওকে কোলে নিলাম আর এক হাতে ব্যাগ নিয়েছি। প্রেগনেন্ট অবস্থায় রাফিসাকে কোলে নিতে কষ্ট হচ্ছে তাও কিছু করার নেই। সন্তানদের ভালোর জন্য এতোটুকু কষ্ট সহ্য করতে হবে। রুমের দরজা আসতে করে খুলে বেরিয়ে মেইন দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা খুললাম তখন আমার বাবা বললো,
~ তুই এতো রাতে কোথায় যাচ্ছিস?

~ তুমি এখনও ঘুমাও নি কেনো?

~ আমরা কি তোর কেউ হই না? এতোটা পর হয়ে গেছি যে তোর সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছিস? আমরা কি তোর কোনো ক্ষতি চাচ্ছি নাকি?
~ না বাবা এভাবে বলো না, আমরা জন্য তোমাদের কোনো অসুবিধায় ফেলতে চাই না।

~ খুব বেশি বড় হয়ে গিয়েছিস, যা ইচ্ছে হবে তাই করবি নাকি? রুমে গিয়ে ঘুমা যা। বলে,
বাবা রাফিসাকে আমার কোল থেকে নিলে গেলো।

বাবা খুব রাগ হয়ে গেছে তাই কিছু না বলে রুমের চলে যেতে লাগলাম,
Happy birthday to u Eva
কয়েকটা বেলুন ফাটানোর শব্দ, পিছনে ফিরে দেখি বাবা,মা,ভাইয়া, ভাবি,ফুপি,তিহান দাঁড়িয়ে আছে সাথে একটা কেক।

চোখ ঝল ঝল করছে,যারা আমাকে এতো ভালোবাসে তাদেরকে ছেড়ে চলে যাচ্ছিলাম শুধু মাত্র কারো স্মৃতি আগলে রাখার জন্য যে আমার সাথে বেইমানি করেছে।
না আমি ভুল করেছি তাদেরকে আবার কষ্ট দিয়ে। মা আমার কাছে এসে বললো,
~ তুই তোর সন্তানদের কথা ভেবে আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি। তুই কি আমার সন্তান না যে তোর কথা আমরা ভাববো না? আমরা তো তোর ভালো চাই।
~ মা আমার ভুল হয়ে গেছে।

~ তোর এই ভুলের শাস্তি অনেক কঠিন হবে (বড় ভাই)
~ এ্যাহ্
~ এ্যা না হ্যাঁ। তোর শাস্তি হচ্ছে কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দে। (ছোট ভাই)
সবাই হাহাহাহ্ করে হেসে উঠলো। খারাপ সময় পরিবার পাশে থাকলে হাজারটা খারাপ সময় অতিক্রম করা যায়।
কেক কেটে সবাইকে খাইয়ে দিলাম, তিহান ভাইয়া আমার দিকে তাকায় নি।

~ আজকে তিহানের জন্য তোকে ধরতে পেরেছি, তিহান তোকে দেখেছে তুই জিনিসপত্র গোছাচ্ছি। (বাবা)
~ তুই চলে গিয়ে আমাদেরকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলি তাই আমরা আগে তোকে সারপ্রাইজ দিলাম। (ছোট ভাই)
~ তোর বার্থডে কেক তিহান নিজে বানিয়েছে (বড় ভাই)
আমি তিহান ভাইয়ার কাছে গিয়ে বললাম,
~ ধন্যবাদ ভাইয়া। তোমার জন্য আবার পরিবারকে ফিরে পেলাম, আমার একটা ভুলে অনেক ক্ষতি হয়ে যেতো।
~ তোর সুন্দর জীবন নষ্ট হয়ে যাবে সেটা কি আমি চাইতে পারি নাকি?আমরা সবাই তোর ভালো চাই।
~ হুম, আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।

~ আচ্ছা সবার এখন ঘুমানোর দরকার, বিশেষ করে তোর। যা গিয়ে ঘুমা।
যে যার মতো করে ঘুমাতে গেলো। আমিও ঘুমাতে এসেছি কিন্তু ঘুম আসছে না।
এপাশ ওপাশ করতে লাগলাম, ঘুমানোর অনেক চেষ্টা করছি তাও ঘুম আসছে না। ঘড়ি দেখলাম ২:৩০টা বাজে তাই ওজু করে তাহাজ্জুদ নামাজ পরি তারপর একটু ঘুমিয়ে ফজরের নামাজ পরে ছাদে গেলাম। ছাদের অনেক গোলাপ ফুলের গাছ আছে আমার খুব ভালো লাগার জিনিস। গাছে পানি দিয়ে হাটতে শুরু করি।

তিহান ভাইয়ার আগমন ঘটে সেও নিয়মিত ফজরের নামাজ পরে। আমাকে দেখে বললো,
~ তোর এই সময়ে ছাদে আসা একদম উচিৎ হয় নি, আর কখনও একা আসবি না।
~ জানি উচিৎ হয় নি তাও প্রকৃতির সাথে একা থাকতে ইচ্ছে হলো।

~ বেবিটা আসুক তারপর তোর যতো খুশি একা থাকিস।
~ আমাকে এতো ভালোবাসো তাহলে সেদিন অন্যের বৌ হতে দিয়েছিলে কেনো?
~ তোকে বলার সাহস পাই নি।
~ সাহস করে বলে দিতে, যা হবার হতো।

~ বুঝতে পারি নি তুই এতো তাড়াতাড়ি আমাকে ছেড়ে যাবি।
~ এখন নিজের জীবনটা গুছিয়ে নেও।
~ তোকে ছাড়া সম্ভব না, অনেক চেষ্টা করেছি তাও পারি নি তুই চাইলে তোকে আমার বৌ করবো।
~ এটা হয় না।

~ কেনো হয় না? আমাকে একটা বার সুযোগ দে তোর আমি সব থেকে আমি সুখী রাখতে পারবো।
~ আমার দুটো সন্তান আছে তাদেরকে ছেড়ে কখনও থাকতে পারবো না আর তুমি অন্যের সন্তানের দায়িত্ব কেনোই বা নিবে?
~ তোর সন্তানেরা কখনও বাবার অভাব বুঝবে না, আমি ভালো বাবা হয়ে দেখাবো।

~ না ভাইয়া, চাইলে সব হয় না।
তিহান ভাইয়া আমার হাত ধরে বলে,
~ শুধু একটা বার আমাকে বিশ্বাস করে দেখ, তোর বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবো।

আমি হাতটা সরিয়ে দিয়ে বললাম,
~ আমি প্রতিষ্ঠিত হতে চাই, কারো উপর ডিপেন্ড করে বাঁচতে চাই না কারন আমার মনে হবে সে আমাকে দয়া করছে।
~ আচ্ছা সবকিছুতে তোকে আমি হেল্প করবে, আমাকে সাথে রেখে দেখিস তারপর তোর যদি মনে হয় আমি তোর বিশ্বাসের জায়গা করতে পারি নি তখন আমি সারাজীবনের জন্য তোর জীবন থেকে সরে যাবো।

~ ঠিক আাছে তাই হকে, এখন তুমি সবাই বলবে যে তুমি বিয়ে করবে না।
~ আচ্ছা।
নিচে এসে সবার জন্য চা বানালাম।

মা একটু রাগারাগি করেছে কেনো রান্না ঘরে গিয়েছি তাই। আজকে আমার পছন্দের সবকিছু রান্না করেছে। দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে কিছুক্ষন শুয়ে থেকে রেডি হয়ে বের হলাম, কাছেই একটা পার্কে ঘুরতে যাবো আমি, তিহন, রাফিসা আর তিয়াস।
বাসা থেকে বের হতে পাশের বাসার একজন আরেক জনকে আমাকে শুনে বললো,
~ ডিভোর্স হয়েছে তাও কোনো লজ্জা নেই, প্রেগন্টে অবস্থায় বাসা থেকে বের হয়েছে।

~ হ্যাঁ, স্বামীকে ধরে রাখতে পারে নি নিশ্চয় কোনো দোষ আছে নয়তো এই অবস্থায় কেউ কি ছেড়ে দেয়।
ওদের কথা শুনে তিহান বললো,
~ আল্লাহ না করুক আপনার মেয়ের সাথে যদি কিছু হয় তাকেও কি এসব কথা বলবেন?ও কি আপনার টাকায় খায় না পড়ে যে আপনার অসুবিধা হচ্ছে?

তিহানের কথা শুনে নিজের কাছে খুব ভালো লাগলো তাই আমিও গিয়ে প্রতিবাদ করলাম,
~ প্রেগনেট অবস্থায় বাসা থেকে বের হওয়া যাবে না কেনো? কোথাও কি লেখা আছে? আর আমার দোষ আছে কি না তা আপনি জানলেন কিভাবে? কোনো নিউজ পেপারে আমার নামে লেখালেখি হয়?
~ এসব বাদ দিয়ে ভালো কিছু চিন্তা করুন।

ওনাদের সাথে আর কোনো কথা না বলে আমরা পার্কে গেলাম। ওনাদের কথা শুনে খারাপ লাগলে, ঘুরতে এসে খুব ভালো লাগলো। ফুসকা ও আইসক্রিম খেয়ে সন্ধ্যার আগে বাসায় ফিরে গেলাম।
পরেরদিন তিহান ভাইয়া তাদের বাসায় চলে গেলো। মাঝে মাঝে দেখতে আমাকে আসতো আর প্রতিদিন খোঁজ নিতো এভাবে কেটে যায় কয়েক মাস।

[ডিভোর্সি মেয়েরা যারা প্রতিদিন এরকম আন্টি, আঙ্কেলদের কথা শুনছেন তারা সামনের দিনগুলোতে ভালো থাকতে প্রতিবাদ করুন তাতে আপনার ভালো হবে এবং সন্তানের জন্যও ভালো। অন্যের কথায় কান দিয়ে নিজেদের ক্ষতি করবেন না। সবার ভালো থাকার অধিকার আছে।

লেখা ~ ইভানা

চলবে

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “ভালোবাসার পরিনতি – New Pratilipi bengali love story” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – ভালোবাসার পরিনতি (শেষ খণ্ড) – New Pratilipi bengali love story

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *