তোমাকে আমার প্রয়োজন – বাংলা প্রেমের গল্প

তোমাকে আমার প্রয়োজন – বাংলা প্রেমের গল্প: রাসেল লাবিবার একদম কাছে চলে যায়। একহাতে পেছন দিকে দুই হাত মুঠ করে ধরে আরেক হাত মুখের উপর চেপে ধরে। লাবিবা ছাড়ানোর জন্য মুচরা মুচরি করতে থাকে। কিন্তু পুরুশালী শক্তির কাছে পেরে উঠে না।


পর্ব ১

“কনগ্রাচুলেশন মি. খান। ইউ গেট দ্য ডিল। ইউ আর ওয়ান অফ দ্য ইয়ং বিজনেস আইকনস। ইউর ওয়ার্ক ইজ আওয়ার চয়েস। উই ওয়ান্ট টু ইউ হ্যাভ দ্য অপরচুনিটি টু ওয়ার্ক উইথ আওয়ার কম্পানি। অল দ্য বেস্ট।”

“থ্যাংক ইউ। থ্যাংক ইউ মি. গ্রোভস। আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট।”

“ওয়েলকাম। ওক আপ টুডে। ছি ইউ লেটার। বাই।”

“বাই।”

এমপ্লইঃ স্যার, লেট’স গো।
মি. টানভির খানঃ সিউর। লেট’স গো।

কেউ একজনঃ হাই সেক্সি।
লাবিবাঃ হাই ছাগল।
কেউ একজনঃ হোয়াট এ ছাগল? লেট’স ড্যান্স টুগেদার।

লাবিবাঃ হুহহ.. তুই বললেই আমি তোর সাথে ধেই ধেই করে নাচব নাকি? বেটা লুচুর বাচ্চা লুচু.. লুচ্চাইমি করার জন্য ডাকসস। সরি।

আই উইল নট ড্যান্স। ইউ ফাইন্ড সামওয়ান ইলস।
কেউ একজনঃ ওকে।

রাসেল দাঁড়িয়ে যায় কথা টা শুনে। কানাডার ক্লাবে বাঙালি? তাও আবার লুচু লুচ্চাইমি এইসব কথা? না চাইতেও হেসে ফেলে রাসেল।
Employee: Sir..
Tanveer: you go. I will be back later.
Employee: okay. Bye.

রাসেল এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখতে থাকে কোথাও কোন বাঙালি আছে কি না… কিন্তু চেনা বড় দায়… পুরো ক্লাব ভর্তি লোকজন। সারাদিনের ব্যাস্ত লোক গুলো রাত হলেই এখানে চিল করতে আসে। কয়েকজন পাশেই ডান্স করছে আর কয়েকজন বসে বসে মদ গিলছে। একটা টেবিলে চোখ আটকে যায় রাসেলের। একটা মেয়ে.. বসে বসে বোতলে মুখ দিয়ে ডক ডক করে মদ গিলছে|। এখানে সবাই স্টাইল করে গ্লাসে ঢেলে একটু একটু করে স্যম্পেইন খায়।আর এই মেয়েতো বাঙালি কাকুদের স্টাইলে ডক ডক করে খাচ্ছে। হায়রে আমজনতা| কি পায় এরা মদ খেয়ে? আর বোতলের উপর যে বোতল শেষ করে এগুলার কি আদৌ পেটে জায়গা হয়? নাকি কোন অদৃশ্য পেট এদের পেটের সাথে এড হয়? এসব ভাবতে ভাবতে রাসেল ডান্স ফ্লোরে চলে যায়।

ইচ্ছা মত কিছুক্ষণ মাস্তি চিল করে ক্লাব প্রায় খালি হয়ে গেছে। রাসেল চলে যাওয়ার সময় কেন যেন ঐ ডক ডক করে মদ খাওয়া মেয়েটার কথা মনে পড়ল। একবার পেছন দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল.. মেয়েটি যে টেবিলে বসেছিল সেই টেবিল খালি। পাশের অন্য একটা টেবিলে টেবিলে মাথা রেখে পরে আছে। পুরো মুখের উপর চুল গুলো উড়ে খুব আয়েশ করে ছড়িয়ে পড়েছে। একটা সার্ভেন্টকে ডেকে মেয়েটিকে উঠিয়ে দিতে বলে। সার্ভেন্ট ডাক দিতেই বলে উঠে
_ উহু.. সর এখান থেকে। I want to sleep..

একথা শুনে আবার রাসেলের পা আটকে যায়। পেছনে ফিরে দেখে পুরো ক্লাব খালি শুধু এই মেয়েটিই পড়ে আছে। তারমানে এই বাংলায় কথা বলছে? মেয়েটির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে সার্ভেন্ট কে যেতে বলে।
_ hey mis.. Are you listening? Who are you? Hello..

আস্তে করে মুখের উপর থেকে চুল সরায় লাবিবা। গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাসেলের উপর। যদিও চোখ দুটো লাল হয়ে আছে.. তবুও এর গভীরতা বুঝতে অসুবিধা হয় না রাসেলের। রাসেল একটু ঝুকে দেখতে থাকে লাবিবা কে.. মানুষ ড্রিংস করলে চেহারা এলোমেলো লাগে, ভয়ংকর টাইপ দেখতে হয়ে যায়। কিন্তু এই মেয়েকে এতটা স্নিগ্ধ কেন দেখাচ্ছে? একদমি এলোমেলো লাগছে না। খুবই গোছানো। চেহারায় কিছুটা ভয়ংকর ছাপ এলেও এই ভয়ংকর ছোয়া যেন তার সৌন্দর্য কয়েক গুন বাড়িয়ে দিয়েছে। উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রং… চোখ গুলো লাল হয়ে আছে| পাপড়ি গুলো বার বার পলক ফেলছে.. ভ্রু দুটো যেন তাকে দেখে খানিকটা কুচকে রয়েছে |নাকের ডগায় রক্তিম আভা ছড়াচ্ছে.. লাল টকটকে ঠোট দুটো কিছুটা হা হয়ে আছে ..সামনের কয়েকটা চুল ঠিক সেই হা হয়ে থাকা ঠোঁটের ঠিক মাঝে এসে যেন লজ্জা ঢাকছে… আটোমেটিক মুখ থেকে বেরিয়ে আসে মাতাল পরী।
কান্নার শব্দ পেয়ে রাসেলের ঘোর কাটে। তাকিয়ে দেখে লাবিবা নেকা কান্না শুরু করে দিয়েছে।
_ কুত্তা বান্দর শিয়াল হাস মুরগী ভেরা উল্লুক ভুল্লুক গেয়োভুত চামচিকা ইন্দুর তোর কোন দিন বিয়ে হবে না এই লাবিবা অভিশাপ দিচ্ছে হুহহহহ| আমার কাচা ঘুমটা ভেঙ্গে দিলো গো|
রাসেল তো হা… একটু আগে যে মেয়েটা এভাবে মদ খেল সেই মেয়েটা কিভাবে এখন এভাবে নেকা কান্না করছে? তাও আবার এসব উল্টা পাল্টা গালি আমাকেই দিচ্ছে। পাগল টাগল নাকি? পাগলরা কি ক্লাবে এসে মদ খায়? Great confusion.
_ তুমি কি বাংলাদেশী?
_ কেয়া বলিয়ে তুম মে নেহি শুনতা।
_ আগে তো কান্না থামাও। তারপর তো শুনতে পারবে।
_ okay
_ তুমি কি ইন্ডিয়ান?
_ এইটা কি? খায় না মাথায় দেয়?
_ এই মেয়ে নিশ্চয় পাগল। কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।
_ তো এখানে কি করছো? Madhouse এ যাও না|
…. লাবিবা আশে পাশে তাকিয়ে দেখে পুরোটাই খালি। এর জন্য ইনি ডাকছেন। যাই হোক লোকটা ভালো কাজ করেছে। Thanks for call me. I have to go. By the way, you look so handsome. ভাল্লাগছে। বাই।

সবকিছু রাসেলের মাথার উপর দিয়ে গেলো। এমন পাগলাটে মেয়ে হয় নাকি? আই এম কনফিউজড। মাতলামি করতে করতে চলে গেল| যাই হোক বাসায় যেতে হবে।

বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে নেয় রাসেল। তারপর মিসেস সোহানাকে কল করে।
_ আসসালামু আলায়কুম মম।
_ ওয়ালাইকুম সালাম বাবা।
_ এখন তোমার শরীর কেমন মম?
_ আমি তো ভাল আছি। এখন আর পেইন হয় না।

_ পেইন কিলার খেলে এমনিতেই পেইন কমে যায় মম। ভাইয়াকে বল যে তোমাকে নিয়ে সিংগাপুর যাক ট্রিটমেন্ট করানোর জন্য। আমি নতুন ডিলটা পেয়ে গেছি মম।
_ সুবহানল্লাহ। তোর ভাইয়ের কি সময় আছে আমার জন্য? সব দেশের জন্য তার সময়।
_ এভাবে বলছ কেন মম? তুমি তো গর্ব করবে তুমার ছেলে এত বড় একজন আর্মি অফিসার।
_ হা তাই। তুই আয় তারপর সিংগাপুর যাব।
_ অনেক লেট হবে মম।

_ তুই এলেই যাব।
_ ওকে। আল্লাহ হাফেজ।
_ আল্লাহ হাফেজ।

ফোনটা রেখে কাঁদতে থাকে সোহানা। তার হার্ট ইনজুরি। ইদানীং অনেক পেইন হয়। ডক্টরের দেওয়া মেডিসিন এ কাজ হয় না। ছেলে দুশ্চিন্তা করবে ভেবে এই অসুস্থতার কথা আর বলে না। দুই ছেলে এক পুত্র বধু নিয়ে সংসার তার। বড় ছেলে তুহান খান আর্মি অফিসার। বড় বউমা বৃষ্টি খান পেশায় একজন উকিল। দুজনেই নিজেদের কাজে ব্যস্ত। সোহানার খোঁজ নেওয়ার সময় বা কোথায়? ছোট ছেলে রাসেল খান মম বলতেই পাগল। কিন্তু সেও ব্যবসার জন্য সুদুর কানাডায় অবস্থান করছে। সব থেকেও সে খুব একা।তার একান্তই আবদার. তার ছোট ছেলে তার জন্য ছোট্ট একটা বউমা এনে দিবে। যাকে দিয়ে সে মেয়ের আশা পুরণ করবে। সবসময় নিজের কাছে রাখবে।

উইকেন্ডের কারণে সারাদিন বিছানায় পরে পরে ঘুমিয়েছে রাসেল। আজ আর বাহিরে যাওয়া হয় নি। সারাদিন শুয়ে থাকার ফলে শরীরটা ম্যাচ ম্যাচ করছে। আলসেমি ঝেড়ে ফেলে বিছানা ত্যাগ করে ফ্রেশ হওয়ার জন্য বাথরুমে পা বাড়ায়। ওযু করে এশার নামায টা আদায় করে নেয়। কিচেনে গিয়ে পছন্দের এক মগ ব্লাক কফি বানিয়ে বেলকনিতে এসে দাড়ায়। রাতের পরিষ্কার আকাশে তাঁরা গুলো উজ্জল ভাবে জ্বল জ্বল করছে। নিচে থেকে ভায়োলিনের আওয়াজ ভেসে আসছে। শো শো করে বাতাস সামনের চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে রোমান্টিক একটা পরিবেশ বিরাজ করছে।

নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে পাশেই রাস্তার পাশে একটা সিটিং বেঞ্চে দুজন বসে আর দুজন দাড়িয়ে ভায়োলিনে সুর তুলছে। এপার্টমেন্ট টা থার্ড ফ্লোরে হওয়ার জন্য আওয়াজ টা বেশ শুনা যাচ্ছে। এত সুন্দর ভায়োলিনের আওয়াজ এই প্রথম শুনছে রাসেল। কেন যেন একজনকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে। সোডিয়াম লাইটের আলোয় বেশ ভালোই দেখা যাচ্ছে। তখনি কানে ভেসে আসে সেই চেনা চেনা মেয়েটার কণ্ঠ “bye everyone. ভাল্লাগছে”। এই কন্ঠ আর কথাতে চিনতে দেরি হল না রাসেলের। মুখ থেকে অনায়াসে বেরিয়ে এল মাতাল পরী।

কফির মগটা রেখে একটা টি শার্ট গায়ে জড়িয়ে ফ্লাট লক করে কি নিয়ে লিফটের সামনে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু লিফট এখন সেভেনটিন ফ্লোরে আটকে আছে। লেট হবে দেখে সিড়ি দিয়ে তারাতারি নিচে নেমে আসে। কিন্তু এতক্ষণে চারজন থেকে দুজন অলরেডি চলে গেছে। একচুয়েলি মেয়ে দুটোই চলে গেছে। ছেলে দুটোই আছে। রাসেল তাদের একজন কে জিজ্ঞাসা করে

_ Excuse me bro, Was someone named labiba
Playing the violin here?
_ no.
_ oh.

“মাতাল পরী যদি এখানে নাই থাকে তাহলে কাকে দেখলাম আমি? আমি তো স্পষ্টই দেখলাম তাকে।আর তার ভয়েজ.. আর ভাল্লাগছে শব্দ টা? আমার সাথে কি হলো এটা? আমি তো মেয়েটিকে নিয়ে ভাবছিনা যে আমার সাথে এমন হবে। আর ঐ লোকটাই বা মিথ্যা কেন বলবে? Straight”

ফ্লাটে পা রাখতেই ফোনের টোনের আওয়াজ পায়। হাতে তুলে দেখে 9 মিসডকল। তারাতারি ব্যাক করে।
_ হ্যাঁ মম। বাইরে ছিলাম একটু।
_ ও আচ্ছা। আজ সারাদিন ঘুমিয়েছিস। আর রাতে বের হয়েছিলি। কি প্রয়োজন ছিল বাইরে?
মমের প্রশ্নে ফ্লাসব্যাকে ডুবে যায় রাসেল।

প্রয়োজন… মাতাল পরীটাকে প্রয়োজন। পরীটাকেই খুঁজতে গিয়েছিল সে। চোখের সামনে তার সেই স্নিগ্ধ চেহারা ভেসে উঠে। আর সেই লাল আভা ছড়ানো নাক.. ইসসস…
_ রাসেল.. রাসেল..

_ হা হা মম..
_ কি ভাবছিস?
_ মাতাল পরী
_ who is she?
_ no.. no.. No one mome.

_ বলো। বলো কে সেই মেয়ে? যার জন্য আমার ছেলে ভাবনার গহীনে চলে গেছে?
_ একটা মেয়ে মম। ড্রিংস অবস্থায় দেখেছিলাম। একটু আগে মনে হল ওকে নিচে দেখলাম। তাই দেখার জন্য গিয়েছিলাম নিচে।
_ ও আচ্ছা। খুব সুন্দরী হবে নিশ্চয়। নইত কি আমার ছেলে পিছে ছুটে? কিন্তু বাবা আমার ভাল লাগল না। ড্রিংক করা মেয়ে..
_ মম তুমি যা ভাবছ তা কিন্তু না।

_ হলেও ভালো না হলেও ভালো। আমার তো একটা কিউট মেয়ে হলেই চলবে।
_ মম.. আচ্ছা ঠিক আছে তোমাকে একটা কিউট মেয়েই এনে দেবো। হেপি?
_ হেপি। রাখছি।
_ হুম।

সারাদিনের কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে ক্লাবটির সামনে গাড়ি থামায় রাসেল। ক্লাব টি কে পাস করে অফিসে যেতে হয় তার। কনফিউশনে ভুগছে রাসেল। যাবে কি যাবে না ভেবে বার বার অস্থির হয়ে উঠছে। মেয়েটি তার এপার্টমেন্টের সামনে গিয়েছিল কিনা খুব জানতে ইচ্ছা করছে। আর না ভেবে ভেতরে ঢুকেই গেল সে। পুরো ক্লাব খুঁজেও তার মাতাল পরীকে পেল না। সেদিনের সার্ভেন্ট টিকে খুজে লাবিবার কথা জিজ্ঞাসা করে। সার্ভেন্ট টি তাকে জানায় _ লাবিবা একটু আগে চলে গেছে।তাদের রেগুলার কাস্টমার লাবিবা। এখানকার হাইস্ট লেভেলের রেড় ওয়াইন গুলো ওর জন্য বরাদ্দ করা থাকে। উইক এ সিক্স ডে এই ক্লাবে আসে।

রাসেল আশাহত হয়ে ফিরে আসে। মাতাল পরী নামটা ঠিকি দিয়েছে। এত মদ কিভাবে খায় মানুষ আল্লাহ ই যানে। যারা ড্রাগস নেয় তাদেরকে পছন্দ করে না রাসেল। আর এই মেয়ে পুরো মাতাল জেনেও অপছন্দ করতে পারছে না। এক পলক দেখার জন্য মনটা অস্থির করছে।


পর্ব ২

অস্থিরতা বলতে গেলে তখনি কমে গেছে। তবুও দিন শেষে নিশিতে নিজ গৃহে ফেরার সময় পথে দৃশ্যমান ক্লাবটি একবার হলেও মাতাল পরীর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কিন্তু তাকে দেখার জন্য একটিবার নামা হয় না। পর পর দুদিন খোজ নেওয়ার পরও পায় নি তাকে। বার বার সার্ভেন্টের কাছ থেকে জানতে হয় মেম একটু আগেই বেরিয়ে গেল। নতুন কাজ শুরু করার জন্য খুব একটু বেশী সময় দিতে হচ্ছে.. তাই বেশ রাত করেই বাসায় যাওয়া হয়। এত রাতে মাতাল পরীর দেখা পাওয়া যাবে না জেনে আর ক্লাবে ডুকা হয় না।

আজ একটু আগেই ফিরছে বাসায়। ইচ্ছা ছিল আজ মাতাল পরীটাকে দেখবে। কিন্তু ক্লাব ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। একবুক হতাশা নিয়ে আবার ড্রাইভ করতে থাকে। আর বার বার একটা প্রশ্নের উত্তর খুজতে থাকে… কেন দেখতেই হবে মাতাল পরীকে? মাত্র একদিনের কয়েক মুহুর্তের জন্য সেই দেখায় কি এমন জোক ছিল যে গত নয় দিনেও ভুলতে পারলো না? পথের সেই ক্লাবটির জন্য? নাকি অন্যকিছু?

টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়তে থাকে। ভাবতে ভাবতে কখন যে ভুল করে অন্য রাস্তায় চলে এসেছে নিজেও যানে না। সরু রাস্তা দিয়ে একটা গাড়ি অনায়াসেই চলতে পারে। দুটো একসাথে চলতে গেলে খানিকটা রাস্তা চ্যুত হতে হয়। দু পাশে সারি সারি অজানা ফুলে ছেয়ে আছে। অমাইক পরিবেশ আর নতুন রাস্তা টা ভালো লেগে যায়। তাই গাড়ি ব্যাক না করে সোজা চলতে থাকে। রাস্তার দুপাশের সৌন্দর্য আর বৃষ্টি ভেজা রাত অদ্ভুত ভাললাগা অনুভব করতে থাকে।

হটাৎ চোখ আটকে যায় রাস্তার পাশে উচু বেদির উপর শুয়ে থাকা একজনের দিকে। বৃষ্টি তখন বিড়াল কুত্তার সাথে মারামারি করে ঝম ঝম আওয়াজ তুলে মাটিতে পড়ছে। কিছুটা চমকে যায় রাসেল। রাত প্রায় দুটোর দিকে এই বৃষ্টিতে অদ্ভুত ভাবে কে শুয়ে থাকতে পারে? মাথা না ঘামিয়ে আবার টার্ন করে কয়েক হাত এগিয়ে আর এগোতে পারে না। এই নির্জন রাস্তায় গাড়ি দাড় করানো| কিন্তু ড্রাইভিং সিটে তো কেউ নেই। তার মানে এখানে ঐ টা সত্যি একজন শুয়ে ছিল! লোকটার কোন বিপদ হয়েছে নাকি?

গাড়ি থেকে নেমে ছাতা মাথায় দিয়ে পেছন দিকে হাটা দেয় রাসেল। লোকটির দিকে এগুতেই পোশাকে বুঝে যায় এটি একটি মেয়ে। পাশে গিয়ে দাড়াতেই নিমেষেই মুখটা হা হয়ে যায়। বাতাসে ছাতা টা উরে কিছুটা দুরে গিয়ে পড়ে। এই মুহুর্তে হাসা উচিত নাকি কাদা উচিত তাই ভাবতে থাকে রাসেল। এটা কি ধরনের মাতলামি? নিশ্চয় মদ খেয়ে এখানেই পড়ে আছে। দু তিন বার ডাকার পরেও যখন কোন সাড়া না পায় তখন মাথায় হাত দিয়ে পাশেই বসে পড়ে রাসেল।

আরেকবার ডাকতে গিয়ে চোখ পড়ে যায় সেই স্নিগ্ধ মুখটার উপর। ঘোর লেগে যায় চোখে। বৃষ্টির ফোটা গুলো টুপ টুপ করে সারাশরীর মুখে ছুঁয়ে দিচ্ছে। অনেকক্ষণ ভেজার কারণে হয়ত চেহারা সাদা সাদা হয়ে গেছে। ভ্রু দুটো একটু খানি কুচকে একটা নিচে আর একটা উপরে উঠে আছে। ঠোঁট দুটো ও সাদা হয়ে গেছে। কিন্তু নাকটা প্রেমময় লাল আভায় ভরে আছে। নিজেকে কন্ট্রোল করা বড্ড দায় হয়ে যায় রাসেলের। আস্তে আস্তে লাবিবার দিকে ঝুকতে থাকে। নাকের ডগায় ছোট্ট একটা কামড় দিয়ে বসে।

আআআআআআআআআআআআআআ…

চিৎকারে উঠে বসে চোখ বন্ধ করে আবার চেচাতে থাকে_ ও আমার আল্লাহ..বাচাও বাচাও.. আমার নাক নিয়ে গেল গো.. ইন্দুর খালা ইন্দুর খালা আমার নাক নিও না প্লিজ প্লিজ প্লিজ.. চিকা মামী চিকা মামী দুরে সরে যাও হুস হুস|বাঁচাও বাঁচাও |
রাসেল কানে হাত চেপে কান দুটো বাচানোর চেষ্টা করল। কিন্তু এমন চিৎকার কান ঝালা পালা করেই ছাড়ল।
এবার রাসেল দিল এক ধমক

_”stop screaming drurk girl. Are you mad? Where are the chika and rets. It’s me. Look. Tanveer Khan.”

লাবিবা কতক্ষণ রাসেলের দিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর বলল
_ “আমি সত্যি বলছি… ইন্দুর চিকা এখানেই ছিল। আমার নাক কামড়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। এই দেখ..”
রাসেল খেয়াল করার পর তো আরো মরণ..

ছোট্ট কামড়টায় আরও লালচে হয়ে গেছে নাকটা। এখন তো খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে।
_ “কি করি … কি করি.. এখন তো নিজের উপর রাগ হচ্ছে.. কামড়ানো রোগটা কই থেকে উদয় হল আবার? আরে মাতাল পরি কিচ্ছু নেই ঐটা তো কামড়িয়েছে.. কামড়িয়েছে.. বৃষ্টি। বৃষ্টির ফোটা কামড়িয়েছে।”
নিজের কামড়ানো কথাটা বলতে পারে না। সেদিন ঘুম ভাঙ্গিয়েছিল বলে অনেকক্ষণ ভ্যা ভ্যা করেছে। এখন কামড় দেওয়ার কথা শুনে না জানি কি করে বসে। থাক বাবা। না বলাই বেটার।

“এত রাতে তুমি এখানে কি করছো হ্যান্ডসাম? তুমি কি ভুত? ভুত হয়ে লাভ নেই। আমি ভুতকে ভয় পাই না। হুহহ। তুমি ভুত কে তো একদমি ভয় পাই না। তোমার মত এত কিউট ভুত কে ভয় পাবার কোন কারণ ই দেখছিনা”। রাসেলের তো মাথা ঘুরছে। তবুও ঘুরতে দিচ্ছে না। কারণ সে তার মাতাল পরীর কথা শুনছে। মুখ থেকে কথার সাথে সাথে মদের স্মেল একটু একটু করে বেরিয়ে আসছে। তুমি যা করতে আসছ আমিও তাই করতে আসছি। আর তুমি অনেক সাহসী। গ্ৰেট। ভুত ভয় পাওনা। সাহসীরা শুনেছি আবার ইদুর চিকা ভয় পায়।তুমিও পাও। ভালো।
_ খুশিতে বাকবাকুম হয়ে.. ওমা তুমিও বুঝি বৃষ্টি খেতে আসছ? চল আমরা তাহলে এক সাথে বৃষ্টি খাই|
_ কিহহহ? তুমি বৃষ্টি খাওয়ার জন্য এইখানে এইভাবে শুয়ে ছিলে?

_ হামম হামম।
_ আজব আমজনতা|
কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ করে বৃষ্টি উপভোগ করল।
রাসেল আবার প্রশ্ন করল,
_ তুমি কিন্তু সেদিন বললে না তুমি কোন দেশি? বাংলা ভাষা কিভাবে জানো? কোন ধর্মী?

_ তোমায় কেন বলব? তুমি আমার কে? অপরিচিত কারো কাছে পরিচয় দেই না আমি।
_ okay. আমি রাসেল খান। বাংলাদেশী।মুসলিম। ঢাকা সাভার আমার হোমটাউন। বিজনেস এর জন্য কানাডায় অবস্থান করছি।
_ তো আমি কি করব?

_ নাহ এই মেয়ে একটা কথার ও সোজা উত্তর দিতে পারে না। ঘার তেরা মাতাল পরী একটা।
রাসেল লাবিবার একদম কাছে চলে যায়। একহাতে পেছন দিকে দুই হাত মুঠ করে ধরে আরেক হাত মুখের উপর চেপে ধরে। লাবিবা ছাড়ানোর জন্য মুচরা মুচরি করতে থাকে। কিন্তু পুরুশালী শক্তির কাছে পেরে উঠে না।

_ একদম নাড়াচাড়া করবে না। আর না করবে বক বক। আমি ঠিক যা যা প্রশ্ন করবো তাই তাই উত্তর দিবে।
_ উমম.. . উমম… উমম… উমম…
_ চুপ। দিবে কিনা বল?
লাবিবা মাথা নাড়িয়ে না করে
_ আবার বলছি দিবে কিনা বল?
_ উহু
_ লাস্ট বলছি। ইঁদুর কিন্তু…
_ হু হু হু।

_ that’s like a good girl. যাস্ট এনছার দিবে।
_ হু
_ তুমি বাংলাদেশী /ইন্ডিয়ান /মালেশিয়ান /কানাডিয়ান _ উম ..উম… উম..
_ ওহ। সরি। নাও এবার বল। (মুখ থেকে হাত সরিয়ে)

_ বাংলাদেশী।
_ বাংলাদেশের কোথায়?
_ জামালপুর।
_ কোন ধর্মী?
_ ইসলাম।
_ এখানে কি কর?
_ জব।
_ কি জব?
_ হোটেলের ফ্রন্ট ম্যানেজার।
_ good.
_ উফ তুমি খুব পচা। তোমার সাথে বৃষ্টি আর খাব না।
_ থ্যাঙ্কু।
গাড়ির কাছে গিয়ে দাড়িয়ে পড়ল লাবিবা।
_ আমার বেবি কোথায়? Baby.. Baby… Where are you baby?
_
_ এই আমার বেবি কই?
_ তোমার বেবি আছে?
_ হুম তো। কই রাখলাম?
_ …
_ এইতো পেয়েছি আমার বেবি সোনা কে।
রাসেল তাকিয়ে দেখে ওয়াইনের বোতল নিয়ে বেবি বেবি করছে। ওয়াইন বেবি।

রাসেল বাসায় পৌছতে পৌঁছতে ভোরের আলো ফুটে ওঠে। বাসায় ঢুকেই মমের ভিডিও কল রিসিভ করে। এতক্ষণ ড্রাইভিং করার জন্য ফোন রিসিভ করতে পারে নি। রাত থেকেই ফোন দিচ্ছে মম। আর অপেক্ষা করাতে পারে না। কিন্তু আজ বকা শুনতে হবে ভালো করেই যানে।
_ হ্যাঁ মম।

_ বৃষ্টিতে ভিজেছ… আগে চেঞ্জ করে আস তারপর কথা বলছি।
বাব্বাহ মম চিল্লানি দিয়ে উঠল না কেন? উনিশ থেকে বিশ হলেই তো মম প্রথমেই চিল্লানি দিত। আজ তো কিছুই বললো না।
চেঞ্জ করে এসে আবার জয়েন করল।
_ মম।

_ কত ক্ষণ ভিজেছ বৃষ্টি তে? মিথ্যা বলো না আমায়।
_ 2_6.30 . পর্যন্ত।
_ তা কেমন হলো প্রিয়তমার সাথে বৃষ্টি বিলাস?
_ মমমম…
_ আ্যন্টিবায়োটিক খেয়ে নিও। নইত ঠান্ডা লেগে যাবে। আর আমার সাথে মিথ্যা বলার প্রয়োজন নেই। আমার পুত্রবধূ সাথে থাকলে আমার পুত্র যা ইচ্ছা তাই করতে পারে।
_ মম তুমি যা ভাবছ…

_ থাক আর বলতে হবে না। তো তোমার মাতাল পরীটাকে কি আমার দেখার সৌভাগ্য হবে?
_ কিভাবে? আমার সাথে তো আজ নিয়ে দুদিন কথা।
_ ওকে এখন ব্রেকফাস্ট করে নাও।
_ ঠিক মত ওষুধ খেও। আল্লাহ হাফেজ।

মাথাটা প্রচন্ড ধরেছে। তাই একটু ঘুমের প্রয়োজন। অফিসে জানিয়ে দেয় আজ যেতে পারবে না। ব্রেকফাস্ট করে রেস্ট নেয়।


পর্ব ৩

কোর্টে মক্কেল এর সাথে আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে আছে বৃষ্টি। বার বার ফোন ভাইব্রেট হয়ে হয়ে কেটেও যাচ্ছে। সেদিকে খেয়াল করেও করতে পারছে না। শেষ মেষ একটু ফ্রি হলো। ফোন হাতে ধরে ওমনেই কল ব্যাক করলো।
_ হ্যালো মম। সরি। একটু বিজি ছিলাম।
_ তুহান এসেছে।
_ কতক্ষণ?

_ প্রায় দু ঘন্টা।
_ আমি এক্ষুনি আসছি মম।
ফোনটা কেটে দেয়। ড্রাইভার কে গাড়ি চালু দিতে বলে পেছনের সিটে বসে পড়ে। আনন্দে তার চোখ মুখ প্রস্ফুটিত হয়ে গেছে। দীর্ঘ পাঁচমাস পর তুহান বাড়ি ফিরেছে। প্রত্যেক বার এমনি হয়। তিন মাস চার মাস পাচমাস পর পর তুহান বাসায় আসে। এই মাসের পর মাস বৃষ্টি অপেক্ষায় থাকে তার স্বামীর জন্য।

তবূও মাঝে মাঝে কিছু কারনে কাছে পাওয়া হয়ে ওঠে না স্বামী কে। এরেঞ্জ ম্যারেজ হয়েছিল বৃষ্টি আর তুহানের। প্রেমটা বিয়ের পরই হয়ে ওঠে। তুহান হচ্ছে বৃষ্টির জীবনের প্রথম পুরুষ _প্রথম প্রেম। বিয়ের দু মাস পর আর্মিতে জয়েন করে তুহান। তার পর থেকে শুরু হয় তুহানের দেশের জন্য লডে যাওয়া আর বৃষ্টির সারাদিনের ব্যস্ততার শেষে স্বামী কে একটি বার দেখার.. একটু কাছে পাওয়ার ছটফটানি। আজকাল এমন স্বামী পাগল খুবই কম পাওয়া যায়। তুহান তার কলিজাটা চাইলে যেন তাই বের করে দেয়।

গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে বাসায় ঢুকে বৃষ্টি। ঢুকেই দেখে তুহান টেবিলে লাঞ্চ করছে আর মম তার পাশে বসে ছেলের সাথে গল্প করছে। সেখানেই দাড়িয়ে দু চোখ ভরে স্বামী কে দেখতে থাকে বৃষ্টি। কত মাস পর সে দেখছে… বৃষ্টিকে ওভাবে দাঁড়াতে দেখে সোহানা বলে
_ ওইতো বউমা চলে আসছে। বউমা ফ্রেস হয়ে আস আগে। যাও।
মমের কথায় তুহান একবার বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয়।

তুহানের এমন ব্যবহারে কিছুটা মন খারাপ হয় বৃষ্টির। এতদিন পর দেখা। একটু চোখে চোখ রেখে ভালবাসা মিশ্রিত হাসি দিবে| এইটা সবাই আশা করে। বৃষ্টিও করেছিল। কিন্তু পরক্ষণেই মন ভালো হয়ে যায়। দেরি করে আসার জন্য হয়ত তার মি. অভিমান করেছে ভেবে। সময় নষ্ট না করে ফ্রেস হতে চলে যায় রুমে।

বৃষ্টি আসতেই সোহানা নিজের রুমে চলে যায়। পাশের চেয়ার টেনে বসে পড়ে বৃষ্টি। খাবার বাড়তে বাড়তে তুহানের দিকে তাকিয়ে বলে
কেমন আছো? ..
_ আমি কিন্তু একটু আগেও ভাল ছিলাম না। কিন্তু এখন পৃথিবীর সব থেকে বেশী ভালো আমিই আছি।তুমি পাশে আছ তাই।
…. রাগ হয়েছে তোমার? অভিমান করেছ আমার প্রতি?
_ না এলেই পারতে।

_ ও আচ্ছা এই ব্যপার। এর জন্য সেনাপতির মনে অভিমান জমেছে? তো সেনাপতি একবার আপনার বিবির দিকে তাকিয়ে দেখুন.. আপনার বিবি আপনার জন্য কতটা আকুল হয়ে আছে। আপনার কথা শুনা মাত্রই সব কাজ ফেলে চলে এসেছে।
_ তা তো দেখতেই পাচ্ছি। ফোন ধরার আধঘন্টার মধ্যে বাসায় উপস্থিত।
_ কাল সকালে যখন কথা বললাম তখন বললে না কেন বাসায় আসছো?
_ একদিনের ছুটি পেয়েছি। মমের শরীর খারাপ তাই দেখতে এলাম।

_ মমকে সিঙ্গাপুর নিতে বলছিল রাসেল। তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে।
_ আমার সময় নেই। রাসেল আসুক তারপর নিয়ে যাক।
_ মমের শরীর কিন্তু দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। তারাতারি অপারেশনটা করা উচিত।
তুহান কিছু না বলে উপরে চলে গেল।

রাত আটটা বাজে। রাসেল গাড়ি নিয়ে বের হয়। উদ্দেশ্য ক্লাব মাতাল পরীর দেখা পাওয়া। মাতাল পরীকে দেখলে অদ্ভুত ভাললাগা কাজ করে। কেন এই ভাললাগা? বিদেশের মাটিতে নিজ দেশীয় কাউকে পেলেই যেন ভাললাগে। হয়ত তাই বার বার মাতাল পরীর সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে। আরো অনেক বাংলাদেশী এখানে সেটেল। কিন্তু তাদের খোঁজ কেইবা করে !?

ক্লাবে ঢুকতেই দেখা হয় সেই সার্ভেন্ট টির সাথে। সার্ভেন্ট টি রাসেল কে দেখেই মুখ প্রশস্ত করে বলে

_ hello Sir. The girl you were looking for is here today.
_ where is she?
_ come with me.

রাসেল পিছু পিছু গিয়ে দেখে একটা টেবিলে খালি ওয়াইন বোতল নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখছে। সার্ভেন্ট টি বলল

_ mam. This guy is looking for you.
_ oh. You can go.

সার্ভেন্ট টি চলে যেতেই লাবিবা রাসেল কে বসতে বলল ইশারা করে।
_ তুমি কি জানো তোমার র জন্য আমি দুইদিন ওয়েট করেছি| নাম বলে যেতে পারো না?
_ সিরিয়াসলি? আমি সরি। আমি আসলে কাজের চাপে আসতে পারি নি।
_ আমাকে খুজছ কেন?

_ না এমনি.. কিছুনা।
_ (কাদো কাদো হয়ে) এত কিছু কেন জানছেন? কেন পিছু ছাড়ছেন না? আমি কি আপনার কোন ক্ষতি করেছি? আপনি কি আমার ক্ষতি করতে এসেছেন? রিভেঞ্জ নিবেন? আমি তো আগে কখনো আপনাকে দেখিই নি। আর বিডি তেও জানামতে কারো ক্ষতি করি নি।আমি নির্দোষ। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দেন।
_ হা হা হা হা… আরে তেমন কিছুই না। তুমি আমার দেশের লোক তাই তোমার সাথে কথা বলতে আসি।

_ এখানে তো অনেক বাঙালি আছে। ওদের রেখে আমার সাথে কথা বলতে আসেন কেন? প্রেমে পড়েছ আমার?
লাবিবার কথা শুনে রাসেল কেশে উঠে। লাবিবা খুব উৎসুক ভাবে রাসেলের উত্তরের অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু রাসেল চুপ করে থাকে। উত্তর না পেয়ে আবার বলে
_ আমার প্রেমে পড় আর নাইবা পড়.. আমি কিন্তু তোমার প্রেমে পড়েছি। বাঙালীর এক কথা।
_ কিহ?

_ জি।
সার্ভেন্টকে ডেকে
hello brother pack ten bottles baby for me. OK mem.
রাসেল দশ বোতলের কথা শুনে বলে
_ তোমার এখনো খাওয়া শেষ হয়নি? দশ বোতল কিভাবে খাবে?
মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে

_ একচুয়েলি বাসার বেবি গুলো শেষ হয়ে গেছে। তাই নিয়ে যাচ্ছি।
_ ওহ।
রাসেল আর কিছু বলে না। শুধু ভাবতে থাকে দশ বোতল মদ কয়দিনে শেষ করবে? আজ রাতেই কি সব শেষ করবে নাকি কালও খাবে? কিন্তু জিজ্ঞাসা করা হয়ে উঠেনা। কারন এতক্ষণে লাবিবা চলে গেছে।

ডিনার শেষ করে তুহান, বৃষ্টি, সোহানা ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছে। এর মধ্যেই রাসেলের ভিডিও কল আসে।
সোহানা কল রিসিভ করে। রাসেল ভাই ভাবি মমকে একসাথে দেখে খুশি হয়ে যায়।
_ ভাইয়া কখন আসছো তুমি?

_ দুপুরে। কেমন আছিস?
_ আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?
_ ভালো।
_ আমি কিন্তু খুব রাগ করব এখন।
_ কেন?

_ তোমরা সবাই একসাথে। আর আমি নেই।
_ হা হা হা। পাগল একটা। তুই আয় তারপর আমি এসে ফেমেলি ফুলফিল করব বাড়ির ছোট বউ এনে।
_ ভাইয়া|
_ হুম। তুই এলে মমের অপারেশনের জন্য সিংগাপুর পাঠাব। আমার সময় নেই জানিস ই তো। নইত আমিই নিয়ে যেতাম।
_ ততদিনে দেরি হয়ে যাবে তুমি একটু ছুটি নিয়ে যাও প্লিজ।

_ আমার ছুটি নেই।
_ কি বল? তুমি ছুটি কাটাও নি। অনেক ছুটি জমা পরে আছে তোমার।
_ বাদ দে এসব। শুনলাম তুই নাকি কোন মাতাল পরীর প্রেমে পড়েছিস?
_ আরে না। মম বলেছে তাইনা? ওসব কিছুনা। এমনি একটু কথা বলি।
_ বুঝি বুঝি। প্রেমে পড় ভালো কথা। কিন্তু মদ খেয়ে মাতলামি করবে এমন মেয়ের প্রেমে পড়া থেকে দুরে থাক। বিয়ের বয়স হয়েছে যখন ভাল মেয়ে দেখে প্রেম করে বিয়ে করে নাও। আমরাও মেয়ে দেখার ঝামেলা থেকে বাচি। বুঝলে?
_ হ্যাঁ ভাইয়া।

_ হুম। বুঝলেই ভালো। মাতাল ঠাতাল নিয়ে আর যাই হোক সংসার করা যায় না। পারফেক্ট পার্টনার চাই লাইক আওয়ার।
_ তোমরা কি হেপি?
_ মানে?

_ কয়েকমাস পর পর দুইদিনের জন্য পারফেক্ট পার্টনারের সাথে দেখা হলে ওইটাকে সংসার বলা যায় না। বউকে নিজের সাথে কোয়ার্টার এ নিয়ে যেতে পারো তো। মম কে আমি দেখবো।
_ নিজেরটা নিয়ে ভাবলেই ভালো হয়। রাখছি।

ফোনটা রেখে তুহান উপরের রুমে চলে যায়।
বৃষ্টি শোবার জন্য রুমে গিয়ে দেখে তুহান সিগারেটের ধোয়া উরাচ্ছে। বৃষ্টি একটানে হাত থেকে সিগারেট কেড়ে নিয়ে জানালা দিয়ে ফেলে দেয়।
_ তোমাকে কতদিন বলেছি এসব ছাইপাশ খাওয়া বন্ধ করতে। এখনো নেশা ছাড়তে পার নি।
_ ছাড়তেও চাই না।

বৃষ্টি কাছে গিয়ে কোলে বসে দুহাতে গলা জড়িয়ে আদুরে গলায় বলে
_ আমি জানিতো তোমার একা লাগে তাই তুমি এসব ছাইপাস খাও। আমায় নিয়ে চলনা প্লিজ। তাহলে তো তোমার এসব কিছুই খেতে হবে না। আমি সব ভুলিয়ে দেব তোমায়। আমি থাকতে পারবো না আর তুমি ছাড়া। আমার তোমাকে প্রয়োজন জান.. I need you.

তুহান চুপ করে থাকে। বৃষ্টি তুহানের কপালে ভালবাসার পরশ একে দেয়। গালের দিকে এগোতেই তুহান বৃষ্টিকে সরিয়ে দেয়। বৃষ্টি আবার এসে জড়িয়ে ধরে বলে
_ I love you tuhan. I need you. I want you. কত দিন পর তুমাকে পেলাম.. আমার সব জমানো ভালোবাসা তোমায় ঢেলে দিয়ে আমি হালকা হতে তাই তুহান.. ভালোবাসতে দাও আমায়|
তুহান বুকে জড়িয়ে নেয় বৃষ্টিকে। একের পর এক ভালবাসার পরশ একে দেয়।

সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে তুহানের বুকে দেখে লজ্জা পেয়ে যায় বৃষ্টি। ভালোলাগার মুহূর্ত গুলো মনে উকি দিতে থাকে। এভাবে প্রতিটি সকাল ভালোলাগায় মাখামাখি হয়ে থাকতে চায় সে। কিন্তু আজই উনি চলে যাবেন মনে হতেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। নিয়তি মানতেই হবে। উঠে বাথরুমে গিয়ে সাওয়ার নিয়ে ব্রেকফাস্ট রেড়ি করতে কিচেনে যায়।


পর্ব ৪

সুন্দর একটা নীল গাউন পরে চারিদিকে ছড়িয়ে দিয়ে গাড়ির উপরে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে শুয়ে গুন গুন করে গান গেয়ে চন্দ্রবিলাস করছে লাবিবা। মাঝে মাঝে বোতলে একটা করে চুমুক দিচ্ছে। গান ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে চাঁদের দিক চেয়ে রইল।

“আচ্ছা চাদ মামা তুমি তো একটা রুপোর প্লেটের মত দেখতে। কি আছে তোমার মাঝে যে এত কবি দার্শনিক তোমার রুপের এত গুণ কীর্তন করে? করবেইতো। তুমি না সত্যিই খুব সুন্দর। তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে লাইক মাই বেবি। দেখ তোমাকে কত উজ্জল লাগছে। আজ যদি পূর্নিমা হত তাহলে তুমি পূর্নতার সৌন্দর্য ছড়াতে।আর সবাই তোমার সৌন্দর্য উপভোগ করতো। কিন্তু আজ তোমার একপাশে একটু অপূর্ণতার জন্য আমি ছাড়া কেউ উপভোগ করছে না। আজ তুমি অপূর্ণ কাল তো ঠিক ই পূর্ণতা পাবে। সবাই তোমাকে ভালবাসবে। আমিওনা আজ অপূর্ণ তাই কাল তোমার মত পূর্ণ হতে চাই। ভালবাসা চাই। নিজের সৌন্দর্য কাওকে উপভোগ করাতে চাই। তোমার মত কারো প্রিয় হতে চাই।”

আহহহহহ||
পাশে দিয়ে একটা গাড়ি চলে গেল। লাবিবার হাত গাড়ির বাইরে ছিল। হাতে কাচের ওয়াইনের বোতল থাকায় গাড়ির ছোয়া লেগে কাচ ভেঙ্গে হাতে ডুকে পড়ে।
একলাফে গাড়ির উপর থেকে নেমে নিচে পড়ে থাকা ভাঙা ওয়াইনের কাচের বোতল তুলে একটু দৌড়ে ছুড়ে মারে গাড়ির দিকে।
“হে রাসকেল, ইতর ,কানা হুলো বিড়াল দেখে চালাতে পারিস না গাড়ি? তোর বাপের রাস্তা দিয়ে চলিস? সালা মানুষ মারবি নাকি? এত রাতে ফুর্তি করে বাড়ি ফিরছিস নাকি? সালা মদ খাওয়া মাতাল”

বাসার দিকে ফিরছিল রাসেল। গাড়ির সামনে একটা গাড়ি আর একটা মেয়ের চেঁচানো শুনতে পায়। গাড়ি দেখে আর চেচানো গলা শুনে চিনতে বাকি থাকে না যে কে হতে পারে এটা। গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে লাবিবার কাছে গিয়ে দাড়ায়।
_ মাতাল পরী ( ধমক দিয়ে )। চেচাচ্ছ কেন? রাস্তায় দাঁড়িয়ে কি ধরনের মাতলামি এটা?
_ আমায় ধাক্কা দিয়েছে গাড়িটা (কাদো কাদো গলায়)।

_ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে থাকলে দিবেইতো। কান্না বন্ধ করো। এদিকে আস দেখি …
হাত ধরে কাছে টানতে গেলে লাবিবা আহহহ করে উঠে।
_ কি হয়েছে? দেখি|

খেয়াল করে দেখলো হাত থেকে রক্ত ফোটা ফোটা করে পড়ছে। চোখের ফোটা আর রক্তের ফোটা গড়িয়ে একাকার। মাথা ঘুরে যায় রাসেলের। রক্ত লাবিবার হাত থেকে পড়ছে নাকি তার হৃদয় থেকে পড়ছে বুঝতে পারছে না। এই মুহুর্তে ইচ্ছে করছে ঐ কেয়ারলেস ড্রাইভার কে স্টিক দিয়ে পিটিয়ে সোজা করে দিয়ে আসতে।
রুমাল বের করে হালকা করে চেপে ধরতেই লাবিবা ব্যথায় কান্না শুরু করে দিল। রাসেল তাড়াতাড়ি রুমাল সরিয়ে খেয়াল করল কাচের টুকরো গুলো লেগে আছে। অন্য হাত ধরে রাসেল গাড়ির কাছে এনে বলল
_ গাড়িতে উঠ।

_ আপনার গাড়িতে আমি উঠব কেন?
_ উঠতে বলেছি তাই উঠবে (কিরমির করতে করতে)
লাবিবা গাড়িতে উঠে বসে। রাসেল ও উঠে বসে ফাস্ট এইড বক্স বের করে।
_ এইটাতো আমার গাড়িতেও ছিল। তাহলে আমার গাড়িতেই যাই। বলে উঠতে নিলে রাসেল দরজা আটকে দেয়।
_ এত বক বক কর কেন? চুপ করে বসে থাক।

রাসেল চিমটার সাহায্যে কাচ গুলো তুলে নেয়। আর এইদিকে লাবিবা চোখের জলে নাকের জলে এক করতে করতে রাসেলের দিকে তাকিয়ে আছে। রাসেল রক্ত পরিষ্কার করে ঐষধ লাগাতে থাকে। আর বার বার উপরে তাকিয়ে লাবিবাকে দেখতে থাকে।
_ এতো কেয়ারলেস কেন তুমি? কি ছাই পাশ খেয়ে খেয়ে মাতলামি করো| এভাবে চললে একদিন দেখবে একটা ক্ষতি করেই বসেছ। এগুলো কি ঠিক?

_ I love you.

হাত আটকে যায় রাসেলের। লাবিবার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বুঝতে চেষ্টা করে।
_ আজ কি একটু বেশিই খেয়েছ নাকি?

_ উহু। I love you.

_ বুঝেছি নেশা বেশি হয়ে গেছে। _ যাস্ট এক টা বেবি খেয়েছি।
_ মিথ্যা বলো না। যেভাবে ডুলছো মনে হচ্ছে না।

_ আমি মিথ্যা বলি না। really love you. You are only my handsome. Trust me . I need you .
_ মাতাল পরী.. চুপ থাক।

_ love you.

রাসেল বেশ বুঝতে পারছে লাবিবার নেশা হয়ে গেছে। হাতে ঔষধ লাগিয়েছে কিন্তু গাড়িতে ব্যান্ডেজ নেই। কোন কিছু না ভেবে লাবিবার গাউনের একটা কোনা ছিড়ে ফেলে।
_ আআআআআআআআ|… আমার ব্লু ড্রেস ছিড়ে দিল
_ থামাও তুমি কান্না। রুমাল তো নষ্ট করেছি। এখন বেন্ডেজ করবো কি দিয়ে? তাই ছিড়েছি।
_ আমার ফেভারিট ড্রেস টা ছিড়ে দিল গো অর্ডার দিয়ে একটাই বানিয়ে এনেছিলাম গো মলে এই ড্রেস টা আর নাই গো আমি এখন কই পাব গো।
_ আরে মা আমার চুপ কর। এর থেকেও সুন্দর ড্রেস কিনে দিব।

_ তুমি আমায় মা ডাকলে কেন? আমার তো বিয়েই হয়নি তাহলে ছেলে হল কবে। আমি তো এখন মা হব না। আমি এখন বউ হবো তারপর মা। আর তোমার কেনা ড্রেস আমি কেন নিব? তুমি আমার কে?
_ ও মাই গড। একটু আগেই বলল love you আর এখন বলছে তুমি আমার কে?
_ ও তাই তো। এখন তো you my handsome .তুমি দিলে নিতেই পাড়ি।
_ বাজে বকা বন্ধ করো। চল তোমায় বাসায় দিয়ে আসি।

_ আমি একাই যেতে পারি।
_ কেমন ঢুলছ তুমি। পারবেনা। চল আমার সাথে।
_ উহু আমি পারব।
গাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় লাবিবা। রাসেলের কথা না শুনেই নিজে গাড়ি চালিয়ে চলে যায়।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে সোহানা খান। হার্টের পেইন অতিরিক্ত হারে বেড়ে যাওয়ায় তুহান আর বৃষ্টি হাসপাতালে নিয়ে আসে তাকে। মমের অসুস্থতার জন্য আজ আর যাওয়া হয়ে উঠে না তুহানের। মমের পাশে বসে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলছে বৃষ্টি। বিয়ের পর খান বাড়িতে এসে শাশুড়ি কে নয় একজন মা কে পেয়েছিলো বৃষ্টি। মায়ের মতই আগলে রাখতো তাকে। তারপর যখন নিজের মা মারা গেল তখন তো দুইমায়ের আদর এক মা ই করত। রাসেলের আর তুহানের ভালবাসা আর মমের মমতায় অনেক হাসি খুশি সুখে দিন কাটত তার। মাঝখান থেকে তুহান টা চাকরিতে জয়েন করে চলে গেল। আর এখন রাসেল ওই দুরে চলে গেল। মম কে নিয়েই যেন তার সংসার। এই মানুষ টার কিছু হলে কিভাবে থাকবে সে?

সোহানা পিট পিট করে চোখ খুলে তাকিয়েছে। বৃষ্টি দেখে শক্ত করে মমের হাত ধরে বলে
_ মমমম… ঠিক আছ?
_ ঠিক আছি। কাদছিস কেন পাগলী মেয়ে? এইতো দেখ আমি দিব্বি কথা বলছি।
_ কথা বলো না মম। তোমার কষ্ট হচ্ছে আমি জানি।
_ তুহান চলে গেছে?

_ না মম যায়নি। তোমাকে হসপিটালে ভর্তি করেছে। ডাক্তারের সাথে কথা বলতে গেছে।
_ রাসেল?
_ ওকে জানায়নি মম। অনেক চিন্তা করবে। জানইত তোমার জন্য কতটা পাগল।
_ হুম।

তখনি ডাক্তার আসে সাথে তুহান ও আছে।
_ হ্যালো মিসেস খান। নাউ ইউ আর ওকে। নতুন প্রেসক্রিপশন করে দিচ্ছি। আর খুব তাড়াতাড়ি অপারেশনটা করিয়ে নিন।
_ থ্যাংকস। আমি কি বাসায় যেতে পারব?
_ ইয়েস। ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম।

বাসায় এসে বৃষ্টি মম কে শুইয়ে দিয়ে রেস্ট নিতে বলে লাইট অফ করে চলে আসে।

তুহান খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। বৃষ্টি পাশে এসে বসে বলল
_ ছুটির জন্য আবেদন কর। তোমার অনেক ছুটি জমা হয়ে আছে। মমকে তাড়াতাড়ি অপারেশন টা করাতে হবে।
_রাসেল আসুক।

_ রাসেল আসতে অনেক দেরি। মমের সাথে তুমি যাও না প্লিজ।
_ রাসেল কে বল চলে আসতে। আমার ছুটি হবে না।
_ রাসেল কিভাবে আসবে? ও নতুন প্রজেক্টের কাজ শুরু করেছে।
_ তাহলে ওয়েট করো।
বৃষ্টি আর কিছু বলতে পারে না। জানেই তুহান যা বলবে তাই করবে।কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।


পর্ব ৫

লাগেজ নিয়ে ড্রয়িং রুমে হাজির হয় তুহান। ড্রাইভার কে বলে লাগেজ গাড়িতে তুলে দিতে। মমের কাছে বিদায় নেওয়ার জন্য মমের রুমে যায়। সোহানা খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে। তুহান পাশে গিয়ে বসতেই সোহানা ছেলেকে বুকে টেনে নেয়। মাথায় হাত দিয়ে আদর করে দেয়।
_ মম নিজের খেয়াল রেখ। মনে জোর রাখ। তুমি সুস্থ হয়ে যাবে।
_ হুম তুমিও ভালো থেক সবসময়। সাবধানে যেও।
_ হুম। আসি। ঠিক মত ওষুধ খেও।

_ আচ্ছা বাবা।
বৃষ্টি এতক্ষন দরজায় দাড়িয়ে ছিল। তুহান বেড়িয়ে গেলে সেও তুহানের পিছে পিছে গেইট অব্দি চলে আসে। স্বামী চলে যাওয়াতে তার মুখ কাল হয়ে আছে। রাজ্যের অন্ধকার নেমে এসেছে যেন। তুহানের একটা হাত পেছন থেকে টেনে ধরে। তুহান দাঁড়িয়ে যায়। ভেজা চোখ দুটো তুলে তুহানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে
_ আবার কবে আসবে?
_ জানি না।

_ ছুটি পেয়েছ তুমি। শেষ না হতেই চলে যাচ্ছ।
_ দরকার আছে।
_ আমাকে কি নিয়ে যাওয়া যায় না?
_ তুমি একজন এডভোকেট। কাজ ছেড়ে দিয়ে পাহাড়ে গিয়ে কি করবে?
_ কেন.. তুমি আছ ওখানে। আমার তোমাকে প্রয়োজন তুহান। আর কিচ্ছু না।
_ দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। আসি। ভালো থেক।

তুহান চলে গেলে বৃষ্টি গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। ফ্লোরে বসে অনেকক্ষণ কাদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে। প্রত্যেক বার তুহান চলে গেলে এই কাজটাই করে বৃষ্টি। যতক্ষণ না পর্যন্ত ঘুমোবে ততক্ষণ পর্যন্ত কাদতেই থাকে। এটা সোহানা খুব ভালো করেই জানে। তাই আর বৃষ্টি কে ডাক দেয় না। ঘুম ভাঙলে নিজেই রুম থেকে বের হয়ে আসবে।

সন্ধ্যায় রাসেল বাসায় এসে দেখে খাবার প্রায় শেষ হয়ে আছে। স্টোরে যেতে হবে।গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। একটা স্টোরে ঢুকে পড়ে। ট্রলি নিয়ে যা যা প্রয়োজন চুস করে নিতে থাকে। স্টোরটিতে এই ফাস্ট টাইম এসেছে রাসেল। তাই ভিতরটা একটূ ভাল করে দেখতে থাকে। স্টোরটি বেশ বড়। এখানে সব আইটেম ই আছে। কাঁচামাল থেকে শুরু করে ড্রেস a to z collection আছে এখানে। মিডিল গ্রাউন্ডে বেবিদের জন্য খেলার ব্যবস্থাও করা আছে।

বাচ্চা নিয়ে এলে এখানে বসিয়ে নিশ্চিত হয়ে শপিং করতে পারবে। বিডিতে শপ গুলোতে এরকম ব্যবস্থা করলে অনেক ভালো হয়। যেহেতু বাচ্চার সংখ্যা প্রচুর। আর তাদের নিয়ে শপিং করতে মায়েদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়।
ভেজিটেবল ডিপার্টমেন্টে ঢুকতেই মাথায় বল জাতিয় কিছু এসে লাগে। সামান্য ব্যথা পেয়ে আহ করে উঠে। পাশে থেকে একজন স্টোর গার্ল এসে জিজ্ঞাসা করে _

_ Any problem sir?
_ who is throwing in the store like this? Don’t see? What do you do?
_ so.. Sorry sir. I’m watching|
_ call him that he has done this. আজব আমজনতা।

_ স্যার আপনি বাঙালি?
_ হ্যাঁ।
_ আমিও বাঙালি। ইন্ডিয়ান।
_ বাংলাদেশী। দেখ কে করেছে এসব।
_ yes sir.

“ঐ লাবিবা.. কি করছিস কি তুই? তোর জন্য একজন আমার ঊপর রাগ দেখালো। একজনের মাথা তো ফাটিয়ে দিয়েছিস। এবার বুঝি আমার চাকরিটা গেল।”
“ঐ নুপুরির বাচ্চা চুপ কর তো। শান্তি মত একটু নিশানা প্রেকটিজ করতে দে।”
“তো এখানে কেন? এটা স্টোর বাবা..”

“তার জন্যই তো এখানে প্রেকটিজ করছি। বাইরে এই কানচা কানচা সবুজ সবুজ টমেটো গুলো কই পাব বল?”
“লোকটা তোকে ডাকছে। মাথায় ব্যাথা পেয়েছে।”
“আহারে বেচারি.. নে.. আমার এই বেবিটা দিয়ে বিদায় কর যা”।
“তোর এই অর্ধেক খাওয়া ওয়াইনের বোতল দিচ্ছিস। তোর মত সবাই কি ওয়াইন খায় নাকি? তোকে ডাকছে চল…”

রাসেল দেরি দেখে রাগে ফুসতে ফুসতে এগিয়ে আসে। এসেই দেখে লাবিবার এক হাতে ওয়াইন আর আরেক হাতে টমেটো আর সামনে কিছুটা দুরে একটা বাসকেট। টমেটো দিয়ে ডিল টা তাহলে এর ই ছোড়া। নিমেষেই রাগ মাটিতে মিশে যায় রাসেলের। মাতাল পরী ক্লাব আর রাস্তা রেখে এখন গ্ৰোসারি ষ্টোরে।
রাসেল কে দেখেই লাবিবা একটা চিৎকার দিয়ে ওঠে।

এক দৌড়ে গিয়ে গলা জড়িয়ে কোলে উঠে পড়ে। রাসেল কোন মতে নিজেকে ব্যালেন্স করে নেয়। রাসেলের কপালে টুপ করে একটা চুমো দিয়ে দেয়।
এমন কিছু ঘটবে ভাবতেই পারেনি রাসেল।
_ ও মাই ইন্দুর হ্যান্ডসাম… তুমি এখানে এসেছো… আমাকে খুজতেই বুঝি এসেছ? ও মাই ইন্দুর হ্যান্ডসাম.. তোমার কপাল এখানে ফোলা কেন?
_ উমমম… গন্ধ.. লাবিবা নাম তুমি আগে। কি খেয়েছ এটা? বাজে স্মেল। আগে তো এই স্মেল পাইনি কখনও।
_ ও মাই ইন্দুর হ্যান্ডসাম.. এটা তো মার্কেটে নিউ এসেছে। আজি ফাস্ট টেস্ট করছি।

_ আর খাবে না এইটা। আর কখন থেকে কি ইন্দুর হ্যান্ডসাম ইন্দুর হ্যান্ডসাম করছো? আমাকে ইন্দুর হ্যান্ডসাম মনে হয়?
_ বারে|. ইন্দুর জন্যই তো আমার নাক কামড়ে খাও.. আর আমি ডাকলেই দোষ?
রাসেল কিছুটা আমতা আমতা করে বলে
_ ইন্দুর টা ক্রস করে দাও। আর কাটা হাতে বোতল ধরেছ কেন হুম?

_ ব্যথা তো কমে গেছে তাই। কপাল ফোলা কেন তোমার?
_ তুমিই তো ফুলিয়ে দিলে।
_ ইস ব্যথা পেয়েছ তাই না| অপফুউুউ অপফুউউউ|
_ কি করছো এইটা? এভাবে কি কেউ ফু দেয় নাকি? ফুটাও দিতে পার না?
_ আমি তো এইভাবেই দেই।

_ মন খারাপ করতে হবে না। বাসায় চলে যাও।
_ তুমার সাথে যাব।
_ নিব না আমার সাথে তোমাকে। গতকাল নিতে চেয়েছিলাম যাও নি আমার সাথে। বাই।
_ আ… চলেই গেল… ধুর… কাল ক্লাবে দেখা হচ্ছে কিন্তু।

ক্লাবের সামনে গিয়ে গাড়ি থামাতে গিয়েও থামায় না রাসেল।যাবেনা ভিতরে। দেখা করব না মাতাল পরীর সাথে। হাফ পাগল একটা মেয়ে। আজগুবি কারবার তার। একটা বার ও মদের বোতল ছাড়া দেখতে পেলাম না। আজকাল তো গন্ধ যুক্ত মদ খাওয়া শুরু করেছে। কাছেই যাওয়া যায় না। কেন যে এই মেয়ের কথা ভাবি আল্লাহ ই যানে। ভাবব না আর। থাকতেও তো পারবনা… কি করি|?

রাতে ভাল ঘুম হয়নি রাসেলের। তবুও জিদ করে ঘুমানোর চেষ্টা চালিয়ে গেছে। প্রচুর রাগ হচ্ছে লাবিবার প্রতি। এমন কেন মেয়েটা? এত সুন্দর একটা মেয়ে এরকম ছন্নছাড়া লাইভ কিভাবে লিড করে? একটু সুস্থ মানুষের মত আচরন করলে কেমন হয়? আমি যদি মদ খেতে না করি শুনবে আমার কথা? কেন খায় এত মদ? বাবা মা আটকাতে পারে না? উফফফ। আর ভাবব না মাতাল পরী কে নিয়ে। আই ওয়ান্ট টু স্লিভ নাউ… আই ওয়ান্ট টু স্লিভ।

সন্ধ্যায় কাজ শেষ করে অফিস থেকে নিচে নেমে গাড়িতে ওঠার জন্য গেইট খুলতেই দারোয়ান এসে বলে একটা মেয়ে ঐদিকে ডাকছে রাসেল কে। রাসেল একটু ভেবে এগিয়ে যায়।
একটা গাছের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে হুয়াইট একটা গাউন পরে হাতে রেড় ওয়াইন এর বোতল নিয়ে দাড়িয়ে আছে লাবিবা। রাসেল থ খেয়ে দাড়িয়ে যায় দেখে। তার কাছে রুপকথার ডানাহীন সাদা পরী মনে হচ্ছে লাবিবাকে। মনে হচ্ছে আকাশ থেকে মাতাল পরী টা মাটিতে তার জন্যই এসেছে। লাল টকটকে নাকটা যেন আরো সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে কাছে ডাকছে তাকে।

রাসেলকে দেখে লাবিবা রাস্তা দিয়ে আস্তে আস্তে হাটতে থাকে। রাসেল ও পিছু পিছু গিয়ে লাবিবার পাশে হাটছে। দুজনেই নির্বাক পথিক হয়ে হাটছে। লাবিবার নিশ্চুপ হয়ে থাকাটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে রাসেলের। ক্লাবে দেখা করতে বলেছিল রাসেল কে। দেখা না করার জন্য কি এই নিস্তব্ধতা? বুকের ভিতর খচখচ করতে থাকে রাসেলের। আর
চুপ করে থাকতে পারে না। আস্তে করে ডাক দেয় মাতাল পরী|.

রাসেলের আবেগ মিশ্রিত এমন ডাকে থমকে দাঁড়ায় লাবিবা। পেছন ফিরে একদম রাসেলের সামনে এসে দাঁড়ায়।
“রাসেলের চোখ চোখ রেখে চোখে চোখে অনেক কথা বলে| যা রাসেলের বুকে গিয়ে লাগে একদম।”
_ মাতাল পরী… I’m sorry.. আমি আসলে ইচ্ছা করেই তোমার সাথে দেখা করিনি।
_ আমি অপেক্ষায় ছিলাম। আমার সাথে মিশতে ভালো লাগে না তোমার? আমাকে ভালো লাগে না? দুরে থাকলে বুঝি খুব ভালো থাকো?
_ মাতাল পরী সরে দাড়াও প্লিজ।

_ কেন? আজ গন্ধ যুক্ত কিছু খায়নি তো।
_ তোমার লাল নাক টা একদম আমার সামনে|আমি বাইট দিয়ে দিতে পারি।
লাবিবা সরে দাঁড়ায়। নিচের দিকে তাকিয়ে বড় করে দুবার নিঃশ্বাস নেয়। আবার চোখে চোখ রেখে বলে
_ আমি তো গ্রহন করতে প্রস্তুত তোমার প্রত্যেক টা লাভ বাইট সর্বাঙ্গে|।

রাসেলের বুকে উথাল পাতাল শুরু হয়ে গেছে এই রুপী লাবিবাকে দেখে। নিজেকে সামলিয়ে বলে
_ তোমার হাত থেকে বোতলটা ফেলে দিতে পারবে সারাজীবনের জন্য?
_ এই বোতল টা কি জান? আমার বন্ধু। আমার আপনজন। আমার একমাত্র বেঁচে থাকার সাথী। এটা ফেলে দিলে কি নিয়ে বাঁচব আমি? আমার হাত যে ফাকা হয়ে যাবে। আমার তোমাকে প্রয়োজন। I need you. তুমি কি ধরবে আমার হাত? থাকবে আমার পাশে?

_ মাই হ্যান্ডসাম… একটু জড়িয়ে ধরবে আমায়? আমার খুব শূন্য শূন্য লাগছে।
এমন আবেদনময়ী চাওয়ায় রাসেলের নিঃশ্বাস আটকে যায়। আরেকটু থাকলেই যেন মরে যাবে.. বাঁচতে হবে তাকে। মাতাল পরী কে উপেক্ষা করে পিছু দিকে দ্রুত হেটে প্রস্থান করে।


পর্ব ৬

বাংলা বছরের প্রথম দিন আজ। পহেলা বৈশাখ উৎসব কানাডিয়ান বাঙালীরা খুব সুন্দর করে উৎযাপন করে। বাংলাদেশের মতই মেলা বসে জায়গায় জায়গায়। বাঙালীরা বাঙালী সাজে মেলায় ঘুরতে আসে। বিভিন্ন ধরনের আইটেম এর স্টল বসে।
রাসেল ভোর পাচটায় রেড়ি হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে। বের হবার আগে সোহানাকে কল দিতেই সোহানা রিসিভ করে বলে
_ শুভ নববর্ষ বাবা।

_ শুভ নববর্ষ মম। ফোন হাতেই রেখেছিলে। হা হা হা।
_ আমি তো ওয়েট করছিলাম কখন আমার ছেলের ঘুম ভাঙবে আর আমায় ফোন করবে।
_ হুম। টরোন্টো যাচ্ছি মম।
_ এখনি বের হবি?

_ অলরেডি গাড়ি তে বসে আছি।
_ হুম সাবধানে যাও। ফোন তো তুলবেইনা আজ মজার ভিতর থাকবে।
_ হুম। ভাইয়ার সাথে কথা হয়েছে আমার রাতে। আর জান পাখি কে শুভেচ্ছা জানিও।
_ তোর জান পাখির সাথেই কথা বল। বৃষ্টি.. বৃষ্টি.. এই নাও রাসেল কথা বলবে। বৃষ্টি রাসেলের কথা শুনে দৌড়ে এসে ফোন নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে। ফোন কানে নিয়ে বলে

_ জানপাখি| কেমন আছো তুমি? আমার মাতাল জা টা কেমন আছে? নিশ্চয় আজকে পহেলা বৈশাখ অনান্য বৈশাখ থেকে স্পেশাল ভাবে হবে.. আজ সারাদিন ডেটে যাবে বুঝি? কোথায় যাবে? অনেক গুলো ছবি তুলবে কেমন? আমি সব পিক চাই। দুজনকে কেমন মানায় তাই দেখব। বেশি কিছু করোনা কিন্তু… মাতাল পরী.. তার মধ্যে আবার আজকের দিন টা অন্যরকম হতে..
_ আল্লাহর ওয়াস্তে পা দুইটা ধইরা কই থামবা প্লিজ? মাথা ধরিয়ে ফেলছো।

_ ওহহ সরি সরি। একচুয়েলি বেশী..
_ এক্সাইটেড। বুজতে পারছি আমি।
_ হুম।

_ ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন.. শুভ নববর্ষ। আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তোমার মাতাল জা এর কোন খবর আমি জানি না। তুমি কোন পিক পাচ্ছ না। আর এত কিছু ভাবার কিছু নেই। ছেলে খারাপ না আমি। যথেষ্ট ভদ্র।
_ জানি আমি। এর জন্যই তো একটা প্রেম ও করতে পারলে না।

_ কাউকে পছন্দ হয়নি তাই করি নি।
_ মাতাল পরীকে তো ভালোই পছন্দ করে ফেলেছ। মেয়েটাকে দেখতে হচ্ছে তো.. কি এমন জাদু করল যে আমার জানপাখি সুর সুর করে তার পিছে দৌড়াচ্ছে।
_ ওহ. স্টপ দিজ জানপাখি। এসব কিচ্ছু না।
_ বুঝি বুঝি সব বুজি.. মুখে তো বলবেই.. কিন্তু মনে মনে তো মাতাল পরী মাতাল পরী নাম ঝপতেছ।
_ জানপাখি তুমিও না|। ফিক করে হেসে দেয় রাসেল।

কথা শেষ করে গাড়ি স্টার্ট দেয়। গন্তব্য টরোন্টোর মিনি বাংলাদেশ। …

বান্ধবীদের দেওয়া স্টল এর কাজে হেল্প করছে লাবিবা। তার দুজন বান্ধবী নুপুর আর শারমিন মেলায় স্টল দিয়েছে। নুপুর ঝালমুরি ,ফুসকা, চটপটি ইত্যাদির স্টল দিয়েছে আর শারমিন পিঠার স্টল দিয়েছে। পুরো মেলায় মুটামুটি ভালই ভিড় জমেছে। লাবিবা মানুষজন দেখছে আর ফাকে ফাকে একটু একটু কাজ করছে। আর মাঝে মাঝে গ্লাসে একটা করে চুমুক দিচ্ছে।

চোখ পড়ে যায় একটু দুরে গাড়ি পার্ক করে একজন গাড়ি থেকে বের হওয়ার উপর।
ব্লাক প্যান্ট হুয়াইট শার্ট সামনের বুকের উপর দুটো বোতাম খুলা ফ্লোল্ড করা শার্টের হাতা কলারে গোজা দেওয়া লাল কালার চিকন আনটাইড গলাবন্ধনী চোখে ব্লাক সানগ্লাস স্পাইক করা চুল উফফ|। মুখ থেকে নিমেষেই বেরিয়ে আসে। মাই হ্যান্ডসাম। জোরে চিৎকার করে বলে মাই হ্যান্ডসাম।
থমকে দাঁড়ায় রাসেল। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে দুর থেকে লাবিবা ভিড় ঠেলে দৌড়ে আসছে।লাবিবাকে দেখে তাভীরের হৃদপৃন্ড কাজ করা বন্ধ করে দেয় কিছু সময়ের জন্য।

লাল পাড় সাদা জামদানী শাড়ি মেচিং করা লাল ব্লাউজ দু হাত ভর্তি লাল কাচের চুড়ি লাল টকটকে কালার ঠোঁটে লিপস্টিক মোটা করে কাজল দেওয়া চোখ খোপা করা চুল ভর্তি লাল গোলাপ।
সব মিলিয়ে এক প্রকৃত বাঙালি উচ্ছল কিশোরীর মত লাগছে। এ যেন লাবিবার নতুন এক রুপ। এতোদিন রাসেল কখনো প্যান্ট শার্ট পরা পাশ্চাত্য দেশের স্টাইলিশ কন্যা কখনো ইংরেজ দের কালচারের গাউন পরা ইংলিশ ব্রাইড আবার কখনো রুপকথার পরী রাজ্যের মাতাল সাদাপরী রুপে লাবিবার দর্শন পেয়েছে। কিন্তু আজ নিজ দেশীয় বাঙালি মেয়ে হিসেবে দেখছে। খানিকটা বউ বউ ও লাগছে শাড়ি পরাতে।

মাতাল পরী কে দৌড়ে আসতে দেখে আগের ঘটনা মনে করে শক্ত হয়ে দাঁড়ায়। লাবিবা এসে এক লাফে গলা জড়িয়ে সোজাভাবে কোলে উঠে পড়ে। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে _ ইউ আর ওনলি মাই হ্যান্ডসাম।
লাবিবার খোপার গোলাপের স্মেল আর বডিস্প্রের স্মেল এ চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়। পাবলিক প্লেসে এমন রোমান্টিক সিন দেখে সবাই মুক্ত হাসি হাসতে থাকে। কেউ কেউ আবার ফোন বের করে ছবিও তুলতে থাকে।

লাবিবা রাসেলের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে রাসেল চোখ বন্ধ করে আছে। ঘোর লেগে যায় লাবিবার। আস্তে আস্তে ঠোঁটে ঠোঁট চাপিয়ে দেয়। আকস্মিক এমন ঘটনায় রাসেল চোখ খুলে দেয়। ঠোঁটে লেগে থাকা মদের স্মেল আর মদের মিষ্টি স্বাদ পেয়ে রাসেলের মাথা ঘুরে যায়। হাতের বাধন ফসকে যেতেই লাবিবা পড়ে যেতে নেয়। লাবিবা দু হাতে শার্ট খামচে ধরে। তাড়াতাড়ি করে নিজেকে সামলে পড়ে যাওয়ার আগেই ধরে নেয়।

_ ফেলেদিচ্ছিলে কেন? এত মোটা মোটা করে বডি বিল্ড কি এমনি এমনি করেছ? আমি কি খুব মোটা হয়ে গেছি? আমি তো শুধু একটু গুলুমুলু
_ লিসেন মাতাল পরী..
_ শুনতামনা। দু হাতে কান চেপে রাসেলের রাগী চেহারার দিকে তাকিয়ে খিল খিল করে হাসতে থাকে।
হাত ধরে টেনে স্টলের সামনে এনে বলে
_ নুপুরি… শারমিন.. ইনি হচ্ছেন মি. রাসেল খান। তোদের দুলাভাই।

দুজনে একসাথে _ দুলাভাই
লাবিবাঃ
নুপুরঃ ভাইয়া আমাকে চিনতে পারছেন? স্টোরে যে দেখা হলো।
রাসেলঃ হ্যাঁ।

শারমিনঃ ভাইয়া আসেন আসেন এখানে বসেন। চেয়ার ঠিক করে দেয়। রাসেল বসে পড়ে।
নুপুরঃ ভাইয়া আমরা আপনার দ্বি মাত্র শালিকা। কি খাবেন বলুন? ঝালমুড়ি নাকি চটপটি নাকি ফুসকা নাকি দই ফুচকা?
শারমিনঃ পুলি পিঠা or দুধ পুলি or চিতই পিঠা or দুধ চিতই or তেলে পিঠা or পাটিশাপটা or ডিম পিঠা or ঝিনুক পিঠা or চাপালি পিঠা or গোল্লা পিঠা or আমিত্তি পিঠা or কলস পিঠা or কাঠাল পিঠা or খেজুর পিঠা or নকশী পিঠা or পান পিঠা or নারিকেলী পিঠা or পাকন পিঠা or আনারস পিঠা or পোয়া পিঠা or মুগ পাকন পিঠা or ফুল পিঠা or সেমাই পিঠা or ঝাল পিঠা or আওলাসী পিঠা?

লাবিবাঃ ব্যাস ব্যাস এই ২৫ টাই বানিয়েছিলাম আমরা। আমি যেগুলো বানিয়েছি শুধু ঐ গুলো মাই হ্যান্ডসাম কে দে।
রাসেলঃ তুমি পিঠাও বানাতে পার? আই মিন রান্না পার? অবাক হয়ে।
লাবিবাঃ কেন পারবোনা? আমাকে তো রান্না করে খেতে হয়।
রাসেলঃ আমি তো ভেবেছিলাম তুমি শুধু মাত্র রেড় ওয়াইনের বোতলই গিল।

শারমিনঃ কি বির বির করছেন ভাইয়া? বির বির রেখে এখন খাওয়া স্টার্ট করুন।
সামনে টেবিলে সাজানো পিঠা দেখে বিষম খায় রাসেল।
_ এতগুলো কিভাবে খাব আমি?
লাবিবাঃ এতগুলো কই? মাত্র আঠারোটা। আমি বানিয়েছি। সব খাবে তুমি।
রাসেলঃ অসম্ভব।

শারমিনঃ সবই সম্ভব ভাইয়া। আমরা হেল্প করছি। একথা বলে নুপুর আর শারমিন একের পর এক পিঠা রাসেল কে ধরে খাওয়াতেই থাকে। বেচারা রাসেল.. ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে| আর লাবিবা সামনে চেয়ারে বসে থুতনি দিয়ে হাতে ভর করে চোখে একরাশ প্রেম নিয়ে হ্যান্ডসাম এর খাওয়া দেখতে থাকে।
পিঠা খাওয়ার পর পর দশটা ফুচকা মুখে পুরে দেয়। রাসেল এবার দুজনের হাত ধরে আটকায় দুজন কে। মরে যাই যাই অবস্থা তার। এত খাওয়ার চোটে কোনটার কেমন স্বাদ কিছুই বুঝতে পারল না রাসেল। একরাশ হতাশা নিয়ে বসে আছে।

শারমিন আর নুপুর কাঁচুমাচু শুরু করে দেয়।
শারমিনঃ বলছিলাম কি ভাইয়া এত আদর যত্ম করে খাওয়ালাম আপনাকে|. আমরাও তো কিছু প্রাপ্য তাইনা।
নুপুরঃ ভাইয়া আরেকটু চটপটি দেই?
রাসেলঃ না বোন আর লাগবেনা। বেচে থাকলে আর কখনো তোমাদের হাতে যেন না খেতে হয়।
রাসেল ওয়ালেট বের করতেই দুজনে হুমড়ি খেয়ে সব ডলার লুটে নেয়।

রাসেল অসহায় ভাবে বলে
_ পহেলা বৈশাখে পানতা ইলিশ খেতে আসছিলাম এতদুর ড্রাইভ করে। আর পিঠা দিয়েই তিনদিনের খাবার সাবাড় করে নিলাম।
নুপুরঃ ভাইয়া একটু বসুন আমি এক্ষুনি পানতা ইলিশ আনছি।
রাসেলঃ নাআআআআআআআআআআ|..
এক দৌড়ে পগারপার|


পর্ব ৭

রাসেল ছুটছে আগে আগে আর লাবিবা ছুটছে পিছে পিছে।
_ ও মাই হ্যান্ডসাম প্লিজ স্টপ রাননিং.. স্টপ। মাই হ্যান্ডসাম স্টপ না|আমি আর দৌড়োতে পাচ্ছি না।
_ চলে যাও তুমি ..তোমরা একজন ও ভাল না। তুমার বান্ধবী দুটো তোমার থেকে ভয়ংকর। কিভাবে খাওয়াল আমাকে।
_ ভালোইতো করেছে।খেয়ে শক্তি হয়েছে জন্যই তো এমন আ্যথলেট এর দৌড় দিচ্ছ।
_ আমার পিছু নিয়েছ কেন কুকুরের মত?

_ এমা| তুমি বুঝি কুকুর ভয় পাও? ভাগ্যিস আমি কুকুর পালি নি।
ভরা পেটে দৌড়ে পেটের এক সাইটে ব্যথা ধরে গেছে। সামনের একটা বেঞ্চে বসে পরল। সাথে সাথে লাবিবাও এসে বসে পড়ে। দুজনেই হাপাচ্ছে।
_ তুমি এখানে কখন এসেছ?

_ কাল রাতে এসেছি। এসেই সারা রাত পিঠা বানিয়েছি।কেমন লাগলো পিঠা?
_ তোমার মতই। কোন স্বাদই বোঝা গেল না।এখানে এমন কিছু হবে আগে জানলেই হত।
_ আগে কিভাবে জানাব? জানানোর কোন প্রসেস আছে কি? দাও দেখি তোমার ফোনটা।

লাবিবা প্যান্ট এর পকেট এ হাত দিয়ে ফোন নিয়ে নেয়।নিজের নাম্বারে ডায়াল করে রাসেলের নাম্বার নিয়ে নেয়। রাসেল রীতি মত অবাক লাবিবার সাহস দেখে।
_ মাই হ্যান্ডসাম ধর তোমার ফোন নাও। এবার থেকে স্পেশাল কিছু থাকলে আগেই জানিয়ে দিব। কেমন?
_ মাতাল পরী | আমার একটা ফ্রেন্ড আমার জন্য ওয়েট করছে।
_ মিট করিয়ে দাওনা আমার সাথে।

_ না অন্য আরেক দিন কেমন? তোমার বান্ধবী রা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে যাও।
_ ওও তাই তো। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আচ্ছা তুমি তাহলে তোমার ফ্রেন্ডের কাছে যাও কেমন? বাই।

সেদিন মাতাল পরীর জন্য ভাল করে শপিং করতে পারে নি। আজ যেহেতু বাংলা এলাকায় এসেছে তাই কিছু শপিং করে নিয়ে যাওয়া উচিত। তাই ভেবে গ্ৰোসারি স্টোরে গিয়েছে রাসেল। পছন্দ অনুযায়ী আইটেম ট্রলিতে রাখছে। আর এদিকে ট্রলিতে রাখা প্রোডাক্ট গুলো যেগুলো পছন্দ হচ্ছে সেগুলো রেখে বাকি গুলো চেঞ্জ করে দিচ্ছে লাবিবা একটা একটা করে। রাসেল পাবদা মাছের একটা প্যাকেট হাতে নিতেই লাবিবা চিল্লিয়ে উঠে এই না না…বলে। কানের কাছে হটাৎ এমন চিল্লানি শুনে আৎকে দু পা পিছিয়ে যায় রাসেল। বুকে থু থু দিয়ে লাবিবার দিকে তাকায়

_ মাই হ্যান্ডসাম পাবদা মাছ আমি পছন্দ করিনা। তুমি চিংড়ি মাছ নাও।
_ তুমিহহ|. তুমি এখানে কি করছো? আর তুমি যা পছন্দ করবে আমাকে তাই নিতে হবে নাকি?
_ এতক্ষণ তো তাই নিয়ছো.. যেগুলো আমি ডিজলাইক করি ওইগুলা চেঞ্জ করে দিয়েছি।
_ কিহ…

ট্রলির দিকে তাকিয়ে দেখে প্রায় সব আইটেম ই চেঞ্জ করে দিয়েছে। রাগে গজ গজ করতে করতে বলল
_ এগুলো করার জন্য এসেছো তুমি?
_ আমি যেগুলো পছন্দ করি সেগুলো খেতে হবে তোমায় আজ থেকে।
রাসেলের মাথা ব্যথা ধরে গেছে কথা শুনে। শুধু একটা কথাই ভাবছে.. এখন কি ওয়াইন ওই খেতে বলবে নাকি?
_ অসম্ভব|

_ কোন কিছুই অসম্ভব না। আজ থেকে তোমার কোন কষ্ট নেই। আমি তোমার বউ হয়ে তোমাকে রান্না করে খাওয়াব।
_ are you serious? সত্যি সত্যি তুমি আমাকে বিয়ে করবে ভেবে নিয়েছো? আমি কিন্তু তোমাকে বিয়ে করবো না। আমি তোমাকে ভালবাসি না।
লাবিবা চুপসে যায়। কতক্ষণ চুপ করে রাসেলের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর এক প্রকার দৌড়েই চলে যায়। রাসেলের কেমন জানি লাগে সেই চুপসে যাওয়া চেহারাটা। মুখটা লাল হয়ে ছিল কিন্তু চোখ ছিল বড়ই শান্ত। কষ্ট দিয়ে ফেলল কি তার মাতাল পরীকে|? তাড়াতাড়ি বাইরে বেড়িয়ে দেখে মাতাল পরী চলে গেছে।

সারাদিনের ঘুরা ঘুরি শেষে রাসেল এবার নিজের এপার্টমেন্টে যাওয়ার জন্য রেডি হয়। যাওয়ার আগে মাতাল পরীর কথা বার বার মনে হচ্ছে। ও কি চলে গেছে? নাকি এখানেই আছে? ও তো আমার সাথে যেতে চেয়েছিল এর আগে। আমি কি একবার জিজ্ঞাসা করব যাবে নাকি? একবার ফোন দেওয়া উচিত। ফোন দেয় লাবিবাকে। ওপর পাশে থেকে
_ হ্যলো ভাইয়া আমি নুপুর।
_ হ্যাঁ। আমি যে চিনলে কি করে?

_ নাম্বার মাই হ্যান্ডসাম দিয়ে সেভ করা দেখে।
_ লাবিবার ফোন তুমার কাছে কেন? লাবিবা কোথায়?
_ সেটাই তো জানতে চাই। লাবিবা কোথায়?
_ মানে?

_ রুমে এসে কতক্ষণ চুপটি করে বসে ছিল। কারো সাথে কথা বলে নি। কিছুক্ষন আগে ওর একটা বেবি আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলে হাতে শুধু ওয়ালেট টা নিয়ে বাইরে চলে গেল। এত ডাকলাম কিছু শুনল না।
_ আমাকে তোমরা যে রোড়ে আছ তার এড্রেস টা পাঠিয়ে দাও।
_ ওকে ভাইয়া।

রাসেল রোড়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে লাবিবাকে। পেয়েও যায়। একটা বেঞ্চে বসে আছে দেখে কাছে যায়। গিয়ে দেখে লাবিবার কাছে সিগারেটের প্যাকেট। একটা সিগারেট হাতে নিয়ে লাইটার দিয়ে জালাচ্ছে। রাসেল হাত থেকে সিগারেট টা নিয়ে ফেলে দেয়। লাবিবা রাসেলের দিকে তাকিয়ে বলে
_ আমার সিগারেট ফেলে দিলে কেন? হাউ ডেয়ার ইউ?

_ সিগারেট খাচ্ছ কেন তুমি? মদ খেয়ে মাতলামি করে কি এখন আর ভাল লাগে না? আরেকটা নেশা শুরু করবে নাকি?
_ তো কি করবো? আমাকে সিগারেট খেতেই হবে।
_ কেন? কিসের জন্য খেতে হবে?

_ কারন আমি ছেকা খেয়েছি।
_ কিহহ|… এই না বল তুমি আমাকে লাভ কর.. তাহলে কে দিল তোমায় ছেকা?
_ তুমিতো দিলে। বললে যে ভালবাসনা। তাহলে তো আমি ছেকাই খেলাম। ছেকা খেয়ে আমি এখন বেকা হয়ে গেছি। তাই আমাকে সিগারেট খেতেই হবে। কিন্তু সিগারেট তো আমি খেতে পারি না। এই তোমার ফোনটা দাও তো। ইউ টিউবে দেখি কিভাবে স্টাইল করে সুন্দর করে সিগারেট খায়।
_ সিগারেট খাবে তাও স্টাইল করে.. মদ খাওয়ার সময় তো স্টাইল লাগে না তোমার? তখন তো ডক ডক করে বোতল ধরে খাও।

_ তুমি তো দেখছি স্টাইল বোঝই না। এখানে সবাই গ্লাসে ঢেলে চুমুক দিয়ে দিয়ে খায়। এটা কমন স্টাইল। আর আমি বোতল ধরেই খাই। এইটা আমার স্পেশাল স্টাইল। বুঝেছি তুমি ফোন দিবে না। ওকে নো প্রবলেম। পরে স্টাইল করে খাওয়া শিখে নিব।

রাসেলের মাথায় আগুন ধরে যায়।
কোন গবেট এর পাল্লায় যে পড়েছি আমি |। এত বড় মেয়ে এমন ছেলেমানুষী কই পায় আল্লাহ যানে। একে তো মদ খায়.. এখন আবার সিগারেট খাওয়া শিখছে। তাও আবার কেমনে খায় তাই জানে না। ইচ্ছে করছে ধরে দেই একটা আছাড়। প্রেম করলাম না আর ও ছেকা খেয়ে গেল আর আমাকে ছেকাখোর বানিয়ে দিল। ফালতু জানি কথাকার সব। থাকবই না এখানে।

রাসেল চলে যেতে নেয় তখনি কাশির আওয়াজ পেয়ে লাবিবার দিকে তাকিয়ে দেখে লাবিবা মুখ থেকে ধোয়া বের করছে আর খক খক করে কাশছে। রাসেলের রাগ চরম পর্যায়ে উঠে যায়। ঠাস করে গালে একটা চড় বসিয়ে।
_ ফাজিল মেয়ে.. সব সময় শুধু ছেলেমানুষী.. এগুলো ছাই পাস খাওয়ার চেয়ে বিষ খেতে পার না? ধুকে ধুকে মরার থেকে একেবারে মরা ভালো।
_ আমায় ভালবাসবে না কেন তুমি?

_ আর যাই হোক তোমার মত মেয়েকে ভালবেসে নিজের সর্বনাশ কেউ করবেনা। বোঝ কিছু? সবসময় ছেলেমানুষী করো.. মদ খেয়ে মাতলামি করো.. এছাড়া বুঝ কিছু? তোমার দ্বারা আর যাই হোক সংসার হবে না। কারন তুমি তো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে.. ঘর কি আর তোমার ভালো লাগবে? রাস্তার মেয়ে একটা। একদম আমার পিছু নেবে না। আমি কি কখনো বলেছিলাম তোমাকে ভালবাসি? অবুঝ মেয়ে কথাকার|

রাগে গজ গজ করতে করতে রাসেল চলে যায়। আর লাবিবা কাঁদতে কাঁদতে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ে।

অফিসের কাজে নায়াগ্ৰা এসেছে রাসেল কয়েকদিন থেকে। আজই শেষ হল তার এখানের সমস্ত কাজ। এ কয়েকদিন একটু আধটু মাতাল পরীকে মনে পড়লেও আজ যেন বেশী মনে পড়ছে। কেমন আছে মাতাল পরী? কি করছে সে? একটু পরেই সন্ধ্যা হবে। মাতাল পরীর ডিউটি কি শেষ হয়েছে? ও কি এখনি ক্লাবে গিয়ে বসবে? নাকি আরো ঐকটু পর যাবে? সারারাত কি রাস্তায় কাটাবে নাকি বাসায় চলে যাবে? বসে বসে ভাবতে থাকে এসব রাসেল। একটু মাইন্ড ফ্রেস করা উচিত। তাই ফ্রেস হয়ে বাইরে বের হয়।

সামনে world’s 7 wonder| অপূর্ব তার সৌন্দর্য। কানাডার সাইট থেকে তিনটি ফলস ই দেখা যায়। ফলস গুলোতে চোখ পড়তেই একটা প্রশ্নই আসে _ কোথা থেকে আসে এত ওয়াটার?
নিজেই মানুষের প্রকারভেদ করা যায়। মানুষ দুই প্রকার। ১. যারা নায়াগ্ৰা ফলস দেখেছে। ২. যারা নায়াগ্ৰা ফলস দেখেনি। যারা দেখেনি তারা বিশাল কিছু মিস করছে। এখানের ওয়াটার কখনোই কমে না। এখানের পানি ঘুরে ফিরে গোল হয়ে এখানেই আবার ফিরে আসে।

মুগ্ধ হয়ে ফলস দেখছে রাসেল। আর তার কল্পনায় মাতাল পরী|
শো শো বাতাসে চুল গুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। পাশে হাজার হাজার টুরিস্ট এর মাঝেও একা লাগছে। নিজের পাশটা খালি হয়ে আছে। এখানে তুমি থাকলে আর খালি লাগতো না মাতাল পরী.. বাতাসে তোমার চুল গুলো এলোমেলো হয়ে যেত। বাতাসের শো শো আওয়াজের সাথে তোমার বোকা বোকা নন স্টপ বকবকানি গুলো ভেসে বেড়াতো। আর আমি তোমার কথা শুনে শুনে একবার হাসতাম.. একবার অবাক হতাম.. এক বার রেগে যেতাম.. তো একবার কনফিউজড হয়ে যেতাম।

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। ফলসের উপর আর্টিফিসিয়াল লাইট গুলো থ্রো করা হয়েছে। কখনো লাল.. কখনো নীল.. কখনো হলুদ রঙে ফলস গুলোর সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। এই মুহুর্তে ফলসের এই রুপ দেখলে নিশ্চয় ফলসের পানি খেয়ে ফেলতে চাইতে। অগত্যা আমার তোমাকে ফলসের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হতো। তুমি যে বড্ড ছেলেমানুষী। চারিদিকে ভায়োলিনের আওয়াজ আসছে.. তুমি নিশ্চই ভায়োলিন বাজাতে… আর আমি সেই সুরে মুগ্ধ হয়ে এই সৌন্দর্য উপভোগ করতাম।

তোমাকে একটুও ওয়াইন খেতে দিতাম না। সেদিন কড়া করে কথা শুনিয়েছি তোমায়.. আমার প্রতি বুঝি খুব রাগ হয়েছে তোমার? নাকি ভুলে গেছ সব? আমার সরি টা শুধু এক্সেপ্ট কর… আর কিচ্ছু চাই না। তোমার মত আমারও বলতে ইচ্ছা করছে তোমাকে আমার প্রয়োজন… I need you… অন্তত পক্ষে এই মুহুর্ত টা উপভোগ করার জন্য তোমাকে আমার প্রয়োজন|


পর্ব ৮

দু রাত থেকে হন্যে হয়ে লাবিবাকে খুজছে রাসেল। ফোন দিলে পিক করে না। এতটা রাগ অভিমান তোমার মাতাল পরী| একটা বার ফোনটা তুলো প্লিজ। আর রাগ করে থেকো না। তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছা করছে গো। আমি সরি তো.. আই প্রমিজ আর কখোনো বকা দিব না। রাগ হলে নিজেকে কন্ট্রোল করবো। তবুও দেখা দাও। ক্লাবে আশেপাশের রাস্তায় কোথায় পেলাম না তোমায়। কিভাবে খুজব তোমায় আমি? তোমার ফোন| ইসস… কি বোকা আমি.. তোমার লোকেশন খুজেই তো জানতে পারি তুমি কোথায়?

রাসেল লোকেশন ট্রাক করলে বার বার তার বিল্ডিং এ ডেসটিনেশন দেখাচ্ছে। বুঝতে পারছি না কিছু। আমার বিল্ডিং এ কিভাবে মাতাল পরী থাকবে? লোকেশন দেখে দেখে বিল্ডিং এর 5th floor এ উঠে যায় রাসেল। ডোর বেল বাজিয়ে বাইরে দাড়িয়ে ওয়েট করে। শারমীন এসে দরজা খুলে দিয়ে অস্থির হয়ে ওঠে বলে
_ ভাইয়া এত দিনে আপনার আসার সময় হলো বুঝি? কি দোষ করেছিল আমাদের কিউটি পাই? ও ড্রিংস করে মানলাম। রিলেশন করার আগে কি জানতেন না ও ড্রিংস করে? আপনার সাহস কি করে হয় ওকে ছেকা দেওয়ার? ও একটু ছেলেমানুষী করতেই পারে.. আপনার সহ্য না হলে ওইটা আপনার ব্যপার। তাই বলে ওকে মেরে ফেলার চেষ্টা করবেন?আপনি কি মানুষ হ্যা? ওকে বিষ খাওয়াবেন?

_ কিহ.. বিষ খাইয়েছি মানে?
_ বিষ খাইয়েছেন মানে বিষ খাইয়েছেন। তিনদিন আগে ও বিষ খেয়েছে। আমরা ফোনে না পেয়ে বাসায় এসে দেখি ও সব কিছু এলোমেলো করে ফ্লোরে পড়ে আছে। তারপর হসপিটালাইজ করি। আজ সকালেই বাসায় এনেছি।
_ কোথায় ও? সর ভেতরে যাব আমি।

ভেতরে ঢুকেই দেখে সব এলোমেলো। পায়ে হোচট ও খায়। শারমিন ধরে ফেলে বলে
_ ও করেছিল এসব। আসার পর ওর সেবা করে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে রান্না করে একটু একটু করে গোছাচ্ছিলাম। তখনি আপনি আসলেন।
_ কোন রুমে ও?

(তোমাকে আমার প্রয়োজন নামের বাংলা প্রেমের গল্প টি আপনাদের কেমন লাগলো পড়া শেষে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।)

শারমিন রুম দেখিয়ে দিলে রাসেল রুমে ঢুকে দেখে তার মাতাল পরী ঘুমিয়ে আছে। কি নিষ্পাপ লাগছে দেখতে। বাচ্চা মেয়ে একটা। কবে যে বুদ্ধি তে বড় হবে আল্লাহ ই জানে। সাদা প্রিন্টের চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে দেয় গায়ে। মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচে কালো দাগ রাসেলের বুকে দাগ কেটে দিচ্ছে। শারমিন এর দিকে তাকিয়ে দেখে তারো সেম অবস্থা। রোগীর সাথে যে থাকে তারো সেম অবস্থা হয়ে যায়। বোধ হয় ঘুমোতে পারেনি রাতে। ওর রেস্ট নেওয়া উচিত। তাই রাসেল বলে,
_ শারমিন তুমি অনেক উইক হয়ে গেছ। তোমার রেস্ট নেওয়া উচিত। নইত পরে দেখা যাবে তুমি অসুস্থ হয়ে গেছ।
_ আমি একটু বাসা থেকে ঘুরে আসতে চাই। ভরসা পেতে চাই।

_ শারমিন বিলিভ মি। আমি রেগে গিয়েছিলাম। তখন আমি কি বলেছি কিচ্ছু মনে নেই। আমি এতদিন নায়াগ্ৰা ছিলাম অফিসের কাজে। তাই খোজ নিতে পারি নি। এতটা ছেলেমানুষী কেন করে ও? তাই বলে বিষ খেয়ে নিবে?
_ আঘাত পেতে পেতে মেয়েটা ব্রেনে চাপ পড়ে এরকম হয়ে গেছে। বিষ খাবে নাতো কি করবে.. একা একটা মেয়ে যাকে ভালবাসে সেই ফিরিয়ে দেয়। জীবনের প্রতি সময় সময় তিক্ততা চলে আসে। আপনি থাকুন ওর কাছে। আমি রাতে চলে আসব।
_ আমি আছি। টেনশন নিও না।

শারমিন চলে গেলে রাসেল মাথার বালিশের কাছে বসে হাত বুলিয়ে দেয়। খুব খারাপ লাগছে তার। আজ যদি কিছু হয়ে যেত কি হত তখন? নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারতো না। আল্লাহ সহায় আছেন তাই মাতাল পরীকে দেখতে পাচ্ছে।

রুমের চারিদিকে দেখতে থাকে রাসেল। পুরো রুম জুড়ে অনেক গুলো ছোট বড় ছবি। বলতে গেলে লাবিবার প্রত্যেক টা ছবি হট ছবি। হাস্যজ্জল চেহারা খুব কম ছবিতেই দেখা যাচ্ছে। রুমের এক পাশের কর্নার রেকে চোখ পড়ে। পুরো রেক জুড়ে রেড ওয়াইনের বোতলে ভরা। বসে থেকে লাভ নেই। ফ্লোরে পড়ে থাকা জিনিস গুলো তুলে ফেলা উচিত নইত আবার নিজেই দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবে। রুম থেকে বের হয়ে ফ্লোর থেকে একটা একটা জিনিস তুলতে থাকে রাসেল। কাচের টুকরো গুলো সাবধানে তুলে নিয়ে ঝুড়িতে ফেলে।

ফটো ফ্রেম গুলো তুলে দেখে প্রত্যেক টি ফ্রেমে একজন পুরুষ একজন মহিলা আর একজন বাচ্চার যৌথ ছবি। মহিলাটি দেখতে অনেকটা লাবিবার চেহারা আসে। তার মানে ইনি লাবিবার মা বাবা আর পিচ্চি টা লাবিবা। কিন্তু সব ফ্রেমে রেড় পেন দিয়ে ক্রস চিহ্ন দেওয়া কেন? একি এটাতো আমার ছবি। রংতুলিতে আকা। লাবিবা একেছে নিশ্চয়। ও ছবিও আকে!!!

প্রত্যেক টা রুম ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে রাসেল। একটা রুমে গিয়ে অবাক হয়ে যায়। রুমের প্রত্যকটা দেয়ালে রং তুলিতে আঁকা ছবি আর কাচের মদের বোতল। বোতল গুলো ধরে ধরে দেখতে থাকে। বিভিন্ন সেইপের বোতল। রং তুলি দিয়ে প্রত্যেক টা বোতলে সুন্দর করে নকশা আকা। এত সুন্দর যে ফেমাস আর্টিশ দের ও পিছিয়ে দিবে। এক কর্ণারে দুটো ভায়োলিন আর একটা গিটার রাখা। এক পাশে বসার ব্যবস্থা করা আছে। আর ঠিক মাঝখানে ছবি আঁকার বোর্ড রাখা। ছবি গুলো দেখতে থাকে রাসেল। ছবিগুলো দেখে অবাক হয়ে যায়। প্রত্যেক টা ছবি রাসেলের। নিখুঁত ভাবে আকা হয়েছে ছবি গুলো। দু একটা ছবিতে দুজনের একসাথে ডুয়েট আকা হয়েছে। মাতাল পরী সত্যিই ভালবাসে তাকে। মুখের কোনে হাসি ফুটে ওঠে নিমেষেই। পাগলী একটা।

রুমে এসে দেখে বিছানায় চুপটি করে বসে আছে লাবিবা। রাসেলকে দেখে ক্রমশ অস্থিরতা বেড়ে যায়। চোখের জল গাল বেয়ে পড়ে যায়। রাসেলের খুব ইচ্ছা ছিল আচ্ছা মত বকে দেওয়ার। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠে না। দুহাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে হাত দুটো ধরে সামনে বসে পড়ে। লাবিবাকে চুপ থাকতে দেখে এবার নিজের মুখ খুলে
_ মাতাল পরী|…
_ …

_ আই এম সরি। কথা বলো আমার সাথে প্লিজ।
_ কারো সাথে কথা নেই। কেউ আমায় ভালুপাসে না।
_ আমি রাগ করে কথা বলেছি তাই বলে তুমি এমন করবে? তুমি কি কিছুই বোঝ না? রাগ ও বুঝনা? আমার নিজেকে অনেক অসহায় মনে হচ্ছে। অপরাধী আমি। এত পাগলামী কর কেন বলত?

_ কারন আমি পাগল তাই। আর তোমার জন্য আমি তো ওয়েট করছিলাম। তুমি তো আমাকে ফোন বা এস এম এস কিচ্ছু দেন নাই। দেখাও করো নাই। একটা ব্যপারে খুব খারাপ লেগেছিল। তাই তোমার দেওয়া বুদ্ধি টার কথা মনে পরে গেল আর বিষ খেয়ে নিলাম।
_ আমায় প্রমিজ করো আর কখনো বিষ খাবে না।

_ প্রমিজ করতে হবে না। আমি এমনিতেও খাব না। ছিহহ| এগুলো মানুষ কিভাবে খায়? কি তেতো কি তেতো। আর কি গন্ধ রে বাবা। কত কষ্ট হয়েছে আমার জান? নাক দিয়ে পাইপ ঢুকিয়ে দিয়েছিল ডক্টর রা। কি ব্যাথা পেয়েছি গো…আর জীবনেও সাইসুইড খাবো না। হুহহ…
_ বুঝতে পারার জন্য ধন্যবাদ মা। খুশি হলাম শুনে।

_ মা কিসের? আমার কি বেবি তুমি? বউ বলো বউ। তোমার হলে আপন বউই হবো। তোমার বাবার বউ হইতে পারব না। বুড়ো বিয়ে করবোনা আমি।
_ ওইটা হইতেও হবে না। আমার পাপা মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। বুঝলে?
_ হুমম। কে কে আছেন তোমার পরিবারে?

_ মম ..ভাইয়া ..ভাবি । উই আর এ হেপি ফেমেলি।
_ আমার কাছে ডিটেইল বলে লাভ নেই। আমি কিন্তু খুব লোভি। তোমার ফেমেলির মেম্বার হতে ইচ্ছা করবে। তুমি তো আর আমাকে ভালোবাসো না। তোমার ফেমেলিতে ডুকব কি করে?

রাসেল মুচকি হেসে বলে
_ আমি নায়াগ্ৰা ছিলাম এই কয়দিন। ব্যস্ততার কারনে ফোন দিতে পারি নি।
_ আমিও তো গিয়েছিলাম। তুমি আর আমি থাকলে কত ঘুরতাম বলো তো.. দেখি তোমার ফোনটা দাও।

পকেট থেকে ফোন বের করে রাসেলের নায়াগ্ৰার ফটো দেখতে থাকে। নিজের ফোন নিয়ে নিজের কয়েকটা ফটো রাসেলের ফোনে সেন্ড করে। দুজনের ফটো ইডিট করে এক করে দেয়। তারপর রাসেলের হাতে দিয়ে বলে
_ ধর। দেখ কেমন হয়েছে? এই পিক গুলো তোমার মমকে দেখাবে। দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করবে কেমন মানিয়েছে আমাদের দুজনকে… তার ছেলের বউ হিসেবে পছন্দ হয় কিনা?
রাসেল চুপি চুপি হাসে তার কাজ দেখে।

রাসেল মমের সাথে কথা বলছে|
_ নায়াগ্ৰা থেকে এসে আমাকে শুধু একবার ফোন দিয়েছিস। কি এমন ব্যস্ত তুই যে ফোন দিতে পারিস না?
_ মাতাল পরীর জন্য ব্যস্ত ছিলাম।
_ ওহ কি করেছে আমার মেয়েটা?

_ ফোন পিক করে নি। আমি তো খুজেই চলেছি। কিন্তু অবশেষে পেলাম তাও আবার আমার বিল্ডিং এ। গিয়ে দেখি অসুস্থ ও। সুইসাইড করেছে। আমি সেইদিন একটু কড়া করে কথা শুনিয়েছিলাম। হয়ত তাই এরকম করেছে।
_ তোকে পেলে আচ্ছা মত মারতাম আমি। জানিস ই যখন ছেলেমানুষী তাহলে কড়া কথা বলতে গেলি কেন?
_ আমি তো মদ খাওয়ার ব্যপারে বলেছিলাম।

_ তার জন্য কি সুইসাইড করবে?
_ না.. মানে… বিষ খাওয়ার কথাও বলেছিলাম আরকি।
_ তোর বিল্ডিং এই তো আছে। যা আমার মেয়ের কাছে যা। আমি কথা বলবো আমার মেয়ের সাথে।
_ আর ইউ সিরিয়াস মম?

_ হুম এখনি যাবি। আমি দেখবো।
_ মাতাল পরী নিশ্চিত মদ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। ইটস 11.00 ও ক্লক মম।
_ তবুও নক করে দেখ প্লিজ।
_ মম|

দরজার বেল বেজে ওঠে। এমন সময়ে কে আসবে? অবাক হয়ে যায় রাসেল। কে নক করছে?
_ মম তুমি লাইনেই থাক আমি একটু দেখে আসছি কে নক দিচ্ছে।
_ হুম দেখ।


পর্ব ৯

ডোর খুলতেই দেখে মাতাল পরী দাঁড়িয়ে। রেড় কালার গাউন পরে চুল গুলো দুপাশে দুটো বেনী করে হাতে বড় একটা টেডি নিয়ে ডোরে হেলান দিয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাসেল তো হা করে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে _ মাতাল পরীর বয়স কত? মেয়েদের তো বয়স জিজ্ঞাসা করা যায় না.. নইলে করতাম। এতটা পিচ্চি কেন মেয়েটা? মিটি মিটি হাসছে কেন? এতরাতে এখানে আসার উদ্দেশ্যে কি? কিছুই তো বুঝতে পারছি না। এবার প্রশ্ন করেই বসল মাতাল পরী… এত রাতে এখানে কেন এসেছ অসুস্থ শরীরে… তোমার কি ঘরে থাকতে একদমি ইচ্ছা করে না? এত মিটি মিটি হাসার কি আছে?

লাবিবা এবার শব্দ করে হেসে ফেলল। ইশারায় দুটো আঙুল দিয়ে ঠোঁট ধরে উম্মাহহহ দিয়ে রুমের ভিতরে ঢুকে গেল। রাসেলের তো অবস্থা সেই রকম| মাতাল পরীর মতলব টা তো ভালো লাগছে না
লাবিবা রুমে ডুকেই বিছানায় ধপ করে বসে পড়ল। সোহানা সবই দেখছে। লাবিবাকে দেখে তার চোখ জুড়িয়ে যায়। সে ডাক দেয়
_ লাবিবা.. এইযে আমার মেয়েটা…

লাবিবা মেয়েলি গলা শুনে এদিক ওদিক তাকাতে থাকে। চোখ পড়ে পাশে থাকা ফোনটার উপর। ফোন তুলতেই দেখে সুন্দর মাঝবয়সী একজন মহিলা। সোহানা বলে
_ বাহ.. মাশাল্লাহ.. অনেক সুন্দর। কেমন আছো মা? তুমি নাকি অসুস্থ?
_ আপনি আমায় চিনেন?

_ না চিনলেও তো বুঝে নিতে হয়। আমার ছেলের বাসায় তার মাতাল পরী ছাড়া তো অন্য কারো আসার কথা নয়।
_ মম?
_ জি।
_ ও আমার আল্লাহ.. মম তুমি তো খুব কিউট.. একদম আমার মতো।তোমার ছেলে টাও খুব কিউট। আমার তো খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করে।
_ তাই নাকি? তুমি সত্যিই খুব কিউট মা।

_ হু। আমি তো জানি আমি কিউট। নইত তোমার ছেলের মত কিউট আমার পিছু লাগে?
রাসেলঃ মমকে মিথ্যা বলছ কেন? আমি তোমার পিছু কবে লাগলাম?
মমঃ আমার সামনে একদম ঝগরা করবি না বলে দিলাম।

লাবিবাঃ মম জান তোমার ছেলেটা একটুও ভালুপাসে না। যখনি বলি লাভ ইউ তখনি বলে আমাকে নাকি ভালবাসা যায় না। আমি নাকি সংসার করতে পারব না। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াব। শুধু আমায় কষ্ট দেয়।
মমঃ খুব খারাপ করে মা। আমি বকে দিব খুব করে কেমন? আমি তাহলে রাখছি। তোমরা কথা বল।
লাবিবাঃ চলে যাচ্ছ কেন থাক না| তোমায় খুব ভালো লাগছে আমার। আমি তোমার কাছে কবে যাব?
মমঃ রাসেলের সাথে চলে এসো।
লাবিবাঃ আচ্ছা।

ফোন রেখে দেখে রাসেল রেগে তাকিয়ে আছে। তা দেখে লাবিবা আরো মিটি মিটি করে হাসছে। লাবিবার হাসি দেখে আরো গা জ্বলে ওঠে। লাবিবা উঠে গিয়ে ফ্রিজ খুলে কি আছে দেখতে থাকে।
_ তোমার ফ্রিজে তো কয়েকটা ফ্রুট ছাড়া কিছুই নেই। ধুরর এগুলো ফ্রূট খাইনা আমি।
_ তুমি আমার ফ্রিজে কি কি আছে সেগুলো দেখতে এসেছ?
_ আমার তো ক্ষুদা লেগেছে। অসহায় মুখ করে…

_ আমি আজ কিছু মেক করিনি। রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে এসেছি।
_ ইসসস… আমায় বললে কি হত? আমায় বিয়ে করে নিলেই তো পার। রান্না করে দিতাম।
_ আমি নিজেই পারি। আমি একজন শেফ।
_ ওয়াওও… বাট তোমার থেকে আমি ভালো রান্না করি। আমি সিউর।
_ ওয়াইন কি নেই? ওয়াইন খাও যাও।

_ নেই জন্যই তো ক্ষুদা পেয়েছে। থাকলে তো খেতাম ই।
_ কি সত্যিই তুমি খাওনি? একদম স্বাভাবিক ভাবে তুমি আমার সামনে বসে আছো?
রাসেল আস্তে আস্তে লাবিবার মুখের সামনে মুখ নিয়ে যায়। কোন স্মেল পায় না। তারমানে সত্যিই খায় নি।

লাবিবা বেড এ গিয়ে বসে পড়ে। রাসেল জিজ্ঞেস করে _ শারমিন আসে নি?
_ না।
রাসেল উঠে গিয়ে কয়েকটা চকলেট নিয়ে এসে লাবিবার সামনে ধরে বলে _ নাও চকলেট খাও।
_ চকলেট খাই না। একসময় অনেক খেতাম এখন আর খাইনা।
_ খাওনা কেন?

_ আমি তো এমনিতেই গুলুমুলু। চকলেট খেলে আরো গুলুমুলু হয়ে যাব তাই।
_ গাধি একটা। তুমি চকলেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছ কিন্তু ওয়াইন ঠিকি খাচ্ছ। ওয়াইন খেলে মানুষ মোটা হয়ে যায় বোকা। পারলে ওইটা ছাড়।
_ পারবনা।
_ তাহলে যাও এখান থেকে। ঘুমোবো আমি।
_ আমিও ঘুমোব। আমার তো যেতে ইচ্ছা করছে না। আবার সেই হাসি হাসছে।
_ আবার এইভাবে হাসছ তুমি?

_ ইউ নো হুয়াট মাই হ্যান্ডসাম?
_ হুয়াট?
_ ইউ আর লুকিং সো সো সো চকলেটি।
_ আই নো আই এম চকলেট বয়।
_ অলসো বিউটিফুল এন্ড হট
রাসেল এবার নিজের দিকে খেয়াল করে। রাসেল গায়ে শুধু একটা সর্ট প্যান্ট পরে আছে।
_ ওওও| সিট।

লাবিবা খিলখিলিয়ে হাসতে থাকে। এইবার আর রাসেলের রাগ হচ্ছে না। বরং তার লজ্জা লাগছে একটু। কি দুষ্টু মেয়েরে বাবা। এর জন্য এত মিটি মিটি হাসি।
লাবিবাঃ আমার না তোমাকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে চকলেট ভেবে। এই তুমি ওয়াইনের মত কেন হলে না? ওয়াইনের মত হলে তো এখনো আস্ত থাকতে না। আমি কবেই তোমায় খেয়ে ফেলতাম। হি হি হি…
_ হাসি বন্ধ করো আর যাও এখান থেকে।

রাসেল এবার লাবিবার হাত ধরে টান দিয়ে বলে
_ উঠ তোমাকে দিয়ে আসি তোমার ফ্লাটে। অনেক রাত হয়েছে। এরকম করলে কিন্তু তোমার সাথে আর কথা বলবো না। আর চলেও যাব এখান থেকে।

লাবিবা উল্টো ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে সোজা রাসেলের উপরে ওঠে যায়। রাসেল কিছু বলতে যাবে তখনি হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে চুপ করিয়ে দেয়। দু হাত দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখে। জোরে একবার নিশ্বাস নিয়ে বলে

“প্লিজ কিছু বলনা। রাত যতই হোক কি যায় আসে তাতে? সব সময় এমন করো কেন? কথা না বলে থাকতে পারবে আমার সাথে? এতটা নিষ্ঠুর তুমি হতে পারবে? আমাকে কি একটুও ভালোবাসা যায় না? এতটাই খারাপ আমি? আমি ড্রিংস করি জন্যই আমি খারাপ হয়ে গেলাম? আমার আর ভাল কিছু সব মিথ্যা হয়ে গেল? আমার দ্বারা সংসার হবে না কে বলল তোমায়? তুমি জানো আমি একটা সংসার.. একটা পরিবার.. একটু ভালবাসা পাওয়ার জন্য কতটা আকুল হয়ে আছি? আমি সংসার বুঝি হ্যান্ডসাম।

(তোমাকে আমার প্রয়োজন নামের বাংলা প্রেমের গল্প টি আপনাদের কেমন লাগলো পড়া শেষে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।)

আমি সংসার সামলাতেও পারি। আমি ভালবাসতেও পারি। কিন্তু আমাকে না কেউ আপন করে নেয় না। সবাই দুরে সরিয়ে দেয়। তুমিও দাও। আমি কি তোমার কাছে এসেছিলাম বলো? নাকি তুমি আমার কাছে এসেছ? আমি তো ভালছিলাম। আমার দুনিয়ায় আমার জব আর আমার বেবি.. এ দুটো নিয়ে ভাল ছিলাম। তুমি কেন এলে আমার কাছে? কেন দেখা দিলে? কেন আমার মনে ভালবাসার বীজ বপন করলে?

আমি তোমার প্রাচুর্য.. সৌন্দর্য দেখে ভালবাসিনি হ্যান্ডসাম। আমি আমার প্রয়োজনে তোমায় ভালবেসেছি। এ পৃথিবী কত নিষ্ঠুর জানো? কেউ কখনো আমার কথা ভাবে নি। আমি কখনো কারো ক্ষতি করিনি। সব সময় ভালোই করে এসেছি। একমাত্র তোমাকে দেখেছি আমাকে নিয়ে একটু সিরিয়াস হতে। একটু ভাবতে। একটু না পুরো টাই ভাবতে। তুমি মুখে না বললেও তোমার চোখ দুটো আমায় বলে দেয়। ভালবাসার মানুষের থেকে ভালবাসা না পাওয়া যে কতটা কষ্টের কিভাবে বুঝাব তোমায়? ড্রিংস করে আমি আমার কষ্ট দমিয়ে রাখি। জানো এই বুকে প্রচুর কষ্ট। প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। আমি একটু শান্তি চাই। মুক্তি চাই এই কষ্ট থেকে। আমি বড্ড একা। বড্ড একা।”

রাসেল এবার বলে,
“কে বলেছে তুমি একা? তোমার কথা কেউ ভাবে না। শারমিন_নুপুর এরা কিন্তু তোমাকে ভালবাসে। তুমি অসুস্থ হয়ে পড়লে ওরাই তোমাকে সেবা করেছে। তারপর ও বলবে ওরা তোমায় ভালবাসে না?”
“হয়ত বাসে। হয়ত বাসে না। হয়ত সব কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ।”

রাসেল লাবিবার মাথাটা উপরে তুলে চোখে চোখ রাখে। চোখ দুটো ভিজে গেছে পানিতে। লাল হয়ে গেছে। ভেজা চোখ দুটো হাত দিয়ে মুছে দেয়। লাবিবা চোখ দুটো বন্ধ করে নিয়ে বলে
“রাসেলরর.. ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। বিয়ে করবে আমায়?”

রাসেলের সমস্ত শরীর কেঁপে উঠে এমন আবেগী কন্ঠে ভালবাসি কথা শুনে। শরীর অসাড় হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ঘোরে চলে যাচ্ছে বুঝতে পারে। মাতাল পরী এবার তাকে মাতাল করে দিতে এসেছে। এটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। কিন্তু মাতাল পরীর প্রেমে মাতাল হাওয়ার সময় নয় এটা। সময় কথা বলে। পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে সামলে চলতে হয়। মাতাল পরীকে সরিয়ে দিতে চাইলে হিতের বিপরীত হবে ১০০% সিউর। কারণ আজ সে রেড় ওয়াইনের নেশায় মাতাল হয়নি। আজ সে তার হ্যান্ডসাম এর নেশায় মাতাল হয়ে সাথে তার হ্যান্ডসাম কেও মাতাল করতে এসেছে। এ এক ভয়ংকর মাতলামি সৃষ্টি করবে।

রাসেল বুকের মাঝে শক্ত করে লাবিবাকে জড়িয়ে ধরে বলে”মাতাল পরী| তোমার না ক্ষুধা পেয়েছে? কিছু মেক করে দেই?”
“উহু| খাব না। ঘুম পাচ্ছে। ঘুমাব”
“চলো তোমায় তোমার রুমে দিয়ে আসি”
“একটু থাকি না প্লিজ। তোমার বুকে এক অদ্ভুত শান্তি পাচ্ছি। প্লিজ সরিয়ে দিও না।”
“আচ্ছা ঘুমাও তুমি”


পর্ব ১০

সকালে ঘুম থেকে উঠে খাটে হেলান দিয়ে বসতেই দেখে শারমিন সামনে বসে আছে। চমকে উঠে বলে
আমি কোথায়? মাই হ্যান্ডসাম কোথায়? তুই তোর রুমেই আছিস কিউটি পাই।

চারপাশে খেয়াল করে দেখে তার রুমে সে। মাথা চুলকাতে চুলকাতে শারমিন কে বলে
_ আমি এখানে কেন? আমি তো এখানে ছিলাম না। কাল রাতে তো আমি মাই হ্যান্ডসাম এর কাছে ছিলাম। এখানে এলাম কি করে?
শারমিন লাবিবার দিকে তাকিয়ে হেসে কুটি কুটি হয়ে যাচ্ছে আর তা দেখে লাবিবা বোকা বনে সাতার কাটছে।

অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলে
_ আমাদের অনুপস্থিতি তে আমাদের কিউটি পাই ভাইয়ার কাছে ঘুমোতে যায়। বাব্বাহ.. আমাদের কিউটি পাই যে কবে বড় হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। এখনতো.. আমি রব না রব না ঘরে.. বন্ধু বিনে প্রান বাচে না।
শারমিনের কথা শুনে লাবিবার লজ্জায় মাথা কাটা যায় যায় অবস্থা। বালিশের নিচে মাথা দিয়ে মুখ লুকায়। আল্লাহ গো কি শরম কি শরম। হয়েছে হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না। এবার উঠে ফ্রেশ হয়।

লাবিবা ফ্রেশ হয়ে টেবিলে এসে দেখে শারমিন টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। খাবার দেখে হুস উড়ে যায়। এক দুই তিন চার পাঁচ ছয় সাত। সাতটা আইটেম তুই করেছিস তাও এত সকাল সকাল
আরে না। আমি এত পারি নাকি? ভাইয়া রান্না করেছে তোর জন্য। তুই নাকি রাতে খাবার খেতে গিয়েছিলি?

খাবারের কথা শুনে লাবিবার রাগ হতে থাকে। রাবিস খবিস বুদ্ধু একটা। আমি নাকি খাবার খেতে গিয়েছি? কেন রে? আমার ঘরে কি খাবারের অভাব? নাকি আমি খয়রাতি যে তোর ঘরে খাবার খেতে যাব? ঐটা তো বাহানা ছিল। ঐ বাহানা দিয়ে না গেলে কি আজ এত বড় পাওনাটা পেতাম? তোমার বুকে ঘুমানোর সুযোগ পেতাম? কেন বুঝনা তুমি? তাও তো থাকতে দিলে না। কি প্রয়োজন ছিল এখানে রেখে যাওয়ার? তখন বললেই তো পারতে ..চলে আসতাম। থাকতাম না তোমার বুকে। তখন তো ঠিকই বুকে আগলে নিয়েছিলে। খাবনা তোমার রান্না কিছুই খাব না।

_ কি হল? শুরু কর।
_ খাব না। মাই হ্যান্ডসাম এর হাতের কিছুই খাব না। আমাকে রেখে গেল কেন? আমিকি বলেছিলাম আমার রুমে নিয়ে আসার জন্য? জানিস কত খারাপ? আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ছিল।
_ শুধু কি বুক পর্যন্ত স্টপ ছিল নাকি… উমম উমম…
_ চুপ চুপ পচা মেয়ে মুখে কিছুই আটকায় না দেখছি।

_ হি হি হি হি। তুই ঘেষে ঘেষে যাবি আর ভাইয়া জড়িয়ে নিলেই দোষ? গুলুমুলু তোকে তো আমারি ধরলে ছাড়তে ইচ্ছা করে না আর তো ভাইয়া
_ চুপ চাপ খা তো।
_ তুই না বললি খাবি না..
_ বলছি বুঝি? ভুলে গেছি। মাই হ্যান্ডসাম কষ্ট করে আমার জন্য ফুড কুক করেছে আমি খাবনাত খাবে কে।

রাসেল কে টেনে লাবিবা মাঠের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মাত্রই অফিস থেকে ফিরেছে রাসেল। লাবিবা রাসেলের কাছে এক দৌড়ে এসে টেনে নিয়ে চলেছে মাঠের দিকে।
আরে আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?
আসোনা..
সামনে তো মাঠ।

মাঠেই তো নিয়ে যাচ্ছি। চলনা… সন্ধ্যা নেমে যাবে একটুপর। তখন আর কিছুই হবে না।
সবুজ মাঠে অর্কিড আর এক জাতীয় কৃষ্ণচূড়া ফুলের কম্বিনেশন এ একটু জায়গা ডেকোরেট করা। মাঝে মধ্যে আবার আর্ট করা বোতল রাখা হয়েছে। বোতল গুলো দেখে রাসেল বুঝতে পারে এগুলো লাবিবার ডিজাইন করা বোতল। পাশেই দুজন ফটোগ্ৰাফার দাঁড়িয়ে আছে। লাবিবা এগুলো ছবি উঠার জন্য ডেকোরেট করেছে। মেয়েটা ছবি উঠতে ভিষন পছন্দ করে এটি তার বাসার ছবি গুলো দেখেই বুজে ফেলেছে রাসেল।
লাবিবাকে বলে

_ তুমি ছবি উঠার জন্যকিন্তু আমাকে আনার দরকার ছিল না। ফটোগ্ৰাফার ছবি তুলবে।
_ তোমাকে আমার প্রয়োজন। আমাকে তো আর ভালুপাস না। তাই বলে কি আমার সাথে ছবিও উঠা যাবে না
রাসেল হেসে দেয়। মাতাল পরীর এই কথাটা শুনে বড্ড হাসি পায়। এতক্ষণে রাসেল খেয়াল করে তার মাতাল পরী আজ শাড়ি পরেছে। নীল শাড়ি সাথে নীল কাচের চুড়ি, নীল জুমকো, ছাড়া চুল আর কোন সাজ নেই। এতেই যেন অন্য রকম রূপসী লাগছে। চোখ সরানো বড্ড দায়। বিভিন্ন পোজ নিয়ে ছবি তুলছে রাসেল লাবিবা। নামি দামি মডেল রাও যেন এত স্টাইল করে ছবি উঠতে পারে না যেভাবে লাবিবা উঠছে। রাসেল মুগ্ধতার স্পর্শে লাবিবার পার্সোনালিটি উপভোগ করে।

আজ উইকেন্ড তবুও সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকে রাসেল। মাতাল পরী যে আজ ফ্রি একদম একা সেদিকে খেয়াল নেই তার। রাত ৮.৩০ টার দিকে ফোনে একটা টেক্সট আসে। ওপেন করতেই দেখে লাবিবা টেক্সট করেছে “আমায় তো ভালুপাসো না। তাই বলে কি একবারও খবর নেওয়া যায় না? ডোর টাও কি খুলা যায় না? আমি কি খুব খারাপ? আচ্ছা বিরক্ত করবনা। সরি ফর সেন্ডিং টেক্সট।”
রাসেল ডোর খুলে দেখে কেউ নেই। লাবিবার ফ্লাট ও লক করা দেখে বাইরে বেরিয়ে যায়।

লেকের পাড়ে বসে খুব সুন্দর একটা সুর তুলেছে লাবিবা ভায়োলিন এ। গ্রীষ্মের গরম রাতে শীর শীর করে বয়ে আসা ঠান্ডা বাতাস.. লেকের পানির ছলাৎ ছলাৎ আওয়াজ.. নিস্তব্ধ জনমানবহীন পরিবেশ আর মুগ্ধ করা ভায়োলিনের সুর। সবমিলিয়ে যেন কল্পনার রুপকথার রাজ্যের অনুভবের প্রতিচ্ছবি এঁকেছে। আর সেই রাজ্যের রাজা তার মাতাল পরীর পাগল করা ভায়োলিনের সুরের ডাকে এসে মাতাল পরীর পায়ের কাছে হাটু মোড়া দিয়ে বসে সেই সুরের সাথে এক হয়ে কল্পনার জগতে ভাসছে। তার মাতাল পরীর চোখ বন্ধ করে বড্ড আবেগ মাখানো তুলা সুরে প্রেমে পড়তে থাকে।

ভায়োলিন বাজানো শেষ হলে লাবিবা চোখ খুলে দেখে সামনে কেউ বসে আছে। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে।
_ ও আমার আল্লাহ.. তুমি কি ভুত? কি কিউট দেখতে.. একদম মাই হ্যান্ডসাম এর মত
_ আমি তোমার হ্যান্ডসাম ই।
_ লাবিবা দু গালে স্পর্শ করে সত্য যাচাই করে নেয়। কখন এসেছো?
_ অনেক্ষণ আগে।

_ আমায় ডাকনি কেন?
_ ডাকলে তো তুমি হাতে ভায়োলিন বাজানো বন্ধ করে মুখে বাজাতে। তখন তো এত আবেগময় সুর আমি উপভোগ করতে পারতাম না।
_ তাও ঠিক। চল বাসায় যাই।
_ চল হেঁটে যাই। ওয়েদারটা ভাল লাগছে।
_ উহু.. প্রেমময় লাগছে। প্রকৃতি বড্ড তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে। একটু প্রেমের বর্ষনের আবদার রাখছে। একটু ছোয়া পেলেই যেন হৃদয় মন প্রকৃতি আবার প্রানচঞ্চল হয়ে উঠবে। প্রকৃতি একটু বর্ষন চায়।

_ আর আমার মাতাল পরী কি চায় শুনি?
_ মাতাল পরী কিছু গোপন করে না.. ইশারাতেও বোঝায় না.. বাহক ও ধরে না.. মুখে বলে.. সামনা সামনি বলে.. চেয়ে নেয়। হয়ত তাই কিছুই পায় না।
_ যেমন আছ ভাল আছ। তোমার জন্য যা বরাদ্দ তুমি তাই পাবে। বেশি কিছুর চাওয়ার প্রয়োজন নেই।
_ আমার চাওয়া একটাই। আমার তো রাসেল হলেই চলবে| আমার রাসেলকে প্রয়োজন। আই নিড রাসেল খান।

দুজনে বাসার রাস্তা ধরে হাঁটছিল। এ কথায় থেমে যায় রাসেল। বুকের ভেতর অস্থিরতা কাজ করছে। সামান্য একটা চাওয়ার কথা শুনে নিজের বুকে অস্থিরতা শুরু হয়েছে তাহলে যে চেয়ে চেয়ে নিঃশব্দে অশ্রু ঝরায় তার বুকে কতটা শুন্যতা কাজ করে? ভেবে পায় না রাসেল। এ শূন্যতা হয়তো পরিমাপ করা যায় না। তাই হয়তো এই শুন্যতা পরিমাপ করার সাহস পায় না। সে তো চাইলেই এই শূন্যতা পূর্ণ করে দিতে পারে। তবে কেন করবেনা সে?

এতে যে তারো সুখ নিহীত| খুব বলতে ইচ্ছে করছে তোমার প্রয়োজনে সর্বদা নিজেকে তৈরি রাখব আমি। তোমার যেমন আমি হলেই চলবে তেমনি আমার ও তুমি হলেই চলবে। কিন্তু মুখ থেকে কোন কথা বের হয় না। মাতাল পরী তার দিকে মায়া ভরা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এ দৃষ্টি তে কিছু পাওয়ার আকুলতা দেখতে পাচ্ছে রাসেল। কিন্তু এই মুহূর্তে তা দেওয়ার জন্য সামর্থবান হয়নি তাই নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়। আবার হাটতে থাকে রাসেল সাথে লাবিবাও পা চালায়। রাসেল এবার লাবিবাকে প্রশ্ন করে
_ মাতাল পরী… আজ তোমার বেবি কোথায়? আজ কি বোতলে চুমুক দেওয়া হয় নি?

_ না। দিব তো। রাত যত গভীর হচ্ছে তত আমার নেশা পাচ্ছে।
_ আজ না করলে হয়না? খুব কি কষ্ট হবে?
_ পাচ বছর থেকে টানা করছি। কষ্ট না হলেও করব। আমাকে যে মাতাল হতেই হবে। আমার বেবি আমাকে মাতাল করে। তাই আমি আমার ড্রিংস করি। ভাল কিছুও আছে যা আমাকে মাতাল করবে। কে এনে দিবে আমায় সেটা? কেউ তো আমায় ভালুপাসে না।
রাসেল একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ থাকে।
একটু পর আবার বলে

_ আমি ছাড়া থাকতে পারবে?
_ এখনো তো থাকি। কষ্ট হয়।
_ এখন যদি তোমায় ছেড়ে চলে যাই একেবারে?
_ লাবিবার দ্বিতীয় বার মৃত্যু ঘটবে।
_ যদি আবার ফিরে আসি?

এবার লাবিবা কেঁদে ফেলে। রাসেলে গলায় দু হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে _ তবুও ভালুপাসি বলবে না|
রাসেল হেসে ফেলে। গলা থেকে হাত সরিয়ে হাত ধরে হাঁটতে থাকে। এদিকে লাবিবা কাঁদতে কাঁদতে এগুতে থাকে।

এভাবেই মান অভিমান এ কাটতে থাকে রাসেল লাবিবার আবেগময় দিন। আর সেদিকে পুরতে থাকে বৃষ্টির ছটফট করা মন। তুহান তো ডুমুরের ফুল। সোহানার শরীর ও খারাপ হতে থাকে। এর কোনটাই রাসেলের অজানা নয়। সেও হাত পা বাধা হয়ে আছে বিদেশের মাটিতে। একটা কিছু ব্যবস্থা করতেই হবে। রাসেল ফোন দেয় তুহান কে। তিনবার বেজে যাওয়ার পর ফোন উঠায় তুহান।

_ হে রাসেল বল।
_ কিছু কথা ছিল ভাইয়া।
_ আমি জানি কি বলবি। মমের অপারেশনের ব্যপারে তো? আমি তো বলেছি আগেই আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি চাকুরি করি। তোর মতো চাকুরী দেই না।
_ তুমি দু একদিনের বেশি বাসায় থাক না ভাইয়া। তুমি চাইলে ছুটি পাবে।
_ হা পাওয়া তো যেতেই পারে..

_ মিথ্যা বলো না ভাইয়া। আমাকে এত কিছু বুঝাতে হবে না। তোমার অফিসে খুজ নিয়েছি আমি। তোমার সব ছুটি কাটানো হয়েছে। তোমাকে আমার সন্দেহ হয় ভাইয়া। কোথায় থাক তুমি?
_ রাসেল.. মুখ সামলে কথা বল। তোকে কৈফিয়ত দেব না আমি।
_ চট্রগ্রাম এর বাড়িটা তোমার নামে ছিল। সেটা আর তোমার নামে নেই। অন্যএকজনের নামে হয়ে গেছে। তুমি কি আমাদের ঠকাচ্ছ ভাইয়া? তুমি কি চাওনা মম ভালো হক? সুস্থ হোক? তুমি কি মমের ছেলে নও?

_ মম তো আমার থেকে তোকে বেশি ভালোবাসে তাহলে তুই সুস্থ কর মম কে।
_ ঠিক আছে। আমার মম তো আমি একাই যথেষ্ট। লাগবেনা তোমাকে। আমি মমের একাই ছেলে।
_ ফোন দিবি না আমাকে বলে তুহান ফোন কেটে দেয়।
খুব কান্না পাচ্ছে রাসেলের। সেই আগের ভাইটি আর নেই তার। পর হয়ে গেছে। যে ভাইয়ের সাথে জোর গলায় কথা বলে নি আজ তার কথার উপর কথা বলেছে। খুব খারাপ লাগছে তার। তার কাউকে প্রয়োজন এই মুহুর্তে। হ্যাঁ তার মাতাল পরী তার শান্তির উৎস।


পর্ব ১১

কোথায় তুমি মাতাল পরী? তোমার ফ্লাট লক করা কেন? আজো কি তুমি রাস্তায় নেমেছ মাতাল হয়ে… হাতে কি এখন তোমার বেবি রয়েছে? নিজের জীবন টাকে এভাবে কেন শেষ করে দিচ্ছ? তুমি কি এই ওয়াইন ছেড়ে দিতে পার না? আমি যে তোমাকে ছাড়তে বলতে পারি না। তোমার যে নেশার প্রয়োজন। মদের নেশা ছেড়ে যে তুমি আমার নেশায় মাতাল হতে চাইবে। আমার পক্ষে যে এই মুহুর্তে তোমায় দেওয়া সম্ভব না। আমি ও যে তোমার নেশায় মাতাল হতে চাই মাতাল পরী। আমার সময় চাই একটু।

ততদিন তুমি কষ্ট করে ড্রিংস কর প্লিজ। তুমি মাতাল অবস্থায় থাকলে তোমার বাচ্চামো গুলো ফুটে ওঠে। আর স্বাভাবিক অবস্থায় তুমার আবদার গুলো ভয়ংকর ভাবে আমার উপর ঝেঁকে বসে। আমার কিছুই করার থাকে না। চাইলেও তোমার ভয়ংকর আবদার গুলো আমি পূরন করতে পারি না। তোমার এই ভয়ংকর আবেগী আবদার গুলো যে বড্ড পোড়ায় আমায়|

তোমাকে কি বার বার আমাকে লোকেশন ট্রাক করে খুজে নিতে হবে? তুমি কি একটু ফোন টা তুলতে পারো না? এতটাই মদে মজেছো তুমি?

লোকেশন দেখে রাসেলের মাথায় বাজ পড়ে। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। এই মেয়ে কত জালাবে আমায়? ও সুগার বিচ এ চলে গেছে.. এত রাতে ঐখানে যাওয়ার মানে কি? অলরেডি বারটা বাজতে চলল। এখান থেকে যেতেও প্রায় দুই ঘণ্টা লাগবে। তবুও যাব। আমি আসছি।

রাত 1.30 টায় রাসেল বীচে পৌঁছে। আশে পাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। তাই রাস্তা ছেড়ে বালির দিক হাটা দেয়। কিছুদুর এগিয়ে একটি গাড়ির আলো দেখতে পায় ওপারে টরেন্টোর ডাউন টাউন থেকে বহমান বায়ু ধাবিত হচ্ছে তার তার সাথে মেয়েলি কন্ঠের আর্তনাদ। ভয় পেয়ে যায় রাসেল। মাতাল পরী বলে চিৎকার করে ডাকতে থাকে। দৌড়ে এগিয়ে আসে গাড়ির দিকে। কিছুটা দুরে বসে লাবিবা চিৎকার করে কাঁদছে। অনেক দিনের জমিয়ে রাখা কান্না গুলো বুক চিরে যেন বের হচ্ছে।

ঢেউ গুলো সব আচরে পড়ছে বালিতে। সাথে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে কোমল পা দুটো। দুটো বোতল পড়ে আছে সাইটে আর হাতে একটা। রাসেল দৌড়ে গিয়ে লাবিবাকে ধরে। আবছা আলোতেও বেশ বুঝতে পারে তার মাতাল পরী অবচেতন প্রায়। লাবিবা একবার রাসেলের দিকে তাকিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। রাসেল বালিতে পড়ে যায়। লাবিবা চেঁচিয়ে বলে উঠে

_ এখানে কেন এসেছ তুমি? যেখানেই যাই ছায়ার মতো আমার পিছু পিছু আসো। ইশান আর হিয়া মন্ডলের মতো তুমিও একটা পেইন। ওদের দেওয়া পেইনে তো কবে থেকেই জর্জরিত হয়ে গেছি আর এখন নতুন করে তুমি এড হয়েছ। কি চাও তোমরা? আমার তো কিছুই নেই। আমি তো তিলে তিলে শেষ হয়ে গেছি। আর কত পোড়াবে আমায়? বলতে বলতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। রাসেল এসে ধরে নেয়। লাবিবাকে বুকের মধ্যে আটকে নেয়। এরকম কিছু হবে তা ভাবনার অতীত। কোন কথাই মাথার উপর দিয়ে যায় না। সব গুলো কথায় যেন ব্রেনে ডুকে যায়। এতটা কষ্ট পাচ্ছে মাতাল পরী আমার জন্য… আমাকে তার বাবা মার দলে ফেলে দিল। আমি তোমার অতীত সম্পর্কে জানি না। শুধু জানি তোমার বাবা মা তোমার সাথে নেই। তুমি একা ..বড্ড একা। আমায় ক্ষমা করো মাতাল পরী.. আমি তোমাকে কখনো কষ্ট দিতে চাই না।

পিট পিট করে চোখ খুলে লাবিবা। তাকিয়ে দেখে রাসেল তার মুখে পানি দিচ্ছে। গাড়ির ভিতরে ব্যাক সাইটে রাসেলের কুলে শুয়ে আছে। এতক্ষণ পর চোখ খুলায় রাসেলের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। লাবিবা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখে। এভাবে তাকানো দেখে রাসেল চুপ হয়ে জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। লাবিবা বলে _ মাই হ্যান্ডসাম.. হাসলে কেন?
_ টানা ২ ঘন্টা পর তোমার জ্ঞান ফিরল। আমি হাসবনা?

_ তাহলে হাসি থামালে কেন? একটু হাস না …হাসলে তোমায় কত সুন্দর লাগে।
_ মাই মাতাল পরী ইজ ব্যাক। তোমার কাছে আমি আজ কিছু জানতে চাইব। তোমার কাছে এটা যন্ত্রনার হলেও আমি আজ জানতে চাই। তোমার অতীত জানতে চাই। বলবেনা আমায়?
লাবিবা চুপচাপ গাড়ি থেকে বেড়িয়ে গাড়ির সামনে এসে উপরে উঠে বসে পড়ে। রাসেল ও বের হয়ে এসে লাবিবার পাশে বসে।

“জানো আজ আমার জীবনের খুব বড় একটা দিন। আজ এইদিন থেকে আমার একা বেঁচে থাকার লড়াই শুরু হয়েছে। আমার বাবা আর মা সংসার জীবনে সুখী ছিলেন না। আমার মার একজনের সাথে রিলেশন ছিল। কিন্তু বাবা জানতোনা কার সাথে মার রিলেশন? এই নিয়ে অনেক অশান্তি হত। প্রায়ই ঝগড়া হত। আমি কিছুই বুঝতাম না। ওরা যখন ঝগরা করতে করতে মারামারি পর্যন্ত করত তখন আমি খাটের নিচে আমরা তখন এখানেই ছিলাম কানাডাতে। একদিন বাবা আমাকে স্কুল থেকে আনতে যায়।

আমার স্কুল সেদিন একটু আগেই ছুটি হয়। বাবা আর আমি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে ফিরছিলাম। আমাদের ফ্লাটের সামনে আসতেই দেখি বাবার এক বন্ধু আমাদের ফ্লাট থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। আংকেল কে উশকো খুশকো লাগছিল দেখতে। বাবা কখন এসেছে জিজ্ঞাসা করলে আংকেল বলে বাবার খুজেই এসেছে একটু আগে। বাবা নেই দেখে চলে যাচ্ছিল। তখন বাবা বাসায় ডুকতে বললে আংকেল না ডুকে কাজের বাহানায় চলে যায়। আমি আর বাবা ভিতরে ঢুকে আমি আমার রুমে চলে যাই আর বাবা তাদের রুমে চলে যায়।

আমি চেঞ্জ করার পর আব্বুর চিৎকার শুনি। তখন তাদের রুমে গিয়ে দেখি মা আধখুলা অবস্থায় মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। তার দুদিন পর আজকের এই দিনে বাবা মার ডিভোর্স হয়ে যায়। মা ঐ আংকেল এর কাছে চলে যায়। আর বাবা বিয়ে করার জন্য মেয়ে দেখতে থাকে। পাঁচদিন পর আমার জন্মদিন ছিল। সেদিন বাবা আমার হাতে কয়েকটা দলিল হাতে দিয়ে বলেছিল এইটা আমার জন্ম দিনের উপহার। আমি তখন কিছুই বুঝিনা এসবের। বাবা আমাকে তারপর বাংলাদেশে চাচার কাছে পাঠিয়ে দেয়। নয় বছর বয়সে আমি বাবা মা হারা হয়ে যাই।”

“তারপর বাংলাদেশে তুমার চাচার কাছে বড় হয়েছ?”
“তারপর আমাকে চাচা তার নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। চাচা আমাকে আদর করে খুব। কিন্তু চাচী আমাকে সহ্য করতে পারত না। উঠতে বসতে কথা শুনাতো। গায়েও হাত তুলতো। কিন্তু এসবের প্রতিবাদ চাচা না করলেও আমার চাচাতো বোন ঠিকই করতো। আপু আমাকে খুব আদর করতো। কিন্তু চাচীর অত্যাচার সহ্য করার ক্ষমতা আমার হয়ে উঠে নি। চাচাকে বলে জিদ করে আমার বাবার বাড়িতে চলে যাই। সেখানে একাই থাকতাম। দু তলা পুরো বাড়ির সমস্ত কিছু আমিই গুছাতাম। বাবা আমার জন্য অনেক টাকা দিয়ে দিয়েছিল। তা দিয়ে আমার জীবন চলতো। পড়া লেখায় ভালো ছিলাম। তাই সব কিছুতেই ফেসিলিটি পেতাম। প্রাইভেট পড়তে হত না।

যা না বুঝতাম তা আপু এসে বুঝিয়ে দিয়ে যেত। একদিন আপুকে ডাকতে চাচার বাড়িতে যাই। তখন দেখি চাচা চাচি আমাকে নিয়ে কথা বলছে। কি বলছে শুনার জন্য দরজায় কান পেতে শুনতে পাই বাবা আমাকে যে দলিল গুলো দিয়েছে ঐ গুলো হচ্ছে বাবার সমস্ত সম্পত্তির দলীল যা আমার নামে লিখেদিয়েছেন। আমার আঠার হওয়ার পর কৌশলে আমার কাছ থেকে সব লিখে নিবে। তখন আমার আঠারো হওয়ার তিন মাস বাকি। সব ই বুঝতাম। তাই এইচএসসি পাশ করার পর স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগলাম। পেয়েও গেলাম। তাও আবার কানাডাতেই। চুপি চুপি সব বিক্রি করে কানাডাতে চলে আসলাম। এইতো স্টাডি শেষ করে দিব্বি চাকরি করছি। নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি নিজের মতো করে।”

“তুমি কত বছর থেকে এখানে? তোমার বাবা মা এখন কোথায় জানো?”
“পাচ বছর। বাবা আর নেই। জানো তুমি যেদিন নায়াগ্ৰা গিয়েছিলে সেদিন আমি তোমার অফিসে খুজ নিয়েছিলাম। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছিল আর অনেক দিন নায়াগ্ৰা যাওয়া হয় না তাই আমিও যাই। তোমাকে সেখানে গিয়ে চমকে দিব ভাবি। কিন্তু সেখানে গিয়ে আমিই চমকে যাই। আমি ফলসের কাছে এসে সেলফি তুলছিলাম। তখন আমার চোখ যায় সামনে থাকা দুজন মেয়ের উপর। একজন আমার ছোট হবে আরেকজন আধবয়সী মহিলা। মহিলাটি ছিল আমার মা। এত বছর পর ও চিনতে ভুল করিনি। আমি মাকে দেখে দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি। দৌড়ে তার কাছে যাচ্ছিলাম মা মা বলে। কিন্তু তার আগেই পাশের মেয়েটা মা কে মম বলে জড়িয়ে ধরেছিল।

আমি সহ্য করতে পারি নি। সেদিনি চলে আসলাম বাসায়। দু দিন পেরিয়ে যায় তবুও তুমি খোজ নাও না আমার। ভালোবাসার মানুষ গুলো আমাকে ছেড়ে চলে যায়। মাথা কাজ করছিল না। সেদিন তুমার সিগারেট নিয়ে বলা কথা গুলো মনে হতে থাকে। নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা হয়। তাই বিষ পান করি।”
“তুমি সিগারেট নেশা করতে চেয়েছিলে তাই তো আমি রেগে গিয়েছিলাম।”
“জানি। তবে আমাকে ছেকা দিলে কিনতু আমি সত্যি সত্যিই সিগারেট খাওয়া শিখব।”

“আর যদি ছেকা না দেই?”
“সংসার করবো। আমার একটা সংসার চাই হ্যান্ডসাম। সেই সংসারে তোমাকে আমার প্রয়োজন। আমি আর একা থাকতে চাই না। আমার একটা ভালোবাসার মানুষ চাই। সুন্দর গোছানো সংসার চাই। ছোট্ট ছোট্ট রাজকন্যা রাজপুত্র চাই।”
“হুম। বুঝলাম। তো আমার মাতাল পরী এবার সংসার চায়।”
“তোমার পরিবারের সংসারে যেতে চাই। বড্ড মনে লেগে গেছে। আমার চাই।”
“আমিও চাই। খাবার খেতে। বাসায় যেতে।ফ্রেস হতে। ঘুমোতে। আর আমার সাথে আমার মাতাল পরীও আছে। চল উঠ। গাড়িতে বসো।”

“কি হল উঠ। কোলে নিতে হবে?”
“বলে দিতে হবে?”
“হা হা হা… চলুন আমার মাতাল পরী”


পর্ব ১২

লাবিবা গাড়িতে উঠেই আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। সারারাত কান্না করার জন্য শরীরটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। রাসেল ড্রাইভ করতে করতে কয়েকবার ডেকেছে বাট ঘুমপরীরা তার মাতাল পরীকে জাগতে দেয় নি। গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে সে। রাসেল ড্রাইভ করছে আর বার বার তার মাতাল পরী কে দেখছে। মাতাল পরী তুমি এত কিউট কিভাবে হতে পার? ঘুমোলে তোমায় আরো বেশী কিউট লাগে। ইচ্ছা করে খেয়ে ফেলতে। শ্যামা বর্নের হওয়াতে আরও সুন্দরী তুমি। ফর্সা হলে ফরেন দের মতোই লাগতো।

ফর্সা খুব একটা ভালো লাগে না। হয়তো নিজে ফর্সা তাই। ভোরের আলো ফুটেছে চারিদিকে। হালকা রোদ পড়েছে মুখের উপরে। রোদের আলো ঘুমন্ত মাতাল পরীর ঘুমের কিছুই করতে পারছে না। বরং আরো ভালো করে ঘুমোচ্ছে। মুখের উপর পড়ে থাকা চুল গুলো লাল লাল গ্লেস দিচ্ছে। কতইনা শান্তিতে ঘুমোচ্ছো তুমি। কিন্তু আমার শান্তিতে ড্রাইভ করার তো বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছ। তোমার লাল আভা ছড়ানো নাক আর লাল টকটকে ঠোঁট তো আমার ড্রাইভ এর বার টা বাজাচ্ছে। আমার ভয়ংকর রোগটা উকি দিয়ে আক্রান্ত করে দিতে চাচ্ছে আমায়। আমাকে এভাবে না পোড়ালে কি চলে না তোমার? তুমি তো আর এমনি এমনি ডাকলে উঠবেনা .. তোমাকে আমি আমার ভয়ংকর উকি দেওয়া রোগে আক্রান্ত হয়েই তোমার ঘুম ভাঙাব। তোমার ঠোঁটে স্পর্শ করার রাইট আমার নেই। কিন্তু তোমার নাক টাকে কিন্তু আমি নিজের সম্পদ ই মনে করি।

রাসেল একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে এসে গাড়ি থামায়। দুবার লাবিবাকে উঠার জন্য ডাক দেয়। কিন্তু বেচারার ঘুম ভাঙার কোন হুস নেই। আরো যেন শান্তির ঘুম ঘুমোচ্ছে। রাসেল এভাবে ঘুমোতে দেখে একটা মেকি স্মাইল দিয়ে সিট বেল্ট খুলে লাবিবার সিট বেল্ট খুলে দেয়। মুখের উপর পড়ে থাকা চুল গুলো হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়। নাকের ডগায় ছোট্ট করে একটা কিসি দিয়ে জোরে একটা কামড় বসিয়ে সরে বসে। ঘুমের মধ্যে নাকে ব্যাথা পেয়ে চিল্লাচিল্লি শুরু করে দেয়”বাঁচাও বাঁচাও .. ইন্দুর খালা আমার নাক নিয়ে গেল গো.. ও চিকা মামী গো আমার নাক নিও না গো.. হুস হুস.. নাক ছাড়া আমায় এলিয়েন দেখতে ‌লাগবে গো.. বাচাও বাচাও..”।

এদিকে রাসেল হেসে কুটি কুটি হয়ে যাচ্ছে লাবিবার চিৎকারে। হাসির শব্দে লাবিবা চোখ খুলে চুপ হয়ে যায়। এইটা যে তার হ্যান্ডসাম ইন্দুরের কাজ বুঝতে পারে। ব্যথা একটু জোরেই পেয়েছে। অভিমানে দু চোখ থেকে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। চোখের জল দেখে রাসেল চুপ হয়ে যায়। দু হাত দিয়ে দু গালে হাত দিয়ে বলে”খুব কি ব্যাথা দিয়ে ফেলেছি?”লাবিবার যেন আরো অভিমান এসে ভর করে। রাসেলের চোখ চোখ রেখে বলে”লেগেছে তো। নাক ছাড়া আরো অনেক জায়গায় লাগে। দেখতে পাওনা তুমি। আমায় তো ভালুপাস না। কেন করো এমন আমার সাথে?

খুব কি… উউউমম…”। রাসেল আর কিছু বলতে না দিয়ে লাবিবার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁটে আবদ্ধ করে নেয়। লাবিবা নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়। কিছুক্ষন যাওয়ার পর খেয়াল করে একিভাবে আছে তার ঠোঁট দুটো। ভাবান্তর হয়ে চোখ খুলে তাকায়। দেখে রাসেল তার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে চোখে কথোপকথন হতে থাকে। রাসেল লাবিবার ঠোঁটে হালকা কামড় দিয়ে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে বাইরে গিয়ে দাড়ায়। লাবিবা তো অবাক। এটা কি হলো? এত লাভ বাইট দেয় কেন আমায়? খেয়ে ফেলবে নাকি?

রাসেল বাইরে দাড়িয়ে নিজেকে শান্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কি এমন হয় যে মাতাল পরীর কথায়.. কিভাবে করলাম এই কাজ? মাতাল পরী মাতাল না হয়েই যখন মাতলামো সুর টানে তখন কিভাবে দুরে সরে থাকা যায়? রাসেল লাবিবাকে নেমে আসতে বললে সুর সুর করে নেমে এসে সামনে দাঁড়ায়। রাসেল খেয়াল করে সত্যিই জোরে ব্যাথা পেয়েছে লাবিবা। নাকের ডগায় হালকা দাঁতের ছাপ বসে গেছে।

দুজনে একটা বাঙালি রেস্টুরেন্টে ঢুকে। দুজনেই ফ্রেশ হয়ে খাবারের জন্য টেবিলে গিয়ে বসে। রাসেল ছোলা ডাল, রুটি, ডিম, জুস অর্ডার করে। খাবার আসতেই লাবিবা মুখ সরিয়ে নিয়ে বলে

“আমি এগুলো খাব না”
“সকালের নাস্তায় এগুলোই পাওয়া যাবে এখানে। খেয়ে নাও।”
“আমি খিচুড়ি আর বেগুন ভাজা আর আলু ভাজি আর ইলিশ মাছ ভাজা খাব।”
“ব্রেকফাস্টে এসব পাবে না। বুঝ একটু।”
“না।”
“খাইয়ে দিতে কি হবে?”
“বলে দিতে কি হবে?”
“হা হা হা.. নিন হা করুন আমার মাতাল পরী”
দুজনে খেয়ে বাসায় চলে আসে।

লাবিবা ডিউটি থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে এসে ক্লাবে চলে যায়। ক্লাবে ডুকতে নেয় তখনি রাসেল হাত ধরে আটকে নেয়। রাসেল কে দেখে খুশিতে বাকবাকুম হয়ে যায়। রাসেল হাত ধরে ক্লাব থেকে বেরিয়ে আসে।

_ মাই হ্যান্ডসাম। কোথায় যাচ্ছি আমরা?
_ আমরা আজ রাস্তায় হাটবো।
_ আর আমার বেবি?
_ আজ ড্রিংস করবেনা। আজ আমাকে সময় দিবে।
_ একটা বোতল প্লিজ?
_ ভেবে দেখবো।

_ আচ্ছা তুমি রাস্তায় কেন রাতের বেশির ভাগ সময় কাটাও? বাসায় বসেই তো ড্রিংস করতে পারো।
_ তুমি যদি কখনো ড্রিংস করো তাহলে একবার রাস্তায় আরেকবার বদ্ধ ঘরে বসে করে দেখো কোনটাতে কেমন ফিলিংস পাও। বদ্ধ ঘরে বড্ড একা লাগে। মাতাল হাওয়ায় পর বন বন করে ঘুরতে থাকে সব। তখন ঘর নেশার জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। আর রাস্তায় থাকলে ইচ্ছা মত ইনজয় করা যায়।
_ কই আমি তো কখনো তোমায় সেই লেভেলের মাতাল হতে দেখলাম না
_ সত্যি কথা বলবো?

_ হুম।
_ তুমি আমার সামনে আসলে আমার নেশা অটোমেটিক কমে যায়। আমি অতিরিক্ত ড্রিংস করলেও তোমার সাথে থাকলে কাজ করে না নেশা।
_ জানি।
_ তো জিজ্ঞাসা করো কেন? রাতের আকাশ কত সুন্দর না? দেখ আকাশে কত তারা ফুটেছে। আমি আর তুমি প্রত্যেক পূর্ণিমায় জোছনা বিলাস করবো কেমন?
_ আচ্ছা। এখন আমার সাথে এসো।
_ এইটা তো পার্লার। আমি পার্লারে যাই না তো।

_ আজ যাবে। কোন কথা নয়। তারাতারি বের হবে। ওয়েট করছি।
_ তারাতারি বের হবে মানে? ভিতরে গিয়ে করবো টাকি? আরে…
রাসেল ভিতরে ঢুকিয়ে দেয় লাবিবাকে।

প্রায় দুই ঘণ্টা পর লাবিবা পার্লার থেকে বের হয়ে আসে। এতক্ষণ রাসেল বাইরেই ওয়েট করছিল। লাবিবাকে দেখে তো রাসেল দিলপে মারগায়া… দেওয়ানি মাস্তানি আশিকী হ গায়া ।
চুল গুলো উচু করে ডিজাইন করে খোপা করা কানে রেড় কালার বড় দুল মুখে হালকা মেকাপ রেড় লিপিষ্টিক গলায় রেড় ডায়মন্ডের সিম্পল চিক দু হাতে রেড় স্টোনের চুর রেড় কালার হাই হিল উইথ রেড় বারবি গাউনে আবৃত লাবিবাকে পুরো একটা রেড় ফেয়ারি ডল লাগছে। রাসেল আগেই এসবের ব্যবস্থা করে গিয়েছিল।
রাসেলের সামনে এসে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। যে মেয়ে লজ্জা পায়নি কখনো তার হ্যান্ডসাম এর কাছে সে আজ লজ্জার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। চোখ তুলে তাকাতেই পারছে না। আর এদিকে মাতাল পরীর থেকে চোখ সরাতেই পারছে না।

_ আমার মাতার পরীর যে এত লজ্জা.. আজ প্রথম দেখছি জানছি। একটু কম লজ্জা পেলে কি হয়? এমনিতে কিলার লুক তোমার তার উপর যদি লজ্জা নামক গান দিয়ে আমায় নিঃশব্দে সুট করে যাও তাহলে কিন্তু আমার কোন দোষ নেই তুমি বিয়ের আগেই বিধবা হলে।
লাবিবা এবার রাগী চোখে রাসেলের দিকে তাকায়। রাসেল অচমকা লাবিবাকে কোলে তুলে নেয়।
_ রাগী লুক দিয়ে লাভ নেই। আমার বাচা মরা তোমাতেই সীমাবদ্ধ।

লাবিবা মুচকি হেসে রাসেলের গলা জড়িয়ে নেয়।

লিফটে উঠে ছাদে চলে আসে। পুরো ছাদ রেড় রোজ রেড় ফেইড়ি লাইট রেড় ক্লথ এ ডেকোরেট করা দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে লাবিবা। রাসেল এর কোল থেকে নেমে দৌড়ে দৌড়ে দেখতে থাকে। ভারি গাউন আর হাই হিলের জন্য দৌড়াতেও পারছে না। হিল খুলে গাউন উপরে তুলে দৌড়াতে থাকে। রাসেল একমনে তার মাতাল পুতুল পরীকে দেখতে থাকে। হাতে রেড় কাপড় নিয়ে লাবিবার সামনে দাড়ায়। লাবিবা কাপড় দেখে বলে
_ সারপ্রাইজ? ওকে বেধে দাও।

রাসেল বাধতে গিয়ে বাধে না।
_ না চোখ বাধব না। চোখ খুলেই সারপ্রাইজ নাও।
রাত বারোটা বাজার সাথে সাথে চারিদিকে শব্দবাজি ফুটতে থাকে। লাবিবা বাজি ফুটানো দেখতে থাকে। বাজি গুলো উপরে উঠে
“Happy birthday Matal pori”লেখা উঠে। খুশিতে লাবিবা কান্না করে দেয়। তখনি নূপুর, শারমিন, রিমন (রাসেলের PA) লাবিবার কানের কাছে এসে বলে many many returns of the day cutie pie

লাবিবা জড়িয়ে ধরে ওদের। তখনি রিমন কেক নিয়ে হাজির। রাসেল লাবিবাকে কেকের সামনে এনে দাড় করায়। নাইফ হাতে কেক কাটতে কাটতে কানে ফিসফিসিয়ে বলে
“happy birthday my matal pori”

লাবিবার কানে কাতুকুতু লাগে তাই খিলখিলিয়ে হেসে উঠে। কেক কাটা শেষ করে সবাই সবাইকে খায়িয়ে দেয়।
রাসেল লাবিবার সামনে এসে হাটু মোড়া দিয়ে বসে পড়ে। হাতে একটা রিং লাবিবার দিকে এগিয়ে দেয়। লাবিবার আঙুলে রিং পরিয়ে বলে
“এইযে আমার মাতাল পুতুল লাল পরী। আমি কিন্তু তোমাকে প্রোপোজ করছি না। আমি তোমাকে সাদরে গ্রহণ করছি আমার দুনিয়ায়। আমার বুকের ফুল তুমি। পাশে তাকিয়ে দেখ তোমার জন্য দশ বোতল রেড় ওয়াইনের ব্যবস্থা করা আছে। আজ তোমার শেষ বারের মতো মাতাল হাওয়ার সুযোগ করে দিলাম। আর কখনোই তুমি মাতাল হতে পারবে না।

কিন্তু সারাজীবন আমার মাতাল পরীই হয়ে থাকবে। আর কখনো বলবে না কেউ ভালুপাসে না। তাহলে আমি কিন্তু রাগ করবো। কারন তোমার হ্যান্ডসাম তোমাকে খুব ভালোবাসে। প্রচুর ভালোবাসে। অনেক ভালোবাসে।”

লাবিবা কাঁদতে কাঁদতে হেকচি তুলে ফেলে। আর রাসেল চোখ মুছে দিয়ে ছাদের কিনারায় লাবিবাকে নিয়ে গিয়ে দাড়ায়।
“মাতাল পরী… যার জন্য চোখ বাধলাম না আর তুমি কেদে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা করতে লেগে গেলে? সারপ্রাইজ টা দেখবে কি করে?”
“আরও আছে?”

“হুম”
লাবিবা চোখ মুছে সামনে তাকাতেই দেখে লাভ শেইপের এত্ত এত্ত ফানুস তার চারদিকে ঘেরা। এত ফানুস বাতি দেখে আবার লাফাতে থাকে। লাফাতে লাফাতে যখন হয়রান হয়ে যায় তখন এসে রাসেলের কোলে বসে পড়ে। এক হাতে ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে রাসেলের কোলে বসে আকাশ জুড়া ফানুস আর তারার মেলা উপভোগ করতে থাকে।


পর্ব ১৩

বাসায় গিয়ে শুয়ে শুয়ে রাতের কথা ভাবতে থাকে লাবিবা। গায়ে তোর এখনো রেড় গাউন পড়া।
“আমি যে এত সুন্দর আগে তো কখনো দেখি নি। নিজেকে পরী রাজ্যের লাল পরী মনে হচ্ছিল এখনো হচ্ছে। আর এই লাল পরীর ব্লাক প্রিন্স মাই হ্যান্ডসাম। এতটা সুন্দর কেন তুমি? তুমি কি জানো কাল ব্লাক সুট কোট _এ তোমায় কতটা হ্যান্ডসাম লাগছিল| আমি তো তোমার কোলে চড়ে তোমাকেই দেখছিলাম। শেষ কবে আমার বার্থডে পালন হয়েছিল মনেই নেই। কিন্তু এভাবে আমার বার্থডে সেলিব্রেট কখনো হবে তাও আবার তুমি পাষাণ করবে ভাবতেই পারিনি। না তুমি তো পাষান নও |

তুমি তো প্রেমিক। আমার প্রেমিক। যাকে আমি আমার মন প্রাণ উজার করে লাভ করি। আবার ভুল বলে ফেললাম তুমি তো এখন my would be. ও আমার আল্লাহ তোমার দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া আমার জীবনে আমার হ্যান্ডসাম কে পাঠানোর জন্য।”
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে লাবিবা। বিকালে ঘুম ভাঙলে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে তার হ্যান্ডসাম এর খোজে বের হয়। ডোর লক করা দেখে ভাবে অফিসে আছে রাসেল। তাই অপেক্ষা করতে থাকে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে যায়। তবুও রাসেল বাসায় ফিরে না। এদিকে লাবিবা অস্থির হতে থাকে। রাত পেরিয়ে মধ্য রাত চলে আসে।

এক মদের নেশা আরেক রাসেলের চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। বার বার রাসেলের ফোনে ফোন দেয় কিন্তু নট রিচাবল দেখায়। কোথায় গেল রাসেল? বলে যেতে পারতো… নাকি ওর কোন বিপদ আপদ হল? আর কিছু ভাবতে পারছে না লাবিবা।হয় তার এই মুহুর্তে ড্রিংস করা প্রয়োজন নইতো হ্যান্ডসাম কে প্রয়োজন। কিন্তু ও তো ওয়াইন খেতে পারবে না। হ্যান্ডসাম কে যে কথা দিয়েছে আর কখনো ওয়াইন ছুয়েও দেখবে না। দীর্ঘ পাঁচ বছরের নেশা একরাতে কিভাবে ছেড়ে দিবে সে? অসম্ভব যন্ত্রনা হতে থাকে শরীরে আর হ্যান্ডসাম এর জন্য দুশ্চিন্তা করতে করতে মারাত্মক যন্ত্রনার ভিতর দিয়ে রাত টা কাটে লাবিবার।

ভোরের আলো ফুটতেই বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। চারিদিকে খুঁজতে থাকে রাসেল কে। এখনো রাসেলকে ফোনে পাচ্ছে না। ডাইরেক্ট রাসেলের অফিসে চলে যায়। সেখানে গিয়েও পায় না রাসেল কে। রাসেলের পিএর সাথে দেখা করবে বলে বসে থাকে। অফিস টাইম হওয়ার আগেই চলে এসেছে এখানে তাই অপেক্ষা করতে থাকে। চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। রাসেলের পিএ রিমন অফিসে ঢুকতেই দেখে লাবিবা বসে আছে। রিমনকে দেখে লাবিবা বসা থেকে উঠে রিমনের কাছে আসে।

_ আরে ম্যাম.. আপনি এত সকালে.. তাও এখানে? স্যার তো নেই। আপনাকে এমন লাগছে কেন?
_ রিমন তোমার স্যার কোথায়? ওকে আমি ফোনে পাচ্ছি না.. বাসায় পাচ্ছি না। আশে পাশে সব জায়গায় খুজ নিয়েছি।
_ সেকি স্যার আপনাকে বলে যায় নি?
_ না। ও কি অফিসের কাজে কোথাও গেছে?
_ নাতো। স্যার তো বিডি তে চলে গেছে।
_ কিহহহ?

_ হ্যাঁ। কাল স্যার আর আমি একটা কাজ নিয়ে ডিসকাস করছিলাম। তখন স্যারের ফোন আসে। স্যার ফোনে কথা বলেই আমাকে টিকেট কাটতে বলে বেরিয়ে যায়। আমি অনলাইনে টিকেট বুক করি আর স্যার দুপুরেই বিডির উদ্দেশ্য ফ্লাইটে উঠে। স্যারের সাথে আমার কথা হয়নি আর।
_ চলে গেল… আমায় ছেড়ে চলে গেল।

_ ম্যাম সাবধানে পরে যাবেন। is this someone? Hold on mem.
একটা Lady employee এসে লাবিবাকে ধরে ফেলে।
_ এ হতে পারে না। রিমন তুমি তোমার স্যার কে ফোন দাও।

_ ম্যাম স্যার আমাকে কোম্পানির এমডির দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। বিডি হয়তো এখনো পৌঁছায় নি। লাবিবা ঐখানে আর না দাঁড়িয়ে বাসায় চলে আসে। মেইন ডোর লক করে ঘরের জিনিস পত্র ছুড়তে থাকে। এক পর্যায়ে থেমে চিৎকার করে কেঁদে উঠে।
“আমায় একা করে কেন চলে গেলে তুমি… আমাকে কি একটিবার বলে যাওয়া যেত না… একটা এস এম এস ও দিয়ে যাওয়া যেত না… তুমি বিজনেসের দায়িত্ব রিমনের উপর দিয়ে চলে গেলে… তুমি কি আমার জীবন থেকে চলে যাওয়ার জন্যই এই ক্সান্ট্রি থেকে লিভ নিলে.. আমি খুব জালিয়েছি তোমায়… চলেই যদি যাবে তাহলে এত কেন ড্রামা করলে? এতদিন এতকিছুর মানে কি? প্লিজ ফিরে এসো.. দেখ আমি তোমার জন্য ওয়াইন ছেড়ে দিয়েছি। আমার শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। আমি সব সহ্য করে নিব।

শুধু তুমি ফিরে এসো। I need you tanveer… I love you.. I want you… I love you tanveer.. I love you..”

দিনের পর দিন যেতে থাকে.. লাবিবা বার বার রিমনের কাছে যায় খোঁজ নিতে। কিন্তু বেচেরা রিমনের সাথে যোগাযোগ না হওয়ায় রিমন কোন খোঁজ দিতে পারে না। মনের দিক থেকে একেবারে ভেঙে গেছে। শরীরের যন্ত্রণা সহ্য করে মরা মানুষের ন্যায় দিনাতিপাত করছে। নিজেকে শেষ করার চেষ্টা করে বার বার। কিন্তু শারমিন নুপুরের কাছে এই বিষয়ে জানতে পেরে লাবিবার কাজিন অনেক রিকুয়েষ্ট করে শারমিন নুপুর কে লাবিবার কাছে থাকতে বলেছে। দুজনের কড়া পাহারায় বার বার সুইসাইড করতে গিয়েও বেচে ফিরে। এদিকে লাবিবার কাজিনের ফোনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে শারমিন নুপুর দুজনেই। লাবিবা নিজেও অতিষ্ঠ। ভালোই লাগে না তার। বেঁচে থেকে কি করবে সে? কিসের জন্য বাঁচবে? তার বাচা মরা একি কথা। সেতো মরেই গেছে.. দেহের মৃত্যু হলেই কি মরে যাওয়া হয়?

লাবিবার ফোন আসে। স্কিনে বোনের নাম্বার দেখে রাগে ফেটে পড়ে। কান্না করে দেয় ফোন কানে নিয়ে।
_ কি চাও তুমি? বলেছিনা তোমার বোন মরে গেছে? তবুও কেন ফোন দাও?
_ নাহ। আমার বোন মরেনি। কারণ আমার বোন বাইরের কোন উটকো লোকের জন্য মরতে পারে না।
_ আমার বাচার কোন প্রয়োজন নেই। আমি মরলে দুনিয়া থেকে একটা নোংরা কিট দুর হবে।

_ এভাবে বলিস না প্লিজ। আমি মরে যায়নি। আমার জন্য বাচবি তুই। আমার আছি তো তোর জন্য।
_ আপু আমি ফোন টা রাখছি।

লাবিবা ফোন কেটে দিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। আকাশ পুরোটা তারায় তারায় ছেয়ে গেছে। অনেক কথা মনের ভেতর উকি ঝুকি দিতে থাকে। থাকুক। কেদে মরুক। তবুও বের হতে দিবে না। বের হলেই যে তার নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করবে| নিজেকে শেষ করবেনা সে। এই জীবন আল্লাহর দান। পৃথিবীতে একা এসেছে একাই ফিরে যেতে হবে। দু দিনের দুনিয়া কষ্টের কারবার।

শারমিনঃ নুপুর কিউটি কোথায়?
নুপুরঃ রুমে নেই?
শারমিনঃ না। ইয়া আল্লাহ আবার কি জানি কি ঘটাবে। আপুকে কি জবাব দিব?
নুপুরঃ দ্বারা ওকে কল দেই।
নুপুর কল দিলে সাথে সাথেই রিসিভ করে লাবিবা বলে”আমি ঠিক আছি। আসছি আমি”।
কিছুক্ষণ পরে লাবিবা বাসায় আসে। নুপুর জিজ্ঞেস করে
_ কোথায় গিয়েছিলি তুই?
_ অফিসে।
_ তুই তো ভেকেশনে আছিস।
_ জবটা ছেড়ে দিয়েছি।
_ কেন?
_ বাংলাদেশে যাবো। কিছুদিনের জন্য।
_ মানে?
_ হুম।
_ পাগল হয়ে গেছিস তুই। জব ছেড়ে বিডিতে যাবে কিছুদিনের জন্য। বির বির করতে করতে নুপুর চলে যায়।

নুপুর চলে গেলে লাবিবা মিররের সামনে দাড়িয়ে ছোট্ট একটা হাসি দেয়। আমি আসছি হ্যান্ডসাম.. তোমার খুঁজে। পালিয়ে থাকছ তুমি। তোমায় ধরার শেষ প্রচেষ্টা টা চালিয়েই নেই। কি বলো মাই হ্যান্ডসাম?

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে তুহান। বৃষ্টি আস্তে আস্তে হেঁটে পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। বৃষ্টির উপস্থিত টের পেয়ে ফোন রেখে ঘুরে দাঁড়ায় তুহান। বৃষ্টি বলে
_ মম চলে গেছে প্রায় তিন মাস হতে চললো। রাসেল টা ঘর থেকে বের হতে চায় না। কেমন হয়ে গেছে। আমি জোর করে একটু বাইরে নিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। এভাবে চলতে থাকলে ভাইটা মরে যাবে তো। তুমি কি দেখেও দেখ না? সারাদিন ফোনে কথা বলে চলো.. আমাকেও সময় দিতে পারো না। মমের উপর তো কোন দায়িত্ব পালন করলে না। ভাইটার উপর ও কি তোমার কোন দায়িত্ব নেই? তুমি কি চাও মমের মতো রাসেল ও চলে যাক?”

বৃষ্টির কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুহান। একটু চুপ থেকে বলে _ কোথায় রাসেল?
_ ওর রুমেই আছে।
তুহান রাসেলের রুমে এসে দেখে খাটে হেলান দিয়ে চুপ করে বসে আছে রাসেল। তুহান রাসেলের পাশে গিয়ে বসে মাথায় হাত রাখে। রাসেল একবার তুহানের দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে নেয়। এবার তুহান বলে
“রাস্তার ছেলে মেয়েদের দেখেছিস? ওদের 90% লোকের ই বাবা মা নেই। ওরা কিন্তু এর জন্য কখনো দুঃখ প্রকাশ করে না। বরং হাসি মুখে জীবন লড়াইয়ে ব্যস্ত হয়ে থাকে। খেটে কাজ করে আস্তে আস্তে বড় হয়। বড় হয়ে বিয়ে করে সংসার পাতে। হাসি খুশি ভাবে জীবন চালিয়ে নেয়। ওরা কিন্তু ওদের বাবা মা কে কম ভালোবাসে না। মানুষ মরনশীল।

একদিন তুইও মরবি আমিও মরবো। আমাদের সন্তানেরা কিন্তু আমাদের শোকে নিজেদের জীবন বিসর্জন দিবে না। আল্লাহ তা আলা আমাদের হায়াত যতদিন দিয়ে পাঠিয়েছেন আমরা ততোদিন ই বেঁচে থাকব। কিন্তু কেউ কারো জন্য আটকে থাকবে না। জীবন যুদ্ধ চলবেই। কখনো শুনিছিস একা মানুষের গল্প? যার একুল ওকুল কোন কুলেই কেউ নেই। ছোট্ট থেকে একাই কষ্ট করে বেড়ে ওঠে। সাফল্য অর্জন করে। তারাও কিন্তু কাউকে নির্ভর করে বাঁচতে চায়। পাশে কাউকে চায়। তুই তো তাদের মতো নশ। মম নেই তো কি হয়েছে? আমি আছি। তোর জানপাখি আছে। তোর প্রেমিকা কি জানি নাম| ও আছে নাকি নেই জানিনা। তোর উচিত মমের জন্য দোয়া করা আর বিয়ে করে সংসারি হওয়া।
তা না করে তুই কি করছিস? এভাবে পড়ে থাকলে কোন সমাধান হবে? ঘর থেকে বের হ। আর অফিসে জয়েন কর।”

তুহান চলে গেলে আস্তে আস্তে রাসেলের গোচরে আসে। আমার প্রেমিকা… একা মানুষ.. পাশে চায়… আমার মাতাল পরী.. মাতাল পরী|
পাশে থেকে বৃষ্টি বলে উঠে হ্যাঁ। মাতাল পরী.. মম মরার আগে তোমার পাশে তোমার বউ রুপে মাতাল পরী কে দেখতে চেয়েছিল। তোমার পরীর সাথে মমের কথা হয়েছিল। মমের নাকি খুব পছন্দ হয়েছে। আমায় বলেছে মম।

মাতাল পরী| আমার মাতাল পরী… কেমন আছে ও? আমি তো তাকে না বলেই চলে এসেছি। জানপাখি আমাকে আমার মাতাল পরীর কাছে যেতে হবে। ও আমার জন্য অপেক্ষা করছে… আমার জন্য কাঁদছে নিশ্চয়। আমি কানাডা যাবো। কানাডা যেতে হবে আমাকে|


পর্ব ১৪

রাসেল কানাডায় ল্যান্ড করেই ডাইরেক্ট লাবিবার ফ্লাটের দিকে আসে। এতটুকু জার্নি করেও যেন সে একদম নরমাল হয়ে আছে শুধু তার মাতাল পরীকে দেখবে বলে। মাতাল পরী তাকে ছাড়া কেমন আছে কি করছে.. ঠিক আছে তো? এসব ভেবে ভেবে মরিয়া হয়ে উঠেছে। 5th floor এ এসে দেখে ফ্লাটের মেইন ডোর লক করা।

আশে পাশে জিজ্ঞেস করে জানে যে এই ফ্লাট দুদিন ধরে লক করা। রাসেল লাবিবার হোটেলে চলে যায়। সেখান থেকে জানতে পারে লাবিবা চাকরি ছেড়ে চলে গেছে। মাথায় বাজ পড়ে যায় রাসেলের। চাকরি ছেড়েছে মানে? কোথায় গেছে চাকরি ছেড়ে? শারমিন নুপুররের কাছে নয়তো? কিন্তু ওদের ফোন নাম্বার তো নেই আমার কাছে। কোথায় খুজব আমি ওদের? ভাবান্তর হয়ে পড়ে রাসেল। মাতাল পরী কোথায় তুমি? কোথায় খুজব আমি তোমাকে?

ভোর না হতে হতেই রাসেল বেরিয়ে পড়ে বাংলা শহরের দিকে। সেখানের এক রোডের পাশে লাবিবার সাথে দেখা হয়েছিল। হয়তো তার আশেপাশের কোথাও তাদের বাসা হবে। পুরো টরোন্টো শহর তন্ন তন্ন করে খুঁজে চলেছে রাসেল। কিন্তু কারো খুজ পায়নি। আশাহত হয়ে পড়ে রাসেল। কয়েকদিন সেখানে থাকেও সে। কিন্তু কোথাও কারো দেখা মিলে না।

বিচের বালিতে বসে আছে রাসেল। একদিন এইখানে তার মাতাল পরী আর্তনাদ করছিল। কারণ সে একা.. স্বার্থপর পৃথিবীর মাঝে একা সে। আর আমি তো তোমাকে আবার একা করে চলে গেলাম। আমার মম তো আমার পাশে তোমায় চেয়েছিল.. আমি তো পারতাম তোমায় আমার পাশে নিয়ে যেতে। আমি ভুল করেছি মাতাল পরী.. আমায় ক্ষমা করো তুমি। আমি জানি না.. আমি কিচ্ছু জানি না। সেই সময় আমি আমার মাঝে ছিলাম না। তুমি যদি একটু বুঝতে|। না বুঝে অভিমান করে হারিয়ে গেলে। আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারলে না? অবশ্য কতো আর অপেক্ষা করবে বলো। দেখা দাও না একবার। প্লিজ একবার দেখা দাও.. তোমার সব অপেক্ষার অভিমান আমি ধুয়ে মুছে প্রেমে বাধিয়ে দেব।

সেদিন ই ফিরে আসে রাসেল। নিজের ফ্লাটে ঢুকে যেন থাকতে পারছে না আর। মাতাল পরী তার ফ্লাটে এসে প্রচুর দুষ্টুমি করতো। নিজের ভেবে যা ইচ্ছা তাই করতো। সব কিছু এলোমেলো করে ফেলতো। অগত্যা রাসেলকে আবার সেগুলো গুছাতে হতো। হয়তো 2_3 টা রেড় ওয়াইন বোতল এখানের ফ্রিজেও আছে। রাসেল ফ্রিজ খুলে দুটো বোতল পায়। বোতল গুলো ছুয়ে দেখতে থাকে। এই ড্রিংস টা তার মাতাল পরীর ভালুপাসার বেবি। এইটা খেতে খেতে ই প্রথম তার চোখে চোখ রেখেছিল তার মাতাল পরী।

এইটা খেয়ে মাতাল হাওয়ার জন্যই লাবিবা তার মাতাল পরী। তোমার পছন্দের জন্য আমারো পছন্দের হয়ে গেছে এই ওয়াইন। এত্ত এত্ত ওয়াইন খেতে তুমি। কষ্ট ভুলার জন্য এই নেশা করতে। সত্যিই কি কষ্ট ভুলা যায় এইটা খেলে? আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে মাতাল পরী। মনে হচ্ছে কেউ পাজরের হাড় টেনে বের করে নিচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে।

রাসেল বোতলের মুখ খুলে ডক ডক করে খেতে লাগলো। তার যেন কোন হুস নেই। এই ওয়াইন যে তার মাতাল পরীর ভালোবাসা। সেও তার মাতাল পরীর মতো আজ মাতাল হবে। দুটো বোতল শেষ করে দেয় দুই টানে। কিন্তু এত স্টং ড্রিংসের তাল সামলাতে পারে না। প্রথম বার হওয়ার জন্য সহ্য করতে পারে না। একপ্রকার অসুস্থ বোধ করে। ভিতর টা যেন পুরে যাচ্ছে। তবুও মুখে হাসি ফুটে ওঠে। এর জন্য তুমি ড্রিংস করতে বুঝি মাতাল পরী? মনের পোড়া যন্ত্রনার কাছে এই তুক্ত শরীরের অভ্যন্তরে পোড়া কিছুটা হলেও যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিতে পারে।

রাসেল অফিসে যায়। একবার অফিসে খুজ নেওয়া উচিত বলে মনে করে। কারন যখনি রাসেলকে না পেয়েছে তখনি লাবিবা অফিসে একবার হলেও খুজ নিয়েছে। জানতে হবে তাকে তার মাতাল পরী কোন খবর নিতে এসেছিল কিনা এখানে। রাসেল কেবিনে ঢুকে দেখে রিমন ফাইল দেখছে। রাসেলকে দেখে রিমন উঠে কাছে এসে ধরে বসিয়ে দেয় চেয়ারে। শুরু হয় তার নানান প্রশ্ন।

“স্যার আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? আপনার শরীর কি খারাপ? আপনি কখন এসেছেন এই দেশে? বিডি তে গিয়ে আর যোগাযোগ করেন নি কেন? আমি আপনার সমস্ত কাজ আলহামদুলিল্লাহ ভালো মতেই করছি।জানেন আমি কতটা হিমশিম খাচ্ছি? আপনি কোম্পানির খোজ খবর কিছুই রাখেন নি। মেডাম কে ও বলে যান নি।”
“মেডাম.. আমার মাতাল পরী? এসেছিল এখানে? আমি না ওকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। ও কি কিছু বলে গেছে?”

“কি আর বলবো স্যার… আপনি যাওয়ার পর আপনার খোজ না পেয়ে ম্যাম তো পাগল প্রায় হয়ে আছে। কয়েকদিন পর পর আমার কাছে আসে আপনার কোন খোঁজ পাওয়া যায় কিনা ভেবে। আমি প্রতিবার ই খালি হাতে ফেরায় তাকে। চেহারা পুরো নষ্ট করে ফেলেছে না ঘুমিয়ে না খেয়ে। বার বার সুইসাইড এটেন্ড ও করেছে। দু তিন দিন হসপিটালে আমিও দেখতে গিয়েছিলাম। মরেও বেচে আছে স্যার। ওয়ান উইক আগে এসেছিল উনি। তার পর আর আমার সাথে যোগাযোগ নেই।”
রাসেল কিছু না বলে বেরিয়ে আসে।

একা রাস্তায় হাটছে রাসেল। শির শিরানি বাতাস বইছে। আকাশে অজস্র তারার মাঝে বড় একটা চাঁদ ও উঠেছে। প্রায়ই এসময় রাস্তায় থাকতো রাসেল। সাথে থাকতো তার মাতাল পরী। মাতাল পরী তার হ্যান্ডসাম কে সাথে রেখে প্রত্যেক টা জোছনা উপভোগ করতে চেয়েছিল। আজ সেই নেই তার হ্যান্ডসাম একা একা জোছনা রাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। শেষ যেদিন দুজনে একসাথে ছিল সেদিন এই রাস্তা দিয়েই হাঁটছিল দুজনে। মাতাল পরী বলেছিল যদি কখনো তাকে ছেড়ে চলে যাই সেদিন তার দ্বিতীয় বার মৃত্যু ঘটবে। এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না রাসেল। চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।

আচ্ছা আকাশ এত কাদো কেন তুমি? তোমার এত কিসের কষ্ট? তুমারো কি আমার মত কষ্ট হয়? তুমি বুঝি আমার মত একা? কাউকে কি কখনো ভালোবেসেছিলে কোনদিন? সেকি তোমায় ছেড়ে চলে গেছে? তাই তুমার এতো কষ্ট? একা একা কাদো কেন? তোমার খারাপ লাগে না একা একা কাঁদতে? আমাকে সাথে নিবে? দুজনে একসাথে আমরা কাঁদবো। তোমার তো চোখের জল শুকিয়ে যাবে না কখনো। আমার যদি শুকিয়ে যায় তাহলে আমাকে একটু জল ধার দিও কেমন… শুকনো শুকনো যে কাঁদতে নেই।
কাধে হাতের স্পর্শে চমকে উঠে বৃষ্টির জলের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় লাবিবা। পেছন ঘুরে দেখে তার বোন দাঁড়িয়ে।

_ আপু…
_ হুম আমি। একা একা কথা বলছিস। এভাবে আর কত ঘরে বন্দী হয়ে থাকবি? বের হলেই তো ছুটিস এখানে ওখানে। ফিরে এসে আবার দরজা বন্ধ করে কাঁদিস। যা চলে গেছে তাতো গেছেই বোন। ফিরে আসার থাকলে আসবেই। অন্যের জন্য নিজের ক্ষতি করা উচিত না। সব ভুলে যা। যত ভুলে থাকবি ততো ভালো থাকবি।
_ হুম।
_ একটু বাইরে বের হ দেখবি মন খারাপ করবেনা। আমার বাসায় থাকতে বললাম। গেলি নাতো। জিদ করে এখানেই থাকলি। বাইরে বের হয়ে আশে পাশে একটু হেটে আয়। দেখ প্রকৃতি কতো সুন্দর। চলেই তো যাবি। থাকবিনাতো আর এখানে।
_ তুমার যদি কখনো আমাকে প্রয়োজন পড়ে তাহলে ডেক আমায়। চলে আসব তখনি। আমার এই জীবনে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই আপু।

তখনি দরজায় নক পড়ে। লাবিবা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ডুকে রাজু। লাবিবা জিজ্ঞাসা করে _ রাজু এনেছিস?
_ ধরেন আফা। বাপরে বাপ.. কম খেতাপুইরা কি বোতল গুলান আনছি? পুলিশে ধরতে ধরতে বাইচা গেছি। আমার মতো পুটি মাছের প্রানের মানুষ দিয়া কি এইগুলান হয়?
_ হইছে তো। কষ্ট হলেও তো হইছে। নে ধর এখানে তোর জন্য পুরষ্কার আছে। বাড়ি গিয়ে দেখিস। এখন আয়।
_ আসি তাইলে আফা মনি।

লাবিবা বোতল নিয়ে ঘুরতেই দেখে রাগী চোখে তার বোন দাঁড়িয়ে আছে। মাথা নিচু করে ফেলে লাবিবা। আর যাই হোক বোনকে কখনো বলেনি যে সে মদ খায়।
_ আপু… আই এম সরি। প্লিজ আমাকে খেতেই হবে। নইত আমি শেষ হয়ে যাবো। মরে যাবো। কিছু বলো না.. আজি শুধু খাব।
_ চোখ বন্ধ করে থেকে আবার চোখ খুলে বলে রাজুকে দিয়ে মদের বোতল আনাচ্ছিস আমি এখানে থাকতেই। ভালোই সাহস হয়ে গেছে দেখি। মাতলামো সহ্য করতে পারবো না আমি।

হন হন করে চলে গেল। বোন যেতেই লাবিবা দরজা বন্ধ করে মদের গ্লাস নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসে। অনেক দিন পর আজ এই মদের বোতল হাতে নিয়েছে সে। গ্লাসে ঢেলে হাতে নিয়ে বসে আছে। মুখের সামনে ধরতে পারছেনা। গন্ধটা যেন সহ্য হচ্ছে না। তবুও মুখের সামনে আনে কিন্তু আর মুখে দিতে পারে না। সেত কথা দিয়েছিল তার হ্যান্ডসাম কে আর কখনো এইটা ছুয়েও দেখবেনা। কিন্তু আজ কেন ছুলো? তার হ্যান্ডসাম তাকে ছেড়ে চলে গেছে সেতো যাইনি। সে কেন কথার খেলাপ করবে? খাবেনা এটা। কিছুতেই খাবে না। দেয়ালে ঢিল দিয়ে ভেঙে ফেলে বোতল গুলো। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে বাইরে চলে আসে।

আশেপাশের পরিবেশ অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে। খোলা মাঠ গুলোতে এখন বড় বড় বিল্ডিং উঠেছে। পুকুর গুলো ভরিয়ে তোলো বিল্ডিং করেছে। সামনে একটা ঘাট বাধানো পুকুর দেখে সেখানে গিয়ে বসে। পুকুরের একপাশে কচুরী পানা জন্মেছে আর এক পাশ পানিতে ভরা। কয়েকটা রাজ হাস পানিতে সাঁতার কাটছে। রাজ হাস দেখে মুখে হাসি ফুটে ওঠে। এই মফষ্মলে যখন ছিল তখন তার ও অনেকগুলো রাজ হাস ছিল। রাজ হাস লাবিবার খুব প্রিয়। স্কুল থেকে এসেই পড়ে থাকতো এই রাজ হাসের পিছনে।

অনেক যত্নে রাজ হাস পালন করতো সে। চিৎকার করে রাজ হাস গুলো কে বলে _ এইযে রাজহাঁস ভাইয়ারা| কেমন আছো তোমরা? কেমন কাটছে দিনকাল? কোন বাড়ির হাস তোমরা? জানো একসময় তুমাদের পূর্ব পূরুষ গন আমার কাছে বড় হয়েছে। অনেক যত্ম নিয়েছি তাদের। চলে যাবো গো.. অনেক দুরে চলে যাবো। আর আসবোনা এখানে কোন দিন। তোমাদের দেশের মানুষ ভালো না। ঠকবাজ… সবাই ঠকবাজ।


পর্ব ১৫

After 3 years later…

ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে ফাইল চেক করে নিচ্ছে বৃষ্টি। আজ একটা ইমপর্টেন্ট কেস আছে। সেই মুহুর্তে
একজন সার্ভেন্ট আসে হাতে বড় ট্রলি ব্যাগ নিয়ে। বৃষ্টির সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
_ম্যাডাম লাগেজ কোথায় রাখবো?

_ ও। রাসেল চলে এসেছে । ওর রুমে রেখে আসো যাও।
_ ঠিক আছে ম্যাডাম।
বাড়ির ভেতরে ডুকতেই দেখে বৃষ্টি বসে আছে। তাই উপরে না গিয়ে বৃষ্টির পাশে এসে সোফায় বসে। বৃষ্টি মুচকি হাসি দিয়ে বলে
_ তুমি অনেক টায়ার্ড। রুমে না গিয়ে এখানে বসলে যে?
_ তোমায় দেখে টায়ার্ডনেস কমানোর চেষ্টা করছি।

_ হুম বুঝলাম। তো যার জন্য এতো টায়ার্ডনেস তার কি দেখা মিলল এবার?
রাসেল কিছুক্ষণ চুপ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে
_ নাহ। জানপাখি.. আমি কি আর কখনো আমার মাতাল পরীর দেখা পাবো না?

_ পাওয়ার হলে এত দিন পেয়ে যেতে। কম তো আর খুজা হলো না। কোন ক্লু পেলেই যে তুমি বার বার কানাডা চলে যাচ্ছ খুঁজে পাওয়ার জন্য.. পেলে কি? এভাবে হয় না জানপাখি। কতোদিন এভাবে থাকবে? এবার তো শান্ত হোও। বিয়ে করে সংসারি হোও। আমার একটা সাথী আসুক এ বাড়িতে।
_ It’s not possible janpakhi. I’m sorry.
সিড়ি বেয়ে উপরে যেতে থাকে রাসেল। বৃষ্টি সেই যাওয়ার দিক তাকিয়ে থাকে। এভাবেও কি কাউকে ভালোবাসা যায়? কোর্টের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে বৃষ্টি।

ঘুম নেই দু চোখে। তাই বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাতের হিমেল হাওয়ায় নিজেকে মেলে ধরে বৃষ্টি। গত পরশু চলে গেছে তুহান। যাওয়া টা কি খুব প্রয়োজন ছিল?এখনো তিন দিন ছুটি আছে। কি এমন কাজ তোমার যে এখনি যেতে হবে। বাসায় থাকলেই বা কি? প্রয়োজনের বেশী কথা বলে না। বেশির ভাগ সময় ফোনের উপর থাকে। ইচ্ছা হলে একবার কাছে আসে আর ইচ্ছা না হলে নাই। একাকী দিন কাটছে। নিঃশঙ্গতা যে জীবনের অভিশাপ তা হারে হারে টের পাচ্ছি। এজন্যই হয়ত মানুষ হতাশায় বার বার সুইসাইড এটেন্ড করে।

ভাবতে ভাবতেই গা গুলিয়ে উঠে। বমিও আসে। দৌড়ে বাথরুমে চলে যায়। বমি করে ফ্রেশ হয়ে পানির টেপ ছেড়ে কিছুক্ষণ মাথায় পানি দেয়। মাথা উচিয়ে আয়নায় চোখ পড়ে যায়। শেষ কবে নিজেকে ভাল করে দেখেছিল মনে পড়ে না বৃষ্টির। চেহারাটা কেমন যেন হয়ে গেছে। আগের মতো লাবন্যতা আর নেই। না ঘুমিয়ে না ঘুমিয়ে চোখের নিচে কালি জমে গেছে। শরীর অনেকটা মুটিয়েও গেছে। বেলি ফেট বেড়ে গেছে। কত পরিবর্তন হয়ে গেছে নিজের অগোচরে..বুঝতেই পারে নি।

কয়েক মাস থেকে প্রায় ই এভাবে গা গুলিয়ে উঠে। বমিও আসে। একটুতেই শরীরে ক্লান্তি ও আসে। কিন্তু এসবের দিক বিন্দু মাত্র মাথা ব্যথা নেই বৃষ্টির। রাসেল সহ বাড়ির সার্ভেন্টরাও বলেছে ডক্টর দেখাতে। নিজের প্রতি উদাসীনতা এতোই বেড়েছে যে শরীরের যা ইচ্ছা তাই হোক দেখার বিষয় না।”বড্ড বেশী অবহেলা কি করে ফেলছি নিজের প্রতি?”নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে বৃষ্টি। প্রশ্নের কোন জবাব পায় না। হয়তো অবহেলা করছে নতুবা না। আরেকবার হাত মুখ ধুয়ে নেয়।

টাওয়েল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বাথরুম থেকে বের হয়ে আসে বৃষ্টি। সামনে রাসেলকে দেখে দাড়িয়ে যায়। কাঁপানো গলায় প্রশ্ন করে
_ এখনো ঘুমোও নি? কিছু লাগবে?
_ ডক্টর দেখাওনি তাহলে|।

মাথা নিচু করে ফেলে বৃষ্টি। বৃষ্টির কাছ থেকে উত্তর না পেয়ে বলে _ কাল সকালে রেড়ি থেকো। আমি নিয়ে যাবো তোমাকে ডক্টরের কাছে। কোন কথা শুনবোনা। ভাইয়া নেই তো কি হয়েছে? আমার জান পাখির উপর আমার দায়িত্ব আছে। কিছু হয়ে গেলে কি জবাব দিব ভাইয়াকে? শুয়ে পড়ো। রাত জেগো না।
দরজা ভিড়িয়ে চলে যায় রাসেল। তাচ্ছিল্য ভরা হাসি দেয় বৃষ্টি। জবাব|.. আদৌ কি কেউ চাইবে জবাব? তোমার ভাইয়া আমাকে নিজের মনে করলে তো চাইবে জবাব। বিছানায় গা এলিয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমায় বৃষ্টি।

সকালে রাসেলের সাথে হসপিটালে যায়। প্রাইভেট হসপিটাল হয়াতেও যেন জেনারেল হসপিটাল থেকে কম ভিড় না। রাসেল বৃষ্টির হাত ধরে এগুতে থাকে। গাইনি বিভাগে ডুকতেই দাড়িয়ে পড়ে বৃষ্টি। রাসেল পিছন ফিরে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকাতেই বৃষ্টি বলে উঠে
_ তুমি কি আমায় গায়োনোলজিষ্ট দেখাবে জানপাখি? তুমি কি ঐরকম কিছু ভাবছো? কিন্তু সেরকম…

_ সেরকমটাই ঘটেছে। আমি 80% সিউর জানপাখি। নিজের প্রতি এতোটাই খামখেয়ালী হয়ে গেছ যে শরীরের উপর দিয়ে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছো না। ছেলেরা অনেককিছুই বোঝে জানপাখি। আর এমনিতেও আমি এক বছর ডক্টরি কোর্স করেছিলাম। বিজনেস করবো ভেবে ফুল কোর্স করা হয়নি।

চুপ হয়ে যায় বৃষ্টি। সত্যিই তো এটা ভাবে দেখি নি। সব লক্ষন গুলো তো প্রেগনেন্সির। সত্যিই কি মা হবো আমি? আনন্দে দু চোখ ভরে আসে বৃষ্টির। বৃষ্টির চোখে পানি দেখে হেসে দেয় রাসেল। এক হাত নিজের বাহুতে নিয়ে দুলতে দুলতে ডক্টরের চেম্বারের দিক এগোয়।

ডক্টরের চেম্বারে বৃষ্টিকে বসিয়ে দিয়ে ডক্টরের সাথে কথা বলতে থাকে। ডক্টর বৃষ্টিকে চেক আপ করে বেশ কিছু টেস্ট দেয়। এক এক করে সব গুলো টেস্ট করাতে দুপুর হয়ে যায়। রাসেল বাসায় বৃষ্টিকে ড্রপ করে বাড়িতে দিয়ে তারপর অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়।

ড্রাইভ করছে আর শান্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করছে রাসেল। অনেক দিন পর মন যেন শান্তিতে ভরে গেল। বাড়িতে ছোট্ট অতিথি আসবে ভেবেই যেন অস্থির করছে মন শরীর দুটোই। ছোট্ট একটা পুতুল হবে। ঐ পুতুলের সাথে পুতুল খেলতে খেলতে একটু একটু করে বড় করে তুলতে হবে। চাচ্চু হবে সে। ছোট্ট জীবন্ত পুতুলটির ছোট্ট ছোট্ট হাত থাকবে। ছোট্ট পায়ে সারা বাড়ি দৌড়বে। ছোট্ট চোখ.. ছোট্ট দুইটা ঠোঁট.. আর ছোট্ট একটা নাক|.নাক… ।

গাড়ি জোড়ে ব্রেক করে রাসেল। নাক.. লাল আভা ছড়ানো নাক| লাল টকটকে ছোট ঠোঁট …চোখ বন্ধ করে দেখতে থাকে রাসেল। সেই নাকের কথা মনে পড়লে এখনো বুকে ঝড় উঠে। আর সেই ঠোঁট দুটো রাতের ঘুম কেড়ে নেয়।”তুমি কি আমার কাছে আর ধরা দিবে না মাতাল পরী? আসবেনা আমার কাছে? বাসবেনা ভালো আমাকে? আমি যে তোমার পথ চেয়ে বসে আছি.. তোমাকে আমার প্রয়োজন মাতাল পরী.. একটু বেশিই প্রয়োজন।”

হসপিটালের কাছেই একটা কাজে এসেছে বৃষ্টি। কাজ শেষ করে হসপিটালের সামনে আসতেই ভাবে রিপোর্ট গুলো নিয়ে যাওয়া দরকার। হসপিটালের ভিতরে ঢুকে যায়। দুপুরে লাঞ্চ করা হয়ে ওঠে নি তাই ক্ষুদাও পেয়েছে। পাশের একটা রেস্টুরেন্ট এ যায় খাবার খাওয়ার জন্য। রেস্টুরেন্ট এ বসে নুডুলস খাচ্ছে বৃষ্টি। বড় একটি টেবিলে একাই বসে সে। একজন এসে তার সামনের একটা চেয়ার টেনে বসল। দেখেও দেখলো না বৃষ্টি। খাওয়াতে মনোযোগ দিলো।
_ আরে এডভোকেট বৃষ্টি খান না?

গলা শুনে সামনে তাকায় বৃষ্টি। বেশ উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনে বসা মেয়েটি। বৃষ্টির থেকে অনেক ছোট হবে। চেনা চেনা লাগছে। মেয়েটিই বলে উঠলো
_ আমাকে চিনবেন না। আমি সোনালি খান। কোর্টে আপনাকে দেখেছি। আপনার অনেক নাম যশ। অনেক ভালো লোইয়ার আপনি।
_ থ্যাংকস। তো খাবার অর্ডার করুন। একাই এসেছেন বুঝি?

_ আমার হ্যাজবেন্ড আসছে সাথে। ও খাবার অর্ডার করতে গেছে। একচুয়েলি আই এম প্রেগন্যন্ট। টু মানথ। বাইরে খাওয়ার জন্য জোর করছিলাম তাই নিয়ে এসেছে।
_ oh congratulations for you and your baby.
_ thank you. ঐতো ও চলে এসেছে। আলাপ করিয়ে দিই।

বৃষ্টি সোনালির হাজবেন্ড এর দিকে তাকাতেই পায়ের নিচের মাটি সরে যায়। থর থর করে কাঁপতে থাকে। মুখ থেকে বেরিয়ে আসে”তুহান তুমি?”|
তুহান ও হতভম্ব হয়ে যায় বৃষ্টি কে দেখে। অপরাধীর ন্যায় তাকিয়ে থাকে। বৃষ্টির তো বিশ্বাস হচ্ছে না এসব কিছু। তার তুহান সোনালির তুহান… কি ভাবে সম্ভব এটা? নাকি শরীর দুর্বল তাই ভুল ভাল দেখছে? নিজের হাতেই চিমটি কাটে। ব্যাথা পেয়ে বুঝতে পারে হে হুসে আছে। সোনালীর আওয়াজে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে।
_ মেডাম আপনি আমার হ্যাজবেন্ড কে চিনেন? ওর নাম ধরে ডাকলেন যে।

_ বৃষ্টি মাথা নাড়িয়ে জানান দেয় সে চিনে।
_ তোমরা কিভাবে পরিচিত?
বৃষ্টি কিছু বলতে যাবে তখনি তুহান বলে উঠে
_ আরে বৃষ্টি যে.. কেমন আছো? সোনালী ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। ও হচ্ছে বৃষ্টি। আমার কলেজ ফ্রেন্ড।

বৃষ্টির মাঝে যেন আর সে নেই। যখন কেউ হুট করে অতিরিক্ত ধাক্কা খায় তখন সে ভাবলেশহীন হয়ে পড়ে। ঘোরের মাঝেই উত্তর দিল
_ আমি ভালো আছি। বিয়ে করেছ কবে? জানালে না তো? বউ অনেক সুন্দর। তোমার থেকে অনেক কম বয়সী। যত্ম নিও।
_ হ্যা অবশ্যই। আমি বাবা হতে যাচ্ছি।
_ কনগ্ৰাচুলেশন। হয়তো তুমি সত্যিই বাবা হতে যাচ্ছ। আসি।

আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে বেরিয়ে আসে বৃষ্টি। স্বামী নামের মানুষটি আজ আসামীর কাঠ গড়ায় দাড়িয়ে। অনেক আগেই হাত থেকে বেরিয়ে গেছে সে বুঝতেও পারে নি। বুঝবে কি করে.. হাতে রাখলে তো বুঝবে। প্রত্যেকটা মানুষ নিজ নিজ ভাবে স্বাধীন। তাই ভালোবাসার মানুষটি কে উড়তে দিয়েছিল সে। উড়েও গেছে তার আকাশ থেকে অন্যের আকাশে। কতই বা বয়স হবে মেয়েটি র… ১৮। হাটুর বয়সী একটি মেয়েকে বিয়ে করে বাবা হতে যাচ্ছে সে। আর এইদিকে যে আমার বেবির বাবা হতে যাচ্ছে সেই দিকে|.
পেটে হাত চলে যায় বৃষ্টির। বেবির কথা ভাবতেই সে ছুটে হাসপাতালের দিকে। মা হবে সে। দুর্বলতা তাকে ছুতে যেন না পারে।

রিপোর্ট হাতে পেয়ে ডক্টরের কাছে যায় বৃষ্টি। ডক্টর বৃষ্টিকে দেখে বসতে বলে। হাতে রিপোর্ট গুলো নিয়ে দেখতে থাকে।
ডক্টরঃ মিসেস বৃষ্টি খান। আপনি ৪ মাস থেকে কনসিভ করেছেন। এতদিন কোন ডাক্তার কে দেখান নি কেন? যাই হোক আপনার স্বামী কে ডাকুন। তার সাথে কিছু কথা আছে।
_ আমার স্বামী আসে নি ডক্টর। আমি একাই এসেছি। কিছু হয়েছে কি? কিছু হলে আমাকেই বলুন।

_ কি বলেন এসব? এই অবস্থায় আপনাকে একা আপনার স্বামী ছেড়ে দিল? সেদিন তো ভালো ছিলেন তাও আপনার স্বামী সাথে এসেছিলেন। আর আজ আপনাকে উইক লাগছে বেশী তো আজি এলো না। আপনার স্বামী কে ডাকুন। উনার সাথে আমার কথা আছে।
বৃষ্টি ঘাবরে যায়। রাসেলকে উনি আমার স্বামী ভেবেছেন। নিশ্চয় গুরুতর কিছু নইতো আমাকে বলতে প্রবলেম কি? জানতে হবে আমাকে।
_ ডক্টর উনি আমার স্বামী নয়। আমার পরিচিত একজন আপনজন নয়। আমার স্বামী বিদেশে থাকেন। এখানে আমার গার্ডিয়ান নেই। প্লিজ যা বলার আমাকে বলুন।
ডক্টর বলতে না চাইলে জোর করে ডক্টর কে সবটা বলায়।


পর্ব ১৬

বাসায় ফিরে রুমে এসে অনেকক্ষণ কাদে বৃষ্টি। স্বামীর প্রতি অন্ধ বিশ্বাস করে ঠকে যাওয়া আর গর্ভের সন্তান দুটোই যেন শেষ করে দিচ্ছে তাকে। একাকিত্ব অনুভব.. সব মিলিয়ে গলা চেপে ধরেছে তার। নিশ্বাস নিতে পারছে না। শরীর টা প্রচুর অস্থির করছে। কাঁপতে কাঁপতে জ্ঞান হারায় বৃষ্টি।

সকালে জ্ঞান ফিরে বৃষ্টির। ফ্লোরে শুয়ে আছে সে। উঠে বসতেই মাথাটা ঘুরে যায়। দুহাতে চেপে ধরে মাথাটা। দরজায় কড়া নাড়ানো শুনতে পায়। আসছি বলতেই শুনে রাসেল জান পাখি জান পাখি বলে ডাকছে। মাথা ধরেই ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায় বৃষ্টি। আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে ঠিক করে নেয় একবার। ধীর পায়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। রাসেল অস্থির হয়ে ভিতরে ঢুকে বলতে থাকে”জানপাখি ঠিক আছো তুমি? কিছু হয়নি তো?

সকাল থেকে ডাকছি তোমার কোন সাড়া নেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি খুব। শরীর খারাপ লাগছে? আমাকে ডাকদিলেই তো পারতে। আমাকে না বলেই তুমি রিপোর্ট আনিয়েছো.. আমি গিয়েছিলাম রিপোর্ট আনতে। রাতে এসে দেখি তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ। তাই আর ডাকি নি। এখন সকাল ৯ টা বাজে তবুও তোমার সাড়া নেই। কতটুকু ভয় পেয়েছিলাম বলো তো?স্টোক করাবে আমাকে নাকি?”

রাসেলের অস্থিরতা দেখে মৃদু হাসে বৃষ্টি।
“এত হাইপার হয়ো না জানপাখি। আমি ঠিক আছি। শান্ত হও। এত চিন্তা তোমার আমাকে নিয়ে.. আর দেখ যার এত চিন্তা করার কথা সে ই তো নেই। তাকে কাল জানালাম বুঝেছ.. ও বাবা হতে চলেছে। কিন্তু তার কোন রেসপন্স ই পেলাম না। সে একদমি এই নিয়ে কিছুই বললো না আমাকে।”

“ইসস জানপাখি এর জন্য তোমার মন খারাপ? নিশ্চয় ভাইয়া খুশিতে কিছু বলতে পারেনি। বাবা হওয়া যে কতটা আনন্দের ব্যপার তা তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না। তুমি যেমন মা হওয়ার জন্য খুশি তেমনি ভাইয়াও বাবা হওয়ার আনন্দে খুশি। তাই কথাই বলতে পারে নি হয়তো।”
“হা তোমার ভাইয়া অনেক খুশি। বাবা হবে সে। সুন্দরী বউ মা হবে সে বাবা হবে। সুন্দর একটা পরিবার হবে। কত হেপি সে…”
“তাহলে? মন খারাপ করো কেন? বোকা মেয়ে। চল ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ আসো।”
“হুমম”

ডাইনিং এ বসতেই শুরু হয় খাবার বর্ষন। আইটেম দিয়ে ভর্তি টেবিল। একটার পর একটা খাবার তুলে দিচ্ছে রাসেল বৃষ্টির প্লেটে। আর বৃষ্টি বেচারা চুপ চাপ বসে বসে রাসেলের কান্ডকারখানা দেখছে। যেখানে আজ তুহান এমন করার কথা ছিল আর সেখানে রাসেল এমন করছে। কত খুশি সে। মনে হচ্ছে রাসেল ই বাবা হবে। দুই ভাই দুই মেরুর মানুষ। একভাই ভালবাসা থাকতেই আরেক জনের ভালবাসা পেতে চলে গেছে। আরেক ভাই একজনকে ভালবেসেই সারাজীবন কাটাতে রাজি আছে। বৃষ্টি কে এভাবে বসে থাকতে দেখে রাসেল রাগী রাগী ভাব নিয়ে বলে

“জানপাখি। খাচ্ছ না কেন? আমার চাচ্চুটা কখন থেকে না খেয়ে বসে আছে আর তুমি ওকে খাবার দিচ্ছ না 😡😡। নাও হা করো। আমি খাইয়ে দিচ্ছি। কত দায়িত্ব বলো তো আমার|. চাচ্চুর কখন ক্ষুদা পায় সেগুলো দেখতে হবে। আমার চাচ্চুর মার খেয়াল রাখতে হবে। অফিস সামলাতে হবে। নিজের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।”
এইবার আর বৃষ্টিসহ্য করতে পারে না। দু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। তুহানের জায়গায় রাসেল কে সহ্য করতে পারছে না সে। যেখানে তুহান এর এত চিন্তা থাকার কথা সেখানে তার ভাইয়ের এত চিন্তা। যাকে আশা করা হয় তাকে না পেলে কেমন লাগে সেটা শুধু ও ই জানে। রাসেল চোখ মুছে জোর করে একটু খাইয়ে দিয়ে অফিসে চলে যায়।

কোর্টে আসে তুহান। এগুতে গিয়েও যেন এগুচ্ছে না। বার বার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে তার। এভাবে বৃষ্টি সব শেষ করে দিবে ভাবতে পারে নি। তবুও যেতে হবে তার। ভিতরে ঢুকে দেখে বৃষ্টি বসে আছে। বৃষ্টি ইশারায় চেয়ারে বসতে বললে বসে পড়ে। টেবিলে রাখা কাগজ টা এগিয়ে দেয় তুহানের দিকে। তুহান এক পলকে তাকিয়ে থাকে কাগজটির দিকে। কাগজটিতে উপরে মোটা করে লেখা আছে ডিভোর্স পেপার। সাক্ষরের জায়গায় বৃষ্টির করা সাইন দেখে খুব খারাপ লাগে তুহানের। এতো বছরের সংসার… একটু তো মায়া থাকবেই। ভালোবাসা তো ঠিকই ছিল। মাঝখানে দুরে থাকায় একটা ভুল করার জন্য তার প্রথম স্ত্রী এতটা কষ্ট পাচ্ছে। ভুল তো ভুল ই… ভুল করার সময় কি কেউ বুঝে যে সে ভুল করছে?

“এত ভাবার কিছু নেই মি. তুহান খান। ভাবছেন যে কোন দাবি দাওয়া ছাড়াই কিভাবে ডিভোর্স দিচ্ছি আপনাকে? একদমি তা না। আপনার কাছ থেকে একটা নয় বরং দুটো মহা মূল্যবান জিনিস পেয়েছি আমি। টাকা পয়সার ক্ষেত্রে ওগুলো একদমি ভেলু লেস।”
“কি পেয়েছ তুমি?”

“তা শুনার অধিকার আপনি হারিয়েছেন। সই টা করে আসুন।”
তুহান সই করে একবার বৃষ্টির দিকে তাকায়। বৃষ্টির সাথে আজ থেকে তার সব সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে। এত বছরের সংসার টা এই ছোট্ট একটা সইয়েই ধংস হয়ে যাবে। আর তাকিয়ে থাকতে পারে না তুহান পিছন ঘুরে বেড়িয়ে যেতে নেয়।
“এটা আমাদের শেষ দেখা তুহান”

থেমে দাঁড়ায় তুহান।
“আমার ভালবাসার মানুষ টি যার কাছেই থাকুক না কেন ভালো থাকে যেন।”
কথাটা তুহানের বুকে এসে বিধে। হন হন করে চলে যায় সে।

রাতে বাসায় ফিরে রাসেল। হাতে অনেকগুলো চকলেট আর আচারের প্যাকেট নিয়ে। এসেই বৃষ্টির রুমে চলে আসে। বৃষ্টিকে না পেয়ে ডাকতে থাকে। সারা বাড়ি খুঁজে না পেয়ে অস্থির হয়ে উঠে। বৃষ্টির ফোনে কল দিলে বৃষ্টির ঘরেই ফোন বেজে ওঠে। ফোনের আওয়াজে বৃষ্টির রুমে এসে দেখে কর্ণার রেক এর উপর ফোন বাজছে। ফোন হাতে নিতেই থেকে ফোনের নিচে একটা লেটার রাখা। লেটার টা হাতে নেয় রাসেল। পুরো লেটার পড়ে রাগে কাঁপতে থাকে রাসেল। ছিহ… নিজের ভাই হয়ে এমন একটা কাজ কিভাবে করতে পারে? তুহানের প্রতি ঘৃনা হচ্ছে তার। ঐরকম ঠকবাজ কিছুতেই তার ভাই হতে পারে না। কোন সম্পর্ক নেই তুহানের সাথে। কিন্তু তার জানপাখি|. সে তো একা নয়।

তার সাথে যে রাসেলের রক্ত আছে। তার অনাগত চাচ্চু আছে। জানপাখি একা একা ঐ মফস্বলে কিছুতেই থাকতে পারে না। কে দেখবে তাকে? আমি আছি তোমার জন্য জানপাখি। আমার বাড়ির সন্তান কে কিছুতেই আমি একা করবো না।

আলমারীতে কাপড় তুলে রাখছিল বৃষ্টি। বাড়িটা ঝাড়া মুছা করে কতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দেখাচ্ছে। পরিষ্কার জায়গায় থাকলে মন শরীর দুটোই ভালো হয়ে যায়। দরজায় নক পড়ে তখনি। কাজের লোকটা এসেছে ভেবে দরজা খুলে দেয় বৃষ্টি। চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে স্বয়ং রাসেল দাঁড়িয়ে আছে। স্তব্ধ হয়ে যায় বৃষ্টি। বৃষ্টির দিকে পরোয়া না করে ভিতরে ঢুকে পড়ে রাসেল। সোফায় বসে বলে”একটু পানি দাও তো”।

বৃষ্টি কিচেনে গিয়ে এক গ্লাস ঠান্ডা লেবুর শরবত করে আনে। রাসেল গ্লাস হাতে নিয়ে এক চুমুকে শেষ করে।
বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে”গোজ গাজ করে নাও। এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। সকালেই বেরিয়ে যাবো আমরা। এ অবস্থায় বার বার জার্নি করা একদমই উচিত নয়। এটাই লাস্ট জার্নি।”
“আমি আর ফিরবোনা রাসেল। লেটারে আমি তোমাকে সব টা জানিয়েছি। তুমি চলে যাও।”
“খালি হাতে ফিরে যেতে আসি নি। তুমি আমার জানপাখি। তুমি এখন আর একা নোও। তোমার সাথে আমার চাচ্চু আছে। আমার চাচ্চু আর তার মা আমার বাড়িতেই থাকবে।”
“তা আর হয় না রাসেল। তুমি রেস্ট নাও। কাল সকালে চলে যেও।”

নিজের রুমে চলে যায় বৃষ্টি।

রাসেল বৃষ্টির রুমে ঢুকে দেখে বৃষ্টি কাঁদছে মুখে হাত দিয়ে। রাসেল গিয়ে বৃষ্টির পাশে বসে পড়ে। ভালবাসার মানুষকে না পাওয়া যে কতোটা কষ্টের তা তার থেকে ভালো কেউ জানে না। বৃষ্টির মাথায় হাত রেখে বলে”ফিরে চলো জানপাখি। অন্তত বাচ্চাটার কথা ভেবে ফিরে চলো।”
“ফিরে গিয়ে কি হবে রাসেল? ও তো ওর বাবাকে পাবে না। মা কেও পাবে না।”

“মা কে পাবে না মানে?”
“না মানে |.মানে| জানপাখি তুমি কি চাও আমার বাচ্চা বেঁচে থাকুক? বাবা মার আদরে বড় হোক?”
“আমি চাই জানপাখি। যে আসছে সে আমার বাড়ির সন্তান। আমার ভাইয়ের সন্তান।”
“ওর বাবা হবে রাসেল?”
রাসেল ভ্যবাচ্যকা খেয়ে যায়।

“মানে?”
“আমার বাচ্চার বাবা হবে তুমি? নিবে ওর দায়িত্ব? ওর মা এনে দিবে? বিয়ে করবে তুমি?”
“আমি ঠিকি বলছি। মমের মতো আমিও চাই তুমি বিয়ে করো। আমার পছন্দের মেয়েকে আমি তোমার সাথে বিয়ে দিতে চাই।আমার বোনকে তোমার সাথে বাধতে চাই। আমার বাচ্চার বাবা হবে তুমি আর মা হবে আমার বোন। নিবে আমার বাচ্চাকে?”

“এসব কি বলছো তুমি? এ হয় না। আমি কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।”
“তাহলে এই বাচ্চাও পৃথিবীতে আসবে না।”
“জানপাখি”
“হা। তুমি ভেবে দেখতে পারো। আজ রাত টা সময় আছে তোমার কাছে। আমি চাইনা আমার বাচ্চা এতিম হয়ে থাকুক। ও যেন বাবা মার ছায়ায় বেড়ে ওঠে।”

রাতে ঘুমোতে পারে না রাসেল। তার মাতালপরীর জায়গা সে কাওকে দিতে পারবেনা। একি শর্ত দিলে তুমি জানপাখি। তোমার বাচ্চাকে আমি আমার বাচ্চা করে নিতে হাজার বার রাজি আছি। কিন্তু আমার মাতাল পরীর জায়গা কাউকে দিতে রাজি নই।

সকালে বৃষ্টিকে রাসেল জানায় বৃষ্টির প্রস্তাবে সে রাজি। বৃষ্টির মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সেদিনি তারা সাভারে ব্যাক করে।

রাসেলের যত্মাতিতে ভরপুর হয়ে দিন গুলো কাটতে থাকে বৃষ্টির। সারাদিন খাওয়া, নামায আদায় করা , রাসেলের সাথে আড্ডা দেওয়া আর বোনের সাথে ফোনে কথা বলা। এভাবেই দেখতে দেখতে নয় মাসে পড়ে যায় প্রেগ্ৰেন্সির।


পর্ব ১৭

বিছানায় বালিশের হেলান দিয়ে বসে আছে বৃষ্টি। হঠাৎ করে তার তলপেটে হালকা ব্যথা অনুভব হয়। ক্রমশ ব্যথা বাড়তে থাকে দেখে ভয় পেয়ে যায় বৃষ্টি। হাতের কাছে ফোনটা নিয়ে রাসেল কে ফোন করে। রাসেল অফিসে বসে কাজ করছিল তখনি বৃষ্টির ফোন পেয়ে ফোনটা রিসিভ করে।
_ হ্যালো জান পাখি বল।

_ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে জান পাখি। পেইন হচ্ছে।
_ তুমি কি তো নাড়াচাড়া করবে না। আমি আসছি এখুনি আসছি।
রাসেল এসে দেখে বৃষ্টি শুয়ে আছে বিছানায়। বৃষ্টিকে কোলে করে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বৃষ্টিকে ভর্তি করিয়ে দিয়ে যে গায়োনোলজিস্ট দিয়ে রেগুলার চেকআপ করানো হয়েছিল তাকে ডাকা হয় অপারেশনের জন্য। ডক্টর আসে বৃষ্টির অপারেশন করানোর জন্য। রাসেলের দিকে একটা পেপার এগিয়ে দেয় সই করার জন্য। রাসেল জিজ্ঞাসা করে এইটা কিসের পেপার? ডক্টর বলে

_ আপনার পেশেন্টের ডেলিভারি হওয়ার সময় মৃত্যু মৃত্যু হলে কোন ডাক্তার দায়ী থাকবে না। আর এমনি তেও আপনার পেশেন্ট আর বাঁচবে না।
রাসেল অবাকের চরম পর্যায়ে চলে যায়। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে
_ বাঁচবে না মানে কি বলছেন এসব?

_ সে কি আপনার পেশেন্ট আপনাকে কিছুই বলেনি?
_ কি বলবে? ডাক্তার আমাকে বলুন কি হয়েছে? জান পাখি তো আমাকে কিছুই বলেনি|
_ আপনার পেশেন্টের ফাস্ট থেকেই রেগুলার আমি চেক আপ করেছি। আপনি যখন উনাকে আমার কাছে নিয়ে আসেন তখন তিনি চার মাসের গর্ভবতী ছিলেন। উনার প্রেগনেন্সিতে শুরু থেকেই সমস্যা ছিল। যার জন্য বাচ্চাকে বাঁচাতে গেলে ওনার লাইফ রিক্সা হয়ে যাবে। উনি যদি তিন মাসের গর্ভবতী হতেন তাহলে আমরা আব্রেশন করাতাম। কিন্তু উনি চার মাসের গর্ভবতী ছিলেন। তবুও আমরা রিক্স নিয়ে আব্রোশন করাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু উনি রাজি ছিলেন না।

উনি ওনার বাচ্চাকে পৃথিবীর মুখ দেখাতে চান। এতে তার মরন হলেও সে রাজি। এবার বন সইটা করে দিন। যেহেতু পেশেন্ট নিজেই চায় তার বাচ্চা পৃথিবীতে আসুক। সেহেতু ডেলিভারির আগে আমাদের কিছু ফর্মালিটিস তো থাকেই।

রাসেলের দুনিয়া যেন এখানেই থেমে যায়।নিজের বোন নেই জন্য ভাবিকে বোনের আসনে বসিয়েছে সে। এখনতো সে বোন আর তার বাচ্চাকে নিয়ে তার জীবন। এত বড় কথাটি কিভাবে লুকালো বৃষ্টি তার কাছে আমাকে বার বার বাচ্চার বাবা হতে বলেছে এই কারনে? আমাকে একবার জানানোর প্রয়োজন বোধ করলো না এত বড় কথাটা? কথা বলতে হবে জান পাখির সাথে।

এক দৌড়ে বৃষ্টির কেবিনে গিয়ে বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে রাসেল। রাসেলের এমন কাজে বৃষ্টি বুঝে যায় রাসেল সবকিছু জেনে গেছে। বৃষ্টি কে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে রাসেল।”কেন করলে এমন জান পাখি? আমাকে কি কিছু বলা যেত না? কেন তুমি এব্রেশন করাও নি জান পাখি? এব্রোশন করালে আজকে তুমি সুস্থ থাকতে। আমি নিজে তোমাকে নতুন করে জীবন সাজিয়ে দিতাম। কি প্রয়োজন ছিল এমন করার? তোমারে ভাইটার কথা মনে পড়েনি তোমার আমি কি এতটাই পর?”

ডুকরে কেঁদে ওঠে বৃষ্টি। কি জবাব দিবে সে তার এই ভাইটিকে? চোখ মুছে রাসেলকে বলতে থাকে বৃষ্টি
“নিজেকে শক্ত করো জান পাখি। আমি জানি তোমাকে না জেনে আমি অনেক বড় ভুল করেছি।তোমাকে বললে তুমি জোর করে আমার এব্রোশন করাতে। কিন্তু আমি যে আমার বাচ্চাকে পৃথিবীতে আনতে চাই। এ যে আমার ভালবাসার চিহ্ন। তুহানের এর চিহ্ন। তুহান আমাকে ভাল না বাসলেও আমি তো ভালবাসি। আর এ সন্তান আমার ভালোবাসার প্রতীক।”

“তুমি যদি নিজে না থাকো এ বাচ্চা দিয়ে কি করবে জান পাখি? আমি যতই তার দায়িত্ব নেই না কেন ও যে মা হারা হয়ে যাবে। কেন নিজের জীবনটাকে এইভাবে শেষ করে দিলে জানপাখি?”
“কে বলেছে ও মা হারা হয়ে যাবে? আমি তো ওর বাবা_মার কাছে ওকে দিয়েই চলে যাব।”

“আপু ছেড়ে দাও তুমি ভাইয়াকে। ওই লোকটার কাছে একদম যাবেনা তুমি। মৃত্যুর আগে একটা ঠকবাজ লোকের স্পর্শ গায়ে মাখবে না তুমি।”
কথাটি শুনে রাসেল কে ছেড়ে দেয় বৃষ্টি। রাসেল পেছন ফিরে চকিতে তাকায়। রাসেল কে দেখে লাবিবা দুই পা পিছিয়ে দরজার সাথে আটকে যায়।দুজনের চোখ দিয়েই পানি পড়তে থাকে। রাসেল বলে উঠে _ মাতাল পরী| রাসেলের কথায় বৃষ্টিও চমকে যায়।

“মাতাল পরি মানে? জানপাখি ওই সে যাকে আমি তোমাকে বিয়ে করতে বলেছি। আমার বোন লাবিবা।”
“আর আমার মাতাল পরী। যাকে আমি চারটা বছর ধরে খুঁজে আসছি। তোমার বোন ই আমার মাতাল পরী জানপাখি।”
মৃত্যুকালে এসেও বৃষ্টি যেন সব দুঃখ ভুলে যায়। সে কেন আগে জানেনা তার মাতাল জা ই তার বোন লাবিবা। তাহলে এতগুলো বছর না রাসেলকে না লাবিবাকে এতো কষ্টে কাটাতে হতো। আনন্দে চোখে পানি চলে আসে বৃষ্টির। দেবরের ছন্নছাড়া জীবনটাকে গুছিয়ে দিতে একা কষ্ট পাওয়া বোনটাকে এনে এক করে দিতে চেয়েছিল সে।

(তোমাকে আমার প্রয়োজন নামের বাংলা প্রেমের গল্প টি আপনাদের কেমন লাগলো পড়া শেষে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।)

কিন্তু একটা কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছিল যে দুজন অন্য দুজনকে ভালোবাসে। আদৌ কি আর এক হবে তারা? এবার আর সে চিন্তা রইল না। তার বোন ই তার মাতাল জা। তার অনাগত সন্তানকে নিয়েও তার কোন চিন্তা থাকলো না। খালামণি আর চাচ্চু মিলে বাবা মার আদর স্নেহ দিয়ে বড় করে তুলবে। বোনকে নিজের কাছে ডেকে নেয়। লাবিবা এসেই বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। এ কান্না পাওয়া না পাওয়ার কান্না।

বৃষ্টি শেষ বারের মতো রাসেল কে বলে _ জানপাখি আমার সন্তান আর আর আমার বোনটাকে দেখে রেখো।
লাবিবা বলে উঠে _ আপু তুমি তোমার কথা ফিরিয়ে নাও। অন্য কাউকে বিয়ে করতে বলো আমি করবো কিন্তু তোমার দেবরকে না।
বৃষ্টি বলে _ এইটা আমার শেষ চাওয়া।
আর কোন কথা বলতে পারে না লাবিবা। রাসেল ও চুপ হয়ে থাকে।

একটু আগে লাবিবার কোলে সিস্টার বাচ্চাটা দিয়ে গেছে। আর জানিয়ে গেছে বৃষ্টি আর বেঁচে নেই। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে লাবিবা। তার একমাত্র বোনটি আর নেই। রাসেল মর্গে গেছে লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য।

জানাজা শেষ করে বাড়ি ফিরেছে রাসেল। বৃষ্টির রুমে গিয়ে অনুভব করতে থাকে বৃষ্টিকে। এই ঘরে প্রত্যকটা জিনিসে তার ছোয়া লেগে আছে। এই কয়েকটা মাস তার সেবা করতে বেশির ভাগ সময় এখানেই কাটিয়েছে রাসেল। কাল পর্যন্ত এই রুমে ছিল সে। আর আজি নেই। আর কখনো আসবেও না। বাচ্চার কথা মনে পড়তেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়। প্রত্যেক টা রুমে খুঁজতে থাকে। শেষ মেষ একটা রুমে দেখে বাবুকে ঘুম পাড়িয়ে কোলে নিয়ে চোখ বন্ধ করে জল ফেলছে তার মাতাল পরী।

অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে তার মাতাল পরীর। চেহারা মলিন হয়ে গেছে। দুরন্তপনা অনেক কমে গেছে। রঙহীন কাপড়ের শাড়ি গায়ে জড়িয়েছে। সব হয়েছে তার জন্য। তার মাতালপরী তার জন্য এমন কষ্ট ভোগ করেছে। আজ তার বোনকেও হারাল সে।

চুপি চুপি কাঁদতে কাঁদতে একসময় ডুকরে কেঁদে ওঠে লাবিবা। সেই কান্না সহ্য করতে পারে না রাসেল। চলে আসে ঐখান থেকে। কাঁদতে দিয়েছে তার মাতাল পরীকে। কাদুক সে কারন আজ তার কাদার দিন। যত ইচ্ছা কাদুক। বিরক্ত করবেনা একদম তার মাতাল পরীকে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে লাবিবা কিচেনে কোমড়ে শাড়ি গুজে বাচ্চার জন্য দুধ গরম করছে। একদম পাক্কা গিন্নি রাধুনীর মতো লাগছে তাকে। মনে হচ্ছে অনেক বছর থেকে সংসার করছে সে। রাসেল এগিয়ে গিয়ে লাবিবাকে জিজ্ঞাসা করে _ তয়্যইবার আম্মু আমাদের মেয়ে কোথায়?
থমকে যায় লাবিবা। তয়্যইবা নামটা তার আপু বলেছিল মেয়ে বাবু হলে রাখবে। আজ ওকে তয়্যইবার আম্মু বলে ডাকা হচ্ছে। সত্যি সত্যি ও আম্মু হয়েছে… তার বেবির নাম তয়্যইবা। খুশিতে বলে

“আমার মেয়ে রুমে ঘুমিয়ে আছে।”
“কিসের আমার মেয়ে? আমাদের মেয়ে বলবে। আমার আর তোমার মেয়ে ও মনে রেখো।”
লাবিবার কথার জন্য অপেক্ষা না করে রুমে চলে যায় রাসেল। তয়্যইবা উঠে একা একাই হাত পা নাড়িয়ে খেলছে দেখে রাসেল হেসে ফেলে। কোলে তুলে নেয় মেয়েকে। কোলে নিয়ে আদর করতে থাকে। তখনি লাবিবা এসে বাবুকে কোলে নিয়ে চামচ দিয়ে দুধ খাওয়াতে থাকে। রাসেল তার মেয়ের খাওয়া আর তার মাতাল পরীর খাওয়ানো দেখতে থাকে।

অফিসে না গিয়ে প্রায় সব সময় মাতাল পরীর সামনেই বসে থাকে সে। মেয়ে কে ঘুম পাড়ানো.. গোসল করানো.. খাওয়ানো.. কোলে নিয়ে থাকা.. সব দেখতে থাকে। আর দেখে তার মাতাল পরীকে। কতটুকু পরিবর্তন হয়ে গেছে তার মাতাল পরী। প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। যা জিজ্ঞাসা করা হয় তার উত্তর টুকুই দেয়। এক কথায় ইগনোর যাকে বলে। এই ব্যবহার মেনে নিতে পারছে না রাসেল। এতো দিন পর সে তার মাতাল পরীকে পেয়েছে। তার সামনে আছে তবুও তাকে ছোতে পারছে না। ভালো করে কথা বলছে না। একটুও দুষ্টুমি করছে না। সব চেয়ে বড় ব্যাপার হলো একবার ও ওয়াইনের নাম নিচ্ছে না। যদিও ওয়াইন খেতে নিজেই নিষেধ করেছে তবুও তার মাতাল পরীর চুপ থাকা টা একদমি সহ্য করতে পারছে না। ভিতরে ভিতরে পুরছে সে।

মেয়েকে কোলে নিয়ে লাবিবার সামনে আসে রাসেল। মেয়েকে দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করে _”আচ্ছা আমার তয়্যইবা আম্মু… তুমি কার মতো দেখতে হয়েছ? তোমার আম্মুর মতোন নাকি তোমার পাপার মতোন? মাতাল পরী.. দেখতো আমাদের মেয়ে কার মতো দেখতে হয়েছে? তোমার মতোন নাকি আমার মতোন? দেখো মেয়ে যদি আমার মতোন দেখতে হয় তাহলে কিন্ত আমাকে বেশি ভালবাসবে। আর সব সময় আমার পক্ষ নিবে।”

“তোমার বকবকানি শেষ হয়েছে? আমার মাথা ধরেছে। প্লিজ যাও এখান থেকে মেয়েকে আমার কাছে দিয়ে। ঘুমোবে ও। চোখ দুটো ঘুমে ঢুলু ঢুলু করছে।”
“দেখেছিস মা তোর আম্মু আমার সাথে কেমন করছে? মাথা ব্যথা করছে ভালো কথা। আমি আছি কি করতে? সারাদিন যে তোদের পিছনে পড়ে থাকি..তোদের সেবা করার জন্যই তো।”

“তোমার সেবা চাই না আমার। মেয়ের সাথে কথা না বলে আমার সাথে কথা বলো।”
“তোমার সাথেই তো বলছি। তুমি তো আমাকে পাত্তা দিচ্ছ না। তোমার সাথেই তো কথা বলতে চাই সারাদিন। তুমিই তো কিছু বলো না।”
“আমার কথা ফুরিয়ে গেছে।”


পর্ব ১৮

লাবিবা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বাতাস অনুভব করছে। মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে এসে মাত্রই দাঁড়িয়েছে সে। রাসেল রুমে এসে দেখে মেয়ে ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু মেয়ের আম্মু কোথায়? বেলকনির দিকে তাকিয়ে শাড়ির আঁচল দেখে বুঝতে পারে যে তার মাতাল পরি সেখানেই আছে। এগিয়ে আসে বেলকুনির দিকে। দেখে লাবিবা চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি। কোন ভনিতা ছাড়াই রাসেল পিছন দিক থেকে দুহাতে জড়িয়ে নেয় লাবিবাকে। চমকে উঠে লাবিবা। নিজেকে সরিয়ে না নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।এ স্পর্শ যে তার অতি প্রিয় চেনা স্পর্শ। ঘাড়ে মুখ গুজতেই কেঁপে উঠে লাবিবা। তবুও নিজেকে সরিয়ে নেয় না। রাসেলের দিকে তাকিয়ে বলে _

“অনধিকার চর্চা করবেন না। আপনি আর আপনার ভাই দুজনেই ঠকবাজ। মানুষের জীবন নিয়ে খেলা আপনাদের কাজ। আমি যদি জানতাম যে আপনি আমার বোনের দেবর আর আপনার সাথেই আমার বিয়ের কথা বলেছে তাহলে জীবনেও এদিকে পা দিতাম না। আমার মেয়েকে নিয়ে আমি চলে যেতাম। কষ্ট করে নিজে মানুষ করতাম। আমার বোনের জন্য আমি পারলাম না।”

“আমার ভাই যা করেছে তা খুব খারাপ করেছে। ও সত্যিই এরকম করবে ভাবতে পারি নি। এতটা নোংরা কাজ করবে ধারনার বাইরে। আই এম সরি মাতাল পরী। আমার কৃতকর্মের জন্য আমি দুঃখিত। আমি এসবের কিছুই জানতাম না। জানলে এগুলো কিছুতেই হতে দিতাম না। আমার ভাইয়ের জন্য আমি লজ্জিত।”
“ভাইয়ের সাফাই গাইতে আসবেননা। আপনার ভাইয়ের কথা বাদ দিলাম। আপনি? আপনি কি করেছেন? আপনার নিজের কথা ভাবুন। আপনি আর আপনার ভাই দুজনেই খুনী। আমার বোনটাকে মেরে ফেলেছে আপনার ভাই।

আপনার ভাই স্বামীর অভিনয় করেছে আমার বোনের সাথে। দিনের পর দিন ঠকিয়েছে। শেষ মেষ আত্মা শরীর দুটোতেই মেরে ফেলেছে। আমার ভিসা পাসপোর্ট সব হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি। ইউ এস থেকে আসতে পারছিলাম না। নইতো আপুর এরকম কিছু জানার পর পর ই চলে আসতাম। আমার বোনটাকে বাচানোর শেষ চেষ্টা করতাম। আপনার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপু বলেছিল আপনি সবটাই জানেন। আপনি আপুর মেয়ের বাবা হবেন। অনেক খুজা খুঁজি করে আমার ভিসা পাসপোর্ট পেয়ে সাথে সাথেই চলে এসেছি।

এসে দেখি আমার আপু হসপিটালে অলরেডি এডমিটেড। আর আপনি… আমার ভালবাসার মর্যাদা দেন নি। যেদিন ফেলে চলে এসেছিলেন সেদিন আপনার মাতাল পরীর আত্মার দ্বিতীয় বার মৃত্যু ঘটেছে। পরে আছে শুধু এই দেহ টা। এটিও দেখুন আস্তে আস্তে কেমন শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমি জীবনে অনেক ঠকেছি তাই আমি মানুষের কথা খুব কম বিশ্বাস করি। কিন্তু আপনার কথায় আমি বিশ্বাস করি নি আপনার চোখের কথা বুঝতে পেরে বিশ্বাস করেছিলাম। কারন চোখ কখনো মিথ্যা বলে না। তবুও আপনি আমায় ঠকিয়েছেন।”

“আমি তোমাকে ঠকায়নি মাতাল পরী। দেখ এই চোখে তাকিয়ে দেখ কতটা ভালবাসা তোমার জন্য… তোমাকে না পাওয়ার কতটা হাহা কার|।”
“আমি চাইনা আর আপনার ওই বিষাক্ত চোখ তাকিয়ে নিজেকে ধংশন করতে। আমি চাইনা আর আপনাকে।”রাসেল লাবিবার পায়ের কাছে বসে পড়ে।
“কিন্ত তোমাকে আমার প্রয়োজন মাতাল পরী। তোমাকে কতো খুজেছি জানো? পুরো কানাডা তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি। অপেক্ষার প্রহর গুনেছি প্রতিনিয়ত। যখনি প্লেনে উঠে বসেছি ততোবার ই মনে হয়েছে ফেরার সময় পাশের সিটে আমার মাতাল পরী থাকবে।

পাগলের মতো খুঁজেছি তোমায়। কোথাও পায়নি। বাংলাদেশেও খুঁজেছি তোমায়। আমার মনে হচ্ছিল তুমি এখানে আসবেই। তবুও পায়নি। তুমি বোঝার চেষ্টা করো… যখন আমি মমের কথা শুনেছি তখন আমার দিক বেদিক সব এক হয়ে গিয়েছিল। আমার কোনদিকে খেয়াল ছিল না। পাগল হয়ে বিডি এসেছি আমি। একঘরে হয়ে গিয়েছিলাম। যখন স্বাভাবিক হলাম তখন তোমার জন্য কানাডা চলে যাই। কিন্তু তোমাকে পাই না। প্রায় চার বছর পর আমি তোমাকে পেয়েছি। আমাকে ফিরিয়ে দিও না তুমি। খুব ভালোবাসি মাতাল পরী। আই নিড ইউ.. তোমাকে আমার প্রয়োজন।”

“আমাকে কি বলে আসা যেতো না? কতটুকু দুরে ছিলাম আমি? উপরের তালায় তো? ডোর খুলা ছিল না? আমার কাছে ফোন ছিল না? তোমার মম আমার মম নয়? আমি তোমার মমকে নিজের মম ভাবিনি? তোমার পরিবারের একটা সদস্য হওয়ার জন্য ছটফট করি নি? কি বুঝাবে তুমি আমাকে? কি বুঝবো আমি? আমার দিন রাত কিভাবে কেটেছে জানো তুমি? অভিশপ্ত কানাডা ছেড়ে ইউ এস এ গিয়ে থেকেছি। একা আমি আমার জীবন গুছিয়ে নিয়েছি। আমার চাইনা তোমাকে। প্রয়োজন নেই আর তোমার। মেয়ে একটু বড় হলে হয় আমার সাথে চলে যাবে নয়তো তোমার সাথে থেকে যাবে। করবোনা বিয়ে আমি তোমাকে।”

“কোথায় যাবে তুমি? আমি আর তোমাকে হারাতে দিচ্ছি না। বিয়ে তো তুমি আমাকে করবেই। আমার মাতাল বউ হবে।”
“কখনোই না। করবোনা।”
“করবে।”
“করবোনা”
তখনি তয়্যইবা কান্না করে উঠে। লাবিবা দৌড়ে মেয়ের কাছে গিয়ে মেয়েকে কোলে তুলে নেয়।

“কথা বলে আমার মেয়ের ঘুম টা ভেঙে দিয়েছো। যাও এখান থেকে। মেয়েকে ঘুম পাড়াব।”
“ইসস.. আবার ভুল বললে তুমি। আমাদের মেয়ে হবে। তোমার আর আমার মেয়ে। মেয়ের সামনেই মেয়ের বাবাকে বের করে দিচ্ছ? আমাদের মেয়ে কি বলছে শুনছো না?”
“ও কি কথা বলতে পারে নাকি যে ওর কথা শুনবো?”

“কে বলল পারে না? মুখে না পারুক ইশারায় তো পারে। ও কি বলছে জানো? ও বলছে ও নাকি এখন থেকে ওর আম্মু আর পাপার মাঝে শুয়ে ঘুমোবে।”
“যত্তসব ফাজলামো।”
“তোমার কাছে ফাজলামো মনে হচ্ছে? আমাদের মেয়েটা বুঝে গেল যে ওর পাপার একা থাকতে কষ্ট হয় আর মেয়ের আম্মু তুমিই বুঝলে না।”
“তুমি যাবে নাকি আমি চলে যাবো? থাক আমিই যাই। এই নাও তোমার মেয়ে আর এই যে মেয়ের দুধ। ক্ষুধা লাগলে খাইয়ে দিয়ে ঘুম পারিয়ে দিও।”
রাসেল মেয়েকে কোন মতে ধরে তার মাতাল পরীর চলে যাওয়ার দিক তাকিয়ে থাকে। অবাক হয় সে। তার মাতাল পরী রাগ করতেও শিখে গেছে।”

গোসল করার জন্য আলমারি থেকে শাড়ি নিতে আলমারি খুলে লাবিবা। পুরো আলমারি নতুন নতুন শাড়ী দেখে অবাক হয়ে যায়।”এগুলো শাড়ী কোথা থেকে এলো? আমি তো আমার শাড়ি গুলো রেখেছিলাম শুধু আলমারিতে। পুরো আলমারির কোথাও তো নেই আমার শাড়ী। কই গেলো? শাড়ির কি পা গজাল যে এখান থেকে হেঁটে হেঁটে চলে গেছে নাকি কেউ সরিয়ে দিয়েছে?”

নিচে এসে সার্ভেন্ট কে জিজ্ঞাসা করে
_ শোন.. আমার আলমারি তে যে কাপড় গুলো ছিল সেগুলো পাচ্ছি না। তুমি কি কিছু জানো?
_ ম্যাম আপনার সব ড্রেস স্যার ফেলে দিতে বলেছেন। আমরা ফেলে দিয়েছি। আপনার জন্য আনা ড্রেস গুলো আলমারিতে সাজিয়ে রেখেছি।
_ তোমার স্যার কোথায়?
_ স্যার তো গার্ডেনে।

রাগে গজ গজ করতে করতে লাবিবা গার্ডেনে গিয়ে দেখে রাসেল বেঞ্চে বসে ল্যাপটপ ঘাটছে। সামনে গিয়ে কোমড়ে হাত রেখে বলে _
“তুমি আমার ড্রেস গুলো ফেলে দিতে বলেছ কেন? আর এতগুলো নতুন ড্রেস কি আমি আমার জন্য কিনতে বলেছিলাম?”
“তুমি বললেই কিনবো নাকি… আমার মাতাল বউয়ের জন্য আমি যা ইচ্ছা যত ইচ্ছা কিনবো। আর ফেলে দিয়েছি বেশ করেছি। রংহীন ঐসব শাড়ি কেন পড়বে তুমি? আমি বেচে থাকতেই আমায় মৃত ঘোষণা করে বিধবা হয়ে থাকতে চাইছো বুঝি? আমি এখনো মরি নি। আমি মরলে যা ইচ্ছা তাই পড়তে পারো.. আমি তো আর দেখতে আসবো না।”

লাবিবা এসব কথা শুনে আরো রেগে যায়। রাসেল একটানে লাবিবাকে কোলে বসিয়ে দেয়। এবার লাবিবা রেগে লাল হতে থাকে। উঠতে নিলে রাসেল চেপে ধরে।”তুমি এসেছো ভালোই হলো। দেখতো কোনটা চয়েজ হয়? আমাদের বিয়ের জন্য একা একাই তোমার বেনারসী চয়েজ করছিলাম। দেখো সবগুলো থেকে এই তিনটা তোমার জন্য চয়েজ করেছি।”

লাবিবার রাগ এবার ৭ম আকাশে উঠে যায়। রাসেলের চুল মুষ্টি করে ধরে ঝাঁকাতে থাকে। রাগে কটমট করতে করতে বলে
“এই রাসেলের বাচ্চা তোকে বলেছিনা আমি বিয়ে করবো না। তোকে আর কতোবার বলবো? বিয়ের সখ জেগেছে তোর। এতো কেন বিয়ের শখ জাগে এখন? যখন বিয়ে করতে বলেছিলাম তখন করতে পারিস নি? মরতে চাস তুই.. মরার কথা বলিস আমাকে? বিধবা করবি আমায়? এতো শখ তোর?”
“কি করছো লাগছে তো। মাতাল বউ ছাড়। ছাড় প্লিজ।”

“না ছাড়ব না। তোর মাথার চুল সব ছিড়ে ফেলবো। তারপর টাকলু জামাই হবি তুই।”
“টাকলু জামাই হলে জামাই হওয়ার পর চুল ছিড়বে কি করে মাতাল বউ? তখন তো আমার টাক মাথার উপর তোমার নখের অত্যাচার চলবে।”
লাবিবা ছেড়ে দিয়ে হন হন করে বাড়ির ভিতরে চলে যায়। আর রাসেল ভাবতে থাকে”হলটা কি? বিয়েও করবেনা আবার বিধবাও হবে না। মরার কথা বললেও সমস্যা। আবার টাকলু জামাই ও করতে চায়।আজব।”

তয়্যইবা ঘুমোনোর পর লাবিবাও পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। রাসেল লাবিবার ঘুমের অপেক্ষাতেই ছিল। আস্তে আস্তে কোলে তুলে নিয়ে বেড়িয়ে যায় বাড়ি থেকে। গাড়িতে বসিয়ে দেয়। ড্রাইভ করে চলে আসে একটা শূন্য রাস্তায়। সাবধানে আবার লাবিবাকে কোলে নিয়ে হাটতে থাকে। লাবিবা আস্তে আস্তে করে চোখ খুলে দেখে ও রাসেলের কোলে। আর রাসেল ফাকা রাস্তায় ওকে কোলে নিয়ে হাটছে।

“ওহ মাই হ্যন্ডসাম… আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? তুমি কি আমায় মেরে ফেলবে জন্য এই ভুতুরে রাস্তায় এনেছ? নাকি শুধু ভয় দেখাতেই নিয়ে এসেছো যেন আমি ভয় পেয়ে তোমাকে বিয়ে করে ফেলি। আমায় মেরো না। আমি মরলে আমার মেয়েকে কে দেখবে? অন্য মা এসে তো ওকে একদমি ভালুপাসবে না।”
“অন্য বউ এসে কি আমাকে ভালুপাসবে বলো? তাহলে তোমাকে মারবো কেন?”
“তাহলে কেন নিয়ে এসেছো এখানে?”

“আমার মাতাল পরীকে ফিরে পেতে। আমার মাতাল পরীর রাগী চেহারা থেকে তার আসল ঘুমে ঢুলু ঢুলু স্নিগ্ধ চেহারা উপভোগ করতে। তার বোকা বোকা কথা গুলো শুনতে। তার সাথে আজকের এই পূর্ণিমা থেকে শুরু করে জীবনের প্রত্যেকটা পূর্ণিমায় জোসনা বিলাস করতে। জোসনা রাতে ফাঁকা রাস্তায় তাকে ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে হাঁটতে। আমি কিন্তু আমার প্রত্যেক টি চাওয়াই পেয়ে গেছি। ও আমার মাতাল পরী.. প্লিজ কাম ব্যাক।”
“নামাও আমাকে। এক্ষুনি নামাবে।”

“উহু। নামানোর জন্য তো কোলে নেই নি। কোলেই থাকো তুমি। আজ তোমাকে নামাবো না আমি। মেয়ের কাছে সার্ভেন্ট রেখে এসেছি।”
“নামাবে নাতো… আচ্ছা। আমিও নামবো না। সারারাত কোলে নিয়ে হাটবে তুমি। আমিও দেখি ষাট কেজি ওজন নিয়ে কিভাবে সারারাত হাটো তুমি।”
“মরে গেলেও নামাবো না। এইটুকু ওজন যদি বহন নাই করতে পারি.. তাহলে আমার এতো বছরের জীম করে বানানো বডির কোন মূল্যই থাকবেনা।”
“হুহহ”


পর্ব ১৯

লাবিবা ঘুম থেকে উঠে দেখে বেলা গড়িয়ে প্রায় দুপুর হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নিচে নামে। রাসেল মেয়েকে নিয়ে বসে বসে খেলা করছিল। লাবিবাকে দেখেই বলে উঠে”গুড হব হব নুন আমার মাতাল বউ।”
লাবিবা এগিয়ে এসে বলে”এতো বেলা হয়ে গেল.. আমাকে ডাকো নি কেন?”
“সারারাত মেয়ে কেঁদেছে। তুমি তো আর ঘুমোওনি। তাই ডাক দেইনি। না ঘুমোলে শরীর খারাপ করবে।

“ওহ”
“আমাকে তো আর সাথে নেও না। নিলে তো তোমারি ভালো হতো। হাফ নাইট আমি ডিউটি করতাম আর তুমি ঘুমোতে আর হাফ নাইট তুমি ডিউটি করতে আমি ঘুমোতাম।”
“আজাইরা কথা সব”
“খুব ক্ষুধা পেয়েছে। রান্না করো যাও।”
“সার্ভেন্ট কোথায়?”
“সবাইকে চলে যেতে বলেছি। নতুন সার্ভেন্ট হায়ার না করা পর্যন্ত কষ্ট করে একটু রান্না করো। দু একদিনের মধ্যেই হায়ার করবো।”
“কিন্তু এসব কেন করলে?”
“যাতে কেউ না জানতে পারে তয়্যইবা আমাদের মেয়ে নয়। আমি কোন প্রুভ রাখতে চাই না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা বিয়ে করবো। “
“আমি কিন্তু তোমাকে বিয়ে করবো না।”
“করবে করবে। তুমি করবে আমিও করবো।”
“না না করবো না।”
“আরে আমার মাতাল বউ না না করা বাদ দিয়ে আপাদত রান্না করো। ক্ষুদায় পেট চো চো করছে।”

লাবিবা কোমড়ে আচল গোজে রান্না করছে। গরমে ঘেমে নেয়ে একসের। রাসেল উকি দিয়ে দেখে লাবিবা খুব অসস্থির সাথে কাজ করছে। সত্যিই আজ মাতাল বউ বউ লাগছে। রাসেল নিঃশব্দে কিচেনে ডুকে। লাবিবার পেছনে দাঁড়িয়ে ঘেমে অসার হয়ে যাওয়া পিঠে হালকা করে ফু দিতে থাকে। লাবিবা প্রথমে চমকে উঠলেও পরে চুপ হয়ে যায়। লাবিবা জানে এটা কার কাজ হতে পারে.. পুরো বাড়িতে তো তারা তিনজন ছাড়া আর কেউ নেই। শাড়ি প্রসার করে বের হয়ে থাকা পিঠ টা ঢেকে নেয়।
“মেয়েকে একা রেখে এখানে কেন এসেছ? কিছু লাগলে নিয়ে চলে যাও।”

“তুমি কষ্ট করে রান্না করছো তাই হেল্প করতে এলাম। দেখতো কেমন ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছো”একথা বলেই কোমর থেকে গুজা আচল নিয়ে লাবিবার কপালের ঘাম মুছতে থাকে।
“আরে আরে কি করছো? যাও তো এখান থেকে।”

“সবসময় এতো যাও যাও করো কেনো বলতো? আগের মতো করে একটু কাছে ডাকবে। বলবে মাই হ্যান্ডসাম একটু থাকো না আমার পাশে।”
“ভেঙিয়ে মাই হ্যান্ডসাম.. প্লিজ যাও না এখান থেকে.. আমার মেয়েটা একা আছে।” “যাচ্ছি যাচ্ছি। সব সময় শুধু মেয়ে মেয়ে.. আমার দিকে তো তাকানোর সময় টাই নেই।” “মনে মনে তুমি জানো না হ্যান্ডসাম.. তোমার দিকে এক বার তাকিয়ে দেখার জন্যই হয়তো আমি বেঁচে আছি।”
রাসেল চলে গেলে লাবিবা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

ব্যাংকের কাজে এসেছে রাসেল। কাজ শেষে বেরোতে নিলেই তোহান এর সাথে দেখা হয়। না দেখার ভান করে বেরোতে নিলে বলে ওঠে
“কেমন আছিস রাসেল?”
দাঁড়িয়ে পড়ে রাসেল।
“এইতো ভালো আছি ,তুমি কেমন আছো?”

“আছি আর কি| বৃষ্টি কেমন আছে? আমাদের বাসাতেই থাকে শুনলাম।”
“তার আগে বল তোমার নিউ ওয়াইফ.. নিউ বেবি কেমন আছে? নিশ্চয়ই খুব আনন্দের দিন কাটছে। বাবা হয়েছো বলে কথা।”
“তা আর হতে পারলাম কই?”
“কেন? আমি তো শুনেছিলাম তোমার বউ নাকি প্রেগনেন্ট। এতোদিনে তো ডেলিভারি হয়ে যাওয়ার কথা। ছেলে হয়েছে নাকি মেয়ে হয়েছে?”
“বেবি মিসক্যারেজ হয়ে গেছে সাত মাসের সময়।”

মৃদু হাসে রাসেল।
“So sad . কাউকে ঠকালে এমনই হয়। সমবেদনা ছাড়া কিছুই দিতে পারছি না।”
“আমি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি রাসেল। আমি ভীষণভাবে অনুতপ্ত। আমি আর পারছিনা.. আমি এবার বাড়ি ফিরতে চাই।”
“দেখো তোমার বাড়ি তুমি ফিরতেই পারো। তোমার অধিকার আছে। এতে না করার আমার সাধ্য নেই।ওটা যেমন আমারও বাড়ি তেমন তোমারো বাড়ি। তুমি চাইলেই আসতে পারো।”

“বললি নাতো বৃষ্টি কেমন আছে?”
“হাহাহা তো এই ব্যাপার। জানপাখি আছে জন্য তুমি বাড়িতে যেতে পারছ না? সরাসরি বললেই তো পারো। তোমার মতো সেইমলেস এর এতো ভনিতা না করে বললেও চলে। আর হে তোমার জন্য সুসংবাদ। জান পাখি আর বেঁচে নেই। তার মুখোমুখি আর তোমাকে দাঁড়াতে হবে না।”

বলেই রাসেল চলে যায়। আর তুহান স্তব্ধ হয়ে বসে পড়ে ওখানেই। কি শুনলো ও? বৃষ্টি আর বেঁচে নেই মানে? শরীরের শিরা উপশিরা সহ চিন চিন করে আঘাত করতে থাকে তাকে। অপরাধী ও। শেষ বারের মতো ক্ষমাও চাইতে পারলো না। কেন বেঁচে রইল না বৃষ্টি? কিসের জন্য? আমার দেওয়া আঘাত কি সে সহ্য করতে পারে নি? তবে কি আমার জন্যই তার মৃত্যু ঘটেছে? প্রধান দোষী আমি। খুনী আমি। আমায় ক্ষমা করো বৃষ্টি। আমি খুন করেছি তোমায়.. ঠকিয়েছি তোমায়.. তার বিনিময়ে আল্লাহ আমার সন্তান কে পৃথিবীর আলো দেখানোর আগেই নিয়ে নিয়েছে। আমি ভালোবেসে ছিলাম তোমায় বৃষ্টি। আজো ভালবাসি। ভুল করেছি আমি। সেই ভুলের মাসুল তোমাকে দিতে হলো। আই এম সরি.. তোমার মৃত্যু চাইনি আমি কখনো আমি.. কখনো না।”

বাড়ি ফিরে রাসেল সোজা মেয়ের কাছে আসে। এসে দেখে তয়্যইবা ঘুমোচ্ছে। আস্তে করে কপালে চুমু দিয়ে দিয়ে বলে”এইযে আমার ঘুম পাগলী মেয়ে.. এতো কিভাবে ঘুমোও তুমি? সারাদিন ই কি ঘুমোতে হয়? আমি তো একটুও তোমার সাথে খেলা করতে পারি না। তোমার আম্মু কে রিলাক্স দাও সারাদিন ঘুমিয়ে.. তাইনা? লক্ষী মা আমার। তোমার আম্মু কোথায়?”

রাসেল লাবিবা কে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে আসে। দেখে ছাদে লাবিবা একা একা দাড়িয়ে আছে। একটু এগোতেই দেখে ধোয়া উড়ছে। লাবিবার হাতে আগুন ধরানো জলন্ত সিগারেট দেখতে পায়। অবাক হয়ে দাঁড়ায় রাসেল। প্রায় তিনমাস হতে চললো লাবিবা এসেছে এখানে। একদিন ও মদ সিগারেট এর কথা ও শুনিনি। ভেবেছিলাম নেশা করা বাদ দিয়েছে। কিন্তু সিগারেট খাওয়া শিখলো কবে থেকে? রাসেল লাবিবাকে পেছন থেকে ডাকলে লাবিবা ফিরে তাকায়। লাবিবাকে দেখে ভয় পেয়ে যায় রাসেল। চোখ দুটোর দিকে তাকানো যাচ্ছে না। অসম্ভব লাল হয়ে আছে চোখ দুটো। ঐ চোখে যে তাকাবে সেই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।

“মাতাল পরী… তুমি সিগারেট খাচ্ছ… তুমি তো মদ খেতে তাহলে সিগারেট কেন খাচ্ছ?”
“ছেকা খেয়েছি তাই। আর মদ.. ঐটা তো আমার লাইফের বেস্ট বেস্ট বেস্ট নাইট.. আমার প্রোপোজ নাইটে লাস্ট খেয়েছিলাম। তার পর দিনই আবার ছেঁকা খেলাম। উঠে এলো হাতে সিগারেট.. পেয়ে গেল আমার ঠোঁটে স্থান। এখন প্রতি নিয়তো আমার ঠোঁটের ছোঁয়ায় ভস্ম হওয়াই এটির কাজ।”

“তুমি আর এই সিগারেট খাবে না। আমি চাইনা এসব বাজে নেশা আর তোমাকে ছুতে পারুক। কে ছেঁকা দিয়েছে? কিসের ছেকা খেয়েছো? কেউ দেয়নি তোমায় ছেঁকা।”
“ওমা তুমি জানো না? তোমারি তো আমার থেকে বেশী জানার কথা। জানো আমাকে না ছেঁকা দিয়েছে। মাই হ্যান্ডসাম আমাকে ছেঁকা দিয়েছে। ফেলে চলে এসেছে আমায় একা করে। ছেঁকা খেলে তো সিগারেট হাতে থাকবেই তাই না?”
“না থাকবে না”

লাবিবার কাছে এসে হাত থেকে সিগারেট টা ফেলে দিয়ে দুহাতে দু গাল চেপে ধরে বলে
“কেউ ছেকা দেইনি তোমায়। দেখো তোমার হ্যান্ডসাম তোমার সাথেই আছে। খুব ভালোবাসে তোমায়। কিছু বছরের কষ্ট কে টেনে সারাজীবনের সুখ টাকে নষ্ট করো না মাতাল পরী। আমার সামান্য ভুলের জন্য এত গুলো বছর নষ্ট হয়ে গেলো। কিন্তু আমি আর নষ্ট হতে দিবোনা কিছুতেই। আমার তোমাকে প্রয়োজন মাতাল পরী। আই প্রমিজ আর কখনো তোমাকে কষ্ট দিবো না। মৃত্যু ছাড়া কখনো ছেড়ে যাবো না। এই বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখবো তোমায়। কোন কষ্ট তোমাকে ছোতে পারবে না। আমি আমার মাতাল পরীকে আমার মাতাল বউ করে সারাজীবন ভালোবাসতে চাই।”

হাত দুটো ছাড়িয়ে নেয় লাবিবা। মুখে স্প্রে করতে করতে বলে”এতো ইমোশোনাল কথা বার্তা কবে শিখলে? ভুতের মুখে রাম রাম।”
“আমার মাতাল পরীর থেকে শিখেছি। স্প্রে করছো যে?”
“আমার একটা বাচ্চা আছে। বাচ্চার কাছে স্প্রে না করে গেলে বাচ্চার প্রবলেম হবে। আর আমার কোন ইচ্ছা নেই তোমার মাতাল বউ টউ হবার। তোমাকে আমি বিয়ে করছি না।”
“আচ্ছা করবেই তো। তুমিও করবে আমিও করবো।”
“হুস হুস”

দুদিন পর সকালে সোফায় বসে নিউজ পেপার পড়ছে রাসেল। দরজায় নক শুনে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলতেই দেখে তুহান দাঁড়িয়ে। সাথে অনেক গুলো লাগেজ। তুহান যে বাড়ি ফিরে আসতে চেয়েছিল তা রাসেলের মনে পড়ে যায়। তুহান সার্ভেন্টকে বলে লাগেজ গুলো উপরে নিয়ে যেতে। পেছনে এসে দাঁড়ায় সোনালী। সাথে আরেকজন মহিলা। রাসেল তুহান কে বলে”তুমি আসবে বলেছিলে। কিন্তু সাথে আরো দুজনকে আনবে বলোনি তো।”

“ও হচ্ছে আমার বউ সোনালি। আর উনি আমার শাশুড়ী মা। আমি যেখানে তোর ভাবিতো সেখানেই থাকবে তাই না?”
“কই আগে তো কখনো দেখিনি একসাথে..”
চুপ হয়ে যায় তুহান।

সোনালী সালাম দিয়ে ভেতরে ঢুকে। পেছন পেছন তুহান আর তার শাশুড়িও ঢুকে। তুহান রুমে না গিয়ে সোফায় গিয়ে বসে। শাশুড়িকে বলে বসেন মা। তুহানের শাশুড়িকে এতোক্ষন দেখছিলো রাসেল। মেয়ের সাথে মেয়ের শশুড় বাড়ি এসে পড়েছে। তুহানের শাশুড়ি রাসেল কে উদ্দেশ্য করে বলে”তা বাবা কেমন আছো? তোমার মা নাকি চার বছর আগে মারা গেছেন তুহান বলল আমাকে। বাড়িতে আর কেউ নেই নাকি? না মানে বাড়ির বউ নতুন এলো তো ।”
“আমি ভালো আছি। নতুন বউ এলেও একচুয়েলি তো নতুন না। বিয়ে কবে হয়েছে জানি না। তবে প্রেগনেন্ট ছিল সাত মাস এইটা জানি। সেই হিসেবে পুরোনো হয়ে গেছে। আপনি আপনার মেয়ের শশুর বাড়ি কেমন দেখতে এসেছেন বুঝি?”

“হ্যাঁ। আমার মেয়েটা ছোট এখনো। সংসার সামলাতে পারবে না। তাই আমি ওর সব কাজ বাজ সংসার সামলাই। ওর সাথেই থাকতে হয় বুঝলে।”
“এই বয়সে মেয়ের সেবা পাবেন তা না মেয়ের চামচার কাজ করছেন। ভালোই।”

লাবিবা সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে থাকে। সোফায় বসে থাকা মানুষগুলোর দিকে চোখ যেতেই থমকে যায়। পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে যায়। যা ও সহ্য করতে পারে না তা বার বার তার কাছেই ফিরে আসে। রাগে ক্ষোভে কষ্টে কাঁপতে থাকে। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না। চোখ দুটো ঝাপসা আসে। শব্দ বিহীন কান্নায় ফুপাতে থাকে। শরীরের সমস্ত জোর যেন নিমেষে শেষ হয়ে যায়। এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়। ওয়াশ রুমে গিয়ে দরজা লক করে দেয়। সাওয়ার ছেড়ে সাওয়ারের নিচে বসে পড়ে। এতক্ষনের আটকে থাকা ভিতরের কান্না কে মুক্ত করে দেয়। চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।


পর্ব ২০

অনেকক্ষণ থেকে লাবিবাকে না দেখতে পেয়ে রাসেল রুমে খুঁজতে আসে। রুমে লাবিবাকে না পেয়ে ব্যালকনিতে যেতেই ওয়াস রুম থেকে সাওয়ারের আওয়াজ পায়। ওয়াসরুমের দরজায় যেতেই লাবিবার আর্তনাদ শুনতে পায়। সাওয়ার ছেড়ে দেওয়া শর্তেও বেশ জোরালো ভাবে কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। ভয় পেয়ে যায় রাসেল। বার বার জোরে জোরে ডাকার পরেও দরজা খুলে না। শেষ মেষ কোন উপায়ান্তর না পেয়ে কাধ দিয়ে জোরে ধাক্কা দিয়ে দরজার ছিটকিনি আগলা করে ফেলে। দরজা সরিয়ে ভিতরে গিয়ে দেখে লাবিবা ফ্লোরে বসে অর্ধ জ্ঞান এ কাপছে থর থর করে। সাওয়ার অফ করে লাবিবাকে ঝাঁকাতে থাকে।

“মাতাল পরী.. আমার মাতাল বউ..কি হয়েছে তোমার? এভাবে কাঁদছিলে কেন? কি হয়েছে তোমার? আমাকে বলো.. বলো আমাকে।”
লাবিবা রাসেল কে জড়িয়ে হাওমাও করে কাঁদতে থাকে। হেঁচকি তুলতে তুলতে বলে
“আম্মু..”
“কোথায় আম্মু? কার আম্মু?”
“আম্মু… নিচে যে মহিলাটি বসে আছে উনিই আমার আম্মু।”
“ভাইয়ার শাশুড়ি তোমার আম্মু?”

“হ্যাঁ। তোমার মনে আছে আমি তোমাকে বলেছিলাম।আমি যখন নায়াগ্ৰা গিয়েছিলাম তখন ঐ মহিলা কে দেখছিলাম। ঐ মহিলার সাথে একটা মেয়েও ছিল। আম্মু বলছিল। ঐ মেয়েটিই তুহান ভাইয়ার বউ তাহলে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে হ্যান্ডসাম। আমি ঐ মহিলাকে সহ্য করতে পারবো না। প্লিজ তুমি ওদের তাড়িয়ে দাও। ঐ মহিলা আর তার মেয়ে আমার চোখের সামনে থাকলে আমি মরে যাবো। তুমি তো বলেছিলে ঐ তুহান এর সাথে কোন যোগাযোগ রাখবে না। তাহলে কেন এসেছে এখানে? আমার বাচ্চা টাকে যদি কেড়ে নেয় এখন? আমি শুনেছি ওনার বউয়ের বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে। এবার যদি আমাদের বাচ্চা টাকে কেড়ে নেয়? আমি আমার বাচ্চা কিছুতেই দিবো না। হ্যান্ডসাম প্লিজ কিছু করো।”
“অনেকক্ষণ ভিজেছো। চেঞ্জ করো এবার।”

রাসেল আলমারি থেকে শাড়ি বের করে এনে দিয়ে বলে”তারাতাড়ি চেঞ্জ করো।”
লাবিবা কাপা কাপা হাতে শাড়ি নিয়ে দরজা লক করে চেঞ্জ করে নেয়।

রাসেল একটু পর এসে দেখে লাবিবা বিছানায় গুটি গুটি হয়ে বসে আছে। চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। রাসেল কাছে গিয়ে দাড়াতেই লাবিবা কেঁদে দেয়। রাসেল লাবিবার পাশে বসে বলে
“এতো ভয় পাচ্ছো কেন? আমি থাকতে কিসের ভয় তোমার? তাকাও আমার দিকে।”
লাবিবা তাকায় রাসেলের দিকে।

“শোন ঐ মহিলা তোমার আম্মু ছিল। এখন আর নেই কিন্তু। অনেক আগেই তোমাকে ফেলে চলে গেছে। তুমি তো তাকে চেনো না। কেউ হয়না উনি তোমার। তাহলে তুমি কেন উনাকে দেখে কষ্ট পাবে? কেন অন্য কেউ তাকে আম্মু ডাকলে তোমার কষ্ট হবে? কোন কষ্ট নেই। ঐ মহিলা তোমার ভাসুরের শাশুড়ি আর ঐ মেয়ে তোমার ভাসুরের বউ মানে তোমার বড় জা।”
“কিন্তু আমি তো তোমাকে বিয়ে করবো না।”

এই মুহুর্তে নিজের মাথায় নিজের বাড়ি দিতে ইচ্ছে করছে। বিয়ে করবেনা করবেনা করে মাথা খেয়ে ফেলল। বিয়ে তো তুমি করবেই মাতাল পরী.. আর আমার মাতাল বউ হবেই।

“আচ্ছা শোন। ঠিক করে একটা এনসার দিবে। তয়্যইবার আম্মু_পাপা কে?”
“আপু আর তুহান ভাই।”
“তাহলে তুমি আমি কে?”
“না।”
“কি না?”
“আপু আর তুহান ভাই কেউ না। তয়্যইবা আমার মেয়ে। আমি ওর আম্মু। আর তুমি ওর পাপা।”
“মনে রেখো কথাটা। এবার উঠ। চল।”
“কোথায় যাবো? আমি কোথাও যাবো না।”
“যাবে চলো।”
রাসেল লাবিবাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।

এদিকে তুহানের শাশুড়ী বিছানায় হেলান দিয়ে চোখের জল ফেলছে। সে কখনো ভাবে নি এইভাবে তার মেয়ের সাথে দেখা হবে কখনো। একটু আগে রাসেল কে লাবিবার রুমে ঢুকতে দেখে সে। তার জন্য যে রুম ওঠেন করে দেওয়া হয়েছে সে রুম তার পছন্দ হয়নি। তাই সে রাসেলের সাথে কথা বলতে লাবিবার রুমে যায়। গিয়ে দেখে লাবিবা রাসেলকে জড়িয়ে হাওমাও করে কাঁদছে আর বলছে _”নিচে যে মহিলাটি বসে আছে উনিই আমার আম্মু।”কথাটা বিশ্বাস করতে বাধ্য হয় সে। কারন পৃথিবীর আর কেউ চিনুক বা না চিনুক মা তার সন্তান কে ঠিক ই চিনে। দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না আর ওখানে। অসার হয়ে যাওয়া দেহটা নিয়ে রুমে ফিরে আসে।

লাবিবার প্রত্যেক টা চোখের জলের ফোটা তার হৃদয়ে গিয়ে লাগে।বাচ্চা মেয়েটাকে ফেলে এসে বড় ভুল করেছিল সেদিন সে। কিন্তু মায়ের মন বেশিক্ষণ ভুলে থাকতে পারেনি। নতুন সংসারে থেকেও সে বার বার মেয়ের কথা ভেবে অস্থির হতে থাকে। পরে মেয়েকে ফিরে পেতে চাইলে নতুন স্বামী তীব্র প্রতিবাদ জানায়। তবুও মেয়ের খুজতে থাকে তিনি। কিন্তু কোথাও পায় না। এতো বছর পর মেয়েকে পেয়েছে সে।তবুও সামনে গিয়ে একবার জড়িয়ে ধরতে পারবেনা সে। নিজে যেমন কষ্ট পেয়েছে তার মেয়েও প্রতিনিয়ত সেভাবে কষ্ট পেয়েছে। আজ তার চোখের জল ই তার প্রমান। সোনালীর ডাকে চোখ মুছে বসে সে।

“আম্মু কাদছো কেন তুমি?”
মেয়েকে পাশে বসিয়ে মাথায় হাত রাখতে রাখতে বলে
“তোর আপুর খোঁজ পেয়েছি জানিস”
“আপু… কোথায় আপু? আম্মু বলোনা কোথায় আমার আপু?”
“এ বাড়িতেই আছে।”
“তাই? কোথায় চলো না আম্মু আপু কে দেখবো।”
মেয়ের উৎসাহে না করতে পারে না আর। সাথে করে নিয়ে যায় সেই রুমে। কিন্তু সেখানে গিয়ে আর পায় না লাবিবাকে।

রাসেল লাবিবাকে নিয়ে গিয়ে কোর্টের সামনে দাঁড়ায়। কোর্টে আসা দেখেই লাবিবা লাফিয়ে উঠে।”আআআআআআআ| ষড়যন্ত্র| ঘোর ষড়যন্ত্র। আমি তোমাকে কিছুতেই বিয়ে করবো না।”

লাবিবা তাড়াহুড়ো করে দৌড় দিতে নিলে রাসেল চেপে ধরে নেয়।
“আমি বিয়ে করবো না। আমার মেয়েটা কে একা রেখে এসেছি। চলো আমরা চলে যাই।”
“মেয়ে একা নেই।মেয়ের সাথে অনেকেই আছে সোনা।”
“আমি বিয়ে করবো না”
“হ্যাঁ তো। তুমি বিয়ে করবে না।”
“তাহলে কেন এসেছি এখানে?”

“আমরা তো ঘুরতে এসেছি সোনা। চলো আমরা ভিতর থেকে ঘুরে আসি। তুমি তো কখনো কোর্টে যাও নি।চলো চলো “
রাসেল লাবিবাকে জোর করে ধরে ভিতরে নিয়ে যায়। এদিকে লাবিবা বিয়ে করবোনা করবোনা বলে রাসেলের বাহুর মাঝেই লাফাতে থাকে। উকিল সাহেব এমন পরিস্থিতি দেখে সমানে বিষম খায়। কাপা কাপা গলায় জিজ্ঞাসা করে”রাসেল সাহেব… আপনিতো বলেছিলেন আপনি বিবাহ করিবেন। আপনার বিবি কি ইনিই হইবে?”
লাবিবা থেমে যায়। চোখ গরম করে উকিলকে বলে

“হা ইনিই হইবে। কেন এতো রিয়েকশন করার কি আছে? আমি কি উনার বিবি হইতে পারবোনা নাকি? নাকি রাসেল সাহেবের সুন্দর চেহারা দেইখা আপনিই বিয়ে করতে চাইছেন?”
“তওবা আসতাগফিরুল্লাহ। না মানে বলছিলাম কি আপনাকে দেখে বউ মনে হচ্ছে না একটুও। আচ্ছা আপনি কোন এসাইলাম ..”
“কিহ আমাকে পাগল মনে হয় আপনার?”
“তাহলে বুঝি আপনার লাফানো রোগ আছে?”

“দেখুন মেজাজ একদম খারাপ করাবেন না। একদম উগান্ডা পাঠিয়ে দিবো।”
পাশ থেকে একজন বলে উঠে “উগান্ডা কি? এটা কি জায়গার নাম? বাংলাদেশের কোথায় অবস্থিত আমাকে একটু বলবেন প্লিজ। এটা দেখতে কেমন? সমতল নাকি উঁচু নীচু পাহাড়? পাহাড় হলে ভালো হয়। আমার আবার পাহাড় দেখতে খুবই ভালো লাগে।” পাশের আরেকজন ধমক দিয়ে বলে “আরে রাখেন আপনি পাহাড়। উকিল সাহেব.. কনে কিন্তু বেয়াদপি করেছে আপনার সাথে। আপনার এ রেজিস্ট্রি করানো উচিত হইবেনা। আপনি রেজিস্ট্রি করাবেন না। আমরাও সাক্ষী দিব না।”

লাবিবা রাগে ফায়ার হয়ে ঐ লোকের কলার চেপে ধরে।
“সাক্ষী দিবেন না মানে? আপনি দিবেন আপনার বাপের ভাইরা ভাই সহ সাক্ষী দিবে। ঐ উকিল সাহেব রেজিস্ট্রি করান। এক্ষুনি রেজিস্ট্রি করাবেন।”
কাজী সাহেব তাড়াতাড়ি পেপার্স নিয়ে বসে পড়ে। লাবিবা রাসেলের দিকে তাকিয়ে দেখে রাসেল হাবলার মতো তাকিয়ে আছে। রাসেল বলে”আই এম কনফিউজড।”এবার লাবিবার হুস আসে। এতোক্ষণ কিভাবে রাগ দেখিয়ে উকিল কে দিয়ে রেজিস্ট্রি করাচ্ছে ভেবেই কেদে দেয়। রাসেল বলে
“কাদে না সোনা। রেজিস্ট্রি হলেই আমরা চলে যাবো।”

“আমি বিয়ে করবো না।”
“না না তুমি তো বিয়ে করবে না। তুমি শাদী করবে আমার মাতাল বউ।”
“না তোমার মাতাল বউ হবো না শাদী করে”
“আচ্ছা তাহলে নিকা করে লক্ষী বউ হবা কেমন?”

অগত্যা লাবিবা রাসেলের রেজিস্ট্রি হয়েই গেলো।

লাবিবাকে গাড়ি তে বসিয়ে রাসেল ড্রাইভ করছে। লাবিবা তো কেদে কেটে অসার। নাকের পানিতে চোখের পানিতে একাকার করে দিয়েছে। রাসেল বার বার টিস্যু প্যাক থেকে টিস্যু বের করে দিচ্ছে লাবিবাকে। আর লাবিবা বেচারা টিস্যু কে নাকের জলে চোখের জলে চুবিয়ে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে। আজ লাবিবার কান্নায় রাসেলের খুব ভালোই লাগছে। লাবিবাকে বলে উঠে
“ও আমার মাতাল বউ..আর কতো কাদবে? টোটাল সাতটা টিস্যু বক্স যে খালি করে দিয়েছো। এভাবে বিয়ে করলাম বলে কি তুমি আমার বিয়ের খরচা এই টিস্যু বক্স কিনেই শেষ করবে?”

“কথা নাই তোমার সাথে। আমি বিয়ে করবো না।”
“মৃদু হেসে বলে তুমি যে এখন একটা বাড়িতে যাবে। তো সেই বাড়ির মানুষের সামনে যদি এই ভাবে কাদো তাহলে তো তারা তোমাকে ছিচকাদুনে বলবে।”
“বলবে না। তারা বুঝবে আমাকে। একা একটা মেয়েকে জোর করে বিয়ে করেছেন এইটা সবাই বুঝবে।”
“মাতাল বউ তুমি কি ভুলে গেলে তুমিই তেজ দেখিয়ে উকিল কে দিয়ে রেজিস্ট্রি করালে।”
“যা আর তাই হোক আমি বিয়ে করবো না।”

অট্টহাসি তে ফেটে পড়ে রাসেল।
.
বাড়ির দরজায় নক করার সাথে সাথেই দরজা খুলে দেয় রিমন। হাপাতে হাপাতে বলে”আসসালামু আলায়কুম স্যার. আসসালামু আলায়কুম ম্যাম। তয়্যইবা মামুনি আমার ওয়াইফের কাছে আছে।”
লাবিবা ভেতরে ঢুকে পড়ে।


পর্ব ২১

রাসেল রিমনকে জিজ্ঞাসা করে
_”সব কাজ শেষ?”
“স্যার এই টুকু সময়ে এতো কিছু কি রেড়ি করা যায় বলুন? এই মুহুর্তে কাজের লোকজন কই পাবো? তাই আমার পরিবার নিয়ে চলে এসেছি। ভাগ্যিস ঘরোয়া ভাবে অনুষ্ঠান হচ্ছে। নইতো তো তিন চারদিন আগে থেকে ডেকোরেট করা লাগতো।

লাবিবা ভিতরে গিয়ে দেখে একটি মেয়ের কুলে তয়্যইবা খেলছে। লাবিবা গিয়ে তয়্যইবা কে কোলে তুলে নেয়।মেয়েটি বলে”ওমা.. তুমি বুঝি এই বাবুটার আম্মু? তুমি তো বাবুটার মতোই সুন্দর।
লাবিবা বলে”হ্যাঁ আমি ওর আম্মু। তুমি কে? আর ওনারা কে?”_ পাশে আরো তিনজন কে দেখিয়ে।
রিমন এসে বলে _

“ম্যাম এইযে ইনি.. যে আপনার মেয়েকে এতোক্ষণ সামলিয়েছে আমার বউ হয়। ওর নাম রুপু।”
“তো আমি কি করবো? আর ঐ তিনজন কে?”
“ম্যাম এই হচ্ছে আমার ভাই স্বরাজ, এই হচ্ছে আমার বোন রিপা, আর ও আমার শালী মিম।”
“তো সবাই মিলে কেন এসেছো এখানে? না থুক্কু। আমিই তো এসেছি। মাই হ্যান্ডসাম.. ও মাই হ্যান্ডসাম.. আমি কেন এসেছি এখানে?”
রিমন বলে _”আপনার বিয়ে হবে এখানে তাই এসেছেন।”

“কিহ| বিয়ে? নানানা|… আমি বিয়ে করবো না.. কিছুতেই না||..”
লাবিবার কথা আর চিৎকার শুনে সবার তো কানে তালা লেগে যাওয়া অবস্থা। রাসেল চিৎকার শুনে দৌড়ে আসে।
রুপু চোখ গুলো বড় বড় করে বলে
“একি … কি বলছে এসব? রাসেল ভাই তো বলেছিল ওনাদের রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়েছে। বাচ্চাও একটা হয়ে গেছে। কিন্তু ধর্ম মতে বিয়ে হয়নি। তাই এখন ধর্ম মতে বিয়েটা সেরে ফেলবে আমাদের নিয়ে।”

রাসেল হাসি হাসি মুখ করে বলে”আসলে রুপু.. আগে শুধু বলতো বিয়ে করবো করবো.. আমার সময় হয়ে ওঠেনিতো.. তাই এখন রাগ করে শুধু বলে বিয়ে করবোনা বিয়ে করবোনা ..আমি তোমার বউ না। বুঝোই তো বোন। তাই আজকে তোমাদের আয়োজন করতে বলেছি।”
লাবিবা তো হা। কি সুন্দর করে মিথ্যা বলে গেল। ভাবা যায় এগ্লা?
রুপু বলে”ভাইয়া একটা কথা কিন্তু বলতেই হচ্ছে _ এক্ষেত্রে ভাইয়া আপনার ই কিন্তু দোষ। ভাবীর বিয়ে করা একদমি উচিত নয়। খ্রিষ্টান দের মতো বিয়ে করে ভাবির কাছে আসা একদমি উচিত হয় নি আপনার।আপনার উচিত ছিল বিয়ে করে তারপর ভাবীর কাছে যাওয়ার।”
“আচ্ছা। আজকে যাবো কেমন.. মাতাল বউ।”

লাবিবার তো শুনে হেচকী উঠে যায়। মনা গিয়ে পানি নিয়ে আসে।”
রিমন বলে”কাজ এখনো শেষ হয়নি। তোরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে করছিস টা কি? যা সব সব ব্যবস্থা কর একটু পরেই গায়ে হলুদ হবে।
লাবিবা আবার বলে উঠে”আমি বিয়ে করবনা কিছুতেই বিয়ে করবো না।”
রাসেল _ আচ্ছা আমরা মেরী করবো। মাতাল বউ.. যাও রেড়ি হয়ে আসো।

লাবিবাকে নিয়ে রিপা আর মিম একটা রুমে নিয়ে যায়। রিপা লাবিবার সামনে একটি মেজেনটা কালার লেহেংগা ধরে।
লাবিবাঃ এইটা পরবো নাকি এখন? ছি ছি আমি এসব পরবোনা পেট দেখা যায় এসব পড়লে। আমি তো বিয়েই করবোনা। 😤😤
রিপাঃ ভাবী আমরা পড়িয়ে দিবো। কিছুই দেখা যাবে না।
লাবিবাঃ না না আমি বিয়ে করবো না।

মিমঃ আচ্ছা ভাবী আপনার বিয়ে করতে হবে না। এখন এই ড্রেস টা পড়ুন প্লিজ।
জোর করে লাবিবাকে পড়িয়ে দেয় দুজনে।

লাবিবা কে নিয়ে গিয়ে ফ্লোরে মাদুর বিছিয়ে বসানো হয়েছে। সামনে মিষ্টি, কেক, কার্তিক করা ফ্রুটস, পায়েস, পিঠা , আরো অনেক কিছু দিয়ে সাজানো। স্বরাজ বসে বসে একটু করে সব গুলো পদ ই খাচ্ছে। লাবিবা বলে”আহারে… ছেলেটার কি ক্ষিদে পেয়েছে। আমার ও পেয়েছে। আমি ও খাবো।”
এই বলেই নাইফ নিয়ে কেক কেটে খাওয়া শুরু করে দেয়।

স্বরাজ বলে _”ভাবী সকাল থেকে খাটছি খুব ক্ষিধে পেয়েছে।”
“সমস্যা নেই। পেট পুরে খাও। আমার ও ক্ষিধে পেয়েছে।”
দুজনেই একনাগারে খেতে থাকে। সবাই এসে লাবিবার দু পাশে বসে পড়ে ছবি তোলার জন্য। রিমন ক্যমারা হাতে নিয়ে ক্লিক করতে যাবে তখনি দেখে সামনে সাজিয়ে রাখা সব গুলো খাবার অর্ধাঅর্ধী পড়ে আছে।”একি|… কেক, ফ্রুটস সব গেলো কই? বাড়িতে বিড়াল ঢুকেছে নাকি?”

স্বরাজ বলে”না ভাইয়া। বিড়াল কই থেকে আসবে? আমি তো দরজা জানালা নিজে লক করেছি।”
রিমন দেখে স্বরাজের গালে কমলার আশ লেগে আছে। চুপ হয়ে যায় রিমন। ও জানে যে তার ভাইয়ের খাবার দেখলে হুস থাকে না। তাই বলে হলুদের অনুষ্ঠানের খাবার খাবি? স্যার জানলে মান সন্মান আর থাকবেনা।

বসে থাকতে থাকতেই লাবিবার দোপাট্টার পিন খুলে যায়। নড়া চড়া খুব সাবধানে করতে থাকে। তবুও পিঠের সাইডে আলগা হয়ে যায়। রাগ উঠে যায় লাবিবার। বলেছিল লেহেংগা পড়বেনা। জোর করেই পড়াল খবিশ মেয়ে কথাকার। উড়না টেনে টুনে জড়িয়ে উঠে দাঁড়ায় লাবিবা।”আমি বিয়ে করবো না। এই হলুদ ও লাগাবোনা। তোমার স্যার আসলে বলে দিও।”

এই বলে লাবিবা রুমে চলে যায়। রাসেল এসে দেখে ডেকোরেটের পুরো বারটা অবস্থা। রিমন বলে”স্যার ম্যাম হলুদ দিবে না। রাগ করে রুমে চলে গেছে।”
“আচ্ছা তোমরা বিয়ের আয়োজন এর দিকে নজর দাও। আমি দেখছি তোমার ম্যাম কে।”
রাসেল হলুদ নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ায়।

লাবিবা রুমে এসে একটানে দোপাট্টা খুলে ফেলে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একা একাই বক বক করতে থাকে।
“আমি বিয়ে করবো না মানে করবোনা। কিছুতেই করবোনা। আমি সন্যাসীনি হবো। জীবনেও বিয়ে করবোনা।”
“আচ্ছা আমিও সন্যাস হয়ে তোমার সাথে সংসার করবো।”

“অবশ্যই। আমি হবো সিংগেল অবিবাহিতা মাদার। মেয়েকে নিয়ে দুরে চলে যাবো। একাই মানুষের মতো মানুষ করে তুলে দেখিয়ে দেব সিংগেল মাদার রাও পারে”
“আচ্ছা। তোমাকে অনেক বাচ্চার মাদার করবো। আমি ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকবো আর তুমি সিংগেল মাদার হয়ে বাচ্চাদের মানুষের মতো মানুষ বানাবে।”
রাসেলের আওয়াজ বুঝতে পেরে ঘুরে তাকায় লাবিবা। দেখে রাসেল খাটে বসে দোপাট্টা গলায় পেচিয়ে দাত গুলো বের করে হাসছে। লাবিবা লজ্জা পাওয়ার বদলে আরো রেগে যায়। ধেয়ে আসে রাসেলের দিকে।

“এই তোমার লজ্জা নেই? আমার ওড়না গলায় পেচিয়েছো কেন? দাও আমার ওড়না দাও।”
লাবিবা উড়না নিতে গেলে রাসেল হেচকা টানে নিজের উপর ফেলে দেয়। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে
“মাতাল পরী তোমার কি একটুও লজ্জা লাগছে না? আমার সামনে এইভাবে যে এতোক্ষণ ছিলে..”
লাবিবা কথাটা সহ্য করতে না পেরে চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়। রাসেল কে শক্ত করে জড়িয়ে নেয়। রাসেল বলে

“হলুদের সাজে এই প্রথম তোমায় দেখলাম। নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে আমার। হলুদ না লাগিয়ে চলে এসেছো কেন হুম? তুমি কি আমায় বোকা ভাবো নাকি? আমার হাতে গায়ে হলুদ লাগানোর ধান্ধা তাই না?”
লাবিবা কিছু না বলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাসেল কে। রাসেল লাবিবার মুখটা তার মুখের সামনে আনে। হাতে হলুদ লাগিয়ে কপাল থেকে শুরু করে পুরো মুখে লাগিয়ে দেয়। গলায় হাত রাখতেই চোখ দুটো বন্ধ করে নেয় লাবিবা। কোমরে হলুদ লাগাতেই লাবিবা বলে উঠে”হ্যান্ডসাম.. প্লিজ..”

লাবিবাকে বিছানায় রেখেই রাসেল উঠে দাঁড়ায়। হাসতে হাসতে বলে
“আর কয়েকটা ঘন্টা ওয়েট করবো।”
“আআ.. আমি বিয়ে করবো না তোমাকে।”
“বিয়ে করে নিয়েছি মাতাল বউ.. এবার তো অফ যাও”

রাসেল বেরিয়ে গেলে রুপু, মিম, রিপা রুমে এসে দেখে লাবিবা সারা শরীরে হলুদ মাখানো অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। লাবিবা কে এই অবস্থায় দেখে তিনজনেই লজ্জা পেয়ে যায়। তাকিয়ে থেকে মুচকি মুচকি হাসে। লাবিবা চিল্লিয়ে উঠে _ আমি গোসল করবো।
তিনজনেই বাথরুমে নিয়ে গিয়ে গোছলের সকল নিয়ম মেনে লাবিবাকে গোসল করায়।

গোসল করে রুমে এসে দেখে বেডের উপর বেনারসী আর ভারী সব গহনা রাখা। লাবিবা লাফিয়ে উঠে বলে
“এত ভারী কস্টিউম পরবোনা আমি। এগুলো পড়ে তো আমি নড়তেও পারবো না। ধুর.. আমি তো বিয়েই করবো না।”
রুপু বলে উঠে”আজকের দিনে একটু পড়তে হবে ভাবি। কিছুক্ষনের জন্য পড়ুন শুধু।”

তিনজনে লাবিবাকে সাজাতে থাকে থাকে। আর লাবিবা বার বার সাজের ব্যঘাত ঘটাতে থেকে। সাজাতে গিয়ে তিনজনের নাজেহাল অবস্থা। মিম শাড়ির কুচিটা গুজতে গেলে লাবিবা খিল খিল করে হাসতে থাকে আর লাফাতে থাকে।
“উফ মিম কাতুকুতু দাও কেন দুষ্টু মেয়ে।”
“ভাবী আমি তো শুধু কুচি গুজছিলাম।”

“তো তাই করো না.. সুরসুরানি দাও কেন? অনেকক্ষণ থেকে তোমাদের অত্যাচার সহ্য করছি। সকাল থেকে একবারো সিগারেট খাই নি। এই রুপু একটা সিগারেট হবে?”
রুপুর মাথা ঘুরতে থাকে। নতুন বউ সিগারেট খায়!! নেশা করে? শুনেছি যারা নেশা করে তারা অনেক্ষণ নেশা ছাড়া থাকলে এরকম রাগী বিহেব করে। তার জন্য কি বউ এরকম বিহেব করছে? না না এভাবে চলতে থাকলে তো রাসেল ভাইয়ের বাসরটাও ভালো করে হবে না। আমাকে সিগারেট জোগাড় করতে হবে।

লাবিবা কে ড্রয়িং রুমে এনে রাসেলের পাশে সোফায় বসিয়ে দেয়। কাজী সাহেব বিয়ে পড়াতে শুরু করে। রাসেল কে কবুল বলতে বললে সাথে সাথেই বলে দেয়। কিন্তু লাবিবাকে কবুল বলতে বললে লাবিবা আবার লাফিয়ে উঠে বলে
“কবুল কবুল কবুল। আর কত বার বিয়ে করবো আমি? সকাল থেকেই তো বিয়ে করতেছি আর কতক্ষণ করব?”
“এইতো শেষ মাতাল বউ। আর করতে হবে না।এবার তুমি রুমে যেতে পারো।”

লাবিবা রুমে এসে গহনা খুলতে থাকে। তখনি রুপু তারাহুরো করে রুমে ঢুকে। লাবিবার হাতে একটা সিগারেটের প্যকেট আর একটা লাইটার ধরিয়ে দিয়ে চলে আসে। সিগারেট দেখে লাবিবা মনে মনে রুপুকে একশটা চুমু খেয়ে সিগারেটে আগুন ধরায়। একের পর এক টান দিতে থাকে। রাসেল এসে দেখে পুরো ঘর ধোয়ায় ভরপুর। লাবিবার হাত থেকে সিগারেট টা নিয়ে জানালা দিয়ে ফেলে দিয়ে লাবিবার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে।

Last_part

ঘটনার আকস্মিকতায় লাবিবা চোখ গুলো বড় বড় করে ফেলে। বার বার রাসেলকে ছাড়াতে চেষ্টা করে। কিছুক্ষন পর রাসেল ছেড়ে দিতেই লাবিবা চিল্লাতে থাকে”বাচাও বাচাও.. ইন্দুর খালা আমার লিপ খেয়ে নিলো গো.. বাচাও বাচাও.. ও চিকা মামী গো আমার লিপ খেও না গো.. লিপ ছাড়া আমায় বান্দরের মতো দেখাবে গো.. বাচাও বাচাও..”।

এদিকে দরজার ওপাশ থেকে রুপু চিল্লিয়ে উঠে”ইদুর ইদুর.. ইদুর…রিমন ইদুর…উমম।”রিমন রুপুর মুখ চেপে ধরে বলে”এই কি করছো কি? শুনে ফেলবে তো স্যার।”রাসেল কিছুটা বুঝে সাথে সাথে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলতেই দেখে পাচ জন স্টিল দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। রাসেল কে দেখেই একেকজন একেক দিকে দৌড়।

লাবিবা ঠোঁটের উপর হাত বুলাচ্ছে আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে। রাসেল এসে লাবিবাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরলো। লাবিবাও বুকে মাথা রেখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। অভিমান স্বরে বলে
“ঠোঁটে কামড় দিলে কেন? আমি বুঝি ব্যথা পাই না?”

রাসেল মুচকি হেসে লাবিবার ঘাড়ে মুখ গুঁজে আরেকটা কামড় দেয় আস্তে করে।
“বলেছিলাম তো কোন ড্রাগস যেন ঐ ঠোঁট পর্যন্ত না যেতে পারে। ঐ ঠোঁট শুধু আমার ঠোটের কব্জায় থাকবে।”
“খারাপ ছেলে। শুধু কষ্ট দেয়। একটুও ভালুপাসে না।”
“বাসি তো। খুব ভালোবাসি।”
“উহু একটুও না। প্রমান দাও।”

“কিভাবে?”
“মাতাল হতে চাই। এক বোতল প্লিজ। কতোদিন খাই না।”
“এক বোতলে তো তোমার নেশা হবে না মাতাল বউ। আর আমি তোমাকে ঐসব ছোতেও দিবো না। আমি তো আমার নেশায় আজ তোমাকে মাতাল করবো।”
“এই না।”
“এই হ্যাঁ।”

পরদিন সকালে রাসেল লাবিবা আর তয়্যইবাকে নিয়ে বাসায় ফিরে। বাড়িতে ঢুকতেই দেখে সবাই বসে চা খাচ্ছে। লাবিবাকে দেখেই তার আম্মু বলে উঠে
“লাবিবা|”
লাবিবা ভিতর থেকে নিজেকে শক্ত করে বলে
“আসসালামু আলায়কুম। কে আপনি? আপনি কি আমাকে চিনেন?”
চুপ হয়ে যায় আম্মু। সোনালী বলে উঠে

“আপু উনি আমাদের আম্মু।”
“হোয়াট নন্সেস? এসাইলাম থেকে এসছে নাকি সবাই? আমি তো আপনাদের সাথে কখনো মিট ই করি নি।বাই দ্যা ওয়ে.. কে আপনারা? আপনাদের তো আগে কখনো আমার বাড়িতে দেখি নি। মাই হ্যান্ডসাম.. কে উনারা?”
তুহান বলে

“রাসেল মেয়েটি কে রে এইভাবে কথা বলছে? আর কোলে বাচ্চাটিবা কার?”
“ওহ ভাইয়া পরিচয় করিয়ে দেই ও হচ্ছে আমার মাতাল পরী। আমার ওয়াইফ। আর বাচ্চাটি আমার আর আমার মাতাল পরীর ভালবাসার চিহ্ন।”
“কি বলছিস এসব? কবে বিয়ে করলি তুই? কিছুই তো জানলাম না। আর বাচ্চাই বা কবে হলো?”
“ভাইয়া সবাই যদি সবাইকে বলে কাজ করতো তাহলে তো হতোই। কই আমি তো জিজ্ঞাসা করি নি তোমাকে কখনো।”
রাসেল চুপ হয়ে যায়।

সোনালী বলে”তোমাকে দেখে কিন্তু মনে হচ্ছে না তুমি বাচ্চা জন্ম দিয়েছো। তোমার শরীরের কোন পরিবর্তন ই দেখছিনা।”
“মাই হ্যান্ডসাম… আমি কোন খুনি কে এতো কৈফিয়ত দিতে পারবো না।”
সোনালী বলে”এভাবে কেন বলছো আপু।”
“কে তুমি বার বার আমাকে আপু ডাকছো?”

আম্মু _ লাবিবা ও তোমার ছোট বোন।
আমি _ ছোট বোন মানে? আমার পরে তো আমার আর কোন ভাই বোন হয়নি। আমার পাপা তো মারা গেছে। বোন আসবে কই থেকে?
রাসেল এসে তয়্যইবার দিকে হাত বাড়াতেই সরিয়ে নেয় লাবিবা।
“খবরদার ছোবেন না। আমি চাইনা আমার বোনের খুনীর অলুক্ষনে ছোয়া আমার মেয়ের উপর পড়ুক।”
“বৃষ্টি তোমার বোন?”

“হ্যাঁ বৃষ্টি আমার বোন। আর আপনি আমার বোনের খুনী।”
“দেখো লাবিবা তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো।আমি তোমার বোনের খুনী নয়। আমি যা করেছি তোমার বোনের সাথে তা সত্যিই খুব খারাপ করেছি। আমি তার জন্য ক্ষমা প্রার্থী। আর আমি তোমার মেয়ের বড় আব্বু হই।আমার কাছে একবার দাও।”

তুহান নিতে এলে লাবিবা বাধা দিতে নেয়। কিন্তু রাসেল আটকে দেয়। তুহান ত্যইবা কে কোলে নিয়ে আদর করতে থাকে। তা দেখে লাবিবার চোখে পানি জমে যায়।
তুহান রাসেল লাবিবার দিকে ছল ছল চোখে তাকিয়ে বলে”আমাকে তোরা যা শাস্তি দেওয়ার দে। তবুও খুনি বলিস না। আমার ভীষন কষ্ট হয়।”
“আপনার ভাগ্যে আপনি নিজেই কষ্ট টেনে এনেছেন। কেদে লাভ নেই। আপনি পুরবেন। সারাজীবন পুরবেন। আপু আপনাকে ক্ষমা করেছে কিনা জানিনা। কিন্তু আমি আপনাকে ক্ষমা করবোনা। আপনি শাস্তি পাবেন। কঠিন তম শাস্তি।”

“তোমার যা ইচ্ছা তাই শাস্তি দাও বোন।”
লাবিবা ত্যইবাকে কোলে নিয়ে বলে”আমি কোন খুনির বোন হতে চাই না। এই যে আপনি যাকে বড় আব্বুর দাবিতে কোলে নিয়ে আদর করে দিলেন। আপনি জানেন সে কে? আপনার নিজের সন্তান। আপুর সাথে ডিভোর্স হওয়ার আগে আপনাকে বলেছিল বার বার। আপনি কানে তুলেন নি অথবা তুলেও না বুঝার ভান করে থেকেছেন। আপু আপনার আর তার শেষ চিহ্ন রাখার জন্য মৃত্যু কে বরন করে নিয়েছে। আপনি যদি আপুর সাথে বেইমানি টা না করতেন তাহলে আজ আমার আপু এই পৃথিবীতে থাকতো।

আপুকে হারাতে হতো না আমার। আপু আমার আর রাসেলের হাতে ত্যইবাকে দিয়ে গেছে। আপনার ছায়ার কাছেও ঘেসতে না করে দিয়েছে। কিন্তু প্রথম এবং শেষ বারের জন্য আপনাকে ছুতে দিলাম আমি। বড্ড মায়া হচ্ছে আপনার প্রতি। আপনার শাস্তি এটাই যে আপনার সন্তান আছে যেনেও আপনি আর কখনো তাকে ছুতে পারবেন না। বুকে টেনে নিতে পারবেন না। এমনি দেখতেও পারবেন না। খা খা করবে আপনার বুক। সন্তান কে সামনে পেয়েও একবার বাবার অধিকার নিয়ে না দাঁড়াতে পারা যে কতোটা যন্ত্রনার তা আপনি এখনো অব্দি না বুঝলেও আপনার শাশুড়ি ঠিকই জানে। না জানলে উনার কাছ থেকে জেনে নিবেন। আমরা একটু পরেই কানাডার ফ্লাইট ধরছি। সুখে থাকবেন। চলো হ্যান্ডসাম।”

তুহান হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। লাবিবার আম্মুও রুমে গিয়ে কাদে। সোনালী একটু কেদে চোখ মুছে লাবিবার কাছে চলে যায়। গিয়ে দেখে লাবিবা লাগেজ হাতে বেরোচ্ছে। সোনালী লাবিবার সামনে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে বলে
“আপু প্লিজ যেও না তুমি। আমি এই প্রথম তোমাকে পেয়েছি। হারাতে চাই না আর। আমি তো জোর করে তুহানকে বিয়ে করিনি। আম্মু বিয়ে দিয়েছে জন্যই করেছি। আমি যদি যানতাম এতো সব তাহলে কখনোই বিয়ে করতাম না ঐ বুড়ো টাকে। অন্যায় ওরা করেছে। আমি তো কোন অন্যায় করিনি। তাহলে আমি কেন শাস্তি পাবো?”

“আমি ও তো কোন অন্যায় করিনি। আমি কেন শাস্তি পাচ্ছি? আমি শাস্তি পাচ্ছি এই কারনেই যে আমি ঐ খারাপ মহিলার গর্ভে ছিলাম। কিন্তু তুমি তো শাস্তি পাচ্ছো না। আমার জন্য সাময়িক খারাপ লাগতে পারে তোমার। কিন্তু আমার ভূমিকা তোমার জীবনে বিন্দুমাত্র নেই। সুখে থেকো।”

বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার সময় সোনালী ও তার মা আর তুহান প্রচুর রিকোয়েস্ট করে থেকে যাওয়ার জন্য। লাবিবার মা একবার বুকে জড়াতে চায়। কিন্তু লাবিবা অস্বীকার করে তার মাকে। তুহান রাসেলের কাছে রিকোয়েস্ট করে আর একবার তার সন্তান কে তার কোলে দেওয়ার জন্য।কিন্তু রাসেল বলে ত্যয়িবা রাসেলের সন্তান। তুহান কেউ নয়।

অরিন্টিওর বিচের সামনের বেদিতে বসে সন্ধ্যার পর লাবিবা ভায়োলিনের সুর তুলেছে। এ সুর পূর্ণতার সুর। ভায়োলিনের সুরে পূর্ণিমার চাঁদ টিও মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে। ত্যয়িবাকে কোলে নিয়ে রাসেল পাশে এসে বসে পড়ে। লাবিবা চমকে উঠে বলে”ভুত”। তাকিয়ে দেখে রাসেল হাসছে আর কোলে ছোট্ট তয়্যইবা।
“বাহ. কি সুন্দর সুন্দর দুইটা কিউট ভুত।একদম খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।”
“সত্যই খাবে?”

“হুম। চুমু খাবো।”
“আমাকে বাসায় গিয়ে খেও। এখন মেয়েকে খাও।”
“তোমাকে খাবো। মেয়েকে খেলে রেগে যাবে।”
“মেয়ের পাপাকে খেলে যে এখানেই পাগল হয়ে যাবে..”
“হি হি হি ..”

পাশাপাশি হাটছে লাবিবা আর রাসেল। লাবিবার কোলে ত্যইবা। ঠান্ডা বেশি লাগছে দেখে রাসেল নিজের গায়ের চাদর টা দিয়ে ত্যইবা সহ লাবিবাকে জড়িয়ে নেয়।
“মাই হ্যান্ডসাম ..আজ ঠান্ডা বেশি দেখেও মেয়েকে নিয়ে বের হলে কেন?”
“জোসনা বিলাসে মেয়েকেও রাখছি। শিখুক। বড় হয়ে মায়ের মতো রোমান্টিক হতে হবে তো। মাতাল পরী.. আমি কিন্তু তোমার মাতাল চেহারাটাকে মিস করছি। সেই লাল আভা ছড়ানো নাক ..লাল চোখ.. লালা টকটকে ঠোঁট। সবকিছু।”

“এতো কিছু মিস করছো অথচ আমার দিকে তাকিয়ে একবার দেখতেই পারলে না।”
রাসেল লাবিবার দিকে তাকিয়ে তো পুরো অবাক।
“মাতাল পরী |।”

“আমি আজো মাতাল তোমার মাতাল পরীই.. আছি। থুক্কু। মাতাল বউ হয়ে গেছি। আমার ড্রাগস ইজ ইউ। মাই হ্যান্ডসাম। যার উপর অন্য কোন ড্রাগস কাজ করে না। তোমার প্রেমে আমি সারাজীবন তোমার মাতাল বউ হয়েই থাকবো।”
“মাতাল বউ..ভালুপাসি।”
তোমাকে আমার প্রয়োজন

I need you.

          So sweet na?

লেখা - লাবিবা তানহা লিজা

-সমাপ্ত-

পাঠক আপনাদের জন্যই আমরা প্রতিনিয়ত লিখে থাকি। আপনাদের আনন্দ দেয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ। তাই এই পর্বের “তোমাকে আমার প্রয়োজন” গল্প টি আপনাদের কেমন লাগলো পড়া শেষে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

আরও পড়ুন – তুমি আমার ভালোবাসা – ভালোবাসার গল্প কথা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *