রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প ৮

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ৮ | Love Story

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ৮: গত সপ্তম পর্বে আমরা দেখেছি মাহি ও নাবিলকে নিয়ে লোকমুখে অনেক বাজে কথা। আজ চেয়ারম্যান এসেছে। দেখা যাক কি হয়?

নাবিলের কৌশল

গ্রামের সব মানুষের সাথে নাবীলের অনেক তর্ক হচ্ছে। এসব কিছু মাহি ঘরে বসে শুনছে। আর ভয়ে হাত পা কাপছে মাহির। কি করবে, কি হবে..। এ ভেবে মাহি অস্থির হয়ে পড়ছে।

আর নাবীল সবাইকে বুঝানোর অনেক চেষ্টা করছে। কিন্তু সবাই মাহি আর ওর নামে নোংরা নোংরা কথা বলছে যা নাবীলের সহ্যের মাত্রা পার করে দিচ্ছে।

শফিক ও কবির (মাহির মামা) ও সবাইকে বুঝাবার ব্যর্থ চেষ্টা করছে।

একসময় নাবীল ধৈর্যহারা হয়ে সবাইকে বললো। মাহি আমার বিবাহিত স্ত্রী, আর স্বামী-স্ত্রী এক সাথে সারা রাত যদি ছিলো এতে আপনাদের কোনো সমস্যা হতে পারেনা বলে মনে করি। (কিছু বুঝতে না পেরে মিথ্যা কথা বললো, কারণ বিপদ আসলে মাথায় তখন কোন ভালো বুদ্ধি আসে না।)

নাবীলের এ কথায় উপস্থিত সবাই চুপ হয়ে গেলো। শফিকও কিছু বুঝতে পারলো না, নাবীল এটা কি বলছে! শফিক ভালো করেই জানে এটা মিথ্যা কথা কিন্তু এতো বড় মিথ্যা কথার পরিণাম কি হবে?

উপস্থিত সবাইকে চুপ থাকতে দেখে, নাবীল বললো, মাহি আর আমি একজন আরেক জনকে ভালোবাসি। কিন্তু শফিক যদি না মানে তাই আমরা লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলেছি। আর শফিকও এই ব্যাপারটা জানে না। সময় হলে ওকে বলতাম কিন্তু আজ পরিস্থিতির কারণে বলতে হলো।

নাবীল একটু শফিকের দিকে তাকিয়ে..সরি বললো। শফিক এখনো অনেকটা শকড এর মধ্যে আছে।

চেয়ারম্যানের শর্ত

এর মধ্যে অনেকে বললো, আমরা মানি না এডা মিছা কথাও তো হইতে পারে। কেমনে মানুম এই ছ্যাড়া ছ্যারি জামাই বউ। সবাই প্রমাণ চায়। এই বিবাহের কি প্রমাণ আছে?

তখন মেম্বার ও নাবীলের উদ্দেশ্য বলে উঠলো, তোমার কাছে কি সাক্ষী আছে, তোমরা জমাই বউ।

নাবীল কিছুটা ভেবে উত্তর দিলো, দেখুন প্রমাণ ঢাকায়, আমি কি প্রমাণ পকেটে নিয়ে ঘুরি। আমাকে কালকের দিন সময় দিন।

কিন্তু উপস্থিত কেউ নাবীলকে এক দিনও সময় দিতে রাজী হলো না। তাই নাবীল রেগে সবাইকে জিজ্ঞেস করলো ঠিক আছে, আপনারাই বলুন কি করলে বিশ্বাস করবেন। মাহি আমার বউ। (একটি সময় পেলে নাবীল কোনো না কোনো পথ বের করতে পারতো এই বিপদ থেকে বাচার জন্য, কিন্তু এখন…)

মেম্বার সবার সাথে যুক্তি পরামর্শ করে নাবীলকে বললো, আমাগো গ্রামে এমন ঘটনা ঘটলে এটা ক্ষমা কোন ভাবেই করা হয় না। ছেলে মেয়ে উভয়কেই শাস্তি পেতে হয়। কবির স্যার তা ভালো করাই কইতে পারবো। কিন্তু তোমরা যেহেতু জামাই বউ, তাহলো তোমাগো শাস্তি দিতে চাইনা। শুধু কারো যাতে মনে কোন সন্দেহ না তাকে তার জন্য তোমারে সবার সামনে আবার বিয়ে করতে হইবো মাহি ডারে। তাহলে আর কাউরো কোনো সমস্যা হইবো বলে মনে হয় না।

নাবীলঃ আবার বিয়ে..এটার কি দরকার।

আরে মিয়া, আমরা তো তোমারি বউর লগে বিয়া দিমু, অন্য মাইয়ার লগে না। নিজের বউরে একবারের জায়গায় দুইবার বিয়ে করবে তাতে সমস্যা কি।

শুনো আর কোন কথাই শুনতে চাইনা। তাড়াতাড়ি বিয়াডা কইরা আমাগো বিদায় করো। নাবীল শফিকের দিকে তাকালো। শফিকও অসহায়ের মতো নাবীলের দিকে তাকালো।

(এই তাকানোর অর্থ অনেক কিছুই বলে দিচ্ছে। শফিক ভাবছে, নাবীল পরিস্থিতি সামাল দিতে মিথ্যা তো বলে দিলো, কিন্তু এখন কি হবে? বিয়েটা কি করতে রাজি হবে তার বোনের সম্মান বাচানোর জন্য)

আজ মাহি ও নাবিলের বিয়ে

নাবীল সবাইকে বললো, ঠিক আছে, আপনারা বিয়ের ব্যবস্থা করুন, এখনি হবে। শফিক সীমা আর মামীকে বলো মাহিকে তৈরি করতে। উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে বললো, আপনারা কিছু মনে না করলে আমিও একটু জামাটা চেঞ্জ করে আসি।

মেম্বারও বলে উঠলো,

মেম্বারঃ হ…যাও বাজান পাক পবিত্র হয়ে আসো, এতক্ষণে আমরা সব রেডি করি। কি বলো সবাই..? হ হ ঠিক কইছেন।

শফিক ভেতরে গেলো মাহির কাছে। মাহি সব শুনেছে ঘরে বসে, তারপরও শফিক অনেক বুজালো মাহিকে। কারণ এই মুহুর্তে আর কোন উপায় নাই। শুধু মাহি না সীমার জীবনও নষ্ট হয়ে যাবে যদি বিয়েটা না হয়। মাহি ভাইকে জড়িয়ে ধরে অনেক কাদলো, কিছুই বলতে পারলো না।

শফিকঃ বোন যা কাঁদার এখনি কেঁদে নে, বাহিরে একদমই কাঁদবি না, বাহিরের সবাই জানে তোর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তোকে এভাবে কাঁদতে দেখলে সবার সন্দেহ হবে।

একথা শুনে মাহির আরো একটু কান্না চেপে বসল।

শফিকঃ বোন আমার শোন, আমার দিকে তাকা। (মাহি মাথা উঠিয়ে ওর ভাইয়ের দিকে তাকালো) তোর মনে হয় আমি এমন কোনো ডিশিশন নিবো যা তোর জন্য ভালো হবে না, আমার প্রতি বিশ্বাস আছে। (মাহি মাথা নেড়ে হ্যা জবাব দিলো)। শোন, নাবীল অনেক ভালো একটা ছেলে, আমি চাইলেও তোর জন্য এমন ছেলে খুঁজে আনতে পারতাম না। ও বেঁচে থাকতে তোর ক্ষতি কোন দিনও হতে দেবে না, তোকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে। যেমন আজ করছে। তুই অনেক ভাগ্যবান মাহি নাবীল তোকে বিয়ে করতে রাজী হইছে। একদিন তুইও বুজবি।

আচ্ছা বাদ দে। সীমা মাহিকে রেডি কর তারাতারি। এ কথা বলে শফিক চলে গেলো বাহিরে।

নাবীল গোসল করে নতুন আরেকটা পাঞ্জাবী পরে নিলো।

“মাহিকে নাবীল ভালোবাসে, তাই মাহিকে বিয়ে করতে ওর কোন সমস্যা নাই। কিন্তু এভাবে বিয়ে করার কথা কখনো চিন্তা করেনি। নাবীল আগে মাহির মনে জায়গা করতে চায়েছিলো। কিন্তু পরিস্থিতির স্বীকার এখন সবাই। মনে মনে ভাবছে নাবীল। মাহির মনের অবস্থা ও ভালো করেই বুঝতে পারছে, কিন্তু কিছু করার নেই। ভাগ্যের লিখন কেউ পাল্টাতে পারে না।”

ভাইয়ের বন্ধু যখন বর

নাবীল বের হয়ে দেখলো কাজী এসে সব রেডি করে বসে আছে। মাহিকে আনতে শফিক গেলো।

নাবীল একটা চেয়ারে বসে আছে, (কনে আসছে কেউ বললে)। নাবীল পেছনে তাকায়, মাহি একটা লাল শাড়ি পড়ছে। হাতে কিছু চুড়ি, আর ঠোটে একটু লিপস্টিক, চুলগুলো ছারা। হয়তো সীমা জোর করে এগুলো লাগিয়ে দিয়েছে। ঠিক নতুন বউয়ের মতোই লাগছে মাহিকে। নাবীলের পাশের চেয়ারে মাহিকে বসালো। শফিক ঠিক ওর বাসেই বসলো। মাহি মাথাটা নিচু করে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর কাজী কবুল বলতে বলে, মাহির চোখ দিয়ে অজান্তে এক ফোটা জল পড়ে। শফিক বুঝতে পারে, তাই মাহির হাতটা গিয়ে ধরে। মাহি মাথাটা উঠিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে কবুল বলে। এরপর নাবীলও কবুল বললে বিয়েটা ওখানেই সম্পূর্ণ হয়।

শফিক মাহিকে ঘরে নিয়ে যা। এখনতো আপনাদের মনে আর কোন প্রশ্ন নেই। যদি কোন সমস্যা না থাকে, তাহলে দয়া করে এখন আপনারা সবাই আসতে পারেন। আমার বোনের আজ বিয়ে। আর আমাদের অনেক কাজ আছে, এমনেই সব কিছুতে দেরি হয়ে গিয়েছে। আশা করি, আমার বোনের বিয়েতে আপনারা কোন সমস্যা করবেন না। সবাই বিয়েতে এসে আমার বোনকে দোয়া করে যাবেন। (নাবীল কথাটা বলে ঘরে গিয়ে শোফাতে বসে পড়লো)

মাহির মামাও সবাইকে বিদায় দিয়ে ঘরে এসে বসলো। শফিক দৌড়ে গিয়ে নাবীলকে জরিয়ে ধরলো, আর কাঁদতে লাগলো। নাবীল শফিকের এমন আচরণ এ কিছুটা আবাক হয়ে গেলো। আর শফিক কে কোনদিনও কাঁদতে দেখেনি নাবীল। শফিক খুব শক্ত প্রকৃতির মানুষ, সহজে ইমোশনাল হয় না, আর সে মানুষ আজ কাঁদছে, তার মানে অনেক…। মাহি দরজায় দাড়িয়ে সব দেখছে। নাবীল শফিককে জোর করে ছাড়ালো।

হে ব্রো..! কি হলো তুই কাঁদছিস কেনো? আরে আমাকে বল।

শফিক নাবীলের হাত দুটো ধরে বললো, তুই জানোস না নাবীল, তুই আজ আমাদের কি উপকার করলি? তুই শুধু মাহিকে না, সীমার জীবনটাও নষ্ট হতে বাচালি। আজ আমাদের পুরো পরিবাকে তুই এই বিপদ থেকে উদ্ধার করলি, তোর ঋন শোধ করার মতো না।

নাবিলকে কৃতজ্ঞতা সবার

মাহির মামা মামীও কাঁদতে লাগলো, আসলেই তারা আজ অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা পয়েছে, শুধু নাবীল এর কারণে।

নাবীল এবার একটু রেগে গেলো, থাপ্পর মেরে তোর সব দাত ফেলে দিবো। কি সব উল্টা পাল্টা কথা বলছোস, তোর মাথা কি ঠিক আছে। আর তোর এসব কথা বলার সাহস হলো কি করে। আরেক দিন যদি দেখুম তুই এসব ঋন ফিন এর কথা বলছোস, তোর সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ করে দেবো।

শফিক হেসে নাবীলকে আমার জড়িয়ে ধরলো।

(বন্ধুত্বের সম্পর্কটাই এমন, এখানে নো সরি আর নো থ্যাংকু)।

নাবীল মামা মামীর কাছে গিয়েও মামা মামীকে সান্তনা করলো। আরে অনেক হইছে কান্নাকাটি আর না, রাতে বর পক্ষ আসবে বাসায় অনেক কাজ আছে। তাই সবাই কান্নাকাটি বাদ দিয়ে কাজে নেমে যাও। সবাই হেসে উঠলো। নাবীলের চোখ হঠাৎ মাহির দিকে পড়লো, মাহির মুখে এখনো হাসি নাই।

নাবীলঃ শফিক…।

শফিকঃ হুমমমমমম.

নাবীলঃ মাহি কাল রাত থেকে না খাওয়া, তুই খাইয়ে দে ওকে। তোকে ও মানা করতে পারবে না।

মাহির মামীঃ বাবা তুমিও খেয়ে নেও কিছু, তুমিওতো খাওনি সেই কাল থেকে।

নাবীলঃ ঠিক আছে মামী, চলুন। তারপর কাজও আছে অনেক। চলবে…

পরের পর্ব: রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ৯

সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *