অবিশ্বাস – সন্দেহমুলক ভালোবাসার গল্প

অবিশ্বাস – সন্দেহমুলক ভালোবাসার গল্প: ভালোবাসার মানুষ যে ভুল করবে না’ তার কোনো নিশ্চয়তাও নেই। পরিস্থিতির মোকাবেলায় ভালোবাসার মানুষটিও আপনার বিপক্ষে চলে যেতে পারে। আর বিপক্ষে চলে যাওয়া মানে এই নাহ যে আপনাকে সে ভালোবাসা নাহ। সে আপনাকে অবশ্যই ভালোবাসে।


পর্ব ১

আদিবা আমাকে যখন পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিয়ে বলল। অফিসার এই নরপশু ধর্ষককে কঠিনতম শাস্তি দিন। নেক্সট টাইম যেনো কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকানো সাহসটুকু তার না থাকে।

আজ আপনি প্রমান করে দিলেন যে অন্যায়কারি যতই ভালোবাসার কাছের মানুষ হক না কেনো। তার শাস্তি অনিবার্য। আমরা আপনার সততা দেখে সত্যিই অনেক মুগ্ধ এবং উপকৃত হয়েছি। আপনার সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া এই ধর্ষককে গ্রেফতার করা সত্যিই অনেক কঠিন হয়ে যেত

পুলিশ অফিসার এই বলে আমাকে গ্রেফতার করলো। সেদিকে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই। আমি শুধু আদিবার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছি যে মেয়েটা আমাকে এত ভালোবাসে কেয়ার করে সে আমাকে নিজ হাতে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিলো। এ কথা ভাবতেই বুকের বা পাশে কেমন জানি দুমড়েমুচড়ে উঠছে।

আপনারা হইত আমাকে ধর্ষক ভাবছেন। কিন্তু প্রকৃতি পক্ষে আমি ধর্ষক নই। মিথ্যা মামলার অভিযোগ আমাকে আস্বামী বানানো হয়েছে।

কিছু দিন আগের ঘটনা। রাজিব আমাদের এলাকার নেতার ছেলে যার দারুণ ক্ষমতার বরাই তার একটু বেশি করে থাকে। একদিন তিন্নিকে রাজিব অনেক বাজেভাবে রাস্তায় ইভটিজিং করে। তারপর বিষয়টি তিন্নি আমাকে দুরুত্ব জানাই। ব্যস রাজিবকে সেদিনই ভালোই গনধুলায় দিয়ে দেই।

গনধুলায় খাওয়ার পর রাজিব আমাকে উদ্দেশ্য করে শুধু একটাই কথা বলছিলো। কাজটা তুই ঠিক করলি না। এর জন্য তোকে অনেক প্রস্তাতে হবে। রাজিবের এমন ধারা শুনে বেশি একটা রিয়াক্ট করেনি। হালকাভাবেই নিয়েছিলাম রাজিবকে মারার সপ্তাহ খানেক ও যায়নি। এরমধ্যে রাজিব মধ্যে রাতে তিন্নিকে বাড়ি থেকে তুলে এনে অপহরণ করে।

এবং বিভিন্নভাবে তিন্নিকে ব্যাকমিল করে এবং অপহরণ সব দোষই আমার উপর চাপিয়ে দেই। তিন্নি ও নিরুপায় অসহায় হয়ে পুলিশের জবাবদিহিতে আমার নামটাই বলে ফেলে। সুযোগ বুঝে রাজিব ও তার বাবা জাবেদ সাহেব যড়যন্ত্রের প্ল্যানটা আর ও তীব্র থেকে তর করে আমাকেই তিন্নির ধর্ষক বানিয়ে দেই।

তাছাড়া ধর্ষিতাই যখন আমার নামটা বলছে এ থেকে কি বা প্রমাণ হতে পারে। ভালোভাবেই ধর্ষনের মামলায় ফেসে গেলাম।

তিন্নি হইত আমার নামটা পুলিশের জবাবদিহিতে বলতে চাইনি। রাজিব অই তিন্নিকে মেরে ফেলার ভয়। কিংবা অন্যকোনো ভাবে ভয় দেখিয়ে এসব করিয়েছে। তা আমি খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছিলাম। এরপর তিন্নি নিজের মুখে আমার নামটা স্বীকার করাই এলাকার মানুষজনরা ও। সত্য মিথ্যা যাচাই-বাছাই না খুব দুরুত্বই আমাকে ধর্ষক ভেবে নেই। নিজেকে নির্দোষ হিসাবে সবার সামনে উপস্থাপনা যে করবো সে সুযোগই ছিলো না।

এলাকার সবাই আমার উপর ক্ষেপে গিয়েছিলো। নিরুপায় হয়ে নিজের আত্মগোপনের পথ অবলম্বন করে করি।
বাড়িতে বাবা মা তারাও আমার বিপক্ষে চলে গিয়েছিল। পলাতক অবস্থায় একমাত্র আমার সহধর্মিণী আদিবার সঙ্গে যোগাযোগ হতো। অসহায় হয়েই আদিবার কাছে কান্নাই বলতাম।

আদিবা বিশ্বাস করো আমি সত্যিই তিন্নিকে অপহরণ করেনি –
সে আমার কথাতে কোনো রিয়াক্ট না করেই বলত। আমি জানি তুমি এসব কাজ কখনোই করতে পারো না। আচ্ছা যাই হক এখন তুমি কোথায় আছো – (আদিবা)
তা বলা আমার পক্ষে সম্ভব না (আমি)

তোমার স্ত্রীকে তুমি অবিশ্বাস করছো? (আদিবা)
আদিবার এমন বিশ্বাসযোগ্য কথায়। কোন জায়গায় অবস্থান করছি তা নিমিষেই বলে দেই। একদিন পর আদিবা আমার সঙ্গে দেখা করতে চলে আসে। আমি তাকে দেখার মাত্র অনেকটাই আবেগপ্রবনিত হয়ে জড়িয়ে ধরে বলি,
আদিবা বিশ্বাস করো আমি সত্যিই তিন্নিকে অপহরণ করেনি। এসবটা জাবেদ নেতার ছেলে রাজিব যড়যন্ত্র করে আমাকে ফাসিয়েছে।

কোনো ধর্ষক। ধর্ষণ করে তা নিজ মুখে স্বীকার করে না তা আমি ভালো করেই জানি। আর আমাকে এতটা বোকা ভেবো না। তিন্নি নিজ মুখেই তোমার নাম টা বলেছে। রাজিবের নাম বলে নাই _
তারমানে তুমিও আমাকে অবিশ্বাস করছো?

নিজেকে এতটা সাধু ভেবে নাহ। পাপ করেছো তার শাস্তি তোমাকে ভোগ করতে হবে।
আদিবার সঙ্গে এসব কথা কাটাকাটি করতেই হঠাৎ পুলিশ এসে চারদিকে ঘিরে ফেললো এবং আদিবার উদ্দেশ্যে বলল
আমাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আজ আপনার স্বামীকে যদি না ধরিয়ে দিতেন।

তাহলে আমাদের পক্ষে তাকে ধরা একটু কঠিনই হত। তাছাড়া আপনার সততা দেখে আমরা সত্যিই অনেক মুগ্ধ এবং উপকৃত (পুলিশ অফিসার এই বলে আমাকে গ্রেফতার করলো)
অফিসার এই নরপশু ধর্ষককে নিয়ে যান এবং উচিত শিক্ষা দিন। নেক্সট টাইম যেনো কোনো মেয়ের দিকে কুনজরে তাকানোর সাহসটুকু তার যেনো না থাকে।

  • আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। এই আস্বামীর উপযুক্ত শাস্তিই সে পাবে (পুলিশ অফিসার এই বলে আমাকে তাদের গাড়িতে তুলে নিলো উপরদিকে আমি শুধু আমার স্ত্রী আদিবার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি। এই মেয়েটা কি সত্যিই আমার স্ত্রী নাকি অন্য কেউ। তাকে এত করে বুঝানোর পর ও সে আমার কথা অবিশ্বাস করলো।
  • সে হইত আমাকে সত্যিকারের ধর্ষকই ভেবে নিয়েছে। এরজন্য আজ নিজ হাতে আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দিলো।

পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করলো তাতে আমার কোন কষ্ট নেই। কিন্তু আমার সহধর্মিণী সে তো আমাকে ভালো ভাবে চিনতো পরিশেষে সে ও আমাকে অবিশ্বাস করে নিজ হাতে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিলো। এটা ভাবতেই বুক ফেটে কেন যেন কান্না আসছে। যে মেয়েটা আমাকে এত ভালোবাসত অথচ আজ পরিস্থিতির মোকাবেলায় আমার শাস্তিই সে কামনা করছে।

সত্য একদিন না একদিন সবার সামনে প্রকাশ হয়ে যাবেই। কিন্তু মাঝখান থেকে আমাকে বিনা অপরাধে কারাগারে বন্দি থাকতে হবে। এমন পরিস্থিতি ও যে আমাকে ফেস করতে হবে তা আজ মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে – আদিবা ও হইত একদিন সত্যটা জানতে পারবে সেদিন নিশ্চয়ই তার কৃতকর্মের জন্য নিজেই সে আফসোস করবে।

তখন তার আফসোসই থাকবে। ক্ষমা সে পাবে না। লকাপে বসে বসে আনমনে ভেবে যাচ্ছি হঠাৎ এক পুলিশ অফিসার এসে ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটিয়ে বলে উঠলো
একটা মেয়ের জীবন এভাবে শেষ করতে তোর কলিজা একটুও কাপলো না –

স্যার আমি সত্যিই এই কাজ করেনি। আমাকে ফাসানো হচ্ছে –
কালকেই তোর আসল বিচার হবে কোর্ডে। রেডি থাকিস (পুলিশ অফিসার এই বলে চলে গেলো)

পরেদিন আমাকে কোর্ডে নেওয়া হলো। সেখানে উপস্থিত জাবেদ নেতা ও তার ছেলে রাজিব। এবং তিন্নি সহ তার পরিবার একমাত্র আমার পরিবারের কোনো একজন লোক আসেনি তারা হইত লজ্জাই আসে নি।

কার্ডঘরে দাঁড়িয়ে আছি। অইদিকে তিন্নিকে উকিল জিজ্ঞেস করছে আর তিন্নি অনেক ভয়ে অবিরাম কান্না করছে কোনো মতেই মুখ থেকে কথা বের করছে না। উকিলের ধমকানাতে আর জাবেদ নেতার ইশারায় তিন্নি নিরুপায় হয়ে পরিশেষে আমার নামটাই উকিলকে বলে ফেলো।

জজ ও তিন্নির জবাবদিহি শুনে রায় দিলেন ১০ দিনের রিমান্ড এবং ৭ বছরের জেল। এ কথা শুনেই চোখ থেকে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। রাজিবের দিকে লক্ষ্য করলাম সে আমার দিকে বিশ্ব জয় করার মতো প্রাপ্তির হাসি হেসে তার বাবার সঙ্গে চলে গেলো। তিন্নি শুধু চোখের জলই ফেলছিলো। সে হইত আমাকে ফাসাতে চাই নি। কিন্তু পরিস্থিতি তাকে এমন করতে বাধ্য করেছে।

তিন্নির দিকে তাকাতেই তা বুঝতে পারলাম। আজ নিজেকে কেমন জেনো অসহায় লাগছে। আমার পরিবার পরিজন থাকার পরেও কেউ দেখতে পযন্ত আসলো না।
১০ দিন রিমান্ডের অসহ্যকর শাস্তি ভোগ করতে হলো। এরমধ্যে ও কেউ খুজ খবর নিতে আসেনি। ১৫ দিন কেটে যাবার পর আদিবা আমার সঙ্গে দেখা করতে আসলো তাকে মাত্রই মুখ ফিরিয়ে নিয়েলাম সে কান্নাই বলতে লাগলো।


পর্ব ২

১০ দিন রিমান্ডের অসহ্যকর শাস্তি ভোগ করার পর ১৫ দিন যাবার বেলায়। আদিবা আমাকে দেখতে আসলো। তাকে দেখা মাত্রই মুখ ফিরিয়ে নিলাম। রাগে পুরো শরীর রি রি করছে মনে হচ্ছে। তাকে জলন্তু আগুনে পুড়িয়ে ফেলি।
আদিবা আমাকে মুখ ফিরানো অবস্থায় দেখে কিছুটা কান্নার মাখা সুরে বলল।

তোমার সহধর্মিণী হওয়ার সত্বেও।তোমাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়া মোটু ও ঠিক করেনি। কিন্তু কি করবো বলো এলাকার সবাই যে আমাকে চাপ দিতে শুরু করেছিলো। অতিষ্ঠ হয়েই এমনটা করেছি। কিন্তু কদিন পর তিন্নি আমাকে যখন বলল

আদিবা আপু। রনি ভাইয়ার কোনো দোষ নেই ও সম্পুর্ন নির্দোষ। এসব কিছুই রাজিব শয়তানটাই করেছে। আমাকে রনি ভাইয়ার নাম বলতে বাধ্য করেছে। এবং আমার পরিবারকে মেরে ফেলার ভয় ও দেখিয়েছে। নইত আমাকে মেরে ফেললেও কখনো রনি ভাইয়ার নামটা বলতাম না

তিন্নির কাছ থেকে সত্যটা শুনে সেদিন আকাশ ভেঙে যেন আমার মাথার উপর পড়ার উপক্রম হয়েছিলো। এছাড়া তোমাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়ে আমি আমার নিজেই মধ্যে কষ্ট অনুধাবন করেছি। কোনো কিছুতেই ভালো লাগছিলো না_

আদিবা কান্না করে এক নিমিষেই বলল তার এসব কথা শুনে আমার পুরো শরীর যেনো রাগে গা জ্বলে যাচ্ছিলো। অনেকটাই রাগান্বিত হয়ে আদিবার উদ্দেশ্যে বললাম
এখানে আমার দুর্দশা দেখে উপহাস করতে এসেছিস-

নিশ্চুপ – (আদিবা)
আমাকে এই অবস্থায় দেখতে তোর খুব ভালো লাগছে তাই না। তুই আমার স্ত্রী হওয়ার সত্বেও আমাকে অবিশ্বাস করেছিস এবং কি নিজেই ছলনা করে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিয়েছিস। এরপরেও নির্লজ্জের মতো এখানে কেন আসছিস।

জেল থেকে একদিন নাহ একদিন ঠিকই বের হবো তখন তোর হিসাব টা ও ভালোভাবেই নিবো প্রস্তুত থাকিস
আদিবা আমার রাগান্বিত কথাবার্তা শুনে মাথা নিচু করে। চোখের জল ফেলতে লাগলো। এবং কিছুক্ষন পর লক্ষ্য করলাম বাবা মা তারা ও আমাকে দেখতে চলে আসছে। তারা আমাকে দেখা মাত্রই কান্নাকাটি করতে লাগলো। প্রথমে মা এসে বলল

তিন্নি যদি আমাদের কাছে সত্যিটা না বলতো তাহলে আমরা এখনো হইত তোকে অবিশ্বাসই করে যেতাম। এখন আমাদের ভুল ভেঙেছে বাবা আমাকে তুই ক্ষমা দিস আর আজই তোকে জেল থেকে ছাড়নোর ব্যবস্থা করবো (মা কান্না করে বলল)

বর্তমানে মার কান্নাটা কেন জানি আমার কাছে নাটক বলে মনে হচ্ছে। যে সময় আমার উপর রিমান্ডের অসহ্যকর শাস্তি বয়ে গেলো। তখন কোনো খুজ খবর নিতে আসলো না। এখন এসে মিছে চোখের জল ফেলছে। মাকে স্বাভাবিক ভাবেই বললাম।এবার মিছে নাটক করাটা বন্ধ করো।

এবং আমার চোখের সামনে থেকে দূর হও। তোমাদের এইসব নাটক দেখার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। আর হ্যা আমাকে ছাড়ানো কোনো প্রয়োজন ও নেই। আমার যদি নিজ কোনো ক্ষমতা থাকে তাহলে আমি এমনি বের হবো –
উপস্থিত বাবা সহ মা আমার কথা শুনে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল এবং

তাদের মধ্যে থেকে আদিবা বলে উঠলো
প্লিজ রাগ করো না। মা বাবা তারা ও পরিস্থিতির স্বীকার। ইচ্ছা করে তোমার সঙ্গে এমনটা করেনি। একটু বুঝার চেষ্টা করো _

অনেক হইছে এবার তোমাদের নাটক গুলো বন্ধ করো এবং আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও। তোমাদের এখন যতই দেখছি মাথা ঠিক ততই গরম হচ্ছে। কথা না বাড়িয়ে আমার চোখের সামনে থেকে দূর হও প্লিজ
এই কথা বলা মাত্রই তারা মাথা নিচু করে চলে যেতে লাগলো। মা শুধু কান্না করছিলো। আজ তাদের কান্না দেখে

কোনো খারাপ লাগা কাজ করছে না। আগে তো তাদের চোখের এক ফোটা জল ও সহ্য করতে পারতাম না। আর আদিবার সঙ্গে কখনো তুমি থেকে তুই বলে ডাকিনি অনেকটাই ভালোবাসতাম। কিন্তু ও আমার সঙ্গে এমন করবে তা সত্যিই অবিশ্বাস্য।

যাই হক জেল থেকে ছাড়াতো পাবোই সবার আগে রাজিবকে উচিত শিক্ষা দিবো। এবং আদিবাকেও ডিভোর্স দিয়ে দিবো। বর্তমান আদিবার কথাটা মনে হলেই কেমন জানি রাগের শিহরণ জেগে উঠে। বাবা মা ও আদিবা তারা চলে যাবার পর এক পুলিশ অফিসার হাতে একটি চিঠি এনে বলল
রনি তোমার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে –

পুলিশের হাতে চিঠি পেয়ে কিছুটা চিন্তিত হয়ে গেলাম। এসময় আবার কিসের চিঠি। পুলিশ অফিসার আমার চিন্তিত হওয়া দেখে কিছুটা হাসি মুখেই বলল। চিন্তিত হবার কোনো কারন নেই। এই চিঠিটা তোমার পারসোনালই খুলে দেখো। (পুলিশ অফিসার এই বলে চলে গেলো।

তারপর চিঠিটা খুলে হাতের লেখা দেখেই বুঝে গেলাম এইটা আদিবার হাতের লেখা তো পড়তে লাগলাম
আমি জানি আমার উপর এখন ভিষণভাবেই রেগে আছো। কিন্তু আমি কি করতাম সবাই যে আমাকে ভিষণ চেপের ভিতরে রেখেছিল। যাই হক অসব কথা বলে এখন আর কথা বাড়াতে চাই না।

তোমাকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেওয়ার কদিন পরই আচমকাই মাথা ঘুরে পরে যায়। এমনিতেই সাড়াক্ষন তোমার চিন্তা ভাবনায় করতাম। তো মা আমার এ অবস্থায় দেখে দুরুত্বই ডাঃ কাছে নিয়ে যায়। পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর ডাঃ বলল আমি মা হতে চলেছি। কথাটা শুনে যতটুকু খুশি হয়েছি পরক্ষনেই তোমার কথা ভেবে মন নিমিষেই খারাপ ও হয়েছে বটে।

নিজের পায়ে তো আমি নিজেই কুডাল মেরে বসে আছি। তোমার সামনেই কথাটা বলতাম কিন্তু। আমার প্রতি তোমার রাগ ঘৃণা তা স্পষ্টই দেখতে পেয়েছিলাম। তাই কথাটি তোমার সামনে মুখ ফুটে বলার সাহস পেলাম না। ভয়ে চিঠির মাধ্যমেই জানাতে হলো। আর হ্যা পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো।

__ ইতি তোমার অপ্রিয় আদিবা
চিঠিটা পড়ার পর এত কষ্টের মাঝে থেকেও ভালো লাগা কাজ করছে যে আমি বাবা হতে চলেছি। স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে হইত আনন্দটা ভালোভাবেই প্রকাশ করতাম। কিন্তু মনে চাপা কষ্ট থাকাই এই আনন্দটাও কষ্টের রুপান্তরিত হলো।

আর আদিবার কৃতকর্মের কথা মনে পড়তেই আবার সেই রাগ কাজ করতে লাগলো
নিমিষেই চিঠিটা ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেললাম। এবং মনোস্থির করলাম সে যাই কিছু বলুক না কেনো তাকে ডিভোর্স দিবো এটাই ফাইনাল__

এভাবেই কিছুদিন কেটে গেলো। এরমধ্যে বাবা মা আদিবা তারা অনেক বারেই আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত তারা আমার কথার অপমানের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তারপর ও তারা বেহায়াদের মতো আমার সঙ্গে দেখা করতেই আসতো।

এভাবেই ১ মাস জেলে থাকার পর বাবা আজ জামিন করিয়ে নিলো। বাবার সঙ্গে ও তেমন কোনো ভালো মন্দ কথা বলি না। তারপর ও কেন জানি আমাকে জামিন করিয়ে নিলেন তা ওনিই ভালো জানে
তো ১ মাস মিথ্যা মামলায় জেলে থাকার পর আজ বাড়িতে যাচ্ছি মনে তেমন কোনো ভালো লাগা কাজ করছে না।

বাড়িতে আসার পর মা এবং আদিবা আমাকে দেখে অনেকটাই আনন্দিত হলো তা খুব ভালোই ভাবেই লক্ষ্য করলাম। কিছুক্ষন পরই অনেকগুলো খাবারের আইটেম সামনে এনে ধরলো আদিবা।

খেতে বলা মাত্রই এক ঝটকানি মেরে সব খাবার ফ্লোরে ফেলে দিলাম। আদিবা আমার এমন আচরনে ভয়ে কিছুটা দুরে গেলো। তারপর রাগান্বিত হয়েই তিন্নির বাসায় গিয়ে উপস্থিত হলাম ‘ তিন্নি আমাকে তাদের বাড়িতে দেখা মাত্রই ভয়ে থরথর করে কেপে আমার পা জড়িয়ে যা বলল তা শুনে আকাশ ভেঙে যেন আমার মাথার উপর পড়লো।?


পর্ব ৩

খাওয়ার কথা বলা মাত্রই সব খাবারের আইটেম গুলো ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে দিলাম। হুট করেই এমন রেগে যাবো আদিবা তা কল্পনা ও করেনি। ভয়ে কিছুটা দূরে সরে গেলো। রাগান্বিত অবস্থাই বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা তিন্নিদের বাড়িতে গেলাম।

তিন্নি আমাকে দেখা মাত্রই ভয়ে থরথর করে কেপে আমার পা জড়িয়ে বলল
ভাইয়া আমি ইচ্ছা করে আপনার নামটি সেদিন বলিনি রাজিব আমাকে সহ আমার পরিবারকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়েছিলো। নইত কখনো আপনার নামটি বলতাম না –

নিশ্চুপ-
ভাইয়া আপনি তো জানেনই আমার বাবা দিন খেটে খাওয়া মানুষ। আইন প্রশাসনের ব্যাপারে তেমন কিছু বুঝে না। আমি ও একা একটা মেয়ে হয়ে কেমনে অই রাজিব শয়তানটার সঙ্গে লড়াই করে করতাম। তাছাড়া জাবেদ নেতা রোজ রাতে আমাদের বাড়িতে এসে শাসিয়ে যেত। যাতে রাজিবের নাম কোনো ভাবেই প্রকাশ না হই।

তাদের এরুপ চাপে অনেকটাই নিরুপায় অসহায় হয়ে গিয়েছিলাম। কোনোদিকেই সত্য কথা প্রকাশ করতে পারছিলাম না। বাবা নিজে কিছু করতে পারছিলো না দেখে দুই দুই বার আত্মহত্যা করতে গিয়েছো কিন্তু ভাগ্যক্রমে দুইবারেই বাবাকে আটকাতে পেরেছিলাম। ভাইয়া আমরা সত্যিই অনেক অসহায়ছিলাম বিশ্বাস করুন। আমি ইচ্ছা করে এমনটা করেনি –

তিন্নির এসব কথা শুনে আকাশ ভেঙে আমার মাথার উপর পড়ার উপক্রম প্রায়। তিন্নির বাবা দুই দুই বার আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলো? । সত্যিই একটা মানুষ যখন নিরুপায় অসহায় হই। ঠিক তখনই এরকম আত্মহত্যার পথ অবলম্বন করে নেই। তিন্নি যা যা বলছে তার বিন্দ পরিমাণ ও মিথ্যার আবাস নেই। তা খুব ভালোই করেই বুঝতে পারছি।

কেন না যখন তিন্নি এসব কথা আমার পা জড়িয়ে পেশ করছিলো তখন সে অবিরাম চোখের জল ফেলছিলো –
তিন্নির এরকম অবস্থা দেখে বুঝতে পারলাম সে সত্যিই নিরুপায় অসহায় ছিলো। সঙ্গে তার পরিবার ও। এখন তিন্নিকে কোনো কিছু বলে লাভ নেই এসব ভেবে চলে আসতে যাবো এরমধ্যে হঠাৎ তিন্নি বলে উঠলো-

ভাইয়া আমার কথা যদি আপনার অবিশ্বাস হই তো। যে শাস্তি দিবেন তা মাথা পেতে নিবো। এছাড়া আমাদের বা কি করার আছে। আজ আমরা গরীব অসহায় বলে যে যেমন শাস্তি দিবে তাই তো মাথা পেতে নিতে হবে (তিন্নি কান্না করে)
তিন্নির এমন আঘাতযুক্ত কথায় আমার রাগটা হালকা হয়ে গেলো। এবং নিজেকে কিছুটা সংযত রেখে বললাম
তোর উপর আমার এখন কোনো রাগ নেই।

যা আছে সব অই রাজিবের উপর। ওকে আইন প্রশাসনে হইত নিতে পারবো না। কিন্তু গনধুলায় তো দিতে পারবো। এবার এমন গনধুলায় দিবো নাহ। ওর চৌদগোষ্ঠীর নাম ও ভুলে যাবে। এই বলে তিন্নিদের বাড়ি ত্যাগ করলাম।
দুইদিন শুধু চাপচাপ রাজিবকে ফলো করলাম।

কোন সুযোগে তাকে ধুলায় দেওয়া যায় সেই সুযোগই খুজছিলাম। এইদিকে আমার ফেন্ডদের সব বলেই রেখেছি কোন এক সুযোগ পেলেই। তার সদ ব্যবহার করবো। এভাবে ১ এক সপ্তাহ কেটে যাওয়া পর হঠাৎ রবিন ফোন করে বলল
দোস্ত জলদি কলেজ গেটে চলে আই রাজিবকে মারার সেই সুযোগ পেয়ে গেছি। এখন তুই আসবি নাকি আমরাই তাকে ধুলায় দিবো –

আরে একটু অপেক্ষা কর। আমি ও যাচ্ছি (এই বলে দুরুত্বই কলেজ গেটে গিয়ে লক্ষ্য করলাম রবিন লিজান সফিক তানবীর তারা ইতিমধ্যে রাজিবকে কয়েকটা চর থাপ্পড় মারতে শুরু করছে। এদেখে মাঠে পোলাপান ক্রিকেট খেলছিলো তাদের অখান থেকে স্টেম নিয়ে কোনো কথা না বলে রাজিবকে উল্টো পালটা বারি মারতে লাগলাম।

একপযার্য়ে রবিন লিজান সফিক তানবীর তারা আমার মারের ধরন দেখে ভয়ে আমাকে ওখান থেকে সরিয়ে আনলো। এবং আমার ও রাগের ঘোর কেটে গেলো। অইদিকে রাজিবের নাক মুখ ফেটে কান্নাকাটি করছে। তিন্নিকে অপহরণ এবং আমাকে মিথ্যা মামলা জেল খাটানোর প্রতিশোধ ভালোভাবেই নেই

কিছুক্ষন পরেই রাজিবের বাবা পুলিশ এনে পুরো কলেজ ভরতি করে ফেললো আর আমরা যে যার মনে ওখান থেকে সরে গেলাম। পরেরদিন জানতে পারলাম রাজিবের ডান হাত ভেঙেছে। শুনে মনে এক প্রশান্তি কাজ করছে।
দুইদিনের মধ্যে গেমজেম সব মিটে গেলো।

কিন্ত বর্তমানে আদিবাকে একটু ও দেখতে ইচ্ছা করছে না। মন থেকে একবারেই সে উঠে গেছে। সবসময় আদিবা আমার সঙ্গে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে আসত কিন্তু প্রতিনিয়ত তাকে নানান অপমান অপদস্তের সম্মুখীন হতে হই। আমার এমন বদলে যাওয়া দেখে আদিবা অনেক কান্নাকাটি করত। তার কান্নার কোনো মুল্যই বর্তমান আমার কাছে নেই।

একদিন ডিভোর্স পেপার সবকিছু রেডি করে বাড়িতে এনে আদিবাকে বললাম। নে এখানে সাইন করে দে। তোর মতো স্ত্রী আমার দরকার নাই –
আদিবা আমার হাতে ডিভোর্স পেপার দেখে অঝোর ধারায় জল ফেলতে লাগলো। কোনো মতেই ডিভোর্স পেপার হাতে নিচ্ছিলো না। মা আদিবার কান্না শুনে দুরুত্বই আমার রুমে চলে আসলো। মা আমার হাতে ডিভোর্স পেপার দেখেই বলে উঠলো

বাবা তুই কি পাগল হয়ে গেছিস নাকি হ্যা। বউমা ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এই অবস্থায় তাকে ডিভোর্স দিতে তোর একটু ও কলিজা কাপছে না
না একটুও কাপছে না। এর মতো বউ থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। ভালোই ভালোই একে ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে বলো নইত আমার রাগ উঠে গেলে খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু –

বাবা মাথাটা একটু ঠান্ডা কর। বউমা নই একটা ভুল করে ফেলছে। এরজন্য তাকে এত বড় শাস্তি দেওয়া মোটুও ঠিক হবে না। তাছাড়া মানুষ মাত্রই তো ভুল। এবার নই বউমাকে ক্ষমা করে দে বাবা _

ওর কোনো ক্ষমা নেই। দয়া করে তুমি এখান থেকে চলে যাও ডিভোর্স পেপারে কীভাবে সাইন করা লাগে তা আমি খুব ভালোই করে জানি –
আদিবা আমার রাগ দেখে মার পিছনের গিয়ে বলে উঠলো।

মা আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে পারবো না। দরকার পড়লে এই বাড়ি থেকে লাশ হয়ে বেরবো কিন্তু ডিভোর্স পেপারে সাইন করবো না –
তোকে বললাম না। ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে এত বনিতা করছিস কেনো (এই বলে ঠাসস করে আদিবার গালে থাপ্পড় মারার মাত্রই বাবা দরজার সামনে এসে হাজির হলো এবং অনেকটাই রাগান্বিত হয়ে আমার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো-

তোর কি জ্ঞান বুদ্ধি একবারেই কমে গেছে নাকি হ্যা। বউমা অন্তঃসত্ত্বা সেটা কি তুই জানিস না
নিশ্চুপ –
এই অবস্থায় তাকে এত টর্চার করা কি তোর ঠিক হচ্ছে? মানছি সে একটা ভুল করে ফেলছে। এরজন্য কি সারাক্ষণই তার সঙ্গে মিস বিহেব করতে হবে।?

নিশ্চুপ-
পাগলামির একটা সীমাবদ্ধ থাকার দরকার সবসময় মেয়েটার উপর এভাবে টর্চার করা মোটুও ঠিক না। রেহেনা তুমি বউমাকে নিয়ে যাও _

বাবা এই কথা বলা মাত্রই মা আদিবাকে নিয়ে রুম ত্যাগ করলো। তারপর বাবা আমাকে অনেক ভাবেই বুঝানোর চেষ্টা করলো। তার কথা এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিলাম। সারাদিন আর আদিবা আমার সামনে পড়েনি। রাতে খাবার খেয়ে ঘুমাতে আসতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম।

আদিবা আমার রুমে নেই। মনে এক প্রশান্তিও কাজ করতে লাগলো। ফ্রেশ মন নিয়েই চোখ বুঝে ঘুমানো চেষ্টা করলাম কিছুক্ষন পর দরজা খুলার শব্দ পেয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। আদিবা আমাকে দেখেই মুখ ফিরিয়ে চলে যেতে ধরলো ব্যস একটানে আদিবাকে দেয়ালের সঙ্গে শক্ত করে চাপিয়ে ধরতে সে ভয় প্লাস ব্যাথায় জড়সড় হয়ে বলে উঠলো?


পর্ব ৪

আদিবাকে দেয়ার সঙ্গে শক্ত করে চেপে ধরায় ভয় প্লাস ব্যাথায় জড়সড় হয়ে বলে উঠলো।
আমাকে ছেড়ে দাও প্লিজ –

ছেড়ে দেওয়ার জন্য তো ধরেনি। আমার প্রশ্নের উত্তর আগে চাই। কেন আমাকে পুলিশের তুলে দিলে?
নিশ্চুপ –

আমাকে ধরিয়ে দিতে একটু ও কি কলিজা কাপেনি। আমার প্রতি এই তোর ভালোবাসা ছিলো? (এই বলে আরও শক্ত করে চেপে ধরাতে আদিবা কান্না করেই বলে উঠলো
ব্যাথা পাচ্ছি তো আমাকে ছেড়ে দাও প্লিজ –

আদিবার কান্না দেখে ছেড়ে দিয়ে বললাম। যা আজ থেকে তুই একবারে মুক্ত কোনো প্রকার টর্চার আর করবো না। তবে একটা সময় তোকে যতটা ভালোবাসতাম এখন থেকে ঠিক ততটাই ঘৃণা করবো। আর যদি ভেবে থাকিস কিছুদিন পর এমনি মেনে নিবো এমনটা ভেবে থাকলে ভুল ভাবছিস। যতদিন বেচে আছি ততদিনই তুই আমার কাছে অবহেলিত হয়ে রয়ে যাবি। ভালোবাসাটা আর পাবি নাহহ-

নিশ্চুপ-
আজ শুধু একটা কথা ভেবে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে যে যাকে এত ভালোবাসতাম কেয়ার করতাম। সে মানুষ্টাই এত বড় ছলনা আমার সঙ্গে করতে পারলো?আমার কথা সে একটুও ভাবলো না। যদি তিন্নিকে সত্যিই অপহরণ করতাম তাহলে কোনো অভিযোগ থাকত না। কিন্তু নির্দোষ হয়ে এত বড় শাস্তির সম্মুখীন হতে হলো তা মানতে খুবই কষ্ট হচ্ছে (একথা বলা মাত্রই দুই ফোটা জল গাল বেয়ে পড়ার আগেই তা মুছে নিলাম)

বললাম তো আমার ভুল হয়েছে। ক্ষমা করে দাও প্লিজ (আদিবা আমার পা জড়িয়ে)
এখন ক্ষমা চেয়েই বা কি হবে। আমার উপর যা হবার তা তো হয়েছেই। কিন্তু তুই যে আমার ভালোবাসার স্ত্রী হয়েও অবিশ্বাস করে এমনটা করবি তা মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে –

নিশ্চুপ (হয়ে অবিরাম কান্নাই করছে আর নিরবতা সব শুনে যাচ্ছে আদিবা)
ডিভোর্স যখন বাবা মার কারনে তোকে দিতেই পারবো না। তো একটা কথা মনে রাখিস আজকের পর থেকে তোর আর আমার মাঝে কোনো সম্পর্ক থাকবে না। আর ভুলেই ও আমার সংস্পর্শে আসার চেষ্টা করবি না –
নিশ্চুপ –

আদিবা কথা গুলো নিরব হয়ে শুনছিলো কোনো কিছু বলছিলো না। এইদিকে আদিবাকে কোনো আঘাত ও করতে পারছিলাম না। আবার নিজেকে সংযত ও রাখতে পারছিলাম না। ভয় হত যদি রাগের ঘোরে অনাগত সন্তানটার কোনো ক্ষতি হয়ে যায়। তখন নিজেকে হাজার অনুশোচনায় ফেলেও সে ভুলের সমাধান মিলবে না। আদিবা অন্তঃসত্ত্বা ছিলো বলেই রাগটা নিজের মধ্যে পুষে রাখতে হত।

সেদিন থেকেই আদিবা এক রুমে থাকত আর আমি অন্যরুমে থাকতাম। আদিবা অনেক চেষ্টা করত এক সঙে থাকার কিন্তু আমার রাগ দেখে ভয়ে কাছে ঘেঁষতে পারত না। এভাবেই কয়েক মাস কেটে গেলো। তবুও আদিবার প্রতি সেই রাগই রয়ে গেলো বিন্দুমাত্র ও কমলো না।

এখন অবশ্য তাকে কোনো টর্চার করি না। এবং কি ভালো মন্দ কোনো কথা ও বলি না। সবসময় এড়িয়ে চলি। আদিবা হইত ভেবেছিলো কিছুদিন পর রাগ অভিমান কমে যাবে তারপর তাকে এমনি মেনে নিবো এমনটাই হইত ভেবেছিলো। কিন্তু যখন লক্ষ্য করলো।কোনো প্রকার কথাই বলছি না তখন সে রিয়াক্ট করতে শুরু করলো এবং আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করত। একদিন তো মুখ ফুটে বলে উঠলো।

এভাবে আর কতদিন আমার সঙ্গে কথা না বলে থাকবে
নিশ্চুপ –
কি হলো চুপ করে আছো কেন বলো?

নিশ্চুপ –
একটা ভুলের জন্য কি আমাকে এইভাবে শাস্তি দিবে হ্যা। মানছি আমি ভুল করেছি কিন্তু তার জন্য তো অনেক ক্ষমা ও চেয়েছি তোমার পা জড়িয়ে কান্নাকাটি ও করেছি তারপর ও আমার সঙ্গে কথা বলছো না। সবসময়ই কেমন জানি পাশ কাটিয়ে চলাফেরা করছো এভাবে আর কতদিন চলবে-

নিশ্চুপ –
প্লিজ এবার অন্তত কিছু একটা বলো কতদিন এভাবে পাশ কাটিয়ে চলবে- (কান্না ভেজা কন্ঠে)
যতদিন বেচে আছি ততদিনই চলবো।

ভালো না লাগলে ডিভোর্স নিতে পারো সমস্যা নেই-
আমার এই অনাগত সন্তানকে কে দেখবে-

তোমাকে ছাড়লেও সন্তান কে তো ছাড়বো না। সে আমার কাছেই থাকবে –
স্বামী সন্তান দূরে সরিয়ে আমি থাকতে পারবো না –
তা তোমার একান্তই পারসোনাল ব্যাপার-

অহহ আচ্ছা তারমানে তোমার লাইফে আমার কোনো সংযুক নেই এটাই কি বুঝাতে চাচ্ছো –
ঠিক তাই-
আমার প্রতি এতই যখন রাগ তাহলে আমাকে মেরে ফেলেই তো হই। তিলে তিলে কষ্ট দিবার চেয়ে একবারেই আমাকে শেষ করে দাও। স্বামী র অবহেলায় বেচে থাকার চেয়ে মৃত্যুবরন করার শ্রেয়ও
নিশ্চুপ-

মানুষ মাত্রই তো ভুল। আর সে মানুষটা যদি তার ভুল বুঝে অনুতপ্ত অনুশোচনায় থাকে তো তাকেও একটা সুযোগ দেওয়া হই। তাহলে তুমি কেন আমাকে সে সুযোগটা দিচ্ছো না (কান্না করে)

সবকিছুরি একটা সীমা রেখা থাকে। আর তুমি সে সীমা রেখা অতিক্রম করে ফেলছো। তুমি যেটা ভুল বুঝে এখন ক্ষমা চাচ্ছো তা তোমার ভুল ছিলো না। ইচ্ছা করেই আমাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দিয়েছো। এবং রিমান্ডের অসহ্যকর শাস্তি ও ভোগ করিয়েছো।

এতকিছু হবার পর ও সবকিছু ভুলে তোমাকে স্ত্রী হিসাবে মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। আর সত্য কথা বলতে। তোমার প্রতি আগে যে ভালোবাসা ছিল তা এখন রাগ ঘৃণায় রুপান্তরিত হয়েছে। সুতরাং এই মনে তোমার জন্য কোনো জায়গা নেই –
আমার অনাগত সন্তানটার কথা ভেবে অন্তত কাছে রাখো – (ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
সম্ভব না-

এইভাবে কেন আমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছো। (কান্না করে)
নিশ্চুপ-
আদিবার কথায় নিশ্চুপ হয়েই থাকতাম। কোনো রেসপন্স দিতাম না। এভাবেই দিন কাল কাটতে লাগলো। এইদিকে আদিবার চেহারায় মাতৃগর্ভের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।

এই সময় তার অনেক কিছুই প্রয়োজন হই। আর আদিবার সঙ্গে তো কোনো কথায় বলতাম না। মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে মা আদিবার কাছ থেকে প্রয়োজনের সবটা শুনে এসে আমাকে লিস্ট ধরিয়ে দিত। আমিও তার প্রয়োজন দ্রব্যের প্রতি কোনো অবহেলা করতাম না। সবটাই এনে দিতাম। এভাবেই চলছিলো আমার আর আদিবার দম্পতির জীবন।

বাবা মা তারা ব্যাপারটা ভালোভাবেই লক্ষ্য করছিলো। যে আদিবার সঙ্গে আমার কোনো বনিবনা নেই। এই বিষয়ে বাবা আমাকে কিছু না বললেও মা বলত

বাবা এমন রাগ করিস না। এবার বউমাকে মেনে নে। মেয়েটা তোর জন্য লুকিয়ে লুকিয়ে চাপা কান্না করে তা আমি স্পষ্ট দেখেছি। তাছাড়া অনেক দিন তো হয়ে গেলো এবার অতীতের সব কথা ভুলে গিয়ে মিট করে নে –
সম্ভব না মা। আদিবাকে আমি ডিভোর্সই দিতে চেয়েছিলাম।

কিন্তু তোমাদের জন্য তা আর হয়ে উঠলো না। ওযদি আমার কাছে থাকতে চাই তো ওর ভরপোষন সব দায়িত্ব আমিই বহন করবো সমস্যা নাই। তবে এখন যেভাবে আলাদা থাকছি এমনভাবেই সে থাকতে পারবে নইত সে যেদিকে খুশি সেদিকে যেতে পারে আমার কোনো আপত্তি নেই –

ধুর পাগল ছেলে কীসব আবুল তাবুল বকছিস ‘ হ্যা আদিবা যে মা হতে চলেছে এই অবস্থাই তার সঙ্গে এরুপ আচরণ করছিস তা সত্যিই বেমানান এবং খারাপের দিকে যাচ্ছে
নিশ্চুপ –

সবসময় নিজের প্রতিশোধে মেতে উঠা ঠিক না বাবা। কিছুসময় পরিস্থিতির মোকাবেলায় নিজের রাগ জিদ বিশেষজন ও দিতে হই –
মার কথাগুলো তোয়াক্কা না করে অখান থেকে সরে গেলাম। মা খুব ভালোই করে বুঝতে পারছিলো। আদিবাকে কখনোই মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।

মাঝে মধ্যে আদিবাও যখন আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করত তখন খারাপই লাগত। কিন্তু পরক্ষনেই অতীতে তার কৃতকর্মের কথা মনে পড়াই খুব দুরুত্বই আগের রাগ জিদ কাজ করতে শুরু করত। তারপর ও কোনোকিছু বলতাম না নিশ্চুপ হয়ে থাকতাম। মান অভিমান করতে গিয়ে দিনগুলো যে কীভাবে কেটে গেলো তা বুঝতেই পারলাম না -আল্লাহ রহমতে কন্যা সন্তানের বাবা আজ হলাম। অনেকটা আনন্দে সেদিন হাস্পাতালে গিয়ে নতুন অতিথির হাত বলিয়ে আনন্দসহিত কথা বলতে লাগলাম-

পাশে আদিবা যে সুয়ে আছে তারদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রক্ষেপ নেই। আদিবা হইত ভেবেছিলো এই আনন্দে তার সঙ্গে কথা বলবো। কিন্তু আদিবার ভাবনা ভুল প্রমানিত হওয়াই সে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো!


পর্ব ৫

আল্লাহর রহমতে আজ কন্যা সন্তানের বাবা হলাম। মনে অনেকটা আনন্দের শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। এই আনন্দটা সব আনন্দের চেয়ে অন্যরকম যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। অনেকটা আনন্দে হাস্পাতালের চলে আসলাম। কেবিনে প্রবেশ করা মাত্রই আমার সব রিলেটিভরা বাহিরে চলে গেলো। লক্ষ্য করলাম আদিবার পাশে ছোট রাজকন্যা সুয়ে আছে। তাকে দেখেই আনন্দ আর ও তীব্র থেকে তীব্র তর হলো।

এইদিকে আদিবার সঙ্গে এক বছর প্রায় হয়ে গেলো কোনো প্রকার কথাই বলি নাহ। আজ তার পাশে বসতেই কেমন জানি একটা সংকোচবোধ কাজ করছে। পরিশেষে বেডে গিয়ে বসলাম এবং ছোট রাজকন্যার হাত বুলিয়ে কথা বলতে লাগলাম। পাশে আদিবা যে সুয়ে আছে তার দিকে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই –

আদিবা হইত ভেবেছিলো। এই আনন্দে তার সঙ্গে সব রাগ অভিমান ভুলে গিয়ে কথা বললো কিন্তু আমার আচরনে তা আর প্রকাশ পেলো না। এইদিকে আমি আমার মতো ছোটকন্যার সঙ্গে কথায় বলছিলাম। এরমধ্যে হঠাৎ আদিবা ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো

  • রাজকন্যার সঙ্গে শুধু কথা বলবা। তার মাকে কিছু জিজ্ঞেস করবা নাহহ?
  • নিশ্চুপ
  • আমার প্রতি তোমার যে ভালোবাসা নেই তা আজ ভালো করেই বুঝতে পারছি। ভেবেছিলাম কিছুদিন পর তোমার সকল রাগ অভিমান কমে যাবে। কিন্তু আজ আমার ভাবনাটা ভুল প্রমানিত হলো। সবসময় তোমার রাগ অভিমানটাই প্রধান্য দিয়ে আসছো। আমার মনের অবস্থাটা একবারও বুঝার চেষ্টা করলে নাহহ –
  • নিশ্চুপ
    তুমি আমাকে এতটাই অবহেলা করতে। যদি কোনো সময় অসুস্থতায় ভোগতাম মুখ ফিরে তাকিয়ে কখনো দেখতা নাহ। আর প্রেগন্যান্সির সময় তো নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে এসব কিছুতেই এড়িয়ে চলেছো। শাশুড়ী মা পাশে ছিল বলেই এত অবহেলায় টিকতে পেরেছি নইত নিরুপায় হয়ে অনেক আগেই চলে যেত। যাই হক আজ এই আনন্দের দিনে একটু কথা অন্তপক্ষে বলো প্লিজ (হাত জড়িয়ে)
  • ইয়ে মানে (থতমত খেয়ে কিছুটা বলতে যাবো মা বাবা এরমধ্যে কেবিনে চলে আসলো এই সুযোগে বাহিরে চলে আসলাম)
    আজ কেনো জানি আদিবার গুলো কলিজায় লাগতেছিলো। তার কথার কোনো উত্তর আমার জানা ছিলো না। আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হইত ব্যাপারটাকে এতদিনে ভুলে যেত। কিন্তু আমি ভুল পারছি না। এছাড়া এতদিন যখন হয়েই গেছে আদিবার সঙ্গে কথা বলিনি আর বলবো ও নাহ। সে যতই আকুতি মিনতি করুক না কেন। তার সঙ্গে সম্পর্ক আর ঠিক করছি না। আনমনে এসব ভেবে যাচ্ছি। হঠাৎ কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই লক্ষ্য করলাম বাবা কিছুটা বিষন্নে তাকিয়ে বলে উঠলো বউমাকে এইভাবে কাদানোটা তোর উচিত হচ্ছে না। যদি ও এইটা তোর পারসোনাল ব্যাপার তারপর ও বাবা হয়ে তো চুপ হয়ে থাকতে পারি নাহ। বিবেকে বাধা দেই। অনেক আগেই বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তোর রিয়াক্ট দেখে কিছু বলিনি। আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি যে অতীতে যা কিছু হয়ে থাকুক না কেনো। তা আজ ভুলে গিয়ে বউমাকে মেনে নে
  • নিশ্চুপ

বাবা এইকুটু বলে চলে গেলেন। এইদিকে আমি থতমত খেয়ে যাচ্ছিলাম। উত্তর দিবার মতো ভাষায় জানা ছিলো না। নিশ্চুপ হয়েই সব শুনতাম। এরপর হাস্পাতাল থেকে
আদিবাকে বাড়িত আনা হলো। এবং আগে যে রুমে আমি থাকতাম সে রুম মা তালা ঝুলিয়ে দিলো মার এমন কান্ড দেখে একটু রাগ মিশ্রিত কণ্ঠেই বলে উঠলাম

মা এই রুমে তালা ঝুলিয়ে দিচ্ছো আমি কই থাকবো –
রাগ অভিমান অনেক হয়েছে। এবার আমার ছোট দিদিভাইটার সঙ্গে থাকবি – (মা কিছুটা হেসে)
মার এমন কান্ড দেখে কি রিয়াক্ট করবো তা ভেবে পাচ্ছিলাম নাহ। এইদিকে বাবা সহ আদিবাও মুখ চেপে হাসতেছিলো। বুঝতে পারলাম আদিবার সঙ্গে একত্র করার সব ধান্দা চলছে। যাই হক তারা যতই একত্র করার চেষ্টা করুক না কেন তাদের ফাদে পা আমি সহজেই দিচ্ছি নাহ’

রাতে খাবাবের পর্ব শেষ করে ঘুমাতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম মার লাগানো তালা ঝুলে আছে। মাকে চাবির কথা জিজ্ঞেস করলেও সে সোজা না করে দেই। বাধ্য হয়ে আদিবার রুমের গেলাম। ভাবলাম এইটা তো আমারই বাড়ি যেখানে খুশি সেখানেই থাকবো এতে সংকোচবোধ হবার কি আছে। যে ভাবা সে কাজ। দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করতেই আদিবা কিছুটা নড়েচড়ে মিটমিট করে হাসতে লাগলো। এইদিকে আমার কেমন জানি সংকোচবোধ হতে লাগলো।

যার সঙ্গে কথাই বলি নাহ। তার সঙ্গে এক বিছানায় থাকা তা সত্যিই সংকোচবোধ এর ব্যাপার। আমার এমন অবস্থা দেখে আদিবা ছোট রাজকন্যা দিকে তাকিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল

  • এত সংকোচবোধ করার কি আছে বিছানায় একজন মানুষ থাকার জায়গা তো খালিই রয়েছে। এখন সে ইচ্ছা করলে থাকতে পারে
  • কেউ যদি ভেবে থাকে। আমি সংকোচবোধ করছি তাহলে তার ধারণা একদম ভুল।
  • তাহলে এইদিক সেদিক না তাকিয়ে সুয়ে পড়লেই তো হই
  • তা আমার একান্ত পারসোনাল ব্যাপার। কাউকে এখানে ইন্টারফেস না করলেই বেশি খুশি হবো

এরজন্য কারো ভালোটা বলতে নেই। হীতে বিপরীত হয়ে যায়। তা আজ প্রমাণ পেলাম ( আদিবা এই বলে কিছুটা রেগে নিশিতাকে (ছোট রাজকন্যার নাম) বুকে জড়িয়ে কম্বল মুড়িয়ে জড়সড় হয়ে চোখ বুঝে ফেললো।

এইদিকে আমার সংকোচবোধ হবার পরেও বিছানায় গিয়ে সুয়ে পড়লাম। শীত থাকায় ঠান্ডাটা একটু বেশি। আদিবাকে ও দেখছি পুরো কম্বলটাই তার দিকে সরিয়ে রেখেছে। হইত আমার উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই কম্বলটা সরিয়ে রেখেছে। ঠান্ডায় ঘুম ও আসছে না। তারপরও চোখ বুঝে ফেললাম।

কিছুক্ষণ পর গরম উষ্ণতা অনুভব করায়
কখন যে ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলাম তা বুঝতেই পারলাম না। সকালে ঘুম থেকে উঠে কম্বল জড়ানো দেখে। আদিবার প্রতি আনমনে ভালো লাগা কাজ করছে। এসব ভাবতেই ছোট নিশিতা কান্না করে উঠলো। পড়ে গেলাম এক মহা ঝামেলায় যতই কান্না চুপ করানো চেষ্টা করি ঠিক ততই জোরে কান্না করে। আদিবাকেও ডাকতে পারছি না।

থতমত খেয়ে ছোট নিশিতাকে এইটা অইটা বলে চুপ করাতে লাগলাম কিন্তু কোনোভাবেই কান্না থামাতে পারছিলাম না। কান্না আওয়াজ একটু তীব্র হওয়াই আদিবা চলে আসলো এবং খুজা মেরে বলে উঠলো
কেমন বাবা হয়েছেন মেয়ের কান্না চুপ করাতে পারেন না (এই বলে নিশিতাকে বুকে জড়িয়ে নেওয়া মাত্রই চুপ হয়ে গেলো আর আমি ব্যাকুব বন হয়ে ভাবতে লাগলাম

নিশিতাকে এতকিছু বলে কান্না বন্ধ করতে পারলাম না। ও কি এমন যাদু করলো যে কোলে নেওয়া মাত্রই মেয়েটা চুপ গেলো? । যাই হক নিশিতার কান্না বন্ধ হয়েছে এতেই অনেক…।

সকালে ফ্রেশ হয়ে দোকানে চা খেতে চলে আসলাম। সকালে খাবার রেডি করতে একটু লেট হই। তো চা দোকানে গিয়ে লক্ষ্য করলাম তানবীর লিজান সফিক তারা খুব আরামে চা খাচ্ছে আর গল্পেই জমে আছে। ব্যস আমি ও তাদের সঙ্গে যোগ দিলাম। গল্প করার মাঝে হঠাৎ অচেনা নাম্বার থেকে কল আসতেই সাইলেন ফোন কেপে উঠলো দূরত্ব রিসিভ করা মাত্রই ওপাশ থেকে চেনা কন্ঠে বলে উঠলো?


পর্ব অন্তিম

বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেই। হঠাৎ সাইলেন ফোন কেপে উঠলো অচেনা নাম্বার থেকে কল আসায় তড়িঘড়ি করে কল রিসিভ করে। হেলো বলতে ওপাশ থেকে খুব চেনা মেয়েলিকন্ঠে বলে উঠলো

  • আপনি কোথায় আছেন?
  • ইয়ে মানে আপনি কে?
  • আমি নিশিতার আম্মু (কিছু হেসে)
  • তো নিশিতার আব্বুর সঙ্গে কথা বলেন আমার কাছে ফোন দিয়েছেন কেন (এইটা বলার পর ঘোর কেটে গিয়ে আমার মেয়ে নিশিতার কথা মনে হয়ে গেলো। তার মানে আদিবা ফোনে কথা বলছে এইটা ভাবতেই ব্যাকুব বন হয়ে গেলাম। আনমনে ভাবতেই আদিবা ওপাশ থেকে বলে উঠলো-
  • কি হলো নিশ্চুপ হয়ে আছেন যে। বুঝতে পারছি আমার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা নাই। খেতে আসুন breakfast রেডি (আদিবা এই বলে লাইন কেটে দিলো।
    তারপর বন্ধুদের সঙ্গে অল্প কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম। বাড়িতে এসে বাবা মা কাউকে দেখতে পারছি না।

এইদিকে খিদেই পেটে ইদু দৌড়াতে শুরু করেছে। তারপরও আদিবাকে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছি না। আদিবা আমার কান্ড কিছুক্ষন দেখার পর কাছে এসে বলল

  • কেউ যদি খেতে চাই তো তার জন্য পরিবেশন করতে পারি-
  • তার যদি পরিবেশন করতে সমস্যা না থাকে। তো সে করতে পারে। আমার কোনো আপত্তি নেই। এছাড়া খিদে একটু বেশিই পেয়েছে যদি খাবারটা টেবিলে রেডি করে দেওয়া হই তো উপকৃত হতাম-
    আদিবা ও বুঝতে পারলো ক্ষুধার্ত অবস্থায় বেশিক্ষন স্থির থাকতে পারছি না। অল্পসময়ের মধ্যেই খাবার টেবিলে রেড়ি করে ওখান থেকে আদিবা সরে গেলো। খাবাবের পর্ব শেষ করে ফেসবুক ঘাটতে যাবো কিন্তু ফোনে চার্জ ও নেই বলে দুরুত্বই রুমে দিকে চলে আসলাম এদিক সেদিক চার্জার খুজতেই আদিবা আমার সামনে চার্জার ধরে বলল
  • এইটাই তো খুজছেন?
  • না ইয়ে মানে হ্যা (চার্জারটি হাতে নিয়ে)
  • এতো বনিতা না করে আমাকে বললেই তো পারেন। ও আচ্ছা আপনি তো আবার আমার সঙ্গে কথা বলতে চান নাহ-
  • নিশ্চুপ
  • আমিও দেখি কতদিন আমার সঙ্গে কথা না থাকতে পারেন (আদিবা এইটুকু বলে রুম ত্যাগ করলো)
    এভাবেই মান অভিমানের দিনকাল কাটতে লাগলো। মাঝেমধ্যে আদিবা এমনই খুজা মেরে কথা বলত যা শুনে চুপ করে থাকা আমার পক্ষে কঠিনই হত।

তারপর ও নিশ্চুপ হয়ে থাকতাম। প্রতিদিনকার মতো আজ ও রাতের খাবারের পর্ব শেষে করে ঘুমাতে আসলাম। এবং নিশিতার সঙ্গে কথা বলছিলাম। তখন আদিবা রুমে ছিলো না। কিন্তু কিছুক্ষন পর আদিবা রুমে চলে আসলো এবং তার জায়গায় গিয়ে সুয়ে নিশিতাকে ঘুম পড়াতে লাগলো হঠাৎ নিশিতার দিকে তাকিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো –

আমার কেন জানি সন্দেহ হচ্ছে তোর বাবা পর কোনো নারীর চক্রে পড়েছে নইত জলজ্যান্ত বউ ঘরে থাকার সত্ত্বেও ভুলেও তাকে স্পর্শ করছে না। এরমানে নিশ্চিত তোর বাবা অন্যকোনো নারীর চক্রে পড়েছে।
আদিবার এমন ধারা কথা শুনে নিশ্চুপ হয়ে আর থাকতে পারলাম না। চোখগুলো বড়বড় করে তারদিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম।

  • বাজে কথা বলা বন্ধ করো প্লিজ
  • সত্য কথা বলছি তো এরজন্য গায়ে কাটার মতো বিনছে তাই না –
  • এবার বাড়াবাড়িটা কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে (প্রচন্ডে রেগে)
  • অই হেলো আপনি এত তেলেবেগুনে জ্বলে উঠছেন কেন। আমি আমার মেয়ের কাছে নালিশ করছি মাত্র। এতে আপনি এত রিয়াক্ট করছেন কেন হুম (মুখ ভেংচি কেটে)
    কারণ কথাগুলো ঘুরিয়ে পেচিয়ে আমাকেই বলা হচ্ছিলো (এই বলে আদিবার উপর ঝুকে পড়লাম। হঠাৎ তার সংস্পর্শে যাওয়াই একটু নড়েচড়ে উঠলো এবং কিছুটা কাপা কাপা গলায় বলল,
  • এবার কিন্তু সত্যিই সত্যিই আপনার উপর আমার সন্দেহ হচ্ছে যে পরনারীর আসক্তই মেতে আছেন.
  • বাজে কথা বলা বন্ধ করো প্লিজ (দাতে দাতে চেপে)
    আচ্ছা ঠিক আছে আর বলবো না। কিন্তু আমার উপর ঝুকে পড়েছেন কেনো হুম
    (আদিবা মিটমিট করে হেসে)
  • ইয়ে মানে সরি (লজ্জা পেয়ে সরে যেতেই আদিবা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো
  • আপনার এই অবহেলায় যে ভিষণ কষ্ট হই তা কি বুঝেন নাহ। নাকি বুঝেও আমাকে কষ্ট দিতে আপনার ভালো লাগে_
  • নিশ্চুপ
  • মানুষ মাত্রই ভুল। আর আমি যে পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম আমার জায়গায় যে কেউ থাকলে সে একই কাজ করত। এছাড়া তিন্নির জবাবদিহি শুনে অবিশ্বাস আর করতে পারেনি বাধ্য হয়ে সেদিন বিশ্বাস করতে হয়েছিলো-
  • আমার বাবা মা যদি আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দিত তাহলে হইত ততটা কষ্ট পেতাম না। যতটা তুমি আমাকে তাদের হাতে তুলে দেওয়াতে পেয়েছি। আমার বাবা মার থেকে তুমিই আমার চরিত্র সম্পর্কে ভালো জানতে তারপর ও অবিশ্বাস করে নিজে প্রশাসনের কাছে তুলে দিলে। এতে তোমার প্রতি আমার কেমন রিয়াক্ট হতে পারে তা অবশ্যই বুঝতে পেরেছো –
  • নিশ্চুপ (হয়ে আদিবা চোখের জল ফেলতে লাগলো)
    তুমি চাইলে একই ছাদে নিচে থাকবো কিন্তু স্বামী স্ত্রী ভালোবাসার যে সম্পর্ক হই তা আমাদের মাঝে আর হবে না (একথা বলা মাত্রই আদিবা আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলে উঠলো আমাকে এইভাবে কেন কষ্ট দিচ্ছো বলতো। মানুষ তো খুন করেই ও আপোষ হই। আর আমি তো সামান্য ভুল বুঝে এমনটা করে ফেলছি (কান্না করে)
  • নিশ্চুপ

আচ্ছা ঠিক আছে। এতদিন পরেও যখন আমাকে ক্ষমা করতে পারছো না। তো এবার ডিভোর্স দিতে পারো (কান্নায় ভেঙে পড়ে)

  • সত্যিই (অনেকটা খুশি হয়ে)

হ্যা। কালকেই নিশিতাকে নিয়ে এ বাড়ি ছাড়া হবো তারপর ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েও (আদিবা চোখের জল মুছে)

  • Wait Wait নিশিতাকে নিয়ে যাবেন মানে কি হ্যা?
  • নিশিতার মা আমি সুতরাং ও আমার কাছেই থাকবে।
  • অই হেলো নিশিতার বাবা আমি সুতরাং ও আমার কাছেই থাকবে বুঝলেন
    দেখুন নিশিতাকে ছাড়া আমি এক সেকেন্ডও থাকতে পারবো না। কাজেই বাড়াবাড়ি না করলে খুব খুশি হবো (আদিবা মুখ ফিরিয়ে)

আপনাকে আমারটাও বুঝতে হবে। যে নিশিতার বাবা আমি সুতরাং আমি আমার সন্তানকে দূরে সরিয়ে থাকতে পারবো না (এক গাল হেসে)
আমার এক হাসিতে আদিবা বুঝে ফেললো তার সঙ্গে দুষ্টমি করতেছিলাম। ব্যস নিমিষেই সব মামলা ডিসমিস হয়ে গেলো। আদিবাও কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলে উঠলো

তারমানে আমার সঙ্গে এতক্ষণ নাটক করতেছিলে –
হ্যা গো বউ নাটক করতেছিলাম (আদিবার নাক টেনে)
তুমি এমন কেন হ্যা। রাগ অভিমান সবাই করে। কিন্তু তোমার মতো কেউ এমন রাগ অভিমান করে থাকে না। (আদিবা অনেক খুশি হয়ে)

তোমার উপর বড্ড অভিমান জমে গেছিলো। ভেবেই নিয়েছিলাম বেচে থাকতে আর কথা বলবো না। কিন্তু আমার বউটা যে বড্ড মায়াবী তার সঙ্গে কথা না বলে থাকতেই পারলাম না।

  • আজকের পর থেকে আমাকে আরও কষ্ট দিবা?
  • না দিবো না
  • তোমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখবা
  • না রাখবো না। কাছেই রাখবো
  • তাহলে অইদিকে সরে আছো কেন জড়িয়ে ধরো আমাকে? (ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে)

ব্যস তারপর আদিবাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানে আলতো করে বলে উঠলাম

  • এরপর যদি অবিশ্বাস করে আমার মনে আঘাত দাও তো এবারমতো শুধু কথা বলা বন্ধ করবো না। তারসঙে একবারে সবার চোখের আড়াল হয়ে যাবো। তখন শতবার ডাকলেও আর সাড়া দিবো না।
  • (একথা বলা মাত্রই আদিবা আলতোভাবে মুখে চেপে ধরে বলে উঠলো
  • এসব অলক্ষুণে কথা বলো না প্লিজ। এরপর থেকে যত যাই কিছু যড়যন্ত্র করুক না কেনো। তোমাকে আর অবিশ্বাস করবো না (কপালে চুমু একে)
  • আদিবার কান্ড দেখে সত্যিই অনেক অবাক হয়ে গেলাম। এতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে আমায়। মনে হচ্ছে ছাড়লেই পালিয়ে যাবো খুব ভালো লাগা কাজ করছে। ভালোবাসার মানুষ যে ভুল করবে না’ তার কোনো নিশ্চয়তাও নেই। পরিস্থিতির মোকাবেলায় ভালোবাসার মানুষটিও আপনার বিপক্ষে চলে যেতে পারে। আর বিপক্ষে চলে যাওয়া মানে এই নাহ যে আপনাকে সে ভালোবাসা নাহ। সে আপনাকে অবশ্যই ভালোবাসে। পরিস্থিতিই তা ভিন্ন দেখায়। এই গল্পে আদিবার চরিত্র ও এমনই দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তর্কবিতর্ক না করে গল্পটা আপনাদের কাছে কতটা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি কমেন্ট বক্সে আপনার মন্তব্যটি জানিয়ে দিন।

লেখা – রনি হাসান

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “অবিশ্বাস – সন্দেহমুলক ভালোবাসার গল্প” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – অপবাদ – koster premer kahini

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *