জমজঙ্গ – রোমাঞ্চকর রহস্যময় গল্প বাংলা

জমজঙ্গ – রোমাঞ্চকর রহস্যময় গল্প বাংলা: ভয় পেয়ে তিনি পিছন ফিরে তাকাতেই যেন কারেন্ট শখ খেলেন, প্রচন্ড ভয়ে মুখ দিয়ে কোন শব্দ বেরুলো না। ছাগলের মতো দেখতে এমন হাজার হাজার প্রাণী তাকে চারদিকে থেকে ঘিরে ধরেছে।


পর্ব ১

দি মস্কো সিটি হসপিটালে গতকাল রাতে একটি দুইমাথা বিশিষ্ট বাচ্চার জম্ম হয়।

শুধু তাই নয় এই বাচ্চাটির দুইটি মাথা দুইরকম। মানে একটি মাথা ছেলের আর অন্য মাথাটি মেয়ের। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে বাচ্চাটির বডিও দুই ভাগে বিভক্ত। এক পাশ ছেলের অঙ্গের বডি অন্য পাশ মেয়ের অঙ্গের বডি।

বাচ্চাটিকে দেখে মনে হয়, একটি ছেলে ও একটি মেয়ে পরস্পরের সাথে আড়াআড়ি ভাবে মিশে আছে। এক হাতের আঙুল অন্য হাতের খাঁজে ঢুকালে যেমনটা লাগে ঠিক তেমন। বাচ্চাটির গায়ের রং বেশ ফর্সা ও নরম তুলতুলে। এই অদ্ভুদ বাচ্চাটিকে দেখে অপারেশন থিয়েটারেই দুজন ডাক্তার জ্ঞান হারাই।

ডা: শাম্মী যথেষ্ঠ সাহসী একজন গাইনী বিশেষজ্ঞ। বেশ দক্ষতার সাথেই তিনি অপারেশন কার্য সম্পন্ন করেন। বাচ্চাটি যদিও স্বাভাবিক মানুষের মতো কিন্তু তার অদ্ভুত বডির জন্য সবাই তাকে ভয় পেয়ে গেছিলো।
ডা: শাম্মী বেশ চিন্তিত। তার ১৫ বছর ডাক্তারি জীবনে এমন ঘটনা আর কখনো ঘটেনি। ঠিক কি কারনে বাচ্চাটির দেহের গঠন এমন হলো তা ডা: শাম্মীর অজানা।

ভারতের একটা প্রদেশে এমন একটা জোড়া বাচ্চা আছে। তবে তারা দুজনেই ছেলে এবং তারা বেশ সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ। তাই ডা: শাম্মী বিষয়টা নিয়ে এতো ভয় পাচ্ছে না। কিন্তু এই বাচ্চাটা আসলেই একটু অন্যরকম। এসব ভাবতে ভাবতে সেদিন রাতে আর ডা: শাম্মীর ঘুম হলো না। বাচ্চাটির প্রতি তার কিউরিসিটি বেড়ে গেলো। যে করেই হোক তাকে বাচ্চাটির সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।

পরদিন ডা: শাম্মী হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারলো, যে রুমে ঐ বাচ্চাটি ছিলো সে রুমের একজন সেবিকাকে সকালে অজ্ঞান অবস্থায় মেঝেতে পাওয়া যায়। প্রচন্ড ভয়ে সেবিকাটি বাকশক্তি হারিয়েছে। শুধু বোবা নয়, ঐ সেবিকাটি চিরদিনের জন্য প্যারালাইজড হয়ে গেছে। এমন ঘটনায় পুরো হাসপাতাল জুড়ে আতংকের সৃষ্টি হয়।

অনেক রুগী ভয়ে পালিয়ে গেছে। কারণ গতকাল রাতে নাকি পুরো হাসপাতালেই একটি অস্বাভাবিক ভৌতিক ঘটনা ঘটে। তাই ভয়ে সবাই পালাচ্ছে।
ডা: শাম্মী একটু ঘাবড়ে গেলেন কিন্তু সাহস হারালেন না। তিনি ঐ বাচ্চাটির কেবিনে গেলেন। যেখানে সবাই বাচ্চাটির অদ্ভুত বডি দেখে ভয়ে পালাচ্ছে সেখানে বাচ্চাটির মা তাকে পরম মমতায় আদর করছেন।

মধ্যবয়স্ক একজন মহিলা। নাম আশালতা।
বয়স ২৮-৩০ হবে হয়তো। পাশের একটা ছোট্ট গ্রামে বাস করে সে।
গতকাল সন্ধ্যায় একজন ভদ্রলোক তাকে এই হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখান থেকে এই তথ্য গুলো পাওয়া যায়। লোকটা সম্ভবত মহিলাটির হ্যাজবেন্ড। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যার পরে থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি।

একটি চেয়ার টেনে মহিলাটির সামনে বসল ডা: শাম্মী। খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করে মহিলাটিকে। স্বাভাবিক মানুষের মতোই তার চেহেরা। চোখের নিছে কালো দাগ ও চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। দূশ্চিন্তা ও রাত জাগার কারনে এমনটা হয়ে থাকে।

নিরবতা ভেঙ্গে ডা: শাম্মী জিজ্ঞেস করলো;
আপনার শরীর এখন কেমন আছে মিসেস আশালতা। মিসেস আশালতা কোনো জবাব দিলেন না। কেবল ঢ্যাবঢ্যাব নয়নে ডা: শম্মীর দিকে কিছুক্ষন থাকিয়ে রইলেন। তারপর আবার আপন কাজে মনোযোগ দিলেন।

ডা: শাম্মী আবার জিজ্ঞেস করলেন:
আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি মিসেস আশালতা।

এবার ডা: শাম্মীর দিকে বেশ রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকালেন মিসেস আশালতা। যেন ডা: শাম্মীর উপস্থিতিতে তিনি বিরক্তবোধ করছেন। কোনো কথা না বলে বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে অন্যদিকে ঘুরে গেলেন মিসেস আশালতা।

ডা: শাম্মী হাল ছাড়ার পাত্রী নয়। তিনি এর শেষ দেখেই ছাড়বেন। আজ অনেকটা আশাহত হয়ে তিনি ফিরে আসলেন।
রাতে ডা: শাম্মী কিছু মেডিকেল সাইন্সের বই নিয়ে পড়লেন। তাতে এই বাচ্চাটির জম্মের কোনো ক্লু পাওয়া যায় কিনা। কিন্তু কিছুই ফেলেন না। অবশেষে বিরক্ত হয়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন।

সকালে হাসপাতালে গিয়ে ডা: শাম্মী দেখেন,
গতকালের মতো আজকেও একই ঘটনা ঘটেছে। একজন সেবিকা বাকরূদ্ধ অবস্থায় প্যারালাইজড হয়ে পড়ে আছেন। কতোটা ভয় পেলে একজন মানুষ বাকশক্তি হারিয়ে প্যারালাইজড হয় তা ডা: শাম্মী অনুধাবন করতে পারছেন। ভয়ে ইতোমধ্যে সকল ডাক্তার ও সেবিকারা ঐ ফ্লোর ত্যাগ করেছেন। ডা: শাম্মী বুঝতে পারলেন।

এটা কোনো সাধারন ঘটনা নয় এটা নিশ্চয় কোনো অশুভ শক্তির কাজ। কিন্তু সে একজন ডাক্তার। বিজ্ঞানের এই যুগে এসে, তিনি এসব বিশ্বাস করতে পারছেন না।
প্রায় ২৫ বছর আগে ডা: শাম্মীর বাবা এই পাঁচ তলা বিশিষ্ট হাসপাতালটি তৈরী করেছেন। এই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও রক্ষণাবেক্ষন করেন তিনি। তাই তিনি চাইলেও এই হাসপাতাল ছেড়ে যেতে পারছেন না।

সেদিন রাতে ঐ হাসপাতালে একটা বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চা ও মাকে তাদের পাশের রুমে রাখা হয়।
সেদিন রাতে ঐ হাসপাতালে একটি ভয়ংকর ঘটনা ঘটে যা দেখার জন্য ডা: শাম্মী মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না।

গতরাতে সদ্য জম্ম নেওয়া ঐ বাচ্চাটিকে কারা যেন নির্মম ভাবে হত্যা করে। শরীরের হাড় ব্যাতীত বিন্দুমাত্র মাংস নেই। শরীরের সমস্ত রক্তমাংস কেউ যেন খুবলে খুবলে খেয়ে ফেলছে।
কেবল মেঝেতে কয়েকটা হাড্ডি পড়ে আছে।

ঘটনার আকস্মিকতায় ডা: শাম্মী প্রচন্ড ভয় ফেলেন। বাচ্চটিকে কি নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। আর বাচ্চাটির মা সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে।
জিব্বাটা কেটে ফেলা হয়েছে। চোখ দুটো পাওয়া যায় মেঝেতে। বেষ্ট দুটো খুঁজে পাওয়া যায় নি। আর নিম্নাঙ্গ এতোটাই ক্ষত বিক্ষত হয়েছে যে তার অস্তিত্ব নির্ণয় করা যায় নি।

এমনকি শরীরে অসংখ্য আঘাতের দাগ পাওয়া যায়।
বাচ্চাটি ও তার মায়ের মৃত্যুতে ডা: শাম্মী মর্মাহত।

তাছাড়া পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায়, মহিলাটি একাধিক লোক দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে। কিন্তু যারা তাকে ধর্ষণ করেছে তারা কোনো সাধারন মানুষ নয় ভিন্ন কোনো প্রাণী।


পর্ব ২

বাচ্চাটি ও তার মায়ের মৃত্যুতে ডা: শাম্মী মর্মাহত।
তাছাড়া পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায়, মহিলাটি একাধিক লোক দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে। কিন্তু যারা তাকে ধর্ষণ করেছে তারা কোনো সাধারন মানুষ নয় ভিন্ন কোনো প্রাণী।

সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে হয়তো তার মায়ের এমন নির্মম মৃত্যু হয়েছে।
এ পর্যায়ে ভীষন ভেঙ্গে পড়লেন ডা: শাম্মী।

বাধ্য হয়ে তিনি হাসপাতালটি বর্তমানে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের সকল রোগীকে অন্যত্রে ট্রান্সফার করা হয়।
এবার ডা: শাম্মী শতভাগ নিশ্চিত হয়ে যান যে ঐ জমজঙ্গ বাচ্চাটি ও তার মা এ রহস্যের পিছনে দায়ী। তাই রহস্য উন্মোচন করতে ডা: শাম্মী একজন গোয়েন্দার সাহায্য নেন।

সোহেল রানা একজন সুপুরুষ। একটি গোয়েন্দা গ্রুপের প্রধান কর্মকর্তা। বয়স ৩৫ ছুঁইছুঁই। ডা: শাম্মী সোহেল রানা কে শুরু থেকে সব ঘটনা খুলে বললেন।
এই মূহুর্তে ডা: শাম্মী ও সোহেল রানা বসে আছেন মিসেস আশালতার সামনে।

সোহেল রানা সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন:
মিসেস আশালতা আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।

রানার কথা শুনে মিসেস আশালতা ভয়ার্ত চোখে তার দিকে তাকালেন। তারপর হঠাৎ চুপসে গেলেন। মিসেস আশালতা এই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর কারো কখনো একটি কথাও বলেনি। কেবল মাঝে মাঝে তার বাচ্চা ছেলেটার সাথে একা একাই কথা বলতো।
সোহেল রানা ভারী কণ্ঠে বললেন: দেখুন মিসেস, আপনি যদি আমাদের সাথে না বলেন তাহলে আমরা আপনাকে এই হাসপাতাল থেকে বের করে দিতে বাধ্য হবো।

রানার কথা শুনে তার কোলে থাকা বাচ্চা ছেলেটা তার মাকে প্রশ্ন করে: আচ্ছা আম্মু মানুষ গুলো এতো খারাপ কেনো? আমাদের বের করে দিলে আমরা থাকবো কোথায়!
মাত্র তিনদিনের একটি বাচ্চা মুখ ফুটে কথা বলে। তার কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ল ডা: শাম্মী। বাচ্চাটার কথা শুনে গোয়েন্দা রানাও অনেকটা বিস্মিত হলো।
মিসেস আশালতা এবার মুখ খুললেন: দয়া করে আপনারা আমাকে কোনো প্রশ্ন করবেন না। এতে আমার সাথে আপনাদেরও বিপদ হতে পারে। আমি একটু অসুস্থ। সুস্থ হলেই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাবো।

জবাবে ডা: শাম্মী বলল, দেখুন আমরা আপনাকে সাহায্য করতে চাই। আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি অশুভ কোনো শক্তি দ্ধারা অভিশপ্ত। আর আপনার এই জমজঙ্গ বাচ্চাটি সম্পর্কে জানতে চাই। নিশ্চয় এটা কোনো স্বাভাবিক বাচ্চা না। আপনি যদি আমাদের কিছু না বলেন তাহলে এভাবে প্রতিদিন অনেকগুলো মানুষের জীবন বিপন্ন হবে। অবশেষে তাদের জোরাজুরিতে মিসেস আশালতা বলতে রাজি হলেন।

তবে একটা শর্ত জুড়ে দিলেন। তিনি এখন যে কথা গুলো বলবেন এজন্য হয়তো তার মৃত্যুও হতে পারে। তাই তার যদি কিছু হয়ে যায়, তাহলে ডা: শাম্মী যেন তার বাচ্চাটিকে মানুষ করে।
ডা: শাম্মী কিছু না ভেবেই তার শর্তে রাজি হয়ে গেলেন। মিসেস আশালতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে কি যেন ভাবলেন।

তারপর একনাগাড়ে বলতে শুরু করলেন:
ঘটনাটি প্রায় এক বছর আগের। আমার বিয়ের আট বছর পার হয়ে গেলো। যখন আমার কোনো সন্তান হয়নি তখন এ নিয়ে আমার স্বামীর সাথে সবসময় মনমালিন্য সৃষ্টি হয়। আমার শ্বাশুড়ি প্রতিদিন কটু কথা শুনাতো। অপয়া, অলক্ষ্মী বলে গালি দিতো।
প্রথম প্রথম প্রথম আমার মন খারাপ হতো।

পরে সব কটু কথা শুনতে শুনতে এটা আমার অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেলো। আমি সব সহ্য করে নিতাম। আমার প্রতিবাদ করার কোনো ভাষা ছিলো না। কারণ আমি নিঃসন্তান।
মা ডাক শোনার ব্যর্থতা আমার জীবনটাকে দূর্বিষ করে তোলে। একটা সন্তানের আশায় সবসময় ব্যাকুল ছিলাম। বিভিন্ন মাজারে মানত করলাম। ফকির বাবাদের কাছে ঝাড় ফুক করালাম।

অনেক ডাক্তার দেখায়েছি কোনো লাভ হয় নি। তাই বিরক্ত হয়ে আমার স্বামী সন্তানের আশা ছেড়ে দিলেন। তবে ডাক্তার বলেছে আমার মা হওয়াতে কোনো সমস্যা নেই। হয়তো উপরওয়ালার ইচ্ছা তাই আমি নিঃসন্তান।
দিনরাত তার কাছে হাত তুলে চোখের অশ্রুজল বিসর্জন দিতাম।

আমার শ্বাশুড়ি আমার স্বামীকে আবার বিয়ে দিতে চাই। কিন্তু তিনি রাজি হয় না। আমার স্বামী ছিলো পরিবারের একমাত্র সন্তান। তাই বংশের প্রদীপ রক্ষা করতে বাবা মায়ের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে আমার স্বামী অবশেষে বিয়ে করতে রাজি হয়। কিন্তু বিষয়টা আমার কাছে গোপন রাখা হলো।
আমার স্বামী আমাকে অনেক ভালোবাসতো।

হঠাৎ কেমন যেন মানুষটা বদলে গেলো। প্রত্যহ আমার সাথে বাজে ব্যবহার করে। আমার প্রতিটি কাজে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করে।
(খুব মনোযোগ দিয়ে তার কথা গুলো শুনছেন ডা: শাম্মী ও সোহেল রানা)

আমার স্বামীর বিরক্তির মাত্রা বাড়িয়ে দিতো আমার শ্বাশুড়ি। প্রতিদিন তার জ্বলন্ত হৃদয়ে পেট্রোল ঢালতো। আমার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই তারা চাই না আমি এই বাড়িতে থাকি। আমাকে এই বাড়ি থেকে বিতাড়িত করতে চাইলে আমি এর প্রতিবাদ জানাই। তাদের কে আইনের ভয় দেখাই।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শ্বশুড় বাড়ির লোকেরা আমার উপর অত্যাচার শুরু করে। মাঝে মাঝে আমার হাত, পা বেধে ঘরে বন্দি করে মেরে রক্তাক্ত করতো তারা। আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হতো আমার শরীর। অথচ আমার স্বামী কিছুই বলতো না। সব মুখ বুজে সহ্য করতো। আসলে তিনিও চান আমি যেন এই বাড়িতে না থাকি।

একটা মেয়ে কতোটা অসহায়, যখন নিজের স্বামী তার বিরুদ্ধে থাকে। আমি খুব ভালো করেই বুঝে গেছি, আমার আর এই বাড়িতে থাকা হবে না। বাবার বাড়ি গিয়ে যে আশ্রয় নিবো সেই পথটাও খোলা নেই। বাবা মা গত (মৃত) হওয়ার পর ছোট ভাই তার বউকে নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমায়।
একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ি আমি।

এখন মৃত্যুই আমার কাছে একমাত্র পথ। আমার এতো যত্নে গড়া সোনার সংসার টা ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবলেই বুক ফেটে কান্না আসে। সেদিন রাতে স্বামীর পা জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করি। ভালোবাসার মানুষটা কিভাবে এতো পর হয়ে গেলো। সেদিন রাতেই কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম।
বাড়িতে আত্মহত্যা করে আমার স্বামীকে বিপদে ফেলতে চাই না। পৃথিবীর সব মেয়ের ভিতর হয়তো এই সুপ্ত বাসনাটা লুকিয়ে থাকে। নিজের জীবন বিপন্ন হবে তবুও স্বামীর ভাগ কাউকে দিবে না। একদমই না। আমিও ঠিক তেমনটাই চাই।

গ্রামের পাশের ছোট্ট নদীটি পার হয়ে চলে গেলাম ঐ পাশের জঙ্গলের দিকে। নির্জন জঙ্গল যেখানে সাধারনত মানুষজন ভয়ে যায় না। উদ্দেশ্য, আমি মারা গেলে কেউ যেন আমার লাশটাও খুঁজে না পাই। নদীতে নেমে স্নান করে নিলাম। বিষন্নতা কাটিয়ে মনটা একটু প্রফুল্ল হয়ে উঠল।

আস্তে আস্তে হারিয়ে গেলাম ঘন জঙ্গলের ভিতর। চারিদিকে শুনশান নিরবতা। পায়ের নিচে শুকনো পাতার মচমচ শব্দ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে ২-১ টা ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকছে। ঘুটঘুটে অন্ধকার, হঠাৎ একটা শিকড়ের সাথে উষ্টা খেয়ে পড়ে গেলাম আমি। উঠে দাঁড়াতেই দেখলাম কিছু একটা সামনে দিয়ে দৌঁড়ে চলে গেলো।
কোনো বন্য প্রাণী হবে হয়তো। একটা শীতল বাতাসে গাঁ ছমছম করে উঠল। অন্য কেউ হলে হয়তো রাতের বেলায় এই সময়ে এখানে থাকলে ভয়ে কুঁকড়ে যেতো।

মরণ করে যে বরণ করে নেই সে মৃত্যুকে পরোয়া করে না। আমি এখন মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি। একটু সামনে হাঁটতে টের পেলাম কেউ যেন আমার পিছু পিছু আসছে। তার পায়ের শব্দে পিছন ফিরে তাকালাম, দেখি সামনে দিয়ে সাদা কিছু একটা দৌড়ে চলে গেলো। অন্ধকারে স্পষ্ট বুঝা যায় না, তবে দেহের আকৃতি অনেকটা ছাগল বা ভেড়ার মতো। কৌতুহলী হয়ে আমিও প্রাণীটির পিছু নিলাম।

লোক মুখে শোনা যায়: কেউ যদি রাতের বেলায় এই জঙ্গলের পথ ধরে হাঁটে তাহলে তাকে আর কোনদিন খুঁজে পাওয়া যায় না।
তাই এদিকটাই মানুষজন একেবারেই আসে না।

দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে যখন ক্লান্ত হয়ে পিছন ফিরে তাকালাম তখন আমি ঐ প্রাণীটির মুখোমুখি হয়ে গেলাম।
প্রচন্ড ভয়ে আমার শরীরে কম্পন সৃষ্টি হয়।

এমন প্রানী আমি জীবনে দেখিনি। প্রাণীটিকে এতোটাই ভয়ংকর লাগছিলো যে আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারি নি।
মূহুর্তেই সেন্সলেন্স হয়ে পড়ে গেলাম।

কিছুক্ষন থেমে আশালতা বললো;
প্রাণীটির দেহের গঠন অনেকটা ছাগল বা ভেড়ার দেহের মতো। পশম গুলো ধবধবে সাদা। চোখ দুটো টকটকে লাল। মাথায় লম্বা একটা শিং।
কিন্তু মুখটা দেখতে অবিকল মানুষের মতো।


পর্ব ৩

কিছুক্ষন থেমে আশালতা বললো;
প্রাণীটির দেহের গঠন অনেকটা ছাগল বা ভেড়ার দেহের মতো। পশম গুলো ধবধবে সাদা। চোখ দুটো টকটকে লাল। মাথায় লম্বা একটা শিং।
কিন্তু মুখটা দেখতে অবিকল মানুষের মতো।
(তার কথা শুনে সোহেল রানা ও ডা: শাম্মী স্তব্ধ হয়ে গেলেন)

সকালে নিজেকে আবিষ্কার করলাম একটা মাটির কুটিরে বন্দী অবস্থায়। কথা বলার কোনো বাকশক্তি ছিলো না। শত চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারলাম না।
রাতের ঐ প্রাণীটি আমার সামনে আসলো। আমি ভয়ে চিৎকার দিতে চেষ্টা করি কিন্তু পারি নি।
প্রাণীটি জোরে হুংকার ছাড়ে এবং হঠাৎ প্রাণী থেকে একটা ভয়ংকর দানবে পরিনত হয়।

আমাকে স্পর্শ করতেই সে পরিপূর্ণ একজন মানুষ হয়ে যায়।
বলে রাখা ভালো; এই প্রাণীর একটা বিশেষত্ব হচ্ছে, সে মানুষের স্পর্শ পেলে যে কোনো প্রাণীর রূপ ধারণ করতে পারে।

সে শান্ত গলায় আমাকে অভয় দিয়ে বলল:
ভয় পেও না আমাকে। যদি আমার কথা শুনো তাহলে আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না। আমি কেবল তোমার সাহায্য চাই।
আমি বললাম: কে আপনি? আর আমি আপনাকে কি ভাবে সাহায্য করবো।

আমি একটু অবাক হলাম, কিছুক্ষন আগেও আমি চিৎকার করেও কথা বলতে পারি নি।
তাহলে এখন কিভাবে কথা বললাম।
সে বলল: আমি একজন ভ্যাম্পয়ার ছিলাম।

রক্ত পান করতে পৃথিবীতে আসতাম। প্রতি পূর্ণিমা রাতে কুমারী মেয়ের রক্ত পান করে আমি শক্তি অর্জন করি। কিন্তু এক পূর্ণিমা রাতে কামনার ছলে আমি একজন কুমারী মেয়ের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়ে যায়। যার ফলে আমার ভ্যাম্পায়ার শক্তি নষ্ট হয়ে যায় এবং অভিশপ্ত হয়ে এই প্রাণীতে পরিনত হই।

এখন আমি তোমার পেটে অবস্থান করে এই প্রাণী থেকে মানুষ হয়ে দুনিয়াতে আসতে চাই। কিন্তু তোমার পেটে মানুষের একটা ভ্রূণ আছে, যার কারণে আমি সরাসরি তোমার পেটে আসতে পারছি না।

এই কথা বলেই সে জোর করে আমার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। তার বীর্যে থাকা শুক্রাণু আমার শরীরে থাকা ডিম্বাণু তে ক্রিয়া করে পেটের ভিতর একটি ভ্যাম্পায়ার ভ্রূণ সৃষ্টি করে। মানুষের শুক্রাণু ও ভ্যাম্পায়ার শুক্রাণু আমার শরীরে একই ডিম্বাণুতে ক্রিয়া করে।

যারে ফলে আমার বাচ্চাটি জমজঙ্গ হয়।
ডা: শাম্মী স্তম্ভিত হয়ে বললেন: কিন্তু দুইটা শুক্রাণু তো কখনো একটা ডিম্বাণুতে কাজ করতে পারে না। এটা কেমনে সম্ভব।

মিসেস আশলতা জবাব দিলেন: দুইটা মানুষের শুক্রাণু হয়তো একটা ডিম্বাণুতে কাজ করতে পারে না। কিন্তু এখানে দুইটা আলাদা আলাদা শুক্রাণু। সো কাজ কাজ করতেই পারে। না হলে তো বাচ্চাটি জমজঙ্গ হওয়ার তো কোনো কারণ দেখছি না। আর তা যদি না হয় তাহলে সে ইচ্ছেকৃত ভাবে আমার মেয়েকে তার সাথে সংযুক্ত করে রেখেছে। কারণ সে মানুষ স্পর্শ ছাড়া নিজের আকৃতি পরিবর্তন করতে পারে না।

সোহেল রানা বলল: আপনার কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে। কিন্তু আপনি কিভাবে এতো সিউর হলেন যে মেয়েটি আপনার আর ছেলেটি ভ্যাম্পায়ার। যদি সে মেয়ে রূপে পৃথিবীতে আসে।

মিসেস আশালতা : কারণ আমি জানি,
সে বলেছিলো, আমার গর্ভে থাকা মেয়েটি যখন কুমারী হবে তখন সে তার রক্ত পান করে পুনরায় ভ্যাম্পায়ার শক্তি লাভ করবে।
এবং পৃথিবীতে চালাবে এক ধ্বংসলীলা।

ডা: শাম্মী বললেন: কিন্তু পাশের রুমের ঐ বাচ্চাটিকে ও তার মাকে নির্মম ভাবে হত্যা করলো কেনো? তাছাড়া নার্স গুলোর এই অবস্থা করলো কে?
মিসেস আশালতা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন: ঐ দানব আকৃতির প্রাণীটি প্রতি রাতে এখানে আসে। আর নার্স গুলো তাকে দেখে ভয়ে চিৎকার দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে।

তাই সে নার্স গুলোর মুখের ভিতর হাত ডুকিয়ে তাদের কণ্ঠনালী ছিঁড়ে ফেলে এবং যাতে পালাতে না পারে এজন্য তাদের পায়ের শক্তি নষ্ট করে দেয়।
আর দানবটির একমাত্র খাদ্য হচ্ছে মানুষ ও বিভিন্ন প্রাণীর শরীরের নরম মাংস পিন্ড।
পান করে মানুষের রক্ত।

যার ফলে গতকাল সদ্য জন্ম নেওয়া বাচ্চা টিকে সে তার শিকার বানিয়েছে। এজন্য বাচ্চাটির মা তাকে বাঁধা দেয় এবং সে তার মাকেও নির্মম ভাবে হত্যা করে। শুধু তাই নয় তার শরীরের বিভিন্ন অংশ সে খেয়ে ফেলে।

এই দানবটা আমাকেও আক্রমণ করে। একদিন কেবল তার থেকে আমি পালাতে চেষ্টা করি এতে সে রাগান্বিত হয়ে আমার বেষ্ট দুটো ছিঁড়ে নেই। রক্তাক্ত হয়ে তিনদিন আমার সেন্স ছিলো না। বলেই শাড়ীর আঁচলটা সরিয়ে দিলেন। ক্ষত বিক্ষত বুকটা দেখে চোখ বুজে নেই রানা। বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে থাকে ডা: শাম্মী। ভূত দেখার মতো চমকে উঠলেন তিনি। হাউ স্ট্রেঞ্জ, কিভাবে পসিবল।

সোহেল রানা জিজ্ঞাস করলেন:
এই দানবটার হাত থেকে আমরা কিভাবে মুক্তি পাবো। তা সম্পর্কে কিছু জানো?

মিসেস আশালতা বললেন: এই দানবটির থেকে মুক্তির পথ আমার জানা নেই। তবে কোনো মন্ত্র তন্ত্র জানা পুরোহিত এই সম্পর্কে বলতে পারবেন। তবে এইটুকু বলে রাখি,
এটি শুধু দানব না অভিশপ্ত ভ্যাম্পায়ার। তাছাড়া এই দানবটি যে কোনো মূহুর্তে সবরকম ভয়ংকর প্রাণীর রূপ নিতে পারে।
এবং সেটা খুব শক্তিশালী।

আমি জানি, আজ রাতেই হয়তো আমার শেষ রাত। এই পিচাশ দানবটা আমায় ছাড়বে না। আপনারা একটু সাবধানে থাকবেন।
আর পারলে এই শয়তান দানবটার হাত থেকে আমার বাচ্চাটাকে রক্ষা করবেন।
গোয়েন্দা সোহেল রানা মিসেস আশালতাকে অভয় দিয়ে বললেন: আপনি কোনো ভয় পাবেন না মিসেস। আজকেই হবে এই শয়তানটার শেষ দিন। আমি একজন পুরোহিত ডাকার ব্যবস্থা করছি।

ডা: শাম্মীও হাল ছাড়ার পাত্রী নয়। অদম্য কৌতূহল নিয়ে আজকেই ঐ শয়তান দানবটার মুখোমুখি হবে সে।
পাশের গ্রাম থেকে একজন বয়স্ক পুরোহিত কে ডেকে আনা হলো। মনে হচ্ছে অনেক সাধনা তপস্যা করেন তিনি। চুল গুলো জট পাকানো। পড়নে একটা লাল পতুয়া ও ধুতি।

রোগা শরীর, সাধনা ও তপস্যায় ব্রত থাকায় শুকনো চেহেরা। কিন্তু মিসেস আশালতা এই লোকটিকে উপর ভরসা করতে পারছেন না।
তাই ডা: শাম্মী ও সোহেল রানা কে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে বললেন। ডা: শাম্মী পুরোহিত কে পূর্বেকার সকল ঘটনা খুলে বলেন।
এতে পুরোহিত অনেকটা ঘাবড়ে যান।

সন্ধ্যা হতেই আকাশটা কেমন যেন মেঘলা হয়ে গেলো। ডা: শাম্মীর চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ।
সন্ধ্যার পরেই ঝুম বৃষ্টি নামল। সাথে প্রচন্ড বজ্রপাত।

গোয়েন্দা সোহেল রানা কে সন্ধ্যার পর থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। একটি নির্দিষ্ট কক্ষে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করছেন ডা: শাম্মী।
দূর থেকে পুরোহিতের জোর গলায় মন্ত্র পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। পুরো হাসপাতালে শুনশান নিরবতা। রাত বাড়ার সাথে সাথেই বৃষ্টির মাত্রা আরো বেড়ে গেলো। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় রুমটা আলোকিত হচ্ছে। বাজ পড়ার প্রচন্ড শব্দে ভয়ে পেয়ে ঘামছে ডা: শাম্মী। এতো সাহসী মহিলা আজ ভয়ে কাবু!

তখন মধ্যরাত, হঠাৎ একঝাঁক বাদুর ছেঁচাতে ছেঁচাতে হাসপাতালে প্রবেশ করলো। আর একটু পরেই পুরোহিতের মন্ত্র পড়া বন্ধ হয়ে গেলো। ডা: শাম্মী অধের্য্য হয়ে ঐ রুমের দিকে পা বাড়ালেন। জানালা দিয়ে উঁকি দিতেই থরথর করে কাঁপতে লাগলো ডা: শাম্মী। গলা শুকিয়ে চৌচির। তার পুরো শরীরে যেন কারেন্ট শক খেলো।
দেখলেন: ঐ ছোট্ট বাচ্চাটি পুরোহিতের বুকের উপর বসে তার কলিজাটা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে।

মিসেস আশালতার শরীরটা বিভৎস অবস্থায় পড়ে আছে মেঝেতে। ক্ষত বিক্ষত শরীর।
বডি থেকে মাথাটা সম্পূর্ণ আলাদা।

পর্ব ৪

দেখলেন: ঐ ছোট্ট বাচ্চাটি পুরোহিতের বুকের উপর বসে তার কলিজাটা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে।
মিসেস আশালতার শরীরটা বিভৎস অবস্থায় পড়ে আছে মেঝেতে। ক্ষত বিক্ষত শরীর।
বডি থেকে মাথাটা সম্পূর্ণ আলাদা।

সকালে ডা: শাম্মী নিজেকে আবিষ্কার করলেন বাসায়। সারারাত তার কোনো সেন্স ছিলো না। কিন্তু বাসায় আসলেন কি করে সেটাই বুঝতে পারছেন না। তার স্বামীকে জিজ্ঞেস করতেই বলেন, তিনি গতকাল রাতে বাসায় না আসায় তিনি তাকে খুঁজতে হাসপাতালে যান এবং সেখান থেকে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে আসেন। ডা: শাম্মীর মুখের উপর একটা নখের আঁচর স্পষ্ট। কেউ যেন ঘামচি দিয়েছে এবং নখ গুলো মাংসের ভিতর গেথে গেছে।

ডা: শাম্মী গতকালের ঘটনা দেখার পর এখনো ভয় কাটে নি। এদিকে গোয়েন্দা সোহেল রানাকেও সেদিন সন্ধ্যার পর থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ডা: শাম্মী বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তাহলে কি ঐ শয়তান দানব টা সোহেল রানাকে মেরে ফেলেছে।

এবার তিনি নিজেকে নিয়ে প্রচন্ড ভয় পাচ্ছেন। এখন যদি শয়তান দানবটা তার উপর আক্রমণ করে।

কলিংবেল এর শব্দে নিচে নেমে দরজা খুলল ডা: শাম্মী। ইয়া লম্বা একজন লোক সাদা জুব্বা পড়ে দাড়িয়ে আছে। চেহেরা অনেক ফর্সা। মনে হচ্ছে কোনো ভিনদেশী লোক।
চুল গুলো সাদা। লম্বা একটা জুব্বা পরিহিত।
গলায় বেশ কিছু রূপালি হার।

ডা: শাম্মী বললেন: আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না?
ভদ্রলোক জবাব দিলেন: আমি মিশর থেকে এসেছি। গোয়েন্দা সোহেল রানা আমাকে আসতে বলেছে। আমি একজন ফাদার।
যারা জ্বিন, ভূত ও খারাপ আত্না নিয়ে গবেষণা করেন।

ডা: শাম্মী তাকে সাদরে গ্রহণ করেন।
প্রশ্ন করেন: গতকাল থেকে গোয়েন্দা সোহেল রানাকে খুঁজে পাচ্ছি না। আপনি তার সম্পর্কে কিছু জানেন।

ফাদার জবাব দিলেন: গোয়েন্দা সোহেল রানা আর বেঁচে নেই। ঐ দানবটা তাকে মেরে বন্দী করে রেখেছে। এখন শয়তান ভ্যাম্পায়ারের নেক্সট টার্গেট হচ্ছো তুমি। তাই
তাকে শেষ করার জন্য একজন সাহসী মানুষের খুঁজছি আমি।

ডা: শাম্মী জবাব দিলেন: ঐ শয়তান ভ্যাম্পায়ারের সাথে কি আমি মোকাবেলা করতে পারবো। আর এই শয়তানকে ধ্বংস করার কোনো পথ কি আপনার জানা আছে।
ফাদার তাকে অভয় দিয়ে বললেন: অবশ্যই জানা আছে। সেটা বলার জন্যই তো আমি এখানে এসেছি।
ডা: শাম্মী উত্তেজিত হয়ে বললেন: দয়া করে আমাকে শয়তানটাকে মারার পথ টা বলে দিন।

ফাদার কিছুক্ষণ ধ্যান মগ্ন ছিলেন;
তারপর বললেন: প্রথমে মনে রাখ, এটা ছিলো ভ্যাম্পায়ার তারপর শয়তান মিসেস আশালতার রক্ত পান ভয়ংকর দানবে রূপ নেয়। আর ঐ বাচ্চা মেয়েটিকে ব্যবহার করে তার শক্তি দ্বিগুন করে তোলে। তাই একে মারতে হলে বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করতে হবে।

খুব মনোযোগ দিয়ে শুনবে:
প্রথমে তুমি নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। আর ঐ ভ্যাম্পায়ারকে যা করতে হবে তা সূর্যের আলো থাকতেই করতে হবে। কারণ ভ্যাম্পায়ারা সূর্যের আলো সহ্য করতে পারে না।

তুমি হয়তো জানো, মিসেস আশালতা এতোদিন বেঁচে ছিলো। কিন্তু তা সম্পূর্ণটাই ভুল। তোমরা যাকে সচোক্ষে দেখতে সে আসল আশালতা নয়। এটা ভ্যাম্পায়ার দানবটার আশালতার নকল রূপ ধরে ছিলো।

এবং তোমাদের যা বলা হয়েছে তা সবগুলোই মিথ্যে। মিসেস আশলতা কে এই দানবটা ঐ জঙ্গলে মেরে মাটিতে পুতে রেখেছে এবং মিসেস আশালতার দেহের ভিতর লুকিয়ে রেখেছে তার প্রাণ। আর সে মানুষ রূপে হাসপাতালে এসে নিজের স্বীকার ধরে।
এই হাসপাতালের প্রতিটি হত্যাকান্ড সে নিজেই করেছে।

আশালতার শরীরের রক্ত পান করে সে রূপ নেয় ভয়ংকর দানবে। তার পেটে থাকা ভ্রূন থেকে জম্ম নেয় বাচ্চাটি। তবে এটা সত্যি যে, সে মানুষের স্পর্শ ছাড়া নিজের রূপ বদলাতে পারে না।

তাই সে বাচ্চা মেয়েটাকে নিজের সাথে সংযুক্ত করে এমন একটা অদ্ভুত জমজঙ্গ রূপ নিয়েছে যেন তাকে দেখলে সবাই তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। এবং সে খুব সহজে তার স্বীকার ধরতে পারে।

তাই এখন তোমার প্রথম কাজ হলো, দানবটার হাত থেকে বাচ্চা মেয়েটিকে উদ্ধার করা। আর সেটা খুব সহজ। ঐ জমজঙ্গ বাচ্চাটিকে যদি তুমি সূর্যের আলোতে নিয়ে আসো তাহলে ঐ শয়তান ভ্যাম্পায়ারটা তার শরীর থেকে বিছিন্ন হয়ে যাবে। এবং সে যখন মানুষের স্পর্শ হারাবে তখন ধীরে ধীরে তার শক্তি কমে যাবে।
তারপর তোমাকে ঐ জঙ্গলে গিয়ে মিসেস আশালতার কবরটা খুঁজে বের করতে হবে।
ডা: শাম্মী বললেন: আচ্ছা এতো বড় জঙ্গলে আমি কিভাবে তার খবরটা খুঁজে পাবো?

ফাদার জবাব দিলেন: আমি তোমাকে একটা স্পেশাল রিং দিচ্ছি। যেটা দিয়ে খুব সহজে তুমি কবরটা খুঁজে পাবে। এই রিং হাতে পড়ে থাকলে সে তোমাকে পথ দেখাবে। রিং এর ভিতর থাকা পাথরটা যেখানে এসে টকটকে লাল বর্ণ ধারণ করবে সেখানেই আশেপাশে খুঁজলেই তার কবরটা তুমি পেয়ে যাবে।
এটা ঠিক কবর না, একটা মাটির কুটির।

সেখানেই একটা কপিনে মিসেস আশালতা মৃত দেহ আছে। তবে সেখানে অনেক গুলা কপিন থাকতে পারে। আসল কপিনটা তোমায় খুঁজে বের করতে হবে। যার ভিতরে রয়েছে ঐ শয়তানটার প্রাণ।

বিভিন্ন প্রাণী তোমাকে ভয় দেখাবে। কিন্তু তুমি যদি ভয় পাও তাহলে আর সেখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারবে না।
কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখবে;
১/ অনেক গুলোর কপিনের মধ্যে আশালতার কপিনটা খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য।

তাই যেই কপিনের দেহটাই অনেক গুলা আঘাতের দাগ থাকবে সেটাই হচ্ছে আসল কপিন। কারণ তার শরীরে আগে থেকে নির্যাতনের দাগ ছিলো। এটাই আসল মৃত দেহ। আর তার দেহের হৃদপিন্ডে লুকিয়ে আছে শয়তান টার প্রাণ।
মিসেস আশালতার বুক ছিঁড়ে হৃদপিন্ডটা কেটে নিয়ে আসতে হবে।

তার জন্য তোমাকে রূপার একটা চাকু ব্যবহার করতে হবে। যেটা দিয়ে খুব সহজে তুমি কাজটা করতে পারবে। তবে সাবধান, যদি ভুল কোনো কপিনে ভুল কোনো লাশে আঘাত করো তাহলে তার হাতেই তোমার মৃত্যু হবে।

২/ ঐ কুটিরের ভিতর অন্ধকার থাকতে পারে। তাই কিছু দিয়াশলাই ও মোমবাতি নিয়ে যাবে। কারণ যদি টর্চলাইট নিয়ে যাও তাহলে শয়তানটা সেটা নষ্ট করে দিতে পারে।

আর তুমি সেটা আবার জ্বালাতে পারবে না।
কিন্তু মোমবাতি নিভে গেলেও তুমি সেটা আবার জ্বালাতে পারবে। তবে তার জন্য তুমি ১০ সেকেন্ড সময় পাবে। ১০ সেকেন্ড পার হয়ে গেলে কিন্তু ঐ শয়তান টা তোমাকে আক্রমণ করতে পারে।

৩/ জঙ্গলে যাওয়ার পূর্বে কিছু মোষ বা ভেড়া নিয়ে যেতে হবে। তাদের শরীরে কিছু বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে দিলে ভেড়া গুলোর রক্ত বিষাক্ত হয়ে যাবে। তারপর যখন ঐ শয়তান দানবটা ভেড়া গুলোর রক্ত পান করবে তখন তার শরীরটা বিষাক্ত হয়ে সে দূর্বল হয়ে পড়বে। এতে ভ্যাম্পায়ার দানবটা তোমার বড় কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।

৪/ মিসেস আশালতা মারা গেলেও তার দেহটা এখনো অক্ষত অবস্থায় আছে। কারণ তার ভিতরে শয়তানটার প্রাণ আছে। একটা কথা ভুলা যাবে না। মিসেস আশালতার হৃদপিন্ড কাটার পূর্বে তার স্তন থেকে কিছু দুগ্ধ সংগ্রহ করতে হবে। এই দুগ্ধ যদি বাচ্চা মেয়েটিকে পান করালে সে একজন সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষ হয়ে উঠবে।

আর এ সকল কাজ তোমাকে সূর্য ডোবার আগেই শেষ করতে হবে। সূর্য ডুবে গেলে কিন্তু তোমার জন্য কাজটা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে।
আর সবশেষে আশালতার হৃদপিন্ডটা আনার পর যে রুমে পুরোহিত মারা গেছে ঐ রুমে তার দেহের সাথে হৃদপিন্ড টা পুড়িয়ে ফেললে শয়তান দানবটা মারা যাবে এবং হাসপাতাল টা অভিশপ্ত থেকে মুক্তি লাভ করবে।

একটা কথা মনে রাখবে, ঐ জঙ্গলে তোমার পদে পদে বিপদ হতে পারে। তবে সাহস হারাবে না।
সব সময় স্রষ্টাকে স্মরণ করবে, তিনিই তোমাকে রক্ষা করবেন।
আর তোমাকে একটা লকেট দিয়ে যাচ্ছি যেটা তোমাকে বিপদে পড়লে সাহায্য করবে।

একথা বলেই ফাদার একটা চাকু, লকেট ও রিংটা দিয়ে চলে গেলেন।
দরজার বাহিরে যেতেই তিনি হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেলেন।

পর্ব ৫

ডা: শাম্মী খুব মনোযোগ দিয়ে ফাদারের কথা গুলো শ্রবণ করলেন। আজকের দিনের ভিতর সকল জিনিজ পত্র যোগাড় করে তাকে জঙ্গলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।

বাচ্চা মেয়েটিকে উদ্ধার করতে ডা: শাম্মী চলে যান হাসপাতালে। সব খুঁজেও তিনি বাচ্চাটিকে খুঁজে পেলেন না। ঐ রুমে কেবল পুরোহিতের ক্ষত বিক্ষত লাশটা পড়ে আছে কিন্তু মিসেস আশালতার লাশটা নেই। হঠাৎ বাথরুমের ভিতর শব্দ পেয়ে হচকচিয়ে বাথরুমের দরজা খুলেন। দেখেন, ঐ জমজঙ্গ বাচ্চাটি একটা বিড়াল কে মেরে তার মাংস গুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে। মুখের ভিতর রয়েছে বিড়ালের নাড়ি ভুড়ি। এই দৃশ্য দেখার পর গা গুলিয়ে বমি আসার উপক্রম ডা: শাম্মীর।

কোনো মতে নিজেকে ঠিক রেখে বাচ্চাটিকে নিয়ে বাড়ি চলে আসেন তিনি। ফাদারের কথা মতো বাচ্চাটিকে নিয়ে ছাদে চলে যান। সূর্যের আলো গায়ে পড়তেই বাচ্চাটি চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। মূহুর্তেই জমজঙ্গ বাচ্চাটি রূপ নেয় একটি ফুটফুটে মেয়েতে।

ডা: শাম্মী একটা সস্তির নিশ্বাস ফেললেন।

রাতে কিছু একটার শব্দে হঠাৎ ডা: শাম্মীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম থেকে উঠতেই দেখলেন, তিনি শূন্যের উপর ভাসছেন। বিছানা থেকে প্রায় তিন ফিট উপরে। ভয়ে পেয়ে তিনি একটা চিৎকার দেন এবং ধপাস করে বিছানায় পড়ে যান। কপাল দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম বের হচ্ছে। বুঝা যাচ্ছে তিনি বেশ ভয় ফেলেন। হুঁশ ফিরতেই খেয়াল করেন বিছানায় তার স্বামী ও সন্তান নেই। অথচ তারা একসাথে ঘুমিয়ে ছিলো। ঘাটের নিচে শব্দ পেয়ে তিনি সেখানে তাকান, একটা চিৎকার দিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে দিলেন।

ঐ জমজঙ্গ বাচ্চাটি তার ছেলের পা দুটো খেয়ে ফেলছে। চিৎকার করে তার স্বামীকে খুঁজছেন। কিন্তু কোথাও খুঁজে পেলেন না।

অবশেষে বাথরুমে গিয়ে দেখেন, তার স্বামী অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। শরীরে এক টুকরো কাপড় নেই। সম্পূর্ণ ন্যাকেট(উলঙ্গ)। কি বিভৎস চেহেরা। পেনিস দিয়ে অনবরত রক্ত পড়ছে। ভয়ে আঁতকে উঠলেন তিনি। ডা: শাম্মী প্রথমে ঐ জমজঙ্গ বাচ্চাটিকে জব্দ করলেন। তারপর স্বামী সন্তানকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলেন। ডা: শাম্মী প্রচন্ড ভয় পেলেও নিজেকে ঠিক রেখে সময়মতো স্বামী সন্তানকে উদ্ধার করেছেন নচেৎ তাদের বাঁচানো সম্ভব হতো না। বেশ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি।

আরো একটি অপারেশন এ তাকে সাকসেসফুল হতে হবে। সকাল হতেই তিনি ঐ জঙ্গলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেন। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় এই শয়তান দানবটা পুরো শহরের মানুষ মেরে ফেলবে।

তাই তিনি প্রতিজ্ঞা করেন, যতই বাধা বিপত্তি আসুক, হয় মরবে না হয় মারবে!
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নৌকায় চড়ে জঙ্গলে চলে গেলেন।

ভেড়া গুলোকে আগে থেকেই তৈরী করে রেখেছেন। হাতে পড়ে নিলেন রিংটা। গলায় হার এবং হাতে রূপার চাকুটা। যার মাঝখানে একটা ক্রস চিহ্ন আঁকা। কিছুদূর পরপর তিনি ভেড়া গুলো জঙ্গলে ছেড়ে দিলেন। হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর এলেন কিন্তু এখনো ঐ কবরটার হদিস মিলল না। অনেকটা ক্লান্ত হয়ে গেলেন তিনি।

জঙ্গলটা এতোই ঘন যে এখানে দিনের বেলায়ও সূর্যের আলো পড়ে না। মাটিতে বসে হাতের দিকে তাকাতেই দেখলেন হাতের রিংটা জ্বলজ্বল করে জ্বলছে।
তারমানে আশেপাশে কোথাও কবরটা। একটু সামনে এগুতেই রিংটা টকটকে বর্ণ ধারণ করেছে। এবার শিউর হলেন, এইখানেই মিসেস আশালতার কবরটা পাওয়া যাবে।

একটু এদিক সেদিক তাকাতেই দেখলেন,
সামনে একটা কুটির। যার সবটাই লাল রঙের কাপড় দ্ধারা আবৃত।
ডা: শাম্মী ঐ লাল কুটিরে প্রবেশ করেন। তিনি ঐ কুটিরে প্রবেশ করতেই ভিতর থেকে কিছু বাদুর উড়ে গেলো। ডা: শাম্মী চারদিক ঘুরতে লাগলেন। কুটিরের মাঝখানে দাঁড়াতে হঠাৎ মাটি ভেদ করে ৭টি দরজা খুলে গেলো।

ডা: শাম্মী চিন্তায় পড়ে গেলেন। ফাদার তো কোনো দরজার কথা বলেন নাই। যদি তিনি ভুল কোনো দরজায় ডুকে বিপদে পড়েন।
ডা: শাম্মী সাহস করে মাঝখানের দরজা দিয়ে ডুকে পড়েন। ডুকার সাথে সাথেই মাটির দরজাটা মিলিয়ে যায়। চারদিক অন্ধকার হয়ে গেলো। যেন এটা কোনো কবরস্থান। ডা: শাম্মী একটা মোমবাতি জ্বালালেন। সামনে তাকাতে দেখলেন, সামনে একটা ছোট কূপ।

মানে পুকুর। ডা: শাম্মী হতবম্ব হয়ে গেলেন।
এই কবরের ভিতর পুকুর আসলো কৈত্থকে।

একটু খেয়াল করে দেখলেন, পুকুরে কোনো পানি নেই। সব টকটকে লাল রক্ত। এই পুকুরের অপর প্রান্তে রয়েছে অনেকগুলো কপিন। সেখানে রয়েছে মিসেস আশালতার মৃতদেহ। কিন্তু তিনি এই পুকুর টা পাড়ি দিবেন কেমনে?

তিনি পরীক্ষা করার জন্য এই পুকুরে একটা আঙুল ডুবালেন। সাথে সাথেই একটা চিৎকার দিয়ে আঙুল টা তুলে নিলেন।
তার আঙুল থেকে সব মাংস খসে পড়েছে।

নিজের আঙুলের হাড্ডি দেখে থরথর কাঁপতে লাগলেন ডা: শাম্মী। রক্ত গুলো এতোটাই ঠান্ডা যে এখানে যদি কেউ নামে তাহলে সে ১০ সেকেন্ডের মধ্যে বরফ হয়ে যাবে। তার হাত কাঁপুনি দিয়ে মোমবাতিটা পুকুরে পড়ে গেলো।

পুকুরে পড়তেই মোমবাতি টা গলে গেলো।
পুকুরের রক্ত গুলো শুধু ঠান্ডা না, এখানে এমন কিছু পোকা আছে, যেগুলা পুকুরে কিছু পড়লেই সেটা খেয়ে ফেলে। ডা: শাম্মী নিজের আঙুল দেখে তা উপলব্ধি করেন।

ডা: শাম্মী ভয় পেয়ে কাঁদতে লাগলেন। তাহলে কি তিনি ভুল কোনো দরজায় ডুকে পড়লেন।
হঠাৎ কিছু একটা যেন তার ঘাড়ে থাবা মারে এবং সেখান থেকে টপটপ করে রক্ত পড়তে থাকে। ফাদারের কথা মনে পড়তেই, তিনি আবার একটি মোমবাতি জ্বালালেন। প্রচন্ড ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলেন তিনি। মোমবাতি টা সামনে রেখে একমনে স্রষ্টাকে স্মরণ করেন।

তার শরীর থেকে রক্ত পড়ে পুকুরের মাঝখানে একটা সরু পথ তৈরী হয়ে গেলো।
অপরপ্রান্ত থেকে কেউ যেন বললো, অনেকটা সোহেল রানার কণ্ঠে, ভয় পেও না।
আমি আছি তোমার সাথে। এই পথ অনুসরণ করে এ পাড়ে চলে আসো।

পথটা এতোটাই সরু যে একসাথে দুই পা ফেলা যাবে না। ভয়ে ভয়ে তিনি হাঁটতে শুরু করলেন। মাঝ পুকুরে আসতেই একটা দমকা বাতাসে মোমবাতি টা নিভে যায়। আর অমনি ডা: শাম্মী পা ফসকে পড়ে যায় পুকুরে। পুকুরে পড়ার ঠিক আগ মূহুর্তে কিছু একটা এসে যেন তাকে বাতাসের গতিতে ওপারে নিয়ে যায়। অন্ধকারে তার চেহেরা স্পষ্ট বুঝা যায় না। আবার একটা মোমবাতি জ্বালালেন,
সবগুলো কপিন খুঁজতে লাগলেন। প্রত্যেক মৃতদেহের পোশাক খুলে দেখেন কিন্তু কোথাও আসল মৃত দেহটা খুঁজে পেলেন না।
তাহলে কি ফাদার তাকে মিথ্যে বলল।

বিরক্ত হয়ে ডা: শাম্মী যখন ভুল একটা দেহে আঘাত করতে যাবে, ঠিক সেই মূহুর্তে আগের মতো একটা আওয়াজ আসলো;
মিসেস আশালতার মৃতদেহ টা মাটির নিচে।

পিছনে তাকাতেই একটা অবয়ব হাওয়াই মিলিয়ে গেলো।
মাটি খুঁড়ে মিসেস আশালতার মৃতদেহটা বের করলেন। রূপার চাকু দিয়ে আঘাত করতেই বুকটা দুইভাগে ভাগ হয়ে গেলো। চোখ মেলে তাকালেন মিসেস আশালতার মৃতদেহ টা।

ভয়ে দূরে ছিটকে পড়লেন ডা: শাম্মী। থরথর করে কাঁপছেন তিনি। জোরে জোরে নিশ্বাস পড়ছে তার। ডা: শাম্মী একটা ভুলে করে ফেললেন। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে তিনি মিসেস আশালতার স্তন থেকে দুগ্ধ সংগ্রহ করেন নি। ডা: শাম্মী সাহস হারালেন না।

মিসেস আশালতার বুকের ভিতর চাকু ডুকিয়ে হৃদপিন্ডটা কেটে নিলেন। কিন্তু ভুল বশত হৃদপিন্ড টা চাকুর আঘাত লেগে কেটে যায়। কিছুক্ষনের মধ্যেই কুটিরের ভিতর একটা তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পুকুরের সকল রক্ত উপছে পড়ে ডা: শাম্মী গায়ে। রক্তে মাখামাখি হয়ে যায় তার শরীর।

কিন্তু তার কিছুই হলো না। সে অবয়ব টা কিভাবে জানি তাকে রক্ষা করেণ। তিনি বুঝতে পারলেন, এটা গোয়েন্দা সোহেল রানার মৃত আত্মা। যা তাকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছে।
হৃদপিন্ডটা নিয়ে তিনি বাহিরে আসলেন।

তখন প্রায়ই সন্ধ্যা হতে লাগল। কিন্তু তিনি জঙ্গল থেকে বের হওয়ার পথ হারিয়ে ফেললেন। এদিকে সূর্য টাও ডুবতে লাগল।
ডা: শাম্মী বুঝতে পারছেন না, ঠিক কতো সময় তিনি কুটিরের মধ্যে ছিলেন। মনে হচ্ছে অনেক বছর পর তিনি অন্যজগত থেকে বেরিয়ে আসলেন। তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে আঁধার নেমে আসল। জঙ্গল থেকে বের হবার জন্য তিনি দ্বিগবিদিক ছুটতে লাগলেন।

অন্ধকার হওয়াতে ভাবলেন আজকের রাতটা এখানেই কাটিয়ে দিবেন। প্রচন্ড বাতাসে গাছে গুলো কাঁপছে। চারদিকে বিভিন্ন প্রাণীর অদ্ভুত শব্দ শোনা যাচ্ছে।
হঠাৎ যেন সবকিছু আগের মতো শান্ত হয়ে গেলো। ডা: শাম্মী ভয়ে ভয়ে সামনে এগিয়ে চলছেন। একটি মোমবাতি জ্বালালেন, সামনে তাকাতেই বিশাল একটা মোটা গাছ ধপাস করে তার সামনে পড়ল। গাছের একটা ডাল ডা: শাম্মীর মাথায় আঘাত করলো। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন।

একটু পর ঐ গাছ ভেদ করে একটা মানুষ বেরুলো যার কোনো মাথা নেই। মাথার স্থান থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ে ভেসে যাচ্ছে পুরো শরীর। অনুমান করে বুঝলেন এটা গোয়েন্দা সোহেল রানার বডি।

ভয় পেয়ে তিনি পিছন ফিরে তাকাতেই যেন কারেন্ট শখ খেলেন, প্রচন্ড ভয়ে মুখ দিয়ে কোন শব্দ বেরুলো না। ছাগলের মতো দেখতে এমন হাজার হাজার প্রাণী তাকে চারদিকে থেকে ঘিরে ধরেছে। যাদের চোখ দুটো টকটকে লাল।

পশম গুলো সাদা, মাথায় লম্বা একটা শিং।
কিন্তু মুখটা দেখতে অবিকল মানুষের মতো।

আশ্চার্যের বিষয় হলো, ঐ প্রাণী গুলো মধ্যে দুটো মুখ ছিলো; গোয়েন্দা সোহেল রানা ও মিসেস আশালতার। ডা: শাম্মী বাঁচার আশা ছেড়ে দিলেন। প্রাণপনে পাগলের মতো ছুটছেন সামনের দিকে। তার পিছুপিছু গড়গড় শব্দ করে আসছে প্রাণী গুলো। যেন তাকে ধরতে পারলে ছিড়ে ছিড়ে খাবে। দৌড়াতে দৌড়াতে প্রায় জঙ্গলের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যান তিনি। জঙ্গলের শেষ প্রান্তে কোনো পথ নেই। সামনে একটা লেক।

লেকের পাড়ে ছোট্ট একটা নৌকা বাঁধা। পিছন ফিরে তাকাতেই, ঐ প্রাণী গুলো তার দিকে হিংস্র বাঘের মতো ছুটে আসছে। তিনি নৌকায় গিয়ে উঠলেন। তিনি খুব ভালো করে বুঝে গেছেন, তার বাঁচার কোনো পথ খোলা নেই। মৃত্যুই তার একমাত্র পথ। নৌকা নিয়ে একটু দূরে সরে আসলেন। কিছুদূর আসতেই তীরে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাণী থেকে কিছু প্রাণী লেকের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং তার দিকে আসতে থাকেন।

ডা: শাম্মী ভাবলেন, আমি মরে গেলেও আপসোস নেই কিন্তু এই শয়তান দানবটা যদি বেঁচে থাকে তাহলে নষ্ট হবে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ।
তাই তিনি নিজের শাড়িটা খুলে ফেললেন।

মিসেস আশালতার হৃদপিন্ডে প্যাঁচিয়ে নিলেন শাড়িটা। যেখানে আছে শয়তান দানবটার প্রাণ।
প্রাণী গুলো নৌকার কাছে আসতেই, তিনি কাপড়ে আগুন ধরিয়ে দেন। দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠল। নৌকার উপর যেন একটা বোমা বিস্ফারণ হলো। আর মূহুর্তের ভিতর ঐ ভয়ংকর প্রাণী গুলো হাওয়াই মিলিয়ে গেলো।

পরের দিন ডা: শাম্মীকে মুমুর্ষ অবস্থায় সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়। জ্ঞান ফিরার পর তিনি আজ পর্যন্ত একটা কথাও বলেন নি। এর ঠিক কিছুদিন পর ডা: শাম্মী ঐ হাসপাতালের একটি রুমে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেণ।

অন্যদিকে ঐ জমজঙ্গ মেয়েটি আর কোনোদিন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে না। সারাজীবন যেমন আছে তেমনই থাকবে।

লেখা – মিরাজ খন্দকার

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “জমজঙ্গ – রোমাঞ্চকর রহস্যময় গল্প বাংলা” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – জেরি ভার্সেস টম (১ম খণ্ড) – রোমাঞ্চকর রহস্য গোয়েন্দা গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *