জেরি ভার্সেস টম (১ম খণ্ড) – রোমাঞ্চকর রহস্য গোয়েন্দা গল্প

জেরি ভার্সেস টম (১ম খণ্ড) – রোমাঞ্চকর রহস্য গোয়েন্দা গল্প: হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গেছে দুজনে। শুকনো মাথার ওপর চড়চড় আওয়াজ হচ্ছে। মেহরিনের গা ছমছম করছে। সন্ধ্যা হতে আর বেশি বাকি নেই।


পর্ব ১

“আমরা আরেকটু ওয়েট করি মেহরিন? আমার মনে হয় মাহমুদ কোন জরুরি কাজে আটকা পড়েছে। ওর তো এত দেরী হওয়ার কথা না?” মেহরিনকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললেন ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এন এস আই) এর প্রধান মি.ইরফান আহমেদ।

~ “নো স্যার! আই কান্ট ওয়েট, আই হ্যাভ টু গো জাস্ট টু থার্টি, ইট ইজ ওয়ান এন্ড হাফ আলরেডি। সো আই থিংক উই শুড স্টার্ট দ্যা ডিসকাশন, মে আই স্যার?” বিরক্ত কন্ঠে জবাব দিলো মেহরিন।
ইরফান আহমেদ হাত ইশারায় ওকে শুরু করতে বললেন।

মেহরিন উঠে প্রজেক্টরের সামনে গেলো। ভয়ে বুক কাঁপছে ওর, ধুপধুপ টাইপ একধরনের আওয়াজ হচ্ছে। মাথার ভেতর একটা প্রশ্নই ঘুরপাক পাচ্ছে, প্ল্যানটা সবার পছন্দ হবে তো? গত পনেরো দিন নাওয়াখাওয়া বাদ দিয়ে প্ল্যানটা নিয়ে খেটেছে সে, কি করে প্ল্যানটাকে বেস্ট থেকে বেস্ট করা যায় সেই চেষ্টাই করেছে, এর থেকে বেস্ট আর হতেই পারে না।

তবুও খুঁতখুঁত লাগছে, ইরফান সাহেবের চোখে অতি সূক্ষ্ম ভুলও সহজেই ধরা পড়ে, খুবই তীক্ষ্ণ এবং ধারালো চোখ উনার, খুব সামান্য থেকে সামান্য জিনিস নিখুঁত ভাবে চোখে পড়ে। মনে মনে দোয়া পড়ছে মেহরিন, যাতে ওর প্ল্যানটা সবার পছন্দ হয়, নাহলে এত কষ্ট পরিশ্রম সব বৃথা যাবে, পণ্ডশ্রম হয়ে যাবে।

বড় একটা দম নিয়ে শুরু করলো ও,
~ “স্যার! .ছবির যেই লোকটাকে দেখা যাচ্ছে ইনাকে আমরা সবাই চিনি। পেশায় একজন সফটওয়্যার ইইঞ্জিনিয়ার, নাম ইনায়াত খাঁ! একজন অ্যানার্কিস্ট ও বটে। দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা উনার মেইন উদ্দেশ্য। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বোমা ব্লাস্ট, এমনকি ইন্টারন্যাশনাল টেরোরিজম গ্যাং গুলোর সাথেও জড়িত। গত দুইবছর যাবত এনএসআই এজেন্টরা তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।

দুইবছর আগে রাজশাহীতে বোমা হামলার পরে ইনায়াত খাঁ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়, তারপর থেকেই তার আর কোন হদিস পাওয়া যায় নি। রিসেন্টলি, ওদের গ্যাং থেকে একটা ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর পুরো দেশ আতংকিত। ভিডিওটিতে ওরা যে কোন একটা জাতীয় দিবসে বড়ধরনের কোন ব্লাস্ট ঘটানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। তারপর থেকেই সারা দেশ হন্যে হয়ে ইনায়াত খাঁ কে খুঁজছে।
~ “কাম টু দ্যা এক্সেক্ট পয়েন্ট মেহরিন!” কথার মাঝখানে বললেন ইরফান আহমেদ।

মেহরিন সামনে থাকা টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে কপালের ঘাম মুছলো। এসির ঠান্ডা বাতাসেও দরদর করে ঘামছে ও।
গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে ভয়ে, ভয়টা দ্বিগুন হলো ইরফান আহমেদের গলা শুনে। অতিরিক্ত কথা বলে উনাকে বিরক্ত করছে মেহরিন, ভাবতেই ওর গায়ে কাঁটা দিলো। এইতথ্যগুলো তো সবাই জানে, আসলে কি দিয়ে শুরু করবে বুঝতে পারছিলো না ও।

প্রতিবারই ইরফান সাহেবের সামনে দাঁড়ালে ওর এমন অবস্থা হয়, তবে এইসমস্যা টা শুধু ওর না। বাকিদেরও একই অবস্থা, এনএসআই সাহসী শক্তিশালী সব এজেন্টেরা উনার সামনে এলে ভয়ে চুপসে যায়। কথা বলতে হাটু কাঁপে।

কেবল একজন ছাড়া, তিনি মি.মাহমুদ সিদ্দিকি! মেহরিনের চোখের বালি!
এনএসআই এর সবচেয়ে দক্ষ, সাহসী এবং বুদ্ধিমান এজেন্টে তিনি। সুদর্শন, সুপুরুষ!
এনএসআই এর সুন্দরী রমনীরা উনাকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় ছটফট করেন, উনার সাথে কথা বলার আঁকুপাঁকু করেন, কথাবলার সময় উনি যখন মুচকি হাসেন তখন অনেকেরই শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়! তবে দুঃখের বিষয় হলো উনি অফিসিয়ালি একজনের সাথে রিলেশনে আছেন। যাইহোক উনি এখনো মিটিংয়ে এসে পৌঁছান নি এই হচ্ছে শেষ কথা।

ইরফান সাহেব এতক্ষনে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। আতংকে ফ্যাকাসে হয়ে গেলো মেহরিনের মুখ, হাতপাঁ কাঁপছ, বুক ধড়ফড়ানি বেড়ে গেলো।

ইরফান আহমেদ সামনে থাকা গ্লাসটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিলেন। ঢকঢক করে পুরো পানিটা খেলো মেহরিন। তবুও ঘামছে সে!
~ “রিলাক্স, মেহরিন টেইক আ ডিপ ব্রেথ, ইউ ফিল বেটার!” সান্ত্বনা সুরে কথা গুলো বললো ইরফান আহমেদ।

অবশেষে ভালোভাবে প্ল্যানটা এক্সপ্লেইন করলো মেহরিন। মিটিংয়ের একেবারে শেষ পর্যায়ে ইরফান সাহেব সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “ইজ দেয়ার এনি অবজেকশন?”
কেউ কোন অবজেকশন করলো না। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো মেহরিন, যাক এবার তাহলে প্ল্যানটা ভালোভাবে এক্সিকিউট করা যাবে।
~ “অবজেকশন স্যার!” দরজায় দাঁড়িয়ে হাসিমুখে কথাটা বললো মাহমুদ।

ইরফান সাহেব সহ বাকিরা সবাই চমকে উঠে দরজার দিকে তাকালো। দরজায় দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছে মাহমুদ। একমিনিট দুই সেকেন্ডে সাততলা সিঁড়ি ভেঙে এসেছে সে, চুলগুলো এলোমেলো, পরনের সাদাকালো ইস্ত্রিকরা চেকশার্ট কাধের এবং বুকের কাছে ভিজে আছে। ভেতরা বসা অধিকাংশ মেয়েলি চোখগুলো মুগ্ধ চোখে ওকে দেখছে, কেবল মেহরিন ছাড়া! আগুন ঝরছে তার চোখ দিয়ে।

মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো মেহরিনের। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সে। তিক্ত গলায় ইরফান সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলল, “এক্সকিউজমি স্যার! উনি তো প্ল্যানটা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আমি প্ল্যানটা এক্সপ্লেইন করার সময় উনি ছিলেনই না। তারওপর দেরী করে এসেছেন। এখন আবার অবজেকশন দিচ্ছেন! দিস ইজ নট ফেয়ার স্যার?”

মাহমুদ ওর কথার জবাবে ইরফান সাহেবকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আমি কি ভেতরে এসে আমার অবজেকশন এর কজগুলো এক্সপ্লেইন করতে পারি স্যার?”
ইরফান সাহেব সহজ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললেন,
~ “নো ইউ কান্ট! ইউ আর হাফ এন আওয়ার লেইট। তোমার যদি কিছু বলার থাকে তুমি বাইরে থেকে বলতে পারো।”

মেহরিনের চোখ দুটো চিকচিক করে উঠলো আনন্দে। মাহমুদ কে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না এর চেয়ে আনন্দের খবর আর কি হতে পারে? আজকে দিনটা ওর দারূণ কাটবে। আচ্ছামত অপমানিত হোক মাহমুদ! আহা! শান্তি।

মাহমুদ দমলো না। মেহরিনের দিকে একপলক তাকিয়ে বলল, “প্ল্যানটা খুবই রিস্কি স্যার! আমার মনে হয় না ইনায়াত খাঁর মত চতুর এবং দুর্ধর্ষ টেরোরিস্ট এমন ফালতু একটা টোপ গিলবে। এতে আমাদের এজেন্টদের রিস্কে পড়ার সম্ভাবনাই বরং বেশি।”

ইরফান সাহেব সম্মতির সুরে বললেন,
~ “আমার কাছেও কিন্তু রিস্কি মনে হয়েছে এই প্ল্যানটা। তুমি না বললেও আমি আরেকটু ভাবতাম, যদিও আমাদের পেশাটাই রিস্কি তবুও খুবই ইজিলি তো আমরা কারো কাছে ধরা দিতে পারি না তাই না?”
~ “এক্সেক্টলি স্যার!” হাসিমুখে বললো মাহমুদ।

ধারালো হয়ে উঠলো মেহরিনের চেহারা। রাগে অপমানে লাল হয়ে গেছে, ওর পনেরো দিনের গাধার মত পরিশ্রম কিনা ফালতু বলে প্রমানিত হতে যাচ্ছে এই গাধাটার জন্য। অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো মাহমুদের দিকে, সেই দৃষ্টির অর্থ “আই ওন্ট স্পেয়ার ইউ!” মাহমুদ সম্পূর্ণ উপেক্ষা করলো। দুষ্টু হাসি দিয়ে শার্টের কলারটা ঘাড়ের কাছে উঠিয়ে দিলো, ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চুলের গোড়ায় আঙুল চালালো সে।

~ ” স্যার, আমি জানতে চাই কোন দিক থেকে উনার প্ল্যানটাকে রিস্কি মনে হচ্ছে? ইজ দেয়ার ইনি জেন্যুইন কজ? নাকি ব্যক্তিগত শত্রুতা মেটাবার জন্য উনি আমার প্ল্যানটা এক্সিকিউট করতে দিতে চাইছেন না?” ক্ষ্যাপা কন্ঠে বললো মেহরিন।

মাহমুদ এবারেও হাসলো। সামান্যতে হাইপার হয়ে যাওয়াটা মেহরিনের খুব বাজে একটা অভ্যেস। খুবই সেন্সিটিভ এবং আবেগপ্রবণ মেয়ে!
বুদ্ধি হাটুর নিচে বলে মাহমুদের ধারণা, কথায় কথায় রাগ করা, ওকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজে ফেঁসে যাওয়া মেহরিনের জন্য কমন ব্যাপার।
বাকিদের কাছে গ্ল্যামারাস, বুদ্ধিমতী দারূন পার্সোনালিটি সম্পন্ন একজন এনএসআই এজেন্ট হিসেবে মেহরিন পরিচিত।

মাহমুদের মত সেলিব্রেটি না হলেও অনেক অবিবাহিত সিনিয়র অফিসারই মনে মনে মেহরিনকে পছন্দ করে, কিন্তু সাহস করে বলে উঠতে পারে না। ওর মাথা গরমের ব্যপারটা নিয়ে সবাই ভয়ে থাকে। অপদস্থও কম হতে হয় না ওকে, এই একটা জায়গাতেই বারবার ধরা খায় মেহরিন।

মাহমুদ ওকে আরেকটু ক্ষ্যাপানোর জন্য বেশ লম্বা চওড়া ভাষণ দিলো। সে বলল, “আ’ম সরি স্যার! মিস মেহরিন শারাফাত ব্যক্তিগত শত্রুতা বলতে ঠিক কি বোঝাতে চাইছেন তা আমার কাছে ক্লিয়ার না। আমি একজন এনএসআই এজেন্ট, আমার কাছে সবার আগে আমার আমার পেশা, আমার দায়িত্ব। উনার সাথে পেশাগত দিক থেকে আমার মতের অমিল হতেই পারে তাই বলে সেটা ব্যক্তিগত আক্রোশ মনে করার কোন কারন দেখছি না।

উনি বোধহয় কোন মনে মনে কারো বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশ পুষে রেখেছেন তাই এসব বলছেন। যাই হোক, এগেইন সরি স্যার! এক্সট্রিমলি সরি! অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে সময় নষ্ট করার জন্য। আমি এখানে আসার আগে গাড়িতে বসে ভিডিও কলে উনার পুরো প্ল্যানের বর্ণনা শুনেছি এবং দেখেছি। আমার কাছে কোনভাবেই প্ল্যানটাকে ইফেক্টিভ বলে মনে হয় নি।

প্রথমত…
ওর কথা শেষ হওয়ার আগেই মেহরিন রাগে ক্ষোভে ঝড়ের গতিতে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো। ইরফান সাহেবের কি বলেন তার অপেক্ষাও পর্যন্ত করলো না। গটগট করে বেরিয়ে গেলো।
~ “হাউ রুড এ্যাটিটিউড দেখেছেন স্যার? সো ম্যানারলেস বিহেভিয়ার! উনি আপনার পারমিশন ছাড়া বেরোনোর সাহস পায় কি করে? মিস মেহরিন কিন্তু এটা অন্যায় করেছে স্যার। ডিসিপ্লিন ভঙ্গ করেছে, আই থিংক সি শুড বি পানিশড!” চোখেমুখে দুষ্টু চিন্তাভাবনা নিয়ে ইরফান আহমেদকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলল মাহমুদ।

~ “পানিশমেন্টতো ওকে পেতেই হবে! এবং সেটা হবে খুবই ডেঞ্জারাস! , তুমি আপাতত তোমার অবজেকশন গুলো আমাকে মেইল করে দাও, পরের মিটিংয়ে আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করবো।”

বৈঠক ছেড়ে উঠে যেতে যেতে বললেন ইরফান আহমেদ। মুখ থমথমে, মেহরিনের আসন্ন বিপদ কেউ ঠেকাতে পারবে না সেই সম্পর্কে সবাই নিশ্চিত হয়ে গেলো। সেই সাথে আগুনে ঘি ঢেলেছে মাহমুদ!
উনি চলে যেতেই মাহমুদ গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে নিজের ডেস্কের দিকে পা বাড়ালো। ইন্টারকমে ফোন করে খবর নিলো মেহরিন অফিস থেকে বেরিয়ে গেছে কি না। সিকিউরিটি গার্ড জানালো বেরোয় নি।

~ “তারমানে অফিসেই আছে মেহরিন?” বিড়বিড় করে বলল মাহমুদ।” গুড! ভেরি গুড! উইশ হার আ ভেরি ব্যাড লাক! . আপাতত নিজের কাজে মন দাও তুমি মি.মাহমুদ। নিশ্চিত থাকো ইরফান টাকলা তোমাকেই ইনায়াত খাঁর ফাইল ধরিয়ে দেবে। সো বি রেডি।”
মেহরিন সোহাগের চেম্বারে টেবিলের ওপর মাথা এলিয়ে বসে আছে। অপমানে ওর মাথা হেট হয়ে গেছে। এভাবে অপদস্থ করা হলো ওকে?

সোহাগ ভেতরে ঢুকেই বলল, “তোমার মিটিং ছেড়ে চলে আসা একদমই উচিৎ হয় নি। বস কিন্তু খুব মাইন্ড করেছেন, মুড দেখে মনে হলো বেশ কড়াসড়া পানিশমেন্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন তোমাকে!
টেবিল থেকে মাথা উঠালো মেহরিন, চোখমুখ বিষন্ন!
কাঁদো কাদো গলায় বলল, “আমি রিজাইন করবো ভাবছি। রোজ রোজ আমাকে ছোট করা হয়! আমার কোন প্ল্যানই যখন তাদের পছন্দ নয় তাহলে আমাকে রাখা হয়েছে কিসের জন্য? বাদ দিয়ে দিক।”

মেহরিনের কাঁদোকাঁদো চেহারা দেখে মায়া হলো সোহাগের। ইশস! এই মেয়েটার আসলেই কোন দরকার ছিলো না এত রিস্কি একটা প্রফেশনে নিজেকে জড়ানোর তারওপর পান থেকে চুন খসলেই ঝাড়ি,
কত মায়াবী মুখ! এই মুখটায় সারাক্ষণ হাসি আনন্দে ভরে থাকবার কথা!
এই মুখে দুশ্চিন্তা কোনভাবেই মানা যায় না।

কিন্তু ও জানে মেহরিন মুখে যাই বলুক না কেন চাকরীটা সে কোনভাবেই ছাড়বে না। এই প্রফেশনে যারা জড়ায় ভালোবেসে জড়ায়, ছাড়তে পারে না। প্রফেশন ছাড়ার চেয়ে মৃত্যু তাদের কাছে অনেক কম কষ্টের।

সোহাগ সান্ত্বনার সুরে বলল,
~ ” মন খারাপ করো না প্লিজ। আমি জানি তোমার খুব খারাপ লাগছে, খারাপ লাগারই কথা। এতকষ্ট করে একটা প্ল্যান তৈরী করার পর সেটা প্রপারলি এক্সিকিউট করতে না পারলে যে কারোরই কষ্ট লাগার কথা। কিন্তু কি করবে বলো? আমরা কেউই তো শান্তিতে নেই।

প্রতিদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হচ্ছে, অথচ দেখো বস কিন্তু সন্তুষ্ট না। আমাদের কথা বাদ দাও মাহমুদ ভাই? উনি কি না করেছেন এনএসআই এর জন্য? অথচ উনাকে পর্যন্ত বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখলেন দেরীতে আসার জন্য! উনার মত এতবড় একজন এজেন্টকেও স্পেয়ার করলেন না? সো তুমি প্লিজ মন খারাপ করো না। চলো আজকে আমরা দুজনে একসাথে লাঞ্চ করি?”

মেহরিন তিক্ত গলায় বলল, ” মাহমুদ সিদ্দিকির নাম আমার সামনে মুখে আনবে না। ওঁর জন্যই তো সব হয়েছে, সব দোষ ওঁর।”
এদিকে মাহমুদ তার ডেস্কে বসে গুনগুন করে গান গাইছে,
~ আহা! কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!


পর্ব ২

লিফটের দরজা খুলতেই এনা বেরিয়ে এলো। মাহমুদের গার্লফ্রেন্ড! এনএসআই এর নতুন এজেন্ট। দারূন বুদ্ধিমতী, সেই সাথে মারাত্মক সুন্দরী, স্মার্ট, দক্ষ এবং চৌকস! বেশিদিন হয় নি জয়েন করেছে, এরমধ্যেই সবার নজড় কেড়ে নিয়েছে ওর দক্ষতার দ্বারা। অসম্ভব পোটেন্সি আছে। একটানা না ঘুমিয়ে দুইতিনও কাজ করতে পারে!

তবে তার চালচলনে কিছুটা উচ্ছৃঙ্খল ভাব থাকায় কেউ কেউ ওকে খুব একটা পছন্দ করেন না। এই যেমন অন্যান্য সিনিয়রদের সামনে মাহমুদকে তুমি করে বলা, ওর সঙ্গে খোলামেলা চলাফেরা, মাঝে মাঝে ইন্ডিসেন্ট পোশাকআশাক পরে অফিসে চলে আসা তারওপর মাহমুদের সাথে রিলেশন থাকায় এক্সট্রা ভাব ধরা! ইত্যাদি ইত্যাদি, তবে ভাব ধরার ব্যাপারটা অবশ্য কেউ কেউ ওর প্রতি জেলাসি থেকে মনে করেন, বাকিসব দিক থেকে ও ভালো!

মেহরিনকে দেখে হাসিমুখে বলল,
~ “হাই! মেহরিন আপু..আপনি কি চলে যাচ্ছেন?”

এনার গলা শুনেই সামনে তাকালো মেহরিন। সাদা ফুলহাতা শার্ট ব্ল্যাক জিন্সের সাথে ইন করে পরেছে সে। কোমরে কালো বেল্ট বাধা। পায়ে হাই পেন্সিল হীল, লালচে বাদামী রংয়ের সিল্কি চুলগুলো কোমর ছুঁইছুঁই! চোখে হালকা রংয়ের দামী সানগ্লাস! দারুণ লাগছে এনাকে।

দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো মেহরিনের বুক থেকে। বিনয়ী গলায় বলল, “হ্যাঁ, বাসায় যাচ্ছি। তোমার ছুটি শেষ?”
~ “হ্যাঁ! গতকাল রাতেই ঢাকা ফিরেছি। আপনি এই সময় বাসায় যাচ্ছেন?
..এনি প্রবলেম?”

~ “তেমন কিছু না, একটু তাড়া আছে।”
~ “স্যার বকা দিয়েছেন?” হালকা হেসে জিজ্ঞেস করলো এনা।

প্রতিউত্তরে মলিন হাসি হাসলো মেহরিন। তাতেই এনার বুঝতে বাকি রইলো না কি ঘটেছে, মেহরিনের চেহারা দেখে মায়া হলো ওর। আহারে বেচারি! মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছেন। স্যার বকার সময় যদি একবার উনার মুখের দিকে তাকাতেন তাহলে নিশ্চই উনাকে কোন কঠিন কথা বলতে পারতে না।

লিফটে ঢুকে মেহরিন ওকে উদ্দেশ্য করে বলল,
~ “ওকে, ইঞ্জয় দ্যা ডিউটি এন্ড হ্যাভ আ নাইস ডে!”
মেহরিন লিফটে ভেতরে ঢুকে গেলো। এনাও নিজের কাজে চলে এলো।

পরেরদিন সকালে,
ইরফান সাহেবের রুমে বসে আছে মেহরিন।

ভয়ে ওর আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে, দশমিনিটের বেশি হয়ে গেছে ইরফান সাহেব কিছু বলছেন না।
উনার রুলস হচ্ছে, উনি যদি কাউকে উনার রুমে ডেকে পাঠান তখন মাথা নিচু করে বসে থাকা যাবে না। স্ট্রেইট উনার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে হবে।

মেহরিন এতক্ষণ যাবত উনার নাকের ওপর চশমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। উনার চশমাটা নামতে নামতে নাকের শেষ মাথায় এসেছে পড়েছে। নাকের ফুটোটা না বন্ধ করে দেয়, সেটা নিয়ে কিছুক্ষন ভাবলো মেহরিন। নাহ! ফুটো বন্ধ হয় নি, দিব্যি শ্বাস নিচ্ছে ইরফান সাহেব!
নাকের দিকে তাকানোর কারন হচ্ছে, সরাসরি উনার চোখের দিকে তাকালে ভয়ে হার্টফেল করবে সে, আরো একটা কারণ অবশ্য আছে সেটা আপাতত থাক।

ভনিতা না করে ইরফান আহমেদ বললেন,
~ “তোমার জন্য দুটো ব্যাড নিউজ আছে মেহরিন।”
চোখমুখ শুকিয়ে গেছে মেহরিনের। ভয়ে ঢোক গিললো সে।

ইরফান সাহেব নড়েচড়ে বসলেন। তারপর কোনরকম মায়া দরদ ছাড়াই বললেন,
~ “আগামী তিনমাস তোমাকে সব ধরনের ফিল্ড ওয়ার্ক থেকে ইলিমিনেট করা হয়েছে। তুমি এখন থেকে অফিসিয়াল কাজকর্ম গুলো দেখবে। অর্থাৎ এনএসআই এর কাউন্টার টেরোরিজম উইং এ আপাতত তোমার কাজ বন্ধ!

আর দ্বিতীয়ত, তোমার প্ল্যানটা মাত্রাতিরিক্ত রিস্কি এবং লেস ইফেক্টিভ হওয়ার আমরা সেটা ক্রস আউট করে দিয়েছি! .অ্যাম আই ক্লিয়ার?”
মেহরিনের মুখটা এতটুকুন হয়ে গেলো। ওর এত পরিশ্রমের ফল শেষে কি না এমন অপমানে? চোখে পানি চলে এলো তার! কান্না চেপে ধরে আসা কন্ঠে বলল,
~ “জ্বী স্যার!”

~ “দ্যান ইউ মে গো নাউ!”
সোহাগ বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো, মেহরিনকে মুখ কালো করে বেরোতে দেখে কাছে এগিয়ে গেলো। সব শুনে ওরও মন খারাপ হয়ে গেলো, মেহরিনকে এতবড় শাস্তি দেওয়ার ফলাফল স্বরূপ ইরফান সাহেবকে কিছু কঠিন গালাগাল দিলো সে।

খবরটা মাহমুদের কানে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগলো না। দুপুরবেলা রাতুলের সাথে ক্যান্টিনে যাচ্ছিলো সে। মেহরিনকে দেখে রাতুলকে উদ্দেশ্য করে করে বড় বড় করে বলল,
~ “মেহরিন শারাফাত্! এনএস আই এজেন্ট! সারাক্ষণ নিজেকে বুদ্ধিমান প্রমাণ করার জন্য উঠে পড়ে লেগে থাকেন। অথচ দেখো, কাজের বেলায় শুন্য। জিরো! বিগ জিরো! .বেচারী। কি লাভ এখানে পড়ে থেকে? সুন্দর ফিগার দিয়ে তো আর গোয়েন্দাগিরি চলে না! গোয়েন্দাগিরি করতে হলে ঘটে বুদ্ধি থাকা লাগে। ফাঁকা মাথা দিয়ে স্পাই হওয়া যায় না।

ঝরঝর করে কেঁদে দিলো মেহরিন। সোহাগ করূন চোখে মাহমুদের দিকে তাকালো। এর মানে, ‘প্লিজ স্যার! ‘ সরে গেলো মাহমুদ। যাওয়ার আগে অবশ্য আরেকটা পিঞ্চ মেরে গেলো মেহরিনের কান্না নিয়ে। বলল, “

~ “চিংড়ি মাছের কলিজা নিয়ে কেন যে মানুষজন স্পাই গিরি করতে আসে আমি বুঝি না। যোগ্যতা যখন নেই তখন সেটা স্বীকার করে নিলেই তো হয়? লজ্জার তো কিছু নেই! সবাইকে তো আল্লাহ সব জিনিস দেন না। নাহ্! কিছু হলেই চোখের পানির টাংকি চালু করে দিবে! আনএডুকেটেড লেডিজ!”

মেহরিনের হেঁচকি উঠে গেছে কাঁদতে কাঁদতে। এমনিতেই ওর মন মেজাজ ভালো নেই তারওপর মাহমুদের একেরপর এক গা জ্বালানো কথাবার্তা। বুক ফেটে কান্না আসছে ওর। নাকের জলে চোখের জলে একাকার। নাকের ডগা এবং চোখদুটো ফুলে লাল হয়ে গেছে, তাতে ওর ফর্সা মুখের দিকে তাকাতে অবশ্য বেশ আদুরে লাগছে! টিস্যু দিয়ে নাক মুছে সেই টিস্যুটা মাহমুদের বুক বরাবর ছুঁড়ে মারলো।
~ “ইয়াক!” অবস্থাবেগতিক দেখে দ্রুত সরে গেলো মাহমুদ।

ইনায়াত খাঁর মিশন যতদ্রুত সম্ভব এক্সিকিউট করতে হবে। ডিফেন্স মিনিট্রি থেকে চাপ আসছে। তাই আর বেশি সময় নষ্ট করতে চাইলেন না ইরফান আহমেদ।
বড় কোন মিশন শুরু করার আগে উনি ব্যক্তিগত ভাবে উনার বাসায় পার্টির আয়োজন করেন। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। উনার বাসায় সবাইকে ডেকে একটা লেট নাইট পার্টি থ্রো করেছেন। সবাই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেলো ইনায়াত খাঁর মিশনটা অতিদ্রুত স্টার্ট করতে যাচ্ছেন তিনি।

মাহমুদ দুইঘন্টা যাবত গাড়িতে বসে আছে। এনার দেখা নেই। বাধ্য হয়ে গাড়ি রেখে নিজেই ওপরে গেলো। রুমে ঢুকেই থমকে গেলো! এনা হেসে ফেললো।
~ “হাসছো যে?” কৌতূহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো মাহমুদ।
~ “ভাবছি।”

~ “কি ভাবছো?”
~ “ভাবছি পার্টিতে না গেলে হয় না?”

~ “সেকি কথা? এতকষ্ট করে সাজলে পার্টিতে যাবে বলে, তুমি বলছো পার্টিতে না গেলে হয় না? কেন বলতো?”
~ “এই যে এত কষ্ট করে সেজেছি সেটা তুমি পুষিয়ে দিবে! এই রাত শুধু দুজনার হলে মন্দ হতো না।”

মাহমুদ ফোন বের করার জন্য পকেটে হাত ঢুকালো। বলল,
~ “দাঁড়াও বসকে একটা ফোন করে বলে দিই যে আমরা পার্টিতে যাচ্ছি না।

আলতো করে মাহমুদের পিঠে চড় মারলো এনা। হেসে উঠে বলল,
~ “আমি জাস্ট মজা করেছি। উনি সত্যি সত্যি ধরে বসে আছেন।”

মাহমুদ অনুযোগ করে বলল,
~ “এটা কিন্তু জুলুম হয়ে গেলো এনা। দুইঘন্টাযাবত বসে থাকার জন্য হলেও ডিপ একটা কিস অন্তত পাওনা ছিলো।”
এনা ওর কথার জবাব না দিয়ে হাসলো। তারপর ওকে টেনে বের করতে করতে বলল, “দেরী হলে স্যার পানিশমেন্ট দিতে পারে।”

মাহমুদ বলল, “পানিশমেন্টে ডরে না বীর, ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ, লড়ে যায় বীর! .টাকলা কি করবে আমার? দরকার হলে হাসিমুখে শাস্তি বরণ করে নেবো তবুও তার ভয়ে ডিসিপ্লিন মানবো না।”
এনা সকৌতুকে হাসছে। মাহমুদের গাল টেনে দিয়ে বলল, “ওহো? তুমি তাহলে বসকে ভয় পাও না?”
~ “আলবৎ না।”

এনা ফোনের রেকোর্ডার অন করে বলল, “এবার বলো, তুমি বসকে ভয় পাও না?”
~ “একটু একটু পাই।”

এনা হেসে ফেললো। বলল,
~ “তাহলে চলো তাড়াতাড়ি!”

মাহমুদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “চলো!”
এনা বলল,
~ “আমার কি মনে হয় জানো?
~ “কি?”

~ “মনে হয় বসের কাছে পার্টি আর অফিসের মধ্যে কোন ডিফরেন্স নেই। উনার কাছে পার্টি যা অফিস তা ই। সবজায়গায় ডিসিপ্লিন মেইনটেইন করতে হবে।”
~ “এই ডিসিপ্লিন ডিসিপ্লিন করে ব্যাটা টাকলা হয়ে গেছে। এখন আমাদেরকেও টাকলা বানারোর প্ল্যান করছে।”

মেহরিন চুপচাপ কোনার একটা টেবিলে বসে আছে।
আড়চোখে মাহমুদকে দেখছে বারবার, সাদা শার্টের সাথে ব্ল্যাক ব্লেজারে দারুন মানিয়েছে ওকে। চুলগুলো স্পাইক করা, হাতে রিস্টওয়াচ ভীষণ হ্যান্ডসাম লাগছে ওকে। হাসিহাসি মুখে সবার সাথে কথা বলছে।

মেহরিনের সহ্য হলো না। একটা কিছু করতে হবে, ওকে তো মেহরিন কিছুতেই শান্তিতে থাকতে দেবে না। ওর জন্যই মেহরিনের আজকে এই অবস্থা। সারাদিন অফিসে বসে মশা মেরেছে মেহরিন। এমনিতেই অফিসিয়াল কাজ সে তেমন ভালো বুঝে না। যা কাজ ছিলো বাকিরা করেছে, ওকে কেবল বসিয়ে রাখা হয়েছে। একজন কর্মঠ এনএসআই এজেন্টের জন্য যে কতবড় কঠিন সাজা সেটা কেবল ভুক্তভোগী এজেন্ট বুঝতে পারে।

রাতুলের কৌতুক শুনে মাহমুদ সহ সবাই হাসতে হাসতে ফেটে পড়ার অবস্থা, এমন সময় আচমকা কারো সাথে ধাক্কা লাগতেই মাহমুদের সাদা শার্ট ওরেঞ্জ জুসে ভিজে একাকার।
মেহরিন শশব্যস্ত হয়ে বলল,
~ “সরি, এক্সট্রিমলি সরি মি.মাহমুদ! আমি বুঝতে পারি নি আপনি হঠাৎ এভাবে সামনে চলে আসবেন।”

~ “আমি হঠাৎ করে আসে নি মিস.মেহরিন। আপনিই বরং হুট করে আমাদের মাঝখানে চলে এসেছেন। যাই হোক ইটস ওকে!”
এনা টিস্যু দিয়ে মাহমুদের শার্ট পরিষ্কার করতে করতে বলল,
~ “ইস, দাগ পড়ে গেছে!”

মেহরিন তেতে উঠে বলল,
~ “আমি মোটেও মাঝখানে আসি নি। আপনি হাসতে হাসতে আমার গায়ের ওপর ঢলে পড়েছেন।”
মাহমুদ হতবাক হয়ে বলল,
~ “মানে?”

~ মানে আপনি নিজে দোষ করে উলটো আমার ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন।”
এবার জবাব দিলো এনা। নরম গলায় বলল, “আপনি শুধু শুধু রাগ করছেন আপু। মাহমুদ কিন্তু জানতো না আপনি হুট করে এদিকে আসবেন। তাছাড়া ভালো করে তাকালেই বুঝতে পারবেন আপনি ভুল করে সার্কেলের মাঝখানে ঢুকে পড়েছেন।”

এনাকে মাহমুদের এতটা কাছাকাছি দেখে নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না মেহরিন। চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো তার। সেদিনের মেয়ে ওকে ভুল সঠিক জ্ঞান দিতে এসেছে? রাগে তেড়ে এলো সে। চেঁচিয়ে উঠে বলল, “আমাকে এখন ভুল শুদ্ধ তোমার কাছ থেকে শিখতে হবে? কয়দিন হয়েছে জয়েন করেছো?
~ “আপনি শুধু শুধু উত্তেজিত হচ্ছেন আপু! প্লিজ শান্ত হোন।”

~ “আমি কি তোমার পারমিশন নিয়ে চলবো? কি ভাবো তুমি নিজেকে? দুএকজন সিনিয়র এজেন্টকে হাত করে পুরো এনএসআই কিনে নিয়েছো ভাবছো?”
এবার এনাও চটে গেলো। এগিয়ে গিয়ে বলল, “ভদ্রভাবে কথা বলুন! আপনি কিন্তু আমাকে ইচ্ছে করে অপমান করছেন!”

~ “যেই মেয়ে দুদিন না যেতেই সিনিয়র অফিসারদের গায়ে ঢলে পড়ে ক্যারিয়ার গড়তে চায় তার আবার সম্মান! তোমার কুকীর্তির খবর আমি জানি না ভেবেছো? বাজে মেয়ে একটা!”
পরিস্থিতি হাতাহাতি পর্যায়ে চলে যেত যদি না মাহমুদ ঠিক সময়ে এনাকে থামাতো। সোহাগ প্রায় টেনে মেহরিনকে বের করে নিয়ে গেলো।

এদিকে মাথায় রক্ত উঠে গেছে এনার। কতটুকুই চেনে তাকে মেহরিন? ওর চরিত্র নিয়ে কথা বলে ফেললো? .রাগে মেহরিনকে চড় মারতে গেছিলো এনা। মাহমুদের জন্য পারে নি। তার আগেই ওর হাত ধরে অন্য দিকে টেনে নিয়ে যায় মাহমুদ।

সোহাগ সামলাচ্ছে মেহরিনকে। মেহরিন কি কিছু শোনার পাত্রী? ইচ্ছে মত বকছে মাহমুদ আর এনাকে!”
মাহমুদ এনাকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলল,

~ “তুমি কি পাগল হয়ে গেছো এনা? কি করতে যাচ্ছিলে তুমি? যাই হোক না কেন মেহরিন তোমার সিনিয়র, ওর গায়ে তুমি হাত তুলতে যাওয়াটা তোমার একদমই উচিৎ হয় নি?”
বয়সের দিক থেকে দুজন প্রায় সমবয়সী হলেও সিনিয়রিটির দিক থেকে মেহরিন এগিয়ে। মাহমুদ জানে এনার এমন বোকামির ফলাফল কি হতে পারে! বসের কানে এই ঘটনাটা পৌছালে মেহরিন, এনা দুজনের কাউকেই ছাড়বে না উনি। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে দ্রুত এনাকে সরিয়ে এনেছে মাহমুদ। কিন্তু এনার প্রচন্ড আত্মসম্মানে লেগেছে মেহরিনের বলা কথা গুলো। কেঁদে ফেললো সে। বলল,

~ “উনি আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলার কে? অফিসে উনি আমার সিনিয়র, এখানে আমরা সবাই গেস্ট হিসেবে এসেছি। উনি ইচ্ছে করে আমাকে অপমান করলে আমি ছেড়ে দেবো কেন?”
মাহমুদ ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে একটু হেসে বলল, “ও তো একটা পাগল। অফিসের সবাই জানে ওর মাথাগরম, তুমিও জানো। তারওপর বস ওকে শাস্তি দিয়েছে, মন মেজাজ ভালো নেই। কি বলতে কি বলে ফেলেছে তুমি বোকার মত সেটা ধরে বসে থাকবে?”
~ “বসের রাগ উনি আমার ওপর ঝাড়বেন কেন?”

~ “বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ তার অধীনস্থদের ওপর রাগ ঝাড়ে সেটা আমরা সবাই জানি। তুমিও জানো? যেমন ধরো, কোন কারনে তোমাকে বস বকাঝকা করেছে তোমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে, তুমি কি সেটা তোমার সিনিয়র কাউকে সো করতে পারবে? অবশ্যই পারবে না। নিশ্চই তোমার জুনিয়রের ওপর ঝাড়বে?”
~ “আমি মোটেও এমন করবো না। একজনের দোষের শাস্তি আরেকজনকে কেন দেবো?”

ওর কথায় হেসে ফেললো মাহমুদ।
~ “তুমি না করলেও সবাই কিন্তু এমনটাই করে! এতিদিনে নিশ্চই তুমি খেয়াল করেছো?”

এনার রাগ কমলো না। তভে সেই এইটুকু অনুধাবন করতে পারছে রাগের মাথায় মেহরিনের গায়ে হাত তুলতে যাওয়াটা ওর উচিৎ হয় নি। মেহরিন যদি বসকে বলে দেয়? চাকরী হয়ত যাবে না, কিন্তু বস ওকে ছেড়েও দেবে না, এর জন্য কঠিন শাস্তি পাবে সে! ইমেজ খারাপ তো হবেই।
~ “আমি কি উনার কাছে ক্ষমা চাইবো গিয়ে?”

~ “তাকে এখন আর পাবে না। সে চলে গেছে।”
~ “তুমি কি করে জানলে?”

~ “আন্দাজ করে বললাম। এতদিন ধরে ওর কর্মকান্ডগুলো দেখতে দেখতে মুখস্ত হয়ে গেছে।”
~ “তারমানে উনি সবার সাথেই এমন ঝামেলা বাধান?”

মাহমুদ চুপ রইল। মেহরিনের মাথাগরম স্বভাবটার জন্যই জায়গায় জায়গায় অপদস্থ হতে হয় ওকে। তারপরও কেন যে নিজেকে শোধরায় না কে জানে? শোধরানোর কোন চেষ্টাও ওর মাঝে দেখতে পায় নি মাহমুদ।

এনা কৌতূহলী গলায় বলল, “চুপ করে আছো যে?”
মাহমুদ গম্ভীর হয়ে গেলো। বলল, “হয়ত করেন!”

~ “তবুও আমার উনাকে সরি বলা উচিৎ, আমিও তো বেশ রেগে গিয়েছিলাম!”
~ “তুমি না তখন বললে শুধু অফিসেই তোমার বস, এখানে তোমারা দুজনেই গেস্ট! তাহলে?
~ “রাগের মাথায় বলে ফেলেছি। ঠিক করি নি তাই না?”

~ “হুম! আমাকে কাছ্র বলেছো ঠিক আছে তবে অন্য কারো সাথে বলো না। এসব নিয়মকানুন হচ্ছে যারা ঘড়ি মেপে কাজ কর্ম করে তাদের জন্য। আমাদের জন্য এইসব নিয়ম কানুন নেই। আমাদের কাজের কোন নির্দিষ্ট টাইম নেই। এই যে বস এখানে আছে তুমি কি পারবে উনাকে গিয়ে বলতে যে আপনি শুধু অফিসে আমার বস, এখানে আমি আপনার গেস্ট! পারবে না। ভোর ছয়টায় দেখা হোক, আর রাত দুইটাই দেখা হোক উনি তোমার বস বসই থাকবে!
~ “সরি!”

এনা মাহমুদের হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল, “তুমি কি আমার ওপর রাগ করেছো?

~ “রাগ করবো কেন? আমি জাস্ট তোমার ভালোর জন্য বলেছি। তুমি নতুন জয়েন করছো তোমার ব্রাইট ফিউচার! এইসমস্ত জিনিসগুলো তোমার জানা দরকার..”
এনা ওকে থামিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বলল, “আমি জানি সিনিয়র সাহেব! আপনি আমার ভালোর জন্য বলেছেন।”

“বস এখনো আসে নি রাতুল?” মাহমুদ প্রশ্ন করলো।
রাতুল ঠাট্টার সুরে বলল,
~ “না স্যার! উনি কি পার্টি করতে আসবেন নাকি? উনি আসবেন আমাদের টানা কয়েকমাসের জন্য গাধা ঘোষণা দিতে। ঘোষণা শেষ! উনার পার্টিও শেষ!
হাসলো মাহমুদ। তারপর বলল,
~ “মেহরিন ম্যাম কি চলে গেছেন?”

~ “জী আপনারা যাওয়ার পরপরই সোহাগ স্যারের সাথে বেরিয়ে গেছেন। উনার ফোন রেখে গেছেন ভুলে। আমার কাছেই আছে।”
~ “ঠিক আছে তুমি যাওয়ার সময় পৌঁছে দিও।”
~ “জ্বী স্যার।”

এনা এসে মাহমুদের পেছনে দাঁড়ানো। মুখ কালো করে বলল, “তুমি ঠিকই বলেছো মেহরিন আপু নেই। সবজায়গায় খুঁজে দেখেছি কোথায় নেই।”
~ “সরি বলার জন্য খুঁজছিলে? লাভ হবে না।”
~ “মানে?”

~ “মানে তোমার মেহরিন আপু ভীষণ ত্যাড়া, তুমি পায়ে ধরে মাফ চাইলেও কোন লাভ হবে না যতক্ষণ না তার রাগ পড়ছে। বিশ্বাস না হলে রাতুলে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারো।”
রাতুল মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো মাহমুদের কথায়।

এনার মন খারাপ হয়ে গেলো। ওর জন্যই মেহরিন পার্টি ছেড়ে চলে গেছে, নতুন এজেন্ট হিসেবে ওর এতটা বাড়াবাড়ি করা ঠিক হয় নি। মাহমুদ সান্ত্বনা দিয়ে বলল,
~ “মন খারাপ করো না এনা। মিস মেহরিন যে শুধু তোমার ওপর রেগে আছেন তাই না। আরো অনেক কারনেই তিনি রেগে আছেন। উনার সব রাগ পুঞ্জিভূত হয়ে আছে মনে ভেতর, মাঝেমাঝে সেখান থেকে কিছুটা উদগিরণ করে সবার ওপর। আমরা কমবেশি সবাই এর ভুক্তভোগী, তুমিই বাদ ছিলে। এবার একেবারে হাউজফুল!”
মাহমুদ একটু থেমে আবার বলল,

~ “এমনিতে উনি খুব ভালো মানুষ! ভালোমানুষি আর ন্যাকামিতে দুএকটা মেডেল তিনি পেতেই পারেন! কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করলে নিজেই আপসেট হয়ে যান। একা একা কাঁদেন, নিজেকে গালমন্দ করেন, কিন্তু একটাই সমস্যা হুটহাট রেগে যাওয়ার অভ্যেসটা বদলাতে পারেন না। এইসব বাদ দিলে উনি খুব ভালো মানুষ..সো জাস্ট রিলাক্স!”
রাতুল বিরক্ত দৃষ্টিতে মাহমুদের দিকে চেয়ে আছে। মেহরিনের সম্পর্কে এই ধরনের মন্তব্য প্রায়শই মাহমুদের কাছে থেকে শোনে সে। মেহরিন রাগী হলেও মনে মনে তাকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করে রাতুল, তাই মাহমুদের এহেন আচরণে সে দুঃখিত বোধ করে বলল, “উনি রাগী হলেও বেশ নরম স্বভাবের স্যার!”

মাহমুদ ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে বলল, “আমিও তো তাই বললাম রাতুল? ডোন্ট টেইক মি রং! তোমার মেহরিন ম্যাম তো খুবই ভালোমানুষ! একেবারে ডাউন টু আর্থ!”
রাতুল চুপ করে গেলো। কথাগুলো শুনে এনার স্বস্তি হলেও, সামান্য খটকা লাগলো, মাহমুদ কি করে এতকিছু জানলো? এত নিখুঁত ভাবে মেহরিনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো সে বর্ণনা করছে কীভাবে? কৌতুহল সামলাতে না পেরে চট করে প্রশ্ন করে বসলো সে,
~ “তুমি এত কিছু জানো কি করে?”

প্রশ্নটা শুনে মাহমুদ থতমত খেয়ে গেলো। পরোক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “সোহাগ প্রায়ই উনার কথা বলে। তাছাড়া অনেকদিন একই অফিসে চাকরী করছি।”
এনার খটকা টা দূর হলো না, বরং আরো বেড়ে গেলো। এনএস আই এর সবচেয়ে হ্যান্ডসাম, বুদ্ধিমান এবং দক্ষ এজেন্ট হলেও কথাটা বলার সময় মাহমুদের কন্ঠস্বরের হালকা কাঁপুনি টুকু ধরতে অসুবিধে হয় নি তার। রহম্যময় লাগছে সবকিছু।

পর্ব ৩

সারারাত মাহমুদ মাথা খাটিয়েছে, কিন্তু কোনভাবেই মেহরিনকে নিয়ে যেতে মন সায় দিলো না। বারবারই মনে হচ্ছে মেহরিনের বড়সড় কোন ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। মন কু ডাকছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে ক্যান্সেল করবে কি করে?

বারান্দায় অনেক্ষন পায়চারি করলো। ভোররাতের দিকে মেহরিনকে নিয়ে খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছে সে। অবশেষে আর কিছুতেই ধৈর্য রাখতে পারলো না। ইরফান সাহেবের নাম্বারে ডায়াল করলো সে। তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। গতকালই ফিরেছেন।

~ হ্যাঁ চাচ্চু! আমি মাহমুদ!
~ হ্যাঁ মাহমুদ বল।

~ তোমার সাথে আমার ইনায়াত খাঁর মিশন নিয়ে কিছু কথা বলার আছে।
~ আমি তো এখন ব্যস্ত আছি।
~ মেহরিনের ব্যাপারে!

ইরফান সাহেব থমকে গেলেন। মেহরিন তার একমাত্র সন্তান। মাহমুদ আর তিনি ছাড়া অফিসের কেউই সেকথা জানে না। মেহরিনের মা লায়লা শারাফাতকে ভালোবেসে পরিবারের অমতে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিলেন তিনি। কেউই মেনে নেয় নি। মেহরিনের নানারা আর্থিক দিকে থেকে খুব একটা স্বচ্ছল ছিলো না তাই। তবে ভালোই কাটছিলো দুজনার কিন্তু বিয়ের সাতবছর কেটে যাওয়ার পরেও যখন সন্তানের মুখ দেখতে পেলেন না তখন স্বামী স্ত্রী দুজনেই চিন্তায় পড়ে গেলেন। ডাক্তার কবিরাজ সব ট্রাই করলেন। কিছুতেই কিছু হলো না। বিপাকে পড়ে গেলেন ইরফান আহমেদ। ভালোবেসে বিয়ে করেছেন,

বিবেকের তাড়নায় তাকে ফেলেও চলে যেতে পারছেন না আবার সারাজীবন নিঃসন্তান হয়ে কাটিয়ে দেবেন এটাও মেনে নিতে পারছিলেন না। স্ত্রীকে লুকিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেন তিনি। তবে দ্বিতীয় বিয়েটা করেছিলেন তার পরিবারের সহযোগিতায়, দ্বিতীয় স্ত্রী তাকে একটা কন্যা সন্তান উপহার দেন, কিন্তু ততদিনে প্রথম আল্লাহর অশেষ রহমতে তার প্রথম স্ত্রী মানে লায়লা শারাফাত জানতে পারেন তিনি সন্তানসম্ভবা। স্বামীকে জানানোর জন্য অস্থির হয়ে গেলেন, কিন্তু ইরফান সাহেব তখন দ্বিতীয় স্ত্রী এবং কন্যাকে নিয়ে ব্যস্ত। সেই খবর লায়লা শারাফাতের কানে পৌঁছাতে দেরী হলো না। স্বামীর ওপর রাগ করে নিরুদ্দেশ হলেন তিনি। যাওয়ার সময় চিঠির মাধ্যমে স্বামীকে জানিয়ে গেলেন তার অনাগত সন্তানের কথা।

আল্লাহ্‌র অশেষ কৃপায় ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের মা হলেন লায়লা শারাফাত নাম রাখলেন মেহরিন শারাফাত, ছোট্ট মেহরিন দেখতে তার মায়ের মতই সুন্দরি হলো! স্বভাব পেয়েছে বাবার মতো। নিজের যোগ্যতা এবং পরিশ্রমের দ্বারা ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইনটেলিজেন্সে চাকরী পেলো। সেখানেই তার পরিচয় হলো মাহমুদের সাথে। মাহমুদের প্রেমে পড়ে গেলো সে! রাগী, মিষ্টি চেহারার সেই স্বল্পভাষীনি মেহরিনকে মাহমুদও ভালোবেসে ফেললো। তারপর সাবেক এনএসআই এর প্রধান অবসর নেন, নতুন বস হিসেবে জয়েন করলেন ইরফান আহমেদ!

অফিসে জয়েন করার পর মেহরিনের মাঝে নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীর মিল খুঁজে পেলেন তিনি। সেই কাজল কালো ভরাট দিঘী মত গভীর চোখ, নেই নাক, সেই ঠোঁট! মেহরিন যেন তার প্রিয়তমারই প্রতিচ্ছবি! আলাদা টান অনুভব করতেন মেহরিনের মাঝে। সেই একই রকমের টান মেহরিনও অনুভব করলো, রক্তের টান! ছটফট করতে লাগলো রাত দিন। হঠাৎ একদিন সে জানতে পারে কেন সে বসের প্রতি এত টান অনুভব করে?

বিদেশ থেকে মিশন শেষ করে আসার পর ফুল দিয়ে তাকে বরণ করেন ইরফান আহমেদ। সেই ছবিটা লায়লা শারাফাতের চোখে পড়ে। তাৎক্ষণিক ভাবে মেয়েকে সব খুলে বললেন তিনি। সেদিনই প্রথম মেহরিন জানলো যে ইরফান আহমেদই তার বাবা। মায়ের মুখ থেকে ইরফান আহমেদের কৃতকর্মের কথা শুনে তার প্রতি প্রচন্ড ঘৃনা জন্মালো মেহরিনের মনে। বস হিসেবে তাকে শ্রদ্ধা করলেও বাবা হিসেবে প্রচন্ড ঘৃনা করে মেহরিনে তাকে। এর মাঝে আরো একটা সত্যি আবিষ্কার করে ফেললো মেহরিন। মাহমুদের সাথে একান্তে কিছু সময় কাটানোর মুহূর্তে সে জানতে পারলো ইরফান আহমেদের বড় ভাইয়ের ইলিয়াস আহমেদের ছেলে একমাত্র ছেলে মাহমুদ।

বিপাকে পড়ে গেলো মেহরিন! কারন মাহমুদের সাথে তার এই সম্পর্ক কোনভাবেই মেনে নেবেন না তার মা। এদিকে স্বামী পরিত্যক্তা একা দুখিনী মাকে কোনভাবেই কষ্ট দিতে পারবে না সে। কোনভাবেই তাকে ছেড়ে যেতে পারবে না। মাহমুদকে কিচ্ছু না জানিয়ে আস্তে আস্তে দূরে সরে যেতে লাগলো তার কাছ থেকে।

মেহরিনের হঠাৎ এমন পরিবর্তনে মনে মনে দুঃখ পেতে লাগলো মাহমুদ, তবুও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলো সে। তারপর একদিন মেহরিন এসে জানালো সে মাহমুদের সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে চায় না। হাজার চেষ্টা করেও যখন মেহরিনকে ফেরাতে পারলো না তখন জেদ চেপে গেলো মাহমুদের! সেও আস্তে আস্তে দূরে সরে যেতে লাগলো মেহরিনের কাছ থেকে।
তারপর একদিন ইরফান আহমেদ তাকে ডেকে মেহরিনের সম্পর্কে সব খুলে বললেন। নিজের সব ভুল স্বীকার করেন।
তার কৃতকর্মের শাস্তিও আল্লাহ তাকে দিয়েছেন।

লায়লা শারাফাত নিখোঁজ হওয়ার পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন তার দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভের সন্তান তার নয়। স্ত্রীর প্রাক্তন প্রেমিকের। রাগে দুঃখে তাকে ডিভোর্স দেন তিনি। তারপর থেকে একা একা নিঃসঙ্গ জীবন কাটিয়েছেন।

কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গেছে। মেহরিনের ওপর জেদ করে এনার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে মাহমুদ। এনা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেছে। নেশার ঘোরে তার সাথে ফিজিক্যাল এটাচমেন্টও হয়ে যায় মাহমুদের। অগত্যা মাহমুদও আর কিছু ঠিক করতে চাইলো না। কিন্তু মাঝপথে তাকে একা করে দেওয়ায় মেহরিনের ওপর রাগটাও রয়ে গেলো। তবে মনে মনে এখনো মেহরিনকেই ভালোবাসে সে। সেই ভালোবাসা একান্ত তার নিজের!
সব হারিয়ে চাচা ভাতিজা দুজনেরই একটাই লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াল মেহরিনকে সব রকম বিপদ থেকে রক্ষা করা। তবে দুজনের কেউই কাউকে বুঝতে দেন না।

মাহমুদের কন্ঠস্বর শুনে অতীত থেকে ফিরে এলেন ইরফান আহমেদ। ফোনের ওপাশ থেকে মাহমুদ হ্যালো, হ্যালো করেছে।
~ হ্যাঁ চাচ্চু তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো? .চাচ্চু?

~ হ্যাঁ পাচ্ছি। বল কি বলবি?
~ আমি চাইছি না মেহরিন আমাদের সাথে ইনায়াত খাঁর মিশনে যাক!
~ তোর এমনটা চাওয়ার কারণ?

মাহমুদ তার উৎকণ্ঠা চেপে গেলো। বলল,
~ সি ইজ নট এলিজিবল ফর দ্যি মিশন। এমন একটা রিস্কি মিশনে ওর মত মাথাগরম, বদরাগী, অস্থির এজেন্ট সাথে গেলে অন্য এজেন্টরা বিপদে পড়ে যেতে পারে। উই উইল হ্যাভ প্রবলেমস!
নিজের মেয়ে সম্পর্কে মাহমুদের মুখ থেকে এমন কটু কথা শুনে মনে মনে ক্ষেপে গেলেও চেপে গেলেন ইরফান আহমেদ।

উনাকে চুপ করে থাকতে দেখে মাহমুদ বলল,
~ প্ল্যান মোতাবেক ওকে না নিলেও আমাদের তেমন কোন ক্ষতি হচ্ছে না। ওর রিপ্লেসমেন্ট পেয়ে গেছি। আই এসিউর ইউ দ্যাট উই উইল মেইক দ্যা প্ল্যান সাকসেসফুল বাই হুক অর বাই ক্রুক! তুমি শুধু কোনভাবে মেহরিনের যাওয়াটা আটকাও।
~ ওকে আমি বিবেচনা করে দেখবো। আগামীকাল কাল কথা হবে।

পরেরদিন সকালবেলা অফিসের সবাই এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য একেবারে রেডি হয়ে এসেছে। মাহমুদ এবং এনা দুজনেই মাত্র এসে অফিসে ঢুকেছে।
মাহমুদ এর পরনে সাদা ফুলহাতা শার্ট কালো প্যান্ট। কোমরে কালো বেল্ট, গলায় কালো টাই, হাতে ঘড়ি।

এনাকে অপেক্ষা করতে বলে সে ইরফান আহমেদের রুমে ঢুকে গেলো। ঘন্টাখানেক পর গালভর্তি হাসি নিয়ে বেরোলো।
মাহমুদ বেরোলে ইরফান আহমদ মেহরিনকে ডেকে পাঠালেন। ওর যাওয়া ক্যান্সেল। সেদিন যদিও পার্টিতে উনি মেহরিনের নাম ঘোষনা করেছিলেন কিন্তু আজকে ডেকে বারণ করে দিলেন। মেহরিনের বুঝতে বাকি রইলো না, সবকিছু প্রি প্ল্যান্ড!

চোখভর্তি পানি নিয়ে ইরফান সাহেবের রুম থেকে বেরোলো সে। ভীষণ অপমান বোধ হচ্ছে ওর! মানা করার হলে আগেই বারণ করে দিতো। যাওয়ার আগ মুহূর্তে ডেকে বলছে সে যেতে পারবে না। মাহমুদ নাকি কমপ্লেইন করেছে তার মত মাথা গরম, ইনসেন্সিবল এজেন্ট এই মিশনে যাওয়ার যোগ্য না। লজ্জায়, অপমানে মরে যেতে ইচ্ছে করছে ওর। এতটা নগন্য সে টিমের কাছে?
দ্রুত পায়ে মাহমুদের রুমের দিকে গেলো সে। আজকে একটা এসপারওসপার করেই ছাড়বে, কি পেয়েছে টা কি মাহমুদ? সারাক্ষণ ওর পেছনে কেন লেগে থাকে?

সে তো তার কোন ব্যপার নিয়ে মাথা ঘামায় না? তাহলে মাহমুদ কেন ওর সব ব্যপারে নাক গলাতে আসে? হোয়াই? কিন্তু দরজার কাছে এসেই ওর পা আটকে গেলো। ধক করে উঠলো বুকের ভেতর! দরজা থেকে সরে দেওয়ালের ঠেস দিয়ে নিশ্বাস চেপে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষন। নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করলো।

মাহমুদ কিংবা এনা দুজনের কেউই ওর উপস্থিতি টের পায় নি। ওরা দুজন দুজনাতে ভীষণ ব্যস্ত! এনা দুহাতে মাহমুদের গলা জড়িয়ে আছে। আর মাহমুদের হাতদ্বয় ওর ক্ষীণ কোটিতে আবদ্ধ! । লম্বা সফরে যাচ্ছে কবে ফিরবে ঠিক নেই। তাই যাওয়ার আগে একান্তে ভালোবাসাবাসিতে মেতে উঠেছে নিশ্চই। দীর্ঘশ্বাস ফেললো মেহরিন।

দরজায় হালকা নক করতেই মাহমুদ এনা দুজনেই প্রায় ছিটকে দূরে সরে গেলো। ওকে দেখে একহাতে এনার কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নিলো মাহমুদ। বিরক্ত গলায় বলল, “আপনার কমনসেন্স বলে কিচ্ছু নেই মিস মেহরিন? .নির্লজ্জের মত রুমে ঢুকে পড়েছেন? প্রাইভেসি বলে তো একটা জিনিস আছে?

~ “অফিসে মানুষ কাজ করতে আসে। আমি কি করে জানবো এখানে এসব চলছে?”
~ “এখন জেনেছেন যখন তো যান? দাঁড়িয়ে আছেন কেন?”

ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্নাটা চাপলো মেহরিন। মাহমুদ এখনো এনার কোমর জড়িয়ে রেখেছে। না চাইতেও ওর দৃষ্টি বারবার সেদিকে চলে যাচ্ছে। ধরে আসা কন্ঠে বলল,
~ “আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
এনা কিছুটা বিরক্ত হলো। তবে সেদিনের ঝামেলার ভয়ে কিছু বললো না।

~ “আমি এখন আপনার সাথে কোন কথা বলতে পারবো না। আপনি আমার সময় নষ্ট করছেন!”
এনা ব্যতিব্যস্ত হয়ে মাহমুদকে উদ্দেশ্য করে বলল,
~ “ঠিক আছে তোমরা নাহয় কথা বলো, আমি বাইরে যাচ্ছি। উনি নিশ্চই জরুরী কিছু বলবেন?”

মাহমুদ দ্বিগুন দৃঢ়তার সহিত বলে উঠলো,
~ “না। তোমার কোথাও যাওয়ার দরকার নেই। উনার যদি কিছু বলার থাকে উনি এখানেই বলতে পারেন।”
মেহরিন রাগের ফোঁস করে উঠলো। বলল,
~ “দরকার নেই। আমি বেরিয়ে যাচ্ছি।”

মাহমুদের দিকে ক্রুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বেরিয়ে গেলো সে। মাহমুদের অন্তরাত্মা জানে কতটা ক্ষত বিক্ষত হয়েছে তার হৃদয়। হাতের মুঠো শক্ত করে চেপে ধরে নিজেকে সামলালো সে।
এনা ওর বুকের ওপর বাম হাত রেখে বলল,
~ “আর ইউ ওকে মাহমুদ?”

নিজেকে সামলে নিলো মাহমুদ। মুখে হাসির রেখা টেনে বলল,
~ “আমার আবার কি হবে? আমি তো ঠিকই আছি।”
~ “মেহরিন ম্যাম এর কথায় তুমি কিছু মনে করো না।”

~ “কি মনে করবো? তোমার চেয়ে বেশি চিনি আমি তাকে।”
মুখ ফস্কে কথাটা বেরিয়ে যেতেই প্রসঙ্গ পাল্টালো মাহমুদ। তড়িঘড়ি করে বলল,
~ “চলো বেরোই। সবাই নিশ্চই অপেক্ষা করছে।”

পা দুটোকে অনেক কষ্টে টেনে হিঁচড়ে পার্কিং লটে নিয়ে এলো মেহরিন। কিন্তু গাড়ির কাছে এসেই বেহুঁশ হয়ে পড়ে যেতে নিলো। কেন তার জীবনটা এমন এলোমেলো হয়ে গেলো? সুস্থভাবে বাঁচার অধিকার কি নেই? ইরফান আহমদের করা ভুলের শাস্তি তাকে কেন সারাজীবন বইতে হবে?

সোহাগ হন্তদন্ত হয়ে অফিসে ঢুকছিলো। কার্ড এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছিলো সেটা রিনিউ করাতে গিয়েই লেট হয়ে গেলো। পার্কিংয়ে মেহরিনকে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে দ্রুত এগিয়ে এলো সে।
~ “মেহরিন? তুমি ঠিক আছো?”
~ “আমি ঠিক আছি। তোমার দেরী হয়ে যাচ্ছে, তুমি যাও!”

সোহাগ ওকে একা ছাড়ার রিস্ক নিলো না। ইরফান আহমেদকে ফোন করে মেহরিন কি বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসার অনুমতি নিলো।
মেহরিনকে পৌঁছে দিয়ে সোজা এয়ারপোর্টে চলে সে। ওর জন্যই অপেক্ষা করছে সবাই। পাসপোর্ট চেকিং শেষে লাউঞ্জে গিয়ে বসে অপেক্ষা করছে। মাহমুদ উঠে সোহাগের পাশে এসে বললো। মেহরিনের কাছ থেকে সব শুনে মাহমুদের ওপর রাগ লাগছে সোহাগের।

মাহমুদ নিজে থেকেই কথা বলল ওর সাথে।
~ “তোমারমেহরিম ম্যামর এখন কি অবস্থা সোহাগ?”

~ “ভালো।”
~ “শুনলাম লাস্ট মুহূর্তে নাকি বস উনার আসাটা ক্যান্সেল করে দিয়েছে?”
সোহাগ তাচ্ছিল্যভরে তাকালো মাহমুদের দিকে কিন্তু কিছুই বললো না, মাহমুদের বুঝতে অসুবিধে হলো না এই দৃষ্টির মানে কি? এর মানে, ‘বাহ ভালোই নাটক করছেন। ‘

মাহমুদ হালকা হেসে বলল,
~ ” একহিসেবে ভালোই হয়েছে, উনি যা কড়া মেজাজের তাতে আমাদের সবাইকে ফাঁসিয়ে দিতো। একটা না একটা গন্ডোগল ঠিকই বাধাতো।”
~ “উনি কিন্তু আজপর্যন্ত এমন কোন কাজ করেননি যাতে আমাদের টিমকে বিপদে পড়তে হয়েছে! লাস্টবার যখন মিশনে গিয়েছিলাম তখন রাতুলকে বাঁচাতে গিয়ে উনি গুলি খেয়ে ছিলেন। আপনি বোধহয় ভুলে গেছেন স্যার।” গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিলো সোহাগ।

~ “ভুলি নি আমি। সেজন্যই তো বললাম ভালো হয়েছে উনাকে আসতে দেওয়া হয় নি। এবারের প্ল্যানটা যথেষ্ট রিস্কি। আমি চাই না দলের কেউ বিপদে পড়ুক।”
~ “তাই আপনি বসকে অনুরোধ করেছেন উনাকে যাতে আমাদের সাথে না পাঠানো হয়? আপনার কি মনে হয় উনি আমাদের দলকে বিপদে ফেলবেন?”
~ “আমি জাস্ট দল বলেছি। দল মান বোঝো? দল? আমি সত্যিই চাই না আমার দলের কেউ বিপদে পড়ুক! কেউ না! কোনভাবেই না।”

~ কিন্তু মেহরিন ম্যাম এর সাপ্লিমেন্টারী হিসেবে কে আছেন?
~ “এনা। সে নিশ্চই তোমার মেহরিন ম্যাম এর চেয়ে কোন অংশে কম যোগ্য নয়?”

সোহাগ চমকে উঠে মাহমুদের দিকে তাকালো। মাথায় একগাদা প্রশ্ন কিলবিল করছে। মাহমুদ ভাবলেশহীন! মুচকি হাসি দিয়ে কানে হেডফোন গুঁজে দিলো। সোহাগ কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেলো। মাহমুদকে এখন কোন প্রশ্ন করা যাবে না। করেও বিশেষ লাভ হবে না। কোনটারই সোজা জবাব দেবে না সে। ইনিয়েবিনিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করবে।
মাহমুদকে ওর অবাক লাগে। হি ইজ মিস্টেরিয়াস! ভেরি মাচ মিস্টেরিয়াস!

মিশনে যাওয়ার উনিশদিন বাদে দেশে আজকে দেশে ফিরে আসছে পুরো দল। ইনায়াত খাঁ ধরা পড়েছে, কাতারের পুলিশ কাস্টোডিতে আছে, দুতিনদিনের মধ্যেই ওরা বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে। সবাই ভীষণ খুশি! এয়ারপোর্ট ওদেরকে রিসিভ করার জন্য ইরফান সাহেব সহ টিমের অনেক সদস্যরাই এসেছে।
ইরফান সাহেব হাসিমুখে মাহমুদের পিঠে চাপড় মেরে বলল, “আ’ম প্রাউড অফ ইউ মাই বয়। তুমি তোমার কথা রেখেছো! এইবার ইনায়াত খাঁ বুঝবে এনএসআই কি করতে পারে আর কি পারে না।”
মাহমুদ মুচকি হাসলো। এনাকে দেখিয়ে বলল,
~ অল আওয়ার ক্রেডিট গোজ টু হার। ভীষণ রিস্ক নিয়ে কাজ করেছে সে।
ইরফান আহমেদ এনার সাথেও হাত বুলালো। মাহমুদ চারপাশে চোখ বুলিয়ে ফিসফিস করে বলল,
~ “মিস মেহরিন আসে নি স্যার?”

ইরফান সাহেব একটু অন্যমনস্ক হয়ে বললেন, “ওকে বোধহয় না যেতে দিয়ে আমি ভুল করেছি। ভীষণ মন খারাপ করে ছিলো।”
~ “মন খারাপ করার কি আছে? আপনি যাকে যোগ্য মনে করেছেন তাকেই পাঠিয়েছেন যাকে মনে করেননি তাকে পাঠান নি ব্যস! উনি এত ডেস্পারেট কেন?”
ইরফান সাহেব সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে মাহমুদের দিকে তাকিয়ে বললো, “আমি যাকে যোগ্য মনে করেছি?”

সেই দৃষ্টির অর্থ, ‘বাহ! সব দোষ এখন আমার? ‘
দুজনেই চোখে চোখে অনেক কথা বলে নিলো। ইরফান সাহেব হো হো হেসে উঠে বললেন, “অফকোর্স আমার যাকে এলিজিবল মনে হয়েছে আমি তাকেই পাঠিয়েছি! মেহরিন, হু ইজ সি?

আমার কথাই শেষ কথা! আ’ম দ্যা হায়ার অথোরিটি!”
মাহমুদ উনার সাথে হাসির তাল মিলিয়ে বলল, “এক্সেক্টলি স্যার! আমিও এটাই বোঝাতে চাইছিলাম। সবাই কেন আমাকে দোষ দিচ্ছে বলুন তো। মিস মেহরিন মিশনে গেলো কি গেলো না তাতে আমার কি? আমার কাজ হচ্ছে শত্রুদের ধরা, আমি ধরছি। ব্যস!”

মেহরিন নিজের ডেস্কে বসে ছিলো। খুব অপমান লাগছে ওর। সবাই এখন এসে মিশনের গল্প করবে! আর সে বসে বসে শুনবে? টুপ করে জল গড়িয়ে পড়লো ওর হাতের কাগজটার ফাইলের ওপর। ব্যস্ত হয়ে পড়লো, এই পেপারটা আজকে ইরফান সাহেবকে জমা দিতে হবে। গড়বড় হলে আবার কথা শোনাবে। ইরফান সাহেবের উদ্দেশ্যে সে বুঝে গেছে। তার মাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য, তার চাকরীটা খেতে চাইছে। কত জঘন্য এই লোক? নিজে দোষ করে উলটো রাগ দেখাচ্ছে! ফ্যানের নিচে দাঁড়িয়ে ফাইলটা সোজা করে ধরলো শুকানোর জন্য। সোহাগের গলার আওয়াজে চমকে উঠলো।

~ “হেই বিউটি কেমন আছো?” আন্তরিক গলায় জিজ্ঞেস করলো সোহাগ।
মিশনে গিয়ে বেশ শুকিয়ে গেছে সোহাগ। গালভেঙ্গে গেছে, তবে খোঁচা খোঁচা দাড়িতে ওকে দারুণ মানিয়েছে। মেহরিন হাসিমুখে বলল,
~ “ভালো আছি তোমার মিশন কেমন গেলো?”

নাকমুখ কুঁচকে ফেললো সোহাগ। তেতো গলায় বলল, “মিশন ফিশন বাদ দাও। হুকুম ছিলো শেষ করে এসেছি, আমার তো দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। ভেবেছিলাম দম আটকে মরেই যাবো।”
মেহরিন হেসে ফেললো সোহাগের কথা শুনে। সোহাগ ইচ্ছে করে মিশনের কথাটা এড়িয়ে গেছে কারণ সে জানে এইমুহূর্তে মিশনের কথা শুনলে মেহরিনের খারাপ লাগবে তাই এড়িয়ে গেছে। এইজন্যই সোহাগকে ওর এত ভালো লাগে। অথচ…?

থাক সেসব কথা, অতীতের কথা মনে করে মন খারাপ করার কোন প্রশ্নই আসে না।
~ “চলো আজকে দুজন একসাথে লাঞ্চ করি?” সোহাগ প্রস্তাব দিলো।
~ “তুমি ফ্রি হতে পারবে তো?”

সোহাগ বলল, “তোমার জন্য আমি সবসময়ই ফ্রি সুন্দরী, বসের কাছ থেকে দুদিনের ছুটি নিয়েছি। তোমার সাথে দেখা করার জন্যই অফিসে এলাম, তা না হলে এয়ারপোর্ট থেকে সোজা বাসা।”
মেহরিন চিন্তিত গলায় বলল, “কিন্তু আমাকে তো ছুটি দেওয়া হয় নি?”
~ “তাহলে তো একটা সমস্যা হয়ে গেলো?”

~ “তুমি কি একটু ওয়েট করতে পারবে? আমি বসের কাছ থেকে পারমিশন নিতে পারি কি না দেখি?”
~ “সিউর।”

মেহরিন হাতের কাগজটা নিয়ে ইরফান আহমেদের রুমে সামনে এসে দাঁড়ালো। ভেতরে মাহমুদ বসা। ওকে দেখেই ইরফান সাহেব একগাল এসে বলল, “তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম মেহরিন।”
~ “আমার জন্য?”

~ “মাহমুদ তোমাকে আমাদের এবারের মিশনের সব ইনফরমেশন দেবে তুমি সেই অনুযায়ী একটা কেস স্টাডি করে আমাদকে জমা দেবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। ডিফেন্স মিনিস্ট্রিকে সেটা সাবমিট করতে হবে। ঠিক আছে?”
~ “কবে নাগাদ জমা দিতে হবে? .

মানে সাবমিশন ডেইটটা বলে দিলে আমার জন্য সুবিধে হত।”
~ “কালকে হলে ভালো হয়, তবে পরশুর হলেও কোন সমস্যা নেই। এর বেশি লিঙ্গার করা যাবে না।”
বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে গেলো মেহরিনের। এরমানে সোহাগের সাথে আজকে লাঞ্চে যাওয়া হচ্ছে না তার?
বেচারা আশা করে বসে আছে।

ইরফান আহমেদ ব্যস্ত হয়ে পড়লেন,
~ “আর ইউ ওকে? হোয়াই আর ইউ লুকিং সো আপসেট? কোন সমস্যা?”

~ “নো স্যার, নো প্রবলেম, আই এম রেডি!”
উনি মাহমুদকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “আই থিংক ইট ইজ হাই টাইম টু স্টার্ট ইউর ওয়ার্ক!”
~ “ইট ইজ স্যার।”

~ “ওকে, তাহলে কাজ শুরু করে দাও।”
মাহমুদ এবং মেহরিন দুজনে ইরফান আহমেদের রুম থেকে বেরলো। মাহমুদ মেহরিনের বিরক্ত চেহারা দেখে বলল,
~ “তোমার কোন কাজ থাকলে সেরে আসতে পারো। আমি আজকে ফ্রি আছি।”

সৌজন্যবোধ এবং বিনয় দুটোর ধারে কাছে দিয়েও গেলো না মেহরিন। তেতে উঠে বলল,
~ “আমাকে যেহেতু ফাইল সাবমিট করতে হবে, তাই আপনি ফ্রি আছেন কি নেই তা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই। আপনি ফ্রি থাকলেও আমাকে সময় দিতে হবে না থাকলেও দিতে হবে, সো ডোন্ট প্রটেন্ড টু বি কাইন্ড!”

~ “বাট ইউ নিড মাই হেল্প!”
~ “ডোন্ট বি সিলি প্লিজ! আই ডোন্ট নিড ইউর হেল্প, কজ, ইউ নো দ্যাট..দিস ইজ নট মাই পারসোনাল ইস্যু! দিজ ইজ অলসো ইউর ডিউটি টু হেল্প মি, নট মাইন!”
মাহমুদ বুঝলো ভালো কথা বলে একে বাগে আনা যাবে না। তেমন কুকুর তেমন মুগুর না হলে চলে না। মেহরিনের একেবারে কাছাকাছি দাঁড়িয়ে দাঁতমুখ খিঁচে বলল,
~ “ওকে। দ্যান একা একা তুমি ফাইল জমা দাও। আমিও দেখি কি করে তুমি ফাইল সাবমিট করো! বড় বড় কথা না? তো করো একা একা।

মাহমুদ গটগট করে হেঁটে বেরিয়ে গেলো। মেহরিন হাঁ করে তাকিয়ে আছে সেদিকে। এবার কি হবে? ফাইল জমা করতে না পারলে ইরফান সাহেব রাগে ওর চাকরীটা না খেয়ে দেন। কিন্তু তাই বলে তো আর মাহমুদের কাছে ছোট হতে পারবে না? এনাকে নিয়ে কি আদিখ্যেতাটাই না করছে! চাকরী গেলে যাক আত্মস্মমান কিছুতেই নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। একটা চাকরী তো আত্মসম্মানের চাইতে বড় নয়?

রেস্টুরেন্টে সোহাগের সাথে লাঞ্চ করতে এসে সোহাগকে সব খুকে বললো মেহরিন। সব শুনে সোহাগ বলল,
~ “তোমার কিন্তু মাহমুদ স্যারের সাথে বাড়াবাড়ি করা ঠিক হয় নি মেহরিন। কাজটা যেহেতু তোমার তাই তোমার উচিৎ ছিলো ঠান্ডা মাথায় হ্যান্ডেল করা। এসব ক্ষেত্রে মাথা গরম করলে হয় না। মাথা ঠান্ডা রেখে চিন্তাভাবনা করে কাজ করতে হয়।” সোহাগ চিন্তিত মুখে কথাগুলো বললো।

এবারও রেগে গেলো মেহরিন, সজোরে বাড়ি মারলো টেবিলে। সোহাগকে কঠিম ধমক দিয়ে বলল,
~ “বাড়াবাড়ি আমি করেছি না উনি করেছেন? প্রথমে আমার প্ল্যান ক্যান্সেল করলো, তারপর আমার মিশনে যাওয়া ক্যান্সেল করিয়ে দিলো, আমি কিচ্ছু বলেছি? বলি নি। দিন দিন উনার বাড়াবাড়ি সীমা ছাড়িতে যাচ্ছে। এবার উনি আমার চাকরী খাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। দায়িত্ব তো আমার একার না? আমি একা কেন সাফার করবো?

আমি গিয়ে ডিরেক্ট বসকে বলবো যে, উনি আমাকে কোঅপারেট করে নি, তারপরও যদি বস আমাকে কথা শোনায় তাহলে আমার আর কিছুই করার নেই। করবো না এই ছাতার চাকরী!
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেলো মেহরিন। সোহাগের কোন কথাই শুনলো না। সোহাগ চিন্তায় পড়ে গেলো। ওকেই কিছু একটা করতে হবে। মেহরিন যেভাবে উত্তেজিত হয়ে পড়েছে তাতে চাকরীটা হারাবে সে!

পর্ব ৪

“আমি কোনভাবেই তাকে কো অপারেট করবো না। তিনি আমাকে বলেছেন আমার কোন হেল্প তার দরকার নেই। তাহলে তোমাকে পাঠিয়েছেন কেন? হোয়াই? .তোমাকে দিয়ে কাজ উদ্ধার করাতে চাইছে? এখন লজ্জা করছে না?” শান্ত গলায় কথা গুলো বললো মাহমুদ।

~ “উনি আমাকে পাঠান নি, স্যার! আমি নিজে থেকেই এসেছি “, সোহাগের জবাব।
~ “পাঠান নি? তাহলে কেন এসেছো তুমি? যার ব্যপার সে বুঝে নেবে।”

~ “স্যার, আপনি আমার চেয়ে অনেক বেশি করে চেনেন মেহরিন ম্যাডামকে। উনার রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে না সেটা আমরা সবাই জানি। গত কয়েকমাস ধরে উনার খারাপ সময় যাচ্ছে, ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড ডিপ্রেশড উনি। সি ইজ গোয়িং অন আ ট্রমা! এইমুহূর্তে আমাদের উনার পাশে থাকার উচিৎ।”

~ “তুমি উনার পাশে থাকবে বলে চাকরী নাও নি সোহাগ, আমাদের কাজ দেশের সেবা করা। কারো পার্সোনাল ইস্যু ডিল করা নয়! আই হোপ ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড!”
চা দিতে এসে ওদের দুজনের কথাবার্তা সব শুনলো এনা। মাহমুদকে উদ্দেশ্য করে মিষ্টি হেসে বলল, “দেখো কাজ টা কিন্তু উনার একার নয়?

বস কিন্তু তোমাদের দুজনকেই দায়িত্বটা দিয়েছে। সো সেই ক্ষেত্রে একজন সিনিয়র এজেন্ট হিসেবে তোমার আরেকটু ফ্ল্যাক্সিবল হওয়া উচিৎ। তোমাদেরকে দেখেই কিন্তু আমরা নতুনরা শিখবো।”
আশার আলো খুঁজে পেলো সোহাগ। এবার যদি কাজ হয়। মনে মনে ধন্যবাদ দিলো এনাকে।

মাহমুদ কিছুক্ষন ভেবে বলল,
~ “কিন্তু তিনি আমার সাথে কাজ করতে চাইবেন না।”

~ “আমি রাজী করাবো স্যার!”
~ “তুমি? তোমার কথায় রাজী হবে?”
~ “জ্বী স্যার! উনি আমার কথা ফেলতে পারবেন না।”

দীর্ঘশ্বাস ফেললো মাহমুদ। অবচেতন মন খানিকটা ঈর্ষা অনুভব করলো সোহাগের প্রতি। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
~ “ঠিক আছে সোহাগ তুমি উনাকে বলে দিও, বিকেলে অফিসে থাকার জন্য। আমি ফ্রি হয়ে আসছি।”

~ “জ্বী স্যার। থ্যাংক ইউ!”
~ “থ্যাংক ইউ দেওয়ার কিছু নেই। ইটস মাই ডিউটি!”
সোহাগ চলে গেলে, মাহমুদও বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উঠলো। এনা ওকে আটকে দিয়ে বলল,
~ “এক্ষুনি যেতে হবে?”
~ “কেন? কোন দরকার আছে?”

~ “না এমনি বললাম!”
~ “পরে গেলেও ক্ষতি নেই। তবে এক্ষুনি একবার রাতুলের দেখা দেখা করাটা উচিৎ বলে মনে হচ্ছে। দায়িত্বটা যেহেতু নিয়েছি সেটা তো ভালোভাবে পালন করা উচিৎ, কি বলো?
~ “তুমি যেমন চাইবে তেমনই হবে।”

~ “শুনে খুশি হলাম। আসলে রাতুলের কাছে কিছু জরুরি ডকুমেন্ট আছে। সেগুলো নিয়ে ডিসকাস করতে হবে। তবে তোমার যখন ছুটি তুমি ইঞ্জয় করতে, আমি তো থাকছি না। রাত কটা নাগাদ ফিরবো সেটাও জানি না। তুমি বরং বাসায় চলে যেও।”
~ “উঁহু! আমি অপেক্ষা করবো।”

~ “থেকে মনেহয় না লাভ হবে। সোহাগকে যে বলে দিয়েছি বিকেলে যাবো? তার আগেই তো রাতুলের সাথে দেখা করা লাগবে? তারপর তো মেহরিন নামক টর্নেডো! দেরী হবে অনেক।”
~ “ঠিক আছে। কাজ শেষ করে তারপর নাহয় এলে। আমি অপেক্ষা করবো, কোন সমস্যা নেই।”
~ “আসি তাহলে।”

মাহমুদ চলে যেতেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো এনার বুক থেকে। বুকের মধ্যে চাপা একটা কষ্ট অনুভূত হলো। মাঝে মাঝেই এমন হয় ওর! কষ্টটা মাহমুদের জন্য হয়, কেন জানি মনে হয় সে মাহমুদ ওর সাথে সুখি না। ভালো নেই মাহমুদ। তাহলে কি মাহমুদ ওর কাছে শুধু দায়বদ্ধ! কিন্তু ও যে মাহমুদকে ভালোবাসে? প্রচন্ড ভালোবাসে যে মাহমুদকে। প্রতি মুহূর্তে সে মাহমুদকে অনুভব করে সে। তার দাম নিশ্চই দেবে মাহমুদ?

মাহমুদ গাড়ি পার্ক করে লিফটের কাছে আসতেই দেখলো মেহরিন দাঁড়িয়ে আছে। পরনে হলুদ ওয়ানপিস আর কালো জিন্স, গলায় একটা স্কার্ফ ঝোলানো। চুলগুলো উঁচু করে ঝুঁটি বাধা। হাতে রিস্টওয়াচ, সানগ্লাস কপালের ওপর উঠিয়ে রাখা। পায়ে হাই পেন্সিল হীল। মাহমুদের হঠাৎ মনে হলো সাক্ষাৎ ডাকু সর্দারনী দাঁড়িয়ে আছে লিফটের কাছে।
ও মৃদু শীষ দিতে দিতে মেহরিনের পেছনে এসে দাঁড়ালো। ওর আওয়াজ পেয়ে পেছন ফিরলো মেহরিন। ভ্রুজোড়া কুঁচকে বলল,
~ “তুমি?”

মাহমুদ মাথা দুলিয়ে বললো, “আপনি থেকে তুমি? বাহ ভালো!”
মেহরিন দ্রুত মেজাজ সামলে নিয়ে বলল, “না মানে আপনি এত তাড়াতাড়ি?”

~ “আমার লেইট করার অভ্যেস নেই সেটা তুমি ভালো করেই জানো? আমি জাস্ট টাইমেই এসেছি।”
~ “সময়ের সাথে সাথে মানুষের অভ্যেসও বদলায়! এনিওয়ে আপনার আমার সাথে কাজ করতে কোন অসুবিধে হবে না তো?”
~ “কাজের ক্ষেত্রে আমার কখনোই কোন অসুবিধে থাকে না। তবে আপনার যাতে অসুবিধে না হয় আমি সেই চেষ্টাই করবো।”
~ “জেনে খুশি হলাম।”

~ “ভালো করেছেন। এবার চলুন।”
লিফট ওপেন হলে মাহমুদই আগে ঢুকলো। তার পিছু মেহরিন। কেউ কথা বললো না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। উপরে এসে মাহমুদ বেরোলে মেহরিনই প্রথমে বলল, “আমি কি আসবো?”
~ “নাহ! আপনি আপনার কেবিনে যান। আমি একটা ফাইল নিয়ে আসছি।”

কাজ করতে করতে রাত দুটো বেজে গেছে। আগামীকাল ফাইল জমা করতে হবে, মাহমুদের সব ইনফরমেশন দেওয়া কমপ্লিট। মেহরিনকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে সে বাসায় যাবে। বাসায় বসেই বাকি কাজ কমপ্লিট করবে মেহরিন। কাজ শেষ হাওয়ার পর থেকে প্রায় দেড় ঘন্টার মত মাহমুদ বসে আছে। এদিকে এনাও বারবার ফোন দিচ্ছে। ফোন সাইলেন্ট করে রাখলো মাহমুদ। মেহরিনের কোন হোলদোল নেই। হেলেদুলে কাজ গোচাচ্ছে

মাহমুদ বিরক্তি চেপে শান্ত গলায় বলল, “আপনি কি আদৌ বাসায় যাবেন? যদি যান তাহলে প্লিজ তাড়াতাড়ি করুন। আমার ফিরতে হবে!”
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো মেহরিন। দুটো বেজে গেছে। হাতের কাগজগুলো তাড়াতাড়ি গোছাতে গিয়ে উলটো এলোমেলো করে ফেলছে বারবার সে। নার্ভাসনেস থেকে এমন হচ্ছে।
বাধ্য হয়ে মাহমুদ ওকে সরিয়ে নিজেই হাত লাগালো। সব রেডি করে অফিস বন্ধ করলো ওকে নিয়ে বেরিয়ে এলো।

গাড়িয়ে উঠার সময় আবারও ফোন এলো মাহমুদের। ফোন নিয়ে দূরে সরে গেলো সে। মেহরিন নিরুত্তাপ ভাবে গাড়িতে উঠে বসলো। আসলে বাইরে থেকে নিরুত্তাপ, ভেতরে ভেতরে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে সে। প্রথম প্রেম বলে কথা!
পাঁচমিনিট পর মাহমুদ ফিরে এসে বলল, “সরি! আপনাকে বসিয়ে রাখলাম।”
~ “ইট’স ওকে।”

~ “আপনার বাসা কি এখনো মিরপুরেই?”
~ “হ্যাঁ। আগের বাসাতেই আছি।”
~ “এখনো সেই বস্তিতেই? .

.এত কাড়ি কাড়ি টাকা কি করবেন? ভালো একটা বাসাতেও তো থাকতে পারেন! কী লাভ এত টাকাপয়সা রোজগার করে যদি নিজেই আরাম করতে না পারেন?”
জ্বলে উঠলো মেহরিনের চোখ। দাঁতমুখ খিঁচে বলল, “আমার বাসা বস্তি? আগে তো বলতে রাজমহল! শান্তির নীড় একদিন না গেলে নাকি তোমার দম বন্ধ হয়ে আসে? এখন বস্তি হয়ে গেলো?
~ “আগে সেখানে গেলে শান্তি পেতাম তাই শান্তির নীড় বলেছি। এখন শান্তি নেই। তাই বস্তি বলছি।”
~ “তাই নাকি?

~ “হ্যাঁ তাই। .যাইহোক, আসল কথাটা হচ্ছে তোমার কিপ্টেমির স্বভাবটা একটু বদলাও।”
~ “আমি কিপ্টে?”
~ “তুমি কিপ্টে নও?
~ “আলবৎ না।”

~ “যেই মেয়ে টুথপেস্ট শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্যাকেট কেটে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে টুথপেস্ট বের করে সে কিপ্টে নয়তো কি?”
প্রায় চারবছর আগের কথা। মেহরিনের প্রমোশন উপলক্ষে একবার বাসায় পার্টি দিয়েছিলো সে। সোহাগ, মাহমুদ, রাতুল, সোনিয়া সবাইকে ইনভাইট করলো। পার্টি শেষ হতে হতে অনেক দেরী হয়ে গেলো সবার। তাই সেদিন মেহরিনের বাসাতেই রাত্রিযাপন করে ওরা সবাই।

পরেরদিন সকালবেলা মাহমুদ ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুতে গিয়ে দেখে পেস্ট নেই। এত সকাল সকাল দোকানপাটও খুলবে না তাই মেহরিন টুথপেস্টের টিউব কেটে শোলা দিয়ে ওদের টুথপেস্ট বের করে দিয়েছিলো। তারপর থেকেই মাহমুদ কথায় কথা ওকে কিপ্টে বলে।
~ “তুমি আবারো সেই খোঁটা দিচ্ছো? তোমাকে কতবার বলেছি টুথপেস্ট যে শেষ হয়ে গিয়েছিলো…”

~ “এইজন্যই তো কিপ্টে বলি। আমার বাসায় তো ডজন ডজন টুথপেস্ট এর টিউব জমা থাকে। শেষ কখন হয় বুঝতেই পারি না।”
~ “তোমরা কি ভাতের সাথে টুথপেস্ট খাও? ডজন ডজন টুথপেস্ট টিউব দিয়ে কি করো?”

~ “ওসব বড়লোকি চালচলন তুমি বুঝবে না। এসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে তুমি বরং তোমার নিজের কথা একটু ভাবো। এত টাকা পয়সা কার জন্য? .বিয়েশাদীও তো করো নি, বয়সও কম হয় নি। এবার অন্তত বিয়েটা করো, কয়দিন পর লোকে বুড়ি বলবে, তখন আর বিয়ে করার জন্য পাত্র খুঁজে পাবে না। আর তোমার যা স্বভাব..সেটার কথা নাহয় বাদই দিলাম। যা ফিগার আছে তাতে সময় কাজে লাগাও, এখনো চাইলে পেয়ে যেতে পারো, ভালো ছেলে!”
রাগে বাকশূন্য হয়ে গেলো মেহরিন, তোতলানো শুরু করে দিলো।

~ “আমাকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। আমি বুড়ো যবুথবু হয়ে গেলেও আমারটা আমি বুঝবো।”
~ “এই ঘাড়ত্যাড়ামির জন্যই তো তোমার এই অবস্থা। কেউ কোন ভালো উপদেশ দিলে সেটা গ্রহণ করা উচিৎ! কিন্তু তোমার তো সেই বুদ্ধিটুকুও নেই। সবজান্তার ভাব ধরে বসে থাকো। এদিকে দিনদিন যে আলুর বস্তা হয়ে যাচ্ছো সেই খেয়াল আছে? খালি রাক্ষসের মত গিলছো আর কুমড়ো মত ফুলছো।”

রাগের মেহরিনের সমস্ত শরীর কিরকির করছে, গতকালই ওজন মাপিয়েছে সে মাত্র দুকেজি ওজন বেড়েছে ওর, তবে সেটা খাওয়াদাওয়া করে নয়, সারাদিন বসে বসে কাজ করার ফলে। ওকে তো ফিল্ডওয়ার্ক থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাও এই অসভ্যটার জন্য। এখন বলছে ও খেয়ে খেয়ে কুমড়ো মত ফুলছে? আলুর বস্তা বলছে ওকে? রাগে লাল হয়ে বলল,
~ “খাবো! আমার টাকায় আমি খাবো। আরো বেশি করে খাবো, তোমার কি?”

~ “আমার আবার কি? খেতে খেতে পুরো দুনিয়াটাই খেয়ে ফেলো তুমি। তারপর যখন হিসু করতে বেডপ্যান লাগবে তখন বুঝবে ঠ্যালা। ভাগ্য ভালো আগেই আমার ঘাড় থেকে নামিয়েছি তা না হলে কোনদিন আমাকে খেয়ে ফেলতে তুমি!”

মেহরিনের রাগ চূড়ান্ত মাত্রা অতিক্রম করলো। তুড়ি বাজিয়ে বলল,
~ লিসেন মি.মাহমুদ সিদ্দিকি, ব্রেকআপ আমি করেছি, আমি! মেহরিন শারাফাত!
তারপর আঙ্গুলটা মাহমুদের বুকে ঠেকিয়ে বলল,

~ তোমার অতো ক্ষমতা নেই তুমি মেহরিন শারাফাতকে ডিচ করবে! সো ভেবে চিন্তা কথা বলবে।
মাহমুদ একদৃষ্টিতে ওর তুলে রাখা আঙ্গুলটার দিকে চেয়ে রইলো। তারপর?
ঠাস করে চড় পড়লো মেহরিনের গালে! মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো তার, কানের কাছে ভন ভন আওয়াজ শুরু হলো। গালে হাত দিয়ে অগ্নিদৃষ্টিতে মাহমুদের দিকে তাকিয়ে আছে। মাহমুদ সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে বলল,

~ ~ ‘আমি ব্রেকআপ করেছি’ লজ্জা করলো না এই কথাটা বলতে? অকৃতজ্ঞ বেইমান! ভালো যদি না ই বাসতে পারলে তাহলে রিলেশন করেছিলো কেন? কেন রিলেশনের আগে আমার বাবা, চাচা সবার খোঁজ নিলে না? আমাকে দেখে যখন রিলেশন করেছো তখন আমার ইচ্ছের কোন দাম দিলে না কেন? কেন আমার কি হবে সেই কথা একবারও ভাবলে না? কেন?
এগিয়ে এলো মাহমুদ। ধমক দিয়ে বলল,
~ বলো কেন? আমি কি দোষ করেছিলাম?

আমার দোষটা কোথায় ছিলো? চারবছর আমি কিভাবে কাটিয়েছি জানো তুমি? জানো না। জানার দরকারও নেই। তুমি তোমার মত থাকো, আমি আমার মত! এনাকে নিয়ে খুব ভালো আছি আমি। খুব!
মেহরিন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখে পানি টলমল করছে। টলমল করছে মাহমুদের চোখেও। মেহরিন বাধা পড়ে আছে দুঃখিনী মায়ের ভালোবাসার কাছে। আর মাহমুদ পড়ে আছে নেশার ঘোরে এনার সাথে জড়িয়ে যাওয়া ভুলের কাছে!

দুজনেরই অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করছে। মাহমুদের বলতে ইচ্ছে করছে,
~ “আমি এখনো তোমাকে ভালোবাসি মেহরিন, অনেক ভালোবাসি।”
আর মেহরিন?

ওর ইচ্ছে করছে মাহমুদের গলা জড়িয়ে ধরে বলতে চিৎকার করে বলতে,
~ “আমার উপায় নেই মাহমুদ! আমি নিরুপায়! কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমার সাথে এনাকে দেখলে আমার কষ্ট হয়, খুব কষ্ট হয়! অফিসে যখন তোমরা দুজনে একসাথে আসো, একসাথে বেরোও, এনা যখন তোমাকে জড়িয়ে ধরে তখন মেহরিনের বুকটা কষ্টে ফেটে যায়, নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় ওর! খুব কষ্ট! সেটা তুমি জানো না মাহমুদ। জানবেও না। তুমি তোমার মত ভালো থাকো, তবে মেহরিন ভালো নেই। একদম ভালো নেই!”
কিন্তু কেউই কিছু বলতে পারলো না। মাহমুদ গাড়ি দরজা খুলে দিয়ে বলল,
~ “ওঠো দেরী হয়ে যাচ্ছে।”

চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলো মেহরিন। মাহমুদও খানিকক্ষণ চুপ করে রইলো। তারপর অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বলল,
~ সরি! আমি তোমার গায়ে হাত তুলতে চাই নি।
মেহরিন জবাব না দিয়ে চুপচাপ বাইরের দিকে চেয়ে রইলো। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো বুক চিরে।

পর্ব ৫

শেষরাতের দিকে বাসায় ফিরলো মাহমুদ। নেশায় বুঁদ হয়ে টলছে সে, কোন রকমে বেল বাজাতেই দরজা খুলে দিলো এনা। সারারাত অপেক্ষায় ছিলো বেচারী। অপেক্ষা করতে করতে তন্দ্রাভাব এসে গেছিলো, বেল বাজার শব্দেই দৌঁড়ে এসে দরজা খুলে দিলো।

মাহমুদকে দেখেই আতংকে চোখমুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো ওর। দরজায় দাঁড়িয়ে টলছে, গা থেকে এলকোহলের বিশ্রী গন্ধ আসছে।
এমন না যে মাহমুদ আগে কখনো ড্রিংক করে নি, কিংবা এনা সেটা দেখে নি। তবে এমন বেহাল অবস্থায় শুধু একবারই দেখেছিলো। যেবার ওরা ফিজিক্যালি…। ড্রিঙ্ক করলেও মাহমুদ সচরাচর মাতাল হয় না। আজকে নিশ্চই অনেক বেশি নিয়ে ফেলেছে।

মনখারাপ হয়ে গেলো ওর। সারারাত সে অপেক্ষা করে বসে ছিলো, আর মানুষটা কি না বাইরে বসে ড্রিংক করছিলো। কান্না এসে গেলো ওর।
কান্না চেপে দ্রুত মাহমুদকে রুমে ঢোকানোর চেষ্টা করলো সে। তখনই মাহমুদ গর্জে উঠল,
~ ডোন্ট টাচ মি! আই ক্যান গো মাইসেল্ফ!
~ মাহমুদ? হতবাক দৃষ্টি এনার।

মাহমুদ এনাকে পাশ কাটিয়ে টলতে টলতে ভেতরে ঢুকে গেলো। এনা তার পেছন পেছন ঢুকলো। বেডরুমের সামনে এসে মাহমুদ হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে নিলো কিন্তু এনা ধরে ফেলেছে। ঝটকা দিয়ে ওর হাত সরিয়ে দিলো মাহমুদ। হেলেদুলে বিছানায় গিয়ে বসলো। এনা দ্রুত ডাইনিং এ গিয়ে লেবুর সরবত নিয়ে এলো। মাহমুদের সামনে ধরতে গোঁজমুখে জিজ্ঞেস করলো,
~ “হোয়াট ইজ দিস?”

~ “লেমন জুস!”
মাহমুদ হাত দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিলো। এনা আবারও জোর করতেই নেশাযুক্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
~ “হোয়ার আই এম? এম আই ইন হেল?”
~ “না তুমি তোমার বাসায় আছো।”

মাহমুদ ওর কথা শুনতে পেয়েছে কি না কে জানে। সে বিড়বিড় করে তার মতই বকছে,
~ ‘ব্রেকাপ আমি করেছি, আমি! মেহরিন শারায়ায়াফাত্! মি.মাহমুদ সিদ্দিকি আপনার এত ক্ষমতা নেই অাপনি মেহরিন শারাফাতকে ডিচ করবেন। ‘ মেহরিন শারাফাত মাই ফুট!
বলার সময় বাম পা তুলে মেঝেতে সজরে আঘাত করলো সে। এনা হতবম্ভ, বিস্ফোরিত নয়নে চেয়ে আছে। তবে কি মাহমুদের ভালোবাসার মানুষটা সে নয়? মেহরিন?

এগিয়ে এলো সে। মাহমুদের পায়ের কাছে হাটুমুড়ে বসলো। ছলছল চোখে বলল,
~ “ডোন্ট ইউ লাভ মি?”

মাহমুদের চোখদুটো আগুনলাল হয়ে আছে। সারা গা ঘামে ভিজে একাকার। এনার মুখের দিকে তাকিয়ে ঢুলতে ঢুলতে প্রশ্নখানা করলো সে,
~ “আর ইউ মেহরিন?”

চমকে উঠলো এনা। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
~ “না! আমি এনা।”
~ “এনা? হু ইজ এনা? এই এনা টা কে?”

~ “তুমি আমাকে চিনতে পারছো না মাহমুদ?”
মাহমুদ জবাব না দিয়ে দুপ করে বিছানায় শুয়ে পড়োলো।

এনা অবাক হয়ে চেয়ে রইলো ওর দিকে। এক্ষুনি রুম থেকে বেরিয়ে কান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো সে। কিন্তু মাহমুদকে দেখে ওর চেয়েও বেশি অসহায় লাগছে। চোখদুটো প্রচন্ড লাল হয়ে আছে। ওর চোখের চোখ রাখতেই বিষন্নতা অনুভব করলো এনা। ও মাই গড! মাহমুদের চোখে পানি? বিড়বিড় করছে মাহমুদ,
~ “আই নিড সাম পিচ, আমার শান্তি চাই। হোয়ার ইজ শান্তি? শান্তি কোথায়? সি ডিচড মি! আমি তাকে কখনো ক্ষমা করবো না।”

ঘুমন্ত মাহমুদের বিছনার পাশে চেয়ার টেনে সারারাত বসে রইলো এনা। মাহমুদের ঘুম ভাংলো সকাল সাতটায়। পাশেই এনাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে চমকে উঠলো সে। ওর মাথায় বালিশে কপাল ঠেকিয়ে চেয়ারে বসে ঘুমাচ্ছে এনা।

গতকাল রাতে কি ঘটেছিলো? এনা এভাবে বসে আছে কেন? সে কি এনার সাথে কোন খারাপ ব্যাবহার করেছে? মাথার ভেতর একগাদা প্রশ্ন কিলবিল করছে, অনুশোচনা হচ্ছে। কালরাতে মেহরিনের ঝগড়ার পর সে ড্রিংক করেছে আর কিচ্ছু মনে নেই! নিজের ওপর মায়া হচ্ছে মাহমুদের! এনএসআই সবচেয়ে সাহসী এজেন্ট হিসেবে সবার কাছে পরিচিত সে। অথচ ভেতরে ভেতরে কতটা দুর্বল! .নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে ওর!
এনার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। স্বাভাবিক ভাবেই ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গেলো সে। কফি হাতে ফিরে এসে দেখলো মাহমুদ কপালে হাত রেখে শুয়ে আছে। এনা পাশে বসে কপালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো,
~ “তোমার কি এখনো শরীর খারাপ লাগছে? মাথাব্যথা?”

কপাল থেকে হাত সরালো মাহমুদ। হালকা হেসে বলল, “কালরাতে বেশি হয়ে গেছিলো বোধহয়! মাথাটা ঝিনঝিন করছে। দাও কফি দাও!
এনাকে কিছু জিজ্ঞেস করবে কি না দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে সে। জিজ্ঞেস করাটা কি সমীচীন হবে? এনার মুখ দেখে তো কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। আড়চোখে বারবার এনার হাবভাব বোঝার চেষ্টা করলো সে। কিন্তু এনা তাকে নিরাশ করলো। সে তো হাসি মুখে মাহমুদের দিকে চেয়ে আছে।

এনা একদৃষ্টিতে চেয়েই রইলো। কি সুন্দর লাগছে মাহমুদকে? সবসময় মুখে হাসি লেগে থাকে। ওকে দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। জানলা দিয়ে একফালি রোদ এসে মাহমুদের মুখে পড়ছে। কপালের ওপর চুলগুলো রোদের আলোয় চিকচিক করছে! ফর্সা মুখটা রোদের আলোয় হলদে হলদে লাগছে! কি সুন্দর মুখ! অথচ ভেতরে ভেতরে কতটা অসহায় সে!

সকাল নয়টায় এসে অফিসে হাজির হলো মাহমুদ। মেহরিন এখনো আসে নি। ইরফান সাহেব ক্ষেপে আছে ওর ওপর, অফিসে এসেই সেই খবর শুনলো মাহমুদ।
ওর আসার কিছুক্ষন পরই অফিসে এসেছে এনা। শাড়ি পরে এসেছে সে, হাসিহাসি মুখে সবার সাথে কথা বলছে। এনার হঠাৎ অতিরিক্ত উচ্ছলতা মাহমুদকে খানিকটা ভাবাচ্ছে। হাজার চেষ্টা করেও সে কালরাতের কথা মনে করতে পারলো না। টাইপরাইটার সোনিয়ে এসে দরজায় টোকা দিলো,
~ “স্যার?”
~ “কিছু বলবে সোনিয়া?”

~ “আপনারা আসার আগে নাকি, বসের সাথে মেহরিন ম্যামের ঝামেলা হয়েছে। ম্যাম রেগে বেরিয়ে গেছেন, সাথে ফোন, পার্স কিছুই নেন নি। অফিসের সবাই টেনশনে আছে। উনার যা রাগ কোন অঘটন না ঘটিয়ে ফেলেন। এদিকে বসের ভয়ে কেউ উনার খোঁজে যেতেও পারছেন না। আপনি একটু দেখুন না! আপনাকে নিশ্চই বস মানা করবেন না? গিয়ে দেখুন না স্যার ম্যাম কোথায় বেরিয়ে গেছেন।”

~ “তুমি এখানে চুপচাপ বসে আছো? ওদিকে তো তুফান হয়ে যাচ্ছে।”

হাতে চায়ের কাপ নিয়ে ভেতরে ঢুকে কথাটা বলল এনা।
~ “কেন কি হয়েছে?”
~ “মেহরিন আপু বসের সাথে রাগ করে বেরিয়ে গেছেন। তুমি একবার গিয়ে খোঁজ করো না?”

মাহমুদ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল,
~ “আমি কি করে জানবো সে কোথায় গেছে? আমার সাথে তার কোন কথা হয় নি।”

মাহমুদের আশ্চর্য একটা ক্ষমতা আছে, মনের অস্থিরতা সে খুব সুন্দর করে চেপে রাখতে পারে, কিন্তু আজকে পারলো না। ধরা সে খেলোই, এই যে এনা তাকে রঙ চায়ের বদলে দুধ চা দিয়েছে, এবং তাতে আদা এলাচ সব মিশিয়েছে তা নিয়ে কোন ধরনের প্রতিবাদ করছে না সে। অথচ দুধ চায়ের গন্ধটাও সে সহ্য করতে পারে, তার এই নির্লিপ্ত থাকার ভানটা এনা খুব সহজেই ধরে ফেললো এক কাপ চা দিয়ে।

মাহমুদ বলল,
~ “সোহাগ অফিসে এসেছে?”

~ “না, উনাকে তো দেখিনি, এখনো আসে নি বোধহয়।”
~ “তাহলে সোহাগের বাসাতেই গেছে।”

~ “তুমি তাহলে এক্ষুনি একবার সোহাগ ভাইকে ফোন করে দেখো। তাড়াতাড়ি করো মাহমুদ। আমার টেনশন হচ্ছে!”
মাহমুদ সোহাগের নাম্বারে ডায়াল করলো। সাথে সাথে ফোন রিসিভ করলো সোহাগ,
~ “আই এম অন দ্যা ওয়ে স্যার। আমি রাস্তায়! জ্যামে আটকা পড়েছি।”

মাহমুদের মুখে চিন্তার রেখা ফুটে উঠলো। থমথমে কন্ঠে বলল,
~ “তোমার সাথে কি মিস মেহরিনের কথা হয়েছে?”
~ “না তো স্যার। কেন?”

~ “সি ইজ মিসিং!”
আকাশ থেকে পড়লো সোহাগ। চেঁচিয়ে উঠে বলল,
~ “মিসিং মানে?”

~ “মিসিং মানে। সে বসের সাথে রাগ করে বেরিয়ে গেছে। ফোন পার্স সব ফেলে রেখে গেছেন। অফিসে এসো জানতে পারবে।”
~ “ঠিক আছে স্যার।”

মাহমুদ ফোন কেটে দিয়ে বলল,
~ “আমি বরং একবার বসের সাথে দেখা করে আসি।”
~ “হ্যাঁ তাড়াতাড়ি যাও।”

ইরফান আহমেদের সংক্ষেপে যেটুকু বললেন, তার সারমর্ম হচ্ছে আজকে সকালে মেহরিন এসে উনাকে জানালো সে চাকরী থেকে রিজাইন নেবে। হঠাৎ কি কারনে সে রিজাইন করতে চাইছে তাই নিয়ে প্রশ্ন করলে ব্যক্তিগত কারণ দেখালো মেহরিন। কারণটা ইরফান আহমেদের কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয় নি। মেহরিন জানিয়েছে ফ্যামিলি থেকে তাকে এই চাকরী ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রেশার দেওয়া হচ্ছে। চটে গেলেন ইরফান আহমেদ, এটা কোন কথা হলো?

মেয়েকে চোখের সামনে দেখতে পাওয়ার
একমাত্র অবলম্বন হচ্ছে অফিস। লায়লা শারাফাতের কঠোর নির্দেশ তিনি যেন কোনভাবেই বাড়ির ত্রিসীমানায় না ঘেঁষেন। যদি কোনভাবে তিনি জানতে পারেন ইরফান আহমেদ তার বাসায় গিয়েছে মেয়েকে নিয়ে আবার নিরুদ্দেশ হবেন তিনি। এই ভয়ে ইরফান আহমেদ কখনো উনার বাড়িতে যান নি। তবে মেহরিন চাকরী ছেড়ে দিলে তার সাথে উনার সবরকম যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে তাই তিনি কোনভাবেই চাইছিলেন না মেহরিন চাকরীটা ছেড়ে দিক।

কিন্তু মেহরিন চাকরী ছাড়বেই। এই প্রথমবারের মত ইরফান আহমেদকে মুখের ওপর কিছু কটু কথা শুনিয়ে দিয়ে সে রেগে বেরিয়ে গেছে। টেনশন হচ্ছে ইরফান আহমেদের, এই মেয়ে দারূণ একরোখা! কি করতে কি করে বসে তার ঠিক নেই।

উনি বিগলিত কন্ঠে মাহমুদকে বললেন,
~ “তুমি যাও তো না মাহমুদ! দেখো না, ধরে আনার ব্যবস্থা করতে পারো কি না। কোথায় গেছে কে জানে?”

এনা হাসলো। ইরফান আহমেদ ইমোশনাল হয়ে গেছেন। এই মুহূর্তে এনা ছাড়া অন্য যে কেউ থাকলেও ধরা খেয়ে যেতেন তিনি। হি ইজ ডুয়্যিং লাইক আ ফাদার! অথচ মেহরিন আপু কিচ্ছু বোঝে না। দুনিয়ার সব কিছু তার চোখে পড়ে, অথচ দুজন মানুষ যে সারাক্ষণ ওর চিন্তায় অস্থির থাকে সেটা তার চোখে পড়ে না। পড়বেও না। উনি আসলেই খুব বোকা। কিন্তু একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে ইরফান আহমদের নিজের মেয়ের পরিচয় দিচ্ছে না কেন?

মাহমুদ তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াল। মেহরিনের যাওয়ার মত সম্ভাব্য যাওয়াগুলো মনে করে নিলো সে। বাসায় এখন যাবে না, কোন বন্ধুর বাসাও যাবে না। তাহলে কোথায় যেতে পারে? রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর মত মেয়ে মেহরিন না।
ফোন নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলো সে। বেরোনোর সময় ইরফান আহমেদ বললেন, ” যদি পাও ধরে সোজা আমার কাছে নিয়ে আসবে।”

নরম গলায় বললেন, “তুমি বেশি বকাবকি করো না। জানো তো এমনিতেই মেজাজি। আসলে আমি বুঝতে পারি নি ও এতটা ডিপ্রেশনে আছে। আমি ভেবেছিলাম শী মাইট বি স্ট্রং! আমি এদিকের কাজকর্ম সব গুছিয়ে নেই, তারপর পাক্কা ছমাসের জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করবো ওকে। ট্রেনিং দরকার ওর, কড়া ট্রেনিং। অলস থেকে থেকে মস্তিষ্কে জং ধরে গেছে মেয়ের। আমাকেই ঠিক করতে হবে।! যাই হোক তুমি আর দেরী করো না যাও।”

দরজা খুলে আগে রুমে ঢুকলো মাহমুদ। তারপর ওপর তলার সিঁড়ি বেয়ে সোজা ছাদে উঠলো, মুখগোমড়া করে এক অনিন্দ্যসুন্দর যুবতি মেয়ে ওর ছাদের রেলিং ঘেষে নিচে বসে আছে। হাঁটুর ওপর মাথা রেখে তপ্ত রোদে নিজেকে পোড়াচ্ছে সে। মাহমুদ ধীর পায়ে তার কাছে এগিয়ে গেলো।
~ “কি ব্যাপার এনা? শরীর ঠিক আছে তোমার? রোদে বসে আছো যে?”

মুখ তুলে তাকালো এনা। রোদে মুখ লাল হয়ে গেছে ওর! হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে উঠে দাঁড়াল সে। শান্ত গলায় বলল, “আমি ঠিক আছি, তোমার কি খবর? মেহরিন আপুকে পেয়েছো?”

~ “হ্যাঁ। সাথে করে নিয়ে এসেছি। ড্রিংক করেছে, নেশায় হাটতে পারছিলো না। তাই নিয়ে এসেছি। আমার গায়ে বমি করে দিয়েছে। তুমি কি ওর জামাকাপড় গুলো চেইঞ্জ করে দিতে পারবে?”

~ “পারবো। আমি এক্ষুনি যাচ্ছি!”
মাহমুদ কৃতজ্ঞতায় ওকে জড়িয়ে ধরতে গেলো এনা আঁতকে উঠে বলল, “এই! এই! সাবধানে! আগে চেইঞ্জ করে নাও! গাভর্তি বমি দিয়ে আমাকে মাখামাখি করার দরকার নেই।”

লাজুক হাসি হাসলো মাহমুদ। প্রতিউত্তরে এনাও হাসলো।

টেবিলে খাবার দিতে দিতে এনা জিজ্ঞেস করলো, “মেহরিম আপুকি রেগে গেলে সবসময় এমন ড্রিংক করেন?”

~ “আরে নাহ! এলকোহলের ঘোরতর বিরোধী সে। অফিসিয়াল পার্টিগুলোতে আমরা টুকটাক ড্রিংক করলেও চোখমুখ উল্টে এমন ভাব ধরতো যেন আমরা এলকোহল না মানববিষ্ঠা গ্রহন করছি! .তবে আজকে ওকে মাতাল অবস্থায় দেখে আমিও বেশ অবাক হয়ে গেছি। যেই মেয়ে এলকোহলের ধারে কাছে পর্যন্ত যেত না সে ক্লাবে ঢুকে ড্রিংক করছে? স্ট্রেঞ্জ! প্রথমে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেছিলো, ভেবেছিলাম তখনই গালে দুইতিনটা বসিয়ে দিই! কি পরিমান খাটতে হয়েছে তুমি জানো? ।”
~ “কিন্তু উনাকে পেলে কি করে?”
মাহমুদ সতর্ক ভাবে বলল, “সিক্রেট ব্যাপার। বলছি দাঁড়াও! তুমি আবার ওকে বলে দিও না কিন্তু, তাহলে ভূমিকম্প ঘটিয়ে দেবে সে।”
~ “বলবো না।”

~ “বসের নির্দেশে আমি আর সোহাগ মিলে ওর গাড়িতে একটা ট্র‍্যাকার লাগিয়ে দিয়েছি। যাতে ওর গতিবিধি পর্যবেক্ষন করতে পারি!”
~ “ডু ইউ লাভ হার?” সরাসরি প্রশ্ন করলো এনা।

ধাক্কা খেলো মাহমুদ। এনা জানলো কি করে? মেয়েদের সিক্স সেন্স কি এতটাই প্রবল?
~ “কি হলো মাহমুদ?”

আর লুকিয়ে লাভ নেই। মাহমুদ মাথা নিচু করে সম্মতি জানালো। এনার কোন রিয়েকশন নেই। সে মিষ্টি হেসে বলল,
~ “আমি সব জানি। আমাকে সোহাগ ভাই সব বলেছে।”
~ “সোহাগ?”

~ “ইয়েস সেদিন পার্টিতে মেহরিন আপুর সাথে ঝামেলা হওয়ার পরপরই সোহাগ ভাই আমাকে ডেকে সব কথা বলেন। তারপর আমরা দুজন সিদ্ধান্ত নেই তোমাদের দুজনকে এক করবো।”
~ “মানে?”

~ “মানে আমার আর তোমার মাঝে যা হয়েছিলো সব ভুলে যাও। আমি যদি সেদিন তোমার বাসায় না যেতাম তাহলে বোধহয় এমন কিছুই হতো না।”
~ “কিন্তু তুমি?”
~ “আমি? আমি নিশ্চিই অনেক ভালো কিছু ডিজার্ভ করি?

একটা মানুষ কেবলমাত্র দায়বদ্ধতার জন্য আমার কাছে পড়ে থাকবে সেটা আমি মানতে পারবো না!”
মাহমুদ এনার হাতদুটো চেপে ধরে ফুঁপিয়ে উঠে বলল,
~ “বিশ্বাস করো এনা, আমার সেদিন মনে হয়েছিলো আমার সামনে মেহরিন দাঁড়িয়ে। আমি মেহরিন ভেবে…নেশার ঘোরে নিজেকে সামলাতে পারি নি। আই এম সরি! এক্সট্রিমলি সরি! আমি অনেক বড় ভুল করেছি। তুমি যা শাস্তি দেবে আমি মাথা পেতে নেবো।”
পুরো কথাটা শেষ করতে পারলো না সে। ধরে এলো গলা।

এনা বলল,
~ “আমি জানি। সেদিন বোধহয় তোমার মেহরিন আপুর সাথে ঝগড়া হয়েছিলো না? কি নিয়ে?”
~ “সে আমার গালে চড় মেরেছিলো।”
~ “কেন?”

~ “আই কিসড হার! আমি ওদের বাসায় গিয়েছিলাম। তখনও আমি চাচ্চু আর ছোটমার সম্পর্কটা জানতাম না। টানা চারবছর আমি মেহরিনের পেছনে ঘুরেছি। সেদিনও আমি গিয়েছিলাম ওকে বোঝাতে। কিন্তু সে আমাকে বাসার ভেতরেই ঢুকতে দেয় নি। তাই রাগের মাথায় তাকে চুমু খেয়েছিলাম। তারপরই কষে আমার গালে চড় লাগালো। সেখান থেকেই তোমার সাথে সম্পর্কের সূত্রপাত!”
মেহরিনদের বাসা থেকে বেরিয়ে সেদিন মাহমুদ রাগের মাথায় প্রচুর ড্রিংক করে।

এনা তখন সবে নতুন জয়েন করেছে। মাহমুদের কথাবার্তা, কিলার টাইপ এটিচিউড, কর্মদক্ষতা, মেয়েদেরকে এড়িয়ে চলা, এইসব গুনগুলো ওকে মাহমুদের প্রতি কিছুটা দুর্বল করে দিয়েছিলো। অফিসের একটা ফাইল নিয়ে সেদিন মাহমুদের বাসায় এসেছিলো সে। মাহমুদকে অসহায়, মাতাল অবস্থায় দেখে ওকে হেল্প করতে গিয়েই যত গণ্ডগোল বাধে। হুশ ফেরার পর মাহমুদ নিজের কৃতকর্মের দায়ভার মাথা পেতে নেয়।

এনার সম্মতিক্রমে সেদিনই সে ঘোষনা দেয় ওরা দুজন রিলেশনশীপে আছে। কিন্তু এনা সেদিনও বুঝতে পারে নি সবটাই মাহমুদের অনুশোচনা ছিলো। কিন্তু এখন বুঝতে পারছে। আর বুঝতে পারার পরই তার দমবন্ধ হয়ে আসছে। মাহমুদের সাথে এই মিথ্যে সম্পর্কটা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
~ “বুঝলাম। তবে তোমার কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে।”
~ “কী?”

~ “তুমি আর কখনো ড্রিংক করোনা প্লিজ!”
মাহমুদ মাথা নিচু করে বসে আছে। এনা ওকে আশ্বস্ত করে বলল,
~
“আমি চাই মেহরিন আপু আবার তোমার লাইফে ফিরে আসুক। তুমি সুখি হও!”
~ “কোন লাভ হবে না এনা। সে ফিরবে না। ছোটমা কখনোই আমাদের সম্পর্কটা মেনে নেবে না। মেহরিন তার মায়ের কথার বাইরে যাবে না। তারওপর এখন তো কোনভাবেই ফিরবে না। মেহরিন জানে আমি তোমার সাথে ফিজিক্যালি ইন্টিমেট হয়েছি। আর কিছুতেই ফিরবে না সে।”

~ “ফিরবে ফিরবে। তুমি শুধু দেখো না। আমি কীভাবে তার পেটের কথা মুখ দিয়ে বের করি? আচ্ছা একটা কথা বলতো বস মেহরিন আপুর পরিচয় দিচ্ছেন না কেন?”
~ “ছোটমায়ের নিষেধ আছে।”

লেখা – অরিত্রিকা আহানা

চলবে

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “জেরি ভার্সেস টম – রোমাঞ্চকর রহস্য গোয়েন্দা গল্প” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – জেরি ভার্সেস টম (শেষ খণ্ড) – রোমাঞ্চকর রহস্য গোয়েন্দা গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *