বৈধ ধর্ষন – ফুলশয্যার রাতে

বৈধ ধর্ষন – ফুলশয্যার রাতে: রাতে একি ঘটনা! আমাদের সমাজে স্নিগ্ধার মতো অনেক মেয়েই আছে যারা প্রতি রাতে এই ভাবে ধর্ষণ হয়। কিন্তু এই ধর্ষকদের কোনো বিচার হয় না। কারন তারা সামাজিক ভাবে তার বৈধতা পেয়েছে। যার নাম হলো বিয়ে।


পর্ব ১

স্নিগ্ধা সালেহা বেগম আর মেহেতাব হোসেনের বড় মেয়ে।
স্নিগ্ধারা দুই বোন।

স্নিগ্ধার ফুপি ওকে প্রথম বার কুলে নিয়ে তার একমাত্র ছেলে নিলের জন্য ঠিক করে রেখেছে।
স্নিগ্ধা যখন বুঝতে শিখেছে তখন থেকে ওকে বলে দেওয়া হয়েছে যে নিল হবে ওর বর।

কি আজব না ব্যপারটা যে সময় মেয়েটা বর। বিয়ে এইসব কিছু বুঝেনা। নিজের জলাপাতি খেলতে ব্যস্তো তখন ওকে এইগুলো বলা হতো।
নিল স্নিগ্ধা থেকে প্রায় ১৫ বছের বড়। তাই স্নিগ্ধার আম্মু আর মামা বাড়ির সবাই রাজি ছিলো না কিন্তু স্নিগ্ধার বাবা তার বোনকে মানা করতে পারেনি।

আজকে স্নিগ্ধার এসএসসি পরিক্ষা শেষ হয়েছে আজ আর আজকে হুট করে ওর ফুপির শরিলটা খারাপ হয়ে গিয়েছে।
আর সে চায় যতো তারাতারি সম্ভব স্নিগ্ধা আর নিলের বিয়েটা হয়ে যায়।
তাই সবাই পরশু শুক্রবার স্নিগ্ধা আর নিলের বিয়ে ঠিক করেছে।
কিন্তু?

কিন্তু স্নিগ্ধার মামারা কারো এই বিয়েতে সম্মতি না থাকায় তারা কেউ এই বিয়েতে আসবে না।
স্নিগ্ধার মা যখন ওর ফুপিকে বললো যে স্নিগ্ধা এখন অনেক ছোটো ওর ইন্টারের পরে বিয়েটা দিলে হতো না?
ফুপি (নিলের মা):আমরা পরশু কাবিন পরিয়ে রাখি। আর ইন্টারের পরে অনুসঠান করবো।
এই কথা শুনে স্নিগ্ধার মাও রাজি হয়ে গেলো।
আর ওইখান দিয়ে স্নিগ্ধার অজান্তে সবাই ওর লাইফের সব থেকে বড় সিধান্ত নিয়ে নিলো।

বিয়ের দিন….

স্নিগ্ধার মা ওকে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছে আর স্নিগ্ধা কান্না করে যাচ্ছে।
স্নিগ্ধার মা ওকে জড়িয়ে ধরেছে।
স্নিগ্ধার মার ও অনেক কান্না পাচ্ছে কিন্তু সে এখন কান্না করলে স্নিগ্ধাকে কে সাম্লাবে?
তাই বুকে কষ্ট চেপে স্নিগ্ধাকে সান্তোনা দিচ্ছে।

স্নিগ্ধার মাঃ আরে আমার বোকা মেয়ে কান্না করে না। শুধুতো কাবিন করবে। তুই আমার কাছেই থাকবি।
বলে স্নিগ্ধার কপালে একটা চুমু দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। কারন সে আর নিজেকে শক্ত রাখতে পারবে না।
কাবিন হলো।

নিল কে দেখে বুঝাই যাচ্ছেনা নে আজকে ওর বিয়ে। বন্ধুদের সাথে হাসাহাসি করে কথা বলছে। এমনকি কিছুখন আগে নিচে গিয়ে স্মোক করে এসেছে। দেখতে সুদর্শন হলে কি হবে মেনাস নেই বললেই চলে।

আর ভাব এর কথা তো বইলেনই না।
মোটা অংকের সেলারি পায়+ সুদর্শন আবার ঢাকায় বাবার বাড়ি আছে।
তাই সে ভাবে সব মেয়েরা তার জন্য পাগল।

আর স্কুল থেকে ভার্সিটি পর্যন্ত কয়টা প্রেম করেছে তার নিজের ও হিসাব নেই।
আর কালকে রাতেও একটা মেয়ের সাথে থুক্কু তার ইক্স গিফ এর সাথে ব্রেকাপ পার্টি রাতে দেরি করে বাসায় ফিরেছে।
কিন্তু সবাই ভাবে সে ভাজা মাছ উলটে খেতে পারে না।
আর স্নিগ্ধা হলো মা বাধুক একটা লাজুক মেয়ে। স্কুলে তেমন ভালো ফ্রেন্ডও নেই।
ওর যা কথা সব ওর মার সাথে।

ছেলে পক্ষ বিদাইয়ের কিচ্ছু খন আগে স্নিগ্ধার ফুপা-ফুপি ওর দাদি আর বাবাকে বলে যে ওরা আজকে স্নিগ্ধাকে নিয়ে যেতে চায়।
কিছুদিন পরে দিয়ে যাবে।
এই খবর স্নিগ্ধার মার কানে যাওয়া মাত্র সে মানা করে দেই।
কিন্তু স্নিগ্ধার বাবা বলে আপনাদের বাড়ির বউ আপ্নেরা নিয়ে যান।
আমাদের কোনো অপত্তি নেই।

স্নিগ্ধার বিদাইয়ের সময় ওর চোখ দুটা শুধু ওর মা কে খুজেছে। কিন্তু মাকে দেখতে পায়নি।
কারন মেয়ের সাথে সে চোখ মিলাতে পারবে না আর মেয়েকে এই ভাবে যেতেও দেখতে পাবে না তাই মা সামনে যায়নি।
গাড়িতে যখন স্নিগ্ধা ফোপিয়ে ফোপিয়ে কান্না করছিলো তখন নিল বলে উঠলো।
নিলঃ তুমি একটু কান্না থামাবা?

তোমার কান্নার আওয়াজে আমার মাথা ব্যথা করছে।
নিলের কথায় স্নিগ্ধা মুখে হাত দিয়ে চেপে। কান্না করছে।
স্নিগ্ধাকে নিলের রুমে নিয়ে বসানো হলো।

কখন থেকে স্নিগ্ধা রুমে বসে আচ্ছে আর চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ফুল দিয়ে সাজানো রুমটা দেখছে।
স্নিগ্ধার কেমন জানি অস্থির লাগছে। অনেক কান্না করার ফলে প্রচুর মাথা ব্যথা করছে।
এমন সময় নিল রুমে আসলো।


পর্ব ২

নিলের রুমে আসার পর স্নিগ্ধা উঠে গিয়ে ওকে সালাম করলো। (ভাবি শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছে)
নিল স্নিগ্ধাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে আলমারি থেকে কি জানি বের করতে লাগলো।
একটা সাদা চাদোর বের করে স্নিগ্ধাকে দিলো।
নিলঃ এটা বিছানায় বিছাও।

স্নিগ্ধাঃ এইটা কেনো বিছাবো? যে চাদোরটা আছে ওইটা তো এর থেকে ভালো।
নিলে একটান দিয়ে ফুল সহ বিছানার চাদোর তুলে ফেললো।
তোকে যা বলেছি তা কর।
স্নিগ্ধা নিলের এমন বিহেভ দেখে অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছে। কাপা কাপা হাতে সাদা চাদোর টা বিছাতে না বিছাতে। ।
নিল স্নিগ্ধার এক ধাক্কায় বিছানায় ফেলে দিলো।

ধাক্কা দেওয়ার ফলে যে স্নিগ্ধা কোমরে ব্যথা পেয়েছে তার দিকে নিলের কোনো খেয়ালিই নেই। কারন সে এখন নিজের শারীরিক চাহিদা মিটাতে ব্যস্ত।
হ্যা শারীরিক চাহিদা। কিন্তু ও কি স্নিগ্ধার ব্যপারে এক বার ও ভেবেছে?
সারাটা দিন পিচ্চি মেয়েটার উপরে কি ধকলটাই না গেলো। আর রাতে ওর এই নরপশু মতো ব্যবহার।
এক কথায় বলতে গেলে ধর্ষণ করছে।
হ্যা ধর্ষণ।

যার বৈধতা ও আজকে সামাজিক ভাবে পেয়েছে।
স্নিগ্ধা চিৎকার করে কান্না করতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না। কারন বাসায় যে সাবাই আর মেহেমানরা কি ভাববে?
এতোটুক বুঝ পিচ্চি মেয়েটার হয়েছে।
স্নিগ্ধার শরিলটা কেমন যানি অবস হয়ে আসছে। আর চোখ বেয়ে বেয়েতো কখন থেকে পানি পরছে।
আর নিল ক্লান্তো না হয়ার পযন্ত স্নিগ্ধাও উপরে নিজের অধিকার খাটিয়ে নিলো। এক কথায় বৈধ ধর্ষণ করলো।
সকালে

নিল রেডি হয়ে কোথায় যেনো যাচ্ছে।
নিলের নাঃ কোথায় যাস বাবা?
নিল বিরক্তি মাখা কন্ঠে বললো।
অফিসে।
নিলের মাঃ সে কি। কালকে বিয়ে হলো আর আজকে তুই অফিসে জাচ্ছি।
এ কেমন কথা বাবা?

আর ঘর ভোরা মেহেমানরা কি বলবে?
নিলঃ দেখ মা তোমাদের এই নাটক আমার একদম সহ্য হচ্ছে না।
আর কে কি ভাবলো তাতে নিল চৌধুরির কোনো আসে-যায় না।
নিলের মা :বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনকে তুই নাটক বলে ছোটো করিসনা বাবা।

নিল বিরক্তিকর একটা দীঘ নিঃশ্বাস নিয়ে অফিসের জন্য বের হয়ে গেলো।
আর ভাবি (নিলের চাচাতো ভাইয়ের বউ) স্নিগ্ধাকে ডাকতে গিয়ে দেখে স্নিগ্ধা কুকরে শুয়ে আছে।
ভাবি গায়ে হাত দিয়ে ডাক দেওয়া মাত্র স্নিগ্ধা কেপে উঠলো।

বিছানার সাদা চাদোর আর চাদোরের লাগগুলো দেখে ভাবির বুঝতে বেগ পেতে হলো না যে কাল রাতে স্নিগ্ধার ভার্জিনিটির পরিক্ষা করা হয়েছে।
এই লাগগুলার কারনে নিল এই রকম শান্ত ভাবে অফিসে চলে গিয়েছে নয়তো বাসায় কেলেংকারি লাগিয়ে দিতো।
মানুষ চাঁদে চলে গিয়েছে কিন্তু আগের দিনের সাদা চাদোরের প্রথা এখন কিছু ছেলেদের মানুষিক প্রশান্তি। ।
ভাবতেই অবাক লাগে।

ভাবিও এই পরিক্ষার দিয়েছে কিন্তু সে তখন এটার ব্যপারে জান্তোনা। মনে হয় স্নিগ্ধাও জানে না।
অবশ্য স্নিগ্ধার মতো অনেক মেয়েরাই হয়তো এই বিষয় অজানা।
কারন মায়েরা এই ভেবে বলেনি হয়তো তাদের ডিজিটাল প্রযন্মে এই গুলো হবে না।
কিন্তু আপ্সোস তারা অনেকেই ভুল। ছেলেরা যতো মেয়ের সাথে রাত কাটাক না কেনো। বউ হিসেবে ভার্জিন মেয়েই তাদের চাই।
ভাবি স্নিগ্ধাকে উঠে বসানো মাত্র স্নিগ্ধা ভাবিকে জরিয়ে ধরলো।

স্নিগ্ধাঃ ভাবি আমি আম্মুর কাছে যাবো। আমি আমার বাসায় যাবো।
ভাবি স্নিগ্ধাকে অনেক কষ্টে সাভাবিক করলো।
ভাবির স্নিগ্ধার জন্য অনেক খারাপ লাগছে। কারন সে জানে যে নিল একটা অহংকারি। বেয়াদপ টাইপের ছেলে। নিলের ভাই (চাচাতো) যেমনি হোক তার (ভাবি) দিকে কতো খেয়াল রাখে আর নিল? কিভাবে পারলো বিয়ের পরের দিন নতুন বউ টাকে একা রেখে অফিসে যেতে।

ভাবি বুয়াকে দিয়ে গরম পানি করিয়ে এনে স্নিগ্ধাকে গুসুল করিয়ে দিলো।
স্নিগ্ধা নাস্তা খেতে চাচ্ছিলো না তাই নিজে নাস্তা খাইয়ে দিলো।
নিলের মাঃ রিমা (ভাবি) স্নিগ্ধাকে রেডি করে নিচে নিয়ে আসো।
সবাই ওকে দেখার জন্য অপেক্ষা করছে।
ভাবিঃ জি চাচিমা।

ভাবি স্নিগ্ধাকে রেডি করতে করতে বলে উঠলো।
ভাবিঃ এখন তোমাকে আর একটা পরিক্ষার সম্মুখীন হতে হবে।
স্নিগ্ধাঃ কি পরিক্ষা ভাবি?

ভাবিঃ এটাকে বলে নতুন বউ পরিক্ষা। যেমন ।
নিচে গিয়ে যদি চুপ থাকো তাহলে সবাই বলবে নতুন বউ কথা বলতে পারে না আর যদি সাভাবিক ব্যবহার কর তাহলে বলবে নতুন বউ বাচাল।
আস্তে কথা বললে বলবে এতো আস্তে কথা বলে কেনো আর জোরে বললে বলবে নতুন বউ এতো জরে কথা বলে?
নিচে জাওয়ার সময় সাবার নজর তোমার উপরে থাকবে। তোমার এক একটা জিনিস সবাই এমন ভাবে লক্ষ করেবে যে কোরবানির গরু কিনার আগে ওকে যে ভাবে লক্ষ্য করে।
তোমার যে কোনো ছোটো থেকে ছোটো ভুল তারা ধরারা চেষ্টা করবে।
স্নিগ্ধাঃ কেনো?

ভাবিঃ কারন সিরিয়াল দেখা ছাড়া তারা আর একটা কাজ করে তা হলো সমালোচনা।
যে কাজ টা করতে তারা অনেক আনন্দ পায়।
নিজের ঘরের মেয়ের থেকে তারা পারা প্রতিবেশির মেয়েদের খবর রাখতে বেশি পছন্দ করে।
স্নিগ্ধাঃ ভাবি মেয়েদের কেনো এতো পরিক্ষা দিতে হয়?
ভাবিঃ কারন এটাই আমাদে সমাজের প্রথা।

আমাদের কে মানুষ ভাবেনা। ভাবে মেয়েমানুষ।
মানুষ বলে গন্য করলে হয়তো এমন করে পরিক্ষা দিতে হতো না।
স্নিগ্ধা ভাবির কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো।
নিচে যাওয়া মত্র কয়েক জন স্নিগ্ধাকে পিঞ্চ করে কথা বলা বা মোটা মোটি বলা যায় হেরেজ করা জাকে বলে। যাকে ভদ্র সমাজে নাম দিয়েছে নতুন বউয়ের সাথে মজা করা।
কিন্তু এইক্ষেত্রে স্নিগ্ধার আনেরটা ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো স্নিগ্ধার শাশুড়ি।

রাতে…

স্নিগ্ধা ছাড়া সবার ডিনার করা শেষ। নিল এখনো বাড়ি ফিরেনি।
আর নতুন বউ তার বরকে রেখে খেয়ে নিলে সাবাই কি মনে করবে।
স্নিগ্ধার প্রচুর ক্ষুধা পেয়েছে।
নিজের রুমে বসে আছে। মার কথা অনেক মনে পরছে। তাই চোখের দুটো জলে চল চল করছে। এই সময় নিলের মা ওর কাছে আসলো।
নিলের মাঃ আম্মুর কথা মনে পরছে?

স্নিগ্ধাঃ হ্যা ফুপি।
নিলের মাঃ এখনো ফুপি বলে ডাকবি?
আর আমি কি তোর মা না?
এখন থেকে মা বলে ডাকবি। কেমন?
আর এখনতো রাত হয়ে গিয়েছে কাল সকালে ফোন করে কথা বলে নিও।
স্নিগ্ধাঃ জি মা।

মাঃ দেখমা আমি জানি আমার ছেলেটা খুব কেয়ার লেস। কিন্তু ও খারাপ না। আসলে ছেলেরা এমনি হয়।
কিন্তু বিয়ের পরে ধিরে ধিরে ঠিক হয়ে যায়।
নিল ও ঠিক হয়ে যাবে।
স্নিগ্ধাঃ (চুপ)
মাঃ নিল কিছুখনের মধ্যে এসে পরবে।
(বলে মা চলে গেলো)

স্নিগ্ধা কখন যে খাটে ঢেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে নিজেও টের পায়নি।
রাত যখন ১টা গেট খোলার শব্দে স্নিগ্ধার ঘুম ভেংগে যায়।
নিল এসেছে।
নিলকে দেখেই স্নিগ্ধা কেমন যানি ভয় লাগছে। হতে পারে কালকে রাতের ঘটনার জন্য।
ওতো জানে না এখন থেকে প্রায় প্রতি রাত ওর এই ঘটনার সাম্মুখিন হতে হবে।
একবার জিজ্ঞেসা পযন্ত করেনি যে তুমি রাতে খেয়েছো কিনা। কিন্তু সকালে….

ব্রেকফাস্ট টেবিলে….

ভাবিঃ তোমার অফিস তো ৭টা পযন্ত। বাসায় ফিরতে এতো রাত হলো যে?
নিলঃ কেনো সব সময় তো রাত করেই ফিরি। (মোবাইলে গেমস খেলতে খেলতে)
ভাবিঃ আগের কথা আলাদাছিলো। আগে তো বাসায় তোমার বউ থাকতো না।
কেউ তোমার জন্য না খেয়ে অপেক্ষা করতো না।

নিলঃ আমি বলেছিলাম অপেক্ষা করতে?
আর আমি কি করবো না করবো তার কইফোত নেওয়ার তুমিকে?
আমার মা?
ভাবিঃ এমন ভাবে বললা যে চাচিমা কে অনেক কইফোত দাও?
নিলঃ right।

আমি কি করবো বা কি করি তার কইফোত আমি কাউকে দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না।
কথাটা বলে নিল নিজের রুমে চলে গেলো।
মাঃ এখন এই সব কথা বলার কি দরকার ছিলো রিমা?
আমার ছেলেটাকে ঠিক করে নাস্তাও খেতে দিলা না।
ভাবিঃ কিন্তু চাচিমা

মাঃ এইগুলো অদের নিজেদের ব্যপার তুমি এর থেকে দূরে থাকো।
আর স্নিগ্ধা নিলের রুমে ওর জন্য নাস্তা নিয়ে যাও।
স্নিগ্ধা কাপা কাপা হাতে নাস্তার ট্রেটা নিয়ে নিজের রুমে গিয়ে দেখে নিল রেডি হচ্ছে।
স্নিগ্ধাঃ মা আপনাকে নাস্তা খেতে বলেছে।
(ট্রেটা টেবিলে রেখে)

নিল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে। স্নিগ্ধার কথা কানেই নিচ্ছে না।
স্নিগ্ধাঃ আপনি কোথাও যাচ্ছেন?
নিল স্নিগ্ধার কাছে গিয়ে।
নিলঃ কি বললা?

স্নিগ্ধাঃ না মানে মা বলেন আজকে আপনার অফিস ছুটি। তো কথাও যাবেন। (কাপা কন্ঠে)
নিল স্নিগ্ধার এক হাত মোচরে ধরে ওকে একদম নিজের কাছে নিয়ে আসলো।
নিলঃ আমি কইযাই না যাই তা আমি তোমাকে বলার প্রয়োজন মনে করি না।
আর কখনো আমি কি করি না করি এই সব প্রশ্নো করবা না।
মনে থাবে?

স্নিগ্ধা হাতের ব্যথায় কুকরে গিয়েছে। মুখ দিয়ে কিছু বের হহচ্ছে না। তাও মাথা যাকালো।
১ মাস পরে।
এই এক মাসে কিছু পরিবর্ত হয়নি।
নিল রাতে দেরি করে বাড়ি ফিয়ে। যলদি ফিরলেও নিজের কাজ বা টিভি দেখা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে।
স্নিগ্ধার জন্য কিছু আনার কথা মনে না থাকলেও পকেটে করে একটা জিনিস আনতে ভুল করে না ****।

সারাদিন স্নিগ্ধাকে একটা ফোন করে খবর নাওয়া তো দূরের কথা রাতে ও খেয়েছে কিনা তা পযন্ত জিজ্ঞেসা করে না।
কিন্তু নিল কি যানে ও যে শরীলটা উপভোগ করছে। সে শরিলের ভিতরে একটা মন আছে। যা ভালোবাসা চায়। চায় একটু স্নেহ।
সুধু *** এর জন্য নিল ওকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে। বিয়ে মানেকি শুধু মাত্র ***?
বিয়ের আগে স্নিগ্ধার মাসিকের সময়টা ওর কাছে অসহ্য লাগতো।


পর্ব ৩

এই এক মাস স্নিগ্ধা ভাবির সাথে থেকে অনেক টা ঘরের কাজ শিখে গিয়েছে।
বিয়ের আগে যে মেয়েটা
মাছ বেছে খেতে পারতো না সে এখন আনাম মাছ কেটে রান্না করতে পারে।
যার সকালে মা কয়েকবার না ডাকা পর্যন্ত ঘুম ভাংতো না। সে এখন সকালে সাবার আগে উঠে সাবার জন্য নাস্তা বানায়।
কি আজব ব্যপার তাইনা? বিয়ের পর মেয়েরা হঠাৎ করে কেমন জানি বুঝদার হয়ে যায়?
নাকি নিজের নিয়তি কে মেনে নিয়ে জীবন টাকে সহজ করতে চায়।
ভাবি আর স্নিগ্ধা যখন রাতে খাবার তৈরি করতে ব্যস্ত।

ডিংডং ডিংডং ডিংডং
স্নিগ্ধা গিয়ে দরজা খুলে দেখে নিল।
নিল স্নিগ্ধাকে এক ধাক্কা দিয়ে ঘরে প্রবেস করলো।
নিলঃ এতো সয়ম লাগে দরজা খুলতে?
স্নিগ্ধাঃ কাজ করছিলাম।

নিলঃ কি কাজ? সারাদিন ঘরে করোটা কি?
এখানে কাধের উপরে দাঁড়িয়ে থাকবা?
আমি কি এক গ্লাস পানি পাবো?
স্নিগ্ধাঃ জি।

ঘরের সব কাজ করেও মেয়েদের শুনতে হয় সারাদিন করোটা কি? হায়রে সমাজ।
রাতে একি ঘটনা। আমাদের সমাজে স্নিগ্ধার মতো অনেক মেয়েই আছে যারা প্রতি রাতে এই ভাবে ধর্ষণ হয়। কিন্তু এই ধর্ষকদের কোনো বিচার হয় না। কারন তারা সামাজিক ভাবে তার বৈধতা পেয়েছে। যার নাম হলো বিয়ে।

আর এর পরিনতি হলো যে মেয়েরা দূর্বল তারা সুইসাইড করছে। কেউ কেউ নিজের মধ্যে সাহস যোগার করে ডিভোর্স নামের শব্দ টার মাধ্যমে নিজেকে এই নরক থেকে বের করে নিয়ে আসছে।

আর বেশির ভাগ মেয়েরা নিজের মা-বাবা। সন্তানের কথা ভেবে সহ্য করে নিচ্ছে।
ইদানীং তো নিল স্নিগ্ধার উপরে হাত তুলা শুরু করেছে স্নিগ্ধা অনেক বার ওর আম্মুর কাছে নিলের এই কথা গুলো বলেছে।
এমনকি ছোট একটা কারনে নিল স্নিগ্ধাকে ঘর থেকে ও বের করে দিয়েছিল।
তারপর নিলের মা গিয়ে স্নিগ্ধাকে ওর বাসা থেকে নিয়ে এসেছে।

স্নিগ্ধা তার সাথে যেতে চাইছিলো না তাই স্নিগ্ধার আম্মুও তাকে বাধা দেয়। তারফলে তার শুনতে হয়।
নিলের মাঃ কেনো সালেহা মেহেতা আর তোমার বিবাহিক জীবনে কি এমন হতোনা?
সাবার হয়। তাই বলে মেয়েকে ঘরে বসিয়ে রাখবা?
আর ভুলোনা তোমার মেয়ে আমার ছেলের বউ তার উপরে এখন আমার অধিকার বেশি।
স্নিগ্ধার আম্মু কিছু বলতে যাবে তখন স্নিগ্ধার দাদি বলে উঠলো।

দাদিঃ স্নিগ্ধা এখন ওইটাই তোর বাসা। আর সব মেয়েদেরই কম বেশি সহ্য করতে হয়।
স্নিগ্ধা তখন একবিন্দু আসা নিয়ে ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে ছিলো। এই বুঝি আম্মু সবাইকে বলবে যে আমার মেয়ে আমার কাছে থাকবে।
কিন্তু স্নিগ্ধার এই আসাটা পূরণ হলোনা।
স্নিগ্ধাকে আবার ওই নরপুশুর কাছে নিয়ে যাওয়া হল।
তখন নিলের মুখে ছিলো বিজয়ের হাসি।

নিল প্রচুর স্মোক করে। রাতে বেড রুমে ও করে। স্মোকের স্মেল স্নিগ্ধার একদম সহ্য হয় না। অনেক সাহস করে একদিন নিলকে রুমে স্মোক করতে মানা করেছিলো।
যার জন্য তাকে শুনতে হয়েছে।
নিলঃ স্মোক কি তোর বাবার টাকা দিয়ে করি?
এটা তোর বাসা না এটা আমার বাসা আর আমার বাসায় আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করবো।
থাকতে পারলে থাকবি নয়তো গেট খোলা।
মেয়েদের আসল ঠিকানাটা কথায় কারোকি যানা আছে?

মেয়েরা মার কাছে গেলে বলে বিয়ের পর স্বামীর ঘর ই তোমার ঘর। কিছু থেকে কিছু হলে স্বামি বলে এটা তোমার না আমার ঘর।
তো মেয়েরা যাবে কোথায়?
স্নিগ্ধা নিজের শরিলের দাগ গুলো তো শাড়ি দিয়ে ডেকে রাখে। আবার সময়ের সাথে সাথে দাগ গুলো চলে যায়।
কিন্তু স্নিগ্ধার মনের মধ্যে যে এমন হাজারো দাগ লেগেছে। ওইগুলো কি করে যাবে?
শরিলের দাগের ব্যথা সহ্য করা যায় কিন্তু মনের দাগের ব্যথা তো সহ্য হয়না।

আজ স্নিগ্ধার এসএসসি পরিক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। এক বিষয়ে জন্য গোল্ডেন পায়নি।
তাও স্নিগ্ধা খুব খুশি তার থেকে বেশি খুশি হয়েছে ভাবির কথা শুনে। বিয়ের পরেও ভাইয়া ভাবিকে পাড়াশুনা করতে দিচ্ছে। এখন সে অনার্স ৩য় বর্ষে পরছে।
তার মানে কি নিল ও ওকে কলেজে পড়তে দিবে।
কথাটা স্নিগ্ধা মাকে জিজ্ঞেসা করলে সে বললো নিলকে জিজ্ঞেসা করতে।
নিল ঘাটের উপরে বসে অফিসের কাজ করছে।
নিলের মা ওর কাছে গিয়ে বসলো।
নিলঃ মা কিছু বলবা?

নিলের মাঃ স্নিগ্ধা কলেজে ভর্তি হতে চায়।
নিলঃ হোক। কি সমস্য।
নিলের মাঃ কি সমস্য মানে?
তোমার ভাবিকে দেখেছো বিয়ের তিন বছর হয়েছে এই পড়াশুনার চক্করে এখন বাচ্চা নেই নি।
এটাও ব্যপারনা। কিন্তু কলেজে কোনো কিছু হয়ে গেলে? আমাদে স্নিগ্ধা তো কম সুন্দর না।
আবার আজকে কলেজে ভর্তি হয়ে চাচ্ছে কালকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে চাইবে।
তখন?

নিল লেপ্টপ থেকে চোখ সরিয়ে মার দিকে তাকালো।
নিলঃ উফফ।
মা তুমি কি চাও বলোতো? (বিরক্তিকর কন্ঠে)
নিলের নাঃ আমি চাই ও তোর কাছে কলেজে ভর্তি হতে চাইলে তুই না করে দিবি।
নিলঃ আচ্ছা।

এখন দয়া করে আমার রুম থেকে যাবা
আমি কাজ করছি।
রাতে স্নিগ্ধা যখন নিলের কাছে পারমিশন চাইলো। নিল মার কথা মতো না করে দিলো।
স্নিগ্ধার সব খুশি মাটি হয়ে গেলো।
স্নিগ্ধাঃ আমি শুধু পরিক্ষা দিবো। ক্লাস করবো না। প্লিয প্লিয
নিলঃ একবার না বললাম। কথা কানে যায় নি?

স্নিগ্ধা আম্মু-আব্বুও নিলের সাথে এই ব্যপারে কথা বললো। কিন্তু কেউ নিলের না টাকে হ্যা তে পরিবর্ত করতে পারলো না।

<<<<৪ মাস পরে>>>>

এখন আর স্নিগ্ধা বিছানায় হাত-পা ছটকায় না। কেমন যানি সব সয়ে গেছে।
নিজেকে এখন জলজান্ত লাশ মনে হয়।

কয়েক দিন যাবদ শরিলটাও ভালো না।
ইদানিং স্নিগ্ধা নিলকে কার সাথে যেনো ফোনে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে। কিন্তু কে তা জিজ্ঞেসা করার সাহস হয়ে উঠে না।
নিলঃ ওকে বেবি আমি তোমাকে পিক করবো। পারফেক্ট।
স্নিগ্ধা অনেক সাহস জোগার করে জিজ্ঞেসা করলো।
স্নিগ্ধাঃ কে ছিলো?

নিলঃ আমার গার্লফ্রেন্ড। কোনো সমস্যা?
স্নিগ্ধাঃ আপনার লজ্জা লাগে না বাসায় বউ থাকতে বাইরে মেয়েদের সাথে কথা বলতে
নিলঃ এখানে লজ্জা পাওয়ার কি আছে? অদের সাথে কথা না বললে কি তোমার মতো আনস্মার্ট। মুর্খ মেয়ের সাথে বলবো। আর তোমাকে বউ হিসেবে তো সব দিচ্ছি। খাওয়ানো। পরানো (জামা-কাপর)। বিলাস বুহুল জীবন।
তুমি শুধু আমার মার সেবা করবা। That’s it

স্নিগ্ধাঃ আর রাতে আপনার সাথে শুবো। তাই না?
নিলঃ আমার বিছানায় আসার জন্য আনেক মেয়েরা সুজুক খুজে।
আর এটা তোমার সৌভাগ্য যে আমার মা তোমাকে পছন্দ করেছে। নয়তো তোমার মত মেয়ের দিকে নিল চৌধুরি তাকায় পর্যন্ত না।
স্নিগ্ধাঃ যারা আপনার বিছানায় আসতে চায় তারা হয় আপনার মতো চরিত্র হিন।
আপনি তাদের কাছে কি তা আমার জানা নেই।

কিন্তু আমার কাছে আপনি কোনো হিংস্র প্রানি থেকে কম না।
নিল স্নিগ্ধার কাছে এসে ওর এক হাত মছকে।
নিলঃ কি বললি তুই? আনেক দিন ডোয দেওয়া হয় না। তাই বলে এতো সাহস বেরেছে। তাই না?
স্নিগ্ধাঃ সত্যি কথা অনেক গায়ে লাগছে।
তাই না?

নিল স্নিগ্ধাকে এমন জরে এক চর দিলো যে স্নিগ্ধা ব্যলেন্স হারিয়ে পড়ে যায়।
আর নিল নিজে বেল্ট খুলে স্নিগ্ধার পিঠে ইচ্ছা মতো আঘাত করতে থাকে।
স্নিগ্ধাঃ এক কাজ করে প্রতি দিন আমার কে তিলে তিলে শেষ না করে একবারে মেরে ফেলেন।
আমার আর সহ্য হচ্ছে না।
এক পর্যায় স্নিগ্ধার সেন্স লেস হয়ে যায়।

স্নিগ্ধা আম্মু -আব্বু এসে ওকে নিয়ে যায়।
ওর আম্মু আব্বু স্নিগ্ধার সাথে চোখ মিলাতে পারছে না।
ওই নরপশুটা মেয়েটার কি হাল করেছে।
পিঠের ইক্টু অংশেও ব্লেন্টের দাগ ফেলতে বাকি রাখেনি।
স্নিগ্ধার মনে হচ্ছে ও এখন আজাদ।

কেয়াদি জেলখানা থেকে বের হলে যেমন লাগে স্নিগ্ধার ওই রকম লাগছে।
কিচ্ছুদিনের মধ্যে ও এই মিথ্যা বন্ধন থেকেও বের হয়ে আসবে।
ভাবতেই স্নিগ্ধার কতো খুশি লাগছে।
কিন্তু কিছু দিন যাবদ স্নিগ্ধার খুব বমি হচ্ছে। মাথা খুরানো টা তো বেরে গিয়েছে।
তার মানে কি স্নিগ্ধা?

সালেহা বেগম শিয়োর হওয়ার জন্য স্নিগ্ধাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলো।
স্নিগ্ধার যা ভয় ছিলো তাই।
হ্যা স্নিগ্ধার ভিতরে একটা অস্তিত্ব বেরে উঠছে।
কথাটা শুনে স্নিগ্ধা থোমকে গেলো।
আম্মু (সালেহা বেগম):তুমি কোনো টেনশন নিওনা।

যখন এই সম্পর্ক টাই থাকবে না। তো এই নরপশুর অস্তিত্ব নিজের মধ্যে রাখার কোনো মানে হয় না।
আমি ডক্টরের সাথে কথা বলছি।
স্নিগ্ধাঃ আম্মু বাচ্চাটা শুধু নিলের না। বাচ্চাটা আমারো।
আর নিলের শাস্তি টা কি এই নিষ্পাপ শিশুটা কে দেওয়া টিক হবে?
আম্মুঃ বোকার মতো কথা বলিসনা স্নিগ্ধা। তোর পুরা লাইফ পরে আছে।
জীবন টাকে এই ভেবে নষ্ট করে দিবি?

স্নিগ্ধাঃ আমার জীবন টা তো তুমি। আব্বু আর নিল মিলে নষ্ট করেছো। যার শাস্তি আমি আমার বাচ্চাকে দিবো না ব্যস।
আম্মুঃ তুই জানিস নিলের জন্য এই বাচ্চাটা শুধু মাত্র ওর পুরুষত্বের সার্টিফিকেট।
স্নিগ্ধাঃ আমি যানি।
কিন্তু তুমি বুঝতে চাছোনা কেনো আম্মু আমার কষ্ট বুঝার জন্য। আমার জল ভরা চোখ মুছে দেওয়ার জন্য আল্লাহ কাউকে এই দুনিয়াতে পাঠাছেন।


পর্ব ৪

১-৩ পর্ব আমার টাইমলাইনে আছে। যারা পড়েন নি তারা পড়ে নিবেন।

আম্মুঃ স্নিগ্ধা বোকার মতো কথা বলিস না।
তুই পারবি একা এই বাচ্চাকে মানুষ করতে?
আমাদের সমাজ এতো সোজা না রে মা। আমাদের সমাজ তোকে আর এই বাচ্চাকে হাসির পাত্র বানাবে
সমালোচনা করবে।

স্নিগ্ধাঃ সমাজ আর সমাজের মনুষের কথা ভেবে আমি কি করবো আম্মু?
যখন আমার এই সমাজ আর এই সমাজের মানুষের দরকার ছিলো তখন কথায় ছিলো তারা?
তার তো আমার কথা একবারো ভাবেনি। তো আমি কেনো তাদের কথা ভাবতে যাবো।
আম্মুঃ তুই এখন পরাধিন। তার মধ্যে এই বাচ্চা।

স্নিগ্ধাঃ তুমি তো আমার মা। আমাকে একটু বুঝতে চেষ্টা করো। তুমি কি পারবা আমাকে বা সারাহ (ছোট বোন) কে মেরে ফেলতে?
তো বলো আমি কি করে আমার মাসুম অনাগত শিশুকে মারবো।
ওর ও তো এই দুনিয়ার আলো দেখার অধিকার আছে।
আমি কি করে ওকে ওর অধিকার থেলে বঞ্চিত করি বলো।
আম্মুঃ (অবাক হয়ে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে রয়েছে)

আমার পিচ্চি মেয়েটা কি বুঝদার দের মতো কথা বলছে। কিন্তু
স্নিগ্ধাঃ কোনো কিন্তু না মা আল্লাহ আমার আর আমার সন্তানের ভাগগে যা রেখেছেন তাই হবে।
স্নিগ্ধার আব্বু আর দাদি স্নিগ্ধার প্রেগন্যন্সি কথা শুনে অনেক খুশি হলো।
আব্বুঃ আমি আপা (নিলের মা) কে খবার টা জানাই।
স্নিগ্ধাঃ না আব্বু তুমি কাওকে কিছু বলবা না।

আমি চাইনা নিল আর মা-বাবা এই ব্যপারে জানুক।
দাদিঃ পাগল মেয়ে বলে কি?
নিল এই বাচ্চার বাবা ওর এই ব্যপারে জানার অধিকার আছে।
তোর চাওয়া না চাওয়া দিয়ে কারো কিছু আসে যায় না।
স্নিগ্ধাঃ আমাদের সম্পর্ক টাই যখন থাকবে না তাহলে ওর এই বাচ্চার উপরে অধিকারের তো প্রশ্নই উঠেনা।
বাবা:তাহালে কি আমি সারা জীবন তোমার আর তোমার বাচ্চার খরচ বহন করবো?
স্নিগ্ধাঃ আব্বু।
আব্বুঃ আমি তোমাদের ডিভর্সে জন্য রাজি হয়ে ছিলাম এই ভেবে যে আজ নয়তো কাল তোমাকে আর একটা বিয়ে দিয়ে দিবো।
কিন্তু তুমি এখন এই বাচ্চাও চাও আবার নিলের সাথেও থাতে চাওনা তাহলে তো হবে না।
কারন কোনো ছেলে একটা বাচ্চাসহ ডিভর্সি মেয়েকে বিয়ে করবে না। (এমন না যে তাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ। নিলদের তুলোনায় কোনো অংশে কম না)
আম্মুঃ তুমি এইগুলা কি বলছো?

আব্বুঃ যা বলছি তা আমাদের বর্ত্তমান সমাজের রিয়ালিটি।
স্নিগ্ধা যদি নিলকে ডিভোর্স দেয় তাহলে ও এই বাচ্চা রাখতে পারবে না। আর যদি এই বাচ্চা রাখতে চায় তাহলে ওকে নিলের কাছে ফিরে যেতে হবে।
(স্নিগ্ধার আম্মু দেন স্নিগ্ধার আব্বুর হাতে পুতুল হয়ে গিয়েছে। ইচ্ছা থাকার শর্তেও মেয়ের জন্য প্রতিবাদ করতে পারছে না)
স্নিগ্ধাঃ আব্বু তুমি আবার আমাকে ওই নরকে পাঠাতে চাইছো?
আব্বুঃ তোমাকে তো না যাওয়ার ওপশোন দিলাম।

স্নিগ্ধাঃ এই নিষ্পাপ শিশু পৃথিবীর আলো দেখবে কি না দেখবে তা সৃষ্টিকর্তা উপরে নির্ভর করে। তোমার দেওয়া ওপশোনের উপরে না।
আব্বুঃ এতো কিছু আমাকে বলে লাভ নেই।
আমার শেষ কথা আমি তোমাকে আর তোমার বাচ্চাকে সারা জীবন বসিয়ে খাওয়াতে পারবোনা।
স্নিগ্ধা আর কথা না বারিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
আজকের দিনটা প্রতিটা মেয়ের জন্য কতো খুশির দিন।

সে প্রথম মা হতে চলেছে। (প্রতি বার ফিলিংস কাজ করে কিন্তু প্রথম বার একটু বেশি কাজ করে)
কিন্তু স্নিগ্ধাকে এইক্ষেত্রেও পরিক্ষা দিতে হবে।
সন্ধ্যা না হতেই নিলের বাবা-মা স্নিগ্ধাদের বাড়িতে হাজির।
তারা স্নিগ্ধাকে নিয়ে যেতে এসেছে। দাদি ফুপিকে ফোন দিয়ে বলেছে যে সে দাদি হবে। এই খবর শুনার পরে তারা আর দেরি করেনি।
স্নিগ্ধার তাদের সামনে যেতে ইচ্ছা করছে না।
স্নিগ্ধাঃ মা কে তুমি এই ব্যপারে বলেছো তাই না?

দাদিঃ হ্যা। দেখ দিদি ভাই সংসার টাতো আর পুতুল খেলে না।
আর তুই কি তোর সন্তানকে বাবার আদরের থেকে বঞ্চিতো করবি?
স্নিগ্ধাঃ কিন্তু দাদু নিল
(স্নিগ্ধাকে কথা শেষ না করতে দিয়ে আবার দাদি বলা শুরু করলো)
দাদিঃ দেখবি এই বাচ্চাটা নিলকে পরিবর্ত করে দিবে। তোদের সম্পর্ক টা কে আরো মোজবুত করবে।
(দাদুর কথা শুনে স্নিগ্ধা নিজের মনে একবিন্দু আসার আলো নিয়ে নিলের মা-বাবার সাথে চলেগেলো।
এইছারা তো ওর কাছে আর কোনো রাস্তা নেই কারন আব্বুর যা বলার তা সে পরিষ্কার শব্দে বলে দিয়েছে)
এই বাসায় আসার পর থেকে নিল আর মার এক কথা।

যে তাদের ছেলে চাই। মেয়ে হলে হবে না।
কি আজব তাই না? এখন পৃথিবীতে এমন মানুষ আছে।
মাঃ আমার ঘরের প্রদিপ (ছেলে) লাগবে। আমার ঘরটা পরিপূর্ন হবে।
আমার বংশ বৃদ্ধি করবে।
স্নিগ্ধাঃ আল্লাহ যা দিবে আমি তাতেই খুশি কিন্তু মেয়ে হলে বেশি খুশি হবো। কারন যে মেয়ের প্রথম মেয়ে সন্তান হয় সে ভাগ্যবতী।
মাঃ ভাগ্যবতী না ছাইমেয়েরা শুধু ঘরের বোঝা।
স্নিগ্ধাঃ মা আপনে একজন মেয়ে হয়ে এই কথা বলছেন।

আর ছেলেরা যদি এক বংশের প্রদিপ হয় মেয়েরা দুই বংশের প্রদিপের আলো।
মাঃ নিল ঠিকি বলে তুই অনেক মুখে মুখে কথা বলা শিখে ছিস।
(হায়রে দুনিয়া এখনো মেয়েদের বোঝা মনে করা হয়)
বলেনা যে শাশুড়ি কখনো মা হয় না।
স্নিগ্ধার এই অবস্থায়ও সকালে উঠে সবার জন্য নাস্তা বানাতে হয়। ঘরের কাজ করতে হয়। অবস্য কাজ করাটা বড় ব্যপার না।
কিন্তু নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে করা বড় ব্যপার।

কারন মাঝে মাঝে শরীল টা স্নিগ্ধার কথা শুনেনা।
অনেক খারাপ লাগে। তাই সকালে উঠতে ইকটু দেরি হলে শুনতে হয়।
এখনি এমন করছো আরো মাস পেরোলে না জানি কি করবে। (ভাবির পরিক্ষা তাই উনি তার মার বাড়িতে)
তাই ইধানিং কাজের চাপটা বেরে গিয়েছে
মাঃ বুয়া আসেনি। একটু মসলা বেটে দাও।

স্নিগ্ধাঃ মা এই কাজটা করলে যদি বাচ্চার কোনো ক্ষতি হয়?
মাঃ আমি নিলকে ৯ মাসের পেটে রেখেও ভর্ত্তা বেটেছিলাম কই কিছু হলো না তো।
আজ কালকের মেয়েদের কে তো কোনো কাজের কথা বলাই যায়না। দাও আমি করি এই অসুস্থ শরীল নিয়ে
স্নিগ্ধাঃ না মা আমি করি।

(আমাদের সমাজে দেখা যায় বেশির ভাগ মেয়েদের প্রেগন্যান্ট অবস্থায় তাদের মা রা নিজের কাছে নিয়ে আসে। যাতে মেয়ের সেবায় কোনো কমতি না থাকে। অথচ ছেলের বউরা এই অবস্থাতে একটু আরাম করলে তাদের শুনতে হয় পৃথিবীতে কি সে একাই মা হচ্ছে? আমরা কি মা হইনাই।
যদি সব শাশুড়িরা তাদের ছেলের বউকেও মেয়ের মত করে দেখতো তাহলে আর মেয়েদের এই অবস্থায় তাদের মার বাড়ি যেতে হতো না)
সারাদিনের কাজ করে সন্ধ্যায় বিছানায় পিঠ লাগাতে না লাগাতে।
নিলঃ আজকে কি আমি চা পাবো? (চিৎকার করে)
স্নিগ্ধাঃ জি আনছি।

২ মাস পরে

স্নিগ্ধার পেটের আকারের সাথে সাথে ওর ধৈর্য টাও বেরেছে।
এখন স্নিগ্ধার অনাগত শিশুর ৫মাস।
স্নিগ্ধা আয়নার সামনে গিয়ে নিজের পেটে টাকে বার বার হাতিয়ে হাতিয়ে দেখে।
কি সুন্দর সে অনুভুতি তা বলা যাবে না।

নিলের মধ্যে তেমন কোনো পরিবর্তন আসে নি। কিন্তু ইধানিং বেড রুমে স্মোক করে না। বেশি রাত পর্যন্ত বেশি সাউন্ড দিয়ে টিভিও দেখেনা।
এই কিছু কিছু পরিবর্ত স্নিগ্ধাকে অনেক শান্তি দিচ্ছে।
ওর মনে হচ্ছে যে এই বাচ্চাটা মনে হয় নিলকে বদলাতে পারবে।
স্নিগ্ধার মনে হচ্ছে ওর জীবনে যেনো শুখ ধীরে ধীরে ধরা দিচ্ছে।
কিন্তু। তা আর হলো না।

নিলের ফোন কখন থেকে বেজেই চলেছে। নিল শাওয়ার নিচ্ছিল। স্নিগ্ধা গিয়ে দেখে পিয়া নামের এক মেয়ের ফোন।
স্নিগ্ধা কিছু না ভেবেই ফোনটা পিক করলো।
মেয়েটা (পিয়া):বেবি আর কতো ওয়েট করাবা?
স্নিগ্ধাঃ হ্যালো। আপনার লজ্জা লাগেনা একজন বিবাহিত পুরুষের সাথে এই ভাবে সম্পর্ক রাখতে।
পিয়া:তোমার স্বামি যদি তোমাকে রেখে আমার কাছে আসে তো ইটস নোট মাই ফোল্ট।

স্নিগ্ধাঃ দেখেন আপনে আমার কাছ থেকে আমার স্বামি কে নিলে আমি কিছু বলতান না। কিন্তু আমার সন্তানের কাছ থেকে ওর বাবাকে নিয়ে নিবেন না প্লিয।
পিয়া:দেখো আমাকে একদম ইমোশনাল ব্লেকমিল করবা না। আর তুমি নিল কে আমার কাছে আসতে দিওনা তাহলেই তো হয়।
নিল এইসময় এসে স্নিগ্ধার হাত থেলে ওর ফোনটা কেরে নিলো।
নিলঃ তুমি আমার ফোন কোন সাহসে পিক করেছো?
স্নিগ্ধাঃ আপনি এখনো ওই মেয়ের সাথে কথা বলেন?
কেনো?

নিলঃ আমার ইচ্ছা।
বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
আর স্নিগ্ধা নিচে বসে কাঁদতে থাকলো।
ও কি এই বাচ্চা টা রেখে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিলো। না না এই বাচ্চাটাতো আল্লাহ দেয়া নিয়ামত।
স্নিগ্ধার জীবনে কি সুখ নামের পাখিটা ধরা দিবে না?
আর কতো সহ্য করবে?

এখন স্নিগ্ধা ৭ মাসের অন্তঃসত্তা। স্নিগ্ধা শারীরিক ভাবে অনেক অসুস্থ হয়ে গিয়েছে।
তাই ওর আম্মু একপ্রকার জোর করে ওকে তাদের বাসায় নিয়ে আসলো। ও এই অবস্থায় ঘরের কাজ না করায় শাশুড়িও মানা করলো না।
সেদিনের পর থেকে স্নিগ্ধা ওর বাবার সাথে কথা বলে না।
স্নিগ্ধা ওর বাসায় আসার পর থেকে নিল ওকে দেখতে আসাতো দূরের কথা একবার ওকে ফোন পর্যন্ত দেয়নি।
ওর খবর না নিলেও ওর ভিতরে নিজের অস্তিত্ব টার কথাতো এক বার ভাবতো।

কিন্তু নিলের মা-বাবা কয়েক বার ওকে দেখে গিয়েছে এবং ওকে হাত খরচ পর্যন্ত দিয়ে গিয়েছে।
স্নিগ্ধা যখন হস্পিটালের বেডে শুয়ে লেবার পেইন এ ছটফট করছে। ওর চোখ দুইটা শুধু নিলকে খুজতেছে।
মনে হয় নিল এখন এসে ওর হাত ধরে বলবে যে তোমার আর আমার বাচ্চার কিছু হবে না।

কিন্তু আপ্সোস নিল এলোনা। মা বলেছে সে অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে গিয়েছে। (আসলে পিয়ার সাথে কক্সবাজারে ছিলো)
স্নিগ্ধার কোল জুড়ে একটা ছোটো রাজকুমার এলো কিন্তু অক্সিজেনের অভাবে ২৪ ঘণ্টার মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে ছোট প্রাণ টা হেরে গেলো।
স্নিগ্ধার কুল খালি হয়ে গেলো।
স্নিগ্ধা নিজের নবজাতক শিশুর লাশ নিয়ে নিজের বুকের আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে রেখেছে। আর হাউমাউ করে কান্না করছে।


পর্ব ৫

হৃদয় চৌধুরি বর্ন

স্নিগ্ধাঃ আল্লাহ আমার শেষ অবলম্বন টাও আপনে আমার কাছ থেকে নিয়ে গেলেন। এখন আমি কি নিয়ে থাকবো। কার জন্য বাচবো। আমার বেচে থাকার কারন টাই আপনে নিয়ে নিলেন।
আম্মুঃ কাঁদিস না মা ওর হায়াত হয়তো এতটুমি ছিলো।
মাঃ এখন কেদে কি হবে?
আমার নাতি কে মেরে তোমার শান্তি হয়নি।
এখন আবার নাটক করতেছ।

আম্মুঃ আপা মুখে লাগাম দেন।
আপনে দেখতেছেন না আমার মেয়ের কি অবস্থা।
মাঃ কই বেচেতো আছে। মারে তো যায়নি?
স্নিগ্ধাঃ আমি মারা যাইনি তাই আপনার ছেলেকে আর একটা বিয়ে দিতে পারলেন না তাই আপনার আপ্সোস হচ্ছে।
আপনার আপ্সোস করতে হবে না মা। আমি আর আপনার নরপুশু ছেলের কাছে যাবো না।
মাঃ আমিও তোর মতো বেয়াদব মেয়েকে আমার ঘরে নিবো না।
তুই আমার ছেলের যোগ্য না।

স্নিগ্ধাঃ আপনার ছেলেকে ঘরে নিতে পারবেন কি না দেখেন।
মাঃ কি করবি তুই শুনি?
স্নিগ্ধাঃ যা আমার অনেক আগে করার উচিৎ ছিল। আমি আপনাদের উপরে কেস করবো।
মাঃ দেখা যাবে।

(স্নিগ্ধার কি খারাপ কপাল তাই না। নিজের বাচ্চার কবর টাও নিজের কাছে দিতে পারলো না।
নিলের মা-বাবা তাদের দেশে নিয়ে দিলো।
ওর কথা কেউ চিন্তা করলো না)
স্নিগ্ধা ওর বাসায় গিয়ে নিলকে ডিভোর্স লেটার পাঠালো।
স্নিগ্ধা ডোমিস্টিক ভাইলেনের কেস করতে চেয়েছিল। কিন্তু
আব্বুঃ কেস করতে হলে আমার বাসায় তোমার যায়গা নাই।
স্নিগ্ধাঃ কেনো?

আব্বুঃ আমারটা খেয়ে-পরে আমার বোন আর ভাতিজাকে জেলে পাঠাবা আর আমি বসে বসে দেখবো?
স্নিগ্ধাঃ আব্বু তারা যে আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলেছে।
আমি আমার বাচ্চার খুনিকে আমি এইভাবে ছেরে দিবো?
আব্বুঃ যা করার আমার বাসায় বাইরে গিয়ে করো।
স্নিগ্ধাঃ তাহলে আমি তাই করবো। কারন আমি এখন একা। আমার উপরে আমার মাসুম বাচ্চার দায়িত্ব নেই।
বলে স্নিগ্ধা নিজের রুমে চলে যায়।

কি করবে তা ভাবতে থাকে। ভাবির সাহায্যে একটা লেডিস হোস্টেলের খোজ পায়।
কিন্তু টাকা পাবে কই?
স্নিগ্ধা এই কথা ভাবতে ভাবতে আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে আছে।
এখন ও কি করবে?
হঠ্যাৎ ওর নজর নিজের পরনে চেন উপরে পরে। যা ওকে ওর নানু দিয়ে ছিলো।
স্নিগ্ধা সব সময় এই চেনটা পরে থাকে।

স্নিগ্ধা চেন বিক্রি করে কলেজে ভর্তি হলো আর হোস্টেলের টাকাও দিলো।
এখন তো দিলো পরে টাকা কোথার থেকে পাবে?
আল্লাহ যা ভাগ্যে রেখেছে তাই হবে।
আর দেরি না করে নিজের কয়েক জোড়া কাপড় নিয়ে বের হয়ে গেলো।
আম্মু অনেক বারোন করলো কিন্তু কে শুনে কার কথা। আব্বুও বুঝতে পারেনি যে স্নিগ্ধা এই পদক্ষেপ নিবে।
প্রথম প্রথম স্নিগ্ধার চলতে অনেক কষ্ট হয়। আসে পাসে কম টাকায় ২টা স্টুডেন্ট পড়িয়ে আর হোস্টেলের মেয়েদের কাপর সিলিয়ে কোন রকম কালেজের বেতন আর হোস্টেল খরচ দেয়।

কেস এর টাকা কিভাবে মেনেজ করবে?
কিন্তু নিলকে এই ভাবে ছেরে দেওয়া টিক হবে না।
ছোট একটা চাকরি জন্য অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু তেমন সার্টিফিকের নেই।
এমনকি আর টিউশনিও পাচ্ছে না।

ওর হোস্টেল আর কলেজ কাছাকাছি তাই তেমন কষ্ট হয় না।
মাঝে মাঝে কাজের ইন্টার ভিউ দেওয়ার জন্য দূরে যায় তাও বাসে ধাক্কা ধাক্কি করে।
আগে অনেক কষ্ট হতো কিন্তু এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।
নিল আর আব্বুর গাড়িতে উঠেও ও এই শান্তি পেতোনা যা এখন নিজের পাঁচ টাকায় দিয়ে বাসে উঠে পায়।
কারন স্নিগ্ধা এখন স্বাধীন। ওকে আর কোনো অবিচার জন্য করে চুপ করে থাকতে হবে না।
এখন আর ওর ক্লান্ত শরিলকে কেউ ছিরে ছিরে খাবে না।
কি শান্তির জীবন।

কিন্তু ওর ভবিষ্যৎ কি?
কেনোই যানি ওই বিলাস বহুল জীবন থেকে এই জীবন টা বেশি শান্তির।
এখনও একটা কাজ করা বাকি। তা হলো ওই নরপশু কে শাস্তি দেওয়া।
কিন্তু কিভাবে?
গত কালকে নিলদের এলাকার থানায় নারী নির্যাতনের জন্য জিডি করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু নিল চৌধুরির নাম শুনে জিডিটা লেখলো না।
কারন এলাকায় তাদের অনেক পাওয়ার।

তার মানেকি ওই নরপশু টার কোনো শাস্তি হবে না?
না যে ভাবেই হোক আমি ওকে শাস্তি দিবোই।
কলেজ থেকে হোস্টেলে যাছিলাম।
। রাস্তায় নিলের গাড়ি আমার সামনে এসে আমাকে বাধা দিলো।
নিল গাড়ি থেকে নেমে আমার কাছে এসে আমার হাত শক্ত করে ধরে আমাকে টান দিয়ে গাড়ির সামনে নিলো।
স্নিগ্ধাঃ ছারেন আমার লাগছে।

নিলঃ শুনলাম তুমি নাকি আমার আগেন্সটে জিডি করতে গিয়েছিলা? পারলি?
স্নিগ্ধাঃ আমার হাত ছারেন। এখন আমি আপনার বউ না যে আমার অত্যাচার সব মুখ বুঝে সহ্য করবো।
ছারেন নয়তো আমাই
নিলঃ নয়তো তুমি কি?
শুনি?

স্নিগ্ধাঃ নয়তো আমি চিৎকার করবো। মানুষ জরো করবো।
তারা আপনার কি অবস্থা করবে তা মনে হয় আমার বলার প্রয়জন নেই।
রিক্সা চালোক:কি হইসে আপা?
এই লোক আপনেরে পেরেশান করতাছে?
মূহূর্তের মধ্যে সেখানে ভির হয়ে যায়।

নিলঃ তোকে আমি দেখে নিবো।
নিল এই গুলো দেখে ওই খান থেকে চলে যায়।
হোস্টেলের মেয়েদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে মানবাধিকার এর কাছে কয়েক দিন ঘুরে অনেক কষ্টে তাদের জিডিটা নিতে বাধ্য করলাম।
সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে উকিলের সাথে কথা বলছিলাম। বের হয়ে দেখি দাদী। আব্বু। নিলের বাবা-মা।
আমি তাদের কাছে যাওয়া মাত্র দাদি ঠাস করে আমার গালে এক চর বসিয়ে দিলো।
দাদিঃ এই দিন দেখার জন্য তোর আব্বু তোকে এতো বড় করেছে?
হারামজাদি বংশের নাম ডুবিয়ে দিলো।

আমরা এখন এই সমাজে মুখ দেখাবো কিভাবে।
স্নিগ্ধাঃ আমি কোনো ভুল কাজ করিনি।
নিলের মাঃ দেখেছো মা। আমি বলেছিলাম না স্নিগ্ধা একটা বেয়াদপ মেয়ে। এই বেয়াদব মেয়েকে আমার ছেলের ঘারে চাপিয়ে দিয়েছো।
স্নিগ্ধাঃ আপনার ছেলেকে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছাই আমার ছিলোনা।
আব্বুঃ দেখ আমি নিলের সাথে কথা বলবো। তুই ওর কাছে মাফ চাইলে। ও তোকে মাফ করে দিবে।
স্নিগ্ধাঃ আমি আর ওই নরপশু কাছে যাবো না।

নিলের মাঃ তাহলে কোর্টে দেখা হচ্ছে।
আর কারো সাথে কোনো কথানা বলে হোস্টেলে চলে আসলাম।
২ মাস ধরে কলেজের বেতন। হোস্টেলের খরচের টাকা দেওয়া হয়নি।
কিভাবে দিবো? সব টাকা তো উকিলের পিছনে চলে যাচ্ছে।
আর পারছি না।
এর মধ্যে একবার আম্মু আমার সাথে দেখা করে গিয়েছে। কিছু টাকাও দিতে ছেয়েছিলো। আমি নেই নি। না খেয়ে থাকবো তাও আব্বুর টাকায় নিবো না।
আমি বুঝি আমার আম্মুটাও অপারক।
কি করবে ঘরে যে আরো একটা মেয়ে রয়েছে।

ঘর থেকে বের হয়ে গেলে ওই মেয়ের জন্য যে ভালো সমন্ধ পাবে না।
নিল কয়েকটা লোক আমার পিছনে লাগিয়ে দিয়েছে।
যে আমি কি করি না করি খবর রাখার জন্য।
একদিন উকিল আমাকে খারাপ প্রস্তাব দিলো। আমি কোনো মতে নিজের মান-সম্মান বাঁচিয়ে ওইখান থেকে বের হয়ে এসেছি।
এই কয়েক দিনে আমার বুঝা হয়ে গিয়েছে যে এই পৃথিবী অার এই পৃথিবীর মানুষ সব সার্থপর।
সবাই শুধু টাকা ছিনে।

আর দুনিয়াতে নিলের মত নরপশুর অভাব নেই।
কিন্তু আমি হার মানলাম না। আবার নতুন উকিল হায়ার করলাম।
আম্মু আর ভাবি আমারর পক্ষ থেকে সাক্ষী দিলো কিন্তু কোনো লাভ হলো না।
কারন আমার কাছে তো গাদা গাদা ঘুষ দেওয়ার মতো টাকা নেই। নেই পাওয়ার।
ওরা ওই জজ আর আমার পক্ষের উকিলকে টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছিলো।

আমি যখন জীবন যুদ্ধে পরাজয় হয়ে। চোখে বেশামাল পানি নিয়ে ফিরছিলাম। ওদের মুখে ছিলো একগ্রাস হাসি।
হোস্টেলে এসে শুনি ১সপ্তার মধ্যে টাকা না দিলে এইখান থেকে বের করে দিবে।
কলেজের ফিস না দাওয়ায় কারনে আমার নাম কেটে দিয়েছে।
আল্লাহ আমাকে পথ দেখান। আমি এখন কি করবো? ?


পর্ব ৬

৪ মাস পরে…

এখন আর স্নিগ্ধা বিছানায় হাত-পা ছটকায় না। কেমন যানি সব সয়ে গেছে।
নিজেকে এখন জলজান্ত লাশ মনে হয়।
কয়েক দিন যাবদ শরিলটাও ভালো না।
ইদানিং স্নিগ্ধা নিলকে কার সাথে যেনো ফোনে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে। কিন্তু কে তা জিজ্ঞেসা করার সাহস হয়ে উঠে না।
নিলঃ ওকে বেবি আমি তোমাকে পিক করবো। পারফেক্ট।

স্নিগ্ধা অনেক সাহস জোগার করে জিজ্ঞেসা করলো।
স্নিগ্ধাঃ কে ছিলো?
নিলঃ আমার গার্লফ্রেন্ড। কোনো সমস্যা?
স্নিগ্ধাঃ আপনার লজ্জা লাগে না বাসায় বউ থাকতে বাইরে মেয়েদের সাথে কথা বলতে
নিলঃ এখানে লজ্জা পাওয়ার কি আছে? অদের সাথে কথা না বললে কি তোমার মতো আনস্মার্ট। মুর্খ মেয়ের সাথে বলবো। আর তোমাকে বউ হিসেবে তো সব দিচ্ছি। খাওয়ানো। পরানো (জামা-কাপর)। বিলাস বুহুল জীবন।

তুমি শুধু আমার মার সেবা করবা। That’s it
স্নিগ্ধাঃ আর রাতে আপনার সাথে শুবো। তাই না?
নিলঃ আমার বিছানায় আসার জন্য আনেক মেয়েরা সুজুক খুজে।
আর এটা তোমার সৌভাগ্য যে আমার মা তোমাকে পছন্দ করেছে। নয়তো তোমার মত মেয়ের দিকে নিল চৌধুরি তাকায় পর্যন্ত না।
স্নিগ্ধাঃ যারা আপনার বিছানায় আসতে চায় তারা হয় আপনার মতো চরিত্র হিন।
আপনি তাদের কাছে কি তা আমার জানা নেই।

কিন্তু আমার কাছে আপনি কোনো হিংস্র প্রানি থেকে কম না।
নিল স্নিগ্ধার কাছে এসে ওর এক হাত মছকে।
নিলঃ কি বললি তুই? আনেক দিন ডোয দেওয়া হয় না। তাই বলে এতো সাহস বেরেছে। তাই না?
স্নিগ্ধাঃ সত্যি কথা অনেক গায়ে লাগছে।
তাই না?

নিল স্নিগ্ধাকে এমন জরে এক চর দিলো যে স্নিগ্ধা ব্যলেন্স হারিয়ে পড়ে যায়।
আর নিল নিজে বেল্ট খুলে স্নিগ্ধার পিঠে ইচ্ছা মতো আঘাত করতে থাকে।
স্নিগ্ধাঃ এক কাজ করে প্রতি দিন আমার কে তিলে তিলে শেষ না করে একবারে মেরে ফেলেন।
আমার আর সহ্য হচ্ছে না।

এক পর্যায় স্নিগ্ধার সেন্স লেস হয়ে যায়।
স্নিগ্ধা আম্মু -আব্বু এসে ওকে নিয়ে যায়।
ওর আম্মু আব্বু স্নিগ্ধার সাথে চোখ মিলাতে পারছে না।
ওই নরপশুটা মেয়েটার কি হাল করেছে।
পিঠের ইক্টু অংশেও ব্লেন্টের দাগ ফেলতে বাকি রাখেনি।
স্নিগ্ধার মনে হচ্ছে ও এখন আজাদ।

কেয়াদি জেলখানা থেকে বের হলে যেমন লাগে স্নিগ্ধার ওই রকম লাগছে।
কিচ্ছুদিনের মধ্যে ও এই মিথ্যা বন্ধন থেকেও বের হয়ে আসবে।
ভাবতেই স্নিগ্ধার কতো খুশি লাগছে।
কিন্তু কিছু দিন যাবদ স্নিগ্ধার খুব বমি হচ্ছে। মাথা খুরানো টা তো বেরে গিয়েছে।
তার মানে কি স্নিগ্ধা?

সালেহা বেগম শিয়োর হওয়ার জন্য স্নিগ্ধাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলো।
স্নিগ্ধার যা ভয় ছিলো তাই।
হ্যা স্নিগ্ধার ভিতরে একটা অস্তিত্ব বেরে উঠছে।
কথাটা শুনে স্নিগ্ধা থোমকে গেলো।
আম্মু (সালেহা বেগম):তুমি কোনো টেনশন নিওনা।
যখন এই সম্পর্ক টাই থাকবে না। তো এই নরপশুর অস্তিত্ব নিজের মধ্যে রাখার কোনো মানে হয় না।
আমি ডক্টরের সাথে কথা বলছি।

স্নিগ্ধাঃ আম্মু বাচ্চাটা শুধু নিলের না। বাচ্চাটা আমারো।
আর নিলের শাস্তি টা কি এই নিষ্পাপ শিশুটা কে দেওয়া টিক হবে?
আম্মুঃ বোকার মতো কথা বলিসনা স্নিগ্ধা। তোর পুরা লাইফ পরে আছে।
জীবন টাকে এই ভেবে নষ্ট করে দিবি?

স্নিগ্ধাঃ আমার জীবন টা তো তুমি। আব্বু আর নিল মিলে নষ্ট করেছো। যার শাস্তি আমি আমার বাচ্চাকে দিবো না ব্যস।
আম্মুঃ তুই জানিস নিলের জন্য এই বাচ্চাটা শুধু মাত্র ওর পুরুষত্বের সার্টিফিকেট।
স্নিগ্ধাঃ আমি যানি।
কিন্তু তুমি বুঝতে চাছোনা কেনো আম্মু আমার কষ্ট বুঝার জন্য। আমার জল ভরা চোখ মুছে দেওয়ার জন্য আল্লাহ কাউকে এই দুনিয়াতে পাঠাছেন।


পর্ব ৭

আম্মুঃ স্নিগ্ধা বোকার মতো কথা বলিস না।
তুই পারবি একা এই বাচ্চাকে মানুষ করতে?
আমাদের সমাজ এতো সোজা না রে মা। আমাদের সমাজ তোকে আর এই বাচ্চাকে হাসির পাত্র বানাবে
সমালোচনা করবে।

স্নিগ্ধাঃ সমাজ আর সমাজের মানুষের কথা ভেবে আমি কি করবো আম্মু?
যখন আমার এই সমাজ আর এই সমাজের মানুষের দরকার ছিলো তখন কথায় ছিলো তারা?
তার তো আমার কথা একবারো ভাবেনি। তো আমি কেনো তাদের কথা ভাবতে যাবো।
আম্মুঃ তুই এখন পরাধিন। তার মধ্যে এই বাচ্চা।

স্নিগ্ধাঃ তুমি তো আমার মা। আমাকে একটু বুঝতে চেষ্টা করো। তুমি কি পারবা আমাকে বা সারাহ (ছোট বোন) কে মেরে ফেলতে?
তো বলো আমি কি করে আমার মাসুম অনাগত শিশুকে মারবো।
ওর ও তো এই দুনিয়ার আলো দেখার অধিকার আছে।
আমি কি করে ওকে ওর অধিকার থেলে বঞ্চিত করি বলো।
আম্মুঃ (অবাক হয়ে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে রয়েছে)

আমার পিচ্চি মেয়েটা কি বুঝদার দের মতো কথা বলছে। কিন্তু
স্নিগ্ধাঃ কোনো কিন্তু না মা আল্লাহ আমার আর আমার সন্তানের ভাগগে যা রেখেছেন তাই হবে।
স্নিগ্ধার আব্বু আর দাদি স্নিগ্ধার প্রেগন্যন্সি কথা শুনে অনেক খুশি হলো।
আব্বুঃ আমি আপা (নিলের মা) কে খবার টা জানাই।
স্নিগ্ধাঃ না আব্বু তুমি কাওকে কিছু বলবা না।
আমি চাইনা নিল আর মা-বাবা এই ব্যপারে জানুক।
দাদিঃ পাগল মেয়ে বলে কি?

নিল এই বাচ্চার বাবা ওর এই ব্যপারে জানার অধিকার আছে।
তোর চাওয়া না চাওয়া দিয়ে কারো কিছু আসে যায় না।
স্নিগ্ধাঃ আমাদের সম্পর্ক টাই যখন থাকবে না তাহলে ওর এই বাচ্চার উপরে অধিকারের তো প্রশ্নই উঠেনা।
বাবা:তাহালে কি আমি সারা জীবন তোমার আর তোমার বাচ্চার খরচ বহন করবো?
স্নিগ্ধাঃ আব্বু।

আব্বুঃ আমি তোমাদের ডিভর্সে জন্য রাজি হয়ে ছিলাম এই ভেবে যে আজ নয়তো কাল তোমাকে আর একটা বিয়ে দিয়ে দিবো।
কিন্তু তুমি এখন এই বাচ্চাও চাও আবার নিলের সাথেও থাতে চাওনা তাহলে তো হবে না।
কারন কোনো ছেলে একটা বাচ্চাসহ ডিভর্সি মেয়েকে বিয়ে করবে না। (এমন না যে তাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ। নিলদের তুলোনায় কোনো অংশে কম না)
আম্মুঃ তুমি এইগুলা কি বলছো?

আব্বুঃ যা বলছি তা আমাদের বর্ত্তমান সমাজের রিয়ালিটি।
স্নিগ্ধা যদি নিলকে ডিভোর্স দেয় তাহলে ও এই বাচ্চা রাখতে পারবে না। আর যদি এই বাচ্চা রাখতে চায় তাহলে ওকে নিলের কাছে ফিরে যেতে হবে।
(স্নিগ্ধার আম্মু দেন স্নিগ্ধার আব্বুর হাতে পুতুল হয়ে গিয়েছে। ইচ্ছা থাকার শর্তেও মেয়ের জন্য প্রতিবাদ করতে পারছে না)
স্নিগ্ধাঃ আব্বু তুমি আবার আমাকে ওই নরকে পাঠাতে চাইছো?
আব্বুঃ তোমাকে তো না যাওয়ার ওপশোন দিলাম।

স্নিগ্ধাঃ এই নিষ্পাপ শিশু পৃথিবীর আলো দেখবে কি না দেখবে তা সৃষ্টিকর্তা উপরে নির্ভর করে। তোমার দেওয়া ওপশোনের উপরে না।
আব্বুঃ এতো কিছু আমাকে বলে লাভ নেই।
আমার শেষ কথা আমি তোমাকে আর তোমার বাচ্চাকে সারা জীবন বসিয়ে খাওয়াতে পারবোনা।
স্নিগ্ধা আর কথা না বারিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
আজকের দিনটা প্রতিটা মেয়ের জন্য কতো খুশির দিন।

সে প্রথম মা হতে চলেছে। (প্রতি বার ফিলিংস কাজ করে কিন্তু প্রথম বার একটু বেশি কাজ করে)
কিন্তু স্নিগ্ধাকে এইক্ষেত্রেও পরিক্ষা দিতে হবে।
সন্ধ্যা না হতেই নিলের বাবা-মা স্নিগ্ধাদের বাড়িতে হাজির।

তারা স্নিগ্ধাকে নিয়ে যেতে এসেছে। দাদি ফুপিকে ফোন দিয়ে বলেছে যে সে দাদি হবে। এই খবর শুনার পরে তারা আর দেরি করেনি।
স্নিগ্ধার তাদের সামনে যেতে ইচ্ছা করছে না।
স্নিগ্ধাঃ মা কে তুমি এই ব্যপারে বলেছো তাই না?
দাদিঃ হ্যা। দেখ দিদি ভাই সংসার টাতো আর পুতুল খেলে না।
আর তুই কি তোর সন্তানকে বাবার আদরের থেকে বঞ্চিতো করবি?
স্নিগ্ধাঃ কিন্তু দাদু নিল।

(স্নিগ্ধাকে কথা শেষ না করতে দিয়ে আবার দাদি বলা শুরু করলো)
দাদিঃ দেখবি এই বাচ্চাটা নিলকে পরিবর্ত করে দিবে। তোদের সম্পর্ক টা কে আরো মোজবুত করবে।
(দাদুর কথা শুনে স্নিগ্ধা নিজের মনে একবিন্দু আসার আলো নিয়ে নিলের মা-বাবার সাথে চলেগেলো।
এইছারা তো ওর কাছে আর কোনো রাস্তা নেই কারন আব্বুর যা বলার তা সে পরিষ্কার শব্দে বলে দিয়েছে)


পর্ব ৮

এই বাসায় আসার পর থেকে নিল আর মার এক কথা।
যে তাদের ছেলে চাই। মেয়ে হলে হবে না।
কি আজব তাই না? এখন পৃথিবীতে এমন মানুষ আছে।
মাঃ আমার ঘরের প্রদিপ (ছেলে) লাগবে। আমার ঘরটা পরিপূর্ন হবে।
স্নিগ্ধাঃ আল্লাহ যা দিবে আমি তাতেই খুশি কিন্তু মেয়ে হলে বেশি খুশি হবো। কারন যে মেয়ের প্রথম মেয়ে সন্তান হয় সে ভাগ্যবতী।
মাঃ ভাগ্যবতী না ছাই মেয়েরা শুধু ঘরের বোঝা।

স্নিগ্ধাঃ মা আপনে একজন মেয়ে হয়ে এই কথা বলছেন।
আর ছেলেরা যদি এক বংশের প্রদিপ হয় মেয়েরা দুই বংশের প্রদিপের আলো।
মাঃ নিল ঠিক বলে তুই অনেক মুখে মুখে কথা বলা শিখেছিস।
(হায়রে দুনিয়া এখনো মেয়েদের বোঝা মনে করা হয়)
বলেনা যে শাশুড়ি কখনো মা হয় না।

স্নিগ্ধার এই অবস্থায়ও সকালে উঠে সবার জন্য নাস্তা বানাতে হয়। ঘরের কাজ করতে হয়। অবস্য কাজ করাটা বড় ব্যপার না।
কিন্তু নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে করা বড় ব্যপার।
কারন মাঝে মাঝে শরীল টা স্নিগ্ধার কথা শুনেনা।
অনেক খারাপ লাগে। তাই সকালে উঠতে ইকটু দেরি হলে শুনতে হয়।
এখনি এমন করছো আরো মাস পেরোলে না জানি কি করবে। (ভাবির পরিক্ষা তাই উনি তার মার বাড়িতে)
তাই ইধানিং কাজের চাপটা বেরে গিয়েছে।

মাঃ বুয়া আসেনি। একটু মসলা বেটে দাও।
স্নিগ্ধাঃ মা এই কাজটা করলে যদি বাচ্চার কোনো ক্ষতি হয়?
মাঃ আমি নিলকে ৯ মাসের পেটে রেখেও ভর্ত্তা বেটেছিলাম কই কিছু হলো না তো।
আজ কালকের মেয়েদের কে তো কোনো কাজের কথা বলাই যায়না। দাও আমি করি এই অসুস্থ শরীল নিয়ে
স্নিগ্ধাঃ না মা আমি করি।

(আমাদের সমাজে দেখা যায় বেশির ভাগ মেয়েদের প্রেগন্যান্ট অবস্থায় তাদের মারা নিজের কাছে নিয়ে আসে। যাতে মেয়ের সেবায় কোনো কমতি না থাকে। অথচ ছেলের বউরা এই অবস্থাতে একটু আরাম করলে তাদের শুনতে হয় পৃথিবীতে কি সে একাই মা হচ্ছে? আমরা কি মা হইনাই।
যদি সব শাশুড়িরা তাদের ছেলের বউকেও মেয়ের মত করে দেখতো তাহলে আর মেয়েদের এই অবস্থায় তাদের মার বাড়ি যেতে হতো না)
সারাদিনের কাজ করে সন্ধ্যায় বিছানায় পিঠ লাগাতে না লাগাতে।
নিলঃ আজকে কি আমি চা পাবো? (চিৎকার করে)
স্নিগ্ধাঃ জি আনছি।

২ মাস পরে

স্নিগ্ধার পেটের আকারের সাথে সাথে ওর ধৈর্য টাও বেরেছে।
এখন স্নিগ্ধার অনাগত শিশুর ৫মাস।
স্নিগ্ধা আয়নার সামনে গিয়ে নিজের পেটে টাকে বার বার হাতিয়ে হাতিয়ে দেখে।
কি সুন্দর সে অনুভুতি তা বলা যাবে না।

নিলের মধ্যে তেমন কোনো পরিবর্তন আসে নি। কিন্তু ইধানিং বেড রুমে স্মোক করে না। বেশি রাত পর্যন্ত বেশি সাউন্ড দিয়ে টিভিও দেখেনা।
এই কিছু কিছু পরিবর্ত স্নিগ্ধাকে অনেক শান্তি দিচ্ছে।
ওর মনে হচ্ছে যে এই বাচ্চাটা মনে হয় নিলকে বদলাতে পারবে।
স্নিগ্ধার মনে হচ্ছে ওর জীবনে যেনো শুখ ধীরে ধীরে ধরা দিচ্ছে।
কিন্তু।

নিলের ফোন কখন থেকে বেজেই চলেছে। নিল শাওয়ার নিচ্ছিল। স্নিগ্ধা গিয়ে দেখে পিয়া নামের এক মেয়ের ফোন।
স্নিগ্ধা কিছু না ভেবেই ফোনটা পিক করলো।
মেয়েটা (পিয়া):বেবি আর কতো ওয়েট করাবা?
স্নিগ্ধাঃ হ্যালো। আপনার লজ্জা লাগেনা একজন বিবাহিত পুরুষের সাথে এই ভাবে সম্পর্ক রাখতে।
পিয়া:তোমার স্বামি যদি তোমাকে রেখে আমার কাছে আসে তো ইটস নোট মাই ফোল্ট।

স্নিগ্ধাঃ দেখেন আপনে আমার কাছ থেকে আমার স্বামি কে নিলে আমি কিছু বলতান না। কিন্তু আমার সন্তানের কাছ থেকে ওর বাবাকে নিয়েন না প্লিয।
পিয়া:দেখো আমাকে একদম ইমোশনাল ব্লেকমিল করবা না। আর তুমি নিল কে আমার কাছে আসতে দিওনা তাহলেই তো হয়।
নিল এইসময় এসে স্নিগ্ধার হাত থেলে ওর ফোনটা কেরে নিলো।
নিলঃ তুমি আমার ফোন কোন সাহসে পিক করেছো?
স্নিগ্ধাঃ আপনি এখনো ওই মেয়ের সাথে কথা বলেন?
কেনো?

নিলঃ আমার ইচ্ছা।
বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
আর স্নিগ্ধা নিচে বসে কাঁদতে থাকলো।
ও কি এই বাচ্চা টা রেখে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিলো। না না এই বাচ্চাটাতো আল্লাহ দেয়া নিয়ামত।
স্নিগ্ধার জীবনে কি সুখ নামের পাখিটা ধরা দিবে না?
আর কতো সহ্য করবে?

এখন স্নিগ্ধা ৭ মাসের অন্তঃসত্তা। স্নিগ্ধা শারীরিক ভাবে অনেক অসুস্থ হয়ে গিয়েছে।
তাই ওর আম্মু একপ্রকার জোর করে ওকে তাদের বাসায় নিয়ে আসলো। ও এই অবস্থায় ঘরের কাজ না করায় শাশুড়িও মানা করলো না।
সেদিনের পর থেকে স্নিগ্ধা ওর বাবার সাথে কথা বলে না।
স্নিগ্ধা ওর বাসায় আসার পর থেকে নিল ওকে দেখতে আসাতো দূরের কথা একবার ওকে ফোন পর্যন্ত দেয়নি।
ওর খবর না নিলেও ওর ভিতরে নিজের অস্তিত্ব টার কথাতো এক বার ভাবতো।

কিন্তু নিলের মা-বাবা কয়েক বার ওকে দেখে গিয়েছে এবং ওকে হাত খরচ পর্যন্ত দিয়ে গিয়েছে।
স্নিগ্ধা যখন হস্পিটালের বেডে শুয়ে লেবার পেইন এ ছটফট করছে। ওর চোখ দুইটা শুধু নিলকে খুজতেছে।
মনে হয় নিল এখন এসে ওর হাত ধরে বলবে যে তোমার আর আমার বাচ্চার কিছু হবে না।
কিন্তু আপ্সোস নিল এলোনা। মা বলেছে সে অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে গিয়েছে। (আসোলে পিয়ার সাথে কক্সবাজারে ছিলো)
স্নিগ্ধার কোল জুড়ে একটা ছোটো রাজকুমার এলো কিন্তু অক্সিজেনের অভাবে ২৪ ঘণ্টার মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে ছোট প্রাণ টা হেরে গেলো।
স্নিগ্ধার কোল খালি হয়ে গেলো।

স্নিগ্ধা নিজের নবজাতক শিশুর লাশ নিয়ে নিজের বুকের আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে রেখেছে। আর হাউমাউ করে কান্না করছে।


পর্ব ৯

স্নিগ্ধাঃ আল্লাহ আমার শেষ অবলম্বন টাও আপনে আমার কাছ থেকে নিয়ে গেলেন। এখন আমি কি নিয়ে থাকবো। কার জন্য বাচবো। আমার বেচে থাকার কারন টাই আপনে নিয়ে নিলেন।
আম্মুঃ কাঁদিস না মা ওর হায়াত হয়তো এতটুমি ছিলো।
মাঃ এখন কেদে কি হবে?
আমার নাতি কে মেরে তোমার শান্তি হয়নি।
এখন আবার নাটক করতেছ।

আম্মুঃ আপা মুখে লাগাম দেন।
আপনে দেখতেছেন না আমার মেয়ের কি অবস্থা।
মাঃ কই বেচেতো আছে। মারে তো যায়নি?

স্নিগ্ধাঃ আমি মারা যাইনি তাই আপনার ছেলেকে আর একটা বিয়ে দিতে পারলেন না তাই আপনার আপ্সোস হচ্ছে।
আপনার আপ্সোস করতে হবে না মা। আমি আর আপনার নরপুশু ছেলের কাছে যাবো না।
মাঃ আমিও তোর মতো বেয়াদব মেয়েকে আমার ঘরে নিবো না।
তুই আমার ছেলের যোগ্য না।

স্নিগ্ধাঃ আপনার ছেলেকে ঘরে নিতে পারবেন কি না দেখেন।
মাঃ কি করবি তুই শুনি?
স্নিগ্ধাঃ যা আমার অনেক আগে করার উচিৎ ছিল। আমি আপনাদের উপরে কেস করবো।
মাঃ দেখা যাবে।

(স্নিগ্ধার কি খারাপ কপাল তাই না। নিজের বাচ্চার কবর টাও নিজের কাছে দিতে পারলো না।
নিলের মা-বাবা তাদের দেশে নিয়ে দিলো।
ওর কথা কেউ চিন্তা করলো না)
স্নিগ্ধা ওর বাসায় গিয়ে নিলকে ডিভোর্স লেটার পাঠালো।
স্নিগ্ধা ডোমিস্টিক ভাইলেনের কেস করতে চেয়েছিল। কিন্তু

আব্বুঃ কেস করতে হলে আমার বাসায় তোমার যায়গা নাই।
স্নিগ্ধাঃ কেনো?
আব্বুঃ আমারটা খেয়ে-পরে আমার বোন আর ভাতিজাকে জেলে পাঠাবা আর আমি বসে বসে দেখবো?
স্নিগ্ধাঃ আব্বু তারা যে আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলেছে।
আমি আমার বাচ্চার খুনিকে আমি এইভাবে ছেরে দিবো?
আব্বুঃ যা করার আমার বাসায় বাইরে গিয়ে করো।

স্নিগ্ধাঃ তাহলে আমি তাই করবো। কারন আমি এখন একা। আমার উপরে আমার মাসুম বাচ্চার দায়িত্ব নেই।
বলে স্নিগ্ধা নিজের রুমে চলে যায়।
কি করবে তা ভাবতে থাকে। ভাবির সাহায্যে একটা লেডিস হোস্টেলের খোজ পায়।
কিন্তু টাকা পাবে কই?

স্নিগ্ধা এই কথা ভাবতে ভাবতে আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে আছে।
এখন ও কি করবে?
হঠ্যাৎ ওর নজর নিজের পরনে চেন উপরে পরে। যা ওকে ওর নানু দিয়ে ছিলো।
স্নিগ্ধা সব সময় এই চেনটা পরে থাকে।

স্নিগ্ধা চেন বিক্রি করে কলেজে ভর্তি হলো আর হোস্টেলের টাকাও দিলো।
এখন তো দিলো পরে টাকা কোথার থেকে পাবে?
আল্লাহ যা ভাগ্যে রেখেছে তাই হবে।

আর দেরি না করে নিজের কয়েক জোড়া কাপড় নিয়ে বের হয়ে গেলো।
আম্মু অনেক বারোন করলো কিন্তু কে শুনে কার কথা। আব্বুও বুঝতে পারেনি যে স্নিগ্ধা এই পদক্ষেপ নিবে।
প্রথম প্রথম স্নিগ্ধার চলতে অনেক কষ্ট হয়। আসে পাসে কম টাকায় ২টা স্টুডেন্ট পড়িয়ে আর হোস্টেলের মেয়েদের কাপর সিলিয়ে কোন রকম কালেজের বেতন আর হোস্টেল খরচ দেয়।
কেস এর টাকা কিভাবে মেনেজ করবে?
কিন্তু নিলকে এই ভাবে ছেরে দেওয়া টিক হবে না।
ছোট একটা চাকরি জন্য অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু তেমন সার্টিফিকের নেই।
এমনকি আর টিউশনিও পাচ্ছে না।

ওর হোস্টেল আর কলেজ কাছাকাছি তাই তেমন কষ্ট হয় না।
মাঝে মাঝে কাজের ইন্টার ভিউ দেওয়ার জন্য দূরে যায় তাও বাসে ধাক্কা ধাক্কি করে।
আগে অনেক কষ্ট হতো কিন্তু এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।

নিল আর আব্বুর গাড়িতে উঠেও ও এই শান্তি পেতোনা যা এখন নিজের পাঁচ টাকায় দিয়ে বাসে উঠে পায়।
কারন স্নিগ্ধা এখন স্বাধীন। ওকে আর কোনো অবিচার জন্য করে চুপ করে থাকতে হবে না।
এখন আর ওর ক্লান্ত শরিলকে কেউ ছিরে ছিরে খাবে না।
কি শান্তির জীবন।
কিন্তু ওর ভবিষ্যৎ কি?


পর্ব ১০

স্নিগ্ধার পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে…

কেনোই যানি ওই বিলাস বহুল জীবন থেকে এই জীবন টা বেশি শান্তির।
এখনও একটা কাজ করা বাকি। তা হলো ওই নরপশু কে শাস্তি দেওয়া।
কিন্তু কিভাবে?

গত কালকে নিলদের এলাকার থানায় নারী নির্যাতনের জন্য জিডি করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু নিল চৌধুরির নাম শুনে জিডিটা লেখলো না।
কারন এলাকায় তাদের অনেক পাওয়ার।
তার মানেকি ওই নরপশু টার কোনো শাস্তি হবে না?
না যে ভাবেই হোক আমি ওকে শাস্তি দিবোই।
কলেজ থেকে হোস্টেলে যাছিলাম।

রাস্তায় নিলের গাড়ি আমার সামনে এসে আমাকে বাধা দিলো।
নিল গাড়ি থেকে নেমে আমার কাছে এসে আমার হাত শক্ত করে ধরে আমাকে টান দিয়ে গাড়ির সামনে নিলো।
স্নিগ্ধাঃ ছারেন আমার লাগছে।
নিলঃ শুনলাম তুমি নাকি আমার আগেন্সটে জিডি করতে গিয়েছিলা? পারলি?
স্নিগ্ধাঃ আমার হাত ছারেন। এখন আমি আপনার বউ না যে আমার অত্যাচার সব মুখ বুঝে সহ্য করবো।
ছারেন নয়তো আমাই

নিলঃ নয়তো তুমি কি?
শুনি?
স্নিগ্ধাঃ নয়তো আমি চিৎকার করবো। মানুষ জরো করবো।
তারা আপনার কি অবস্থা করবে তা মনে হয় আমার বলার প্রয়জন নেই।
রিক্সা চালোক:কি হইসে আপা?

এই লোক আপনেরে পেরেশান করতাছে?
মূহূর্তের মধ্যে সেখানে ভির হয়ে যায়।
নিলঃ তোকে আমি দেখে নিবো।
নিল এই গুলো দেখে ওই খান থেকে চলে যায়।
হোস্টেলের মেয়েদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে মানবাধিকার এর কাছে কয়েক দিন ঘুরে অনেক কষ্টে তাদের জিডিটা নিতে বাধ্য করলাম।
সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে উকিলের সাথে কথা বলছিলাম। বের হয়ে দেখি দাদী। আব্বু। নিলের বাবা-মা।

আমি তাদের কাছে যাওয়া মাত্র দাদি ঠাস করে আমার গালে এক চর বসিয়ে দিলো।
দাদিঃ এই দিন দেখার জন্য তোর আব্বু তোকে এতো বড় করেছে?
হারামজাদি বংশের নাম ডুবিয়ে দিলো।
আমরা এখন এই সমাজে মুখ দেখাবো কিভাবে।

স্নিগ্ধাঃ আমি কোনো ভুল কাজ করিনি।
নিলের মাঃ দেখেছো মা। আমি বলেছিলাম না স্নিগ্ধা একটা বেয়াদপ মেয়ে। এই বেয়াদব মেয়েকে আমার ছেলের ঘারে চাপিয়ে দিয়েছো।
স্নিগ্ধাঃ আপনার ছেলেকে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছাই আমার ছিলোনা।
আব্বুঃ দেখ আমি নিলের সাথে কথা বলবো। তুই ওর কাছে মাফ চাইলে। ও তোকে মাফ করে দিবে।
স্নিগ্ধাঃ আমি আর ওই নরপশু কাছে যাবো না।
নিলের মাঃ তাহলে কোর্টে দেখা হচ্ছে।

আর কারো সাথে কোনো কথানা বলে হোস্টেলে চলে আসলাম।
২ মাস ধরে কলেজের বেতন। হোস্টেলের খরচের টাকা দেওয়া হয়নি।
কিভাবে দিবো? সব টাকা তো উকিলের পিছনে চলে যাচ্ছে।
আর পারছি না।
এর মধ্যে একবার আম্মু আমার সাথে দেখা করে গিয়েছে। কিছু টাকাও দিতে ছেয়েছিলো। আমি নেই নি। না খেয়ে থাকবো তাও আব্বুর টাকায় নিবো না।
আমি বুঝি আমার আম্মুটাও অপারক।

কি করবে ঘরে যে আরো একটা মেয়ে রয়েছে।
ঘর থেকে বের হয়ে গেলে ওই মেয়ের জন্য যে ভালো সমন্ধ পাবে না।
নিল কয়েকটা লোক আমার পিছনে লাগিয়ে দিয়েছে।
যে আমি কি করি না করি খবর রাখার জন্য।

একদিন উকিল আমাকে খারাপ প্রস্তাব দিলো। আমি কোনো মতে নিজের মান-সম্মান বাঁচিয়ে ওইখান থেকে বের হয়ে এসেছি।
এই কয়েক দিনে আমার বুঝা হয়ে গিয়েছে যে এই পৃথিবী অার এই পৃথিবীর মানুষ সব সার্থপর।
সবাই শুধু টাকা ছিনে।
আর দুনিয়াতে নিলের মত নরপশুর অভাব নেই।
কিন্তু আমি হার মানলাম না। আবার নতুন উকিল হায়ার করলাম।
আম্মু আর ভাবি আমারর পক্ষ থেকে সাক্ষী দিলো কিন্তু কোনো লাভ হলো না।

কারন আমার কাছে তো গাদা গাদা ঘুষ দেওয়ার মতো টাকা নেই। নেই পাওয়ার।
ওরা ওই জজ আর আমার পক্ষের উকিলকে টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছিলো।
আমি যখন জীবন যুদ্ধে পরাজয় হয়ে। চোখে বেশামাল পানি নিয়ে ফিরছিলাম। ওদের মুখে ছিলো একগ্রাস হাসি।
হোস্টেলে এসে শুনি ১সপ্তার মধ্যে টাকা না দিলে এইখান থেকে বের করে দিবে।
কলেজের ফিস না দাওয়ায় কারনে আমার নাম কেটে দিয়েছে।
আল্লাহ আমাকে পথ দেখান। আমি এখন কি করবো? ?


পর্ব ১১

স্নিগ্ধার পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে…

বিছানায় উপুত হয়ে শুয়ে। বালিশে মুখ চেপে কান্না করতে থাকলাম।
এখন আমার কি হবে? আমি কোথায় যাবো?
ওই নরকে যাওয়ার থেকে মরে যাওয়া অনেক ভালো।
নিজের মাথায় কারো স্পর্শ অনুভব করলাম।
তাকিয়ে দেখি খালা (বুয়া)।

খালা:কি হইসে মা এমনে কান্তাসো কেন?
বাড়ির কথা মনে পরসে?
আমিঃ আমার কোনো বাড়ি নেই খালা। আমার কেউ নেই।
খালাকে সব খুলে বললাম।
আমিঃ আপনেই বলেন খালা এখন আমি কি করব।
খালা:আসোলে কেমনে যে কই? তোমরা তো শিখিত মাইয়া। তুমি করবা কি না?
স্নিগ্ধাঃ কি খালা?

খালা:আমি যে বাড়িতে ছুটা কাম করি। সে মেডামের মা তার অন্তাসত্তা ভাইয়ের বউ এর কাছে গেছে। সে বাচ্চা নিয়া একা থাকে তাই তার কাজে জাইতেও অনেক সমস্যা হয় আর জামাই বিদেশ। তাই আমারে কইসিলো একটা মেয়ে ঠিক কইরা দিয়ে। বাচ্চা রাখার লেগা।
স্নিগ্ধা অনেক খন চুপ করে থেকে।
-আমাকে তার সাথে কথা বলিয়ে দিবা খালা। আমি পারবো।

-মহিলার সাথে কথা বলে বুঝলা সে অনেক ভালো মানুষ। তার থেকে ওই বেবিটা (ছেলে) এতো সুইট। মাত্র ৮মাস। আমার বেবিটা থাকলে মনে হয় এই রকম থাকতো।
আজ প্রায় ৪ মাস আমি এইখানে।
আমার কাজ শুধু উনি কাজে থাকার সময় বেবি টার দেখা শুনা করা।
থাকা খাওয়া সব এইখানে।

উনি আমাকে আপু বলতে বলেছে। উনি একজন ডাক্তার। খুব ভালো লাগে উনাকে দেখতে।
আর নিজেকে আয়নায় দেখতে অনেক ঘৃনা লাগে। নিল কি ঠিক বলেছিলো আমি মূর্খ। আমি আরস্মার্ট।
এই সব চিন্তা করতে করতে হাউমাউ করে কান্না করে দিলাম। এতো দিন করিনি। আসলে চোখ দিয়ে পানি বের হয়নি। মনে হয় চোখের পানিও আমাকে সংগ দিতে দিতে ক্লান্ত। কিন্তু আজকে কোথার থেকে যে এতো পানি আসছে।
আমার কান্নার শব্দ শুনে আপু আমার রুমে চলে আসলো।

আপুঃ কি হয়েছে স্নিগ্ধা এই ভাবে কান্না করছ কেনো?
স্নিগ্ধাঃ কিছু না আপু এমনি।
আপুঃ আছা তুমি এতো কি ভাবো?
আর সারা খন এমন চুপ চুপ থাকো কেনো?
স্নিগ্ধাঃ (চুপ)
আপুঃ আমি তোমার বড় বোনের মতো। আমাকে বলা যায় না?
স্নিগ্ধাঃ (চুপ)

আপুঃ আচ্ছা বাবা থাক বলতে হবে না। আসো আমার রুমে এসে ঘুমাবা।
স্নিগ্ধা আর কোনো কথা না বারিয়ে তার সাথে চলে গেলো।
আপু হসপিটালে। বেবি গুমাছে। তাই আমি বেবির পাশে বসে পেপার পড়ছি।
আজকে পেপাতে অনেক কলেজের ভর্তির খবর এসেছে।
আচ্ছা আপু সাথে কথা বলি যে
আমি কলেজে ভর্তি হবো।
উনি কি মানবে?
থাক আগে কথা বলে দেখি।

রাতে খাওয়ার টেবিলে।
স্নিগ্ধাঃ আপু একটা কথা বলি?
আপুঃ আমারো তোমার সাথে একটা কথা আচ্ছে।
স্নিগ্ধাঃ আপু আপনি আগে বলেন।
আপুঃ তুমিতো জানো তোমার ভাইয়া ইউএসএ তে থাকে। উনি যাওয়ার পর আমার আর বাবুর জন্য এপ্লাই করেছিলো।
আমাদেরটা হয়ে গিয়েছে। আর বরঞ্চ ১ বছরের মধ্যে আমরা চলে যাবো।
স্নিগ্ধাঃ কংরেচুলেশন আপু।

আপুঃ যানো স্নিগ্ধা আমার তাকে (হাবি) ছাড়া দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।
এখন তার কাছে যেতে পারবো শুনে অনেক শান্তি লাগছে।
স্নিগ্ধাঃ স্বামি স্ত্রীর সম্পর্ক টা মনে হয় এমনি হয়। আমার পোরা কপাল। (মনে মনে)
আল্লাহ আপনাদেরকে ভালো রাখুল।
আপুঃ Thank you বোন।
তুমি কি যানি বলবা?

স্নিগ্ধাঃ আপু ২বছর গ্যপ দিলে কি কলেজে ভর্তি নেয়?
আপুঃ হ্যা নেয়।
কে কলেজে ভর্তি হবে?
স্নিগ্ধাঃ আপু আপনি যদি পারমিশন দেন তাহলে। আমি হতাম।
আপুঃ তোমার এসএসসির রেজাল্ট কি ছিলো? (সাভাবিক কণ্ঠে)
আমিঃ A+।

আপুঃ খাওয়া শেষ করে আমার রুমে আসো।
স্নিগ্ধা ভয়ে ভয়ে তার রুমে গেলো।
গিয়ে দেখে তিনি খাটে বসে কি জানি ভাবছে।
আমি তার কাছে জাওয়া মাত্র তিনি বলে উঠলেন।
আপুঃ জানো স্নিগ্ধা পৃথিবীতে কিছু মানুষ থাকে যাদের সাথে রক্ততের সম্পর্ক না থাকলে তাদের অনেক আপন লাগে। যেমন আমার কাছে তুমি। কিন্তু আপ্সোস আমি তোমার কাছে সে আপন জন হতে পারলাম না।

তোমার কি মনে হয় আমি কারো সম্পর্ক না যেনে নিজের মূল্যবান জিনিশটা তার কাছে রেখে যাবো?
আমি তোমার ব্যপারে খালার থেকে সব শুনেছি।
কিন্তু আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চেয়েছিলাম।
আচ্ছা স্নিগ্ধা এতো ধর্য্য কথায় রাখো?

আমি মনে হয় তোমার যায়গায় থাকলে নিজেকে শেষ করে দিতাম।
আমি তোমাকে কলেজে ভর্তি হওয়ার পারমিশন দিবো। কিন্তু তোমার আমাকে একটা প্রমিস করতে হবে।
স্নিগ্ধাঃ কি আপু?
আপুঃ তোমাকে আমাদের সমাজের মেয়েদের জন্য Ideal হতে হবে। নিজের পায়ে নিজেকে দাড়াতে হবে।
আমিঃ আমি হবো আপু। কিন্তু একটা কাজ অপূর্ন রয়ে যাবে।
তা হলো নিলকে শাস্তি দেওয়া।

আপু আমার হাত ধরে নিজের সামনে বসালো।
আপু :ছোট বেলায় আম্মু একটা কথা বলতো। কি জানো?
সবাই সবার পাপের শাস্তি এই দুনিয়াতে পেয়ে যাবে।
তাহলে বলো তুমি কি ওকে শুধু মাত্র কিছু সময়ে জন্য শাস্তি দিতে চাও নাকি ওকে নিজের মধ্যে তিলে তিলে শাস্তি দিবা?
অনুতাপ এর মাধ্যমে।

এখন যাও শুয়ে পরো। কালকে আমি তোমাকে নিয়ে কলেজের ভর্তি রেজিস্টারি করতে বের হবো।
স্নিগ্ধাঃ গেটের সামনে এসে আবার আপুর কাছে গিয়ে তাকে জরিয়ে ধরলাম।
আপুঃ এখন কান্না করার দিন শেষ বোন।
বলে আর পিঠ হাতিয়ে দিতে থাকলো।

এখন আমার রুটিন হচ্ছে সকালে কলেজে যাওয়া। তারপর হস্পিটালে গিয়ে আপুর কাছ থেকে বেবি কে নিয়ে বাসায় আসা।
আমার নতুন কলেজ টা পুরাতন কলেজের থেকে অনেক বেশি ভালো।
আম:আপু একটা কথা জিজ্ঞেসা করি?
আপুঃ হ্যা কর?

আমিঃ আপনি আমাকে এতো হেল্প করছেন কেনো?
আপুঃ প্রশ্ন টা তোলা থাক অন্য একদিন উত্তর দিবো।
দেখতে দেখতে ফাস্ট ইয়ার শেষ হয়ে সেকেন্ড ইয়ারে এডমিশন নিয়েছি।
এর মাঝে ভাবির কাছ থেকে শুনলাম নিলের কেস এর কাজ শেষ হয়ার পরে নাকি পিয়াকে বিয়ে করেছে।
যাইহক আপুও আর বেবিও ইউএসসে চলে গিয়েছে।

যাওয়ার আগে আমাকে তার হস্পিটালে একটা রিসিপশ্নিস্ট এর কাজ দিয়ে গিয়েছে।
সময় টা কেনই জানি অনেক দূত্র চলতে থাকলো।
আজ আমার এইচএসসি পরিক্ষা শেষ হলো।
সবাই জিজ্ঞেসা করছে কোন ভার্সিটি ভর্তি কোচিং এ ভর্তি হবো। তাদের কে কি করে বুঝাই যে আমার হাত একদম খালি। ভার্সিটি কোচিং কি ভাবে ভর্তি হবো?
আপু টাকা পাঠাতে চেয়েছিলো। আমি নেইনি।
আর কতো?


পর্ব ১২

কে জানি স্নিগ্ধাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
স্নিগ্ধাঃ মামি।
মামিঃ তোর মামারা তোকে পাগলের মতো খুজেছে মা। তুই এতো দিন কথায় ছিলি?
বাসায় চল।
স্নিগ্ধাঃ আম্মু কেমন আছে?

মামিঃ কোনো রকম বেছে আচ্ছে।
বাকি কথা পরে হবে এখন বাসায় চল।
স্নিগ্ধাঃ অন্য একদিন যাবো মামি। আজনা।
মামিঃ আমি তোর কোনো কথা শুনছি না।
চল।

মামি এক প্রকার জোর করে স্নিগ্ধাকে তার বাসায় নিয়ে গিয়েছে।
মামাতো স্নিগ্ধাকে দেখে চোখের পানি ছলছল করছে।
মামা-মামি স্নিগ্ধাকে নিজের মেয়ের মতো দেখে। এমনকি সবাই কে বলে তাদের ১ ছেলে। ১ মেয়ে (স্নিগ্ধা)
স্নিগ্ধার মামাতো ভাইটাও ওকে একদম নিজের আপন ছোট বোনের মতো দেখে।
সে এখন পড়াশুনার করার জন্য দেশের বাইরে থাকে।
নয়তো নিলের বাবা-মা ছেলের লাশ ও পেতো না।

আম্মু স্নিগ্ধার খবর শুনে সারাহ কে নিয়ে মামা বাড়ি আসছে।
এই কয়ের দিনে কি হয়েছে সব মামা-মামি কে না চাওয়ার সর্তেও বলতে হয়েছে
মামাঃ আমার পিচ্ছি স্নিগ্ধাটা কতো বড় হয়ে গিয়েছে।
স্নিগ্ধাঃ সময় সব শিখিয়ে দেয় মামা।

মামাঃ রোদের আম্মু দেখ আমার মেয়ে কি খাবে। তা রান্না কর।
স্নিগ্ধাঃ না মামা কিছু খাবনা। আজ আসি।
মামাঃ তুমি কোথাও যাচ্ছো না। এখন থেকে আমার কাছে থাকবা।
এমনি আমি তোমার উপরে অনেক রাগ। সেদিন বাবার সাথে রাগ করে বের হয়েছ ভালো কথা কিন্তু আমার বাসায় না এসোনি কেনো?
স্নিগ্ধাঃ কারন আমি আর কারো কাছে বোঝা হতে চাইনা মামা।
মামাঃ মেয়েরা কি বাবার কাছে বোঝা?
মেয়েরা তো বাবার ঘরের লক্ষী।

এর মধ্যে আম্মু এসে স্নিগ্ধাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দেয়।
আর স্নিগ্ধাকে তার মামার কাছে থাকার জন্য আনেক রিকুয়েস্ট করে।
শেষ পর্যন্ত স্নিগ্ধাও রাজি হয়ে যায়।
স্নিগ্ধা পাব্লিক মেডিকেল পরিক্ষার সাথে সাথে পাব্লিক ইউনিভার্সিটি গুলাতেও পরিক্ষা দেয়।
সব পরিক্ষা দিতে মামা অথবা মামি ওর সাথে যায়।
মামা-মামির সাপোর্ট ছাড়া স্নিগ্ধার পক্ষে একা এইগুলো সম্ভব হতো না।
স্নিগ্ধা ঢাকা মেডিকেলে চান্স পায় না।

কিন্তু রাজশাহী মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়ে যায়।
মামা ওকে ঢাকার কোনো প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তি করতে চেয়েছিলো। কিন্তু না স্নিগ্ধা পাব্লিক থেকেই পড়বে।
তাই রাজশাহী চলে যায়।
শুরু হয় স্নিগ্ধার নতুন জীবন।

স্নিগ্ধার মনে একটাই স্বপ্ন। ওকে জীবনে অনেক ভালো পর্যায় যেতে হবে। যাতে সবাই ওর নামে অকে ছিনে। ওমুকের মেয়ে। ওমুকের বউ বলে না সম্মধন করে।
দেখতে দেখতে আজ স্নিগ্ধার ২বর্ষে পরিক্ষা শেষ আর মাত্র ৩ বছর।
স্টুডেন্ট পড়িয়ে স্নিগ্ধা এখন মাসে ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় করে। প্রতি মাসে মার হাত খরচ ও পাঠায়।
নিজের টাকা দিয়েই পড়াশুনা করে। এখন আর টাকার জন্য হিমসিম খেতে হয় না।

বরং অনেক গরিব মেয়েদেরকে ফ্রম্পূর্ন করতে টাকাদেয়। পড়াশুনা করার জন্য উৎসাহ দেয়।
এমন কি নানা রকম এনজিও তেও কাজ করে।
আর ইদানিং ওর সবার থেকে পছন্দের কাজ। তাহলো পথশিশুদের পড়ানো। পথশিশুদের মুখের হাসি ওকে ওনেক শান্তি দেয়।
এর মাঝে অনেক বার ঢাকায় মামা বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছে।
মামাতো ওর জন্য একটা রুম ডেকুরেট করেছে।

যা দেখে স্নিগ্ধা হাসবে না কি করবে তা ভেবে পায় নি। কারন রুম টা দেখে মনে হচ্ছিলো কোনো পাচঁ বছরের বাচ্চার রুম।
তারপর নিজের ইচ্ছা মতো সাজিয়েছে।
গায়ে এপ্রন। চোখে চশমা। ঠোঁটের কিনারে মিষ্টি হাসি। আর ওর মায়াবি চেহারা তো আছেই।
মাথার চুল গুলাও পিঠ বেয়ে কমড়ে নেমেছে। তাও আবার লেয়ার কাটা।

এখন তার মধ্যে ডাক্তার ডাক্তার ভাব আসা সবে শুরু হয়েছে।
এক কথায় অসাধারন।
কেউ বলবে এই মেয়ে এক সময় ডমিস্টিক ভায়লেনের শিকার হয়েছিল। তার জীবনে কষ্ট আর কষ্ট ছিল।
না কেউ বলবে না। সময়ে সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাচ্ছে।
হোস্টেলে যাওয়া মাত্র স্নিগ্ধার ফোনে মামার কল।
মামাঃ

স্নিগ্ধাঃ কি? ?
আমি এখোনি ঢাকায় আসার জন্য রওনা দিচ্ছি।
স্নিগ্ধা মামার বাসায় গিয়ে দেখে দরজা খোলা।
ভিতরে গয়ে দেখে একটা ছেলে জানালার পাশে ফিরে ফোনে কথা বলছে।
স্নিগ্ধা গিয়ে ছেলেটাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে।

স্নিগ্ধাঃ রোদ ভাইয়া এতো দিন পরে দেশের কথা মনে পরলো?
পিছন থেকে এক আওয়াজ আসলো পুছকি
স্নিগ্ধা পিছনে ফিরে দেখে রোদ ভাইয়া।
তাহলে ও এতোখন কাকে জরিয়ে ধরেছিলো।
ছিঃ ছিঃ

স্নিগ্ধাঃ আল্লাহ দরি ফেলেন। নয়তো মাটি ফাক করে দেন।
(মনে মনে)


পর্ব ১৩

স্নিগ্ধার পয়েন্ট ওফ ভিউ।
লোকটার দিকে না তাকিয়ে বললাম।
আমিঃ সরি। আমি ভেবেছি যে আপনি রোদ ভাইয়া তাই। আই এম এক্সট্রেম্লি সরি।
তার দিকে তাকানোর সাহস হলো না।

লোকটাঃ ইটস ওকে। (নরম সূরে)
আমিঃ ছেলেদের কণ্ঠ এতো সুন্দর কিভাবে হয়। না চাইতেও তার দিকে চোখ চলেগেলো।
ভাইয়ার বয়সী একটা ছেলে দেখতে লম্বা। উজ্জল শ্যম্লা কিন্তু বেশ মায়াবী চেহারা।
আগে আম্মুর কাছ থেকে শুনতাম যে শ্যম্লা রঙ এর মানুষদের ছেহারায় একটা আলাদা মায়া থাকে।
তা আজকে হারে হারে বুঝতে পারলাম।
কিছুখন তার দিকে তাকিয়েছিলা।
তারপর তার চোখে চোখ পরলো।

আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।
ছিঃ ছিঃ উনি মনে হয় আমাকে ছেচরা মেয়ে ভাবছে।
লজ্জা লজ্জা।
ভাইয়া (রোদ):তোমাদের পরিচয় করিয়ে দেই।
স্নিগ্ধা আমার ছোট বোন। ডাক্তারি পরছে।

আর স্নিগ্ধা ও হলো প্রহর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
The khan ইন্ডাস্টির এমডি।
প্রহরঃ নাইস টু মিট ইউ।
আমি তাহলে আজকে আসি।

কোথায় যানি এই নামটা শুনেছিলাম। (মনে মনে) ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললাম।
আমিঃ ভাইয়া আমি এটা কি শুনলাম?
তুই নাকি বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছিস?
রোদঃ কে বললো এই কথা?
মামিঃ কে বললো মানে?

হতরছারা। শয়তান এই দিন দেখার জন্য তোকে দেশের বাইরে পড়তে পাঠিয়ে ছিলাম।
রোদঃ আম্মু আমার কথাটা তো শুনো।
মামিঃ আমি কিছু শুনতে চাই না। তুই ওই মেয়েকে নিয়ে আমার বাসার থেকে বেরহ।
আমিঃ মামি প্লিয একবার ভাইয়ার কথা তো শুনো।
ভাইয়া তুই আমাকে বল।

রোদঃ আমি ওকে বিয়ে করিনি পুছকি।
মেয়েটা আমার সাথে আমার ইউনিভারসিটি তে পড়তো। মেয়েটা বাংলাদেশি। অনাথ ওইখানে ওর দাদির সাথে থাকতো। কিছু দিন আগে ওর দাদি ইন্তেকাল করে। এখন তুই বল আমি কি করে ওকে ওইখানে একা রেখে আসি।
আমি ওকে অনেক ভালোবাসি ও আমাকে অনেক ভালোবাসে।

তাই মা-বাবার সাথে দেখা করাতে নিয়ে এসেছি। তাদেকে মানিয়ে বিয়ে করবো।
কিন্তু দেখ মা কি শুরু করেছে।
মামিঃ কি বললি? আমি কি শুরু করেছি?
জরিনা (বুয়া) রান্না ঘর থেকে আমার ঝারু টা নিয়ে আয়তো।
রোদঃ দেখ।

আমিঃ মামি একটু শান্তহন।
আর যার জন্য এই যুদ্ধ হচ্ছে সে কোথায়?
রোদঃ দারোয়ান মামার রুমে বসে আছে।
আমিঃ কেনো? একা?
রোদঃ কি করবে মা তো ঘরে ঢুকতে দিলোনা।
না বাবা আছে ওর সাথে।

প্লিয স্নিগ্ধা তুই একটু মা কে বুঝা।
আমি আর বাবা তো ব্যর্থ হলাম।
আমি মামি কে আমার রুমে নিয়ে আসলাম।
আমিঃ মামি এইখানে মেয়েটার কি দোষ বলো?

আর দেখো ভাইয়া কিন্তু চাইলে বিয়ে করে আনতে পারতো কিন্তু সে তা করে নি প্লিয আমার লক্ষী মামি তুমি অমত করোনা।
মামিঃ দেখবি মেয়েটা আমার ছেলেকে আমাদের থেকে দূরে নিয়ে যাবে।
আমার সাথে আমার ছেলেকে থাকতে দিবে না।
আর কতো ছেলেটাকে ছাড়া থাকবো? ?

আমিঃ ভাইয়া যদি বাংলাদেশে সেটেল হয় তাহলে তুমি এই বিয়েতে রাজি হবে?
মামিঃ হ্যা। আমি তো চাই আমার ছেলে আমার কাছে থাকুক।
ও যদি বিয়ে করে বউ নিয়ে আমাদের সাথে থাক্র আর ওর বাবার বিজনেস দেখাশুনা করে তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই।
মামির চোখ মুছিয়ে ভাইয়ার সাথে এই ব্যপারে কথা বলতে গেলাম।
রোদঃ পুছকি মা কে মেনেজ করতে পারলি?

আমিঃ ভাইয়া মামি চায় তুমি যাতে বিয়ের পর আর দেশের বাইরে না যাও। এখনে থেকে মামার বিজনেস দেখাশুনা কর।
রোদঃ মানে কি?
এই দেশে আছেটা কি যে এইখানে থাকব?
পপুলেশন। ট্রাফিক। আবর্জনা।

তোর কি মনে হয় আমি এই গুলো বলবো?
মোটেও না।
আমি একটা মাল্টিন্যানাল কোম্পানি তে জব পেয়েছি।
নেক্সট মান্থ থেকে জয়েন্ট করবো। আর পাশা পাশি বাবার বিজনেস টাও দেখব।
আমি উঠে নিচে নামতে থাকলাম।
আমার পিছনে ভাইয়া।

রোদঃ কোথায় যাও?
আমিঃ ভাবিকে নিয়ে আসি আর মামাকে বলি কাজি ডাকতে।
কাজি ডেকে ভাইয়া ভাবির বিয়েটা হয়ে গেলো।
পরশুদিন বড় করে বৌ-ভাত এর ফাংশন হবে।
সবাই ফাংশনের কাজে উঠে পরে লেগেছে। আম্মুও আসেনি। দাদুমনি শরিলটা ভালো না তাই।
আমার কি তাকে দেখতে যাওয়া উচিৎ। আব্বু যদি ঘরে ঢুকতে না দেয়। আর ভাবতে পারছি না।
ভাবির সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম উনি অনেক মিশুক।

ভাবিঃ তো তুমি কবে বিয়ের পিরিতে বসছো?
কেনোই যানি বিয়ে নাম শব্দ টা শুনলে ভয় লাগে।
আমার কালো অতিতের কথা মনে পরে যায়।
আমি তার কথা কাটিয়ে ছাদে চলে গেলাম।
কালকে ফাংশন। বাসায় এতো হইচই একদম ভালো লাগছে না। এই কয়েক দিন একা থাকতে থাকতে একটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।
হট্যাৎ কারো উপস্থিত টের পেলাম।


পর্ব ১৪

পিছনে ফিরে দেখি ওই লোক টা।
কি জানি নাম। হ্যা প্রহর।
সে কোনো কথা না বলে আমার থেকে কিছু দূরুত্ব বজায় রেখে আমার মতো রেলিং ধরে দারালো।
প্রহরঃ সবাই নিচে ওইহুল্লা করছে। তুমি এইখানে একা কি করো?
আমিঃ তার কণ্ঠে শুনে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি।

এতোখনে পরে তার দিকে আমি ভালো করে তাকালাম।
পরনে ব্লু শার্ট। ব্লাক প্যন্ট। জ্যোৎস্নার আলোতে তাকে এই ভাবে দেখতে অসাধারণ লাগছে। তার ছেহেরাটাতে আদালা মায়া কাজ করছে। উনি ওইসব কেটকেটা সাদা ছেলেদের কাতারে পরে না। আবার কালো না। দেখতে উজ্জল শ্যাম্লা। মানে ছেলেদের জন্য পার্ফেক্ট কালার।
আবার আগে শুনতাম ব্লু ছেলেদের কালার। ব্লু কালারে নাকি ছেলেদের দেখতে অনেক আলাদা লাগে। ঠিকটাই।
(মনে মনে)

(নিজের অজান্তে কোন ঘোরে চলে গেলাম।
উনার কথায় আমার ঘোর ভাংল)
প্রহরঃ একা থাকা কি তোমার অনেক পছন্দের?
আমিঃ হমম
আমি আর কিছু না বলে। ছাদের অন্য পাশে এসে দারালাম।
নিচে যেতে ইচ্ছা করছে না।
আর তার সামনে থাকলে বার বার তার দিনে নজর যায়।
লোকটা আবার আমার সাথে এসে দারালো।
উফ!

(দুইজনই চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছি)
প্রহরঃ কোনো ভালো স্বপ্ন থাকলে বলতে পারো?
আজকে জ্যোৎসনা রাত। আমার মা বলে সূর্যের বা জ্যোৎস্নার চাঁদের সামনে স্বপ্ন বললে নাকি স্বপ্ন সত্যি হয়।
আমিঃ নিজের অজান্তে ঠোঁটে কোনায় মুচকি হেসে।
যা আমরা চোখ বন্ধ করে দেখি তাকে স্বপ্ন বলে না।

স্বপ্ন হলো যা আমরা খোলা চোখে স্বজ্ঞানে দেখি।
যা পূরন করা বা যা পাওয়ার নেশা আমাদের ঘুম কেরে নেয়।
প্রহরঃ তুমি খুব সুন্দর করে কথা বলো।
বাই দ্যা ওয়ে এই ভাবে কোনো ছেলের সামনে হেসোনা।
আমিঃ কেনো?

প্রহরঃ তাহলে ছেলেটা তোমার প্রেমে পরে যাবে।
আমিঃ আর আপনি?
(আল্লাহ আমি এটা কি বললাম)
আমি তারাতারি নিচে আসতে নিলাম।
প্রহর আমার হাত ধরে ফেললো।
আমিঃ আমার হাত ধরলেন কেনো?

প্রহরঃ
আমিঃ আমাকে মামি ডাকছে ছারেন।
প্রহরঃ নিজের প্রশ্নের উত্তর টা নিয়ে যাও।
(এতো চেষ্টা করেও তার কব্জা থেকে আমার হাত নিতে পারছি না)
আমিঃ মামা।

প্রহর আমার হাত ছেরে দিলো।
আমি আর একসেকেন্ড ও দেরি না করে নিচে চলে আসলাম।
আমিঃ আল্লাহ বাচালো। লোক টা এক নাম্বারের পাগল। আর তার সামনে যাওয়া যাবে না।
প্রহরঃ আমার রেখে কোথায় পালাবা মেডাম?
সকালে

মামিঃ স্নিগ্ধা দেখ তোর পাগল ভাই কি বলে?
স্নিগ্ধাঃ কি মামি?
মামিঃ ও বলে বৌ-ভাতে মালা বদল করবে।
তুই বল বৌ-ভাতে কেউ মালা বদল করে?
মানুষ কি বলবে?

স্নিগ্ধাঃ মানুষের বলার কারনে কি আমার ভাই নিজের শখ পূরন করবে না?
মামিঃ যেমন ভাই তার তেমন বোন।
এখন শাহাবাগ থেকে বরমালা আনতে কাকে পাঠাই?
জামেলার উপরে জামেলা।
স্নিগ্ধাঃ মামি আমি যাই।

মামিঃ তুই পারবি মা?
স্নিগ্ধাঃ হ্যা পারবো।
মামিঃ গাড়ি টা তোর মামা নিয়ে গিয়েছে।
স্নিগ্ধাঃ মামি আমি রিক্সা দিয়ে যাবো। ডোন্ট ওয়ারি।
প্রহরঃ আন্টি আমি কোনো হ্যল্প করতে পারি?
মামিঃ হ্যা বাবা।

আমার মেয়েকে একটু শাহাবাগে নিয়ে যেতে পারবে।
প্রহরঃ জি আন্টি।
এমনেও আমি ফ্রি।
আমি নিচে যাছি। তুমি আসো।
স্নিগ্ধাঃ না না না লাগবে না। আমি একা জেতে পারবো।
মামিঃ একা হলে তোর যেতে হবে না।
আমি যাই।

স্নিগ্ধাঃ ওকে মামি। আমি উনার সাথে যাবো
সারা রাস্তা না উনি আমাকে কিছু বলবো। না আমি তার সাথে কিছু বললাম।
বাসার পার্কিং এরিয়াতে এসে। যখন আমি নামতে নিবো।
গাড়ি লক
স্নিগ্ধাঃ লক ওপেন করেন আমি বের হবো।

প্রহরঃ তুমি জিজ্ঞেসা করেছিলা না। যে আমি তোমার হাসির প্রেমে পরেছি কি না?
স্নিগ্ধাঃ আমার দেরি হচ্ছে প্লিয লক ওপেন করেন।
প্রহরঃ একমিনিট। জাস্ট এক মিনিট।
তুমি তোমার হাসির প্রেমে পরার সুযোগ আমাকে দাওনি।
কারন আমি আগেই তোমার স্পর্শের প্রেমে পরে
গিয়েছিলাম।

সেদিন যখন তুমি আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছিলা। তখন আমি তোমার প্রেমে পরে গিয়েছিলাম।
I love you I love you more then anything
will you marry me? ?
আমি তোমার আম্মু-আব্বুর সাথে তোমাকে বিয়ে করার কথা বলি?
স্নিগ্ধাঃ
(বলতো স্নিগ্ধার এন্সার কি হবে? )


পর্ব ১৫

প্রহরের মুখে এইগুলো শুনে রাগে স্নিগ্ধার হাত-পা কাপচ্ছে।
ছেলে মানুষ আর বিয়ে এই দুইটা শব্দ স্নিগ্ধা একদম শুনতে পারে না।
ও ভাবে আর কেউ ওর শরিল আর ওর জীবনে নিজের কর্তিত্ব খাটাবে।
স্নিগ্ধাঃ আপনের সাথে হেসে দুই একটা কথা কি বললাম
আপনে ভাবছে যে আমি আপনাকে ভালোবাসি?

আর কত বার বলবো সে দিন ভুল বুঝে আপনাকে টাচ করেছিলাম।
আর কি জানেন আপনে আমার ব্যপারে?
আমার পাস্টের ব্যপারে।
যদি জানতেন তাহলে এইগুলো বলতেন না।

প্রহরঃ আমি সব জানি।
আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
স্নিগ্ধাঃ বিয়ে নাকি বৈধ ভাবে বার বার আমার শরিকে নিজের বিছানায় নিতে চান।
প্রহরঃ স্নিগ্ধা।
স্নিগ্ধাঃ দয়া করে আমার সামনে আর আসবেন না।
দরজা খুলেন।

মিপ্রহর প্লিয দরজা খুলেন।
প্রহর লক ওপেন করতে না করতে স্নিগ্ধা নেমে উপরে চলে যায়।
নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে। দরজা ঘেসে বসে পরে।
না আর কাউকে নিজের উপরে ভাগ বসাতে দিবে না।
নিজের জীবনে আবার নরকে ঠেলে দিবে না।

কারন আর কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা স্নিগ্ধার কাছে নেই।
হঠ্যাৎ স্নিগ্ধার ফোনে একটা কল আসলো।
সারাহ (স্নিগ্ধার বোন):আপু তুমি মামার বাসায় না?
স্নিগ্ধাঃ হ্যা। কেনো?
সারাহঃ আপু দাদুমনি তোমাকে অনেক দেখতে চাচ্ছে। তুমিতো যানো তার শরিল টা ভালো না।
স্নিগ্ধাঃ আমার ও অনেক দাদুমনিকে দেখতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু আব্বু?
সারাহঃ কিছু হবে না আপু।

তুমি একটু আসোনা প্লিয।
স্নিগ্ধাঃ আমি আসছি।
স্নিগ্ধা হাতে মুখে পানি দিয়ে। নিজেকে সাভাবিক করলো।
তারপর নিজের বাসার জন্য রোওনা দিলো।
না ওই টা ওর বাসা না। ওই টা ওর আব্বুর বাসা।
বাসার নিচে যাওয়া মাতে স্নিগ্ধা পা কাপ্তে লাগলো। এইখান থেকে ওকে নিলে কাছে পাঠিয়ে ছিল।
স্নিগ্ধা বাসার গেইটে যাওয়া মাত্র দেখে অনেক সোরগোল।
বাইরে কয়েক জড়া জুতা রাখা।

নিল আসে নাইতো আবার। না না স্নিগ্ধা আর ওই নরপশু টার মুখ দেখবে না।
কিন্তু এতো দূর এসে ফিরে যাওয়া ঠিক হবে না।
তাই স্নিগ্ধা ওদের বাসার ছাদে চলে গেলো।
আর সারাহ কে ফোন করলো
স্নিগ্ধাঃ হ্যালো সারাহ।
সারাহঃ আপু তুমি কোথায়?

এখন এসোনা।
ফুপা-ফুপি এসেছে।
স্নিগ্ধাঃ ও আমি বাসার ছাদে।
সারাহঃ তাদের ও এখনি আসততে হোলো।
দারাও আম্মু আর আমি কিছু একটা করি।
স্নিগ্ধাঃ তারা গেলে আমাকে কল দিও।
ছাদে ভারাটিয়া দের বাচ্চারা খেলছে।
ইসস। আমার ছেলেটা থাকলে মনে হয় ওদের মতো ছোটাছোটি করতো। খেলাদুলা করতো।
কথা গুলা ভাবতে ভাবতে স্নিগ্ধার হাত ওর পেটে চলেগেলো।
আর চোখ গোরিয়ে দুই-তিন ফোটা পানি পরলো।
ওরনার কারো টান অনুভব করলো।

একটা ছেলে। বয়স বরঞ্চ ৩ বছর হবে। কি মায়াবি চেহারা।
কিন্তু ওর চেহারাটা এতো পরিছিত লাগছে কেনো?
স্নিগ্ধা ওই ছেলেটার দিকে তাকানো মাত্র বাচ্চাটা এক হাত ওর পকেটে দিয়ে কি জানি খুজতে লাগলো।
কি মাসুম ভাবে নিজের ছোট হাত টা পকেটের এদিক সেদিক করছে।
তারপর নিজের ছোট হাত দিয়ে স্নিগ্ধাকে উদ্দেশ্য করে একটা মুড়ানো টিসু পেপার দিলো।
ওর থেকে টিসুটা নিয়ে। স্নিগ্ধা বাচ্চাটার সামনে বসে ওর দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে রইলো।
স্নিগ্ধাঃ Thank u।

আপনার নাম কি বাবা?
বাচ্চাটা:নিশান।
তোমারও কি আমার মতো মা নেই তাই কান্না করছো? (তোতলিয়ে)
স্নিগ্ধাঃ আ (কিছু বলার আগেই ফোন এসে পরলো)
ড্রিং_ড্রিং
সারাহঃ আপু ফুপা-ফুপি চলে যাচ্ছে তুমি ২ মিনিট পরে আসো।
স্নিগ্ধাঃ ওকে।

তারপর আর ওর বাচ্চাটা কে দেখলো না।
এখানেও বাচ্চার জন্য আহাকার করছে আর ওইখনে ওই বাচ্চা টা তার মার জন্য আহাকার করছে।
কি ভাগ্য।
স্নিগ্ধার দাদুমনি ওকে দেখে হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।
সে স্নিগ্ধার কাছে অনেক মাফ চাইলো।
কিন্তু স্নিগ্ধার তো তার উপরে কোনো প্রকারের অভিযোগ নেই।
স্নিগ্ধার আব্বুও আগের থেকে কেমনি যানি নরম হয়েছে।
বার বার স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে কি যা নি বলতে চাছিলো।
কিন্তু বলতে পারেনি।

তার ইগো মনে হয় তাজে বাধা দিচ্ছিলো।
স্নিগ্ধা নিজের বাসার পানিটা পর্যন্ত খায়নি।
প্রায় ৮টা পর্যন্ত দাদুমনির কাছে বসেছিলো।
স্নিগ্ধা কেনোই জানি আজ দাদুমিনর কাছ থেকে উঠতে ইচ্ছা করছে না।

কারন স্নিগ্ধা আসার পর থেকে দাদুমনি স্নিগ্ধার একহাত ধরে রেখেছিল।
না চাইতেও ৮টার দিকে স্নিগ্ধাকে মামার বাসায় জন্য বের হতে হলো। কারন আম্মু যাচ্ছে না এখন ও না গেলে কেমন দেখাবে। স্নিগ্ধা
মামা-মামির মনে কোন কষ্ট দিতে পারবে না।
কারন তারা স্নিগ্ধার জন্য অনেক করেছে।

ফাংশনটা মামার বাড়ির কাছে একটা রেস্টুরেন্টে হচ্ছে।
হাল্কা গোলাপি কালার নেটের একটা শাড়ি পরে গিয়েছি।
শাড়িটা মামি ওকে দিয়েছিলো ফাংশনে পরার জন্য।
ফাংশোন টাতে একদম মন বসছেনা।

খুব অস্থির লাগছে। কারনটা স্নিগ্ধার জানা নেই।
ফাংশোন শেষ হতে অনেক দেরি হবে। এতো ভির। হৈইচৈই। তাই মামি কে বলে কিছুখনের জন্য বাসায় এসেছে।
এখন স্নিগ্ধার শুধু একা থাকতে ইচ্ছা করে।
একাকিত্বর সাথে স্নিগ্ধার বন্ধুত্ব হয়েগিয়েছে।

স্নিগ্ধাঃ
আপনি এখানে কি করে?
প্রহরঃ তোমাকে দেখতে এসেছি।
স্নিগ্ধাঃ আমি আপনেকে বললাম না আমার সামনে আসবেন না।
প্রহরঃ তোমার সাথে আমার কথা আছে।
স্নিগ্ধাঃ আপনার সাথে কোনো কথা বলার ইচ্ছা আমার নেই।

বলে স্নিগ্ধা বের হতে নিলো।
প্রহর স্নিগ্ধাকে যাওয়ার আগে রুমের দরজা লাগিয়ে দিলো।
স্নিগ্ধাঃ আমি কিন্তু চিৎকার করবো।
প্রহরঃ করো।
এমনেও বাসায় কেউ নেই কোনো লাভ হবেনা।
শুধু তোমার এনার্জি লস।
স্নিগ্ধাঃ আপনি কি চান?


পর্ব ১৬

প্রহরঃ আমি শুধু তোমার সাথে ৫ মিনিট কথা বলতে চাই।
আমার কথা বলে আমি চলে যাবো।
বলতে পারো আমার কিছু প্রশ্ন।
জাস্ট ৫মিনিট।
স্নিগ্ধাঃ বলেন।

প্রহরঃ বারান্দায় চলো।
স্নিগ্ধাঃ কেনো?
প্রহরঃ আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না।
ট্রাস্ট মি।

স্নিগ্ধাঃ না আমি কাউকে ট্রাস্ট করি না। আর ছেলে মানুষদের কে তো একদমি না।
যা বলার তারাতারি এইখানে বলে।
প্রহরঃ ওকে।

আচ্ছা স্নিগ্ধা রাত আর রাতের আন্ধকার কি সব সময় থাকে?
সিগ্ধা:এটা কেমন প্রশ্ন?
প্রহরঃ আমি আমার প্রশ্নের উত্তর চেয়েছি।
আমাকে প্রশ্ন করতে বলিনি।
স্নিগ্ধাঃ না। থাকে না।

প্রহরঃ ইকজেক্লি।
রাতের আন্ধকারের ভয়ে যদি না বের হও। ঘরের দরজা। জানালা বন্ধ করে রাখো। তাহলে ভোরের আলো কিভাবে দেখবে।
বলো?
স্নিগ্ধাঃ ভোর দেখার আসায় যদি জানালা খুলে দেখি রাত টা আরো আন্ধকার হয়ে গিয়েছে। তখন?
প্রহরঃ ভালো তো।
রাত আরো আন্ধকার হওয়া মানে হলো ভোরের আলো অতি নিকটে দেখতে পাওয়ার আসা।
কারন রাত যতো গভির হয় ভোর ততো শিগ্রহি আসে।
স্নিগ্ধাঃ জীবনটা কি এতো সহজ?

প্রহরঃ মোটেও না।
তাই বলেকি আমরা রোবোর্ট হয়ে যাবো?
স্নিগ্ধাঃ
প্রহরঃ কালকে রাতে তোমার পারমিশন ছাড়া তোমার হাত ধরার জন্য।
আজকে গাড়িতে যা যা বলেছি তার জন্য।
I am Sorry। I am really really sorry
স্নিগ্ধাঃ আর কিছু বলবেন?

প্রহরঃ আমি সম্পর্কে বলার অনেক কথা আছে স্নিগ্ধা। কিন্তু তোমার যে তা শোনার মতো সময় নেই। (মনে মনে)
আর একটা কথা।
সব ছেলের বিয়ে করার উদ্দেশ্য মেয়েদের বিছানায় নেওয়া নয়।
অনেকের উদ্দেশ্য নিজের জীবন শেষ হওয়া আগ পর্যন্ত নিজের প্রিয় মানুষ টার হাত ধরে বেচে থাকা।
জীবনে সুখ-দূঃখের সাথি হওয়া।
কাউকে আগলে রাখা।

প্রহরের কথাটা শুনে স্নিগ্ধা প্রহরের দিকে তাকালো।
এতোখন প্রহর গেইটে হেলান দিয়ে আর স্নিগ্ধা প্রহরের দুই-তিন কদম দূরূত্ব বজায় রেখে আল্মারির সাথে ঘেসে দাঁড়িয়ে কথা গুলো বলছিলো।
স্নিগ্ধাঃ ছেলেটার মুখে কিসের এতো মায়া?
যে একবার তাকালে চোখ সরানো যায়না। (মনে মনে)
প্রহরঃ হাতের পাঁচ আঙুল যখন সমান নয় তাহলে সব ছেলে এক হবে কি ভাবে?
থেনক ইউ আমার কথা গুলো শোনার জন্য।

বলে গেট খুলে বের হতে নিয়ে আবার স্নিগ্ধার দিকে তাকালো।
প্রহরঃ বাসা কেউ নেই।
তোমার এখনে একা থাকা ঠিক হবে না। চলো।
সকালে
স্নিগ্ধা সকাল সকাল সবার থেকে বিদাই নিয়ে রাজশাহীর জন্য রওনা দিলো।
এইবার স্নিগ্ধা কেমনি জানি একাট অজানা টান অনূভব করছে।

এর আগে কখন ঢাকা থেকে রাজশাহী যাওয়া সময় এমন টান অনুভব হয়নি।
রাজশাহী তে যাওয়ার পর থেকে আবার আগের মতো রুটিন মাফিক জীবন চলতে থাকো।
কিন্তু নিজের অজান্তে বার বার প্রহরের আর নিশানের কথা গুলো কানে বাজতো।
তাহলে কি ওই আজানা টান টা অদের ছিলো? ?
না না। এইগুলো সব ভুল ধারোনা।
স্নিগ্ধা স্টুডেন্টের বাসার থেকে বের হয়া মাত্র একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসলো।
স্নিগ্ধাঃ আসসালাম-ওয়ালাইকুম।

কে বলছেন?
প্রহরঃ ওয়ালাইকুম-আসসালাম।
(কন্ঠটা শুনে নিজের অজান্তে স্নিগ্ধার ঠোঁটের কোনায় একটা স্মাইল চলে আসলো)
স্নিগ্ধাঃ আপনি আমার নাম্বার পেলেন কিভাবে।
প্রহরঃ তোমাকে পেয়ে গিয়েছি তোমার নাম্বার কি জিনিস?
স্নিগ্ধাঃ মানে?
প্রহরঃ কিছু না।

কেমন আছো?
স্নিগ্ধাঃ যেমন থাকার কথা।
প্রহরঃ আমি রাজশাহীতে। একটু মিট করবা?
স্নিগ্ধাঃ রাজশাহী তে আসার কারন?
প্রহরঃ আমার সব থেকে মূল্যবান জিনিশটা যে রাজশাহী তে।
স্নিগ্ধাঃ কি?

প্রহরঃ একটা মিটিং এর জন্য এসেছিলাম।
তাই ভাবলাম তোমার সাথে মিট করা যাক।
স্নিগ্ধাঃ sorry। Mr Prohor
আমার সময় নেই।
প্রহরে সাথে কথা বলতে বলতে স্নিগ্ধা হোস্টেলের মেইন গেটের দিকে এক পা আগাবে। তখন
প্রহরঃ wait। wait। wait

স্নিগ্ধাঃ What happen?
প্রহরঃ পিছনে তাকাও
স্নিগ্ধা পিছনে তাকিয়ে দেখে। রাস্তার অন্য পাশে। এশ কালারের শার্ট। ব্লাক প্যন্ট। গলায় টাই। শার্টের স্লিভস কোনি পর্যন্ত উঠানো।
বলতে গেলে ফুল ফরমাল লুকে প্রহর গাড়িতে ঢেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
দুইজনের চোখে চোখ পরা মাত্র। প্রহর হাতের ইশারায় স্নিগ্ধাকে হায় (hi) দিলো।
কেউ কারো কানের থেকে ফোন সরাচ্ছে না।

প্রহরঃ এককাপ চা তো খাওয়াই যায়? তাই না।
স্নিগ্ধা কেনোই জানি প্রহরের কথা ফেলতে পারলো না।
স্নিগ্ধার হোস্টেলের পাশে একটা চায়ে দোকান আছে।
যার পাশে একটা বড় মাঠ।
যেখানে বিকাল দিকে বাচ্চারা খেলতে আসে।
স্নিগ্ধা দারিয়ে বাচ্চাদের খেলা দেখছে।
বাচ্চাদের আসে-পাসে থাকতে তাদের খেলা দেখতে স্নিগ্ধার মনে কেমনি যানি একটা শান্তি কাজ করে।
বাতাসের ফলে স্নিগ্ধার চুল গুলো তাদের ইচ্ছা মতো উড়ছে।
প্রহর চায়ের কাপ স্নিগ্ধার কাছে যাওয়া মাত্র।

স্নিগ্ধার চুল গুলো ওর মুখে এসে পরে।
প্রহরের মনে হয় পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর ঘ্রাণ এই চুলে।
স্নিগ্ধা খেলা দেখতে এতো ব্যস্ত যে প্রহর যে ওর পিছনে তার দিকে ও খেয়ালি নেই।
স্নিগ্ধার ঘোর ভেংগে প্রহর বলে।
প্রহরঃ চা।

স্নিগ্ধাঃ সরি। আমার চুল
(বলে নিজের সব চুল একপাশে নিয়ে আসে।
তাও স্নিগ্ধার মুখে বার বার কপালের ছোট ছোট চুল গুলো আসে আর স্নিগ্ধা বার বার তা নিজের কানের পিছনে নেয়)
স্নিগ্ধা আর প্রহরের তেমন কথা হলো না। কিভাবে হবে?
প্রহর তো আজকে স্নিগ্ধাকে দেখতে ব্যস্ত।
তারপর দুইজন দুজনার কাজে চলে গেলো।

এখনতো প্রায় প্রতিদিন প্রহর স্নিগ্ধাকে ফোন দেয়। আর ১মিনিট কথা হয়।
আর কথাগুলো হয়।

প্রহরঃ আসসালাম-ওলাইকুম
স্নিগ্ধাঃ ওলাইকুম-আসসালাম
প্রহরঃ কেমন আছো?
স্নিগ্ধাঃ এইতো।
প্রহরঃ খাওয়া দাওয়া করেছো?
স্নিগ্ধাঃ হুমম
প্রহরঃ Take carebye

আজ প্রায় ৪ মাস পরে স্নিগ্ধা ঢাকায় এসেছে।
এইবার ঢাকায় এসে স্নিগ্ধার ওর এক স্কুলের ফ্রেডের সাথে দেখা হোলো।
ও একটা কিন্ডারগার্টেনের টিচার।
স্নিগ্ধাঃ অনেক ভালো লাগে তাইনা ছোট বাচ্চাদের আসে পাসে থাকতে?
রুহিঃ কিসের ভালো। এক একটা বিচ্ছু।

ওদেকে সামলাতে সামলাতে নিজের বাচ্চা নাওয়ার শখ শেষ।
স্নিগ্ধাঃ আহারে।
রুহিঃ তুমি এক দিন আসো আমার স্কুলে।
স্নিগ্ধাঃ আমি?
রুহিঃ হ্যা। সাময় থাকলে কালকে আসো।
স্নিগ্ধা সকালে রেডি হয়ে রুহির স্কুলে গেলো।
তখন টিফিন টাইম ছিলো।

সব বাচ্চারা যার যার মত প্লে-রুমে খেলছে।
কিন্তু একটা বাচ্চা প্লে-রুমের জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে বাইয়ে কি যানি দেখছে।
স্নিগ্ধা বাচ্চাটার কাছে গিয়ে কাধে হাত রাখলো।
বাচ্চাটা ফিরে ওর দিকে তাকানো মাত্র একটা মলিন হাসি দিলো।
নিশানঃ আন্টি।
স্নিগ্ধা নিশানের সামনে বসে।

স্নিগ্ধাঃ কি ব্যপার বাবা। তুমি তাদের সাথে খেলাধুলা করছনা?
টিফিন করেছো?
নিশানঃ খেতে ইচ্ছা করছে না।
স্নিগ্ধাঃ আমি খাইয়ে দেই।
নিশার মাথা নারিয়ে হ্যা বাধক ইসারা করলো।
স্নিগ্ধা মনের সুখে নিশান কে খাইয়ে দিতে লাগলো।
নিশানঃ আন্টি তুমি এইভাবে আমাকে খাইয়ে দিলে আমি ইভরিডে (প্রতিদিন) খাবো।
মরজি করবো না।

রুহিঃ বাচ্চারা ক্লাসে আসো। টিফিন টাইম শেষ।
নিশানঃ আন্টি আমি যাই।
বলে নিশার কয়েক কদম দিয়ে আবার স্নিগ্ধার কাছে এসে ওর গালে একটা পাপ্পা দিয়ে গেলো।
স্নিগ্ধা গালে হাত রেখে নিশানের যাওয়া দেখছে।
স্নিগ্ধা রুহির সাথে কথা বলে জানতে পারলো যে নিশান এইরকম একা একা থাকে। কারো সাথে তেমন কথা বলে না।
সারা দিন কি জানি ভাবে?

তাই স্নিগ্ধা ঢাকায় আসলে নিশানের সাথে দেখা করে যায়।
আর প্রতি বার ওর জন্য কিছু না কিছু নিজ হাতে রান্না করে নিয়ে আসে।
আর ওকে খাইয়ে দেয়।
ইধানিং স্নিগ্ধার ঢাকায় আসাটা বেরে গিয়েছে।
আর কারনটা হলো প্রহর আর নিশান।
এই দুইজন তাদের মায়ার বাধনে স্নিগ্ধাকে বেধে ফেলেছে।


পর্ব ১৭

প্রহরঃ এতো ঘন ঘন ঢাকায় আসছো যে?
আমাকে দেখতে?
স্নিগ্ধাঃ ইস্কিউজ মি। আমার ইচ্ছা আমি ঢাকায় আসি। এতে আপনার পারমিশন নিতে হবে?
আর আপনাকে দেখতে আমার বয়েই গেছে।
প্রহরঃ না ভাবলাম ভুল করে আমার প্রেমে পরে গেলা নাকি?

স্নিগ্ধাঃ প্রেম-ভালোবাসা। বিয়ে এইগুলো আমার গোলস (goals) না।
আমার গোলস শুধু ডক্টর হওয়া। নিজেকে খুব ভালো ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা।
প্রহরঃ এটাই কি লাইফ?
স্নিগ্ধাঃ হ্যা। এটাই আমার লাইফ।
আমার দেরি হচ্ছে আজ আমি উঠি।
প্রহরঃ আর কিছুখন থাকো না প্লিয।

(ছেলেরা এতো মায়াবি হয় কি করে? তা স্নিগ্ধার জানা নেই।
প্রহরের কণ্ঠ। চাহোনি। মায়াবি চেহারা সব কিছু স্নিগ্ধাকে প্রহরের কাছে থাকতে বাধ্য করে।
কিন্তু এই ভাবে কয় দিন? )
স্নিগ্ধাঃ না। আজ একদমি সময় নেই।

প্রহরঃ স্নিগ্ধা আমার জন্য কি তোমার কোনো ফিলিংস কাজ করে না?
স্নিগ্ধাঃ কিছুখন চুপ করে থেকে। না
কথাটা বলে স্নিগ্ধা ক্যাফে থেকে বের হয়ে গেলো।
দিনপরে

স্নিগ্ধারপয়েন্টঅফ_ভিয়
প্রতিদিন ফোনে প্রহরের কণ্ঠ শুনতে শুনতে একটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।
তাই দুই দিন না শুনতে পেরে কেমনি যানি অস্থির লাগছে।
প্রহর কল দিচ্ছে না কেনো?
ওর কি কোনো বিপদ হলো।

নাকি সেদিন আমার বিহেভের জন্য কষ্ট পেয়েছে?
মনে হচ্ছে কতো বছরের পর বছর এই কণ্ঠটা শুনছি না।
প্রহরকে ফোন করবে কি করবে না ভাবতে ভাবতে ফোন দিতে দিলো।
(কলটা পিক করতে প্রহর ২ সেনেন্ড ও সময় নিলো না। মনে হয় ফোনটা হাতে নিয়ে বসে ছিলো। আর সে জান্ত যে স্নিগ্ধা ওকে ফোন করবে)
প্রহরঃ you missed me। right
স্নিগ্ধাঃ না তো।

প্রহরঃ দেখো মিথ্যা কথা বলতে নেই।
স্নিগ্ধাঃ না। আমি ভাবলা কল দিচ্ছেন না। আপনার আবার কোনো বিপদ হলো নাকি।
তাই ভাবলাম কল করে দেখি।
প্রহরঃ তোমার না আমার জন্য কোনো ফিলংস কাজ করে না? তাহলে আমার জন্য টেনশন করে কি লাভ?
স্নিগ্ধাঃ
(প্রহর বুঝতে পারছে যে স্নিগ্ধা খুব আনকম্ফরটেবাল ফিল করছে তাই। টপিক চেঞ্জ করে বললো)
প্রহরঃ ঢাকায় কবে আসবা?
স্নিগ্ধাঃ ১ বছরেও না। (মিথ্যা কথা)
প্রহরঃ এটা কেমন কথা? কেনো?

স্নিগ্ধাঃ আপনি তো বললেন যে ঢাকা ঘন ঘন না যেতে।
প্রহরঃ আমি কবে বললাম?
(স্নিগ্ধা মিট মিট করে হাসির শব্দ শুনে প্রহরের বুঝতে বাকি রইলো না যে স্নিগ্ধা ওর সাথে মজা নিচ্ছে)
ওরে দুষ্টু। মজা নাওয়া হচ্ছে আমর সাথে?
স্নিগ্ধাঃ আমার কাজ তোমার সাথে দুষ্টুমি করা।

(উনার সাথে কথা বলতে গেলে কেনো যে আমার উপরে কোন্টল থাকে না। কি বলে ফেললাম ছিঃ)
স্নিগ্ধাঃ আল্লাহ হাফেজ।

প্রহরঃ স্নিগ্ধা শুনো। শুনো।
স্নিগ্ধাঃ বলেন।
প্রহরঃ তুমি ঢাকায় না আসলে আমি রাজশাহীতে চলে আসবো। don’t worry
এতো সহজে আপনাকে জালানো বন্ধ করবো না।
আর আমার সাথে দুষ্টুমি করার পাওয়ার অফ এটারনি তোমার কাছে আছে।
সো তুমি অধিকার নিয়ে কাজ টা করতে পারো।

আর প্লিয আমাকে তুমি করে বলো। তোমার মুখে তুমি শুনতে খুব ভালো লাগে।
স্নিগ্ধাঃ (লজ্জায় টমেটো হয়ে গিয়েছে। কি বলবে? )
প্রহরঃ good night Take care
রাতে দুই জনের ঘুম হলোনা। বিছানার এপাশ-অপাশ হয়ে একে অপরের কথা ভাবছে।
মাসপরে

স্নিগ্ধা ঢাকায় এসে নিশানের স্কুলে গেলো।
নিশানঃ আন্টি আজকে আমার বার্থডে।
স্নিগ্ধাঃ Happy Birthday my baby
কি গিফট চাই আপনার?

নিশানঃ কিছু না।
স্নিগ্ধাঃ বলো না বাবা। আমিতো তোমার মা মতো আমাকে বলতে কিসের লজ্জা। বলো।
নিশার:কিছুখন ড্যব ড্যব চোখে স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো।
-আমি তোমাকে মা বলে ডাকি?
স্নিগ্ধার চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গরিয়ে পরলো।
স্নিগ্ধা নিশানকে জরিয়ে ধরে বললো।
স্নিগ্ধাঃ ডাকো।

নিশানঃ মা আমি বেরাতে যেতে চাই।
আমাকে নিয়ে যাবা?
স্নিগ্ধাঃ আমি আপনার ম্যময়ের সাথে কথা বলি।
স্নিগ্ধাঃ রুহি প্লিয ১ঘণ্টার জন্য আমি নিশান কে আমার সাথে নিয়ে যাই প্লিয। প্লিয প্লিয।
রুহিঃ না স্নিগ্ধা। প্রিন্সিপাল বা ওর বাবা জানতে পারলে আমার চাকরি থাকবে না।
স্নিগ্ধাঃ আমি ছুটির আগে নিয়ে আসবো। আই প্রমিস।
প্লিয প্লিয।

রুহিঃ স্নিগ্ধার এতো রিকুয়েস্ট রুহি ফিরাতে পারলো না। আছা। আমি দেখি কিছু করতে পারি কিনা।
রুহি একটা আবেদন পত্র লেখতে বললো। যেখানে দাওয়া আমি নিশানের মা।
কারন নিশানের যে মা নেই তা প্রিন্সিপাল ম্যম যানে না।
আমি নিশান কে নিয়ে বের হয়ে পরলাম।
নিশানকে জিজ্ঞেসা করলাম ও কথায় যেতে চায়।
কিন্তু ও কিছু বললো না।

এতোটুকু একটা বাচ্চার কথা শুনে মনে হয় যে সে সব বুঝে।
আমিও দূরে না গিয়ে স্কুলের পাশে একটা পার্কে ওকে নিয়ে গেলাম।
অনেক দিনের পিপাসীত মানুষ পানি পেলে যে পরিমান খুশি হয় নিশানের মুখে মা ডাক শুনে আর ওর সাথে থেকে আমি ঠিক তেমন অনুভব করছি।
মা ডাকটা যে এতো মধুর তা আমার জানা ছিলো না।
আমার মনে হচ্ছে নিশান আমার ছেলে।

যে আমার গর্ভে নিজের অধিকার নিয়ে ৯ মাস ছিলো। যে আমাকে প্রসব ব্যদনার মতো শান্তির অনুভব দিয়েছে। যার লাশ বুকে নেওয়ার পর বেচে থাকার ইচ্ছা মরে গিয়েছিলো। আমার প্রথম সন্তান। তার মুখে এক বারও মা ডাক শুনার ভাগ্য আমার হয়নি।
তাই মনে হয় নিশানের মা ডাক শুনে আমার এতো শান্তি লাগছে।
নিশানের সাথে খেলে মনে হচ্ছে আমি আবার আমার ছোট বেলা ফিরে পেয়েছি।
সময় মতো ওকে স্কুলে দিয়ে আসলাম।
প্রায়মাসঢাকাযাওয়া হয়নি।
পরিক্ষা ছিলো। তাই অনেক ব্যস্ত ছিলাম।

কিন্তু প্রহর এর মাঝে ২ বার এসে আমার সাথে দেখা করে গিয়েছে।
ছেলেটা পারেও।
আজ ঢাকায় আসলাম।
অনেক দিন নিশানের সাথে দেখা হয় না আজকে যাবো।
বের হওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলাম।

প্রহরঃ May I coming?
স্নিগ্ধাঃ আপনি এতো সকালে?
প্রহরঃ কেনো আমাকে দেখে খুশি হওনি?
স্নিগ্ধাঃ বসেন। তো কি মনে করে?
প্রহরঃ তোমাকে দেখতে আসলাম।
দুই জনি চুপ।

প্রহরঃ স্নিগ্ধা নিজের জীবনে কি আমাকে একটু জায়গা দেওয়া যায় না?
স্নিগ্ধাঃ আবার ওই টপিক?
আর কত বার বলবো যে আমি কাউকে ভালোবাসতে পারবো না।
প্লিয আপনি বুঝার চেষ্টা করে।

স্নিগ্ধা আর প্রহর ঘাটের দুই পাশে বসা ছিলো।
প্রহর এসে স্নিগ্ধার সামনে হাটু ঘেরে বসে।
প্রহরঃ তোমার আমাকে ভালোবাসতে হবে না। কিন্তু আমাকে ভালোবাসতে তো দাও।
তোমার হাত টা ধরে বাচতে তো দাও।

স্নিগ্ধাঃ আপনি পারবের এমন একটা মেয়ের সাথে থাকতে যে কখন আপনাকে বিশ্বাস করতে পারবে না। নাই পারবে ভালোবাসতে?
প্রহরঃ আমি তোমাকে দেখে সারা জীবন বাচতে পারবো।
কখনো কোনো অধিকার চাইবো না।
যতো দিন তুমি নিজ থেকে না দাও।
স্নিগ্ধাঃ আপনি মামা-মামির সাথে কথা বলেন।
আমি রাজি।

প্রহরঃ সত্যি?
স্নিগ্ধাঃ হুমম।
এখন আমি একটু বের হবো প্লিয।
প্রহরঃ কিন্তু আমার কথা শেষ হয়নি।
স্নিগ্ধাঃ প্লিয আজ না। আমার দরকার না হলে আমি যেতাম না।
অন্য একদিন।

প্রহরঃ ওকে আমি তোমাকে ড্রপ করে দেই।
স্নিগ্ধাঃ নো থেনক্স। আমি পারবো।
স্নিগ্ধা নিশানে স্কুলে গিয়ে দেখে নিশান নেই।
স্নিগ্ধাঃ নিশার কথায়?
রুহিঃ নিশান হস্পিটালে ভর্তি।

স্নিগ্ধাঃ নিশানের কি হয়েছে?
রুহিঃ জানি না। বাট মনে হয় সিরিয়ান কিছু।
বাচ্চা টা প্রতিদিন স্কুলে এসে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকতো।
তোমার অপেক্ষা করতো।
স্নিগ্ধাঃ কোন হস্পিটাল?

রুহি স্নিগ্ধাকে হস্পিটালের এড্রেস দিলো।
স্নিগ্ধা তারা হুরা করে বের হবে।
রুহিঃ স্নিগ্ধা শুনো।
স্নিগ্ধাঃ কিছু বলবা?

রুহিঃ তুমিকি নিশানের পাপা কে ছিনো?
স্নিগ্ধাঃ না তো। কেনো?
রুহিঃ সে দিন নিশানের পাপা ওকে নেওয়ার জন্য তারাতারি এসে পরে ছিলো।
তারপর নিশান কে না দেখে অনেক হাংগামা করে। কিন্তু আজব ব্যপার হলো আবেদন পত্রে তোমার সাইন দেখে একদম ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।
স্নিগ্ধাঃ তার নাম কি?
রুহিঃ কি জানি নাম ছিলো।
স্নিগ্ধাঃ আমি তাহলে যাই।

নিশানঃ মা কখন আসবে পাপা?
পাপা:আসবে বাবা। তুমি আগে সুপটা খাও।
নিশানঃ না। আমি মার হাতে খাবো। তুমি আমাকে আমার মা এনে দাও।
স্নিগ্ধাঃ May I coming
বলে ভিতরে গেলো।
নিশানঃ মাাাা।
লোকটা ঘুরে স্নিগ্ধার দিকে তাকালো।
স্নিগ্ধাঃ


পর্ব ১৮

প্রহরের পয়েন্ট অফ ভিউ

স্নিগ্ধা বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গিয়েছে। আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না। সব কিচ্ছু কল্পনার মত লাগছে। কিন্তু আমার সম্মন্ধে সব ওকে বলা হয় নি। বিয়ের আগে সব ওকে খুলে বলতে হবে। কারন আমি চাই না আমার ব্যপারে ছোট থেকে ছোট জিনিস ওর অজানা থাকুক। যার জন্য এইটা পসিবল হয়েছে। তাকে একবার ফোন করে গুড নিউস টা জানাতে হবে।

স্নিগ্ধার মাথার উপরে আকাশ ভেংগে পরার মতো অবস্থা।
ও কাকে দেখছে?
নিল?
তার মানে নিশান নিলের ছেলে।
স্নিগ্ধার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।
শরিলের সব শক্তি যেনো হারিয়ে ফেলেছে।

নিল ও স্নিগ্ধার দিকে ড্যব ড্যব করে তাকিয়ে আচ্ছে। স্নিগ্ধার মাথা থেকে পা পর্যন্ত ভালো ভাবে দেখেনিলো।
নিশানঃ মা জানো আমি কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
তুমি এতো দিন আমাকে দেখতে আসো নি কেনো?
নিশানের কথায় স্নিগ্ধার ঘোর ভাংলো।

স্নিগ্ধা চলে যেতে নিলো কিন্তু পিছনের থেকে নিশানের মা মা ডাক শুনে থেমে গেলো।
নার্স:MrNil আপনাকে ডক্টর ডেকেছে।
নিলঃ আমি না আসা পর্যন্ত কি তুমি আমার ছেলের পাশে থাকতে পারবা? প্লিয
(স্নিগ্ধাকে উদ্দেশ্য করে)

স্নিগ্ধা বুঝতে পারছে না যা এই সময় ওর কি করা উচিৎ।
এতো বেশি না ভেবে স্নিগ্ধা নিশানে পাশে গিয়ে বসলো।
নিশানঃ মা এতো দিন তুমি আমাকে দেখতে আমার স্কুলে আসোনি কেনো।
স্নিগ্ধাঃ (চুপ)

নিশানঃ মা।
স্নিগ্ধাঃ তোমার কি হয়েছে বাবা?
নিশানঃ তুমি এসেছোনা ঠিক হয়ে যাবে।
স্নিগ্ধাঃ (আবার চুপ)
নিশানঃ ও মা। তুমি চুপ করে আছো কেনো?
স্নিগ্ধাঃ তুমি অসুস্থ তো তাই বাবা।

নিশানঃ মা আমার ক্ষুধা লেগেছে।
স্নিগ্ধা সুপের টেবিলের উপরে রাখা সুপের বাটি নিয়ে নিশান কে খাইয়ে দিয়ে লাগলো।
ডক্টরের সাথে কথা বলে এসে নিল নিশানের কেবিনে না গিয়ে বাইয়ে বসে রইলো।
কারন নিল জানে যে নিল কেবিনে যাওয়া মাত্র স্নিগ্ধা বের হয়ে যাবে।
কিন্তু নিশানের যে এখন স্নিগ্ধার অনেক প্রয়োজন।
আচ্ছা স্নিগ্ধা কি জান্তো নিশান ওর ছেলে?
না না যানলে কখন নিলের সামনে আসতো না।
নিল কিভাবে স্নিগ্ধাকে ফেস করবে?

স্নিগ্ধার সাথে কতোই না অন্যায় করেছে। যার শাস্তি আল্লাহ ওকে দিচ্ছে।
স্নিগ্ধা নিশানকে মেডিসিন খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়েছে।
নিল না আসা পর্যন্ত বের হতে পারছে না।
তারপর নার্সকে ওর কাছে রেখে বের হয়ে দেখে নিল করিডরের টুলের উপরে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
স্নিগ্ধাকে দেখে নিল ওর কাছে উঠে আসলে নিলো।
কিন্তু স্নিগ্ধা ওকে দেখে না দেখার ভাং করে বের হয়ে গেলো।
এর মধ্যে প্রহর স্নিগ্ধাকে ২০-২৫ কল করেছে।

এমন কি মামা-মামি। রোদ ভাইয়া-ভাবি ও অনেক বার কল করেছে।
কিন্তু স্নিগ্ধা ফোন পিক করেনি।
স্নিগ্ধা বাসায় গিয়ে দেখে সবাই ওর জন্য টেনশন করছিল।
সবার মুখ গুলো অনেক মলিন হয়ে গিয়েছে।
মামাঃ কোথায় ছিলি মা। আমরা কতো টেনশন করছিলাম।
স্নিগ্ধাঃ দরকারি কাজ ছিলো মামা।

মামিঃ মানুষ ফোন টা তো ধরে।
আর কখনো এমন করবি না।
আমার জান বের হয়ে গিয়েছিলো।
রোদঃ বেচারি আসতে না কি শুরু করলা।
আম্মু ওকে কিছু খেতে দাও। পরে কথা বইলো।
ভাবিঃ তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি খাওয়া দিচ্ছি।
স্নিগ্ধাঃ না ভাবি আমার ক্ষুধা নেই।
আমি আমার রুমে গেলাম।
প্রহরঃ মামি আমি আজকে আসি।

মামিঃ কখন এসেছো কিছু না খেয়ে চিলে যাবা।
প্রহরঃ না মামি আজকে থাক।
কেউ তো কিছু খায়নি।
কথা শুনে স্নিগ্ধা পিছনে তাকায়।
স্নিগ্ধাঃ সে কি ৬টা বাজে তোমারা কেউ খাওয়া দাওয়া করোনি?
রোদঃ আব্বুর মেয়ে বাইয়ে লাপাতা থাকবে। ফোন পিক করবে না তো।
তার খাওয়া গলা দিয়ে কিভাবে নামবে?

আর আব্বু খায়নি দেখে কেউ খায়নি।
স্নিগ্ধাঃ তোমরা টেবিলে বসো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
স্নিগ্ধা নিজের মধ্যে কেমন জানি একটা অপরাধ বোধ কাজ করছে।
সবার সাথে খাওয়া দাওয়া করে। রুমে চলে গেলো।
উফ স্নিগ্ধার কিছু ভালো লাগছে না।
সব কিছু অসহ্য লাগছে।

তাই ছাদে চলে গেলো।
নিশান নিলের ছেলে হলে পিয়া কথায়? পিয়া কি? ?
নিল। নিশান। উফ স্নিগ্ধা আর ভাবতে পারছে না।
তাই চুপ করে ছাদের এক কোনায় দারিয়ে রইলো।
হিম হিম বাতাস। মুগ্ধ করার মত একটা ঘ্রাণ।

সন্ধ্যার সময় সব কিছু কেমন নিরব হয়ে আছে।
এই সময় কফি হলে ভালো হতো। (মনে মনে)
পিছন থেকে।

প্রহর হাল্কা কাশি দিয়ে নিজের উপস্থিতি বুঝালো।
আর সাথে করে একটা কফির মগ স্নিগ্ধার উদ্দেশ্য করে দিলো।
দুইজনই চুপ।
নিরবতা ভেংগে প্রহর বললো।
প্রহরঃ তুমি কি এতো ভাবো?
স্নিগ্ধাঃ কিছুনা।

প্রহরঃ আমাকে বলা যায়না?
স্নিগ্ধাঃ
প্রহরঃ স্নিগ্ধা আমি তোমাকে জোর করে পেতে চাই না।
তুমি ভাবো। সময় নাও।

তোমার সময় নাওয়া হলে আমরা কি করবো তা ডিসিশন নিবো।
তুমি এই সবের জন্য রেডি না হওয়া পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করবো।
স্নিগ্ধাঃ
প্রহরঃ একটা কথা বলি?
স্নিগ্ধাঃ বলেন।

প্রহরঃ প্লিয আজকের কাজ টা কখনো করোনা।
এটলাস্ট কাউকে জানিয়ে দিও যে আসতে লেট হবে।
আমি কইফত চাচ্ছি না। আমি জানি এটা তোমার লাইফ।
বাট তোমার লাইফের সাথে অনেক গুলা মানুষ জরিয়ে আছে তাই না।
স্নিগ্ধাঃ ok। আর আজকের জন্য।
I am really sorry
প্রহরঃ It’s Ok

স্নিগ্ধাঃ কফিটা কে মেক করেছে?
প্রহরঃ ভাবি। অনেক মজা না।
আমি ভাবছি ভাবির থেকে শিখে নিবো।
আফটার অল বিয়ের পরে তার ননদ কে বানিয়ে খাওয়াতে হবে না।
প্রহরের কথা শুনে স্নিগ্ধা নিজের অজান্তে হেসে দেয়।
স্নিগ্ধাঃ বিয়েটা যতো তারাতারি সম্ভব ততো তারাতারি এরেঞ্জ করেন।
প্রহরঃ are you sure?
স্নিগ্ধাঃ হুমম

ড্রিং_ড্রিং
স্নিগ্ধাঃ হ্যালো
প্রহরঃ আম্মু বাংলাদেশে আসছে।
আম্মু আসলে মামা-মামির সাথে কথা বলে বিয়ের ডেট ফাইনাল করবে।
স্নিগ্ধাঃ ও
প্রহরঃ স্নিগ্ধা আই এম সো হ্যাপি।

সব কিছু আমার কাছে কল্পনা মনে হচ্ছে।
স্নিগ্ধা আমার সাথে একটু বের হবা?
স্নিগ্ধাঃ কোথায়?
প্রহরঃ তুমি রেডি থাকো আমি তোমাকে পিক করবো।
স্নিগ্ধাঃ ওকে।
স্নিগ্ধা রেডি হয়ে প্রহরের জন্য অপেক্ষা করছে।
এমন সময় আননোন নাম্বার থেকে একটা ফোন আসলো।
স্নিগ্ধাঃ হ্যালো।


পর্ব ১৯

নিলঃ
স্নিগ্ধাঃ হ্যালো। কে বলছেন?
নিলঃ প্লিয স্নিগ্ধা নিশানের সাথে একটু দেখা করবা?
I beg you
স্নিগ্ধাঃ (চুপ)
নিলঃ প্লিয স্নিগ্ধা আমার শাস্তি আমার ছেলেকে দিও না।
স্নিগ্ধা আর কথা না বলে ফোন কেটে দিলো।

স্নিগ্ধার ও ইচ্ছা করছে নিশাকের কাছে যেতে। ওর ছোট হাত ধরে ওর পাশে বসে থাকতে।
ওর মুখ থেকে মা থাক শুনতে।
কিন্তু ওই খানে নিল থাকবে আর নিলের উপস্থিতি স্নিগ্ধার একদম সহ্য হয়না।
প্রহরেরপয়েন্টঅফ_ভিউ
স্নিগ্ধা আমার সাথে আছে ঠিক। কিন্তু ওর মনটা আমার কাছে নেই।
কি এমন ভাবছে?

আমি জানি জিজ্ঞেসা করলে উত্তর হবে কিছু না। তাই জিজ্ঞেসাও করিনি।
আমি ভেবেছিলাম আজকে আমার ব্যাপারে ওকে সব খুলে বলবো। কিন্তু ওকে দেখে মনে হচ্ছে আজকে বলাটা ঠিক হবে না।
স্নিগ্ধা কে নিয়ে দিয়াবাড়ি গেলাম। কারন যায়গাটা খোলা মেলা। ওর ভালো লাগবে।
দুইজন গাড়ির সামনে দারিয়ে। গাড়িতে ঠেলান দিয়ে দারিয়ে আছি।
স্নিগ্ধা কাশবন দেখছে আর আমি ওকে।
প্রহরঃ রাজশাহীতে কবে ব্যক করবা?
স্নিগ্ধাঃ (চুপ)

প্রহরঃ স্নিগ্ধা।
স্নিগ্ধাঃ কিছু বলবা?
প্রহরঃ না কিছুনা।
স্নিগ্ধা কখনো নিজের ব্রেন কে নিজের মনকে কান্টল করতে দিওনা।
সব সময় মনটাকে প্রাধান্য দিবা।
তাহলে এতো ভাবতে হবে না।
স্নিগ্ধাঃ আপনে কি যানে আপনি অনেক সুন্দর করে কথা বলতে পারেন?
প্রহরঃ তাই নাকি?
বলো কি খাবা?
স্নিগ্ধাঃ চা।
প্রহরঃ চা খেলেতো কালো হয়ে যাবা।
স্নিগ্ধাঃ কেনো কালো বউ চলবে না?

প্রহরঃ কালো। সাদা। ব্যপার না। তুমি হলেই চলবে।
স্নিগ্ধা আর প্রহর চা খেয়ে। প্রহর স্নিগ্ধাকে বাসার সামনে নামিয়ে চলে গেলো।
স্নিগ্ধা ভুলে ব্যগটা গাড়িতে ভুলে রেখে গিয়েছে। তাই প্রহর স্নিগ্ধার বাড়িতে গেলো।
স্নিগ্ধার ফোনে একটা বাইরের নাম্বার থেকে একটা কল আসলো।
স্নিগ্ধাঃ হ্যালো। কে বলছেন?
আপুঃ আমাকে এতো তারাতারি ভুলে গেলা? সোনা।
স্নিগ্ধাঃ না আপু ভুলিনি। আপনাকে কিভাবে ভুলবো?
কেমন আছেন?

আমার ইয়েন (বেবি) কেমন আছে?
আপুঃ ভালো। তুমি কেমন আছো?
স্নিগ্ধাঃ ভালো।
আপুঃ আমি শুনলাম (আপু কিছু বলার আগে ইয়েন তাকে কি যেনো বলতে লাগলো)
ইয়েন:মাম্মা আন্টিকে ভিডিও কল দাও। আমি তাকে দেখবো।
আপুঃ স্নিগ্ধা তোমার ওয়াস-আপে ভিডিও কল দেই। ইয়েন তোমাকে দেখতে চায়।
স্নিগ্ধাঃ হ্যা আপু দেন।

ভিডিও কলে ইয়েন স্নিগ্ধার সাথে কথা বলতে ব্যস্তো। আপুকে কথা বলার কোনো সুযোগ দেয়নি।
ইয়েন:মামা।
ইয়েনের কথা শুনে স্নিগ্ধা পিছনে তাকিয়ে দেখে প্রহর।
তারমানে প্রহর প্রান্তি আপু ভাই?
তাহলে প্রহর ওকে বলেনি কেনো?
প্রহরঃ hi champ
স্নিগ্ধাঃ আপনে প্রান্তি আপুর ভাই?
প্রহরঃ হমম
স্নিগ্ধাঃ আমাকে বলেন নি কেনো?
আপনার ব্যপারে হাইড (লুকানো)

করার মানে কি?
কোনো কিছু লুকানো মানে ধোকা দেওয়া। তাইনা?
প্রহরঃ স্নিগ্ধা আমার কথা শুনো। আমি তোমাকে অনেক বার বলতে চেয়েছি কিন্তু সুযোগ পাইনি।
স্নিগ্ধাঃ ১ বছর কম না মি প্রহর।
এই ১ বছরে আপনার সুযোগ হয়নি?
প্রহরঃ প্লিয আমার কথা শুনো
স্নিগ্ধাঃ শেষ পর্যন্ত আপনি ও আমাকে ধোকা দিলেন।
আপনার থেকে আমি এটা আসা করিনি।
(এতো ছোট বিষয়ে স্নিগ্ধার এতো রিয়েক্ট করা উচিৎ হয়নি। কিন্তু স্নিগ্ধা প্রহর কে অনেক বিষাস করেছিল তাই ওর ছোট একটা কথা লুকানোতেও ও অনেক কষ্ট পেয়েছে)
বলে স্নিগ্ধা ওর বাসার থেকে বের হয়ে গেলো।

প্রহর ও ওর পিছনে গেলো কিন্তু কোনো লাভ হলো না।
স্নিগ্ধা কোনো কিছু না ভেবে নিশানকে দেখার জন্য হস্পিটালে গেলো।
কিন্তু আপ্সোস কারন সেখানে নিশান ছিলো না। ওকে সকালে রিলিজ দিয়ে দাওয়া হয়েছে।
স্নিগ্ধা কি নিলের বাসায় যাবে? না না।
স্নিগ্ধা নিল কে ফোন করলো।
স্নিগ্ধাঃ নিশান কে কি
(স্নিগ্ধার কথা শেষ হয়ার আগে নিল বলে উঠলো)
নিলঃ নিশানকে সকালে বাসায় নিয়ে এসেছি।
কালকের রাত থেকে কিছু খায়নি।
তোমার হাতে খাবে বলে জিদ ধরে বসে আছে।
প্লিয একটু বাসায় আসবা। প্লিয।
স্নিগ্ধাঃ হুমম।
নিলঃ তুমি কথায় বলো আমি গাড়ি নিয়ে আসছি।
স্নিগ্ধাঃ লাগবে না।
নিলের বাসায় বাসার ভিতরে গিয়ে স্নিগ্ধার পা চলছে না।
বুয়া ওকে নিলের রুমে নিয়ে গেলো। এতো বছরে সারা বাড়ি এমন কি নিলের রুমেও তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।
রুমে গিয়ে দেখে নিশান চুপ করে শুয়ে আছে। এক হাতে ক্যনোলা লাগানো।
ওকে দেখা মাত্র মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি।

স্নিগ্ধা এতোখন চেয়ারে বসে নিশানকে খাইয়ে দিলো।
স্নিগ্ধাঃ বাবা এখন শুয়ে পরো।
নিশানঃ মা আমি তোমার বুকে শুতে চাই।
নিশানের কথা শুনে স্নিগ্ধা খাঠে ঢেলান দিয়ে বসে নিশান কে বুকে নিয়ে শুয়ে রইলো।
এই খাঠটার উপরে রাতে পর রাত ওর শরিলে নিল নিজের রাজত্ব চালাতো।
আর আজকে ও ওই খাঠের উপরে বসে আছে।
কারনটা হলো নিশান।

একটা বাচ্চার কাছে তার মার বুক পরম শান্তির যায়গা। ঠিক তেমন মার কাছেও তার বাচ্চা কে এইভাবে আগলে রাখা যে অনের শান্তির।
তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।
স্নিগ্ধা তার প্রথম সান্তান বুকে নিয়ে যে শান্তি অনুভব করছিল। আজও ঠিক তেমন লাগছে।
কিছুখন পরে নিশান মাথা উঠিয়ে হাতের ইশারা করে নিল কে ওর কাছে ডাকছে।
নিল ওর কাছে গিয়ে খাঠের এক কোনায় বসলো।
নিশান ওর মাসুম হাত দিয়ে নিলের একটা হাত ধরে ওর কাছে আনলো তারপর আবার স্নিগ্ধার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরলো।
নিশান ঘুমিয়ে গিয়েছে। স্নিগ্ধার কেমন যানি লাগছে।

স্নিগ্ধা উঠে ওয়াসরুমে গেলো।
এই ওয়াস রুমের আয়নার সামনে দারিয়ে নিজের শরিলে দাগ গুলো দেখতো।
এই ঝরনার নিচে বসে কতো চোখের পানি ফেলেছে তার হিসাব নেই।
স্নিগ্ধা বের হয়ে দেখে নিল সোফায় বসা।

নিলকে অনেক প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করছে।
কিন্তু কিভাবে করবে?
নিলঃ স্নিগ্ধা তোমার সাথে কথা বলার যগ্যতা বা অধিকার আমি রাখিনা। তাও জিজ্ঞেসা করছি। তোমার সাথেকি পাচ মিনিট কথা বলা যাবে?
নিলঃ পিয়া কোথায়? ও কি মারাগিয়েছে?
নিলঃ হ্যা আমার আর আমার ছেলের জন্য ও মৃত।
স্নিগ্ধাঃ মানে?
নিলঃ বলে আল্লাহ সবার কর্মের ফল এই পৃথিবীতে দেয়।
আমি যার জন্য তোমাকে ধোকা দিতাম আর সে আমাকে আর আমার ৬ মাসের বাচ্চাকে রেখে আমার ফ্রেডের সাথে চলে গিয়েছে।
আসলেও তো যে মেয়ে তার ৩ বছরের স্বামি সংসার ছেরে আমার কাছে আসতে পারে সে আমাকে ছারতে পারবে না?
স্নিগ্ধাঃ (চুপ)
নিলঃ আমরা যখন নিশানের ব্যপারে জানি তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো।

৪ মাস।
আমি বা প্রিয়া কেউ এই বাচ্চা চাইনি।
পিয়া অনেক ট্রাই করেছে এবোশন করার জন্য। আমিও তাই চাইতাম। একদিক দিয়ে আমাদের কেস চলছিলো আর অন্য দিকে এই প্রব্লেম।
তাই আমার উপরে ক্যসটা ডিসমিস হওয়ার পরে আমার কোনো উপায় না দেখে বিয়ে করে ফেলি। তখন পিয়ার ৬ মাস।
যানো স্নিগ্ধা নিশান কে যখন আমি প্রথম বার কুলে নিয়েছিলাম। আমার মনে হচ্ছিলো আমি পরিপূর্ণ।
আল্লাহ তো আমাকে অনেক আগেই এই পরিপূর্ণ অনুভুতিটা দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু আপ্সোস আমি হতোভাগা তা বুঝিনি।
সে দিন আমার মনে হচ্ছিলো আমি দুইজন মাসুম কে ঠকিয়েছি।
স্নিগ্ধাঃ (চুপ)
নিলঃ সে দিন কেনো আমার জেল বা কঠিন কোনো শাস্তি হলোনা। কেনো?
হলে তো ভালো হতো
আমি তোমার আর আমার নিশপাপ বাচ্চার অপরাধি স্নিগ্ধা আমাকে তুমি যে শাস্তি দিবা তা আমি মাথা পেতে নিবো।
আমি আর এই অনুতাপ নিয়ে বাছতে পারবো না।
প্লিয আমাকে শাস্তি দাও।


পর্ব ২০

স্নিগ্ধাঃ (চুপ)
নিলঃ প্লিয কিছু বলো?
স্নিগ্ধাঃ তোমার সাথে কথা বলার আমার রুচি নেই।
স্নিগ্ধা উঠে চলে যাবে। নিল ওর হাত ধরলো।
স্নিগ্ধা রাগি চোখে ওর দিকে তাকালো।
স্নিগ্ধাঃ Don’t you dare to touch me।
নিল স্নিগ্ধার হাত ছেড়ে দিয়ে।

নিলঃ sorry।
নিশানের জন্য হলেও আমাকে মাফ করে দাও। প্লিয।
স্নিগ্ধাঃ তুমি আমার সাথে যা করেছো তার জন্য আমি তোমাকে কখনো মাফ করতে পারবো না।
কারন আমি কোনো নাটকের নাইকা না। যে সব ভুলে তোমাকে মাফ করে দিবো। আমি একটা বাস্তব মূখি মেয়ে। আমার যায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকলেও তোমাকে মাফ করতো না।
আর একটা কথা। তুমি আমার সাথে যা করেছো তার জন্য যদি তোমাকে আমি মাফ করেও দেই কিন্তু আমার নিশ্বপাপ শিশুটার সাথে যে অন্যয় করেছো তার পরে তো প্রশ্নই উঠেনা।

নিলঃ তুমি আমার শাস্তি কি নিশান কে দিবা?
তোমার মনে হয়না নিশানের তোমার মতো মা প্রয়োজন?
স্নিগ্ধাঃ হ্যা। আর আমি নিশানের মা। ওর প্রতি আমার যে দায়িত্ব তা আমি করবো।
কিন্তু তোমার সাথে তোমার মুখ দেখে আমি থাকতে পারবো না।
কারন তোমার মুখ দেখলে

আমার ঘৃনা হয়।
আমার মৃত শিশুর কথা মনে পরে যায়।
স্নিগ্ধা আর কিছু না বলে বাসায় চলে আসলো।
স্নিগ্ধা দুইদিন নিজের রুম থেকে বের হয়নি। এমনকি কারো সাথে কোনো কথা পর্যন্ত বলেনি।
স্নিগ্ধারপয়েন্টঅফ_ভিউ
না এইভাবে আর না। আমি কালকেই রাজশাহীতে ব্যক করবো।
মামিঃ স্নিগ্ধা কারা জানি তোমার সাথে দেখা করছে এসেছে।

স্নিগ্ধাঃ মামি প্লিয আমি কারো সাথে দেখা করতে চাই না।
প্রান্তিঃ আমার সাথেও না?
প্রান্তি আর মা (প্রহর আর প্রান্তির) এসেছে।
স্নিগ্ধাঃ আপনেরা বসেন আমি আপনাদের জন্য চা নিয়ে আসি।
প্রহরের মাঃ না মা চা লাগবে না।

আমি একজন মা হয়ে তোর কাছে কিছু চাইতে এসেছি।
মা আমার ছেলের লাইফ টা তে ফিরে আসো প্লিয।
স্নিগ্ধাঃ আন্টি আমার পক্ষে সম্ভব না।
আমাকে মাফ করবেন। প্রহর অনেক ভালো। কিন্তু আমার অতিতে যা হয়েছে তা আবার ফেস করার সাহস আমার কাছে নেই।
প্রান্তিঃ ভয়ানক অতিত শুধুমাত্র তোমার একার ছিলো না?
প্রহর ভাইয়ার ও ছিলো।

স্নিগ্ধাঃ (চুপ)
প্রহরের মাঃ আমি আবার আমার ছেলেকে ওই অবস্থায় দেখতে পারবো না। এই বার আমার ছেলে আর নিজেকে সামলাতে পারবে না।
স্নিগ্ধাঃ কি হয়েছিলো উনার?
প্রান্তিঃ স্নিগ্ধা তুমি জান্তা আমার ভাইয়ের ওয়াওফ প্রেগন্যান্ট ছিলো।
আসলে ওদের বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হয়। বিয়ের ৩মাস পরে ওরা জানতে পারে যে অদের ঘরে একটা নতুন মেহেমান আসবে।
মাতো এই কথা শুনে তাদের কাছে ইউএসএ চলে যায়।
কিন্তু ৮মাস অবস্থায় ভাবি সিরি থেকে পরে যায়। ফলে দুইজনের অবস্থা অনেক ক্রিটিকের হয়ে যায়।
আর শত চেষ্টা করেও ডক্টর কাউকে বাচাতে পারেনি।
যার ফলে আমার ভাই ১বছর জলোজান্ত লাশ হয়েছিলো স্নিগ্ধা।
অনেক বার সুসাইড করার ট্রায় করেছে।
কারন একটা মার কাছে যেমন তার সন্তান হারানো কষ্টকর একটা বাবার কাছেও তেমন।
আর আমার ভাইতো নিজের জীবন সংগিকেও হারিয়েছিলো।
আমার ভাইকে যখন কেউ বুঝাতে সক্ষম হচ্ছিলো না তখন আমি ওকে তোমার কথা বলেছিলাম। যে তুমি একটা মেয়ে হয়ে ফাইট করতে পারলে ও কেনো পারবে না?
তখন অবস্য তোমার জন্য ওর মনে কোনো ফিলিংস ছিলোনা। আর ভাইয়া আগে থেকেই তোমার কথা জান্তো।
আমি আর আম্মু ভাইয়াকে অনেক বার বিয়ে করে নতুন ভাবে জীবন শুরু করতে বলেছিলাম। কিন্তু ভাইয়া আমাদের কথা এক কান দিয়ে নিতো আর অন্য কান দিয়ে বের করে দিতো।
তাই এক পর্যায় বলা বন্ধ করে দিয়েছিলাম।
আমি আর আম্মু সে দিন অবাক হয়েছি যে দিন ভাইয়া আমাদের তোমার কথা বললো।
ভাইয়া তোমার কাছে নিজের পাস্টের ব্যপারে কিছু লুকাতে চায়নি।
হতে পারে বলার জন্য সঠিক সময় পায়নি।

আমার ভাই দেখে বলছি না। কিন্তু বিশ্বাস করো স্নিগ্ধা আমার ভাই মানুষ হিসেবে খারাপ না।
স্নিগ্ধাঃ আপি তুমি কি বলতে চাচ্ছো?
প্রান্তিঃ আমি বলতে চাচ্ছি। তোমারা দুইজন এক পথের পথিক।
তাই দুইজন আলাদা পথটা না হেটে একসংগে একে অপরের হাত ধরে পথটা হাটো।
স্নিগ্ধাঃ আপি আপনে আমাকে অনেক হেল্প করেছেন।
কিন্তু হেল্প করার কারনটা বলেন নি?
বলেছিলেন সময় হলে বলবেন।
সময় কি হয়েছে?

প্রান্তিঃ কি বললো বলো?
যে আমার ছোট বোন তোমার সংসার তোস্নস করেছে। তাই আমি একটু ওর ভুল শুধরানোর চেষ্টা করছি?
স্নিগ্ধাঃ মানে?
প্রান্তিঃ মানে পিয়া আমার আর প্রহরের ছোট বোন।
যার নিজের সংসার থাকার পরেও তোমার সংসারে নিজের অধিকার বসিয়েছে।
আর তার শাস্তি আল্লাহ ওকে দিচ্ছে।

স্নিগ্ধাঃ তাহলে কি আমাকে বিয়ে করে উনিও তার বোনের ভুল সংস্যধন করতে চাচ্ছে?
প্রান্তিঃ না। তোমাকে বিয়ে করে তোমার জীবনকে পরিপূর্ন করতে চাচ্ছে। আর তোমাকে নিজের লাইফে রেখে নিজের গতি হিন লাইফ টাকে একটা নতুন গতি দিতে চাছে।
প্রহরের আম্মুঃ মা আমার ছেলের জীবনে ফিরে আসো।
কারন দুই দিন ধরে ও আবার আগের মতো বিহেভ করচ্ছে। যা আমার একদম সহ্য হচ্ছে না।
ড্রিং_ড্রিং
প্রহরের মাঃ হ্যালো।
বুয়া:খালা। কিছুখন আগে ভাইয়ার রুম থেকে গুলির আওয়াজ আইসে।
খালা আপনি তারাতারি আসে। আমার অনেক ডর (ভয়) করতাসে।
মার হাত থেকে ফোন পরে গেলো। মা নির্বাকের মতো প্রান্তি আর স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রান্তিঃ আম্মু কি হয়েছে?

প্রহরের আম্মুঃ
প্রান্তিঃ আম্মু বলবা কি হয়েছে?
প্রহরের আম্মুঃ প্রহরের রুম থেকে কিছুখন আগে গুলির আওয়াজ এসেছে।
প্রান্তি। আম্মু। স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধার ফেমিলি আর এক সেকেন্ড ও দেরিনা করে প্রহরদের বাসায় গেলো।


পর্ব ২১

সবাই প্রহরের বাসায় যায়।
কিন্তু প্রহরের রুম ভিতর থেকে লক করা।
প্রহরের কোনো শব্দ না পেয়ে রোদ দরজা ভেংগে ফেললো।
সবাই রুমে গিয়ে দেখে প্রহর রক্তাক্ত অবস্থায় নিচে পরে আছে।
এম্বুলেন্স আসতে দেরি হবে দেখে গাড়ি করে ওকে হস্পিটালে নিয়ে গেলো।
অনেক ব্লিডিং হয়েছে। তাই অবস্থা অনেক সিরিয়েস।

প্রহরের জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছেনা।
প্রহরের মা নামাজের পাটিতে বসে আল্লাহ্‌ কাছে তার ছেলের জীবন ভিক্ষা চাচ্ছে।
আর স্নিগ্ধা। প্রান্তি আর বাকি সবাই ICU বাইরে বসে আছে।
নার্স:স্নিগ্ধা কে?
স্নিগ্ধাঃ আমি।

নার্স:পেসেন্ট বারববার আপনার নাম নিচ্ছে। আপনে চাইলে তার কাছে গিয়ে বসতে পারেন।
স্নিগ্ধা ICU ভিতরে গিয়ে প্রহরের পাশে বসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
স্নিগ্ধাঃ আমার জন্য আজ আপনার এই অবস্থা।
সব আমার জন্য।

আসলে আমি আপনাকে ডিজাভ করি না।
বেডের পাশে চেয়ারে বসে প্রহরের বুকে মাথা রেখে কান্না করতে করতে এক পর্যায় ওইখানে গুমিয়ে পরলো।
প্রহরের জ্ঞান ফেরার পর বুকটা ইকটু ভারি মনে হচ্ছে।
সব জাপসা দেখছে। কিন্তু বুঝতে বেগ পেতে হলো না যে স্নিগ্ধা ওর বুকে মাথা রেখে গুমিয়ে গিয়েছে।
স্নিগ্ধা প্রহরকে এই অবস্থায় দেখে ডক্টরকে ডেকে আনলো।
ডক্টরঃ নাও হি ইজ আউট অফ ডেঞ্জার।

একে একে প্রহরের সাথে সবাই দেখা করলো।
কিন্তু প্রহরের যার অপেক্ষা তার কোনো খবর নেই।
সবার শেষে স্নিগ্ধা প্রহরের সাথে দেখা করতে গেলো।
দুইজন চুপ
প্রহরঃ কিছু বলবা না?

স্নিগ্ধাঃ আপনে অনেক খারাপ। অনেক বেশি খারাপ।
(ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে করতে)
প্রহরঃ আমি আবার কি করলাম?
স্নিগ্ধাঃ একবার ও আমার কথা ভাবলেন না?

আপনার কিছু হলে আমার কি হবে?
প্রহরঃ আমি কি করতাম বলো? কেউ আমার সাথে থাকতে চায় না।
ওইশি (আগের ওয়াইফ)। আমার বেবি আমকে রেখে চলে গিয়েছে। আবার তুমিও আমাকে দূর করে দিয়েছিলা।
তাহলে বলো আমি কি নিয়ে বাচতাম?

স্নিগ্ধাঃ আমি আপনাকে রেখে কোথাও যাবো না।
কিন্তু আপনি আমাকে প্রমিস করেন আপনি আর কখনো এমন করবেন না।
প্রহর হাল্কা হেসে।
এমন না করলে তো তোমাকে নিজের বুকে পেতাম না।
বলো পেতাম?
স্নিগ্ধাঃ (চুপ)
মাসপরে

প্রহর এখন আগের থেকে অনেকটা সুস্থ। এই এক মাস স্নিগ্ধা প্রহরের অনেক খেয়াল রেখেছে।
পরশুদিন স্নিগ্ধা আর প্রহরের বিয়ে।
এর জন্য সবাই অনেক ব্যস্ত।
এই এক মাস নিল স্নিগ্ধাকে নিশানের সাথে দেখা করতে দেয়নি।

এমনকি নানা ভাবে স্নিগ্ধাকে ব্লেকমিল করেছে যে স্নিগ্ধার প্রহর বা নিশান থেকে যে কোনো একজন কে চুজ করতে হবে।
স্নিগ্ধা যদি ওর কাছে না এসে প্রহরকে বিয়ে করে। তাহলে আর কখনো ওকে নিশানের সাথে দেখা করতে দিবে না।
কিন্তু স্নিগ্ধা নিজের ডিসিশন পরিবর্তন করেনি।
ও প্রহরকে বেচ্ছে নিয়েছে।

আর নিল যে এতো কিচ্ছু করছে তা ও প্রহরকে বুঝতে দেয়নি।
কারন প্রহর অসুস্থ। ওকে এতো কিছু বলা ঠিক হবে না।
ড্রিং_ড্রিং
স্নিগ্ধাঃ হ্যালো।
নিশানঃ মা তুমি কোথায়?
আমাকে দেখতে আসোনা কেনো?

তুমি আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও মা।
পাপা পচা। পাপা আমাকে মেরেছে
স্নিগ্ধাঃ কেনো? নিল তোমাকে কেনো মেরেছে বাবা?
নিশানঃ আমি তোমার কাছে যেতে চেয়েছি তাই।
পাপা পচা।

আমার কাছে তুমি কেনো নেই মা।
নিল এসে নিশানের কাছ থেকে ফোন নিয়ে নিলো।
স্নিগ্ধাঃ তুমি কেনো আমার বাচ্চাটার সাথে এমন করছো?
নিলঃ আমার ছেলেকে আমার যা ইচ্ছা তা করবো।
তাতে তোমার কি। তুমিতো তোমার আশিককে বেছে নিয়েছো।

স্নিগ্ধাঃ প্লিয নিল নিশানকে কিছু করোনা।
নিলঃ তাহলে এসে পরো আমার কাছে।
স্নিগ্ধা আর কথা না বারিয়ে ফোন রেখে দিলো।
নিল এতো নিচু স্নিগ্ধাকে কাছে পাওয়ার জন্য নিশানকে ব্যবহার করছে। ছিঃ
প্রহর অনেক খন যাবদ স্নিগ্ধাকে না দেখে ওকে খুজতে খুজতে ছাদে গেলো।
গিয়ে দেখে স্নিগ্ধা ছাদে কোনায় দারিয়ে কান্না করছে।

প্রহর স্নিগ্ধার কাছে যাওয়া মাত্র স্নিগ্ধা প্রহরকে জরিয়ে ধরলো।
প্রহরঃ কি হয়েছে স্নিগ্ধা?
প্লিয বলো।
স্নিগ্ধা কিছু বলছে না শুধু কান্না করে যাচ্ছে।
প্রহরঃ আমাকে না বললে আমি কি করে বুঝবো?
স্নিগ্ধাঃ নিল।
নিল বলেছে আমাকে আর নিশানের সাথে দেখা করতে দিবে না।
ও নিশানে মারধর করছে।
প্রহরঃ ও কি চায়?
স্নিগ্ধাঃ ও চায় আমি যাতে আবার ওর কাছে ফিরে যাই।
প্রহরঃ আর তুমি কি চাও?

স্নিগ্ধাঃ আমি তোমাকে কাছে থাকতে চাই। ওই নরকে আর যেতে চাই না।
কিন্তু আমি এটাও চাইনা যে নিশান ওই নর পশুটার সাথে থেকে ওর মতো হয়ে উঠুক।
নিশানের একজন মার প্রয়োজক।
প্লিয প্রহর আমাকে নিশান এনে দিও?
প্রহরঃ তোমার নিশান চাই?

বিয়ের আগে তুমি তোমার গিফট পেয়ে যাবা।
প্রহর স্নিগ্ধাকে শান্ত করে নিচে নিয়ে আসলো।
আমার স্নিগ্ধাকে আবার কষ্ট দিয়ে নিজের কপালে কত বড় বিপদ ডেকে আনলা তা তুমি যানো না। মিনিল চৌধুরি।
রাতে নিল প্রহরের বাসায় আসলো।
নিলঃ এটা কি?


পর্ব ২২

স্নিগ্ধা আব্বু ওর কাছে মাফ চায়।
এবং স্নিগ্ধা তাকে মাফও করে দেয়।
কারন হাজার হক সে তার বাবা। সন্তানরা কোনো ভুল করলে যেমন বাবা-মা মাফ করে দেয় তেমন সন্তানের ও উচিৎ বাবা-মার ভুলের জন্য তাদের কে মাফ করে দেওয়া।
স্নিগ্ধার আব্বু চায় এই বিয়ের ছোট আয়োজন টা যাতে তাদের বাসায় হয়।
তাই সে স্নিগ্ধাকে তার সাথে নিয়ে গিয়েছে।
রাতে।

নিল জলামুখীর মত প্রহরের বাসায় আসে।
নিলঃ এইটা কি? (নিশানের কাস্টাডি পেপার্স)
প্রহরঃ কেনো পড়তে পারোনা?
পেপার্সের উপরে লেখা আছে।
(মোবাইলে গেমস খেলতে খেলতে)

নিলঃ কোন অধিকারে আমার ছেলেকে আপনি দাবি করছে?
মামা হিসেবে?
কিন্তু আপনেরা তো পিয়াকে তেজ্জ্যপুত্র করে দিয়েছেন।
আর আপনার বোন আমাকে আর আমার বাচ্চা কে রেখে চলে গিয়েছে।
তো এখন কেনো?

প্রহরঃ তোমার কাছে কোনো প্রুভ আছে যে আমি আমার বোনকে তেজ্জ্য পুত্র করে দিয়েছি?
আমার বোন এখন আমাদের সাথে আছে কি নেই তার প্রমান আমি কোর্টে দিবো। তোমাকে না।
আর তোমাকে দেখার আগে আমি ভাবতাম আমার বোন ভুল করেছে কিন্তু না সে একদম সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নিলঃ তো আপনে কোর্টে এইগুলো বলবেন?

প্রহরঃ না আমি কোর্টে বলবো। তুমি মেন্টালি সিক। যার জন্য তোমার প্রথম ওয়াই আর আমার বোন তোমার সাথে থাকতে পারেনি।
নিলঃ মানে?
প্রহরঃ মানে যে ছেলে একজন ভালো স্বামি হতে পারেনি সে একজন ভালো বাবা কি করে হবে?
আর ফিনেন্সিয়ালি আমি তোমার থেকে অনেক গুন বেশি স্টেবাল।
নিলঃ আমি আপনাকে দেখে নিবো।

প্রহরঃ হুমম দেখো। এখনতো দেখার জন্য অনেক সময় আছে।
কারন কালকের থেকে আর অফিসে জেতে হবে না।
বেকার বসে থাকবা।
নিলঃ মানে?
প্রহরঃ কালকে অফিসে গেলে বুজবা।

আর তোমাদের বাড়িটার উপরেও তো ব্যাংক লোন আছে। যা কিছু দিনের মধ্যে নিলাম হয়ে যেতে পারে।
নিলঃ ভয় দেখাছেন?
প্রহরঃ ভিতু মানুষদের ভয় দেখাতে হয় না।
এখন নিজের সম্মানের সাথে যাবা নাকি আমি দারোয়ানকে ডাকবো?

নিল রাগে গজগজ করতে করতে ওর বাসায় চলে আসলো।
পরের দিন অফিসে গিয়ে যানতে পারলো ওকে চাকরি থেকে বের করে দিয়েছে।
এবং অফিস তার উপরে একটা কেস করেছে যার চলা কালিন সে কোথাও চাকরি করতে পারবে না।
বাসায় এসে জানতে পারে ব্যাংক থেকে নোটিশ এসেছে যে লোন টা ১ সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধ না করলে বাড়ি নিলাম হয়ে যাবে।
নিলঃ এই সব প্রহরের কাজ।

নিল প্রহরকে ফোন দিলো
প্রহরঃ পথে বসার জন্য রেডি মিনিল চৌধুরি?
নিলঃ এই সব আপনের করাধরা তাইনা?
প্রহরঃ হাহাহা।
টাকার আর পাওয়ার এর মাধ্যমে তুমি স্নিগ্ধাকে হারিয়েছিলা।
এখন আমি তোমার সাথেও সেম কাজ করবো।

কারন তুমি যে অফিসে কাজ করো ওই রকম অফিশে ১০ জন মালিক আমার পকেটে থাকে।
নিলঃ (চুপ)
প্রহরঃ You know what?
তোমাকে আমার থেনক্স বলা উচিৎ কারন তুমি স্নিগ্ধাকে কষ্ট না দিলে ও তোমাকে ছাড়তো না আর আমিও ওকে আমার লাইফে পেতাম না।
এর জন্য তোমাকে একটা অপশোন দেই।

তুমি নিজে লিগেল পেপারসের মাধ্যমে নিশানকে আমাদের দিয়ে দাও। আর আমি তোমার বাসার উপরে যে লোন আছে তা পে করে দেই এবং তোমাকে একটা ভালো চাকরি ব্যবস্থা করে দেই।
নিলঃ এই সব কথা ফোন থেকে সরাসরি বলা ভালো।
Can we met?

পরেরদিন (বিয়েরদিন)

সকাল থেকে প্রহরের কোনো খবর নেই। মাকে ফোন করে বলেছে ও একবারে স্নিগ্ধার বাসায় যাবে।
সবার সময় মতো স্নিগ্ধার বাসায় চলে গিয়েছে। কিন্তু প্রহরের কোনো খবর নেই।
বিয়ে বলতে কি শুধু কাজি এসে বিয়ে পরাবে। প্রহরের পক্ষ থেকে মা। প্রান্তি। ইয়ান
আর স্নিগ্ধার বাসার সাবাই। আম্মু-আব্বু। মামা-মামি। ভাইয়া-ভাবি। সারাহ আর দাদি।
স্নিগ্ধা আজকে আবার বউ সেজেছে।

একটা লালা কাতান শাড়ি। লাল চুরি। কপালে লালা টিপ। আর চোখে উপরে কাজল। প্রয়োজনি কিছু গয়না আর চুলে নিচু করে খোপা।
কিছুখন আগে ভাবি খোপাটা বেলি ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিলো।
এতো সিম্পেল তাও স্নিগ্ধাকে অনেক সুন্দর লাগছে।
কিন্তু ওর মুখে হাসি নেই। প্রহরের জন্য অনেক টেনশন হচ্ছে
প্রহর ফোনও ধরছে না।

প্রহরের কোনো বিপদ হলো নাতো?
দুপুর ১টায় বিয়ে পরানোর কথা ছিলো আর এখন ৪টা বাজে।
কাজি কখন থেকে এসে বসে আছে।
সময়তখন৫টা
ডিং_ডং

স্নিগ্ধা সবার আগে গিয়ে দরজা খুললো।
হ্যা এতোখন স্নিগ্ধা যার অপেক্ষা করছিল সে এসেছে।
প্রহরকে দেখে স্নিগ্ধার জানে জান আসলো।
স্নিগ্ধা প্রহরকে কিছু বলবে এর আগে প্রহরের পিছন থেকে নিশান উকি দেয়।
স্নিগ্ধা একবার প্রহরের দিকে একবার নিশানের দিকে তাকায়।

প্রহরঃ তোমার বিয়ের গিফট। (মুছকি হেসে)
স্নিগ্ধা হাটু ঘেরে বসে আর নিশান এসে ওকে জরিয়ে ধরে।
তারপর নিশানের গালে। কপালে চুমু দেয়।
নিশানঃ মা এখন থেকে আমি তোমার কাছে থাকবো।
এটা বলে নিশান আবার স্নিগ্ধাকে জরিয়ে ধরে।

স্নিগ্ধা প্রহরের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে ইশারা করে বলে থেনক ইউ।
স্নিগ্ধা বুঝতে পারেনি যে প্রহর সত্যি সত্যি ওকে নিশান এনে দিবে।
সেদিনই স্নিগ্ধা আর প্রহরের বিয়ে হয়।

আবার সে ফুলশয্যার রাতে। প্রহর কি নিলের মতো করবে? স্নিগ্ধার কেমন জানি ভয় হচ্ছে? নিশানকে এনে দাওয়ার জন্য প্রহর কি আজ ওর কাছে এর মূল্য চাবে?
প্রহর কি নিলের মতো…


পর্ব ২৩

স্নিগ্ধা মনে মনে ভাবছে।
না প্রহর নিলের মতো না। কিন্তু ও যদি নিশানকে এনে দেওয়ার জন্য আমার কাছে মূল্য চায়?
না আর ভাবতে পারছি না।

নক নক….

স্নিগ্ধা দরজায় তাকিয়ে দেখে নিশান দরজাটা একটু ফাকা করে উকি দিয়েছে।
স্নিগ্ধা নিশানকে ওর কাছে আসার জন্য হাত দিয়ে ইশারা করলো।
স্নিগ্ধার ইশারা পেয়ে নিশান এক দৌড়ে ওর কাছে এসে ওর কুলে মাথা রেখে শুয়ে পরলো।
নিশানঃ মা আমি তোমার সাথে গুমাবো। ইয়েয়ে

স্নিগ্ধাঃ গুমাও। (প্রহর নিশানকে দেখে যদি কিছু মনে করে-মনে মনে)
নিশান ঘুমিয়ে গিয়েছে। রাত-১২টা বাজে প্রহর এখনো আসছে না কেনো?
স্নিগ্ধা হাত মুখ ধুয়ে আসলো। বিয়ের লাল কাতান টা এখনো পরে আছে। ডেসিনটেবিলের সামনে বসে খোপার ফুল আর গয়না গুলো খুলছে।
স্নিগ্ধার ফোনে একটা মেসেজ আসলো।
*Mrskhan একটু ছাদে আসবেন? *

স্নিগ্ধা একটা কাটা দিয়ে চুলে খোপা করে ছাদে গেলো।
গিয়ে দেখে প্রহর ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
স্নিগ্ধা গিয়ে প্রহরের সাথে দাড়ালো।
দুইজন এক ধেনে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে।

হঠ্যাৎ প্রহর স্নিগ্ধার চুলের কাটা খুলে দিলো।
স্নিগ্ধা প্রহরের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
প্রহরঃ কেউ উরতে চাইলে তাকে বেধে রাখতে হয়না।
স্নিগ্ধার চুল গুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে।

আর প্রহর মুগ্ধ নয়নে তা দেখছে।
স্নিগ্ধার সাথে চোখাচোখি হয়ার পর চোখ সরিয়ে নিলো।
প্রহরঃ চাঁদটা কে আজ একটু বেশি সুন্দর লাগছে তাই না?
স্নিগ্ধাঃ কোথায়? এককি তো।
প্রহর হাল্কা হেসে। সব চাঁদ একনা।

প্রথম চাঁদের সামনে তোমার সাথে কথা বলেছিলাম নিজ থেকে আর আজ আবার চাঁদের সামনে তোমাকে বউ বানিয়ে দারিয়ে আছি।
দুইটা কি এক হলো?
Whatever।
নিশান শুমিয়েছে?
স্নিগ্ধাঃ আসোলে আমার কাছে।

স্নিগ্ধার কথা শেষ হওয়ার আগে প্রহর বলে উঠলো।
প্রহরঃ হুমম। আমি পাঠিয়েছি। তোমাকে ডাকতে যেয়ে দেখি। পাশের রুমে আম্মুর কাছে বায়না করছিলো যে তোমার সাথে গুমাবে।
তাই ভাবলাম মা-ছেলে না হয় কিছু সময় দেই।

স্নিগ্ধাঃ আমি বুঝতে পারিনি আপনি সত্যি সত্যি আমাকে নিশান এনে দিবেন।
প্রহরঃ আমার মিসেস প্রথম বার আমার কাছে কিছু চেয়েছে। আর আমি তা এনে দিবো না তা কি হয়?
স্নিগ্ধাঃ একটা কথা জিজ্ঞেসা করি?
প্রহরঃ হুমম করো।
স্নিগ্ধাঃ আমি নিলকে যতোটুকু জানি। ও এতো সহজে নিশানকে দেওয়ার মতো না? তো।
প্রহরঃ একটা কথা জানো স্নিগ্ধা?

লাস্ট এক মাস নিল যদি তোমাকে নিশানকে নিয়ে ব্ল্যাকমিল না করতো। তখন তুমি নিশানকে আমার কাছে চাইতে। নিলের পা ধরে হলেও নিশানকে আমি এনে দিতাম।
কিন্তু নিল তোমাকে ব্ল্যক মিল করে ওর জীবনে অনেক বড় ভুল করেছে। যার শাস্তি ওকে পেতে হবে।
আর নিল এতো লোভি। যে নিজের ছেলেকেও টাকার বদলে বিক্রি করতে পারে।
নিজে পথে বসার ভয়ে নিশানকে আমার কাছে দিয়ে দিলো। কিন্তু
স্নিগ্ধাঃ কিন্তু?

প্রহরঃ আগে বলো আমি যদি তোমার কাছে কিছু চাই। তা আমাকে দিবা?
স্নিগ্ধার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেলো। শাড়ির আচলটা খামছে ধরলো।
প্রহরঃ আমি জানি তোমার কষ্ট হবে। আবার এই সব ফেশ করা এতো ইজি না।
স্নিগ্ধাঃ আপনি কি চান?

নিশানকে এনে দেওয়ার জন্য মূল্য চাছেন?
আমার শরিলকে উপভোগ করতে চাছেন?
প্রহর একটানে স্নিগ্ধাকে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসলো।
প্রহরঃ তুমি বিয়ের আগেও এইরকম জঘন্য কথা বলেছো তখন কিছু বলিনি আজকে বললা। কিন্তু আর কখনো যাতে এই সব নোংরা কথা তোমার মুখে না শুনি?
আর তোমার শরিলটা পেতে চাইলে আরো আগে আমি পেতে পারতাম। এমন অনেক সুযোগ ছিলো।

কিন্তু আমি তোমার মন পেতে চেয়েছি শরিল না।
কিন্তু এই কথা তোমাকে বুঝাতে পারলাম না।
প্রহর নিজের রুমে চলে আসলো।
আর স্নিগ্ধা থমকে ওইখানে দাঁড়িয়ে আছে।
স্নিগ্ধা আজ প্রথম প্রহরের রাগ দেখলো।
স্নিগ্ধাঃ শুধু শুধু উনাকে রাগিয়ে দিলাম। এটলাস্ট সে কি বলতে চায় তা অন্ত্যত শুনতাম।
লোকটা কি না করলো আমার জন্য আর আমি?
আসলে আমি উনার যোগ্য না।

স্নিগ্ধাও রুমে গিয়ে শুয়ে পরলো।
মাঝে নিশান। এক পাশে প্রহর। অন্য পাশে স্নিগ্ধা।
সকালে
স্নিগ্ধা উঠে দেখে ওর আর নিশানের গায়ে চাদোর দেওয়া। ভোর রাতে মনে হয় গুরিগুরি বৃষ্টি পরেছিলো।
তাই হয়তো

ছেলেটা কতো দিকে খেয়াল রাখে।
স্নিগ্ধা উঠে বসে দেখে প্রহর রেডি হচ্ছে।
পাঞ্জাবি পরছে কেনো?
ওকি আমাকে রেখে কোথাও যাবে?

যাইহোক প্রহরকে নিল পাঞ্জাবিতে কি দারুন লাগছে।
দুইজন আয়নাতে তাকিয়ে একজন অন্যজনকে দেখছে।
স্নিগ্ধাঃ উনি কি এখন আমার সাথে রাগ? (মনে মনে)
প্রহর স্নিগ্ধার সাথে কোনো কথা না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
সারাটা দিন স্নিগ্ধার সাথে কথা বলাতো দুরের কথা। স্নিগ্ধার দিকায় তাকায় নি।
প্রহরের এই বিহেভ টা স্নিগ্ধার একদম সহ্য হচ্ছে না।

সন্ধ্যায়
স্নিগ্ধাঃ I am sorry। আমি আপনাকে হার্ট করে কথা বলতে চাইনি।
প্রহরঃ it’s ok।
sorry। আমারও তোমার সাথে এইভাবে লাউড করে কথা বলা উচিৎ হয়নি।
স্নিগ্ধাঃ কালকে কি জানি বলতে চেয়েছিলেন?
প্রহরঃ তুমিকি চাও নিল নামে নরপশুটা অন্য কোনো মেয়ের জীবন নষ্ট করুক?
ও তোমার সাথে যা হয়েছে তা অন্য কোনো মেয়ের সাথে হোক?
স্নিগ্ধাঃ না আমি চাইনা।

প্রহরঃ তাহলে ওকে ওর প্রাপ্য শাস্তি টুকু দিতে হবে।
আমি নিলের কেসটা আবার রিওপেন করেছি।
তুমি এতে আমার হেল্প করবা?

জানি অতিত কে আবার সামনে ওইভাবে দেখে তোমার কষ্ট হবে।
স্নিগ্ধাঃ নিলকে ওর প্রাপ্য শাস্তি দিবো। কিন্তু ওর মতো আরো অনেক নরপশু যে আমাদের দেশে আছে?
প্রহরঃ শুরুটা নিলকে দিয়ে হোক।
তোমাকে দেখে অন্য মেয়েরা ইন্সপায়ার হবে।
কালকে রেডি থেকো।

নিলের কেস্টা একদিনে ডিসমিস হয়ে গেলো। কারন প্রহর জজকে যে ইভিডেন্স দেখালো তারপরে তো ডেট দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
ইফিডেন্সটা ছিলো ভিডিওতে নিল স্নিগ্ধার সাথে যা যা করেছে তা নিজ মুখে শিকার করা।
নিলের ১২ বছরের জেল হলো।
কিন্তু প্রহর এটা কি ভাবে আর কখন করলো।


পর্ব ২৪

ফ্লেসব্যক
প্রহরঃ চেকটা আমি ব্যাংকে জমা দিয়ে দিয়েছি। আর CBX company তে কথা বলেছি। তুমি কাল থেকে জয়েন্ট করতে পারো।
নিলঃ (মুছকি হেসে)
আমি আপনাকে একজন বুদ্ধিমান বিজনেসম্যান ভাবতাম।
বাট আপনার মত বোকা লোক আমি জীবনেও দেখিনি।

যে একজন ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করছে তার উপরে আবার এই বাচ্চা।
প্রহর রাগে হাত মুঠ করে নিলো। নিলকে খুন করতে ইচ্ছা করছে। অতপর ফুলশয্যার রাতে।

নিলঃ যাই হোক আমারই লাভ হলো। আমার এতো বড় লোনটাও আর মথার উপরে রইলোনা আবার আমি এখন আবার বিয়ে করতে পারবো কারন আমার এখন আর কোনো পিছুটান নেই

যা এতো দিন নিশানের জন্য করতে পারিনি।
আসলে মেয়েরা বাচ্চা আছে শুনলে রাজি হয় না।
আর যে সব বেহেনজিরা রাজি হয় ওরা আমার যোগ্য না।
প্রহরঃ কোংরেচুলেসান।
তো এক এক টা ড্রিক্স হয়ে যাক।
নিলঃ আপনে খান?
প্রহরঃ হমম

সে দিন প্রহর নিলকে এতো ড্রিঙ্ক করিয়েছে যে নিলের মাতাল আবস্থা।
তারপর প্রহর নিলের কাছ থেকে সব কথা বের করে নিয়েছে। যার ভিডিও ও কোর্টে দেখিয়েছে।
ফ্লেসব্যক_ওভার
প্রহর ড্রাইভ করছে আর স্নিগ্ধা ওর পাশে বসে আছে।
প্রহরঃ স্নিগ্ধা কাইন্ডলি ৫মিনিট ওয়েট করবা?
আমার অফিস থেকে একটা পেপার নিতে হবে।

স্নিগ্ধাঃ নো প্রব্লেম।
বাসায় এসে শুনে নিলের মা-বাবা নিশানের সাথে দেখা করতে এসেছিল। ওরা আসার কিছুখন আগে গেলো।
তারা যাওয়ার পর থেকে নিশান নিজের রুম থেকে বের হচ্ছে না।
সবাই অনেক বার নক করেছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

স্নিগ্ধা গিয়ে দরজা নক করে ওকে ডাকা মাত্র নিশান দরজা খুলে স্নিগ্ধাকে জরিয়ে ধরলো।
স্নিগ্ধাঃ কি হয়েছে বাবা?
নিশানঃ (ফোপিয়ে ফোপিয়ে কান্না করছে। কিছু বলছে না)
স্নিগ্ধা নিশানকে রুমে নিয়ে অনেক টা শান্ত করলো।
কিন্তু প্রহর কে দেখা মাত্র নিশান ওর কাছে গিয়ে নিজের ছোট হাত দিয়ে ওকে আঘাত করতে লাগলো।
নিশানঃ তুমি পচা। তুমি আমার পাপাকে জেলে পাটিয়েছো।

তুমি পচা।
স্নিগ্ধা গিয়ে নিশানকে ধরতে গেলে কিন্তু প্রহর হাতের ইশারা করে ওকে বাধা দিলো।
স্নিগ্ধাঃ তোমাকে এগুলো কে বলেছে বাবা?
নিশানঃ দাদুমনি।
স্নিগ্ধাঃ আর কি বলেছে?

নিশানঃ আর বলেছে তুমি আমার মা নও। তুমিও পচা।
আমি দাদুমনিকে বলেছি যে তুমিই আমার মা আর তুমি অনেক ভালো।
স্নিগ্ধা আর কিছু জিজ্ঞেসা করবে তার আগে প্রহর নিশানকে নিজের সাথে জরিয়ে ধরেছে।
প্রহরঃ তুমি তোমার মা কে অনেক ভালোবাসো। তাই না?
নিশানঃ হ্যা। কিন্তু তোমাকে বাসি না। তুমি পচা।

প্রহরঃ তোমার মাকে যদি কেউ কষ্ট দেয় তোমার কেমন লাগবে?
নিশানঃ কষ্ট মানে?
প্রহরঃ কষ্ট মানে পিট্টু (মাইর/বকা)
নিশানঃ খারাপ লাগবে। আমি আর সুপারম্যান মিলে ওকে পিট্টু দিবো।
প্রহরঃ তোমার মা কে তোমার পাপা অনেক কষ্ট দিয়েছে। তোমার সাথে দেখা করতে দেয়নি। তাই তোমার পাপাকে এর জন্য পানিস করা হয়েছে।
নিশানঃ পাপা আমাকেও মেরেছিলো।
আমি খুব ব্যথা পেয়েছিলাম।
প্রহরঃ এখন তুমি বলো আমি কি ভুল করেছি?

নিশান অনেক খন চুপ করে থেকে। একবার স্নিগ্ধার দিকে তাকায় আর এক বার প্রহরের দিকে তাকায়।
নিশানঃ না আংকেল ঠিক করেছো।
তুমি পচা না। পাপা পচা।
যে আমার মা কে কষ্ট দিবে সে পচা।

তুমি কিন্তু পাপার মতো আমার মাকে কষ্ট দিবা না।
প্রহরঃ না বাবা কখনো কষ্ট দিবো না।
স্নিগ্ধা আজ নিশানের মধ্যে নিলের রাগ দেখেছে। রক্ত বলে কথা।
না স্নিগ্ধা নিশানকে নিলের মতো হতে দিবে না। কিছুতেই না।
রাতে

প্রহর স্নিগ্ধাকে একটা ব্রাউন কালার খাম দিলো।
স্নিগ্ধা খামটা খুলে দেখে।
নিশানের বার্থ সার্টিফিকেট।
নাম লেখা:নিশান খান

বাবা:প্রহর খান
মাঃ স্নিগ্ধা ইসলাম
প্রহরঃ এখন আল্লাহ ছাড়া তোমার সন্তানকে কেউ তোমার থেকে দূরে নিতে পারবে না।
স্নিগ্ধাঃ Thank you
প্রহরঃ ইটস মাই প্লেযার Mrskhan
স্নিগ্ধাঃ Thank you টা এটার জন্য ছিলো না।
প্রহরঃ তো?

স্নিগ্ধাঃ আমার লাইফে আসার জন্য।
প্রহর মুছকি হেসে।
স্নিগ্ধার কাছে গিয়ে ওর কপালে আলতো করে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ দিলো।
স্নিগ্ধা প্রহরের ঠোঁটেরর স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠলো আর চোখ বন্ধ করে নিলো।
এখন যদি প্রহর ওকে নিজের করে নেয় তাও ও মানা করবে না।

প্রহরঃ ভেবেছিলাম তোমার পারমিশন ছাড়া তোমাকে টাচ করবো না।
কিন্তু কেনোই যানি নিজেকে এই কাজ করতে থামাতে পারলাম না।
বলে প্রহর নিজের স্টাডি রুমে চলে গেলো।
আর স্নিগ্ধা শুয়ে শুয়ে প্রহরের কথা ভাবতে লাগলো।
প্রহর কি সব সময় এমন থাকবে?
ছেলেটা এতো ভালো কেনো?

নেক্সট মান্থ থেকে এক্সম। কালকে প্রহরের সাথে কথা বলতে হবে।
সকালে
স্নিগ্ধা গুম থেকে উঠে দেখে নিশান ওকে জরিয়ে গুমিয়ে আছে।
স্নিগ্ধা নিশানের কপালে একটা চুমু দিয়ে ওয়াস রুমে গেলো।
ফ্রেশ হয়ে এসে রুমে থেকে বের হলো।
মাঃ গুড মর্নিং

স্নিগ্ধাঃ গুড মর্নিং মা।
সরি আজকে উঠতে দেরি হয়ে গেলো।
মাঃ আমরা মানুষ রোবর্ট না যে সব সময় সব কিছু পার্ফেক্ট হবে।
বাসো আমি নাস্তা দেই।
স্নিগ্ধাঃ না মা আমি নিয়ে নিবো।

মাঃ ব্যপার না। তুমি বসো আমি দিচ্ছি।
স্নিগ্ধা নাস্তা খাচ্ছে। মা ওর পাশে বসে আছে। আর দুজন মিলে গল্প করছে।
স্নিগ্ধাঃ মা আমার নেক্সট মান্থে এক্সম। আসলে আমি
(স্নিগ্ধার কথা শেষ না হতেই মা বলে উঠলো)
মাঃ হমম প্রহর বলছিলো যে আজ রাতে তোমরা রাজশহীর উদ্দেশে বের হবা।
স্নিগ্ধাঃ আজকে রাতে?

মাঃ হ্যা। কেনো প্রহর বলেনি?
স্নিগ্ধাঃ হয়তো ভুলে গিয়েছে।
মাঃ শোন মা। জীবনে যা হয়েছে সব ভুলে নিজের নতুন সংসারকে সুন্দর করে নিজ হাতে সাজিয়ে নিও কেমন।
স্নিগ্ধাঃ জি মা। দোয়া করবেন।

মা আপনি এই খানে একা থাকবেন?
মা :না। আমি প্রান্তির কাছে চলে যাবো।
ওই খানে আমার ডক্টর দেখানোর সময় চলে এসেছে।
স্নিগ্ধাঃ ও।
মা আপনি আমাদের সাথে চলেন।

মাঃ আসবো মা।
স্নিগ্ধা সব প্যকিং করে রেখেছে। রাতে প্রহর বাসায় এসে মার থেকে বিদাই নিয়ে ওরা রাজশাহীর উদ্দেশ্যে বের হয়ে পরে।
প্রহর সব আগের থেকে ঠিক করে রেখেছিলো।
নতুন বাসাটা স্নিগ্ধার কলেজের অনেকটা সামনে।
বাসাটা ছিলো ডুপ্লেক্স। সামনে বাগান আর সাথে ছোট একটা সুইমিংপুল।
স্নিগ্ধাঃ আমার জন্য আপনার এতো সমস্যা হলো।

প্রহরঃ কোনো সমস্যা না। আর মাত্র ২ বছরের তো ব্যপার।
নিশানকে এইখানে একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলো।
আর বলা হয় নি প্রহর নিজের সব কিছু রাজশাহী ব্রাঞ্জে নিয়ে এসেছে।
এখন থেকে শুরু হবে স্নিগ্ধার নতুন জীবন।
আজকে ক্লাস থেকে আসস্তে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। এসে দেখে
কালকের থেকে রোম্যন্স দেওয়ার ট্রায় করবো।


পর্ব ২৫

প্রহরের পয়েন্ট অফ ভিউ….

কিছুখন আগে স্নিগ্ধার মেসেজ আসলো। যে ওর আজকে আসতে দেরি হবে।
নিশান বাসায়। মালি কাকা আর তুলি আছে ওর সাথে। তোবুও কেমন জানি একটা ভয় হচ্ছে। তাই তারাতারি মিনিং শেষ করে বাসায় উদ্দেশ্যে বের হলাম।
এসে দেখি নিশান জানালা দিয়ে কিছু বাচ্চাদের খেলতে দেখছে।

তুলি বললো ও এখনো দুপুরের খাওয়া খায়নি।
আমি গিয়ে ওর সাথে দারালাম।
প্রহরঃ তুমি ওদের সাথে খেলতে চাও?
নিশানঃ আমি গিয়েছিলাম আমাকে নেয়নি।
বলে আমি ছোটো পারবোনা।

প্রহরঃ আমার সাথে খেলবা?
নিশান প্রহরে দিকে তাকিয়ে মাথা জাকিয়ে হ্যা সুছোক ইংগিত দিলো।
প্রহরঃ ওকে আমরা খেলবো। কিন্তু খেলার জন্য তো এনার্জি প্রয়োজন।
আর এনার্জিরর জন্য আমাদের আগে খেতে হবে।
নিশানঃ আমি ওই তুলি আপুর হাতে খাবো না। উনি খাবারে ঝাল দিয়ে দেয়।
প্রহরঃ আমি খাইয়ে দেই?
নিশানঃ ওকে।

স্নিগ্ধা এসে দেখে বাড়ির বাগানে প্রহর আর নিশান ফুটবল খেলছে।
দুইজন পুরা কাদায় মাখামাখি।

আর প্রহর তো নিশানের সাথে খেলতে খেলতে বাচ্চা হয়ে গিয়েছে।
স্নিগ্ধা প্রহরের এই রুপ টাও দেখে নিলো।
স্নিগ্ধাঃ একি অবস্থা?
আজকে আর খেলতে হবে না। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নাও।
নিশানঃ প্লিয মা। আর পাচ মিনিট।
স্নিগ্ধাঃ ওকে আব্বুজি খেলা শেষ করে মা কে ডাক দিও।
গোসুল করিয়ে দিবো।

নিশানঃ না মা। আমাকে বাপি (প্রহর) গোসুল করিয়ে দিবে।
তুমি টেনশোন করো না।
স্নিগ্ধা নিশানের কথা শুনে প্রহরে দিকে তাকালো।
কারন এই ৬ মাসে নিশান একবার ও প্রহর কে বাপি। বাবা। এমন কিছু ডাকে নি।
সব সময় আংকেল বলে সম্মধোন করেছে।

অবশ্য বাবা ডাকার জন্য প্রহর বা স্নিগ্ধা কেউ ওকে বলে নি।
কারন প্রহর চায়না বাচ্চাটার উপরে কিছু থুপিয়ে দেওয়া হোক।
স্নিগ্ধা বুঝতে পারছে এখন প্রহরের অনুভূতি।
ওর এখনো মনে পরে নিশানের মুখে প্রথম মা ডাক।

ধীরেধীরে নিশান প্রহরের অনেক ক্লোজ চলে গিয়েছে। এখন তার বাপি ছাড়া কিছু বুঝেনা।
প্রহর যে কি করে সবাইকে এতো তারাতারি নিজের করে নেয়? ওকি কোনো যাদু জানে?
নিশান স্কুল থেকে এসে তারাতারি নিজের পড়া কোম্পিট করে রাখে। কারন তার বাপি আসলে তার সাথে খেলবে। ড্রোইং করবে। বাইক দিয়ে অইস্ক্রিম খেতে যাবে আর কত কি।
আর প্রহর ও অফিসের কাজ তেমন বাসায় আনে না। আর আনলেও নিশানের ঘুমানোর পরে করে।
আর স্নিগ্ধার কাজ হলো দুজনের এই সব মুগ্ধমগ্ন হয়ে দেখা। আর
শপিং এ গেলে ওদের জন্য সেম ড্রেস কিনা।

ওরা যখন সেম পাঞ্জাবি পরে শুক্রুবারে নামাজ পরতে চায় কি দারুন লাগে।
এমনকি টি-সার্ট ও অনেক গুলা সেম।
ইধানিং স্নিগ্ধার পড়াশুনার জন্য বিজি থাকা হয় আর তারা বাইক দিয়ে টোটো কোম্পানির মেনেজার হয়ে গুরে।
প্রহর স্নিগ্ধা আর নিশানের অনেক খেয়াল রাখে।
ছেলেটা পারেও।

এতো দিনে কখনো প্রহর স্নিগ্ধাকে টাচ করেনি।
কিন্তু প্রতি সকালে প্রহর যখন আয়নার সামনে রেডি হয়। স্নিগ্ধার অনেক ইচ্ছা করে ওকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরতে।
মাঝে মাঝে ওর প্রতি অনেক লোভ হয়। আর যখন দেখে নিশান ওর বুকের এক পাশে শুয়ে আছে তখন স্নিগ্ধারো খুব ইচ্ছা করে ওর বুকের অন্য পাশে নিজের অধিকার নিয়ে শুতে।
কিন্তু স্নিগ্ধার লজ্জা লাগে।
স্নিগ্ধারপয়েন্টঅফ_ভিউ
সকালে

আজকে আমার আর প্রহরে ছুটি।
ঘুম থেকে উঠে দেখি বাবা আর ছেলের গুম।
শুমোন্ত অবস্থায় দুইজনের মুখ যে কি মায়াবি লাগছে তা বলে বুঝানো যাবে না।
অনেক খন অদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। বিশেষ করে প্রহরের দিকে কারন প্রহর যাগ্না থাকলে ওর দিকে তাকাতে লজ্জা লাগে তাই শুমন্ত প্রহরকে মন ভরে দেখি।
বাবা-ছেলেকে যতো দেখি কিন্তু মন ভরে না।
উঠে নিশানের কপালে একটা চুমু দিলাম।
প্রহরকেও একটা দেই?

না ও যদি উঠে যায়। কি ভাববে?
শুম বুঝবে না। স্নিগ্ধা প্রহরের কপালে আলতো করে একটা কিস করে ওয়াস রুমে চলে গেলো।
স্নিগ্ধা ওয়াস রুমে যাওয়ার পরে প্রহরের মুখে ছিলো বিজয়ের হাসি।
কারন ও বুঝতে পারছে যে স্নিগ্ধা ওকে পছন্দ করা শুরু করেছে।

স্নিগ্ধা দুপুরের রান্না করছে। প্রহর আর নিশান নামাজ পরে এসে টিভি দেখছে।
চুলে খোপা করতে গিয়ে স্নিগ্ধার ব্লাউজের ফিতা খুলে গিয়েছে। আর শাড়ি কাছা বাধা যার ফলে ওর পেটের কিছু অংশ দেখা যাছে।
কিন্তু এই দিকে ওর কোনো খেয়ান নেই। কারন সে এখন রান্না করতে ব্যস্ত।
রান্না সব উলটা পাল্ট হচ্ছে। হলুদ। মরিচ। লবন সব কেমন জানি গরমিল হচ্ছে।
প্রহর পানি খাওয়ার জন্য রান্না ঘরে গিয়ে দেখে এই অবস্থা।
প্রহর স্নিগ্ধার পেটে হাত দিয়ে ওর পিঠে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছে।
আলতো করে একটা দুইটা। অশংখ্য ঠোঁটে স্পর্শ দিচ্ছে।
প্রহরের প্রতিটা স্পর্শে স্নিগ্ধা কেপে কেপে উঠছে।
স্নিগ্ধার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।

স্নিগ্ধার নিশ্বাস ভারি হয়ে আসছে।
তারপর প্রহর ওকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরেলো।
প্রহরঃ নিজেকে আদর করতে দাওনা আর আমাকে আদর কর কেনো?
স্নিগ্ধা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে।

প্রহরঃ sorry। sorry। sorry
আমার এই কাজ করা ঠিক হয়নি। আমি তো দুষ্টুমি করছিলা।
আর আদর করবো না। তুমি প্লিজ কান্না করো না।
স্নিগ্ধাঃ আমি আদর পেয়ে কান্না করছি না।
প্রহরঃ তো?

স্নিগ্ধাঃ রান্না সব উলটা পালটা হচ্ছে। কখনো আমার সাথে এমন হয়নি।
প্রহর মাথায় হাত দিয়ে।
এটার জন্য কেউ কান্না করে?
স্নিগ্ধাঃ না এমন কেনো হবে।

প্রহরঃ ব্যপার না বউ। এই রকম হয়।
তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো আজ আমরা বাইরে খাবো।
স্নিগ্ধা যেতে নিলো পিছন থেকে প্রহর ওর হাত ধরলো।
প্রহরঃ তোমাকে লাল শাড়িতে অনেক মানায়।
আজকে পরবা?

স্নিগ্ধাঃ ওকে।
স্নিগ্ধা ফ্রেশ হতে লাল শাড়ি। লাল টিপ। লাল চুড়ি পরে রেডি হয়ে নিলো।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে। পিছন থেকে প্রহর এসে ওর গলায় সিম্পেল একটা ডায়মন্ডের পেন্ডেন পরিয়ে দিলো।
প্রহরের ছোয়া পেয়ে স্নিগ্ধার শরিল একটা জাকি দিয়ে উঠলো।
প্রহরঃ বিয়ের দিন তোমাকে দিবো বলে কিনেছিলাম। কিন্তু দাওয়া হয়নি।
স্নিগ্ধাঃ অনেক সুন্দর।

স্নিগ্ধা খোপা করতে নিলো কিন্তু প্রহর বাধা দিলো।
প্রহরঃ চুল গুলো খোলা থাকনা প্লিয


পর্ব ২৬

স্নিগ্ধা আর প্রহর দুইজন আয়নার সামনে দারিয়ে একে অপরকে দেখছে।
স্নিগ্ধাঃ মানুষ এতো ভালো কি করে হয়?
তার সাথে দাঁড়িয়ে নিজেকে অনেক বেমানান লাগছে।
মনে হচ্ছে আমি তার যোগ্য নই। উনি আমার জন্য কতো কিছু করেছে আর আমি?
কিছু না।

(মনে মনে)
প্রহর স্নিগ্ধার গালের সাথে গাল লাগিয়ে দারিয়ে আছে।
স্নিগ্ধা প্রহরের স্পর্শ পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে।
প্রহর স্নিগ্ধাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে ওর কপালে। গালে নিজের ঠোঁটে ছোয়া দিচ্ছে।
তারপর ওকে একদম নিজের কাছে নিয়ে এসেছে।

একে অপরের গরম নিশ্বাস অনুভব করছে।
প্রহর স্নিগ্ধার দুই গালে হাত রেখে ওকে আরো কাছে নিয়ে আসছে।
প্রহর আর স্নিগ্ধা কেমন যানি ঘোরের মধ্যে চলে গেলো। কিছু হতে যাবে এর আগে।
ওদের ঘোর ভাংলো নিশানের কন্ঠে।

নিশানঃ মা-বাপি তারাতারি চলো। আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
প্রহর নিশানকে কুলে নিয়ে।
প্রহরঃ এখনি বের হবো পাপা।
নিশানঃ বাপি আমারা ভুমভুম (বাইক) দিয়ে যাবো?
প্রহরঃ না পাপা। গাড়ি দিয়ে যাই?

নিশানঃ না বাপি প্লিয ভুমভুম দিয়ে চলো না।
প্রহরঃ তোমার মা কি ভুমভুমে উঠতে পারবে?
স্নিগ্ধাঃ কেনো পারবো না?
নিশান আর ওর বাপি পারলে নিশানের মা ও পারবে।
প্রহরঃ ওয়াও।
তাহলে চলেন মেডাম। আমার বাইকে বসে তার মান আরো বারিয়ে দেন।
এই প্রথম স্নিগ্ধা প্রহরের বাইকে বসলো।
স্নিগ্ধা বাইকের পিছনে স্টেন ধরে রেখেছে।

প্রহর বাইক চালাছে আর নিশান সামনে বসে প্রহরের হাতের উপরে হাত রেখেছে।
বাবা-ছেলে সেম পাঞ্জাবি পরা। আর সাথে সানগ্লাস।
কি ভাব তাদের।
স্নিগ্ধা এই প্রথম বাইকে উঠেছে। তাই অনেক আনকম্ফর্টেবাল লাগছে।
স্নিগ্ধা প্রহরকে তা বুঝতে না দিলেও প্রহর তা টিক বুঝতে পারছে।
স্নিগ্ধা নিজের হাত প্রহরের কধে রাখতে চেও রাখছে না। প্রহরের কাধের কিছু দূরত্ব থেকে ফিয়ে আসছে।
প্রহর সব দেখছে আর মিট মিট করে হাসছে।

বাইক রানিং তাই কিছু করতেও পারছে না।
বাইকটা একটা সিগ্নালে থামলো।
প্রহর নিজের একহাত পিছনে দিয়ে স্নিগ্ধার হাত নিয়ে ওর কোমরে রাখলো।
স্নিগ্ধা;

প্রহরঃ নিজের স্বামিকে টাচ করতে এতো ভাবতে হয়না বউ।
টিক করে ধরে বসো। নয়তো পরে যাবা।
স্নিগ্ধাতো লজ্জায় টোমেটু হয়ে গিয়েছে।
ওরা লাঞ্চ এর জন্য একটা রোফটপ রেস্টুরেন্টে গেলো। রেস্টুরেন্টা অনেক সুন্দর করে ডেকুরেট করা।
আর পরিবেশ টাও অনেক সুন্দর।

ওরা লাঞ্চ করে একটা আইস্ক্রিম পারলারে গেলো।
নিশানঃ আমি মেংগোফ্লেবার খাবো।
প্রহরঃ ওকে পাপা।
স্নিগ্ধা তুমি কোন ফ্লেভার?
স্নিগ্ধাঃ

স্নিগ্ধার কোনো পাত্তা না পেয়ে প্রহর স্নিগ্ধার দিকে তাকালো।
দেখে। স্নিগ্ধা কিছু পথশিশুর দিকে তাকিয়ে আছে।
যারা ড্যব ড্যব চোখে এই আইস্ক্রিম পারলার আর এর আসে পাশে মানুষদেরকে দেখছে।
তাদের জুঠা আইস্ক্রিম চাছে।
প্রহর হাতের ইশারা করে সবাইকে আসতে বললো।

সবাই আসতে নিলো এমন সময় সিকিউরিটিরা তাদের বাধা দিয়ে যা তা ভাষায় গালি দিতে লাগলো।
প্রহর গিয়ে সিকিউরিটিদের সাথে রাগারাগি করলো আর ওদেরকে নিয়ে আসলো।
প্রহরঃ বাচ্চাদের উদ্দেশ্য করে। তোমরা কে কোন ফ্লেভার খেতে চাও তাকে বলো।
তারপর দোকানদার কে উদ্দেশ্য করে। বাচ্চারা কে কোন ফ্লেভার চায়। তাদেরকে তা দেন।
স্নিগ্ধাঃ আমি কিছু বলার আগে কি করে তুমি সব বুঝে যাও? (মনে মনে)

নিশান ওদের কে দেখে স্নিগ্ধার পিছনে গিয়ে লুকিয়ে গিয়েছে।
স্নিগ্ধাঃ কি হয়েছে নিশু?
নিশানঃ ওদের জামা নোংরা। ওরা ছিননি (ময়েলা)
আমি ওদের সাথে দারাবো না।
স্নিগ্ধাঃ নিশাননন (জরে চিৎকার করে)

এই প্রথম স্নিগ্ধা নিশানের উপরে এতো জরে চিৎকার করলো।
স্নিগ্ধার এই বিহেভ দেখে নিশানের কান্না শুরু। (নিশান একদম স্নিগ্ধার মতো কান্না করে ফোপিয়ে ফোপিয়ে)
স্নিগ্ধা নিশানকে আর কিছু বলার আগে প্রহর স্নিগ্ধাকে থামিয়ে দেয়।
প্রহর নিশানের সামনে হাটু ঘেরে বসে। ওকে জরিয়ে ধরলো।
নিশান অনেক ভয় পেয়েছে।

প্রহরঃ ইশ। কান্না করেনা পাপা। তুমি ব্রেভ বয় না।
তারপর ওর চোখ মুছে দিয়ে। এই গুলো পচা কথা। এইগুলো বলতে হয়না।
তুমিও মানুষ ওরাও মানুষ তাইনা।
আমারা সবাই এক আল্লাহ সৃষ্টি।

আর আল্লাহ সবাইকে এক মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছে।
তুমি এইগুলো বললে আল্লাহ গুনা দিবে।
নিশানের কান্না বন্ধ হলেও ফোপানো বন্ধ হয় নি।
sorry বাপি। আমি আর পচা কথা বলবো না।
প্রহরঃ এই যে আমার লক্ষী ছেলে। আমার পাপাটা।
নিশান ওদের সাথে দাঁড়িয়ে সাভাবিক ভাবে খেতে লাগলো।
প্রহর লোকটাকে টাকা দেওয়ার সময়।

লোকটাঃ স্যার আপনার চেঞ্জ। (বাকি টাকা ফিরত দিলো)
একটা কথা বলি স্যার?
প্রহরঃ জী বলেন।
লোকটাঃ জানেন স্যার বাচ্চা গুলা বাইরে কিসে জন্য অপেক্ষা করে?
এই অইস্ক্রিমের।

বাবা-মারা নিজের সন্তানের খাওয়া বাকি অংশটুকু ফেলে না দিয়ে এই বাচ্চাদের হাতে তুলে দেয়।
এই প্রথম তারা সম্পূর্ন আইস্ক্রিম খেলো।
আপনার মতো মানুষ অনেক কম দেখা যায়।
আমি আমার জীবনে এই প্রথম দেখলাম।

প্রহরঃ আসোলে ভাই সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত।
আর আমারা দিন দিন যান্ত্রিক মানবে পরিনতো হচ্ছি।

সোশিয়াল মিডিয়ায় পথাশিশুদেরকে সাহায্য করার জন্য হাজার পোস্ট দেয় অথেচ সামনা সামনি কিছু না।
মানুষের ভুল খুব সহজে চোখে পরে কিন্তু নিজের ভুল তাদের কাছে কিছুনা।
এই কথা শুনে লোকটা লজ্জায় পরেগেলো।

প্রহরঃ আপনি ও তো পারতেন আইস্ক্রিম না হোক যে কোনো কিছু দিয়ে ওদের সাহায্য করতে। তা কি আপনি করেছেন?
মানুষ কে বলা অনেক সহজ। কিন্তু ওই কাজ নিজে করতে অনেক কঠিন।
রাতে

স্নিগ্ধা পড়াশুনা করে ঘুমানোর জন্য এসে দেখে রুমে প্রহর বা নিশান কেও নেই।
নিশানের রুমে গিয়ে দেখে প্রহরের বুকের এক পাশে মাথা রেখে নিশান ঘুমুয়ে আছে। স্নিগ্ধা ওদের গায়ে চাদর দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে দজার লাগাবে।
আবার কি মনে করে রুমে গেলো।
না আর লজ্জা না।

সাত-পাচ না ভেবে স্নিগ্ধাও প্রহরে বুকের অন্য পাশে মাথা রেখে শুয়ে পরলো।
প্রহর ইকটু মাথা উঠিয়ে স্নিগ্ধার চুলে একটা কিস করলো।
স্নিগ্ধা নিশানের বরাবর শুয়ে আছে।
স্নিগ্ধাঃ আজকে বাচ্চাটাকে কতো জরে বকা দিলাম। (মনে মনে)
প্রহরঃ থাক বাচ্চাটাকে কালকে আদর করে দিও।
প্রহর যে কি করে ওর মনে কথা যেনে যায়?
স্নিগ্ধা উঠে প্রহরের গালে একটা কিস করে আবার নিজের যায় এসে শুয়ে পরলো।
(স্নিগ্ধা আজ নিজেকে বাধা দিতে পারছে না)
প্রহরঃ আজকে এতো আদর?

স্নিগ্ধাঃ আমার ইচ্ছা।
প্রহরঃ
স্নিগ্ধাঃ প্রহর আমি চাইনা আমার ছেলে নিলের মতো অহংকারী হোক।
প্রহরঃ হবে না জান। কিন্তু আজকের কাজ টা কিন্তু মোটেও টিক হয়নি।
ওতো এখনো অনেক ছোটো।
স্নিগ্ধাঃ হমম। আই নো
শুনো নিশানকে একদম তোমার মতো করবা ওকে।
প্রহরঃ আমাদের ছেলে আমাদের মতো হবে। আল্লাহ ভরসা।

স্নিগ্ধাঃ প্রহর আমার একটা ইচ্ছা এখন অপূর্ণ রয়ে গিয়েছে।


পর্ব ২৭

প্রহরঃ আমি জানি।
কিন্তু এখন এর সঠিক সময় না।
তুমি ভাল ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় তারপর।
কারন আমি চাইনা সবাই তোমাকে আমার নামে জানুক।
স্নিগ্ধাঃ মানে?

প্রহরঃ এখন যদি তুমি ওদের জন্য কিছু করো তাহলে লোকে বলবে।
খান_ইন্ডাস্ট্রিয়ালের এমডি প্রহর খানের ওয়াইফ অসহায় মেয়েদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে।
যা আমি শুনতে চাই না।

আমি চাই সবাই বলবে ডাস্নিগ্ধা ইসলাম ডোমিস্টিক ভাইলেনে জর্জোরিত মেয়েদের সাহায্য করেছে। তাদেরকে অনুপেরিত করেছে।
আর তার জন্য তোমাকে আগে ভালো ভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
স্নিগ্ধা একটা দীর্ঘনিশ্বাস নিলো।

স্নিগ্ধা ভাবছে সে দিন নিল যদি ওকে কলেজে পড়ার পারমিশন দিতো তাহলে আজ ও ডাক্তারি পড়তে পারতো না। এমনকি প্রহর ওর জীবনে আসতো না।
আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে।
প্রহর স্নিগ্ধার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
স্নিগ্ধাঃ আমার ঘুম আসছে না।

চলো না ছাদে যাই।
প্রহরঃ এখন?
স্নিগ্ধাঃ হমম এখন।
দুইজন ছাদে গেলো। দুইজন পাশাপাশি দারিয়ে আছে। হিম হিম বাতাস।
স্নিগ্ধাঃ আজ আমি আপনার নতুন রুপ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। প্রতি বার হই বাট আজকের টা বেস্ট ছিলো।
প্রহরঃ কোনটা?
স্নিগ্ধাঃ ওই যে। ওই লোকটা কে ভদ্র ভাবে অপমান করা।
প্রহরঃ ঠোঁটের কোনায় হাসি রেখে।
আসোল কথা কি জানো।

এই চোখ সব দেখতে পারে শুধু নিজের চোখের ময়লা বাদে।
আর ওই লোকটাকে অপমান করার কোনো ইচ্ছা আমার ছিলো না।
স্নিগ্ধাঃ আপনি যে ওই লোক টাকে বলছিলেন আপনি কতো টুকু ওদের সাহায্য করেন শুনি?
প্রহরঃ সময় পেলে করি। প্রতি বছর আমার বিজনেসের প্রফিটের ১০% করে অনাথাশ্রম। বৃদ্ধাশ্রমে আর এঞ্জিও গুলোতে যায়।
স্নিগ্ধাঃ আমি আসলে আপনাকে হার্ট করে কথা বলতে চাইনি। সরি।
প্রহরঃ ডোন্ট বি সিলি।

আমি ছোটো খাটো কথায় হার্ট হই না।
আমি যদি পারতাম অনাথাশ্রম আর বৃদ্ধাশ্রমকে একসাথে করে দিতাম।
তাহলে ওই বাচ্চারাও মা- বাবা আদর পেতো আর ওই বৃদ্ধ মা-বাবারাও নিজেদেরকে বোঝা মনে করতো না।
নিজেদের শেষ সময় ওই বাচ্চাদের সাথে ভালো ভাবে কাটাতে পারতো।
স্নিগ্ধাঃ আপনি সবার ব্যপারে এতো ভাবেন?
প্রহরঃ আগে অনেক ভাবতাম।

কিন্তু তুমি যে ভাবে আমার মনে ঘর করে নিয়েছো এখন তুমি আর নিশান ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারি না।
এখন আমার কাজ হচ্ছে তোমার আর তোমার স্বপ্নে মাঝে সিরি হওয়া।
স্নিগ্ধাঃ আর আপনার স্বপ্ন?
আই মিন আপনার কোনো স্বপ্ন বা ইচ্ছা নেই?

প্রহরঃ ছিলো। বেস্ট বিজন্যসমেন হওয়া। অনেক সফল হওয়া। কিন্তু তার জন্য যে আমাকে এতো বড় বিসর্জন দিতে হবে তা আমার জানা ছিলো না।
প্রহরের চোখের কোনায় পানি চলে এসেছে।
জানো ওইশিকে বিয়ের পর থেকে আমার অনেক কাজের চাপ বেড়ে গিয়েছিলো। তাই ওকে ঠিকমতো সময় দিয়ে পারতাম না আর এই ব্যপারে আমার কাছে কখনো কোনো অভিযোগ করেনি।

কাজ কাজ করতে করতে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় হারিয়ে ফেলেছি।
আমি আমার ওইশিকে হারিয়ে ফেলেছি।
স্নিগ্ধা প্রহরের কাছে গিয়ে ওকে জরিয়ে ধরেছে।
প্রহর আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। কান্না করে দিলো।
প্রহরঃ আমি তোমাদের কে হারাতে চাই না।

আমি তোমার আর আমার বাচ্চার সাথে অনেক সময় কাটাতে চাই।
আমার আর কিছু লাগবে না।
স্নিগ্ধাঃ এই লোকটার মনে এতো কষ্ট ছিলো কিন্তু কখনো আমাকে বুঝতে দেয়নি। (মনে মনে)
আজ প্রহরে সাথে স্নিগ্ধাও কান্না করে দিয়েছে। স্নিগ্ধা ভাবছে ছেলেরাও কাদ্দে পারে।
স্নিগ্ধা প্রহরের ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট চেপে ধরেছে।

প্রহর ও সুযোগ বুঝে স্নিগ্ধার কোমর ধরে একটু উচু করে নিয়েছে।
প্রহর স্নিগ্ধাকে নামিয়ে দিয়ে ওর কাছ থেকে একটু সরে গেলো।
স্নিগ্ধা আবার প্রহরের কাছে গিয়ে ওর কলার ধরলা।
স্নিগ্ধাঃ নামালেন কেনো? আমাকে নিজের যগ্য মনে হয় না?
এইবার প্রহর স্নিগ্ধাকে কুলে করে বেড রুমে নিয়ে এসেছে।

স্নিগ্ধা যতোখন প্রহরের কুলে ছিলো। ওর দিকে ড্যব ড্যব চোখে অপলক ভাবে তাকিয়েছিলো।
প্রহর স্নিগ্ধাকে বেডে নামিয়ে ওকে আবার আদর করা শুরু করলো।
প্রহরের প্রতিটা ছোয়া স্নিগ্ধার মনে শিহরণ যাগালো।
বলতে গেলে আজ স্নিগ্ধা প্রহরের মিশে গেলো।

সকালে

স্নিগ্ধা ঘুম থেকে উঠার পর থেকে প্রহরের সাথে চোখ মিলাতে পারছে না। অনেক লজ্জা লাগছে।
আর প্রহর সকাল থেকে ওর সামনে থেকে সরছে না। স্নিগ্ধা যেখানে যায় প্রহরও ওর পিছন পিছন যায়।
কারন স্নিগ্ধার লজ্জা দেখতে প্রহরের অনেক ভালো লাগছে।

এক পর্যায় প্রহর গিয়ে স্নিগ্ধাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো।
তারপর স্নিগ্ধার কানের কাছে মুখ নিয়ে আসতে করে বললো।
প্রহরঃ এখন থেকে আমি কান্টোল লেস হয়ে গিয়েছি। তুমি বাধা দিলেও মানবো না।
স্নিগ্ধাঃ আর বাধা দিলে?
প্রহরঃ আরো বেশি আদর করবো।
স্নিগ্ধাঃ (কি বলতে পারে তোমরা বলো? )


পর্ব ২৮ (শেষ)

স্নিগ্ধা লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে গিয়েছে।
স্নিগ্ধা প্রহরের দিকে ফিরে ওর বুকে মুখ লুকিয়ে নিলো।
প্রহরও স্নিগ্ধাকে জড়িয়ে ধরলো।

স্নিগ্ধাঃ না এইটা বৈধ ধর্ষণ না। কারন উনি আমার শরিল তার দখলে নেওয়ার আগে আমার মন কে তার দখলে নিয়েছে।
আসলে বিয়ে মানে বৈধ ধর্ষণ না। বিয়ে মানে হলো কারো অস্তিত্বের সাথে মিশে যাওয়ার বৈধতা। কারো লাইফে থাকার বৈধতা। কাউকে বেসামাল ভাবে ভালোবাসার বৈধতা।
বিয়ে মানে বৈধ প্রেম। বৈধ ধর্ষণ না।

স্নিগ্ধা প্রহরের বুকে নিজের নাক ঘসতে ঘসতে বললো।
আমার সাথে সব কিছু করার বৈধতা তোমার আছে।
স্নিগ্ধার এই কথা শুনে প্রহর আবার স্নিগ্ধাকে নিজের বুকের আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরেছে।
৩ বছর পরে

এখন স্নিগ্ধা ঢাকার একটি বড় প্রাইভেট হস্পিটালের ডাক্তার।
স্নিগ্ধার ফাইনাল পরিক্ষা দিয়েই ওরা ঢাকায় শিফট হয়ে গিয়েছে।
ডাক্তারির পাশাপাশি ডোমিস্টিক ভাইলেনের বিরূদ্ধে একটি এনজিও পরিচালনা করে।
এক জন্য পেপারে বেশ কয়ের বার ওর ছবি এসেছে।

(হস্পিটাল। বাসা। এনজিও সব এতো সহজে প্রহরকে ছাড়া স্নিগ্ধা মেনেজ করতে পারতো)
হস্পিটালে একটা ইমার্জেন্সি পেশেন্ট এসেছে। পেশেন্টের খুব খারাপ অবস্থা।
স্নিগ্ধা তারাতারি তাকে এটেন্ট করতে গেলো।

পেশেন্টা আর কেউ না স্নিগ্ধার ফুপি (নিলের মা)
প্রায় ২ সপ্তাহ তিনি হস্পিটালে ছিলো। আর এই কয়েক দিন স্নিগ্ধা (as a doctor) তার ফুপির অনেক সেবা করলো।
আজকে ফুপিকে রিলিজ দিয়ে দিবে। তিনি এখন অনেক টা সুস্থ।
ফুপি যাওয়ার আগে একজন নার্সকে দিয়ে স্নিগ্ধাকে ডেকে আনলো।
স্নিগ্ধা তার সামনে যাওয়া মাত্র স্নিগ্ধার দুই হাত ধরে তার পাশে বসালো।
স্নিগ্ধাঃ কিছু লাগবে ফুপি?

ফুপি কিছু না বলে স্নিগ্ধাকে জড়িয়ে কান্না করে দিলো।
ফুপিঃ আমাকে মাফ করে দিও মা। আমি সব কিছুর কালপিট। আমার জন্য তোর কতো কষ্ট হয়েছে।
স্নিগ্ধাঃ না ফুপি। ওই সব আমার ভাগ্যে ছিলো। প্লিয তুমি কান্না করো না।
ফুপিঃ তুই যানিস নিলের তোমার পড়াশুনা নিয়ে কোনো আপত্তি ছিলো না।
আমি ওকে মানা করেছিলাম।

আর আজ আল্লাহ রহমতে আর তোর উসিল্লায় আমি নতুন জীবন পেলাম।
আমি তোমার সেবার যোগ্য নই।
স্নিগ্ধাঃ ফুপি আপনি আপনার ভুল বুঝতে পেরেছে তাই যথেষ্ট।
আর আপনি আমার মায়ের মতো আপনি কেনো আমার সেবার যোগ্য হবেন না।
আপনার সেবা করা আমার দায়িত্ব।

আর আপনি যদি নিলকে আমার পড়াশুনার জন্য নিষেধ না করতে তা হলে হয়তো আজ আমি ডাক্তার হতে পারতাম না।
এর মধ্যে প্রহর আর নিশান তার কেবিনে আসলো (আসলে তারা স্নিগ্ধার কাছে এসেছিলো। নার্স থেকে জানতে পারলো স্নিগ্ধা এইখানে। তাই চলে এলো)
নিশানকে দেখে ফুপি ওকে তার কাছে নেওয়ার জন্য হাত বারালো।
নিশান তার কাছে না গিয়ে প্রহরের দিকে তাকালো।
প্রহরঃ তোমার দাদুমনি হয় পাপা।
তার কাছে যাও

(৩৫ বছর আগের কথা। বাচ্চা মানুষে মনে না থাকাই সাভাবিক)
নিশান তার কাছে গিয়ে তাকে সালাম দিলো।
ফুপিঃ আমার ছেলেকে আমি একজন আদর্শ মানুষ বানাতে পারিনি।
কিন্তু আমি জানি তুমি ঠিক আমার নাতিটাকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবা।
প্রহর আর স্নিগ্ধা ফুপা-ফুপিকে নিচে গাড়ি পর্যন্ত দিয়ে আসলো।
ফুপি গাড়িতে উঠার আগে বললো।

ফুপিঃ জামাইকে নিয়ে নিজের ফুপা-ফুপির বাড়িতে আসিস মা। তুই আসলে আমি খুব খুশি হবো।
এই কথা বলে স্নিগ্ধার কপালে চুমু দেয় এবং প্রহরের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
স্নিগ্ধা তাদের যাওয়া দেখলো।
প্রহরঃ কি ভাবছো জান?
স্নিগ্ধাঃ অতিত্বের সাথে অভিযোগ করার শেষ কারনটাও আজ ইতি টানলো।
নিজেকে খুব হাল্কা লাগছে।
স্নিগ্ধা ওদের সাথে নিজের বাসায় বাসায় চলে আসলো।
কিছু দিন পরে

নিশানঃ জান (স্নিগ্ধা) আমার শু কোথায়? (উনার বাপি জান বলে তাই উনিও জান বলে ডাকে)
প্রহরঃ জান আমার টাই কোথায়?
স্নিগ্ধা তোমরা কি আমাকে শান্তি দিবানা?
প্রহর। নিশান এক সাথে বলে উঠল। নাাাাা

স্নিগ্ধা রুমে গিয়ে দেখে প্রহর নিশানকে জুতা পরিয়ে দিয়ে রেডি করে দিয়েছে।
আর নিজে টাইটা না বেধে গলায় জুলিয়ে রেখেছে।
প্রহরঃ পাপা ড্রইং রুমে গিয়ে টিভি দেখো। আমরা আসছি।
নিশানঃ ওকে বাপি।

নিশান জাওয়ার পরে। প্রহর স্নিগ্ধাকে টান দিয়ে নিজের একদম কাছে নিয়ে এসেছে।
স্নিগ্ধা প্রহরের গলায় দুই হাত বেধে রেখেছে।
স্নিগ্ধাঃ তো মিস্টার আপনে না বলে টাই খুজে পাচ্ছেন না।
প্রহরঃ টাই পেয়েছি কিন্তু টাই পরিয়ে দেওয়ার লক্ষীকে কাছে পাচ্ছিলাম না।
(বিয়ের পর থেকে সব সময় স্নিগ্ধা প্রহরকে টাই বেধে দেয়)

স্নিগ্ধা প্রহরকে টাই পরিয়ে দিতে না দিতেই প্রহর স্নিগ্ধার কপালে একটা কিস করে দিলো।
প্রহর ওকে আয়নার সামনে নিয়ে দারা করিয়ে পিছন থেকে ওকে জরিয়ে ধরলো।
প্রহরঃ আজকে আমার জানটাকে একদম সাদা পরি মতো লাগছে।
(স্নিগ্ধা পরনে একটা গোল্ডেন পারের সাদা শাড়ি। কপালে সাদা স্টোনের টিপ আর ডায়মন্ড কার্ডের জুয়েলারি)
স্নিগ্ধাঃ আমাকে কখন দেখতে খারাপ লাগে শুনি?

প্রহরঃ কখনো না। মাই জান লুক্স অলওয়েজ প্রিটি।
(এই বলে প্রহর স্নিগ্ধার ঘারে মুখ ডুবিয়ে দিলো)
স্নিগ্ধাঃ চলো। আমাদের লেট হয়ে যাচ্ছে।
(আজ ভাবির বেবি সাওয়ার। প্রোগ্রাম টা অনেক বড় করে সেন্টারে হচ্ছে। –রোদ চায় তাই
বৌ-ভাতের দিন মালা বদল। পার্টির মতো করে বেবি সাওয়ার করা এই সব আজব জীনিস ওর মাথায় আসে)
ফাংশোন শেষ করে ওরা বাসায় আসলো।

পরের দিন…

প্রহর অফিসের জন্য রেডি হচ্ছে। স্নিগ্ধা গিয়ে ওকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো।
স্নিগ্ধাঃ তোমার মনে হয় না নিশানে সাথে খেলায় জন্য একজন সাথি দরকার?
প্রহরঃ নিশানের মা যদি এর জন্য রেডি থাকে তাহলে আজ থেকে না না এখন থেকে মিশোন শুরু করি।
স্নিগ্ধাঃ জী না। এখন দুষ্টুমি না।

নিশানের স্কুলের জন্য লেট হয়ে যাবে। ও কখন থেকে রেডি হয়ে বসে আছে।
ড্রইং রুমে গিয়ে দেখে নিশান টিভিতে চুচু ডাইপার্সের এড দেখছে।
স্নিগ্ধাকে দেখেই ওর কাছে এসে বলতে লাগলো।
নিশানঃ জান আমার এই রকম বেবি লাগবে।
স্নিগ্ধা আর প্রহর একে ওপরের দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো।
প্রহর নিশান কে কুলে নিয়ে।

প্রহরঃ একটা না পাপা দুইটা বেবি একসাথে নিয়ে আসবো।
ওকে।

নিশানঃ Thank you bapi
স্নিগ্ধা প্রহরের কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে। (এখন তাদের সুখের সংসারে আরেকটা মেম্বার আনার পালা)

বিয়ে মানে বৈধ ধর্ষণ না বিয়ে মানে বৈধ প্রেম।

লেখা – সামাইরা সাহার

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “বৈধ ধর্ষন – ফুলশয্যার রাতে” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – জাস্ট ম্যারেড – লোভনীয় বিয়ের গল্প ২০২১

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *