অব্যক্ত কিছু কথা – valobasar gopon kotha

অব্যক্ত কিছু কথা – valobasar gopon kotha: ভালোবাসি রুদ্ধ, ভীষণ ভালোবাসি আমি তোমায়। আই প্রমিস আর কোনদিন তোমায় ভুল বুঝে ছেড়ে যাবো না।


পর্ব ১

  • আজকে রাতে তুমি আর আমি এক ঘরেই থাকবো রুদ্ধ। ঠিক আছে?
    কথাটা শুনতেই আমার স্বামী অনিরুদ্ধ আর আমার বোন নিতির মুখটা কেমন জানো ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। আর তা দেখে আমার মনে যা সন্দেহ ছিলো তা দূর হয়ে গেলো। আমি মনে মনেই একটা মিথ্যে হাসি দিলাম আর অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন আমার স্বামী আমার বোনের সাথে থাকার জন্য একটা মিথ্যে বাহানা দিয়ে আমার কথার বিরোধ করবে। ভাবতে না ভাবতেই রুদ্ধ বলে উঠলো।
  • নাহ রিতি, তুমি তো জানোই আমার অফিসের কাজ শেষ করতে হবে তাই আমি স্টাডি রুমেই থাকবো। তোমার দরকার হলে আমাকে ডেকে নিয়ো।
  • এই দু-দিন ধরে তো স্টাডি রুমেই থাকছো তাই বললাম,ঠিক ভাবে না ঘুমোলে শরীর খারাপ করবে।
  • না না, দি। জিজুর কিচ্ছু হবে না। কাজ সেরেই ঘুমোতে চলে যাবে। আর কালকে তো ছুটির দিনই আছে। চিন্তা করিস না তুই গিয়ে শুয়ে পর।
    আমি আমার বোনের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে জিজ্ঞেস করলাম।
  • তুই ঘুমাবি না নিতি?
  • আব, না। আমার অ্যাকচুয়লী হোমওয়ার্ক আছে তো সেটা কম্পলীট করেই ঘুমাবো। আমি উঠলাম।
    নিতি ওঠার সময় রুদ্ধ কে চোখ টিপ দিয়ে সামান্য হাসলো আর রুদ্ধও নিতির চোখে চোখ রেখে এক গাল হাসলো যা আমার নজরের আড়াল হলো না। আমি দেখেও কিছু বললাম না কারণ আজ আমি পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছি। খাওয়া শেষে রুদ্ধ নিজের স্টাডি রুমে চলে গেলো। আর আমি বিছানায় বসে ভাবতে লাগলাম পুরোনো কথা।

খুব ভালোই ছিলাম আমি আজ থেকে ৪ বছর আগে। পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে জয়েন করেছিলাম। অফিসের কাজে কয়েকদিনে বেশ পারদর্শী হয়ে উঠেছিলাম তাই অফিসের ম্যানেজার আমায় একদিন ডেকে বলেন আমাকে নাকি বস নিজের পার্সোনাল অ্যাসিস্টেন্ট করবেন বলে ঘোষণা করেছেন। প্রমোশন পেয়ে আমি তো বেশ খুশি হয়েছিলাম আর কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করে দিয়েছিলাম কারণ আমি তো জানতাম না যে এই সিদ্ধান্তের জন্য আমায় তারই ছেলেকে বিয়ে করতে হবে।

পুরোনো কথা মনে পরতেই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরলো। দরজা খোলার শব্দ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে চোখ বুজে শুয়ে রইলাম। দেখলাম রুদ্ধ গুটিগুটি পায়ে নিজের ফোন নিয়ে বেরিয়ে গেলো। ও বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই আমি ঘর থেকে বেরিয়ে ব্যালকনির রেলিংয়ে দাঁড়ালাম আর দেখলাম, রুদ্ধ আর নিতি একসাথে গাড়িতে বসে বেরিয়ে গেলো।

রাত এখন ১টা বাজে। সবটা আন্দাজ করে মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলাম।

  • তোমাকে বলেছিলাম না তুমি পারবে না আমার ছেলেকে বেঁধে রাখতে। যে মেয়ের সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা নেই সে আবার নিজের স্বামী কে ধরে রাখতে পারে নাকি? আমার তো প্রথম থেকেই নিতি কে পছন্দ ছিলো কিন্তু তোমার শ্বশুরমশাইয়ের জন্য তোমাকে বউ করে আনতে হয়েছে। যাক, এইবার আমার ইচ্ছে আমার ছেলে পুরণ করবে।

শাশুড়ি মা একনাগাড়ে কথাগুলো বলে চলে গেলেন। আমি কোনো উত্তর দিলাম না কারণ আজ প্রতিবাদ করার ইচ্ছেটুকুই নেই। চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু মুছে আমি স্টাডি টেবিলে গিয়ে বসলাম। আজ নিজের মনের কিছু অব্যক্ত কথা, ব্যক্ত করতে চাই।
পরেরদিন সকাল।

ঘুম থেকে উঠে দেখি রুদ্ধ আর নিতি এখনও ফেরেনি। ফোন করে অফিসে খোঁজ নিয়ে জানলাম রুদ্ধ সেখানে নেই। বাধ্য হয়ে রুদ্ধের ফোনে ফোন করলেও ফোন সুইচ অফ এলো। আর এদিকে নিতির ফোন নট রিচেবেল। শাশুড়ি মা কে জানাতে তিনি বললেন, আমি জানো ওদের মধ্যে না আসি।

সকাল গিয়ে, দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেলো ওদের দুজনের কোনো খবর নেই। ঘরে বসে আছি সে সময় আমার এক বান্ধবী আমায় কল দিলো,

  • রিতি, জামাইবাবু কে নিতির সাথে কাজী অফিসে ঢুকতে দেখলাম। কি ব্যাপার রে?

কথাটা শোনার সাথে সাথেই ফোনটা হাত থেকে পরে গেলো। ওপাশ থেকে শুধু “হ্যালো, হ্যালো” ভেসে আসছে। আমি ফোন তুলে কল টা কেটে নিজের জামাকাপড় গুছিয়ে নিলাম। আর এক মুহুর্ত নয় এই বাড়িতে। আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা ক্যাব বুক করে উঠে পরতেই চোখে পরলো, রুদ্ধের গাড়ি। সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইভার কে বললাম জানো তাড়াতাড়ি গাড়ি চালায়।

একটাই জায়গা আছে আমার যাওয়ার মতো, সেখানেই যাই আগে তারপর ভবিষ্যতের কথা ভাববো। যাকে আকড়ে ধরে বাঁচবো ভেবেছিলাম আজ সেই অন্যকাওর এটা ভাবতেই মনের ভিতরটা ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।

  • রুদ্ধ, নিতি! কোথায় ছিলে তোমরা এতক্ষণ?

রুদ্ধ আর নিতি একে অপরের দিকে তাকিয়ে কোনো উত্তর না দিয়েই যে যার কাজে চলে গেলো। নিতি গেলো রুদ্ধের ঘরে আর রুদ্ধ গেলো স্টাডি রুমে। যা রুদ্ধের মায়ের ভালো লাগলো না।
রুদ্ধ স্টাডি রুমে এসে লাইট অন করে কোমরে হাত দিয়ে আপন মনে হাসতে লাগলো।

  • আজ সেই দিন যেইদিনের অপেক্ষা আমি এতগুলো দিন ধরে করছিলাম।

অনিরুদ্ধ নিজের হাসি চেপে রেখে স্টাডি টেবিলের উপর একটা কাগজ দেখতে পেলো। সেদিকে এগিয়ে কাগজ টা হাতে তুলে নিলো, ভ্রুকুটি করে পড়া শুরু করলো।


পর্ব ২

অনিরুদ্ধ নিজের হাসি চেপে রেখে স্টাডি টেবিলের উপর একটা কাগজ দেখতে পেলো। সেদিকে এগিয়ে কাগজ টা হাতে তুলে নিলো, ভ্রুকুটি করে পড়া শুরু করলো।

অনিরুদ্ধ,
হ্যাঁ আজ শুধু অনিরুদ্ধ লিখলাম কারণ এখন থেকে তুমি না আমার প্রিয় আর নাই আমার অধিকার আছে তোমায় রুদ্ধ বলে ডাকার। আমাদের সম্পর্কের প্রায় এক বছর হতে চললো কিন্তু তাও কোনো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক আমাদের মধ্যে ছিলো না। সম্পর্কটা ছিলো বন্ধুত্বের, কর্তব্যের।

তাই কোনদিন মুখ ফুটে নিজের মনের কথা তোমার কাছে ব্যক্ত করতে পারিনি, তা অব্যক্ত রয়ে গেছে। আজ এই ৩ পাতার চিঠিতে নিজের কিছু অব্যক্ত কথা, আমাদের অতীত তোমাকে জানাতে চাই?

~ ফ্লাশব্যাক ~
সেদিন অফিসে আমি আর আমার অফিসের বস আরমান চৌধুরি ওরফে আমার স্যার ফাঁকা সময়ে বসেছিলাম। স্যার আমায় ডেকে বললেন,

  • রিতি মা, তুমি তো জানোই আমি তোমাকে কতটা স্নেহ করি। তোমার গুন আমায় মুগ্ধ করে সবসময়।
  • হ্যাঁ স্যার। আমি জানি, তাই জন্যেই তো আমি আজ আপনার পি.এ. হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।
  • তুমি আমার একটা কথা রাখবে মা। অনুরোধ বলতে পারো।
  • বলুন, আমি নিশ্চই রাখার চেষ্টা করবো।
    স্যার একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
  • আমার ছেলের বউমা হবে? ওর নিজের মা নেই। আমি দ্বিতীয় বার যাকে বিয়ে করেছি অর্থাৎ ওর সৎ মা ওকে ভালোবাসে না। ভালোবাসার অভিনয় করে। কিন্তু ও সেটা বোঝে না, মাকে অন্ধবিশ্বাস করে। ওর মা চায় ওনার পছন্দ করা একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে সব সম্পত্তি নিজের নামে করে নিতে কারণ আমার সব সম্পত্তি আমার একমাত্র ছেলে অনিরুদ্ধের নামেই করে দিয়েছি। তুমি যদি ওকে বিয়ে করো তাহলে…
    আমি সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে একনাগাড়ে বলে ফেললাম,
  • এটা হয় না স্যার। আমি একজন গরীব ঘরের মেয়ে। আমারও নিজের মা নেই কিন্তু আমি ভাগ্য করে সৎ মা পেয়েছি যে সবসময় আমাকে ভালোবেসেছে। আদর দিয়ে আগলে বড়ো করেছে নিজের মেয়ের সাথে। আমি তার মনে কষ্ট দিতে পারবো না স্যার। ক্ষমা করবেন আমায়।
  • তুমি ভুল বুঝছো রিতি মা। আমি সত্যি তোমাকে স-সন্মানে নিজের ছেলের বউ করে নিয়ে যাবো।
  • আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে স্যার।

আমার কথা শুনে স্যারের মুখে হতাশার ছাঁপ পরে গেলো। পুরোপুরি চুপ করে গেলেন উনি। আমি ওনাকে বললাম,

  • আমার মা আমার জন্য যে পাত্র ঠিক করেছে আমি তাকেই বিয়ে করবো। এমনটাই কথা দিয়েছি আমি মা কে। তাই এই কথার খেলাফ আমি করতে পারবো না স্যার, এতে আমার মা কষ্ট পাবে। মা কোনদিন আমায় আমার বোন নিতির থেকে কম ভালোবাসেনি বরং বেশি ভালোবেসেছে। আমি নিরুপায় স্যার। আপনি ঠিক আপনার ছেলের যোগ্য বউ খুঁজে পাবেন, দেখবেন। আজ আসি স্যার।
    আমি আমার ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলে স্যার আমায় পিছন থেকে ডেকে বললেন,
  • তুমি কি চাকরি ছেড়ে দেবে তাহলে? দেখো, এমনটা করো না। আমি জানতাম না তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, জানলে…
    আমি স্যার কে থামিয়ে বললাম,
  • আমি চাকরিটা ছাড়বো না স্যার। আপনি চিন্তা করবেন না।
    কথাটা বলেই বেরিয়ে এলাম। স্যার কে দেখে ভালো লাগছিল না। উনি সত্যি নিরাশ হয়েছেন কিন্তু আমি কি করতে পারি, আমি তো নিরুপায়।
    এর কয়েকদিন পরেই আমাদের অফিসে স্যারের ছেলে আসলো। নাম অনিরুদ্ধ চৌধুরি। উনি বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে এসেছেন তা দেখে বোঝা গেলেও আচরণে বোঝা যায় না। খুব শান্ত-শিষ্ট, নম্র-ভদ্র একজন মানুষ।

আমার সাথে পরিচয় হতে না হতেই আমাকে এক মুহূর্তে বন্ধু বানিয়ে ফেললেন। বেশ অবাক করেছিল এই বিষয়টা আমায়। এরপর দেখতে দেখতে আমার বিয়ের দিন চলে এলো।
বিয়ের দিন, আমি বসে ছিলাম ঘরে এমন সময় নিতি এসে খবর দিলো।

  • আপু, তোমার বর আসেনি। তার নাকি বিয়েতে মত ছিলো না। ফ্লাইট ধরে নাকি বিদেশ চলে গেছে সে।
    কথাটা শুনে যে কি প্রতিক্রিয়া করবো ভেবে পাচ্ছি না। অশ্রুসিক্ত চোখ নিয়ে স্থির হয়ে বসে আছি সে সময় মা আমার পাশে এসে বসলো।
  • দেখ মা, আমি জানতাম না ছেলেটা ভালো নয়। আজ বিয়েতে আসেনি তাই জানতে পারলাম অনেক কথা।

অনেকেই খোঁজ খবর নিয়ে বলছে ছেলে নাকি নেশা করতো, রাতে ঠিক করে ফিরত না। আমি তো অতো খোঁজ খবর নিতে পারিনি তাই জানতে পারিনি। তোর যদি আজ বিয়েটা না হয় তাহলে আমদের সন্মানটা ধুলোয় মিশে যাবে।

  • তুমি কি বলতে চাইছো মা?
  • তোর অফিসের স্যারের ছেলেকে বিয়ে করেনে। তোর স্যার নিজে এসে আমায় প্রস্তাব দিয়েছেন। আল্লাহ হয়তো এটাই চায় মা। আমি জানি ওদের সাথে আমাদের অনেক তফাত তবুও উনি যখন নিজে আমাদের এই দুঃসময়ে পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন তখন আমি চাই না ওনাকে ফিরিয়ে দিতে।
  • তুমি যা বলবে মা। আমি তো তোমার মুখের উপর কিছু বলিনি কোনদিন।
    মায়ের কথামতো সেদিন আমার বিয়ে স্যারের ছেলে অনিরুদ্ধর সাথে হয়ে গেলো। আমি বাসর রাতে নিজে ওনাকে বলেছিলাম যে আমাদের সম্পর্কটা জানো বন্ধুত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে আর উনিও রাজি হয়েছিলেন।

~ ফ্লাশব্যাক এন্ড ~

বিশ্বাস করো অনিরুদ্ধ, আমি ভাবিনি আমাদের এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক কোনদিন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হয়ে উঠবে না। খুব করে চেষ্টা করেছিলাম তোমার স্ত্রী হয়ে ওঠার কিন্তু পরে বুঝলাম সেই জায়গাটা যে অন্যকাওর। আর সেই ব্যক্তিটি যে আমার বোন নিতি তা অনেক পরে জানতে পারলাম। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো তোমাদের মাঝে কাঁটা হয়ে থাকার জন্য।

জানতে পারার সঙ্গে সঙ্গেই আমি চলে যাচ্ছি, কখনো ফিরে আসবো না তোমাদের জীবনে। ভালো থেকো আর আমার বোনকে ভালো রেখো ওকে আমি আর মা মিলে অনেক আদরে বড়ো করেছি।
ইতি তোমার বান্ধবী।
রিতি

  • অনি ভাইয়া আপু তো ঘরে নেই। আমি কোথাও পেলাম না আপু কে।
    চিঠিটা শেষ করার আগেই পিছন থেকে অনিরুদ্ধ কে ডাকল নিতি। অনিরুদ্ধ পিছন ফিরে নিতির দিকে তাকাতেই নিতি ঘাবড়ে গেলো কারণ অনিরুদ্ধের চোখটা লাল হয়ে গেছে। নিতি সঙ্গে সঙ্গে অনিরুদ্ধের কাছে এসে বললো,
  • নিতি কি হয়েছে তোমার?
  • অনেক সুবিধা হয়েছে আমার। তোমার আপু কে কেন পাওনি তা এইটা পড়লেই বুঝবে। নাও, পড়ো।
    অনিরুদ্ধ চিঠিটা নিতির কাছে এগিয়ে দিলো। নিতি চিঠিটা পুরো পড়ে অনিরুদ্ধের দিকে তাকিয়ে বললো,
  • তুমি এতে খুশি হয়েছ ভাইয়া?
  • হ্যাঁ, খুব খুশি হয়েছি আমি। আমার খুশির জন্যেই তো কাজটা করেছে তোমার আপু। ফাইনালি আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো, ও আমাদের মাঝে পথের কাঁটা ছিলো তাই তো নিজের ইচ্ছেতে সরে গেছে। আর সরেই যখন গেছে বিয়েটা সেরে ফেলা উচিত আমাদের।
  • আপু তোমাকে ভালোবাসত সেটা এই চিঠি পড়েই বোঝা যাচ্ছে।
  • কিন্তু আমি তো ভালোবাসতাম না আর না বাসি। তোমার আপু কে শুধু বান্ধবী হিসেবে দেখেছি আমি, আমার জীবনে স্ত্রীর জায়গাটা অন্যকাওর মানে তোমার। আমি তো তোমাকে ভালোবাসি নিতি।
    কথাগুলো বলে অনিরুদ্ধ বেরিয়ে গেলো আর নিতি চুপচাপ চিঠিটার দিকে তাকিয়ে রইলো।

অন্যদিকে,

  • তুই এভাবে হঠাৎ করে দেশ ছেড়ে যেতে চাইছিস কেন রিতি?
  • দেখ তুই শুধু আমকে হেল্পটা করেদে তাহলেই হবে। ওখানে গিয়ে আমি চাকরি খুঁজে নেবো। তুই জাস্ট যাওয়ার ব্যবস্থাটা করেদে, প্লিজ রাইসা।
    রাইসা আমার হাত ধরে আশ্বাস দিয়ে বললো।
  • তোকে কোনো চিন্তা করতে হবে না রিতি। আমার কাজিন থাকে অস্ট্রেলিয়া তে আর ওর নিজের অফিস আছে। সেখানেই তোকে একটা জব দিয়ে দেবে ও। তুই তো ভালো ভাবেই জানিস ওখানে জব করলে কোয়াটার দেওয়া হয় তাই অসুবিধা হবে না।
  • থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ সো মাচ রাইসা।
  • আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। আর প্লিজ ওখানে গিয়ে আমায় আবার ভুলে যাস না।
  • একদমই না।
    রাইসা হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে আমি ব্যালকনি তে গিয়ে দাঁড়াই। রাত ১১:৫৫ বাজে এখন। বেশ শীত পরেছে। আকাশের চাঁদের দিকে তাকাতেই চোখের সামনে রুদ্ধর মুখটা ভেসে উঠলো আর নিজের অজান্তেই চোখের কোণ দিয়ে তরল কিছু বেয়ে পরতে লাগলো। কষ্ট হচ্ছে, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আজ আমার। কিন্তু আমি চাইছি কাঁদতে। শুধু চাইছি আমার ভালোবাসার মানুষ আর আমার বোন জানো ভালো থাকে, খুব ভালো থাকে।

১ মাস পর,
আজ আমার অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ফ্লাইট। এই এক মাস অর্থাৎ যতদিন পাসপোর্ট আর ভিজা না এসেছে ততদিন আমি এই ঘরের থেকে এক পা বাইরে রাখিনি। আসলে আমি চাইনি বাইরের আলো দেখতে। এই এক মাসে সকালে নিজেকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছি কিন্তু রাত হলেই ভেঙ্গে পড়েছি। কারণ আমি ভালোবেসেছিলাম, যা বলা হয়নি। যা রয়ে গেছে “অব্যক্ত কিছু কথা” হিসেবে।

গাড়িতে বসে এসব কথা ভাবতে ভাবতে জানলার বাইরে তাকালে হঠাৎই আমার চোখ স্থির হয়ে যায় কিছুক্ষণের জন্য একটি মানুষের উপর।

  • না, না। আমি ভুল দেখলাম হয়তো। হ্যাঁ ভুলই দেখেছি। অনিরুদ্ধ কীভাবে এখানে এরকম অবস্থায় থাকতে পারে? ওই লোকটার দাঁড়ি, এলোমেলো, উস্কখুস্কো চুল আছে যা অনিরুদ্ধর কোনোদিন হতে পারে না। ওর ড্রেসিং সেন্স, পার্সোনালিটি অনেক ব্রান্ডেড। এতো অগোছালো কি করে হবে ও? আমারই ভুল হয়েছে।

তাও মনকে মানাতে পারলাম না আর গাড়ি দাঁড় করাতে বলে যেখানে দেখেছিলাম সে জায়গায় গেলাম। লোকটি হেঁটে যাচ্ছিল তাই পিছু করতে লাগলাম। উনি দাঁড়ালে আমিও আড়াল হয়ে দাঁড়ালাম।

  • অনিরুদ্ধ! হ্যাঁ এটা তো অনিরুদ্ধ। ওর হাঁটাচল যে খুব ভালোভাবে চিনি আমি।

কথা শেষ করে সামনে তাকাতেই দেখলাম নিতি ওর দিকে এগিয়ে এলো। অনিরুদ্ধও হেসে নিতির কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো আর আলতো করে জড়িয়ে ধরলো। এরপর ওরা একটা পার্কের ভিতর চলে গেলো। এতোকিছু দেখার পরেও আমি বেহায়ার মতো ওদের পিছনে গেলাম। গিয়ে দেখলাম নিতি অনিরুদ্ধর কাঁধে হাত রেখে বসে আছে, কিছুক্ষণ পর ও নিজের হাতের উপর কপাল ঠেকালো। আর সহ্য হলো না আমার এসব চোখ মুছে সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এসে গাড়িতে করে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

চার বছর পর,
আজ আমি বিডির মাটিতে পা রাখলাম দীর্ঘ চার বছর পর। আজ কোনো ভয় নেই আমার, না আছে কোনো দুঃখ কষ্ট। এখন আমি সামলে নিয়েছি নিজেকে পুরোপুরি। অফিসের কাজের জন্যেই বিডি তে আসা। এখন গন্তব্য গ্রান্ডহোটেল, যেখানে আমাদের ডিল সাইন করতে হবে।

আমি হোটেলের রুমে ওয়েট করছি এমন সময় দরজা খোলার শব্দ পেলাম আর পিছন ফিরে তাকালাম তাকে স্বাগত জানানোর জন্য। কিন্তু এ কি? এটা কি করে সম্ভব? ব্যক্তিটিকে দেখে কোনো কিছু বলার ভাষা পাচ্ছিলাম না। অস্ফুট স্বরে বললাম,

  • ত..তুই?

পর্ব ৩

  • ত..তুই?
    আমার চোখের সামনে যে আমার ছোট বোন নিতি দাঁড়িয়ে আছে এটা মানতেই পারছি না আমি। চার বছর পর, ফিরে এসেই যে অতীতের সম্মুখীন হতে হবে ভাবিনি কোনদিন। যতই মুখে বলি নিজেকে শক্ত করেছি কিন্তু নিজের অতীত যখন চোখের সামনে আসে তখন সেই ব্যক্তিটিই বোঝে তার ভিতরে কি চলে। চোখ ছলছল করলেও আমি সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলাম। কিন্তু নিতি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে আমাকে দেখে ঠিক একটা মূর্তির ন্যায়। আমি মুখে জোর করে হাসি ফুটিয়ে নিতির কাছে এগিয়ে নিতির বাহু তে হাত দিয়ে বললাম,
  • কেমন আছ…

কথা শেষ করার আগেই নিতি ঝটকা মেরে আমার হাত সরিয়ে দিলো। নিতির মুখে রাগের ছাঁপ পরে গেলো মুহূর্তের মধ্যে। নিতি ঝট করে আমার দু-বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে বলতে শুরু করলো,

  • কেন ফিরে এসেছিস তুই এখন? সব কিছু শেষ করে তোর শান্তি হয়নি? বল কেন ফিরে এসেছিস? এটুকু বিশ্বাস করতে পারিসনি নিজের ভালোবাসার মানুষটার উপর?

নিতি আমার বাহু ছেড়ে তাচ্ছিল্য হেসে বললো,

  • আমিও বা কাকে বলছি। যে নিজের বোন কে বিশ্বাস করতে পারে না সে ভালোবাসার মানুষ কে কি করে বিশ্বাস করবে? ও আমি তো তোর সৎ বোন তাই না? আমি তো ভুলেই গেছিলাম।

আমি নিজের জড়তা কাটিয়ে বললাম,

  • নিতি তুই এসব কি বলছিস আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তুই কি আমি চলে গেছিলাম বলে রাগ করেছিস? তাই এসব বলছিস?
  • তুই একজনের জীবন নিয়ে নিয়েছিস আপু!

নিতি খুব শান্ত স্বরে কথাটা বললো যা আমার বুকে তীরের মতো এসে বিঁধলো।

  • জ..জীবন ন..নিয়ে নিয়েছি ম..মানে? কার জীবন নিয়েছি? কি বলতে চাইছিস তুই?
  • অনিরুদ্ধ চৌধুরির!
  • নিতিইইইই!
    নিতির কথা শুনে আমার মাথাটা গরম হয়ে গেলো তবুও নিজেকে শান্ত করে বললাম,
  • বাজে কথা না বলে বল কেমন আছিস তোরা? ভালো আছিস তো? অনিরুদ্ধ নিশ্চয় তোকে খুব ভালোবাসে তাই ন।
  • অনিরুদ্ধ ভাইয়া তোকে ভালোবাসে আপু! আর কবে বুঝবি তুই? বল? আর কবে বুঝবি? কি করলে আমি তোকে বোঝাতে পারবো এটা?
    আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই নিতি আমার বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে চিৎকার করে কথাগুলো বললো যা শুনে আমি কি প্রতিক্রিয়া দেবো বুঝতে পারছি না। নিতি আবার বলতে শুরু করলো।
  • অবাক লাগছে তাই না? ভাবছিস এ কি করে সম্ভব? এটাই বাস্তবতা আপু। খুব সামান্য একটা কারণে তুই আমাদের ছেড়ে চলে গেছিলি। অনিরুদ্ধ ভাইয়া আজীবন তোকেই ভালোবেসেছে। তাও তোর জানার আগে থেকে অর্থাৎ তুই তখন জানতিসও না একজন চুপিসারে তোকে ভালোবাসে। জানতাম শুধু আমি।

নিতির কথাগুলো শুনে আমি ধপ করে সোফায় বসে পরলাম। নিতি আমার পাশে এসে বললো,

  • তুই নিজের মনের কথা চিঠির দ্বারা ব্যক্ত করে গেলি কিন্তু অনিরুদ্ধ ভাইয়ার মনের কথা? তা যে “অব্যক্ত কিছু কথা” হিসেবেই রয়ে গেলো। শুনতে চাস অনিরুদ্ধ ভাইয়া কবে থেকে, কি করে তোকে ভালোবাসলো?

আমি শুধু হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়লাম, তা দেখে নিতি বলতে শুরু করলো।

  • যখন তুই ভার্সিটিতে অনার্সের জন্য ভর্তি হযেছিলিস আর আমি কলেজে ইন্টারের জন্য তখনকার ঘটনা এটা। আমি একদিন ফেসবুক করছিলাম ঠিক সে সময় একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এলো আমার কাছে, একটা সুন্দর দেখতে ছেলের। ভেবেছিলাম ফেক, কিন্তু তবুও এক্সেপ্ট করলাম। তারপর সে নিজে মেসেজ করায় কথাও হলো আমাদের। এরপর বেশ কিছুদিন পর আমি রাতে বসে ফোন ঘাটছিলাম তখন আমার কাছে একটা ইন্টারন্যাশনল নাম্বার থেকে কল এলো।
    ~ফ্লাশব্যাক~
  • হ্যালো!
  • নিতি বলছো?
  • হ্যাঁ বলছি, কিন্তু আপনি কে বলছেন?
  • আমি অনিরুদ্ধ! অনিরুদ্ধ চৌধুরি। তোমার ফেসবুক ফ্রেন্ড। আশা করি চিনতে পেরেছো?
  • আব, হ্যাঁ কিন্তু আপনি আমার নাম্বার কি করে পেলেন?
  • সেটা নাহয় পরে বলবো। তার আগে আমি যেটা বলার জন্যে তোমাকে ফোন করেছি সেটা বলি?
  • বলুন।
  • আমি তোমার আপু কে ভালোবাসি।
  • কিইইইই? এসব কি বলছেন আপনি? মাথা খারাপ হয়ে গেছে আপনার?
  • হ্যাঁ, তোমার আপুকে দেখার পর থেকে আমার মাথাটা সত্যি খারাপ হয়ে গেছে। সারাক্ষণ শুধু তার কথাই ভাবছি, তাকেই চোখের সামনে দেখছি। আমি জানি তুমি এবার ভাববে যে ছেলেটা মিথ্যে কথা বলছে তাই বলছি, আমি বিডি আসছি ১ সপ্তাহের মধ্যে। তোমার কলেজের থেকে ৩০ মিনিট দুরত্বে যে ক্যাফেটা আছে ওখানে মীট করবে আমার সাথে। বান্ধবীদের নিয়ে আসার হলে আসতে পারো আমার অসুবিধে নেই। টাইম টা আমি জানিয়ে দেবো।

১ সপ্তাহ পর ক্যাফেতে।

  • আমার ভীষণ অবাক লাগছে ব্যাপারটা। আপনি শুধুমাত্র একটা ছবি দেখে আমার আপু কে ভালোবেসে ফেললেন?
  • ঠিক তা নয়। তোমার আপু কে আমি অনেক ছোটবেলায় দেখেছিলাম তোমার বাবার সাথে আমার বাবার সাথে দেখা করতে এসেছিল। তোমার বাবা মারা যাওয়ার পর আর দেখা হয়নি আমাদের, আমিও বিদেশ চলে যাই। তারপর হঠাৎ কিছুদিন আগে ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে তোমাদের দুজনের একটা ছবি দেখতে পাই আমি। তুমি এমন একজন কে ট্যাগ করেছিলে যে আমার ফ্রেন্ডলিস্টে ছিলো তাই আমি দেখতে পেয়েছি। বিশ্বাস করবে না, আমি সেই সারাটাদিন তোমার আপুর ছবি দেখেই কাটিয়েছি। আমি সত্যি ভালোবাসি তোমার আপুকে, বিয়ে করতে চাই।
  • বুঝলাম। কিন্তু আপু রাজি হবে বলে মনে হয় না। কারণ আপু এখন বিয়ে তো দূর, প্রেম-ভালোবাসাও করতে চায় না। আপুর লক্ষ্য পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করবে।
  • জানি, তাই তো ওর বন্ধু হতে চাই আমি। খুব ভালো ভাবে জানতে চাই ওকে। ওর পড়াশোনা শেষ হলে তুমি আমাকে জাস্ট একটা ইনফর্ম করবে ও কোথায়, কোন কোম্পানি তে চাকরি করার জন্য এপলাই করছে। ওকে?
  • ওকে বাট আপনি আবার ইউ.কে. চলে যাবেন? উধাও হয়ে যাবেন না তো আবার?
    অনিরুদ্ধ সামান্য হেসে বললো।
  • না। উধাও তো তোমার আপু হয়ে গেছিলো। একবার যখন ফিরে পেয়েছি তখন আর হারাতে দেবো না।
  • আমি আপনাকে বিশ্বাস করলাম, বিশ্বাসের মর্যাদাটা দেবেন কিন্তু।
  • জো হুকুম শালি সাহেবা। তো এবার তুমি আপনি থেকে তুমি মোডে চলে আসো, আধি ঘারওয়ালি বলে কথা, কি তাই তো?
    নিতি হেসে উত্তর দিলো।
  • একদম জিজু।

~ফ্লাশব্যাক এন্ড~

  • অনিরুদ্ধ ভাইয়া সেদিন তোর ভার্সিটি তে যায়। সব ছেলেদেরকে রীতিমতো আমার চোখের সামনে শাসিয়ে আসে যাতে আমাকে ডিস্টার্ব না করে আর তোর দিকে চোখ তুলেও না তাকায়। তারপর ফিরে যায় ইউ.কে.। আমি তখনও ভেবেছিলাম এটা ভাওতাবাজি। কিন্তু নাহ! প্রতিদিন রাতে অনিরুদ্ধ ভাইয়া তোর খবর নিতো আমার কাছ থেকে। মাসে ১ বার এসে ভার্সিটির বাইরে থেকে তোকে দেখে চলে যেতো। আর সেইসব ছেলেদের ব্যবস্থা করতো যারা তোকে ডিস্টার্ব করেছে। এরপর আসি তোর আর অনিরুদ্ধ ভাইয়ার বিয়ের কথায়। আমি যখন ভাইয়া কে খবর দি তুই কোন কোম্পানি তে চাকরি পেয়েছিস তা শুনে ভাইয়া খুশি হয়ে যায় আর জানায় এটা নাকি ওর বাবার কোম্পানি। তার কিছুদিন পরেই মা তোর বিয়ে ঠিক করে ফেললে আমি সঙ্গে সঙ্গে ভাইয়া কে খবর দি কারণ ততদিনে আমি বুঝে গেছিলাম ভাইয়া তোকে কতটা ভালোবাসে। ভাইয়া খবর পেয়েই বিডি ফেরত আসে আমার সাথে দেখা করে। বিশ্বাস করবি না আপু, কয়েকদিনে নিজের অবস্থা কি বিদ্ধস্ত বানিয়ে ফেলেছিল। পাগলের মতো করছিলো তোর বিয়ের খবর শুনে। আমি আরো সিওর হয়ে গেছিলাম যে তুই একজন সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষ পাবি জীবনে যে তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে।

নিতি কথাগুলো বলে থামলো। আমি অশ্রুসিক্ত চোখে নীচের দিকে তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলাম,

  • তার মানে এই জন্যেই অফিসে এসে আমার সাথে বন্ধুত্ব করেছিল? আর ও’ই আমার বিয়ে ভেঙ্গে ছিলো?
  • হ্যাঁ। আর শুধু ভাইয়া নয়, আমি, আঙ্কেল আর ভাইয়া তিনজন মিলে প্ল্যান করে ছেলেটা কে টাকার লোভ দেখাই আর ছেলেটা রাজিও হয়ে যায় কারণ সত্যি ছেলেটা ভালো ছিলো না। এরপর ভাইয়ার সাথে তোর বিয়ে হয়।
  • ভালোই যদি বাসতো তাহলে আমায় বললো না কেন? কেন আমার বন্ধুত্বের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলো?
  • আমি তো তোকে আগেই বললাম ভাইয়া প্রথমে তোর সাথে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছিল, তোর মনে জায়গা করতে চেয়েছিল। কিন্তু এরপর তোর সৎ শাশুড়ি ভাইয়ার কান ভাঙাতে থাকে তোর নামে। কিন্তু তোর শাশুড়ি তো জানতোই না যে তোর আর ভাইয়ার মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক। উনি ভেবেছিলেন তোদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছিলো তাই তোকে ভাইয়ার জীবন থেকে সরাতে একটা ফেইক রিপোর্ট বানায় যাতে লেখা আছে তুই মা হতে পারবি না।
  • কিইই? উনি এতোটা নিচে নামতে পারলো?
  • হ্যাঁ পারলো। সবের মাঝে আমি ছিলাম ভাইয়ার বোন, যে সব কিছুতে ভাইয়া কে সাপোর্ট করেছি। তোর শাশুড়ি তোর নামে উল্টো পাল্টা বললেই ভাইয়া আমার কাছে আসতো, সব খবরাখবর নিতো। আমি বলতাম যে তোমার মা ভালো না, মানতো না। কিন্তু যখন ফেইক রিপোর্টটা পেলো তখন মানলো। ভীষণ কেঁদে ছিলো সেদিন ভাইয়া আমাদের মায়ের কাছে গিয়ে।
  • ও মায়ের কাছে গিয়ে কেঁদেছিলো?
  • হ্যাঁ। যেই মায়ের জন্যে নিজের বাবা কে বিশ্বাস করেনি সেই মা যে সত্যি তাকে ভালোবাসেনি, তার ভালোবাসাকে যাকে সে পাগলের মতো ভালোবাসে তাকে দূর করতে চেয়েছে তার থেকে এটাই ভাইয়া মানতে পারেনি। তোর কাছে গিয়েই বা কি কিরে কাঁদত? তাই মায়ের কাছে কেঁদেছিলো। যাই হোক, আমি এবার আসি। আজকে ডিল করার মতো মনের অবস্থা নেই আমার। তুই নিশ্চয় সুখে আছিস? সুখে থাকলেই ভালো।
  • নিতি, রুদ্ধ কোথায়? নিয়ে চল না আমায় ওর কাছে। অনেক বোঝাপড়া আছে আমার ওর সাথে। অনেক কিছুর উত্তর চাই আমার।
  • উত্তর দেওয়ার মতো অবস্থায় যে সে নেই।
  • মানে?
  • চল আমার সাথে।
    নিতি আর আমি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আজ অনেক কিছুর উত্তর চাই আমার। এতোই যখন ভালোবাসতো তখন কেন এক বছরে আমায় কাছে টেনে নেয়নি? আমি কি ওকে বোঝাইনি যে আমি ওকে কতটা ভালোবাসি? কেন কয়েকদিন ধরে আমার বোনের সাথে রাত জাগতো আমায় মিথ্যে বলে? কোথায় যেতো ওরা সেই মাঝরাতে? আর কাজী অফিস? কাজি অফিস কেন গেছিলো রুদ্ধ নিতির সাথে? এই সবের উত্তর চাই আমার। যা আমি নিতির থেকে নয় রুদ্ধের থেকে নেবো। ওর পাগলামি ভালোবাসা কোথায় গেছিলো? আমাকে দূর থেকে ভালোবাসতে পারলো এতগুলো দিন ধরে আর কাছে যখন ছিলাম তখন সেই ভালোবাসা গায়েব? নাহ, আজ আমি সব কিছুর বোঝাপড়া করেই ছাড়বো।

গাড়ি থামতেই আমি চোখ মুছে গাড়ি থেকে নামলাম আর অবাক হয়ে গেলাম ভালো ভাবে চারিদিকে তাকাতেই। রেগে নিতি কে বললাম,

  • কি হচ্ছে টা কি নিতি? তুই আমাকে এই ক..কবরস্থানে কেন নিয়ে এসেছিস?
  • তুই তো বললি ভাইয়ার কাছে আসবি। ভাইয়া তো এখানেই আছে।

নিতি বেশ শান্ত হয়ে কথার উত্তর দিলো। আমি জানো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না।

  • ক..কি বলছিস ত..তুই?
  • চল। বোঝাপড়া করবি না?
  • নাআআআআ!

আমি একটা জোরে চিৎকার দিতেই চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে এলো, মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেলো। আজ নিজেই নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছে আমার। হারিয়ে ফেললাম আমি আমার ভালোবাসা কে। শুধু নিজের অবিশ্বাসের জন্য। পাশে নিতির দিকে তাকাতেই দেখলাম নিতি কাঁদছে। আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না, চোখ দুটো বুজে এলো আমার।


পর্ব ৪ (অন্তিম)

  • নাআআআআ!
    এসব নিতি কি বলছে? আমি যেদিন অস্ট্রেলিয়া চলে গেছি সেদিন রুদ্ধের এতো বড়ো একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে আর আমি একবার পিছন ফিরে তাকায়নি? এতোটা কষ্ট আমি কি করে দিতে পারলাম? আমার উচিত ছিলো ওদের মুখোমুখি হওয়া তাহলেই হয়তো সেদিন সব ভুল বোঝাবুঝির শেষ হয়ে যেতো। আমার ভাবনার মাঝেই নিতি বলে উঠলো,
  • ভাইয়ার শরীরের এক পাশ পুরোপুরি প্যারালাইসড হয়ে যায়। অনেক সময় লেগে যায় সেরে উঠতে। ডক্টর বলেছিল মাথাতেও গুরুতর চোট পেয়েছে তাই স্ট্রেস কম নিতে। ভাইয়ার বাবা আমাকে আর মা কে তখন ওনাদের বাসায় রাখেন যাতে ভাইয়ার সেবার কোনো রকম সমস্যা না হয়। উনি খুব ভালো ভাবেই জানতেন ভাইয়ার সৎ মা কোনদিন ভাইয়ার যত্ন ঠিক করে করবে না। তিনি চাইবেন ভাইয়া মরে যাক। এরপর ভাইয়া সুস্থ হয়ে উঠলে অফিসে যাওয়া শুরু করে আর সেই অবসরে ভাইয়ার সৎ মা আমাদের নানারকম কথা শোনায়। আমরা কিছুই বলতাম না, দিনের পর দিন উনি কথা শোনাত কিন্তু হঠাৎ একদিন ভাইয়া সবটা শুনে ফেলে আর সেদিনই ওনাকে বাসা থেকে বাহির করে দেয়।
  • আচ্ছা তুই আমায় একটা কথা বল।
  • কি?
  • রুদ্ধ তো অনেক আগেই সুস্থ হয়ে গেছে তাহলে তুই আমায় রুদ্ধের সাথে দেখা করাতে কবরস্থানে কেন নিয়ে গেছিলিস? আর আমি ওখানে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর আমাকে এই বাসায় কে নিয়ে আসলো?
  • ভাইয়া তোকে নিয়ে এসেছে আর ভাইয়া কবরস্থানে ছিলো …
  • সেটা আমি বলবো রিতি কে। তুই এখন একটু বাইরে যা।
    আমি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম মা দাঁড়িয়ে আছে। মায়ের পিছনে রুদ্ধ। মা ভিতরে এসে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
  • জামাই, নিতি! বাইরে যাও তোমরা। আমাদের কথা হলে তোমাদের ডেকে নেবো।
  • মা, ছাড়ুন না। এখন ওর রেস্টের প্রয়োজন।
  • তুমি তো কোনদিন আমার মুখের উপর কথা বলনি জামাই। আমার কথা মেনে যেমন রিতি কে সারপ্রাইজ দিতে রাজি হয়েছিলে তেমন এখনও একটু বাইরে যাও। এইবার আমি কথা দিচ্ছি তোমার রিতি তোমার থেকে দুরে যাবে না।
    মায়ের রাগী কণ্ঠ শুনে ও আর নিতি দুজনেই বাইরে চলে গেলো। মা এসে আমার পাশে বসলেন। আমি তাকাতে পারছি না মায়ের দিকে কারণ আমি জানি মা এখন আমায় খুব বকবে তাই মাথা নীচু করে থাকাটাই শ্রেয়।
  • আমি অনেকদিন আগে থেকে নিজেকে তৈরী করছিলাম এই দিনটার জন্য যেদিন আমি তোমার মুখোমুখি হবো আর কিছু কথা বলবো। আশা করি আমার কথা তুমি শুনবে।
    মায়ের কথাগুলো শুনে খারাপ লাগলো, আমি জানি আমি মা কে অনেক আঘাত করেছি। বিনয়ী কন্ঠে বললাম,
  • এমন ভাবে কেন বলছো মা? আর আমাকে তুমি করে কেন বলছো?
  • কারণ তুমি তোমার ব্যাবহারে বুঝিয়ে দিয়েছো সৎ কখনো আপন হয়না। তোমার মনে যখন সন্দেহ বাসা বেঁধেছিল তখন তোমার উচিত ছিলো না তা নিজের মা কে জানানো? আমি কি কোনদিন নিতির কোনো ভুল, কোনো অন্যায় প্রশ্রয় দিয়েছি?
  • না মা। আসলে আমি।
    আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই মা হাত দিয়ে আমায় থামিয়ে বলতে শুরু করলো,
  • আজ আমার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দাও। তোমার বক্তব্য আমি পরে শুনছি। কি কি অভিযোগ ছিলো তোমার অনিরুদ্ধের প্রতি? সে কি নিজে তোমার দিকে বাসর রাতে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে ছিলো নাকি তোমার প্রস্তাবে সায় দিয়েছিল কোনটা?
  • আমার প্রস্তাবে সায় দিয়েছিল।
  • এরপরে এমন কোনদিন এসেছে যেখানে তোমার মনে হয়েছে অনিরুদ্ধের বাইরে কোনো সম্পর্ক আছে বা বিদেশে কোনো সম্পর্ক আছে?
  • না।
  • কোনদিন তোমার বোনের সাথে বাইরে ঘুরতে দেখেছো বা ঘনিষ্ট হতে দেখেছো?
  • ন..না।
  • তোমার বোনকে কোনদিন তোমার স্বামীর সাথে সময় কাটাতে দেখেছো বা তার আচরণে বুঝেছ যে সে তোমার স্বামী কে পছন্দ করে?
    আমি না বোধক মাথা নাড়লাম কারণ কান্নায় আমার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে।
  • তাহলে কীভাবে তুমি শুধুমাত্র চারদিনের জন্য তোমার স্বামী আর বোনকে এরকম বাজে একটা বিষয়ে সন্দেহ করলে? আগেও তো তোমার বোন আর স্বামী এজে অপরের সাথে কথা বলেছে তখন তো তোমার এমন মনে হয়নি আর যখন মনে হয়েছে তখন কেন তাদের হাতে না হাতে ধরোনি? তাদের প্রশ্ন করনি? তুমি যখন পার্কে ওদের বসে থাকতে দেখলে তখন তোমার উচিত ছিলো ওদের মুখোমুখি হয়ে তোমার জীবন নষ্ট করার কারণ জানার। তুমি আজকালকার মেয়ে রিতি, এভাবে তুমি নিজের জায়গাটা ছেড়ে দিলে?
  • আমি, আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করবো।
  • তাই সব ছেড়ে পালিয়ে গেলে? আজ যদি সত্যি অনিরুদ্ধ আর নিতির সম্পর্ক থাকতো তাহলে তোমার উচিত ছিলো ওদের থেকে উত্তর নেওয়ার যে কোন অধিকারে ওরা তোমার জীবন শেষ করল। তোমার জীবনের কি কোনো মুল্য নেই যে কেউ তোমার জীবন নিয়ে খেলবে। এই উচিত কাজ গুলো না করে তুমি পালিয়ে গেলে? এটা বোকামি নয়? বাচ্চাদের মতো কাজ নয়? তুমি কি কোনো দোষ করেছিলে যে ভয়ে পালিয়ে গেলে? দোষ তো ওরা করেছে তাই তাদের তোমাকে জবাবদিহি করতে হবে। এইসব ভাবনা কেন এলো না তোমার মাথায় আমি তো বুঝতে পারছি না। আমি মনে করি অনিরুদ্ধ আর নিতির থেকেও তোমার দোষ বেশি। আমি তোমাকে জ্ঞান দিচ্ছি না যে চোখের দেখা কেন বিশ্বাস করলে, তা সত্যি হয় না সবসময়। আমি তোমাকে বলতে চাইছি তুমি জেন সব ছেড়ে পালিয়ে গেলে যেখানে তোমার কোনো দোষ ছিলো না। পালিয়ে যাওয়াটাই তোমার সবথেকে বড়ো দোষ। এটুকুই বলার ছিলো আমার। আশা করি নিজের ভুল বুঝেছ তুমি। আসলাম।

মা উঠে চলে যেতে নিলে আমি মায়ের হাত ধরে মাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলি। প্রথমে মা আমাকে জড়িয়ে না ধরলেও আস্তে আস্তে জড়িয়ে ধরে।

  • আমার ভুল হয়ে গেছে মা। অনেক বড়ো ভুল করে ফেলেছিলাম আমি যার মাশুল আমি সহ তোমাদের সকল কে দিতে হয়েছে। আমায় ক্ষমা করে দাও।
  • ক্ষমা আমার থেকে নয়, ওই ছেলেটার কাছ থেকে চা যে তোর আসার অপেক্ষায় মৃত্যুর সাথে লড়েছে। তোর জন্য প্রত্যেকটা রাত বালিশ ভিজিয়েছে। যেদিন তুই চলে গেলি সেদিন রাগের বশে নিতি কে আঘাত করে ফেললে আমার কাছে এসে অনেক কাঁদে আর আমাকে বলে, “আমার জন্যে আপনি এক মেয়েকে হারিয়েছেন, আপনার আরেক মেয়েকেও যদি আমার জন্য হারাতে হয় আমি তা মানতে পারবো না। আজ থেকে নিতি কে আমি আমার বোনের মতো করে আগলে রাখবো। ” যেখানে সারপ্রাইজের প্ল্যান টা নিতি আর আমার ছিলো সেখানে পুরো দোষ ছেলেটা নিজের কাঁধে নিয়ে নিয়েছে।
  • চাইব মা, আমি ওর থেকেও ক্ষমা চাইবো। কিন্তু আমি এখানে এলাম কি করে আর কবরস্থান?
    মা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো তারপর হতাশ কন্ঠে বললো।
  • তোর শ্বশুরমশাই আর নেই রিতি। কিছুদিন আগেই গত হয়েছেন। জামাই কবরস্থানে ছিলো তাই নিতি তোকে ওখানে নিয়ে গেছিলো আর তুই ভেবেছিলি জামাইয়ের কিছু হয়েছে হয়তো। তোর অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় তোকে গাড়িতে রেখে নিতি জামাই কে খবর দেয় আর তারপর এখানে নিয়ে আসে।

আমি দু-হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলাম। এমনটা হওয়া কি খুব জরুরী ছিলো?

  • তুই শক্ত থাক মা। নাহলে জামাই কে সামলাবি কি করে বল? আচ্ছা তোকে একটা সুখবর দি।
  • কি সুখবর?
  • নিতির বিয়ে হয়েছে দু-বছর আগে। একটা মেয়ে আছে ওর এক বছরের।
  • তাই?
  • হ্যাঁ। বিকালে ছোট জামাই নিয়ে আসবে। তুই এখন একটু কিছু খেয়ে নে।

মা বেরিয়ে গেলে রুদ্ধ ঘরে আসে। ওর দিকে তাকানোর ক্ষমতা নেই আমার। মাথা নীচু করে বসে থাকলে রুদ্ধ আমার পাশে বসে আমার মুখ তুলে বলে,

  • আমি তো বলেছি দোষ আমাদের দুজনের ছিলো। অতীত নিয়ে ভাবতে চাইনা আমি আর, নতুন করে সবটা শুরু করতে চাই।
    আমি রুদ্ধের বুকে মাথা রেখে কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,
  • বাবা?
  • নেই। মানুষটাকে ঠিক করে সময়ই দিতে পারলাম না আমি। ছোটবেলা আর এই দু-বছরই যা সময় পেয়েছে আমার থেকে।
  • রুদ্ধ, আম্মু।
  • ওই মহিলার প্রসঙ্গ তুলবে না তুমি আমার কাছে।

রুদ্ধ বেশ শাসিয়ে কথাটা বললো আমায় তাই চুপ করে গেলাম। কিছুক্ষণ পর নিজে থেকেই বললো,

  • ওই মানুষটার মিথ্যের জন্যে তোমার সন্দেহ আরো গাঢ় হয়েছে। উনি সব জেনে বুঝে তোমায় মিথ্যে বলেছেন যে আমাকে আর নিতি কে তোমার ফ্রেন্ড কাজী অফিসে দেখেছে। আর তুমি সেটা বিশ্বাসও করলে, বলতে পারলে না একটা ছবি পাঠাতে? প্রমাণ ছাড়াই বিশ্বাস করে নিলে?
  • এতো কিছু আমার মাথায় আসেইনি রুদ্ধ। আমার শুধু এটা মনে হচ্ছিলো আমি তোমায় হারিয়ে ফেলেছি আর সেই সঙ্গে নিজের শক্তিও। আমার মাথা কাজই করছিলো না, কষ্ট হচ্ছিলো ভীষণ।
    কথা শেষ করতেই রুদ্ধ আমার অধরযুগল নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো। হঠাৎ আক্রমণে আমি একটু অবাক হলেও পরে ওর ভালোবাসার ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারিনি।

কিছুক্ষণ পর,

  • ভালোবাসি রুদ্ধ, ভীষণ ভালোবাসি আমি তোমায়। আই প্রমিস আর কোনদিন তোমায় ভুল বুঝে ছেড়ে যাবো না।
  • আমিও তোমাকে নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসি রিতি। তোমাকে ছাড়া আমি পারবো না থাকতে। বেঁচে থাকার জন্য আমার তোমাকে দরকার। প্লিজ, আর কোনদিন আমায় ছেড়ে যেও না নাহলে আমি।

আমি রুদ্ধের ঠোঁটে আঙুল রেখে বললাম,

  • কিছু কথা ব্যক্ত করতেই নেই। তা “অব্যক্ত কিছু কথা” হিসেবেই থাক।
    রুদ্ধ হেসে আমার কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে আমায় বুকে আগলে নিলো আর আমিও আমার ভালোবাসার মানুষের বুকে তার হৃদ-স্পন্দন শুনতে লাগলাম।

লেখা – কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “অব্যক্ত কিছু কথা – valobasar gopon kotha” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ। )

আরো পড়ূন – অবহেলা – new sad love story bangla

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *