নীল ডাইরিতে – ব্রেকআপের পর কিছু কথা

নীল ডাইরিতে – ব্রেকআপের পর কিছু কথা: কত ভালোবাসা ছিলো আমাদের মধ্যে। ওর বাসা ছিলো হবিগঞ্জ আর আমার বরিশাল তবুও মিলিতো হয়েছি আমরা। কত ত্যাগ তিতিক্ষার পর আমরা আমাদের ভালোবাসাকে সার্থক করেছি। কিন্তু এক নিমিশেই সব শেষ করে দিলো সানজিদা।


মূলগল্প

নিজের বউয়ের ফোনের ইমো(imo)দেখতে গিয়ে নিজেই হার্টফেল করার মতো অবস্থা। দারানো থেকে ধপাস করে খাটে বসে পরলাম সেই শব্দ শুনে রান্নাঘর থেকে চলে আসলো আর আমার হাতে তার ফোন দেখে অগ্নি চক্ষু করে তেরে এসে ফোনটা তার কব্জায় নিয়ে নিলো। আর বললো,

আমার ফোন তুমি ধরলে কেনো, সবারই একটা ব্যক্তিগত বিষয় থাকে সো আমার ফোন ও আমার ব্যক্তিগত নেক্সট টাইম ধরবে না। অথছো সে প্রায়ই আমার ফোন চেক করে। আসলে যে যেরকম সে অন্যকেও সেরকম ভাবে।

আমি রায়হান আর আমার বউ সানজিদা আসরাফি। আমাদের একটা ২বছরের ছেলে আছে সায়ান মাহমুদ। প্রেম করেই বিয়ে হয়েছিলো আমাদের। খুব ভালোবাসা বিরাজমান আমামদের মধ্যে। সব দিক থেকেই আমরা সুখি যাকে বলে হ্যাপি কাপল।

আপনারা ভাবছে বউয়ের ফোনে আমি কি দেখলাম যার জন্য আমার বাকশক্তি বন্ধ হবার মতো।

বউয়ের ইমোতে ঠুকে নিলয় নামের এক ছেলের সাথে নোংরা কথা বলা আর ছবি দেখে। সানজু যে এতোটা নিচে নামবে কখনো ভাবতেই পারি নি। কি দেইনি আমি সানজিদা কে। টাকা পয়সা বাড়ি গাড়ি সব দিয়েছি আমি সব। তবুও কেন প্রতারনা করলো আমার সাথে। কোনো দিক দিয়ে তো কমতি রাখিনি।

কত ভালোবাসা ছিলো আমাদের মধ্যে। ওর বাসা ছিলো হবিগঞ্জ আর আমার বরিশাল তবুও মিলিতো হয়েছি আমরা। কত ত্যাগ তিতিক্ষার পর আমরা আমাদের ভালোবাসাকে সার্থক করেছি। কিন্তু এক নিমিশেই সব শেষ করে দিলো সানজিদা।

আমি যে তার নোংরামি দেখেছি সেটা সানজিদাকে বুঝতে দেয়া যাবে না। তাকে আরো বেশি ভালোবাসতে হবে যদি আমার ভালোবাসায় ফিরে আসে নোংরামোর পথ থেকে।

অফিসে বসে আছি হঠাৎ সানজিদার ফোন আসলো সে আমার কাছ থেকে অনুমতি নিলো সে তার বান্ধবির সাথে ক্লিনিকে যাবে ডাক্তার দেখাতে, তার বান্ধবি একটু অসুস্থ। ক্লিনিকের নাম বলছিলো এশিয়া ডায়াগনস্টিক ল্যাব এ যাবে। আমার সন্দেহ হলো তাই একটু পর আমি বের হলাম দেখকর জন্য এবং যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না কারন সিনজিদা ওর খালাতো ভাইয়ের সাথে ক্লিনিকে ঢুকছে তার পর আমি পাশে এসে চায়ের দোকানে চা খেলাম।

আমি একদম ঘেমে গেছি রাগে দুঃখে চলে আসলাম অফিসে তারপর বাসায় আসলাম একটু তারাতারি কারন অফিসে ভালো লাগছিলো না। কলিং বেল বাজালাম বেশি কথা হলে না ঘৃনা লাগে ওর সাথে কথা বলতে। আগে দরজা খুলে জরিয়ে ধরতো কারন আমার গায়ে গন্ধ নাকি ওর প্রিয় এখন এগুলা ভাবলে ন্যাকামো ছেছরামি মনে হয়।

ফ্রেস হয়ে আসলাম সায়ানের সাথে একটু দুস্টমি করলাম। তারপর উঠে বেলকোনিতে যাবো তখন চোখ পড়লো ওয়ারড্রবের ওপর একটা ফাইল রাখা এশিয়া ল্যাবের কৌতুহল বশতো খুব তারতারি পা চালিয়ে ফাইলটা খুলে দেখলাম প্রেগনেন্সি রিপোর্ট আর উপরে নাম দেখলাম সানজিদা আসরাফি চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।

তারতারিকরে ফাইলটা সেভাবে রাখলাম তারপরে বেলকোনিতে আসলাম। চোখ দিয়ে খুব পানি পড়ছে। দ্বিতিয়বার খুব কান্না করছি একবার বাবা মা রোড এক্সিডেন্ট এ মারা যাবার সময় আর এখন। চাকরি পাওয়ার খুসিতেও কেদেছিলাম কিন্তু অল্প। খুব কান্না করতে ইচ্ছা করছে। আবার ভাবলাম রায়হান তুই কার জন্য কান্না করছিস যে মেয়েটা তোকে ভালোই বাসে না। মন ও দুইটা দিক হয়ে গেলো একদিক বলে ঘৃনা করতে কান্না না করতে অন্য দিক বলে কান্না করতে ভালোবাসা হারানোর কান্না। জীবনে এমন সিসুয়েশন আসবে কল্পনাও করিনি। আমার কপালটাই খারাব।

রাতে তিনজন ঘুমিয়ে আছি একপাসে আমি একপাসে সানজিদা মাঝে সায়ান। কিন্তু একসময় সানজিদা বলতো আমাদের মাঝে কাউকে আসতে দিবে না হো সন্তান, আমার পাসে সবসময় ও থাকবে। কিন্তু সব ভুলে গেলো নতুন ভালোবাসায় নতুন মানুষের ছোয়ায়। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি মনেই নাই। হঠাৎ কারোর হাসির শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। পাসে তাকিয়ে দেখলাম সানজিদা পাসে নাই। বেলকোনিতে কথা বলছে। চোখটা ভিজে আসছে। চেষ্টা করলাম ঘুমানোর চাইলেও আর ঘুম আসবে না। সানজিদা আসলো বেস কিছুক্ষন পর এসে আমার দিকে তাকিয়ে শুয়ে পড়ল।

খুব সকালে উঠলাম গোসল নামাজে গেলাম বাসায় আসলাম এসে দেখি সানজিদা নামাজ পড়ে মোনাজাত ধরে বসে আছে। হাসি আসছে খুব যার মনটা নোংরামিতে ভরপুর তার লোকদেখানো ইবাদত করে কি লাভ এতো আরো আজাব বারবে। তবুও মুখে কিছু বললাম না। এতো কিছু হচ্ছে কিন্তু আমি যেনো কিছুই জানিনা এমন করে আছি সানজিদাকে কিছু বলছি না। নাস্তা করে অফিসে আসলাম কিছুই ভালোলাগছে না লোকজনের সাথে চিল্লাফাল্লা করছি। যে আমি কারো সাথে উচ্চ কন্ঠে কথা বলিনি। অফিসের স্টফরাও অবাক হয়েছে।

বিকালেই অফিস থেকে বের হলাম একপ্যাকেট সিগারেট কিনলাম তারপর নদীর পারের সিটে গিয়ে বসলাম। এক এক করে শেষ করলাম খুব কষ্টে তারন অনেক দিন পর খেলাম। সানজিদা কসম দিয়েছিলো যেনো না খাই তাই ছেড়ে দিছিলাম। এখন সানজিদাই আমার সেই তো তার কসম রেখে কি হবে। রাত করেই বাসায় ফিরলাম সানজিদা দরজা খুললো একপাসে সরলো আমি ঢুকলাম ফ্রেস হয়ে সায়ানের সাথে দুস্টমি করছি তখন সানজিদা আসলো কাপর ভাজ করে ওয়ারড্রবে রাখছে। সানজিদার চোখ দুটো লাল হয়ে আছে চোখের নিচে কালি পরে গেছে কিন্তু এমনটা কেনো।

হয়তো প্রেমিকের সাথে মনমালিন্য হয়েছে। আর রাত জেগে কথা বলে সেজন্য কালি পড়ে গেছে। আবার ভাবছি, যে মানুষের মনের মধ্যে শয়তানি বুদ্ধি থাকে তাদের চেহারাও শয়তানের মতো হয়। এতোদিন ভালোভাবে তাকাইনি আজ একটু তাকালাম কেনো জানি মায়া লাগছে। মনেই হয়না যে ও আমার সাথে এতো বড় প্রতারনা করলো। রাতে খুব কাছাকাছি ছিলাম সানজিদার ছোয়ায় ভুলেই গেছিলাম যে ও প্রতারক একটা। হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে গেলো কিন্তু সানজিদাকে দেখতে পাচ্ছি না ভাবলাম গোসল করছে তাই মাথা ঘামালাম না। কিন্তু সকালবেলা উঠে গোসল করে নামাজ পড়লাম কিন্তু সানজিদার টের পেলাম না রান্না ঘরে দেখলাম তাও নেই।

রুমে আসলাম হঠাৎ টেবিলের ওপর নজর গেলো একটা চিরকুট দেখলাম। দ্রুতপায়ে গেলাম ভাজ খুলে দেখলাম বেশি অবাক হলাম না কারন এটা হবার ছিলো।

চিরকুটে লেখা ছিলো,
চলে যাচ্ছি কোনো নতুনত্বের কাছে খুজতে এসো না এসেও পাবে না। আসা করি আমার সুখ কেরে নিবে না। ছেলেটাকে দেখে রেখো ওকে নিয়ে ঝামেলা বারাতে চাইনি জানি আমার থেকে তোমার কাছে বেশি আদর পাবে। ভালো থেকো।

একটু হাসি আসলো যে মানুষটা ভালোথাকা কেরে নিলো সেই আবার বলছে ভালো থেকো। মানুষ খুব খারাব সুখ খোজে কিন্তু সুখ কি খুজলেই পাওয়া যায় নাকি ধরা দেয়। আরো অনেক প্রশ্নে ক্ষতবিক্ষত আমি।

আমিও দোয়া করি নতুন জীবনে সুখি হও, তবে কারো সুখ কেরে নিয়ে সুখি হতে পারলে হও কোনো অভিযোগ নাই কারন দোষ আমার আমি ব্যর্থ প্রেমিক, ব্যর্থ স্বামি, ব্যর্থ আমার ব্যক্তিত্ব।
হয়তো নিলয় আমার থেকে খুব বেশি ভালোবাসে।

এসব ভাবছি তখনি সায়ান উঠে গেলো ঘুম থেকে আমি গেলাম ওর কাছে সায়ান আব্বু বলে গলা জরিয়ে ধরলো। ছেলেটা তো জানেনা তার মা এখন কোথায় যদি জানতে চায় তো কি হবে কি জবাব দিবো আমি কি বলবো আমি কি বা বলার আছে আমার।

আমি কি সায়ানের কাছে বলতে পারবো ওর মা কতটা নোংরা মানষিকতার, নাহ এটা আমি পারবো না। কোলে নিলাম বাথরুমে নিয়ে ফ্রেশ হলাম নাস্তা করলাম স্বাভাবিক ভাবে। কেনো জানি ছেলেটাও কিছু বলে না।

অফিসের জন্য রেডি হচ্ছি তখন আস্তে করে বল্লো আব্বি আম্মু কোথায়। আমি থতমত খেয়ে বললাম সে তোমার জন্য বিশাল চকলেট আনতে গেছে আসতে দেরি হবে তুমি আমার সাথে চলো অফিসে। সায়ান আচ্ছা আব্বি বলে চিৎকার দিলো আনন্দে কারন ও আমার সাথে অফিসের যাওয়ার ভক্ত। আমার ছেলেটা খুব আদুরে কখনো আমাকে আব্বু কখনো বাবা কখনো আব্বি বলে ওর আম্মুকেও এরকম ডাকতো আর ও অনেক শান্তশিষ্ট কিন্তু জেদি।

অফিসে গেলাম ছেলেকে নিয়ে পিয়ন কে বলে এক্সট্রা একটা চেয়ার আনালাম চকলেট জুস চিপস অনেক কিছু। পাসে বসে খাচ্ছে হঠাৎ করেই বললো আব্বু আমি ওই চেয়ারটাও বসবো। আমি বুঝানোর পরেও কাজ হলো না সে এটায় বসবে বাধ্য হলাম উঠতে। বিকালে বাসায় আসলাম। ঘুরতে বের হলাম সায়ানকে নিয়ে কিন্তু মনে হলো কেউ আমাদের ফলো করছে পরে চেক করলাম এদিক ওদিক তাকিয়ে নাহ ভুল ভাবছি কে ফলো করবে আমাদের। বিকালে নদীর পারে পার্কে অনেক ঘুরলাম রাতের খাবার নিয়ে বাসায় আসলাম। সায়ানকে খাইয়ে শোয়ালাম ও জিজ্ঞাসা বাবা মাম্মাম কখন আসবে। চিন্তায় পরলাম বললাম আরো দেরি হবে বাবা। ও বললো আচ্ছা।

ঘুমিয়ে পড়লো সায়ান কিন্তু আমার ঘুম আসছে না সারাদিন অফিস আর সায়ানকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় মনে পরেনি কিন্তু এখন মনটা এতো খকরাব লাগছে যা বলার মতো না। চোখ দিয়ে পানি পরে আপনা আপনি। আমার দোষটা কোথায় সানজিদা কি করিনি আমি তোমার জন্য। কেনো এমন করলে। খুব সিগারেট খেতে ইচ্ছা করে কিন্তু সম্ভব না ছেলেটা টের পাবে। আস্তে আস্তে সয়ে গেছে ছেলেটাও ভাবছে তার মা আর ফিরবে না তেমন জিজ্ঞাসা করে না। তবে তার মাঝে আমি মায়ের শুন্যতা দেখি। আমি যতই. আদর করি ভালোবাসি মায়ের ভালোবাসার সমান হয় না।

তবুও চেস্টা করছি যতটা সম্ভব ভুলিয়ে রাখার জন্য। হয়তো পেরেছি হয়তো পারিনি।
সানজিদা চলে গেছে আজ ৬মাস। সায়ান প্রায় ভুলেই গেছে যে ওর আম্মু নেই।

আমি পারিনি কারন খুব ভালোবাসতাম। অনেকেই বলে বিয়ে করতে অনেকে মেয়ে দেখেও ফেলেছে কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল। কখনো ভালোবাসতে পারবো না কাউকে। এখনো ভালোবাসি আমার সানজুকে। আর যাকে ভালোবাসা যায় তাকে ঘৃনা করা যায় না। মনের সুপ্ত জায়গায় আজো সানজিদাকে রেখেছি আর সারাজীবন থাকবে।

কেটে গেলো অনেক বছর সেই সায়ান আর ছোট্টো নেই সে এখন মস্তবড় অফিসার। সেও বিয়ে করেছে। আমিও আর যুবক নই বৃদ্ধ চামরা টাইট নেই লুজ হয়ে গেছে।
সায়ানের একটা মেয়ে আছে রিধি। সারাক্ষন আমাকে জালায় দাদু দাদু করে সারাদিন।
এভাবেই কাটছিলো দিন গুলো।

রাতে তেমন ঘুম হয়না কাশির জন্য। রাতে সায়ানদের রুম থেকে ঝগরার আওয়াজ পেলাম শুনে যা বুঝলাম আমাকে নিয়েই হচ্ছে। আমাকে ঝামেলা মনে করে বউমা। যাকে আমি মেয়ের মতো ভাবি। গেলো কিছুদিন ঝগরা বারতেই লাগলো। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত হলো বৃদ্ধাশ্রমে দেওয়া হবে। আমিও মেনে নিয়েছি নিয়তিকে। রিধির কাছ থেকে বিদায় নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো ওকে বলছি দাদু বেড়াতে যাচ্ছে। তখন আর কিছু বললো না। চলে আসলাম বৃদ্ধাশ্রমে। বিকেলে বের হলাম। সিগারেট আনতে খেতে ইচ্ছা করছে। ডাক্তার না করছিলো কিন্তু মনের বিরোধ করতে পারবো না।

কাউকে বললে আনবে না। সিগারেট নিয়ে আসবো এমন সময় একলোকের সাথে ধাক্কা লাগলো। দেখে পরিচিতো মনে হলো আরে এ তো সেই নিলয়। আমাকে দেখে সেও অবাক হয়েছে এবং জরিয়ে ধরলো এবার আমি অবাক হলাম কারন আমাকে জরিয়ে ধরলো কেনো? আমি ছিটকে সরে গেলাম। নিলয় আমাকে বললো সে নাকি আমাকে খুজছে অনেক কিন্তু পায়নি। আমি জিজ্ঞাসা করলাম সানজিদা কেমন আছে?

সে কেমন করে জানি তাকালো আর বললো হয়তো ভালো আছে তার কথাটা আমার পছন্দ হলো না। আমি বললাম মানে সে তোমার কাছেই তো তুমি হয়তো বলছো কেনো। সেবললো সানজিদা মারাগেছে অনেক আগে। মানে সানজিদা কেনো মারা গেলো তখন নিলয় বললো ব্রেইন টিউমারে। আর কিছু বলতে পারবো না একটক ডাইরি আমাকে দিয়েছিলো সেটা আপনাকে দিতে বলেছিলো সেটা নিয়ে আমাকে আমার কাজ শেষ করতে দিন। তারপর একটা নীল ডাইরি দিলো নিলাম উপরে লেখা আমার ডাইরি। চলে আসলাম এসেই ডাইরিটা নিয়ে পড়তে বসলাম।

জানিনা কোনো দিন তোমার হাতে পরবে কিনা আমা এই নীল ডাইরিটা, ডাইরিটা কিনেছিলাম খুব শখ করে নীল ডাইরি নামটা দিয়েছি যেদিন কিনেছি সেদিনই কিন্তু লেখার সময় হয় নি। লিখতে চেয়েছি জীবনের সকল সুখের মুহুর্ত তোমার সাথে কাটানো সকল সুখের স্মৃতি কিন্তু দেখো আমার কপালটা কতটা খারাব ডাইরিটা কেনার কিছুদিন পরই জানলাম আমার ব্রেইন টিউমার জানো সেদিন এতো যে কান্না করছি। অপারেশন করলে বেচে থাকার সম্ভাবনা ছিলো ১০%। তাই আর চেস্টা করি নি।

আমি চেয়েছিলাম তুমি সুখে থাকো তাই তো নিজেকে খারাব ভাবে উপস্থাপন করছি খুব ভয় পেয়েছিলাম যে তুমি আমাকে মারবে এসব দেখে। কিন্তু নিয়তি যে মানুষকে কতটা মানিয়ে নিতে শিখায় তোমাকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না জানো। বিশ্বাস করো আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি জানো। নিলয় আমার খালাতো ভাই জানো ওর পা ধরে এসব অভিনয় করিয়েছি। শেষে ও কান্না করে দিছে। জানো সেই প্রেগনেন্সি রিপোর্ট আমার না আমার বান্ধবি নিরার আমি ডাক্তার ম্যাডাম কাছে হাত জোর করে সেইম রিপোর্ট তৈরি করেছি এবং তোমাকে দেখানোর জন্যই ওয়ারড্রবের ওপর রাখছি। রাতে যে ফোনে কথা বলতাম ওগুলা একা একাই বলতাম আর কান্না করতাম।

তুমি বুঝতে আমি নোংরামি করতেছি। ইমোর সেই আইডিটাও আমারি ছিলো ওটা নিলয়ের না তোমাকে বোঝানোর জন্য ফোন তোমার কাছেই রাখতাম যাতে তুমি চেক করো। যখন আমার সকল খারাব জানতে পারলা তবুও ভালোবাসলে তখন মনে মনে ভাবতাম যে ভুল মানুষকে জীবনসংগীনিকরিনি।

তোমার চেহারার দিকে তাকালে আমাার খুব বাচতে ইচ্ছা করতো। বিধাতা কেনো এমন করলো কি পাপ করেছিলাম বলো। বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ঠকাইনি। আমি শুধু চেয়েছি তুমি আমাকে ভুলে যাও ঘৃনা করো আবার বিয়ে করে সুখি হও। বলেছিলাম ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিবো কিন্তু সাক্ষর করার মতো সাহস আমার হইনি। শুনেছি ডিভোর্স হলে আমি তোমার স্ত্রীথাকবো না তাই করিনি আমি তো তোমার স্ত্রী হয়ে থাকতে চাই যুগ যুগ ধরে। হয়তো পরপারে দেখাপাবো তোমার সেই আসায় থাকবো। তখন গ্রহন করো স্ত্রী হিসেবে।

যেদিন চলে আসছিলাম সেই রাতটা ছিলো সুখের যা পাওয়ার যোগ্যতা তখন তোমার চোখে আমার ছিলো না কিন্তু তুমি তবুও দিয়েছিলে আমি বুঝেছিলাম যে আমি তোমার চোখের সামনে থাকতে ভুলবে না আমাকে। তাইতো চলে এসেছিলাম তোমার কাছ থেকে। আমার কলিজাটা কি আমার কথা মনে করে বলো। তুমি কি আমার কলিজাটার কাছে বলছো আমি খারাব ওর মা হওয়ার যোগ্য না। জানো যেদিন চলে এসেছি সেদিন আমার কলিজাটা রেখে এসেছি তোমার কাছে । আমার কলিজাটাকে অবহেলা করবে না তুমি জানো কতটা ভালোবাসি আমার সায়ানকে ওর চোখের জল আমি সহ্য করতে পারিনা। জানিনা কোনো সৎ মায়ের মার খায় কিনা, ক্লাসের ছেলেরা মারে কিনা এসব চিন্তা হয় আমার খুব কারন সায়ান আমার কলিজা আমার প্রান।

তোমাদের দেখার জন্য আমি তোমাদের ফলো করতাম তুমি টের পেলেও অতটা বুঝতে পারো নি। তোমাদের ফলো করতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পরে গিয়েছিলাম লোকজন হাসপাতালে নিয়েছিলো ডাক্তার সময় বেধে দিয়েছিলো একমাস। এরপর আর দেখা হইনি তোমাদের চলে আসলাম হবিগঞ্জ। তোমাদের ছবি দেখতে চাইতাম মোবাইলে কিন্তু তাকাতে পারতাম না মাথায়ব্যাথা হতো কিন্তু আমার সব তো ওখানেই ছিলো আমার সন্তান আমার কলিজাটাকে না দেখে কিভাবে থাকবো তখন মনে হতো একমাসো বাচবো না আব্বুকে দিয়ে ছবি করে আনলাম কম্পিউটার থেকে।

আচ্ছা আমার কলিজাটা কি তোমাকে এখোনো আব্বু আব্বি বাবা বাবাই ডাকে ওকি দুষ্টমি করে। তবে আমি দেখছি তুমি অনেক কেয়ার করে জানি তোমার কাছে ভালো থাকবে কারন ওর আম্মুটা খুব পচা ওরে কাছে থাকতে পারলো না আদর করতে পারলো না।

এক দিকে বেশি তাকিয়ে থাকতে পারিনা মাথায় পেইন হয়। যা সহ্য করার মতো না লিখতে কষ্ট হয়। হাত কাপে চোখ দিয়ে পানি পরে পারিনা লিখতে। শেষে একটা কথাই বলবো ভালো থেকো যদিও তোমার ভালোথাকাটা আমিই কেরে নিছি। কি করবো বলো আমার খুব ইচ্ছা করে তোমার সাথে বাচঁতে কিন্তু পারলাম না। আমার কলিজাটাকে দেখে রেখো তুমি। কখনো কষ্ট দিবা না তাহলে আমি কষ্ট পাবো। আমি জানি আমাকে কষ্ট তুমি দিবানা। সব সত্যটা যেনে আফসোস করবে না আগলে রেখো আমার কলিজাটাকে।

   ইতি
তোমার ভালোবাসা সানজু

পড়া শেষ করলাম খেয়াল করলাম চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। বেহায়া পানি যাকে আজ বিকাল পর্যন্ত খারাব ভাবতাম তার জন্যই চোখের পানি পরে। এখন একটা কথা বলতে পারি সানজুকে যে তার কলিজাকে আমি কষ্ট দেইনি কিন্তু আগলে রাখতে পারিনি। এবারেও আমি ব্যর্থতবে বাবা হিসেবে এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম উঠে ফজরের নামাজ পরলাম ভাবছি আজ তেমন কাশি আসলো নাহ। একটু তন্দ্রা দিলাম তখন স্বপ্নে দেখলাম সানজিদা হাত ইসারা করে ডাকছে কত সুন্দর লাগছে সানজিদাকে কতটা মায়াবি চেহারা।

হঠাৎ দেখি সানজিদা চলে যাচ্ছে আমার সহ্য হচ্ছে না। চিৎকার দিলাম সানজিদা বলে আর সজাগ হয়ে গেলাম দেখলাম সায়ান আমার পাসে বসে আছে। বলছে তোমার ঘুম ভাঙেছে আব্বি। চলো এখান থেকে বাড়ি কিনেছি তোমার জন্য আজ থেকে দুই বাপবেটা থাকবো সেখানে। আমার চোখটা জলে ভরে গেলো। আমার কান্না দেখে সায়ান বললো আহা আব্বু কাান্না তোমার জন্য না তোমার ছেলে বেচে আছে।

আমি কোনো কথা বলছিনা শুধু শুনছি আর শুনছি। সব কিছু গাড়িতে তোলার পর আমাকে নিয়ে ঘুরতে গেলো সেই নদীর পারে। বসে আছি চুপচাপ তখনি সায়ান বললো, বাবা সিগারেট খাবে একটা তবে শুধু আজকের জন্য। একটু মাথা নারালাম সায়ান আনতে গেলো আমি বসে আছি আর সানজুকে বলছি তোমার কলিজাটার সেই আব্বু আব্বি বাবা ডাকার অভ্যাসটা থেকেই গেলো। আমার মনে হলো সানজিদা হয়তো আমার কথা শুনে হাসছে।

লেখক – রায়হান

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “নীল ডাইরিতে – ব্রেকআপের পর কিছু কথা” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – প্রাক্তন এর আবারো ফেরা – ব্রেকাপ প্রেমের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *