এক পড়ন্ত বিকেলে (শেষ খণ্ড) – ভালোবাসার গোলাপ খাট এ

এক পড়ন্ত বিকেলে – ভালোবাসার গোলাপ খাট এ: আপনার মনের মধ্যে জিদ আছে যে আপনার মতো কাউকে আমার মতো মিডল ক্লাস এর মেয়ে কি করে রিজেক্ট করতে পারে? আমার কি করে এতো বড় সাহস হয়? তাই তো?


পর্ব ১০

~ আমার আর ড সাগরের দেখা? ইশ্‌ কি যে বলি তোকে আমি? শরম লাগে।
~ তাহলে তোর আর বলা লাগবে না, আমি সাগর ভাইয়ার কাছে থেকে জেনে নেব।
~ আরে আরে রাগছিস কেন? আমি বলছি তো। আগে বল সাগর অনেক হ
~ তুই মার খাবি না কি বলবি? দেখ মাঝ রাস্তায় তোকে মারতে আমার কিন্তুউ হাত কাপবে না। সো ভেবে কথা বল।
~ বলছি মেরি মা। আমি রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। তখন

ধাক্কা লাগতেই নিচে পড়ে গেল প্রাপ্তি। আর সাথে ওর ব্যাগ ও পড়ল। সামনে তাকাতেই সাগরকে দেখে হা হয়ে গেল সে।

~ সরি সরি, আমি আসলে একদম দেখতে পারি নি। আশেপাশে একে তো এই অন্ধকার।
~ কিসের সরি? রাখেন আপনি আপনার সরি পকেটে। ইশ আমার জানুটা কই গেল? জানু কই তুমি? নিশ্চয়ই ব্যাথা পাইছো? আমি আসছি ওয়েট, কান্না করে না বাবু।
~ ওয়েট, এখানে তো কেউ নেই, তাহলে আপনার জানু আসলো কোথা থেকে?
~ কোথা বলবেন না আপনি। আগে আমার জানুকে সরি বলেন। তারপর বাকি কথা।

~ সরি তো তো বলব কিন্তু আপনার জানু কোথায়? আগে সেটা বলেন।বলেই আশেপাশে চোখ বুলালো সাগর। কিন্তু কোন জানুর অস্তিত্ব পেল না। এবার সে ভয় পেল, কোন ভুত না তো?
সেই সময় তরু পাশে থেকে ব্যাগ টা হাতে নিল আর বলে উঠল,
~ জানু লাগে নি তো তোমার? আমি আছি না। ডোন্ট ওয়ারী, আঙ্কেলকে বকে দিয়েছি আমি। আর এই মিয়া আপনি এখনো আমার জানু কে সরি বললেন না তো।
~ ডোন্ট সে দ্যাট, এটা আপনার জানু।
~ হ্যাঁ এটাই আমার জানু।
আসলে প্রাপ্তি এতক্ষণ একটা ছোট টেডিবিয়ার কে জানু বলে ডাকছিল। ওটা রিন দিয়ে ব্যাগের চেইন এর সাথে লাগানো ছিল।
~ ওকে আ’ম সরি।

~ ওকে ঠিক আছে। জানেন আমার জানু কত ব্যাথা পেয়েছে। সব আপনার জন্য হল।
~ আপনার জানু ব্যথাও পেয়েছে?
~ অবশ্যই। আমি না হয় মাটির সাথে পা লাগিয়ে হাঁটি। কিন্তু আমার জানু তো ব্যাগের সাথে ঝুলে থাকে। ও কত উপর থেকে পড়ল। ব্যথা পাবে না?
~ তাও ঠিক। আচ্ছা, আপনার জানুকে আবার সরি। আমি যাই।
বলে চলে যেতে লাগল সাগর।
~ ওয়েট ওয়েট।
~ আবার কি হল?
~ আপনি আমার জানুকে সরি বললেন ঠিক আছে। আমাকে এবার উঠতে সাহায্য করবেন না?
সাগর আবার ফিরে এসে হাত বাড়িয়ে প্রাপ্তিকে ধরে তুলল।

এতক্ষণ প্রাপ্তি মাটিতে বসেই কথা বলছিল।

~ থ্যাঙ্কস বলতাম, কিন্তু এবার বললাম না, কারণ আপনিই আমাকে ফেলেছেন।
~ ঠিক আছে।
~ আচ্ছা আপনার এখানে চেনাজানা ডাক্তার আছে?
~ কেন?
~ আমার জানু পড়ে গেল, তার চেক আপ করাব না? আপনার চেনা হলে ফ্রিতে পাওয়া যেত তাই।
~ আমিই একজন ডাক্তার, আর কাছের হাস্পাতালেই আমি কাজ করি। নেক্সট টাইম এসে চেক আপ করিয়ে নিয়ে যাবেন।
~ ওকে ডাক্তার। আমি তাহলে আসি।
বলে উল্টো দিকে প্রাপ্তি হাঁটা ধরল। সাগর ও গেল বাস স্ট্যান্ডে। হাঁটতে হাঁটতে বলল,
~ পাগলি একটা।
বলেই মুচকি হাসল।
কিছুক্ষণের মধ্যে অর্ণব সাগরকে পিক করতে আসলো।

এদিকে প্রাপ্তি হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে লাগল,
~ ইশ কি ডাক্তার কে? একেবারে ক্রাশ খাওয়ার মতো। শেষমেশ আমিও ক্রাশ খেলাম। ওয়াও। গ্রেট। ডাক্তারটা কি হ
আর বলার সুযোগ পেল না প্রাপ্তি। এ টু জেড বলতে গিয়ে আবার কি একটা বলে ফেলল সে। যার দরুন তরুর হাতের মার খেতে হল তাকে। মনে মনে সাগরকে বকতে থাকল। আজ তার জন্যই বারবার রি ওয়ার্ড টা উচ্চারন করছে আর তরু প্রাপ্তির পিঠকে ঢোল ভেবে বাজিয়েই যাচ্ছে খালি।
~ আর বলতে হবে না। দি ইন্ড, খতম, ফিনিশ, সমাপ্ত শেষ। তুই আবার বললে এবার তোর পিঠে শুধু ঢোল না, সাথে আরও অনেক কিছুই বাজবে। তাই মুখ সামলে রাখিস। বিশেষ করে আমার সামনে। কি সব ছিঃ মার্কা কথা বলিস তুই আজকাল। হছি ছিঃ ছিঃ। মুখে লাগাম লাগা। আর তুই যেই রিং এর কথা বললি, আই মিন টেডি টা তো আমি তোকে গিফট হিসেবে দিয়েছিলাম।
~ হ্যাঁ
~ তুই ওইটার জন্য একটা ছেলের সাথে ঝগড়া করলি?
~ হুম। এই তুই কাঁদবি না কিন্তু একদম। আমার ব্যাপারে তুই বেশি ইমোশনাল হয়ে যাস কেন?
~ হুহ আইছে। চুপ মার।
~ ওকে বাবা।
~ তুই আগে ঠিক কর যে আমি তোর মা নাকি বাবা। আমি এতো চিন্তা নিয়ে থাকতে পারছি না।
~ বইন আমার আমি বাড়ি এসে গিয়েছি। এবার তুই ও যা। আমি গেলাম। বাই বাই।
~ ওকে বাই।
প্রাপ্তি চলে যেতেই হেসে ফেলল তরু। প্রাপ্তিকে কনফিউস করতে দারিন লাগে তরুর। শেষমেশ তার বান্ধবীও ক্রাশ খেলো। ভাবা যায়?

অনু আজ বলেছে যে সে পড়বে না। কিন্তু তরু তো অনুকে পড়িয়েই ছাড়বে। কিছুতেই কিছু শুনবে না। কিন্তু এদিকে অনুর ও পড়তে ইচ্ছে করছে না। তরু এমন কিছু করতে চাইছে যে অনু নিজে বলে যে সে পড়বে। তাই তরু অনুদের বাড়ির চেয়ার থেকে উঠে মেঝেতে বসে পড়ল। তরুকে এমন কাজ করতে দেখে টাস্কই খেলো অনু। সে ভাবতেই পারে নি যে অনুকে আজ পড়ানোর জন্য তরু এমন বাচ্চাদের মতো কিছু কাজ করবে। কয়েকবার অনু তরুকে উঠতে বলল। কিন্তু কে শোনে কার কথা? শেষে অনু রাজি হয়ে হ্যাঁ বলতেই তরু এক সেকেন্ড ও দেরি না করে দাঁড়িয়ে পড়ল।

তরুর এমন জিদ ধরারও কারণ আছে। সামনে অনুর পরীক্ষা। আর অনুকে ধরে বেঁধে না পরালে সে নিজ থেকে পড়তে চায় না। পরীক্ষার আগে এই না পড়ার ইচ্ছা তার আরও প্রবল হয়। এতেই নিজের হাতে গড়া ভালো রেজাল্ট নিমিষে ভেঙে যায়। তাই তরু অনুকে জোর করে পড়ায়।

এছাড়া পরীক্ষা শেষ হলেই সে আর অনুকে পড়াবে না ভাবছে। রোজ অর্ণবের মুখোমুখি হতে চায় না সে। তাই এই টিউশনি ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছে তরু।

অন্যদিকে তরুর অনুকে রাজি করানোর পদ্ধতি দেখে হাসলেন লাবণ্য চৌধুরী। নিজের মেয়েকে পড়ানো কোন সহজ কাজ না। কিন্ত তরু অনুকে জোর করতে পারে। তাই উনি তরুর প্রতি অনেক সন্তুষ্ট। আগে হয়তো এসব দিক খেয়াল করতেন না তিনি। কিন্তু আজকাল খেয়াল করলেই মনটা তার ভালো হয়ে যায়। হেসে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ান লাবণ্য চৌধুরী।

আরেকদিকে অর্ণব তরুর এই কাণ্ড দেখে উপর থেকেই হেসে উঠল। তরুর এই কাজ সম্পর্কে অবহত সে। তার সাথেও আগে এমন হয়েছে। তাই ভাবতেই হাসি চলে আসে তার মুখে। মনটা ভরে যায় তার।

আজ তরু অর্ণবের বাড়িতে এসেছে ঠিকই কিন্তু পড়তে নয়, আজ তার পড়ার ইচ্ছে একদমই নেই। সে এসেই অর্ণবের বাড়ির সোফায় নিজের ব্যাগ রেখে রান্নাঘরে চলে গিয়েছে রান্না করতে। বান্ধবীদের কাছ থেকে শুনে শুনে আর অ্যান্টিদের থেকে শুনে একটা নতুন রেসিপি শিখেছে, তার এক্সপেরিমেন্ট করার প্রবল ইচ্ছা থেকেই এই পদক্ষেপ।
~ কি করছেন আপনি এখানে?
~ দেখতে পারছ না, রান্না করছি। জানো আজ অ্যান্টিদের থেকে শুনে শুনে নতুন রেসিপি শিখেছি, আর এখন সেটা তোমাকে টেস্ট করাব।
~ না, আপনি এখন তেমন কিছুই করবেন না, আপনি আমার সাথে পড়তে যাবেন। আচ্ছা আপনি অ্যান্টিদের কাছ থেকে এসব শোনেন কখন?
~ টিফিন টাইমে।
~ আজ থেকে টিফিন টাইমে কোন অ্যান্টিদের সাথে দেখা করবেন না।
~ এহ, বললেই হল না। আমি অ্যান্টিদের সাথে দেখা করব, আর এখানে এসে রান্নাও করব। আর এখন আমি পড়বো না। রান্না শেষ হোক। তুমি টেস্ট করে বল কেমন হয়েছে। তারপর আমি পড়তে বসব। যাও আজ নাহয় পড়ে ১ ঘণ্টা বেশিই পড়বো, কিন্তু এখন আমি এখান থেকে নড়ছি না।
~ আমি আর ১ বার বলব যে চলেন আপনি এখান থেকে, আমার খাওয়া শেষ আমি আর কিছু খেতে পারব না আজ।
শুনেই তরু রান্নাঘরের মেঝেতে বসে পড়ল।
~ আমি রান্না করব করব করব।
অর্ণব বার কয়েক বলেও তরুকে মেঝে থেকে উঠাতে পারল না।

তাই নিজেই তরুকে কোলে তুলে নিল।

এদিকে তরুও অবাক হয়ে গেল।
~ বাহ, তাহলে এমন করলে তোমার কোলেও ওঠা যাবে?
~ আমি বলছি এবার আপনি একটু চুপ করুন।
বলতে বলতে চেয়ারে বসিয়ে দিল তরুকে।

তরু আবার নিজে চেয়ার থেকে উঠে রান্নাঘরের দিকে যেতে নেয়। কিন্তু অর্ণব তাকে ধরিয়ে আবার বসিয়ে দেয়।

এবার তরু চেয়ার থেকে আবার উঠে সেখানেই মেঝেতে বসে পড়ে আর ন্যাকা কান্না শুরু করে।
~ তুমি খুব পচা, আমি এতটাও খারাপ রান্না করি না, তাও তুমি আমাকে রান্না করতে দিচ্ছ না, যাও, আমি আর তোমার কাছে পড়তে আসবো না, আমি চলে যাবো ভ্যা
অনেক বুঝিয়েও যখন তরুকে রাজি করানো গেল না, তখন অর্ণব তরুর সাথে আর না পেরে রাজি হয়ে যায়। তরু অর্ণবকে ওর রান্না টেস্ট করিয়েই তারপর বই নিয়ে পড়তে বসেছিল।

~ এটা তোর কি ধরণের ইচ্ছা?
~ কেন কি হয়েছে?
~ তোর মাথায় এখন মুভি বানানোর ভুত চেপেছে তরু?
ভার্সিটিতে ক্লাস এ বসে ক্লাস চলাকালীন সময়েই তরুর মাথায় হঠাৎ মুভি বানানোর ভুত চাপলো। আর সাথে সাথে প্রাপ্তিকে খোঁচা মারা শুরু করল। প্রাপ্তির এমনিই ক্লাস করতে ভালো লাগছিল না। ঘুম এসে গিয়েছিল দু চোখ ভরে। কিন্তু ঘুমের ব্যঘাত ঘটল তরুর কাজে। তরু এবার নিজের আইডিয়া প্রাপ্তিকে জানাতেই প্রাপ্তির ঘুম উধাও। সে এখনো বোঝার চেষ্টা করছে যে আসলে কি হয়েছে।

~ আরে ফার্স্টেই মুভি বানাবো না কি? প্রথমে একটা ভিডিও বানাবো। ট্রায়াল ইউ নো?
~ যেমন?
~ যেমন ধর একটা গানের ভিডিও। আগেকার দিনের গান গুলো দেখে বানানোর ইচ্ছা হল।
~ আগেকার দিন এর গান?
~ ইয়াহ, ওল্ড ইজ গোল্ড।

~ আগেকার দিনের গানের ভিডিওর উদাহরন দে একটা।
~ দেখ ভিডিওর শুরুতে ফার্স্টে নায়কের চোখ দেখায়, তারপর নায়িকার চোখ দেখা। এরপর নায়কের নাক দেখায়, তারপর নায়িকার নাক দেখায়। তারপর নায়কের ডান গাল আর নায়িকার ডান গাল দেখায়। তারপর নায়কের বাম গাল আর নায়িকার বাম গাল দেখায়।
~ তারপর কি নায়ক আর নায়িকার ঠোঁট দেখায় এক এক করে?
~ কারেক্ট। একদম।
~ কেউ আমাকে অক্সিজেন দে। মনে হচ্ছে আমার শ্বাস আটকে আসছে।
~ নে পানি খা, পানিতে অক্সিজেনের সাথে হাইড্রোজেন ও পাবি। নে নে খা।
প্রাপ্তি পানি খেলো। তারপর আবার বলে উঠল,
~ সত্যি করে বল তো, কাল তুই আবার অ্যান্টির সাথে পুরনো মুভি দেখছিলি না?
~ হুম
~ এই জন্যই এতো বাজে আইডিয়া আসে তোর মাথায়।
~ কি বলিস প্রাপ্তি, আমার ভিডিও একেবারে হিট হবে দেখিস। তুই নায়িকার পার্ট করার জন্য শুধু হ্যাঁ বলে দে।

~ আর নায়ক? (ভ্রূ কুঁচকে)
~ নায়ক? (কিছুক্ষণ ভেবে) আচ্ছা, জালালকে দেখে আনলে কেমন হয়।
~ তুই এখান থেকে ভাগ আগে। হয় ক্লাস করবি নয় এখান থেকে চলে যাবি। সবসময় আমাকে পড়তে বলে আর নিজে এখন কি সব ভেবে বসে আছে। আমাকে না কি ওই জালালের নায়িকা বানাবে। আমি বলে তোকে বদ দোয়া দেব যাতে তোর কোনোদিন বিয়ে না হয়। চুপচাপ ক্লাস কর। কোথায় ভাবলাম এক ঘুম দিব। টা না, আমার ঘুমের ১২ টা বাজিয়ে দিল। তোর জন্য আজ রাতেও আমার ঘুম আসবে কি না সন্দেহ। আর যদি কোনোদিন এই সব ফালতু আইডিয়া ভাবিস তাহলে তোকে ওই জালালের গলায় ঝুলাই দিব। তারপর করিস তোর মুভি বানানোর সখ পূরণ।
~ কিন্তু একবার ভেবে দেখ প্রাপ্তি, আমি যেই আইডিয়া দিলাম অইতা করতে কতেই প্রথম ১ মিনিট কভার হয়ে যাবে, তারপর
~ তুই কি দর্শক কে বায়োলজি পড়াবি না কি? যে প্রথমে কপাল, তারপর চোখ মুখ নাক ঠোঁট, হাত পা দেখাবি।
~ আমি তো হাত পা এর কথা বলি নি।
~ বলিস নি তো বলতে কতক্ষণ? তারপর আমার কলিজা পাকস্থলীও দেখাবি।
~ দেখানো গেলে দেখা
~ চুপ চাপ ক্লাস কর।

বলেই প্রাপ্তি টেবিলের উপর হেড ডাউন করল।প্রাপ্তি মাথা নিচু করতেই তরু বিনা শব্দে হেসে উঠল। এতক্ষণ ওকে জ্বালানোর জন্যই ইনোসেন্ট ফেস করে বসে ছিল যেন সে ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না।
হঠাৎ ক্লাস এর মাঝেই এই আইডিয়া ওর মাথায় এসেছিল। ভাবল এখনই দেখার ভালো সময়। এমনিই ঘুমের ঘরে ছিল। তার উপর তরু সিরিয়াস ভাবে প্রাপ্তিকে ডেকেছে। এতেই প্রাপ্তি ভেবেছিল ওকে মনে হয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলবে তরু।
কিন্তু বাকিটা সবার জানা।


পর্ব ১১

~ দেখ তরু, আমি তোমাকে অনেকবার বলেছি যে আমি তোমাকে ভালবাসি, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। তাহলে তুমি কেন বার বার আমাকে ফিরিয়ে দেও? আমি তো বলেছি যে সেদিন আমার সেই কাজটা করা ঠিক হয় নি।
~ নিশ্চুপ
~ কোন কথা বলছনা কেন? উত্তর দাও।
~ আর কিছু বলার আছে আপনার?
~ কেন? এতক্ষণ যেটা বললাম সেটা কানে ঢোকে নি।আপনি কি করতে চান এখন।
~ তোমাকে বিয়ে করব।
~ আমি সেদিন এতো অপমান করলাম, তার পরও?
~ হুম।
~ কিন্তু সেটা হচ্ছে না। কারণ সেদিন এর পরও আপনি আমাকে অনেকভাবে হ্যারেজ করেছেন। তাই আপনি ভাবতে পারেন কি করে যে আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হব?
~ সেদিনের জন্য আমি ক্ষমা চেয়েছি তো।
~ আপনি চাইলেই আমাকে ক্ষমা করতে হবে?
~ কিন্তু
~ আর কি ছু বলতে চান আপনি?
~ নাহ।
~ তাহলে এবার আমার কথা শুনুন। সেদিন আপনি যে কথা বলেছিলেন তার কোন ভিত্তি ছিল না। তাই আমি আপনাকে শুধরে দিয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম যাতে আপনি বুঝতে পারেন যে কি ঠিক আর কি ভুল। যদি আপনার থেকে কোন ইতিবাচক আশা ছিল না। তবু ভাবলাম একবার বুঝিয়েই দেখি। কিন্তু আপনি মানলেন না। তারপর আমাকে রাস্তায়, ভার্সিটিতে নানা ভাবে অনেক কথা শোনান যা আমার প্রাপ্য ছিল না। তাও আমি শুধু মুখের কথায় বোঝাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনি শুনলেন না। আপনি সেদিন আপনার বন্ধুদের নিয়ে এসেছিলেন আমার কিছু একটা করতে যার কারণে আমি কারো সামনে মুখ দেখতে পারব না। এতো কিছুর পরও আপনি ভাবছেন যে আমি আপনাকে মেনে নিব?

~ কি বলছিস তুই তরু? কবে আবার তোর পিছনে লেগেছিল? আমাকে জানাস নি কেন তুই?
~ শান্ত হও প্রাপ্তি। আমাকে শেষ করতে দে। হুম তারপর আজ আপনি আমাকে প্রপোজ করছেন যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন আর আমি সেই কথা শুনে নাচতে নাচতে আপনার সাথে তাল মেলাবো এটা ভাবলেন কি করে আপনি?
তরু শান্তভাবেই কথাগুলো বলছিল। কিন্তু শেষ কথাটা শুনতেই সকলে ভয় পেয়ে উঠে। ওর আওয়াজ শুনেই ভয় পায় সবাই। এমন আওয়াজে কথা বললে ভয় পাওয়ারই কথা। কারণ শান্ত কিন্তু কঠোরতা মিশে আছে তার আওয়াজে।

~ আপনার মনের মধ্যে জিদ আছে যে আপনার মতো কাউকে আমার মতো মিডল ক্লাস এর মেয়ে কি করে রিজেক্ট করতে পারে? আমার কি করে এতো বড় সাহস হয়? তাই তো? আর আপনার কথায় আমি যদি আজ রাজি হয়ে যাই তাহলে কাল আমাকে বিয়ে করে পরশু আমাকে ছুঁড়ে ফেলবেন এই কথাই ভেবে আমাকে প্রপোজ করছেন তো?
এবার জালাল ঘামতে শুরু করল। নিজের হাত দিয়ে কপাল মুছে বলে উঠল,
~ ককি সব বলছ তুমি?
~ আমি যে এখনো আপনাকে আপনি বলে সম্বোধন করছি এই অনেক। আপনি তো ‘তুই’ এর ও যোগ্য না। নেক্সট টাইম আমার আশেপাশে দেখলে আর নিজেকে খুজে পাবেন না। আমার এক আওয়াজে পুরো ভার্সিটি জড়ো হয়ে যাবে। আর তাদের মধ্যে একজনই যে আপনার হাল বেহাল করতে সক্ষম সেটা ভুলে যাবেন না। তাই ভালোই ভালোই বলছি আমি আর কিছু বলার আগে পালান।

~ এটা ঠিক করলে না তুমি, দেখে নেব আমি তোমাকে।
~ তার আগে তোর চোখ আমি গেলে দেব শয়তান।
~ আরে প্রাপ্তি বেবি কাম ডাউন, এতো রাগছিস কেন? তোর হুমকি শুনে তো ও কাঁপছে।
~ চুপ কর তো তুই। তোর সাথে আমার কোন কথা নাই। কে না কে এসে তোর সাথে উল্টা পাল্টা কিছু করতে চাইছে, আর তুই আজ আমাকে বলছিস?
~ আচ্ছা ঠিক আছে। এবার ক্লাস এ চল। দেরি হয়ে যাচ্ছে।
প্রাপ্তি আর কথা বাড়াল না। অন্যরাও যে যার কাজে চলে গেল।

আজ তরু সেই দিন গুলো বেশি করে মনে পড়ছে। ভালোই তো চলছিল ওদের জীবন। শুধু পারিবারিক বাঁধার কারণে তরুই সরে এসেছিল।

তরু আর অর্ণবের টোনাটুনির সংসার চলছিল যেন। তরু প্রায় অর্ণবকে প্রপোজ করত। আর অর্ণব সেটা এড়িয়ে চলত। তবু না বলত না। তরুর পাগলামি গুলো অর্ণবের বেশ লাগত।

তরু প্রায়ই অর্ণবকে রান্না করে খাওয়াতো। নিজে অর্ণবের বাড়ির কাজ করত। বলতে গেলে কলেজ থেকে ফিরে কোনোমতে জামা বদলে সে অর্ণবের বাড়ি ছুটত। অর্ণবের বাড়ি ঝাড় দেওয়া, থালাবাসন ধোঁয়া, কিংবা মাঝেমধ্যে রান্না করে তাকে টেস্ট করানো, কেমন লাগছে না লাগছে। এসব চলতই। অর্ণব প্রথমে অনেক মানা করলেও পরে ও এসবে অভ্যস্ত হয়ে যায়। তরু তো অর্ণবের কথা শোনার মেয়ে না। কিছু হলেই বলত,
~ আমি না থাকলে বুঝি খুশি হবে?
এতেই অর্ণবের মুখ কালো হয়ে যেত। সে চাইলেও আর কিছু বলতে পারতো না তরুকে। কারণ তরু ওর অস্তিত্ব টেনে আনত। একটা সময় এমন আসে যে তরু যে কাজ গুলো করত, সেগুলো তরু একদিন না করলে অর্ণবের করা হত না। সেটা সেদিন অপূর্ণ থেকে যেত।

একদিন তরু পড়তে আসে নি। তাই অর্ণব সোজা ওর বাড়ি যায়। গিয়ে খোঁজ নেয়। তন্ময় শিকদার থাকায় তরুকে দেখতে যেতে পারে নি। তবে সবার আড়ালে একবার তরুর রুমে ঢুকে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিল। তরুর জ্বর হওয়ায় অর্ণব ওর মাথায় জলপট্টি দিয়ে কিছুক্ষণ পর আবার সবার আড়ালে চলে যায়। তরু ঘুমের ঘরে ছিল, তাই কিছু বুঝতে পারে নি। নাহলে জ্বরের ঘোরে কি করে বসত তাই নিয়ে ভাবতেই ভয় হয় অর্ণবের।

কিন্তু তরু যখন সুস্থ হল তখন জানতে পারল যে অর্ণব এসেছিল তার খবর নিতে, সেদিন তরু জলদি অর্ণবের বাড়ি গিয়ে নিঃশব্দে অর্ণবের ঘরে ঢোকে। তখন অর্ণব চেয়ার এ বসে কাজ করছিল। তরু সেই সুযোগে অর্ণবের পিছন থেকে গিয়ে গলা দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,
~ থ্যাংক ইউ মাস্টার মশাই। ইউ আর সো গুড। আমার কত চিন্তা করো তুমি? আমি গলে গেলাম। আর দেখ, আজ আমার জ্বর উধাও।
অর্ণব তরুর আসাতে বেশ অবাক হয়। তার থেকে বেশি অবাক হয় তার বলা কথা গুলোতে। অর্ণব শুধু ভাবছিল যে তরু কোনোভাবে জেনে গেল না তো যে সে সবার থেকে লুকিয়ে তরুর রুমে ঢুকেছিল।

~ আপনি কি করে জানলেন?
~ বাবা বলেছে, যে তুমি আমার খোঁজ নিতে এসেছ।
~ ওহ, সেটা তো আমি অন্যদের ক্ষেত্রেও নিই।
~ একদম না। নিলে কিন্তু আমি তোমাকে করলার জুস করে খাওয়াব। এক জগ পুরো ভরে।
~ ঠিক আছে আমি নিব না।
~ এই নাহলে আমার মাস্টার মশাই। লাভ ইউ।
বলে আবার শক্ত করে সেভাবেই জড়িয়ে ধরল। পরে অর্ণবের জোরাজুরিতে ওকে ছেড়ে পড়তে বসেছিল তরু।

ভালোই চলছিল দিনগুলো। তরুকে যে কেউ অইভাবে দেখলে বলত অর্ণবের গিন্নী। কিন্তু কেউ তো আর দেখত না। তাই বলতও না। কিন্তু ওরা যে ভাবে থাকত তা দেখলেই যে কেউ বলতে বাধ্য হবে যে ওরা পারফেক্ট কাপল।

ওদের পাড়ায় পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে বন্ধন টা খুব ভালো। সময় পেলেই সবাই মিলে একসাথে গল্প করে। নিজেদের সময় সবাই মিলে কাঁটায়। আর বাচ্চারা এক হলে তো কথাই নেই। খেলতে নেমে যায়। বিশেষ করে বিদ্যুৎ চলে গেলে সবাই এক জোট হত।

এক সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ চলে যায়। সেই সময় তরুকে আটকে রাখা অসম্ভব। তন্ময় শিকদার ও কখনো মানা করেন নি। আর তুলি শিকদার মাঝেমধ্যে বকলেও পরে ওদের একসাথে খেলতে দেখে আনন্দিত হন। সেই সন্ধ্যাও সবাই নামাজ পড়ে পড়ার টেবিলে বসেছিল হয়তো। এমন সময় বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে প্রতিটা বাড়ির বাচ্চারা চিৎকার দিয়ে ওঠে। এমনিই অন্ধকার। তার উপর বিদ্যুৎ না থাকায় গরমের জন্য সব বাচ্চারা বলতে গেলে যাদের বয়স ২০-২৫ বছর পর্যন্ত, প্রায় সবাআই বেরিয়ে আসে। অন্য বড়রা বাড়িতে মোমবাতি জ্বালিয়ে বের হয়ে আসেন, তারা আচ্চাদের পাহারা দেন আর অন্য দেড় সাথে গল্পে মেতে উঠেন। এবার তার ব্যতিক্রম হয় নি।

তবে এবার তরুর মনে অন্য এক ইচ্ছে জাগে। অর্ণবকে ভয় দেখানোর। তাই সে খেলার মাঝে সোজা অর্ণবের বাড়ি চলে যায়। অর্ণব তখন মোমবাতি জ্বালাচ্ছিল। অর্ণবকে সেই অবস্থায় দেখে সে ভয় দেখানোর কথা ভুলে যায়। অপলক দৃষ্টিতে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে থাকে।

এদিকে মোমবাতির আলোতে অর্ণব বুঝতে পারে যে তার বাড়ির দরজার কাছে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। তাই কে এসেছে সেটা দেখতেই সে দরজার কাছে যায়। তারপর ডেকে ওঠে,
~ তরুলতা?
তরু এতক্ষণ নিজের ভাবনায় এতই ডুবে ছিল যে বুঝতেই পারে নি কখন অর্ণব তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আগের জায়গায় তাকাতেই দেখে যে অর্ণব নেই। তারপর নিজে সামনে কারো ছায়া দেখে চেঁচিয়ে ওঠে,
~ ভু ভু ভুভ ভুততত।
~ চুপ, এটা মাই, আপনার মাস্টার মশাই।
~ আরে ধুর মিয়া, আমি তোমাকে ভয় দেখাতে আসছিলাম আর তুমি আমাকেই ভয় দেখলে? দিস ইজ নট ফেয়ার। এবার আমার রাগ ভাঙাও।

~ কি করে?
~ আমি যা বলব সেটা শুনতে হবে আর মানতে হবে।
~ কি?
~ আগে বল মানবা।
~ আগে আপনি বলেন যে কি?
~ আমাকে বাদাম খাওয়াতে হবে তাও নদীর পারে নিয়ে গিয়ে। এই শুক্রবার।
~ কিন্তু
~ বাকিটা আমি ম্যানেজ করব।
~ ওকে।
~ ইয়াহু
বলেই অর্ণবকে জড়িয়ে ধরল তরু।

একদিন তরু অর্ণবের বাড়িতে বসে পড়ছিল। বলতে গেলে অর্ণব তরুকে পড়া মুখস্ত করতে দিয়ে পুরো বইয়ের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল। তরুর তো বাইরে থেকে মনে হচ্ছিল বই আর অর্ণবের মুখ ছুঁই ছুঁই অবস্থা। খুব ইচ্ছে করল তার ওই বইয়ে হালকা ধাক্কা মেরে অর্ণবকে পুরো বই এর মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে। কিন্তু সে সেটা করল না। কারণ আমাদের তরু ভালো বাচ্চা।

একদমই না, তরু তখন বলল,
~ মাস্টার মশাই?
~ নিশ্চুপ।
~ মাস্টার মশাই ও মাস্টার মশাই।
~ হুম।
~ চল প্রেম করি।
~ কি?
তরুর কথা শুনেই বইটা মুখের সামনে থেকে সরিয়ে টেবিলের উপর রাখল।
~ চল করি?
~ মানে?

~ মানে কি?
~ আপনি কিছুক্ষণ আগে কি বললেন?
~ চল ম্যাথ করি। আমার আবার উচ্চতর গনিতে একটু বেশি সমস্যা কিন্তু তখন থেকে আমাকে রসায়ন বই নিয়ে বসিয়ে রেখেছ।
~ ওহ আচ্ছা।
~ কেন তুমি কি ভেবেছিলে?
~ প্রেম। (আস্তে)
~ কি? শুনতে পারলাম না।
~ কিছু না। দেখান কি করবেন?

শুক্রবারে অর্ণব বেশি পড়াবে এই বলে তরু অর্ণবের সাথে ঘুরতে এসেছে। অর্ণব আজ অকে বাদাম খাওয়াবে। তাই খুব খুশি দেখাচ্ছে তাকে। বলতে গেলে যেন সে লাফিয়ে লাফিয়ে চলছে। তাই বাধ্য হয়ে অর্ণব ওর হাত ধরে রেখেছে। বারবার আশেপাশে তাকাচ্ছে সে। যদি কেউ দেখে ফেলে। এই জন্য তরু ওর ওড়না দিয়ে দুজনের হাত ঢেকে দিল। অর্ণব আবার হাত ছাড়লে তরু লাফিয়ে লাফিয়ে চলা শুরু করে দিল। তাই অর্ণব হাত ধরেই রাখল।

বাদাম কিনে তরুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে কিছুক্ষন হাঁটল ওরা। তারপর নদীর পারে বসে পড়ল। সময়টা পড়ন্ত বিকেল।

আর আগেই বলেছি, এই সময়টা অসাধারণ। এই সময়েই তরুর জীবনে অর্ণব এসেছিল। এই সময়েই অর্ণবের অনুভূতি তরুর প্রতি জোরালো হয়েছে। এই সময়টায় অর্ণব প্রথমবার তরুকে তরুলতা বলে ডেকেছে। এই সময়টা সত্যিই অন্যরকম।

আজ আরেক পড়ন্ত বিকেল। তরু আর অর্ণব নদীর পারে বসে আছে। দুজনের মধ্যে কোন কথা নেই। তরু বাদামের খোসা ছাড়িয়ে নিজে খাচ্ছে আর অর্ণবকেও খাওয়াচ্ছে। একটা সময় তরু বলে উঠল,

~ অর্ণব, তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?
~ জানি না।
~ তাহলে আমি তোমার কে?
~ সত্যি বলব না মিথ্যে?
~ সত্যি।
~ আপনার প্রতি আমার অনুভূতি নাম আমি দিয়েছি কিন্তু জানি না সেটা কি। এমন একটা অনুভূতি যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব আর না দেখাতে। এই অনুভুতিতা একান্ত আমার। আমি চাইনা আপনি আবেগের বসে কিছু বলে বসেন তাই নিজেকে সবসময় আপনার থীক দূরে রাখি। আমি চাইনা আপনি পরে নিজের কাছে বলেন যে এমনটা না করলেও পারতেন। কিন্তু আপনি আমার অভ্যাস হএ দারিয়েছেন। আপনি আমার কাছে শুধুই আমার আপনি। আপনি আমার তরুলতা। জানেন ২ বছ

~ কি? মাস্টার মশাই!
অর্ণবের এতক্ষণে খেয়াল হল যে ও কি বলতে চলেছিল। তাই নিজেকে সামলে বলল,
~ কিছু না, সঠিক সময় হলে বলব।
~ তাহলে আমি ধরে নিই যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন।
উত্তরে অর্ণব শুধু মুচকি হাসল। আর কোন কথা হয় নি ওদের মধ্যে। এক পর্যায়ে তরু অর্ণবের হাত ধরে ওর কাঁধে মাথা রাখল আর সূর্যাস্ত দেখল।

এরপর অদেন দিন ভালোই চলছিল। আগের মতই তবে এবার অর্ণবও তরুর কাজে সাহায্য করত। তরু রান্না করলে ওর রান্না করায় খেয়াল রাখত যাতে পুড়ে না যায়। চুল খোলা থাকলে তরু বলত চুল বেঁধে দিতে। অর্ণবও তাই করত, না করত না। পরীক্ষার সময় কিন্তু তরুর রান্না করার ইচ্ছা জাগল, কিংবা তরুর অর্ণবের জামা কাপড় গুছাবে। আর সেটা করতে না দিলে সে মেঝেতে বসে কান্না করবে। তাই তরু যখন কাজ করত তখন তরুএ আশেপাশে ঘুরে ঘুরে বই নিয়ে রিডিং পড়ত,বিভিন্ন সমস্যা বুঝানো। দেখলে বলাই যায় না যে ওরা টিচার স্টুডেন্ট। অর্ণব আজও বলে নি তার অনুভুতি তরুর প্রতি। তবু যেন ওদের টোনাটুনির সংসার চলছে। মাঝে মধ্যে এমন এমন কাজ করত যে তরু বোকা খেতো কিন্তু অর্ণব বেশ অবাক হত।

অনুকে পড়াচ্ছে আর ভাবছে। অনুকে কিছু লিখতে দিয়েই সেই তখন থেকে বসে আছে আর এসব ভেবে চলেছে। অনুকে পড়ানোর সময় যে কনদিকেই খেয়াল নেই তার। অনুর ডাকে তার ধ্যান ভাঙল।

~ কি হয়েছে অনু?
~ ম্যাম আমার এখানে একটু সমস্যা হচ্ছে।
~ কোথায়? দেখি।
দেখতে গিয়ে চোখ পড়ল অর্ণব আর একটা মেয়ের দিকে। অনেক কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিল। তরু আর সেদিকে তাকিয়ে থাকতে পারল না। চোখ সরিয়ে নিল। কোনোমতে সেই সমস্যার সমাধান করে সে সেখান থেকে চলে আসলো। বাহানা দিল যে সে অসুস্থ বোধ করছে।

বাড়ি পৌঁছে সে নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে কাঁদতে শুরু করল। সে চাইলেই হয়তো সেদিন অর্ণবকে ওসব না বললেও পারতো। কিন্তু ওকে তো বলতেই হত। গুরুজনের আদেশ ছিল ওটা।


পর্ব ১২

ভালোই চলছিল তরু আর অর্ণবের দিনগুলি। কিন্তু একদিন তরুর ফোনে কল আসে। অবশ্য ফোনটা ওর মায়ের। আর তখন ও সেটা চালাচ্ছিল। ফোনে অজানা নাম্বার থেকে কল আসায় প্রথমে ধরতে চায় নি সে। কিন্তু তার মা তখন রান্না করছিল।তাই তরু নিজের কল রিসিভ করল।
~ আসসালামু আলাইকুম।
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম। এটা কি তিলোত্তমা শিকদারের নাম্বার?
~ জ্বি, আমিই তিলোত্তমা শিকদার।

তরু বেশ অবাক হল। কারণ কেউ ওকে তিলত্তমা নামে ডাকে না। অনেকে ভুল করে ওর পুরো নাম তরু শিকদার ভেবে বসে। তাই ত্রু নিজের মস্তিষ্ক ঘেঁটেও এর কোন জবাব পেল না যে কে কল করেছে।
~ আমি অর্ণব চৌধুরীর মা বলছিলাম।
তরু অপ্রস্তুত হয়ে জবাব দেয়,
~ জ্বি অ্যান্টি।
~ আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাইছিলাম। এখন কিছুক্ষণ। তুমি কি ফ্রি আছো?
~ জ জ্বি ব বলুন।

~ আমিঃ চাই তুমি অর্ণবের থেকে দূরে সরে যাও। অর্ণবের কাছে আর না পড়। আমি জানি না তোমার আর অর্ণবের মধ্যে কি চলছে তবে আমি চাই না তোমার সাথে অর্ণবের যোগাযোগ থাকুক। আমি অর্ণবের বিয়ে ঠিক করেছি। কিন্তু তোমাকে পড়ানোর জন্য ও বিয়েতে রাজি হচ্ছে না। জানি না তোমার মধ্যে এমন কি আছে যে তোমাকে পড়ানোর জন্য ও বিয়ে করতে চাইছে না। কিন্তু আমার তোমাকে পছন্দ হচ্ছে না। আমি জানি না যে আমি যেটা ধারণা করছি সেটা সঠিক কি না। তবে যাই হোক তুমি আর অর্ণবের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ রাখবে না। কিন্তু আমি চাই তুমি দূরে সরে আসো। আমার ছেলের থেকে দূরে। যাতে তোমাদের মধ্যে আর কোন কথা না হয়। কি হল কিছু বলছ না যে? শুনতে পারছ?
~ জ জ জ্বি অ্যান্টি।

~ তাহলে আমি যা বলছি তাই যেন হয়। তোমাকে পড়ানো বাদ দিলে তার পরের দিন অর্ণব নিজের বাড়ি ফিরে আসবে ওই ভাড়া বাড়ি থেকে। তারপর ওর বিয়ে হবে। সব ব্যবস্থা করা শেষ। শুধু তুমি অর্ণবকে না বলে চলে আসবে। ঠিক আছে?
~ জ্বি?
~ আমি বললাম যে তুমি আমার কথা শুনবে তো? অর্ণবকে পারলে আজই জানিয়ে দেও। এখন তো মনে হয় তুমি ওর কাছে পড়তে যাবে?
~ জ্বি অ্যান্টি, আমি জানিয়ে দেব।
~ ঠিক আছে আর এটা তুমি আমাকে কথা দেও।
~ জ জ জ্বি।
~ ওকে।
~ আসসালামু আলাইকুম।
ওদিকে লাবণ্য চৌধুরী কতোটুকু শুনতে পারলেন জানা নেই তরুর। তবে ওর মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে। ওকে আজ অর্ণবের থেকে দূরে চলে যেতে হবে।

তরু যতই বড় হোক না কেন, গুরুজনের আদেশ অমান্য করার সামর্থ্য ওর হয়ে ওঠে নি। কেন সে জানে না। কিন্তু কখনো বড়দের কোন কথা না মানলে নিজের মধ্যেই এক অদ্ভুত অনুভূতি হয় যেটা সহ্য করার ক্ষমতা তখনও হয় নি। তাই সে অর্ণবের মায়ের কথা মেনে নেয়। কারণ অর্ণবের মা যেখানে ওকে পছন্দ করে না, যেখানে ২ দিন পরই অর্ণব অন্য কারো হয়ে যাবে। হোক সেটা জোর করে, কিন্তু অন্য কারো তো হবেই, সেখানে তরুর ওদের মাঝে ঝামেলা সৃষ্টি করার সাহস নেই। ইচ্ছে থাকলেও কিছু সময়ের জন্য হলেও মা ছেলের মধ্যে, এমনকি অর্ণবের সাথে অর্ণবের পরিবারের মধ্যে ঝামেলা হবে, সেটা চায় না তরু। না সেই সাহস আছে। তাই লাবণ্য চৌধুরীর কথাই মেনে নিয়েছিল সেদিন।

সেদিন তরু জোর করে অর্ণবের সাথে ওই নদীর পাড়ে গিয়েছিল ঘুরতে। অর্ণবও না করে নি। তবে ওর কেন জানি মনে হচ্ছিল কিছু একটা হবে।
তরু অন্যান্য দিনের মতো মন খুলে হাসছিল না। এই কথা জিজ্ঞেস করলে জোর করে হাসার চেষ্টা করছিল। তরুই কথা বলা শুরু করল,
~ আচ্ছা মাস্টার মশাই।

~ হুম
~ আমি যদি আজ কিছু চাই তাহলে সেটা আমাকে দিবে?
অর্ণব হেসে জবাব দিয়েছিল সেদিন,
~ আবার একই কথা বলছেন? যদি রাখতে পারি, অবশ্যই দেব।
~ আমি কি তোমার কাছে কখনো এমন কিছু চেয়েছি, যেটা তুমি দিতে পারবে না?
~ না, সেটা চান নি। তবে কখন চেয়ে বসেন, বলা তো যায় না।
~ চিন্তা নেই, আমি এমন কিছু চাইব না, যেটা তুমি দিতে পারবে না।
~ নাহ তেমন কিছু না।
~ আচ্ছা, তাহলে আমাকে কথা দেও। যে তুমি রাজি হবে?
~ কেন কি হয়েছে যে কথা দিতে হবে?
~ জানি না। আমি বলেছি যে কথা দিতে হবে মানে কথা দিতে হবে।
~ আর যদি না দিই?

~ আমি প্রথমবার এমনটা বললাম আর তুমি প্রথমেই আমাকে মানা করলে? আমি তো বলেছি, আমিঃ তোমার সাধ্যের বাইরে কিছু চাইব না। তাহলে এমন করছ কেন?
~ এতো সিরিয়াস হচ্ছেন কেন?
~ কই ন না তো আমি কোথায় সিরিয়াস হচ্ছি?
~ তাহলে ওয়াদা করার কথা আসছে কেন?
~ আমাকে কথা দিতে হবে মানে দিতে হবে। আমি কিছু জানি না। নাহলে আমি গেলাম।
বলেই তরু উঠে দাঁড়াল।
~ ও ও ওকে। আমি রাজি।

তরু আবার ঘাসের উপর বসে পড়ল। অর্ণব তো আর তার তরুলতাকে রাগিয়ে রাখতে পারে না।
~ তুমি আমার কথা ভুলে যাও অর্ণব। আমার সাথে আর কোন যোগাযোগ রেখ না।
বলেই অর্ণবের দিক থেকে চোখ সরিয়ে পানির দিকে তাকাল তরু।
~ আপনি আবার মজা করছেন?
নদীর পানির দিকে তাকিয়ে থেকেই জবাব দিল,
~ নাহ অর্ণব আমি সত্যি বলছি। আমি এটাই চাই, তুমি আমাকে ভুলে যাও। আমি আর তোমার কাছে পড়তে যাবো না। আব্বু কালই জানিয়ে দিবে। তাও আমি আজই বলে দিলাম। আমি এতো দিন তোমাকে অনেক জ্বালিয়েছি। তাই আমার মনে হল যে এটাই ঠিক হবে।
~ হঠাৎ কেন মনে হল যে এটাই ঠিক হবে?

~ আমি বলতে পারব না অর্ণব। তবে আমার মনে হয়েছে যে আমি তোমাকে অনেক জ্বালিয়েছি। অনেক সময় নষ্ট করেছি তোমার। নিজের আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে তোমার উপর সব চাপিয়ে দিয়েছিল। তাই আমি আর তোমাকে ডিস্টার্ব করব না। আর না তোমার সাথে কোন যোগাযোগ থাকবে আমার। আমি নিজের ভুলের জন্য মন থেকে ক্ষমা চাইছি।
~ এগুলো কি আপনার মনের কথা?
~ হুম।
~ তাহলে আপনার চোখে পানি কেন? কেন মনে হচ্ছে যে সেগুলোকে আপনি ইচ্ছে করে আটকে রেখেছেন?
~ কই না তো, ওটা তো কিছুই না। আপনার সাথে এতদিন ভুল করেছি ভেবেই আমার কষ্ট হচ্ছে। তাই আমি আর আবেগকে প্রাধান্য দেব না। এতেই তোমার ভালো হবে। ওহ সরি। আপনাকে তুমি করে বলছি এখনো। সরি।

~ হঠাৎ কি এমন হল যে আপনি এমন করছেন তরুলতা?
~ আমার কিছুই হয় নি। শুধু নিজেকে শুধরে নিচ্ছি ড অর্ণব। কাল থেকে আমি আর পড়তে আসবো না। আর আমার সাথে কোন যোগাযোগ ও রাখবে না, না আমি রাখব, আসি, আসসালামু আলাইকুম।
~ তরুলতা, কিন্তু
আর বলার সুযোগ পেল না। তার আগেই তরু চলে গেল।

এরপর অর্ণব তরুর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু প্রতিবার তরু এড়িয়ে গিয়েছে।
একদিন তরু বাড়ি ফিরছিল। মাঝ রাস্তায় অর্ণব ওকে আটকায়। সাথে মুখ চেপে ধরে। রাস্তাটা নির্জন থাকায় কেউ দেখেনি ওদের। অর্ণব বলে,
~ চিৎকার করেন না, এটা আমি।
~ আপনি এখানে কি করছেন?

~ আমি কারণ জানতে এসেছি, কেন এমন করছেন? সবই তো ঠিক ছিল।
~ সব ঠিক কি করে থাকবে যখন কিছুই ছিল না।
~ কি বলতে চাইছেন আপনি?
~ আমি আপনাকে এতদিন জোর করে এসেছি, তাই আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। আর কখনো আপনার সাথে যোগাযোগ করব না। এতদিনের জন্য ক্ষমা করবেন পারলে। আসি।
বলে আর এক মুহূর্তের জন্য দাঁড়ায় নি সে। চলে গিয়েছে ওখান থেকে।
এরপরও একবার দেখা হয়েছিল ওদের। অবশ্য এটা অর্ণব জোর করেই করেছিল।

ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে ছাদে যাওয়া তরুর অভ্যাস। এটা অর্ণব অনেক আগে থেকেই জানত। কিন্তু সেটা তরুকে পড়ানো শুরু করার পর আর যাওয়া হয় নি। কিন্তু সেদিন ভোরে অর্ণব গিয়েছিল। তাও তরুর বাড়ির ছাদে। কিছুটা লুকিয়েই। তবে অতো সকালে কেউ তেমন থাকে না জেগে তাই নিশ্চিন্তে ঢুকে পড়েছিল। তরু ছাদে আসতেই তরুকে আটকায় অর্ণব।
~ আজও কি বলবেন না যে কেন আপনি এমন করলেন?
~ আমি তো বলেই দিয়েছি
~ কিন্তু আসল কথা বলেন নি।
দেখেন আমি সব বলে দিয়েছি। আর বলার কিছুই নেই।
~ কিছুই নেই?
~ নাহ নেই। আর আপনি কিন্তু এভাবে আমার সাথে দেখা করে আমাকে দেওয়া কথা আপনি রাখছেন না ড অর্ণব।

অর্ণব এই কথা শুনে প্রতিউত্তরে বলার মতো কিছু পেল না। তরুকে ছেড়ে দিয়ে বলেছিল শুধু,
~ ভবিষ্যতে আর কখনো নিজ থেকে আমি আপনার সামনে আসবো না। যতদিন না আপনি আমার সামনে আসছেন।
অর্ণব চলে গিয়েছিল সেদিন। নিজের ঘরে গিয়ে সব গুছিয়ে সোজা নিজের বাড়ি চলে এসেছিল।
এদিকে লাবণ্য চৌধুরী অনেক খুশু হয়েছিলেন সেদিন। তার ছেলে ববাড়ি ফিরে এসেছে। তিনি নানা আয়োজন করছেন। ছেলের বিয়ে দিয়ে নিজের বাড়িতেই রেখে দিতে চান তিনি। নিজের বাড়ি থাকতেও ছেলে কেন ভাড়া বাড়িতে থাকবে? কিন্তু তার এই খুশি বেশি সময় টিকলো না।
অর্ণব বাড়ি এসে নিজের রুমে ঢুকে পড়েছিল। আর সারাদিন বের হয় নি। সন্ধ্যায় বের হয়েছিল। সেদিন ওর বাবাও বাসায় ছিলেন। রুম থেকে বের হয়ে সোজা বাবা মায়ের রুমে চলে যায়।
~ আব্বু আমি তোমাকে কিছু বলতে এসেছি।
~ কি অর্ণব?

~ আমি আজ রাতের ফ্লাইটে নিউ ইয়র্ক যাচ্ছি। সেখানে ভালো একটা জব পেয়েছি। তাছাড়া সেখানে আমি ভালোভাবে ট্রেইন্ড হতে পারব। তাই আমি সেখানে যাচ্ছি। একটু পর বের হব। তাই বলে দিলাম তোমাকে।
~ হ্যাঁ যাও, আমি মানা করছি না, কিন্তু এখনই যাবে? এটা কেমন কথা?
~ আমি সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে। তাই মিস করতে পারব না। তুমি প্লিজ আমাকে পারমিশন দেও। এটা আমার স্বপ্ন।

~ ঠিক আছে। সাবধানে যেও। আর কত সময়ের জন্য যাচ্ছ?
~ সেটা আমি এখনই বলতে পারছি না। ওদের কাছ থেকে জানা হয় নি। ভুলে গিয়েছিলাম। পরে ওখানে গিয়ে জানাবো।
~ ঠিক আছে।
এদিকে ছেলের কথা শুনে লাবণ্য চৌধুরী কথা শুনিয়েই যাচ্ছেন অরনবক্কে। অনেক কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু অর্ণব শুনছে না। শেষে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে শুধু একটা কথাই বলেছিল,
~ আমি আসছি মা, দেরি হয়ে যাচ্ছে। তুমি রাগ করো না প্লিজ। নাহলে আমার কি হয়ে
~ ঠিক আছে যা।

~ আসি মা।
বাবা মাকে সালাম জানিয়ে তাদের থেকে বিদায় নিয়ে ট্যাক্সিতে উঠে পড়েছিল। তারপর সোজা নিউ ইয়র্ক। এর পর বছর ধরে সবার সাথে যোগাযোগ রাখলেও দেশে ফিরে আসে নি অর্ণব।


পর্ব ১৩

নক নক।
~ আসতে পারি?
~ জ্বি আসুন।
~ বলতে পারি?
~ জ্বি।
~ আসলে আমার কিছু সমস্যা ছিল।
~ কি সমস্যা?
~ সমস্যাটা আসলে আমার না, আরেকজনের।
~ কার?
~ আমার জানুর।

~ আপনি?
এবার সাগর মুখ তুলে সামনের দিকে তাকাল। এতক্ষণ সে এক পেশেন্টের ফাইল দেখছিল। সেদিকে তাকিয়েই কথা বলছিল বলে খেয়াল করে নি যে প্রাপ্তি এসেছে। জানুর কথা শুনেই বিঝতে পারল সে।
~ আপনি এখানে?
~ কেন আসতে পারি না?
~ জ্বি অবশ্যই। কি সমস্যা আজ?
~ আসলে সেদিন প্রথমে আপনি আমার জানুকে ফেলে দিলেন।
~ ওটা এক্সিডেন্ট ছিল।

~ যাই হোক। পরে তুলে আমার কাছে দিলেন। তার জন্য জানু আপনাকে থ্যাঙ্কস জানানোর সুযোগ পায় নি। তাছাড়া আপনিই তো বলেছিলেন যে ওর চেক আপ করিয়ে দিবেন। আজ এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম। ভাবলাম দেখা করিয়ে দিয়ে যাই। আর অন্য স্টাফ দের কাছ থেকে শুনলাম যে আপনি এখন ফ্রি। তাই চলে আসলাম।
~ আপনার জানু কি সবসময় আপনার সাথে থাকে?
~ হুম।
~ ওহ আচ্ছা। তো কেমন আছেন?
~ এইতো আছি বিন্দাস। যাই হোক। থ্যাঙ্কস জানানো শেষ, এবার আমি আসি।
~ আর এতক্ষণ যে আমার টাইম নষ্ট করলেন সেটার?
~ আপনি ফ্রি টাইম কেও টাইম নষ্ট করার কথা বলছেন?

~ যেটাই বলি, আপনি কি বলবেন?
~ ওকে আপনি যেটা চান, সেটাই দিব। যদি সামর্থ্যের মধ্যে থাকে।
~ বি মাই গার্লফ্রেন্ড।
~ কি?
~ যেটা বললাম সেটাই। তাছাড়া রোজ আমাকে ফলো করা, লুকিয়ে আমার ছবি তোলা, আমাকে ক্রাশ ভাবা, আমাকে অন্য নামে গিফট দেয়া, আমার বাড়িতে রোজ পাথরে কাগজ মুড়ে চিঠি পাঠানো, আর
~ আর গভীরে যেতে হবে না। আমি রাজি।
~ গুড গার্ল।
প্রাপ্তি চেয়ার চেয়ার উঠে দাঁড়াল। যাওয়ার জন্য দরজার দিকে পা বাড়িয়ে আবার সেটা ফিরিয়ে আনল। তারপর সাগরের কাছে গিয়ে তার মাথায় হাত দিয়ে চুল গুলো ওলটপালট করে দিয়ে দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেল।

সাগর এ ঘটনায় প্রথমে কিছু সময় অবাক হলেও পরে বুঝতে পেরে হেসে দিল।

অনুদের বাড়ি এসে বেল বাজাতেই অর্ণব দরজা খুলে দিল।

আজ মূলত অনুকে পড়ানোর দিন না। তাও তরু এসেছে। এই বলতে যে সে আর অনুকে পড়াবে না। সে চেয়েছিল অনুকে পড়াতে। কিন্তু নিজের আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকছে না তার। কেন থাকছে না- এ কথাটা বেশ ভাবাচ্ছে তরুকে। কারণ তরুর নিজের অনুভূতির উপর নিয়ন্ত্রণ করার বেশ ভালো ক্ষমতা রয়েছে। তাও সেটা অর্ণবের সামনে গেলেই কি থাকে না। নাকি এর আরও কোন কারণ রয়েছে। বুঝতে পারছে না তরু। এই বোঝা না বোঝার পর্যায়ে এসে তরু হাল ছেড়ে দিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে সে অনুকে আর পড়াবে না। তার বদলে আরেকজনকে দিয়ে যাবে এ কাজ। সে নিয়েই কথা বলতে এসেছে লাবণ্য চৌধুরীর সাথে।

তরু জানত যে আজ অনু বাড়ি নাও থাকতে পাড়ে। কিন্তু সেই জায়গায় যে অর্ণব দরজা খুলবে, ভাবতেও পাড়ে নি তরু। কারণ এই সময় অর্ণবের হাসপাতালে থাকার কথা।

তরুর মনে অনুভূতিরা উথালপাথাল শুরু করে দিয়েছে। তবু নিজেকে শান্ত রাখল। অন্য সময় হলে হয়তো শক্ত করে জড়িয়ে ধরত। কিন্তু সে অধিকার এখন তরুর নেই। সে নিজেই ছেড়ে দিয়েছে সেই অধিকার।
~ অ্যান্টি বাসায় আছে?
~ হুম।
~ আমি অ্যান্টির সাথে দেখা করতে এসেছি।
বলেই তরু অর্ণবকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।
~ আরে তরু যে, কখন এলে?
~ এইতো অ্যান্টি এখন ই।

~ কিন্তু আজ তো তোমার পড়ানোর কথা না।
~ হ্যাঁ অ্যান্টি, আসলে আজ আমি আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি।
~ কেন? কোন দরকার ছিল?
~ জ্বি অ্যান্টি।
~ আসলে আমি আর অনুকে পড়াতে পারব না। আমার আব্বু আম্মু মানা করে দিয়েছে। তার বদলে আমার ফ্রেন্ড প্রাপ্তি ওকে পড়িয়ে কভার করে দিবে। এই মাসটা পড়াতাম। কিন্তু আর পড়ানো হবে না।
~ ঠিক আছে, কোন সমস্যা নেই। কিন্তু এই মাসটা পড়ালে
~ না অ্যান্টি।
~ আচ্ছা ঠিক আছে।
বলেই চলে গেলেন লাবণ্য চৌধুরী। তরু সেখান থেক চলে যেতে উদ্যত হলেই একটি হাত তাকে আটকে দেয়। তরু দেখে অর্ণব তার হাত ধরে আছে। তরু রেগে সেই হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলে অর্ণব আরও শক্ত করে তরুর হাত ধরে টেনে নিজের রুমে নিয়ে যায়।

নিজের রুমে গিয়ে তরুকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে নিজেও ভিতরে ঢুকে যায়। তারপর দরজা লাগিয়ে দেয়। কিন্তু লক করে না।
~ এভাবে আমাকে এখানে আনার মানে কি?
~ আমি আমার প্রশ্নের উত্তর চাই।
~ আপনার সাথে আমার কোন কথা নেই।
~ কেন? কেন? তরুলতা? আমি কি করেছি? যার কারণে আপনি আমাকে দূরে চলে যেতে বলেছিলেন, আমি তো চলেই গিয়েছিলাম। ভাগ্যক্রমে দেখা হয়ে গেল। কিন্তু আজও সেই যন্ত্রণা আমি ভুগছি। আমি তো ভাবতেই পারি না কেন আপনি আমাকে দিয়ে ওই ওয়াদা করিয়েছিলেন? আমি জানতে চাই।

~ আপনি তো আমাকে ওয়াদা করেছিলেন আমার সামনে আসবেন না।
~ হুম, তবে আমি ওয়াদা করেছিলাম, যতদিন না আপনি আমার সামনে আসেন, ততদিন আমি আপনার সামনে আসবো না। আর এদেশে আসার পর আপনিই প্রথম আমার সামনে এসেছিলেন। আমি না। তাই আমি আজ আমার জবাব চাই। বলুন আমাকে কেন করেছিলেন সেদিন অরকম।
~ আমি আপনাকে সব বলে দিয়েছি অর্ণব। ওটা আমার আবেগ ছিল।

~ এলাকার সবচেয়ে বিচক্ষণ মেয়ে যাই করুল না কেন, আবেগ দিয়ে কাজ করে না। আপনি তো সব কাজ করার আগে অনেক ভেবে চিন্তে কাজ করেন। সব সমস্যা ঠাণ্ডা মাথায় সামলান, কখনো আবেগে ভেসে যান নি। তাহলে আমি কেন মানব যে সে সময় আমার প্রতি আপনার অনুভূতি আবেগ ছিল। কেন মানবো? বলন
~ আমার বলার কিছুই নেই ড অর্ণব। আমি সব বলে দিয়েছিলাম। যে ওটা আমার কিছু সময়ের আবেগ ছিল। যেটা চলে গিয়েছে।
~ তাহলে এখন আপনার চোখে পানি কেন তরুলতা? জবাব দিন।
~ এটা কিছু না।

~ আপনি আমাকে ভালোবাসেন নি বলছেন? তাহলে আপনার চোখে আমি যা দেখেছি সেটা কি মিথ্যে? আপনি জানেন আমি কবে থেকে আপনাকে ভালোবেসে আসছি? জানেন না আপনি। আমি আপনাকে গত ৮ বছর ধরে ভালোবেসে আসছি। আপনাকে প্রথম দেখাই অনেক ভালো লেগে গিয়েছিল আমার। আপনার কথা, তাকান, ঝগড়া করা কিংবা সব। যেদিন এর পর থেকে আর আপনার সাথে দেখা হয় নি, তারপর থেকে আপনাকে মিস করা শুরু করি। যেটা আমার কাছে অসহ্যকর লাগছিল। তাই এই দুরুত্ব না রেখে আমি আপনাকে খুজে বেড়াই আর শেষে পেয়েও যাই। মেডিকেল থেকে আমার বাসা কাছে হওয়া সত্ত্বেও আপনাদের বাড়ির সামনের বাড়িতে ভাড়া থাকতাম। রোজ আপনাকে দেখার জন্য।

ভোরে আপনি নামাজ পড়ে যখন ছাদে যেতেন, তখন আপনাকে দেখতাম। আপনাকে সামনাসামনি দেখার সুযোগ মিস করতে চাইনি, তাই। যেদিন আপনার বাবা আমার কাছে আসলেন, সেদিন আমি এক কোথায় রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ ওটা আপনি ছিলেন। আপনাকে কাছ থেকে দেখার ইচ্ছে সামলাতে পারি নি আমি। পরে যেদিন আপনি আমাকে ভালোবাসার কথা বললেন, বেশ অবাক হয়েছিলাম। তার থেকে বেশি খুশি হয়েছিলাম এই জেনে যে আপনিও আমাকে ভালোবাসেন। আপনার করা সব পাগলামি আমাকে মুগ্ধ করত। আজও করে। সেই স্মৃতি নিয়েই তো বেচে ছিলাম আমি এতো বছর।

আর সাথে ছিল নিকোটিনের ধোঁয়া। আমার রোজ রাতের সঙ্গী। আপনাকে না পেয়ে নিজেকে সিগারেটের ধোঁয়ায় পুরিয়েছি ভেতর থেকে। বাইরে থেকে যেই অর্ণব চৌধুরীকে দেখে সবাই অনেক কিছু ভাবে, তারা কেউই আমার ভেতর টা দেখে নি। এমনকি আপনিও না তরু লতা। আমার কি দোষ ছিল? কেন কষ্ট পেলাম আমি এতো বছর?কে ন তরুলতা?
~ আমি কাউকে কথা দিয়েছিলাম অর্ণব। আমি চাই নি তোমাকে ছাড়তে। কিন্তু আমি কাউকে কথা দিয়েছিলাম অর্ণব। আমি তার কারণ তোমাকে বলতে পারব না অর্ণব। প্লিজ আমাকে জিজ্ঞেস করো না। দোহাই তোমার। আমি আর পারছি না।
বলতে বলতে ঢোলে পড়ল অর্ণবের বুকে।

~ কাকে কথা দিয়েছেন আপনি? কি হল তরুলতা? বলুন আমাকে।
~ আমি বলতে পারব না। আমি যে তাকে কথা দিয়েছি। তুমি আমাকে আর জিজ্ঞেস করো না। আ আমি
বলতে বলতে খেয়াল হল যে সে অনেক কথা বলে ফেলেছে অর্ণবের সামনে যেটা তার বলা উচিত হয় নি। তরু অর্ণবের বুক থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াল। কথা ঘুরিয়ে বলল,
~ আমি আসি ড অর্ণব। আজকের সব কথা ভুলে যান। আ
~ হ্যাঁ। এই একটা কথাই তো আপনি এতদিন ধরে বলে এসেছেন। সব কিছু ভুলে যেতে। ঠিক আছে। আপনাকে কোথাও যাওয়া লাগবে না। আমিই চলে যাবো। যেখানে ছিলাম এতদিন। আমার জন্য আপনার এই টিউশনি ছাড়া লাগবে না। আমি চলে যাব। আর কখনো আপনার সামনে আসবো না। কখনো না।
বলেই অর্ণব রুম থেকে বেরিয়ে গেল।


পর্ব ১৪

তরুর মেজাজটা বেশ ফুরফুরে হয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগেও সেটা ঠিক ছিল না। অর্ণবের সাথে কথা শেষ হতেই অর্ণব বের হয়ে গিয়েছিল সেখান থেকে। তারপর সেও কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে যায়। আজকাল তার অনুভুতিকে সে নিজে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে যেন। অর্ণবের কথা শুনতে শুনতে কখন অর্ণবের বুকে ঢলে পড়েছিল, সে জানে না। এখন সে সাধারণ ভাবেই হেঁটে চলেছে। কিন্তু তার চোখের পানিরা বাঁধ মানছে না। বাড়িতে ফিরে এসে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছিল সে। হঠাৎ দেখে তার পাশের বাড়িতে ভিড়। বাড়িটা ঝুম্পাদের। মানুষের ভিড় দেখেই বুঝে গিয়েছিল কি হয়েছে। তাই নিজের ঘরে প্রবেশ না করে সেখানেই গেল।

ঝুম্পার বাবা মা তরুদের পাড়ায় সবচেয়ে রোম্যান্টিক জুটি। বলা যায় একেবারে মনের মিল রয়েছে ওদের। আঙ্কেল অ্যান্টির বিয়েটা পারিবারিকভাবে হলেও তাদের দেখে মনে হয় লাভ ম্যারেজ ছিল। কাউকে বললে বিশ্বাস করতেই চাইবে না। কিন্তু এটাই সত্য। এই বাড়িতে একটা কমন ঘটনা হল আঙ্কেল অ্যান্টির ঝগড়া। কোন কারণ না থাকলেও তাদের মধ্যে রোজ একবার করে ঝগড়া হয়। এই নিয়ে সবাই অনেক খুশি থাকে। যেদিন উনাদের মধ্যে ঝগড়া হবে না, সেদিন মনে হয় যেন ওদের মধ্যে কিছু একটা হয়েছে। তাই কোন না কোন কারণে ঝগড়া হয়েই থাকে।

রোজ ঝগড়া করার পর একদিন আঙ্কেল অ্যান্টি ঝগড়া করেন নি। সারাদিনে একবারও না। সেদিন তাদের বাড়িতে মানুষের ভিড় দেখার মতো ছিল। সবাই জোর করে তাদের ঝগড়া করিয়ে তারপর সেখান থেকে যায়। তার আগে এক পাও নড়ে নি। এতে অন্যরা বিরক্ত হলেও আঙ্কেল অ্যান্টি অনেক খুশি। কারণ তারা এমন এক পাড়ায় আছেন যেখানে মানুশে মানুশে অনেক মিল। তাদের একজনের কিছু হলেই সবাই চলে আসে সাহায্য করতে।

তরুদের পাড়ায় সকল জুটিরা চায় ঝুম্পার বাবা মায়ের মতো হতে। সেখানে কেউ কেউ তাদের পার্টনারকে বলে,
~ দেখ দেখ।
~ কি দেখব?
~ আঙ্কেল অ্যান্টি আজও ঝগড়া করছে।
~ হ্যাঁ করছে তো। এটা তো ঠিক নয়। আমি গিয়ে কি ওদের থামিয়ে দিয়ে আসবো?
~ আরে আরে বোকা, থামাতে কে বলেছে। মাঝে মাঝে আমার সাথেও তো তুমি এভাবে ঝগড়া করতে পারো। এতে ভালোবাসা বাড়ে।
ঝুম্পার বাবা মায়ের ঝগড়া যেন সবার জন্য অনুপ্রেরণা।

তবে আজ সকলকে এতোটা গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তরু ভেবেছিল আজ মনে হয় সিরিয়াস কিছু নিয়ে ঝগড়া লেগেছে। যার জন্য ছাড়াছাড়ি পর্যায়ে চলে যেতে পারে। সবাই এই কথাই বলছিল। তরু ভিড় ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করল।

আর প্রতিবারে মতো এবারও ঝগড়া করেছে। তবে আজ দুজন দুদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে। কারণ জানতে চাইলে রুম্পা আর ঝুম্পার থেকে জানা যায়,
-আঙ্কেল বরাবরই শ্যাম্পু হিসেবে সানসিল্কের গোল্ডেন রঙের প্যাকেট ব্যাবহার করে থাকেন। কিন্তু আজ অ্যান্টি উনাকে গোলাপি রং এর প্যাকেট দিয়েছেন। আর গোলাপি রং এ মেয়েলি মেয়েলি ভাব আসে। তাই আঙ্কেল নিজেই এই ঝগড়া শুরু করেছেন। আর অ্যান্টিও তাতে তাল মিলান। এখন দুজনের মাঝে তুমুল ঝগড়া। প্রতিবেশীরা এসে ভিড় জমিয়েছে। সবার মুখ গম্ভীর।
এদিকে তরু পুরো ঘটনা শুনে সেই পরিবেশের মধ্যে একা একা ই হাসা শুরু করে দিল। তার হাশি দেখে ঝুম্পা আর রুম্পাও হাসা শুরু করল। একে একে সবাই শান্ত হল।

পরে আঙ্কেল অ্যান্টিকে বুঝয়ে তাদের মধ্যে মান অভিমান ভাঙিয়ে তারপর নিজের বাড়ি ঢুকল তরু।

নিজেকে বাড়ির সোফায় এলিয়ে দিল। রান্নাঘর থেকে মায়ের আওয়াজ শোনা গেল,
~ তরু বাড়ি ফিরেছিস?
~ হ্যাঁ মা।
~ ঠিক আছে ফ্রেস হয়ে নে।
~ ওকে।
তখন তরুর ভাই কোথা থেকে বলে উঠল,
~ এই তরু ঝুম্পা রুম্পাদের বাড়ি গিয়েছিলি?
~ হ্যাঁ। ভাই।

~ কি নিয়র ঝগড়া লেগেছিল রে?
~ কি আবার শ্যাম্পুর প্যাকেটের রং নিয়ে। আঙ্কেল গোল্ডেন প্যাকেট ব্যবহার করেন। কিন্তু অ্যান্টি আজ গোলাপি প্যাকেট দিয়েছেন তাই।
~ সব তোদের ওই নাটক দেখার ফল।
~ আমি দেখি নাকি?

~ অ্যান্টি তো দেখে। আমার মনে আছে। একটা সময় মা উনাদের বাড়ি রোজ পাঠাত আমাকে কিছু না কিছু রান্না করে, টিভি র দিকে তাকালেই স্টার জলসা দেখতাম। তারপর তো আমি নিজের ফোনের লক স্ক্রিন অন করলেই আমার ওয়ালপেপারের জায়গায় স্টার জলসার লোগো দেখতাম।
~ এর সাথে তাদের ঝগড়ার কি সম্পর্ক?
~ আরে, স্টার জলসার একেটা নাটক মানে একেকটা ঝামেলা। ওখান থেকেই তো মানুষ ঝগড়া শিখে। জানিস, ‘শ্রীময়ী’ না কি নামে একটা নাটক আছে, সেটাতে এক সপ্তাহ ধরে একটা শ্যাম্পু নিয়েই ঝগড়া করার এপিসোড দেখিয়েছে। মানে বুঝছিস, ১ক সপ্তাহে ৭ টা এপিসোড, মানে সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে ওরা একটা শ্যাম্পু নিয়েই ঝগড়া করেছে,
~ ~ তুই জানলি কি করে? তুই কি দেখিস?
~ যেই কয়দিন মা আমাকে ওদের বাড়িতে পাঠিয়েছে, তখন খেয়াল করেছিলাম।
~ ভাই, তুই এতো ভালো করে ঠাণ্ডা মাথায় ম্যাথ করে সময়ের হিসাব করলি কি করে?
~ তবে রে
বলেই তূর্য তরুকে তাড়া করল। তরু তার আগেই সেখান থেকে নিজের রুমে চলে গিয়ে দরজা আটকাল। তারপর কি কি ঘটল এতক্ষণ সেসব ভাবল।

কিন্তু আবার অর্ণবের কথা মনে পড়তেই মুখ চুপসে গেল তার।
~ তুমি কি আজ সত্যিই চলে যাবে অর্ণব?

দুপুরে ওয়াশরুম থেকে ফ্রশ হয়ে বের হয়ে নিজের বিছানায় লাবণ্য চৌধুরীকে দেখতে পেল তরু। কি করছেন উনি এখানে?

ভাবতে ভাবতে সামনে হেঁটে গেল।

লাবণ্য চৌধুরী তরুকে আসতে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে ওর সামনে যান। তারপর হাত জোর করে ক্ষমা চান।
~ আরে আরে অ্যান্টি কি করছেন কি? আপনি এমন করছেন কেন?
লাবণ্য চৌধুরীর হাত ধরে নামিয়ে দিয়ে বলে তরু।
~ আমি প্রথমেই তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি তরু। তোমাকে আমি সেদিন না জেনে কষ্ট দিয়েছিলাম। আমার জন্য তুমি অর্ণবের থেকে দূরে চলে গেলে। আমি যে আর পারছিনা। কাল জানতে পারার পর থেকেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।

~ এসব কি বলছেন আপনি? অ্যান্টি আর ইউ ওকে?
~ আমি জানি, তুমিই তিলোত্তমা শিকদার, সেই তরুলতা, যে অর্ণবের কাছে পড়তে।
~ হ্যাঁ অ্যান্টি, কিন্তু এসব কোথা এখন আসছে কেন?
তরু নিজেই অবাক হয়েছে লাবণ্য চৌধুরীর এমন ব্যবহারে। তবু সেটা প্রকাশ না করেই কথাটা বলল।

~ আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে, তরু। অর্ণব আজ আবার ফিরে যাচ্ছে।
এই একটা কথাই তরুর ভিতর তোলপাড় সৃষ্টি করতে যথেষ্ট ছিল। তরু বিশ্বাস করতে পারছে না যে আসলেই অর্ণব আবার ফিরে যাবে। কিন্তু সেদিনের ঘটনা চোখের সামনে ভেসে আসতেই সে নিজেকে শক্ত করল। অর্ণব তো বিয়ে করে ফেলেছে। তাহলে এসব কথার মানে কি?
~ এসব কি বলছেন আপনি? উনি যাচ্ছেন ভালো কথা।
~ প্লিজ আমার ছেলেকে আটকাও। একমাত্র তুমিই পারো এখন এটা করতে।
~ কিন্তু
~ আমার পুরো কথাটা শোনো আগে।
তরু মাথা উপর নিচ নাড়ায়।

~ আসলে আমার ছেলে তোমাকে পড়ানোর ২ বছর আগে থেকেই আমাদের বাড়ি ছেড়ে এখানে ভাড়া বাড়িতে থাকা শুরু করে। কারণ আমি জানতাম না। তবে অর্ণব নিজের বাড়ি ছেড়ে ভাড়া বাড়িতে থাকুক এটা আমি চাইতাম না। কিন্তু ও আমাদের সাথে দেখা করতে আসতো, ছুটির দিনে এসে থেকেও যেত। কিন্তু ২ বছর পর সেটা অনেক কমে যায়। আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না যে আসলে কি হয়েছে। এখানে আসার পরও সে অন্য মনস্ক থাকত। একদিন ভুল্ক্রমে সে তরুলতা বলে ফেল। আমি আবার জিজ্ঞেস করতেই এড়িয়ে গিয়েছিল।

পরে আমি তোমার সম্পর্কে জানতে পারলাম। তুমি অর্ণবের কাছে পড়। কিন্তু এটা আমাকে অর্ণব জানায় নি। আমি জানতে পারি আমাদের এলাকার এক ভাবির কাছ থেকে। তাড়া তোমাদের সম্পর্কে অনেক কথা বলত আমাকে। কিন্তু আমি প্রথমে মানতে না চাইলেও অনেকদিন শোনার পর আমি ধৈর্য হারয়ে ফেলি। তাছাড়া তখন আমার মাথায় অর্ণবের বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে প্রবল হয়। তাই অন্যদের কাছ থেকে তোমার নাম্বার জোগাড় করে সেসব কথা শুনিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু বুঝি নি তখন। আসলে মনটাকে তখন আমি নিয়ন্ত্রণ করছিলাম না। করছিল অন্যদের সমালোচনা। তার বেশ কিছুদিন পর অর্ণব কিছু না বলেই এই বাড়িতে ফিরে আসে আর সেদিন রাতেই নিউ ইয়র্ক চলে যায়।

কাল রাতে হঠাৎ অর্ণব এর ঘরে ঢুকে প্রথমবার অর্ণবকে কান্না করতে দেখি আমি। অর্ণব আমাকে পেয়ে তোমাদের ব্যাপারে সব বলে দেয়। আমি তখন বুঝতে পারি যে অর্ণব কেন সেদিন দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তোমাকে কথা দেওয়ার পরপরই সে এ দেশ ছারার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে কয়েকবার তোমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু তুমি আমার কথা রাখতে গিয়ে ওকে কিছু বল নি।
এতক্ষণ লাবণ্য চৌধুরীর কথা শুনে ওর চোখে পানি জমা হয়েছিল। কিন্তু এবারে কথা শুনে ও কেঁদেই দিল।

~ অর্ণব আমাকে এটাও বলেছে যে তুমি ওকে ভুল বুঝেছ। ও আজ পর্যন্ত বিয়ে করে নি। ও এখন ও তোমাকেই ভালো বাসে। আজ ও আবার ফিরে যাবে। সন্ধ্যায় ওর ফ্লাইট। প্লিজ তরু আটকাও ওকে। আমি মা হয়েও না জেনে অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাদের। আর নিজের ভুল শুধরাতে চাইছি। অনেক বছর ধরে অর্ণবের থেকে দূরে থেকেছি। আর পারব না। আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিচ্ছি। আমাকে ক্ষমা করে দেও তরু।
তরু আর বেশি কিছুই বলল না। ওড়নাটা ঠিকমতো গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
~ মাস্টার মশাই, সরি, ড অর্ণব এখন কোথায়?
~ হাসপাতালে।
তারপর তরু হাঁসপাতালের উদ্দ্যেশ্যে বেরিয়ে পড়ল। লাবণ্য চৌধুরীও বাড়ি ফিরে যান।

কিন্তু রাস্তায় আজই কোন রিকশা পাচ্ছে না সে। এমনিই সময়টা দুপুর। কিন্তু আর দেরি করতে চাইছে না সে। কিছু না ভেবেই সে হাঁটা ধরল।

যেই রাস্তা দিয়ে গেলে দ্রুত পৌঁছানো যাবে, সেই রাস্তা ধরেই হাঁটা শুরু করল। কিন্তু হঠাৎ এক নির্জন রাস্তায় এসে পড়ে সে। কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল নেই।

নিজের হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে ওঠে সে। পিছনে ঘুরে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার মুখে রুমাল চেপে ধরা হয়। সে নিজের জ্ঞান হারাতে থাকে। সে মনে মনে ভাবে,
~ তাহলে কি আর অর্ণবকে ফিরে পাবে না সে?
ভাবতে ভাবতেই তার চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে আসে।


অন্তিম পর্ব

~ আমাকে এখানে এনেছিস কেন?
জ্ঞান ফেরার পর তরু নিজেকে বাঁধা অবস্থায় দেখে। তারপর জালালকে দেখে বুঝতে পারে যে কে এই কাজ করেছে। নিজেকে ঠিকমতো দেখে। নাহ, জালাল এখনো তার সাথে কিছুই করে নি। তাই শক্ত গলায় কথাটা বলে ওঠে।

~ কি করব বেবি বল? আমি তোমাকে এতো করে বোঝালাম। তাও তো তুমি বুঝলে না। এখন আমিই বা কি করতে পারি? বল তো এটা কি ঠিক হয় নি?
~ আমাকে ছেড়ে দে জালাল।
~ আমাকে তো আগে আপনি করে ডাকতে তুমি, আর এখন তুই? কেন? কেউ নতুন এসেছে না কি লাইফে?
~ আমাকে না ছাড়লে তোর সাথে কি হবে সেটা তুই কল্পনাও করতে পারবি না। তোকে মেরে গুম করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখি আমি।

~ ওহ আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম। তাই যদি হয় তাহলে তো অনেক সমস্যা। কিন্তু আমাকে গুম কি করে করবে, যখন তোমার হাত পা বাঁধা? আর আমার ক্ষমতা সম্পর্কে তুমি কি জানো? যাই হোক, এখন আবার আপনি করে বলা শুরু করো, নাহলে আমি কি করব
~ তোকে আগে আপনি করে ডাকতাম, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তোকে আপনি করে ডাকাটা আমার লাইফের সবচেয়ে বড় ভুল, যাই হোক, তোর কথা শুনে তোর ক্ষমতা সম্পর্কে আমার বোঝা হয়ে গিয়েছে।
~ কি বুঝলে বেবি?

~ প্রথমে আমার সাথে জোর জবরদস্তি করবি, তারপর হয় আমাকে পাচার করবি, না হলে আমার শরীর এর অনশ কেটে বিক্রি করবি। এটাই তো।
~ তুমি ক কি করে জানলে?
~ তোকে তো আমি প্রথমেই বুঝে গিয়েছিলাম, কিন্তু শুধু চান্স দিয়েছিলাম শুধরানোর। কিন্তু তুই?
~ সেটা তুমি যাই বল, আর কি কি বুঝেছ আমাকে নিয়ে?
~ তুই? তোকে দেখে মনে হয় না যে তুই বাচ্চাদেরও ছার দিয়েছিস আজ পর্যন্ত নিজের ইচ্ছা পূরণ করতে।
এবার জালাল ঘামতে শুরু করল।

তরুর ধারণা যে এতোটা মিলে যাবে সেটা সে ভাবে নি।
~ কেন কি ভেবেছিস? আমি বুঝি নি। হুহ। তোদের মতো মানুষকে আমার ভালো করে চেনা আছে। ওইদিন ভাইকে না আটকালে ওইদিনই টপকে যেটি। কিন্তু আমি বাঁচালাম। কেন যে বাঁচালাম? নাহলে আজ আর এখানে আসতে হত না আমাকে।
~ এখন যখন এসেই গিয়েছ, তাহলে আমি আমার কাজ করি।
~ অইখানে দাঁড়ায় থাক, আমার কিছু হলে কিন্তু তুই বেচে থাকতে পারবি না।
~ সেটা তো পরে দেখা যাবে।

~ এখনই দেখ। ভাব তোর মা বনের সাথে কেউ এমন করল, তখন তুই কি করবি?
~ আমার পরিবারের কিছুই হবে না।
~ হতেই পারে, তোর মতো ছেলে যেখানে থাকে সেখানে হবে না? তোর বন্ধু গুলোই তো একেকটা শয়তান। একদিন তোর বোনকেও ছাড় দেবে না। সেদিন তুই কি করবি?
এ কোথায় জালাল অপমানিত বোধ করে।

তাই রাগী গলায় বলে ওঠে,
~ আমার মা বনের কিছু হবে না, তুই চুপ থাক।
~ আমি চুপ থাকব? ওহ বুঝলাম এবার।
~ কি বুঝলি?
~ তার মানে তোর মা বনের সাথে এমন কাজ তোর বন্ধুরা করবে না।
এবার জালাল শান্ত হলেও সেটা বেশিক্ষণ টিকল না তরুর কথার বাকি অংশ শুনে।
~ যেখানে তুই নিজে ওদের ক্ষতি করতে পারিস।

এতক্ষণে নিজেকে সামলে রাখতে পারছিল না। তরুর এই কথা আগুনে ঘি ধালার মতো কাজ করে। সে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিয়ে একটা লোহার রড হাতে তুলে নেয়। তারপর সেটা দিয়ে তরুকে ততক্ষণ মারতে থাকে জতক্ষন না তার রাগ কমে। শেষে নিজেকে শান্ত করে সামনে তাকাতেই দেখে তরু অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। রক্তে ভাসাভাসি অবস্থা তার। কিন্তু এতে জালালের ভাবান্তর দেখা গেল না। সে সেখান থেকে বের হয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে চলে গেল।

বিকালে,
অর্ণব নিজের বাড়ি ফিরে এসে প্যাকিং শুরু করে দেয়। ছেলের এমন ব্যবহার দেখে অবাক হন লাবণ্য চৌধুরী, তাহলে কি অর্ণব সত্যিই চলে যাবে।

নিজে নিজে আর জল্পনা-কল্পনা না করে সরাসরি অর্ণবের কাছে গিয়ে বলেন,
~ তুই কি করছিস অর্ণব?
~ কেন? আমি তো বলে ছিলাম আমি আজ চলে যাব।
~ কিন্তু তরু
~ না আম্মু, প্লিজ ওর কথা আর তুলো না, আমি কিছু শুনতে চাই না।
লাবণ্য চৌধুরী অর্ণবকে অনেকবার বলতে চান কিন্তু অর্ণব শুনতেই রাজি হচ্ছিল না, পরে তিনি জোরে বলে ওঠেন,
~ আজ তোর তরুর সাথে দেখা হয় নি?
~ না তো আম্মু।
~ কিন্তু তরু তো তোর সাথে দেখা করতে দুপুরেই বেরিয়ে গিয়েছিল।
~ কি বলছ এসব?
লাবণ্য চৌধুরী ছেলেকে সব খুলে বলেন। সব শুনে অর্ণবের মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আবার হুঁশ ফিরে মায়ের ডাকে।
~ তাহলে তরু এখন কোথায়? ও তো নিজের বারিতেও নেই।
এবার অর্ণবের তরুর ভয় পাওয়া মুখের ছবি ভেসে ওঠে, যেটা সেদিন অর্ণব রাস্তায় দেখেছিল। সে আর দেরি না করে তরুর বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যায়।

সেখানে পৌঁছে জানতে পারে যে তরু সেই দুপুরের পর থেকে বাড়ি ফিরে নি। সাসা পাড়ায় এই খবর ছড়িয়ে পড়ে। সবাই খোঁজ চালায় কিন্তু অর্ণব বা তরুদের পাড়ায় তরুকে খুজে পাওয়া যায় না। হাসপাতালের আশেপাশেও না।

অর্ণব তূর্যর কাছ থেকে সব শুনে যে কিছুদিন আগে তরুর সাথে কিছু হয়েছে কিনা। জালালের নাম শুনে অর্ণব তূর্যর সাথে বেরিয়ে পড়ে।

তরুর জ্ঞান ফিরতেই দেখে সে নিজের ঘরের বিছানায় শুয়ে আছে। মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। বাবা চেয়ারে বসে আছেন। আর ভাই দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে।

তরু ওঠার চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না। কাল প্রচুর মার খেয়েছে সে।

তরুকে নড়তে দেখে তুলি শিকদার খুশিতে তন্ময় শিকদারকে ডেকে ওঠেন। তুর্যও দৌড়ে আসে।
~ বোন বোন, তুই ঠিক আছেস তো? তোর ব্যথা লাগছে না তো? বল আমায়, ভাই সব ঠিক করে দেবে। আমাকে একবার বল। তুই ডেইরী মিল্ক খাবি না? আমি এক্ষুনি এনে দিচ্ছি। একটু ওয়েট কর।
ভাই তার জন্য এমন করছে ভেবেই হেসে ওঠে তরু। হাত হালকা বেড়ে শান্ত হতে ইশারা করে। তন্ময় শিকদার বলেন,
~ ও এখন অসুস্থ তূর্য, ওকে রেস্ট নিতে দে।

~ ঠিক আছে বাবা, আমি তোকে পরে ডেইরী মিল্ক খাওয়াবো, তুই যতোগুলা চাস, তবে ডাক্তারের সাথে কথ আ বলে। ঠিক আছে বোন? এখন তুই রেস্ট নে। বলে উঠে দাঁড়ালো। তন্ময় শিকদারও উঠে চলে গেলেন। তুলি শিকদারের মুখের দিকে এতক্ষণ তাকানোর অবস্থা ছিল না যেন। তরু দেখতে পেল তার মায়ের চোখের নিচে কালই পড়েছে। চোখগুলো ফুলে লাল হয়ে আছে। নিশ্চয়ই কেঁদেছেন। তরুর ভাষ্যমতে তার মা ন্যাচারাল বিউটি। তার চেহারার এই অবস্থা দেখে কষ্ট হল তরুর।
তুলি শিকদার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন খাবারের ব্যবস্থা করতে।

তরু তূর্যর দিকে ঠিকমতো তাকাল। বুঝতে পারল সে এখানে কিভাবে এসেছে আর জালাল এখন কোথায়? সাধারণত মারামারির কাজটা তূর্যর বন্ধুরা করে থাকে। কিন্তু তূর্যর অবস্থা দেখে কেউ না বুঝতে পারুক, তরু ঠিকই বুঝেছে যে আজকের স্টুডেন্ট জালালকে ভালোমতো লেকচার বুঝিয়ে দিয়েছে তূর্য।

তরু হাতের ইশারায় তুর্যকে কাছে ডাকল।

তূর্য তরুর কাছে গিয়ে হাঁটু ভেঙে মাটিতে বসল।
~ কি হয়েছে বোন? কিছু লাগবে?
তরু অনেক কষ্ট করে বলল,
~ বেঁচে আছে না কি
তূর্য ওর পুরো কথা না শুনেই বাঁকা হাসি দিল। এই হাসি দেখতে যতোটা কিউট, এর ফলাফল ততটা কিংবা তার থেকেও বেশি ভয়াবহ।

~ তুই রেস্ট নে। আর কিছু ভাবতে হবে না।
বলে তূর্য চলে গেল।
এবার তরুর মাথায় আসলো, অর্ণব কি তাহলে আবার চলে গিয়েছে তাকে ছেড়ে? আর কি ফিরবে না? সে কি আবার হারিয়ে ফেলল তার মাস্টার মশাইকে?

হয়তো চলে গিয়েছে। এতক্ষণে তো দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা।

৩ বছর পর~
সকালে,
~ অর্ণব অর্ণব, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নেও। আমাদের দেরি হচ্ছে। আব্বুরা চলে গিয়েছে। আমাদেরও বের হতে হবে। অদেইকে বাসায় বাবা মা ওয়েট করছে। কত দেরি করবে?
~ জান, জাস্ট টু মিনিটস।

~ রাখ তোমার টু মিনিটস, টু মিনিটস করতে করতে ২০ মিনিট হয়ে গিয়েছে। এবার তো বের হও?
~ আরে, জান, এতো জলদি করছ কেন। দেখ, আমার শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছি, একটু ভালোমতো সাজব না?
~ এই প্রথমবার যাচ্ছ না, আগেও গিয়েছ। তাই এতো সাজাসাজির কি আছে? দেখ আমি তৈরি হয়ে গিয়েছি।
~ আমি রেডি।
নিজের চুল সেট করতে করতে বের হল অর্ণব। সামনে তাকাতেই থমকে গেল।
~ তরুলতা,
~ হুম।
~ আজ ও বাড়ি না গেলে হয় না? দেখ আম্মু আব্বু আর অনু তো গিয়েছেই। তাই বলছিলাম কি, আমি আর তুমি, মানে – হাম তুম এক কামড়ে মে বান্ধ হ্যায় ওর চাবি খো জায়ে।
~ বাদ দেও তোমার বান্ধ কামরা। তুমি থাকলে থাক। আমি গেলাম।
~ আচ্ছা বাবা যাচ্ছি।

বাড়ি পৌছুতেই তূর্য ওদেরকে ভেতরে ঢুকাল। তরু আর অর্ণবকে ভেতরে ঢুকতে দেখে ২ বছরের একটি মেয়ে দৌড়ে এসে অর্ণবের কোলে উঠল। অর্ণব ওকে বলে উঠল,
~ তো আমার অরু মাম্মা কেমন আছে?
~ তোমার মেয়ে তো সব জায়গায় ভালো থাকে। নিজের মায়ের কথা মনেই থাকে না। শুধু বাবাই ভালো।
রাগে গজগজ করতে করতে বলল তরু।
~ অরু মাম্মা, তোমার আম্মু রাগ করেছে, একটু রাগ ভাঙ্গিয়ে দেও তো।
অর্ণব বলে উঠল। সাথে সাথে অরু অর্ণবের কোলে থেকেই তরু গাল টেনে দিল এক হাত দিয়ে। আর তরুও হেসে উঠল।ততক্ষনে তন্ময় শিকদার আর তুলি শিকদার ও চলে এলেন অর্ণবের পরিবারকে স্বাগতম জানাতে।

অরু, অরুমিতা চৌধুরী, অর্ণব আর তরুর মেয়ে। অর্ণবের পরিবারকে তরুর পরিবার দাওয়াত দিয়েছিল। মুলত প্রাপ্রি আর সাগরের বিয়ের তারিখ ফাইনাল করতেই। সেটা নিয়ে বড়রা বিকালে কথা বলবেন।

সাগর এখন অর্ণবের সাথে ওই হাস্পাতালেই কাজ করে। প্রাপ্তিও নিজের পড়া শেষ করে চাকরি করে। দুই পরিবারের সম্মতিতেই এক সিদ্ধান্ত। তূর্য গতকাল এসেছিল অর্ণবের পরিবারকে নিজের বাড়িতে ইনভাইট করতে। আর ওর মামাকে দেখে তূর্যর কোলে উঠেছে তো উঠেছেই। আর নামার নাম নেয় নি। তাই ওরা যেহেতু পরের দিন ও বাড়িতে যেত, তাই অরুকে তূর্যর সাথে পাঠিয়ে দিয়েছে। আর অরুর ও বাড়িতে কোন সমস্যা হবে না কারণ তূর্যর স্ত্রী সাফিয়া আছে খেয়াল রাকাহ্র জন্য। তাছাড়া তাছাড়া মামাত ভাই সূর্যও আছে। ওদের বয়সের পার্থক্য কয়েক মাসের। সূর্য বড়, অরু ছোট।

দুপুরে অর্ণব তরু খাওয়া দাওয়া শেষ করে অরুকে ঘুম পাড়াচ্ছে। তরু বিছানা থেকে উঠে নিজের রুমের জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় আর ভাবতে থাকে কি করে তাদের বিয়ে হয়েছিল।

৩ বছর আগে,

তরু নিজে থেকে উঠে যায়। বিছানায় পড়ে থাকতে ভালো লাগছিল না তার। এমনিই অর্ণব চলে গিয়েছে বলে তার মন খারাপ। সময়টা বিকেল। তাই সে ভাবল যদি নদীর পাড়ে থেকে ঘুরে আশা যায়, মন্দ হয় না। যেই ভাবা সেই কাজ। নিজে কষ্ট করে একটা শাড়ি পরে নেয়। তারপর সবার থেকে লুকিয়ে নদীর পাড়ে যায়। শাড়ি পরায় কেউ বুঝতে পাড়ে নি যে ওটা তরু। কারণ তরু যেই অবস্থায় আছে, সে অবস্থায় শাড়ি পরা সম্ভব না। পড়ন্ত বিকেলের দৃশ্য উপভোগ করতে। সে গাছটার নিচে বসে পড়ে। এখানেই তার আর অর্ণবের প্রথম দেখা হয়েছিল। গাছটায় আজও একটা পাখি আছে। কিন্তু সেই পুরনোটা না। দেখেই তরু বুঝ যায়।

৮ বছর আগের দৃশ্য তার সামনে ভেসে ওঠে। সকল স্মৃতি স্মরণে তরু যখন ব্যস্ত, তখন তার মনে হয় কেউ তার পাশে বসেছে। সে পাশে তাকাতেই চমকে ওঠে।
~ মাস্টার মশাই, তুমি?
~ হ্যাঁ কেন আসতে পারি না?

~ না, তুমি তো নিউ ইয়র্ক
~ যাই নি। তার আগেই তো তুমি কিডন্যাপড হয়ে গেলে।
~ তার মানে তুমি যাও নি, আর আমাকে বাঁচানোর সময় তুমি ছিলে সেখানে?
~ হুম, ভেরি গুড।
~ জালালের কি করেছ?
~ আমি তো বেশি কিছু করি নি। ওই জাস্ট একটু বুঝিয়েছি। আর কিছু না।
বলেই বাঁকা হাসল অর্ণব।

~ এই এই তুমি এভাবে হাসছ কেন? আমার ভাইও একই কাজ করেছিল এই কথা জিজ্ঞেস করলে। তার মানে তোমরা দুজন
~ আর ভাবতে হবে না। এখন আমি যা যা বলব, মন দিয়ে শুনবে।
~ কি?
~ জানো তরুলতা, পড়ন্ত বিকেল সময়টা অসাধারণ। বিশেষ করে আমার জীবনে। এই সময়েই আমার জীবনে তুমি এসেছিলে। এই সময়েই আমার অনুভূতি তোমার প্রতি জোরালো হয়েছে। এই সময়টায় আমি প্রথমবার তোমাকে তরুলতা বলে ডেকেছিলাম। এই সময়টা সত্যিই অন্যরকম।

তাই সময়েই তুমি আমার জবিন থেকে চলে গিয়েছিলে। আমাকে দিয়ে এক ভয়ংকর ওয়াদা করিয়েছিলে। তাই আজ, এই সময়েই আমি তোমাকে নিজের করে নিতে চাই। আমি তোমাকে ভালোবাসি তরু লতা। তুমি আমার অনুভূতি আমার থেকে বেশি ভালো বুঝতে পারো, আমি জনাই। তাই শততবার মানা করা সত্ত্বেও তুমি আমাকে ছারনি। পরে কিছু কারণে, কোন এক অয়াদার কারণে তুমি আমার থেকে দূরে গিয়েছিলে, কিন্তু সেটাও এখ নেই। আমার অনুভুতিকে আমি হয়তো ভালোবাসা বললেও কম হবে। তবে আমি এই অনুভূতির কোন আলাদা নাম চাই না। আমি শুধু তোমাকে চাই তরুলতা। ভালবাসবে আমায়> তোমার মনের কোণে দেবে একটু ঠাই?
তরু নিশ্চুপ। তরুর কোন জবাব না পেয়ে অর্ণব বলে উঠল,
~ কি হল তরুলতা কথা বলছ না কেন?

এবার তরু স্বাভাবিকভাবেই উঠে দাঁড়াল। নিজের হ্যান্ডব্যাগ থেকে ফোন বের করে ডাটা অন করল তারপর ইউটিউব এ গিয়ে একটা অডিও অন করল।
”তো ক্যায়া কারু মে
মার জায়ু?”
এই টুকু শুনিয়ে অফ করল ফোন।

এটা দেখে বেশ অবাক হল অর্ণব। কি করছে মেয়েটা? পাগল হয়ে গেল নাকি?তরু বলে উঠল,
~ তুমি আমাকে ভালোবাসো ঠিক আছে, আমি বাসি না। সো বাই বাই। আর ভালো বাসলে কেউ এতো দূরে থাকে। আমি কাল থেকে অসুস্থ আর তুমি আমাকে দেখতেও আসো নি?
অর্ণব কিছু বলতে যাবে, তার আগেই তরু আবার ওটা অন করে দিল।
”মেরি কোয়ি ফিলিংস নেহি হ্যায়
তুমহারি ফিলিংস তুমহারি?
তুড্ডা কুত্তা টমি
সাড্ডা কুত্তা কুত্তা?”

এইটুকু শুনিয়ে ফোন অফ করে আবার ব্যাগে রেখে দিল। তারপর নিজেই বলল,
~ তোমার ভালোবাসা ভালোবাসা আর আমারটা নাটক? আমি নাহয় কথা দিয়েছিলাম, তার মানে এই না যে দেশ ছেড়ে চলে যাবে? এতো সাহস হয় কেন তোমার? আমি ভেবেছিলাম অন্তত তোমার বাড়ির কাছ থেকে তোমাকে একটু হলেও দেখতে পারব। কিন্তু তুমি তো তুমিই, চলে গেলে। আর আর উনি বলে কিনা উনি বিয়ে করেছেন? হুহ
~ কিন্তু ওটা তো তুমিই ভাবছিলে, আমাকে বলার সুযোগই দেও নি।

~ আমি দিই নি তো কি হয়েছে? বলা যায় না? মুখ নাই তোমার? আর আর জনাব নিজের মহিলা কলিগের সাথে এতো ঘেঁষে ঘেঁষে দাঁড়ানোর মানে কি? যে কেউ ভাববে তোমরা বিবাহিত। হুহ
~ ওহ তাহলে এই কারণে রেগে আছে আমার তরুলতা?
~ ধুর মিয়া ভাগেন। আমি কারো তরুলতা না। এই যে এখানে আছে মাটিতে ঘাসপাতা এদের বিয়ে করেন যান।
অর্ণব দাঁড়িয়ে থাকা থেকে এবার এটিটিউড নিয়ে ঘাসের উপর বসে পড়ল। সাথে তরুকেও হাত ধরে বসাল।

~ তাহলে বিয়ে করে
~ ওহ ওহ, বিয়ে করেও নিয়েছেন? ওই বিদেশি সাদা চামড়া কে?
~ নাহ, বললাম যে তুমি যেহেতু আমাকে মেনে নিচ্ছ না। তাই আবার ওখানে ফিরে গিয়ে একটা সাদা চামড়া দেখে মেয়েকে বিয়ে করে নিব। তোমারও যেহেতু এই ইচ্ছা।

এবার তরু রাগ দেখিয়ে উঠে দাঁড়াল। আর চলে যেতে পা বাড়াল। কিন্তু তার আগেই অর্ণব ওর হাত ধরে নিজের কোলের অপর বসিয়ে দিল।
~ ঠিক আছে ম্যাম আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না। এবার তো রাগ কমান আর বলেন যে আপনি কি আমাকে ভালবাসেন?
তরু নিশ্চুপ।
~ আচ্ছা, ঠিক আছে, তোমাকে বলতে হবে না। এর আগে যতবার বলেছ সেটা দিয়ে আপাতত কাজ চালিয়ে নেব। তবে
তরু অন্যদিকে মুখ ঘোরালো।
~ তবে আজ আব্বু আম্মুকে জানিয়ে তোমার বাড়িতে বাবা মায়ের সাথে দেখা করাতে নিয়ে আসতে গিয়েই এতো দেরি হয়ে গেল। তাই তোমার সাথে আজ দেখ করতে পারি নি। ওটা নিয়ে আর মুখ ফোলাতে হবে না।

তরু অনেদিকে মুখ রেখেই হেসে ফেলল। এবার ভ্রূ কুঁচকে অর্ণবের দিকে তাকাল।
~ তুমি আমাকে আপনি করে দাকছ না যে?
~ তোমাকে তুমি করে ডাকার ইচ্ছা আমার ৮ বছর আগে থেকেই। তাই আজ আর আপনি বললাম না। মাঝেমধ্যে বলব, আবার বলব না। তবে আজ থেকে তুমি করেই বলব তরু ম্যাম।
~ ঠিক আছে আমি রাজি?
~ সত্যি?
~ হুম।
~ কোনটাতে? আমাকে ভালোবাসাতে, নাকি বিয়েতে?
তরু কোন কথা না বলে “ভিক্টরি সাইন’ দেখাল। যার অর্থ ও দুই টাতেই রাজি।

অর্ণবও তরুকে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সূর্যাস্ত দেখল।

দুই পরিবারই ভীষণ খুশি ছিল ওদের বিয়েতে। তন্ময় শিকদার আগে থেকেই ভেবেছিলেন মেয়ের পড়ালেখা শেষ হলে অর্ণবের সাথে এ নিয়ে কথা বলবেন। কিন্তু তার আগেই অর্ণব চলে যায়। আর এখন অর্ণব নিজ থেকেই এসেছে বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে। সবাই খুব খুশি ছিল। আর তূর্য, সে তো মহা খুশি। মন মতো একটা ছেলে পেয়েছে বনের বর হিসেবে। যেকোনো কাজে হেল্প করতে পারবে। সেটা মানুষ মারা থেকে সব। একেবারে ১০০ তে ১০০ যেন।

~ তরুলতা কি করছ?
অর্ণব বিছানা থেকে উঠে এসে তরুকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল।
~ কিছু না। শুধু পুরনো কথাগুলো মনে করছিলাম।
~ ওহ। তুমি সেদিন আমাকে যে গান শুনিয়েছিলে? প্রপোজের উত্তর কেউ এইভাবে দেয়? তুড্ডা কুত্তা টমি?
~ আমি কি করব?আ আমার রাগ উঠেছিল।
~ ওকে জান ঠিক আছে। এখন আর রাগ করো না। অরু উঠে যাবে।
আর কোন কথা বলে নি। বাড়িতে সবাই বিশ্রাম নিচ্ছে। অরু বিছানায় ঘুমাচ্ছে।

সময়টা বিকেলের শেষ ভাগ হলেও হঠাৎ ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়তে শুরু করল। তরু একবার অর্ণবের দিকে তাকিয়ে ওকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে ছাদে চলে গেল। অর্ণব অরুকে সাফিয়ার কাছে দিয়ে নিজেও গেল ছাদে।

ছাদে গিয়ে দেখে তার তরুলতা নিজেকে প্রাকৃতিক বৃষ্টির কাছে বিলিয়ে দিয়েছে। সে নিজেও সেখানে যায় একসাথে বৃষ্টিতে ভিজবে বলে। বৃষ্টি বিলাস করতে। আর এক পড়ন্ত বিকেলে পরিবেশ – সময় সাক্ষী রইল তাদের সীমাহীন এবং খুনসুটি ভালবাসার।

লেখনী – সাদিয়া সৃষ্টি

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “এক পড়ন্ত বিকেলে – ভালোবাসার গোলাপ খাট এ” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – এক পড়ন্ত বিকেলে (১ম খণ্ড) – ভালোবাসার গোলাপ খাট এ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *