মধ্য দুপুর – Ajob premer golpo

মধ্য দুপুর – Ajob premer golpo: সাজু আমায় ছেড়ে দিয়ে ছিটকে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। সৎ মা তখন এলেন আমার কাছে। তারপর আমার চুল টেনে ধরে বললেন, অনেক খেলা হয়েছে।


১ম পর্ব

আমার বিয়ের ঠিক তিনবছর পরেই আমার স্বামী মারা গেছে। বিয়ের পর একটা মেয়ে হয়েছিল আমার। তার বাবার মৃত্যুর দিন ছিল আমার মেয়ের প্রথম জন্ম বার্ষিকী।

আমার স্বামী বাজার থেকে কেক কিনে আনতে গিয়েছিলেন মেয়ের জন্মদিনে কাটার জন্য। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা। কেক নিয়ে ফেরার সময় তিনি গাড়ি চাপায় নিহত হন। মৃত্যুর পরেও তার হাতে কেকের প্যাকেটটা ছিল।

আমার মেয়েটার নাম ঐরী। ওর বাবার দেয়া নাম। ঐরীর বাবার মৃত্যুর পর ওর দাদু এসে আমাকে আর আমার মেয়েকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলেন বাড়ি থেকে। বললেন, চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যা তোরা! তোদের দেখলে আমার মাথায় আগুন ধরে যায়!

আমি কেঁদে কেটে বললাম, মা, মাগো, আপনি ছাড়া আমাদের আর আশ্রয় দিবে কে বলুন? তাছাড়া আমরা তো কোন অপরাধ করিনি যে আমাদের তাড়িয়ে দিবেন আপনি? আর ঐরীতো আপনার নিজের রক্ত। আপনার ছেলের কলিজার টুকরা!

মা তখন ধমকে উঠলেন আমায়। ধমক দিয়ে বললেন, তুই আর তোর মেয়ে আমার ছেলের খুনি। সর্বনাশ করছস তোরা মা মেয়ে আমার। আমার একটা মাত্র ছেলে। এই ছেলেরে গাড়ি চাপা দিয়ে মারছস তোরা! যা এইখান থেকে সড়। তোদের দেখলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। আর কোনদিন এই বাড়িতে আসবি না। খবরদার!

আমি ঐরীকে কোল থেকে নামিয়ে বিছানায় শুইয়ে রেখে মার কাছে গিয়ে মার পায়ে পড়ে কাঁদতে লাগলাম। কাঁদতে কাঁদতে বললাম, মা, মাগো, ও মা, আপনি অত নিঠুর হবেন না! আমার নিজের তো মা নাই।

ছোট থেকেই সৎ মায়ের অত্যাচারে পিষ্ট হয়ে বড় হয়েছি। মায়ের আদর সোহাগ কী তা কখনো পাইনি। যা একটু আদর পেয়েছিলাম তা আপনার কাছে এসেই। আপনি কখনো আমায় কষ্ট কী বুঝতে দেননি। মা, আপনার কী মনে পড়ে না ওই দিনটার কথা। ঐরী যেদিন পৃথিবীতে আসবে সেদিন আমার শরীর ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। ডাক্তার বললো, আমি বাঁচবো না।

তখন যে আপনি ডাক্তারের পা ধরে বলেছিলেন, এই মেয়ে আমার কলিজা। এর কিছু হলে আমি বাঁচবো না ডাক্তার। ও মা, এই আপনি কীভাবে অত নিঠুর হতে পারেন!
আমি কাঁদছি। খুব করে কাঁদছি।

মা তার পা টেনে নিয়ে আমায় এক ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলেন। তারপর বললেন, আমারে মা ডাকবি না খবরদার। তুই হইলি একটা কাল নাগিনী। তোর ঘর থেকে হইছে আরেকটা বিষাক্ত নাগিনী। জন্মের এক বছরেই নিজের বাপেরে খাইছে। যা এরে নিয়া এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যা।

আমি কত অনুনয় করলাম। কত কাঁদলাম। কাজ হলো না। ঐরীর দাদি আমাদের জোর করে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন।

স্বামীর বাড়ি থেকে পরিত্যাক্ত হয়ে আবার এসে উঠলাম বাবার বাড়িতে। বাবার বাড়ি বললে অবশ্য ভুল হবে। কারণ বাবা মারা গেছেন গত বছর। এখন সৎ মায়ের কাছেই সব ক্ষমতা। তাছাড়া আমার দুই সৎ ভাই আছে। তারাও ভীষণ হিংসুটে।

আমাকে একটুও দেখতে পারে না। বাবা বেঁচে থাকতেও এই বাড়িতে কখনো আমি আসতে পারতাম না। এলেই ভয় দেখাতো আমার দুই সৎ ভাই। বলতো, তুই কখনো এই বাড়িতে আসবি না। তোকে আমার মায়ের সহ্য হয় না।

এবার যখন অসহায়ের মতো নিজের মেয়েকে নিয়ে ওদের কাছে এলাম তখন সৎ মা কিছু বললো না। ভাইয়েরাও কিছু বললো না। ভাবলাম, হয়তো আমার প্রতি ওদের মায়া জন্মিয়েছে। কিন্তু ওদের ভয়ংকর পরিকল্পনা টা টের পেলাম মাস খানেক পর।

হঠাৎ একদিন মা আর সৎ ভাইয়েরা কোথায় যেন বেড়াতে গেলো! বাসায় আছে শুধু সৎ মার ছোট ভাই সাজু মামা। সাজু মামা এমনিতে খুব ভালো মানুষ। বিয়ে করেননি। করবেন বলেও মনে হয় না। সেই সাজু মামা হঠাৎ আমায় জাপটে ধরে ফেললেন।

তারপর আমার সাথে নোংরামো করতে শুরু করলেন। আমি কেঁদে ফেললাম। আর কাঁদতে কাঁদতে বললাম, মামা, আমি না আপনার ভাগ্নী হই? আপনি কীভাবে আমার সাথে এমন আচরন করছেন?

মামা আমার কথা শুনলেন না। তিনি আমার গালে শক্ত করে চড় বসিয়ে দিয়ে বললেন, চুপ কর বলছি। একেবারে চুপ কর। নয়তো তোর মেয়েকে গলা টিপে মেরে ফেলবো। তখন বুঝবি মজা!

আমি ভয়ে একেবারে চুপসে গেলাম। আর ভাবতে লাগলাম, পৃথিবীতে আমি কী ভয়ংকর রকমের অসহায়! আমার চোখ বেয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। সাজু মামা আমার গা থেকে আস্তে আস্তে সবগুলো কাপড় নামিয়ে নিচ্ছে।

তারপর বিছানার সাথে মিশিয়ে দিলো আমায়। ওর শক্তির সাথে কিছুতেই আমি কুলিয়ে উঠতে পারলাম না। শুধু যা পারলাম তা হলো ওর নাকে মুখে একদলা থুথু ছিটিয়ে দিতে। কিন্তু থুথু দেয়ার পর সাজু আরো রেগে যায় আমার উপর।

রেগে গিয়ে সে আমার চুল মুঠো করে ধরে। আর এক হাতে আমার গালে অনেক জোরে জোরে চড় বসিয়ে দিতে থাকে। আমি কাঁদতে থাকি তখন আর তাকিয়ে থাকি আমার এক বছর বয়সী মেয়েটার দিকে।

মেয়েটাও কী ভীষণ অসহায়ের মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখেও জল। যেন সে তার মায়ের এই ভয়ংকর বিপদের কথা বুঝতে পারছে। কিন্তু অসহায় মাকে এই শয়তানটার হাত থেকে কিছুতেই রক্ষা করতে পারছে না!

এরপর আরেকটা ভয়ংকর কান্ড ঘটলো। আমার সৎ মা এসে সোজা ঢুকে গেল ঘরে। তারপর চিৎকার করে উঠলো।
এ কী! ছিঃ ছিঃ ছিঃ! নিজের মামার সাথে এসব হচ্ছে!

সাজু আমায় ছেড়ে দিয়ে ছিটকে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। সৎ মা তখন এলেন আমার কাছে। তারপর আমার চুল টেনে ধরে বললেন, অনেক খেলা হয়েছে। এবার যা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা। তোর মতন অসভ্য মেয়ে এই বাড়িতে রেখে আমি কলঙ্ক ভয়ে আনতে পারবো না!

আমি কী বলবো কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কারণ আমি ততক্ষণে জেনে গেছি এটা আমার সৎ মায়ের নিজের চক্রান্ত।

সে তার ভাইকে দিয়ে পরিকল্পনা মতো এই কাজটা করিয়েছে। তার একটাই লক্ষ্য। যে করেই হোক আমাকে এই বাড়ি থেকে বের করা। তার ভয়, এই বাড়িতে যদি আমি আমার অধিকার ফলাই! যদি বাবার রেখে যাওয়া অর্থ সম্পত্তির ভাগ চেয়ে বসি!

আমি এই বাড়ি ছেড়ে কোথায় গিয়ে আশ্রয় নিবো বুঝতে পারছিলাম না। আসলে আমার তো আর কোথাও যাওয়ার নেই। সৎ মা আবার খুব তাড়া করছে। মা বলছে, জলদি বের হয়ে যা বলছি ঘর থেকে।
তোকে দেখলেই আমার বমি এসে যাচ্ছে। নটি মেয়ে।
সৎ মা সত্যি সত্যি বমি করে ফেললেন। মুখ ভরে বমি ফেললেন আমার গায়ের উপর। আর বললেন, তুই একটা ডাস্টবিনের চেয়েও নোংরা।

আর ঠিক তখন অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটে গেলো এই বাড়িতে। আমি কোনদিন কল্পনাও করিনি এই বিরক্তিকর, মন খারাপ করা এই মধ্য দুপুরে এমন কিছু ঘটতে পারে–


২য় পর্ব

আমি কাঁদতে কাঁদতে ঐরীকে নিয়ে বেরিয়ে যাবো ঠিক তখন দরজার কাছে এসে দাঁড়ালেন বৃদ্ধ এক মহিলা। সেই মহিলা এসেছেন জল খেতে। পথ হাঁটতে হাঁটতে তেষ্টা পেয়ে গেছে। আশে পাশে দোকান পাট নাই। তাই বাসায় এসেছে সরাসরি।

কিন্তু আমায় এভাবে কেঁদে বের হতে দেখে মহিলা বললেন, কী হয়েছে তোমার মা? এভাবে কেঁদে কেঁদে তোমার বাচ্চাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছ?
ঠিক তখন ভেতর থেকে মা দৌড়ে এলেন। এসে বললেন, ও আমার মেয়ে। একটাই মেয়ে আমার। কদিন আগে স্বামী মারা গেছে। ওর অনেক দুঃখ। তাই কাঁদছে।

মা এমন ভান করে কথা বললেন যেন তার মতো আদর্শ মা আর একটাও নাই এই পৃথিবীতে!
মহিলা আফশোস করলেন শোনে। তার চোখও ছলছল করে উঠলো। তিনি আমায় ডাকলেন। ডেকে বললেন, মাগো, দাঁড়াও তুমি।
আমি দাঁড়ালাম না। হাঁটতে লাগলাম।

মহিলা জল খাওয়ার কথা ভুলে গিয়ে আমার পেছনে দ্রুত হেঁটে হেঁটে আসতে লাগলেন। তারপর আমার কাছে এসে হাঁপানির রোগীর মতো হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, মাগো, তোমার সাথে দুটি কথা বলতে পারি?
আমি চুপ করে রইলাম। কিছু বললাম না।

বৃদ্ধ মহিলা তার হাত দিয়ে আমার চোখ মুছে দিলেন। তারপর বললেন, মা, তোমার সব দুঃখ কষ্ট আমি দূর করে দিতে চাই। মা তুমি আমায় সাহায্য করবে?
আমি এবারও কথা বললাম না। চুপ করে রইলাম।

বৃদ্ধ মহিলা আমার একটা হাত খপ করে ধরে ফেললেন। তারপর বললেন, ওমা, তুমি আমার পুত্রবধূ হবে?
আমার ভীষণ রাগ উঠে গেল উনার এই আচরণে। এমনিতেই আমি রাগে ক্ষীপ্র হয়ে আছি। তাছাড়া কিছুক্ষণ আগে আমার সাথে যা ঘটেছে তা ভয়ংকর ! এতো কিছুর পর এই অজানা অচেনা মহিলার এসব আহ্লাদ আমার ভালো লাগছে না।

তাছাড়া আমি ভাবছি, এই বিষয়টা যখন তিনি জানবেন তখন কী তিনি আমায় পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিবেন? কিংবা তার ছেলে মেনে নিবে?
আমি মহিলার মুখের উপর রাগত স্বরে বলে দিলাম, আপনি এখান থেকে যান। আমার পেছন পেছন আসবেন না। আমি বিয়ে করবো না কোনদিন।

এই কথা বলে আমার মতো আমি হাঁটতে লাগলাম। আর ভাবলাম, এই মহিলা হঠাৎ কেন একটা সন্তান সমেত বিধবা মেয়েকে তার পুত্রবধূ করতে চায়। বিষয়টা জানা প্রয়োজন!

তাছাড়া আমার নিজের মাথায়ও তো ছাদ নাই। কোথায় যাবো আমি ঐরীকে নিয়ে? আমার তো একটা আশ্রয় প্রয়োজন! কিন্তু এই মহিলা কী সত্যি সত্যি আমায় আশ্রয় দিতে চান নাকি উনিও ঠগ!

তবুও আপন মনে হাঁটছিলাম। ভাবছিলাম যেদিকে দু চোখ যায় সেদিকেই চলে যাবো।
কিন্তু একবার পেছন ফিরে দেখি ওই মহিলা এখনও আমার পেছন পেছন হেঁটে আসছে। তার মুখ ভরা ভয়। হয়তো তিনি ভাবছেন আবার তিনি আমার কাছে এসে অপমানিত হবেন। তবুও আসছেন। এগিয়ে আসছেন।

আমার কাছে আসতেই আমি বললাম, আপনি আমার পিছু নিয়েছেন কেন?
মহিলা কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, আমি তোমার সম্পর্কে সবকিছু জানি মা। জানি তোমার সৎ মা কতটা অত্যাচারী। আমি জানি মা তুমি এখানে নিরাপদ না। তোমার আর তোমার মেয়ের মাথায় কোন ছায়া নাই।

আমি অবাক হয়ে বললাম, কীভাবে জানেন আপনি এসব?
তোমার শাশুড়ি আমার কাছে সব বলেছে।

মানে? উনি আপনাকে এসব বলবে কেন? আর উনিও কী কম নাকি? সেদিন কত অনুনয় করার পরেও তিনি আমাদের বাড়িতে থাকতে দিলেন না। ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলেন।
মা তুমি অনেক কিছুই জানো না। তোমার সাথে আমার কথা আছে।

আমি রেগে গিয়ে বললাম, আপনার সাথে আমার কোন কথা নাই। আপনি এখন যান। যা কথা বলার ইচ্ছে হয়েছিল আপনার সাথে কিন্তু এই মহিলার নাম উচ্চারণ করে আমার ইচ্ছেটাই নষ্ট করে দিলেন। এখন আপনার সাথে কথা বলতেও আমার ইচ্ছে করছে না। আপনি আমার পিছু ছাড়ুন বলছি!

বৃদ্ধ মহিলা আবার খপ করে আমার একটা হাত ধরে ফেললেন। তারপর অনুনয় করে বললেন, ওমা, মাগো, এই কথাগুলো তোমারে শুনাতেই হবে। না শুনালে তোমার শাশুড়ি কবরেও শান্তি পাবে না মা!


৩য় পর্ব

আমি অবাক হয়ে বললাম, কী বলছেন? কবরে মানে?
বৃদ্ধ মহিলা কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, তোমার শাশুড়ি মারা গেছেন আজ এক সপ্তাহ হলো। তার ক্যান্সার হয়ে গিয়েছিল। গোপনে সে টেস্ট করিয়েছে, ডাক্তার দেখিয়েছে কিন্তু কাউকে সে কিছুই জানতে দেয়নি।

কেন? জানতে দেয়নি কেন?
ডাক্তার বলেছিলো, তার অবস্থা খুব একটা ভালো না। এই দেশে তার ভালো চিকিৎসা হবে না। ভালো চিকিৎসা করাতে হলে বাইরে যেতে হবে। বাইরে গেলে অনেক অর্থ কড়ির প্রয়োজন।

তার এই অসুখের কথা জানলে তুমি কিংবা ঐরীর বাবা সবকিছু বিক্রি করে দিয়ে হলেও তার চিকিৎসা করাতে। সে চায়নি তোমাদের ফতুর বানিয়ে ফেলতে! সে চেয়েছে তোমরা সুখে থাকো। ঐরীর বাবা যখন মারা গেল তখন সে ভাবলো তোমার সাথে যদি সে খারাপ ব্যবহার না করে তবে কিছুতেই তুমি ওখান থেকে সড়বে না।

তোমার শাশুড়িকে ছেড়ে গিয়ে নতুন কোন সংসার করবে না। তোমার শাশুড়ি চায়নি তোমার সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করে ফেলতে। বিধবা বেসে সারা জীবন তোমায় তার ঘরে আটকে রাখতে!

কথাগুলো শুনে টপটপ করে আমার চোখ থেকে গড়িয়ে জল পড়তে লাগলো। আমি কান্নামাখা গলায় বললাম, আপনি অতসব জানেন কী করে?
মহিলা বললেন, আমি ওর সই হই।

ছোট বেলা থেকে একসাথে বড় হয়েছিলাম। তোমার বিয়ের পর তোমার শশুর বাড়িতে কখনো যাইনি বলে আমায় চেনো না। ওর মৃত্যুর আগে আগে আমায় খবর দিয়ে নিয়ে সবকিছু বললো।
আমি বললাম, আপনি এসব সত্যি বলছেন?
তিনি সঙ্গে সঙ্গে তার কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ থেকে কয়েকটা কাগজ বের করলেন। কাগজ নয় ঠিক জমির দলিল। তারপর বের করলেন চাবির গোছা। এইগুলো আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, তোমার শাশুড়ি সবকিছু তোমার নামে লিখে দিয়ে গেছে। নেও হাতে নেও। কিন্তু তোমার শাশুড়ির একটা শর্ত আছে তোমার প্রতি।

আমি অবাক হয়ে বললাম, কী শর্ত?
তোমাকে আবার সংসার করতে হবে। তোমার শাশুড়ি আমার কাছে আবদার করেছে আমার ছোট ছেলের জন্য যেন তোমাকে বউ করে নেই!

আমি কেঁদে ফেললাম। মা আমার জন্য অতসব করে গেছেন। আর আমি তাকে কী ভুলটাই না বুঝেছিলাম!
আমি এবার কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম, আমার যে সন্তান আছে! সন্তান সহ আপনার ছেলে আমায় মেনে নিবে?

মেনে নিবে। আমার ছোট ছেলে ছিল একেবারেই তোমার শাশুড়ির ন্যাওটা। মৃত্যুর সময় আমার ছেলে ফরহাদকে হাত ধরে তোমার শাশুড়ি বলেছে, বাবা, তোর কাছে আমার একটা আবদার আছে। এই আবদার যদি না রাখস তবে আমি মৃত্যুর পরেও শান্তি পাবো না!
ফরহাদ ভয়ে ভয়ে বললো, কী আবদার খালা?

তোমার শাশুড়ি তখন বললো, আমার অসহায় বউটারে তুই বিয়ে করবি। আর আমার নাতীন ঐরীরে তুই নিজের মেয়ের মতো করে আদর সোহাগ দিয়ে বড় করবি।
ফরহাদ বললো, আমি তোমার আবদার রাখবো খালা।

ফরহাদের হাত ধরা অবস্থায়ই তোমার শাশুড়ি হাসলো। হেসে বললো, বাবা আমি নিশ্চিন্ত হলাম।
এরপর চিরতরে চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলে তোমার শাশুড়ি। আর চোখ মেলে তাকাইনি কিছুতেই!

বৃদ্ধ মহিলা কাঁদতে শুরু করে। কী যে মায়া লাগে এই মহিলাকে দেখে তখন!
আমি আর সাত পাঁচ ভাবতে পারি না। আমার শাশুড়ি আমার জন্য এতোকিছু করে গিয়েছেন আমি কেন তার দেয়া শর্ত রাখতে পারবো না? আমি এবার বৃদ্ধ মহিলাকে বললাম, আমি রাজি। আপনার ছেলেকে আমি বিয়ে করবো।

কিন্তু আমারও একটা শর্ত আছে।
বৃদ্ধ মহিলা চমকে উঠে বললেন, কী শর্ত মা?
আমরা থাকবো ঐরীর দাদুর বাসায়। আপনার ছেলেও এখানে থাকবে।
বৃদ্ধ মহিলা এবার বললেন, এই কথা মৃত্যুর আগে তোমার শাশুড়িও আমার কাছে বলে গেছে।

বাবার বাড়ি থেকে যে বের হয়েছিলাম আর ওখানে ফিরে যায়নি। আমি ঐরীকে নিয়ে রিক্সা করে সোজা চলে এসেছি আমার শশুর বাড়িতে। এই বাড়িটি এখন চির নীরব। শাশুড়ি বেঁচে থাকার সময় এই বাড়ি ছিল কোলাহল মুখর। আমি মনে মনে ঠিক করি আমার শাশুড়ির মতো করে এই নির্জীব বাড়িটাকে আমি আবার আনন্দে ভরপুর করে তুলবো। এই দুঃখ বাড়িটাকে আনন্দ বাড়ি করে তুলবোই তুলবো!

কোন উৎসবের ঘনঘটা ছাড়াই আমাদের বিয়ে হয়ে গেল। এবার এলো ফুলশয্যার পালা। কিন্তু আমার ভয় করছে। ভয় করছে এই জন্য যে আমি আজ রাতে ফরহাদকে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটা ভয়ংকর সত্য জানাবো। কিন্তু এই সত্য জানার পর সে কী আমায় মেনে নিতে পারবে?


৪র্থ পর্ব

আমি বসে বসে অপেক্ষা করছি ফরহাদের জন্য। আমার পাশেই বিছানায় গুটিসুটি মেরে একটা পা ভাজ করে শুয়ে আছে ঐরী। ওর দিকে তাকিয়ে আমার বুকটা কেমন হু হু করে উঠলো। কান্নায় মুখ ভেঙে এলো।

ঐরীর সবকিছুই ওর বাবার মতো। নাক আর মুখের আদল। হাত পায়ের নখ। অবশেষে দেখলাম ঘুমাবার সময়ও সে তার বাবার মতো পা ভাজ করে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থেকে ঘুমায়!

আমার মন খারাপ হয়ে গেল। প্রচন্ড রকম মন খারাপ হয়ে গেল। এখন মনে হচ্ছে ফরহাদ এলে তার সাথে আমি কোন ভাবেই ভালো আচরণ করতে পারবো না! মনে মনে বলছি, আজ যদি ফরহাদ কোন কারণে ওর মায়ের কাছে থেকে যেতো! ও যদি না আসতো এখানে!

কিন্তু আমার মনের জপন সত্যি হয়নি! ফরহাদ এসে গেছে। তার গায়ে একটা ঘিঁয়ে রঙা পাঞ্জাবি। পাঞ্জাবির উপর কালো রঙা চাদর। ঠিক এমন রঙের পাঞ্জাবি আর চাদর পড়তেই পছন্দ করতো ঐরীর বাবা। আমার মেজাজ একেবারে খিটখিটে হয়ে গেল দেখে।

ফরহাদ কী জেনে বুঝেই এমন করছে? সে কী ভাবছে তার এমন আদিক্ষেতার জন্য আমি আমার অতীত হুট করে ভুলে গিয়ে তাকে ভালোবেসে ফেলবো?
ফরহাদ গলা খাঁকারি দিয়ে বলবো, বসতে পারি?
আমি চুপ করে রইলাম।

ফরহাদ বললো, দরজাটা লক করে আসি?
আমার রাগ আরো বাড়লো। রাগত স্বরে আমি বললাম, আপনার সাথে আমি থাকতে পারবো না। আপনি এখান থেকে চলে যান। আর একটা কথা শুনুন। আমি আপনার কাছ থেকে ডিভোর্স চাই!

ফরহাদ মৃদু হাসলো। হেসে বললো, আপনি যা চান তাই হবে। কিন্তু আপনাকে তো সবকিছু ভাবতে হবে সহজ ভাবে। আপনি এখন সহজ ভাবে কিছুই ভাবতে পারবেন না। কারণ আপনি আছেন একটা ঘোরের মধ্যে!

এখন ইচ্ছে করছে এই লোকটাকে এক ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিতে! আমার সাথে তার জ্ঞান জাহির করতে এসেছে সে! পন্ডিত কোথাকার!
আমি রাগময় গলায় বললাম, শুনুন, আপনার কাছ থেকে আমি ডিভোর্স চাই। পন্ডিতি মার্কা বকবকানো নয়। আর কোন সাহসে আপনি এই কালারের পাঞ্জাবি আর চাদর পড়েছেন?
ফরহাদ আবার হাসলো।
হেসে বললো, তাহলে কোন কালারের পড়বো?
আমি রাগত স্বরে বললাম, ছাই কালারের পড়বেন। হুহ্!
ফরহাদ সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে চলে গেলো ঘর থেকে। আমি মনে মনে বললাম, আল্লাহ, আপদ বিদায় হলো!

ভেতর থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে আমি শুয়ে পড়লাম। ঐরীকে বুকের সাথে মিশিয়ে ধরে আছি।
আমার খুব কান্না পাচ্ছে। কান্না পাচ্ছে এই জন্য যে আমার খুব মনে পড়ছে ঐরীর বাবাকে! কেমন সহজ সরল একটা মানুষ ছিল! একদিন হুট করে সে আমার জন্য নিয়ে এলো এক ডজন কাঁচের চুড়ি। চুড়ি নিয়ে এসে বললো, হাত বাড়াও তো দেখি!

আমি বললাম, কেন? হাত বাড়াবো কেন?
সে বললো, আগে বাড়াও।
আমি হাত বাড়াতেই সে পকেট থেকে বের করে চুড়ি পড়িয়ে দিতে চাইলো। আমি মজা করে বললাম, আমার কাঁচের চুড়ি পছন্দ না।

সে সঙ্গে সঙ্গে সেই চুড়ি নিয়ে জানলা দিয়ে। ছুঁড়ে বাইরে ফেলে দিল।
আমি অবাক হয়ে গেলাম। এবার হুট করে ওকে বললাম, আমি তো তোমার সাথে মজা করেছি। আসলে আমার কাঁচের চুড়ি খুব খুব পছন্দ!

ঐরীর বাবার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। আমি ভেবেছিলাম সে এবার রাগ দেখাবে! কিন্তু রাগ না দেখিয়ে সে দরজা খুলে বাইরে গেলো। তারপর জানলার ধারে গিয়ে ওপাশ থেকে কুড়িয়ে আনলো চুড়ি। সেই চুড়ি তার পাঞ্জাবি দিয়ে মুছলো।

তারপর পরিয়ে দিলো আমার হাতে। এমন একটা মানুষকে কী করে ভুলে যাওয়া যায়? আমি ভুল করেছি। আমার উচিৎ হয়নি ফরহাদের সাথে হুট করে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাওয়া!

কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়েই গিয়েছিলাম। ঘুম ভাঙলো দরজায় টানা ঠক ঠক, ঠক ঠক শব্দের কারণে। ফরহাদ কী তবে আবার এসেছে? ও কী স্বামীত্ব খাটাতে চাইবে আমার সাথে? না কিছুতেই না! আমি ওর সাথে থাকবো না। ও যদি জোর করে তবে? তবে বটি দিয়ে ওর ঘাড় থেকে মাথাটা আলাদা করে দিবো!

দরজা খোলার আগে বটিটা এনে বিছানার কাছে রাখলাম। তারপর দরজা খুলে দিলাম। দরজা খুলতেই দেখি ও হাসছে। মিটিমিটি করে হাসছে।
আমি বিরক্ত মাখা গলায় বললাম, আপনি আবার এসেছেন কেন?

ফরহাদ অবাক করা গলায় বললো, ও মা, আপনিই না বললেন ছাই রঙা পাঞ্জাবি পড়ে আসতে!
আমি ওর দিকে তাকালাম। তাকিয়ে এই কষ্টের মাঝেও খুব হাসি পেয়ে গেল। ফরহাদ সত্যি সত্যি ছাই রঙা পাঞ্জাবি পড়ে এসেছে।

আমি বললাম, আপনি তো ভীষণ অদ্ভুত মানুষ!
ফরহাদ বললো, অদ্ভুতই।
আপনি জানেন এখন আমার কী ইচ্ছে করছে?
কী ইচ্ছে করছে?

আপনাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিতে!
ফরহাদ চুপ করে রইলো খানিক সময়। তারপর বললো, আপনি কী আমায় ভয় পাচ্ছেন?
ভয় না ঠিক। আপনার সাথে থাকতে আমার অস্বস্তি লাগছে। এক কথায় আপনাকে আমার পছন্দ না!

ফরহাদ বললো, আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নাই। আপনার কাছে আমি থাকছি না। কিন্তু আপনাকে ছেড়ে দূরেও যাচ্ছি না। আপনি একা একজন মেয়ে মানুষ। আপনার একজন কেয়ারটেকার এর প্রয়োজন।

আপনি দরজা লক করে দিন। আমি বাইরে বসে থাকবো।
ফরহাদ ঘর থেকে বাইরে বের হয়ে যাবে ঠিক তখন আমি তাকে —-


৫ম এবং শেষ পর্ব

যখন ফরহাদ ঘর থেকে বের হয়ে যাবে তখন আমি তাকে ডাকলাম। ফরহাদ অবাক হয়ে তাকালো আমার দিকে। আমি এবার বললাম, শুনুন, আপনি ঘরের ভেতরেই থাকুন। বাইরে থাকতে হবে না। আপনাকে আমি নীচে বিছানা করে দিচ্ছি!
ফরহাদ লজ্জিত ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকালো।

আমি ওর জন্য নীচে বিছানা করে দিলাম।
ফরহাদ নীচে শুয়ে পড়লো এবং একটু পরই নাক ডেকে ঘুমিয়ে গেল!
আমার এবারও খারাপ লাগলো। কান্না এসে গেল নাক মুখ ভেঙে। আল্লাহ আমায় নিয়ে এভাবে খেলছেন কেন? ফরহাদের মতো ঠিক এভাবেই নাক ডেকে ঘুমাতো ঐরীর বাবা!

সারারাত একফোটা ঘুম হলো না আমার। কেন জানি ভয় হচ্ছিল। কেন জানি মনে হচ্ছিল এই বুঝি ফরহাদ শুয়া থেকে উঠে বিছানার দিকে এগিয়ে আসছে। ও বুঝি এক্ষুনি আমার সাথে তার পুরুষত্ব খাটাবে!

দীর্ঘ তিন তিনটি মাস কেটে গেল। ফরহাদকে ছাড়া এখন আর ঐরী কিছু বুঝে না! সে ফরহাদকে এমনিতে আঙ্কেল ডাকে। ওকে এই ডাকটাই আমি শিখিয়েছি। কিন্তু মাঝেমধ্যে সে ভুল করে ফরহাদকে বাবা ডেকে ফেলে। ফরহাদ তখন মিটিমিটি হাসে।

আমি একদিন রাগ করে বললাম, আপনি তো দেখছি ঐরীর ভুল করে বাবা ডাকায় খুশি হন খুব! আপনি কী জানেন আমি এই বিষয়টা পছন্দ করি না!
ফরহাদ বললো, কেন পছন্দ করেন না?

আমি বললাম, আপনি ওর বাবা নন এই জন্য!
ফরহাদ তখন কেমন বোকা বোকা হয়ে আমার দিকে তাকায়। ওর এই তাকানোটা দেখেও আমার মায়া লাগে! কিন্তু আমি কী করবো? ঐরীর বাবা ছাড়া তখনও যে আমি কিছু ভাবতে পারি না! আমার কষ্ট লাগে। কষ্টে বুক ভেঙে যায়। চোখে ফুর ফুর করে নদী বয়। সেই নদী ভরে জলে। সেই জল তুলে বুকের ভেতর বান!

খাওয়া দাওয়ায় অনিয়ম আর নানান টেনশন করতে করতে একদিন আমার অসুখ বেঁধে যায়। খুব দূর্বল হয়ে পড়ি আমি। শরীরে নেমে আসে রাজ্যের জ্বর। মাথা ভার ভার হয়ে আসে।

চোখের সামনে সবকিছু কেমন অচেনা মনে হতে থাকে। আমি হঠাৎ শুনতে পাই ঝড়ের শা শা শব্দ। শুনতে পাই বৃষ্টির তান্ডব। বাজ পড়ার হুংকার। দেখতে পাই ছাদ যেন ঝড়ে ফেঁড়ে গেছে। ভেঙে পড়ছে রড, ইটের টুকরো, পলেস্তারা। আমি আতঙ্কে অস্হির হয়ে উঠলাম। ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায়

আমি চিৎকার করে ডেকে উঠলাম, ফরহাদ, ফরহাদ, আমাকে বাঁচাও! আমাকে বাঁচাও!
ফরহাদ ঘুমিয়ে গিয়েছিল। সে আমার চিৎকার শুনে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে আমার কাছে দৌড়ে এলো। তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, কী হয়েছে আপনার? কী হয়েছে?
আমি বললাম, আমায় জড়িয়ে ধরো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরো। নয়তো আমি মরে যাবো। মরে যাবো আমি!

ফরহাদ কেমন ইতস্তত করতে লাগলো।
আমি কেঁদে ফেললাম জড়জড় করে। আর বললাম, ফরহাদ, আমার গা ছুঁয়ে দেখো আমি পোড়ে যাচ্ছি জ্বরে!
ফরহাদ তার হাত দিয়ে আমার গা স্পর্শ করে চমকে উঠলো। তারপর বললো, আপনি আগে বলেননি কেন আপনার অতবড় জ্বর উঠেছে?

আমি চুপ করে রইলাম। চুপ করে কাঁদতে লাগলাম।
ফরহাদ বললো, আপনি একটু অপেক্ষা করুন। আমি ডাক্তার নিয়ে আসছি।
আমি বললাম, না। আপনি আমায় জড়িয়ে ধরুন। প্লিজ জড়িয়ে ধরুন। আমার শরীর কাঁপছে। আমি খুব ভয় পাচ্ছি। খুব বেশি ভয় পাচ্ছি।

ফরহাদ খানিক সময় ইতস্তত করলো। এদিক ওদিক তাকালো। তারপর আমায় জড়িয়ে ধরে ফেললো। জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতে সে বলতে লাগলো, আমি জানতাম এমন একটি দিন আসবে। আমি জানতাম আমার ভালোবাসার জয় হবে।

আমি জ্বরে পোড়ে যাওয়া জলচোখ নিয়ে মানুষটার দিকে তাকিয়ে আছি। পৃথিবীতে আজও অত ভালো মানুষ আছে?
আছে। নিশ্চয় আছে। এদের যে থাকতে হয়।

এদের জন্যই পৃথিবী টিকে আছে। টিকে থাকবে!

আরেকটি কথা-
ফরহাদের কাছে আমার ধর্ষিতা হওয়ার ঘটনাটি আরো পরে বর্ণণা করেছিলাম। ফরহাদ শুনে এতো রাগ পেলো! আমার প্রতি নয়। ওদের প্রতি। কিন্তু দূর্ভাগ্য হলো ওই শয়তানটা খুন হয়েছিল তার বড় ভাগ্নের হাতে। খুন হওয়ার কারণ ভাগ্নের স্ত্রীকেও ধর্ষণ করতে চেয়েছিল সে।

এইসময় হাতে নাতে ধরা পড়ে যায় সে। এবং খুন হয়। আমার সৎ দু ভাই খুনের দায়ে জেলে আছে। যাবজ্জীবন জেল। মা পাগল হয়ে ইথারে ইথারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একবার তার সাথে আমার দেখা হয়েছিল।

মা আমায় চিনতে পায়নি। তাকে দেখলাম হেসে হেসে বলছে, পাপ তার বাপরেও ছাড়ে না! পাপ তার বাপরেও ছাড়ে না!

আশেপাশের মানুষ বললো,
এই কথাটাই নাকি এখন তার মুখের সার্বক্ষণিক জিকির!

লেখা – অনন্য শফিক

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “মধ্য দুপুর – Ajob premer golpo” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – ভেজাগোলাপ – Akta valobasar golpo

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *