ইসলামিক রোমান্টিক গল্প ১০

ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – শেষ পর্ব

ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – শেষ পর্ব: জীবনের চড়াই উতরাই পার করে আমাদের সংসার জীবন চলছে। জীবন কতটা সিনেমাটিক তা বুঝতে পারছি। ভালোবাসার মানুষটা এখন থাকে অনেক ব্যস্ত। তাই আমাদের মাঝে অনেক রাগ অভিমান আর ভুল বোঝাবুঝি চলছে অনেক। ভেবেছিলাম একটা অলস, বখাটে ছেলে বুঝি আমার জীবনকে বিরক্ত করে তুলবে কিন্তু এই মানুষটি এখন এত ব্যস্ত হয়েছে যে বিরক্ত কেন কথা বলার সময় পায় না।

ভালোবাসার প্রতারণার ফাঁদ

হ্যান্ডসাম ছেলেদের সৌন্দর্যের ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিজের দখলে নিয়ে নেয়। এমনকি এভাবেই আজ বহু টাকার মালিক হয়েছে রোশনি। শারিরীক চাহিদা পূরণ করে ভদ্র ঘরের ছেলেদের নিয়ে। এরপর গোপনে ভিডিও ধারণ করে অতি মাত্রার ভদ্র ছেলেদের ব্লাকমেইল করে টাকা চেয়ে। না দিলে থানায় কেশ করে দেয় ধর্ষণের।

সজীব কে শুধুমাত্র রূপের ফাঁদে ফেলে, একসাথে ঘুরতে যায়। অনেকটা ক্লোজ হবার পর খুব কাছ থেকে দেখতে চাইতো রোশনি। একদিন প্রোপজ করেই ফেলে রুম ডেটের। কিন্তু সজীব সাফ জানিয়ে দেয়, তার দ্বারা শারীরিক সম্পর্ক করা সম্ভব না। এতেই সজীবের দোষ হয়ে যায়৷ পরেরদিন ক্লাসে গেলে সবাই হাসাহাসি শুরু করে সজীবকে দেখে। সজীব প্রথমে পাত্তা না দিলেও পরে বুঝে ওকে নিয়েই সবাই হাসছে।

একজন তো পরক্ষণেই বলে ফেলে,
“ কিরে তোর দাঁড়ি তো এখনো উঠেনি, তাহলে কি তুই তৃতীয় জেন্ডার?”

সজীবের লজ্জায় মুখ লাল হয়ে যায়। প্রচুর রেগে কিছু বলার আগেই রোশনি বলে উঠে,

রোশনিঃ আর বলিস না, ওর লিঙ্গই নেই। কতো আশা করে ওকে নিয়ে রুমে গিয়েছিলাম। (বলেই শয়তানি হাসি শুরু করে)

সজীব এটুকু সহ্য করতে পারেনি, চলে আসে রুমে। ছোট বয়স, বড়ই আবেগী, আত্মহত্যা করতে চাচ্ছিলো। কিন্তু আবেগ কে প্রশ্রয় না দিয়ে দেশে ফিরে আসার চেষ্টা করে। বিদেশে গিয়ে সব সম্মান হারিয়ে দেশে ফেরা ছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিলো না। রোশনি এতো বাজে মেয়ে যে ওর সাথে কথা বলার ভিডিও রেকর্ড করে, যেটার কথা গুলো ছিলো,

“সজীব” বলে খুব আহ্লাদী গলায় রোশনি বললো,

রোশনিঃ অনেক দিন তো হলো, আরেকটু ক্লোজ হই দুজনে। চলোনা আমার বাসায়, বাসাটা ফাঁকাই আছে৷ আব্বু আম্মু দুজনেই জব করে তো।”

সজীবঃ প্লিজ রোশনি, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তবে ডীপ সম্পর্ক এখন করতে পারবোনা।

রোশনিঃ কেন?

সজীবঃ আমার ওসবে কোনো আগ্রহ নেই।

রোশনিঃ তাহলে তুমি হিজরা নাকি?

সজীবঃ যদি তুমি ভাবো আমি হিজরা, তাহলে আমি তাইইই। রেগে এই কথাটা বলাই ভুল হয়ে গিয়েছিলো সজীবের। সেটার ফাইদা লুটে রোশনি।

রোশনিঃ সত্যিই তুমি হিজরা?

সজীবঃ হ্যাঁ তাই।

এটুকু পর্যন্ত ছিলো ভিডিও তে। পরের অংশ গুলো কেটে দেয় রোশনি। এরপর সজীব আরোও বলেছিলো,

সজীবঃ আমি সত্যিকারের পুরুষ বলেই বিয়ের আগে হারাম সম্পর্কে জড়াবো না। কথাটা মনে রেখো রোশনি। তুমি যতটা সুন্দরী, আল্লাহ তোমাকে যত সুন্দর বানিয়েছেন, এই সুন্দর চেহারা দিয়ে পাপ করছো তুমি। একদিন আল্লাহ নিজ হাতে তোমাকে এর শাস্তি দিবেই দিবে। তাছাড়া আল্লাহ নিজেই বলেছেন, “তোমরা ব্যাভিচারের ধারে কাছেও যেয়ো না, নিঃসন্দেহে এটি হচ্ছে একটি অশ্লীল ও নিকৃষ্ট কাজ।” [বনী-ইসরাইলঃ৩২]

“যে ব্যক্তি তার প্রভুর সামনে দাঁরাতে ভয় করে এবং কু-প্রবৃত্তির হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে চলে, তার ঠিকানা জান্নাতে।” [সূরা-নাযিয়াতঃ৪০~৪১]

“হে নবী, মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন নিজেদের চোখকে বাঁচিয়ে চলে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান সমূহের হেফাযত করে। ইহা তাদের পক্ষে পবিত্রতম নীতি। তারা যা করে, আল্লাহ সে বিষয়ে পুরাপুরি অবহিত।” [আন-নূরঃ৩০]

রোশনি খুব রেগে যায়, কথা গুলো হজম করতে পারে না। বলেই পরের অংশ গুলো আর কোরআনের আয়াত কেটে সজীব কে ক্লাসমেট দের সামনে হেয় ভিডিও প্রকাশ করে।

ভালোবাসার প্রতিদান

আজ সজীব সাইমার সামনে সব স্বীকার করে নেয়। আর সাইমা কে বললো,

সজীবঃ তুমি কতই না সন্দিহান ছিলে, রোশনির জন্য নাকি তোমাকে ছেড়ে দিবো। এরপরেও কি তুমি এসব ভাববে?

সাইমা মাথা নীচু করে বললো,

সাইমাঃ ক্ষমা করো।

সজীবঃ ক্ষমা তো করে দিয়েছি। তাছাড়া রোশনি কে নিয়ে এতো কবিতা লিখা দেখে তুমি মনে মনে কষ্ট পেতে, তার কারণ রোশনি প্রথম প্রেম ছিলো। আমি খারাপ মেয়ে জেনে প্রেমে পড়িনি, ভালো মেয়েটা কেই পছন্দ করতাম। খারাপ জানার পর শুধু ঘৃণাই করেছি। তাছাড়া ডায়েরি তে তোমাকে নিয়ে বেশী কথা লিখিনি, কারণ তুমি আমার শেষ প্রেম। একটা আশা ছিলো তোমাকে বউ হিসেবে পাবোই পাবো।

আর যদি নাও পেতাম তবুও আক্ষেপ ছিলো না। কারণ তোমার চোখ দুটো আমাকে এতোই আকৃষ্ট করতো, অন্য মেয়েদের বোনের নজরে ছাড়া অন্য কিছুই ভাবতাম না। আমার হৃদয় কুঠুরে অল্প অল্প করে জন্ম নেওয়া ভালোবাসা কে হৃদয়েই রেখেছিলাম। কখনো ডায়েরির সাথেও ভাগাভাগি করে নিই নি। বুঝতেই পারছো কতটা ভালোবাসি তোমায়।

সাইমা কোন কথা না বলে সজীবের হাত দুটো চেপে ধরে। নীরবে কয়েকফোঁটা চোখের জল ফেলে। সজীব দুই হাত দিয়ে সাইমার চোখ মুছিয়ে দেয়।

সজীব আবার বলে,

সজীবঃ রোশনি কে আমি আগেই খুঁজে পেয়েছিলাম। ও ওর পাপের সাজা পেয়েছে। অকাম করতে গিয়ে একটা মেয়ের সিংগেল মাদার ও। স্বামী ছাড়া ওদের পক্ষে থাকা সম্ভব, কিন্তু ওরা মা মেয়ে দুজনেই এইডস এর রোগী। এর থেকে বড় শাস্তি আর কি হতে পারো বলো! ওরা আমার সুন্দরী বউ দেখে হিংসায় কাল এমন একটা কাজ করেছে। যাই হোক, আল্লাহ প্রদত্ত বিচারেই আমি খুশি।

তাই কাল রাগ না দেখিয়ে চলে আসি তোমাকে নিয়ে। তাছাড়া আমি রোশনির ধোঁকা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের অন্তর কে পরিবর্তন করতে পেরেছি। সাথে অনেক মেয়েদের প্রপোজ পেয়ে তাদের মা বাবার সাথে কথা বলে তাদের পরিবর্তন করাতে পেরেছি। ইসলামের পথে নিয়ে আসতে পেরেছি এটাই বা কম কিসে! হোক না একটু ভালো কিছু।

সুখী জীবনের পথচলা

সাইমা নীচু স্বরে বললো,

সাইমাঃ “আল্লাহ তার বান্দা কে কখনো নিরাশ করেনা। কারণ দুশ্চরিত্রা নারীকুল দুশ্চরিত্র পুরুষ কুলের জন্য এবং দুশ্চরিত্র পুরুষকুল দুশ্চরিত্রা নারী কুলের জন্য। সচ্চরিত্রা নারীকুল সচ্চারিত্রা পুরুষকুলের জন্য এবং সচ্চরিত্রা পুরুষকুল সচ্চরিত্রা নারী কুলের জন্য। তাদের সম্পর্কে লোকে যা বলে, তার সাথে তারা
সম্পর্কহীন । তাদের জন্য আছে ক্ষমা ও সম্নান জনক জীবিকা।” 【আল নূরঃ২৬】

সজীব এবার সাইমা কে উদ্দেশ্য করে বললো,

সজীবঃ “কুরআনের সূরা নিসা ও সূরা ফাতাহ তে আল্লাহ তাআলা বলেন, যে কেউ হোক সে পুরুষ বা নারী সৎকর্ম করে এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রাপ্য তিল পরিমাণও নষ্ট হবে না।” (সূরা নিসা, আয়াত নং ১২৫)

“যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, নিজ চরিত্র হিফাজত করে ও স্বামীর আনুগত্য করে, তাকে বলা হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে জান্নাতে প্রবেশ কর।” (সূরা আল ফাতাহ, আয়াত নং ৫)

একে অপরকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে কান্না করে দুজনে। এরপর সাইমা বললো,

সাইমাঃ চলোনা, দুই রাকা’ত নফল নামাজ পড়ে নতুন করে আবার শুরু করি।

সজীবঃ হ্যাঁ অবশ্যই। (একটুখানি হেসে বললো সজীব)

আর এভাবেই আমাদের যত ভুল বোঝাবুঝি ছিল সবকিছুর ইতি ঘটে। আমরা নতুন করে সাজাতে থাকি আমাদের সুখের সংসার। দোয়া করবেন, যাতে এমনিভাবেই থাকতে পারি আজীবন।

~সমাপ্ত~

আরো পড়ুন- ইসলামিক বাসর রাত ১০টি করণীয় ও বর্জনীয় কাজ হাদিসের আলোকে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *