সত্যিকারের ভালোবাসা

সত্যিকারের ভালোবাসা – হোম কোয়ারেন্টিনের দিনগুলিতে প্রেম

সত্যিকারের ভালোবাসা – হোম কোয়ারেন্টিনের দিনগুলিতে প্রেম: পুরো পৃথিবী যখন করোনা ভাইরাসের ভয়ে লকডাউন হয়ে আছে তখন বিশুদ্ধ ভালবাসাগুলোর অনুভূতিগুলো মুক্তি পেয়েছে। সারাদিনের ব্যস্ততা আর গ্লানি যখন ভালবাসার মানুষটিকে ভুলিয়ে রাখত তখন অনুভূতিগুলো কেমন যেন ফিকে হয়ে যেত। আজ অনুভূতিগুলো সুযোগ পেয়েছে ভালবাসাটাকে আরো শক্ত করার। এমনি এক রোমান্টিক ভালবাসার গল্প বলব আপনাদের। চলুন শুরু করা যাক-

আমি ও আমার বউ রোদেলা

আমি: রোদেলা, তুমি এক সাইড হয়ে বসে রুটি বানাও। আমি এপাশ দিয়ে সেঁকে দেই।

রোদেলা: ওমা, তুমি রুটি সেঁকবে কেন! তোমার কি খুব ক্ষিদে পেয়েছে? তুমি একটু বস আমি আগে তোমার নাস্তা দিচ্ছি। পরে আমাদের জন্য সেঁকে নিবো।

আমি: না, না আমার ক্ষিদে পায়নি। বাচ্ছারা ঘুম থেকে উঠুক। সবাই এক সাথেই নাস্তা করবো। তুমি প্রতিদিন একা একা নাস্তা বানাও। তাই ভাবলাম, তোমাকে একটু সাহায্য করি।

রোদেলা: না থাক, তুমি আমাকে সাহায্য করতে হবে না। তুমি গিয়ে পেপার পড়।

আমি: আহ রোদেলা, সরে বস না। তোমার সাথে থাকিনা, কি হবে? আর আমি রুটি পুড়ে ফেলবো না, ভয় পেওনা।

রোদেলা অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। অবাক তো হবেই। বিয়ে হয়েছে আট বছর হয়ে গেলো। কখনো তো এভাবে ওর সাথে কাজে সাহায্য করতে আসিনি। বরঞ্চ অফিসে যাবার আগে নাস্তা দিতে একটু দেরি করলেই রাগ করেছি।

করোনা ভাইরাস থেকে সকলকে নিরাপদ রাখার জন্য ১৪ দিন অফিস বন্ধ। গত দুইদিন থেকে আমি একদম গৃহবন্দী হয়ে আছি। ইতালির অবস্থা দেখে ভয়ে নিজেই নিজের বাসা লকডাউন করে রেখেছি। আম্মা, আব্বা বারবার ফোন দিচ্ছেন বাড়িতে চলে যেতে। কিন্তু কিভাবে যাবো বাড়ি! উনারা তো বুঝছেন না। যদি যাবার সময় ভাইরাস সাথে করে নিয়ে যাই তাহলে তো আমার আম্মা, আব্বারই ক্ষতি। আমি জেনেশুনে কি নিজের আম্মা, আব্বাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি? তাই নিজের বাসায় থাকাই ঠিক করলাম।

ফিরে দেখা ভালবাসা

যে আমি প্রতিদিন অফিস শেষে এক-দেড়ঘণ্টা বন্ধুদের সাথে আড্ডা না দিয়ে থাকতে পারিনা। সেই আমি নিজেকে আর পরিবারকে নিরাপদ রাখার জন্য গত দুইদিন থেকে একবারের জন্যও বাহিরে যাইনি। এই দুইদিন বাসায় থেকে অন্যরকম এক আত্মগ্লানিতে ভুগছি।

বিয়ের ছয় মাসের সময় রোদেলাকে নিয়ে আমি ঢাকায় এসে নিজেদের সংসার পাতি। তারপর থেকে এই নরম মেয়েটি নিজেই নিজের সংসার গুছিয়ে নিয়েছে। আমি শুধু টাকা দিয়ে নিজের দায়িত্ব শেষ করেছি। প্রথম প্রথম রাস্তা ঘাট চিনতো না বলে আমি সাথে করে নিয়ে এটা সেটা কিনে আনতাম।

কিন্তু আস্তে আস্তে আমি নিজেকে নিয়ে ভাবার শুরু করি। ওর কিছু লাগলে বলতাম নিজেই গিয়ে নিয়ে আসো। রাস্তা চিনবে না বললে খুব রাগ করতাম। বলতাম এতোদিন হয়ে গেলো এখনো বল রাস্তা চিনবে না! একা একা যাও। তাহলে চিনবে। আর সাথেতো মোবাইল আছেই। হারিয়ে গেলে ফোন দিবে।

ঠিকই রোদেলা নিজে নিজে সব করতে শিখে গেলো। সকাল সকাল অফিসে চলে যেতে হয় তাই বাজারটাও ওকেই করতে হয়। কোনদিন যদি অফিস শেষে তাড়াতাড়ি আসতে বলতো রাগ হয়ে যেতাম। আসলে সারাদিনের কাজ শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা না দিলে ভালোই লাগতো না। বাসায় আসলে কোন কিছু এলোমেলো দেখলেই রোদেলাকে কটাক্ষ করে বলতাম সারাদিন কি কর বাসায় থেকে? রোদেলা রাগ করে কিছু বলতে গেলেই ঝগড়া হয়ে যেতো।

আমার ধারণা ছিল আমি সারাদিন অফিসে কাজ করি। রোদেলাতো বাসায়ই থাকে। বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে বাসায় চলে আসে। পরে আবার গিয়ে নিয়ে আসে। আর তো সারাদিন বাসায়। একটু রান্না-বান্না করতে কি আর এমন কষ্ট হয়।

হোম কোয়ারেন্টিনের দিনগুলিতে প্রেম

কিন্তু গত দুইদিন ২৪ ঘণ্টা বাসায় থেকে বুঝতে পারছি বাসায় থাকলেও কতো কাজ করতে হয়। এই আমাকে কয়েকদিন আগেও রোদেলা কিছু করতে বললে আমি করতাম না।

এইতো গত পরশুদিন অফিস থেকে এসে দেখি রুমের বিছানাটা এলোমেলো হয়ে আছে। রোদেলাকে বললাম বিছানাটাও গুছিয়ে রাখতে পারনা? শুধু টিভি দেখলেই হবে? ও রান্নাঘর থেকে বলল টিভি দেখি কই? এই কিছুক্ষণ আগেই রুম গুছিয়ে রান্নাঘরে আসলাম তোমার ছেলে-মেয়েরা এমন করে।

সারাদিন আমি শুধু ঘর গোছাতে থাকি আর ওরা এলোমেলো করে। সেইদিন আমি মনে মনে বিরক্ত হলাম খুব। কিন্তু এইতো গত দুইদিন দেখছি রোদেলা বিছানাপাতি গুছিয়ে যায়। আর কিছুক্ষণ পরেই বাচ্ছারা এলোমেলো করে দেয়। আমার নিজেরই রাগ হয় ওদের উপর। আমি কোন কাজ করলে যদি কেউ এভাবে নষ্ট করতো তাহলে দিতাম মাইর।

কিন্তু রোদেলা বকা দিয়েই বারবার গুছিয়ে ফেলে। সকালে উঠেই নাস্তা বানানো, দুপুরের রান্না করা,বাচ্ছাদের গোসল করানো, ঘর মোছা, কাপড় ধোয়া, আবার বিকালের নাস্তা, বাচ্ছাদের রাতে পড়ানো। আরও অনেক টুকিটাকি কাজ সারাদিনি ও করতে থাকে। ওর নিজের সময় বলতে কিছুই থাকেনা।

আমি কেন এতদিন বুঝতেই পারিনি! বরং ও কোন অভিযোগ করলেই কষে ওর সাথে ঝগড়া করতাম।

শেষ কথা

নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়। ঠিক করলাম এখন থেকে যদি বেঁচে থাকি অন্তত প্রতিদিন অফিসে যাবার আগে বাচ্ছাদের স্কুলের জন্য রেডি করে দিবো। ও রুটি বানাবে আমি সেঁকে দিবো। অফিস শেষে বন্ধুদের সাথে সপ্তায় দুইদিন সময় দিবো আর দিন বাসায় চলে আসব। বাচ্চাদের পড়াবো। রোদেলাকেও সময় দিবো। বেচারি রাত জেগে আমার সাথে গল্প করতে চায়। কিন্তু আমি ঘুমিয়ে পড়ি।

নাস্তা করে রোদেলাকে বললাম আজকে থেকে যতোদিন বাসায় আছি তুমি ঘর ঝাড়ু দিয়ে দিবে, আমি উইপার দিয়ে মুছে দিবো। কাপড় আমি ধুবো তুমি রান্না করবে। ও হাসতে হাসতে বলল – না থাক, আপনার এইগুলো করতে হবেনা।

আমি বললাম তাহলে কিন্তু আজ রাত জেগে তোমার সাথে গল্প করার প্ল্যান বাদ। ও অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল সত্যি আমার সাথে রাতে গল্প করবে! আমি বললাম হু ম্যাডাম।

কতদিন পরে আমি দেখলাম আমার বউটির চোখে মুখে খুশীর ঝিলিক। মেয়েটি আমার গলা জড়িয়ে বলল বাবা তুমিতো আমাদের সাথে খেলনা। আমি ছেলে–মেয়ে দুইটি কে কোলে নিয়ে বললাম আজকে থেকে প্রতিদিন বিকালে আমরা এক সাথে খেলবো। আমি একদিন রান্না করবো। খেয়ে দেখো, বাবা তোমাদের মায়ের থেকে ভালো রান্না করতে পারে।

রোদেলা আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। অনেক দিন পরে আমি আবার নতুন করে রোদেলার প্রেমে পড়লাম আর এটাই সত্যিকারের ভালোবাসা। যুগ যুগ টিকে থাক আমাদের স্বামী স্ত্রীর ভালবাসা। রোদেলা ফিসফিস করে আমাকে বলল – আমার রোমান্টিক স্বামী, পাশে থেকো সবসময়।

আরো পড়ুন: অভিমানী প্রেমের গল্প – প্রকৃত ভালবাসা

আমাদের চ্যানেলের ভিডিও দেখুন- মধ্যবিত্তের ভালবাসা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *