সুখের সন্ধানে – অসাধারণ গল্প ও কাহিনী

সুখের সন্ধানে – অসাধারণ গল্প ও কাহিনী: দেখুন আমি আপনার স্ত্রী। আপনার অধ্যাঙ্গীনি। আপনার যদি আমাকে কিছু বলার থাকে তাহলে বলুন। আমার কোনো আচরণ কিংবা এমন কোনও অভ্যাস যা আপনার ভালো লাগে নি নিঃদ্বীধায় আমাকে আপনি বলতে পারেন।


পর্ব ১

সময়ের সাথে সাথে মানুষ বদলে যায়। বদলে যায় তাদের চাওয়া পাওয়াগুলোও। একে একে তিনটা বছর পার হয়ে গেল। অবন্তী তোমাকে আমি ভুলে গিয়েছি। মুছে ফেলেছি তোমার স্মৃতিগুলো আমার মন থেকে। আর তাই তো আজ নতুন করে এই জীবনটাকে সাজাতে চলেছি। দেখি সুখ পাই কিনা!

আজ আমার বিয়ে হলো। খুব ধুম,ধাম করেই হয়েছে। আলো আর ফুলের সমারহে ঝাকঝমক ভাবে সাজানো হয়েছে এই বাড়িটিকে। চারিদিকের মানুষ উৎসবে মেতে আছে। আর এদিকে আমার বুকের ভেতরটা যন্ত্রণায় চিনচিন করছে। দুমরে, মুচরে যাচ্ছে মনের ভেতরটা। বারবার মনকে প্রশ্ন করছি বিয়েটা করে ঠিক করলাম কিনা?

আচ্ছা অবন্তী তো সুখেই আছে তার স্বামী, সন্তান নিয়ে। এতোদিনে তো ও আমাকে ভুলেও গেছে। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই ড্রয়িংরুমে ঘুমিয়ে পড়লাম। ছোটবোন এসে ঘুম থেকে তুলে ঠেলতে ঠেলতে আমাকে বাসর ঘড়ে ঢুকিয়ে দিল। ভেতরে যেতেই দেখি নববধূর বেসে লম্বা করে ঘোমটা টেনে মেয়েটি বসে আছে। আমি ভেতরে ঢুকতেই আমাকে সালাম করল।

  • আস্সালামু আলাইকুম।
  • ওয়া আলাইকুমুস সালাম।
    আর কিছু বলার আগেই মেয়েটাকে বললাম। ঘুমিয়ে পড়ুন। তারপর বিছানা থেকে বালিসটা নিয়েই সোফাই গিয়ে শুয়ে পরলাম।
    সকালবেলা ফজরের আজান দিচ্ছে। হঠাৎ ঘুমের ঘোঢ়ে খেয়াল হলো উপর থেকে টপটপ করে চোখে মুখে পানির ছিটা পরছে।

আচ্ছা ছাদ ফুটো হয়ে গেল নাতো! বাইরে কি বৃস্টি হচ্ছে নাকি? আটছয় না ভেবে দুম করে উঠে বসলাম। আর দেখলাম আমার দিকে ঝুঁকে আছে মেয়েটি। খুব সুন্দর দেখতে তো মেয়েটিকে। বিয়ের আগে ভালো করে দেখা হয় নি। কারণ মেয়ে পর্দাশীল। যখন দেখতে গিয়েছিলাম বোরকা পড়া অবস্থায় দেখেছিলাম শুধু মুখটুকু। হাতে পায়ে অবদি মোজা পরিধান ছিল। সে যাই হোক বর্তমানে ফিরে আসলাম, তাকিয়ে দেখি হাতে এক জগ ভর্তি পানি।

  • একি আপনি এখানে এত সকালে কি করছেন?
  • ফজরের আজান দিয়েছে। উঠুন নামাজ পরবেন!
  • এতো সকালে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস আমার নেই। (বলেই আবার শুয়ে পড়লাম)
  • দেখুন আপনি উঠবেন নাকি আমি এই জগ ভর্তি পানি আপনার মাথায় ঢেলে দেব?
    কি বলে কি মেয়েটা! এই নাহ নাহ্ আমি দুম করে উঠে পড়লাম।
  • হুমম। যান ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিন।

এই মেয়ে কি পেয়েছে আমাকে। নতুন বউয়ের গায়ে হাতও তুলতে পারবো না। তবে খুব রাগ হচ্ছে মেয়েটার উপর।

আমি নামাজ পড়ছি আর খেয়াল করছি মেয়েটা লম্বা লম্বা সিজদাহ দিচ্ছে। এতোক্ষণে তো ৩বার নামাজ পড়া হয়ে যাই। কি করছে মেয়েটা! মেয়েটা সালাম ফিরিয়ে আমার দিকে তাকালো।

  • আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন?
  • না।
  • দেখুন স্বামীকে এইভাবে নামাজের জন্য ডেকে তুললে আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়। আপনি আমার স্বামী। আমি চাই না আপনার এক ওয়াক্ত নামাজও কাজ্বা হোক। আসুন না আজ থেকে আমরা ওয়াদা করি আমরা দুজনে দুজনকে প্রতি ওয়াক্তে নামাজের কথা স্মরন করিয়ে দেব।
  • আমি মাথা নারিয়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালাম।
  • মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে ঘড় থেকে বেরিয়ে গেল।

সকাল সাড়ে আটটা বাজে। নাস্তার টেবিলে আমি, মা আর বোন বসে আছি। আর মেয়েটি পরোটা আর আলুভাজি আমাদেরকে সার্ভ করছে। আমি ডান হাত দিয়ে ফোনে কথা বলছিলাম তাই বাম হাত দিয়ে পরোটা ছিঁড়ে ভাজি দিয়ে মুড়িয়ে যখনই মুখে দেব মেয়েটি বলে উঠল,

  • আরে কি করছেনটা কি! (আমার দিকে তাকিয়ে)

মা, আমি আর বোন একে অন্যের মুখের দিকে তাকাচ্ছি। আর ভাবছি আমি আবার কি করলাম?

  • বাম হাতে কেন খাবার খাচ্ছেন? যানেন না বাম হাতে খেলে সয়তানের সাথে খাওয়া হয়? আর খাবার আগে বিসমিল্লাহ বলে খেতে হয়।
  • আসলে অফিসের এক কলিগের ফোন। বিয়ের ছুটিতে আছি। অফিসে তো যেতে পারবো না। একটু কথা না বললে কেমন দেখাবে তাই!
  • হয় আগে কথা বলুন। না হয় আগে খেয়ে নিন।

আচ্ছা দিন আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
মেয়েটি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। আর ওদিকে মা আর বোন মুচকি মুচকি হাসছে। আমার ভীস্বন লজ্জা লাগছে। তারপর খাওয়া হলে একটু বাড়ি থেকে বের হবো। মেয়েটি আমাকে একটা ডাক দিয়ে বলল,

  • কোথাও যাচ্ছেন?
  • এইতো পাড়ার মোড়ে। ভাই ব্রাদার দের সাথে আড্ডা দিতে!
  • শোনুন কোথাও যাওয়ার আগে সালাম দেওয়া সুন্নাত। আবার বাড়িতে প্রবেশের সময় সালাম দিয়ে প্রবেশ করাও সুন্নাত। এতে সেই বাড়িতে শান্তি বিরাজ করে। আল্লাহর রহমত সবসময় সেখানে থাকে। আর আপনি যদি এই সুন্নাতটি নিয়মিত মেনে চলেন তাহলে আল্লাহ তা’আলা নিজ জিম্মাদারিতে আপনাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। ইবনু হিব্বান, হাদিস নং- ৪৯৯ সহিহ তারগিব, হাদিস নং- ৩১৬
    অতঃপর মেয়েটি আমাকে সালাম দিল আর আমি মেয়েটিকে সালামের উত্তর দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে এককাপ চা হাতে নিয়ে চায়ের কাপে বিস্কুট চুবিয়ে…


পর্ব ২

অতঃপর মেয়েটি আমাকে সালাম দিল আর আমি মেয়েটিকে সালামের উত্তর দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে এককাপ চা হাতে নিয়ে চায়ের কাপে বিস্কুট চুবিয়ে টিভিতে দেখি অফিসের সামনে তালা ঝুলছে। বসকে ফোন করলাম বস বলল কিছু সমস্যার কারণে শেয়ার ঢুবে যাওয়ায় অফিস কিছুদিন বন্ধ থাকবে। কিন্তু কতদিন তা আগের থেকে বলা সম্ভব না। নতুন বিয়ে করেছি তার উপর মেয়েটি যদি যানে জবের এই অবস্থা তাহলে হয়তো আজই বাপের বাড়িতে চলে যাবে।

আমি মন খারাপ করে বাড়িতে গিয়ে সোজা আমার রুমে ঢুকে শুয়ে পরি। মনের মধ্য অজানা এক চিন্তা বিরাজ করে। কিছুক্ষণ পর শব্দ শুনে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি মেয়েটি আয়নার সামনে বসে চুল আঁচড়াচ্ছে। আমাকে আয়নার মধ্যে থেকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেয়েটি আমার পাশে এসে বসে। আমি ঠিক একইভাবে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি। মেয়েটি আমাকে প্রশ্ন করলো,

  • আপনি কি আমাকে কিছু বলবেন?

আমি চুপ করে আছি। মেয়েটি আমাকে আবার বলে,

  • দেখুন আমি আপনার স্ত্রী। আপনার অধ্যাঙ্গীনি। আপনার যদি আমাকে কিছু বলার থাকে তাহলে বলুন। আমার কোনো আচরণ কিংবা এমন কোনও অভ্যাস যা আপনার ভালো লাগে নি নিঃদ্বীধায় আমাকে আপনি বলতে পারেন। আমি কথা দিচ্ছি আমার সাধ্যের মধ্যে হলে সেগুলো সুধরে নেব। তবুও আমার উপর আপনি রাগ করে থাকবেন না। আপনি রাগ করলে যে ওই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাকে ক্ষমা করবেন না।

আমি শোয়া ছেড়ে উঠে বসে মেয়েটিকে বললাম।

  • কি বলছেন এসব আপনি? দেখুন আপনি খুব ভালো মেয়ে। এভাবে কখনও বলবেন না। কোনও ভুল করেন নি আপনি।
  • তাহলে কাল রাতে আমার সাথে কথা না বলে বালিশটা নিয়ে শোফায় গিয়ে ঘুমালেন কেন? আপনি কি মন থেকে আমাকে স্ত্রী হিসেবে মানতে পারেন নি?
  • না তেমন কিছু না। এমনি ভাবলাম আপনি যদি নতুন জায়গায় অস্বস্তি বোধ করেন। তাই সোফায়
    ঘুমিয়েছিলাম।
  • আজও কি সোফায় ঘুমাবেন?
  • না।
    মেয়েটি একটা হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আর আমি ভাবতে থাকি কিভাবে সবাইকে বলবো অফিসের কথা!
    মন খারাপ করে দুশ্চিন্তার মধ্যে দুপুর অবদি বিছানায় শুয়ে আছি। মেয়েটি এসে আমাকে দুপুরে লাঞ্চের জন্য ডাকে। আমি উঠে পরে খাবো না বলে আবার শুয়ে পরি। মেয়েটি আমার পাশে বসে জানতে চায়,
  • কি হয়েছে আপনার?

কপালে হাত দিয়ে দেখার চেস্টা করে জ্বর হয়েছে কিনা।

  • আমার কিছু হয় নি আপনি এখন এখান থেকে যান।
  • কিন্তু কেন? মা আপনাকে নিচে ডেকে নিয়ে যেতে বলেছে। খেতে চলুন!

মেয়েটি আমার হাত ধরে টানতে থাকে। আমি এক ঝাটকায় মেয়েটির থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়।

  • মাকে গিয়ে বলে দিন আমার শরীরটা ভালো নেয়। এখন খাব না।
  • আপনার কি হয়েছে বলুন তো? আমাকে কি বলা যাবে না?
  • বললাম তো আমার ভালো লাগছে না। এখান থেকে যান এখন।
  • আপনি কিন্তু যোহরের নামাজও পড়েন নি। আপনি কি যানেন এক ওয়াক্ত নামাজ কাযা করলে কি হয়?
    ৩. ৮০ হুক্বা বা ১ হুকবা শাস্তি।

যেই লোক সময়মত নামায পড়ে না, নামাযের ওয়াক্ত শেষ হবার পরে কাযা পড়ে, সেই লোকও জাহান্নামে ৮০ হুকবা শাস্তি ভোগ করবে। ৮০ বছরে এক হুকবা আর ৩৬০ দিনে এক বৎসর। ৩৬০ * ৮০ = ২৮,৮০০ দিন। অতএব তাকে ২৮,৮০০ দিন এক ওয়াক্ত নামায না পড়বার জন্য দোজখের আগুনে জ্বলতে হবে। আর আখেরাতের দিন হবে দুনিয়ার এক সহস্র বৎসরের তুল্য। এই হিসাবে এক ওয়াক্ত নামায তরককারীকে দুই কোটি অষ্টাশি লক্ষ বৎসর জাহান্নামের আগুনে শাস্তি ভোগ করতে হবে।

‘‘যে ব্যক্তি ওয়াক্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করল না, এবং এরপর সে কাযা করল, তাকে জাহান্নামে এক হুক্বা শাস্তি প্রদান করা হবে। এক হুকবা ৮০ বছর এবং এক বৎসর ৩৬০ দিন এবং প্রত্যেক দিনের পরিমাণ এক হাজার বৎসরের সমান। ’’

মেয়েটি বলা শেষ করলে আমি আর কিছু বললাম না। সাথে সাথে উঠে অজু করে নামাজে দাড়িয়ে গেলাম।


পর্ব ৩

নামাজ শেষে লাঞ্চ করে আবার বিছানায় এসে শুয়ে পরলাম। মনটা ভালো নেই। তাই ইচ্ছাও করছে না কারও সাথে কথা বলতে। সারাটাদিনই শুয়ে আছি আর ভাবছি পরে কি হবে। এমন অশান্তিতে যে প্রথমবার থাকছি তা কিন্তু নয়। এর আগেও যে অনেকবার এমনটা হয়েছে আমার সাথে। তবে আজ মনের মধ্যে কিছুটা শান্তি বিরাজ করছে। মনে হচ্ছে অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেও এমন কিছু পেয়েছি যা রুহুকে প্রশান্তি এনে দেয়। এই নামাজের মধ্যে যে কত সুখ তা হয়তো মন থেকে স্রষ্ঠার দরবারে একটাবার লুটিয়ে না পড়লে বোঝা যায় না।

রাতে মেয়েটি ঘুমোতে আমার পাশে এসে শুয়ে পরে। আমি দেখেই দুজনের মাঝে একটা কোলবালিশ দিয়ে রাখি। মেয়েটি আচমকা আমার এমন আচরণে উল্টো ঘুরে শুয়ে থাকে। আমি ভাবি মেয়েটি হয়তো রাগ করেছে। কিছুক্ষণ নিরব থেকে আস্তে করে আমার হাতটা মেয়েটির কাঁধে রাখি। মেয়েটি আমার হাতের স্পর্শে নিজের হাতে আমার হাতটি চেপে ধরে আমার দিকে ঘুরে আসে। মাঝের বালিশটা সরিয়ে আমার খুব কাছে চলে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,

  • কিছু বলবেন?
  • একটা প্রশ্ন করার ছিলো আপনাকে
  • করুন না! এতে অনুমতি নেওয়ার কি আছে?
  • আচ্ছা। আপনার নাম কি?
    মেয়েটি আমার এমন প্রশ্ন শুনে ঝট করে উঠে বসলো। মেয়েটি এভাবে উঠে বসায় আমি খুব অবাক হলাম। আমাকে বলল,
  • আপনি কি সত্যিই আমার নাম জানেন না?

আমি উঠে বসে মাথা ঝাকিয়ে না বলি। মেয়েটি একটি মুচকি হাসি দিয়ে বলে,

  • খাদিজা।
  • খুব সুন্দর নাম। আসলে আমি আপনার সম্পর্কে তেমন কিছুই যানি না তো
  • কেন যানেন না?
  • মা আর বোন বিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পরে লেগেছিলো তাই আমি। কিছু জানার প্রয়োজন মনে করি নি।
  • এটা কিন্তু ঠিক করেন নি আপনি। বিয়ের আগে আমার সম্পর্কে বিস্তারিত যেনে নেওয়া উচিৎ ছিলো। যাই হোক আর কি কি যানতে চান আমার সম্পর্কে?
  • কিছুই না। আপনি খুব ভালো মেয়ে।
  • সত্যি বলছেন?
  • হুমম।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমিই বললাম,

  • আচ্ছা আমার সম্পর্কে আপনার কিছু যানার আছে?
  • না। আমার যতটুকু যানার ছিল যেনেই বিয়েতে সম্মতি দিয়েছি। তবুও আপনি যদি কিছু বলতে চান বলতে পারেন
  • না আমার তাহলে আর কিচ্ছু বলার নেই!
    কিছুক্ষণ চুপ থেকে খাদিজা বলল,
  • আচ্ছা ঘুমাবেন?
  • হুমমম
  • সারাদিনই তো ঘুমিয়ে আছেন। এখন কি আর ঘুম আসবে?
  • যানি না।
  • একটা কথার উত্তর দেবেন আমাকে?
  • কি কথা?
  • আমাকে বিয়ে করে আপনি খুশি তো?
  • হুমমম।
  • শুধু হুমমম?
  • মানে?
  • আলহামদুলিল্লাহ বলুন শুনতে বেশি সুন্দর লাগে।
  • ওহহ আচ্ছা।

তারপর খাদিজা বিছানা থেকে উঠে গিয়ে আলমারি খুলে একটা প্যাকেট এনে আমার হাতে দেই,

  • এটা রাখুন।
  • কিসের প্যাকেট এটা?
  • আপনি নিজেই খুলে দেখুন।

আমি আস্তে করে প্যকেটটা খুললাম। প্যাকেটে মধ্যে একটা ডিজিটাল তসবিহ ছিল। আমি খাদিজার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। খাদিজা বলে,

  • বুঝতে পারছিলাম না আপনাকে কি দিব। অনেক ভেবে তাই এই তসবিহ টা কিনেছিলাম। যদিও যানি তসবিহতে জিকির করা বিদআত। হাতের আঙুলে জিকির করাই উত্তম। তবু এর থেকে ভালো কোনও গিফট আমি আপনার জন্য খুঁজে পাই নি। আপনার যখনই মন খারাপ হবে এই তসবিহ দিয়ে যতো ইচ্ছা আল্লাহর নাম জিকির করবেন। দেখবেন মনটা হালকা হয়ে গেছে।

আমি একই ভাবে খাদিজার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। নিরাবতা ভেঙে নিজেই বলি,

  • আমি তো আপনাকে কিছু দিতে পারলাম না
  • একটা জিনিস চাইবো দেবেন?
  • কি জিনিস?
  • বাসর রাতে আমাদের দুই রাকাত নামাজ পরে স্রষ্টার দরবারে শুকরিয়া আদায় করা উচিৎ ছিল।
    আপনি যদি চান আমরা আজ নামাজটা পরে নিতে পারি।
    আমি সম্মতি দিলাম। তারপর দুজনে মিলে দুই রাকাত নামাজ পড়ে স্রষ্ঠার দরবারে শুকরিয়া আদায় করলাম।

অসাধারণ গল্প ও কাহিনী


পর্ব ৪

খাদিজাকে এখন আমার ভালো লাগছে। ওর কথা বলা, ওর হাসি সবকিছুতেই যেন একটা আবেগ মেশানো। ওকে আমি যতো দেখছি ততোই যেন অবাক হচ্ছি। নামাজ শেষে বিছানায় এসে বসতেই ও আমার পাশে এসে বসে। আমার কাছে জানতে চাই,

  • আপনি কি এখন ঘুমাবেন?

আমি ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। কিচ্ছু বলি না। ও আবার আমাকে বলে,

  • আমার কিন্তু খুব ঘুম পাচ্ছে!
    কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমাকে ঝাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
  • কি হলো কথা বলছেন না কেন?
  • কি বলবো?
  • আমি কি ঘুমিয়ে পরবো?
  • আরে ঘুম আসলে ঘুমোবেন এতে এতো বলার কি হলো?
  • ওহহ আচ্ছা।

চোখ তুলে দেখি খাদিজা মুখটা মলিন করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর কম্বলটা টেনে মুরি দিয়ে মুখটা ঢেকে শুয়ে পরে। আর আমি বসে আছি। বসে থেকে ভাবছি খাদিজাকে নিয়ে। যে কিনা এতো আলাদা একটি মেয়ে। লেখাপড়া জানা উচ্চ শিক্ষিতা একজন আদর্শ নারী। যার সাথে সারাটা জীবন অনায়াসেই কাটিয়ে দেওয়া যায়। আচ্ছা, খাদিজা তো অবন্তীর মতোন না। তারপরও ভেতরে ভেতরে ভয় পাচ্ছি সত্যিটা জানলে খাদিজা কি করবে সেটা ভেবে। নাহ আজকের রাতটা কাটুক আমি খাদিজাকে কালই সব খুলে বলবো তারপর যা হবে দেখা যাবে।

ঘড়ির কাটায় রাত তিনটা বাজে। এতো চিন্তার অবসান ঘটিয়ে চোখে ঘুমটা একটু লেগেছে। হঠাৎ চোখে মুখে পানির ছিটা। আমি ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে তাকিয়ে দেখি খাদিজা আমাকে ডাকছে।

  • এই উঠুন না।
    আমি উঠে বসে ঘুমন্ত চোখ ডলতে ডলতে ঘড়ির দিকে তাকায়। দেখি তিনটা ছয় বাজে।
  • কি হলো এতো রাতে কেন ডাকছেন আমাকে?
  • তাহাজ্জুদ পড়তে।
  • মানে?
  • আপনি এখন আমার সাথে তাহাজ্জুদ পড়বেন!
  • এই শীতে এতো রাতে নামাজ?
  • হুমম।
  • আপনি ঘুমান তো। ৫ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ পড়েন এটাই আপনার জন্য এনাফ। এতো রাতে নফল নামাজের দরকার নেই।
    কথাটা বলেই আমি শুয়ে পড়লাম। আর খাদিজা আমাকে ঝাকিয়ে ডাকতে থাকে।
  • আরে উঠুন না! আমার কথাটা তো শুনুন!
  • কি বলবেন?
  • আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নিচের আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব! কে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে দান করব! আর কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব! ’ (বুখারি ও মুসলিম)

আপনার যদি কিছু চাওয়ার থাকে এই নামাজে স্রষ্টার নিকট চাইতে পারেন। সে আপনাকে নিরাস করবেন না।
আমি উঠে বসে খাদিজাকে বললাম,

  • যা চাইবো তাই কি পাবো?
  • হুমম, পাবেন।
  • আমার তা মনে হয় না
  • মানে?
  • কিছু না আপনি পড়ুন।
  • আপনি পড়বেন না?
  • নাহ।
  • দেখুন, এটি অন্যান্য নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে অন্যতম!
  • হোক অন্যতম। আপনার ইচ্ছা হলে আপনি পড়েন আমাকে এতো ডাকছেন কেন? তাছাড়াও এটা ফরজ ইবাদত নয় তাই গুনাহ হবার প্রশ্নই আসে না।
    আমি কথাটা বলার পর খাদিজা একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আমাকে আর কিচ্ছু বলে নি। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আস্তে করে উঠে গিয়ে অজু করে এসে নামাজে দাড়িয়ে পরে।

আমারও আর ঘুম আসে নি। তাই বসে আছি। খাদিজা নামাজ শেষে আমার পাশে এসে বসে।

  • কি হলো ঘুমান নি যে?
  • সারাদিন ঘুমিয়ে আছি তো তাই আর ঘুম আসছে না।
  • ওহহ।
  • একটা কথা বলবো?
  • কি?
  • কাল থেকে আমাকে আর মাঝরাতে এভাবে ডাকবেন না। কাঁচা ঘুম ভেঙে গেলে আমার মাথার ঠিক থাকে না। কি বলতে কি বলে ফেলব আর আপনার খারাপ লাগবে।
  • ঠিক আছে। আপনি না চাইলে আমিও আর আপনাকে ডাকবো না। আসলে রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রাত্রে ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদের নামায পড়ে এবং সে তার স্ত্রীকেও ঘুম থেকে জাগিয়ে নামায পড়ায় এমনকি সে যদি জেগে না উঠে, তবে তার মুখে খানিকটা পানি ছিটিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করে থাকেন! অনুরুপ কোন মহিলা যদি রাত্রিকালে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে এবং সে তার স্বামীকে নামাযের জন্য জাগায় এমনকি স্বামী না জাগলে স্ত্রী তার মুখে পানি ছিটিয়ে তার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয় তাহলে তার প্রতিও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে থাকে। আমি ভাবলাম আপনাকে ডাকলে আপনি উঠবেন। কিন্তু আপনি যখন চাইছেন না তাহলে আর ডাকবো না।
  • না ব্যাপারটা সেরকম নয়। আমি আসলে শীতের জন্য এতো রাতে উঠতে চাইছি না।

কিছুক্ষণ পর,তাকিয়ে দেখি খাদিজা চুপ করে আছে। আমি জানতে চাইলাম,

  • আচ্ছা যা চাইবো তাই কি পাবো তাহাজ্জুদ পড়লে?
    খাদিজা একটু মুচকি হেসে,
  • কেন পাবেন না?
  • আসলে একটা কথা বলবো শুনবেন?
  • হুমম। বলুন..
  • আমি যদি বাবা হতে চাই হতে পারবো?
    কথাটা শুনার পর খাদিজা চোখ তুলে আমার দিকে তাকায়। একটু লজ্জা লজ্জা মুখ করে মুচকি হেসে বলে,
  • পারবেন কিন্তু তারজন্য স্ত্রীকে ভালোবাসতে হবে।
  • আপনি বুঝতে পারছেন না আমি যে কথাটা বলতে চাচ্ছি। কিভাবে যে বোঝায় আপনাকে আমি!

খাদিজা প্রশ্নসূচক মুখ নিয়ে আমার দিকে তাকায়। আর আমি খাদিজাকে বলতে শুরু করি,

  • আমার প্রথম স্ত্রী। নাম অবন্তী। যাকে আমি ভালোবেসে মায়ের অমতে গিয়ে বিয়ে করেছিলাম। অবন্তীকে নিয়ে বাড়িতে আসার পর থেকেই রোজ সংসারে একটার পর একটা অশান্তি লেগে থাকতো। অনেক ভালোবাসতাম ওকে আমি। যার জন্য এমন কিছুই বলতাম না যাতে ও কস্ট পায়। মাকেও অনেক কড়া কথা শুনাতাম অবন্তীর জন্য।

বিয়ের পর দু’বছর হয়ে গেলেও আমাদের কোনও সন্তান হয় নি। অবন্তীর বোন একজন ভালো ডাক্তার। অবন্তীর কথায় আমরা তার স্মরণাপর্ণ হই। সে আমাদের কিছু টেস্ট করতে বলে। আমরা তার কথায় সব টেস্টই করি। তারপর যখন রিপোর্ট হাতে আসে তখন যানতে পারি আমি আর কোনোদিনও বাবা হতে পারবো না।

সেটা শুনে অবন্তী আর আমার সাথে সম্পর্কটা রাখতে চাই নি। ডিভোর্স নিয়েছে আমার থেকে। আর ডিভোর্সের এক সপ্তাহের মধ্যেই শুনেছি আবার বিয়েও করেছে। বিয়ের পর স্বামীর সাথে আমেরিকায় সেটেল। তারপর আর অবন্তীর কোনও খোঁজ পাই নি আমি। তবে সত্যি এটাই আমি আর কখনও বাবা হতে পারবো না। আমি যদি বাবা হতে চাই পারবো বাবা হতে?

খাদিজা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আমাকে জিজ্ঞাসা করল,

  • আপনার আগে বিয়ে ছিলো?

খাদিজার এমন প্রশ্নে আমি থমকে যায়। আমি কিছুই বুঝছি না খাদিজা এমন কথা কেন বলল!

  • কেন আপনি যানতেন না?
    খাদিজা মাথাটা ঝাকিয়ে না জানায়।
  • কিন্তু মা তো আমাকে বলেছিলো আপনি যানেন অবন্তীর কথা। শুধু আমাদের ডিভোর্সের কারণটা যানেন না।

খাদিজা চুপ করে আছে। ওর এমন নিরবতায় আমিও চুপ হয়ে গেলাম। মনের মধ্যে একটা অশান্তি কাজ করছে। তাহলে কি আমি খাদিজাকে না যেনে ঠকালাম? এতো বড় অপরাধ করলাম আমি একটা মেয়ের সাথে?


পর্ব ৫

খাদিজা থ হয়ে আছে। আমিও বুঝতে পারছি না এখন কি করবো! এই ভাবে না জেনে একটা মেয়েকে ঠকালাম আমি? খুব খারাপ লাগছে এটা ভেবে। জীবনে আবার এমন বিরহের সম্মুখীন হবো কখনও ভাবি নি। এসব কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ খাদিজার দিকে তাকিয়ে দেখি ও হাসছে। তাহলে কি মেয়েটা এতো বড় ধাক্কা সামলাতে না পেরে পাগল হয়ে গেল? হতেও পারে!

  • কি হলো আপনি ভয় পেয়ে গেলেন নাকি?

খাদিজার মুখে এমন প্রশ্ন শুনে আমি অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম। তারপর নিজের থেকেই ওর কাছে ক্ষমা চাইলাম।

  • ছরি আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন। আমি যতদ্রুত সম্ভব আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দেব।

আমার এমন কথায় খাদিজা চোখ পাকিয়ে আমার দিকে তাকালো।

  • আমি কি আপনার কাছে ডিভোর্স চেয়েছি?
  • না। ভয়ে ভয়ে বললাম।
  • তাহলে ডিভোর্স কেন দিতে চান?
  • আমাকে ডিভোর্স দিলে আপনি সুখী হবেন তাই।
  • সেটা তো আপনার বিয়ে করার আগে ভাবা উচিৎ ছিলো। কাল বিয়ে করেছেন আর আজই বলছেন ডিভোর্স দেবেন?
  • না আসলে আপনার কথা ভেবেই তো বললাম?
  • আমার কথা ভাবতে হবে না আপনাকে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যা করেন নিশ্চয় ভালোর জন্যই করেন। তার হয়তো অন্য কোনো পরিকল্পনা আছে আমাদেরকে নিয়ে।

এমন সময় ফজরের আজান দিয়ে দিয়েছে। খাদিজা আমাকে উঠতে বলে জায়নামাজে গিয়ে দাড়িয়ে পরে।

আর আমি খাদিজার দিকে তাকিয়ে থাকি। কি অদ্ভুত মেয়েটা! ওর জায়গাতে অন্য কোনও মেয়ে থাকলে হয়তো এতোটা স্বাভাবিক ব্যবহার করতো না।

আমি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে অজু করে এসে মসজিদে চলে গেলাম। নামাজ শেষে বাড়িতে এসে দেখি খাদিজা নেই। খাদিজাকে হন্ন হয়ে খুঁজতে থাকলাম। নিচে কোথাও না পেয়ে রুমে এসে দেখি রুমেও নেই। গেল কোথায় তাহলে মেয়েটা? ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে কুন কুন কান্নার আওয়াজও। আমি এগিয়ে গিয়ে দেখি খাদিজা পানির নিচে বসে ভেজা কাপড়ে কাপঁছে। চোখদুটো লাল হয়ে গেছে কাঁদতে কাঁদতে। তোয়ালেটা জড়িয়ে দিয়ে খাদিজাকে ধরে উঠালাম। দেখি জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। আর আমি ভাবছি এই শীতে এইভাবে পানির নিচে বসে আছে কেন মেয়েটা? তাহলে কি সত্যিই ধাক্কাটা সামলাতে পারে নি?

জ্বরের ঘোরে খাদিজা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আমি ওকে ধরে ভালোভাবে শরীরের পানি মুছিয়ে দিলাম। তারপর ওর শাড়িটা চেঞ্জ করতে লাগলাম। খুব দ্বীধা বোধ হচ্ছিলো তবুও এমন পরিস্থিতিতে কাউকে ডাকতেও পারছিলাম না।

ওকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মায়ের কাছে গেলাম। আর জানতে চাইলাম খাদিজাকে বিয়ের আগে কিছু জানায় নি কেন? কিন্তু মায়ের কাছে আমি যে কথাটা শুনি সেটা শুনে আমি নিজেই অবাক হয়ে যায়। মা বলে,

  • খাদিজা একটা অনাথ। মেয়েটা যেমন পরহেজগার তেমনই ওর দ্বীনি পথ চলা। আমি চাইছিলাম না এমন একটা মেয়েকে হাত ছাড়া করতে। আর তাই ওর সাথে তোর বিয়ে দিতে আমি ওর কাছ থেকে মিথ্যাটা গোপন করেছি।
  • ভুল করেছো তুমি মা!
  • কোনও ভুল করি নি আমি। ওই অবন্তীর থেকেও এর সাথে তুই খুব ভালো থাকবি দেখিস। আর আমার বিশ্বাস খাদিজা তোকে কখনো ডিভোর্স দেবে না।

মায়ের কথা শুনে আমার যতোটা না রাগ হচ্ছিল। তার থেকেও অনেকটা কস্ট হচ্ছিল খাদিজার কথা ভেবে। কিন্তু কিছুই বলতে পারি নি মাকে। অবন্তীর জন্য মাকে একটা সময় অনেক অপমান করতাম কিন্তু এখন আর করি না। আস্তে করে রুমে এসে দেখি খাদিজা মিটমিট করে তাকিয়ে উঠে বসতে যাচ্ছে। আমি গিয়ে ওকে ধরে উঠালাম। তারপর একটা বালিস ঠেকিয়ে ওকে সেখানে একটু হালকে ঠেকিয়ে বসালাম। খাদিজা জ্বরের ঘোরে বিরবির করে বলতে থাকে,

  • আমার শাড়িটা কে বদলে দিয়েছে?
    আমি চুপ করে আছি।

একই ভাবে খাদিজা আমার কাছে দুই তিনবার এমন প্রশ্ন করার পর আমি উত্তর দিয়।

  • আমি করেছি।
    খাদিজা আমার উত্তরটা শুনে আর কোনও কথা বলে না, চুপ করে থাকে।

সন্ধ্যায় খাদিজার জ্বরটা একটু কমে। তখন আবার স্বাভাবিক ব্যবহার করতে থাকে। যেন কিছুই হয় নি।


পর্ব ৬

আমি খাদিজার পাশে গিয়ে বসে ওর কাছে জানতে চাইলাম।

  • আপনি এখন ঠিক আছেন তো?

খাদিজা চুপটি করে বসে মাথাটা কাত করে হ্যাঁ জানালো।
আমি ওর কপালে হাত রেখে দেখি জ্বরটা অনেক কমেছে।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমিই বললাম,

  • পারলে আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিবেন।
  • কিসের জন্য?
  • আপনার কাছ থেকে সত্যিটা লুকানো হয়েছে তাই।
    খাদিজা একটু মুচকি হেসে আমার হাতদুটো শক্ত করে ধরে আমার মুখোমুখি হয়ে বসলো। ওর এমন আচরণে আমি আবাক হচ্ছি।
  • আপনি কি সত্যি ঠিক আছেন?
  • কেন কি হবে আমার?
    আমি মনে মনে ভাবছি সত্যিই খাদিজা ভালো নেই। ওর জায়গা অন্য কোনও মেয়ে হলে হয়তো সবকিছু এভাবে স্বাভাবিক ভাবে নিত না। আমি মুখটা ফ্যাকাশে করে ওর দিকে তাকালাম।
  • দেখুন আমি যানি আমার সাথে থাকলে আপনি কখনও মা হতে পারবেন না। আর আপনার কাছে সত্যিটা লুকানোর জন্য সত্যিই আমি খুব লজ্জিত।
  • এভাবে কেনও বলছেন আপনি? এতে তো আপনার কোনো হাত নেই। আর আমার কথা ভাবছেন আপনি? আমার মনে হয় না, সন্তান না হলে একটা মেয়ের জীবন থেমে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা যা ছিনিয়ে নেন, তার চেয়ে উত্তম কিছু বান্দাকে দান করেন।

দুনিয়া পরীক্ষার স্থান। কেউই এখানে পরীক্ষা দেয়া ছাড়া থাকতে পারে না।

আমি যতদূর জানি, হযরত আয়েশা রা. এর কোনও সন্তান ছিল না। তিনি সন্তানসম্ভবা হয়েছিলেন, এমন কোনও তথ্যও হাদীসে নেই। নবীজির ঘরে খাদীজা রা. এর ছয়টা সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল। চার কন্যা, দুই ছেলে। এটা দেখে আয়েশা রা. এর মনেও আশা জাগাটা বিচিত্র কিছু ছিল না, আমারও সন্তান হোক! কিন্তু তিনি সন্তানের জন্যে দু‘আ করেছেন বা নবীজির কাছে দু‘আ চেয়েছেন এমন কোনও কিছু নজীর হাদীসে নেই বলেই জানি। অথচ তিনি ছিলেন নবীজির প্রিয়তমা স্ত্রী। সন্তান চাওয়া অন্যায় কোনও কিছু নয়। নবীজিকে বললেই হত। তিনি আল্লাহর কাছে দু‘আ করতেন। আয়েশা রা.

এমনটা করেন নি। নবীজি যখন ইন্তেকাল করেন, তখন আয়েশা রা. এর বয়স আঠার। তিনি

ইন্তেকাল করেছেন ৫৮ হিজরীতে। তার মানে নবীজির পরও তিনি প্রায় ৪৭ বছর বেঁচে ছিলেন। এই দীর্ঘ সময় তিনি স্বামী সন্তান ও সংসার ছাড়াই কাটিয়ে দিয়েছেন। কখনো সন্তান বা সংসারের জন্যে আক্ষেপ করেছেন, এমন কোনও প্রমাণ নেই। তিনি ইলমচর্চা, ইবাদত- বন্দেগী,
শিক্ষকতা- ফতোয়া প্রদান করেই পুরো সময়টা কাটিয়ে দিয়েছেন। বড় বড় সাহাবী তার কাছ।

থেকে পাঠ নিয়েছেন। মদীনার সমস্ত মহিলাকুলের শিক্ষিকা ছিলেন তিনি। আয়েশা রা. বিষয়টা ভালভাবে জানতেন এবং কর্মের মাধ্যমে তা মেনে দেখিয়েও গেছেন। আল্লাহর ফয়সালার প্রতি সন্তুষ্ট
থেকেছেন। সবর- শোকরের সাথে জীবন কাটিয়ে গেছেন। কুরআন কারীমকে সাথী বানিয়েছেন, হাদীসচর্চাকে জীবনের অনুষঙ্গ বানিয়েছেন। আর আমার পাশে তো আপনি আছেন। তাহলে আপনি এমনটা কেন ভাবছেন?

আমাকে নিয়ে আপনার এতো ভাবতে হবে না। বিশ্বাস করুন আমি ভালো আছি। আর আমি চাই আপনিও ভালো থাকুন। সবসময় হাসি খুশি থাকুন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যা পরিকল্পনা করে রেখেছেন আমাদের জন্য তাই হবে। আপনার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। দয়া করে আপনি আর দুঃচিন্তা করবেন না।

খাদিজা কথাগুলো বলে থেমে গেলে আমি বললাম,

  • দুঃচিন্তা করবো না আপনাকে নিয়ে আমি? ওইভাবে ওয়াশরুমে কেন পরে ছিলেন বলতে পারেন? এই শীতে ঠান্ডা লাগিয়ে জ্বর বাধিয়ে ফেলেছেন? আমাকে যদি আপনি মেনেই নিলেন তাহলে নিজেকে কেন কস্ট দিচ্ছিলেন?

খাদিজা কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর বলল,

  • আমি নিজেকে কস্ট দিচ্ছি? আচ্ছা আপনি কি কিচ্ছু বোঝেন না? কাল থেকে কিছু খেয়েছি আমি? মাথাটা ঘুরে গিয়েছিল তাই ওয়াশরুমে পরে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছিলাম। যার জন্য উঠতে পারছিলাম না। চিৎকার দিয়ে কাউকে ডাকতে চাই নি। এর মধ্যে আপনি আসতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
  • কাল থেকে কিছু খান নি আপনি?

খাদিজা মাথাটা ঝাকিয়ে না বলে।
মনে মনে ভাবছি এতো বড় ভুল কিভাবে করলাম আমি। মেয়েটা খেয়েছে কিনা একবার তো খোঁজ নিয়ে দেখতে পারতাম।
আমি খাদিজাকে বসিয়ে রেখে প্লেটে করে খাবার নিয়ে আসলাম। খাদিজার সামনে রেখে বললাম, – নিন খেয়ে নিন।
খাদিজা ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

  • আপনি খাইয়ে দিন!

কেমন একটা মায়ার বাসা বাঁধলো খাদিজার প্রতি। ওকে খাইয়ে দিয়ে এটো প্লেটগুলো নিচে নামিয়ে রেখে বিছানায় বসতেই অফিস থেকে বসের ফোন আসে। অফিসের সব সমস্যা মিটে গেছে কাল থেকেই জয়েন করতে হবে। খুশিতে আমি খাদিজাকে জড়িয়ে না ধরে পারলাম না। হঠাৎ অনুমতি ছাড়াই এভাবে জড়িয়ে ধরায় অনেকটা সংকোচ বোধ করলাম।

আমি খাদিজাকে ছেড়ে দিতে যাবো এরই মধ্যে খাদিজাও আমার বাহুডোরে নিজের মাথাটা শক্ত করে চেপে রাখল। আমাদের মধ্যে এক অন্যরকম অনুভুতির জানান দিল। সেই মুহূর্ত থেকেই নিজেকে সমার্পন করে দিলাম খাদিজার কাছে। খাদিজা যা চাইতো তাই করতাম। সব সময় ওর সুখের কথা ভাবতাম।

ওর কথায় দাড়ি রাখতে শুরু করলাম। পাচঁ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায় করতে শুরু করলাম। সেই সাথে মাঝ রাতে ওর তাহাজ্জুদেরও সঙ্গী হলাম। আমি জানতাম ওকে কখনও মা ডাক শোনাতে পারবো না তবুও আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে দু’হাত তুলে বলতাম একটা সন্তান আমাদেরকে দিতে। কিন্তু কখনও ভাবি নি আমার দোয়া এইভাবে কবুল হবে।

আজ আমি তিন কন্যা সন্তানের বাবা আর খাদিজা তিন কন্যা সন্তানের জননী। খাদিজা ঠিকই বলতো মন থেকে স্রষ্ঠার দরবারে দু’হাত তুলে কিছু চাইলে স্রষ্ঠা কখনো তার বান্দাহকে খালি হাতে ফেরায় না। তবে হ্যাঁ, সেই চাওয়াটা হালাল হতে হবে। আমি চেয়েছি তাই পেয়েছি। এখন আমি আমার স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারকে নিয়ে সুখেই আছি। সবাই দোয়া করবেন আমাদের জন্য। – আমিন।

লেখা – তাবিয়া খন্দকার

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “সুখের সন্ধানে – অসাধারণ গল্প ও কাহিনী” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – অনুতাপ – ফিরে আসার গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *