নতুন বিয়ের গল্প ৫

নতুন বিয়ের গল্প – স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – পর্ব ৫

নতুন বিয়ের গল্প – স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – পর্ব ৫: আমাদের সুখের সংসার হটাৎ কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল। সবার মন খারাপ আর বিষন্নতা আমাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে। কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না।

স্ত্রীর মায়া

বড় ভাবী ইমনকে ফোন দিয়ে বলতে লাগলো,

বড় ভাবীঃ ইমনরে, মাহির অবস্থা খুব খারাপ। আমরা ওকে নিয়ে হসপিটালে আসতেছি। তুইও তাড়াতাড়ি হসপিটালে আয়।

সবাই মিলে আমাকে হসপিটালে নিয়ে গেলো। ইমন ছুটে এসেছে হসপিটালে।

ডাক্তার দ্রুত আমাকে অপারেশন থিয়েটারে নিলেন।

বাইরে সবাই অপেক্ষা করছে। ইমন বাইরে বসে হাউমাউ করে কাঁদছে। আম্মু বেলা ওরাও এতক্ষণে রওনা দিয়েছে।

৩০ মিনিট পর ডাক্তার এসে বলেন,

ডাক্তারঃ আপনি খুব লাকী মিঃ ইমন, আপনার ওয়াইফ এ যাত্রায় বেঁচে গেছে। কিন্তু আমরা আপনার বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারিনি।

ইমনঃ বাচ্চা? বাচ্চাটা না?

ডাক্তারঃ আপনার ওয়াইফ বাচ্চাটা রেখে দিয়েছিলো। আর নিষেধ করেছিলো আপনাকে যেন না জানাই। পরিণতি আজ তার এই অবস্থা। একটুর জন্য তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন।

ইমনঃ আল্লাহ্‌র কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া, যে আমার মাহি ঠিক আছে। ও এখন শঙ্কা মুক্ত তো?

ডাক্তারঃ জ্বী, তবে তাকে কখনো মেন্টালি প্রেশার দিবেন না। না এখন, না পরে।

ইমনঃ জ্বী ডাক্তার। আমি কি এখন মাহির কাছে যেতে পারবো?

ডাক্তারঃ না, একটু পরে তাকে বেডে দেয়া হবে।

ইমনঃ আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, ডাক্তার।

কেন করলে তুমি এমন কলিজা? কেন করলে? আমার তো তোমাকে প্রয়োজন। তোমার জীবনের ঝুঁকি থাকবে আমি ওমন কিছুই চাইনা। কিছুই চাইনা আমি।
শুধু তুমি থাকলেই হবে। শুধু তুমি থাকলেই হবে।

পরিবারের সাপোর্ট

আমাকে বেডে দেয়া হয়। ইমন দ্রুত আমার কাছে আসে।

মাহিঃ সরি, ইমন। আমি পারলাম না, আমাদের বাচ্চাটাকে বাঁচাতে।

ইমনঃ চুপ। কোন কথা না, আমার শুধু তোমাকে লাগবে, শুধু তোমাকে। তুমি ছাড়া আমার আর কিচ্ছু চাইনা, কিচ্ছু না।

সেদিনের পর, দেখতে দেখতে কেটে গেছে তিন তিনটি মাস।

ইমন, ইমনের পরিবারের সবাই আমাকে অনেক বুঝিয়েছে। অনেক সাপোর্ট দিয়েছে।

ইমন আমাকে প্রতিটা মুহূর্ত হাসাতে চেষ্টা করেছে। মুছে দিয়েছে আমার চোখের জল। অথচ আমি জানি, ওর ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যায়।

ওর সন্তানকে ও মিস করে। স্বপ্নগুলো, আজো ওর বুকের ভেতর লুকিয়ে আছে। শুধু পারছেনা তা পূর্ণতা দিতে।

বেচারা, কাঁদতেও পারেনা আমার জন্য।

কান্না আটকে রাখাটা যে কতটা কষ্টের, তা শুধু তারাই বুঝবে যারা কখনো কান্না আটকে রেখেছে প্রিয় মানুষগুলোর মুখে হাসি ফোটাতে বা পরিস্থিতির চাপে।

শাশুড়িঃ মাহি।

মাহিঃ জ্বী, মা।

শাশুড়িঃ আজ মা তুমি রান্না করো। কবে থেকে তোমার হাতের রান্না খাইনা।

মাহিঃ আচ্ছা মা।

আমি জানি, মা চাচ্ছেন আমি যেন আবার স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন শুরু করি।

স্বামী স্ত্রীর মিষ্টি প্রেম

আজ আমি রান্না করেছি। খেয়ে সবাই প্রশংসা করেছেন।

ইমনঃ কবে থেকে আমার বউটা আমাকে জড়িয়ে ধরেনা। বলে না ভালবাসি। বরটা বুঝি পুরনো হয়ে গেছে ,তাইনা? তাই আর বরটাকে ভালবাসতে ইচ্ছে করেনা।

মাহিঃ ইমন, প্লিজ।

ইমনঃ আর কত দিন এইভাবে নিজেকে কষ্ট দিবে? আর কত দিন? যা আমাদের ছিলোনা। তার জন্য কষ্ট পেয়ে কি হবে বলো? অতীত ভুলে নতুন ভাবে আবার শুরু করি না জীবন। প্লিজ, আমার খুব কষ্ট হয় তোমাকে এইভাবে দেখতে।

মাহিঃ ওহ আমি বুঝি পুরাতন হয়ে গেছি?

ইমনঃ হি হি হি!

ওই কি দেখছো এইভাবে?

ইমনঃ আমার বউকে দেখছি।

মাহিঃ এমন ভাবে দেখছো যে মনে হচ্ছে আগে কোন দিন দেখোনি।

ইমনঃ দেখেছি, তবে এই হাসিটা খুব মিস করছিলাম।

আমি ইমনকে জড়িয়ে ধরলাম।

ইমনঃ লাভ ইউ মাহি। খুউউব ভালবাসি।

মাহিঃ লাভ ইউ টু।

রোমান্টিক বরের দুষ্টামি

সকাল হতেই ভেজা চুলের ঝাপটা দিলাম ইমনর মুখে।

মাহিঃ তুমি কি উঠবে? নাকি আমি পানি এনে পানি ঢেলে দিবো?

ইমনঃ আজকের সকালটা আমি অনেক দিন যাবত মিস করেছি জানো? এই ভেজা চুলের ঝাপটা, এই রাগী কন্ঠে ডাক, সব কিছু।

মাহিঃ হয়েছে হয়েছে, এবার উঠে ফ্রেশ হয়ে নিন। আমি, আমি কিচেনে যাচ্ছি।

আমি ইমনকে ঘুম থেকে জাগিয়ে চলে গেলাম নাস্তা বানাতে। কিছুক্ষণ পর দেখি, ইমন এসে পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে।

মাহিঃ কি করছো? ছাড়ো ছাড়ো।

ইমনঃ কেন ছাড়বো? আমার বউকে আমি ধরেছি। অন্য কারো বউকে তো আর ধরিনি।

মাহিঃ কেউ এসে পড়বে।

ইমনঃ আসুক, তাতে কি?

মাহিঃ উফফ, তুমি না।

ইমনঃ উহু উহু।

ভাবিঃ দেবর জী, আপনি কি আমার জা কে কাজে সাহায্য করছেন?

ইমনঃ না মানে আসলে, আমি তো দেখতে এসেছিলাম নাস্তা বানানো হয়েছে কিনা! আমি আসছি, হ্যাঁ? এই মাহি, তাড়াতাড়ি নাস্তা বানাও।

ভাবিঃ জানো মাহি, তোমার আর ইমনের মুখে হাসি দেখে খুব ভালো লাগছে। তোমরা সারাজীবন এমন হাসি খুশি থাকো দোয়া রইলো।

মাহিঃ ধন্যবাদ, ভাবী।

এভাবেই চলছে, আমার আর ইমনের সংসার।

দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তাব

জীবনের সেই ঘটে যাওয়া, দূর্ঘটনাটার কথা মনে করতে চাইনা আমরা। তবুও মনে পড়ে যায়। টিভিতে কোন বাচ্চা দেখলে চোখে জল এসে যায়। কারো বাচ্চা হয়েছে শুনলে, বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠে। কোন প্রেগন্যান্ট মহিলাকে দেখলে, মনে পড়ে যায় নিজের সেই অতীতের কথা।

দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেছে। আল্লাহ্‌ আর মুখ তুলে চান নি আমাদের দিকে। আমি প্রতিটা মাস অপেক্ষায় থাকি।

কিন্তু অপেক্ষা আমার অপেক্ষাই রয়ে যায়।

এদিকে ইমনর বন্ধুরা একেক জন ইমনকে বাবা হবার সুখবর দেয়।

আর ইমন..

ইমন শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়।

ইমন আজো বাচ্চা দেখলে ঝাঁপিয়ে পড়ে কোলে নিতে।

কেউ কেউ বলে উঠে, তুই বাচ্চাদের এত ভালবাসিস, তোর বাচ্চা হবে কবে? তুই বাবা হবি কবে?

ওর হাসি মুখটা তখন মেঘে ঢেকে যায়। আমার চোখ তা এড়ায় না।

আমাদের বিয়ের আজ ৫ বছর পূর্ণ হলো।

ইমন বরাবরের মতই আমাকে রাত ১২ টায় জড়িয়ে ধরে উইশ করলো।

মাহিঃ ইমন।

ইমনঃ হুম, কলিজা।

মাহিঃ আজকের দিনে আমি তোমার কাছে কিছু চাইবো তুমি দিবা কি?

ইমনঃ কেন দিবোনা? তুমি আমার প্রাণটা চাইলে প্রাণটাও দিয়ে দিবো। কি চায় আমার কলিজা, শুনি?

মাহিঃ তুমি আরেকটা বিয়ে করো।

ইমনঃ হোয়াট? তোমার মাথা ঠিক আছে? এসব তুমি কি বলছো?

মাহিঃ আমি যা বলছি ঠিকই বলছি। আমি তোমাকে কখনো সন্তানের সুখ দিতে পারবোনা। ৫ বছর হয়ে গেছে। আমি পারিনি তোমায় বাবা ডাক শোনাতে। আর হয়তো কোন দিনো পারবো না। তাই আমি চাই তুমি আরেকটা বিয়ে করো।

ইমনঃ কিন্তু মাহি…..

মাহিঃ প্লিজ, কোন কথা বলোনা। তুমি বলেছো, আমি যা চাইবো তুমি তাই দিবে। তাই ওয়াদা ভঙ্গ করোনা।

আমি সকালেই বাসার সবাইকে বলে দেবো তোমার জন্য মেয়ে দেখতে। চলবে….

পরের পর্ব- নতুন বিয়ের গল্প – স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – পর্ব ৬

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *