ডেভিল বর (শেষ খণ্ড) – Husband wife love story after marriage in Bengali

ডেভিল বর (শেষ খণ্ড) – Husband wife love story after marriage in bengali: রেহান আঁচলের কপালে চুমু দেয়। আঁচল নড়েচড়ে উঠতেই রেহান ঘুমের ভান ধরে। আঁচল তাকিয়ে দেখে ৭ টা বাজে। রেহানের দিকে একপলক তাকিয়ে আঁচল উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট বানাতে চলে যায়।


পর্ব ১৪

রেহানঃ কথা বললে কোল থেকে ফেলে দিবো। সো চুপ থাকো।
আঁচল কিছু না বলে চুপ করে থাকে।
রেহান আঁচলকে ছাদে এনে কোল থেকে নামিয়ে দেয়।
আঁচল এই প্রথম রেহান দের বাসার ছাদে এসেছে।
আঁচল ঘুরে ঘুরে দেখছে।

ছাদের চার কোণায় চারটা লাইট লাগানো যার জন্য রাত হলেও অনেক টা আলোকিত হয়ে আছে ছাদ টা। আঁচলের সবচেয়ে ভালো লাগে দোলনা দেখে দোলনার পাশে অনেক গুলো ফুল গাছ ও লাগানো।

হটাৎ আঁচল পেটে কারো ছোঁয়া পায়।
রেহান আঁচলকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আঁচলের ঘাড়ে থুতনি রাখে।
রেহানঃ ভালো লেগেছে?

আঁচলঃ হ্যা। আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি।
রেহানঃ একটা কেনো! হাজার টা প্রশ্ন করো বউ। নো প্রবলেম।
আঁচলঃ আপনার বেলকনিতে ও দেখলাম অনেক গুলো ফুল গাছ আবার এখানেও।
এগুলো কি আপনার পছন্দ নাকি রিমির।

রেহানঃ ধুর বোকা! যদি রিমির পছন্দ হতো তাহলে নিশ্চয় আমার বেলকনিতে ফুল গাছ থাকতো না। আসলে আমারই ফুল অনেক প্রিয়।
আঁচলঃ ওহহ।

রেহানঃ চলো দোলনায় গিয়ে বসি। – বলেই আঁচলের হাত ধরে দোলনায় বসিয়ে রেহান আঁচলের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।
আঁচলঃ আজিব! এখানে কি শুয়ার জায়গা নাকি? এতো শুয়ার ইচ্ছে হলে ঘরেই তো শুতে পারেন তাইনা।
রেহানঃ এসব তুমি বুঝবে না পিচ্চি। রাতে বউয়ের কোলে মাথা রেখে আকাশের চাঁদ দেখা টাও অন্যরকম লাগে।
আঁচলঃ ওহহ আচ্ছা।

রেহানঃ তুমি কিছু বলছো না যে! আমিই একা বক বক করে যাচ্ছি।
আঁচলঃ আমি আর কি বলবো?

রেহানঃ আচ্ছা কাল তাহলে বাড়িতে যাবে। আই মিন আমার শশুড়বাড়ি।
আঁচলঃ আমি তো কাউকে বলিনি।
রেহানঃ তাতে কি। সকালে জানিয়ে দিবা।
আঁচলঃ আচ্ছা দেখি।

রেহানঃ আচ্ছা আঁচল সত্যি করে একটা কথা বলবে?
আঁচলঃ হ্যা বলুন।
রেহানঃ যদি এখন জিসান ফিরে আসে তো? তুমি কি ওর কাছে ফিরে যাবা?

আঁচল রেহানের দিকে তাকিয়ে দেখে রেহান অসহায় ভাবে আঁচলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। রেহানের চাহনি তে কিছুটা ভয়ও দেখা যাচ্ছে। যেনো আঁচলকে হারানোর ভয়। রেহান এক দৃষ্টিতে আঁচলের দিকে তাকিয়ে আঁচলের বলা উত্তরের অপেক্ষা করছে।
আঁচলঃ এই সব না বললে ভালো হয় না?

রেহানঃ আঁচল প্লিজ আমার কথার উত্তর দাও।
আঁচলঃ দেখুন আমি জিসান কে ভালোবাসতাম ঠিক। কিন্তু ও তো আমাকে ঠকিয়েছে তাইনা। এতো ভালোবাসার পরও যে আমাকে ঠকিয়েছে তার কাছে কিভাবে ফিরে যাবো আর।

রেহান আঁচলের কথা শুনে মুচকি হাসে যেনো কঠিন কিছু জয় করে নিয়েছে।
আঁচলঃ এবার তাহলে উঠুন। রুমে যাই এমনিতেও অনেক রাত হয়েছে। এতো রাতে ছাদে থাকার দরকার নেই।

রেহান আঁচলের কথা শুনে উঠে বসে আঁচলের দিকে তাকিয়ে বলে
রেহানঃ রুমে কেনো? (ভ্রু কুচকে)
আঁচলঃ আজিব! সারা রাত এখানে কাটাবো নাকি?
রেহানঃ বুঝেছি তো বেইবি।
আঁচলঃ কি বুঝলেন?

রেহানঃ আদর করবা আমায় তাই তো? (চোখ মেরে)
আঁচলঃ আপনি এতো অসভ্য কেনো বলুন তো?
রাত হয়েছে আমার ভয় করে তাই বলছি।

রেহান মুচকি হেসে উঠে আঁচল কে আবার কোলে তুলে নেয়।
আঁচলঃ কি পাগলামো করছেন? আমি কি হেটে যেতে পারবো না নাকি?
রেহানঃ আমি থাকতে তুমি এতো কষ্ট করবে কেনো বেইবি। (মুচকি হেসে)
আঁচলঃ আহারে
রেহান আঁচলকে নিয়ে রুমে চলে আসে।

আঁচল বিছানায় পাশ ফিরে শুয়ে পড়তেই রেহান বলে উঠে
রেহানঃ একি তুমি ঘুমানোর প্লান করছো নাকি হ্যা? (ভ্রু কুঁচকে)
আঁচলঃ তো কি করবো শুনি? আপনাকে নিয়ে নাচবো যত্তসব।

(রেগে)
রেহান আঁচলের পাশে এসে শুয়ে আঁচলকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়
রেহানঃ উহুমসারা দিন যে এতো কষ্ট দিলে এখন ভালোবাসা চাই।

(মুচকি হেসে)
আঁচলঃ দেখুন আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। প্লিজ ঘুমাতে দিন।
রেহানঃ নো ওয়ে। ~ বলেই আঁচলের ঠোঁটে আলতো করে চুমু দেয়।
আঁচলঃ ঘুমাতে দিন প্লিজ।

রেহান বুঝতে পারে আঁচলের হয়তো খারাপ লাগছে তাই ঘুমাতে চাইছে। রেহান আঁচলকে আর বিরক্ত করে নি। শুধু মুচকি হেসে আঁচলকে টেনে বুকে নিয়ে আসে।
আঁচলঃ কি হচ্ছে টা কি বলুন তো!
রেহানঃ চুপচাপ এখানেই ঘুমাউ। নয়তো আজ সারা রাত ঘুমাতে দিবো না বেইবি৷
আঁচল আর কথা না বলে রেহানের বুকেই শুয়ে পরে। বেচারি ঘুমাতে পারলেই বাঁচে। রেহান ও আঁচলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

সকালে
আঁচলের ঘুম ভাঙ্গলেও নড়াচড়া করতে পারছে না। বুঝতে পারছে ওর উপর কেউ আছে। আঁচল ভালো করেই বুঝতে পারে লোক টা কে!
রেহান আঁচলের গলায় মুখ ডুবিয়ে রেখেছে। এদিকে বেচারির যেনো দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

আঁচল ধীরে ধীরে রেহান কে সারতে নিলেই রেহান আঁচলকে আরও চেপে ধরে।
রেহানঃ উহো বেইবি আমার ঘুম হয়নি। আমাকে ডিস্টার্ব করো না তো।
আঁচলঃ আমি আপনাকে ডিস্টার্ব করলাম কোথায়?

আপনার ঘুম হয়নি ভালো কথা। বিছানায় গিয়ে সারা দিন পড়ে পড়ে ঘুমান না। না করেছে কে আজিব!
রেহানঃ না আমি এখানেই ঘুমাবো। তুমি নড়াচড়া করলে খবর আছে তোমার।
আঁচলঃ আরেহহ! আজ না বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিলো আপনিই তো বললেন।
রেহানঃ হ্যা তো? এতো সকাল সকালই চলে যাবা নাকি?

আঁচলঃ না তা না। গুছানো বাকি আছে তাই। আর মার সাথে ব্রেকফাস্ট বানাতে যাবো ছাড়ুন।
রেহান আঁচলের কথার প্রতিউত্তরে কিছু না বলে আঁচলের গলায় চুমু দিয়ে উঠে পড়ে৷

আঁচলঃ আপনি না ঘুমাবেন? উঠলেন যে!
রেহানঃ তুমি ঘুমাতে দিলে তো! (গম্ভীর কন্ঠে)
আঁচল মুচকি হেসে উঠে যায়। আঁচলের মুচকি হাসি টা রেহানের চোখ এড়াতে পারেনি।

রেহানঃ (বেইবি তুমি আর কতো আমার থেকে দূরে দূরে থাকতে পারো আমি দেখে নিবো মনে মনে)
আঁচল ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসে। এসে দেখে রিমি ড্রয়িং রুমে বসে আছে।
রিমি আঁচলকে দেখেও না দেখার ভান করে।

আঁচলের কিছুই মাথায় ঢুকছে না। রিমি তো আঁচলকে প্রথম থেকেই অনেক ভালোবাসতো। তাহলে হটাৎ করে কি হয়ে গেলো মেয়েটার?
আমার উপর কোনো কারনে রেগে আছে? (হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আঁচলের মাথায়।)
আঁচলঃ রিমি ব্রেকফাস্ট কি বানাবো একটু বলে দিলে সুবিধা হতো।

রিমিঃ তোমার কিছু করতে হবেনা। মা ঘুম থেকে উঠে করে নিবে। (আঁচলের দিকে না তাকিয়ে)
আঁচলঃ রিমি তুমি কি কোনো কারনে আমার উপর রেগে আছো। কাল রাত থেকে দেখছি তুমি কেমন বিহেভ করছো আমার সাথে।

রিমিঃ কেনো? কোনো খারাপ বিহেভিয়ার করেছি নাকি? ক্ষমা চাইতে হবে তোমার কাছে?
আঁচলঃ এসব কি বলছো? আমি এ’কথা বলিনি।
রিমিঃ তো কি বলেছো? কি মিন করতে চেয়েছো বলো।

আঁচলঃ না কিছুনা। আচ্ছা আমি যাই। ( রিমির সাথে কথা বললে ও হয়তো আরও রেগে যাবে তার চেয়ে বরং আমিই কিছু একটা বানিয়ে ফেলি। মনে মনে)
আঁচল রান্না ঘরে চলে যায়।আর এদিকে রিমি আঁচলের সাথে রেগে নিজের রুমে চলে আসে।
আঁচল পরোটা বানাচ্ছে হটাৎ পেটে কারো স্পর্শ পেয়ে আঁচল রেগে যায়।

রেহান আঁচলকে জড়িয়ে ধরে আঁচলের ভেজা চুলে মুখ ডুবিয়ে রেখেছে।
রেহানঃ বেইবি তোমার ভেজা চুলের ঘ্রান তো আমাকে পুরা নিহত করে দেবে গো।
আঁচল বিরক্ত হয়ে রেহানের পেটে কনুই লাগিয়ে দেয়।

রেহানঃ আহহ আঁচল এই সব কি ছেলেমানুষী করছো বলো তো? (রেগে)
আঁচলঃ আমাকে কাজ করতে দিন বলছি। নয়তো আপনাকে গরম পানিতে চুবাবো বলে দিলাম। (রেগে)
আঁচলের রাগ দেখে রেহান ভয়ে রান্নাঘর ত্যাগ করে।
আঁচল ব্রেকফাস্ট রেডি করে সবাই কে ডাকে।

একসাথে সবাই ব্রেকফাস্ট করে নেয়।
রেহানঃ মা বাবা বলছিলাম যে কালকে তো আঁচলের বাড়িতে যাওয়া হয়নি তো আজকে নিয়ে যাই। ওর ও ভালো লাগবে বাড়িতে গেলে তাই আরকি।
রেহানের বাবাঃ হ্যা তা তো ভালো কথা। নিয়ে যা। কাল তো তোর জন্যই যাওয়া হয়নি।
রেহানের মাঃ তাই তো। যা কান্ড করলি কাল।

রিমিঃ আচ্ছা কালকের কথা বাদ দিলে ভালো হয় না? (বিরক্ত হয়ে)
রেহানের বাবাঃ হ্যা। আচ্ছা আমি উঠি।

রেহানের মা বাবা রিমি উঠে চলে যায়। রেহান এখনো বসে আছে।
আঁচলঃ আপনার কি খাওয়া শেষ হয়নি? আরও খাবেন আপনি? (অবাক হয়ে)
রেহানঃ হুম খাবো তো।

আঁচল রেহানের কথায় হা হয়ে যায়। বলে কি! এতো খাবার উনার পেটে জায়গা নিবে কিভাবে। ধুর যা করার করুক আমি গিয়ে গুছিয়ে নিই।
আঁচল উঠে চলে যেতে নিলেই রেহান আঁচলের হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়।

রেহানঃ আমাকে না খাইয়ে চলে যাচ্ছো যে? (মুচকি হেসে)
আঁচলঃ খান না সবই খেয়ে নিন। নিষেধ করেছে কে যত্তসব।

রেহান দু’হাতে আঁচলের মাথায় ধরে নিচু করে আঁচলের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়।
আঁচল বেচারি বড়সড় শক খায়।
আঁচল একদিকে রেহানকে ছাড়াতে চেষ্টা করছে আর অন্য দিকে দেখছে কেউ চলে আসলো কিনা।

অনেক খন হয়ে যাওয়ার পরও রেহান আঁচল কে ছাড়েনি। আঁচল রেহানের সাথে পেরে না উঠে ক্লান্ত হয়ে রেহান কে ছাড়ানোর চেষ্টা বন্ধ করে দেয়।
হটাৎ রিমি চলে আসে। রিমি ওদের দু’জন কে এ অবস্থায় দেখে চোখে হাত দিয়ে উল্টো দিক ঘুরে যায়।

রিমি মনে মনে অনেক টা খুশি হয় এই ভেবে যে আঁচল হয়তো রেহান কে মেনে নিয়েছে।
রেহান আঁচলকে ছেড়ে দিয়ে হাঁপাতে থাকে সাথে আঁচল ও।

রেহান দেখতে পায় রিমি চোখে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে৷ রেহান সাথে সাথে আঁচলকে ছেড়ে দিয়ে দাড়িয়ে যায়।
রেহানঃ আঁচল বেইবি যখন তখন তোমার রোমান্স করতে মন চাই হ্যা। এভাবে ড্রয়িং রুমে কেউ লিপ কিস করে বলো তো।

রেহানের কথায় আঁচল যেনো আকাশ থেকে ধুপ করে মাটিতে পড়ে।
আঁচল চোখ বড়বড় করে রেহানের দিকে তাকায়
আঁচলঃ কিই! আমি?

রেহান ইশারায় রিমিকে দেখিয়ে বলে
রেহানঃ হ্যা তুমিই তো। (চোখ মেরে)
রিমি বুঝতে পেরে মুচকি হেসে চলে যায়। আর আঁচল রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে এসে গুছাতে থাকে।

বিকেলে
আঁচল রেহানের মা বাবার কাছে বিদায় নিয়ে চলে বের হয়। রেহান আর আঁচলের সাথে রিমিও যায়। যদিও প্রথম যেতে রাজি ছিলো না কিন্তু আঁচলের অনুরোধে রাজি হয়ে যায়।

রিমি গিয়ে গাড়িতে পেছনের সিটে বসে পড়ে।
আঁচল ও রিমির পিছন পিছন গিয়ে রিমির সাথে বসে যায়।
রেহান এই সব দেখে রেগে যায়। রেহান ড্রাইভিং সিটে বসে আঁচলকে বলে
রেহানঃ আঁচল সামনে এসে বসো।

আঁচলঃ থাক না আমি বরং রিমির সাথেই বসি।
রেহানঃ তুমি আসবে কি না? (রেগে)
আঁচল রেহানের রাগ দেখে উঠে গিয়ে সামনে বসে পড়ে।

রেহান মুচকি হেসে এক হাতে আঁচলের একহাত ধরে অন্য হাতে ড্রাইভিং করতে থাকে।
আঁচলঃ কি করছেন? ছাড়ুন। হাত ধরে রাখলে গাড়ি চালাতে সমস্যা হবে আপনার।
রেহানঃ নো বেইবি। তুমি পাশে থাকলে কোনো সমস্যা নেই।


পর্ব ১৫

রেহানঃ নো বেইবি। তুমি পাশে থাকলে কোনো সমস্যাই হবে না। (মুচকি হেসে)
আঁচল ও বাহিরে তাকিয়ে মুচকি হাসে।

কিছুক্ষনের মধ্যেই সবাই আঁচলদের বাসায় পৌঁছে।
আঁচল বাড়িতে ঢুকেই তার মাকে দেখতে পায়৷

আঁচল দৌড়ে গিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে।
আঁচলের মাঃ কেমন আছিস মা?
আঁচলঃ অনেক ভালো মা। তুমি কেমন আছো বলো?
আঁচলের মাঃ তুই ভালো আছিস শুনেই আমি শান্তি।

আঁচলের বাবাঃ কিরে মা আমায় ভুলে গেছিস তাই তো?
আঁচল তার মাকে ছেড়ে দৌড়ে বাবার কাছে যায়।
আঁচলঃ না বাবা কেনো ভুলবো বলো তো?

আঁচলের বাবাঃ তুই এখনো আমার উপর রেগে আছিস নারে মা?
আঁচলঃ উহুম একদমই না।
রেহান ও গিয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে নেয়।

আঁচলের মাঃ হয়েছে এবার তোমরা উপরে যাও।
আঁচল রিমিকে একটা রুমে নিয়ে যায়৷
আঁচলঃ রিমি তুমি এই রুমেই থেকো। আর পাশের টা আমার রুম কোনো সমস্যা হলে ডেকো কেমন।
রিমিঃ ওকে ভাবি।

আঁচল রেহান কে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
আঁচলঃ নিন আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। তারপর আমি যাবো।
রেহানঃ কেনো?

আঁচলঃ কেনো মানে? ফ্রেশ হবো না নাকি আমি?
রেহানঃ হ্যা। তা চলো না দুজন একসাথেই যাই৷ (চোখ মেরে)
আঁচলঃ অসভ্য। ~ বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

রেহান হাসাতে হাসাতে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে।
কিছুক্ষণ পর
আঁচল রুমে এসে দেখে রেহান এখনো বের হয়নি।

আঁচলঃ (আজিব! এতোখন ধরে ওয়াশরুমে ঢুকে আছে। এদিকে আমি যে এখনো ফ্রেশ হয়নি সে খেয়াল আছে উনার।)
আঁচল গিয়ে দরজায় নক করে
আঁচলঃ এইযে হলো আপনার? আর কতোখন ওয়েট করবো বলুন তো। আজকে সারা দিন কি আপনি ওয়াশরুমে থাকার প্লান করেছেন নাকি?
রেহান কোনো সাড়া দেয়নি। আঁচলের প্রচুর রাগ হয় রেহানের উপর।

আঁচল চলে আসতে নিলেই কেউ আঁচলের হাত ধরে টান দিয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে আসে।
আঁচল ভয় পেয়ে চিৎকার দিতে নিয়েই রেহান মুখ চেঁপে ধরে।
আঁচল তাকিয়ে দেখে রেহান মুচকি হাসছে।

আঁচলঃ আপনি সাড়া দেননি কেনো? আর এটা কোন ধরনের অসভ্যতামি বলুন তো? এভাবে ওয়াশরুমে নিয়ে এসেছেন!
রেহানঃ অসভ্যতামি কেনো হবে? আমি কি অন্যের বউ কে টাচ করেছি নাকি? আমি তো আমার রাগী বউকেই টাচ করেছি।
আঁচলঃ কি! আমি রাগী?

রেহানঃ কি মনে হই তোমার? (ভ্রু কুঁচকে)
আঁচলঃ (ঠিকই তো। বিয়ের প্রথম দিন থেকে তো শুধু রেগেই আসছি। মনে মনে)
আঁচলঃ আপনার হয়ে গেছে?

রেহানঃ হুম।
আঁচলঃ তাহলে আপনি বেরুন। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
রেহানঃ জ্বী না। আমার সামনেই ফ্রেশ হতে হবে।

আঁচল রেহানের কথায় রেগে গিয়ে রেহান কে ধাক্কা দিতে গেলে রেহান আঁচলকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আঁচলের ঠোঁটের কোণে চুমু দেয়।
আঁচল চোখ বন্ধ করে ফেলে। রেহান তা দেখে মুচকি হেসে আঁচলকে ছেড়ে দেয়।
রেহানঃ ফ্রেশ হয়ে নাও কেমন। আমি গেলাম (মুচকি হেসে)
আঁচলও মুচকি হাসে। আজ রেহানের স্পর্শে আঁচলের কোনো রাগ হয়নি।

কিছুক্ষন পর আঁচল বের হয়ে রেহান কে খুজতে থাকে।
আঁচল নিচে নেমে দেখে রেহান ড্রয়িং রুমে বসে আঁচলের কাজিন দের সাথে গল্প করছে।
তার মধ্যে হিয়া (আঁচলের কাজিন) তো প্রায় রেহানের সাথে ঘেঁষে বসে আছে।

হিয়া আঁচলের ১ বছরের ছোট। দেখতে অনেক সুন্দরী। মুখের কথাও অনেক সুন্দর।
আঁচল খেয়াল করে রেহান কিছু একটা বললেই হিয়া হাসতে হাসতে বার বার রেহানের উপর পড়ে যাচ্ছে। আঁচল রেগে কটমট করে সেখান থেকে চলে আসে।
রেহান খেয়াল করে আঁচল অনেকটা রেগে গেছে। আঁচল চলে যাওয়ার পর রেহান ও হিয়ার কাছ থেকে উঠে আসে।

রেহানঃ (বাহহ আমার বউ টা মনে হই জ্বলছে। তাহলে তো একটু জ্বালাতেই হয়।)
রেহান রুমে এসে দেখে আঁচল বেলকনির দোললায় বসে আছে।
রেহান গিয়ে আঁচলের পাশে বসতেই আঁচল রাগি লুক নিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।

রেহান আঁচলের কান্ড দেখে হেসে দেয়।
আঁচল রিয়াদের রুমে আসে।
আঁচলঃ ভাইয়া
রিয়াদ আঁচলের ডাকে আঁচলের দিকে অসহায় ভাবে তাকায়।

আঁচলঃ ভাইয়া তুমি আমার সাথে কথা বলো নি যে। আমি কি তোমার পর হয়ে গেলাম?
রিয়াদ আঁচলের কথায় কেঁদে দেয়।

রিয়াদঃ বোন আমায় ক্ষমা করে দিস। আমি কখনো চাইনি এইভাবে তোকে কষ্ট দিতে। তোর লেখাপড়া নষ্ট করে দিতে। কিন্তু আমি যে তোর কষ্ট দেখতে পারছিলাম না। ঐ জিসানের জন্য যে তুই প্রতিটা দিন কাঁদতি আমি সেটা সহ্য করতে পারতাম না। তাই তোকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম।

আঁচল ওর ভাইয়ের কান্না দেখে থমকে গেছে। এই প্রথম রিয়াদ কে কাঁদতে দেখছে আঁচল। আঁচলের অনেক কষ্ট হচ্ছে রিয়াদের চোখের পানি দেখতে।
আঁচল রিয়াদের পাশে বসে রিয়াদের চোখের পানি মুছে দেয়।

আঁচলঃ এই সব থাক না ভাইয়া। বিশ্বাস করো আমি এই কয়দিনে জিসান কে ভুলে গেছি। আর রেহান উনি সত্যিই অন্য রকম ভাইয়া।
আমার অতীত টা জানার পরও যে আমাকে এতো টা ভালোবাসবে আমি ভাবতেও পারিনি। শুধু তাই নয় উনাকে আমি অনেক কষ্ট ও দিয়েছি ভাইয়া। কিন্তু তারপরও উনি আমাকে কিছু বলেনি শুধু পাগলের মতো ভালোবেসে গেছেন।

রিয়াদ আঁচলের কথা শুনে আঁচলের দু গালে হাত রেখে বলে
রিয়াদঃ তুই পারবি তো বোন সব কিছু ভুলে রেহানের সাথে সারা টা জীবন সুখে কাটাতে?

আঁচলঃ হ্যা ভাইয়া। আল্লাহ চাইলে অবশ্যই পারবো আমি।
রিয়াদ আঁচল কে জড়িয়ে ধরে
রিয়াদঃ জানিস বোন আমার আর কোনো কষ্ট নেই।

আমার বোন টা সত্যিই অনেক বড় হয়ে গেছে। ভালো খারাপের পার্থক্য করতে শিখেছে আমার বোন টা।
আঁচলঃ হয়েছে এবার চোখ মুছো। আর শুনো অনেক দিন কিন্তু আইসক্রিম খাইনি। সো আজ তোমার ছাড় নেই বলে দিলাম।

রিয়াদঃ অনেক দিন কোথায় রে? মাত্র তো ৩ দিন হলো। (ভ্রু কুচকে)
আঁচলঃ সেটাই অনেক দিন আমার কাছে। ও তুমি বুঝবে না। তিন দিন তো নয় যেনো তিন বছর ভাভাগো ভাভা।
রিয়াদঃ ঠিক আছে সন্ধার সময় পেয়ে যাবি।

আঁচলঃ থ্যংকু।
দুপুরে
আঁচলের মা সবাই কে খাবার টেবিলে ডাকে। আঁচলের কাজিন রাও বসে।

হিয়াঃ আমি বরং রেহান ভাইয়ার সাথেই বসি ~ বলেই রেহানের পাশের চেয়ার টেনে বসে পড়ে।
রেহানঃ হুম তাই ভালো। (আঁচলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে)
আঁচল এইসব দেখে প্রচন্ড রেগে যায়।
আঁচল না খেয়েই উঠে পড়ে।

রিয়াদঃ আঁচল তুই তো কিছুই খাস নি। উঠে পড়লি যে?
আঁচলঃ আমার পেট ভরে গেছে ভাইয়া আমি আর খাবো না।
আঁচলের কথা শুনে সবাই হা হয়ে আঁচলের দিকে তাকায়।

আঁচলের মাঃ তোর পেট ভরে গেছে মানে! তুই তো এখনো খাবারে হাত ই দিস নি।
আঁচলেরঃ ( খাবার না খাবার না! উনাদের ঢ্যং দেখেই আমার পেট ভরে গেছে। আর খাবো কি ভাবে? যত্তসব)
মা আমি রুমে গেলাম।

রিয়াদঃ রেহান আঁচলের কি হয়েছে বলো তো? ও হটাৎ এমন রিয়েক্ট করলো কেনো?
রেহানঃ ভাইয়া আপনি বুঝতে পারেন নি? আঁচল হিয়াকে আমার পাশে বসতে দেখে একটু জেলাস ফিল করছে। (হেসে)
আঁচলের বাবাঃ একটু না অনেক খানি (বলেই হো হো করে হেসে দেয়)
রিয়াদঃ তার মানে বাবা তুমিও?
আঁচলের বাবাঃ হ্যা আমিও বুঝতে পেরেছি। আঁচল হিয়াকে রেহানের পাশে দেখতে পারছে না।

হিয়াঃ কিন্তু আমি তো শুধু ভাইয়ার সাথে ফান করি। আর তোমরা তো জানোই আমি অনেকটা মিশুক স্বভাবের। তাছাড়া ভাইয়া আমার বড় আপুর বর আমি ভাইয়ার দিকে ঐ রকম নজর দিবো কেনো? আপুই কি পিচ্চি নাকি? একটুও বুদ্ধি নেই।
ওকে আপুই যখন পছন্দই করে না তাহলে আমি বরং ভাইয়ার সাথে বেশি কথা বলবো না।
রেহানঃ আরেহ না না শালিকা। তুমিই পারবে আমাদের মাঝের দূরত্ব কমাতে। (মুচকি হেসে)
রেহানের মাঃ তার মানে তোমার আর আঁচলের সম্পর্ক টা স্বাভাবিক হয়নি?
রেহানঃ মা আপনি তো জানেন ই আপনার মেয়ে কতোটা জেদী। ওর সাথে স্বাভাবিক হওয়াটা এতো সহজ না। কিন্তু আমার মনে হই হিয়া এটা সহজেই পারবে।
কি বলো শালিকা আমায় সাহায্য করবে তো?

হিয়াঃ আবার জিগায়। কিন্তু তার বিনিময়ে আমাকে ট্রিট দেয়া লাগবে কিন্তু।
রেহানঃ এটা নিয়ে ভেবো না ডিয়ার।

এদিকে আঁচল গাল ফুলিয়ে নিজের রুমে এসে বসে আছে।
আঁচলঃ ওহ মাগো মনে হচ্ছে পেটের ভিতর ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। কখন থেকে না খেয়ে আছি। ভেবেছিলাম ভালোমন্দ রান্না হয়েছে পেট ভরে খাবো! ওই লুচু আমার খাবারের উপর ঠাডা ফালাই দিলো!

ছি ছি ঘরে বউ থাকতেও অন্য মেয়ের সাথে এতো ঘেঁষা ঘেঁষির কি মানে হই? তাও আবার আমারই কাজিনের সাথে। ইচ্ছে করছিলো ঐ দুই বজ্জাতের হাড্ডিকে গলা টিপে মেরে দিই। আমি যে না খেয়ে আছি তার দিকে কোনো নজর নেই ঠিকি হিয়ার সাথে গিলতে বসে গেছে ডেভিলের বাচ্চা ডেভিল।
এরই মধ্যে দরজা খুলার শব্দ পেয়ে আঁচল তাকিয়ে দেখে রিয়াদ হাতে খাবার নিয়ে দাড়িয়ে আছে।

রিয়াদঃ কিরে তুই ঐ সময় না খেয়ে চলে আসলি যে?
আঁচলঃ ভাইয়া আমার ভালো লাগছিলো না তাই চলে আসছি।
রিয়াদঃ ঠিক আছে এখন খেয়ে নে।

আঁচলঃ ভাইয়া খাবো না প্লিজ জোর করো না।
রিয়াদঃ আঁচল খেয়ে নে বলছি। (ধমক দিয়ে)
রিয়াদ কে আঁচল বরাবরই অনেক ভয় পায়। তাই আর কথা না বাড়িয়ে খেতে শুরু করে।

পর্ব ১৬

রিয়াদ কে আঁচল বরাবরই অনেক ভয় পায় তাই আর কথা না বারিয়ে খেয়ে শুরু করে দেয়।
আঁচলের খাওয়া শেষ হলে রিয়াদ চলে যায়।
আঁচল অনেকক্ষণ ধরে রুমে বসে আছে কিন্তু রেহানের আসার কোনো খবর নেই। আঁচল প্রচন্ড রেগে যায়।

আঁচলঃ দেখেছো? ঐ লুচু টা ওর হিয়ার কাছ থেকে আসতেই চাইছেনা। ঘরে যে ওর বউ বসে আছে সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই।
আঁচল অনেকক্ষন রুমে পায়চারি করে দেখে রেহান এখনো আসে নি। আঁচল রেগে শুয়ে পরে।

রাতে..

রিয়াদঃ আঁচল এই আঁচল এখনো ঘুমাচ্ছিস? তোর শরীর ঠিক আছে তো?
আঁচলঃ কি হয়েছে ভাইয়া? চেঁচামেচি করছো কেনো? (ঘুম ঘুম কন্ঠে)
রিয়াদঃ চেচাঁমেচি করছি কি আর শখে! রাত ১০ টা বাজে এখনো তুই ঘুমাচ্ছিস?

আঁচল এক লাফে উঠে বসে রুমে এদিক সেদিক তাকায়।
রিয়াদঃ কি হলো? কাউকে খুঁজছিস?
আঁচলঃ কই? নাতো।

রিয়াদঃ ঠিক আছে। ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় খেয়ে নিবি। তারাতারি আসবি কিন্তু।
রিয়াদ চলে যায়। আঁচল মন খারাপ করে বসে থাকে।
আঁচলঃ আমি এতো খন ঘুমিয়েছিলাম অথচ উনি একবারও আমায় ডাকতে আসলেন না?
একবার দেখতেও আসলেন না?

আঁচল ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে দেখে সবাই খাবার টেবিলে ওয়েট করছে।
কিন্তু হটাৎ আঁচলের মন টা ভালো হয়ে যায় কারন হিয়া রেহানের সাথে বসেনি। আঁচল আর রেহান একসাথে বসেছে। আর হিয়া ওদের বিপরীত দিকে।
রেহানঃ ওহো হিয়া সরি গো। তোমার সাথে বসতে পারলাম না। আর তুমিও না! আমার পাশের চেয়ার টা দেখছো খালি পড়ে আছে বসলে না কেনো বলো তো?
রেহানের কথা শুনে আঁচল অনেকটা কষ্ট পায়। আঁচলের চোখের কোণে পানি চলে আসে।

আঁচলঃ ( তার মানে চেয়ার টা হিয়ার জন্যই ছিলো! মাঝখানে আমি চলে এসেছি? মনে মনে)
হিয়াঃ থাক না ভাইয়া। একবেলা না হয় বসে গেলাম। (মুচকি হেসে)
আঁচল চেয়ার থেকে উঠে যেতে নিলে রেহান আঁচলের হাত ধরে ফেলে।

রেহানঃ কি হলো উঠে পড়ছো যে? দুপুরের মতো এখনো তোমার পেট ভরে গেছে নাকি? (ধমক দিয়ে)
আঁচলঃ না আমি ভাইয়ার পাশে বসবো।
রেহানঃ এটা কি ছেলেমানুষি আঁচল! একবার বসছো আবার চেঞ্জ করবে কেনো?
আঁচল আর কথা না বাড়িয়ে বসে খেতে শুরু করে।

হটাৎ আঁচল খেয়াল করলো কেউ তার পায়ে খুচা দিচ্ছে।
আঁচল সামনে তাকিয়ে দেখে হিয়া রেহানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।
আঁচল মাথা নিচু করে দেখে এটা হিয়ার পা।

আঁচলঃ হিয়া কি হচ্ছে টা কি? এরকম কেনো করছিস বল তো?
হিয়াঃ ওহো সরি আপুই ভুলে তোকে বিরক্ত করে ফেললাম।

আঁচলঃ (ভুলে মানে! ওহ বুঝেছি উনার পায়ে খুচা দিতে চাইছিলো তাই! মনে মনে)
আঁচল হালকা খেয়ে উঠে রুমে চলে যায়। আঁচল যে মারাত্মক রেগে আছে এটা কারো চোখ এড়াতে পারেনি।
হিয়াঃ ভাইয়া ডোজ টা বেশি হয়ে গেলো না তো?

রেহানঃ না শালিকা তুমি তো একদম জমিয়ে দিয়েছো। (চোখ মেরে)
হিয়াঃ তাও। আমি জানি আপুই কতোটা রাগি। তাছাড়া আপুই অনেক অভিমানী ও। যদি আপনাকে ভুল বুঝে তো সহজে ওকে আর সত্যি টা বুঝাতে পারবেন না। ও ভুল টা নিয়েই পড়ে থাকবে।

রেহানঃ এই সব নিয়ে তুমি একদম ভেবো না ডিয়ার শালিকা। আমি আছি তো!
হিয়াঃ হুম সেই।

রিয়াদঃ রেহান দেখো আবার যেনো গন্ডগোল বাধিয়ে ফেলো না।
আঁচলের মাঃ হ্যা তাইতো। আমার মেয়েটা বোধহয় অনেক কষ্ট পাচ্ছে। কি দরকার ওকে এভাবে কষ্ট দেয়ার বলো তো।
রেহানঃ মা, ভাইয়া আপনারা একদম চিন্তা করবেন না। আমি আছি তো। আমি সামলে নিবো।

রিয়াদঃ হুম তোমার উপর আমার অনেকটা বিশ্বাস আছে।
রেহানঃ আচ্ছা আমি উঠি তাহলে।
আঁচলের মাঃ হ্যা বাবা যাও।

রিয়াদঃ হুম দেখো গিয়ে তোমার মহারানি কি করছে।
রেহান মুচকি হেসে চলে আসে।
এদিকে আঁচল বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে।

রেহান রুমে এসে দেখে আঁচল নেই। রেহান বুঝতে পারে আঁচল কোথায় থাকতে পারে।
রেহান বেলকনিতে গিয়ে দেখে আঁচল একদৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
রেহান আঁচলকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

হটাৎ কারো স্পর্শ পেয়ে আঁচল কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। আঁচল পেছন ফিরে দেখে রেহান।
মূহুর্তেই আঁচলের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয় রেহান কে।

রেহানঃ কি হলো সোনা? এমন করছো কেনো? (মুচকি হেসে)
রেহানের এমন বিহেভ আঁচলের অসহ্য লাগছে। আঁচল রেহানের কথার জবাব না দিয়ে রুমে এসে পড়ে।
রেহান আঁচলের কান্ড দেখে মুখ চেঁপে হাসছে।

রেহানঃ কোথায় যেনো কি পুড়ছে মনে হচ্ছে?
রেহানের কথায় আঁচল অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে রেহানের দিকে।
কিন্তু কোনো উত্তর না দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুল আঁচড়াতে শুরু করে।

রেহানঃ জানো হিয়া মেয়েটা কি সুন্দর তাইনা? যেমন সুন্দর দেখতে তেমনি সুন্দর কথা বলার স্টাইল। হাসিটা ও মাশআল্লাহ।
আঁচল এবার আর চুপ থাকতে পারেনি।
আঁচলঃ এতোই যখন অপ্সরি মনে হচ্ছে তো যা না ঐ হিয়ার বাচ্চার সাথেই ঘুমাতে যা। আমার রুমে কেনো এসেছিস। (চিৎকার করে)
রেহানঃ এ মা! তুমি আমাকে তুই তোকারি করছো! দেখলে হিয়া তো একবারও আমাকে তুই করে বলেনি? তাছাড়া তুমি আমার বউ। সারা দিন হিয়ার সাথে আড্ডা দিলেও রাতে তো তোমার সাথেই ঘুমাতে হবে তাই না? না হলে লোকে কি বলবে বলো তো!
আঁচলঃ ন্যাকামো করবেন না ওকে। ~ বলেই বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ে।
রেহান আঁচলের এমন কাজে অবাক হয়ে যায়।

রেহানঃ তুমি সোফায় শুয়েছো কেনো? (দাঁতে দাঁত চেপে)
আঁচলঃ আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই।
রেহানঃ এক্ষুনি বিছানায় আসো বলছি।

আঁচলঃ আসবো না। আমি এখানেই ঘুমাবো।
রেহান রেগে গিয়ে আঁচলকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় ধপ করে ফেলে দেয়।
আঁচলঃ আরেহহ আজিব। আপনি কি আমার কোমড় টা ভেঙে ফেলবেন নাকি।

রেহান আঁচলের কথার কোনো জবাব না দিয়ে আঁচলের উপর উঠে পড়ে।
আঁচলঃ কি হচ্ছে এটা। অসভ্যতামির একটা লিমিট থাকা দরকার বুঝলেন। উঠুন বলছি।
রেহান এবার আঁচলের দু’হাত চেঁপে ধরে আঁচলের ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেয়।

আঁচল নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করতে নিলে রেহান আঁচলের ঠোঁটে অনেক জোরে কামড় বসিয়ে দেয়। আঁচল চিৎকার করে উঠে।
রেহানঃ সব সময় তোমার রাগের কাছে হার মানতে হবে আমার?
কি ভাবো কি নিজেকে? ভালোই ভালোই বলছি এখানেই ঘুমাউ নয়তো তোমার কপালে দুঃ খ আছে আঁচল।

পর্ব ১৭

রেহানঃ সব সময় তোমার রাগের কাছে হার মানতে হবে আমার?
কি ভাবো কি নিজেকে? ভালোই ভালোই বলছি এখানে ঘুমাউ নয়তো তোমার কপালে দুঃ খ আছে আঁচল।
আঁচল রেহানের ধমক শুনে চুপ করে যায়।
আঁচলঃ ( হ্যা এখন তো আমার সাথেই রাগ দেখাবেন। এখন তো আপনার ঐ হিয়া টিয়া আছে না! এখন আমাকে আর সহ্যই করতে পারবেন না মনে মনে)
আঁচল কিছু না বলে পাশ ফিরে শুতে নিলেই রেহান আঁচল কে নিজের দিক ঘুরিয়ে নেয়।
আঁচল কিছু বলতে যাবে তার আগেই রেহান আঁচলের গলায় গভীর ভাবে চুমু দেয়। আঁচল কেঁপে উঠে।

রেহান আঁচলে মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে আঁচল চোখ বন্ধ করে আছে।আঁচলের ঠোঁট জোড়া কাঁপছে।
রেহান মুচকি হেসে আঁচলের ঠোঁটে চুমু দিয়ে আঁচল কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে
রেহানের আগেই আঁচলের ঘুম ভাঙ্গে।আঁচল নিজেকে রেহানের বুকে দেখে মুচকি হেসে রেহানের দিকে ঝুঁকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
রেহানের গোলাপি রং এর ঠোঁট দু’টো দেখে আচমকা আঁচলের হাত টা রেহানের ঠোঁটে চলে যায়।

আঁচল আঙুল দিয়ে রেহানের ঠোঁটে স্লাইভ করছে।
হটাৎ রেহান খপ করে আঁচলের হাত টা ধরে ফেলে।
আঁচলের আত্মা যেনো কেঁপে উঠে রেহানের এমন কান্ডে।

রেহানঃ আমাকে আদর করতে ইচ্ছে করছিলো তাই না। (মুচকি হেসে)
আঁচলঃ ক কই! না তো। আপনাকে কেনো আদর করতে যাবো আজিব!
রেহানঃ হুম। তা তো দেখতেই পেলাম। বাই দ্যা ওয়ে তুমি চাইলে কিন্তু লিপকিস করতেই পারো।
রেহানের কথা শুনে আঁচলের চোখ বড়বড় হয়ে যায়।

আঁচলঃ আমি আপনাকে লিপকিস করবো? অসম্ভব।
রেহানঃ এই অসম্ভব টাই সম্ভব হতো যদি আমি তোমার হাত টা না ধরে ফেলতাম। (চোখ মেরে)
আঁচলঃ একদম বাজে কথা বলবেন না। আপনার ঠোঁটে মশা বসেছিলো তাই ঐ টাকে সরাচ্ছিলাম। ভেবেছিলাম আপনি ঘুমিয়ে আছেন তাই। কে জানে আপনি এতোটা অসভ্য। ঘুমের ভান করে পড়ে থাকেন।

রেহানঃ মশা বসলে বুঝি স্লাইভ করে কেউ। আর যদি ঘুমের ভান না ধরতাম তাহলে কি জানতে পারতাম আমার রাগি বউ টা আমার প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। (মুচকি হেসে)
আঁচলঃ আপনার প্রেমে কে পড়েছে শুনি? আপনার প্রেমে পড়ার আগে পুকুরে পড়ে যাবো তাও আপনার মতো ডেভিল অসভ্যর প্রেমে পড়বো না নেভার।
রেহানঃ পড়বে কি পড়ে তো গেছোই বেইবি। এবার শুধু টেনে তোলার পালা।

আঁচলঃ ওফ আপনার সাথে কথা বলাটাই পাগলের কাজ। ~ বলেই উঠে যেতে নিলে রেহান ধরে ফেলে।
আঁচল রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রেহান আঁচলকে টান দিয়ে বুকে ফেলে দেয়।

আঁচলের চুল গুলো রেহানের মুখে ছড়িয়ে পড়ে।
রেহানঃ আহহ কি মনমাতানো ঘ্রান। আমি তো আহত হয়ে যাবো সোনা।
আঁচলঃ আহত নিহত যা ইচ্ছে হোন না মানা করলো কে?

আমায় যেতে দিন দয়া করে।
রেহানঃ এ বাবা! আমি নিহত হলে তোমাকে জ্বালাবে কে বলো তো!
আঁচলঃ বিরক্তিকর! বলেই উঠে চলে যায়।

রেহান মুচকি হাসে।
আঁচল ফ্রেশ হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে চুলের মুছছে।
রেহান শুয়ে আঁচলকে দেখে মুচকি হাসছে।

আঁচলঃ কি হলো? এভাবে ৩৬ খানা দাঁত বের করে রেখেছেন কেনো? মানুষ কে দেখানে চান আপনার দাঁত গুলো চকচকে! তা যান না বাহিরে গিয়ে দেখান। যত্তসব।
আঁচলের কথায় রেহানের কোনো রিএকশন নেই। সে আঁচলকে দেখা নিয়েই ব্যাস্ত।
কেননা আঁচল কালো রং এর তাঁতের শাড়ি পড়েছে যার মধে নীল রং এর পাড়।
আঁচলের ফর্সা শরীরে শাড়িটা যেনো অপরূপ ভাবে মানিয়েছে।

হটাৎ রেহান খেয়াল করে আঁচলের পেটের কিছুটা অংশ দেখা যাচ্ছে। রেহানের যেনো কেমন একটা ঘোর লেগে যাচ্ছে।
আঁচল রেহানের দিকে তাকিয়ে দেখে রেহান খুব মনযোগ দিয়ে আঁচলকে দেখে যাচ্ছে।
আঁচল তারাতারি করে শাড়ি ঠিক করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

রেহান মুচকি হেসে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়।
আঁচল নিচে নামতেই দেখে হিয়া টিভি দেখছে। আঁচল কে দেখে একখানা মিষ্টি হাসি উপহার দেয়।
এতে আঁচলের রাগের পরিমাণ খানাও অনেক বেড়ে যায়। যা আঁচল এই মূহুর্তে প্রকাশ করতে পারছেনা।

হিয়াঃ আপুই
আঁচলঃ কিছু বলবি? (বিরক্ত হয়ে)
হিয়াঃ ভাইয়া কোথায় আপুই? কখন থেকে ওয়েট করছি ভাইয়ার জন্যে।
হিয়ার কথা শুনে আঁচলের রাগ আরও বেড়ে যায়।

আঁচলঃ ভাইয়াকে কি দরকার শুনি। (দাঁতে দাঁত চেপে)
হিয়াঃ না ইয়ে মানে
আঁচলঃ এই মেয়ে কি মানে মানে করছিস বল তো? আর রেহান তোর জিজু হয়। ওর সাথে কিশের এতো আড্ডা তোর?

হিয়াঃ আপুই রেগে যাচ্ছো কেনো? এমনিই ভাইয়ার সাথে আড্ডা দিই। আসলে ভাইয়া অনেক মিশুক তো! আর আমিও তো অনেক মিশুক তাই আরকি।
আঁচলঃ তাই না? এতোই যখন মিল তো নিজে গিয়ে খুজ না। আমাকে কেনো জিগ্যেস করছিস। যত্তসব ~ বলেই রেগে রান্না ঘরে চলে যায়।
হিয়া এখনো দাড়িয়ে মুখ টিপে হাসছে।

আঁচল রান্না ঘরে গিয়ে দেখে আঁচলের মা রান্না করছে।
আঁচলের মাঃ কিরে তুই রেগে আছিস কেনো?
আঁচলঃ এমনি। খেতে দাও জলদি।

আঁচলের মাঃ হ্যা আনছি। রেহান উঠেছে?
আঁচলঃ আমি জানিনা।
আঁচলের মাঃ শুনো মেয়ের কথা! তুই না জানলে কে জানবে শুনি?
আঁচলঃ কেনো? হিয়া জানবে!

আঁচলের মা বুঝতে পারে আঁচলের রেগে থাকার কারন টা কি!
(নিশ্চয় ঐ হিয়া টা আবার আমার মেয়েটাকে কিছু বলেছে মনে মনে)
আঁচলের মাঃ এ মা এই সব কি বলিস। তোর বর তুই জানবি না হিয়া জানবে?
আঁচলঃ জানবে বলেই তো বললাম। এতো কথা বলো না তো। খেতে দাও আমায়।

আঁচলের মাঃ আচ্ছা ঠিক আছে বাবা। যা গিয়ে বস তুই আমি খাবার রেডি করে আনছি।
আঁচল রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে হিয়া আসে।
হিয়াঃ আন্টি কি করছো গো?

আঁচলের মাঃ চুপ বজ্জাত মাইয়া। আমার মেয়েটার পিছন এভাবে লেগে আছিস কেনো বলতো? ও কতো কষ্ট পাচ্ছে জানিস?
হিয়াঃ আমি কি করবো বলো? ভাইয়াই তো বললো। আর তুমি জানো এতে তোমার মেয়েরই লাভ হবে। আপুই নিশ্চয় ভাইয়াকে বলে দিবে ও ভাইয়াকে ভালোবাসে। তখন ভাইয়া আর আপুই আরও ভালো থাকবে তোমি দেখো।

আঁচলের মাঃ তাই জেনো হয়।
এদিকে আঁচল রেগে খাবার টেবিলে বসে আছে।
হিয়া ও এসে বসে।

হিয়াঃ আপুই চলো না আজ কোথাও ঘুরতে যাই।
আঁচলঃ তুই যা। আমাকে বলছিস কেনো? (রেগে)
হিয়াঃ আরেহ! আমি একা যাবো নাকি? তোমাকে আর ভাইয়াকেও নিয়ে যাবো।

আঁচলঃ ওও তাই বল! তোর ইচ্ছে হয়ছে তোর আদরের ভাইয়াকে নিয়ে ঘুরতে যাবি। তা যা না বরন করলো কে!
~ হ্যা যাবেই তো!
হটাৎ কারো কন্ঠ শুনতে পেয়ে আঁচল আর হিয়া দু’জনই পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে রেহান দু’হাত পকেটে গুঁজে মুচকি হেসে দাড়িয়ে আছে।
হিয়াঃ এইতো ভাইয়া চলে এসেছে। ভাইয়া চলুন না কোথাও বেরিয়ে আসি। আমার না এ বাসায় বসে থাকতে একদম বোরিং লাগছে।

আঁচলঃ কেনো রে? এতো দিন তোর বোরিং লাগে নি? আজ কেনো এ কথা বলছিস? ফাজিল মেয়ে।
রেহানঃ আহ! আঁচল। চুপ করো। ওকে ধমকাচ্ছো কেনো?

শুনে শালিকা তোমার যখন যেতে মন চাইছে তো বিকেলে আমরা বের হবো কেমন?
হিয়াঃ ইয়েএএ! ভাইয়া এত্তো গুলো থ্যাংকস্
রেহানঃ আঁচল তুমিও চাইলে আমাদের সাথে যেতে পারো।

আঁচলঃ মা! আমার খাবার দিয়ে যাও তারাতারি।
রেহানঃ আঁচল আমি তোমায় কিছু বলছি।
আঁচলঃ আমার এতো বাজে কথা শুনার টাইম নেই।

রেহানঃ ওকে। হিয়া বিকেলে রেডি থেকো আমরা বেরুবো।
হিয়াঃ ওকে ভাইয়া।
আঁচল রেহানের কথার কোনো জবাব না দিয়ে খেয়ে উঠে যায়।

কিছুক্ষন পরই রিয়াদ আর আঁচলের বাবা আসে।
আঁচলের বাবাঃ আঁচল কোথায় রেহান?
রেহানঃ ও তো খেয়ে চলে গেলো।

রিয়াদঃ কি বলো! ও সবার আগে খেয়ে চলে গেলো?
রেহানঃ মেবি পেটে কিছু ঢুকেছে! (হেসে)
আঁচলের বাবা আর রিয়াদ ও হেসে দেয়।

আঁচল বিছানায় বসে আছে। এমনি রেহান রুমে আসে।
রেহান আঁচলের ঘা ঘেঁষে বসতেই আঁচল রেগে রেহানের দিকে তাকায়।
রেহানঃ ওভাবে তাকিয়ে আছো যে!
আঁচলঃ বসার আর জায়গা পান না নাকি?

রেহান আঁচলে কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে
রেহানঃ উহুম
আঁচলঃ কি হলো? শুয়েছেন কেনো? (বিরক্তি নিয়ে)
রেহানঃ ইচ্ছে করছে তাই।

আঁচল রেহানকে কিছু বলতে গিয়েও পারছে না।
রেহানঃ চলো না কোথাও ঘুরে আসি। ভালো লাগবে দেখো! (আঁচলের পেটে নাক ঘষে।)

আঁচলঃ আমি কোথাও যাবো না। দেখি সরুন!
রেহান আঁচলের পেটে চুমু দিয়ে আঁচলের কোমড় জড়িয়ে ধরে।
রেহানঃ ছাড়তে বললেই ছেড়ে দেয়ার মানুষ আমি নই সোনা।

পর্ব ১৮

রেহানঃ ছাড়তে বললেই ছেড়ে দেয়ার মানুষ আমি নই সোনা। (মুচকি হেসে)
আঁচলঃ কেনো! ছাড়বেন না কেনো শুনি?

আপনার হিয়া আছে তো! যান ওর কাছেই যান। অসহ্য
রেহানঃ আচ্ছা তোমার এতো জ্বলছে কেনো বলো তো? তার মানে সামথিং সামথিং। (চোখ মেরে)
আঁচলঃ নাথিং ~ বলেই রেহান কে ধাক্কা মেরে উঠে চলে আসে।

বিকেলে
রেহান হিয়া আর নিশাত (আঁচলের কাজিন) বেরিয়ে পড়ে।

এদিকে আঁচল নিচে নামতেই আঁচলের মা বলে
আঁচলের মাঃ গেলি না কেনো তুই? একটু ঘুরে আসলে তো ভালো লাগতো।
আঁচলঃ তার মানে ওরা চলে গেছে তাই তো?
আঁচলের মাঃ হ্যা। মাত্র বেরিয়েছে।

আঁচলঃ (বাহ বাহ! আমাকে একবার জিগ্যেস করার প্রয়োজন বোধ করেনি। মনে মনে)
আঁচলের মাঃ কিরে কি হলো?
আঁচলঃ কিছুনা মা আমি রুমে যাই।

আঁচল অনেক খন রুমে বসে থেকে ছাদে চলে আসে।
এদিকে রেহান, নিশাত আর হিয়া সন্ধার দিকে বাড়ি ফেরে।
রেহান রুমে গিয়ে দেখে আঁচল নেই।

রেহান বেলকনিতে ও খুঁজে আঁচল কে পায়নি।
রেহান একে একে সবার রুমে দেখে আঁচল কোথাও নেই।

রেহানঃ কোথায় গেলো? পুরো বাড়িই তো খুঁজলাম।
আঁচলের মাঃ কি হলো রেহান আঁচলকে পেয়েছো?
রেহানঃ না মা।

আঁচলের মাঃ তাহলে! কোথায় মেয়েটা। ও তো না বলে বাহিরে যাওয়ার মেয়ে না।
রেহানঃ মা আমি একটু ছাদে গিয়ে দেখে আসি।
আঁচলের মাঃ এরকম সন্ধা বেলা ও ছাদে যাবে কেনো বলো তো?
রেহানঃ তাও। আমি দেখিই না একবার।

আঁচলের মাঃ হ্যা তাই করো।
রেহান একপ্রকার দৌড়ে সিড়ি বেয়ে উঠে।

ছাদে আসতেই দেখে আঁচল ছাদের এক কোণে গ্রীল ধরে দাড়িয়ে আছে।
রেহান ধীর পায়ে আঁচলের কাছে যায়। আঁচলের কাধে হাত রাখে।

হটাৎ কারো স্পর্শ পেয়ে আঁচল চমকে উঠে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে রেহান।
রেহান আঁচলকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। চোখ দু’টি ফুলে গেছে, মুখটাও লাল হয়ে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেকক্ষন কান্না করছিলো।
আঁচলকে এরকম দেখে রেহানের ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠে।

রেহান আঁচলকে জেলাস ফিল করাতে চাইছিলো, কষ্ট দিতে না।
রেহানঃ আঁচল কি হয়েছে? কাঁদছিলে কেনো?

আঁচলঃ কই! কাঁদবো কেনো আবার?
রেহানঃ আমি সরি সোনা।

আঁচলঃ কেনো? আপনি তো কোনো ভুল করেন নি। আর হিয়া সত্যিই অনেক সুন্দরী। আপনার জন্য পারফেক্ট। আপনার তো এতে কোনো ভুল হইনি।
রেহান এবার বুঝতে পারে আঁচলের কান্না করার কারন।
রেহানঃ (নাহ! অনেক হয়েছে আর কষ্ট দিতে পারবো না ওকে। তার চেয়ে বরং সব কিছু বলে দিই।)

রেহানঃ দেখো আঁচল তুমি ভুল ভাবছো। হিয়াকে আমার ভালো লাগতে যাবে কেনো। আমার তো বউ আছে নাকি? এতো কিউট বউ থাকতে অন্য মেয়ের দিকে কেনো নজর দিবো বলো তো? (আঁচলের গালে হাত রেখে)
আঁচলঃ থাক। এই সব নিয়ে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। যান রুমে যান।

রেহানঃ আরেহ বাবা আমি তো তোমাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য এমন করছিলাম।
আঁচলঃ (ওহো! এতো চালাক তুমি? ইচ্ছে করে আমায় কষ্ট দিয়েছো এতো দিন? দাড়াও আমি যে কি জিনিস হারে হারে বুঝাবো তোমায় মনে মনে)
আঁচলঃ আপনি এখানে থাকতে চাইলে থাকুন আমি নিচে গেলাম।

আঁচল চলে আসতে নিলে রেহান আঁচলের হাত ধরে আটকে ফেলে।
রেহানঃ কি হয়েছে আঁচল? বললাম না তোমাকে জেলাস ফিল করাতে চাইছিলাম। ইভেন হিয়ার ও একি উদ্দেশ্যে বুঝেছো?

আঁচলঃ আমি এই সব কথা শুনতে চাইনা। ছাড়ুন। – আঁচল নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রুমে চলে আসে।
আঁচল মুখে যতোই কথা শুনাক, রাগ দেখাক কিন্তু সে তো আজ মহা খুশি! কারন রেহান হিয়াকে ভালোবাসে না।

আঁচল নিচে আসতেই হিয়ার সাথে দেখা হয়। আঁচল মুখে একটা গম্ভীর ভাব এনে হিয়াকে ভেংচি কেটে চলে আসে।
হটাৎ পেছন থেকে কারো ডাক শুনে দাড়িয়ে যায় আঁচল। পেছন তাকিয়ে দেখে রিয়াদ অনেক গুলো আইসক্রিম নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
রিয়াদঃ এই নিন মহারানি। আপনার আইসক্রিম।

আঁচলঃ এত্তোগুলো! আঁচল এক লাফে সব গুলো আইসক্রিম নিয়ে নেয়।
এদিকে রেহান দাড়িয়ে দাড়িয়ে আঁচলের কান্ড দেখে হাসছে।

এতো বড় মেয়ে তাও আইসক্রিম দেখে বাচ্চাদের মতো বিহেভ করছে!
আঁচল নিজের রুমে চলে যায়।
রিয়াদঃ রেহান
রেহানঃ জ্বী ভাইয়া বলুন।

রিয়াদঃ আঁচল কে সব বলে দিয়েছো?
রেহানঃ জ্বী ভাইয়া। তাও আপনার বোন বিশ্বাস করতে চাইছেনা।

রিয়াদঃ কোনো ব্যাপার না ঠিক হয়ে যাবে। (মুচকি হেসে)
হিয়াঃ ভাইয়া আমার ট্রিট খানা?

রেহানঃ ওরে মারে! শালিকা তোমার ট্রিট পেয়ে যাবা। আপাতত তোমার সাথে কথা বললেও আমার বউ আমায় ১৬ টা বাজাবে।
হিয়াঃ হিহিহিহি নো সমস্যা! সময় মতো চেয়ে নিবো।

রেহানঃ ওকে ডিয়ার। এবার আমি যাই বউয়ের রাগ ভাঙ্গাতে না জানি কি কি করতে হয়।
রেহান রুমে এসে দেখে আঁচল বিছানায় বসে আইসক্রিম খেয়ে যাচ্ছে।
আঁচলের মুখ দেখে রেহান হাসি চেঁপে রাখতে পারছে না।

বাচ্চাদের মতো মুখে আইসক্রিম লাগিয়ে ফেলেছে বেচারি।
রেহান আঁচলের পাশে বসতেই আঁচল ভ্রু কুঁচকে রেহানের দিকে তাকায়।
আঁচলঃ কি চাই?

রেহানঃ আইসক্রিম চাই। (মুচকি হেসে)
আঁচল কথা না বাড়িয়ে একটা আইসক্রিম রেহানের দিকে এগিয়ে দিতেই রেহান হাত দিয়ে আটকে ফেলে।
রেহানঃ উহুম এটা না।

আঁচলঃ তাহলে কোনটা। আমার কাছে আর আইসক্রিম নেই। এটা নিলে নিন না হলে বিদায় হোন।
রেহান আঁচলের কথা শুনে মুচকি হেসে আঁচলের দিকে এগিয়ে যায়।

রেহানের এগিয়ে আসা দেখে আঁচল ভয় পেয়ে যায়।
আঁচল কিছু বুঝে উঠার আগেই রেহান আঁচলের ঠোঁটের পাশে লেগে থাকা আইসক্রিম টুকু খেয়ে ফেলে।

আঁচল রেহানের এমন কাছে স্ট্যাচু হয়ে যায়। আঁচল এমন ভাবে রেহানের দিকে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে আঁচলের চোখ দু’টি এখনি বেরিয়ে আসবে।
রেহানঃ এটাই আমার কাছে স্পেশাল। (মুচকি হেসে)
আঁচল কিছু না বলে বেলকনিতে চলে আসে।

অনেকক্ষণ পর রেহান ও বেলকনিতে যায়।
রেহানঃ আর কতদিন ওয়েট করতে হবে বলো তো?
আঁচলঃ মানে! কিশের জন্য?

রেহানঃ ” ভালোবাসি ” কথাটা শুনার জন্য।
আঁচলঃ এতোই যখন শুনতে ইচ্ছে করছে তো যান না হিয়ার কাছ থেকে শুনে আসুন।

রেহানঃ কে হিয়া! আমি তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই বুঝেছো?
আঁচলঃ অসম্ভব। বলেই চলে আসে।
রেহানঃ ভাঙ্গবে তবুও মচকাবে না।

আঁচল রুমে এসে শুয়ে পড়ে।
রেহানের মোবাইলে ফোন আসাতে রেহান রুমে আসেনি। বেলকনিতে দাড়িয়ে কথা বলছে।

আঁচলঃ এতোখন কার সাথে কথা বলছে? ঐ হিয়া শাকচুন্নি টা নয় তো?
আঁচল কান পেতে শুনার চেষ্টা করে রেহান কি কথা বলছে। কিন্তু কিছুই শুনতে পারে না।

আঁচল একরাশ বিরক্ত আর রাগ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে
আঁচল চোখ খুলতেই দেখে রেহান ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছে। আঁচল চোখ পিটপিট করে রেহানকে দেখে যাচ্ছে।

আঁচলঃ ( কি হলো! এতো সকাল সকাল উঠে কোথায় যাচ্ছে? মনে মনে)
রেহানঃ বেইবি উঠে গেছো?
আঁচলঃ হুম।

রেহানঃ ওকে। শুনো কাল রাতে বাবা ফোন করেছিলো মা বাবা আর রিমি গ্রামের বাড়িতে যাবে জমি নিয়ে মেবি সমস্যা হয়েছে। আমি যেতে চাইছিলাম মা বারন করেছে। তুমি তো একা থাকতে পারবে না তাছাড়া তোমাকে নিয়ে যাওয়া ও সম্ভব না। এমনিতেই ঝামেলা বেঁধে আছে। তাই আমি থেকে যাবো।

আঁচলঃ (ওহহহ যাক বাবা কাল রাতে ঐ শাকচুন্নি টা ফোন করেনি! মা ফোন করেছিলো। মনে মনে)
রেহানঃ কি হলো চুপ কেনো?

আঁচলঃ কিছুনা। আপনি এখন কোথায় যাবেন?
রেহানঃ আমি মা বাবাকে স্টেশন অব্দি দিয়ে আসবো। তারপর ট্রেনে করে চলে যাবে। আমি বিকেলে তোমায় নিতে আসবো রেডি থেকো।

আঁচলঃ আমি কোথায় যাবো?
রেহানঃ বাবা মা চলে যাচ্ছে বাড়ি খালি পড়ে থাকবে? তাই ভাবছিলাম আমরা চলে গেলেই ভালো হয়।

আঁচলঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
রেহান আঁচলের কাছে এসে আঁচলের কপালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে যায়।

আঁচল উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে।
আঁচলের মাঃ কিরে রেহান চলে গেলো কেনো? না খেয়ে এতো সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে যে?

আঁচলঃ মা আমার শশুর শাশুড়ি আর রিমি উনাদের গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। তাই ও চলে গেছে উনাদের ড্রপ করে আসতে।
আর আজ বিকেলে আমিও চলে যাবো। ও বলে গেছে রেডি হয়ে থাকতে। ও নিয়ে যাবে এসে।

আঁচলের মাঃ সেকি! আজই চলে যাবি?
আঁচলঃ হ্যা।

আঁচলের মাঃ (বাহ! আমার মেয়েটা কতো পরিবর্তন হয়ে গেছে। যাক ঐ অসভ্য ছেলেটার ভুত মাথা থেকে নেমেছে এটাই অনেক। মনে মনে)
আচ্ছা এখন খেতে আয়।

আঁচলঃ হুম আসছি।
আঁচল খেতে বসে। হিয়াও আসে।

হিয়াঃ আপুই শোন
আঁচলঃ হয়ছে রে পাকনি বুড়ি আর বলতে হবে না ও আমাকে সব বলেছে। (মুচকি হেসে)
হিয়াঃ ভাইয়া তোকে বলেছে? (অবাক হয়ে)
আঁচলঃ হুম। তুই যে এতোবড় ড্রামা কুইন আমি জানতামই না।

হিয়াঃ এই আপুই তুই আর আমার উপর রেগে নেই তো? জানিস আমারও কষ্ট হচ্ছিলো। কিন্তু ভাইয়া বললো তোর মুখ থেকে ভালোবাসি কথা শুনতেই এতো কিছু। বাই দ্যা ওয়ে তুই ভাইয়া কে বলেছিস তো?

আঁচলঃ কি বলবো? (অবাক হয়ে)
হিয়াঃ ঐযে যার জন্য এতোকিছু। (চোখ মেরে)
আঁচলঃ বেয়াদব মেয়ে। বেশি বড় হয়ে গেছিস না? দাড়া তোর বিয়ের ব্যাবস্থা করছি৷
হিয়াঃ হ্যা কর না। আমি তো এক পায়ে খাড়া। (হেসে দিয়ে)

পর্ব ১৯

হিয়াঃ হ্যা কর না। আমি তো এক পায়ে খাড়া।
বাই দ্য ওয়ে আপুই ভাইয়া কোথায়? ঘুম থেকে উঠেনি নাকি?
আঁচলঃ ও চলে গেছে রিমি কে নিয়ে।

হিয়াঃ মানে! এতো সকাল সকাল চলে গেলো?
আঁচলঃ আসলে মা বাবা আর রিমি আজ গ্রামের বাড়ি যাবে তাই সকাল সকাল রিমিকে নিয়ে বেরিয়ে গেছে।
বিকেলে এসে আমাকে নিয়ে যাবে।

হিয়াঃ রিমিও চলে গেলো। মেয়েটার সাথে ভালো করে কথাও বলা হলো না। আর তুইও চলে যাবি ধুর ভাল্লাগে না।
আঁচলঃ মন খারাপ করার কি আছে বোকা মেয়ে। এখন তো আর নিজের স্বাধীনতায় চলতে পারবো না বোন।

হিয়াঃ হুম। আপুই তোকে একটা কথা বলবো? কিছু মনে করিস না প্লিজ।
আঁচলঃ হ্যা বল।

হিয়াঃ রেহান ভাইয়া সত্যিই অনেক ভালো। ঐ জিসান ছ্যামড়ার মতো না। তুই ভাইয়াকে আর কষ্ট দিস না আপুই প্লিজ।
আঁচলঃ হুম জানি তো। (মুচকি হেসে)
আঁচল আর হিয়া কথা বলছে অমনি রিয়াদ আঁচলের বাবা মা আসে।

রিয়াদঃ কি কথা হচ্ছে দু’জনের?
আঁচলঃ কিছুনা ভাইয়া। এমনিই।

আঁচলের বাবাঃ রেহান কোথায় আঁচল? ও কি ঘুম থেকে উঠে নি?
আঁচলের মাঃ আরে ও তো সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে রিমি কে নিয়ে। আজ ওদের গ্রামের বাড়ি যেতে হবে কাজ আছে কিসের তাই।
আঁচলের বাবাঃ ওহহ আচ্ছা। আঁচল ও চলে যাবি?

আঁচলঃ হ্যা বাবা। বিকেলে যাবো।
রিয়াদঃ সেকি! আর দুটো দিন থাক।
আঁচলঃ না ভাইয়া।

রিয়াদঃ বাবা দেখেছো তোমার মেয়ে কেমন জামাই পাগল হয়েছে? (মুচকি হেসে)
আঁচলঃ ভাইয়া
আঁচলের বাবাঃ হয়েছে এবার খাওয়া শেষ কর তোরা।

এদিকে
রেহান ওর বাবা মা আর রিমিকে স্টেশন এ ড্রপ করে দেয়।
রেহানের মাঃ রেহান শোন
রেহানঃ হুম বলো মা।

রেহানেরঃ ঐ দিনের মতো আবার ঝামেলা করিস না। যদি আমি শুনি তুই আবার ড্রিংক করেছিস তো তোর কপালে শনি আছে বলে গেলাম।
রেহানঃ ওহো মা আমি এই সব করিনা তুমি তো জানোই।
রেহানের বাবাঃ করিস না তো ঐ দিন কে করেছিলো? আমি?

রেহানঃ মেবি (মাথা চুলকিয়ে)
রেহানের বাবাঃ দেখেছো তোমার ছেলে কতো টা বজ্জাত হয়েছে? এই বয়সের বাবাকে বলছে ড্রিংক করে!
রেহানঃ আমি কোথায় বললাম? তুমিই তো বললে!
রেহানের মাঃ আহা হয়ছে তোমরা থামো তো। রেহান শোন আঁচল কে দেখে রাখিস। ওর কিছু প্রয়োজন হলে এনে দিস।

আর ওকে একা ফেলে রেখে বেশি খন কোথাও থাকিস না।
রেহানঃ ওক্কে মেরি মা।
রিমিঃ ভাইয়া তুই বাসায় চলে যা এবার ট্রেন ছাড়ার টাইম হয়ে গেছে।
সাবধানে থাকিস কেমন?

রেহানঃ হ্যা তুইও। (মুচকি হেসে)
তারপর রেহান সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে আসে৷
আঁচল হিয়ার সাথে অনেকক্ষণ গল্প করে নিজের রুমে চলে আসে।

আঁচল রুমে আসতেই দেখে রেহানের মিসডকল।
আঁচল একটা বই নিয়ে বেলকনির দোলনায় বসে পড়তে থাকে। আঁচল ভেবেছিলো রেহান হয়তো আবার ওকে ফোন দিবে কিন্তু না রেহান আর ফোন দেয়নি।
আঁচল একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোন টা নিজের পাশে রেখেই চোখ বন্ধ করে।

বিকেলে
হটাৎ দরজায় বেল বাজতেই হিয়া গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
হিয়াঃ ভাইয়া! আপনি সকালে না বলেই চলে গেলেন যে?
রেহানঃ শালিক পাখি ভেতরে আসতে দিবে না? নাকি দরজার বাহিরে থেকেই সব বলবো? (মুচকি হেসে)
হিয়াঃ হ্যা হ্যা আসুন। কিন্তু শালিক পাখি মানে টা কি (অবাক হয়ে)

রেহানঃ শালিকার আদুরে ডাক হলো শালিক পাখি। (ভেতরে আসতে আসতে)
হিয়াঃ ওহো ভাইয়া এতো বুদ্ধি থাকে কই?
রেহানঃ আমার বুদ্ধি নিয়ে গবেষণা করে তুমি পেরে উঠবে না শালিকা তার চেয়ে বরং এটা নাও। (একটা বক্স প্যাকেট করা)
হিয়াঃ এটা কি?

রেহানঃ ধরে নাও এটাই তোমার ট্রিট।
হিয়া উৎসাহিত হয়ে প্যাকেট টা খুলে দেখে একটা নতুন মোবাইল।
হিয়াঃ ওওওমাই গডডড! ভাইয়াআআ! নতুন ফোন! এত্তোগুলো ধন্যবাদ ভাইয়া।

রেহান হেসে দেয়।
রেহানঃ এবার বলো আমার আমানত কোথায়?
হিয়াঃ আমানত? (অবাক হয়ে)
রেহানঃ আরে পিচ্চি! আমার বউ কোথায় বলো?

হিয়াঃ ওহো! আপুই নিজের রুমে ভাইয়া।
রেহানঃ ওক্কে শালিক পাখি।
রেহান আঁচলের রুমে এসে দেখে আঁচল নেই।

রেহান বেলকনিতে যেতেই দেখে আঁচল একটা বই বুকের উপর রেখে ঘুমিয়ে আছে।
রেহান মুচকি হেসে আচলের কাছ থেকে বই টা সরিয়ে নিয়ে আঁচল কে কোলে তোলে নেয়।

আঁচলের ঘুম ভেঙ্গে যেতেই দেখে রেহান আঁচল কে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
আঁচলঃ আপনি এসে গেছেন?
রেহানঃ হুম। যাবে না?

আঁচলঃ যাবো তো। আপনি বসুন আমি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিই।
রেহান আঁচল কে কোল থেকে নামিয়ে আঁচলের কপালে চুমু দিয়ে বলে
রেহানঃ যাও। আমি ওয়েট করছি।
আঁচল মুচকি হেসে ওয়াশরুমে চলে যায়।

রেহান খাটে আধশোয়া হয়ে বই পড়ছে। কিছুক্ষণ পর আঁচল বের হতেই রেহানকে দেখে মুচকি হাসে।
রেহানঃ বেইবি এই ভাবে হেসো না মরে যাবো তো।
আঁচল রেহানের কথা শুনে জোরে হেসে দেয়।
রেহানঃ শুনো শাড়ি পড়েই চলো। গাড়ি করেই তো যাবো সমস্যা নেই।

আঁচলঃ ওকে। শুনুন
রেহানঃ হ্যা বলো
আঁচলঃ একটু হিয়াকে ডেকে দিন না প্লিজ।
রেহানঃ কেনো? (ভ্রু কুঁচকে)
আঁচলঃ এতো প্রশ্ন না করে ডেকে দিন।

রেহানঃ আগে বলো কেনো?
আঁচলঃ ইয়ে মানে আমার সেফটিপিন
টা লাগিয়ে দিতে।
রেহানঃ ওওও এই কথা?

তো আমি আছি কি করতে শুনি?
আঁচলঃ আপনি মানে (চোখ বড়বড় করে)
রেহানঃ আমি মানে আমি! আমি লাগিয়ে দিই। (চোখ মেরে)
আঁচলঃ আপনিইই!

রেহানঃ হুম বেইবি। (আঁচলের দিকে এগুতে এগুতে)
আঁচলঃ লাগবে না আপনার হেল্প। আমিই হিয়াকে ডেকে আনছি ~ বলেই চলে যেনে নেয়। রেহান আঁচলের হাত ধরে টেনে আঁচল কে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়৷
আঁচলঃ আ আপনার হেল্প ল লাগবে না।

রেহানঃ চুপপপ
রেহান আঁচল কে পিছনে ঘুরিয়ে শাড়ির আঁচল টা ঠিক করে সেফটিপিন টা হাতে নিয়ে ইচ্ছে করে আঁচলের ঘাড়ে লাগিয়ে দেয়।
আঁচলঃ আউউউচচচ। আমি কাপড়ে লাগাতে বলেছি আমার শরীরে না। স্টুপিড কোথাকার।

রেহানঃ মুচকি হেসে শাড়িতে পিন টা লাগিয়ে দেয়।
রেহানঃ বেশি লেগেছে বউ? (আঁচলের কানে ফিসফিসিয়ে)
আঁচলঃ উহুম। সরুন।

রেহান আঁচলের ঘাড়ে চুমু দিয়ে আঁচল কে ছেড়ে দেয়।
হটাৎ রেহানের এমন কাজে আঁচল থমকে যায়।

আঁচল কে স্থির থাকতে দেখে রেহান আঁচলের কাছে এসে বলে
রেহানঃ আরও লাগবে চুমু চোখ মেরে
রেহানের কথায় আঁচলের ধ্যান ফিরে। আঁচল রাগি সুরে বলে

আঁচলঃ ডেভিল কোথাকার। আচ্ছা একটা কথা বলুন তো আপনি শাড়িতে পিন লাগানো শিখেছেন কিভাবে?
রেহানঃ কিভাবে আবার! আগে আরও ৪, ৫ টা বউয়ের শাড়িতে পিন লাগিয়ে দিয়েছি তাই। (দাঁতে দাঁত চেঁপে)
আঁচলঃ কিইইই!

রেহানঃ আর একটা কথাও না বলে রেডি হও। নয়তো তোমার খবর আছে (ধমক দিয়ে)
আঁচলঃ আমি তো রেডিই।
রেহানঃ ওকে চলো তাহলে।

আঁচল আর রেহান নিচে নামতেই দেখে সবাই ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে।
ওদের কে দেখেই আঁচলের বাবা বলে উঠে
আঁচলের বাবাঃ চলে যাচ্ছিস?

আঁচলঃ হ্যা বাবা। (আঁচলের মন টা খারাপ হয়ে যায়।)
আঁচলের মাঃ সাবধানে থাকিস মা।

আঁচলঃ হ্যা মা চিন্তা করো না।
রিয়াদঃ আঁচল শোন। রেহানের সাথে আর খারাপ ব্যবহার করিস না।

হিয়াঃ হ্যা আপুই। ভাইয়ার সাথে রাগ করিস না।
আঁচলঃ আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। তোমরা সবাই ভালো থেকো।
রিয়াদঃ সাবধানে যাস।

আঁচলঃ ঠিক আছে ভাইয়া।
আঁচল আর রেহান বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

আঁচল বেচারি মন খারাপ করে গাড়িতে বসে আছে। রেহান বুঝতে পারছে আঁচলের মন খারাপ।
রেহানঃ বেইবি এখন কিন্তু আমার কাছ থেকে পালাতে পারবে না আর। (মুচকি হেসে)

পর্ব ২০

রেহানঃ বেইবি এখন কিন্তু আমার কাছ থেকে পালাতে পারবে না আর (মুচকি হেসে)
রেহানের কথা শুনে আঁচল রাগি চোখে রেহানের দিকে তাকায়
আঁচলঃ ( এই ছেলেটার সমস্যা টা কি বুঝি না। একেই তো দেখতে পারছে আমার মন ভালো না তার উপর আবার উল্টো পাল্টা কথা শুরু করে দিয়েছে।

ইচ্ছে করছে নাকটা ফাটিয়ে দিই। যত্তসব)
রেহান মুচকি হেসে ড্রাইভ করতে থাকে পথে আঁচলকে আর জ্বালায় নি রেহান।
কিছুক্ষনের মধ্যেই ওরা বাড়ি পৌঁছে।

আঁচল রুমে গিয়েই শুয়ে পড়ে।
রেহানঃ আঁচল ফ্রেশ হয়ে নাও তারপর না হয় ঘুমাউ।

আঁচলঃ আমি কি বলেছি আপনাকে যে আমি ঘুমাবো? (ভ্রু কুঁচকে)
রেহানঃ তা বলোনি। ভাবলাম এতোটা পথ জার্নি করেছো আর তুমিই তো শুয়ে পড়লে।
আঁচলঃ ঘুমাবো না এমনিই শুয়েছি। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন তারপর আমি যাবো।

রেহান আর কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
কিছুক্ষন পর আঁচল বিছানা ছেড়ে উঠে হাতে নিজের কাপড় নেয়। এরি মধ্যে রেহানও বের হয়ে আসে।

রেহানঃ রাতের রান্না করবে? নাকি বাহিরে থেকে আনিয়ে নিবো?
আঁচলঃ না আমিই রান্না করবো বাহিরে থেকে আনাতে হবেনা। বাহিরের খাবার খাওয়া ঠিক না।
রেহান আঁচলের কথায় মুচকি হেসে ফ্লাই কিস দেয়। আঁচল মুখ ভেংচি কেটে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।

রাতে
আঁচল ডিনার রেডি করছে হটাৎ কেউ আঁচল কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
আঁচল কিছুটা ভয় পেয়ে যায় পরে বুঝতে পারে এটা রেহান ছাড়া আর কারো কাজ না।
আঁচলঃ কি হচ্ছে টা কি! দেখতেই তো পারছেন কাজ করছি। অযথা বিরক্ত কেনো করছেন?

রেহানঃ ওহো আমি টাচ করলে তুমি ডিস্টার্ব ফিল করো তাই না? ওকে ফাইন আজ থেকে আর তোমার ধারে কাছেও ঘেঁষবো না।
যে কথাটা বলতে এসেছিলাম কাল থেকে অফিস যাবো। বাবা নেই এমনি তেও এখন সব আমাকেই সামলাতে হবে তাই।

আঁচলঃ বাহহ তা তো ভালো কথা।
আঁচলকে আর কিছু বলতে না দিয়েই রেহান কিচেন থেকে চলে আসে।

আঁচলঃ যাহ বাবা উনি তো দেখছি সত্যি সত্যি রাগ করলেন? ডেভিল টার রাগও আছে দেখছি!
রেহান রুমে এসে শুয়ে পড়ে। আঁচল ডিনার রেডি করে রেহান কে ডাকছে কিন্তু রেহানের কোনো সাড়া নেই।
আঁচল রেগে রুমে এসে দেখে রেহান শুয়ে আছে। আঁচল বুঝতে পারে রেহান বোধহয় একটু বেশিই হার্ট হয়েছে।
আঁচলঃ শুয়ে পড়লেন যে! খেতে আসুন।

রেহানঃ …
আঁচলঃ কি হলো? উঠুন
রেহানঃ ….
রেহানের কোনো সাড়া না পেয়ে আঁচল আরও রেগে যায়। আঁচল রেহান কে টেনে উঠে বসানোর চেষ্টা করে কিন্তু বেচারি ব্যার্থ হলো। কেননা রেহানের মতো বডিবিল্ডারের কাছে আঁচলের কাঠির মতো শরীর খানা কিছুই না।

আঁচলের চেষ্টা দেখে রেহান হেসে দেয়। কিন্তু হাসিটা আঁচলকে বুঝতে দেয়নি। রেহান উঠে বসে গম্ভীর কন্ঠে বলে
রেহানঃ আমি খাবো না তুমি বরং খেয়ে নাও।

আঁচলঃ ঐ সময়ের জন্য সরি। এবার তো চলুন।
রেহানঃ শুধু সরি? (মুচকি হেসে)
আঁচলঃ তো?
রেহানঃ আরও কিছু চাই।
আঁচলঃ কী?

রেহানঃ (আঙুল দিয়ে নিজের ঠোঁট ইশারা করে দেখায়।)
আঁচলঃ পারবো না। (রেগে)
রেহানঃ আমিও খাবো না। যদিও খুব ক্ষিদে পেয়েছিলো।

আঁচল অসহায় ভাবে রেহানের দিকে তাকায়। রেহান ভ্রু নাচিয়ে আঁচলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
আঁচল রেহানের পাশে বসে দু’হাতে রেহানের মাথাটা কাছে এনে রেহানের ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ায়। রেহান আঁচলের কোমড় চেঁপে ধরে।

আঁচলঃ এবার হয়েছে? চলুন।
রেহানঃ বাবাহ আমার বউ টা দেখি আমার থেকেও বেশি রোমান্টিক। (মুচকি হেসে)
আঁচল রেহানের কথায় লজ্জা পেয়ে চলে যায়।

রেহানও আসে।
দুজনের খাওয়া শেষ হলে ঘুমাতে চলে যায়। আঁচল পাশ ফিরে শুয়ে পড়তেই রেহান টেনে আঁচলকে নিজের কাছে আনে।
আঁচলঃ আপনি ঘুমান। সকালে কী ডাকতে হবে?
রেহানঃ হুম ৯ টায় অফিস।

আঁচলঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
রেহান আঁচলকে বুকে এনে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে
আঁচলের আগেই রেহানের ঘুম ভেঙে যায়।

রেহান আঁচলের কপালে চুমু দেয়। আঁচল নড়েচড়ে উঠতেই রেহান ঘুমের ভান ধরে।
আঁচল তাকিয়ে দেখে ৭ টা বাজে। রেহানের দিকে একপলক তাকিয়ে আঁচল উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট বানাতে চলে যায়।
আঁচল ব্রেকফাস্ট রেডি করে রেহান কে ডাকতে এসে দেখে রেহান কে ডাকতে এসে দেখে রেহান ভেজা শরীরে টাওয়েল পেঁচিয়ে দাড়িয়ে চুল ঝাড়ছে।
আঁচলকে দেখা মাত্রই রেহান মুচকি হাসে।

আঁচলঃ রেডি হয়ে আসুন।
রেহানঃ হুম আসছি।

আঁচল চলে গেলে রেহান রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে আসে।
রেহানঃ আমাকে খাইয়ে দাও।

আঁচল কিছু না বলে রেহান কে খাইয়ে দেয়।
রেহানঃ এবার খুশি তো? নিজের টাকায় বউ কে খাওয়াবো। (মুচকি হেসে)

আঁচলঃ হুহহহ এখনো তো যাননি এতেই এতো কথা বলছেন।
রেহানঃ যাচ্ছি তো।

রেহান আঁচলের কাছে এসে আঁচলের কপালে চুমু দেয়।

রেহানঃ আসি বেইবি। আমায় মিস করলে ফোন করো সাথে সাথে চলে আসবো।
আঁচলঃ করবো ও না মিস হুহহহ।
রেহানঃ হুহহ নাকি হুম দেখায় যাবে বউ।

রেহান চলে যেতেই আঁচল দরজা লক করে নিজের রুমে চলে আসে। এসে টিভি দেখা শুরু করে।
কিন্তু কিছুক্ষন কাটার পরই বেচারির বোরিং লাগছে। এতো সময় কি টিভি দেখে পার করা সম্ভব নাকি!

আঁচল বার বার ঘড়ি দেখছে। আর ভাবছে লাঞ্চের টাইমে রেহান কে ফোন করবে।
কিছুক্ষন পর রেহান নিজেই ফোন করে।
আঁচলঃ হ্যা বলুন।

রেহানঃ মিস করছো আমায়?
আঁচলঃ (বাপরে এই ডেভিল টা বুঝলো ক্যামনে? মনে মনে)

নাহ মিস করতে যাবো কেনো আজিব।
রেহানঃ হুম জানি তো। মিস করবেই। আমি আসছি কিছুক্ষনের মধ্যে।
আঁচলঃ আচ্ছা।

রেহানের কথায় আঁচল শুধু আচ্ছা বললেও বেচারি মনে মনে খুবই খুশি হয়।
আঁচল গিয়ে লাঞ্চ রেডি করতে থাকে। কিছুক্ষন পর বেল বাজতেই আঁচল দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।

আঁচল দরজা খুলে তো পুরাই অবাক।
রেহান হাতে অনেক গুলো আইসক্রিম, চকলেট নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
রেহানঃ কী বউ? হা করে তাকিয়ে আছো যে? নিবে না?

আঁচল মুচকি হেসে রেহানের কাছ থেকে চকলেট আর আইসক্রিম গুলো নেয়।
বিকেলে
রেহানঃ আঁচল কোথাও যাবে ঘুরতে? তোমার কিছু লাগবে?
আঁচলঃ না কিছুই লাগবে না।
রেহানঃ তাহলে চলো কোথাও ঘুরে আসি। একেবারে রাতে ডিনার করে ফিরবো।

আঁচলঃ আচ্ছা।
রেহানঃ ওকে রেডি হয়ে এসো।
আঁচল রেডি হয়ে চলে যায়। রেহান ও রেডি হয়ে নেয়।

আঁচল রেডি হয়ে আসতেই রেহান আঁচলকে দেখে হা হয়ে যায়।
আরও বেশি অবাক হয় আঁচল রেহানের সাথে মিল রেখে ড্রেস পড়েছে।
রেহানঃ বেশি সাজতে হবেনা নরমাল সাজবা বুঝছো?

আঁচলঃ হুম।
আঁচল শুধু ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দেয় আর আর চোখে কাজল সাথে নরমাল জুয়েলারি। তাতেই আঁচলকে দেখতে মাশআল্লাহ বলতেই হবে।
রেহানঃ রিকশা করে ঘুরলে কেমন হয়?
আঁচলঃ হুম। মন্দ না।

রেহান আঁচলকে নিয়ে রিকশায় উঠে।
রেহানঃ এতো দূরত্ব বজায় রাখলে তো পড়ে যাবা। তার চেয়ে ভালো আমার কাছে এসে বসো। (চোখ মেরে)
আঁচলঃ এই জন্যই রিকশায় করে ঘুরতে চেয়েছেন তাই না? (রেগে)
রেহান মুচকি হেসে আঁচলের কোমড় জড়িয়ে ধরে বসে।

পর্ব ২১ (অন্তিম)

রেহান মুচকি হেসে আঁচলের কোমড় জড়িয়ে ধরে বসে।
অনেকক্ষণ দু’জন ঘুরাঘুরি করে শপিং এ যায়।
আঁচলঃ শপিংমল এ আসলেন কেনো?

রেহানঃ কিছু কেনাকাটা করতে।
আঁচলঃ কই! বাসায় তো বলেন নি?
রেহানঃ আরেহ বেশি কিছু না। জাস্ট তোমার কয়েকটা শাড়ি।
আঁচলঃ আমার শাড়ি তো আছেই। আর কিনতো হবে না। চলুন এখান থেকে।

রেহান রাগি চোখে আঁচলের দিকে তাকায়। আঁচল রেহানের চাহনি দেখে ভয়ে চুপ মেরে যায়।
রেহান আঁচলকে নিয়ে একটা শপে ঢুকে। হটাৎ পেছন থেকে কেউ ডাক দেয়
~ আঁচল
আঁচল রেহান দু’জনই পেছন ফিরে তাকায়।

আঁচল মানুষ টাকে দেখে কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। আচমকাই আঁচলের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে
আঁচলঃ জিসান
আঁচলের মুখে জিসান নাম টা শুনেই রেহান চমকে যায়। তার মানে সামনে থাকা লোক টা জিসান। রেহান একহাতে আঁচলের কোমড় ধরে জিসানের দিকে এগুতে থাকে।
জিসানঃ বাহহ বিয়ে করে নিয়েছো? কতো দিন হলো?

আঁচল কিছু বলছে না শুধু একদৃষ্টিতে জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে।
রেহানঃ হেই ব্রো আমি রেহান আঁচলের হাসবেন্ড। তুমিই জিসান!
জিসানঃ জ্বী।
রেহানঃ তোমাকে দেখার অনেক ইচ্ছে ছিলো আমার জানো তো! স্পেশালি একটা কথা বলার জন্য।

জিসানঃ কী কথা?
রেহানঃ থ্যাংকস
জিসানঃ কেনো?
রেহানঃ আঁচলকে ফিরিয়ে দিয়ে তুমি যে আমার কতোবড় উপকার করেছো নিজেও জানো না। তোমার জন্যই আঁচলকে পেলাম। না হলে হয়তো খাটি হিরে হারিয়ে ফেলতাম।

জিসান রেহানের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।
জিসানঃ আঁচল আপনাকে আমার সম্পর্কে বলেছে।

রেহানঃ আঁচল বলেনি তবে বিয়ের আগে আঁচলের মা বাবা আই মিন আমার শশুর শাশুড়ি বলেছে। আর বিয়ের পর অবশ্য আঁচল অনেক বারই তোমার নাম নিয়েছে কিন্তু এখন মনে হই তোমার নামটাও ও ভুলে গেছে। কি আঁচল তাই তো? (আঁচলের দিকে তাকিয়ে)
আঁচল এতোখন রেহানের কথা শুনছিলো। আঁচল কিছু না বুঝেই বলে দেয়
আঁচলঃ হ্যা।

রেহানঃ দেখলে তো? এই না হলে আমার বউ। পুরনো সব কথাই ভুলে গেছে। জানো ও আমাকে অনেক ভালোবাসে। মাত্র তো কয়েক টা দিন হলো বিয়ের এর মাঝেই এতোটা ভালোবেসে ফেলেছে কি বলবো আর।
আজ অফিস গিয়েছিলাম কিছুক্ষন পরই ফোন দিয়ে বলে বাসায় চলে আসো।
আঁচল রেহানের কথা শুনে হা হয়ে যায়। বলে কি!
এতো বড় মিথ্যে?

রেহানঃ বাই দ্য ওয়ে উনি কে? তোমার মিসেস? (জিসানের সাথের মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে)
আঁচল এতক্ষন জিসান কে দেখায় এতোটাই ব্যাস্ত ছিলো যে জিসানের সাথে যে আরও একজন আছে তার দিকে খেয়ালই করেনি। রেহানের মুখে শুনে আঁচল তাকিয়ে দেখে জিসানের সাথে একটা মেয়ে।
দেখতে অতোটাও সুন্দরী না যতোটা আঁচল।

জিসানঃ হ্যা। সায়নী।
আঁচলঃ কেমন আছো ভাবি? (সায়নীকে উদ্দেশ্য করে)
সায়নীঃ হুম ভালো। আপনি?

আঁচলঃ এমন একখানা বর পেয়ে কেউ কি খারাপ থাকতে পারে বলো! আমিও আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি। (রেহানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে)
আঁচলের কথা শুনে জিসান অনেকটা জেলাস ফিল করছে আর রেহান বেচারা তো শেষ। সব যেনো তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

রেহানঃ ( কি হলো এটা! জিসান কে দেখে ওর মাথা খারাপ হয়ে গেলো না তো? মনে মনে)
আঁচলঃ আচ্ছা জিসান ভাইয়া সায়নী ভাবি ভালো থাকবেন কেমন। আল্লাহ হাফেজ।

জিসানের তো এবার রাগ উঠে যায়। চেয়েছিলো আঁচলকে ছ্যাকা দিয়ে সারা জীবন কাঁদাবে এখন তো আঁচলই উল্টো জিসানকে ছ্যাকা দিয়ে ব্যাকা করে দিলো।
আঁচল রেহানের হাত ধরে টেনে নিয়ে আসে।

রেহান আঁচলের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে
রেহানঃ কি হলো বলো তো? এমন বিহেভ করলে যে!
আঁচলঃ ইচ্ছে হয়েছে তাই। আপনার কোনো সমস্যা?

রেহানঃ না না সমস্যা কিসের।
রেহান আঁচলের জন্য কিছু শাড়ি কেনে রেস্টুরেন্টে চলে আসে। তার পর দুজনে একসাথে ডিনার করে বাড়ি ফেরে।

৫ দিন পর …

আঁচল কিচেনে রান্না করছে আর রেহান আঁচলকে সাহায্য করছে। শুধু সাহায্য বললে ভুল হবে সাথে জ্বালিয়ে মারছে।
হটাৎ বেল বাজতেই আঁচল বলে
আঁচলঃ দাড়ান আমি দেখে আসি।

রেহানঃ আমি থাকতে আমার বউ টার কষ্ট করা লাগবে না। (আঁচলের নাক টেনে)
রেহান গিয়ে দরজা খুলে দেখে রেহানের মা বাবা আর রিমি।
রেহানঃ মা বাবা তোমরা চলে আসলে যে।

আমাকে তো বলোনি আজ আসবে।
রেহানের বাবাঃ বলতাম পরে ভাবলাম আঁচল একা একা থাকবে বাড়িতে তাই বলিনি।
রেহানঃ বলতে তো পারতে। আর আমি অফিস গেলে আঁচল তো একাই থাকে। বাই দ্য ওয়ে আসতে অসুবিধে হয়নি তো?

রেহানের মাঃ একদমই না।
রেহানঃ আচ্ছা তোমরা ফ্রেশ হয়ে আসো।

রেহানের বাবা মা রিমি সবাই যার যার রুমে চলে যায়। আঁচল কিচেন থেকে বেরিয়ে আসে
আঁচলঃ কে আসলো?
রেহানঃ মা বাবা।

আঁচলঃ তাই! রিমি আসেনি?
রেহানঃ হুম। রুমে গেছে।

আঁচল মুচকি হেসে চলে আসে।
রিমি ফ্রেশ হয়ে বিছানায় রেস্ট নিচ্ছে এমন সময় আঁচল আসে
আঁচলঃ রিমি
রিমিঃ ওহহ ভাবি আসো।

আঁচলঃ কেমন কাটলো গ্রামে দিনগুলো?
রিমিঃ অনেক ভালো। তবে একটু টেনশনেও ছিলাম বটে।
আঁচলঃ কিশের টেনশন?

রিমিঃ আমরা চলে গেলাম। তুমি না জানি আমার ভাইটাকে কতো কষ্ট দিয়েছো। (মন খারাপ করে)
আঁচলঃ কষ্ট দিই নি গো। আমি তো তোমার ভাইয়ের প্রেমে পড়ে গেছি। (মুচকি হেসে)
রিমিঃ কিহহহহহ!

আঁচলঃ হুম। গল্প পরে হবে এখন খেতে চলো।
আঁচল চলে যায় সবার জন্য খাবার রেডি করতে।

রেহানের মা বাবাও আসে।
রেহানের মাঃ আঁচল তোমার কোনো সমস্যা হয়নি তো?
আঁচলঃ না মা।

রেহানের বাবাঃ এই সুযোগে রেহানের অফিস যাওয়া টা শুরু হলো কি বলো।
রিমিঃ হ্যা বাবা একদম।
রেহান মুচকি হাসে সাথে আঁচলও।

রাতে
আঁচল রুমে এসে দেখে রেহান বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে।
আঁচল ধীর পায়ে রেহানের কাছে গিয়ে রেহান কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

রেহান বুঝতে পারে মানুষ টা কে। কারন তার শরীরের ঘ্রান, প্রতিটা স্পর্শ রেহানের চেনা। খুব চেনা।
রেহান আঁচলের হাত দু’টো চেপে ধরে।
রেহানঃ আজ সূর্য কোন দিকে উঠলো বলো তো?

আঁচলঃ কেনো?
রেহানঃ এতো ভালোবাসা যে?

আঁচলঃ আমার বর। আমি ভালোবাসবো। এতে তোমার পারমিশন নিতে হবে বুঝি?
রেহান মুচকি হেসে আঁচলের কোমড় জড়িয়ে ধরে।

রেহানঃ মোটেই না। তবে এতোদিন যে কষ্ট দিয়েছো তার শাস্তি তো পেতেই হবে তাই না।
আঁচলঃ আমি সব শাস্তির জন্যই রেডি আছি বুঝছো।
রেহানঃ এই ওয়েট ওয়েট তুমি আমাকে তুমি করে বলছো যে!

আঁচলঃ হু
রেহানঃ বাহ বাহ এতো পরিবর্তনের কারন কি জানতে পারি।
আঁচলঃ প্রেমে পড়ে গেছি।
রেহানঃ কার?

আঁচলঃ আমার ডেভিল বর এর। এমন ভাবে প্রশ্ন করছো যেনো অন্য কারো প্রেমে পড়েছি।
রেহানঃ অন্য কারো প্রেমে পড়ে দেখো না তুলে আছাড় মারবো।
রেহানের কথা শুনে আঁচল হেসে দেয়।
রেহানঃ এবার তো বলো।
আঁচলঃ কী?

রেহানঃ ভালোবাসি
আঁচলঃ সব কিছুই কি মুখে বলতে হই হুহহহ
রেহান মুচকি হেসে আঁচলকে কোলে তুলে নেয়।

রেহানঃ নাহ মুখে বললে তো হয়না প্র্যাক্টিকালি করে দেখাতে হয়। (চোখ মেরে)
আঁচল লজ্জায় চোখ বন্ধ করে রেহানের গলা জড়িয়ে ধরে।

লেখাঃ শিফা আফরিন

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “ডেভিল বর – Husband wife love story after marriage in bengali” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – ডেভিল বর (১ম খণ্ড) – Husband wife love story after marriage in Bengali

3 thoughts on “ডেভিল বর (শেষ খণ্ড) – Husband wife love story after marriage in Bengali”

  1. অনেক অনেক অনেক সুন্দর।পড়তে পড়তে অজানা এক ভালোলাগার জগতে হারিয়ে গিয়েছি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *