গল্পটি অসমাপ্ত (শেষ খণ্ড) – বাংলা প্রেমের উপন্যাস

গল্পটি অসমাপ্ত (শেষ খণ্ড) – বাংলা প্রেমের উপন্যাস: নীলও নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্যেই এই বিয়েতে রাজী হয়েছিল। তার জীবন এখন দুর্বিষহ, বিষে জর্জরিত। মাঝে মাঝে আফসোস হয় তার।


পর্ব ৮

রিমঝিম কোমায় আছে। মাথার পেছন দিকটায় খুব তীব্র আঘাতের ফলে ওদিকের সব নিউরন বন্ধ হয়ে গেছে। সে সব কিছু দেখতে পারবে, শুনতে পারবে, কিন্তু কোনো কিছু বলতে পারবে না। নড়াচড়াও করতে পারবে না। রিমঝিমের পুরো পরিবার ভেঙে পড়েছে। নীল গিয়েছিল হাসপাতালে।

কিন্তু সে কারো সাথে দেখা করতে পারেনি। রিমঝিমের এই অবস্থার জন্য নীল~ই দায়ী। তাকে কেউ দুচোখের পাতায় দেখতে চায়না। রিমঝিমের বাবা নীলের বিরুদ্ধে কেস করতে চেয়েছিল।

কিন্তু রিমঝিমের চাচা বুঝালেন,
~বড়লোক ফ্যামিলির সন্তান। কেস টেস করে এতদূর আগাতে পারবো না। তার চেয়ে বরং ওর ফ্যামিলির নাম্বার রেখে দাও। পরে কিছু একটা করা যাবে ভাই।

রিমঝিমের বাবাও সে কথায় সায় মিলিয়ে নীলের থেকে নীলের বাবার নাম্বার রেখে দিলেন। নীল হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে বারোটা বেজে যায়। শরীরের সমস্ত গিট গুলো কাঁমড়াচ্ছে। ব্যথায় কটকট করছে।

নীল কোনোরকমে হাত মুখ ধুঁয়ে জামা পাল্টে শুয়ে পড়ে। সারাদিনের ঘটনা ক্লান্ত মনে রোমন্থন করতে করতে চোখ লেগে আসে তার। নিদ্রা টা গাঢ় হবে হবে, তখনি উচ্চ স্বরে ফোনের টোন বেজে উঠে…

নীল ঝামটা মেরে চোখ খুলে তাকায়। ফোন নিয়ে গতকাল রাতের সেই নাম্বার দেখে ভীষণ…ভীষণ রকম চমকে যায়। রিমঝিমের যে অবস্থা তাতে রিমঝিমের আবার ফোন দেওয়া ইম্পসিবল ব্যাপার।

তাহলে কে এই মেয়ে? কে ফোন দিচ্ছে? সে কি রিমঝিম না? তবে কি রিমঝিম সত্যিই বলেছিল? হাজারো প্রশ্ন ঘুরে বেড়ায় মাথায়। উত্তর জানা নেই। নীলের ফোনটা বাজতে বাজতে কেটে যায়।

ঠিক তখুনি তার ভাবনার সুতো ছিঁড়ে। নীল ব্যস্ত হাতে নাম্বার টায় মিনিটের মাঝেই ব্যাক করে। একবার রিং ঠিক মতো পড়তে না পড়তেই ফোনটা রিসিভ করে ফেলে মৌমি।
উদ্ভ্রান্তের ন্যায় নীলের কণ্ঠে, হ্যালো, হ্যালো।

মৌমির হাত ~ পা শিরশির করে। নীলের গুচ্ছ গুচ্ছ কণ্ঠস্বর তার কর্ণকুহরে ঢুকতেই মৌমির কানটাও শিরশির করতে থাকে। মৌমি কান থেকে ফোন নামিয়ে আঙুলের মাথা কানের ভেতর ঢোকায়। প্রচুর চুলকাচ্ছে! ওদিকে নীল আরো চারবারের মতো হ্যালোবলে ফোন কেটে দেয়।

মেজাজ তিরিক্ষে পৌঁছে আছে। একবার এই মেয়ের আসল পরিচয় জানুক, গাল টা ফাটিয়েই ছাড়বে।
মৌমি কান খোঁচানো সেড়ে ফোনের দিকে তাকায়। লাইন কাটা। মৌমি অসহায় চোখে বিড়বিড় করে, লাইন কেটে দিল?
মৌমি আবার ফোন করলো।

নীল সঙ্গে সঙ্গে ফোন ধরে কাটা কাটা গলায় বলল, একটা চড় মেরে গাল ফাটাইয়া দিবো বেয়াদ্দব মেয়ে! কে তুমি? কে তুমি হ্যাঁ? আমাকে ফোন দিয়ে কথা বলো না কেনো? পরিচয় দাও নিজের৷ কে তুমি?
মৌমি বেশ ঘাবড়ে গেল। ঘাবড়ানো গলায় টেনে টেনে বলল, আ~ম~ই~আমি মৌ~মি।

~কালকেও তো একই কথা বলছো। মৌমির পর আর কিছু নাই? কোথায় থাকো? নাম্বার পাইছো কোত্থেকে? একদম লাইন কাটবা না খবরদার।

পূর্বের ন্যায় ঘাবড়ানো গলায় মৌমির উত্তর, আমি টিয়ার বান্ধুবী।
নীল এক সেকেন্ড সময় থম মেরে মৌমির কথাটা বুঝতে চেষ্টা করে। মাথার নিউরন এতটাই উত্তেজিত হয়ে আছে যে এই মুহূর্তে কোন টিয়ার নাম বলেছে সে, সেটাও বুঝে উঠতে পারে না। কোনোরকমে বলে, কি? কোন টিয়া?

মৌমি ভ্যাবাচ্যাকা খায়। নিজের বোন কে চিনে না? মৌমি ভুল কারো নাম্বারে ফোন করেনি তো? সে তো নীলের কণ্ঠ টাও ততটা চিনে না। মৌমি ভয়ে ভয়ে বলল,
~আপনার বোন টিয়া।

~ও! টিয়া? তুমি টিয়ার বান্ধুবী? হঠাৎ মনে পড়ে যাওয়া গলায় বলে উঠে নীল।
~জি।
নীল বিরক্তিতে মুখ দিয়ে চএর মতো উচ্চারণ করে উঠে। তারপর বলে, কালকে তুমিই ফোন দিছিলা তাইলে?
~জি।

~শিট! নীলের কণ্ঠ দিয়ে আফসোস ঝরে পড়ে। মৌমি ভয়ার্ত গলায় বলল, কি হইছে?
নীল হঠাৎ গলার সুর কঠিনতর করে তোলে।

~তুমি কালকে তোমার পুরো পরিচয় না দিয়ে ফোন কেটেছো কেন? আর এরপর তোমার নাম্বার টাও বা বন্ধ ছিল কেন? জানো তোমার এই বোকামির কারনে কতবড় ক্ষতি হইছে?
মৌমি আকাশ থেকে পড়লো।

~কি ক্ষতি? কিসের কথা বলছেন আপনি?
~তুমি পরিচয় দাওনি দেখে ভেবেছিলাম এই কল টা হয়তো রিমঝিম করেছে। রিমঝিম আমার ভার্সিটির জুনিয়র ছাত্রী। বেশ কদিন ধরে ও আমাকে ডিস্টার্ব করে যাচ্ছিল।

আজকে ভার্সিটি গিয়ে ওকে আচ্ছামতো অপমান করি। থাপ্পড় ও দিয়েছি। বেচারী সইতে না পেরে দোতালা থেকে লাফিয়ে সুইসাইড করে। কোমায় আছে ও বর্তমানে। বুঝতে পারছ তুমি তোমার কারনে কতটা ঝামেলার সম্মুখীন হয়েছি আমি?

নীলের কণ্ঠ দিয়ে রাগ, ক্ষোভ এবং সর্বশেষ অনুতপ্ততা ঝরে পড়ে। সে আবারো বলে উঠে, মেয়েটার জন্য আমার প্রচন্ড খারাপ লাগতেছে। কি করলাম আমি! যাচাই বাছাই না করেই! শিট! তোমাকে থাপ্পড় মেরে গাল লাল করতে ইচ্ছে করছে আমার।

বাই দ্য ওয়ে, তুমি আমার নাম্বার পেয়েছ কোথায়? আর কেনো কল দিছো?
মোমি এদিকে কেঁদেকেটে অস্থির। কে জানতো তার ওমনের জন্য এতো বড় কান্ড বেধে বসে থাকবে?

সে তো লজ্জাতেই ফোন কেটে বন্ধ করে রেখেছিল! প্রিয় মানুষ টার সাথে কথা বলতে গেলে প্রথমবার তো সবারই ওরকম হয়! মৌমির ফোঁপানো আওয়াজ নীল পেয়ে ফের ধমকে উঠে, এখন কেঁদে হবে কি? না কেঁদে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও.. উত্তর দাও বলছি।

কাঁদোকাঁদো গলায় মৌমি বলে, টিয়ার থেকে নাম্বার নিয়েছি।
~কেন নিয়েছ?
মৌমি উত্তর দিতে না পেরে নিশ্চুপ রইলো।

এই প্রশ্নের সত্যিটা বলা অসম্ভব। সে মরে গেলেও বলতে পারবে না। নীলের মেজাজ ক্রমশ বাড়ছে। সে চেঁচিয়ে বলে, আবার চুপ!

বলো কেন ফোন দিয়েছ?

মৌমি সশব্দে কেঁদে ফেলে। কাঁদতে কাঁদতে বলল, মাফ করবেন। এর উত্তর দিতে পারব না। আমি অনেক অনেক দুঃখীত। আমাকে ক্ষমা করবেন, প্লিজ.. আমি তো বুঝিনি যে আমার কারনে এত বড় ঝামেলা বাধবে! ওই মেয়ের পরিবারের কাছেও আমার তরফ থেকে ক্ষমা জানাবেন। আর কক্ষনো ফোন দিব না আমি। ওয়াদা দিচ্ছি.. ভাল থাকবেন। আবারো মাফ চাই… রাখি।

মৌমি ফোন কেটে দিল। বালিশটা মুখের উপর চাপা দিয়ে গোঙাতে থাকল সে। ভেতর টা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। নীলকে নিয়ে এত তিক্ত স্মৃতি মনের ভেতর কেন জন্মালো?

নীল পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। মেজাজ তুঙ্গে।

কতক্ষণ একভাবে দাঁড়িয়ে থেকে বারান্দায় পা রাখে। পকেট থেকে ধীর হাতে সিগারেট আর দিয়াশলাই বের করে৷ নিজের ভেতর এক নাম না জানা যুদ্ধ বয়ে যাচ্ছে। সেই যুদ্ধ কমাতে নিকোটিনের চেয়ে দরকারী কিছুই নয়।

পুরো ক্লাসে একটিবারের জন্যেও মনোযোগ দিতে পারলো না মৌমি। সেই সাথে টিয়াও। দুজনেই উশখুশ করতে করতে ক্লাস শেষ করলো। টিয়ার ভয়ে হাত ~ পা বরফ হয়ে আছে। নীল ভাইয়া এবার গ্রামে আসলে তার পিঠের ছাল তুলবে, এটা নিশ্চিত।

তাকে যদি জিজ্ঞেস করে, কেন নাম্বার দিয়েছিস তোর বান্ধুবীকে? তখন? তখন কি জবাব দিবে সে? ভাবতেই বুক চিঁড়ে গাঢ় শ্বাস বেরিয়ে আসে টিয়ার।
স্কুল শেষে দুই বান্ধুবী চুপ চুপ হাটছিল।

অন্যদিনে সারা রাস্তা ভ্যাক ভ্যাক করতে করতে আসলেও আজ আর ভ্যাক ভ্যাক করতে পারল না। দুজনার মাঝেই কেমন একটা থম ধরা নীরবতা! টিয়ার বাসার সামনে আসতেই মৌমির মুখের কপাট খুলল, দোস্ত, সরি।

তোর ভাইকে তোর ব্যাপারে বলার জন্য। আমি ইচ্ছে করে বলিনি।
টিয়া একটি দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে বলল, বাদ দে। এছাড়া আর কিইবা করার ছিল তোর? বল?

~তোকে যদি জিজ্ঞেস করে আমাকে নাম্বার দিছিস কেন? তখন?
~পরে দেখা যাবে সেসব। আয়, বাড়ি আয় আমার। খেয়ে যাবি।
~নাহ। আজ না। তুই বরং আমার বাড়ি আয়। আজ তোর হবু শ্বশুর বাড়ি খাবি।

মৌমি এমনভাবে কথাটা বলল যে টিয়া হেসে ফেলল। হেসেই বলল, কয়জনের কপালে আমার মত হবু শ্বশুরবাড়ির খাবার লেখা থাকে বল?

মৌমির ঠোঁটেও হাসির ঝিলিক, তাইতো। আয় চল..
টিয়া সম্মতি দিলো। দুজনে আবার চললো মৌমির বাড়ির উদ্দেশ্যে।
শাওন, টিয়া, মৌমি, তিনজন একত্রে টেবিলে বসে খাচ্ছিল। তদারকি করছিল মাজেরা বেগম। তিনি টিয়া মেয়েটিকে নিজের মেয়ের মতোই দেখেন।

শাওন টেবিলের তল দিয়ে টিয়ার পায়ে খোঁচা মারে। টিয়ার হেচকি উঠে যায়। মাজেরা বেগম ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলেন। পানি এগিয়ে দিলেন টিয়ার কাছে। টিয়ার মাথায় আলতো করে থাপ্পড় লাগালেন। হেচকি কমে আসে। মাজেরা বেগম বললেন, কে যেন মনে করছে তোমায়।

টিয়া শাওনের দিকে কড়াচোখে তাকিয়ে বলে, হয়তো আন্টি।
শাওন মুখটিপে হাসে। ভাতের থালায় আঙুল নাড়াতে নাড়াতে বলে, কেমন পড়াশোনা চলছে তোমাদের টিয়া?

শাওনের গলায় ভারিক্কি ভাব। টিয়া কপট রাগী গলায় বলে, জি, ভাইয়া, ভাল।

টিয়ার মুখ থেকে ভাইয়াডাক শুনে মৌমি হেসে কুটিকুটি। তা দেখে টিয়া মৌমির দিকে আগুন চোখে তাকায়। মৌমি থেমে যায়। কিন্তু তখনো ঠোঁটের কোণায় হাসির ঝলক।

শাওন ফের বলে, তোমাদের উপরের ক্লাসের ওই মেয়েটা আছে না? কি যেন নাম.. উম… হ্যাঁ গুলশান। গুলশানের নাম্বার টা তুমি এনে দিও তো টিয়া। ও আমার কাছে কিছু নোটস চাইছিল। ওগুলা সব কালেক্ট করে রাখছি আমি।

টিয়া বোম হয়ে আছে ফুলে। কোনোরকমে ভাত খাওয়া শেষ করলো। শাওন ফিরতি আর কিছু বলার সাহস পেল না। টিয়া যে প্রচুর ফুলছে, সেটা তার চেহারাতেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আবার কিছু বললে না, মাইরের চোটে পিঠের ছাল খোঁয়াতে হয়!

রিমঝিমের বাবা মোস্তাক হাসান নীলের বাবা আব্দুল হকের কাছে ফোন করেন। তাকে নীলের কর্মকান্ডের ব্যাপারে সব অবগত করার পর বললেন, আমি আপনার ছেলের নামে কেস করব।

তার জন্য আজ আমার মেয়ের এই অবস্থা। রিমঝিমের তিনজন বান্ধুবীও সাক্ষী দিতে প্রস্তুত এই বিষয়ে। আপনার ছেলেকে আমি জেলের ভাত খাওয়াবো।

আব্দুল হক প্রথমে প্রচুর ঘাবড়ে গেলেন। তারপর ঠান্ডা হয়ে মাথায় হাত রাখলেন। কি করল এটা নীল! কোমায় থাকা আর মৃত অবস্থা, একই তো। নীলের নামে ডায়রেক্ট মার্ডার কেস হবে।

তার ছেলেকে হাতে হ্যান্ডকাফ পড়িয়ে পুলিশের দল নিয়ে যাবে৷ টর্চার করবে, আদালতে সবার সামনে ফাসীর রায় শুনাবে। ভাবতেই আব্দুল হকের মাথা ঝিমঝিম করে উঠলো। তিনি দুর্বল গলায় বললেন, ভাই, অনুরোধ। এটা করবেন না। এর বদলে আপনি অন্য যা চান আমি তাই করতে প্রস্তুত।

মোস্তাক হাসান হাসলেন তবে নিঃশব্দ সেই হাসি। গলার স্বর যতটা সম্ভব কঠোর রেখে বললেন, কথার বরখেলাপ হবে না তো?
~আমি এক কথার মানুষ।
~ঠিক আছে। আমি সময় মতো চেয়ে নিব যা চাওয়ার আমার। রাখছি।


পর্ব ৯

টিয়া ফুলে ফেপে পেপের আকার ধারণ করেছে। শাওনের কপালে শনি রবি সোম… একে একে সব ঘুরপাক খাচ্ছে। সেসব জিনিস শাওন ভালো করেই টের পেলো৷

একটা ছোট্ট কাগজে দুলাইন লেখলো, মহারাণী ক্ষমা করুন। ছাদে আসুন একবার, প্লিজ।
তারপর সেটা সুযোগ বুঝে টিয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়েই দৌঁড়।

টিয়া চিরকুট টা পড়ে সিদ্ধান্ত নিলো, যত যাই হয়ে যাক, সে ছাদের দিকে ভুলেও পা মাড়াবে না। এরকক ছেলের সাথে সম্পর্ক রাখারই দরকার নেই তার৷ সবসময় এক্সট্রা ঝামেলা করে। তার হৃদপিন্ডে আলাদা জ্বলুনি না ধরালে হয়না।

কিন্তু দেখা গেল, যাবে না যাবে না করেও শেষমেশ ছাদে গিয়ে হাজির হলো সে৷ শাওন রেলিং এ উঠে বসে ছিল। টিয়াকে গুমোট মুখে আসতে দেখে সে নেমে দাঁড়ালো। তারপর হুট করে হাটু মুড়ে বসলো। দুহাতে কান ধরে বলল, আর কক্ষনো জ্বালাবো না। প্রমিস।

টিয়ার হাসি পেয়ে গেলেও মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইলো। শাওন উত্তরের অপেক্ষা করে৷ কিন্তু টিয়ার কোনো উত্তর পায়না দেখে আবার বলল, কি? ক্ষমা মঞ্জুর হবে না এই অধমের?
টিয়া কাটা কাটা গলায় বলল, নাহ।

~তো কি করলে ক্ষমা করবেন হাইনেস?
টিয়ার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধিরা ভর করলো।

সে তৎক্ষনাৎ বলল, যদি এখনি এসে আমাকে একখান চুমু দিতে পারেন, তাইলেই মাফ করা যায়।
টিয়া খলখল করে হাসে। শাওন উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে, ওরে শয়তান্নি রে!

আমাকে বাঁশ দেওয়ার ধান্ধায় আছো না?
~ভুল করেছো। এবার শাস্তি তো ভুগতেই হবে।
~শাস্তি টা বেশি কঠিন হয়ে গেল না? কেউ দেখলে?
টিয়া শাওনের দিকে পা বাড়ায়।

টিয়ার চোখে অন্যরকম মাদকতা, নেশা। শাওন সেই দৃষ্টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করার চেষ্টা করে। পেছাতে পেছাতে রেলিংয়ে গিয়ে ঠেকে যায় পিঠ। শাওন আমতাআমতা করে বলে, টিয়া আমার বাসা এটা!

টিয়া ঘোরগ্রস্ত গলায় বলল, কে আছে? বলো.. কেউ নেই। এই যে. আমি তোমার এত কাছে এলাম। এই দেখো, তোমার শ্বাসের গতিও মাপতে পারছি। কই কেউ দেখেছে কি? একটা চুমু দিলেও কেউ দেখবে না৷ টুকুস করে দিয়ে দাও।

কথা শেষে টিয়া চোখ টিপে। শাওন সামান্য রূঢ় কণ্ঠে বলে, দুষ্টু হয়ে গেছ!

~হু, হয়েছি। তোমার প্রেমে পড়ে দুষ্টু, বেহায়া, নির্লজ্জ, সব হয়েছি… সব। এসব ছাড়ো। চুমু কি দিবে না?

শাওন মৃদু ভাবে একটা নিঃশ্বাস ফেলে। তারপর চোখ জোড়া মুদে ফেলে। ধীরে ধীরে তার অধর আগায় টিয়ার কপাল বরাবর। ঠিক যখনি চুমুটা আঁকতে যাবে, টিয়া অট্টহাসি দিয়ে সরে দাঁড়ায়। শাওন চোখ খুলে। প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকায়। টিয়া বলল, তোমার সাহস পরীক্ষা করছিলাম।

যাও, ক্ষমা করে দিছি।
শাওন মেকী রাগী গলায় বলল, তবে রে..
টিয়া ছুটে যায়। তার পিছুপিছু দৌঁড়ায় শাওন ও…
নিচ থেকে ছাদের কার্নিশে ঘটা প্রতিটা ঘটনা লক্ষ করলেন হোসেন সাহেব, শাওনের বাবা। তিনি অত্যন্ত রাগী ভাবে বাড়ির ভেতর ঢুকলেন। মৌমি নিজের রুমে আধশোয়া হয়ে ছিল।

খাওয়া বেশি হয়ে যায়, ক্ষনিকের রেস্ট নিচ্ছিল৷ হোসেন সাহেব সর্বপ্রথম মেয়ের ঘরেই ঢুকলেন। সরাসরি প্রশ্ন করলেন, তোমার বান্ধুবী আর তোমার ভাইয়ের মধ্যে যে সম্পর্ক আছে তা কি তুমি জানো?

মৌমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে উঠে দাঁড়ায়। আমতাআমতা করে উত্তর না দিয়ে৷ হোসেন সাহেব ধমকে উঠলেন, উত্তর দাও। আমতাআমতা আমার পছন্দ না।

ঠিক তখুনি টিয়া ঢুকলো ঘরে, হাসি হাসি মুখ নিয়ে। কিন্তু হোসেন সাহেব কে এভাবে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার বুক কেঁপে উঠলো। মুখ থেকে হাসি মিইয়ে গেল। মৌমি দ্রুত টিয়াকে বলল, এখন বাসায় যা৷ কাল স্কুলে দেখা হবে।

টিয়ার মন টাও পালাই পালাই করছিল৷ সেও বিনাবাক্য ব্যয়ে ছুটে চলল নিজের বাড়ির দিকে। হোসেন সাহেব ফের ধমকালেন মৌমিকে, মেয়েটাকে বুদ্ধি করে পাঠিয়ে দিলে? এর মানে আমি কি ধরে নেব যে তুমি সব জানতে?

~আমিও সব জানি। পেছন থেকে বললেন মাজেরা বেগম। হোসেন সাহেব বড়বড় চোখ করে স্ত্রীর দিকে তাকান।

মৌমিও অবাক। মা~ও জানে! কিভাবে! মাজেরা বেগম সবার চোখের প্রশ্ন বুঝে গেলেন। বললেন, শাওন আর টিয়াকে একত্রে দেখলেই বোঝা যায় যে ওদের মধ্য কিছু একটা আছে। এটা অনেক আগেই আঁচ করতে পেরেছি আমি৷

~তুমি আমাকে একবারও বলো নি কেন? গর্জে উঠেন হোসেন সাহেব।

~বলিনি কারন মেয়েটাকে আমার পছন্দ বেশ। তাই৷ আমি চাই ও~ই আমার ছেলের বউ হয়ে আসুক।

~অসম্ভব! ফের বলেন হোসেন সাহেব।
~কিন্তু কেন বাবা? টিয়া খুব ভাল মেয়ে। আর পড়াশোনাতেও ভাল। মাঝ থেকে বলল মৌমি। হোসেন সাহেব নিজেও জানেন না সে কেন এই বিষয় টা মানতে পারছেন না৷

সে শুধু এতটুকু জানেন যে, শাওন কে ঢাকার কোথাও বিয়ে দিতে চান৷ গ্রামে নন। হোসেন সাহেব চুপ করে থাকেন। মাজেরা বেগম তা দেখে বললেন, এমন তো নয় যে আপনি ঢাকায় ওকে বিয়ে দেওয়ার ফন্দি আঁটছেন?

স্ত্রীরা এমনই। বিনা বলাতেও স্বামীর মনের সব পরিকল্পনা বুঝে ফেলতে পারে তারা। তারা কি জাদু জানে? হয়ত। আর এই জন্যেই এরা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাদুকর হয়।

হোসেন সাহেব মৃদু ভাবে শ্বাস ফেলে বলে, হ্যাঁ।

~শাওন কিন্তু আমারও ছেলে। ওকে নিয়ে আমারও একটা মতামত আছে। আর আমার মতামত ওর জন্যে গ্রামের মেয়েই পারফেক্ট।

শহরের কোনো মেয়ে এখানে এসে ওর সাথে, আমাদের সাথে, আমাদের নিয়ম নীতির সাথে সমজোতা করতে পারবে যে, তার কি গ্যারান্টি? আর ওই মেয়েকে চেনা জানার ব্যাপারেও বিশাল ফাঁড়াক থাকবে। কি? থাকবে না?

এর থেকে গ্রামেরই কোনো ভালো মেয়েকে দেখেশুনে, বুঝে নিয়ে আসলে শাওনের সংসার টা খুশিতে পরিপূর্ণ থাকবে। কিন্তু শাওন পছন্দ করে টিয়াকে। সারাজীবন ও~ই সংসার করবে। আমরা না৷ তাই ওর পছন্দ কেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত আমদের.. আপনিই বলুন, উচিত না?
~কিন্তু মাজেরা…

~আমাদের ছেলের খুশির জন্য… একবার ভেবে দেখুন।
হোসেন সাহেব মৃদু নিঃশ্বাস ফেলে। কিছু একটা ভেবে বলে, সন্ধ্যায় আমার মতামত জানাবো।

সে বেরিয়ে যেতে নেয়। মাজেরা বলে উঠেন তখন আবার, আশা করি আপনার মতামত আমরা সবাই মেনে নিতে পারব আর সেটা শাওনের ভালোর জন্যেই হবে।

হোসেন সাহেব পাল্টা কিছু না বলে চলে গেলেন। মৌমি দৌঁড়ে এলো। মাজেরা বেগমের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে পড়তে বলল, ইউ আর দ্য বেস্ট মম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড।
~আমি এত ইংলিশ বুঝি না বাপু!

~তোমার বুঝতে হবেনা৷ তুমি কিভাবে বুঝলা ভাইয়া আর টিয়ার ব্যাপার টা?

~সবার চোখ ফাঁকি দেওয়া গেলেও মায়ের চোখ ফাঁকি দেওয়া এত সহজ না। যখন মা হবি, তখন তুইও সব বুঝে যাবি৷ বুঝেছিস? ছাড় আমাকে। গোসল হয়নি এখনো আমার..

মাজেরা বেগম চলে যান। মৌমি ভরাপেট নিয়েও বেরিয়ে পড়ে ভাইকে খুঁজতে। যার জন্য এত কিছু হলো তাকে তো সব জানাতেই হবে।

নীল ফোন করে জানালো, সে গ্রামে আসবে। এই শুনে টিয়ার হাত ~ পা বরফ হয়ে রইলো। বিকেলে শাওনের ফোনে ফোন করে মৌমিকে চাইলো। মৌমি পুরোদস্তুর ঘুমে৷ ঘুম জড়ানো কণ্ঠেই বলল, কি? ব~ল..

টিয়া কপট রাগী গলায় বলল, আমাকে যন্ত্রণায় ফালাইয়া ঘুমাইতেছেন?

~কি? কি করছি আমি?
~ভাইয়া আসতেছে।
~কোন ভাইয়া?
~নীল ভাইয়া!

~তো আমি কি…..বাকি কথা শেষ করার আগেই তড়াক করে ঘুমের দেশ ছেড়ে উঠলো মৌমি৷ আশেপাশে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বলল, কিহহহহহ! উনি আসতেছে?

~আস্তে চিল্লা। আর হ, আসতেছে৷ কিছুক্ষণ আগে আব্বার ফোনে ফোন দিছিল৷ আজকের রাতের গাড়িতে উঠবে নাকি। আমাকে কি বলছে জানিস?

~কি?
~বলছে আমার পিঠে তেল মেজে রাখতে৷ আইসা নাকি পিঠের ছাল তুলবে!

মৌমি কিছু বলতে পারলো না। তার হাত ~ পা কাঁপছে। আল্লাহই জানেন, কোন ক্যাঁচাল শুরু হবে কাল! উফ! টিয়া গভীর এক শ্বাস ফেলে বলল, তুই চিন্তা করিস না।

আমি দেখি কিভাবে কি ম্যানেজ করা যায়। আব্বা নামাজে যাবেন। ফোন চাচ্ছে। রাখছি আমি।
মৌমি অস্ফুটভাবে বলল, হু..
লাইন কেটে যায়। মৌমি বিছানায় শুয়ে পড়ে আবার। ঘুম শেষ। না, না, শেষ না।

হয়তো কালকে সে আজীবনের জন্য ঘুমিয়েই যাবে! বাবার কানে যদি মৌমির করা এসবের এক ফোঁটাও কানে যায়, তবে তিনি জিন্দা পুতে ফেলবেন মৌমিকে… মৌমির প্রাণ টা ছটফট করতে থাকে।

সন্ধ্যায় হোসেন সাহেবের মতামত জানানোর কথা থাকলেও তিনি তার মতামত জানালেন, রাতের বেলা।

খাবারের টেবিলে, খাবারের সময়। গুরুগম্ভীর ভাবে শাওন কে শুধু বললেন, টিয়াকে বলে দিও ওর পরিবার কে তৈরি হয়ে থাকতে। আমরা দুই একের মাঝেই যাব ওদের বাড়ি। টিয়ার জন্য প্রস্তাব নিয়ে।

মাজেরা বেগম খুশি হলেন। খুশি মৌমিও। শাওনের চোখ ছলছল করে উঠলো। তার জীবনের প্রথম ভালবাসা, টিয়া। তাকে এত সহজে পেয়ে যাবে, সে কোনোদিন ভাবেনি।


পর্ব ১০

নীল এলো দুদিন পর। সেদিন রাতেই ঢাকায় রওনা হওয়ার কথা থাকলেও নানান ঝামেলায় যুক্ত হয়ে যাওয়া সে রওনা হতে পারেনি। কিন্তু দুদিন পর ঠিক ঠিক হুট করে এসে হাজির হয় নিজের বাড়ি।
মধ্যাহ্ন বেলা।

চারিদিকে থম ধরা প্রকৃতি। গাছের পাতা দু একটা হালকা নড়ে উঠলেও, বাতাসের টিকি টাও নেই। ভ্যাপসা গরমে টিয়ার শরীর থেকে দরদর করে ঘাম ঝরছে।

টিয়া চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে ছাদে। সকাল থেকে তার মন টা খুশিতে বাক~বাকুম করছিল কেননা আজ বিকেলে শাওনদের বাড়ি থেকে প্রস্তাব আসবে তার জন্য। টিয়ার মাকে টিয়া বিষয়টি জানিয়েছিল। টিয়ার মা তার বাবাকে জানায়। তারপর একে একে পরিবারের সবাই জানে। টিয়ার মা আর বড় ভাইয়ের ভাবী হাফিজা রাজী হন।

কিন্তু বাকি সবাই এই সম্পর্কের বিরুদ্ধে ছিল। তবে তাদের কেও রাজি করতে বেশি বেগ পোহাতে হয়নি। একমাত্র আদরের ছোট বোন, একমাত্র মেয়ে!

টিয়ার কান্না মাখা চেহারার কাছে সবার জেদ ফিঁকে পড়ে গেল। অতঃপর সবাই~ই রাজী হলেন। টিয়ার বাবা বললেন, ওদের কে প্রস্তাব নিয়ে আসতে বলো.. দেখা যাক কি হয়!

টিয়া সঙ্গে সঙ্গে শাওন কে সেকথা ফোনের মাধ্যমে জানায়। শাওন ও বাসায় বলে কয়ে সিদ্ধান্ত নিল, আজকেই প্রস্তাব নিয়ে আসবে।

কিন্তু হুট করে নীল চলে এলো, আবার এসেই ছাদে ডাকালো! নীলের কর্মে টিয়ার বাক~বাকুম মন শুকিয়ে আমসি পানা ধারণ করেছে।
নীল গভীর চোখে বোন কে পর্যবেক্ষণ করে, কড়া গলায় বলল,
~ প্রেম ট্রেম করে বেড়াস শুনলাম।

টিয়া জবাব দিল না। চুপটি মেরে রইলো।
~ তারা নাকি আজ আসবে প্রস্তাব নিয়ে?

টিয়া মাথা একদিক কাত করলো। মুখে কিছুই বলল না। নীল কথা যেভাবে হুট করে শুরু করেছিল ঠিক সেভাবে প্রসঙ্গও পাল্টে দিল,
~ মৌমি টা কে?

টিয়া ভয়ে ভয়ে বলল,
~ আমার ফ্রেন্ড।

গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছিল না তার। বহুকষ্টে বলল কথাখানা।
~ কেমন ফ্রেন্ড?

~ বেস্টফ্রেন্ড। তুমি ওকে দেখছো ছোটবেলায়। এখন দেখলেও চিনবা।
~ তাই নাকি? দেখছি আমি?

নীল মনে করার চেষ্টা করেও কিছু মনে করতে পারল না। তার ছোটবেলার কোনো স্মৃতিই তার কাছে স্পষ্ট নয়।

আর এইটে উঠার পর থেকেই ঢাকায় পড়াশোনা করার সৌভাগ্য হয়েছে৷ সেই হিসেবে গ্রামে আসা যাওয়া হয়েছে বেশ কম। তো গ্রামের কোনো মেয়েকে সহজে চেনার কথাও নয়!

নীল কিছু মনে করতে পারল না। নীলের মুখভঙ্গি দেখে সেই কথা স্পষ্টই বুঝতে পারল টিয়া। সে নিজ থেকে বলে উঠল,
~ আজ ওরা আসবে। তখন ওকে দেইখো৷ দেখলেই চেনা চেনা লাগবে। দেইখো।
~ ওরা আসবে মানে?

~ মৌমির ভাইয়ের সাথেই আমার বিয়ের কথাবার্তা চলছে।
কথাটা বেশ নিচু গলায় বলল টিয়া।

সাধারণত মেয়েরা তাদের বিয়ের ব্যাপারে বা প্রেম ব্যাপারে পরিবারের সদস্যের কাছে বলতে লজ্জা পায়। আর যদি সেই সদস্য হয় পুরুষ, তাহলে লজ্জার মাত্রা অত্যধিক হয়। টিয়াও এই আচরণের ব্যতিক্রমী নয়। তার চেহারা ইতিমধ্যেই লজ্জায় লাল লাল হয়ে উঠেছে।

নীল চকিত গলায় বলল,
~ ওরকম একটা বেয়াদব মেয়ের ভাইয়ের সাথে বিয়ের কথাবার্তা চলছে! এসবের মানে টা কি? এই তুই কি ওর ভাইয়ের সাথেই প্রেম করছিস?

টিয়া হ্যাঁ বা না কিচ্ছু বলল না। চুপ করে রইলো। নীল উত্তেজিত হলো খানিকটা।

~ কি? বলছিস না কেন? উত্তর দে। বোবা হয়ে থাকবি না। পিঠে মটকা ফাঁটাবো।
~ ও বেয়াদব মেয়ে না ভাইয়া।

একটু জোর দিয়েই বলল কথাটা।

~ ও! অন্যের ভাইকে রাত বিরেতে কল করে আর সে খুব শুদ্ধ মেয়ে! ভাল কথা। তুই~ই নাকি আমার নাম্বার দিয়েছিস!

তোর কাহিনী টা কি বল দেখি। নিজে ওর ভাইয়ের গলা ঝুলতে যাচ্ছিস আর ওকে আমার গলায় ঝোলাতে চাইছিস নাকি?

~ এমা! নাহ ভাইয়া। এমন কিছুই না।
~ তবে? কেমন কিছু?
~ ভাইয়া ও আমাকে…
~ কি?

ধৈর্যহীন গলা নীলের। টিয়া মৃদু নিঃশ্বাস ফেলে ভাবে, সত্য বলা ছাড়া উপায় নাই। মিথ্যে বাহানায় ভুলিয়ে রাখার ছাত্র ভাই নয়। উল্টো মার খাওয়ার সম্ভাবনা একশোতে একশো।
টিয়া ধীর কণ্ঠে বলে,
~ ভাইয়া ও তোমাকে পছন্দ করে। এই জন্যে…
টিয়া ভেবেছিল একটা বিকট চিৎকার করে উঠবে নীল। কিন্তু নীল সেরকম কিছুই করল না।

বরং ভাবনার চাইতেও বেশি নীরব হয়ে রইলো মিনিট দুই। টিয়া গভীর আগ্রহী চোখে নীলের মুখের দেখে তার ড্যাবড্যাবে চোখজোড়া মেলে দাঁড়িয়ে রইলো। যখনি নীল মুখ তুলে তাকালো, টিয়া দ্রুত তার চোখ সরিয়ে নেয়। নীল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।
~ কি? আমাকে কি দেখছিলি?

আমতাআমতা করে টিয়া বলে,
~ নাহ, কিছুনা ভাইয়া।
~ আচ্ছা, মেয়েটার বয়স কত রে?

টিয়া চকিতে মুখ তুলে ভাইয়ের দিকে তাকায়। বিষ্ময় নিয়ে বলে,
~ আমার সমান…
নীল টিয়ার বিষ্ময় দেখে মৃদু হাসল। তবে সেই হাসি গোপনে রইলো।

টিয়ার বিষ্ময়কর চোখজোড়ার পানে তাকিয়ে বলল,
~ তুই কি ওই ছেলেটাকে খুব পছন্দ করিস?
টিয়ার মুখ আচমকা লজ্জায় নুয়ে পড়ে।

চোখ তুলে তাকাতে পারছে না সে ভাইয়ের দিকে। নীল বুঝতে পারল। সে খুবই অপ্রাসঙ্গিক একটা কথা বলে ফেলেছে। এমনটা বলা উচিত হয়নি। ইশ! মেয়েটা লজ্জায় যেভাবে মাথানত করে রেখেছে, একটু পর ঘাড়টাই না ছিঁড়ে পড়ে যায়। নীল বলল,

~ যদি উত্তর হয় যাওয়ার সময় একটা গোলাপ পাতা ছিঁড়ে সঙ্গে নিয়ে যা। আর যদি না হয় তাহলে পাতা ছেঁড়ার দরকার নেই।
টিয়া নিচে নামার সময় একটা গোলাপ গাছের একটা পাতা ছিঁড়ে নিয়ে চলে গেল। নীল তার উত্তর পেয়ে গেল।

কেন জানি মৌমি নামক মেয়েটাকে তার শাস্তি দিতে ইচ্ছে করছে না আর। টিয়া তার একমাত্র বোন এবং অতি আদরের বোন… টিয়ার এতটুকু কষ্টও সে সইতে পারবে না। কোনোদিন ও না…

শাওনের বাড়ি থেকে শাওন, ওর বাবা, শাওনের নানা, আর মৌমি এলো। তখন দুপুর বিকেলের পথে গড়াচ্ছে। বাহিরে তপ্ত রোদ থাকলেও রোদের তেজ নরম। এমন রোদ মানুষকে অশান্তির বদলে প্রশান্তি দেয় বেশি।

শাওন যেন নওশাহ… একদম বিয়ে করে নিয়ে যেতে এসেছে এমন একটা লজ্জা ভাব তার মধ্যে। সোফায় বসার পর থেকে এমন ভাবে মাথা নিচু করে রেখেছে যে তা দেখে মৌমি হেসে কুটিকুটি। সে ফিসফিস করে শাওন কে বলল,

~ ভাইয়া, একটা বটি বা দা এনে দেই?
শাওন অবাক হয়ে প্রত্যুত্তরে বলল,
~ কেন?

~ ওগুলা দিয়ে মাথা টাকে কেটে পায়জামার পকেটে ঢুকিয়ে ফেল। কষ্ট করে এত ঝুঁকতে হবে না।
শাওন ফিসফিস করে বলে,
~ যা ভাগ…

মৌমি সত্যিই ভাগলো। সে একই অর্থে ছেলেপক্ষ আবার মেয়ে পক্ষ! তাকে শুধু ছেলের দিকে থাকলেই হবে না, মেয়ের দিকেও থাকতে হবে। মেয়ের সাজসজ্জা কতদূর, দেখা দরকার। মৌমি টিয়ার রুমের দিকে এগোচ্ছিল। মুখে তার চমৎকার হাসি। গুনগুন করে গান টান ও গাইছে।

কাল তো ছিলাম ভাল
আজ আমার কি হল
সে কথা কইতে পারি না..
না.. রে..
একলা….

বাকিটুকু বলার আগেই সেই চেনা পুরুষালি কণ্ঠ, যা মৌমির সারা শরীরে কাঁপন ধরিয়ে দিতে বাধ্য, সেই কণ্ঠস্বর বলে উঠল,
~ মৌমি.. দাঁড়াও।

মৌমির পা জোড়া আপনা আপনি দাঁড়িয়ে পড়লো। পেছন ঘুরে ব্যক্তিটিকে দেখার সাহস পর্যন্ত হলো না ওর।

হাত ~ পা ~ সারা শরীর, অসম্ভব রকমের কাঁপছিল। মৌমির পাউডার মাখা চামড়া ভেদ করে ভয়ের ঘাম তর তর করে বেরিয়ে আসছিল। এভাবে আর মিনিট পাঁচেক থাকলে সে ভয়েই স্ট্রোক করবে, শিউর।
নীলই পায়ে পায়ে হেটে মৌমির মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো। আকাশ সমান বিষ্ময় নিয়ে বলল,

~ এত ভয়! এই ভয় নিয়ে রাতে ঘুমাও কিভাবে! আরে.. আজব! আমি কি খুনী? ভূত? নাকি অন্যকিছু! কুল… আমি তোমাকে বকবো না। ইনফেক্ট কিছুই বলব না।

এখনো কাঁপছো তুমি? হা হা হা! এই ভয় নিয়ে আবার আমার সাথে প্রেমও করতে চাও?

তক্ষুনি, ঠিক তক্ষুনি মৌমির প্রচন্ড ঘাম দিলো। সেই একঘামে যেন শরীরের সমস্ত ঘাম বেরিয়ে গেল। তারপর… তারপর শরীরের কাঁপাকাঁপি থামল।

হুট করে চোখেমুখে ভর করলো একগাদা স্নিগ্ধতা। ওড়নার আঁচলের এক মাথা আঙুলে নিয়ে পেঁচাতে থাকে আপন মনে। পাশেই দেয়ালে, শরীরের অনেক খানি ভার ছেড়ে দিল।
~ কথা বলছো না যে?

নীলের গলার স্বর পেয়ে আবার একটু কাঁপলেও নিজেকে সামলে নিলো। গলা দিয়ে আওয়াজ আসতে চাইছে না। তবুও টেনেটুনে বলল,
~ ক~কি? কি ব~লল~ব?

~ ওমা! তুমি দেখি তোতলাচ্ছো! হা হা হা।
ডাকাতের মতো হো হো শব্দ তুলে হাসতে থাকলো নীল। ভাবটা এমন, তার সাথে মৌমির কিছুই হয়নি।

মৌমি বিমুগ্ধ চোখে সেই হাসি দেখতে থাকে। কে বলবে এই ছেলেটাই ফোনে কতই না কড়াকড়া কথা বলেছে মৌমি! সেসব কথা হঠাৎ করে মনে পড়ে যায় মৌমির। মুখ হয়ে যায় গম্ভীর। চোখে আচমকা কোথা থেকে একরাশ পানি কলকল করে ভরে এলো। মৌমি প্রায় কেঁদেই ফেলবে। সে তাড়া লাগানো গলায় বলল,
~ ভাইয়া আমি যাই…

মৌমি ভো~দৌড়। নীলের হাসির মাত্রা বাড়ে। মেয়েটা ভীষণ অদ্ভুত!



পর্ব ১১

(বর্তমান)

পরশের সাথে বিয়ের তিন বছর কেটে গেছে। মৌমির শ্বশুড়বাড়ির লোকেরা ওকে আর আগের মতো করে ভালবাসে না।

ওকে দুচোখে সইতেও পারেনা। একমাত্র পরশের জন্য ওকে সহ্য করতে হয়। আর এই সবের জন্য দায়ী, হিয়া। মৌমি আর পরশের একমাত্র মেয়ে। অবশ্য পরশ তার নকল বাবা.. আসল বাবা তো… নীল। এই বিষয়ে মৌমির শ্বশুরবাড়ির সবাই জেনে গেছে।

না জানানো ছাড়া উপায় ও ছিল না। বিয়ের সাত মাস যেতে না যেতেই মৌমির ডেলিভারি হয়। সবার মনে সন্দেহের বাসা বাধে। সেই সন্দেহের বাসা দূর করতেই সবাইকে সত্যি টা বলে দেয় ওরা। পরশ এটাও জানে, সে বাবা হতে পারবে না কখনো। তার জীবনে তো স্ত্রীর আশাই ছিল না। সেখানে স্ত্রী সহ একটা বাচ্চাও পেয়েছে! হোক অন্যের সন্তান।

গায়ে তো আর লেখা নেই। নিজের পিতৃ পরিচয়ে তাকে বড় করলেই সে তার সন্তান হয়ে যাবে। আর রইলো ভালবাসা…. তাতো অফুরন্ত রয়েছে হিয়ার জন্য।

ইদানীং পরশের শরীর ভালোর দিকে যায় না। প্রায় সময় মাথা ধরা, বমি, মাথা ঘোরা, চোখের ব্যথা ইত্যাদি নানা উপসর্গে দিন কাটাতে হচ্ছে। মৌমি হাজারবার করে অনুরোধ করেছে, একবার ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য। টেস্ট করানোর জন্য।

কিন্তু পরশের এক কথা, আমার কিচ্ছু হয়নি। যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
মৌমিও নাছোড়বান্দা। সে পরশ কে হাসপাতালে পাঠিয়েই ছাড়বে। ছোট্ট হিয়াকে কাছে ডেকে নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
~ আম্মু, আমি যেমন টা বলব তেমন টাই বলবে ঠিকাছে?

বাবা যদি জিজ্ঞেস করে আম্মু খেয়েছে কিনা তাহলে বলবে যে খায়নি। ওকে?
হিয়ার বয়স ছোট হলেও বুঝ বড়দের মতোন। ঝুটি মাথা নাড়িয়ে দুদিকে, বাচ্চা গলায় বলল,
~ আত্তা…
পরশ ঘুম থেকে উঠেছে সবে।

মাথার ব্যথায় টনটন করছে। ইচ্ছে করছে কিছু একটা দিয়ে ঠাস করে ফাঁটিয়ে দিক মাথাটা। ধরা মাথা নিয়ে ডাইনিং এ এলো। পরশের মা টেবিলে বসে বসে কিছু একটা পড়ছিলেন। পরশ এক নজর সেদিকে তাক করে বারান্দার দিকে এগোলো৷

এই সময় টায় হিয়া বারান্দাতেই থাকে। অজস্র খেলনা তার। সেই খেলনাই তার খেলার একমাত্র সাথী। কেননা বাবা আর মা বাদে অন্য কেউই তার সাথে খেলে না। ভালো মতোন দুটো কথা পর্যন্ত বলে না। এসব অবশ্য হিয়া তার গায়ে মাখায় না।

তার কাছে পৃথিবী মানে তার বাবা আর মা। এই দুজন মানুষ থাকলেই তার চলবে। অন্য কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই।

পরশ বারান্দার দরজার কিনারায় এসে দাঁড়ায়। মিষ্টি করে ডাকে,
~ হিয়া মা…

হিয়া বিদ্যুৎ বেগে মুখ ঘুরিয়ে তাকায়। বাবার চেহারা দেখামাত্র ভেতর থেকে একটা হাসি উছলে পড়তে চাইছিল, কিন্তু হিয়া সেই হাসি আটকে রাখে। এইটুকুন বয়সেও একদম পাক্কা অভিনেত্রীর ন্যায় মুখ থমথমে করে। গলায় বিষন্ন ভাব আনে। ছোট্ট করে বলে,
~ হুউউ…
পরশ ব্যস্ত পায়ে বারান্দায় পা রাখে।

হিয়ার বিছানো ছোট্ট পাটিটায় বসে। পাশেই সাজানো পুতুলের ঘরটার দিকে একনজর তাকিয়ে থেকে উদ্বিগ্ন নিয়ে বলে,
~ কি হইছে আমার হিয়া মায়ের? মন খারাপ?

হিয়া মাথা দুলায়। অর্থাৎ তার মন খারাপ। পরশ পূর্বের গলায় আবার জিজ্ঞেস করে,
~ কেন, কেন, কেন?

~ মা তকাল তেকে কিত্তু কায়নি।
ভারী ভণিতা করে বলল হিয়া।

পরশ বিড়বিড় করলো, খায়নি! কেন খায়নি!। মুখে বলল,
~ এইজন্য আমার ছোট্ট সোনার মন খারাপ? উহ হো!

আমি এক্ষুনি মাকে বকে দেব। একদম মন খারাপ করে না সোনা… এদিকে আসো, পাপা আদর দিক গালে…
~ নাহ.. আগে মাকে কাওয়াও। তালপল আদোল কোলো।

পরশ মুচকি হাসে। হিয়ার ছোট্ট মুখ খানা ছুঁয়ে দিয়ে বলে,
~ এক্ষুনি মাকে বকতে যাচ্ছি। জাস্ট ওয়েট…
মৌমি বারান্দার দরজাতেই এমন ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল যেন পরশ তাকে দেখতে না পায়। যখনি পরশ উঠবে, ঠিক তার আগ দিয়েই মৌমি রান্নাঘরের দিকে দৌঁড় লাগায়। নিজের উচ্ছল চেহারা টায় ক্লান্ত ক্লান্ত ভাব এনে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। পরশ দ্রুত পায়ে হেটে এসে রান্নাঘরে ঢোকে।
~ তুমি নাকি সকালে খাওনি?

পরশের প্রশ্ন।
~ কে বলল? হিয়া? হুম খায়নি।
~ কেন? কি হইছে? কেউ কিছু বলেছে?

~ কেউ কিছু বললেও আমি খাওয়া অফ রাখিনা কখনো।
~ তাহলে এখন খাওয়া অফ রাখছ কেন?

তার উপর মেজাজ টা প্রচুর চটে আছে। সে যতক্ষণ না আমার কথা শুনবে, আমি খাব না।
পরশ অবাক গলায় বলল,
~ কে? কে কথা শুনছে না তোমার?

সরু চোখে মৌমি তাকায়। বলে,
~ তুমি। তুমি ছাড়া আর কে!
~ আমি!
পরশ প্রচুর অবাক হয়।
~ আমি আবার কি না শুনলাম?

মৌমি দু কদম এগিয়ে আসে। পরশের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কোমরে হাত গুঁজে।
~ কদিন যাবত ডাক্তার দেখাতে বলছি? হু? শুনছো একবারো?
~ ওহ! এই ব্যাপার!
~ হ্যাঁ, এই ব্যাপার।

মৌমি গলায় কাঠিন্য যোগ করছিল কড়াভাবে কয়েকটা কথা পরশ কে শোনানোর জন্য। তার আগেই পরশ নিজ থেকে বলল,
~ আসলেই একবার যাওয়া দরকার ডাক্তারের কাছে। ভাবছি আজকেই একবার যাব…

মৌমির চেহারা থেকে সমস্ত কাঠিন্য সরে গেল। পরশের আরো কাছে এসে সে পরশের কপালে হাত রাখে। উদ্বিগ্ন নিয়ে বলে,
~ বেশি খারাপ লাগছে?
~ হু। ইদানীং মাথা ব্যথা টা একটু বেশিই! একবার দেখাতেই হয়। প্যারাসিটামল বা নাপায় তো যাচ্ছে না এই ব্যথা।

মৌমি পরশের দুবাহু চেঁপে ধরে বলল,
~ নাস্তা টা করেই চলে যাও তাহলে। দেড়ি করো না। আমি নাস্তা দিচ্ছি।

মৌমি নাস্তা বাড়ার জন্য উদ্যত হয়, পরশ মৌমির হাত ধরে টান দেয় পেছন থেকে। মৌমি ঘুরে তাকায়। প্রশ্ন করে,
~ কি?

~ একা আমার জন্য নাস্তা বারতে হবে না। নিজের জন্যেও বাড়ো। একসাথে খাব।

মৌমি একমিনিট স্তব্ধ হয়ে থাকে। সে তো খেয়েই নিয়েছে আগে। শুধু পরশ কে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য রাজি করানোর জন্য সে বলেছে সে খায়নি। হিয়াকে দিয়েও এই মিথ্যে কথা বলিয়েছে। অথচ লোকটা তার কত খেয়াল রাখে!
পরশ মৌমিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে প্রশ্ন করল,
~ কি? এভাবে কি দেখতেছ?

মৌমির চোখ ভরে জল এসে গেল… হঠাৎ… সে দ্রুত অন্য দিকে ঘুরে তাকায়। মাথা নাড়িয়ে মিইয়ে আসা গলায় বলে,
~ নাহ। কিছুনা।


(অতীত)
কথা পাকাপাকি হয়। ছোটরা আবেগের বশে যেকোনো ভুল করে ফেলার আগেই ধর্মীয় বিধান অনুসারে বিয়ে দেওয়া টাই উত্তম। এতে সম্মান টাও থাকবে সমাজে।

সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, তিন মাস পর মৌমি টিয়ার স্কুলের এক্সাম শেষ হলে দুই পরিবার মিলে ছোট খাটো ভাবে একটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শাওন টিয়ার আকদ সেড়ে ফেলবে।

তারপর টিয়া যখন আরো বড় হবে, তখন ধুম করে মেয়ে তুলে দিবেন। এই সিদ্ধান্তে সবাই রাজী। ততদিনে শাওন ও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে করে সবাই। শাওনের পরিবার পাকা কথা সেড়ে চলে যাওয়ার পর টিয়া তার মায়ের কাছে একটা ফোন কিনে দেওয়ার আবদার করল।

রাতের বেলা খাবার টেবিলে টিয়ার করা আবদারের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি। টিয়ার বাবা রাজী না হলেও নীল বলল, সে ঢাকা থেকে নেক্সট টাইম ফোন নিয়ে আসবে।
দেখতে দেখতে প্রায় দেড় মাস কেটে যায়।

টিয়ার ফোন এসেছে। সে দিন রাত শাওনের সাথে কথা বলায় মত্ত থাকে। শাওনের থেকেই ফেসবুক সম্পর্কিত তথ্য পায়। টিয়া শাওনের থেকে অনুমতি চায় একটা ফেসবুক আইডি খুলার। কিন্তু শাওন রাজি হয়না। কিন্তু টিয়াও এত সহজে দমবার পাত্রী নয়৷ সে লুকিয়ে লুকিয়ে একটা ফেক একাউন্ট খুলেই ফেলে।

নীল আর মৌমির সম্পর্কের বয়স মাত্র সতেরো দিন চলছে তখন। এই সতেরো দিনেই দুজনের মধ্যকার আবেগ, জমানো ভালবাসা, একে অপরের প্রতি আকর্ষণ, সবটা উগলে আসছে। ওদের প্রেম টা যে কিভাবে হয়েছিল! নীল বা মৌমি, দুজনের একজন ও জানে না। একে অপরের সাথে টুকটাক কথা বলতেই বলতেই দুর্বল হয়ে পড়েছিল।

মৌমি তো আগে থেকেই দুর্বল হয়েছিল। মৌমির বাচ্চাসুলভ আচরণের জন্যই হয়তো, নাকি মৌমির সততা… স্নিগ্ধ ভালবাসা! ঠিক কোনটার জন্য মৌমির প্রতি তার মন দুর্বল হয়ে গেছে সেটা নীল নিজেও জানেনা।

টিয়া মৌমিদের বাড়ির পেছনে এসে দাঁড়ায়। পেছন দিকেই মৌমির রুম, সেই রুমের জানালায় এসে টোকা দেয়। মৌমি বুঝতে পারে ইশারা। দ্রুত নিজের রুমের দরজা আটকে দেয়। তারপর জানালা খুলে।

টিয়া বিরক্তি সূচক গলায় বলে,
~ তোদের জন্য আমি শেষ! আমাকে চিঠি ম্যান বানিয়ে দিলি!
মৌমি ইনোসেন্ট ভাবে হাসে।

তা দেখে টিয়া ফের বলল,
~ ভ্যাটকাবি না খবরদার। এই নে, তোর চিঠি। আর শোন, ভাইয়া বলছে তুই চিঠি লিখে এই জানালা দিয়ে ফেলে দিস। ভাইয়া ঠিক রাত নটায় এসে নিয়ে যাবে।
মৌমি চিঠিটা টিয়ার হাত থেকে নিতে নিতে বলল,
~ আচ্ছা।
টিয়া যেভাবে চুপচাপ এসেছিল সেভাবেই চুপচাপ চলে যায়। এটা তার হবু শ্বশুর বাড়ি। এখানে এখন ঘনঘন আসা টা কেমন যেন দেখায়! আবার না এসেও পারেনা।

যেহেতু মৌমির ফোন নেই, তাই নীলের সাথে যোগাযোগ করার একমাত্র পথ, চিঠি আদান প্রদান। আর এই চিঠি আদান প্রদানের কাজ টা টিয়াই করে থাকে।

মৌমি কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠি খুলে বসে।
এই কিসমিস,
আজকে আমাদের বাসায় আসোনাই ক্যান? আমাকে দেখতে ইচ্ছা করেনা? আজকে আসোনাই, মাফ করলাম।

কিন্তু কাল না আসলে নো মাফ। কাল স্কুল শেষে সোজা আমাদের বাসায় আসবা। দুপুরের খাবার আমরা একসাথে খাব। ওকে? আর এখুনি কাউকে জানিয়ো না আমাদের সম্পর্কের কথা।

আগে টিয়ার বিয়েটা হয়ে যাক, তারপর আমরা আমাদের সম্পর্ক সম্পর্কে সবাইকে জানাব। কেমন? রাতে খেয়ে ঘুমিয়ো। তোমার তো না খাওয়ার অভ্যাস টা বেশি! তোমাকে খুউউউউউউউব মিস করছি….
লাভ ইউ কিসমিস, চিঠির অপেক্ষায় থাকব।
ইতি,
তোমার নীল চুক্ষু ম্যান।

মৌমি হেসে অস্থির। এ কেমন চিঠি! প্রেমে পড়ার পর প্রতিটা মুহূর্তই অসাধারণ… অতুলনীয়…. মৌমি খাতা খুলে। তারও এক খানা চিঠি লেখা দরকার এবার।


পর্ব ১২

ডিয়ার নীল চক্ষু ম্যান,
তোমার কথাই সই।

এই মুহূর্তেই পরিবার কে তোমার আমার সম্পর্কের কথা জানানোর ইচ্ছা থাকলেও এখন আর জানাবো না। আগে ভাইয়ার একটা হিত হয়ে যাক, তারপর আমি থিতু হবো নি। আজকে তোমাদের বাসায় যায়নি একটা বিশেষ কারনে।

কারন টা হলো আমি দেখতে চেয়েছিলাম আমাকে একদিন না দেখলে কেমন লাগে তোমার। সেই দেখেটা শেষ। আমাকে না দেখা ছাড়া তুমি তো ছটফট করতে করতেই মরে যাবা!

ভালো ভাবেই টের পাচ্ছি তা। কথা দিলাম, কাল আমাদের দুপুরের খাবার একসাথে হবে। এবার খুশি তো? আচ্ছা নীল, একটা প্রশ্ন করি? দ্যাখো, কিভাবে কি হয়ে গেল! তোমাকে যেই আমি কত্ত ভয় পাইতাম, সেই আমি তোমাকে এখন দুই আনার ভয় টাও পাইনা!

হা হা হা। তোমার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক তৈরি হওয়া একটা আকাশকুসুম কল্পনা ছিল আমার কাছে। অথচ সেটা বাস্তব হয়েছে! মাঝে মাঝে ভাবি কিভাবে এমন হলো। কিন্তু ভেবে আর কুলাতে পারিনা!

আচ্ছা ওই মেয়েটা কি সুস্থ হইছে এখন? কি জানি নাম! রিমঝিম টাইপ কিছু। ও কি এখনো কোমায় আছে নাকি সুস্থ আছে? মেয়েটা সুস্থ হলে আমাকে বলিও, একবার সরি বলা উচিত আমার। আমার কারনে ওর জীবন টা বিপন্ন হয়ে গেল!

রাতে খেয়ে নিব। তুমিও খেয়ে নিও। আর একটা ছোট্ট ফোনের দ্রুত ব্যবস্থা করো। এই চিঠি টিঠি আর ভাল লাগে না। তোমার কণ্ঠস্বর শোনার জন্য সবসময় আমার আত্মা ছটফট ছটফট করে…
ইতি,
তোমার কিসমিস!
.
চিঠি পড়া শেষ হতেই কাগজ টাকে নীল নিজের বুকের মধ্যে শক্ত করে চেঁপে ধরে। এই মেয়েটাকে সে তার মনের অজান্তেই খুব ভালোবেসে ফেলেছে… একে ভোলা অসম্ভব।

একে ছাড়া বাঁচাও অসম্ভব! তবে নীলের বুকের মধ্য যেমন একধরনের স্নিগ্ধ অনুভূতির জন্ম হয়েছে, ঠিক সেরকমই ব্রেনের মধ্য অন্য একধরনের অনুভূতির জন্ম হয়েছে। ব্রেন টা এবার খুব ভাবছে রিমঝিম কে নিয়ে।

একবার রিমঝিমের খোঁজ করা দরকার। সেই যে ঢাকা থেকে এসেছে, আর যায়নি। মৌমির মায়া ফেলে যেতেও ইচ্ছে করেনা! কিন্তু ফোনের মাধ্যমে জানাই যায়, রিমঝিমের শারীরিক অবস্থা!

স্কুল শেষে দুই বান্ধুবী একত্রে টিয়াদের বাড়ি ঢোকে। ডাইনিং রুম পার হওয়ার সময় মৌমির নাকে খুব সুন্দর একটা গন্ধ আসে। মৌমি ছুচকের মতো নাক শুকতে শুকতে জিজ্ঞেস করে,
~ কিসের গন্ধ রে?

টিয়া আড়চোখে মৌমিকে দেখে বলল,
~ বিরিয়ানির।
~ বিরিয়ানি! উহ আই লাভ ইট…
মৌমির চোখ চকচক করে উঠে।

~ তোর জন্যেই রান্না হচ্ছে। ভাইয়া আদেশ দিয়েছে সকালে আজ বিরিয়ানি না হলে সে খাবেই না।

হঠাৎ নীলের প্রসঙ্গ চলে আসায় মৌমি সামান্য অপ্রস্তুত হয়। তার মুখের মধ্যে একধরণের অপ্রতিভ ভাব ফুঁটে উঠে।

নীল, মৌমি, টিয়া খুব আনন্দ করে দুপুরের খাওয়া সম্পন্ন করে। অবশ্য মৌমি তেমন একটা খেতেই পারেনি। তাকে একধরনের অপ্রস্তুতকারী লজ্জা ঘিরে রেখেছিল সারাটাক্ষণ…
খাওয়া শেষে নীলের রুমে এসে বসে ওরা।

টিয়াও এসেছে ওদের সাথে। যাতে কেউ অন্য কিছু মাইন্ডে না নেয়। টিয়া শো.. সে বিছানায় শুয়ে শুয়ে নীলের ফোন ঘাটতে ব্যস্ত।

আর মৌমি নীল গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ায়। বারান্দার দরজা লাগিয়ে দেয়।
মৌমি কাঁপা গলায় প্রশ্ন করে,
~ দ..দরজা লাগালেন কেনো?

নীল মৌমির সুর অনুসরণ করে বলে,
~ এ…এমনি!

মৌমি হেসে ফেলে। নীল এক ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
~ চিঠি লেখার সময় তুমিআর সামনাসামনি আপনি! এ কেমন সম্বোধন করার স্টাইল?

মৌমি বেখাপ্পা হাসে। কিছু বলার আগেই নীল ফের বলে,
~ আমাকে তুমিকরেই বলবা। বুঝছো? কতবার বোঝাবো তোমাকে সেটা?

মৌমি মাথা নাড়িয়ে বলল,
~ আ..চ্ছা! আস্তে আস্তে প্র‍্যাকটিস হয়ে যাবে।

~ হুম। একটা ফোন আনছি। আজ নিয়ে যাবা। ফোন টায় সিম আছে। ওটা একমাত্র তোমার কাছে রাখবা। আর শুনো, কেউ যেন না জানে। ওকে? এখন থেকে আর চিঠি লিখতে হবে না।

ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারব।
মৌমি খুশি গলায় বলল,
~ যখন ইচ্ছা তোমার গলার স্বর শুনতে পারব?

~ হু, পারবা…
মৌমি বাচ্চাদের মতো দুহাতে তালি দিয়ে বলে উঠে,
~ ইয়ে! কত্ত মজা হবে। খুব ধন্যবাদ…
নীল একটুক্ষণ থম খায়। পরমুহূর্তেই মৌমির নাক একহাত দিয়ে চেঁপে ধরে বলে,
~ বাচ্চা মেয়ে আমার!

এই এইটুকুন একটা কথা! তিন শব্দের বাক্য, বাচ্চা মেয়ে আমার, এই কথাতেই মৌমি কাত… তার বুকের হার্টবিট মিস হয়। চোখ বড়বড় হয়ে কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে নেয়। তারপর এক অবিচ্ছিন্ন লজ্জায় সারা শরীর লজ্জিত হয়ে উঠে। কাঁপতে শুরু করে…

প্রসঙ্গ পাল্টাতে মৌমি হুট করে বলে,
~ ওই মেয়েটার কি খবর?
নীল বুঝতে পারলো কোন মেয়েটা। তাই আর জিজ্ঞেস করলো না কে সে। সোজাসুজি উত্তর দিল,

~ এখনো কোমায়। আমি কালকে আমার এক ফ্রেন্ডের মাধ্যমে খবর আনাইছি।
~ ওহ!

হঠাৎ মৌমির মন খারাপ হয়ে গেল। বিষন্ন ছেয়ে গেল চোখে, মুখে, নাকে…
~ আমার জন্য এত কিছু হলো! মেয়েটার জীবন টাই নষ্ট করে দিলাম। শিট! যতবার ভাবি ওতবার খারাপ লাগে।

~ তোমাকে ভাবতে বলছে কে? শুধু শুধু কেন ভাবো?

~ না ভেবে থাকা যায়? এই অপরাধবোধ থেকে কবে যে মুক্তি পাব!
নীল মৌমির দুকাধ ধরে বলল,

~ শোনো, তোমার ফল্ট নেই। তাই অপরাধবোধ ও নেই। এটা একটা এক্সিডেন্ট জাস্ট! ওর কপালে এটা হওয়ার ছিল তাই হইছে।

এখানে তুমি আমি জাস্ট উছিলা একটা.. বুঝতে পারতেছো আমার কথা?

মৌমি মাথা দোলায় নীরব ভাবে। নীল বুঝলো তার বোঝানোতে কাজ হবে না। মৌমি ধরেই নিয়েছে সে রিমঝিমের অবস্থার পেছনের একমাত্র কারন। নীলের বুক চিঁড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। কিভাবে যে মেয়েটাকে বোঝাবে সেটা ঠিক বুঝতে পারছে না সে…!

মৌমি বিকেল হতেই চলে গিয়েছে নিজের বাসায়। মৌমি চলে যাওয়ার পর টিয়া অনেকক্ষণ অব্দি ঘুমিয়েছে। শাওনের ফোন কলে তার ঘুম ভাঙে। ঘুম জড়ানো গলায় ফোন কানে নিয়ে বলে,
~ হু, ব~লো..
~ এখনো ঘুমাচ্ছো?
শাওনের গলায় বিষ্ময় ভাব ঝরে পড়ে।
~ হু..
~ উঠবা না?
~ হু..
~ আচ্ছা উঠে ফ্রেশ হয়ে তারপর ফোন দিও। রাখি আমি..
~ হু…
শাওন মৃদু ভাবে নিঃশ্বাস ছেড়ে ফোন কাটে। মেয়েটা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। এত দ্রুত ঘুম ছেড়ে উঠবে কিনা সন্দেহ। কিন্তু টিয়া সত্যি সত্যি তখন ঘুম ছেড়ে উঠে বসে। ফ্রেশ হয়ে আসে। কালকে গণিত পরীক্ষা আছে, ক্লাসটেস্ট। সেটার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। টিয়া হাতমুখ ধোঁয়ার পরেও হাই তুলছিল।

সে কোনোরকমে এসে টেবিলে বসে। পড়ার জন্য অনেক ট্রাই করছে বাট মাথায় ঢুকছে না কিচ্ছু। তাই টিয়া ভাবে, কিছুক্ষণ ফোন টিপে মুড ফ্রেশ করুক। দ্যান পড়া যাবে… যেই ভাবা সেই কাজ। টিয়া বিছানায় হেলান দিয়ে শোয়। একবার ভাবে শাওন কে ফোন করবে কিন্তু না। তা না করে টিয়া তার ফেইক একাউন্টে ঢোকে।

অনেকের সাথে ফেসবুকে ফ্রেন্ডশিপ হয়েছে তার। তারা প্রায়শই ম্যাসেজ করে টিয়াকে। টিয়াও জবাব দেয়। টিয়া নিউজফিড ঘাটছিল। হঠাৎ করে রিকোয়েস্ট ম্যাসেজ আসে। টিয়া ম্যাসেজ টা ওপেন করে।
সেখানে লেখা,
~Hi
টিয়া পাল্টা জবাবে লিখলো,
~ hello!
সঙ্গে সঙ্গে ওই লোকটা রিপ্লাই করলো,
~ kemon achen?

অপরিচিত হওয়া স্বত্তেও টিয়া রিপ্লাই করতে থাকে,
~ Valo, apni?

~ amio valo. Sondhay nasta korechen?
~ nah, accha ke apni? Amake eto message korchen je! Amake chinen?
~ nah, chini na tobe chinte chai.
Ami apnr ekjon fb frnd r ki!
~ Oh accha! Ami Tiya.. School a pori.. Apni?
~ ami habib. Dhaka medical College a MBBS korsi.

টিয়া বিষ্মিত। সে তার বিষ্ময় লুকিয়ে রাখতে পারল না। ম্যাসেজ করল,
~ Wow! Apni medical a study korchen! Great! Janen amaro khub sokh doctor howyar. But parbo kina
janina..medical a chance pawa onek tough.
ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসে,

~ eto tao tough na jodi apni thikthak vabe study koren to. Medical exam question sohoj hoy, Just ektu ghuriye pechiye ashe. Jara boi khute khute pore tader kache eshob question nothing. Bujhchen?
~ ji.

~ r echarao, apni medical a exam dewa obdi jodi ami apnr frnd hoye thaki, i mean amader jodi jogajog thake tahole ami apnk 100% help krbo, medical a dhukar bebostha korar jnne. So dont worry…

টিয়ার ভালো লাগলো খুব। কোথাকার কোন ছেলে! কতবড় সে! কত ব্রিলিয়ান্ট! অথচ সে কিনা তার মতো একটা মেয়েকে হেল্প করতে পর্যন্ত প্রস্তুত! মানুষ টা বড় ভালো…

(বর্তমান)

পরশ মারা গেছে আজ তেরো দিন পূর্ন হলো। ডাক্তারের কাছে গিয়ে জানতে পেরেছিল তার ব্রেইনে একটা টিউমার হয়েছে যেটা পশ্চাৎ মস্তিষ্কের প্রায় পুরো নিউরন সিস্টেম নষ্ট করে দিয়েছে ইতিমধ্যেই। থার্ড স্টেজে আছে ওটা।

পরশের হাতে খুব একটা সময় নেই। অথচ এতবড় রোগ নিয়েও সে এখনো অনেকটা সুস্থ! এটা দেখেই অনেক অবাক হয়ে গেছিল ডাক্তারেরা…

সত্যিই পরশের হাতে বেশিদিন সময় ছিল না।

এই রিপোর্ট জানার ঠিক ঠিক আটমাস পর সে মারা গিয়েছিল! সেই দিন টা মৌমির জীবনের সব থেকে বাজে দিনগুলির একটি ছিল…

সেদিন টা ছিল আষাঢ়ের সপ্তম দিন। তিনদিন ধরে গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে মাঠঘাট সব তলিয়ে গেছে। হিয়া ছাদে খেলতে গিয়ে শেওলায় পিছলে পড়ে হাটুর অনেক খানি জায়গা ছিলে ফেলেছে।

সে ছাদেই শুয়ে শুয়ে সে কি কান্না! মৌমি নিজের রুমে ছিল। বিষন্ন মনে পরশের মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছিল। পরশের মাথায় খুব ব্যথা হচ্ছিল। ডাক্তারদের দেওয়া ওষুধেও কাজ হচ্ছিল না।

হিয়ার কান্না শুনে মৌমি উঠে ছাদের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে, ওমনি পরশ মৌমির একহাত টেনে ধরে। মৌমি কিছু বুঝে উঠার আগেই মৌমিকে নিচু করিয়ে তার কপালে খুব শক্ত করে চুমু খায়। মৌমির মাথায় পরম স্নেহের হাত বুলিয়ে দেয়। দুর্বল গলায় বলে,
~ তোমাকে খুব ভালবাসি মৌমি..

মৌমিও পাল্টা জবাবে ভালোবাসিবলেছিল। তারপর মেয়েকে আনতে যায়। হিয়ার হাটুতে সেভলন ক্রিম লাগিয়ে পরশের রুমে আসে আবার। ততক্ষণে পরশের রুহ তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে না ফেরার দেশে… মৌমি পরশের বুকের উপর নিজের হাত আছড়ে আছড়ে কেঁদেছিল। নাহ, শোনেনি পরশ। মৌমির মাথার উপর থাকা তার একমাত্র গার্জিয়ান, বিনা নোটিশে মৌমিকে চিরবিদায় জানিয়ে ছিল…..


পর্ব ১৩

দিন গড়িয়ে চলেছে। শাওন আর টিয়ার সম্পর্ক আগের মতো নেই। একে অপরকে চাওয়ার ইচ্ছা, আকাঙ্খা আগের মতো নেই। শাওনের তরফ থেকে আগের মতোই আছে, শুধু টিয়ার তরফ থেকে নেই। কেনো নেই, শাওন জানেনা।

কয়েক দিন ধরে টিয়াকে ফোন করলে ঠিকঠাক ফোন তুলছে না, নিজ থেকে কল দিচ্ছে না, স্কুল শেষে অন্য রাস্তা ধরে বাড়ি ফিরছে, শাওনের সাথে দেখাও করতে চাচ্ছে না। এতসব ঘটনার পেছনের কারনটা কি!

শাওন জানেনা। তাই জানার জন্যেই লাজ শরমের মাথা খেয়ে, দিগবিদিক ভুলে আজ টিয়াদের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছে সে। বাহির থেকে তাকে দেখে লজ্জিত লাগলেও ভেতরটা অস্থিরতায় ছটফট করছে। মন বারবার কু ডাকছে। কোথাও একটা কিন্তুঅবশ্যই রয়েছে…

টিয়ার মা শাওন কে বসতে বলে টিয়ার রুমের দিকে এগিয়ে গেল। বিকেল বেলা হওয়ায় বাসায় টিয়ার মা আর টিয়া ব্যতিত অন্য কেউ নেই। শাওন স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে।

অন্যরা থাকলে আরো বেশি অস্থির লাগতো তার। টিয়া বিছানায় উবু হয়ে শুয়ে ফোন টিপছিল। মুখটা দারুন খুশি খুশি। টিয়ার মা ঘরে ঢুকেই বলল, টিয়া, জামাই আসছে। তোর জন্য অপেক্ষা করছে।

টিয়া ভ্রু কুঞ্চিত করে জানতে চায়, কে আসছে?
~ তোর জামাই!
~ আমার জামাইটা আবার কে?

টিয়ার মা বিরক্ত হলেন। বিরক্তসূচক গলায় বললেন, যার সাথে তোর বিয়ে ঠিক হইছে। শাওন.. ভুলে গেছিস নাকি?
টিয়া দায়সারাভাবে বলল, ও!
~ হুম। আয়.. বসে আছে ছেলেটা।

টিয়ার মা ঘর ছেড়ে বের হয়। টিয়ার খুশি মুখ টা একগুচ্ছ বিষন্নতা আর বিরক্তিতে কুঁচকে আছে। ফোন টাকে ড্রয়ারে লুকিয়ে সে শাওনের সামনে গিয়ে উপস্থিত হলো।

~ লাজলজ্জা ভুলে গেছ নাকি! এভাবে আমার বাসায় আসছ ক্যান? আম্মু কি ভাববে..!

শাওন টিয়ার রাগী চেহারা দেখে থতমত খেল। উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, কি করব বলো! তুমিই তো ঠিকঠাক মতো কথা বলো না, দেখা করো না, ফোন দাও না।

একটু থেমে শাওন আবার বলল, কি হইছে তোমার? আমার উপর কি কোনো কারনে রাগ করে আছো?
টিয়া ধপাশ করে সোফায় বসে। অবহেলায় আর দায়সারাভাবে উত্তর করল, না।

~ তবে? কিসের জন্য এত দূরে দূরে থাকো তুমি?
ক্ষণকাল চুপ থেকে টিয়া বলে উঠে, কই দূরে দূরে থাকি? কি যে বলো তুমি..

~ যা সত্য তাই তো বলছো। লাস্ট কবে তোমার সাথে সুন্দর ভাবে কথা হইছে আমার, সেটাই তো ভুলে গেছি।

~ আসলে.. পরীক্ষা সামনে আসছে। বিজি থাকি..
~ এতটা বিজি যে একঘন্টা কথা বলারও সময় থাকে না?
~ তুমি উত্তেজিত হচ্ছো কেনো?

ঠান্ডা মাথায় কথা বলা যায়না?
শাওন মাথা ঠান্ডা করে। কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে ধীর এবং নরম গলায় বলে, টিয়া… কি হইছে বলো তো। কোনো প্রবলেম থাকলে শেয়ার করো আমাকে..
~ কোনো প্রবলেম নাই।

~ তাহলে বিজির বাহানা কেন দেখাচ্ছ? আগে তো শত ব্যস্ত থাকলেও আমার জন্য তোমার সময়ের কমতি হতো না।

টিয়া গম্ভীর গলায় বলল, শাওন… সবসময় মানুষের ফিলিংস এক থাকে না। তখন নতুন নতুন সম্পর্ক ছিল তাই ফিলিংস টাও নতুন ছিল, অন্যরকম ছিল। আর এখন দিন গড়িয়েছে। অনুভূতি গুলো চেনা হওয়ার সাথে সাথে ভোঁতাও হয়ে গেছে। বুঝতে হবে তোমাকে.. কি? বুঝতে হবে না?

শাওন নিষ্পলক দৃষ্টে টিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিসব বলছে টিয়া! অনুভূতি কি দিন গড়ানোর সাথে সাথে ভোঁতা হতে পারে! আজব কথাবার্তা…

বাহিরে সোনালি রোদ্দুর। সেই রোদে হাত বাড়ালে উত্তাপ লাগেনা বরং সুরসুরি টাইপ অনুভূতি হয়। মৃদুমন্দ বাতাস বিনা অনুমতিতে পুরো প্রকৃতিতে চড়ে বেড়াচ্ছে। আকাশে বিচ্ছিন্ন মেঘ।

কি সুন্দর বিকেল! এত সুন্দর বিকেল টাও এখন ফ্যাকাশে আর জঘন্য লাগছে শাওনের কাছে। কিছু একটা হয়েছে৷ নয়ত টিয়া এত টা পাল্টে যেতে পারতো না!
শাওন খুব করূণ সুরে ডাকলো, টিয়া..

টিয়া চমকিত ভাবে শাওনের দিকে তাকায়। দেখে, শাওনের দু চোখের কার্নিশ ধরে জলেরা ভীড় জমিয়েছে। টিয়া ফাঁকা ঢোক গিললো। শত হোক, এককালে তো এই ছেলেটাকেই ভালোবেসেছিল সে। বুকের কোথাও একটু হলেও জায়গা করে আছে ছেলেটা। সেই জায়গা টুকু বারবার খাঁমচে খাঁমচে ধরছে…

শাওন আবার পূর্বের স্বরে ডাকল, টিয়া..
টিয়া ফাঁকা ঢোক গিলে উত্তর করল, কি?
~ আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার প্লান করছো নাকি?

কোমল গলা শাওনের। অথচ এই কোমল গলার স্বর টাই বেশ ভয়ংকর শোনালো টিয়ার কাছে৷ সে থতমত খেল।

হতচকিত ভাবে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলো শাওনের দিকে। শাওন ও নিশ্চুপ থেকে টিয়াকে সময় দিল কিছু বলার জন্য।

এরপর একসময় বিচলিত কণ্ঠে টিয়া উত্তর করে, এ..এসব উল্টাপাল্টা কথা বলবা না। ভাল লাগেনা শুনতে।
~ তোতলাচ্ছো কেন?
~ পানি খাব।

টিয়া তৎক্ষনাৎ পানি খেতে গেল। এবং পানি না খেয়েই চলে আসলো। তার পানির পিপাসা পায়নি একফোঁটাও। কোনো এক অজানা কারনে শাওনের হিম শীতল দৃষ্টি তার ভয়ংকর লাগছে বিধায় সে উঠে চলে এসেছে। ফিরে গিয়ে আর বসলো না।

শাওনের থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে দাঁড়াল, ওড়নার এক কোণা আঙুলে আঙুলে পেঁচালো, তারপর অপরাধী কণ্ঠে বলল, মাফ করে দিও। আর হবে না। সময় দিব।
শাওন উঠে দাঁড়াল। খুশিও হলো না, আবার দুঃখও পেল না।

তার চেহারা দেখে মনের ভাব কিছুই বোঝা গেল না। শুধু সে টিয়ার কাছে এসে, চমৎকার ভাবে হেসে বলল, দেখা যাবে..তারপর ভাল মন্দ কিছু না বলেই বিদায় নিল। টিয়া হতবাক হয়ে রইলো।

জীবনের গন্ডি কখন কি চায় বোঝা মুশকিল। সে ছাদে চলে গেল ধিমি পায়ে। কিছুক্ষণ একা থেকে নিজেকে সময় দেওয়া প্রয়োজন। নিজের মনের ভেতরে কি চলছে তা বোঝা প্রয়োজন!

বাবা,
পত্রের শুরুতেই আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

নিজের মন কে অনেক বুঝিয়েও আমি কন্ট্রোল করতে পারিনি। শাওন আমার জন্য সঠিক পছন্দ ছিল না। ও আমার সাময়িক মোহ ছিল। যেটা এখন কেটে গেছে। ওর সাথে আমার ক্লাস মিলছে না বাবা। ও খুব ভাল, এটা আমি অস্বীকার করব না কিন্তু ভাল দিয়ে জগত চলে না।

কবে নিজের পায়ে দাঁড়াবে আর দাঁড়ালেও অনেক টাকা কামাতে পারবে কিনা সেখানে একটা প্রশ্ন রয়েই যায়।

তাই আমি এমন একজন কে বেছে নিয়েছি এবার, যে আমার জন্য সঠিক মানুষ। ওর নাম হাবিব। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র। ভবিষ্যত ডাক্তার। ওর স্ট্যাটাস টা বুঝতে পারছ? ওর মতোই কাউকে খুঁজছি আমি আর পেয়েও গেলাম।

হাবিবের বাসা থেকে ওর বিয়ের চাপ দিচ্ছে। তারা খুব ভাল মেয়ে পেয়েছে। খুব বড়লোক ওরা। আমাদের চেয়েও বেশি বড়লোক.. হাবিব আমার কথা ওর পরিবার কে জানিয়েছে। কিন্তু ওরা মানছে না।

তাই আমি আর হাবিব পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছি। যদি তোমাকে ওর কথা বলি, তুমি মানবেই না। আর মানলেও আমার বিয়েটা এখন দিবে না। কিন্তু আমাদের এখুনি বিয়ে করা প্রয়োজন। নয়তো ওকে চিরতরে হারাবো আমি। ক্ষমা করে দিও বাবা।

যদি কোনোদিন সাহস হয় তাহলে ওকে সমেত ফিরে আসব তোমার কাছে। ভালো থেক বাবা। শাওন কে জানিয়ে দিও। ও যেন আমায় ক্ষমা করে দেয়।
ইতি,
টিয়া..

আব্দুল হকের রগচটা ভাবটা কমে শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। শান্ত হয়ে গেছেন তিনি। একদম শান্ত। সকালে ঘুম থেকে উঠে পেপার হাতে দুপুর পর্যন্ত বারান্দায় বসে থাকেন। এক কাপ চা ছাড়া একফোঁটা পানিও মুখে তোলেন না। দুপুরের পর খেয়ে দেয়ে বাহিরে বের হন। কই যান, কোথায় থাকেন, কেউ জানে না।

ফিরে আসে একদম রাতে। আজ তিনদিন হলো উনার এই অবস্থা।

আর তিনদিন আগে টিয়া হাবিব নামের ছেলেটার সাথে পালিয়ে গেছে। টিয়ার তিন ভাই অনেক খুঁজেছে। খুঁজেছে শাওন ও। কেউ পায়নি…
শাওনের দিন রাত একসমান এখন।

কোথা থেকে কি হয়ে গেল! এখনো ভাবতে পারছে না সে। জীবনে সব থেকে বেশি ভালোবেসেছিল যারে, সে এভাবে হারিয়ে যাবে সময়ের স্রোতে…!

কল্পনাও করেনি কোনোদিন। শাওনের বাবা প্রচুর মাতামাতি করেছেন এই বিষয় নিয়ে। তিনি একমাত্র ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু মনের দিক দিয়ে এই মেয়ে নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। হলো তো এবার… মেয়ের আসল রূপ খানা বেরিয়ে গেল।
নীল আর আগের মতো কথা বলে না মৌমির সাথে।

নীলের ধারণা মৌমি সব জানতো। হাবিবের সাথে সম্পর্ক, হাবিবের সাথে পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপার টা.. সবকিছু সমন্ধেই জানতো সে। জেনেও কেন বলেনি! কেন বললো না মৌমি।

শাওন ও মৌমি সম্পূর্ণ ভাবে ভুল বুঝেছে। অথচ মৌমি যে এত বার বলেছে সে এসব সম্পর্কে কিচ্ছু জানতো না, টিয়া তাকে কিছুই জানায়নি হাবিবের ব্যাপারে, সে কেন জেনেশুনে তার ভাইয়ের জীবন নষ্ট করবে.. কেউ বিশ্বাস করছে না তার কথা। মাজেরা বেগম ও না…

নিস্তব্ধ রাত। একটা বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছে টিয়া, হাবিব। বাড়িটা হাবিবের বন্ধুর বাড়ি। ভাগ্যক্রমে হাবিবের বন্ধুর বাবা মা কয়েকদিনের জন্য গ্রামে গিয়েছে বিধায় ওদের রক্ষে হলো। দুদিন এখানে থাকলেও হাবিবের সাথে বিবাহ বন্ধনে এখনো আবদ্ধ হতে পারেনি। টিয়া যথেষ্ট টাকা, গহনা নিয়ে এসেছে আসার সময়।

হাবিবকে যতবার জিজ্ঞেস করেছে, কবে বিয়েটা হবে, হাবিবের উত্তর, এক সপ্তাহর ভেতরেই। জন্ম সনদ নিয়ে আসিনি ভুলে। এখন নতুন করে ইমারজেন্সি ভাবে বানাতে দিছি। ওটা হাতে আসলেই কাজি অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রি করে ফেলব আমরা।

টিয়া হাবিবের কথা বোকার মতো বিশ্বাস করে নিয়েছে। তবে হ্যাঁ, হাবিব যতবার টিয়ার কাছাকাছি আসতে চেয়েছে, টিয়া একবারও রাজি হয়নি। তার একটাই কথা, বিয়ের আগে এসব কিচ্ছু হবে না। কিচ্ছু না…

হাবিব বাসায় ফিরে আসে। সন্ধ্যার পর কোথায় জানি গিয়েছিল! টিয়া হাবিবের পথ চেয়ে বসে ছিল। হাবিব আসা মাত্রই শুরু হয়ে গেল তার অভিযোগ, কোথায় ছিলে তুমি? একা থাকতে আমার অনেক ভয় লাগে। তার উপর রাত এখন! বোঝোনা তুমি? একা ফেলে রেখে কই গেছিলা?

হাবিব উত্তর দিল না। বিরক্ত মাখানো তার চেহারায়। শার্ট খুলে বিছানায় শুয়ে পড়ল সে। টিয়া নিঃশব্দে হাবিবের পাশে এসে বসে। অসহায় গলায় বলে, আমার জন্য অনেক কষ্ট সহ্য করতেছ না? তোমার তো এভাবে থেকে খেয়ে অভ্যাস নাই। আমি বুঝি গো। বিয়েটা হয়ে যা…

পুরো কথা শেষ না হওয়ার আগেই হাবিব ধুম করে উঠে বসে। টিয়াকে শক্ত করে চেঁপে ধরে শোয়ায়। টিয়ার দিকে ঝুকে রাগী গলায় বলে, বিয়া হবে না মা.. খান… তোরে বিয়া করার জন্য আনছি?

খাওয়ার জন্য আনছি। বুঝোস না? আজ কয়দিন ধরে তোর নাটক দেখতাছি। আর সহ্য হয়না। এমন খাসা মাল সামনে থাকতে নিজেরে থামাতে পারে কোন পোলা? ওই, তোরা কই?

আয় ভেতরে আয়..
টিয়া বিস্ফোরিত নয়নে চেয়ে দেখল, দরজা খুলে তিনজন ছেলে ঢুকল। টিয়া ভয়ার্ত স্বরে বলে উঠে, এসব কি বলছ হাবিব? ভালবাসি তোমাকে। আমাকে ঠকা…বাকি কথা শেষ হয়না।

হাবিব টিয়ার মুখ চেঁপে ধরে শক্ত ভাবে। বাকিরা এসে একে একে টিয়ার হাত, পা বাধতে শুরু করে। টিয়া গোঙায়। মোচড়ামুচড়ি করে। লাভ হয়না। চারজন দস্যুর সাথে সে একা পেরে উঠে না।

টিয়ার চোখ বেয়ে গলগল করে পানি ঝরছে৷ চোখের সামনে ভেসে উঠছে শাওনের ছবিটা। প্রকৃতি এভাবে তাকে তার পাপের শাস্তি দিল?


পর্ব ১৪ (অন্তিম)

শেফালি বেগম চিৎকার দিয়ে দিয়ে কাঁদছেন। থেমে থেমে শরীর কেঁপে উঠছে তার।

টিয়ার তিন ভাই একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে বুজা চোখে। সামনে যে দৃশ্য চলছে তা দেখার সাধ্য বা ইচ্ছা কোনোটাই তাদের নাই। আব্দুল হক তার ঘরে আছেন। বের হন নি খবরটি শোনার পর।

এলাকার প্রায় সবাই জড়ো হয়েছে আজ টিয়াদের বাড়িতে। শাওন, মৌমি, মৌমির বাবা-মাও এসেছে সাথে।
কাফনের কাপড় গায়ে জড়ানো, টিয়া চির নিদ্রা দিয়েছে। বস্তির রুম থেকে ভেসে আসা গোঙানির শব্দ একজন বুড়ো লোকের কান অব্দি পৌঁছায়। তিনি ভয় পান।

আরো অনেককে নিয়ে আসেন। সবাই রুমের সামনে জড়ো হলেও কেউ ভেতরে ঢোকার সাহস পায়নি। কেননা এই বাসার ছেলেটা রাজনীতি করে। ভীষণ ডেঞ্জারাস। তাই তারা একজোট হয়ে থানায় যায় আর পুলিশে খবর দেয়।

পুলিশ এসে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকলে টিয়ার গলা কাটা লাশ আর সাথে হাবিব কে পায়। হাবিব ব্যাগ গুছাচ্ছিল। আর একটু দেড়ি হলে হাবিবকেও পাওয়া যেত না। খোঁজ লাগিয়ে জানা যায়, টিয়া এই গ্রামের মেয়ে। তাই বেলা বারোটার দিকে টিয়ার লাশ নিয়ে হাজির হয় পুলিশ।
অতি কষ্টে মানুষের চোখ ভেঙ্গে পানি আসে না।

সে পাথর হয়ে যায়। তার সমস্ত কিছু থমকে যায় এক ঝটকায়। শাওনের অবস্থা ঠিক তাই। চেয়েও কাঁদতে পারছে না সে। বরফের মতো শক্ত হয়ে আছে হৃদয় টা। জমে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ।

মৌমির চোখের পাতা ভিজে জুবুথুবু। কেউ কি কোনোদিন কল্পনা করেছিল এরকম টা হবে? টিয়ার সঙ্গে? কেন টিয়া.. কেন কাউকে কিছু না বলে চলে গেলি।

কেন নিজের জীবন নিজেই শেষ করলি। মৌমি বিড়বিড় করে, আমাকে অন্তত একবার বলতি। আমি তো তোর খারাপ চাইতাম না।
তদন্ত হয়। হাবিব জানায়, টিয়াকে ধর্ষণ করার পরিকল্পনা তার ছিল।

কিন্তু এসবের ব্যাপারে টিয়ার বান্ধুবী মৌমিও সব জানত। সে~ই নাকি টিয়াকে আরো উসকে দিয়েছে এই সম্পর্ক করার জন্য। বাড়ি ছেড়ে পালানোর জন্য। পুলিশ আসে মৌমিদের বাড়ি। মৌমির নামে ওয়ারেন্ট বেরিয়েছে।

তাকে গ্রেফতার করতে হবে। মৌমি সহ সবার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। মৌমির বাবা রাগে, ক্ষোভে, জিদে, পুলিশের সামনেই পেটাতে শুরু করেন। মৌমি কাঁদতে কাঁদতে বলে, বাবা, বিশ্বাস করো।

আমি কিচ্ছু জানতাম না। বিশ্বাস করো বাবা।
তিনি বিশ্বাস করলেন না। মৌমি শাওন কে উদ্দেশ্য করে বলে, ভাইয়া আমি কিচ্ছু জানতাম না। তোমার খারাপ কেন চাইব আমি? ও ভাইয়া.. বাবাকে বোঝাও।

বিশ্বাস করো ভাইয়া। আমি কিচ্ছু জানিনা।
শাওন অবিশ্বাস্য চোখেই তাকিয়ে ছিল মৌমির দিকে। কিন্তু তার মুখ বলেছিল, তুই আমার বোন না। আমাকে ভাই বলে ডাকবি না কোনোদিন।

মৌমির এত আহাজারি, কেউ শুনেও শোনেনি। কেউ বিশ্বাস করেনি তার কথা। পুলিশ রা তাকে ধরে নিয়ে যায়।

এক মাস হাজতে থেকে, বের হয় সে। মাজেরা বেগমের পীড়াপীড়িতে মৌমির বাবা মৌমির জামিনের ব্যবস্থা করেছিলেন। আর ওর বিরুদ্ধে শক্তপোক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি কোনো।

এরপরের দিন গুলো ভয়াবহ ছিল। মৌমি দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, নিজেকে অন্ধকার রুমে আটকে রাখত। ঠিক মতো খেত না। রুম ছেড়ে বাহির হত না। মাজেরা বেগম শত হলেও মা।

এই দৃশ্য সইতে পারতেন না। এইজন্যেই মৌমির বিয়ে ঠিক করে পরশের সাথে। এতে মৌমির বাবাও সায় দিয়েছিলেন। তবে শাওন ভাল মন্দ কিছুই বলেনি। সে সত্যি সত্যি মৌমিকে বোন হিসেবে মানা বন্ধ করে দিয়েছিল।

জেল থেকে আসার পর অনেক চেষ্টা করেও নীলের সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি মৌমি। টিয়াদের বাড়িতে পা দিতেও বুক কেঁপে উঠেছিল ভয়ে। যদি তারা কিছু বলে, রিয়াক্ট করে! রিয়াক্ট করারই কথা। যেখানে নিজের বাবা মা ভাই বিশ্বাস করেনি মৌমির কথা সেখানে অন্যরা কিভাবে করবে?

তার কাছে যে ফোনটা ছিল সেটাও জেল থেকে আসার পর পাচ্ছে না। হয়ত ঘর গুছাতে গিয়ে কারো চোখে বিধায় সেটা ফালিয়ে দিয়েছে নয়ত নিয়েছে গেছে। কিন্তু বিয়ে ঠিক হওয়ার খবর শোনামাত্র মৌমির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। সে গর্ভবতী।

তার পেটে যে নীলের সন্তান! আজ আড়াই মাস, মাসিক হচ্ছে না। জীবনে উড়ে আসা ঝামেলার জন্য সে এসব খেয়ালই করেনি এতদিন।

কিন্তু এখন যে টনক নড়লো..
যেদিন ছেলেরা পক্ষ থেকে দেখতে আসবে, তার আগের রাতে, মৌমি চুপেচাপে নিজের রুমের জানালা দিয়ে বেরিয়ে আসে। নীলের রুমটা দোতালায়। মৌমি নীলদের বাড়ির পাইপ ধরে ধরে উপরে উঠে। বাড়িতে ঢোকার সাহস তার নেই। নীল উবু হয়ে শুয়ে ছিল। হাতে তার টিয়ার বাধানো ছবি।

একমাত্র ভালোবাসার বোনটার এমন করূন পরিণতি নীল এখনো মেনে নিতে পারছে না। বাড়ির সবাই মোটামুটি স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলেও নীল মোটেও স্বাভাবিক হতে পারছে না। সব ভুলতে পারছে না। চোখ বুজলেই টিয়ার মৃত, প্রাণহীন মুখ খানা ভেসে উঠছে চোখের পাতায়।

এমন সময় জানালা দিয়ে ধপাশ করে কিছু একটা পড়ার শব্দ পেয়ে নীল চমকে উঠে। পেছন ঘুরে তাকিয়ে মৌমিকে দেখামাত্র তার চক্ষু চড়কগাছ। ধড়ফড়িয়ে বিছানা ছেড়ে নামতে নামতে নীল বলল, তুমি?

মৌমি একছুটে নীলের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। কত্তদিন পর… কত্তদিন পর চিরচেনা মুখটা চোখের সামনে। মৌমির চোখ পেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে। নীল আবার জিজ্ঞেস করলো, তুমি এখানে কেন?

মৌমি কাঁদছে। তবুও শান্ত স্বরে বলল, কাল ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে আমায়। শুনেছি কালকেই আংটি পড়িয়ে রেখে যাবে।
নীল ভ্রু কুঞ্চিত করে বলে, তো?
মৌমি অবাক হয়।

~ তো মানে? তুমি আমাকে নিয়ে পালাও নীল। আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে সবাই মিলে।

নীল যেনো মজাদার কোনো কৌতুক শুনলো। ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো সে।
~ পালাব? তোমায় নিয়ে?
~ হ্যাঁ।

~ জেল খেটে মাথার তার কি ছিঁড়ে গেছে সব? যে আমার বোনের এতবড় সর্বনাশ করলো, তাকে নিয়ে পালাব আমি?
মৌমি সেকেন্ড দুই চুপ থেকে, আচমকা নীলের পা জড়িয়ে ধরে। কাঁদতে কাঁদতে বলে, বিশ্বাস করো।

আমি কিচ্ছু জানতাম না। ওই খুনী আমাকে ফাসানোর জন্য এসব মিথ্যা বলছে। টিয়ার থেকে ও আগেই জেনে নিয়েছিল আমার কথা। কিন্তু টিয়া আমাকে কখনো ওর কথা বলেনি। যদি বলত আমি কি ওকে যেতে দিতাম? ও আমার বেস্টফ্রেন্ড ছিল নীল।

নীল পা ঝাড়া মেরে মৌমিকে ছিটকে দূরে সরিয়ে দেয়। বলে, স্টপ ইউর ননসেন্স ড্রামা! তুমি আমাকে বলবা আর বিশ্বাস করে নেব? গাধা, বলদ পাইছ আমাকে?

মৌমি আবার আসে। নীলের পা জড়িয়ে ধরে। বলে, তোমাকে ছুঁয়ে বলছি। বিশ্বাস করো একবার আমার কথা।
~ প্লিজ, সরো বলছি। তোমার ফালতু প্যাঁচাল আমার ভাল লাগছে না। বাসায় যাও।
মৌমি পা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।

~ বাসায় গেলে আমাকে আর কক্ষনো পাবে না নীল।
নীল গাঢ় দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। সময় নিয়ে বলে, শোনো মৌমি… সরি টু সে বাট.. আমি তোমাকে আর চাইনা।

আমার মনে তোমার জন্য যে ভালবাসা ছিল তার থেকেও বেশি ঘৃণা জন্মেছে এখন। সো প্লিজ.. আমাকে নিয়ে আর ভেবো না। আমার লাইফে আর ইন্টারফেরার করো না। নিজের লাইফ নিয়ে নিজে বাঁচো।

মৌমি স্তব্ধ হয়ে গেল। কি বলছে এসব নীল? নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না তার। ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে, অবিশ্বাস্য সুরে বলে, এসব কি বলছ?
~ ঠিক বলছি।

~ নী..
~ ভাইয়া বলে ডাকবা। নট নীল।
মৌমির চোখ বেয়ে পানি ঝরে পড়ে।

নীলের দৃষ্টি অস্থির। কিন্তু মৌমি নীলের দিকেই তাকিয়ে আছে। ক্ষণকাল কাটে। মৌমির গলা বসে এসেছে। সেই বসা গলাতেই বলল, এতবড় শাস্তি দিও না। আমি কিচ্ছু করিনি।

নীল বিরক্ত হলো। কপাল, ভ্রু কুঁচকে আসে তার। বলে, জানিনা কি করছ আর কি করোনাই। কিন্তু সত্যি বলছি আমি।

আমার আর তোমার মাঝে যা ছিল সব ভুলে যাও। আমাদের মাঝে কিচ্ছু হওয়া সম্ভব না আর। কিচ্ছু না..
~ আর আমার পেটে যে আছে, সে?

নীল চকিতে মৌমির পেটের দিকে তাকায়। মৌমি আবার বলল, এখানে যে তোমার সন্তান। তার কি হবে নীল? তাকেও ভুলে যাব?
নীল অনেকক্ষণ যাবত কথা বলতে পারল না।

আফসোস হচ্ছে তার। কেন মাস তিনেক আগে, এক সোনালি বিকেলে, নিজেরই ঘরে, সুযোগ পেয়ে মৌমিকে কাছে টেনে নিয়েছিল সে! আফসোস হচ্ছে, প্রচুর আফসোস হচ্ছে। মৌমি নীলের হাতজোড়া শক্ত করে চেঁপে ধরে।

~ মরে যাব। বিশ্বাস করো। মরে যাব আমি। এত বড় শাস্তি দিও না গো.. দিও না। পায়ে পড়ি তোমার। একটু দয়া করো। একটু দয়া করো।

নীল হাত ছাড়িয়ে নেয়। আফসোস মিশ্রিত দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে আসে তার বুক চিঁড়ে। বিছানার তল থেকে মানিব্যাগ বের করে। দুইটা এক হাজার টাকার নোট বের করে মৌমির হাতের মুঠে গুঁজে দেয়। রয়ে সয়ে বলল, এবোরশনের ব্যবস্থা করো।

বাকি যা লাগে, আমি দিব।
মৌমির মাথা চক্রাকারে ঘুরতে শুরু করলো এবার। নিজেকে সামলাতে না পেরে ভার ছেড়ে দিল নীলের উপরে। নীল ঝাপটে ধরলো দুহাতে মৌমিকে।

মিনিট পাঁচেক নীলের বুকের মাঝেই থম মেরে থাকে মৌমি। ধীরে ধীরে চোখ মেলে। নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় নীলের থেকে। বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। ভেতর থেকে ঠেলে কান্নারা আসতে চাইছে।

মৌমি হাতের মুঠে থাকা টাকাগুলো নীলের দিকে এগিয়ে দেয়। কিচ্ছুটি না বলে জানালার দিকে আগায়। নীল প্রশ্ন করে, কি? টাকা টা নাও।

মৌমি থামে। পেছন ফিরে তাকায়। ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুঁটিয়ে বলে, ভাল থেকো।

যেভাবে জানালা বেয়ে এসেছিল, সেভাবেই চলে যায় মৌমি। ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিল এই ভেবে, হয়ত শেষ মুহূর্তটায় নীল সব ভুলে মেনে নিবে তাকে। হয়ত বাচ্চাটার জন্য হলেও নীলকে আবার ফিরে পাবে সে। কিন্তু বাড়ি ফিরে গেল একটা ভাঙ্গা হৃদয় নিয়ে। টুকরো টুকরো হওয়া স্বপ্ন নিয়ে…..

(বর্তমান)

নীলের জীবন বিষাক্ততায় ভরে উঠেছে। রিমঝিম কোমা থেকে ফিরলেও, ফিরে এসেছে পঙ্গু হয়ে। এই পঙ্গু মেয়েকে কে বিয়ে করবে? হাটতে পারেনা, চলতে পারেনা।

শুধু বসে থাকে, কথা বলে। তাই রিমঝিমের বাবা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী নীলের বাবার কাছে প্রস্তাব দেন। নীলের সাথে রিমঝিমের বিয়ে! নীলের বাবা কিছুতেই যখন মানছিলেন না, তখন রিমঝিমের বাবা বলেছিলেন, আপনি না এক কথার মানুষ?

কি কথা দিয়েছিলেন আমাকে? ভুলে গেছেন?
নিজের আদর্শ, নৈতিকতা, ইজ্জত, বাঁচিয়ে রাখতেই শেষমেশ নীলের সাথে রিমঝিমের বিয়ে দেন।

নীলও নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্যেই এই বিয়েতে রাজী হয়েছিল। তার জীবন এখন দুর্বিষহ, বিষে জর্জরিত। মাঝে মাঝে আফসোস হয় তার।

এর চেয়ে মৌমিকে নিয়ে পালিয়ে গেলেও বোধহয় ভাল হতো! করার নেই কিছু। সারাজীবন এই অভিশপ্ত জীবন বয়েই বেড়াতে হবে।

মৌমি ভালো আছে হিয়াকে নিয়ে। পরশের মৃত্যুর পর তাকে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে বিতাড়িত করা হয়। কিন্তু পরশের রেখে যাওয়া টাকা দিয়ে একটা বুটিক শপ দেয় মৌমি।

মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করায়। স্কুল, মেয়ে, শপ, সংসার.. . সময় কেটে যায় হাসি মজায়।

তবুও কোথাও কি যেন নেই! সব থেকেও নেই নেই অনুভূতি বুকের একদম মাঝটায়।

তার জীবনের গল্পটি যে এভাবে অসমাপ্তই থেকে যাবে, কোনোদিন ভাবেনি সে…

লেখা – মাজফুজা মনিরা

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – গল্পটি অসমাপ্ত (১ম খণ্ড) – নতুন প্রেমের উপন্যাস

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *