অসহায় ভালোবাসা

অসহায় ভালোবাসা – অসামাজিক ভালবাসার গল্প | Sad Love Story

অসহায় ভালোবাসা – অসামাজিক ভালবাসার গল্প: সমাজ বড়ই অসভুদ, না বোঝে মানব মন না বোঝে শরীরের হরমোন। একটু এদিক সেদিক হলে অপবাদ, অভিশাপ দেয়। ভাল মন্দ বিচার করে অন্ধ ভাবে, নিজের হলে ঠিক আছে, অন্যের হলেই ভুল। শরীরের অক্ষমতা আর অস্বাভাবিক কিছুকে পাপ বলে, অথচ সেখানে কারো হাত নেই, যাই হোক এরকম অসামাজিক ভালবাসার গল্প আজ আপনাদের বলব। অসহায়ত্বের গল্প!

দ্বিতীয় প্রেম

একবার প্রেমে পড়া সত্ত্বেও একই সাথে দ্বিতীয় প্রেমে পড়লে নাকি দ্বিতীয়জনকেই বেছে নিতে হয়। কারণ হচ্ছে প্রথমজনকে আসলেই ভালোবাসলে নাকি দ্বিতীয়জনের প্রেমে পড়া যায় না। কিন্তু আমি পুরোপুরি শিওর আমি জেরিন এবং সুপ্তি দুইজনকেই সমানভাবে ভালোবাসি। একই ঘনত্বের প্রেমের সাগরে সমান হারে হাবুডুবু খাচ্ছি। তবে আমার ধারনার এটা রীতিমতো মহাসাগর। এমন দুইটা মেয়ের জন্য পাগল না হলে পাগলসমাজের অপমান করা হবে।

সুপ্তির যেন চুল থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে নীচের দিকে রূপ ঝরে পড়ছে। আর ‘জেরিন’ যেন সুপ্তির গড়িয়ে পড়া সেই রূপের নাম। ওদের চুল বাতাসে উড়লে মনে হয় আকাশ দিয়ে উটপাখি সাইজের ময়ূর উড়ে যাচ্ছে। জেরিনের গালে টোল পড়লে মনে হয় বসন্তের প্রথম ফুলটা ফুটতে যাচ্ছে। সুপ্তিরর অবশ্য টোল নেই।কিন্তু মনে হচ্ছে টোল ছাড়াই সে অসম্ভব সুন্দরী। টোল থাকলে বোধহয় তা বেমানানই হতো। তাদের যতবার দেখি আমার চোখের পাওয়ার যেন একটু করে বেড়ে যায়।প্রত্যেকবারই স্পষ্টভাবে নতুন কিছু দেখি।

আজ দিনের শুরু থেকে আমি আনন্দে প্রায় মরে যাচ্ছিলাম। মরে যেতামই। তবে লাস্টে মনে হলো মারা যাওয়া উচিত হবে না। জেরিন আর সুপ্তিকে আমার কেয়ামতের আগেই পেতে হবে। আজ পাওয়ার উদ্দেশ্যেই রওনা দিচ্ছি। আজ তাদের সবকিছুই বলে দিতে হবে। সুপ্তির বাসা যেহেতু বাসার পাশেই তাই তার কাছেই প্রথমে যাওয়া যায়। এরপর জেরিনের পালা। কাঁপা কাঁপা পায়ে সিড়ি দিয়ে নেমে পড়লাম দ্রুত। রাস্তায় নামতেই আমি হতভম্ব! অন্ধকার রাস্তার জন্য টর্চ খুঁজছিলাম,আর এখন পুরো রাস্তাটাই টর্চ হয়ে গেলো দেখছি!

“সু সু সুপ্তি!”
“হাই রাফিউ।”
“যাচ্ছিলে কো কোথায়?”
“তোমার বাসায়ই তো যাচ্ছিলাম।”
“ঠিক শুনতে পাইনিম। আমার বোধহয় চোখের পাওয়ার বেড়ে কানের পাওয়ার কমে গেছে।”
“কি বলছো এসব! কানের পাওয়ার কমবে কেন? গান শুনো জোরে? আর শুনবা না।”
“আ আ আ আচ্ছা।”
“তোতলানোর কিছু নেই। স্বাভাবিক হও। তুমি তো তোতলা না।”
“হ্যা হ্যাঁ। শু শু শুনো সুপ্তি।”
“বলে ফেলো। আর তুমি বারবার তোতলাচ্ছো কেন?”
“আমি একটা কথা অনেকদিন ধরেই তোমাকে বলতে চাচ্ছিলাম। তবে পা পা পারি নি। আজ আমাকে বলতেই হবে। এটাই আমার তোতলামির মহা কা কা কারণ।
” আমি জানি রাফিউ। তুমি যখন থেকেই আমার দ্বোতলা বারান্দায় ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে তখনই বুঝতে পেরেছিলাম সব। আমার লাল শাড়িটা তোমাকে অভিভূত করে রাখতো।”

প্রপোজ ভালবাসা

সুপ্তির কথা শুনে চোখে পানি এসে গেলো। কিন্তু চশমার জন্য হয়তো সে তা দেখতে পায়নি। আমার ভাগ্য খারাপ এই ধারনা দেখছি সম্পূর্ণ ভুল ছিল। খুশিতে যারা কাঁদে তাদের ভাগ্য খারাপ হয়না। আমি এই মেয়েকে সত্যিই ভালোবাসি। অনেক বেশি ভালোবাসি। এবং এখন মনে হচ্ছে আমি শুধু একেই একমাত্র ভালোবাসি। তাহলে দেখছি দ্বিতীয়জনকে বেছে নেওয়ার নিয়মটাই সত্য!

“হ্যাঁ সুপ্তি! আমি সত্যিই তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসি।”
“জানি রাফিউ। আমি তো সেই বিষয় নিয়ে কথা বলতেই তো তোমার বাসায় যাচ্ছিলাম।”
“তারমানে তুমিও আমাকে…?”
“না রাফিউ।”
“না মানে! কি বলতে চাচ্ছো তুমি আসলে?”
“বলতে চাচ্ছি আমি তোমাকে ভালোবাসি না। এটাই বলতে তোমার বাসায় যাচ্ছিলাম। আর আমার দ্বারা কখনো তোমাকে ভালোবাসা সম্ভবও না। আমি রিলেশনে আছি গত তিন বছর।”

সুপ্তির কথা শুনে আবারো চোখে জল এসে গেলো। আমার ভাগ্য আসলেই খারাপ। তবে বেশি যে একটা খারাপ বলে মনে হচ্ছে না। আরেকটা অপশন তো এখনো আমার কাছে রয়েই গেলো। সেটা হচ্ছে জেরিন। একটা নিয়েই নাহয় খুশি থাকি। সব নিয়ম কানুন ভেঙ্গে তাহলে প্রথমজনের কাছেই ফিরে যেতে হচ্ছে।

অসহায় ভালোবাসা

কিন্তু বিদায় নেওয়ার আগে অবশ্য একবার জানা দরকার কে সে সুপ্তির সৌভাগ্যবান রাজকুমার। রাস্তায় পেলে একটা ঢিল হলেও তাকে মারা লাগবে। প্রেম করবা কিন্তু কষ্ট করবা না, তা তো হবেনা।

“আচ্ছা সুপ্তি। তাহলে কি আর করার। আসি তাহলে আসি।”
“ঠিক আছে রাফিউ। গুডবাই।”
“আচ্ছা একবার বলোতো, কে তোমার সেই বিএফ! যাকে তিনবছর ধরে ভালোবেসে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছো।”
“কি বলো! আমার তো কোনো বিএফ নেই!”
“তারমানে সুপ্তি; তুমি আমার সাথে মজা করলে এতক্ষণ? হাহাহা। আমি কি বোকা! আমি জানতাম তুমিও আমাকে ভালোবাসো সুপ্তি। আমি ঠিকই জানতাম।আসলে…”
“না রাফিউ। এমন কিছু না। আমি সত্যিই রিলেশনে আছি এবং তিন বছর ধরেই আছি। আমার জিএফের নাম ‘জেরিন’। মেয়েটা খুবই সুন্দর। অনেক বেশি সুন্দর। তার গালে টোল পড়লে মনে হয় যেন বসন্তের প্রথম ফুলটা ফুটেছে।”

সুপ্তির কথা শুনে আমি থ মেরে রইলাম কিছুক্ষণ, মেয়ে হয়ে কিনা আরেক মেয়েকে ভালবাসে? লেসবি মেয়ে? কার সাথে এতদিন কথা বললাম আমি। তবে কিছুক্ষণ পর মনে হল এখানে সুপ্তির তো দোষ নেই, তার শারীরিক হরমোনাল ব্যাপার এটা, যেটাতে তার নিয়ন্ত্রণ নেই।

কিন্তু সুপ্তির এই ভালবাসা তো সমাজ মেনে নিবে না, তার এই অজানা, ন বলা ভালবাসা নিরবে থেকে যাবে। হয়তো একদিন তাকে অন্য সব মেয়েদের মত কোন ছেলেকে জোর করে বিয়ে করে সংসার করার অভিনয় করতে হবে। তিলে তিলে জীবনটা নষ্ট হবে মেয়েটার।
অবশেষে আমি উপলদ্ধি করলাম- আমার তো কোন ক্ষতি হয় নি, আমি কেন মন খারাপ করছি, ক্ষতি যা হবার তা তো এই অসহায় মেয়েটার হবে।

আরো পড়ুন- প্রেমের কষ্টের গল্প – এক্সের উপর চরম প্রতিশোধ – প্রেমে ছ্যাকা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *