নাট্যকার বান্ধবী – প্রেমের নাটকীয় সম্পর্ক

নাট্যকার বান্ধবী – প্রেমের নাটকীয় সম্পর্ক: শিহাব আমার হাত আরো শক্ত করে ধরে রইলো আর বলতে লাগলো- “এতো রাগছো কেন সুহি? আমি তোমাকে ভালোবাসি আর তুমিও আমায় মনে মনে ভালোবাসো হিমা আমাকে বলেছে। আজকে তোমার বান্ধবী আমাদের মিল করিয়ে দিবে বলেছে। তাই আমি প্রপোজ করতে এসেছি।”


পর্ব ১

আমার হাত ধরে টানতে টানতে হিমা নাটকীয় ভঙ্গিতে বললো- “দোস্ত বাইরে চল, সবাই বাইরে খেলা দেখছে আর তুই কমনরুমে বসে গল্প পড়ছিস। বাইরে গিয়ে দেখ ছেলেরা কি সুন্দর ভলিবল খেলছে।”
আমি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম- “ছেলেরা ভলিবল খেলছে তো আমি কি করবো?”

  • “আরে পাগলি,আরো কিছু ছেলেরা কলেজের ছাদের উপর থেকে কমনরুমের করডিরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েদের সাথে ভেলকি মারছে।”
  • “তো কি হয়েছে?”
  • “সেখানে জিহান ও আছে,আর তুলির সাথে ভাব মারছে ছেলেটি কত্ত বড় বজ্জাত দেখেছিস?”
  • “জিহান কে?”ভ্রুঁ নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
  • “আমাদের ক্লাসের একটা ছেলে যে আমাকে প্রপোজ করেছিল। তুই নিজের ক্লাসের ছেলেদের ও চিনিস না কুত্তি?”
    আমি মুচকি হেসে বললাম- “চিনবো কি করে এতোগুলো ছেলের কথা কি মনে থাকে নাকি? এখন বল তোর জিহান কি করেছে?”
  • “ছেলেটিকে তো ফিরিয়ে দিয়েছিলাম তাই বলে এখন আমাকে দেখিয়ে তুলির সাথে ভাব মারছে,খুব রাগ পাচ্ছে আমার।”

আমি ওর কথায় হো হো করে হেসে উঠলাম আর বললাম- “তুই কি ওকে ভালোবাসিস যে তোর এতো হিংসা হচ্ছে। আর তুই বেচারাকে ফিরিয়ে দিলি তাই এখন অন্য পথ খুঁজে নিয়েছে।”

  • “তুই তো জানিস আমাকে যে ভালোবাসে সে অন্য কারো দিকে তাকালে আমার পিত্তি জ্বলে। আমি তো ওকে ভালো ভেবেছিলাম এখন দেখি আস্ত বজ্জাত।”
  • “কেন বেচারা তুলির সাথে ভাব মারলে তোর কি সমস্যা?”
  • “কেন মারবে? তুই এখন চল আমি ওকে গিয়ে প্রপোজ করবো তারপর প্রতিশোধ নিবো।”
  • “কিভাবে? “আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম হিমার দিকে।
  • “এমন ভালোবাসা দেখাবো যে,ছেলেটা আমার জন্য পাগল হয়ে যাবে।”
  • “এখন কি করবি?”
  • “এখন যেভাবেই হোক তুই ছেলেটির সাথে আমার প্রেম করাইয়া দে তারপর তোর জন্য দারুন উপহার আছে?”
  • “কি উপহার আগে বল?”
  • “তোর প্রিয় উপহার যেটা সেটাই দিবো।”

কাজটা কঠিন ছিল আমার জন্য তারপরও আমি হিমার কথায় রাজি হলাম আর এই মেয়েটি খুব জেদি যা বলবে তা করতেই হবে। নইলে সারাজীবন এটা মাথায় নিয়ে বসে থাকবে। আমি ওর সাথে বাইরে গেলাম। গিয়ে দেখি জিহান নামের ছেলেটি তুলির সাথে সত্যি সত্যি ভাব মারছে। এটা দেখে আমারও খুব খারাপ লাগলো। মনে মনে বললাম- ‘শালা ফাজিল আমার বান্ধবীকে ঠকিয়ে অন্য একটি মেয়ের সাথে ভাব মারা হচ্ছে। একটু অপেক্ষা করে দেখতে পারলি না তোকে গ্রহণ করে কি না। সেটা না করে দুদিন যেতেই আরেক মেয়ের সাথে ভেলকিবাজি। এটাকে মজা না দেখালে হবে না।

*আমি হিমাকে নিয়ে আমাদের ক্লাসের করিডরের দিকে রওয়ানা হলাম। একটু ভয় ও লাগছিল। কিভাবে কি বলবো জিহানকে, আগে থেকে ঠিক করে এসেছি। কিন্তু এখন কি হিমাকে মেনে নিবে ছেলেটি নাকি তুলিকে প্রপোজ করার ধান্ধায় আছে? এসবের উত্তর তো কাছে গেলেই পাবো। ক্লাসের দরজার পাশে মিহিরকে পেলাম আর বললাম জিহানকে ডেকে নিয়ে আসতে।

কিছুক্ষণপর মিহির জিহানকে নিয়ে এলো। আমি খুকখুক করে কেশে গলাটা পরিষ্কার করলাম। একটু লজ্জা ও করছিল কারণ এদের সাথে বেশি কথা হয় না। পরিস্থিতি শান্ত কেউ কোন কথা বলছে না। আমি হিমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলাম কিছু বলতে। একি হিমা হাসছে আর জিহানের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। জিহান ও তাকিয়ে আছে ওর দিকে। মনে হচ্ছে ওদের অনেকদিন ধরেই প্রেম চলছে।

  • “আই লাভ ইউ জিহান। “আগে পিছে কিছু না বলে সরাসরি একথা বলে ফেললো হিমা।
  • “টু ইউ বেবি।” ওর কথার ঝটপট উত্তর করলো জিহান। আমি ওদের কান্ড দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছি। তারপর জিহান বললো- “আমাদের তো প্রেম হয়ে গেছে,এখন তোমার বান্ধবীরটা করিয়ে দেই। আমি ওর কথার মানে বোঝার আগেই সিড়ির দিকে তাকিয়ে চাশমিশ বলে চিৎকার দিলো জিহান। সাথে সাথে কলেজের সিড়ি বেয়ে চশমা পরা শিহাব নামের ছেলেটি নেমে এলো।

ছেলেটি আমাদের ক্লাসের ই কিন্তু ওর সাথে আমার সাপে- নেউলে বিবাদ। প্রায় সময় ওর সাথে আমার ঝগড়া লেগে যায় যেকোনো বিষয় নিয়ে। আমি হিমার সাথে ওর বিরুদ্ধে অনেক বকবক করি। ছেলেটি সবসময় আমাকে বিরক্ত করে আর আমার দিকে তাকায় যেসব নিয়ে অনেক কথা কাটাকাটি হয় আমাদের। হিমা অনেকদিন ধরে আমাকে জিজ্ঞেস করে ছেলেটাকে আমার কেমন লাগে?

আমি সোজাসাপটা জবাব দেই একটুও ভালো লাগে না। কারণ শিহাবের সাথে আমার মতের মিল থাকে না। কিন্তু আমি এখন ভেবে পাচ্ছি না জিহান আর হিমার মধ্যে চশমাওয়ালা শিহাবকে আনা হলো কেন?

  • “শিহাবকে কেন ডেকে আনলাম জানিস সুহি?”হিমা মুচকি হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো আমায়।

আমি ওর প্রশ্নে আমতা আমতা করে বলতে লাগলাম- “কে- কে- কেন?”

  • “আরে পাগলি তোর না শিহাবকে অনেক ভালো লাগে সেটা বলে দে সামনাসামনি। “হেসে হেসে বললো হিমা।
    ওর কথা শুনে আমি একদম থ হয়ে গেলাম। খুব রাগ পাচ্ছিলো আমার। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,
  • “কি বলতে চাচ্ছিস তুই? কবে বললাম আমি এসব?”

হিমা আমার একটা হাত ধরতে ধরতে বললো- “শিহাব তোকে ভালোবাসে সেটা আমাকে জিহান বলেছে। আর তুই তো আমাকে ওর কথা প্রায়ই বলিস। তাই আমি বোঝে গেছি তুইও শিহাবকে ভালোবাসিস। জিহান আর আমার কয়েকদিন ধরে ই প্রেম চলছে সেটা তোকে লুকিয়েছি সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য। কারণ এরকম একটা নাটক দেখেছি নায়িকা তার বান্ধবীকে সারপ্রাইজ দেয় তারপর বান্ধবীর প্রেমে সাহায্য করে,যেমনটা আমি তোকে করছি। এখন বলে দাও তোমাদের মনের কথা।”


পর্ব ২

আমি হিমার সমস্ত কাহিনী শুনে কথা বলার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছি। কোনো দিনই ওর কাছে শিহাবের সুনাম করিনি। বরং সবসময় ওর বিরুদ্ধেই কথা বলেছি। কিন্তু বুঝলাম না এটাকে ভালোবাসা ভেবে এতদূর গড়িয়ে ফেললো কেন আমার সবজান্তা বান্ধবীটি।

আমি নিজেকে শান্ত রেখে বললাম- “এসব তুই কি বলছিস,আমি কি কখনো বলেছি শিহাবকে ভালোবাসি?”

হিমা হাসি মুখে বলতে লাগলো- “আরে সুহি,তুই আমার প্রিয় বান্ধবী আর আমি তোর মনের কথা বুঝবো না? তুই সবসময় শিহাবের বিরুদ্ধেই কথা বলেছিস ঠিকই। তোদের মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকে সারাক্ষণ। ঠিক এরকম আমি একটা হিন্দি নাটকে দেখেছি যেখানে নায়িকাও নায়কের মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকতো, একে অপরের বিরুদ্ধে কথা বলতো আর মনে মনে প্রেমে হাবুডুবু খেতো। তাই আমি বোঝে গেছি তুই ও লজ্জায় শিহাবকে কিছু বলতে পারছিস না।”

হিমার কথাগুলো আমার কানে বিষের মতো লাগলো। বাস্তবতাকে সিরিয়াল- নাটকের সাথে মিলাচ্ছে। যাকে আমি অপছন্দ করি তাঁকে কিভাবে ভালোবাসি।
এদিকে জিহান আর শিহাব ও দাঁড়িয়ে আছে কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।

জিহান এবার মুখ খুললো- “শিহাব বলে দে সুহিকে যা বলার।” জিহানের কথায় তাল মিলিয়ে হিমা ও বললো – “হ্যাঁ হ্যাঁ বলে দে মেয়েরা একটু লাজুক তাই আগ বাড়িয়ে কিছু বলে না।”

আমি ওদের অবস্থা দেখে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে যেই মাত্র কমন রুমের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবো বলে ঘাড় ঘুরিয়েছি ঠিক তখন আমার পিছন দিকে হিজাব ধরে কে যেন টান মারলো আর আমি তাল সামলাতে না পেরে কিছু একটার উপরে গিয়ে পড়লাম। পড়ে গিয়ে আমার চোখ বন্ধ হয়ে গেছিল। চোখ খুলে দেখি আমি শিহাবের উপর। ছেলেটি আমাকে এমনভাবে ধরেছে যেন সে আগে থেকে প্রস্তুত ছিল।

আমি দুহাতে ওর কাঁধ দুটি ঝাপটে ধরে আছি। ব্যাপারটি কেমন যেন নাটকীয়ভাবে ঘটে গেলো। তারমানে কেউ আমায় টান মেরে শিহাবের উপর ফেলে দিয়েছে। রাগে আমার পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। আমি শিহাবের উপর থেকে ঝটকা মেরে সরে আসলাম। তারপরর ওর দিকে থাপ্পড় মারার জন্য একটা হাত বাড়ালাম। কিন্তু মারার আগেই শিহাব নাটকীয় ভঙ্গিতে আমার হাত ধরে ফেললো। আমি তখন হাত ছাড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছি।

শিহাব আমার হাত আরো শক্ত করে ধরে রইলো আর বলতে লাগলো- “এতো রাগছো কেন সুহি? আমি তোমাকে ভালোবাসি আর তুমিও আমায় মনে মনে ভালোবাসো হিমা আমাকে বলেছে। আজকে তোমার বান্ধবী আমাদের মিল করিয়ে দিবে বলেছে। তাই আমি প্রপোজ করতে এসেছি।”

আমি ওর কথায় রেগে কটমট করে বললাম- “শিহাব আমার হাত ছাড়,এখানে কোনো ড্রামা চলছে না যে তুই যা- ইচ্ছে তা বলবি। একথা বলেই আবার কমন রুমের উদ্দেশ্যে পা ফেললাম কিন্তু যেতে পারলাম না। কারণ করিডরের বাম পাশে হিমা ছিল আর আমি এক- পা এগুতেই সে আমার পায়ের সামনে নিজের একটা পা রেখে দিলো যাতে আমি পড়ে যাই।

সত্যি সত্যি আমি হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাচ্ছি ঠিক তখন শিহাবকে টেনে এন আমার সামনে ফেললো জিহান। শিহাব আমাকে ধরে ফেললো যাতে আমি না পড়ি। আমি রাগে কিড়িমিড়ি করে ওদের দিকে তাকাচ্ছি।

হঠাৎ হিমা বলে উঠলো- “শিহাব স্টার্ট।” ওর কথা শুনে শিহাব হাঁটু গেড়ে আমার সামনে বসলো আর আমার একটি হাত ধরে বলতে লাগলো- “আই লাভ ইউ সুহি।” সাথে সাথে কয়েক জোড়া হাততালির আওয়াজ কানে এলো। হিমা বলে উঠলো- “অসাধারণ নাটক হয়েছে দোস্ত। মাঠের দিকে একবার তাকিয়ে দেখ।”

আমি ওর কথায় কলেজের মাঠের দিকে তাকিয়ে দেখি মিহির আর আবিদ মোবাইল দিয়ে ভিডিও করছে আর অন্যান্য সবাই হাততালি দিচ্ছে। তারমানে এতক্ষণ আমাদের সব কান্ড ওরা সবাই দেখছিল আর ভিডিও করছিলো।

হিমা আবার বলতে লাগলো- “দেখেছিস কি সুন্দর নাটক বানিয়েছি,এরকম একটা নাটক দেখেছিলাম হিন্দি,তাই ভাবলাম তোদের দিয়ে একটা বানিয়ে দেই আর নাট্যকার হয়ে যাই। কিন্তু মূল উদ্দেশ্য ছিল তোর আর শিহাবের মিল করানো। একদিকে নাটক হলো আর অন্য দিকে মিল হয়ে গেলো।”

এসব শুনে বেহুশ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা আমার কিন্তু শালার বেহুশ আর হচ্ছি না। মনে মনে ভাবলাম,তারমানে সমস্ত কাহিনী হিমা সাজিয়েছে নাটক বানানোর জন্য।
আমি হিমার দিকে রাগো মুখ করে তাকালাম আর বললাম- “কাজটা তুই ঠিক করস নি।”
হিমা আমার একটা হাত ধরতে ধরতে বললো- “দোস্ত কমন রুম থেকে শুরু করে ওরা খুব সতর্কতার সাথে ভিডিও করে আসছে, প্লীজ, এবার তুই শিহাবকে লাভ ইউ টু বল,তাহলে খুব সুন্দর নাটক হবে আর তোর মনের কথা ও প্রকাশ পাবে।”

হিমার কথা শুনে আমি বেহুশ হয়ে করিডরে পড়ে গেলাম। আমার চোখ দুটি বুজে আছে কিন্তু ওদের সব কথা শোনা যাচ্ছে কারণ আমার বেহুশ হওয়াটা ছিল হিমার কাছ থেকে বাঁচার জন্য একটা অভিনয় মাত্র। হৈচৈ শুনতে পাচ্ছি মনে হয় আরো অনেকেই জড়ো হয়েছে আমার আশেপাশে। হিমা সবাইকে চুপ রাখছে আর সরিয়ে দিচ্ছে যাতে স্যারদের কানে না যায় ব্যাপারটা।

শিহাব বলছে পানি আনতে কিন্তু হিমা বললো- “পানি লাগবে না ওকে কিভাবে হুশে আনতে হবে সেটা আমি জানি। “আমি মনে মনে ভাবছি এখন কি করবে এই নাট্যকার বান্ধবীটা আল্লাহ্ মালুম। হিমা আমার মাথাটা ওর কোলে ধরে রেখেছে। হঠাৎ আমি শরীরে কিছুটা সুড়সুড়ি অনুভব করলাম। তারপর অনবরত কাতুকুতু দিতে থাকলো হিমা কারণ সে জানে সুড়সুড়ি আমার খুব বড় একটা দুর্বলতা।

আমি নিজেকে সামলাতে না পেরে লাফ মেরে উঠে বসে খিলখিল করে হাসতে লাগলাম। হিমা বলে উঠলো- “ক্যামেরা এ্যাকশন।” আমি হাসতে হাসতে খুন হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। ঠিক তখন শিহাবকে ইশারা করলো হিমা। সাথে সাথে ছেলেটি আমার সামনে এসে দুগালে হাত দিয়ে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো। এদিকে আমার লজ্জা ও করছে কিন্তু হিমার সুড়সুড়ির কারণে হাসি থামাতে পারছি না। খুব কষ্ট করে নিজেকে সামলিয়ে কাতর স্বরে বলতে লাগলাম- “হিমা তোর নাটক সেরা হইছে রে বইন,তুই খুব ভালো নাট্যকার রে বইন,প্লীজ এবার আমায় ছেড়ে দে।”

হিমা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো- “ধন্যবাদ দোস্ত, ছাড়বো তোকে, কিন্তু আরেকটা সিন বাকি আছে। প্লিজ! এটা করেই শেষ আমার নাটক।”
আমি মাথায় হাত দিয়ে বললাম- “হায় খোদা! আরেকটা সিন বাকি,আচ্ছা বল রে বইন এখন কি করতে হবে?”
হিমা নাটকীয় ভঙ্গিতে হাত নাচিয়ে বলতে লাগলো- “এবার তুই আর শিহাব মিলে ঘুরে ঘুরে রোম্যান্টিক নাচ নাচবি, একে অপরকে প্রপোজ করবি তারপর শেষ নাটক।”

আমি হিমার কথা শোনে যেন আকাশ থেকে পড়লাম আর আবার বেহুশের নাটক করে করিডরে পড়ে গেলাম।
চোখ বুজে হিমার কথা শুনছি। হিমা বলছে- “ওয়াও এবার আরো বেশি রোম্যান্টিক সিন হবে। শিহাব তুই এবার তোর কোলে তুলে নে সুহিকে। আর মিহির তুই সুহির কাছে এসে ক্যামেরা এ্যাকশন কর।”


পর্ব ৩ (অন্তিম)

আমি এমন আজব কথা আর সহ্য করতে পারলাম না। মিনমিন করে বললাম- “জিন্দাবাদ নাট্যকার বান্ধবী। “আর সত্যি সত্যি অজ্ঞান হয়ে গেলাম।
তারপর হুশ আসতেই নিজেকে কমন রুমের একটা বেঞ্চে আবিষ্কার করলাম। আমি বেঞ্চে শুয়ে আছি। চোখ পিটপিট করে সামনে তাকিয়ে থমকে গেলাম।

একি কমনরুমে ও শিহাব আমার সামনে বসে আছে। দুগালে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কমনরুমের দরজার দিকে তাকিয়ে পাগলাগারদে যাওয়ার মতো অবস্থা হলো আমার। কারণ এখনো দুজন আমার দিকে ক্যামেরা এ্যাকশন করে রেখেছে। কপালে হাত দিয়ে বলতে লাগলাম “হায় খোদা!বেহুশ হয়েও রক্ষা পাই নি, আমার বান্ধবীর নাটক এখনো শেষ হয় নি।”
আমি যখন বেঞ্চে উঠে বসতে যাচ্ছি ঠিক তখন ‘ক্যামেরা কাট কাট, বলে হিমা একলাফে আমার কাছে এসে আমার দুটি কাঁধ ধরে বলতে লাগলো “আরে কি করছিস, উঠিস না, এখন হসপিটালের সিন চলছে। “

আমি ওর হাত দুটি আমার কাঁধ থেকে সরিয়ে একটু ধমকের সুরে বললাম – “মানে কি? কিসের হসপিটাল আর কিসের সিন?”
হিমা বললো – “আরে আমার নাটকের সিন, এখন তুই মানে নাটকের নায়িকা হসপিটালে এসেছে আর শিহাব মানে নাটকের নায়ক তোর জন্য চিন্তা করছে আর তোর পাশে বসে তোর মুখখানি দেখছে। এখন তুই শুয়ে শুয়ে ওর সাথে কথা বলবি। আর বলতে থাকবি আমি এখানে কি করে এলাম।”

আমি হিমার কথা শুনে হাসবো না কাঁদবো ভেবে পাচ্ছি না। এখন ওর কান্ড নাটক থেকে সিনেমায় যে মোড় নিয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর ওর নাটকের একটা প্রশ্ন বাস্তবেই করার ইচ্ছে হলো আমার।

আমি কিভাবে করিডর থেকে কমনরুমে এলাম সেই প্রশ্ন জানতে চাইলে।
হিমা বললো – “তোকে শিহাব কোলে করে নিয়ে এসেছে। এখন দেখ, নাটকটা অনেক সুন্দর হয়েছে। কমনরুমকে হসপিটাল বানিয়েছি। আর একটা সিন বাকি সেটা তোকে করতেই হবে।”

আমি একথা শুনবো ভাবতে পারি নি। কি লজ্জার কথা! একটা ছেলে আমাকে বেহুশ অবস্থায় কোলে করে নিয়ে এসেছে। হিমাকে থাপ্পর মারতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সবার সামনে এমনটা করা ঠিক হবে না। যতই হোক সে আমার একটা পাগলি বান্ধবী। তবে এমুহূর্তে আমার মন চাইছে জোরে একটা চিৎকার দেই আর অন্য সবাইকে এখান থেকে ভাগিয়ে দেই। কিন্তু ভয় লাগছে এই ভেবে যদি চিৎকারটাকেও নাটকের অংশ বানিয়ে না দেয় আমার নাট্যকার বান্ধবীটি।

পরে ভাবলাম, না চিৎকার দিতেই হবে যা হবার হোক। আমি দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে, দুহাতে নিজের দু কান চেপে ধরে মনের সব জোর দিয়ে সবার উদ্দেশ্যে একটা চিৎকার দিলাম- “জিন্দাবাদ তোমাদের নাটকের,এবার ভাগো এখান থেকে।”

চিৎকার করার কয়েকমুহূর্ত পরে চোখ খুললাম। খুলে দেখি কেউ নাই। শুধু হিমা ব্যাগ হাতে নিয়ে আমার সামনে শক্ত মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। আর বাইরের দিকে চোখ যেতেই দেখি ছুটি হয়ে গেছে তাই সবাই চলে গেছে। আমি হিমার ভাব দেখে বুঝলাম সে আমার উপর রাগ করে আছে। যেখানে রাগ করার কথা ছিল আমার সেখানে উল্টো সে রাগ করেছে।

কি আর করি সিরিয়াল দেখে মেয়েটির মাথাটা গুলিয়ে যে গেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমি ওর রাগ ভাঙানোর জন্য নাটকীয় ভঙ্গিতে চতুর্দিকে চোখ বুলাতে লাগলাম। সেটা দেখে হিমা জিজ্ঞেস করলো “কি খুঁজছিস,শিহাবকে?”

আমি মুচকি হেসে জবাব দিলাম- “না দেখছি কোথাও ক্যামেরা এ্যাকশন আছে কিনা। “হিমা আমার কথায় হো হো করে হেসে উঠলো আমিও ওর হাসিতে যোগ দিলাম আর বললাম – “জিন্দাবাদ নাট্যকার বান্ধবী।”

লেখাঃ সাবরিনা সাহরিন

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “নাট্যকার বান্ধবী – প্রেমের নাটকীয় সম্পর্ক” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – ধোকা – ভালোবাসার গোপন সম্পর্ক

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *