লেডি বাইকার (শেষ খণ্ড) – একজন বাইকারের গল্প

লেডি বাইকার (শেষ খণ্ড) – একজন বাইকারের গল্প: এই কিসব পাগলের প্রলাপ করছো। মাথা টাথা গেছে নাকি। যেতেও পারে এমন মহিষের মতো ঘুমায়লে তো মাথা খারাপ হবেই। যাও ফ্রেশ হয়ে শাওয়ার না ও। (ধমক দিয়ে)


পর্ব ২০

বাসায় ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বেডে বসে কল্পকে কল করে প্রিয়। একবার রিং হতেই রিসিভ করে কল্প।
~ হ্যালো
~ হুম বলো পৌছেছো বাসায়।

~ হ্যা এসে ফ্রেশ হলাম। কি করছো?
~ এইতো বেলকনিতে দাড়িয়ে কফি খায়।

~ মানে কি এখন কফি। ডিনার হইছে।
~ হ্যা।
~ তো এখন না ঘুমিয়ে কফি কেন
~ অভ্যাস। কফি খেতে খেতে রাতের শহরে চোখ বুলানো। দেখো না কতো সুন্দর বাইরে টা। কোনো কোলাহল নাই নিস্তব্ধ শহরটা এখন নিজের সপ্ন বুনতে ব্যস্ত এখন কেউ আর তাকে বিরক্ত করবে না।

~ হুম বুঝলাম তো ঘুমাও কখন
~ তিন চার
~ সে তো ভোর আবার সকালে উঠো কেমনে আমার তো সন্ধ্যায় ঘুমালেও নয়টা দশটা বেজে যায়।

~ খাবে কখন
আরে প্রিয় এখন কার সাথে কথা বলছিস খাবার আনছি খেয়ে নে। আর এতো রাতে ছিলি কোথায় ওই বদমাশ ছেমড়ির লগে দেখা করতে তাই না। দেখি ফোন দে তো ওই ছেমড়ি নিশ্চয়
(প্রিয় কল্পর কথার মাঝেই রুমে খাবার নিয়ে আসেন তহমিনা এসেই এক রকম জোড়পূর্বক প্রিয়র কান থেকে ফোন নিয়ে নেয়। প্রিয় ও ওনার কাছে ফোন রেখে খেতে বসে)
~ এই মেয়ে এই কে তুমি আমার বাচ্চা ছেলেটার পিছে পড়েছো কেন হ্যা।

~ (বাচ্চা ছেলে শুনেই হেসে দেয় কল্প। ফোন লাউডে দেয় তহমিনা। কল্পর হাসি শুনে প্রিয়ও হেসে দেয়)
~ এই মেয়ে পাগল নাকি তুমি হাসতেছো কি জন্য তুমি। আর প্রিয় তুই ও ওই ছেমড়ির সাথে মিলে হাসতেছিস আমি কি এমন বললাম।
~ মা আমার আর ক’দিনেই স্টুডেন্ট লাইফ শেষ আর তুমি কি বলতেছো আমি বাচ্চা (এক রকম হাসতে হাসতেই বলে প্রিয়। প্রিয়র কথা শুনে কল্প আরো জোড়ে এসে দেয়)
~ (তহমিনা দুজনের হাসিতে থতমত খেয়ে যায়)এতে হাসার কি আছে তুই আমার কাছে এখনও সেই বাচ্চাটিই আছিস। এই মেয়ে তোমার নাম কি বলো তো। তুমি আমার ছেলের জীবনটা কেনো নষ্ট করছো।

~ আন্টি আমি নিশাত (হাসি থামিয়ে জবাব দেয় কল্প)
~ (নিশাত নাম শুনে তহমিনা দাত দিয়ে জ্বিভ কাটে) ও নিশাত মা তুমি আমি ভাবছি সেই কল্প না কে তাই কিছু মনে করিস না মা।

~ না আন্টি কিছু মনে করিনি আমি। কেমন আছো তুমি।
~ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুই কেমন আছিস মা।
~ ভালো আছি আন্টি।
~ তুই করে বললাম কিছু মনে করিস না।

~ আরে না আন্টি তুই করেই বলো তোমার মুখে তুই শুনলে মনে হয় আমি তোমাট মেয়ে
~ মনে হওয়ার কি আছে রে তুই তো আমার একটা মেয়েই। এই প্রিয় রে একটু বুঝানা মা দেখ আজ ও সেই ছেমড়ির লগে দেখা করতে গেছিলো। এতো মেয়ে থাকতে ওই মেয়ের পিছেই যে কেন পড়ে আছে।

প্রিয় সোফায় বসে খুব মনোযোগ দিয়েই খাইতেছিলো আর বেডে তহমিনা বসে কথা বলছিলো ফোন লাউডে দিয়ে কথা বলছে কিন্তু প্রিয় কে দেখে বোঝার উপায় নেই যে ও বাদেও এই রুমে কেউ আছে। তহমিনার শেষ কথা শুনে খাওয়ায় মনোযোগ রেখেই প্রিয় উত্তর দিলো ~
~ কারন আমি তাকে পছন্দ করি। ভালোবাসি।

কথাটা শুনে কল্প চোখ বুজে নেয়। প্রিয় তাকে ভালোবাসি বলেছে এমন ভাবে তো কখনো সামনে বলেনি। চোখ বন্ধ রেখেই মুচকি হাসে কল্প। প্রিয় ও এখনো স্বাভাবিক ভাবেই খায়তেছে।

~ কি বেহায়া ছেলে দেখছে আমার মায়ের সামনে ভালোবাসার কথা বলে
~ আন্টি প্রিয় এতোক্ষন আমার সাথে ছিলো (হালকা হেসে)
কথাটা শুনে জেনো মুহুর্তেই তহমিনার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো। মুখে একটা খুশির ঝলক ফুটে উঠলো।

~ সত্যি।
~ হ্যা আন্টি।
~ তা আগে বলবি না। উহহ এতোদিন পর মনে হচ্ছে আমার ছেলে একটা ভালো কাজ করছে। তুই সব সময় ওর সাথেই থাকবি বুঝলি মা। তা বাসায় আসলি না কেন হুম
~ অনেক রাত তো একটা কাজ ছিলো তাই একটু বাইরে থাকতো হলো রাত করেই।
~ আচ্ছা কবে আসবি বল তো মা। তুই আসলে আমার খুব ভালো লাগবে।
~ এতো ভালো লাগলে একবারে বউমা করেই নিয়ে আসো।

খুব সিম্পল ভাবে কথাটা বলে হাত মুচতে মুচতে বেলকনি তে চলে যায় প্রিয়। টাওয়ালটা মেলে দিয়ে রুমে এসে দেখে তার মা এখনো অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। হ্যা তহমিনা মাহমুদ অবাক তো হয়েছেন মনে মনে খুশিও তার ভাবনায় হয়তো প্রিয় কল্পকে ভুলে নিশাত কে মনে ধরছে।
~ কি ব্যাপার এভাবে কি দেখছো। কথা শেষ হয়ছে?

~ হুম
~ তাহলে প্লেট নিয়ে যাও আমার খাওয়া শেষ।
প্রিয় তহমিনার হাত থেকে ফোন নিয়ে কানে ধরে হ্যালো বলতেই তহমিনা বলে উঠে ~
~ প্রিয় নিশাতরে বল না আমাদের বাসায় আসতে।

~ বলার কি আছে কবে লাগবে তুমি বলো ও হাজির হয়ে যাবে না আসলে তুলে আনবো তুমি বলো শুধু।
প্রিয়র কথা শুনে কল্প হাসিতে ফেটে পড়ে। আর তহমিনা তো খুশিতে গদগদ অবস্থা মেয়েটাকে তার ভারি মিষ্টি লাগে রুপে গুনে একবারে মাশাআল্লাহ,
~ কালই আসতে বল না তোর বাবা ও খুশি হবে।
~ কাল না। পিয়াস কবে আসছে
~ দুদিন বাদে।

~ পিয়াস আসলে সেদিন আসতে বলবো
~ ঠিক আছে
বলেই হেসে প্লেট নিয়ে চলে যান তহমিনা মাহমুদ। সে আজ বড্ড আনন্দিত ছেলে তার কল্প নামক মেয়েটার পিছু ছাড়ছে ভেবে। কল্পকে তিনি মানতেই নারাজ জেনো কোনো জন্মের শত্রু সে। তহমিনা শুইতেয় দরজা লক করে বেডে শরীর এলিয়ে দেয় প্রিয়।
~ এই যে মিস বাইকার।

~ বলুন মহাদয়
~ আটটায় ক্লাস আছে ঘুমিয়ে যাও। রাইড করছো ক্লান্ত তো
~ আসবে না গো এখন অভ্যাস যে।

~ চেষ্টা না করেই যে বলছো আসবে না। ফোনটা কানে নিয়ে শুয়ে পড়ো তারপর কথা বলবা দেখবা কখন ঘুমায় যাবা ঠিক ও পাইবা না।
~ প্রচুর অভিজ্ঞতা আছে মনে হচ্ছে।
~ আরে নাহ।
~ এই এই আমার বাইক ঠিক আছে তো।
~ একদম। সকালে কল দিলে রেডি থেকো আমি পিক করে নিবো।

~ ঠিক আছে। এখন রাখছি।
~ কেন ঘুম চলে এসছে তাই না বললাম না আমি
~ জ্বি নাহ ঘুম আসে নাই। তবে চেষ্টা করবো। তোমার সাথে বকবক করলে এমনিতেও ঘুম আসবে না। তুমিও ঘুমাও। গুড নাইট
~ হুম ঘুমায় যেও কিন্তু। গুড নাইট।

কল কাটতেই রাজ্যের ঘুম এসে জড়ো হয় প্রিয়র চোখে। কল্প ও চেষ্টায় আছে আজ আর বিরক্ত করবে না নিরব শহরটাকে।
সকাল সাতটা বেজে চল্লিশ মিনিট।
প্রিয় বাইক নিয়া দাড়িয়ে আছে কল্পর বাসার নিচে ঘুমে ঢুলু মুলু চোখ নিয়া চেয়ে আছে মেইন গেটাটার দিকে এখন অপেক্ষা কখন আসবে তার। মেঘপরী।

কিছু সময়ের মধ্যেই কল্প এসে যায়। কল্পকে দেখেই প্রিয়র ঘুমে ঢুলুমুলু চোখটা বড়বড় হয়ে যায়। পুরা গোলাপি রানী লাগছে কল্পকে। গোলাপি কামিজ গোলাপি চুরিদা গোলাপি ওড়না। হ্যান্ড ব্যাগ। ডান হাতে ঘড়ি আরেক হাতে ব্রেসলেট ডান হাতেই রেড আই ফোন। সিল্কি চুল গুলা মেলে দেওয়া কানে ছোট্ট ঝুমকা।
~ সরি সরি একটু লেট হয়ে গেলো।
~ হুম। চলো
কল্প বাইক উঠতেই প্রিয় বাইক স্টার্ট দেয়।

বাইক চলছে নিজ গতিতে আর কল্প প্রিয়র সামনে উড়ে যাওয়া চুল গুলো আলতো হাতে পিছনে নিচ্ছে।
~ এতো সিল্কি কেন চুলগুলো। কি লাগাও বলো তো
~ তা তো বলা যাবে না সিক্রেট।
~ হু রাখো তোমার সিক্রেট। আগে বলো
~ বিয়ের পর নিজে গিয়েই দেইখো।

~ ঢং। কে করছে তোমায় বিয়ে। আমি কি বলেছি নাকি।
~ বলবে না বেশি বললে এটার কোনো স্পেশালিটি থাকবে না।
~ চুপচাপ চালাও তো।
~ হুম আমি বললেই দোষ নিজে যে কেয়ার নিচ্ছো সেটা কি।

~ এজ এ ফ্রেন্ড। ইটস সিম্পল
~কে কার ফ্রেন্ড। আমি কি ফ্রেন্ড বলে মেনেছি তোমায়। এখন প্রেম করছি কিছুদিন পর বিয়ে। আমার শশুড় শাশুড়ি রাজী। বউ রাজী। তোমার শাশুড়ি তো চার পায়ে খাড়া।

প্রিয়র মুখে বউ শাশুড়ী কথাটা শুনে অন্যরকম এক অনুভুতি হলো কল্পর। একদম অন্যরকম।
~ শাশুড়ি নিশাতকে মানে কল্পকে না আর তুমি কল্পকে চাও নিশাতকে না।
~ আমি যেটা চাই তোমার শাশুড়ি ও সেটায় চাইবে।
~ মনে হয় না। কাল রাতেও তো
~ হুশশ বলেছি না এসব নিয়ে এখন আর না আগে স্টাডি কম্পিলিট হোক দেন আমিই ঠিক করে দিবো সব এখন এসব তোমার না ভাবলেও চলবে।

~ হুম
ওরা কথা বলতে বলতেই ভার্সিটি পৌছায়।
~ মেঘপরীতুমি ক্লাসে যাও আমি বাইক রেখে আসছি।
~ আচ্ছা


পর্ব ২১

ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে বসে আছে চারজন। কল্প জুস খায় আর ফেন টিপে প্রিয় ও সেম। আয়ান কফি খাচ্ছে তিশা বসে বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছে। ফোন টিপার মাঝে প্রিয়’কল্পকে হাসতে দেখে আয়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।
~ প্রিয়
~ হুম (ফোন টিপতে টিপতে)
~ ফোনে কি করছিস।

~ তেমন কিছু না একটু ফেবু স্ক্রল করছি।
~ তুই তো দেখি টাইপ করছিস আবারো হাসতেছিস ও। পাগল টাগল হইলি নাকি। শুনেছি মানুষ প্রেমে পড়লে পাগল হই বাট কল্প তো তোর সামনেই।

~ হুম
~ আজব আমি কথা বলছি আমরা দুজন বসে আছি আর তোরা দুজন ফোনের ভিতর ডুবে আবার হাসতেছিস ও ব্যাপার কি।
~ এসব কি আয়ান ভাইয়া তুমি কি এখন সবার পার্সোনাল ব্যাপারেও ইন্টারফেয়ার করবা। খুব খারাপ
~ মরিচবাতি। তুই এতো বেশি কথা বলবি না আমি বলছি না আমার সাথে তো না ই।

আয়ান নিজের বিক্ষিপ্ত নজর তিশার দিকে দিতেই তিশা চোখের ইশারায় আয়ান কে টেবিলের নিচে দেখতে বলে। আর কল্প’প্রিয় তারা তো ফোনে বিভর। এমন একটা বিষয় জেনো ফোনটা এখন সামনে থেকে সরালেই বিশাল বিক্ষোপ বা সুনামি টাইপ কিছু হয়ে যাবে। আয়ান তিশার ইশারা মতো টেবিলটার নিচে তাকাতেই মুখটা অটো হা হয়ে যায়। টেবিলের নিচ থেকে মুখটা তুলে তিশার দিকে অবাক নজরে চেয়ে থাকে আয়ান।

~ ও আয়ান ভাইয়া মুখে মাছি ঢুকবে তো এভাবে হা করে থেকে না। এতো বড় হা করছো জেনো একটা হাতিও বদ করে ফেলতে পারবা তুমি। (বইয়ে মুখ ডুবিয়ে মুচকি হেসে উত্তর দেয় তিশা)
~ আয়ান হা টা বন্ধ করে এক চাপ্পর দেয় তিশার মাথায় তারপর ইশারা করে নিচে তাকতে। তিশা নিচে দেখতেই কারেন্ট এর শক খাওয়া মতে শক খায়। এতোক্ষন কল্পপ্রিয় দুজন দুজনার পায়ের আঙুল দিয়ে গুতাগুতি করছিলো আর ফোনেও দুজন মেসেজ করছে আর হাসছে। এটা দেখেই শকড আয়ান।

আর তিশার শকড এর কারন আয়ানের পা টা প্রিয়র পায়ের দিকে আগাচ্ছে মানে বিশাল এক সংঘর্ষ হতে চলেছে। আয়ান পা টা প্রিয়র পায়ে দিয়ে শুরশুরি দিতে থাকে। পা টা অন্য রকম লাগায় প্রিয় ফোন থেকে মুখটা তুলে আয়ানের দিকে তাকাতেই দেখে আয়ান চব্বিশ পাটি দাত কেলিয়ে টেবিলে কনুই ঠেকিয়ে দুহাতে মুখের দুপাশে রেখে তাকিয়ে আছে প্রিয়র দিকে। প্রিয় ভ্রু কুচকে আয়ানের দিকে তাকায় তারপর বলে ~
~ কি সমস্যা
~ কুচ কুচ হোতা হে
~ এমন কেবলার মতো করতেছিস কেন। কি হইছে।

~ টেবিল পে নিচ তো কুচকুচ হোতা হে।
কথাটা শুনেই প্রিয়র চোখ ফিউজ বাল্ব এর ন্যায় হয়ে যায়। কল্পর তো অটো কাশি শুরু হয়ে গেছে। কল্পর কাশিতে আয়ান কল্পর দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়।
~ ভাবি জি পানি পি লো।

~ আয়ান
আয়ান যায় করুক প্রিয় কে অনেক ভয় পায়। সেটা হাজার হাসির মুহুর্ত হোক প্রিয় একবার রাগলেই আয়ান ফিউজ বাল্ব হয়ে যায়,
~ না মানে বলছিলাম (আমতা আমতা করে)প্রিয় পরশু পিয়াস আসতেছে নাকি খালামনি কল দিছিলো তাই ?
~ বলছে যখন। তখন আবার রিপিট করে আমায় কেনো জিগায়তেছিস।
~ এই মাছুম বাচ্চার সাথে এমন ব্যবহার করতে তোর লজ্জা করে না
~ পিয়াস কে।
~ তোমার দেবর।

~ বলোনি তো আগে।
~ জানতায় তো
~ তুমি তো বলোনি
~ কপ্পাল (কপাল চাপড়ে)প্রিয় ভাইয়া তোমার ভাইটাকে দেখার বহুদিনের শখ আমার। ইশশশ নিশ্চয় তোমার মতো কিউট হবে ধুররর কপালই খারাপ আমার সিনিয়র কেন হলো না সেম ইয়ার হলেও চলতো।
~ হায় রে মরিচবাতি তোর তো দেখি বড় রকমের সমস্যা চরিত্রে। সিনিয়র জুনিয়র ও ছাড়স না।

~ আয়ান ভাইয়াাা চরিত্র নিয়ে কথা বলতে নিষেধ করেছিলাম কিন্তু আমি
~ একশো বার বলবো একশত বার বলবো। আমি কি মিথ্যা বলেছি নাকি। হুহ
~ ফালতু

বলেই গটগট করে সেখান থেকে প্রস্থান করে তিশা।
কিছুক্ষনবাদে একটা মেয়ে আয়ানের সামনে।
~ ভাইয়া নজরুল স্যার ডাকছে 507 নং রুমে।
~ আমাকে?

~ হ্যা।
আর কিছু জিগানোর আগেই মেয়েটা চলে যায়। আয়ান অবাক হয়ে প্রিয়র দিকে তাকে।
~ নজরুল স্যার আমাকে কেনো ডাকছে। তাও আবার 507 এ। এই সময় তো ওখানে ক্লাস থাকার কথা না আর এই মেয়েটায় বা কে জানলো কেমনে আমি এখানে।
~ গিয়ে দেখ। গেলেই জানতে পারবি।

~ হুম
আয়ান উঠে চলে 507 নং রুমের উদ্দেশ্য।
পনেরো মিনিটের মাথায় ফিরে আসে আয়ান। কল্পপ্রিয় এতেক্ষন গল্প করছিলো। আয়ান কে দেখে দুজনেই একটু অবাক। এক হাত গালে রেখে আর এক হাত পেটে দিয়ে প্যাচার মতো মুখটা করে প্রিয়র সামনের চেয়ারে এসে বসে।

~ আয়ান কি হইছে এমন করে আছিস কেনো ভাই।
আয়ান মুখটা ভোতা করে কল্পর দিকে তাকায় এখনও একই রকম করে আছে।
~ কল্প একটু যাবে তুমি।
কল্প মাথা নাড়িয়ে উঠে যায়।
~ কি রে ওরে পাঠালি কেনো।

কি হইছে
ভোতা মুখ করেই আবার প্রিয়র দিকে তাকায় আয়ান।
কিছুক্ষন আগে।
507 নং রুমে ঢুকতেই কেউ হঠাৎ দরজা লাগায় দেয়। বিল্ডিং টাও ফাকা তেমন কেউ নাই। আয়ান সামনে তাকিয়ে চরম অবাক।

~ মরিচবাতি
~ এই এই কিসের মরিচবাতি হ্যা কিসের মরিচবাতি (তেড়ে এসে)
~ তুমি এখানে কি করছো। আমাকে তো নজ
~ হ আমিই এখন তোমার নজরুল স্যার আর এখন তোমার ক্লাস ও আমি নিবো।
আয়ানের আর বুঝতে বাকি রইলো পুরোটা তিশার প্লান।

~ এই ছেমড়ি আমারে এখানে আনার মানে কি। খুব সাহস হইছে কিন্তু।
~ সাহসের দেখছো কি হ্যা। আর পিছাচ্ছো কেন। এই তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো আয়ান ভাইয়া।
~ তোর মতো মরিচবাতি রে ভয় পাওয়ার কি আছে। সর চিংড়ি কাছে আসবি না।

~ কেনো চিংড়ি তে কি তোমার এলার্জি নাকি। (আগাতে আগাতে)
আয়ান দেওয়ালে ঠেকতে যাওয়ার আগেই তিশা আয়ানের পেটের কাছের টি~শার্ট ধরে কাছে টেনে নেয়। এমন ভাবে খামচি দিয়ে ধরে তাতে আয়ান ব্যাথা পায়। তিশার এমন টেনে কাছে নেওয়াতে হাত দুটো উপরে তুলে নেয়।

~ এ কি আয়ান ভাইয়া যেখানে আমার তোমার মতো ভয় পাওয়ার কথা সেখানে তুমি আমাকে ভয় পাচ্ছো দেটস গ্রেট’এতে কিন্তু সংসারে সুখ আসবে। (চোখ টিপ দিয়ে হেসে)
~ বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে চিংড়ি। সরো। এসবের মানে কি।

~ মানেটা খুব সহজ। আমি যে চরিত্রহীন সেটার একটা নমুনা তোমায় দেখাতে চাচ্ছি। শুধু শুধু তোমার মুখে চরিত্রহীনা শুনতে ভালো লাগে না বুঝলা।
~ মরিচবাতি আর কাছে আসলে কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। দূরে যাও বলছি।
তিশা আর কোনো কথা না বলে আয়ানের পেটের কাছে আর একটু জোড়ে খামছি দিয়ে টেনে বাম গালে জোড়ে একটা চুমু দেয়। আয়ান পুরা থ, তিশা আয়ান কে ছেড়ে দূরে সরে দরজার কাছে গিয়ে দাড়ায়।

~ এবার আমাকে চরিত্রহীন বললেও আর কিছু বলবো না আয়ান ভাইয়া (মুচকি হেসে কথাটা বলে বের হয়ে যায় তিশা)
আয়ান ভাবতেও পারেনি তার সাথে এখন এমন কিছু হতে পারে।

আয়ানের কথা শুনে কিছুক্ষন অবাক হয়ে চেয়ে থাকে প্রিয়,
~ তুই চাইলেই কিন্তু পারতি তিশাকে সরাইতে।

~ কেমনে সরাইতাম। ও কাছে আসায় ই হার্টবিট বেড়ে গেছিলো। কিছু বলারই শক্তি পাচ্ছিলাম না আর সরাতাম কেমনে।
~ তিশু। ভেরি ব্রেভ গার্ল মানতেই হবে আয়ান। এর থেকেও কঠিন কিছু করার আগে আমার মনে হয় তুই ওর প্রপোজালে রাজি হয়ে যা। খুব ভালো মেয়ে তো তিশু।
~ আমার অসময়ে তুই মজা নিচ্ছিস প্রিয়
~ সেরা বিনোদন এটা। আজকের ব্রেকিং নিউজ।

প্রিয় হাসতেই আছে। আয়ান হ্যাবলার মতো চেয়ে প্রিয়র দিকে।
~ তুই আস্তো একটা ব্রিটিশ প্রিয়।
~


পর্ব ২২

প্রেমে পড়ার সময় গুলো হয় মধুর সময়। প্রেমের সময়ে অপেক্ষাটা ও হয় মধুর। এ সময়ে দিনক্ষনের কোনো ঠিক থাকে না। মনে উড়তে থাকে রঙিন প্রজাপ্রতি।
কেটে যায় কয়েকটা দিন। আজ ডিনারে এসছে ওরা চারজন। কল্প আয়ান কথা বলছে আর প্রিয় তিশা কথা বলছে। কিন্তু আয়ান একবারের জন্য ও তিশার দিকে না তাকায়ছে আর না কথা বলছে কোনো তিশা জানে কারনটা তাই তিশা ও আর কিছু বলে না।
আয়ান পানি খায়তে নিতে গেলে হঠাৎ তিশার হাতের এক সাইডে পানি পড়ে যায়।
~ সরি সরি সরি মরিচবাতি। আমি বুঝতে পারিনি।

~ উহহহ আয়ান ভাইয়া সাবধানে খাবে তো কি করলে দেখো তো। বিরক্তিকর। দি আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি।
চোখে মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় তিশা। তিশা উঠতেই আয়ানের ফোন বেজে উঠলে আয়ান ও উঠে সাইডে যায়।

কিছু সময় পর তিশা এসে চেয়ারে বসে।
~ তিশু মুখ ঢেকে আছিস কেনো। এমন ভাবে ঢাকছিস জেনো তোর বিয়ে তাই তুই লজ্জা পায়তেছিস। টিস্যু সরা মুখ থেকে।
~ না দি থাক না টিস্যু টা।

~ আয়ানটা যে কোথায় গেলো।
~ এই টিস্যু থাকলে তুই খাবি কেমনে মজা করস।
কল্পর কথার মাঝেই আয়ান এসে বসে। মুখে এক অদ্ভুত হাসির রেখা।

~ কি রে এতো খুশি কেন। কে কল করছিলো
~তেমন কেউ না তো
~ আয়ান সত্যি করে বল কিন্তু কি করেছিস। তোর মুখই বলছে কিছু তো ঘটিয়েছিস। খারাপ কি
~ আরে ভাই কি করবো বল তো। খাবার চলে এসছে তো চল খায়। খুব খুদা লাগছে।

~ শিওর কিছু করিসনি
~পাক্কা।
~ ওকে খা।
সবাই খাওয়া শুরু করে। তিশা একটু খেয়েই আহ করে উঠে।

~ উউউ ঝাল ঝাল ঝাল
~ কিহহ ঝাল কই পাইলি তুই কাচ্চি তে তো ঝালই নাই তুই কেমনে ঝাল ঝাল করছিস আর মুখের সামনে টিস্যু রেখে এ কেমন খাওয়া ছুটকি। টিস্যু রেখে ভালো ভাবে খা। আর এই নে পানি।
কল্প তিশার মুখ থেকে টিস্যু টেনে নিতেই তিশা তড়িঘরি করে হাত দিয়ে ঠোট চেপে ধরে।
~ আর ইউ ওকে কি পাগলামো শুরু করেছিস। ঠোটে কি হইছে দেখি।

~ উউুউ
~ মাইর খাবি কি উ উ করছিস হাত নামা।
~ না দি। ভয়ংকর অবস্থা ঠোটের তুমি দেখলে ডরায়বা।
~ হুয়াট রাবিশ। থাপ্পর দিয়ে তোর দাত ফেলে দিবো। ওয়াশরুমে যাওয়ার আগেও না ঠিক ছিলি এখন এমন নাটক শুরু কেনো করলি।

~ কল্প। এমনভাবে কথা বলতেছো কেন ওর সাথে। হয়তো ওর কোনো সমস
~ হ্যা তো সেটা তো আমি এখন অনেকক্ষন যাবৎ জিগাচ্ছি। ও বলতেছে না কেন। একটা রেস্টুরেন্টে আছি আমরা আর ও কেমন নাটক করছে।
~ তিশু ঠোটে কি কিছু কামড়েছে।
প্রিয় খুব ঠান্ডা ভাবে প্রশ্ন করে তিশা কে।

প্রিয়র কথায় তিশার চোখে আগুন জ্বলে উঠে যেই আগুনে শেষ করতে চায় সে আয়ানকে। এখানে এতোকিছু হচ্ছে কিন্তু আয়ানের কোনো খেয়ালই নাই সে তো মন মস্তিষ্ক এক করে খাবারে নজর রাখছে। তিশা আগুন ধরানো চোখ আয়ানের উপর রেখেই উত্তর দেয় ~
~ কুত্তায় কামড় দিছে (দাতে দাত পিষে)
কথাটা শুনেই আয়ানের কাশি উঠে যায়। প্রিয় পানি এগিয়ে দিলে আয়ান পানিটা নিয়ে গড়গড় করে খেয়ে নিয়ে তিশার দিকে তাকায়।
~ এই মরিচবাতি তুই কুত্তা বলিস আমারে। একটু আগের কথা ভুলে গেছিস। বিয়াদব মেয়ে। কোনো মেনার্স নাই। সিনিয়র ভাইরে কুত্তা বলিস।

~ ঠিকই বলেছি কুত্তা কুত্তা কুত্তা। তুমি একটা অমানুষ কুত্তা। আমার ঠোটে কামড়ে কি অবস্থা করছো তো তুমি কুত্তা ছাড়া কি।
~ চিংড়ি। তুই আর একবার গাল দিলে কিন্তু এক চড় লাগাবো। তুই আমার সাথে বিয়াদবি করছিস আমিও করছি নাও ইকুয়াল ইকুয়াল।
~ একবার কেনো একশো বার বলবো তুমি কুত্তা। কুত্তা ছাড়া এমনে কাউকে কামড়াতে দেখছো। শয়তান একটা
~ তোরে তো আমি
কথাটা বলেই আয়ান তেড়ে আসতে গেলে প্রিয় আটকাই। এতোক্ষন কল্পপ্রিয় হা হয়ে এদের কথা শুনছিলো।

তিশা আয়ান এতোক্ষন রাগের বশে খেয়ালই করেনি ওরা বাদেও এখানে আরো দুজন আছে।
কিছুক্ষন আগে তিশার গায়ে পানিটা আাান ইচ্ছাকৃত ফেলে জেনো তিশা ওয়াশরুমে যায় আর আয়ান ও তিশার কাছে যাওয়ার একটা স্পেস পায়।

আর তিশা উঠতেই আয়ান নিজের ফোনের টোন বাজায় জেনো প্রিয়কল্প মনে করে ওর ফোনে কল এসছে। তিশা ওয়াশরুমে গিয়ে টিস্যু দিয়ে ড্রেস থেকে পানি মোছার চেষ্টা করতে থাকে। ঠিক তখনই আয়ান ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা ভিতর থেকে লক করে দেয়। তিশা ভয় পেয়ে পিছনে ফিরতেই আয়ানকে দেখে আরো ভয় পেয়ে যায়।
~ তু তু তুমি এখানে কেনো আয়ান ভাইয়া (ভয় পেয়ে)
~ এভাবে তোতলাচ্ছিস কেনো রে মরিচবাতি (কাছে এগোতে এগোতে) তুই তো ভিষন সাহসী এখন কি তুই আমাকে ভয় পাচ্ছিস চিংড়ি।

~ না ভ ভয় কেনো পাবো। তুমি এখানে কে কেনো তাই জিগায়লাম।
~ তোকে বলেছিলাম আমার সাথে লাগবি না। বলেছিলাম না বল। কিন্তু তুই কি করলি আমাকে কিস ও মাই গড একটা মেয়ের এতো সাহস হয় আমি তো ভাবতেই পারছি না। আর একটু আগে কি বললি আমি ফালতু।

~ আ আমি তো
আর কিছু বলার আগেই আয়ান তিশার পেছনে এক হাত দিয়ে তিশার চুল মুঠি ধরে কাছে টেনেই তিশার ঠোটে আক্রমন শুরু করে। তিশা অনেক ছোটাছুটি করেও ব্যর্থ। আয়ানের প্রতিটা কামড় তিশার কাছে এমন লাগে জেনো তার ঠোটে কোনো বিষাক্ত পোটা চড়ে বেড়াচ্ছে। ঠিক পাচঁ মিনিট বাদে তিশার ঠোট ছেড়ে তাকায় সেদিকে আয়ান। তারপর একটা বাকাঁ হেসে দরজা খুলে বেড়িয়ে যায়। আয়ান বেড়োতেই তিশা আয়নায় নিজেকে লক্ষ করে কেদেঁ উঠে ঠোটের যন্ত্রনায় জীবন যায় যায়। এই ঠোট দেখলে যে সে টাষ্কি খেয়ে যাবে।

এটা ঠোট কাউকে বললেও সে পাগল বলে হাসতে শুরু করবে। নিজেকেই একটা ভয়ংকর জন্তু লাগছে তিশার কাছে। কিছুক্ষন কেদে কেটে ঠোট টিস্যু দিয়ে চোখে মুখে পানি দেওয়ার সময়ই বাধে ঝামেলা। ঠোটে পানি লাগতেই ঠোটে লঙ্কা লাগার মতো ছেত করে জ্বলে উঠে। নিজেকে স্বাভাবিক করে ঠোট টিস্যু দিয়ে ঢেকে বের হয় তিশা।

সময়টা জেনো থেমে গেছে জায়গাটা হয়ে আছে স্তব্ধ। কারো মুখেই কোনো কথা নাই তবে আয়ানের চোখে মুখে কিছুটা আতংক স্পষ্ট। ভয় একটায় প্রিয় এখন ওরে কি করতে পারে এটা ভেবেই আয়ানের আত্তায় পানির অভাববোধ হচ্ছে।

~ আজকের পর আমার সামনে থেকে দেখতে চায় না। আর যদি দেখি অবস্থা ভয়াবহ হবে বলে রাখলাম।
কথাটা বলেই উঠে যায় প্রিয়। কল্প ও প্রিয়র পিছে ছুটে। প্রিয় স্বাভাবিক ছোট খাটো ব্যাপারে কখনো রাগে না আর একবার রাগলে তো আর রক্ষা নাই। সে ভয়েই কল্প প্রিয়র পিছু নেই।

আয়ান যেটা করছে সেটা আত্নসম্মানবোধ থেকে রাগের বশে। তবে এখন বুঝতে পারছে কি ভুলটা করেছে। একটা মেয়ের সম্মানে হাত দিয়ে ফেলছে। তার চরিত্রে খুত লাগিয়ে ফেলেছে। একটা ছেলের দিক হতে এটা কোনো ব্যাপার না লাগলেও একটা মেয়ের জন্য এটা অনেক কিছু। আয়ান সেটা বুঝতে পারছে তিশার চোখের পানিতে।


পর্ব ২৩

খুব আরামে ঘুমাচ্ছিলো কল্প। কিন্তু সকালের সূর্যটার বোধয় সেটা আর সহ্য হলো না। কিন্তু আলো কোথা থেকে আসবে কল্পর রুমে তো আলো প্রবেশের কোনো উপায়ই কল্প রাখেনি।
বিরক্তি মুখটা কম্বলের নিচে চেপেই ঘুম জড়ানো কন্ঠেই চিৎকার শুরু করলো কল্প।

~ আম্মু কি শুরু করছো সাত সকালে। পর্দা টানো। প্লিজ মা ঘুমুতে দ
দাও বলার আগেই কল্প আবার ঘুম, কিছু সময় পর মুখে সুরসুরি লাগতে শুরু করলো কপালে বিরক্তির ভাজ পড়লেও ঠোটে হাসি। এই হাসিটিই জেনো কারো হৃদয় কে ক্ষত বিক্ষত করতে সক্ষম। বাম হাতটা কম্বলের নিচ থেকে বের করে মুখের ওপর সুরসুরির কারনটা সরাতে চাইলেও ব্যর্থ কল্প। না পেরে মুখের ওপর হাত রেখে দিলো। এক সাইড হয়ে ঘুমানোই অগোছালো চুল গুলো ছড়িয়ে আছে পুরো মুখে তাতে ও কল্পর মুখে বিরক্তি ভরা তবুও জেনো তার তপস্যা। টর্নেডো আসলেও চোখ খুলবে নাহ। শেষ রক্ষা আর হইলো না বিপরীত মানুষটা যে তাকে এখন আর ঘুমুতে দিবে না এটা বেশ বুঝতে পারছে কল্প।

তবু ও সে নিজ সিদ্ধান্তে স্থির কোনো ভাবেই চোখ খুলবে না। ঘুমের ঘোড়েই হাতরাতে থাকে কল্প হয়তো কিছু খুজছে। কল্পর কারসাজি তে বিপরীত ব্যক্তি তো হেসে লুটোপটি খাওয়ার অবস্থা। কল্প তখনও হাতরিয়ে কিছু খুজতে ব্যস্ত। বিপরীত লোকটা ততক্ষনাৎ কল্পর হাতের ওপর হাত নিয়ে একটা জোড়ে চিমটি দিলে সাথে সাথে চিৎকার করে উঠে বসে কল্প।
~ মাাাা কি শুরু করছো উহ হাত গেছে। সমস্যা কি বলো তো। [চোখ বন্ধ করে উঠে বসে ]
বিপরীত মানুষটা বাক্য ব্যয় করার প্রয়োজন বোধ করলো না বোধয় তাই আরো একটা চিমটি।

~ আআআআ ও মা গো ও মা গো হাত গেলো গো। তোমারে কি আজ রাক্ষস ধর এ কি তুমি এখানে কি করছো
~ হ্যা আমিই কোনো সপ্ন টপ্ন না। এখন বইলো না যে সপ্ন দেখছো কিনা তাই আগে ভাগেই চিমটি দিয়া শিওর করছি এটা আমি এখন ফাস্ট উঠো আর ফ্রেশ হয়ে আসো নাস্তা বাইরে করবো। আটটার ভিতর এয়ারপোর্ট পৌছাতে হবে। যাও যাও
~ চরম অবাক হওয়া সত্তেও প্রিয়র জোড়ে কিছু বলার সুযোগ হইলো না কোনো রকম মাথা নাড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

~ এই মেয়ে আর কতোক্ষন পনেরো মিনিট হয়ে গেছে অলরেডি।
~ প্রিয় তুমি একটু বাইরে গিয়া বসো প্লিজ। আমি শাওয়ার নিছি কাপড় আনতে ভুলে গেছি
~ ওকে বাট আর ফাইভ মিনিট।

~ ওকে ওকে যাও প্লিজ। আর দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে যেও
প্রিয় বের হইলে কল্প বেড়িয়ে রেডি হয়ে বাইরে আসে।

~ মাশাআল্লাহ আমার হবু বউটারে যে এতো মিষ্টি লাগছে ইচ্ছা করছে খেয়ে ফেলি।
~ একটা মানুষরে কেমনে খাবা তুমি। তুমি কি রাক্ষস।
কল্পর কথায় প্রিয় হেসে দেয়। আয়েশা ওদের না খেয়ে বের হইতে দিবে না বাট সময়ের অভাবে হবে না অন্যদিন খাবে বলেই প্রিয় কল্পকে নিয়ে বের হইলো। আজ ওরা গাড়িতে করে যাচ্ছে প্রিয় ড্রাইভ করছে কল্প পাশে বসে আছে।

~ বললাম আমাকে দাও আমি ড্রাইভ করি।
~ এতো জলদি পৃথিবী ছাড়ার শখ নাই আমার।

~ ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে হুহহ, তোমার থেকে ভালো ড্রাইভ করি। যায় হোক আয়ান রে আনলা না’
আয়ানের কথা শুনেই গাড়ি থামিয়ে দেয় প্রিয়।
~ কি হলো থামলে কেন।

~ তোমায় বলেছিলাম না ওর নাম ও শুনতে চায় না আমি। কি মজা মনে হয় আমার কথা। ফান করি আমি
~ প্রিয় তুমি শুধু রাগ করছো বেচারা রাগের বসে কি দিয়া কি করে ফেলছে আর তিশু ও তো ওর সাথে আগে বিয়াদবি করছে। আয়ান তোমায় সরি ও বলছে। ওদের মধ্যে ওরা সব ঠিক করে নিছে তুমি শুধু শুধু ওর ওপর রাগ করছো।

~ ও কিস করা কোনো মেটার না এটা শুধু শুধু তাহলে দাও আমিও কিস করি দেন সরি বলে নিবো। হবে না
~ প্রিয় কি সব বলতেছো বলো তো। ওদের বিষয় ওদের বুঝতে দাও না তুমি কি এখন ওদের জন্য আমার সাথে ঝগড়া করবা
~ তো এই টপিক কে শুরু করছে আমি (দাতে দাত চেপে)
~ হু আমি করছি সরি। এখন যে ঝগড়া করছো লেট হচ্ছে না আমি একটু রেডি হচ্ছিলাম তখন তো তোমার তাড়ার শেষ ছিলো না।

প্রিয় রাগি মুড নিয়ায় আবার গাড়ি চালাতে শুরু করে।
~ মুখ এমন প্যাচার মতো করে রাখবা নাকি। একটু ও ভালো লাগছে না
~ লাগতে হবে না।
~ লাগতে হবে আমার সামনে এই গাম্ভীর্য নেহি চালে গা।

~ না চলুক
~ সরি তো হবু প্রেমিক। হাসো না
~ হবু বর বললে ভেবে দেখতাম
~ আগে প্রেম তারপর না বিয়ে।

~ তাহলে হবু কেনো
~ মানে এখনো তো আমি প্রেম কনফার্ম করি নাই। প্রসেস চলছে। দেখি কি হয়
~ হুম দেখতে থাকো।

~ আরে বাবা হাসো না।
~”””’
~ ওকে হাসা লাগবে না এই আমি রাগ করলাম আর কথা নাই হুহ,
কল্পর কান্ডে হেসে দেয় প্রিয়।

~ পাগলি।
~ হুম হবু প্রেমিকের (প্রিয়র চল টেনে)
ওরা এয়ারপোর্টে পৌছাতে পৌছাতে আটটা দশ বেজে যায়। ওরা নামতেই দেখে পিয়াশ বাইরে দাড়ানো। প্রিয় নামতে পিয়াশ এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে।

~ ভাইয়াাাাা উহহ কতদিন পর দেখলাম তোমায়। খুব মিস করছিলাম তুমি একবারের জন্যও যাও নাই দেখা করতে।
~ তোর লাইলা কেমন আছে বল (পিঠে চাপড় দিয়ে)
~ আসার সময় সে কি কান্না
~ নিয়ে আসতি। যার জন্য দেশ ছেড়ে মামার কাছে শিফট হলি সে তোকে আসতে দিছে তাই তো কতো।

~ এক্সাম চলছে ওর। শেষ হইলেই দেখো হাওয়ার মতো চলে আসবে।
~ হ চল। মা ওয়েট করছে।

পিয়াস ঘুরতেই গাড়ির সাথে হেলান দেওয়া কল্পকে দেখে একটু থেমে গেলো। পিয়াসকে তাকাইতে দেখে মুচকি হেসে এগিয়ে হেসে পিয়াস এর সামনে হ্যান্ড শেকের হাত বাড়ায় ~ হ্যালো পিয়াস।
পিয়াস ভদ্রতা বজায় রাখতে হাই বলে হাত মিলায়।
~ ভাইয়া কে উনি।

~ তোর হবু ভাবি
~ কিহহহহহহহ! মিথ্যা বলছিস।
~ তোরে মিথ্যা বলে আমার লাভ কি। আম্মুরে গিয়ে জিগাস।
পিয়াসের রীতি মতো মাথায় সব জট পাকাতে শুরু করে। তার ভাইয়ের সাথে একটা মেয়ে অসম্ভব তাও আবার হবু বউ ইম্পসিবল।

~ আরে মজা করছে উই আর জাস্ট ফ্রেন্ড। আমার নাম নিশাত আইরা নিকনেম ক
~ নাম তো নাম ই আবার নিকনেম কি হুহ আর কিসের জাস্ট ফ্রেন্ড এবার তো তুমি মিথ্যা বলছো। পিয়াস ও জানে ওর ভাইয়ের সাথে মেয়ে মানে সাংঘাতিক কেউই কারন ওর ভাইয়ের লাইফে আপনি ছাড়া কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড ও নাই। চল পিয়াস।

পিয়াস তো প্রিয়র কথা থ বনে গেছে এখানে কি হচ্ছে সব ওর মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। সব চিন্তা ভাবনা ছেড়ে গাড়ীতে উঠে ওরা। প্রিয় পিয়াস পাশাপাশি কল্প পিছে।
~ ভাইয়া ওটা আমার হবু ভাবি হলে পিছনে কেনো দিলে।

~ কারন ও সারাজীবন পাশেই থাকবে আজ না হয় ভাইটা থাক।
~ তার মানে কি বিয়ের পর আমি পর হয়ে যাবো।
~ হ।
~ তাহলে তোমায় বিয়েই করতে দিবো না যাও।
প্রিয় মুচকি হাসে কোনো কথা বলে না। প্রিয়র আচরনটা কল্পর অদ্ভুত লাগলেও সে পিয়াসের সামনে কিছু বলতে চাইছে না।

পর্ব ২৪

বাড়ির গেটের সামনে গাড়ির আওয়াজ পায়তেই ছুটে আসে তহমিনা। এই অপেক্ষায় জেনো সে গেট ধরে বসে ছিলো। এতোগুলো বছর পর সে কোলের ছেলেটাকে কোলে পাচ্ছে খুশিটা প্রকাশ্যের বাইরে। পিয়াস গাড়ি থেকে নামতেই তাকে জড়িয়ে নিয়ে মরা কানা জুড়ে দেন তিনি।

~ মা এভাবেই কি বাইরে দাড় করিয়ে কেদে যাবে বলো তো। ভেতর টেতরে কি যায়তে দিবা না। আমি তো আর হারিয়ে যাচ্ছি না দেখো এখন থেকে তো আমি তোমার কাছেই থাকবো প্লিজ আর কান্না করো না।
তহমিনা হাতের বাধন হালকা করতে সামনে এগোতেই দেখে রায়হান মাহমুদ ঠাই দাড়িয়ে। বাবাকে দেখতেই দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে নেই পিয়াস। এদিকে তহমিনা মাহমুদ এখনো চোখের জল গড়িয়ে যাচ্ছে।

~ এই যে আন্টি ও আন্টি। তুমি দেখি নিজের ছেলেকে পেয়ে সব ভুলে গেছো। আমরাও যে আশেপাশে আছি একটু দেখো
~ এ কি নিশাত মা তুই কখন এলি। আমি তো খেয়ালই করিনি। আয় আয় কাছে আয়।

~ আমি তো পিয়াসদের সাথেই এলাম তুমিই তো পাত্তা দিলা না
~ পাগল মেয়ে বলে কি। পিয়াস রে দেখে একটু ইমোশনাল হয়ে গেছিলাম। এই নে এখন আদর করে দিলাম (কপালে চুমু দিয়ে)
~ লাভ ইউ আন্টি।

~ এই প্রিয় কই।
~ তুমি যখন পিয়াসরে ধরে কাদতে ব্যস্ত তখনই ও ভিতরে ঢুকে গেছে।
~ ও। ভিতরে ঝগড়া করছে মনে হচ্ছে কেউ চলতো।

সবাই ভিতরে এসে দেখে প্রিয় আয়ান কোমড় বেধে ঝগড়াই নামছে। পাশেই নূর হামিদ (প্রিয়র খালামনি)হা করে দাড়িয়ে ঝগড়া দেখছে।
~ এই নূর এদের কি হইছে আদ ধামড়া দুই বেটায় ঝগড়া লাগায়ছে কেন
~ জানি না গো বুবু। দেখো দেখো আমার ছেলেটা কেমন ঝগড়া করছে। হায় আল্লাহ আমার সু ভাগ্য এ মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়নি তাহলে আর স্বামীর ঘর ওর হতো না।

~ তুই আমার বাড়িতে কেন এসেছিস তোর না আমার সামনে আসা মানা। ফালতু একটা। বেড়িয়ে যা এখনই আমার বাড়ি থেকে।

~ আমি তোর বাসায় এসছি কে বললো প্রিয় ভাইয়া। আজ আমি আমার খালামনির বাসায় এসছি তাই না মা (নূরের দিকে তাকিয়ে)
~ হু হু হু
~ দেখছিস। এখন তুই ও আমার ফ্রেন্ড না আর আমিও তোর ফ্রেন্ড না উই আর যাস্ট কাজিন ব্রাদার।
~ যত্তসব থার্ড ক্লাস ফালতু লোকজন কথাটা বলেই রুমে চলে যায় প্রিয়।
প্রিয় রুমে যায়তেই দাত কেলিয়ে পিয়াসের কাছে যায় আয়ান।

~ হেই লিটিল ব্রো। কি খবর। (হাগ করে)
~ একদম পার্ফেক্ট ব্রো। তোমার কি অবস্থা। প্রিয় ভাইয়ার সাথে তোমার কি হইছে আয়ান ভাইয়া।
~ আরে ওসব ধরে বসে আছিস তেমন কিছুই না একটু চটে আছে তোর ভাই আমার ওপর বুঝলি
পাশ থেকেই এবার নূর হামিদ ছুটে এসে আয়ানের কান মলে ধরে চিল্লাতে থাকে।

~ তুই কি করেছিস আগে তাই বল। প্রিয় তোর ওপর এমনি এমনি চটবে এতো আজাইরা সময় ওর নেই কোন ওকাম ঘটাইছোস তাই বল।
~ ও আহ মাাা ছাড়ো কান ছিড়ে গেলো গো ছিড়ে গেলো।
~ যাক তোর কান ছিড়ে। কি ওকাম করে বেড়িয়েছিস তাই বল আগে।

~ উহহ আহহ কান গেলো। ওকাম কি শুধু আমি একাই করি নাকি তোমরা তো প্রিয় রে কিছু বলো না খালি আমায় মারো বকো। আমার মতো মাছুম বাচ্চা রে তুমি মারো তোমার হাত কাপে না 🥺 ও খালামনি তুমি কিছু বলছো না কেন তোমার বোন রে তোমার সামনে আমায় মারছে।
~ প্রিয় তোর মতো আকাম করে বেড়ায় না রে বজ্জাত বেটা। তুই বলবি নাকি আমি তোর কান ছিড়ে ফেলবো আয়ান
~ আরে নূর ছাড়। ছাড় তো কান ছেড়ে কথা বল লাগছে তো ওর।

~ বুবু ওর হয়ে কোনো ছাপাই গায়বে না একদম তুমি। কিছু না বলে বলে মাথায় চড়ে গেছে। প্রিয় কখনো ওর ওপর এমনি রাগতে দেখছো আর আজ এতো রাগ মানে অনেক বড় ঘটনায় ঘটায়ছে। (কানে জোড়ে মুড়া দিয়ে)
~ চুমু চুমু। আআআআআআ ও খালামনি গো বাচাও গো মেরে ফেললো তোমার দজ্জাল বোন আমারে।

~ চুমু কিসের চুমু (কান ছেড়ে দিয়ে)
নূর হামিদের মুখে চুমুর কথা শুনেই জিভ কেটে দৌড়ে গিয়ে কল্পর পিছে লুকায় আয়ান।
কারন সত্যিটা জানলে তার পিঠে আজ কইটা খুনতার দাগ পরবে তার হদিশ নাই।

~ এই নিশু নিশু বাচাও বাচাও প্লিজ। আমি তো ক্ষমা চেয়েছি বলো প্লিজ এই দজ্জাল গুলার হাত থেকে আমায় রক্ষা করো।
আয়ানের মুখে হঠাৎ নিশু নাম শুনে একটু অবাক হলো কল্প। সচারাচর আয়ান তাকে কল্প নামেই ডাকে হঠাৎ নিশু বলার কারন উদঘাটন করার চেষ্টা করলেও এই পরিস্থিতিতে তা সম্ভব না হয়তো আয়ান এমনিই বলেছে।

~ বুবু কে মেয়েটা
~ আরে ও তো প্রিয় আর আয়ানের ফ্রেন্ড। এদিক আয় পরিচয় করিয়ে দিই। ও হলো নিশাত। খুব ভালো মেয়ে বুঝলি। রুপে গুনে সবদিক হতে মাশাআল্লাহ।
নিজের বোনের মুখে একটা মেয়ের এতো তারিফ নূরের ঠিক হজম হচ্ছে না। সাধারনত কোনো মেয়েকেই তহমিনার এতো পার্ফেক্ট মনে হয়নি আর কখনো এমন ভাবে কারো সু~খ্যাতি ও করতে শুনেনি।

~ আর নিশাত এ হলো নূর আমার একটা মাত্র ছোট বোন। আয়ানের মা।
~ ওহ আসসালামু আলাইকুম আন্টি।

~ ওয়ালাইকুম আসসালাম। তোমায় তো আগে এদের সাথে দেখিনি।
~ ও তো নতুন ওদের নতুন ফ্রেন্ড। তোর বাসায় যায়নি তাই চিনিস না।
~ ওহ।
~ আন্টি একটা কথা। আয়ানের আম্মু মানে প্রিয় আয়ান কাজিন
~ আরে হ্যা তো কেন তুই জানতি না।
~ না তো ওরা বলেনি।

~ সারপ্রাইজ
~ সারপ্রাইজ তোরে দেখাচ্ছি দারা তুই।
আয়ান এক ছুটে বাড়ির বাইরে। পিয়াস ওপরে যায় ফ্রেস হতে। রায়হান মাহমুদ অনেক আগেই রুমে চলে গেছেন,
নূর চল রান্না করতে হবে, নিশাত মা তুই নাস্তা করেছিস তো সকালে।

~ না গো আন্টি। ঘুম থেকে তুলে নিয়েই তো একবারে এয়ারপোর্ট নিয়ে গেছে প্রিয় খায়তেও দেয়নি
~ সে কি দেখছো ছেলের কান্ড। মেয়েটাকে না খাইয়ে আনছে বলেও নি। মা তুই যা হাত মুখ ধুয়ে আয় প্রিয়র রুম থেকে আমি খাবার দিচ্ছি
~ আচ্ছা আন্টি। প্রিয় ও খায়নি।
~ ঠিক আছে আমি দুজনেরটায় দিচ্ছি তুই ফ্রেশ হয়ে ওরে ডেকে আনিশ,

বুবু তোমার ঘটনা কি বলো তো এই মেয়ের প্রতি এতো কেয়ারিং। কুচ তো গার বার হে
~ কতো লক্ষি মেয়ে দেখেছিস। প্রিয়র সাথে সেই মানায় না বল। আমি তো চায় ওই বাইকওয়ালির পেছন ছাইড়া ছেলেটা আমার হিরে চিনে ঘরে আনুক।
~ তুমি কি হিরে বলতে নিশাতকে মিন করছো।
~ বেশি বকিশ তুই নূর। থাক তুই আমি ওদের খাবার দিই।

কল্প প্রিয়র রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখে পুরাই অন্ধকার। ফোনের ফ্লাস অন করে রুমের সুইচ বোর্ড খুজে লাইট জ্বালাতেই দেখে এসি অন করে কাথা মুরি দিয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে সে। কল্প পার্স ফোন সোফায় রেখে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ফ্রেস হয়ে এসে প্রিয়কে অনেক বার ডেকেও সাড়া না পাওয়ায় বেড়িয়ে যায়।
~ আন্টি তোমার ছেলে ঘুম। অনেক ডেকেছি উঠছে না।
~ আচ্ছা তুই খেয়ে নে আমি ওকে ডেকে খাবার দিয়ে আসছি।

কল্পর খাবার শেষেও প্রিয়র ওঠার নাম নাই।
~ না রে মা উঠবে না। বের করে দিলো আমারে দুপুরের আগে ওর রুমে ওঠা নিষিদ্ধ। এখন তুই তাহলে পিয়াসের সাথে কথা বল আয়ান টাও তো বেড়োলে কোনো খোজ নাই। আমি যাই রান্না করতে হবে অনেক। ছেলেটা এতোদিন পর বাড়ি ফিরলো।

~ আন্টি তুমি কিছু মনে না করলে আজকের রান্নাটা আমি করতে চায় প্লিজ প্লিজ।
~ তুই রান্না করতে পারিস।
~ হ্যা
~ না তাও থাক তুই তো আজ আমাদের অতিথি আর রান্না ও অনেক পারবি না মা।
~ আন্টি কি যে বলো না। আমি সব পারবো। তুমি শুধু আমাকে দেখিয়ে দাও কোথায় কি তারপর আমি সব করে নিবো।

~ না তাহলে চল দুজনে মিলেই সব করবো।
~ না না আন্টি আজ সব আমি একাই করবো। তুমি শুধু আমারে জিনিস গুলা দেখিয়ে দাও।

তহমিনা না চাইলেও কল্পর জোড় করায় রাজি না হয়ে পারলো না। তহমিনা সাথে থাকতে চাইলেও কল্প নারাজ। শেষ মেষ। তহমিনা আর নূর চলে আসলে কল্প একাই রান্না শুরু করে। দুপুর 1:30 এ রান্না শেষ হয় কল্পর। ঘেমে নেয়ে একশা অবস্থা। বাইরে থেকে অনেক দারুন দারুন সুবাস পাচ্ছে তহমিনা। আয়ান এসে একবার পাক ঘরে ঢুকতে চাইলেও অনুমতি মেলেনি কল্পর।

~ ও আন্টি আমার রান্না শেষ এখন একটা শাওয়ার নেওয়া খুব জরুরি কি করি বলো তো আমার তো আর ড্রেস নাই
~ তুই এই অবস্থায় আর বসিস না এখানে। আমার রুমে তো প্রিয়র বাবা রইছে। আর পিয়াস আয়ান ও পিয়াসের রুমে প্রিয় তো ঘুমাচ্ছে তুই বরং প্রিয়র বাথরুমে যা আমি কাপড় আনছি।

~ প্রিয়র রুমে
~ সমস্যা আছে নাকি। আরে ও তো ঘুমাচ্ছে সমস্যা নাই তুই যা।

কল্পর শরীর ঘামে চপচপ করছে তাই আর বেশি না বকে প্রিয়র রুমে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। একটা লং শাওয়ার নেই এর মধ্যে তহমিনা এসে কাপড় ও দিয়ে যায়। ওনার অনেক আগের একটা ব্লাউজ। নতুনই বাট ছোট হওয়ায় ওটা কল্পর জন্য পার্ফেক্ট আর একটা শাড়িও দিয়ে যায় তহমিনার। কল্প কোনো রকম শাড়ি পেচিঁয়ে বাইরে বেড়িয়ে চুলটা ঝেড়ে নেয়। প্রিয় এখনো ঘুমাচ্ছে।
~ কি মহিশের মতো ঘুম রে বাবা এতোক্ষনেও ভাঙেনি। এই প্রিয় প্রিয়।

ডেকে সাড়া না দেওয়ায় এবার প্রিয়র কাছে গিয়ে ধাক্কা উঠাতে নিলে প্রিয় এক হাত দিয়ে কোলবালিশ ভেবে কল্পর কোমড় পেচিঁয়ে ধরায় কল্প কিছুটা ঝুকে পড়ে প্রিয়র ওপর। যাতে করে কল্পর ভিজা চুলের পানি টপটপ করে প্রিয়র পিঠে পড়তে থাকে।
~ আরে কি করছো ছাড়ো। প্রিয় আরে এ কেমন ঘুম অসহ্য। কল্প এবার হাত বাড়িয়ে টি টেবিল থেকে পানির পট নিয়ে পুরো পানি প্রিয়র গায়ে মুখে ঢেলে দেয়। প্রিয় ধরফর করে উঠে বসে।

~ কে রে
রেগে পাশে তাকাতেই কল্পকে দেখে পুরো ফ্রিজড হয়ে যায় প্রিয়।
~ তু তুমি।

~ কি ফালতু ঘুম তোমার। বিরক্তিকর। আর এভাবে চেপে ধরার কি মানে হ্যা। কোমড়ের হাড্ডি উল্টায় গেছে আমার।
~ আমি কখন
~ কখন মানে পানি না ঢাললে কি এমনি ছাড়ছো।
~ এসব কি পড়ছো।
~ কেনো শাড়ি।

~ এই অগোছালো সবুজ শাড়ি স্নিগ্ধ মুখ খানা এলোমেলো চুলের মাতাল করা ঘ্রান টানা চোখের লম্বা লম্বা পাতলা ভেজা পাপড়ি। গোলাপি চিকন ঠোট লম্বা নাক আবারো এই সাংসারিক কল্পর প্রেমে পড়ে গেলাম। এবার বোধয় আর বাচার উপায় নেই এইখান টায় (বুকে হাত রেখে) কেমন ব্যাথা করছো গো মেঘপরীএই বুঝি হার্টটা বেড়িয়ে এলো। এভাবে পাগল করার কি খুব দরকার ছিলো।

~ এই কিসব পাগলের প্রলাপ করছো। মাথা টাথা গেছে নাকি। যেতেও পারে এমন মহিষের মতো ঘুমায়লে তো মাথা খারাপ হবেই। যাও ফ্রেশ হয়ে শাওয়ার না ও (ধমক দিয়ে)
কল্প প্রিয়কে বকতে বকতে বাইরে চলে যায়। প্রিয় এক নজরে এখনো কল্পকে দেখে যাচ্ছে এ চোখের তেষ্টা জেনো মিটবার নই।
~। বাঘিনী এ কোন রুপ দেখালে গো। এবার যে দূরে থাকা মহা মুশকিল, সব এই মেয়ের ফন্দি। পাগল হয়ে যাবো আমি উহহহহ
নিজের মাথার চুল টানতে টানতে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় প্রিয়।

পর্ব ২৫

কল্প দরজা ঠেলে বেড়োতেই অবাক হয়ে তাকিয়ে রয় নূর।
~ মাশাআল্লাহ।

কল্প শাড়িটা এদিক সেদিক টেনে টুনে ঠিক করার চেষ্টা করে এতোক্ষনে তার খেয়াল হয়নি কেউ তার দিকে চেয়ে আছে নূর হামিদের কথা নজর তুলে তাকায় কল্প।
~ ওহ খালামনি। দেখো না আন্টি শাড়িটা দিয়ে আসলো কিন্তু আমি তো শাড়ি পড়তে পারি না কোনো রকম পেচিয়ে রেখেছি খালি (মুখ ফুলিয়ে)
নূর হামিদ এখনো কল্পকে বেশ খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে যাচ্ছে। একটা মেয়েকে এমন অগোছালো ভাবেও এমন সুন্দর লাগতে পারে এটা তার ধারনার বাইরে ছিলো। নূর হামিদকে কিছু বলতে না দেখে কল্প আবার ডাক দেয়।
~ ও খালামনি প্লিজ একটু শাড়িটা ঠিক করে পড়িয়ে দাও।

~ হ্যা আসো আসো দিচ্ছি।
ঘোর কাটিয়ে কল্পকে একটু সাইডে এনে শাড়িটা ঠিক করে দেয় নূর হামিদ।

বাহ আজ যে সারা বাড়ি খাবারের সুগন্ধে মো মো করছে। কই গো তহমিনা জলদি জলদি খাবার দাও সুগন্ধে তো খুদা দ্বিগুন বেড়ে গেলো।
~ হ্যা গো দুলাভাই। আজ মনে হচ্ছে হরেক রকম রান্না হইছে কিন্তু এখনো দেখার সুযোগ পায়লাম নাহ। বুবু তো গোসলে।
খালামনি। আংকেল আপনারা বসুন আমি খাবার দিচ্ছি। আন্টি এখনই চলে আসবে।

কল্প খাবার আনতে গেলে নূর হামিদ আর রায়হান মাহমুদ বেশ উত্তেজনা নিয়েই চেয়ার টেনে বসে গেলেন ততক্ষনাৎ বাকি সবাই এসে হাজির। কল্পর খাবার আনা দেখে সবাই অবাক। একটা দুইটা পদ না হরেক রকম পদের রান্না। সব সে একাই করছে। তহমিনা নূর করতে চাইলেও কল্প না করে দেয়।
কল্প সবার প্লেটে ভাত বেড়ে দিচ্ছে আর সবাই তো ব্যস্ত খাবার গুলা দেখতে। পোলাও। গরুর মাংস, ডিম ভুনা। মাছ ঝোল। চিংড়ি মাছের মালাইকারি। ছোট চিংড়ি ভাজি। রোস্ট। বেগুন ভাজি। সালাদ।
~ মা আজ এতোকিছু কেনো।

~ আমি তো নিজেও জানি না এতো কিছু রান্না হয়ছে।
~ মানে কি তুমি রান্না করছো আর তুমি জানো না।
~ আরে দুলাভাই বুবু কখন রান্না করলো আজ তো সব নিশাত একা করছে।

~ সে কি তহমিনা গেস্ট এনে তুমি তাকে দিয়ে রান্না করাচ্ছো,
~ না আংকেল মানে নিজেই জোড় করছিলাম
~ আরে তুই মন খারাপ করছিস কেন তুই তো আমার মেয়েই। এখন সবাইকে সার্ফ কর।

~ হুম
~ পিয়াস আর প্রিয়র জন্য চিংড়ির মালাইকারি,
~ আপু তোমায় কে বললো আমার চিংড়ি পছন্দ।
~ আন্টি।

~ মা তুমি দাড়িয়ে কেনো বসে আমাদের সাথে খেয়ে নাও।
~ না না আংকেল আপনারা শেষ করুন তারপর আমি
~ সে কি কথা নিশাত বস আমাদের সাথেই খাবি তুই। প্রিয়র পাশে চেয়ার খালি আছে বসে পর তো।

কল্প ও আর না করতে পারে না বসে খাওয়া শুরু করে সবার সাথেই। খাওয়ার মাঝেই আয়ান বলে উঠে ~
~ ওহ নিশু ভাবি কি রেধেছো। লা জাবাব 😋😋 খুব খুব খুব মজা হইছে। রোস্ট টা তো পুরাই রেস্টুরেন্ট ফেইল,
আয়ানের কথায় সাথে সাথে কল্পর গলায় খাবার বেধে কাশ উঠে যায়। প্রিয় কল্পর সামনে পানি এগিয়ে দেয়।
~ রিলেক্স নিশু। নাও পানি খাও।

প্রিয়র কথায় জেনো কল্পর আরো একবার বিষম খাওয়ার উপক্রম। আড় চোখে প্রিয়র দিকে তাকালে দেখে প্রিয় খাওয়ায় ব্যস্ত জেনো অন্য কিছুতে আর ধ্যান এখন তার সবচেয়ে বড় কাজ হলো খাবার খাওয়া। কল্প এটাই ভাবতে থাকে যে প্রিয় ভুলেও কল্পকে কল্প আর মেঘপরী বাদে নিশু তো দূর অন্য কিছু ও বলে না তাহলে এখন। কল্পর চিন্তার মাঝেই রায়হান মাহমুদ ভ্রু কুচকে আয়ান কে প্রশ্ন করে ~
~ ভাবি কে।

~ ভাবি? কই ভাবি কার ভাবি
~ এখনই তো তুমি নিশাত কে ভাবি ডাকলে।

~ ওহ না মা মানে নিশাতকে দেখতে পুরোই তো বউ বউ লাগছে শাড়িতে পুরো ঘরোনি লাগছে পাশে প্রিয় তাই একটা ভাবে বলে ফেলেছি (জিভ দিয়ে দাত কেটে)
~ মুখে লাগাম লাগিয়ে কথা বলো আয়ান (গম্ভীর কন্ঠে)
আবার সবাই খাওয়ায় মনোযোগী হয়। হঠাৎ ই একটা ঠান্ডা হাত কল্পর কোমড় ছোয়ায় কল্প তরাক মেরে মাথা উঠিয়ে প্রিয়র দিকে তাকায়। প্রিয় এখনও শান্ত ভাবে খেয়ে যাচ্ছে। জেনো কিছুই হয়নি। কল্প কোমড় থেকে নিজের হাত দিয়ে প্রিয়র হাতটা সরানোর চেষ্টা করলে তাতে প্রিয় আরো জোড়ে কোমড় চেপে ধরে। কল্প কাতুকুতু তে শেষ। দাতে দাত চেপে হাসি আটকে যাচ্ছে কল্প এদিকে রাগ ও লাগছে প্রিয়র ওপর।
~ আপু তুমি তো অস্থির রান্না জানো। সবগুলা রান্না জোস হইছে।

কল্প মাথা উচিয়ে হালকা হাসি দেয় কিন্তু প্রিয় এখনও হাত দিয়ে কোমড়ে হাত বুলিয়ে সুরসুরি দিচ্ছে কল্প আর সহ্য করতে না পেরে উঠে দাড়িয়ে যায়।
~ আরে কি হলো তুমি দাড়িয়ে গেলে কেনো (নূর)
~ পেট ভরে গেছে খালামনি।

~ আরে নিশাত তুই তো কিছু খাসই নি সব খাবার প্লেটেই রয়ে গেছে। বস আগে খেয়ে নে সবটা।
~ আন্টি প্লিজ তোমরা খাও আমি আর খেতে পারবো না।

কল্প কোনো রকম হাতটা ধুয়ে প্রিয়র রুমে চলে যায়। সবাই খাওয়া শেষে রেস্ট নিতে গেলে প্রিয় ও রুমে যায় সাথে আয়ান ঢুকতে গেলেও ঢুকতে দেয়নি প্রিয় এক রকম জোড় করেই তাড়িয়ে দিছে। প্রিয় রুমে ঢুকে দেখে কল্প সোফায় বসে ফোন ঘাটছে।
~ কি ব্যাপার না খেয়ে চলে আসলে কেনো।
প্রিয়র কথাটা শুনেই আগুন জ্বালানো চোখে তাকায় প্রিয়র দিকে।

~ এভাবে দেখছো কেনো আমি কি করছি 😒
~ জানো না কি করছো।
~ উহু। কি করছি বলো তো
~ এইসব বিয়াদবির মানে কি প্রিয়।

~ কোন সব
~ কোমড়ে কেনো হাত দিছিলা (দাতে দাত পিষে)
~ তো এতে দোষের কি আর এটা যদি দোষেরও হয় তাহলে তুমি শাড়ি পড়ছো এটা ও দোষের (কল্পর পাশে বসতে বসতে)
~ মানে
~ মানেটা সিম্পল। তুমি শাড়ি পড়ে কোমড় বের করে রাখলে আমার হাত সেখানে যাবেই এখানে আমার কি দোষ।
~ ওটা খেতে বসেছিলাম তাই পাশ থেকে একটু উঠে গেছিলো (দাতে দাত কেটে)
~ আমি কি জানি। এখন হা করো তো দেখি।

~ খাবার আনছো কেন এখন আমি খাবো না। তখন তো খেতে দিলা না 🥺
~ আমার হবু বউটা প্রথমবার তার হবু শশুড় বাড়ি এসে নিজ হাতে খাবে এটা ঠিক পছন্দ হলো না গো তোমার হবু বরের।
~ এটা প্রথম না দ্বিতীয় বার (মুখ ফুলিয়ে)
~ হইছে এখন হা করো।

প্রিয় নিজ হাতে কল্পকে খাইয়ে দিতে থাকে। আর কল্প এক ভাবে প্রিয়র চোখে চোখ রেখে খায়তে থাকে।
~ আমার বাইকার বউটা যে এতো ভালো রান্না জানে এটা তো আমার জানা ছিলো না।
~ আপনার বাইকার বউ সবই পারে
কল্পর কথায় প্রিয় হালকা হাসে। শেষ লোকমায় প্রিয়র হাতে একটা জোড়ে কামড় বসিয়ে দেয় কল্প।

~ আহহহ কল্প
~ ঠিক করেছি। রিভেন্জ। তখন আমার কোমড়ে হাত দেওয়ার জন্য
~ উহহহহ ডেন্জারাস।
~ হু।
প্রিয় খালি প্লেট নিয়ে চলে যায় কিচেনে রাখতে। তারপর হাত ধুয়ে এসে আয়ান আর পিয়াস কে ডেকে চারজনে বেশ কিছুক্ষন আড্ডা দেয়। বিকালে কল্প যেতে চাইলে বাধ সাদে তহমিনা। রাত থাকতে বললে প্রিয় স্ট্রেট না করে দেয়া। কল্প ও থাকতে নারাজ তাই তিনি বলেন সন্ধ্যায় নাস্তা করে যায়তে।
বিকালে বাসার সবাই গার্ডেনে বসে গল্প করলে কল্প সবার জন্য চিকেন ফ্রাই আর সস করে নিয়ে আসে।

সন্ধ্যা নামার কিছুক্ষন বাদেই প্রিয় কল্পকে বাসায় ড্রপ করে দেয়। এদিকে তহমিনা মাহমুদ তো খুশিতে গদগদ। তার ডিসিশন ফাইনাল এই মেয়েকেই সে ঘরের বউ করে আনবে। উনি প্রিয় কল্প দুজনকেই দেখেছে একটা অন্য রকম সম্পর্কের দিকে। সাধারন ফ্রেন্ড এতোটা ক্লোজ হবে বলে তার ধারনার বাইরে আর কোনো ফ্রেন্ড নিশ্চয় এমনভাবে একদিন এসেই রান্না বান্না করতে চাইবে না আর আজকাল কার মেয়েদের তো কিচেনের সামনেও পাওয়া মুশকিল। নূরের ও খুব পছন্দ হয়েছে মেয়েটাকে। রায়হান মাহমুদ ও কল্পকে পছন্দ তবে সেটা শুধুই প্রিয়র ফ্রেন্ড হিসেবে উনি সেভাবে ওদের সম্পর্কটা নিয়ে ভাবেনি।

পর্ব ২৬

কফি হাউসে মুখোমুখি বসে আছে দুজন। একজনের মুখে ভর করেছে দুনিয়ার অসহ্য অনুভুতি সাথে রাগ সাথে বিরক্তি। তিনে মিলে মিক্সড একটা অন্যরকম সে অনুভুতি। আরেকজন তো বেশ আরাম করে কফি খাওয়ায় মনোযোগী। তার সামনে যে একটা বোম রইছে যা যেকোনো সময় ব্লাস্ট হতে পারে জানা সত্তে ও সে রিলেক্স করেই কফি খাচ্ছে। সে হইতো জানতো এমন একটা পরিবেশ আসতে চলেছে হতেও পারে রিলেক্স মানুষটি সাথে বোম ফিউজ এর মন্ত্র ও শিখে এসেছে তাই সে এতো রিলেক্স।

প্রিয়বিরক্ত ভরা কন্ঠেই নামটা উচ্চারিত হলে বিপরীত মানুষটাও জবাবে বলে এ কি তুমি কফি খাচ্ছো না কেনো। অনেক মজা কিন্তু। আমার তো শেষ হয়ে গেলো। খাবে না বুঝি। তাহলে দাও আমিই খায়। তুমি বরং তাহলে অন্য কিছু নাও। হেসে দিয়ে কথাটা বলে হাত বাড়িয়ে কফি নিতে গেলে আবারো গম্ভীর কন্ঠে উচ্চারিত হয়
পুরো কফি হাউস খেয়ে নাও কোনো প্রবলেম কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দাও প্রিয়। তুমি আমার রাগ জানো। আমি কিন্তু বেশিক্ষন আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না। নাও ইউ বি সিরিয়াস এন্ড আন্সার মি প্লিজ।
~ মেঘপরী তোমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। এই কোল্ড কফিটা বরং তুমিই খাও। আগে মাথাটা ঠান্ডা করা প্রয়োজন বুঝছো।

আমার করা প্রশ্নের উত্তর পাইলেই আমার মাথা অটো ঠান্ডা হয়ে যাবে এসব কোল্ড কফির প্রয়োজন পড়বে না। (দাতে দাত চেপে)
~ ওকে নাও আই আম সিরিয়াস। এক এক করে তোমার কোয়েশ্চেন শুরু করো।
ওয়ান ~ পিয়াসের সামনে সেদিন আমার নিকনেম বলতে কেনো বাধ সেধেছিলে?

~ তুমি বলেছিলা তোমার নাম নিশাত আয়রা। এখানে তোমাকে জানার জন্য এই নামের বেশি কিছু জানার প্রয়োজন আমি দেখিনি। কল্পটা না হয় শুধু আমার জন্য থাক 🙂 এবার নেক্সট
তোমার কথা মতো পরশু সারারাত বসে আমাকে রেসিপি মুখস্থ করতে হয়েছে। কেননা তোমার কি আবদার কাল তোমার বাসায় গেলে তুমি আমার হাতের রান্না ছাড়া খাবে না তাও আবার এতোগুলো আইটেম, এমনকি সকালে ইচ্ছা করেই খাও নাই। কিন্তু এটা যদি শুধুই আমার হাতের রান্না খাওয়ার ইচ্ছা থাকতো তাহলে তুমি আমাকে এমনিও বলতে পারতে আমি বাসা থেকে রান্না করে নিয়ে যেতাম তোমার জন্য কিন্তু না তোমার বাসায় গিয়ে রান্না করতে হবে কেনো। তোমার বাসার সবাইকে ইম্প্রেস করার জন্য? হ্যা বলো।

~ ইউ আর সো ইন্টিলিজেন্ট মেঘপরী 😊
তার মানে আমার ভাবনায় ঠিক। সবাইকে ইম্প্রেস করানোই ছিলো তোমার উদ্দেশ্য? আমার হাতের রান্না খেতে চাওয়া বাহানা মাত্র।
~ রথ দেখাও হলো কলা বেচাও হলো। প্রবাদটা শুনছো তো। ব্যাপারটা এখানে সেরকমই। উদ্দেশ্য ইম্প্রেস করানো হলেও তোমার হাতের রান্না খাওয়ার ইচ্ছা তো ছিলোই তাই ওটাই কাজে লাগিয়েছি।

কিন্তু এখানে ইম্প্রেস করানোর কি আছে প্রিয়। আন্টি এমনিতেও নিশাত নামক আমি টা কে পছন্দ করে কল্পকে মোটেই না। তাহলে।
~ এই বুদ্ধি নিয়ে চললে কি আর সংসার হবে কও। আম্মু আগে তোমায় শুধু পছন্দ করতো আর এখন মনে মনে তোমার সাথে আমাকেই বিয়ে দিবে ঠিক করে ফেলছে আমার আর কোনো কাজ নাই এরপর যা করার আম্মুই করবে
এটা চিটিং প্রিয়।

~ কোথাও কোনো চিট নাই মেঘপরী। আচ্ছা একটা কথা বলো এখন ধরো আবেগে দুজনই সম্পর্কে জড়িয়ে গেলে তোমার ভাষ্যমতে পরবর্তীতে আমাদের এক হওয়া হবে না কারন আমার মা তোমাকে আই মিন কল্পকে মেনে নিবে না। আর আমি তোমার কথা মতোই রিলেশনটা আগিয়েছি। তুমি যেমন চাও তেমন আমিও চাই।

একটা সম্পর্ক শুধু সাময়িক সম্পর্ক না এটাকে আমি ভবিষৎ এ ও একটা নাম দিতে চাই। আমি তোমাকে শুধু আজ আর কালকের জন্য ভালোবাসিনি আমার ভালোবাসা এতোটা ঠুনকো না। আমার তোমাকে চাই। সারাটা জীবনের জন্য চাই আমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমাকে চাই আর তাই আমি সম্পর্ক গড়ার আগে এটার ভবিষৎ ভিত শক্ত করে নিতে চাই। যাতে করে যে কোনো সময়ে যায়ই হোক সম্পর্কের ভিত শক্ত থাকলেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। তাই বাসার সবার কাছে তোমাকে পছন্দনীয় করে তুলতে চেয়েছি। এখানে কোনো মিথ্যা নাই আর না আছে কোনো চিট।

কল্প কিছুক্ষন অবাক হয়ে প্রিয়র মুখের দিকে চেয়ে আছে। ও ভাবতেও পারেনি প্রিয় এই সম্পর্কটা নিয়ে এতোটা পজিটিভলি ভাবে। একটা সম্পর্কর দিক হতে এতোটা কেয়ারফুল,
~ কি হলো চুপ যে। এবার নেক্সট কোয়েশ্চেন করে ফেলো।
যে একটা সম্পর্ক এতোটা কেয়ারফুলি হ্যান্ডেল করে তাকে আর কিছু বলার নাই আমার। তবুও একটা বিষয়ে একটু ঘটকা আছে।
~ কোনো ব্যাপার না বলে ফেলো।

তুমি তো আমাকে নিশাত নাম ধরে কখনো ডাকো না তাহলে কাল সবার সামনে নিশু বলে কেন ডাকলা। আর আয়ান ও তো আমাকে কল্প বলেই ডাকে তবু আয়ান ও কাল সবার সামনপ নিশ
~ আয়ান তোমাকে কল্প জানার আগে নিশুই বলতো তাই হয়তো মুখ স্লিপ করে বলেছে আগের অভ্যাস থেকে। আর আমার মেঘপরীকে আমি যেই নাম ইচ্ছা সেই নামে ডাকবো এখানেও কি কিন্তু থাকতে হবে। আমার ইচ্ছা মতো নামে ডাকলে তোমার কি কোনো সমস্যা।

উহু। তবুও কোথাও একটা কিন্তু টাইপ ধোয়াশা রয়েই যায় 😓
প্রিয় কল্পর মুখে দুহাত রেখে বলে। মেঘপরীর মেঘের দেশে ধোয়াশা যে থাকবেই। তবে সব মেঘ সরে এক সময় পুরো আকাশটায় ধোয়াশা মুক্ত হয়ে যাবে। সূর্যের আলোর ন্যায় চিকচিক করবে আমার মেঘপরীর দেশটা।

বুঝলে 😊
কল্প মাথা নাড়িয়ে বোঝায় সে বোঝেনি। আসলেও সে বোঝেনি। প্রিয়র কথা গুলো মাথায় নিয়ে সেগুলো সুন্দর মতো সাজিয়ে বোঝার চেষ্টা করেও সে ব্যর্থ।
তাই প্রিয় মুখ থেকে হাত নামিয়ে কল্পর হাতর মাঝে হাত নেয়। এতো বুঝতে হবে না পাগলি। তুমিই যদি সব বুঝবে তাহলে আমার আর কাজ কি বলো তো। আর তোমাকে না বলেছিলাম তুমি এসব নিয়ে ভাববে না। না আমাকে নিয়ে আর না সম্পর্ক নিয়ে। জাস্ট ফোকাস ইওর ক্যারিয়ার। এক্সামের আর হাতে গোনা কদিন মাত্র।

এবার যদি রেজাল্টের কোনো খারাপ পজিশন হয় তাহলে তো আমার হবু শশুড় শাশুড়ি আমাকেই দোষারোপ করবে। আজ থেকে শুধু পড়াশোনা নিয়েই ভাববে। যা হবার এক্সামের পর দেখা যাবে। আর এখন থেকে আমাদের বাইরে দেখা করা। ফোনালাপ সব কিছুই অফ থাকবে। তবে আমি মাঝে মাঝে কল দিবো ওকে।
নো ওকে। এসব কি শর্ত প্রিয়। দেখা করবো না কথা বলবো না। সব ঠিক আছে। আমি পড়াশোনাটা জমিয়ে করবো কিন্তু মাঝে মাঝে দেখা আর প্রতিদিন কথা বলা লাগবে। আমার এই দুইটা কথা মানায় লাগবে আমি কোনো কথা শুনবো না।

ওকে ডান। প্রতিদিন কথা বলবো বাট সেটা দিনে একবার। কেমন।
তবুও এটা ডিফিকাল্ট হয়ে যায় অনেক 😒
কি ব্যাপার এখনই এতো ভেঙে পড়লে হবে বলো তো। আমাদের আগে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হবে তারপর অন্য কিছু। আমি তো আছিই না কি। আর এক্সাম তো মাত্র কিছুদিন।

হুম। মুখ ফুলিয়ে বলে কল্প।
মুখ ফুলিয়ে থাকলে চলবে? আমি তো ভাবছিলাম এখন রাইডে যাবো। কিন্তু এমন মুখ ফুলিয়ে থাকলে কেমনে হবে
সত্যি। 🤠
একদম। চলো চলো।

দুজন বেড়িয়ে পড়ে। রাইডের উদ্দেশ্য। কল্প বাইক স্টার্ট দিলে প্রিয় পিছে বসে। কিছুদূর যাবার পরই প্রিয় কল্পকে টাইটলি জড়িয়ে কাধে মুখ রাখে।
আরে এতো জোরে চেপে ধরেছো। হাড্ডি সব ভেঙে গেলো। ছাড়ো ছাড়ো দম গেলো আমার।
উহু ছাড়বো না। আমি কই এতো জোরে ধরেছি। হালকা করেই তো ধরেছি। চুপচাপ চালাও তো তুমি।

কল্প আর কিছু বলে না কিন্তু প্রিয় রাইডের পুরো সময়টা কল্পকে ডিস্টার্ব করেছে। কোনো না কোনো ভাবেই।
অনেকটা সময় দুজন ঘুরে কল্প প্রিয়কে ওর বাসার নিচে নামাতে আসে। কল্প আসতে না চাইলেও প্রিয় জোর করে নামিয়ে দিতে বলে। প্রিয় বাইক থেকে নেমে কল্পর থেকে বিদায় নিয়ে ঘুরতেই কল্প প্রিয়র হাত ধরে কাছে টেনে নেয়। হঠাৎ এভাবে টান পড়ায় প্রিয় কিছুটা ঝুকে পড়ে কল্পর ওপর। কল্প প্রিয়র গলার কাছে মুখ নিতে গেলেই প্রিয় ফিসফিসিয়ে বলে উঠে। তুমি যা চায়তেছো তা সম্ভব না সোনা। উপরে দেখো তোমার শাশুড়ি চেয়ে আছে।

প্রিয় মজা করে কথাটা বলতেই কল্প তড়িৎ গতীতে সরে এসে উপরে তাকিয়ে দেখে বিষ্ফোরিত নয়নে চেয়ে আছে তহমিনা। কল্প অন্ধকারের দিকে থাকায় উনি কল্পর মুখ দেখতে পায় না স্পষ্ট। কিন্তু তার ছেলের যে এই মেয়ের সাথে এখনো মেলামেশা আছে সেটা উনার কাছে স্পষ্ট।
নিজেকে স্বাভাবিক করে মাথায় হেলমেট নিয়ে নিয়ে কল্প বলে। তুমি যা ভাবছো তা কিন্তু নই। আমি তো জাস্ট তিলটা ছুঁতে চেয়েছিলাম।
আমিও কিন্তু ওটাই মিন করেছিলাম তুমি অন্য কিছু বলতে কি বলতে চাইছো বলো তো।

(দুষ্টুমি করে বলে প্রিয়)
কল্প প্রিয়র কথা কানে না নিয়ে বলে। তোমার তিলটা বড্ড বিরক্ত করে। আজ রাতের ঘুমটাও হারাম করে দিবে। বলেই বাইক স্টার্ট দিয়ে প্রিয় কিছু বলার আগেই চলে যায় কল্প। প্রিয় ও মুখে হাসির রেখা টেনে বাড়ির ভিতরে ঢুকে। নিজের ভেতরই নিজেকে প্রিয় স্বাভাবিক করে নেয় কারনটা হলো তার মা। প্রিয় খুব ভালোমতো জানে বাড়ির ভেতর ঢুকতেই এখন বেশ বড় সড় একটা সুনামি হয়ে যাবে। নিজেকে সে ভাবে প্রস্তুত করেই বাসার বেল বাজাতে নেওয়ার আগেই দরজাটা খুলে যায়। আর সামনে দেখতে অগ্নিমূর্তি রুপ ধারন করে দাড়িয়ে আছে তহমিনা মাহমুদ।

পর্ব ২৭

বাড়ির পরিবেশটা এখন থমথমে ঠিক জেনো ঝড়ের পূর্বাভাস। ঝড় আসার আগে পরিবেশটা যেমন গুম মেরে থাকে এখানেও বিষয়টা তেমনই, তহমিনা মাহমুদ দরজা ছেড়ে দাড়াতেই পাশ কেটে ওপরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেই প্রিয়।

দাড়াও
গম্ভীর কন্ঠের আদেশে দাড়িয়ে যায় প্রিয়। মায়ের মুখোমুখি দাড়িয়ে জিগ্যেস করে। কিছু বলবে।
~ মেয়েটার সাথে তুমি আবার মেলামেশা শুরু করেছো।
~ মেশা বন্ধ কবে করেছিলাম।

~ প্রিয় তুমি কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত বেয়াদব হয়ে গেছো। আমার মুখে তর্ক করছো। আমার পছন্দ অপছন্দের কি কোনো দাম নাই তোমার কাছে।
~ তা কেনো। মা তুমি তো জানো আমি ওকে পছন্দ করি।
~ আর আমি মেয়েটাকে অপছন্দ করি প্রিয়। অনেক বেশিই অপছন্দ করি।
~ অপছন্দের একটা কারন বলো।

~ ও লেডি বাইকার আর এটাই আমার অপছন্দের মূল কারন।
~ আর ওকে পছন্দ করার এটাই প্রথম কারন আমার। মা এটা ওর একটা হবি। বোঝার চেষ্টা করো।

~ প্রিয় ওকে আমার মানতে কোনো সমস্যা ছিলো না যদি এই শখটা ওর না থাকতো।
~ মা ও শুধু রাতেই রাইড করে এতে সমস্যা কোথায়। আর শখ ও কি বেচে গোছে থাকতে হয়।

~ আমি কিছু শুনতে চাই না। যদি ও তোমার জীবন থেকে না যায় যদি ওরে ছাড়তে না পারো তবে এই পরিবার তোমায় ছাড়তে হবে প্রিয় এটা মনে রেখো।
~ আর যদি ও বাইক ছেড়ে দেয় তবে কি তোমার সমস্যা শেষ।
~ হ্যা। যদি ছাড়তে পারে তবে আমি স্ব~সম্মানে ওরে এ বাড়ির বউ করে আনবো। কিন্তু আমি জানি ও পারবে না ছাড়তে ওর কাছে দুটো অপশন তুমি এবং বাইক দিলে ও বাইকটাই চুজ করবে।

~ তুমি এতো কনফিডেন্টলি কিভাবে বলতে পারছো।
~ কারন শখ গুলো হয় নেশার মতো যা সবকিছুর উর্ধে থাকে প্রিয়।
প্রিয় কিছু বলতে যাবার আগেই রায়হান মাহমুদ এসে দাড়ায় তহমিনার সামনে।
~ তুমি এখানে।

~ তোমাদের কথা শুনে আর ঘরে দাড়াতে পারলাম কই। প্রিয় রাত হইছে রুমে যাও আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।
~ খেয়ে এসেছি বাবা। গুড নাইট।
প্রিয় চলে গেলে রায়হান মাহমুদ তহমিনার চোখে চোখ রেখে দাড়ায়।

~ তুমি আবারো সেই ভুলটায় করছো তমু। নিজের জেদ তুমি ছেলের ওপর দেখাতে পারো না।
~ কেনো পারি না। আমাকে তো কোনো ছাড় দেওয়া হইছিলো না। দিছিলা বলো?
~ তখনকার সময় আর এই সময়টার মধ্যে অনেক তফাৎ তমু। তুমি ওই একটা কারনের জন্য প্রিয়কে কেনো কষ্ট দিবে।
~ তোমার সাথে কথা বলতে মোটেও ইচ্ছা করছে না আমার।

কথাটা বলেই পাশ কাটিয়ে চলে যান তহমিনা।
রায়হান তহমিনার যাবার পথে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে উনিও রুমের পথে পা বাড়ান।

সময়টা অনেক দ্রুত বেগে চলতে থাকে। তার সাথে নিয়ম মেনে চলতে থাকে মানুষের জীবন গতি। কেউ থেমে নেই সবাই ব্যস্ত নিজ কর্মে। সেদিনের পর থেকে তহমিনা ও ছেলের সাথে বিনা দরকারে কথা বলে না। এদিকে প্রিয়দের এক্সামের আর মাত্র দুদিন বাকি। দুজনই ব্যস্ত পড়াশোনায় তাই বলে ভালোবাসায় কমতি নেই তাদের মাঝে। ক্ষনে ক্ষনে খোজ নেই দুজন দুজনার।

তখন বিকাল পেড়িয়ে সন্ধ্যা নামার সময়। তবে বাহির দেখে বোঝার উপায় নাই এটা দিনের কোনো সময়। ঘন কালো আধার নেমেছে বাহিরে ঝুম বৃষ্টির শনশন শব্দ সাথে বাতাসের শা শা শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ বাহিরে নাই। প্রিয় পড়তে পড়তে টেবিলেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে হঠাৎ ফোনের টোন বেজে উঠায় ধরফরিয়ে উঠে বসে চোখটা কচলে ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করে। ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপর পাশ থেকে শুধুই বৃষ্টির শনশন শব্দ শোনা যাচ্ছে। এই শব্দেই জেনো প্রিয় বুঝতে পারে ওপর পাশের মানুষটির অনুভুতি। প্রিয় কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে আবেগি কন্ঠে ভেসে আসে। প্রিয়।

নামটা শুনেই প্রিয়র হার্ট অনেক জোড়ে বিট করতে থাকে। হঠাৎ এমন হওয়ার কারনটা বোধে আসে না প্রিয়র। বেশ উত্তেজিত হয়েই প্রিয় কল্পকে প্রশ্ন করে।
~ কি হয়েছে মেঘপরী। সব ঠিক আছে তো?
~ ঠিক নেই কিছু। আমার এখন অনেক বড় একটা রোগে পেয়েছে। বড় বলতে যাকে বলে জটিল রোগ। এ রোগ যে সময়ের সাথে বাড়তেই আছে। এখন কি করি বলো তো।

~ রোগ মানে। দুপুরেও তো ঠিক ছিলা হঠাৎ কি হলো। কি হচ্ছে বলো আমায়। ডক্টর রে কল করছো। আন্টিরে বলছো?
~ উহু। এই রোগ সারতে সত্যিই ডক্টরের প্রয়োজন গো। ডক্টর ছাড়া এ রোগ সারবার নাহ। তাই তো কল দিয়ে ফেললাম। এখন আমার এই জটিল রোগের প্রতিকার কি বলো তো।

~ ওহ এই ব্যাপার। তাই বলো আমি তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম। তা এই জটিল রোগের লক্ষন গুলো একটু বলো দেখি তারপর দেখা যাক কি প্রতিকার পাওয়া যায়।
~ চোখের তৃষ্না, এ চোখের যে বড্ড তেষ্টা পেয়েছে। তোমাকে দেখার তেষ্টা। বড্ড জ্বালা ধরেছে চোখ দুইটায়। কিভাবে মেটানো যায় বলো তো এই চোখের জ্বালা।
~ আচ্ছা রাখছি একটু পরে কথা বলছি।

প্রিয়র এমন আচরনে বড্ড অবাক হলো কল্প। প্রিয় কিছু না বলেই কলটা কেটে দিলো। অপমানিত বোধ হলো কল্পর বাট এ সময় ভালোবাসার দেওয়াল টপকে অপমানগুলো কল্পর দুয়ারে স্থায়ী হলো না। একটা টানা নিশ্বাস ত্যাগ করলো কল্প। দু মিনিট প্রিয়র রুমের বেলকনিতে চেয়ে থেকে ফেরার কথা মনে স্থির করে নিলো। এতদূর আশাটায় বৃথা ভাবতেই কষ্ট লাগছে কল্পর। নজর পুড়িয়ে এখন মানুষটাকে না দেখলে মনের জ্বালা চোখের জ্বালা কোনো টায় মিটবে বলে মনে হলো না কল্পর। তবুও উপায়ন্তর না পেয়ে চোখ নামিয়ে বাইক স্টার্ট দিতেই হুরমুরিয়ে কেউ একটা পেছনে এসে বসলে কল্প চমকে পেছনে তাকাতেই চোখ চরক গাছ। প্রিয় তার পিছে অবিশ্বাস্য ঘটনায় মনে হলো কল্পর।

~ তু তুমি। এখানে
~ কেউ যদি তার চোখের জ্বালা নিবারনে এই মেঘাচ্ছন্ন বৃষ্টি মহলে এসে অপেক্ষা করতে পারে তাহলে আমি কেনো পারবো না তার সঙ্গ দিতে। ভালো কি সে একাই বাসে নাকি। আমারো ইচ্ছা হলো মেঘপরীটার সাথে বৃষ্টি বিলাসের।
কল্প অবাক নয়নে প্রিয়কে গিলতে ব্যস্ত।

~ তুমি কিভাবে জানলে আমি এসেছি।
~ তুমি যখন কল দিছিলা তখন আমি হালকা ঘুমের দেশে ছিলাম। তোমার ফোনে বৃষ্টির শব্দ শুনে জানালার কাছে এসেছিলাম বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে কিনা দেখতে তার একটু পরই বাইরে চোখে বুলাতে বুলাতে দেখলাম মেঘপরী তার রাজ্য নিয়ে আমার রাজ্যে হাজির হয়েছে। এখন চলো দেখি।

~ এই বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যাবে। আমি তো জাস্ট
~ এসছো তোমার ইচ্ছায় যাবে আমার ইচ্ছায়। দুজনই রেইনকোর্ট পরে আছি সমস্যা নাই আর থাকলেও কিছু করার নাই আমার এখন আমার মেঘপরীর সাথে ভীষন বৃষ্টি বিলাসের শখ হইছে। আর সুযোগ পেয়েও সেটা ছাড়ি কেমনে কও দেখি। এখান থেকে একটু দূরে যেতেই একটা গ্রামের রাস্তার মোড়ে একটা কুড়ে টাইপ আছে আর এখন আমরা সেখানে গিয়ে আমার শখ মেটাবো সোনা আর তুমি হবে আমার এই বৃষ্টি বিলাসের সঙ্গী। কোনো সমস্যা আছে
~ উহু
~ যাওয়া যাক তাইলে।

~ হুম
দুজনই ছুটে এই বৃষ্টিকে তাদের ভালোবাসার সাক্ষী রাখতে। প্রিয় জানতো কল্পর এখানে আসার উদ্দেশ্যই এটা ছিলো। আর তাই কল্পকে খুশি করতেই এতোকিছু। প্রিয় মানুষকে অল্প কিছু দিয়েই খুশি করা যায় যদি থাকে মনের মিল। আর অবাধ ভালোবাসা। কি হবে এই ইচ্ছাটুকু পূরন করলে। প্রিয় মানুষটার এই ছোট্ট ইচ্ছা পূরন করতে পারলে আর যায় হোক প্রিয় মানুষটার মুখের উজ্জল হাসিটা তো দেখা যাবে এই যে পরম সুখ বিপরীত মানুষটার জন্য

পর্ব ২৮

এক ঘন্টা যাবৎ বসে আছি। কিন্তু না ওনার কোনো খোজই নাই পূরানো হয়ে গেছি কিনা। এখন তো নেশার মতো ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছি আমিও। আমার কল ইগনোর করছে। ও মাই গড। আসুক আজ একটা হেস্তোনেস্ত করেই ছাড়বো। ওর ইগনোর করা বার করছি। কাজ কি আর কেউ করে না নাকি উনি একাই করছেন। কদিন হলো অফিস জয়েন করেছেন এর মধ্যেই এতো ব্যস্ততা হুহহহ আর দুদিন বাদে তো তার সাথে দেখা করতে লেটার লিখতে হবে আমারে।

অনয় তুমি বাবাকে ফেন করে জানিয়ে দাও ডিল টার ব্যাপারে আমি বাসায় গিয়ে ডিসকাস করে নি
~ তুমি এখানে 😳
প্রিয় কথা বলতে বলতে নিজের কেবিনে ঢুকে কল্পকে দেখে থেমে যায়।

~ তো কি অন্য কারো আসার কথা ছিলো নাকি অনয় ভাইয়া (প্রিয়র পিএ) আপনি একটু যান আপনার স্যারের সাথে আমার ইমার্জেন্সি
কথা আছে।
~ ওকে ম্যাম।

অনয় বের হইতেই কল্প এসে ডোর লক করে প্রিয়র কাছে এসে প্রিয়র কলার ধরে টেবিলে ঠেস দিয়ে ধরে।
~ এই সমস্যা কি হ্যা কি সমস্যা। কল দিছি চোখে দেখোনি নাকি আর ভাল্লাগছে না।
কল্পর জোর দেখে প্রিয় মুচকি হেসে কল্পর কোমর ধরে উচু করে পিছে ঘুরে টেবিলে বসায়।

~ আমার মেঘপরী টা দেখি অনেক রাগ করে আছে। (দু হাত কল্পর মুখে নিয়ে)
~ হাত সরাও একদম ঢং করবা না এখন। সামনে আসলেই আইসক্রিম হয়ে যাও আমি যে পনেরো টা কল দিছি সেটা দেখো নাই তুমি নাকি তোমার ফোন মঙ্গল গ্রহে ছিলো।

~ সরি তো একটু ব্যস্ত ছিলাম সোনা। বাবার একটা ডিল ফাইনাল হলো সেটার মিটিং এ ছিলাম ফোন সাইলেন্ট থাকায় একটু ও বুঝতে পারিনি। সরি (কান ধরে করুন চোখে) প্লিজ আর রাগ করিও না।
~ আমাদের এক্সাম শেষ হইছে ক’দিন হলো (এক ভ্রু উচিয়ে)
~ এইতো পনেরো দিন। কেনো?

~ আর তুমি অফিস জয়েন করছো ক’দিন জেনো?
~ আজ দশ দিন।
~ এই দশ দিনে তুমি বিশাল বড় বিজনেসম্যান হয়ে গেছো তাই না বুঝাও আমারে। তোমারে এখন কল দিলে পাই না। দেখা করার তো টাইমই নাই। একটু দেখতে ইচ্ছা হলে হয় আমারে তোমার অফিস আসতে হবে নইতো তোমার বাসা কেনো। তোমার বুঝি আর প্রয়োজন পড়ছে না যে তাই সব দায়ভার আমার হইছে। এতো ব্যস্ত হইছো তুমি যে আমার জন্য কোনো টাইমই নাই।

কল্প ভীষন রেগে কথা গুলো বলায় প্রিয় মাথা নিচু করে কল্পর সামনেই দাড়িয়ে রই। কল্প থামতে ওর হাত দুটো ধরে প্রিয় নিজের কোমড়ে নেয় আর প্রিয়র হাত দুটো কল্পর মুখে ধরে। খুব নরম স্বর করে ধীর কন্ঠে বলতে থাকে ~

~ তুমি তো জানো আমার একটা সপ্ন আছে। আর সেটা পূরন করতে হলে আমার বিশেষ অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। আর তাই তো বাবার অফিসে জয়েন করা। আমার নিজস্ব কাজটার জন্য আমাকে অনেকটা সময় এসবে দিতে হবে। আর একটা সপ্ন পূরন করতে হলে এটুকু তো করতেই হবে সোনা। একটু বোঝার চেষ্টা করো।
প্রিয়র কথায় কল্প মাথা নিচু করে আস্তে বলে। হুম
প্রিয়কে ছেড়ে দিয়ে টেবিল থেকে নেমে সোফা থেকে নিজের ব্যাগটা হাতে তুলে নেয় কল্প। বের হবার জন্য দরজার কাছে গিয়ে থেমে যায়।

~ আন্টি ফোন করেছিলো বাসায়। আম্মুর সাথে কথা বলেছে কাল ডিনারে দেখা করতে চাইছে,
~ হঠাৎ (অবাক হয়ে) আম্মু ফোন করে দেখা করতে চাইলো কেনো।?

~ আন্টি সেটা বলেনি কাল দেখা হলে বলবে বললো আর আমি তো জ্যোতিষি নই যে কারোর মন পড়তে পারবো।
~ এখনো রেগে আছো। (করুন স্বরে)
~ রাগের কি বললাম আমি। যাগ্গে আজ লান্স কোথায় করবে?
~ বাসায়।
~ কয়টাই?

~ অফিস থেকে বের হইতে 1:45 বেজে যাবে।
~ আন্টিরা রাতে ফিরবে।
~ হুম
~ বাই।
~ মেঘপরী।

~ পিছন থেকে ডাকতে নাই জানো না। নিজের কাজ করো। আসছি।
আর কোনো কথা না শুনেই কল্প গটগট করে বেড়িয়ে যায়। প্রিয় মুখটা কালো করে থাই দেওয়ালের সামনে গিয়ে দাড়ায়। পর্দা টানা ছিলো সেটা সরাতেই বাইরেটা স্পষ্ট হয়, প্রিয় দাড়িয়ে কল্পর যাওয়া দেখতে থাকে।

‘সত্যিই এক্সাম শেষে মাত্র একবারই কল্পর সাথে বাইরে দেখা করেছে আর সময় হয়নি। এরপর যতবারই দেখা হইছে ততোবারই কল্প নিজে এসছে হইতো ওর বাসায় নইতো অফিসে। বাসায় আসলেও দু পাচ মিনিট এর বেশি সময় দিতে পারে না আর ও সেই দু পাচ মিনিট কথা বলেই আম্মুর সাথে গল্প করে ফিরে যায়।

আর অফিসে আসলেই বেশ খানিক সময় অপেক্ষা করে তবেই দেখা মিলে, আজকাল এক বারেই সময় দেওয়া হচ্ছে না কিন্তু আমিও তো কাজ শেষে যথা সাধ্য চেষ্টা করি তবে দিন শেষে লো এনার্জিতে আর কোনো কিছুই ইচ্ছা হয় না। তারপর ও মেয়েটার ও তো ইচ্ছা হয় একাকি সময় কাটানোর। এদিকে কাজের চাপ বাড়তেই আছে, ।
কথা গুলো ভেবেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পর্দা টেনে নিজের চেয়ারে বসে শরীরটা এলিয়ে দেয়।

মন ভালে না থাকায় 1 টার ভিতরই বাড়ি ফিরে আসে প্রিয়। বাসায় পিয়াস থাকায় বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করে দেয়। কিন্তু বাসায় ঢুকে চরম অবাক হয় প্রিয়। শাড়ির আচঁল কোমড়ে গুজে চুলে হাত খোপা করা। মুখের সামনে কিছু ছোট চুল উড়ছে যা দেখেই বোঝা যাচ্ছে কল্পর জন্য চরম বিরক্তির কারন হয়ে দাড়িয়েছে। ছুটে ছুটে সে ডায়নিং এ খাবার সাজাচ্ছে ভীষন ব্যস্ততা নিয়ে। আর কোনো দিকে তার খেয়াল নেই, প্রিয় এখনও অবাক চোখেই কল্পকে পর্যবেক্ষন করতে ব্যস্ত। তখনই গলা ছেড়ে পিয়াসকে ডাকে কল্প।

~ পিয়াস আমার রান্না শেষ। তোমার শাওয়ার শেষ হলে নিচে আসো। তোমার ভাই ও চলে আসবে এখনই।
~ এইতো আপু চলে এসেছি
কথাটা বলতেই পিয়াসের চোখ যায় মেইন ডোরে দাড়িয়ে নির্বাক চোখে চেয়ে থাকা মানবের দিকে।

~ আরে ভাইয়া তুমি কখন এসছো। আর এখানে দাড়িয়ে কেন ভিতরে আসো। আজ সব তোমার পছন্দের রান্না হইছে যাও যাও জলদি ফ্রেশ হয়ে আসো,
পিয়াসের কথায় কল্প পিছনে তাকিয়ে দেখে প্রিয় এখনো অবাক চোখেই তাদেরকে দেখছে।
~ তুমি কখন এসছো।
~ তা জেনে তোমার কাজ কি। ফ্রেশ হয়ে আসো আমি খাবার দিচ্ছি।
~ হুম।

বলেই মাথা নিচু করে রুমে চলে যায় প্রিয়। কল্প পিয়াসকে ডেকে টেবিলে বসিয়ে খেতে দেয়,
~ তুমি শুরু করো আমি আসছি।
বলেই প্রিয়র রুমে যায় কল্প। রুমে ঢুকে দেখে প্রিয় আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে ভালোভাবে দেখছে আর একটা একটা করে শার্টের বোতাম খুলছে। কল্প গিয়ে প্রিয়র সামনে দাড়ায়। কল্পকে দেখে একটু চমকে যায় প্রিয়।
~ কিছু বলবে?

কল্প কিছু না বলে প্রিয়র শার্টে হাত দিয়ে বোতাম খুলতে নেই।
~ কি ব্যাপার বলো তো। এতো কেয়ার
~ আসলে। আ’ম সরি। তোমাকে না বুঝেই আমি তোমার সাথে অনেক রাগ করেছি। আমার উচিৎ ছিলো তোমার জায়গায় নিজেকে রেখে বোঝার তারপর না হয় কিন্তু আমি কিছু না ভেবেই অনেক রুড আচরন করেছি।

সত্যিই সরি (মাথা নিচু করে প্রিয়র শার্টের বোতামে হাত রেখে)
~ আরে পাগলি এতো স্যাড হচ্ছো কেনো। সরি তো আমি সোনা। তুমি তোমার জায়গায় একদম ঠিক দোষ তো আমারই একটু বেশি ব্যস্ত হয়ে তোমাকে একদম সময় দিতে পারিনি। এরকম আর হবে না বিশ্বাস করো। আর দেখো আমি একটু ও রাগ করিনি। (কল্পর দু কাধ ধরে)
~ সত্যি তো রাগ করো নি।

~ তিন সত্যি পাগলি। এরকম ভাবে পাশে থাকলেই হবে সোনা আমার আর কিচ্ছু চাই না। থাকবে তো এমন ভাবে সব সময় (করুন মুখ করে)
~ খুব থাকবো (হেসে দিয়ে) এখন যাও ফ্রেশ হয়ে আসো আমি ডায়নিং এ যায়।
~ জো হুকুম মহারানী
কল্প বের হলে প্রিয় ও মুচকি হেসে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।

পর্ব ২৯

রাত দশটা। বেঘোরে ঘুমাচ্ছে কল্প। ও বাসা থেকে সন্ধ্যার একটু আগে এসেই প্রচুর টায়ার্ড লাগায় তখনই বেডে গা লাগাতেই চোখ জুড়ে ঘুমে ভর করে। ফোন ভাইব্রেট করা ছিলো। কল আসায় সেই ভাইব্রেটই কল্পর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় যা কল্পর কাছে এখন অতিরিক্ত বিরক্তময়। ফোন হাতে নিয়ে না দেখেই রিসিভ করে কানে নেয়। ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলে উঠে। কে
~ উফফফ মেঘপরী। আমাকে পাগল করার জন্য তোমার এই ঘুমকন্ঠ টাই যথেষ্ট।

প্রিয়র কন্ঠ পেয়ে ফোন সামনে নিয়ে দেখে প্রিয়ই কল করেছে।
~ কি গো ঘুমাই গেলা নাকি আবার। বাসায় পৌছেও জানালা না কতটা টেনশন হচ্ছিলো বলো তো। তোমায় কল করলেও রিসিভ করছিলা না পরে আন্টিকে কল করাই আন্টি বললো তুমি এসেই ঘুমাই গেছো। আমি তো শুনেই অবাক। যে রাতে ঘুমাইতে পারে না সে সন্ধ্যায় কিভাবে ঘুমাই,
~ আসলে ও বাসা থেকে এসেই অনেক টায়ার্ড লাগছিলো। কখন ঘুমায় গেছি বুঝতেও পারিনি।

~ ঠিক আছে। এখন যাও তো ফ্রেশ হয়ে এসে আমাকে কল দাও।
~ হুম আচ্ছা।
~ এই এই এক মিনিট তুমি আবার ঘুমিয়ে পড়ো না কিন্তু। আমি কিন্তু অপেক্ষা করছি তাই কোনো অলসতা বাদে আগে ওয়াশরুমে ঢুকবা ওকে।
~ আচ্ছা তো।

~ কি আচ্ছা তো। যাও জলদি। যাস্ট ফাইভ মিনিট। এর মধ্যেই ফ্রেশ হয়ে ডিনার করবা টেন মিনিট’স এ ওকে। দেন পনেরো মিনিটে নিচে আসবা।
~ নিচে কেনো? আর তুমি ডিনার করছো?
~ নিচে আসতে বলছি আসবা আবার কেনো কি। তো আমি কি না খেয়ে দেয়ে কুম্ভকর্নের মতো ঘুমাচ্ছি নাকি !
~ প্রিয়
~ আরে রাগছো কেন সোনা মজা করলাম তো প্লিজ জলদি আসো।
~ হুম।

কল্প ফোন রেখে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে একটা আপেল নিয়ে খেতে খেতে নিচে নামে। ফোন বের করে কল করতে নেওয়ার আগে সামনেই তাকিয়েই প্রিয়কে দেখতে পায়। পুরো ব্লাক কিং লাগছে। ব্লাক বাইক। ব্লাক প্যান্ট। ব্লাক জ্যাকেট ভিতরে ব্লাক টি~শার্ট ব্লাক শু। ব্লাক হেলমেট।
আচ্ছা প্রতি বাইকাররেই কি এমন সাজে অসম্ভব মুগ্ধময় লাগে নাকি শুধু প্রিয়কেই লাগে। কই এমন ভাবে তো অনেক্কেই দেখছি বাট এমন তো লাগেনি যেনো অন্যদের থেকে একদম আলাদা।
কল্পর ভাবনায় বাধা পড়ে প্রিয়র ডাকে।

~ আরে কখন এসছো তুমি।
~ হ্যা !
~ কি হ্যা। বললাম কখন আসছো তুমি আর অতো দূরে দাড়িয়ে কেনো।
~ ও হ্যা এইতো এলাম মাত্রই। এখন কি আমরা কোথাও যাবো? না মানে তুমি এমন বাইকার লুকে হঠাৎ
~ ঘুরতে যাবো এখন। বউটারে নিয়া অনেকদিন তো বের হই না। জানো বউটা এত্তোগুলো অভিমান জমিয়েছে ইশশশ কতো যে রাগ করছিলো আর রাগলে তো তার খেয়ে ফে
~ থামো খালি বাজে বকো আমি রাগ করেছিলাম অভিমান কখন করলাম আর পরে তো সরি ও বলছি।

~ হুম বাদ দাও আজ ইচ্ছা হলো বউকে নিয়ে ঘুরবার। এখন উঠে পড়ো জলদি জলদি। আর বউ তোমাকে কিন্তু জোশ লাগছে 😚
~ তোমাকেও
~ জানি তো তোমার বর এমনিতেও কিউট
~ অনেক দিন পর দেখলাম এই লুকে।

~ কিন্তু তোমার এই লুকটা সেকেন্ড টাইম দেখছি তবে আজ শুধু জায়গাটা চেন্জ হবে। আজ আমি চালাবো তুমি ফিল করবা।
~ তার মানে ট্যুরে যেদিন আমি~
~ ইয়েস বেবি। সেদিন তুমি সারাদিন অসুস্থ থাকায় রুম থেকে বের হইতে পারোনি আর রাতে যখনই একটু সুস্থ হইছিলা তখনই তুমি বের হইছিলা তিশা ঘুমায় যাবার পর। আমি তখন তোমার রুমেই আসছিলাম দেখতে তোমার শরীর কেমন সেটা বাট তার আগেই দেখি রুমে থেকে বের হলে এখনকার এই লুক নিয়ে। তোমাকে ডাকার আগেই তুমি চলে গেলে আমিও তোমার পিছু নিয়েছিলাম জানার জন্য তুমি এই অসুস্থ শরীর এভাবে কোথায় যাচ্ছো বাট ভাবতেও পারিনি আমার জন্য কতো বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিলো।

~ তাহলে আমি ফেরার পর যে তুমি স্বাভাবিক
~ ইয়েস স্বাভাবিক। তুমি বুঝতেও পারোনি পুরো রাইডে আমিও তোমার সাথে ছিলাম। তবে তোমার এই লুকোচুরির কারন না জানাই তখন কিছু জানায়নি।
~ তুমি আস্তো একটা😖 আমার সব প্লানে জল ঢালা ছিলো আগেই আর আমি বুঝতেই পারিনি কি খারাপ তুমি সব জেনেও কি সুন্দর নাটক করতা।
~ আর তুমি যে লুকোচুরি করছো আমার সাথে তার বেলা। পুরা দুই বছর মাই গড। দুই দুইটা বছর তোমার পিছে ঘুরাইছো।
~ বেশ করেছি আমার দেখতে হবে না কেমন ভালোবাসো।

~ খুব তো দেখলা এবার বলো তো কি বুঝলা।
কল্প প্রিয়র বুক থেকে মুখে হাত লাগিয়ে মুখ টিপে বলে। বুঝলাম এই ছেলেটা তার লেডি বাইকারকে অন্নেক ভালোবাসে।
~ তাই না।
প্রিয় বাইক চালাইতে চালাইতেই কল্পর এক হাত মুখে নিয়ে চুমু খায়।
~ তুমি কি ডিনার করোনি।

~ আপেল খেলাম তো।
~ সেই জন্যই তো জিগাইলাম। এখন আপেল খায়লে তাহলে নিশ্চয় ডিনার করোনি।
~ কি করবো। ও বাসা থেকে আন্টি যা খাইয়েছিলো এখনো পেট জান্ক।
~ কচু খাইয়ে ছিলো।

~ এই এই তুমি তিশার হোস্টেলের রোডে কেনো যাচ্ছো।
~ কারন ওখানে তিশা আর আয়ান ওয়েট করছে।

~ তার মানে আজ আবার সবাই এক সাথে ঘুরবো (আনন্দে চিল্লিয়ে)
~ আরে আস্তে। হ্যা
~ উফফ কত্তোদিন পর কি যে ভাল্লাগছে। থেন্ক ইউ’বলেই প্রিয়র মুখ টিপে চুমু খায়’এই জন্যই তো তোমারে এতো ভাল্লাগে😘
~ পাগলি
ওরা পৌছাতে আায়ান তিশা ও ওদের যোগ হয়। অনেকক্ষন ঘোরবার পর ওরা একটা ব্রীজের ওপর থামে আর আয়ান যায় আইসক্রিম আনতে।

~ তিশু তুই তো দেখি অনেক ভদ্র হয়ে গেছিস,
~ দি তার মানে কি বলতে চাইছো আমি আগে খারাপ অভদ্র ছিলাম।
~ সে কথা বললাম কখন।

~ তা নইতো কি তোমার কথা দ্বারা তো এইটায় বোঝায় আমি আগে অভদ্র ছিলাম এখন ভদ্র হয়েছি, 😓
~ আরে নাহ আমি তো জাস্ট বললাম তুই আর ঝগড়া টগরা করছিস না দেখলাম তাই আর কি। কাহিনী কি বলতো (ভ্রু নাচিয়ে)
~ সেটা তো তোমার দেবর বলতে পারবে দি। তোমার দেবর ঝগড়া করেনি বলে আমি ও করিনি।

~ তুই রীতিমত আমার দেবর কে ঝগড়ুটে বলছিস 😒
~ 😳😲😱ও মোর আল্লাহ এই মেয়ে সে ঘরে যেতে না যেতেই প্রটেস্ট শুরু করেছে। নিজের বোনরে এভাবে বলতে পারলে দি। তুমি তো এখনই পর হয়ে গেছো 🥺 প্রিয় ভাইয়া তুমি তো কিছু বলো।

~ ঠিকই তো। তুমি আমার পাচঁটা না দশটা না একটা মাত্র শালীর সাথে এমন করছো কেনো।
ওদের কথার মাঝেই আয়ান এসে যায়।
~ এই নাও সবার আইসক্রিম। কল্প তোমারে কিন্তু আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে
~ ছিঃ নিজের ভাবিরে নাম ধরে ডাকিস লজ্জা লাগে না তোর আয়ান।

~ রাখো তোমার লজ্জা ওই ছেলে গফ রাইখা অন্য মেয়ের দিকে নজর দেও এসব কোন ধরনের ছ্যাচড়ামো হ্যা। এমনিতেও জানি আমি তোমার লুচ্চামি স্বভাব আছে তাই বলে আমার বোন রে নিজের ভাবীর দিকে নজর দাও
~ ওয়েট এ মিনিট ঝুনঝুনি তোমার এতো জ্বলছে কেনো আর তাছাড়া লুচ্চামির কি আছে আমি তো যাস্ট আমার ভাবীর প্রশংসায় করলাম। সুন্দর রে সুন্দর বলাতে লুচ্চামি লাগে বুঝি।

~ আমার লাগবে না তো লাগবে টা কার শুনি। আমার বয়ফ্রেন্ড আমি ছাড়া আমার বফ এর দায়ভার নিবে টা কে শুনি (কোমড়ে হাত বেধে)
~ 😱😱🤒এ মেয়ে বলে কি। এই ছেড়ি তুই আমার গফ কবে হলি রে। আমি কি তোকে ভালোবাসি বলছি নাকি।

~ সব কথা বলে না হৃদয় কিছু কথা বুঝে নিতে হয়ে
~ আরে ভাই এসব গাওনি বাদ দাও। ভাবী তোমার বোন রে সামলাও।
~ ভাবি কি সামলাবে হ্যা। নিজের গফ রে নিজে সামলায়তে পারো না।

~ যত্তসব পাগল ছাগল। এই যে ভাবি এই পাগলের কথা বাদ দাও তোমার কথা বলো কাল তো তোমার শাশুড়ি বিয়ের ডেট ফিক্সড করে ফেলছে তোমাদের 🥳
~ কইছে তোরে 😒
~ কওয়া কয়ির কি আছে ব্রো। খালামনি কি আর এমনি এমনি দেখা করছে নাকি।
~ তোর এসব আন্দাজের কথা রাখ তোর পকেটে। তিশু রে হোস্টেলে নামিয়ে দিস কল্প চলো।

~ এভাবে এমন একটা ডাকাতের হাতে তোর এই নিরীহ ভাইটাকে তুলে দিচ্ছিস। আমার প্রতি কি একটুও মায়া হচ্ছে না তোর
~ ছিঃ আয়ান অবশেষ কিনা আমার ভাই একটা মেয়ে রে ভই পাই ছ্যা। মান সম্মান আর রাখলি না। এই যে তিশু মনি সামলাও তোমার বফ রে।
~ এ কি ভাই কে কার বফ। এবার তুই ও ওর সাথে পাগলামি শুরু করলি।
~ লেট হচ্ছে আমাদের গেলাম ব্রো বাই। কল্প কাম।

আয়ান কিছু বলার আগেই কল্প প্রিয় চলে যায়।
~ ওরা তো গেলো এবার তোমায় কে বাচাঁবে
~ 😒
~ ওভাবে তাকিয়ে লাভ নাই। আমায় কি বললা আমি ডাকাত। খুব তো রাত হলেই কল দিয়া ফুসফাস করতে পারো আর বাইরে সবার সামনে আসলেই আমি অপরিচিত। বাহ বাহ জাতির ভাই বাহ হাজার সালাম তোমারে। এই চললাম আমি রাখো তোমার আড়ালের প্রেম তোমার পকেটে আর যদি আসছো আমার কাছে বা কল দিছো এমন উদুম কেলাবো না নিজের পরিচয় ভুলে যাবা।

কথাটা বলেই হাটা ধরে তিশা
~ এই পুচকি মেয়ে এতো রাগ করে না সরি মরিচবাতি। আর হবে না শুনো তো আমার কথা।
~ এই ছেলে আর একবার যদি আমারে এইসব নামে ডাকছো তো তোমার নাক কিন্তু আর ঠিক থাকবে না
~ আচ্ছা বাবা সরি। আসো নামিয়ে দিই।

~ আমি নিজেই যেতে পারি আল্লাহ দুইটা পা দিছে আমারে।
~ এতো রাগ করে কেউ। আমি তো জাস্ট মজা করলাম গো মরিচবাতি।
~ আবার
~ আসো আসো প্লিজ।

আয়ানের এমন গলানো কথা কোনো ভাবেই ফিরাতে পারে না তিশা। বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে তাদের সম্পর্কটা। তবে সেটা শুধু তাদের দুজনের মধ্যেই আর কেউ জানে না বললে ভুল জানাতে দেয়নি আয়ান কারনটা তিশারও অজানা তবে কল্পর ধারনাটায় ঠিক অতি ঝগড়ার নামটা একদিন ভালোবাসা নামেই ঠিকানা পায়। যেমনটা তিশা আয়ানের ক্ষেত্রে হয়ছে

পর্ব ৩০

রেস্টুরেন্টে কথা চলছে দুই পরিবারের। আলাপ পর্ব সেরেই তহমিনা কাজের কথায় আসে। এবং তহমিনার প্রস্তাবে সবাই রাজি হলেও কল্প চরম বিষ্ময় নিয়ে সেই অনেক ক্ষন যাবৎ চেয়ে আছে প্রিয়র মুখে কিন্তু প্রিয়র তাতে কোনো হেলদোল পেলো না কল্প আরো বিরক্তি নিয়েই সে নিশ্চুপ শুনে যাচ্ছে সকলের কথা।

কল্প বেশ ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করছে সকলকে সাথে তার বাবা মায়ের ভাবগতিও বোঝার চেষ্টা করছে। তাদের ভঙ্গিমাতে এতটুকু কল্পর কাছে পরিষ্কার যে তারা আগে থেকেই জানতো সবটুকু নইতো এতো ইজিলি কিভাবে নিচ্ছে সবটা। এখানে আয়ান এবং আয়ানের পরিবার মানে নূর হামিদ ও তার হাজবেন্ড ও এখানে উপস্থিত।

কল্প প্রিয়র সম্পর্কটা সবাই খুব আনন্দে গ্রহন করেছে,
এতোক্ষন সবার আলোচনার এক পর্যায়ে তাদের একটা সিদ্ধান্ত জেনো কল্প কোনো ভাবেই হজম করতে পারছে না। তহমিনার প্রথম প্রস্তাব ছিলো কল্প প্রিয়র বিয়েটা আর এবার তাদের সিদ্ধান্ত বললে ভুল হবে আবদারই বলা চলে কারন এখানে কল্পর পরিবারের বিমত উপলব্ধি করা যায়, নূর হামিদ ও বিমত পোষন করেন তহমিনার আবদারে।

~ বুবু আজই এন্গেজড এর কি দরকার। এতো তারা হুরোর কি আছে।
~ জি ভাবী। সম্পর্কের বিষয়ে হুট করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া কি ঠিক হবে। আপনারা আসেন আমাদের বাসায় দেখাশুনা করে তবেই না হয়
~ ভাই দেখাদেখির কি আছে। ছেলে মেয়ে দুজন দুজনকে পছন্দ করে আমাদের এখানে কি তারা সুখি হলেই তো হলো। আর বাড়ি দেখা দেখি তো পরেও করা যাবে ভাই। আপনারা ভুল বুঝেন না আসলে আ
~ উহহ তমু উনাদের ও তো একটা মতামত আছে নাকি।

~ না ভাই আসলে তেমন বিষয় না তবে ভাবি যেহেতু চাচ্ছে এখানে আমাদের আর অমত নেই উনি যদি আজই ওনার বউমাকে আংটি পড়িয়ে রাখতে চায় তবে তাই হবে (হালকা হেসে)
মায়ের কথায় বিষ্ফোরিত চোখে তাকায় কল্প। কোনো ভাবেই তার বুঝে আসছে না এতো তারাহুরো কেনো করছে। কল্প এটা ভেবেও চিন্তিত তহমিনা কি আদৌ জানে সে। কল্প।

দু পরিবারের মতেই তহমিনা আংটি পড়িয়ে যায় কল্পকে। ডিনার শেষ করে দু পরিবারই বাড়ি ফিরলো মাত্র। বাড়ি ফিরে সোফায় বসতে বসতেই একটা ফ্রেশ শান্তিময় শ্বাস নেন তহমিনা। পিয়াস পাশে বসতে বসতে তহমিনা কে উদ্দেশ্য করে বলে~
~ আম্মু তুমি তো দেখি স্মার্ট দেশের চেয়েও একঘাট উচ্চতায় অভার স্মার্ট।

~ এতো না পেচিঁয়ে সোজা বলো কি বলবা।
~ মানে এই যে দেখতে গিয়েই এন্গেজড।

~ শুধু দেখা করা না উদ্দেশ্যই ছিলো ওটা। আহহ এখন আমার শান্তি। মেয়েটা কে আমার
ভারি পছন্দ। কি মিষ্টি চেহারা কাজকর্ম সবদিক থেকেই লক্ষিমন্ত মেয়ে একদম। এমন মেয়ে লাখে একটা মিলে বুঝলে। আমার প্রিয়র জন্য একদমই পার্ফেক্ট। মেয়েটা কে এবার পুরোপুরি ঘরে আনতে পারলেই আমার কাজ শেষ।

~ তাই বলে এতো জলদির কি আছে।
~ জলদি কই। এখনই তো আর বিয়ে দিচ্ছি না বড় সড় উৎসব করেই ঘরে বউ আনবো বুঝলি ছেলে।
~ খুব বুঝলাম, অতি তড়িঘরির কর্ম কিন্তু বিপজ্জনক।

~ বেশি বকছিস। যা ঘরে যা।
~ ঠিক আছে। তবে নিশু আপু আসলেও অনেক ভালো।
~ তোর মায়ের চয়েস দেখতে হবে না।

~ হুম তা সে বাইকারের সাথে কি সত্যিই ভাইয়ার কোনো যোগাযোগ নেই। ভাইয়া তো ওই বাইকার রে পছন্দ করতো তাহলে হঠাৎ নিশাত আপু কেমনে কি।
~ এই অলক্ষুনে নাম কি তোর এখনই নিতে হলো পিয়াস। ওইসব হলো আবেগ। এতো ভালো মেয়ে সামনে থাকতে ওইসব আবেগ কি টিকে নাকি।
~ কি জানি। রুমে গেলাম মা। গুড নাইট।

ছাদে মুখো মুখি দাড়িয়ে আছে কল্প’প্রিয়। কারো মুখেই কোনো কথা নাই। প্রিয় কল্পর দিকে মুখ করে আছে আর কল্প হাতে এন্গেজড এর আংটি টার দিকে।
~ এতোকিছু হলো অথচ তুমি পুরোপুরিই স্বাভাবিক জেনো এমন হওয়ার ছিলো তুমি আগে ভাগেই জানতা।?

~ জানতাম না তবে ধারনা ছিলো। এবং আজ আমি প্রচুর খুশি। প্রচুর মানে প্রচুর। ভাবতে পারছো তুমি খুব জলদি আমরা এক হতে চলেছি। উহহহহ আম্মুটাকে যে কি বলে ধন্যবাদ জানায়।
~ আন্টি কি জানে আমিই কল্প।
খুব স্বাভাবিক স্বরে প্রশ্ন করে কল্প।

~ কে আন্টি?
~ তোমার মা।
~ দুদিন পর সে তোমার শাশুড়ি হতে চলেছে আর এখনও তুমি তাকে আন্টি বলছো। আম্মু বলো।

~ হু।
~ তুমি কি খুশি হওনি। মেঘপরী।
~ ভালোবাসার মানুষকে পাওয়াটা যে কতো বড় সৌভাগ্য তুমি তো জানো।

~ তাহলে এই প্যাচামুখ কেনো হু। হাসো দেখি,
~ কোথাও একটা ভয় জমাট বাধছে। এতো সহজ সবটা।
~ বলো আমাদের ভাগ্যেটা ভালো আর সব থেকে বড় ভাগ্যে এমন দুইটা পরিবার আমরা পেয়েছি।

~ তা ঠিক।
~ পাগলি। এতো টেনশন করো না তো। নিষেধ করেছিলাম তো না কি। এখন তো আমার যেতে হবে অনেক রাত হলো।
~ থেকে যাও না আজ।

~ সে কি বিয়ের আগেই শশুড় বাড়িতে রাত্রি যাপন করলে সবাই কি নজরে দেখবে বলো তো সবাই তো বলবে ছেলেটা বড্ড অধৈর্য। ক দিন বাদেই বিয়ে আর এখনই তার তর সইছে না। (দুষ্টু হেসে)
~ ছিঃ এতো খারাপ তুমি (মুখ শিটকে) যাও তো খালি ফালতু কথা।
~ ঠিকই তো কইলাম বেবি। তুমি কি বোঝো সবার চিন্তা ধারা।

~ হুম হইছে। সাবধানে যেও। পৌছে কল দিও।
~ রুমে গিয়ে ঘুমাবা আর নো টেনশন ওকে গুড নাইট 😊

দুদিন কেটে গেছে কাল প্রিয়দের বাসার থেকে কিছু লোক আসবে কল্পদের বাসায়। কেও তো সে ভাবে জানে না তাই প্রিয়র চাচা গুরজনেরা মিলে আবার দেখতে আসবে কল্পকে। আর সাতদিন বাদেই ওদের গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে বিয়ে। বেশ হইচই পড়ে গেছে কেনাকাটার।
প্রিয়র কেবিনে অপেক্ষা করছে কল্প। কিছুক্ষন বাদেই প্রিয় আসে।
~ তুমি কখন আসলে?
~ এইতো কিছুক্ষন।

~ তা হঠাৎ অফিসে কি ভেবে হুম
~ কেনো আসতে পারি না।
~। যা আমার তা সব তোমার
এ কথা বাদে আর কিছু বলতে হয়নি প্রিয়কে। কল্প এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে প্রিয়কে। কল্পর এমন আচরনে অবাক হয় প্রিয়।

~ কি হয়েছে কল্পরানীর। মন খারাপ? (এক হাতে জড়িয়ে আর এক হাত মাথায় রাখে)
কল্প উহু বলে জড়িয়ে ধরা অবস্থা মাথায় নাড়ায় শুধু কোনো কথা বলে না।
~ শুধু শুধু তো আমার পাগলিটা এমন করবে না তা আমার জানা। বলে ফেলো তো দেখি সমস্যা কি।

~ তোমাকে জড়িয়ে ধরতেও কি কারন লাগবে (বলে আরও বেশি জোড়ে জড়িয়ে নেয়)
প্রিয় ও কল্পর তালে তাল দিয়ে জোড়েই জড়িয়ে নেয় আর এক হাত কল্পর চুলে বুলায়।
~ মিস করছিলাম অনেক। খুব দেখতে ইচ্ছা করছিলো (জড়িয়ে রেখেই হালকা স্বরে বলে উঠে কল্প)
মৃদ্যু হাসে প্রিয়।

~ বুঝেছি পাখিটা। এখন ভাল্লাগছে।
~ খুউউউব। একটুও ছাড়তে ইচ্ছা করছে না।
~ আমি কি বলেছি নাকি ছাড়তে।

~ তোমার তো কাজ আছে। না চাইলেও তো ছাড়তে হবে।
~ তাহলে তো আর দুদিন পর একটুও ছাড়বো না। তুমিও ছাড়বে না শুধু জড়িয়েই রাখবা।
~ তখন বুঝি আর কাজ করবা না।

~ করবো তো। তখন শুধু বউকে আদর করায় আমার কাজ হবে তো।
~ আবার শুরু করলে। (বলেই মাথা তুলে কল্প)
হালকা হেসে কল্পর কপালে ঠোট ছুইয়ে দেয় প্রিয়। আবেশে চোখ বুঝে নেয় কল্প। ঠোটে তৃপ্তির হাসি।

পর্ব ৩১

ঘন কালো মেঘে শহরে আধার নেমেছে। জানালা ভেদ করে চোখ দুটো বাহিরের নিস্তদ্ধতায় স্থির। মুহুর্তটা ঝড়ের পূর্বাভাস। কিছুক্ষন বাদেই হইতো শুরু হবে মেঘের দলের সংঘর্ষ। সাথে বিকট গর্জন। ভয়ংকর পরিবেশ সৃষ্টির আগে মনোমুগ্ধকর এই পরিবেশ সৃষ্টির কারনটা আমি আজও উদঘাটন করতে পারলাম না। কেনো এতো নিরবতা। নিরবতা কি এই জন্যই যে ভয়ংকর কিছু হতে চলেছে এটা বোঝানই কি এর কর্ম?

কি জানি যেটা বোঝা আমার কর্ম নই সেটা নিয়ে আর ভাবলাম না। অনুভব করতে থাকলাম এই শীতল সময়টা। তবে মনে হচ্ছে আজ প্রকৃতি আমায় ডাকছে। তার নিজের সাথে পরিচিত করাতে চাচ্ছে আমায়। সে চাই তাকে কেউ জানুক তাই বুঝি সে আমায় ডাকছে।

জানালা ঘেষে বসে কফি মগে চুমুক দিতে দিতে বুলি গুলো আউরে নিচ্ছে কল্প। তার মনটা আজ বড্ড আনন্দিত। এই নিরব পরিবেশটা তার বরাবরই প্রিয় তবে আজ জেনো একটু বেশিই ভালো লাগা কাজ করছে। কফিটা হাত থেকে রেখে পাশে থাকা ফোনটা হাত তুলে নেয়। প্রিয়র নাম্বারটা ডায়াল করে ফোন কানে ধরে। কিছু সময়েই কল রিসিভ হয়।
~ কি মিস কি করো।
~ বসে আছি। তুমি?

~ আজ তো প্রকৃতির মন খারাপ। শোক পালনে ব্যস্ত তারা। তার শহরে কালো শোকের ছায়া নেমেছে কি আর করার কাজ ও কম তাই সিদ্ধান্ত নিলাম বাড়ি ফেরার আমিও না হয় তাদের সাথে আজ একটু শোক পালন করলাম এতে যদি তাদের দল। সঙ্গ ভারে খুশি হয় কি বলো।
~ তাদের শোকটা আমায় আনন্দ দেয়। তাদের কালো মেঘে আমার মনের মেঘ গুলো সরে মিষ্টি রোদের দেখা মিলায়। তাই ভাবলাম আজ তাদের একটু জেলাস ফিল করালে কেমন হয়? খুশির পার্সেন্টেন্স না হয় আর একটু বাড়িয়ে দিলাম।

~ ভাষ্যমতে তুমি এখন রাইডে যাবা কিন্তু এখন একবারেই সম্ভব না বাইরের অবস্থা একদমই ভালো না আর একা তো যেতেই দিবো না অসম্ভব।
~ তাহলে তুমি চলে এসো [মিষ্টি হেসে ]
~ আবদার নাকি অনুরোধ !
~ আমার যাওয়া তো আটকাতে পারবে না আর আমাকে যেতে দিলে এখন তুমিও আসবে তাই এটা নো আবদার নো অনুরোধ। ইচ্ছা হইলে আসো নইতো আমি একাই যাবো।

~ বদের হাড্ডি। রেডি হও আধা ঘন্টায় আসছি,
~ জানতাম। উম্ম্ম্ম্ম্ম্ম্ম্ম্ম্ম্ম্মা 😘
~ এইসব দেয়ালের এপার ওপারে কোনো উম্মা টুম্মা নিবো না সামনে থেকে দিতে হবে।
~ হুহহ মামা বাড়ির আবদার।

~ ঠিক আছে। আর তো মাত্র ছয়টা দিন
~ গুড বয়। অপেক্ষার ফল অধিক মিষ্টি হয়।
~ জানি তো আমার আর এক্সট্রা কোনো চিনি মিশায়তে হবে না
~ তুমি এতো ফালতু কথা পাও কই সবসময়। রাখছি আমি ~
~ আচ্ছা 😘

মেঘে ঢাকা শহরের আনাচে কানাচে কোথাও কেও নাই। শহরটা পুরাই ফাকা যেনো আজ তাদের বাড়িতে থাকার ব্রত চলছে অবশ্য এমন পরিবেশে বাহিরে স্বাভাবিক ভাবে কারো থাকার কথাও না। তবে রাস্তায় থেকে থেকে কিছু গাড়ির চলন দেখা যাচ্ছে। এই নিরব রাস্তাতেই রাইডে এসছে এক জোড়া টুনাটুনি। কল্প এই পরিবেশ কখনই কোনো ভাবেই মিস করে না। এই নিরব নিস্তব্ধ সময়েই নাকি তার প্রচুর রাইডের নেশা জাগে যা কোনো ভাবেই চেপে যাওয়া সম্ভব না। কল্প বাইক চালাচ্ছে প্রিয় পিছে বসে কল্পর কোমড় ধরে আছে।
~ ছোট চাচ্চু কি বলছে জানো।

~ উহু
~ ছোট চাচ্চু বলে কি যদি তার কোনো ছেলে থাকতো তাহলে যেকোনো ভাবেই সে তোমায় তার ঘরের বউ করে নিয়া যাইতো
~ ভাগ্যিস নাই
~ হুহ থাকলেই বুঝি নিতে দিতাম আমার জিনিষ আমি খুব যত্নে আগলে রাখতে জানি মিস কল্পরানি,
~ হু জানি তো। সবাই কি বলেছে।

~ সবার মেয়ে অনেক পছন্দ হয়েছে কার পছন্দ দেখতে হবে না
আজ দুপুরেই ও বাড়ি থেকে পুরুষ গুরুজন গুলো এসছিলো কল্পকে দেখতে। সবারই কল্পকে ভীষন পছন্দ অবশ্য এমন রুপবতী গুনবতী মেয়েকে কারোই সাধ্য নাই অপছন্দ করার।
~ কেমন ফিল করছো এখন সেটা বলো।

~ অস্থির। সাথে এমন হট জিনিস থাকলে স্থির কেমনে থাকি বলো তো
~ প্রিয় সব সময় তোমার ফাজলামি
প্রিয় হেসে কল্পর গলায় স্পর্শ করতেই কল্প হালকা চিল্লিয়ে উঠে।
~ ওই হাত সরাও হাত সরাও কাতুকুতু লাগে।

প্রিয় মুচকি হেসে কল্পর এক হাত নিয়ে সেখানে চুমু দেয়।
~। ভালোবাসি।
~ কাকে?
~ জরিনা রে।

~ কিহহহহ জরিনা কে? আর তুমি জরিনারেই কেন ভালোবাসবা আমি কি মরে গেছি নাকি।
~ তুমি বেচেঁই তো আছো তাহলে জিগাও কেন কাকে।

~ আমিও
~ কি
~ কিছু না 😒
ওরা ঘুরতে ঘুরতে একটা গ্রামের রাস্তায় চলে এসছে আর তখনি শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি।
~ এই বৃষ্টি শুরু হলো তো চারপাশ পুরো অন্ধকার ও হয়ে এসছে এখন কি হবে। আশেপাশে তো একটা পাখিও নাই মানুষ তো দূরের কথা।
~ ভিজবো এখন আমরা।

~ একদম না কল্প সোনা এখন কোনো বাইনা না। যে জোড়ে বৃষ্টি হচ্ছে এতে ভিজলেই মাস্ট ঠান্ডা লাগবে। আরে ওই দেখো মোড়ে একটা দাড়ানোর জায়গা ছাউনি দেয়া ওখানেই বৃষ্টি শেষ হওয়া অব্দি অপেক্ষা করবো আমরা।
প্রিয়র কথা মতো ওরা ছাউনির নিচে দাড়ায়।
~ এর নিচে এসে কি হলো সেই তো ভিজে যাচ্ছি চারপাশ থেকেই পানি লাগছে।
~ মাথায় তো আর পড়ছে না।

~ হুম।
কল্পর জ্যাকেটে পড়া পানি গুলো ঝাড়তে থাকে আর প্রিয় ভেজা চুলে হাত দিয়ে ঝাড়তে থাকে। কল্পর চোখ দুইটা হঠাৎ ই স্থির হয়ে যায় প্রিয়র দিকে। খুব ভালো ভাবে পর্যবেক্ষন করতে থাকে প্রিয় অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
~ এই ছেলেটা এতো কেনো কিউট উফফ ভেজা চুল মুখে বৃষ্টির ফোটা পুরাই আইসক্রীম ইচ্ছা করে খেয়ে ফেলি (মনে মনে)
কল্পর এমন তাকানো দেখে ভ্রু নাচায় প্রিয়
~ কি দেখো।

~ তোমাকে
~ অনেক কিউট তাই না সবাই ই বলে বুঝলে।
প্রিয়র কোনো কথায় কল্পর অব্দি পৌছে ছে বলে মনো হলো প্রিয়র। কল্প আস্তে আস্তে এগিয়ে একদম প্রিয়র সামনা সামনি এসে দাড়ায়। এদিকে বৃষ্টির গতি বাড়তেই আছে। মেঘের আধারের সাথে সাথে সন্ধ্যার আধারও নেমেছে একটু চিন্তাই পড়ে যায় প্রিয়। এখানে আর বেশিক্ষন থাকা সুবিধার লাগলো না প্রিয়র তাই সিদ্ধান্ত নিলো এই বৃষ্টিতে ভিজেই বাড়ি ফিরবে আর কোনো উপায় নাই বৃষ্টি দেখেও মনে হচ্ছে না খুব জলদি থামবে তারা।

প্রিয়র ভাবনার মধ্যেই কল্পর দুহাত প্রিয়র মুখে নেয়। পা দুইটা একটু উচুঁ করে প্রিয়র মুখ বরাবর হতেই প্রিয় কিছু ধারনা করতে পেরে কল্পকে থামাতে নেই
~ কল্প
আর কিছু বলার আগেই নিজের ঠোটে অপর ঠোটের উষ্নতায় তা থামিয়ে দেয়। প্রিয়ও আর বাধা দেয়নি কল্পকে কোমড় পেচিঁয়ে আরো একটু উচু করে ধরে কল্পকে, তাদের রিলেশনে এটাই তাদের ফার্স্ট কিস তাও এই রোমান্টিক ওয়েদারে কিছু সময় পর কল্প সরে আসলেও প্রিয়র সামনে থেকে সরে না পা টা নিচু করে প্রিয়র মুখে হাত রেখে চোখে চোখ রেখে তাকালে প্রিয় কল্পর মুখের কাছে আসতেই কল্প বাধা দেয়
~ আন্টি কি জানে প্রিয় আমিই কল্প।

প্রিয় কিছুটা চমকে যায় আবার অবাকও হয় এমন সময়ে কল্পর এমন প্রশ্নের কারনে,
~ হইতো না।
~ মানে
~ আম্মু আমায় কিছু জিগায়নি কখনো তোমার ব্যাপারে। আমাদের সম্পর্ক নিয়ে আম্মু আমায় এখনো কোনো প্রশ্ন করেনি যে আদৌ আমরা ফ্রেন্ডস বাদে অন্য কোনো রিলেশন আছি কিনা ইভেন সেদিন তোমার আংটি পড়ানোর ব্যাপারেও আমি আমায় কিছু বলেনি বাট আম্মুর আচরনে আমি কিছুটা আন্দাজ করে রেখেছিলাম যে এমন কিছু হতে পারে। আম্মু তোমাকে অনেক বেশি পছন্দ করে আর তাই হইতো আমার কাছে কিছু শোনার প্রয়োজন মনে করিনি।
~ তোমার কি বলা উচিৎ ছিলো না। আন্টি নিশাতকে পছন্দ করে আর ঠিক ততটাই কল্পকে হেট করে। যখন আন্টি জানবে আমিই কল্প আন্টি কখনই আমাকে মানবে না।
~ সেটার দায়ভারটা না হয় আমাকে দাও।
~ কিন্তু
~ কোনো কিন্তু না বেবিডল। তোমাকে তো বলেছি এটা নিয়ে না ভাবতে যা হবে আমি দেখো নিবো।
~ তোমাকে আমি খুব ভালো করে চিনি প্রিয় তুমি ফ্যামিলির বিরুদ্ধে কখনো কিছু করবা না তাহলে আমাকে নিয়ে এতো সিরিয়াস কিভাবে তুমি।
~ আমার কাছে আমার ফ্যামিলি যতোটা ইম্পরর্টেন্ট ততোটা তুমিও। এখন এসব বাদ দাও আমাদের তো ফিরতে হবে। চলো
ওরা চলে আসে ওখান থেকে প্রিয় বাইক চালায় আর কল্প চুপটি করে প্রিয়কে জড়িয়ে ওর পিঠে মাথা ঠেকিয়ে থাকে।

আজ কল্প প্রিয়র গায়ে হলুদ। সন্ধ্যায় সব অনুষ্ঠান হবে। দু বাড়ি ভর্তি মানুষে গিজগিজ করছে হই হুল্লোড় আর ডি জে গানের আওয়াজে মেতে উঠেছে দু পরিবারের লোকজন। সন্ধ্যায় হলুদ লাগানোর পর কল্পকে রুমে নিয়ে যাওয়া হয় কিছুক্ষন পরই কাজিনদের নাচানাচি শুরু হয়ে যাবে। তিশা কল্পকে রুমে ডাকতে এলেই বাধে বিপত্তি। পুরো বাড়ি তন্ন তন্ন করেও কোথাও কল্পকে পাওয়া যায় না। কিছুক্ষনের মধ্যেই জেনো নেই হয়ে গেছে মেয়েটা মাত্রই তো ঘরে রেখে গেলো সবাই এর মধ্যেই উধাও গায়ে বিয়ের হলুদ মেয়ের হলুদ সাজ এভাবে কোথাও কেমনে হাওয়া হলো। দুশ্চিন্তায় কিছুক্ষনের মধ্যেই হইচই পূর্ন ভরা বাড়িটা একবারেই থমথমে হয়ে যায়। শুরু হয় প্রতিবেশিদের কানাঘুষা।

পর্ব ৩২

বাসর ঘরের এ মাথা থেকে ও মাথা একাধারে পায়চারি করে চলছে প্রিয় আর কল্প কোমড়ে হাত বেধে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে প্রিয়কে পর্যবেক্ষন করে চলছে। এটাকে বাসর ঘর বললে ভুল হয় আর দু পাচঁটা স্বাভাবিক রুমের মতোই এই রুমটা তবে বিয়ের প্রথম রাতকে তো বাসর রাতই বলা হয় আর ঘরটাকে বলা হয় বাসর ঘর কল্পকে এমন কোমড়ে হাত বেধে দাড়াতে দেখে প্রিয় একবার থেমে কল্পর মুখে তাকিয়ে আবারো পায়চারি শুরু করে।
~ তোমার পা ব্যাথা কখন শুরু হবে?

~ মানে আমার পা ব্যাথায় তোমার স্বার্থ কি?
~ মানে আর কি তুমি যেভাবে পায়চারি করছো এতে তো মনে হচ্ছে না তুমি আজ থামবে ততক্ষনে যতক্ষন না তোমার পা ব্যাথা করে।
~ হোক পা ব্যাথা। আমার পা ব্যাথা হবে আর তুমি সারা রাত আমার পা টিপবা। কোনো ঘুম হবে না।

~ আজ বাসর রাতে তুমি আমাকে দিয়ে পা টিপাইবা প্রিয়😒
~ বাসর রাত আর এটা বাসর ঘর ও মাই গড আমি ভুলেই গেছিলাম। বাসর ঘর বুঝি এমন হয়। এটা আমি আমার বাসর ঘরেই দেখছি।
~ বিয়েটাও তো হইছে সাদাসিদা আর এখানে তো আমরা দুজন ছাড়া আর কেউ নাই তো বাসর ঘর কে সাজাইবে বলো।
~ কে সাজাইবে মানে আমি তো বলেছিলাম আয়ানকে। এখন বলে কি মনে নাই। ওর বাসরের কি অবস্থা করি আমি দেইখো। আমার বাসর টাই মাটি করে দিছে। উহহহ বিয়ে হবে শানাই বাজবে চারদিকে আলো চিকচিক করবে হইচই আনন্দ উল্লাস ব্যাপারটাই আলাদা, আর বাসর ঘরে ফুলের সুবাসে মো মো করবে পুরো ঘর জুরে গোলাপে ছড়াছড়ি। ক্যান্ডেলের আলোই ঘর রোমান্সকর হয়ে থাকবে আরো কতো কি ইশশশ সব তোমার জন্য ভেস্তে গেলো। কতো ইচ্ছা ছিলো আমার এই বিয়ে বাসর নিয়ে।

~ ওহ তাই না শুধু তোমার ইচ্ছা সপ্ন ছিলো আমার তো ছিলো না। আর এতোই যখন আফসোস হচ্ছে তখন করছো কেনো আমায় বিয়ে আমি তো তোমার পা ধরে পড়ে ছিলাম না আর কেন্দে বুক ভাসাচ্ছিলাম নাকি তোমার জন্য মরতে যাচ্ছিলাম কোনটা বলো। এখন এসব বলছো। এতো যখন শখ সপ্ন তো বাসায় ফিরে যাও নিজের মায়ের পছন্দে বিয়ে করো গিয়ে তাহলেই সব সপ্ন পূরন হবে।
~ আশ্চর্য ভাবে হলেও আমাদের বাসরটা কিন্তু ইউনিক মেঘপরী। দেখছো।
~ মানে।

~ মানে এই যে এমন বাসর আর কইটা দেখছো বলো যে বাসর ঘরে বর বউ কোমড় বেধে ঝগড়া করে। এটা ইউনিক ই তো। আমি তো বাসর রাতের মানে অন্য কিছু জানতাম।
~ অন্য কিছু কি?
~ ওই যে বিড়াল মারার যেই ব্যাপার স্যাপার আছে।
~ কি পাগলের মতো বকছো। বাসর রাতে কুকুর বিড়াল মারামারি করছো।
~ 😒😒 তুমি আম্মুরে কেন বলতে গেছিলা বলো তো আগে ভাগে। কি দরকার ছিলো। আম্মু তো পরে জানতই না?
~ জানতই মানে। তোমার কি উচিৎ ছিলো না আম্মু কে বলা। বিয়ের পরে জানলেও তো সেই একই ব্যাপার হতো উনি আমাকে মানতেন ওই বাড়িতেও আমাদের জায়গা হতো না।

~ আর সেই জন্যই তো বাবা এই এ্যাপার্টমেন্টটা কিনে রেখেছিলো আমার নামে।
~ ওয়েট এ মিনিট। বাবা হ্যা বাবা। বাবা কিভাবে জানতো তার মানে এইসব কিছুর পিছনে বাবা ছিলো বাবা সব জানতো তাই না তাই তো বলি এই ছেলের এতো সাহস হয় কেমনে যে আম্মু মানবে না জেনেও এতো রিলাক্স থাকে। সত্যি করে বলো তো বাবা কবে থেকে জানতো আমাদের ব্যাপারে ইভেন আমিই কল্প এটাও
~ বাবা প্রথম থেকেই সব জানতো। আমার লাইফের আমি সব ফার্স্টে বাবার সাথেই শেয়ার করি।
~ বাবা তো জানতো আম্মু মানবে না তাও কেনো বাধা দেয়নি তোমায়।

~ কারন বাধা দিলেও আমি শুনতাম না। তখন আমি বাইকার কল্পর জন্য জাস্ট পাগল ছিলাম। লাইফে ওই ই একটা মেয়ে ছিলো যাকে আমার এতো ভালো লেগেছিলো। আর বাবার ও তোমাকে পছন্দ হয়েছিলো। আর বাবা মায়ের লাভ ম্যারেজ ছিলো তাই তো বাবা বিষয়টা বুঝেছিলো।
~ ফ্রেশ হয়ে নাও। 12 টা বাজে।

~ তোমাকে না কি যে লাগছে শাড়িতে উহহহ কন্ট্রোল করতেই পারছি না।
~ 😒 প্রশংসাও কেউ এভাবে করে তোমাকে না দেখলে বুঝতামই না।
~। এই তুমি কিন্তু একদম শাড়ি চেন্জ করবা না। এটা পরেই ঘুমাবা।

~ পাগল হইছো নাকি তাহলে সকালে শাড়ি কোথাই আর আমি কোথায় খুজতে খুজতেই আবার রাত হয়ে যাবে।
~ তাহলে তো আমার জন্যই ভালো
~ যাবে তুমি।
~ আরে রাগছো কেনো যাচ্ছি তো।

কিছুক্ষন পর প্রিয় ফ্রেশ হয়ে আসলে।
~ তুমি নিচে গিয়ে দাড়াও আমি ফ্রেশ হয়ে রুম লক করে নিচে আসছি।
~ এতো রাতে নিচে কি কাজ।

~ তোমার বাইক তো নেই এখানে আমারটাও ও বাসায়। তাই তিশা রে বলেছি ও আসছে আমার বাইক নিয়ে।
~ বাইক দিয়া কি হবে এখন।
~ ঘুরতে যাবো। রাইডে যাবো।

~ মাথা ঠিক আছে তোমার আজ ও রাইডে। আজ আমাদের বিয়ে হইছে কল্প। এটা আমাদের একটা স্পেশাল রাত আর তুমি।
~ বাইক রাইড এগুলাও কিন্তু আমার জন্য অলওয়েজ স্পেশাল, আমার খুব শখ ছিলো বাসর রাতে বরের সাথে রাইডে যাবো এখন তোমার ফুলে সাজানো বাসর ঘরের শখ পূরন হয়নি বলে কি আমারটা ও পূরন করবা না
~ না না তা কেনো। আজ না হয় রাইডেই বাসর করবো। আমার পুরো বাসরটাই ইউনিক ইউনিক 😒

ওরা নিচে নামার কিছুক্ষন বাদেই তিশা এসে বাইক দিলে ওরা চলে চলে যায়’ইউনিক বাসরে’😜
ফ্লাশব্যাক ~
গায়ে হলুদের দিন।

হলুদ সন্ধ্যা শেষে প্রিয় এবং সকল কাজিনরা এক সাথে ড্রয়িং রুমে বসে আড্ডা দেওয়ার মাঝেই সেখানে কল্প এসে উপস্থিত হয়। হলুদের সাজ গায়ে মুখে এখনো হলুদে ছড়াছড়ি হলুদ পাখি লাগছে পুরো। প্রিয় অবাক হয়ে কল্পকে দেখছে। ওর উপস্থিতি এখানে সবাইকে শুধু অবাকই করেনি মাত্রাতিরিক্ত অবাক করেছে।
~ তুমি এখানে এভাবে।

~ আন্টি কই।
~ আম্মু তো
~ আরে নিশাত তুই এখন এখানে কেন। এখনো তো হলুদ শেষে গোসল দিসনি মনে হয়। এভাবে কেউ বাড়ি থেকে বের হই তাও আজ।
~ আন্টি তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।

~ কথা তো ফোনেও বলতে পারতি মা।
~ না আন্টি সামনা সামনিই বলতে চাই।
~ তুই ঠিক আছিস তো নিশাত।

~ চিন্তা করো না আন্টি আমি ঠিক আছি। একটু কথা বলবো জাস্ট।
কল্পর এমন আচরনে ধাক্কার পর ধাক্কা লাগছে প্রিয়র সাথে দুনিয়ার ভয় জেকে ধরেছে ওকে।
~ আচ্ছা আয় তো আমার রুমে চল।

ওরা রুমে গেলে রায়হান এসে প্রিয়র কাধে হাত নিতেই প্রিয় চমকে উঠে।
~ আরে আমি প্রিয়। হঠাৎ কল্পর তমুর সাথে কিসের কথা
~ বুঝছি না বাবা ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আমার ও যদি সব বলে দেয় আম্মুকে।
~ আমিও তো সেটাই ভাবছি।

কিছুক্ষন বাদে তহমিনা এসে গেট খুলে দেয় কল্পর। তারপর গম্ভীর কন্ঠে বলে
~ তুমি এখন আসতে পারো।

তহমিনার গম্ভীর কন্ঠে এই বিয়ের শেষ পরিনতি আচ করতে পারছে কল্প। মাথা নিচু করে সোজা বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় কল্প।
ততক্ষনাৎ প্রিয়র ফোন বেজে উঠে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ব্যাস্ত কন্ঠ ভেসে আসে।
~ প্রিয় কল্প কোথায় জানো কি। হঠাৎ করেই উধাও মেয়েটা পুরো বাসার কোথাও নেই। কাউকে কিছু বলেও নি।
~ আংকেল ও তো এই বাসায় এসছিলো আবার মাত্রই বের হয়ে গেলো।

~ এই সময় তোমাদের বাসায় !
প্রিয় কিছু বলতে নেওয়ার আগেই তহমিনা এসে ছোঁ মেরে ফোনটা নিয়ে নেয়।
~ কল্পর বাবা বলছেন?

মায়ের মুখে কল্প নাম শুনে প্রিয়র আর বুঝতে বাকি রইলো এখন কি হতে চলেছে। কল্প ভয় চোখে রায়হানের দিকে তাকাতে রায়হান তাকে আশ্বাস দেয়,
~ জি বলছি।
~ আমি প্রিয়র মা। এই বিয়েটা হবে না। আপনাদের মূ্ল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য আমরা দুঃখিত।
ওপর পাশ থেকে আর কোনো কথা বলার আগেই খট করে ফোনটা কেটে দেয় তহমিনা।

প্রিয়র দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলে,
~ তুমি কি আমার সন্তান প্রিয়। আমিই কি তোমায় গর্ভে ধারন করেছিলাম। কিভাবে পারলে নিজের মা কে ঠকাতে।
~ ভুল বুঝছো তুমি তমু। ও তোমাকে কিভাবে ঠকালো।

~ আমি প্রিয়র সাথে কথা বলছি মাঝখানে তুমি ফোড়ন কাটছো কেনো।
~ কারন তুমি এখন যা বলবা তা সবই হবে অযুক্তিসম্পূর্ন।
~ প্রিয় আমাকে ঠকিয়েছে এটা অযৌতিক?
~ অবশ্যই।

~ ও কল্পকে আড়াল করে আমাদের সামনে নিশাত নাম ধরে মেলে ধরেছে এটাও কি অযৌতিক?
~ ও কাউকে কোনো নামে মেলে ধরেনি তমু। ভুলটা তোমার তুমি কখনও কি ওকে জিগায়ছো কে কল্প কে নিশাত। মেয়েটার ভার্সিটির নাম নিশাত আর ও প্রিয়র ফ্রেন্ড ছিলো সে ভাবেই তো আলাপ না কি।

~ প্রিয় কি জানতো না যে ও মেয়েটাই কল্প। আর কল্পকে আমার পছন্দ না
~ নিশাতকে তো পছন্দ আর দুজনই একই ব্যক্তি তাহলে তোমার সমস্যাটা কোথায়।
~ তুমি ওদের হয়ে কেনো সাফাই গায়ছো আমি বুঝছি না। এমন তো নই তুমি সবই জানতে।

~ আমাকে কি দেখছো কখনও এইসব নিয়ে তোমার সাথে আলাপে বসতে।
~ আমার সাথে কেনো বসবে তোমার গুনধর ছেলেই তো আছে তোমাকে জানানোর জন্য। এভাবে ঠকালে তোমরা আমাকে। আমি কি কেউ নই এই বাড়ির। আমার মতের কোনো দাম নাই তোমার কাছে।

~ তমু ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে এখানে আমরা কেনো বাধা হবো বলো তো। তুমি না বলেছিলে ওদের সুখই আমাদের সুখ।
~ আমাকে বোঝাইতে আসবে না একদম। ওই মেয়েকে আমি কখনই মেনে নিবো না। আর না এই বাড়ি ওই মেয়ে আসবে। যদি আসে তো আমি থাকবো না এই বাড়ি।
~ এমন পাগলামি কেনো করছো তমু। বোঝার চেষ্টা করো।

~ ওকে নাও মানবো ওই মেয়েকে তাহলে ওকে বলো বাইক ছেড়ে দিতে বাদ দিতে এইসব থাকতে বলো শুধু ঘর বর আর সংসার নিয়ে। ও যদি এভাবে থাকতে পারে তাহলে আমার মানতে কোনো সমস্যা নাই,
~ মা আমি ওর কাছে যতটা ইম্পর্টেন্ট বাইকটাও ততটা, তুমি বাইক থেকে কেনো আলাদা করতে চাইছো ওকে।
~ তাহলে তে ওর তোমাকে ছাড়তে প্রবলেম নাই। বাইক নিয়াই থাকুক ও।

~ তমু তুমি কিন্তু এবার ফালতু প্যাচাল পাড়ছো। একটা ছোট্ট বিষয়কে টেনে বড় করছো তুমি। বিয়ে ভাঙা তো মুখের কথা না। ইনভাইট শেষ সবাই জেনে গেছে বিয়ের ব্যাপার এখন তুমি বলছো বিয়ে হবে না এটা কোনো কথা। তোমাদের
কিছু না হলেও তো মেয়েটার লাইফে কতো বড় দাগ লাগবে ভাবতে পারছো।

~ তো যেতে বলো তোমার ছেলেকে। করুক ওই মেয়েকে নিয়ে সংসার। কিন্তু এই বাড়িতে ওদের জায়গা হবে না। আর যদি হয় তাহলে আমি থাকবো না এ বাড়িতে। আমার ডিসিশন ফাইনাল।
~ বিয়েটা হবে তমু।

~ বললামই তো যেতে বলো তোমার ছেলে কে করুক সংসার কিন্তু এ বাড়িতে না।
তহমিনা রুমে চলে যান। সেদিন রাতেই রায়হান কথা বলে কল্পের বাসায় তবে কি কথা হয় সেটা কল্প প্রিয় কেউই জানে না। পরদিন সন্ধ্যায় প্রিয়র নামে কেনা নতুন এ্যাপার্টমেন্টে আসে সবাই। আয়ান তিশা। পিয়াস। রায়হান মাহমুদ প্রিয়র বাবা মা এবং নূর হামিদ ও তার হাজবেন্ড ও সেখানে উপস্থিত হয়। সবাই ই মেনে নিয়েছে কল্প প্রিয়র সম্পর্কটা। নূর হামিদ আর আয়েশা মিলে রান্না বান্না করে অবেশেষে সবাই উপস্থিত থেকে কাজি ডেকে ঘরোয়া ভাবেই কল্প প্রিয়র বিয়ে সম্পূর্ন হয়।

রাতে ডিনার শেষে সবাই ফিরে যায় বাড়িতে। শুধু কল্প প্রিয়ই থেকে যায়। এটাই হয়তো শুরু তাদের নতুন জীবনের দুজনের ছোট্ট সংসার। কল্প তহমিনা কে বাদে বিয়ে করতে নারাজ থাকলেও রায়হানের কথা ফেলতে পারেনি।

রাইড থেকে বাসার পথে ফিরছে ওরা। কল্প প্রিয়কে জাপটে ধরে আছে।

~ প্রিয়।
~ হুম।
~ আমার বাবা মা কে আমি চিনি আম্মু কে বাদে কখনই ওনারা তোমার সাথে বিয়ে দিতে রাজি হতো না তাহলে কিভাবে রাজি হলো আমি না ভেবেই পারছি না।
~ বাবা কথা বলেছিলো। হইতো বাবাই বুঝাইছে।

~ রাস্তা পুরা ফাকা অনেক ভালো লাগছে তাই না। ল্যাম্পোস্টের হালকা আলো কোনো শব্দ নাই কোনো জ্যাম নাই। বাইকটা আস্তে চালাও না।
~ তুমি বলছো আস্তে চালাইতে 😳
~ হুম বলছি আস্তে চালাও।

প্রিয় বাইক আস্তে দিতে কল্প নিজের ফোনটা বের করে রোমান্টিক গান দিয়ে ইয়ারফোন লাগিয়ে একটা কল্প নেই আর একটা প্রিয়র কানে গুজে দেয়।
~ কি ব্যাপার সোনা এতো রোমান্টিক মুড।
~ রোমান্টিক পরিবেশ রোমান্টিক গান সাথে আমার রোমান্টিক বর তারপর আবার রাতটা স্পেশাল, ইশশ রোমান্টিক না হয়ে উপায় আছে। এখন তো আর প্রেমিক নাই।

~ তাই নাকি।
কল্প কোনো উত্তর না দিয়ে মুচকি হেসে পা টা উচুঁ প্রিয়র মাথাটা নিজের দিকে হালকা করে ঘুরিয়ে কল্প আর একটু প্রিয়র মুখে এগিয়ে গিয়ে দুটি ঠোট মিলিয়ে দেয়
প্রিয় শকড 😳

পর্ব ৩৩

ঘড়িতে রাত দুইটা
কল্প’প্রিয় এতোক্ষনে বাসায় ফিরলো। বাসার সামনে আসতেই আয়ান তিশাকে দেখা গেলো।
: কি রে আয়ান তুই এখানে কি করিস এখন।

: বেয়ান রে নিতে এলাম ভাই। এতো রাতে মানুষ ঘুমিয়ে কুল পাই না আর যাও রাইডে। দুজনই সেম সেম। মেড ফর ইস আদার
: কিন্তু তিশা তো তাও প্রায় দু ঘন্টা আগে এসছে এতোক্ষন ও কোথায় ছিলো?
: তোমার গুনধর ভাই ঘুমিয়ে ছিলো প্রিয় ভাইয়া বুঝলে এতো রাতে একটা মেয়েকে দাড় করিয়ে রেখে তার ঘুম পুরিয়ে নিয়ে তবে এসছে। সেসব ছাড়ো অনেক রাত হইছে তোমরা ভিতরে যাও।

: ওরা যাইতেছে আপনি এবার আমার পিঠে উঠে উদ্ধার করেন আমায়। আসছি রে ভাই। আজ তো তোদের বাসর রাত বেস্ট অফ লাক
আয়ান তিশা চলে গেলে কল্প প্রিয় বাসায় ঢুকে। প্রিয় রুমে ঢুকতে নিলে কল্প আটকে দেয়।
কি হলো
তুমি পাশের রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসো আমি আমাদেরটায় যাবো।

বাহ বাহ এখনই দখলের তোড়জোড়
যাও তো। আর এই জিন্স শার্ট একবারে চেন্জ করে ও রুমের বেডে হোয়াইট কালারের পান্জাবি রাখা আছে ওটা পড়ে নিবে।

এখন আবার পান্জাবি কেনো। পান্জাবি পড়ে ঘুমাবো নাকি?
প্রিয় আজ আমাদের বাসর। কিসের ঘুম। নো ঘুম টুম আজ চন্দ্র বিলাস করবে তুমি আর আমি প্রিয় বিলাস
খুব ঘুম পাচ্ছে সোনা প্লিজ আজ না
প্রিয়
যাচ্ছি যাচ্ছি।

প্রিয় পাশের রুমে ঢুকে ফ্রেশ হতে আর কল্প ওদের রুমে ঢুকে। প্রিয় ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে বেড়িয়ে দেখে এখনো কল্পর হয়নি আবার রুমের দরজা ভেতর থেকে লক। প্রিয় হাক ছাড়ে
কল্পরানি আর কতোক্ষন গো। ঘুমায় যাবো তো আমি সোফায়।
এই না না হয়ে গেছে যাস্ট পাচঁ মিনিট।
হুম জলদি।

প্রিয় সোজা কিচেনে চলে যায়। কল্পর প্রিয় বিলাস চন্দ্র বিলাসের শখ পূরন করতে হলে এখন তার কড়া একটা কফি খেতে হবে নইতো যে কোনো সময় ঘুমে কাদা হয়ে যাবে। কফি নিয়ে সোফায় বসে টিভি অন করে। গুনে গুনে পনেরো মিনিট বাদে দরজা খোলার শব্দ পেয়ে উঠে দাড়ায় প্রিয়। টিভি অফ করে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। এর মধ্যে তার দুইটা কফি শেষ হইছে।

দরজায় হালকা ধাক্কা দিতেই কিছুটা খুলে যায় যেখান থেকে শুধুই ক্যান্ডেলের আবছা আলো পুরো রুমে বিরাজ করছে সাথে ভেসে আসছে গোলাপের সুবাস। দরজা আস্তে আস্তে অর্ধেক ফাকঁ হতেই প্রিয় চোখ দুইটা রসগোল্লার আকার ধারন করে মুখে কোনো শব্দই বোধয় আর বরাদ্ধ নাই। এক পা ভিতরে রাখতেই ঠপাস করে শব্দ হলে কিছুটা চমকে যায় প্রিয় খেয়াল করে দেখে ওটা বেলুন ছিলো যা পায়ে লেগে ফেটে গেছে।

পুরো রুমে ধিকধিক করে ক্যান্ডেল জ্বলছে জেনো হালকা হাওয়া তাকে জ্বলতে বাধ সাধছে তবুও সে তাদের সাথে যুদ্ধে জয়ী হয়ে এখনো জাগ্রত আছে। ফ্লোরে গোলাপের পাপড়ি আর বেলুনে পা রাখার জায়গা নাই। বেডে চোখ গেলেই চোখ মুখ কুচকে আসে প্রিয়র। বেড সিট বালিসের কভার উভয়ই সাদা রঙের। আচ্ছা বাসর ঘরের বেড সিট কি এমন সাদা হয়। পুরো রুমটায় চোখ ধাধানো। প্রিয় একবার এমন রুমের পিকচার দেখিয়ে কল্পকে বলেছিলো তাদের বাসর ঘরটা এমন করে সাজানো হবে। তবে এখন এতোকিছু এবং তারই পছন্দে কে সাজালো কল্প তো ওর সাথেই ছিলো তাহলে। আয়ান তিশা? কিন্তু আয়ান তো ঠিক ভাবে তাকাতেই পারছিলো না ঘুমে।

ক্যান্ডেল গুলো আস্তে আস্তে নিভতে শুরু করে তবুও রুমে আলে কমছে না বেডে মাথার সোজাসোজু বিভিন্ন রঙের ফেইরি লাইট জ্বালানো। এতোক্ষনে প্রিয়র খেয়াল আসে কল্পর কথা।
কল্পকই তুমি। কল্প
তোমার পিছে।
প্রিয় পিছন ফিরতে গেলেই কল্প পিছন থেকে আলতো হাতে জড়িয়ে পিঠে মাথা রাখে। প্রিয় কল্পর হাত দুটো আরও একটু জোড়েই বুকে চেপে ধরে,
কে সাজিয়েছে রুমটা?

আয়ান তিশা।
কিন্তু ওরা কিভাবে জানলো এমনই আমার পছন্দ?

তিশার কাছে পিকচার দিয়েছিলাম। তুমি আয়ানকে বলাই ও সব কিনে রেখেছিলো বাট পরে তাড়াহুড়োই ওর মনে ছিলো না। তাছাড়া আমার একটা মাত্র বরের একটা মাত্র ইচ্ছা আমি কি না পূরন করে থাকতে পারি।
আমার পরীটা মনে হচ্ছে শাড়ি পড়েছে। আমাকে কি একটু দেখার সুযোগ দিবে।

উহু এভাবে না। মিরর এর সামনে চলো।
প্রিয়ও মুচকি হেসে মিরর এর সামনে গিয়ে দাড়ায়। কল্প ধীরে পিছন থেকে পাশে এসে দাড়াতেই প্রিয়র মুখ রসগোল্লা সাইজ হা হয়ে যায়। হাত চলে যায় মাথায় কল্প লজ্জায় মাথা নুইয়ে নেই।
টকটকে লাল শাড়ি পড়েছে কল্প।

কি ধাক্কা লাগলো তো। আমি জানতাম লাগবে
প্রিয় বিনা বাক্য ব্যয়ে হুট করেই এক টানে কল্পকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেই আর সাথে গান চালু করে দেই,
ছুন মেরি শেহজাদী,
মে হু তেরি শেহজাদা,
দুজন কাপল ডান্স করে। এটা প্রিয়র বরাবরের শখ বাসর রাতে বউয়ের সাথে ডান্স। গান শেষ হতেই জড়িয়ে ধরে কল্পকে।

সকাল ছয়টা।
প্রিয় উবু হয়ে শুয়ে ছিলো। পাশ ফেরার জন্য নড়তে গেলে পারে না জেনো ভারী কিছু তার পিঠে চাপা দেওয়া। চোখ পিটপিট করে এক হাত দিয়ে পিঠের ওপর হাতরাতে থাকে।

যতটুকু হাত যায় ততটুকুই হাতে চুল বাধে আর ঘুমের ভেতর সেটা ধরে টান দিতেই কল্প ব্যাথায়। আহহ। করে উঠে,
কল্পর শব্দে ভালো ভাবে চোখ মেলে তাকায় প্রিয় পরিস্থিতি বুঝতে পেরে কল্পকে ডাকে।
ওই তুমি পিঠের ওপর ঘুমাচ্ছো কেন। আমি ভাবছি কি না কি তাই ঘুমের ভেতর চুলে টান দিছি না বুঝে।

কল্প ঠোট উল্টে চুলে টান লাগা জায়গায় হাত দিয়ে ডলতে ডলতে প্রিয়র পিঠ থেকে মাথা তুলে উঠে বসে তারপর প্রিয়র মুখে কিছুক্ষন আহত দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে প্রিয়র পিঠে একটা কিল মেরে বেড ছাড়ে। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শাওয়ার নিয়ে একটা টাওয়াল গায়ে পেচিঁয়ে আর একটা মাথায় পেচিঁয়ে বেড়িয়ে আসে। প্রিয়কে ঘুমাতে দেখে শাড়ি নিয়ে অন্য রুমে গিয়ে চেন্জ করে আবার রুমে ফিরে আসে। ভেজা টাওয়াল কাপড় বেলকনিতে মেলে দিয়ে চুল আচড়ে হাত পায়ে লোশন লাগিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় উদ্দেশ্য কিচেন রুম। কিচেন পুরা খালি। ফ্রিজেও কোনো শাক ~ সবজি নাই।

রুমে ফোন বাজার শব্দে রুমে যায়। নূর হামিদ কল করেছে প্রিয়র ফোনে। প্রিয় ঘুমাচ্ছিলো তাই নিজেই রিসিভ করে সালাম দেয়।
কল্প উঠেছো?
হ্যা খালামনি।

আচ্ছা। বাসায় কোনো সবজি তো নাই। আমি দুপুরের রান্না আয়ান কে দিয়ে পাঠিয়ে দিবো, আর সকালের নাস্তা আমি ড্রাইভারকে দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি কেমন।
খালামনি প্রিয় উঠলে আমি দুপুরের বাজার করিয়ে আনবো শুধু সকালের নাস্তা দিলেই হবে,
তাও হবে।

খালামনি একটা রিকোয়েস্ট করি কিছু মনে না করলে।
হ্যা হ্যা বলো।

এ বাসায় তো আমরা দুজন মাত্র আপনারা লান্সে আসলে ভালো লাগতো,
লান্সে হবে না গো, তোমার খালু বাসায় থাকবে আজ। আচ্ছা মন খারাপ করো না আমরা ডিনারে যাবো কেমন।
আচ্ছা খালামনি।

ঠিক আছে রাখছি তাহলে।
কথা শেষ করে ফোনটা টেবিলে রেখে কিছুক্ষন প্রিয়র দিকে চেয়ে থেকে মৃদ্যু আওয়াজে গান প্লে করে জানালার পর্দাটা সরিয়ে দেয়। চোখে আলো পড়তেই ভ্রু কুচকে বিরক্তি ফুটে ওঠে প্রিয়র মুখে, তার সাথে আরো বিরক্তি গান দেওয়ায় ঘুমের ডিস্টার্ব।

প্লিজ গান অফ করে পর্দাটা টেনে দাও।
আটটা বাজে।
হুম।
বাসায় বাজার নেই।

আজ আমার অফিস নাই পড়ে উঠি একটু।
আগে উঠো বাজার করে এনে দিয়ে ঘুমাবা।
কল্পর কথায় প্রিয় চোখ মেলে তাকিয়ে কিছুক্ষন দেখে ইশারায় কল্পকে কাছে ডাকে। কল্প প্রিয়র পাশে বসলে প্রিয় কল্পর এক হাত নিয়ে ওর মুখে নেই,
পাক্কা গিন্নি লাগছে।
ঢং করতে ডাকলে।

সত্যি বলছি। এক রাত শেষেই আমার গফটা যে একদম সংসারি হয়ে যাবে আমি তো ভাবতেই পারিনি। একদিনেই সংসার সামলানো শুরু করছে
তো আমার সংসার আমার বর আমি ছাড়া সামলাবে কে। এখানে কি আমার শাশুড়ি আছে যে নতুন বউ বলে শুয়ে থাকলেই চলবে। পেটে খাবার না পড়লে তো আর প্রেম আসবে না।

কল্পর কথায় মুচকি হাসে প্রিয়। উঠে কল্পর গালে চুমু দিয়ে ফ্রেশ হতে যায়।
প্রিয় বের হয়ে টি~ শার্ট পড়বে তখনই কল্প রুমে আসে বাজারের প্যাকেট হাতে।
চুলটা মুছো ঠিক করে পানি পড়ছে।

প্রিয় কল্পর দিকে টাওয়াল এগিয়ে দিয়ে কল্পর হাত থেকে বাজারের প্যাকেট নিয়ে বলে। মুছিয়ে দাও।
কল্প টাওয়াল নিয়ে মুছিয়ে দেই। প্রিয়র চুল সিল্কি হওয়ায় না আচড়ালেও মনে হয় আচড়ানো। ওভাবেই বের হতে নিলে কল্প থামিয়ে তবুও আচড়ে দেয়।
লাগতো না তো।

আমার পছন্দের জিনিষ গুলা আমি প্রছন্ড যত্নে রাখি জানো তো তুমি।
খুব জানি। কি কি আনবো এখন বলো।
লিস্ট করে দিছি। প্যাকেটের ভেতর কাগজ আছে। তোমাকে বলা হয়নি খালামনি কল দিছিলো সকালে।
কি বলে?

বাসায় বাজার নাই খাবার পাঠাবে সেটাই বলছিলো। নাস্তাটা পাঠাতে বলেছি শুধু।
তাহলে একটু পড়ে উঠায়তে।
সকালে আমার চুল টানছো। এটাই তার শাস্তি।
ওটাতো।

এক্সিডেন্ট ছিলো তাই বলবা তো। অনেক জোড়ে টানছিলা ব্যাথা লাগছিলো অনেক। তোমার তো ভাগ্য ভালো আমি তোমার চুল টানিনি। এখন যাও যাও।
প্রিয় কল্পর চল টেনে। দুষ্টু। বলে চলে যায়। কল্প লেগে পড়ে বাসি ঘর গোছাতে। এইতো শুরু তাদের ছোট্ট সংসার।

পর্ব ৩৪

কল্প ডায়নিং এ খাবার সাজাচ্ছিলো ও বাসা থেকে যা খাবার পাঠিয়েছে তখন কলিং বেল বাজাই গিয়ে দরজা খুলে প্রিয়কে দেখে রীতিমতো কল্প হাসিতে ফেটে পড়লো। দরজা থেকে সরতেই প্রিয় ভেতরে ঢুকেই একবারে কিচেনে ঢুকে পড়লো সবজির ব্যাগ সহ যাবতীয় ব্যাগ রাখতে, কল্প দরজা লাগিয়ে পিছু পিছু আসলো। এখনো হাসছে কল্প।

‘তুমিই সেই নারী যার কিনা বরের কষ্ট দেখে দুঃখের বদলে হাসি পাই’
‘তোমাকে দেখে এখন একটা কথায় মাথা আসছে আর সেটা হলো। নিরিহ বর।

‘~ বাঙালি কেটে বর’
‘~ অনেক কষ্ট হইছে তাই না। ঘেমে নেয়ে একশা অবস্থা। এতোকিছু কে আনতে বলছে আমি তো এতোকিছু লিস্টে রাখিনি একসাথে এতসব আনার কি দরকার ছিলো?
‘~ তো আমি কি রেগুলার যাবো নাকি বাজার করতে। মাই গড কি ডিফিকাল্ট ব্যাপার স্যাপার’
ফ্রিজে আইসক্রিম রাখতে রাখতে বললো প্রিয়। কল্প প্রিয়কে ঘুরিয়ে শাড়ির আচঁল দিয়ে প্রিয়র কপালের ঘামটা মুছে দিয়ে মাথা উচুঁ করে একটা চুমু দিলো তারপর মুখের দুপাশে নিজের মুখটাও ঘষে নেই।

কল্পর কান্ডে প্রিয় হেসে দেয়, প্রিয় কোমড় ধরে বলে’এমন সেবা সারাজীবন করবে তো’
‘~ একটাই তো বর তাকে ছাড়া আর কাকে করবো একদিনের জন্য এসেছি নাকি সারাজীবনই করবো। এখন যাও তো রুমে যাও আবার গোসল করতে হবে তোমার যা অবস্থা হইছে। জলদি করো আমি এগুলো উঠিয়ে রেখে খাবার দিচ্ছি।
‘আচ্ছা’বলে প্রিয় রুমে চলে যায়।

কল্প সব ফ্রিজে রাখতে ফ্রিজ লোড কিছুক্ষনে। খালামনিরা আসবে শুনে দই, মিষ্টি। সেভেন আপ ও আনছে। কল্পর জন্য বিভিন্ন রকম আইসক্রিম। ছানার মিষ্টি, নিম্নে দশ পনেরোটা চিপস এর প্যাকেট, চালতার আচার ও আনছে যা কল্পর ভীষন পছন্দের। কল্পর ওগুলো গোছায়তেই প্রিয় চলে আসে ডায়নিং এ।

‘কই গো’
প্রিয়র এমন ডাক শুনে একটু চমকেই হেসে ফেলে কল্প। সেখান থেকে ডায়নিং এ এসে প্রিয়র পাশে বসে খাবার বাড়তে শুরু করে। কল্পর মুখে হাসি দেখে প্রিয় ভ্রু কুচকে তাকায়।

‘কাহিনি কি। হাসো কেন?
‘তোমার মুখে কই গো শুনেই হাসি পেলো। মনে হচ্ছে আমাদের কতো বছরের সংসার আর আমরা কতো বছরের সুখি দম্পতি।

‘তো অসুখি বলছো’
‘মোটেও তা নই
‘~ হা হা হা। আসলেই আলাদা থেকে জেনো দুজনেই একটু বেশি সাংসারিক হয়ে গেছি প্রথম দিনে।
‘~ এই হাত দিচ্ছো কেন।

~ তো খাবো কেমনে।
~’আজ থেকে তোমায় আমি খাইয়ে দিবো আর তুমি আমায়’
‘সব সময়?

‘কেনো অসুবিধে আছে। থাকলে দরকার নাই শুধু আমিই তোমায় খাইয়ে দিবো।
‘~ আরে অফারটা আমার ভীষন পছন্দ হইছে। একই প্লেটে দুজন দুজনকে খাইয়ে দিবো উফফ অস্থির একটা বিষয় তবে এখানে না রুমে চলো।
‘কেনো এখানে কি?
~ কিছুনা চলো তুমি।

প্রিয় খাবার নিয়ে উঠে যায় কল্প পানির বোতল আর গ্লাস নিয়ে রুমে যায়। প্রিয় খাটে পা উঠিয়ে বসে সামনে প্লেট রাখে। দুজনই মুখোমুখি হয়ে দুজন দুজনকে খাওয়াতে শুরু করে প্রিয় হাত বাড়িয়ে ফোনটা নিয়ে মুহুর্তটা ক্যাপচার করে নেই। কল্প ফিক করে হেসে দেয়।
‘বর আমার না কেমন সপ্ন সপ্ন লাগছে। আমাদের বিয়েটা হয়ে গেছে সেটাও জেনো সপ্ন মনে হচ্ছে।

‘এমন প্রতিটা দিন প্রতিটা মুহুর্তই হবে ভালোবাসাময় বুঝছো। তোমার মুখে বর ডাকটা শুনে আমার না সিনিয়র সিনিয়র লাগছে
অফকোর্স তুমি আমার সিনিয়র সেটাও দুবছরের এক আমরা স্টাডিতে সমান হলেও তুমি আমার থেকে এক ইয়ার সিনিয়রই ছিলা আর দুই আমি স্টুডেন্ট হিসাবে অনেক ভালো হওয়ায় একদম পিচ্চি কালে একটা ক্লাস টপকিয়ে উপরে উঠেছিলাম হলো না দুই বছরের সিনিয়র। নয়তো ক্লাস হিসাবে এক আর এমনি বয়সে এক।

দুই বছর সিনিয়র, কিন্তু আমিই ভেবছিলাম এক বছর বাট পরে বুঝেছি বর আমার দু বছরেরই সিনিয়র আমার হিসাবে গড়মিল ছিলো
‘পচা স্টুডেন্ট’
‘আজ খালামনিরা আসবে না গো’
‘কেন সকালেই না বললো আসবে?

‘হুম বললো তো খাবার পাঠিয়ে আবার বললো খালু আছে আজ বাসায় আজ হবে না কাল আসবে।

~ ওহ
দুজন খাওয়া শেষে হাত ধুয়ে দুজনই দুজনার মুখ মুছে দেয়। কল্প প্লেট রাখতে গেলে প্রিয় বেডে শরীর এলিয়ে দেয়। এই প্রথম সে বাজার করলো নিজে গিয়ে তাও সেটা নিজের সংসারের জন্য। একটু কষ্ট হলেও বেশ খুশি নিয়েই বাজার করেছে প্রিয়। কল্প এসে প্রিয়র কাছে শুয়ে ওর এক হাতে মাথা রাখে। প্রিয় চোখ বন্ধ করে ছিলো কল্পর শোয়াই টের পেয়েও খুললো না।
‘ঘুমায় গেলা?
‘প্রচুর ঘুম পাচ্ছে গো।

কল্প নিশ্চুপ কিছুক্ষন প্রিয়র মুখে চেয়ে মাথা উচিয়ে প্রিয়র গলায় মুখ নিয়ে নাক ঘষতে থাকে প্রিয় নড়ে উঠতেই কল্প সেখানে একটা চুমু দিয়ে গলায়ই মাথাটা রেখে ফিসফিসিয়ে বলে’ঘুমাও’
প্রিয় এক হাত জড়িয়ে নিয়ে আরেক হাতে কল্পর চুলে বুলিয়ে বলে’বেশ লাগছিলো’
প্রিয়র কথায় হেসে আবারো নাক ঘষে কল্প। প্রিয়ও হেসে দেয়।
দুজনেই ঘুমিয়ে যায়।

দুপুর বারোটায় ঘুম ভেঙে যায় প্রিয়র। তাকিয়ে দেখে কল্প তাকে জাপটে ধরে আছে জেনো ছাড়লেই নাই। কল্পর খোলা চুল গুলো এলোমেলো ভাবে পুরো মুখ জুড়ে আছে। প্রিয় হাত উঠিয়ে আস্তে আস্তে কল্পর মুখ থেকে চুল গুলো সরিয়ে দেয়। হঠাৎ প্রিয়র মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসে। কল্পকে বুক থেকে আস্তে করে নামিয়ে প্রিয় উঠে যায়। কিছুক্ষন ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাড়িয়ে উকি ঝুকি দিয়ে কিছু একটা খুজে। কল্পর সাজের জিনিস ঘাটতেই একটা লিপস্টিক দেখতে পায়।

সেটা হাতে নিয়েই বাকা হেসে কল্পর সামনে দাড়ায়। আস্তে করে নিচু হতেই কল্প একপাশ হয়ে ঘুরে শোবার জন্য ঘুরতে প্রিয় ও কল্পর মুখের কাছে পড়ে যায়। কল্পর ঠোটের দিকে চোখ যায়তেই স্থির হয়ে যায় প্রিয়। কল্পর ঠোটে আঙুল বুলাতেই কল্প ঘুমের ভেতর ঠোটে কিছু পড়ছে ভেবে ঠোট নড়ালে প্রিয় নিজের ঠোটটা মিলিয়ে দেয় কল্পর ঠোটে।

আশ্চর্যকর বিষয় কল্পও রেসপন্স করে। প্রিয় বেশি কন্ট্রোল হারাবার আগেই নিজেকে সামলে সরে আসতে নিলে কল্প প্রিয়র হাত জড়িয়ে নেই। প্রিয় মুচকি হেসে কল্পর পাশে শুয়ে হাতের লিপস্টিকটা নিয়ে খুব ধীরে কল্পর ঠোটে লাগিয়ে দেয়। তারপর নিজের মুখের দুপাশে ঠোটে কপালে কল্পর লিপস্টিক লাগানো ঠোট ছোয়ায়। তারপর সিরিয়াস ভঙ্গিমা মুখ করে বিছানা থেকে উঠে লিপস্টিক জায়গায় রেখে আবার কল্পর সামনে এসে দাড়ায়।

~ কল্প এই কল্প।
কল্পর সাড়া না পেয়ে জোড়ে ডাকতেই কল্পও ঝাড়ি দিয়ে উঠে।

~ কি সমস্যা ডাকো কেন। রাতে ঘুমাইতে দাও নাই এখনও ডাইকা মাথা খাও কেন। নিজে তো ঘুমাইলা ভোরে আমি তাও ঘুমাইতে পারি নাই প্লিজ একটু ঘুমাইতে দাও। (চোখ বন্ধ রেখেই)
~ ঘুমাইলে এখন খাবো টা কি। রান্না করবা না
~ আম্মু ও বাড়ি দাওয়াত দিছে নতুন জামাইয়ের। যাও খেয়ে আসো।
~ তো তুমি যাবা না?

~ তুমি যতোদিন তোমার বাড়ি যেতো পারবা না ততোদিন আমিও আমার বাড়ি যাবো না।
~ তাহলে উঠে রান্না করো আমি একা তো আর ওখানে যাবো না এর থেকে বাসায় খায়। আর তুমি ওঠো তো বাল কি করছো এসব দেখো।
কল্প এবার চোখ মেলে প্রিয়র দিকে তাকাতেই শকড।

~ এ অবস্থা কেন তোমার সারা মুখে চুমুর দাগ। না চুমু না মানে লিপস্টিক ওয়ালা চুমু। আর আমি তো তোমায় চুমু খায়নি তাও লিপস্টিক দিয়ে।
~ তো কি আমি ইয়ার্কি করি। ভুতে এসে চুমু দিছে এই তো তোমার ঠোটে চুমু। মিথ্যা বলার একটা লিমিটেশন থাকে কল্প এসব একদম আমার পছন্দ না বিরক্তিকর।

জোড়ে কথা গুলো বলে প্রিয় ওয়াশরুমে গিয়ে টেপ ছেড়ে হাসি তে ফেটে পড়ে। এদিকে কল্প তো থ। সামান্য লিপস্টিক ওয়ালা কিস এর জন্য প্রিয় এমন আচরন করলো ওর সাথে তাও যদি সত্যিই কল্প এমন কিছু করতো। মনটা খুবই খারাপ হয়ে যায় কল্পর একদিনেই এমন ভেবেই কান্না পায়। প্রিয় ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এসে দেখে কল্প এখনো সেভাবেই ঠোট উল্টে বসে আছে চোখ ছলছল করছে।

~ এভাবে ঠোট উল্টে বসে না থেকে গিয়ে রান্না বসাও।
কল্প তবুৃও ঠাই বসে থাকে প্রিয়র এমন রুড বিহেভে প্রিয়র দিকে তাকাতেই ফুপিয়ে কান্না করে দেয়। আজ পর্যন্ত কেও ওর সাথে এমন ব্যবহার করেনি। কল্পর কান্না দেখে প্রিয় হো হো করে হেসে দেয়। কল্প হাসি থামিয়ে উৎসুক দৃষ্টিতে প্রিয়র হাসি লক্ষ্য করে।

~ আমারে কাদিয়ে হাসছো তুমি।
~ ফোনটা হাতে নিয়ে গ্যালারিতে যাও একটা ভিডিও পাবা দেখে বলো কেমন হইছে।

বলেই প্রিয় মিররের সামনে গিয়ে ভেজা হাতে চুল ঠিক করে। কল্প প্রিয়র কথা মতো ফোন নিয়ে ভিডিও দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে যায়।
কল্পর অবাকের লেভেল দেখে প্রিয়র হাসি থামায় কে। হাসতে হাসতে তার পেটই ব্যাথা হয়ে গেছে। কল্প রেগে ফোন ছুড়ে ফেলে প্রিয়র কাছে এসে পিঠে জোড়ে একটা কামড় দেয়।

আহহহহহহ
প্রিয়র শব্দে ছেড়ে দেয় কল্প।
~ এই মেয়ে রাক্ষসি মেরেই ফেলতেছিলো মাগো শেষ আমি।

~ শয়তান কোথাকার। নিজে এসব করে আমারে জ্বালানো। যতো জ্বালাবা ততো কামড়। হুহহহ
বলে কল্প ফ্রেশ হতে চলে যায়। প্রিয় একটা টি~শার্ট পড়ে সোফায় বসে টিভি দেখে। কল্প ফ্রেশ হয়ে এসে মুখ মুছে সোজা গিয়ে প্রিয়র কোলে বসে পড়ে।
~ সরো মেয়ে। নিজের স্বামীকে কামড় দেও আবার কোলে উঠো।

কল্প প্রিয়র চল টেনে বলে। আমাকে জ্বালাবা না তাহলে আমিও আর কামড়াবো না লক্ষিতা।
প্রিয় হেসে কল্পর মুখ টেনে ঠোটে হালকা করে কামড় দেয়। আহহ প্রিয়।
~ সোধ বোধ।

~ তুমি আসলেই খারাপ। কোনো সোধ বোধ হয়নি তুমি আমাকে আগে জ্বালাইছো।
কল্প প্রিয়র টি~শার্ট টেনে গলায় কামড় দেয়।
উফফফ। পুরো শরীর কামড়ে খেয়ে ফেলবা নাকি।

~ তুমি কি আইসক্রিম নাকি।
প্রিয় কল্পকে উঠিয়ে কোলে বসায়।

~ আমার বউয়ের ঠোট টা আইসক্রিমের মতো দাও তো খায়।
~ সরো সরো দূরে যাও।
~ ঠিকাছে গেলাম দূরে।
~ নাহ কাছে এসো।

~ কি এক পাগলের পাল্লায় পড়লাম। খাবো কি এখন তাই বলো।
~ একটু পর তিশা আসবে খাবার নিয়ে আম্মুকে বলেছি পাঠিয়ে দিতে।

~ ওবাসায় গেলেই তো হতো। আমার একটা মাত্র শশুড় শাশুড়ির দাওয়াত বলে কথা।
~ বললামই তো যেতে তুমিই গেলা না
~ তো আমি একা যাবো নাকি।

দুজনের কথার মাঝে বেল বেজে উঠে কল্প গিয়ে গেট খুলে তিশা এসছে খাবার নিয়ে। তিশাকে নিয়েই ওরা খাবার শেষ করে বসতে কিছুক্ষনে আয়ানও আসে। সবাই বসে আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যায় নাস্তা করে আয়ান তিশা চলে যায়। রাতে আর রান্না না করে প্রিয় বাইরে থেকে অর্ডার করে খাবার নিয়ে আসে। প্রিয় খেয়ে রুমে চলে আসলে কল্প সব গুছিয়ে উঠিয়ে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বেডে বসে। কল্প তখন টিভিতে মুভি দেখছে। কল্প শুতে যাবার আগেই প্রিয় টিভি অফ করে পাশে এসে বসে হাত টেনে নেই।

~ কি হলো হাত কেনো টানছো। যাও গিয়ে মুভি দেখো আমায় ঘুমাতে দাও
~ না না কোনো ঘুম হবে না এখন আমি তোমায় মেহেদি পড়াবো। মেহেন্দির আগেই তো বিয়ে হয়ে গেলো হাতে মেহেদীর ম ও নাই।
কল্প হো হো করে হেসে উঠে।

~ তুমি মেহেদি লাগাবা। পারো তুমি?
~ কি যে বলো পাক্কা তিনটা মেহেদি নষ্ট করে এই মেহেদি লাগানো শিখেছি শুধু আমার কল্প রানি কে পড়াবো বলে।
~ অবাক না হয়ে পাড়লাম না।

~ দাও দাও হাত দাও।
প্রিয় মেহেদি লাগাচ্ছে কল্প অবাক হয়ে দেখছে। অনেক সুন্দর করে ছেলেটা ওরে মেহেদি পড়িয়ে দিচ্ছে।

~ প্রিয়
~ হুম
~ একটা কথা।

~ বলো
~ আমরা ও বাসায় কবে যাবো। মা কি মেনে নিবেনে আমায়।

~ আরে না মেনে যাবে কোথায়। কাল বাবা আসবে খালামনি দের সাথেও।
~ ওহ
প্রিয় খুব মনোযোগ দিয়ে কল্পকে মেহেদি পড়িয়ে দিলো। শেষ হতে কল্প খুশিতে না পারে কেদেই দেয়। এই ছেলেটা ওরে এতো ভালোবাসে কেন ও ভেবেই পায় না। কল্প জড়িয়ে ধরে প্রিয়কে।

~ শুধু জড়াজড়িতে কিছু হবে না সোনা। এতো কষ্ট করলাম আমার আদর কই।
কল্প প্রিয়র কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিসিয়ে বলে। আজ রাতে শুধু আদর হবে নো ঘুম টুম।
প্রিয় মুচকি হেসে টাইটলি জড়িয়ে নেয় কল্পকে।

পরদিন খুব সকালে উঠে গোসল সেড়ে প্রিয়কে ঠেলেও উঠাতে পারে না তাই নামাজ পড়ে কিচেনে চলে যায় কল্প। দু কাপ কফি বানিয়ে রুমে আসে। প্রিয়র সামনে কফি ধরে ডেকে যখন উঠে না তখন চিমটি দিলে প্রিয় হালকা নড়ে উঠে।
~ ধুর মিয়া কফি রেখে গেলাম খাইলে খাও নইতো পড়ে আর হাজার বললেও আমি বানাতে পারবো না।

বলেই কল্প কফি খেতে খেতে বেলকনিতে চলে যায়। আবহাওয়াটা অনেক শীতল, শীত শীত একটা ভাব চলে এসছে। কল্প ফিরে রুম থেকে একটা শাল নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে আবার বেলকনিতে যায়। বেলকনির গ্লাস খুলে সোফায় বসে ফেবুতে ঢুকে একটু নিউজফিড ঘুরাঘুরি করে কফিটা শেষ করে আবার রুমে চলে আসে। প্রিয়র কফি মগ ফাকা দেখে বুঝতে পারে ঘুমের মধ্যেই খেয়ে নিছে। এই স্বভাবটা খুব আছে প্রিয়র। কল্প মুচকি হেসে প্রিয়র কপাল থেকে চুল সরিয়ে একটা চুমু দিয়ে কাপ দুইটা নিয়ে আবার কিচেনে চলে যায় সকালের নাস্তা বানাইতে।

পর্ব ৩৫

সকালের রান্নার মাঝেই প্রিয়কে ডেকে ফ্রেশ হতে বলে। নাস্তা শেষ করে প্রিয় রুমে গিয়ে টিভি অন করে বসে আর কল্প টেবিল গোছায়ে রুম পরিষ্কার করে ঝাড়ু দিয়ে সব গোছায়ে আবার কিচেনে চলে যায় দুপুরে কি কি রান্না হবে সেটার বন্দ বস্ত করতে। কল্পকে রুমে যেতে না দেখে প্রিয় টিভি অফ করে বাইরে এসে খুজতে খুজতে কিচেনে গিয়ে পাই।
~ এ কি এখনই আবার রান্না করবা নাকি।

~ এখন শুরু করলেই কখন শেষ করতে পারবো সেটা নিয়েই আমি চিন্তিত। এতগুলা মানুষ একা সময় নিয়ে রান্না করতে হবে। আর দুপুরের রান্না শেষে রাতের রান্নাটা ও সেরে ফেলবো। সবার মধ্যে তো আবার রান্নার সুযোগ পাবো না। সবাইকে সাথে নিয়েই ডিনার করবো আজ।

~ বুঝলাম বাট এতোকিছু একা পারবা? আম্মু কে আসতে বলি।
~ না লাগবে না। আমি পারবো। সবজি রান্না গুলো ঠিকঠাক পারবো না ও গুলো আমি আম্মুকে কল করে জিগায় নিবো।

প্রিয় কিছু না বলে রুমে গিয়ে আয়েশা কে ফোন করে আসতে বলে। আয়েশা আসতে না চাইলেও প্রিয়র জোড়ে আসতে বাধ্য হয়। ততক্ষনে কল্প টুকটাক গোছগাছ করে নেই রান্নার প্রিয়ও হাতে হাতে এটা ওটা আগিয়ে হেল্প করছে আর গল্প শুনাচ্ছে কল্পকে। ও এখনো জানে না আয়েশা আসছে। বেল বাজতে প্রিয় গিয়ে দরজা খুলে আয়েশা কে ভিতরে আনে। আয়েশা কিচেনে যেতেই ভুত দেখা মতো চমকে যায়।

~ আম্মু তুমি এখানে এখন।
~ এই যে নাছোড় বান্দা বাদরটার জন্য না এসে উপায় আছে।

~ প্রিয় আমি বলেছিলাম তো আমি পারবো। এরপর থেকে কি বাড়িতে কেউ আসলেই আম্মুকে ডাকবা রান্নার জন্য। তোমার বউ কি রাধতে জানে না।
~ জানে কিন্তু এর আগে তো এতোসব রান্না করোনি। আস্তে আস্তে শিখে যাবা তখন তো আর কাউকে ডাকা লাগবে না তুমি একাই পারবা। আজ আম্মু একটু আমাদের হেল্প করলো সমস্যা কোথায়? আর তাছাড়া আম্মু কে আমি দাওয়াত দিছি তাই না আম্মু বলো।
~ আরে হ্যা তুই ওকে বকছিস কেনো ও তো তোর কষ্ট হবে ভেবেই বলেছে।

~ হুহহ উদ্ধার করছে।
~ সর তো তুই আমাকে করতে দে। আমি রান্না করছি তুই দেখ।

~ তুমি সরো তো আমার বাড়ির গেস্টের রান্না আমিই করবো। তুমি আর তোমার ছেলে হইছে একখান তোমরা যাও এখান থেকে আমার লাগবে না কোনো হেল্প।
~ ঠিক আছে তুমি করো রান্না কিন্তু আমি আর আম্মু কোথাও যাবো না আমরা এখানে দাড়িয়েই গল্প করবো মাঝে মাঝে আমরা একটু হেল্প করলাম না মানে যদি তোমার প্রয়োজন পড়ে তবেই আর কি।

দুজনের কথায় আয়েশা হেসে দেয়। কল্প রান্না শুরু করলে হাতে হাতে প্রতিটা জিনিসই প্রিয় এগিয়ে দিচ্ছে আর আয়েশা কোনটা কিভাবে কোন রান্নায় কতোটুকু ঝাল লাগবে লবন লাগবে হলুদ লাগবে এগুলো বলে বলে দিচ্ছে।

দুপুরের রান্না শেষ করে রাতেরটা করার সময় অনেক বেজে যায়। মায়ের হাতে বাকি দায়িত্ব দিয়ে কল্প গোসলে চলে যায়। রান্না করে ঘেমে নেয়ে একাকার গোসল না করে উপায় নাই। গোসল সেড়ে বেড়োতেই প্রিয় ঝাড়ি দিয়ে উঠে
~ এই তুমি এতোবার গোসল করছো কেন ঠান্ডা লেগে যাবে না।
কল্পর উত্তরের অপেক্ষা না করে কল্পর কাছে গিয়ে চুল থেকে টাওয়াল খুলে চুল মুছে দেয়।

~ ঘেমে যা অবস্থা হইছিলো কি করতাম গোসল ছাড়া।
~ এমনিতেই ঠান্ডা পড়ছে কল্প এতো গোসলের দরকার নাই প্রতি নিয়ত একবার গোসল করবে অন্তত এই শীতের মাস গুলো। আর আজ বাদে আর সবসময় শাড়ি পড়তে হবে না।

~ কেনো? আমার তো শাড়ি পড়তে ভালোই লাগে।
~ দেখে তো মনে হয় শাড়ি তে হাপিয়ে উঠো।
~ আরে না অভ্যেস আছে। তুমি আম্মু কে একা ফেলে রুমে কেন আইছো।

~ বউকে দেখতে।
~ হইছে দেখা এখন আম্মুর কাছে যাও আমি আসছি
~ আচ্ছা।

কল্প রেডি হয়ে কিচেন গিয়ে খাবার গুলো নিয়ে টেবিলে সাজিয়ে নেই ততক্ষনে রায়হান মাহমুদ নূর হামিদ। আয়ান তিশা সাথে কল্পর বাবা ও আছে। সকলের সাথে কথা বার্তা শেষে মা কে জিগ্যেস করে
~ আম্মু আব্বু?

~ প্রিয় ফোন করে বললো আসতেই হবে নইতো ও কাউকে খাওয়াবে না।
~ ওহ
পিয়াসের আসার কথা ছিলো কিন্তু বাবা ছেলে একসাথে বের হলে তহমিনা সন্দেহ করবে ভেবে পিয়াস আর আসেনি।
দুপুরে সকলের সাথে আনন্দের মাঝে খাওয়া শেষে সবাই বসে গল্প করছিলো তার মাঝেই রায়হান মাহমুদ কল্পর উদ্দশ্যে বলে। বৌ মা তোমার সাথে আমার একটু আলাদা কথা ছিলো।

শশুড়ের এমন সিক্রেট আলোচনার কথায় একটু ভয় পায় কল্প না জানি কি বলবে তাই সে মনে মনে ঠিক করে তার মনে থাকা প্রশ্ন গুলোও আজ শশুড় কে করবে।
জ্বি বাবা চলুন।

কল্প রায়হান মাহমুদ কে রুমে নিয়ে যায় সবাই অবাক হয় কি এমন কথা যে আলাদা বলতে হবে। কল্পর বাবা মায়ের মনে অজানা ভয় দানা বাধতে থাকে। প্রিয় ওদের সাথে থাকবে বললে কল্প রায়হান মাহমুদ দুজনই মানা করে দেয়’

রায়হান মাহমুদ বিকালের দিকে যেতে চাইলে কল্প কাউকেই আর যেতে দেয়নি সন্ধ্যায় নাস্তা সেরে রায়হান মাহমুদ কল্পর বাবা মায়ের সাথে বসে গল্প করে আর প্রিয় কল্প। আয়ান তিশার সাথে। রাতে সবাই ডিনার করে চলে যায়। কল্প সব গুছিয়ে কাজ শেষে রুমে আসতেই প্রিয়র প্রথম কথা থাকে। বাবা কি বললো তোমায়?
~ ওটা শশুড় বউমার সিক্রেট। তোমায় বলা বারন। তবে ভালো কিছুই হলো দেখতেই পারবা আস্তে আস্তে।
~ ঠিক আছে এখানে আসো।

কল্প বিছানায় বসতে প্রিয় উঠে গিয়ে তেল এনে কল্পর মাথায় দিতে থাকে।
~ সত্যিই মাথা ধরে গেছিলো তুমি বুঝলে কেমনে?

~ আমি অনেক কিছুই বুঝি। এখন কেমন লাগছে
~ ভালো লাগছে
কল্প চোখ বুজে আছে প্রিয় কল্পর চুল তেল লাগিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে হালকা করে টেনে দিচ্ছে। আরামে কল্পর চোখ এমনিই বন্ধ হয়ে আসে। কিছু সময় বাদে কল্পর নড়াচড়া না পেয়ে কল্পকে ডাকলে দেখে আরামে সে ঘুমিয়েই গেছে সারাদিনের ধকলে এখন বসতেই ঘুম। প্রিয় মুচকি হেসে চুল আচড়ে বেনী করে দিয়ে কল্পকে শুইয়ে দেয়। উঠে দরজা লাগিয়ে রুমের লাইট অফ করে পানি খেয়ে নিজেও কল্পর পাশে শুয়ে পড়ে’

পাচদিন পেড়িয়ে যায়। প্রিয় দুদিন আগে থেকে অফিস যাওয়া শুরু করেছে। কল্পকে সারাদিন বাসায় একাই থাকতে হয়। কাজ শেষে বসে একটু ফেবু স্ক্রল করে টিভি দেখেই কাটে তার মাঝে মাঝে আয়েশা ও আসে মেয়ের একাকিত্ব দূর করতে তিশা ও আসে মাঝে মাঝে। প্রিয়র কদিন অফিস মিস করাই কাজ অনেক জমে গেছে একটু বেশিই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রিয়। এটা নিয়ে কল্পর কোনো অভিযোগ নেই কারন এতোকিছুর মাঝেও সময় মত কল্প কেউ হ্যান্ডেল করছে অভিযোগের কোনো জায়গা রাখতে চাই না প্রিয়।

রাতে আটটার দিকে বাসায় ফিরে প্রিয়। অনেক টায়ার্ড থাকায় কোনো ফ্রেশ হয়ে চেন্জ করেই শুয়ে পড়ে। কল্প কফি এনে প্রিয়কে ডাক দিলে প্রিয় পাশে রাখতে বলে।
~ টায়ার্ড অনেক?

~ হুম অন্নেক
কল্প বেডে উঠে বসে প্রিয়র মাথা নিজের কোলের উপর নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে কপাল টিপে দিতে থাকে। প্রিয় ততক্ষনে কল্পর কোমড় জড়িয়ে পেটে মুখ গুজলে কল্প হো হো করে হেসে উঠে।
~ কি হলো?

~ এমনি মাথা রাখো নাক ঘষো না কাতুকুতু লাগে।
~ আমার পরী টা একটু মোটা হইছে।
~ খারাপ লাগছে অনেক তাই না। আমি তো খাবারের নিয়ম চেন্জ করিনি তেল খাবারও খায় না বেশি তাও হচ্ছে কি যে করি।
প্রিয় হেসে দেয়।

~ কিছু করা লাগবে না গো। এমনিতে তো কাঠি ছিলা একটু খানি মোটা হইছো মাত্র অস্থির কিউট লাগছে বউ। আরো একটু মোটা হতে হবে বুঝলা তাইলে আরো অস্থির ঠু কিউট লাগবে।
~ কি সব বলো অস্থির। অস্থির ঠু। চুপ করে শুয়ে থাকো আর কফিটা খেয়ে নাও একটু ভালো লাগবে।
~ খাচ্ছি। তুমি হাত বুলাও মাথায়।

প্রিয় এখনো কল্পর পেটে মুখ গুজে আছে। কল্প মুখ নামিয়ে প্রিয়র মুখ উঠিয়ে কিস করতে যাবে তখনই কল্পর ফোন বেজে উঠে।
~ কোন হুনু। খালি রোমান্সের সময় ডিস্টার্ব করে।
কল্প ফোন হাত নিয়ে দেখে পিয়াস ফোন দিছে।

~ এই পিয়াস ফোন দিচ্ছে কিন্তু ও তো তোমার ফোনেই কল দেয়। আমাকে তো দেয় না।
~ রিসিভ করো।
~ না তুমি করো।
প্রিয় ফোন নিয়ে রিসিভ করতে ওপাশ থেকে আতংক পিয়াসের কন্ঠ শোনা যায়।
~ ভাইয়া বাবা।

~ বাবা। কি হইছে বাবার। ঠিক আছ তো বাবা। পিয়াস বল।
~ বাবা অনেক অসুস্থ ভাইয়া। ডক্টর দেখছে। ডক্টর বললো হার্ট অ্যার্টাক করছে হসপিটাল নিতে চাইলে বাবা যেতে নারাজ তাই বাসায়ই চিকিৎসা চলছে। বাবা বার বার তোমায় আর ভাবি কে দেখতে চাইছে। আমি অনেক্ষন তোমার ফোনে ট্রাই করেছি বার বার কেটে যাচ্ছে তাই ভাবি কে দিলাম তোমরা জলদি এসো,
~ তুই চিন্তা করিস না বাবার পাশে থাক আমরা এখনই আসছি।

প্রিয় ফোন কাটতেই কল্প’কি হইছে বাবার’জিগ্যেস করলে প্রিয় বলে’এখনই ও বাসায় যেতে হবে বাবা হার্ট অ্যার্টাক করছে’
দুজনই যে অবস্থায় ছিলো সে অবস্থায়ই বেড়িয়ে পড়ে ও বাড়ির উদ্দেশ্য,

রায়হান মাহমুদ বিছানায় শুয়ে আছে তার পাশে বসেই তহমিনা মাহমুদ কেদে যাচ্ছে। আর বেডের চারপাশে প্রিয় কল্প পিয়াস দাড়িয়ে আছে। এদিকে তহমিনা মাহমুদ সমানে কেদে যাচ্ছেন থামার কোনো নাম গন্ধ নাই দেখে রায়হান মাহমুদ একটু কড়া গলায়ই বলে উঠেন।
~ আহহ তমু একটু শান্ত হও। ডক্টর তো বললো এখন ঠিক আছি সমস্যা নাই কোনো। বেড রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবো।
~ কি বেড রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে ঔষুধ পানি কি লাগবে না বললাম হসপিটাল যেতে কে শুনে কার কথা।

~ আরে বাবা আমি তো বাসায়ই ঠিক আছি। আর হসপিটালের যা পরিবেশ ওখানে থাকলে আমি আরো অসুস্থ হয়ে যাবো। আর বাসায় তুমি আছো বউমা আছে এতো সেবার লোক থাকতে আমি কি আর অসুস্থ থাকবো বলো।
কল্পর কথা শুনে থেমে যায় তহমিনা। তবে এখনো নাক টানছে।

~ তমু বাচ্চাদের সামনে এমন নাক টানছো কেন্দে কেটে কেমন দেখায় বলো তো।
~ আরে বাবা তুমি কান্না দেখলে শুধু মা যে এত্ত এত্ত ভালোবাসে তোমায় সেটা দেখলা না।
~ পিয়াস এক চড় লাগাবো খুব বড়দের মতো কথা বলছিস।

~ তুমি সুযোগ দিছো বলেই তো ওরা বলছে। প্রিয় কল্প তোরা রুমে যাও আমি এখন ঠিক আছি টেনশন করো না। পিয়াস তুমিও যাও শুয়ে পড়ো অনেক রাত হলো।
সবাই চলে গেলে তহমিনা দরজা ভিরিয়ে দিয়ে রায়হান মাহমুদের পাশে এসে বসে।
~ জানো আমি কতো ভয় পেয়েছিলাম। তোমার কিছু হলে আমার কি হতো বলো তো।

~ তুমি থাকতে আমার কিছু হবে নাকি। এখন বুকে একটু তোমার মাথাটা রাখো তো।
তহমিনা মাহমুদ বিনা বাক্য ব্যয়ে রায়হানের বুকে মাথা রেখে চুপটি মেরে থাকে। রায়হান মুচকি হেসে তহমিনার চুলে হাত বুলিয়ে দেয়।
~ তুমি সেই আগের মতোই আমায় ভালোবাসো তাই না। এখনও সেই আগের মতই আছো তুমি।
~ তুমিও।

~ কতো গুলো বছর পেড়িয়ে গেলো এক সাথে। আচ্ছা প্রিয়দের একটা বাচ্চা হলেই তো আমরা দাদা দাদি হয়ে যাবো তাই না। হা হা হা আমাদের চুলে পাক ধরবে তখন আমরা বুড়ো বুড়ির উপাধি ও পেয়ে যাবো। কেমন ছোট্ট একটা জীবন দেখো
, কথা বলে তহমিনার দিকে তাকাতেই দেখে সে ঘুমিয়ে গেছে। এদিকে রায়হান ভালোই বুঝতে পারে তহমিনা এখনো জেগে কারন তহমিনার চোখের কোনা বেয়ে গড়িয়ে পড়া জলে বুক ভিজছে তার। মুচকি হেসে তহমিনার কপালে ওষ্ঠ ছুয়ে নিজেও চোখ বন্ধ করে নেই।

পর্ব ৩৬

কল্প’প্রিয়র এ বাসায় আসা এক মাস হলো। সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে চললেও শাশুড়ির সাথে সম্পর্কটা এখনো স্বাভাবিক হয়নি কল্পর। এমন কি প্রিয়র সাথেও প্রয়োজন বিনা কথা বলে না তহমিনা। তবে দিন তো পড়ে নেই সময় চলেই যাচ্ছে সাথে একটা করে দিন ও পার হয়ে যাচ্ছে।

বাইরে ঝুম বৃষ্টিতে ছেয়ে আছে শহর। আবহাওয়া অসম্ভব শীতল। বৃষ্টির সাথে বাতাস বইবার দরুনই ঠান্ডা তুলনামুলক একটু বেশি। এই ভেজা প্রকৃতিতেই চোখ বুলাচ্ছিলো কল্প। শীতল হাওয়ায় জড়োসড়ো হয়ে দাড়িয়ে আছে তবুও রুমে গিয়ে শাল আনার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে কল্পর হচ্ছে না।

কিছু সময় যাবৎ পেছন থেকে কল্পকে পর্যবেক্ষন করছে প্রিয় কিন্তু মেয়েটা এতো বেশিই অন্য মনষ্ক যে পিছে কেউ আছে সেটা অনুভব করারও মন নাই,
~ তোমাকে এতো অন্যমনস্ক হতে আগে কখনও দেখিনি। মেঘপরী
হঠাৎ কারো কথায় একটু ভয় পেয়ে যায় কল্প। পিছে ফিরে প্রিয়কে দেখে বুকে ফু দেয়।
~ তুমি কখন এসছো। পুরো ভয় পাইয়ে দিছো আমারে।

~ অনেক্ষন এসছি। মনটারে কোথায় পাঠায়ছো যে আমার উপস্থিতি টের পাও নাই,
~ উহু এমনিতেই বৃষ্টি দেখছিলাম।
কথাটা বলে আবারো ঘুরে বাইরে চোখ রাখে।

~ তোমার কি অনেক বেশি মন খারাপ। (পেছন থেকে হালকা করে জড়িয়ে নিয়ে)
~ উহু
~ তাহলে কাছে বর থাকতে বৃষ্টিরে কি দেখো।

কল্প নিশ্চুপ। কল্পর উত্তর না পেয়ে প্রিয় গিয়ে কল্পর সামনে দাড়ায়।
~ বলো না কি হইছে। আম্মুর ব্যবহারে মন খারাপ?

~ আম্মু তো কথায় বলে না তাহলে আম্মুর কোন ব্যবহারে মন খারাপ করবো বলো?
~ কথা বলে না এইটার জন্যই বুঝি মন খারাপ?

~ আমাদের না আম্মুর মত না নিয়ে বিয়ে করা একবারেই উচিৎ হয়নি। আম্মু অনেক কষ্ট পাইছে তাই তো তোমার সাথেও ঠিক মতো কথা বলে না।
~ আরে বাবা এটা নিয়ে কেনো মন খারাপ করছো আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো। এক সাথে থাকলে কথা না বলে কতোদিনই বা থাকবে। আজ না হয় কাল ঠিক মেনে নিবে। মা তো তার অমতে সন্তান কিছু করলে একটু তো মন খারাপ তার হবেই।
কল্পর এমন মন খারাপ দেখে প্রিয় রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে লাইট নিভিয়ে স্লো সাউন্ডে একটা গান প্লে করে বেলকনিতে কল্পর কাছে যায়।

Tum Q chale Aate ho
Har Rooz in
Khowabo’n mai
Chupke se Aa B Ja’o।

Ek din meri Baho’n mai।
Tere hi sapne Andhero mai ujalo mai।
Koi nesha hai teri Aankhook piyalo mai।
Tu meri khowabo’n mai jawabo mai sawalo mai।

Har din chura tumh’n mein laata hoo khayalo’n mein।
Kiya mujhe piyar hai yaaAa
Kaise khomaar hai yaaAa।
কল্পকে হাত ধরে ঘুরিয়ে ডান্স করছিলো প্রিয়। কল্পর মন ভালো করার জন্য। গান বন্ধ হতেই চোখ বুজে প্রিয়কে জড়িয়ে ধরে কল্প।

~অনেক ভালোবাসি বউ
প্লিজ আর এমন মন খারাপ করে থাকবা না তোমার মন খারাপ দেখলে আমার কি ভালো লাগে বলো। একটু সময় লাগবে কিন্তু দেখো খুব জলদিই সব ঠিক হয়ে যাবে।
~ হুম। এখন একটু টাইট করে জড়িয়ে ধরো তো শীত করে।
~ হাহাহা ধরলে কি শীত কমবে রুমে চলো।

~ তোমাকে ধরতে বললাম ধরে রাখো।
প্রিয় মুচকি হেসে টাইট করে জড়িয়ে নেই কল্পকে।

সবই চলছিলো ঠিকমতো। তহমিনা ও চেষ্টা করছিলো ওদের মেনে নেওয়ার। কিন্তু কে জানতো এ বাড়িতে তাদের সময়টা ক্ষন স্থায়ী হয়ে আসছে। সেদিন রাতে প্রিয় ল্যাপটপে কাজ করছিলো খাটে বসে। তখন কল্প এসে পাশে বসে।
~ ওই
~ হুম
~ কাজ করছো?

~ হুম
~ শুনো
~ হুম
~ কি হুম আমার দিকে দেখো
~ হুম
~ আরে ধুরর
বলেই কল্প ল্যাপটপ নিয়া নেই,
~ আরেহ ল্যাপটপ নিলা কেন আমি একটা ইম্পরটেন্ট কাজ করছি। ল্যাপটপ দাও
~ আগে আমার কথা শুনো।

~ কাজ করে শুনি প্লিজ
~ নো। আগে বলো আমরা এ বাড়িতে এসছি ক’দিন
~ আরে আজব আমি কি দিন গুনি নাকি
~ আমরা এসছি এক মাস সাতদিন হলো।
~ তো
~ এতোগুলো দিনে আমি মাত্র দুদিন রাইডে গেছি প্রিয়।

~ হ্যা তো
~ তো আমার মাথা। তোমার বাইকের চাবি কই। গিভ মি ইওর কি’
~ কিসের চাবি
~ বাইকের।

~ এখন বাইকের চাবি কি করবা মজা করো। আমার ল্যাপটপ দাও তো অনেক কাজ বাকি আমার।
~ চাবি দাও ল্যাপটপ দিয়ে দিচ্ছি।

প্রিয় উঠে কল্পর থেকে ল্যাপটপ ছাড়িয়ে নিয়ে সোফায় গিয়ে বসে।
~ প্রিয় প্লিজ চাবি দাও আমি রাইডে যাবো। আমার টা ও বাড়ি নইতো চাইতাম না তোমার টা।

~ আর ইউ ম্যাড। তুমি এখন রাইডে যাবা যদি মা দেখে কি হবে ভাবছো একবার? তুমি কিন্তু আর আগের মতো নেই ভুলে যাচ্ছো তুমি
~ এটা তুমি আমায় বলছো? এমন কথা কিন্তু ছিলো না প্রিয় আমি কিন্তু বলেছিলাম তুমি আমার বাইক রাইড এগুলা নিয়ে কখনো প্যারা করতে পারবা না। আর তুমি আমাকে অবস্থান শেখাচ্ছো আমি কি সেক্রিফাইস করছি না যেখানে আমি প্রায় প্রতি রাতে রাইডে যেতাম সেখানে আমি মাসে মাত্র দু বার গেছি সেটাও তোমার সাথে।
~ প্লিজ এসব নিয়ে প্যাচাল পারতে ভাল্লাগছে না।
~ তুমি চাবি দিবে না?

~ নাহ
~ তাহলে তুমি আমায় ঘুরিয়ে আনো।
~ আর ইউ ম্যাড। আমি এখন আমার কাজ ফেলে তোমার সাথে ঘুরতে যাবো।
~ ফাইন করো কাজ।

কল্প সেল ফোনটা নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। প্রিয় কাজে মন দেয়। বারোটা অব্দি কাজ করে ল্যাপটপ রাখলে কল্পর কথা মনে হলে বেলকনিতে উকি দেয় প্রিয়। কল্পকে বসে থাকতে দেখেও আর যায় না সেদিকে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে একবার কল্পকে ডেকে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।
কিছুক্ষন বাদে রুমে এসে দেখে প্রিয় ঘুমিয়ে গেছে। চাদরটা প্রিয়র গায়ে টেনে পাশে বসে প্রিয়র মুখে চেয়ে থাকে।

~ তুমি অনেক পাল্টে গেছো প্রিয় মাত্র ক’দিন হলো এখনই এমন পরিবর্তন।
কথার ভেতরই ফোনে মেসেজ আসে কল্পর। সেটা চেক করেই ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে

তহমিনা পানি খেতে উঠে রুমে পানি না পেয়ে কিচেনে যায় ফ্রিজ থেকে পানি খেতে। কিচেনের দরজায় পর্দা টাঙানো থাকায় কল্প রুম থেকে বেড়িয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে নিশ্চিন্তে মেইন ডোর আস্তে খুলে বেড়িয়ে যায়। দরজা খোলার শব্দে দ্রুত পায়ে বাইরে এসে দেখে কেউ নাই কোথাও ভুল ভাবনা ভেবে রুমে চলে যায় তহমিনা মাহমুদ।

রুমের একটা জানালা একটু খোলা থাকায় সেটা লাগাতে গিয়েই বাইরের আলোয় স্পষ্ট ভাবে কল্পকে দেখতে পায় সাথে তিশাকেও। কল্প ফোন করে তিশাকেই বলেছিলো ওর বাসায় গিয়ে ওর বাইকটা আনতে তিশাও বাইক নিয়ে আসে। তিশা বাইক থেকে নেমে পিছনে বসে আর কল্প সামনে বসে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করে বাইক স্টার্ট করে। এই দীর্ঘ শ্বাসটা অতি আনন্দের আর কল্পের জন্য অনেক দিন বাদে রাইডে যাওয়ার সুখ প্রকাশক এই দীর্ঘ নিশ্বাসটা।

~ তিশু নিজেরে না এখন মুক্ত পাখি মনে হচ্ছে বুঝলি। ও বাড়িতে না আমার দমটা আটকে আসে। আম্মু একদমই কথা বলে না আব্বুর সাথে আর পিয়াসের সাথে একটু কথা হয় আর প্রিয়র তো রাতে ছাড়া পাওয়া যায় না আর আব্বু আর পিয়াস ও সব সময় বাসায় থাকে না খুব একা লাগে রে আমি যদি বোরিং ফিল করে আম্মুর রুমে যায় কখনও আম্মু ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকে ডাকলেও সাড়া দেয় না। দম আটকে আসে রে আমার। দম আটকে আসে।
~ মন খারাপ করিস না দি। ঠিক হয়ে যাবে সব।
~ হুম। তোর তাড়া আছে নাকি আজ
~ নাহ কেনো।

~ আজ আর ফিরবো না সারা রাত আমি ঘুরবো মুক্ত পাখির ন্যায় উড়বো। আর তুই সঙ্গ দিবি আমায়।
~ কিন্তু এর মধ্যে ভাইয়া যদি জেগে তোকে না পায়।
~ টেক্সট করে দিছি ওর ফোনে।

~ দি তুই কিন্তু চাইলে এ বাসায় এসে ক’দিন থেকে যেতে পারিস।
~ উহু। যতোদিন না শাশুড়ি মেনে নিচ্ছে ততোদিন যাবো না।
~ দি আমাদের রাইড গ্রুপটাকে ডেকে নিই বহুদিন ওদের সাথে যোগ হয়নি আমরা।

জোশ মজা হবে ওরা আসলে,
~ একদম ঠিক বলেছিস। কল কর
তিশা কল করলে আধা ঘন্টায় কল্পর রাইড গ্রুপ হাজির। অনেকদিন বাদে সবাই কল্পকে পেয়ে ভীষন খুশি, কল্পর খুশিই বা দেখে কে এতোদিনের একাকিত্ব মন খারাপ নিমিষেই উধাও। এখন তো কল্পর এটাই মনে হচ্ছে বিয়েটা করেই অনেক ভুল হয়ে গেছে।

এদিকে তহমিনা আর নিদ্রা যায়নি সে রাত। ড্রয়িং রুমে এসে সোফায় বসে আছে অপেক্ষা কল্প ফেরার, কল্পর প্রতি তার নরম ভাবটা যা এই এক মাসে একটু একটু করে সৃষ্টি হয়েছিলো তা জেনো একরাতেই রাগে ঢেকে গেছে। অপেক্ষা করতে করতেই ভোর রাতে চোখটা বুজে এসেছিলো তার বাইরে বাইকের আওয়াজে ঘুম ভেঙে হুরমুরিয়ে উঠে বসে ঘড়ির দিকে তাকায়। পাচঁটা বাজতে পাচঁ মিনিট বাকি।

কল্প এসে চুপি চুপি মেইন ডোর খুলতেই বুকটা ধুক করে উঠেই জেনো হার্টটা থেমে যায় কিছু সময়ের জন্য সামনে তহমিনা কে দেখেই কল্পর এই অবস্থা। কল্প ভেবেছিলো হইতো এখনও কেউ উঠেনি। কল্প কিছু বলতে নেওয়ার আগেই তহমিনা প্রিয়র বাবা প্রিয়র বাবা বলে চিৎকার শুরু করে।
~ মা আমার কথা শু
~ এই মেয়ে চুপ একদম চুপ তোমার মুখ থেকে একটা শব্দ কেনো একটা অক্ষর শোনার ও মন নাই আমার।

উনি আবারও চিৎকার করে প্রিয় আর প্রিয়র বাবা কে ডাকতে থাকে। এমন চিৎকারে প্রিয় ধরফড়িয়ে উঠে বসে ঘুম থেকে। বসেই পাশে তাকাই কল্পকে না পেয়েই বিছানা ছেড়ে প্রায় দৌড়েই ড্রয়িং রুমে আসে আর এসে যেটা দেখে সেটা তে ও কারেন্ট শক খাওয়ার মতো শক খায়।
~ যা ভয় পেয়েছিলাম (বিড়বিড়িয়ে)

কল্প কুচকে এক পাশে দাড়িয়ে আছে জেনো খুনের আসামি সে আর এখনই তার ফাসির রায় শোনানো হবে। প্রিয় থম মেরে দাড়িয়ে রইলো তখনই রায়হান মাহমুদের আগমন উনি চোখ ডলতে ডলতে নিচে নামছে।
~ কি ব্যাপার তমু এই সাত ভোরে এমন চিৎকার করছো কেনো কে মরলো শুনি। চিৎকারে বাড়ি
ফাটিয়ে ফেলছো হইছে কি কও।

~ কি হবে দেখতে ডাকলাম তোমার আদরের বউমার ভালোর নমুনা। কেনো মেনে নিই নাই প্রথমে এবার বুঝবে। যে মেয়ে মানুষ বর ঘর ফেলে রাত ভর বাইরে কাটাতে পারে সে মেয়ে মানুষ নিয়ে নিশ্চয় আলাদা করে কিছু বলার থাকে না এবার তুমি বলো এই মেয়ে মানুষ আমার ছেলের বউ কেমনে হয়। এই ফ্যামিলিতে বুঝি রাতভর মেয়ে মানুষ বাইরে কাটায়।

~ তমু কি হচ্ছে কি মুখে লাগাম দিয়ে কথা বলো না জেনে শুনে কারো চরিত্রের বিবরন দেওয়া কি তোমার ধর্ম।
~ বললাম নাহ কিছু ওরে জিগাও ও এখন কই থেকে আসলো আর রাতে কখন বের হইছে।

~ কল্প কোথায় গেছিলা তুমি। তোমার ড্রেসআপ দেখে তো মনে হচ্ছে রা
~ মনে হওয়ার কি আছে বাইক নিয়া রাত বেরাতে কার সাথে ঘুরে আইছে দেখো। হায়রে সাহস আমার বাড়ি থেকে রাত একটার সময় বাড়ির বাইরে যায় আর ফেরে কখন ভোর পাচঁটায়। বাহ তা এই মেয়ে তোমার মা বাপ কি তোমায় শিখায়নি কিছু যে সংসার কি ভাবে করতে হয়। তোমায় আর কি বলি সবই পরিবারের শিক্ষা।

প্রিয় অবাক হয়ে তার মায়ের কথা শুনছে শেষ কথা গুলো শুনে কল্পর দিকে তাকায় মেয়েটা মাথা নিচু করে চোখের জল গড়াচ্ছে। এই জল দেখে প্রিয় আরো বেশি অবাক হয়। প্রিয়র সাথে রিলেশন হওয়া থেকে শুরু করে আজ অব্দি এই চোখে প্রিয় পানি দেখেনি। বিয়ের এতোকিছু সংসারের এতো ঝামেলাও মেয়েটাকে ও কাদতে দেখেনি আর আজ নিঃশব্দে কতো জল গড়িয়ে যাচ্ছে অথচ তার মায়ের এতো বাজে কথার একটা উত্তর ও দিচ্ছে না যেখানে আজ কাল কার মেয়েরা পরিবারের সম্পর্কে কিছু শুনলে লঙ্কা কান্ড শুরু করে কিন্তু এ সব হজম করছে।

~ তমুউউউ ছিঃ এতো নিচু মানুষিকতা তোমার এতো চিপ কথা গুলো তুমি কিভাবে বলতে পারো কারো পরিবার নিয়ে কথা বলার রাইট তোমাকে কে দিছে আর তুমি ভুলে যাচ্ছো তুমিও একজন বাইকার ছিলে।

~ পাস্ট, ছিলাম এখন নেই বিসর্জন দিতে হয়েছিলো আর তার এক মাত্র কারন তুমি ছিলে। তোমাকে পাওয়ার জন্য আমাকে বাইক ছাড়তে হয়েছিলো আমারো কিন্তু কম প্রিয় ছিলো না বাইক চালানো কতো শখের ছিলো বলো তো কিন্তু আমি ছেড়ে দিছিলাম সব তোমার জন্য। কই এই মেয়ে তো পারেনি ছাড়তে তাহলে ও কেমন ভালোবাসে প্রিয়কে।
~ তমু তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো।

~ বাহ বাড়ির বউ রাত বেরাতে বাইরে ঘুরবে আর আমি কিছু বলতে পারবো না বাহ বাহ। আর তুমি এতো সাপোর্ট নিচ্ছো কেনো আমি বুঝছি না। বিষয়টা একজন আদর্শ মানুষ হিসাবে বিবেচনা করো
~ ও রাইডে গেছিলো আর সেটা তো ও প্রতিদিন যায় না। আজ গেছে তো কি সমস্যা বিয়ে হইছে মানে তো আর এই না যে ও ওর স্বাধীনতা খুইয়ে বসে আছে।

~ কিসের স্বাধীনতা ও এখন বাবা মায়ের ঘরে নেই স্বামীর ঘরে আছে আর এ ঘরের ভালো মেয়ে মানুষ কি রাত বেরাতে স্বামী ছাড়া বের হয়। শুনো আমি আর কিছু বলতে চাই না তুমি জাস্ট ওদের বলো এই বাড়ি থেকে বেড়োতে এমন মেয়ে মানুষের সাথে আমি এক ছাদের নিচে থাকতে পারবো না।
~ এটা যেমন তোমার স্বামীর ঘর তেমন ওর ও স্বামীর ঘর এটা ওর অধিকার আছে এখানে থাকার।
~ তাহলে থাকুক ও ওর স্বামীর ঘর সংসার নিয়ে আমি চলে যাচ্ছি।

~ এ কি নাটক শুরু করলে বলো তো।
~বাবা থামো। কল্প রুমে যাও ব্যাগ গুছিয়ে নাও আমি বাইরে আছি। গুছিয়ে বাইরে আসো। আর শুধু আমার টাকায় কেনা জিনিস গুলাই নিবে আর অন্য কিছু না।
বলেই প্রিয় বেড়িয়ে যায় বাইরে।

~ দেখছো দেখো টাকার গরম দেখায় তোমার ছেলে আমারে টাকার গরম ওর এই পর্যন্ত কে এনে দিছে ও আমাদের টাকার গরম দেখায়।
~ এই নাটক না করলেও পারতে।

বলে রায়হান মাহমুদ ও প্রিয়র পিছু যায়। কল্প এখনো ঠাই দাড়িয়ে।
~ বাহ মেয়ে তোমার মা বাবা তো মানুষকে বশিকরনের মন্ত্র শিখিয়ে দিছে দেখছি সবাইকে বশ করে ফেলোছো ক’দিনেই।
কল্প উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে চোখ মুচতে মুচতে রুমে চলে যায়।

~ প্রিয় পাগল হইছো তুমি ও বললো আর তুমি চলে যাবে এভাবে চললে তো কিছুই ঠিক হবে না
~ বাবা তুমি দেখোনি মা ওরে কিসব বললো ওর জীবনে কেউ ওরে একটা ধমক দিছে কিনা সন্দেহ আর সেখানে আমার জন্য আজ ওরে কি না কি শুনতে হলো ও কিন্তু কোনো চাইলেই মায়ের মুখে উঠতে পারতো কিন্তু ওঠেনি আর এটাই ওর শিক্ষা।

আর তুমি ঠিক হওয়ার কথা বলছো বাবা এই এক মাসে কিন্তু কল্প কম চেষ্টা করেনি মা কে কনভেন্স করার কিন্তু মা ওর সাথে এক অক্ষর ও কথা বলেনি কি শত্রুতা বলো তো শুধু একটায় রিজন ও বাইক চালাতে পছন্দ করে। বাবা এই এক মাসে ও মাত্র দু বার বাইনা ধরেছিলো রাইডে যাওয়ার জন্য কারন ও বুঝেছিলো ও আর আগের লাইফে নেই এখানে চাইলে সব সম্ভব না আর কাল রাতে ও আমাকে বলেছিলো নিয়ে যেতে আর আমি ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করে না করে দিছিলাম।

বাবা এই ক’দিন আমি নিজে দেখছি এ বাড়িতে সব কিছুর মধ্যে ও কতো একাকিত্ব বোধ করে আমিও ঠিক মতো সময় দিতে পারি না তবুও ওর কোনো অভিযোগ নেই আমিও কিছু বলিনি কারন আমি ভেবেছিলাম আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু না কিছু ঠিক হচ্ছে না বরং ও সব সইয়ে নিচ্ছে বলেই আমাদের ধারনা হচ্ছে সব ঠিক হবে বাট না হবে না কিছু ঠিক মা ওকে মানতেই পারছে না আর আজ মায়ের কথা শুনে

আমিও অবাক। তুমি জানো ও ওর বাসায় একটা দিন কেনো একটা বারের জন্যও যায়নি কারন ও প্রমিস করেছে যতোদিন না মা মানবে ততোদিন ও যাবে না ওই বাড়ি মানছি ও ভুল করেছে কিন্তু আম্মু চাইলেই তো পারতো ওকে ভালো ভাবে বুঝিয়ে লাস্ট একটা ওয়ার্নিং দিতে বাট কি বললো মা ও গুলো ওরে হাহহ ও সব ছেড়ে আমার কাছে থাকছে তাহলে আমার কি উচিৎ না বাবা ওরে এতোটুকু সাপোর্ট করা।
~ কিন্তু তাই বলে।

~ বাবা আমরা আবার ফিরে আসবো সেদিন যেদিন মা সব মেনে নিজে গিয়ে আমাদের আনবে।
~ সাবধানে থাকবা দোয়া করি অনেক সুখি হওয়া তোমরা
~ লাভ ইউ বাবা

পর্ব ৩৭

সেদিন সে মুহুর্তই চলে এসেছিলো ওরা আবার শুরু করেছিলো দুজনের নতুন টোনাটুনির সংসার। এরপর থেকে আর কখনো প্রিয় এক সময়ের জন্যও খারাপ বিহেভ করেনি কল্পর সাথে যে কল্পর কষ্ট হবে। খুনসুটিময় ভালোবাসায় পার হয়ে গেছিলো দেরটা বছর। দুজনের মধ্যে কখনই ঝগড়া লাগেনি কারন তাদের ভেতর শেয়ারিং কেয়ারিং বিষয় গুলো ছিলো অত্যাধিক।

আর কল্পর মাঝরাতের আবদার গুলো বিনা দ্বিধায় পূরন করতো প্রিয় বরং স্ব~ইচ্ছায় নিজেই কল্পকে বলতো রাইডে যাওয়ার জন্য। ও বাড়িতে সবার সাথে প্রায়ই কথা হতো ওদের মাত্র তহমিনা মাহমুদ বাদে। কল্প’প্রিয় যখন রায়হান মাহমুদের সাথে ভিডিও কলে কথা বলতো তখন রায়হান মাহমুদ শয়তানি করে হুটহাট তহমিনার সামনে ফোন ধরে বলতো ~দেখো তমু দুজনকে কি মানিয়েছে। মেড ফর ইচ আদার।

তহমিনা মাহমুদ তখন কিছু সময় নিয়ে তাদের দেখতো যখন কল্প’প্রিয় কিছু বলতে যাবে তখনই মুখ ঝামটা দিয়ে সরে যেতো স্ক্রিনের সামনে থেকে। তহমিনার আচরনে সবাই অভ্যেস্ত হয়ে গেছিলে এমন আচরনে তখন সবাই হেসে দিতো। রায়হান মাহমুদ বললেও আর যায়নি বাসায় তাদের চাওয়া তহমিনা নিজে গিয়ে তাদের নিয়ে আসুক। এভাবেই কেটে গেছে দিনগুলো।

আজ দুদিন দ্বিধায় ভুগছে কল্প। সবকিছু মিললেও সে কনফিউজড। কনফিউশন দূর করতে প্রিয় ওঠার আগেই টেস্ট করে নেই। এর আগেও দু বার টেস্ট করেছে দুবারই পজেটিভ শিওর হতে লাস্ট বার এই টেস্ট।

কল্প তো খুশিতে আটখানা এবার ও পজেটিভ। তার মানে শিওর সে
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে কিছু জিনিসপত্র হাতে নিয়ে প্রিয়র পাশে রাখে। প্রিয় হাত পা ছড়িয়ে উবুর হয়ে শুয়ে আছে কল্প এসে প্রিয়র এক হাত হালকা উচুঁ করে আস্তে আস্তে প্রিয়র সাথে লেপ্টে প্রিয়র নিচে যেতে থাকে।

এতো নড়াচড়ায় প্রিয় জেগে যায় কল্পকে এভাবে সাপের মতো পেচিয়ে পেচিয়ে প্রিয় নিচে যেতে দেখে হেসে দিয়ে নিজে সোজা হয়ে শুয়ে কল্পকে বুকে জড়িয়ে নেয় তারপর চোখ বন্ধ করে কল্পর গলায় মুখ ডুবিয়ে বলে উঠে। কি গো বউ সকাল সকাল এতো আদর কাহিনী কি।
কল্প মুচকি হেসে একটা চাদর টেনে দুজনকে পুরো ঢেকে নেই। মুখ উঠিয়ে প্রিয়র নাকে নাক ঘষে। এক হাত দিয়ে প্রিয়র গালে ঘষতে থাকে।

দুহাত দিয়ে প্রিয়র মুখ ধরে প্রিয়র পুরো মুখে চুমু খেতে থাকে। ছোট ছোট চুমু একে দেয় প্রিয় গলা মুখে। কল্পর এমন আচরনে প্রিয় চোখ মেলে তাকিয়ে মুচকি হেসে কিস করতে নিলে কল্প ঠোটে হাত রেখে আটকে দেয়। কল্পর ঠোটে মিষ্টি হাসি যা অন্য দিনের থেকে অনেক আলাদা লাগছে প্রিয়র। প্রিয়র এক হাত ধরে আস্তে আস্তে কল্পর পেটে নেই তখনও প্রিয় শিওর না কল্প কি বোঝাতে চাইছে। কল্প চোখ ইশারায় প্রিয়কে পাশে তাকাতে বললে প্রিয় কল্পর চোখের দিক অনুসরন করে পাশে তাকাতেই থমকে যায়।

একটা ছোট্ট বাচ্চাদের দোলনা। এক জোড়া বেবি সু। ইট্টু খানি একটা বারবি ড্রেস। আর মেঝেতে ছোট্ট ছোট্ট বল আর হাবি জাবি কিছু খেলনায় ভর্তি। প্রিয় খুশি প্রকাশের ভাষায় হারিয়ে ফেলে। এতো খুশি জেনো তার জীবনে কখনও হয়নি। কল্পর দিকে তাকাতে দেখে কল্প এখনও ঠোটে সেই মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে প্রিয়র দিকে তাকিয়ে আছে।
~ সত্যি আমি?
~ হুম।

প্রিয় লাফ দিয়ে উঠে বসে।
~ কল্প সত্যি আমি বাবা হচ্ছি
প্রিয়র খুশি দেখে কল্প হেসে দেয়। পাশ থেকে একটা কিট নিয়ে প্রিয়র হাতে ধরিয়ে দেয়।

প্রিয় হাতে নিয়ে পজেটিভ দেখে কল্পর দিকে তাকিয়ে কেদে দেয়। প্রিয়র অবস্থা দেখে কল্প থতমত খেয়ে যায়।
~ এই এই কি হলো তুমি কাদছো কেন তুমি কি খুশি নও?

~ কল্প কল্প কল্প আমি কি করে বোঝায় তুমি খুশিতে আমার কান্না পেয়ে গেছে।
~ ছিঃ কান্না বন্ধ করো কেমন মেয়েদের মতো চোখে পানি বিশ্রী লাগছে।

কল্পর নাক শিটকানো দেখে প্রিয় হেসে দেয়। কল্পর নাক টিপে দিয়ে কল্পকে নিয়ে বিছানা থেকে নেমে কল্পকে ঘোরাতে থাকে আর গান গাইতে থাকে। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে
~ আরে থামো খুশিতে পাগল হয়ে গেলে দেখছি।

~ উফফফ বেবি সত্যি পাগল হয়ে গেছি ঘুম থেকে উঠেই এমন একটা খুশির খবর পাবো এ তো আমার ভাবনারই বাইরে। কি যে খুশি দিলে তুমি সোনা।
প্রিয়র কান্ড দেখে কল্প হাসিতে ফেটে পড়ে।

প্রিয় নাচতে নাচতে যে টাউজার পড়ে ছিলো সেটা পড়েই আর হাতে একটা টি~শার্ট নিয়ে বেড়িয়ে যেতে নেই।
~ আরে সাত সকালে যাও কই আর এভাবেই?

~ সোনা তোমার সাথে এসে দেখা করছি আরে সবাই কে বলতে হবে না আমি বাবা হচ্ছি। তুমি থাকো আমি কিছুক্ষনেই চলে আসবো।
প্রিয় বেড়িয়ে যায়। কল্প ভাবতে থাকে একটা ছেলে বুঝি বাবা হওয়ার সংবাদে এতো খুশি হতে পারে। কল্পর এখন প্রিয়র আচরনে প্রিয়কেই বাচ্চা লাগছে। মুচকি হেসে দরজা লাগিয়ে ঘরে ফিরে আসে কল্প। আয়নার সামনে গিয়ে পেট লক্ষ্য করে চেয়ে থেকে মুচকি মুচকি হাসতে থাকে আর হাত বুলাতে থাকে।

~ দেখেছিস পিচ্চি বুড়ি তোর আসার খবরে তোর বাবা কত্ত খুশি হয়েছে। ছেলেটা তো খুশিতে পাগল প্রায়। তোর কিন্তু এসেই একটা দায়িত্ব নিতে হবে বুড়ি বুঝলি। তোর দাদিমার সাথে কিন্তু এবার তোকেই আমাদের মিলমিশটা করিয়ে দিতে হবে। সবাই তো বলে বাচ্চাদের কথা শুনলেই সবাই মেনে নেই তাই তো তোকে নিয়ে এলাম।

তোর দাদিমা ও জেনো আমাদের এবার মেনে নেন রে। আমি কতো স্বার্থপর রে বুড়ি তোর বাবাকে তার মা থেকে আলাদা করে ফেলেছি এবার তুই এসে সব ঠিক করে দে তো দেখি,
কল্প একা একাই বকতে থাকে পেটে হাত রেখে।

ডায়নিং এ মাত্রই রায়হান মাহমুদ। পিয়াস খেতে বসেছিল আর তহমিনা মাহমুদ ওদের খাবার বেড়ে দিয়ে নিজে বসতে যাবে তখনই প্রিয়র চিৎকার শোনা যায়। বাবা বাবা করতে করতে ভেতরে ঢোকে প্রিয়।

খাবার টেবিলে সবাই বিষ্ময় নিয়ে প্রিয়কে পর্যবেক্ষন করতে থাকে। পরনে টাউজার আর একটা টি~শার্ট পায়ে রুমে পড়া জুতাটাই আর এক হাতে মিষ্টির ভাড় আর মুখে অক্লান্ত উজ্জল হাসি,
পিয়াস বিষ্ময় নিয়েই প্রশ্ন করে।

~ ভাই এ কি অবস্থা তোমার। আর মিষ্টি কিছু বুঝছি ন
পিয়াস কথা শেষ করার আগেই প্রিয় হেসে পিয়াসের মুখে একটা রসোগোল্লা ঢুকিয়ে দেয়।

~ আরে ব্রো তুই তো চাচ্চু হতে চলেছিস। আগে মিষ্টি মুখ করে নে।
প্রিয় কথা শুনে তহমিনা মাহমুদ থ বনে যায়। প্রিয় এগিয়ে এসে তহমিনা কে মিষ্টি করাতে গেলে তহমিনা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে প্রিয় তা উপেক্ষা করে জোড় করেই মিষ্টি খাইয়ে দেয়।

~ মা তোমার রাগ তো আমাদের উপর মিষ্টির ওপর রাগ করছো কেন। তুমি কি খুশি নও তুমি দাদিমা হতে চলেছো?
তহমিনা কোনো উত্তর দেয়না দেখে রায়হান মাহমুদ উঠে এসে হেসে কল্পকে জড়িয়ে ধরে,
~ কনগ্রেস মাই সান।

~ থেংক ইউ বাবা। নাও নাও মিষ্টি মুখ করো।
~ বাবা হওয়ার খুশিতে দেখি আমার ভাই পাগল প্রায়।

~ আরে ভাই তুই কি বুঝবি যখন নিজে হবি তখন বুঝবি বাবা হওয়ার আনন্দ কি।
~ প্রিয় তুমি বউমাকে কেনো আনলে না। খুশির খবর একাই দিতে চলে এলে।
বাবার কথায় প্রিয় সচকিতে তাকায় তহমিনার দিকে তারপর হেসে আবার চোখ ফিরিয়ে বাবাকে উদ্দশ্যে করে বলে। খুব জলদি আসবে বাবা।
থাকো আমি যায়। সবাইকে মিষ্টি মুখ করাতে হবে তো।

~ সে কি আমাদের সাথে নাস্তাটা করে যাও। আমরা মাত্রই বসেছিলাম।
~ না বাবা বাসায় গিয়ে করবো কল্প একা আছে। থাকো তোমরা আসছি
বলেই বেড়িয়ে আসে প্রিয়।

প্রিয় বেড়িয়ে আসতেই কান্না করে দেয় তহমিনা।
~ এ কি তমু তুমি কাদছো কেন।
~ মা কি হলো কাদছো কেনো।

~ আমার সেই ছোট্ট প্রিয়টা বাবা হবে বলে কি খুশি দেখছো। পাগল একটা। নেচে নেচে সবাইকে মিষ্টি মুখ করাচ্ছে।
তহমিনার কথায় রায়হান মাহমুদ হেসে দেয়। এতোদিনে ছেলের থেকে দূরে থেকে ঢের শিক্ষা হইছে তহমিনার। মনে মনে ওদেরকে মেনে নিলেও মুখে শিকার করতে নারাজ।

~ আবারো আমাদের বাড়িটা ভরে উঠবে গো। ছোট্ট ছোট্ট হাত পায়ে পুরো বাড়ি নেচে বেড়াবে বাচ্চাটা। আমাকে দাদিবু দাদিবু করে ডাকবে ওই ছোট্ট হাতে ছুইয়ে দিবে আমার আর একটা প্রিয়।

~ তুমিও কি পাগল হলে নাকি তমু।
~ ও মা এখন তো চলো ভাইয়াদের নিয়ে আসি। আমরা সবাই আবার একসাথে থাকবো কত্তো মজা হবে বলো।
ওদেরকে আনার কথায় তহমিনার চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়।
~ কোনোদিনও না।

কথাটা বলেই তহমিনা চলে যায়।
~ এ মানুষটা ভাঙবে তবু মচকাবে না। মনে মনে ওদের ছাড়া বাচেঁ না আবার সবার সামনে নিজেকে কঠিন প্রমান করে।
~ ঠিকই বলছো বাবা।

~ তোমার মা প্রতিদিন কি করে জানো। সরাসরি তো বলতে পারে না ওদের দেখবে তো ইঙ্গিত দিয়ে বলে। মানে এমন ভাবে বলে জেনো দায়সাড়া ভাব। বলে কি। তা তোমার ছেলে বউমার সাথে কথা হয়েছে নাকি আজ। কি ঢং বাবা প্রতিদিন কথা বলা লাগে। তা কথা না বললে বলে নাও নইলো তো তোমার আবার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে।

কথাটা বলেই বাবা ছেলে হাসিতে ফেটে পড়ে।
~ বাবা সত্যি মা এমন করে।
~ আরে হ্যা।

কল্প’প্রিয়র সংসারে একটা ছোট্ট সংবাদে জেনো আরো সুখ নেমে আসে। প্রিয় আগের থেকে আরো বেশি খেয়াল রাখে এখন কল্পর। এইতো দুদিন আগে কল্পর চার মাস পড়লো। এই চারমাসেই কল্পর পেট ঢোল হয়ে গেছে। প্রিয় তো বলেই যায়। এই আর দুদিন বাদে তো তুমি হাটতেই পারবা না এখনই তো ফুটবল আর এখনো তো ছয়টা মাস বাকি ততোদিনে কি হবে বলো তো আমিও তো বোধয় তোমায় এখন উচুঁ ও করতে পারবো না। কল্প নিরীহ ভাবে তাকাতেই প্রিয় হেসে বলে।

আরে ব্যাপার না তোমার ওজনের সাথে আমারও ওজন বাড়িয়ে নিবো তাহলে তো কোলে নিতে পারবো তখন না হাটতে পারলেও সমস্যা নাই।
প্রিয় যতো সময় বাসায় থাকে ততোক্ষনই জেনো কল্পর সাথে মিশে থাকে। মাঝে মাঝে তো কল্প বিরক্ত হয়ে বলে। এই তোমার কি কাজ কাম একদমই নেই সব সময় এতো ঢলাঢলি করো কেন।

কল্পর এমন কথায় প্রিয় আরো কল্পর গায়ে লেগে লেগে যেতো আর কল্প হেসে দিতো। প্রেগনেন্সির পর থেকে কল্পর জেনো আচারের নেশা লেগে গেছে প্রতি সময় তার আচার চায়। সব সময় খাবার শেষে আচার চাইই চাই। তাই প্রিয় ফ্রিজ ভর্তি আচার এনে রেখেছে, প্রিয়র বন্ধ দিন গুলোতে বাসার রান্নার দায়িত্ব প্রিয়র এটা সে নিজেই নিছে। প্রিয় বুয়া রাখতে চাইলেও কল্প রাখতে নারাজ তার এক কথা বাসায় অন্য কাউকে লাগবে না আমি যতোদিন পারবো আমিই করবো। প্রিয় বাড়াবাড়ি করলেও লাভ হয়নি।

আর প্রিয়তো পারে না আয়েশা কে এখানেই রেখে দেয় তার অফিস টাইমে একা বাসায় কল্পকে রাখতে ভয় হয় কখন কি হয় তাই প্রায়ই ফোন দিয়ে আয়েশা এসে থাকতে বলে। কল্পকে ও বাসায় যেতে বললেও সে যাবে না এখনও তার সেই একই জেদ। যতোদিন না শাশুড়ি মানবে ততোদিন বাবার বাসায় যাবে না।
এইতো সেদিন প্রিয়র অফিস বন্ধ থাকায় সকালে রান্নার দায়িত্ব প্রিয়র থাকায় সেদিন কল্প আর উঠেনি সকাল সকাল। এদিকে প্রিয়রও আজ খোজ নাই উঠার।

দুজনই গভীর ঘুমে। কিছু সময় ধরে বাইরে থেকে অনেক মানুষর কথা আর হাতা খুন্তার খটখট শব্দে কল্পর ঘুম হালকা হয়ে যায় সাথে জেনো মেজাজ টাও খিটখিটে হয়ে আসছে এই আওয়াজে। চোখ খুলে প্রিয়কে পাশে দেখে অবাক হয় কল্প। প্রিয় এখানে তাহলে বাহিরে কিসের আওয়াজ। কল্প ভয়ে ভয়ে প্রিয়কে ডাকতে থাকে। বাইরে এতো লোকের কথার মাঝে কারো কন্ঠই স্পষ্ট বুঝতে পারে না কল্প।

~ এই শুনছো। আরে এই প্রিয় শুনছো। উঠো না দেখো বাইরে কারা জেনো এসছে।
~ কি বিলাপ করছো বাইরে কে আসবে মেন ডোর লক করা। ঘুমাইতে দাও না সোনা একটু প্লিজ।

~ আরে রাখো তোমার ঘুম আগে উঠো। আমি স্পষ্ট শুনছি বাইরে আওয়াজ।
কল্প উঠে দাড়িয়ে প্রিয়কে টেনে উঠায়তে গিয়েও হাপিয়ে যায়। পেট ধরে আবার বেডে বসে পড়ে। এবার কল্প চিল্লিয়ে উঠে।
~ এই প্রিয় উঠো আমার কিন্তু হাপ ধরে এসছে।
কথাটা শুনেই প্রিয় দুম করে উঠে বসে।

~ কি কি। কি হইছে তোমার
~ তোমাকে উঠায়তে গিয়ে হাপিয়ে গেছি। এবার বাইরে দেখো কোন চোর ডাকাত আসলো।
প্রিয় কান খাড়া করে বাইরে আওয়াজ শোনার চেষ্টা করে এবং এতো হোড় গোড়ের শব্দে প্রিয় অবাক হয়ে যায়।

~ মেন ডোর তো আমি ভালোভাবে লক করেছি আর এর আর একটা ডুব্লিকেট চাবি তো আম্মুর কাছে মানে তোমার মায়ের কাছে। তাহলে কি
~ আম্মুরা এতো সকালে কেন আসবে আর আসলে ডাকতো না আমাদের আী এতো মানুষই বা আম্মু কই পাবে। তুমি যাও গিয়ে দেখো আমার বমি পাচ্ছে আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

~ না না একা যেতে হবে না চলো আমি নিয়ে যায়। ~ আরে বাবা যাও তো আমি পারবো। তুমি বাইরে দেখো।
বলেই কল্প ওয়াশরুমে চলে যায় আর প্রিয় রুমের গেট খুলে বাইরে তাকিয়ে জেনো শূন্যে ভাষা অবস্থা। ড্রয়িং রুমের সোফায় তার দুই বাবা শশুড়।

পিয়াস। আয়ান। তিশা। নূর হামিদ সাথে খালুও এসছে আজ। আর সব থেকে বড় বিষ্ময়কর বিষয় তার নিজের মা মানে তহমিনা মাহমুদ নিজে কোমড়ে আচঁল গুজে ছুটে ছুটে সবাইকে চা নাস্তা দিচ্ছে। প্রিয় কতোক্ষন এভাবে চেয়ে সবটা দেখেছে তার খবর নাই হুট করেই সে দরজাটা লাগিয়ে ভিতরে থম মেরে দাড়িয়ে রই। কল্প বেড়িয়ে প্রিয়কে এখনো দাড়িয়ে থাকতে দেখে মেজাজ নিয়ে বলে। এই এই তুমি এখনো দাড়িয়ে আছো তোমায় না বললাম বাইরে গিয়ে দেখতে কি হচ্ছে।

প্রিয় ক্যাবলা মুখ করে কল্পর দিকে হাত বাড়িয়ে বলে। একটা চিমটি দাও তো বউ।
~ একদম ঢং করবে না প্রিয় আমার সাথে। এটা কি মজা করার সময় অসহ্য।
~ দাও না একটা চিমটি।

কল্প জোড়ে একটা চিমটি দেয়। প্রিয় আহ শব্দ করে হাত সরিয়ে নিয়ে অবাক মুখ করেই দরজা খুলে ড্রয়িং রুমে এসে দাড়ায়।
~ বাবা তোমরা।
~ আরে প্রিয় এতো সময় ধরে ঘুমাস নাকি তোরা। তাহলে উঠে খাস কখন হ্যা।

~ না বাবা আজ অফিস নাই তাই আর কি কিন্তু তোমরা সবাই। মা ও তো
প্রিয়র কথার মাঝেই কল্প ওর পিছনে এসে দাড়িয়ে সেও প্রিয়র মতো শূন্যে ভাসতে শুরু করে।

কল্প সামনে এসে সালাম দিয়ে সাধারন কথা বার্তা শেষ করে। তখনই তহমিনা সেখানে উপস্থিত হয়।
~ আসসালামু আলাইকুম আম্মু কেমন আছেন?
~ ওয়ালাইকুম আসসালাম। ভালো না থাকলে এখানে এলাম কিভাবে।

গা ছাড়া ভাব নিয়ে কথা বলে সবাইকে ডায়নিং এ আসতে বলে আবারো কিচেনে চলে যান তিনি।
কল্প নরম নজরে প্রিয়র দিকে তাকাতে প্রিয় মাথা নিচুঁ করে নেই।

খাবার টেবিলে সবাই খাওয়ার মধ্যে বিভিন্ন রকম কথা নিয়ে আলোচনা করতে থাকে তার মধ্যেই তহমিনা বলে উঠে
~ কপাল দেখছো আমার নিজের ছেলের বাড়িতে এসে রান্না করে খেতে হচ্ছে।

~ মা আমরা তো জানতাম না তোমরা আসবা নইলো তো
~ থাক আর বলতে হবে না। কথার উত্তর ও দিতে শিখে গেছো দেখছি।

তহমিনার এমন কাটাকাটা কথার কোনো উত্তরই কেউ দেয়না। কল্প নিজের মা বাবার দিকে খেয়াল করেন এমন কথায় তাদের ভাব পরিবর্তন আসলো বলে মনে হলো না।
~ তা মেয়ে শশুড়ের সাথে তো প্লান করে এক মাস থেকে আসলে ও বাড়ি কিন্তু টিকতে কি পারলে। তার মানে কি বুঝতে পারছো শশুড় থেকে শাশুড়িকে হাত করা বেশি প্রয়োজন।
~ তেমন সুযোগ মেয়েটাকে তুমি দিলে কই।

এমন টুকটাক কথার মাঝেই অল্প কিছু মুখে নিয়েই কল্প উঠে যায়। কল্পর এমন খাবার শেষ না করে উঠে যাওয়া দেখে সবার খাওয়া শেষে প্রিয় নতুন করে কল্পর জন্য খাবার নিয়ে যায় রুমে।
~ খাবার শেষ না করে চলে এলে কেন।

~ তোমার হাতে খাওয়ানোর অভ্যেস করিয়ে এখন জিগ্যেস করছো কেন খেলাম না।
~ সবাই ছিলো তো কেমনে খাওয়ায়তাম?
~ সে জন্যই তো যেমন পেরেছি খেয়ে এসছি।

প্রিয় মুচকি এসে কল্পকে পাশে বসিয়ে জোড় করে আরো একটু খাইয়ে দেয়। খাওয়া শেষে প্রিয় বলেএতো হইচইয়ে তোমার মাথা ধরে জানি কিন্তু সবাই বাইরে রইছে সেখানে গিয়ে একটু বসলে সবার ভালো লাগতো তো। মা রইছে কখন আবার কি বলে বসে।

~ হুম চলো।
ওরা বেড়োতে নিলে তখন তহমিনা মাহমুদ রুমে আসে। প্রিয় মায়ের কাছে কল্পকে রেখে প্লেট নিয়ে বেড়িয়ে যায়।
~ বসুন আম্মু।

~ আগে তো তুমি করে বলতে এখন এতো ফর্মালিটি কেনো।
~ আপনিও তো আগে তুই করে বলতেন।
~ এইটুখানি মেয়ে এতো অভিমান তোমার।

কল্প কোনো জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রই।
~ দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে বোধয় বসো তুমি। এতো অল্প সময়ে এতো বড় পেট আমি অনেক কমই দেখেছি। তা ঠিকঠাক মতো চেকাপ করাও তো। খাবার দাবার ঠিক মতো খাও তো। এখন কিন্তু অনেক বেশি করে খেতে হয় নইলো তো বাচ্চা পুষ্টি পাবে না। নাস্তায় তো তেমন কিছু খেলেই না।
~ মাত্র খেয়েছি আম্মু আবার।

~ ওহ প্রিয় তোমার জন্য খাবার এনেছিলো।
~ হুম
~ দোয়া করি। বজায় থাক এই ভালোবাসা।

তহমিনার মুখে এমন কথা শুনে চোখ ছল ছল করে উঠে। ও কি ঠিক শুনছে। ওর শাশুড়ি ওকে দোয়া করছে। ভেবেই সুখে আনন্দে চোখে জল চলে আসছে।
~ দুপুরে কি খাবা বলো আজ আমি রান্না করবো। সকালে তো তোমার মা আমাকে কোনো মতেই রাধঁতে দিলো না তিনিই করলেন সব।

~ আপনারা যেটা খাবেন আমিও সেটাই খাবো কোনো সমস্যা নাই তবে মাছ টা বাদে মাছ খেতে পারি না গন্ধে বমি পেয়ে যায়।
~ আচ্ছা তুমি তোমার যাবতীয় জিনিস পত্র গুছিয়ে নাও আস্তে আস্তে আমরা বিকালের মধ্যেই বের হবো আর জিনিস পত্র গুলো দুপুরের পড়েই গাড়িতে উঠিয়ে দিবো।
~ ঠিক বুঝলাম না আম্মু।

~ তোমাদের নিতে এসেছি। তাই গুছিয়ে নিতে বললাম। আমি কোনো নাটক চাই না কোনো না ও শুনতে চাই না। রেডি হতে বললাম রেডি হয়ে নিবে। প্রিয় কেউ বলে দাও’
কথা শেষ করেই তহমিনা মাহমুদ রুম থেকে বেড়িয়ে আর তখনই রায়হান মাহমুদ ঘরে ঢুকে।
~ কি গো মা এখনো রেগে থাকবা অভিমান জমিয়ে রাখবা। চলো চলো ফিরে চলো এবার তো তোমার শাশুড়ি নিজে নিতে এসছে এবার তো যাবে অনেক তো একা থাকলে এবার আমরা সবাই এক সাথে থাকবো পরিপূর্ন হবে তোমার সংসার।

~ বাবা আপনার মতো ভালো মানুষ এবং এতো ভালো শশুড় সত্যিই আমি আমার জীবনে দুইটা দেখিনি।
~ পাগলি মেয়ে বলে কি। এখন জলদি রেডি করো তো সবকিছু। সব গোছায়তে সময় লাগবে তো।

সেদিনই সবার সাথে ফিরে আসে কল্প’প্রিয়। এখন সবকিছুই বদলে গেছে। বদলে গেছে তহমিনা ও। কল্পর পুরো দেখ ভাল তহমিনা করছে কল্পর সারাদিনে শুয়ে বসে থাকা ছাড়া কাজ নাই। তহমিনা কিছুই করতে দেয় না ওরে এমনকি পানি টাও নিজে ঢালার আগেই সামনে পেয়ে যায়। সব বদলে গেলেও তহমিনা এখনও কল্পর সাথে আগের মতো স্বাভাবিক হতে পারেনি। এতোকিছুর পর স্বাভাবিক ভাবে মিশতে জেনো তার বিবেকে বাধে।

কতে অপমান খারাপ ব্যবহার করেছে ছেলে মেয়ে দুটোকে। কল্প মিশতে চাইলে তহমিনা নিজ থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নেই। তাই বলে মনে কোনো ক্ষোভ আর রাখেনি সে ক্ষমা করে দিয়েছে ছেলে মেয়ে কে। বাড়িটা এখন সুখে পরিপূর্ন। এইতো সেদিন কল্পর মাথা ধরেছিলো দেখে তহমিনা মাহমুদ নিজে তেল লাগিয়ে মাথা টিপ দিয়েছিলো। আর প্রিয় তো রাতে যতক্ষন জেগে থাকে ততক্ষন কল্পর পেটে কান বাদিয়ে বাচ্চার সাথে কথা বলে। আর কল্পকে এটা সেটা খাওয়াতে থাকে। কল্পও এখন প্রচুর খায় খায় করে সব সময় জেনো তার মুখে কিছু থাকা চায় চায়।

প্রিয় কল্পর সেবায় কোনো ত্রুটি রাখে না মাঝ রাতে যদি কল্পর ঘুম ভেঙে যায় তাহলে প্রিয়ও উঠে বসে থাকে কল্পর পা ব্যাথা করলে হালকা করে মালিশ করে দেয় উঠে হাটা হাটি করে। কল্প উঠতে নিষেধ করলেও প্রিয় শোনার বান্দা। এখনও জেনো ওর ঘুমটাও হালকা হয়ে গেছে কখন কি হয় ভেবে ঠিক মতো ঘুমাতেও পারে না কল্প একটু নড়লেও প্রিয় জেগে যায় উঠে জিগায় কি হচ্ছে। কল্প তো মাঝে মাঝে হো হো করে হেসে উঠে আর বলে ~
~ এই তুমি দুদিন পর বাচ্চার বাবা হবা আর তুমি কিনা এখন বাচ্চাদের মতো বিহেভ করো। এতো চিন্তা করো কেন কিচ্ছু হবে না আমার। তুমি একটু ভালো ভাবে ঘুমাও দেখি।
প্রিয় তখন মুচকি হেসে কল্পর কপালে ওষ্ঠ ছুয়ে ওর গলায় মুখ গুজে বকবক শুরু করে।

যেদিন কল্পকে ওটিতে নেওয়া হয় সেদিন প্রিয়র শরীর থেকে ঘাম ঝরতে শুরু করে সারাটা সময় ছটফট করতে থাকে ওটির সামনে আর বিলাপ করতে থাকে এখনও হচ্ছে না কেনো এতো সময় লাগে একটা বাচ্চা বের করতে আর কতোক্ষন। প্রিয়র বিলাপে সবাই অতিষ্ট হয়ে উঠে। যতোক্ষন ওটি চলেছে প্রিয় এক সেকেন্ড এর জন্যও স্থির হয়নি আর না ওটির সামনে থেকে নড়েছে।

কয়েক ঘন্টা বাদে যখন ডক্টর বের হইতে দেখে তখন ছুটে যায় ডক্টরের কাছে আর তখনই পেছন থেকে নার্স দুইটা বেবি হাতে নিয়ে বের হয়।
~ এই যে মিস্টার আপনার টুইন বেবি। আপনার টুইন মেয়ে হয়েছে।

প্রিয় তো শকড তার দুইটা বেবি হইছে এক সাথে। তাও মেয়ে। এই খবরে জেনো সেখানে সবার মধ্যে খুশির বন্যা বয়ে যায়। প্রিয় কল্পর সাথে দেখা করে প্রথম যে কথা বলে তা ছিলো। এই যে মেঘপরী তোমার এটাই শেষ কষ্ট পরিবর্তি আর জেনো কষ্ট না করতে হয় তাই বুঝি এক সাথেই দুইটা পয়দা দিয়ে দিলে।

প্রিয়র কথায় সেদিন কল্প হেসেছিলো অনেক। কিছুদিনের মধ্যেই ওদের বাড়িতে নেওয়া হয় তবে সেটা কল্পদের বাসায় তার বাবা মা এবার নাছড় বান্দা বিয়ের পর মেয়ে আজ ও সেই বাসায় ঢুকেনি আর বাচ্চা হতেও যেতে দেয়নি এ বাসা থেকে তাই এবার যেতে দিতেই হবে। প্রিয়ও আর বাধা দেয়নি।

কল্পর শশুড় শাশুড়ি তো না পারে সেখানেই থেকে যায় কবে বউমা কে নিয়ে আসতে পারবে এই তাদের চিন্তা। বাচ্চা দুটো সেই রকম কিউট হইছে কি বড় বড় চোখ। দুইটার নাম রাখা হইছে’পিয়ালি আর পিউলি’

কল্প একদিন বাচ্চা নিয়ে হাটাহাটি করছিলো তখন তহমিনা এদিকেই আসছিলো। তাই কল্প ওনাকে না দেখার ভান করে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছিলো। বুঝলি পিউ তোর মাম্মাম তো বেস্ট বাইকার কিন্তু তোর দাদিবু ও নাকি বাইকার ছিলো কিন্তু সে কি আর আমার সাথে পারে রে আমি তো সব থেকে বেস্ট বাইকার তাই তো সে কখনো আমার সাথে জিততে পারবে না দেখে কখনও রাইডে ও যায় না আবার সে নিজেকে বেস্ট মনে করে কেমন লাগে বলতো। একদিন খুব ভোরে কল্প রাইডে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছিলো বাসা থেকে কিন্তু বাসার সামনে যেতেই দেখে কেউ একটা বাইক নিয়া দাড়িয়ে আছে কল্প যেতেই সে হেলমেট খুলে ফেলে।

~ মা আপনি।
~ তোমার শাশুড়ি নাকি লুজার চলো। তাহলে আজ একটা কম্পিটিশন হয়েই যাক দুজনার মাঝে দেখি কে জিতে আর কে বেস্ট হয়।

~ শাশুড়ি বউমার মাঝে কম্পিটিশন টা ঠিক আমার পছন্দ না তবে আমার শাশুড়ি চাইলেই আমি তার সাথে একটা গুড রাইডে যেতে পারি।
~ পারবা না বুঝেই গেছো তাই তো এটা বলছো।
~ হুম তাহলে এখন আমরা রাইডে তো যেতেই পারি।

তহমিনা মুচকি হেসে বাইকে বসলে কল্প পিছনে বসে আর তখনই কল্প ওপরে তাকায় শশুড় তাকে অল দি বেস্ট। জানাই আর প্রিয় অবাক হয়ে চেয়ে আছে যা সে কখনও কল্পনাও করেনি আজ সেটাই তার চোখের সামনে। কল্প ও মুচকি একটা হাসি দেয়। মোট কথা পুরোটায় ছিলো রায়হান মাহমুদের পরিকল্পনা। তার জন্য তহমিনা মাহমুদ যেটা হারিয়েছিলো আজ যেকোনো ভাবে সেটা ফিরিয়ে দিতে পেরেই সে স্বার্থক। মূলত এই কারনটায় ছিলো তহমিনার অমত থাকা সত্তেও নিজে দাড়িয়ে কল্প’প্রিয়র বিয়ে দেওয়ার।

ওই দিনটার পরেই শুরু হয় শাশুড়ি বউমার নতুন সম্পর্ক। এখন আর প্রিয়কে তার জোড় করে রাইডে নিয়ে যেতে হয় না। বরং শশুড় আর বরের কাছে বাচ্চা দুটো চাপিয়ে শাশুড়ি বউমা বেড়িয়ে যায় রাইডে।

এখন তো বাড়িতে দুটো। লেডি বাইকার।

পরিবারটা এখন সুখের।

লেখা – আদিবা

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “লেডি বাইকার – একজন বাইকারের গল্প” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – লেডি বাইকার (১ম খণ্ড) – একজন বাইকারের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *