সিনিয়র প্রেম ১

সিনিয়র প্রেম – ডাক্তার মাইয়া যখন বউ – পর্ব ১ | Senior Bou

সিনিয়র প্রেম – ডাক্তার মাইয়া যখন বউ – পর্ব ১: ভালবাসা নাকি জাত-পাত ধর্ম মানে না, তা না হয় বুঝলাম কিন্তু এখন তো দেখি বয়সও মানে না! আহা প্রেম! আহা ভালবাসার ক্ষমতা! তো যাই হোক এরকম এক অসম বয়সের দুষ্টু মিষ্টি, ঝগড়াটে, রোমান্টিক ও কষ্টের মিশ্রণে লেখা এক ভালবাসার গল্প শোনাবে আমাদের লেখক সাহেব আরমান হোসেন হিমেল। চলুন তবে কাহিনী শুরু করা যাক।

মাকড়সার জীবন

সকালে ঘুমিয়ে আছি এমন সময় ট্রাকের শব্দে ঘুমটা গেল ভেঙ্গে। আমার বুকের ভিতরটা কেন জানি ধকপক ধকপক করছে। এত জোরে কেউ হর্ন বাজায়? তাও আবার বাড়ির সামনে এসে। পরে আম্মুকে ডাক দিলাম,

আমিঃ আম্মু, আম্মু।
আম্মুঃ কি হয়েছে ডাকিস কেন?

আমিঃ এই সকাল বেলা ট্রাকের শব্দ কেন?
আম্মুঃ মাথা মোটা এখন ১১ টা বাজে। সারা রাত শুধু মোবাইল টিপা আর দুপুর পর্যন্ত ঘুমানো।

আমিঃ তোমার খালি এক ডাইলগ। আজ ছুটির দিন বলে এতো ঘুমাচ্ছি।
আম্মুঃ ছুটির দিন বলে সারা দিন ঘুমাতে হবে।

আমিঃ যাই হোক, ট্রাক কেন এখানে?
আম্মুঃ পাশের বাসায় নতুন ভাড়াটিয়া আসলো, তাই।

আমিঃ ও আচ্ছা। এই জন্যই।
আম্মুঃ তাড়াতাড়ি ওঠ। নতুন ভাড়াটিয়া একটু কাজে হেল্প কর গিয়ে।

আমিঃ আচ্ছা, চেষ্টা করি।
আম্মুঃ যা তাড়াতাড়ি।

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে খাবার খেয়ে বাইরে গেলাম। ট্রাকটা এখনও আনলোড চলছে। আমি গিয়ে নতুন ভাড়াটিয়াকে ডাক দিলাম,

আমিঃ এই যে আঙ্কেল এদিকে আসেন।
আঙ্কেলঃ কি হয়েছে বাবা?

আমিঃ আমি পাশের বাসাতেই থাকি। আপনারা নতুন তো আপনাদের কি কাজে হেল্প করব?
আঙ্কেলঃ করলে ভালো হতো। অনেক জিনিসপত্র নামাতে হবে।

আমিঃ আচ্ছা আঙ্কেল আমি হ্যাল্প করছি
আঙ্কেলঃ ঠিক আছে, আসছি।

তারপর পুরা ২ ঘন্টা কাজ করলামা। হাত পায়ের অবস্থা শেষ। শালার আঙ্কেলের যদি একটা মেয়ে থাকতো তাও ভালো লাগতো। তাও নাই মনে হয়। ১০-১২ বছরের একটা পিচ্চি ছেলে আছে। একটা মাইয়া থাকলে তাও এত কাজ করলাম এটার শোধ উঠতো। আঙ্কেল আমার কাজে খুশি হয়ে কাধ চাপড়িয়ে একটু প্রশংসা করলো।

জীবনে প্রথম প্রেমের ঘণ্টা

আমি আর প্রশংসা বেশি খেতে পারিনা। তাই চলে আসলাম। বিকালে ছাদে বসে মোবাইল টিপছি আরামে। এমন সময় দেখি একটা মাইক্রো এসে থামলো। মাইক্রো থেকে একটা মেয়ে নামলো। আঙ্কেলকে দেখে বাবা বলে ডাক দিল।

আমার হার্টবিট তখন এত জ্বরে চলছে যে বুঝতেই পারছিনা। আমার তো আনন্দের শেষ নাই। মনের ভিতর তখন লুঙ্গি ড্যান্স বেজে উঠলো। তাই একটা ড্যান্স দিয়ে দিলাম।
লুঙ্গি ড্যান্স লুঙ্গি ড্যান্স লুঙ্গি ড্যান্স।

একটা কণ্ঠস্বরঃ এই যে মিস্টার ছাদ থেকে পড়ে যাবেন, সাবধান! (তাকিয়ে দেখি ওই মেয়েটা বলতেছে)
আমিঃ আপনি আমার জন্য কত ভাবেন!

মেয়েটাঃ আরে আপনার জন্য ভাবার কি আছে, আজব তো? আপনি টাওজার পড়ে লুঙ্গি ড্যান্স দিতে দিতে ছাদের পাশে চলে গেছেন সেদিকে তো খেয়াল নাই, তাই বললাম।
আমিঃ আপনি কত ভালো! আপনার মতো মেয়েই তো দরকার।

মেয়েটাঃ আপনার কথা ঠিক বুঝলাম না।
আমিঃ বুঝা লাগবেনা। এনি ওয়ে আমি আরমান অনার্স ১ম বর্ষ।

মেয়েটাঃ ওহ। আমি হিমু মেডিকেল ৩য় বর্ষ। সো আপু বইলা ডাকবা।

মনের সব বাত্তি ধক কইরা নিইভা গেল। শালার আঙ্কেল মেয়ে জন্ম দিছেন আমার বয়সের দিতে পারেননি। বড় মেয়ে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো ছিল, তাও মুখের সামনে দিয়ে এমন সুন্দরী মাইয়া ঘুইরা বেড়াইতো না। কি পুড়া কপাল আমার!

হিমুঃ এই যে ছোট কোথাই হারাই গেলে?
আরমানঃ না, কোথাও না। আপনি আমাকে ছোট বলবেন না। আমার ভালো লাগেনা।

হিমুঃ ১০০বার বলবো। কারণ তুমি তো আমার ছোটই।

আম্মু ডাকছে তাই বদমাস মাইয়ার কাছ থেকে চলে আসলাম।

প্রথম সাইকেলে একসাথে

পরের দিন সকালে কলেজে যাব বলে বের হয়েছি। কলেজ কাছে হওয়ায় সাইকেল নিয়ে যাই। রাস্তাই বের হয়েছি আর দেখি বদমাস মাইয়া ডাকছে।

হিমুঃ এই যে ছোট কলেজে যাচ্ছ নাকি।

মনে হয় কইসা একটা চড় দিয়ে আসি। কিন্তু তাও পারবনা। তাই মনের রাগ মনের ভিতরেই রেখে দিলাম।

আরমানঃ জ্বি।
হিমুঃ আমাকে একটু ড্রপ করে দাও তো।

আরমানঃ আপনার মাইক্রো থাকতে আমার সাইকেলে কেন ড্রপ নিবেন?
হিমুঃ তুমি ছোট মানুষ। চুপচাপ থাকবা। যা বলছি তাই করো।

আমি কিছু বলার আগেই সাইকেলে চেপে বসেছে। তাই আর কিছু করার নাই। যেতেই হবে এখন।

হিমুঃ আরে এতো ধিরে চালাও কেন? আমার দেরি হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি চালাও।
আরমানঃ পড়ে যাবেন তো তাহলে।

হিমুঃ তোমারে না বলছি তুমি ছোট মানুষ। কম কথা বলবা। যা বলছি তাই করো।

পরে দিলাম অনেক জোরে টান।

আমি সাইকেল অনেক জোরে চালাচ্ছিলাম। আর হিমু আপু আমাকে শক্ত করে ধরে আছে। এলাকার লোকগুলো সবাই আমার দিকে হা করে চেয়ে আছে। সবাই ভাবছে যে ছেলে রাস্তায় মেয়েদের সাথে কথাও বলেনা। সে আজ একটা মেয়েকে সাইকেলে নিয়ে চালাচ্ছে। আমার কেমন লজ্জা লাগছিল? কিন্তু কিছুই করতে পারছিনা।

সবচেয়ে অবাক বেশি হয়েছে এলাকার বখাটে ছেলেরা। তারা যেভাবে হা করে আছে মনে হচ্ছে নিজে নিজেই ওদের মুখের ভিতর ঢুকে যাবে।

সিনিয়রের শাসন

আমার কলেজের কিছু আগেই হিমুকে সাইকেল থেকে নামিয়ে দিলাম।

হিমুঃ ঐ পিচ্চি এখানে নামালে কেন?
আরমানঃ আপু আপনাকে নিয়ে আরেকটু গেলে আমি আর কাউকে মুখ দেখাতে পারবনা।

হিমুঃ আসছে আমার লজ্জাওয়ালা রে।
আরমানঃ হুম। এইবার আপনি আপনার রাস্তা মাপেন আমি আমারটা।

হিমুঃ যাও যাও। আর লজ্জা পেতে হবেনা।
আরমানঃ হুম। এবার যান।

হিমুঃ আরমান
আরমানঃ আবার কি হলো?

হিমুঃ তোমার কলেজ শেষ হবে কখন?
আরমানঃ আপনাকে বলবো কেন?

হিমুঃ না, একসাথে যাব তাই।
আরমানঃ এক সাথে যেতে পারবনা। আমি আমার মতো চলে যাব আপনি আপনার মতো যাবেন।

হিমুঃ আমি এখানকার কিছুই ভালো ভাবে চিনিনা। আর শুনছি ওখানকার বখাটেরা খুব খারাপ। আমার ভয় করে।
আরমানঃ বুড়ি মাইয়ার আবার ভয়।

হিমুঃ এই পিচ্চি কথা কম। যা বলছি তাই। আমি ৩ টার সময় এখানে অপেক্ষা করবো।
আরমানঃ যানতো, আমি পারবনা।

বলেই সাইকেল নিয়ে দৌড় দিছি। আর কিছুক্ষণ থাকলে কারো চোখে পড়ে যেতে পারে। কলেজে গিয়ে ক্লাস করলাম। বন্ধুদের সাথে ঘুরা ফেরা করতে করতে ৩.৩০ বেজে গেছে। তাই দেরি না করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় রওনা দিলাম।

কাছে আসার গল্প

বাসায় আসার পথে একটা তেতুলের আচারের প্যাকেট নিলাম। আমার খেতে ভালোই লাগে। সাইকেলে চড়ে প্যাডেল করছি নড়ছে না। কি ব্যাপার আমার হেলিকাপ্টার তো ৫ জনকে নিলেও এমন আটকায়না। আজ এমন করছে কেন? সাইকেলটা চেক করতে নিছে নেমে দেখি হিমু আপু পিছনে দাঁড়িয়ে। আর ও সাইকেলের চাকার নিচে ইট দিয়েছে।

হিমুঃ কি ব্যাপার আরমান সাহেব, চোরের মতো পালাচ্ছেন কেন?
আরমানঃ আমি চোর হতে যাব কেন? যানেন আমার কতো সাহস?

হিমুঃ তাই নাকি! তা শুনি কত সাহস?
আরমানঃ আমি রাত ১০ টা পর্যন্ত এখান থেকে একা একা বাসায় যেতে পারবো।

হিমুঃ ওরে বাবারে আপনি তো অনেক সাহসি দেখছি।
আরমানঃ হুম। সব মেয়েরাই এই কথা বলে।

হিমুঃ পিচ্চি পোলার ঢং দেখো। একা একা বাসায় পালাচ্ছে আর বলে খুব সাহস।
আরমানঃ আমি মেয়েদের সাথে রাস্তাই চলিনা, তাই।

হিমুঃ হুহু। আসছে সাধু বাবা। এখন চলো পিচ্চি।

বলেই সাইকেলে চেপে বসলো। সাইকেল চালাচ্ছি। এমন সময় হিমু বলে,

হিমুঃ তোমার হাতে কি?
আরমানঃ তেতুলের আচার।

হিমুঃ আমার খুব পছন্দ তেতুলের আচার।

বলেই আমার হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে নিল।

আরমানঃ আপনি এটা নিলেন কেন?
হিমুঃ আমার যেটা পছন্দ হয় আমি সেটা নিয়ে নিই।

আরমানঃ হুহু।
হিমুঃ কথা কম। সাইকেল ভালো করে চালাও।

আরমানঃ হুম।

বাসায় আসলাম। আর ভাবছি এতো বড়লোক মাইয়া তার মাইক্রো রেখে আমার সাইকেলের পিছনে পড়লো কেন? কিছুই মাথায় ঢুকছেনা।

দুষ্টু মিষ্টি ফাজলামি

অযথা চিন্তা করে লাভ নাই। কার মাথায় কি আছে কে জানে? রাতে আমার আকাশ দেখতে খুব ভালো লাগে। তাই রাতের খাবার খেয়ে ছাদে গেলাম। আকাশের তারা দেখছি।
হঠাৎ দেখি হিমুদের বাসার ছাদে আগুন জ্বলছে। আমি তো ভয়ে পেয়ে গেছি। আবার আগুন নিভে গেল। আমি বাঁচলাম। আজ আর ছাদে থাকা ঠিক হবেনা। বলে ছাদ থেকে নামতে যাবো, এমন সময় দেখি ছাদের দরজার কাছে সাদা কাপড় পড়ে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে?

আমি বললাম কে ওখানে? কোন উত্তর দিলোনা। কেমন বিশ্রি হাসি হাসছে আর আমার দিকে এগিয়ে আসছে। হঠাৎ হিমুদের ছাদে আবার আগুন জ্বলে উঠলো। আগুনের আলোতে দেখি সাদা কাপড় পড়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আর তার এসেছে। আমি ভয়ে থরথর করে কাপছি। কাছে চলে এসেছে ভুতটা। ভয়ে আমি কথা বলতে পারছিনা। বিশ্রি হাসি হাসছে আর তার মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। আমি শুধু একবার মা বলে চিৎকার দিছি। আর কিছু মনে নাই।

যখন চোখ মেললাম। দেখি হিমু আপু পাশে বসে আছে। হিমুর চোখ কেমন ফোলা ফোলা! এমনিতেই চিকনি চামেলি। মনে হচ্ছে আরো চিকন হয়ে গেছে। আমার চোখ খোলাতে হিমু সবাইকে ডাকলো। আর হিমু নিজেই চলে গেল। কি ব্যাপার চলে গেল কেন?

আমি কি মইরা গেছি নাকি?

আরমানঃ মা আমার কথা শুনতে পাচ্ছো?
আম্মুঃ কি বাজে বকছিস? শুনতে পাবনা কেন?

আরমানঃ আমি সত্যি বেঁচে আছি তো?
আম্মুঃ তোর মাথা মনে হয় গেছে।

আরমানঃ ভুতে আমাকে খেয়ে ফেলেনি?
আম্মুঃ ভুত কিসের ভুত! কোন ভুত নাই। ওই সাজে হিমু তোর কাছে গেছিল।

আরমানঃ কি, এত বড় সাহস আমাকে ভয় দেখায়।

হিমু কে খুজছি। পাইলে আজ খবর আছে। সিনিয়র ফিনিয়র দেখব আজকে। চলবে…

পরের পর্ব- সিনিয়র প্রেম – ডাক্তার মাইয়া যখন বউ – পর্ব ২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *