সিনিয়র প্রেম ৩

সিনিয়র প্রেম – ডাক্তার মাইয়া যখন বউ – পর্ব ৩ | Senior Bou

সিনিয়র প্রেম – ডাক্তার মাইয়া যখন বউ – পর্ব ৩: হিমুকে শায়েস্তা করার ফল যে এভাবে চরম আকার ধারণ করবে তা কখনো ভাবি নি। এখন আমার জীবন কেমন জানি অক্সিজেন শূন্য হয়ে উঠেছে। বেঁচে থাকার যন্ত্রণা প্রতিটি সেকেণ্ডে পাচ্ছি। তন্ন তন্ন করে খুঁজে বেরাচ্ছি তবু পাচ্ছি না, তবে কি সে কিডন্যাপ হয়েছে?

অন্ধকার জগতে প্রবেশ

আমরা দু’জন মিলে বাইক নিয়ে তাদের মাইক্রটাকে ফলো করছি। তারা একটা নির্জন এলাকায় একটা বাড়ির সামনে এসে থামলো। আমরাও নির্দিষ্ট দুরুত্বে বাইক রেখে ঐ বাড়িটার দিকে যাচ্ছি। তারা বাড়িটার মাঝে প্রবেশ করে। এরপর আমরা দুজন দেয়াল টপকে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করি। বাড়িটা অনেক পুরাতন তবে এখনো নিখুতভাবে দাড়িয়ে আছে।

লোক দুইটা বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলে আমরাও চুপিচুপি তাদের পিছে পিছে বাড়িতে প্রবেশ করে। শুনশান নিরবতা। একদম ভুতুড়ে বাড়ির মতো। তবে এদের জন্য এমন বাড়িই পারফেক্ট লোকজন নাই। অনেকে ভুতের বাড়ি ভেবে এই বাড়ির মাঝে প্রবেশই করবেনা।

লোক দুইটা একটা রুমে প্রবেশ করে। আর তখন একটা মেয়ের আত্নচিৎকার শুনতে পাই। আমার তো তখন রক্ত মাথা থেকে পা পর্যন্ত ১ সেকেন্ডে ১ হাজার বার যাতায়াত করছে। আজকে এই দুইটা আমার হাতে মরবে। বলে আশেপাশে তাকাতে দেখি একটা রড পড়ে আছে। রডটা নিলাম। আমার বন্ধু নিলো আরেকটা রড। লোক দুইটা যে রুমে প্রবেশ করেছে ঐ রুমে প্রবেশ করতেই চোখ বুজে নিয়েছি।

একটা মেয়ের ওপর দুইটা মানুষ তাদের পৈশাশিক আনন্দ করছে। পুরা উলঙ্গ অবস্থায় একটা মেয়ে আর বাকি দুটা একপাশে বাধা আছে। কিন্তু এদের মধ্যে হিমু নেই। লোক দুইটা আমাদের দুজনকে দেখে অনেকটা ভয় পেয়ে গেছে। আমার মাথায় তখন রক্ত চড়ে আছে তাই কিছু না ভেবে রড দিয়ে লোক দুটাকে ইচ্ছা মতো পিটাতে শুরু করছি। আরেকটু হলে তাদের মেরেই ফেলতাম। আমার বন্ধু আমাকে থামায়। আমি উলঙ্গ মেয়েকে তার কাপড় দিলাম সে তা পড়ে নিল। মেয়ে তিনটা আতঙ্কে আছে। কথা বলতে পারছেনা।

আমি লোক দুটাকে এক জায়গায় বসিয়ে বললাম,

আরমানঃ তোরা এই মেয়ে তিনটাকে কোথায় পেলি?
কিডন্যাপারঃ আজকেই এদের কিডন্যাপ করেছি?

আরমানঃ কেন করেছিস, বলে দিলাম আরেকটা বাড়ি?
কিডন্যাপারঃ আমাদের এই কাজ করতে বাধ্য করা হয়।

আরমানঃ বাধ্য করা হয় মানে। সবকিছু খুলে বল। বলে আরেকটা বাড়ি দিয়েছি।
কিডন্যাপারঃ এত মারলে বলবো কি করে?

আরমানঃ তাড়াতাড়ি বল, আবার দিলাম নয়ত। মাথাটা খারাপ হয়ে আছে তাড়াতাড়ি বল।
কিডন্যাপারঃ আমাদের শহরে নতুন গ্যাং এসেছে। তারা ডাক্তার পড়ুয়া মেয়েকে কিডন্যাপ করে আফ্রিকাতে পাচার করে দেয়া হয়। কিন্তু তাদের লোক নাই এই শহরে। আর টিপুর কারণে কেউ তাদের সাথে কাজ করতে চায়না। তাই আমাদের পরিবারের প্রতি হুমকি দিয়ে এই কাজ করায়।

আরমানঃ তোদের জোর করে এই কাজ করানো হয়। তাহলে এই মেয়েটার সাথে এখন কি করতে যাচ্ছিলি?
কিডন্যাপারঃ নেশাতে করে ফেলেছি। আর হবেনা আমরা একাজ ছেড়ে দেব, মাফ করে দেন।

আরমানঃ তোরা এই তিনজন বাদে আর কাউকে কিডন্যাপ করিসনি?
কিডন্যাপারঃ না এই শহরে শুধুই আমরা কাজ করে এই গ্রুপে। আর আজ দিনে এই তিনটার বেশি আর কাওকে কিডন্যাপ করিনি।

হারানোর বেদনা

এদের কাছে তাহলে হিমু নেই। এদের কাছ থেকে আর কোন সাহায্য পাওয়া যাবেনা। তাই পুলিশকে ফোন করে তাদের পুলিশের কাছে দিয়ে মেয়ে তিনটাকে একটা হাসপাতালে নিয়ে গেলাম।

রাত তখন দুটা। মেয়ে তিনটাকে হাসপাতালে ভর্তি করে তাদের জন্য ঔষধের ব্যবস্থা করছি। একজন অনেক ভয় পেয়েছে। একদম নির্বাক হয়ে আছে। আর পাগলের মতো আচারণ করছে।

হিমুকে যদি এই গ্যাং না কিডন্যাপ করে তাহলে হিমু কোথায়? কি করছে এখন? কেমন আছে এখন? এসব ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে টুপ করে দু’ফোটা পানি কখন পড়েছে বুঝতে পারিনি!

মেয়ে তিনটার ঔষধের ব্যবস্থা করে। তাদের হাসপাতালে রেখে। বেড়িয়ে পড়লাম। আমার হাত পায়ে শক্তি পাচ্ছিনা। নির্বাকের মতো এদিকে সেদিকে হিমুকে খুজে বেড়াচ্ছি।

হিমুকে কোথায় পাবো, জানিনা? কি অবস্থায় পাবো জানিনা? পাবো কিনা তাও জানিনা? কোনো প্রশ্নের গোলক ধাধায় ফেসে গেছি, যার উত্তর শুধু না।

কোথায় খুজবো ভেবে পাচ্ছিনা। শুধু খুজেই যাচ্ছি। পৃথিবী মানুষরের সামনে এমন কিছু সময় আসে যখন তার অতীতের সব কথা মনে পড়ে যায়। তখন ভাবে এই কাজটা এভাবে করা ঠিক হয়নি ঐভাবে করা ঠিক ছিল। কিন্তু তখন ভাবনাটা সত্যি করা সম্ভব না কারণ তা অতীত।

কিছু অতীত সময় থমকে দাড়াই। যখন মানুষের জীবন থেকে কিছু মুল্যবান জিনিস হারিয়ে যায়। ছন্নছাড়া উলমাদের মতো সেই অতীতে যেতে চায় কিন্তু তা প্রকৃতিতে নেই।

আমি এখন একজন উলমাদের চেয়ে কম কিছু নয়। কারো কথা এখন শুনতে মন চাচ্ছেনা। চারিদিকি ছুটে বেড়াচ্ছি কোথায় গেলে হিমুকে পাবো। পুরো শহরের অলিগলির গুগল হয়েগেছি এক রাতে। কোন জায়গা বাদ দেইনি। এমন পরিস্থিতি মানুষের জীবনে যখন আসে তার বাকশক্তি চিন্তাধারা সবকিছু লোপ পায়। তার মাথায় শুধু একটা কথাই বারবার রিপিট করে ঐ জিনিসটা কোথায় পাবো।

কোথায় তুমি?

আমার চোখে হিমুর চেহারা মাথায় হিমুর কথা। পিচ্চি আমাকে লিফট দাও তোমার সাইকেলে। এসব ভাবছি আর বাইক চালাচ্ছি। রাস্তা ফাকা।
একটা খোলা মাঠে এসে থামলাম। আমি আমার বন্ধুকে বললাম,

আরমানঃ তুই বাইক নিয়ে বাসায় যা।
বন্ধুঃ কেন, তুই যাবিনা?

আরমানঃ না, যাব না। হিমুকে খুঁজতে হবে আমাকে। তুই যা।
বন্ধুঃ দেখ আরমান পুরারাত খুঁজেছি। রাতে খাবারও খাসনি। তুই এবার বাড়ি চল। কাল আমরা সবাই মিলে আবার খুজবো।

আরমানঃ হিমুকে না পাওয়া পর্যন্ত আমি ঐ বাড়িতে যাবনা, তুই যা।
বন্ধুঃ তুই চলতো।

আমার তখন কারো কেয়ার ভালো লাগছিলনা। আমার চোখে না ঘুমানো টেনশনের চেহারা পুরা রক্ত বর্ন। আমি ঐ চোখ নিয়ে আমার বন্ধুর দিকে তাকালাম আর বললাম,

আরমানঃ তুই আমাকে জোর করতে আসিস না। আমার মধ্যে মানুষের মন নাই এখন। তোকে যা বলেছি তাই কর। না হলে তোরও পিটাই শুরু করবো।

আমার বন্ধু হয়তো ভয় পেয়েছিল। আবার নাও পেতে পারে জানিনা। সে কিছু না বলে বাইক নিয়ে গেলো। আমি তখন এটা খোলা মাঠের মাঝে দাড়িয়ে। চারিদিকে আযানের প্রতিধ্বনি।

আমার চিন্তা ধারায় যত প্রশ্ন আছে সবগুলোর উত্তর ছিল না। মানুষ জীবনে মৃত্যুর সামনে আর এমন পরিস্থিতিতে যেকোন কিছু করে ফেলতে পারে। এই সময়টাতে মানুষে পুরো জীবন মনে পড়ে যায়। কিছু মুহুর্ত চোখের সামনে বাস্তবে হচ্ছে বলে মনে হয়।

আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। হিমুর নিখোজের পিছে আমি দায়ি। তাকে কোথায় খুজবো? আমি কি বাসায় যাবো? তাদের কি বলতে পারবো আমি হিমুকে পাইনি? আমি একজন নিকর্মা। যার কারণে মেয়েটা নিখোজ। আমার চোখের সামনে গোলক ধাধা ঘুরপাক খাচ্ছে। যার প্রত্যেকটার উত্তর না। রাতে চিন্তা টেনশনে কান্নাটা হারিয়ে গেছিলো। কিন্তু এখন চোখ দিয়ে অঝর ধারায় বন্যা বইতে শুরু করেছে। আমার কোন চিন্তা কাজ করছেনা।

হিমু কোথায় তুমি? গগন ফাটানো চিৎকার দিয়ে কাদতে ইচ্ছা করছে। ক্লান্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমি মাটিতে বসে পড়লাম। চলবে….

পরের পর্ব- সিনিয়র প্রেম – ডাক্তার মাইয়া যখন বউ – পর্ব ৪

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *