তুই – প্রেমের গল্প রোমান্টিক

তুই – প্রেমের গল্প রোমান্টিক: ধ্রুভ আর অপেক্ষা না করে মীরার ঠোটের মধ্যে নিজের ঠোট চেপে ধরলো। অস্থির হয়ে নিজের শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো। মীরার কাধ থেকে শাড়ি সরিয়ে….


পর্ব ১

  • ‘দাদু প্লিজ দাদু। আমি এই বিয়ে করবোনা। কিছুতেই না। প্লিজ দাদু। প্রত্যয় আসবে দাদু। তুমি একটু অপেক্ষা করো প্লিজ দাদু। আমি প্রত্যয় কে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবো না। প্লিজ এমন করোনা। আমি মরে যাবো! ‘

এই টুকু বলেই মীরা কান্নায় ভেঙে পরে। কিন্তু মীরার দাদু এখনো সোফায় মাথা নিচু করে পাথরের মতো বসে আছে। মীরার কথায় উনার কোনো হেলদোল হলোনা। ড্রয়িংরুমে সবাই উপস্থিত। মীরার মা, বাবা, ছোট ভাই, মীরার দাদা, দিদুন, জেঠু, জেঠি এবং তার ছেলে আশরিক আলফাজ ধ্রুভ।

আজ মীরার বিয়ে ছিলো তার ভালোবাসার মানুষের সাথে। কিন্তু বরযাত্রী আর আসেনি। কেনো তা সবারই জানা কিন্তু কেউ বলতে পারছেনা মীরা কষ্ট পাবে বলে। পুরো খান বাড়ী থমথমে কারণ, খান বাড়ীর একমাত্র মেয়ে মীরার বিয়ের দিন আজ। ৮ টা বাজতে চললো, কিন্তু বরযাত্রী এখনো আসেনি। আশেপাশে কানাঘুষা সেই কখন থেকে শুরু। সবাই এই সেই কথা বলছে।

আর মীরা নববধূ বেশে সেই দুপুরবেলা থেকে অপেক্ষা করছে তার ভালোবাসার মানুষটির কখন প্রত্যয় আসবে আর তার করে নিয়ে যাবে।

কিন্তু না আসেনি প্রত্যয়। না এসেছে কোনো বার্তা তার জন্য। যদিও এসেছে ঠিকি কিন্তু সেটা মীরা জানে না।

সত্যি না জানিয়েই তাকে কিছুক্ষণ আগে বলা হয়েছে প্রত্যয় নয় বরং ধ্রুভকে তার বিয়ে করতে হবে। প্রত্যয় বরযাত্রী নিয়ে আর আসবেনা। এই কথা শুনেই মীরা তার দাদুর পা জড়িয়ে কাদঁছে আর উপরের কথা গুলো বলছিলো। মীরা বারবার একই কথা বলে যাচ্ছে।

মীরা আবারো বললো,

  • ‘দাদু, আমি অন্য কাউকে বিয়ে করবো না দাদু। আর একটু অপেক্ষা করো প্রত্যয় ঠিক আসবে আমায় নিতে প্লিজ দাদু।’

এসব বলে গুমরে কাঁদছে মীরা। মীরার দাদু এতোক্ষন চুপ করে থাকলেও এবার মীরার গালে সজোরে একচড় বসিয়ে দেয়।
মীরা চুপ হয়ে একদম স্তব্ধ হয়ে যায়। তার দাদু তাকে মেরেছে তা বিশ্বাস হচ্ছেনা মীরার। সাথে সাথেই দাদুর পা ছেড়ে দেয় মীরা। মীরা বুঝে যায় ধ্রুভ কেই বিয়ে করতে হবে তার। ধ্রুভ চোখ বন্ধ করে বসে থাকে ফ্লোরে।

মীরার দাদু চড় দিয়ে বুকে হাত দিয়ে বসে থাকে। তিনি যে নিজের কলিজাতেই হাত উঠিয়েছেন আজ। এই সব দেখে জেঠু কেঁদে উঠে।
মীরার বাবা চুপ করে মাথা নুইয়ে বসে আছেন। মীরার মা সে কখন থেকেই অজ্ঞান। মীরার জেঠি মীরার মার মাথায় হাত বুলাচ্ছেন।

মীরার দিদুন চোখ মুছছে বারবার নিঃশব্দে। আর ধ্রুভ একনজর এ মীরার দিকে তীক্ষ্ণ ও অগ্নিময় চোখে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়েই মীরা কে ঝালা ফালা করে দিচ্ছে ধ্রুভ। কিন্তু মুখ চোখ তার নরমাল কিন্তু চোয়াল শক্ত করে রেখেছে সে।

এক্টু পড় নিজেকে শক্ত করে মীরার দাদু ইব্রাহিম খান। তারপর চেঁচিয়ে উঠে,

  • ‘এভাবে মরা কান্না না করে যা ভেতরে কাজী ডাক এখুনি বিয়ে হবে। মীরার সাথে ধ্রুভের।’

ব্যস আর কারো কথায় পাত্তা নেই। উনার দুই ছেলে চট জলদি উঠে দাঁড়ায়। মানে মীরার জেঠু আর বাবা।

উনারা কাজী ডেকে ভেতরে আনেন। যিনি প্রায় ৮ ঘণ্টা ধরে বিয়ে পড়ানোর জন্য অপেক্ষা করছেন। আর কাজীকে ভেতরে আসতে দেখে মীরা। তার দামী ও ভারী লেহেঙ্গা টা হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে। কিন্তু আর কিছুই বলতে পারেনা মীরা। না কান্না করে সে কেনো করবে প্রত্যয় নিজেই তো আসেনি তাকে নিতে। তাহলে আর কেনো কান্না করবে আয়াত? অভিমানে মীরা গুম মেরে গেলেও মন মানছেনা কিছুই।

আর কোনো কথা হয়না ড্রইং রুমে। শুধু বিয়ে পড়ানো হয়। মীরা আর ঝামেলা করেনা কবুল বলে দেয়। কিছুই করার নেই যেখানে সেখানে কি ঝামেলা করবে সে?

বিয়ে পড়ানো শেষ হলে কাজী চলে যায়। আর মীরার দাদু ইব্রাহিম খান ধ্রুভ কে নিজের কাছে বসিয়ে বলে উঠে,

  • ‘মীরা খান বাড়ীর সবার কলিজা। তুমি তা জানো, কিন্তু তুমি ওকে কতোটুকু ভালোবাসো জানিনা। কিন্তু আজ থেকে ওর সব দায়িত্ব তোমার। আশা করি তুমি সব ভুলিয়ে দেবে তাকে। নতুন করে গড়বে সব! ‘

ধ্রুভ মন দিয়ে দাদুর কথা গুলো শুনে তারপর বলে উঠে,

  • ‘জ্বী দাদু আমি চেষ্টা করবো।’

ইব্রাহিম খান নাতির কাধে হাত রেখে বলে উঠে,

  • ‘চেষ্টা না আমি জানি তুমি পারবে। এখন যাও তাহলে তুমি তোমার বৌ নিয়ে যাও ভেতরে। সামলাও ওকে। সবার অবস্থা বুঝতেই পারছো?’

ধ্রুভ মাথা দুলিয়ে বলে উঠে,

  • ‘দাদু তুমি বললে আমি ওকে আমাদের বাগান বাড়ীতে নিয়ে যেতে চাই। দু একদিন এখানে না থাকাই ভালো ও স্পেস পাবে। তুমি বললে নিয়ে যাবো।’

ইব্রাহিম খান কিছুক্ষণ ভেবে বলল,

  • ‘তুমি একদম ঠিক বলেছো। যাও ড্রাইভার পৌঁছে দিবে তোমাদের। সাবধানে থেকো।’

ধ্রুভ আস্তে করে বললো,

  • ‘জ্বী দাদু! ‘

বলেই ধ্রুভ উঠে মীরার কাছে যায়। মীরাএখনো ফ্লোরেই বসে। ইভেন এই ফ্লোরে বসেই মীরা কবুল বলেছে। নিজেকে ধ্রুভের সম্পত্তি বানিয়ে দিয়েছে। ধ্রুভ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে মীরার দিকে তারপর হাত ধরতে গেলে, মীরা উঠে দৌড়ে চলে যেতে নেয় কিন্তু ধ্রুভ মীরার হাতের কব্জি টেনে ধরে ফেলে। মীরা এবার চুপ থাকতে পারেনা। এতোক্ষণ সবই শুনেছে মীরা। কিন্তু সে যেতে চায় না কোথাও।

তাই কাঁদতে কাঁদতে বলে,

  • ‘প্লিজ দাদু, আমি যাবো না। আমার প্রত্যয় কে খুঁজতে হবে। প্লিজ আমি কোথাও যাবো না দাদু। আমায় পাঠিয়ো না। কেনো এসব করছো আমার সাথে তোমরা।’

মীরা এসব বিলাপ বকছে। ধ্রুভ তার চোয়াল আরো শক্ত করে। রাগে গাঁ ফেটে যাচ্ছে তার কিন্তু কিছু বলে না। সে অপেক্ষা করছে অন্য কিছুর। মীরা নিজের হাত ধ্রুভের থেকে ছাড়াতে ছোটাছুটি করছে। কিন্তু ধ্রুভ হাত না ছেড়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

কিন্তু এসব দেখে ইব্রাহিম চৌধুরী প্রায় গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলে,

  • ‘ধ্রুভ নিয়ে যাও ওকে। ভালোভাবে না গেলে অন্য ভাবে নিয়ে যাও।’

মীরা আবারো দাদুর চিৎকার এ আঁৎকে উঠে আর ভয়ে মীরার হাত গিয়ে চেপে ধরে। আর ধ্রুভ বাঁকা হাসে। সে তো এই চিৎকার টা শুনার অপেক্ষা করছিলো। এই চিৎকার কানে যাওয়ার ১০ সেকেন্ড পরই মীরাকে কে পাজা কোলে তুলে নিয়ে হাটা দেয় ধ্রুভ। আর মীরার কিছু করার নেই তাই ধ্রুভের বুকে পরেই কাঁদতে থাকে ফুঁপিয়ে। মীরার বিদায় এভাবেই হয়ে যায়। তার বাবার বাড়ী থেকে।

আর ধ্রুভ হাটছে আর মনে মনে বলছে

  • ‘তুমি ভাবতেও পারবেনা দাদু আজ আমি তোমার কলিজার টুকরার সাথে ঠিক কি কি করবো। গেট রেডী মীরা বেবি। তোকে আজকে আমাদের বিয়ের দিনে তোর লাইফের সব চেয়ে বড় গুড নিউজ টা দেবো’
    বলেই বাঁকা হেসে মীরার দিকে তাকায় ধ্রুভ।

ওরা খান বাড়ীটা থেকে বেরিয়ে যেতে। ইব্রাহিম খান কেঁদে দেয়। আজ ফুলের মতো বাচ্চাটার গায়ে তুলেছেন তিনি। বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে তার। অধিক রাগের অধিকার ইব্রাহিম খানকে পুরো শহর এখনো ভয় পায়। সাথে তার পুরো পরিবার। তিনি যেমন রাগি তেমনি বদমেজাজি তেমন নরম মনের। উনার এক কথায় শেষ কথা।

উনার উপর কেউ কথা বলেনা। বয়স বাড়লেও এখনো ফিট তিনি। ছেলেরা বড় হয়েছে বাবা হয়েছে ঠিকই কিন্তু এখনো বাবার কথাই উঠতে বসতে হয় তাদের। আর উনি নিজের কলিজা ভাবে মীরাকে। আর আজ মীরার উপর হাত উঠিয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। মীরারা বেরিয়ে গেলেই, তিনি কেঁদে সোফায় শুয়ে পড়ে। উপস্থিত সবাই এসে উনাকে ধরে। আর ডক্টর ডাকে কারণ অবস্থা খারাপ উনার।

এদিকে ধ্রুভকে ড্রাইভার পৌঁছে দেওয়ার কথা থাকলেও, ধ্রুভ নিজেই ড্রাইভ করছে। পাশেই মীরা এখনো কাঁদছে। কিন্তু তাতে বিন্দু পরিমাণ ভ্রুক্ষেপ দেখাচ্ছেনা ধ্রুভ। সে সিগারেট খাচ্ছে আর আপন মনে। আর ড্রাইভ করছে। আর বারবার মীরাকে তাচ্ছল্য ভাবে দেখছে। যেমন মীরার কান্নায় ধ্রুভের মনে পৈশাচীক আনন্দ পাচ্ছে। ধ্রুভ মনে মনে আবারো বলে,

  • ‘আজ সারারাত তোর এভাবেই কাঁদতে হবে মীরা। আজকের রাত যে তুই ভুলতে পারবিনা কোনো দিন। আমি ভুলতে দেবোনা কিছুতেই না।’

ঘণ্টা খানেক বাদে ধ্রুভদের দামী কার টা তাদের নিজস্ব বাগান বাড়ীতে থামে। মীরা কেদেই যাচ্ছে। এখনো থামেনি।
ধ্রুভ বিরক্তিকর স্বরে বলল,

  • ‘প্লিজ এই ড্রামা স্টপ কর! আর নাম এসে পরেছি।’

মীরা ভাবছে কার সাথে বিয়ে হলো তার? যে কিনা টানা ৫ বছর পড় লন্ডন থেকে এসেও মীরার সাথে একবারো কথা বলেনি।
মীরা বুঝতে পারে ধ্রুভ তাকে সহ্য করতে পারেনা, কিছুতেই না। তাই তো দূরে দূরে থাকে দেশে আসার পর থেকে। আর তার সাথেই দাদু তার বিয়ে দিয়ে দিলো। ভেবেই মীরা আরো কান্না বাড়িয়ে দেয়।

ধ্রুভ রেগে কার থেকে নেমে। মীরাকে এক প্রকার টেনে কার থেকে নামায়। তারপর টেনে হিঁচড়ে বাড়ীর ভিতরে নিয়ে যায়।

মীরার অবস্থা খারাপ। লেহেঙ্গা এতো ভারী যে তার হাটতেও কষ্ট হচ্ছে, তার উপর ধ্রুভ তাকে টেনে হিঁচড়ে এক প্রকার দৌড়ে নিয়ে যাচ্ছে। মীরা বারবার লেহেঙ্গায় পা বেধে পড়ে যাওয়ার অবস্থা।
পায়ে ইতিমধ্যে ব্যাথা অনুভব করছে মীরা। চিৎকার করে কাঁদছে সে।

অবশেষে ধ্রুভ তাকে একটা রুমে এনে ধাক্কা দিয়ে বেডে ছুড়ে ফেলে। বেচারি পরে রয় আর উঠতে পারেনা। অনেক ক্লান্ত মীরা
আর কত? প্রায় ১ সাপ্তাহ ধরে বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত সে। তার উপর আজ বিয়ের দিন বিদায় খাওয়াদাওয়া বন্ধ প্রায় টাইম কই এতো খাওয়ার? ? তাও সারাদিন একটার পর একটা ঝটকা আর কত নিবে মীরা। আর না আছে শরীরে শক্তি না আছে মনে! তাই চুপচাপ এমনি পড়ে থাকে নরম তুলতুলে বেডে।

ধ্রুভ আবারো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে মীরার দিকে। তারপর বেরিয়ে যায় রুম থেকে সে। ছাদে চলে যায় ধ্রুভ।

কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে একটা সিগারেট ধরায় সে। তারপর দু তিনটা টান দিয়ে, নিজে নিজেই বলে উঠে সে

  • ‘কেনো বদলে গেলি তুই মীরা। সব ভুলে গেলি তুই স্বার্থপর মেয়ে। আমার কাছে পাত্তা না পেয়ে প্রত্যয় কে বেছে নিলি? ? তাহলে আমায় পাগল করলি কেনো? ? “

ধুভ অতীতে ডুব দেয়। সেই দিনে যেদিন থেকে মীরার পাগলামি দেখেছিলো ধ্রুভ।


পর্ব ২

স্কুল থেকে ক্লাস শেষ করে মীরা স্কুলের গেইটে দাড়িয়ে বান্ধবীদের সাথে ফুচকা খাচ্ছিলো। সাথে তার বান্ধবী রুহানি আর সানিয়া ছিলো। তারা তিনজন একসাথে মিলে ফুচকা খাচ্ছিলো। এইটা তাদের ছয় নাম্বার প্লেট ছিলো।

কোথা থেকে ধ্রুভ ভাইয়া গাড়ি নিয়ে এসে ওদের সামনে দাড়ালো। মীরা ধ্রুভকে মনে মনে প্রচন্ড ভালোবাসে কিন্তু ধ্রুভের কাছে পাত্তা পায় না সে কখনোই। যতবারই সে প্রকাশ করতে গেছে উল্টো গালে দাগ করে ফিরে এসেছে অর্থাৎ থাপ্পড় খেয়ে আর কি। ধ্রুভ আসাতে মীরা তাড়াহুড়ো করে ওখান থেকে কেটে পরতে লাগলে ধ্রুভের ডাকে থমকায়।

  • ‘এই চুন্নি কই যাস হ্যা? ।’

মীরা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। ক্ষোভ নিয়ে বললো,

  • ‘আমি মোটেও চুন্নি না। আমি আমার দাদুর বড়লোক পুতিন।’

ধ্রুভ মীরার কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকালো তার দিকে। সেও ট্যারা করে জবাব দিলো,

  • ‘হ্যা ইব্রাহিম দাদুর বিগড়ে যাওয়া পুতিন।’

মীরা এগিয়ে এসে বললো,

  • ‘একদম বাটপারি করে মিথ্যা কথা বলবেন না। উল্লুকের নানা।’

ধ্রুভ মীরা চুল টান দিলো। সে বললো,

  • ‘একদম পটর পটর করবি না।’

মীরা কিছু বলতে যাবে তার আগে দেখে দেখে তার সামনে তারই বান্ধবীর সাথে ধ্রুভ হেসে হেসে কথা বলছে। আর তার বান্ধবী সানিয়া মাঝেমধ্যে ধ্রুভের কথা শুনে তার গায়ে ঢলে পরছে। মনে হচ্ছে, কতই না রসিকের কথা বলছে কিন্তু এই লোক তো আস্ত একটা তিতকুটে করলা।

সানিয়া আবারো ধ্রুভের গায়ে হাসতে হাসতে ঢলে পরে যেতে যেতে বললো,

  • ‘ওহ ধ্রুভ বেবি ইউ আর সো ফানি।’

এই কথা শুনে মীরার চোখ তো কপালে। তার খুব করে বলতে ইচ্ছা করছিলো যে,

  • ‘ফানি বলার শখ আজীবনেত মতো ঘুচিয়ে দিব বাটপারের নানী।’

রুহানী বলে উঠলো মীরাকে,

  • ‘দেখ দোস্ত তোর পছন্দের মানুষের সাথে সানিয়া কেমন করে লেপ্টে পরছে বারবার ওর গায়ের উপর।’

মীরার হাতে মাম পানির বোতল ছিলো। দুই হাত দিয়ে এতো শক্ত করে চেপে ধরেছে মনে হচ্ছে বোতলটায় ধ্রুভ। আর চেপে ধরছে যেন দম ফুরিয়ে যায় ধ্রুভের। বোতল টা নিমিষে বেকিয়ে গেলো মীরার চাপাচাপিতে।

সে তাৎক্ষণিকভাবে চিৎকার দিয়ে উঠলো,

  • ‘ড্রাইভার! ‘

ড্রাইভার মীরাদের স্কুলের সামনের স্টলে বসে চা খাচ্ছিলো। মীরার এমন চিৎকার শুনে ড্রাইভারের মুখ থেকে চা বেরিয়ে দোকানির গেঞ্জিতে পরে গেছে। দোকানী রেগে বললো,

  • ‘তোর মুখের ভিতরে লেওড়া আছে নাকি এইভাবে ফেললি কেন?’

ড্রাইভার কোন জবাব দিতে পারে নাই। সে দৌড় দিয়ে মীরার কাছে আসলো। সে এসেই জিজ্ঞেস করলো,

  • ‘কি হয়েছে মামুনি? ফুচকা খাওয়া শেষ?’

মীরা অকপটে বললো,

  • ‘হু। বাড়ি যাবো।’

ধ্রুভ এতোক্ষন সব শুনছিলো। সে এগিয়ে এসে বললো,

  • ‘তুমি গাড়ি নিয়ে বাড়ি যাও চাচা। আমি ওকে নিয়ে আসবো।’

মীরা চোখমুখ শক্ত করে আবারো বলে উঠলো,

  • ‘আমার গাড়ি নাই? আমি আপনার গাড়িতে কেন যাবো? চলুন চাচা।’

ধ্রুভকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মীরা ওইখান থেকে গাড়ি নিয়ে কেটে পরলো। ধ্রুভও আর থামে নি, সেও গাড়ি নিয়ে ক্লাবে চলে যায়।
সানিয়া মন খারাপ করে বললো,

  • ‘দেখ না দোস্ত ও চলে গেলো নাম্বার না দিয়ে।’

রুহানী ভেংচি দিয়ে বললো,

  • ‘বামুন চাঁদে বাড়াস কেন?’

রুহানীও এই কথা বলে রিকশা ডেকে উঠে চলে গেলো। আএ সানিয়া মনে মনে ভাবছে, ‘কিভাবে আশরিক আলফাজ ধ্রুভকে পটানো যায়।’

দিন যায়, মাস যায় বছর যায়। মীরা আসতে আসতে বড় হতে থাকে। ধ্রুভকে নানানদিক থেকে নিজের অনুভূতি গুলো বুঝানোর চেষ্টা করেছে মীরা কিন্তু ধ্রুভকে পাত্তা দেয় নি কখনো সে উল্টো ধ্রুভ অন্য মেয়ের সাথে ফ্লাটিং আর টাইম পাস করতে বিজি হলো।

একদিন ধ্রুভের বাহিরে যাওয়া ঠিক হলো। লন্ডনে তাকে পড়তে পাঠাবে আর বাবা। বিলেত ফেরত ছেলের হাত দিয়ে ব্যবসার দায়িত্ব দিয়ে অবসর নিতে চান তিনি।

ধ্রুভের বিলেত যাওয়ার কথা শুনে মীরা কান্নায় ভেঙ্গে পরে। সে হন্তদন্ত হয়ে ধ্রুভের ঘরে ছুটে যায়।

ধ্রুভের ঘরে যেয়ে মীরা দেখে ধ্রুভ কার সাথে ফোনে হেসে হেসে কথা বলছে। ধ্রুভ দেখলো মীরা এসেছে তার ঘরে তবুও তোয়াক্কা না করে নিজের তালে কথা বলে যাচ্ছে সে।

মীরা কান্না করতে বললো,

  • ‘ধ্রুভ ভাইয়া আমার কথাটা একটু শুনবে প্লিজ।’

ধ্রুভ বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আবারো ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পরলো। মীরা ধ্রুভের হাত টানাটানি করতে লাগলো।

ধ্রুভ ফোনের লাইন কেটে মীরার দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে তার দুই বাহু ঝাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

  • ‘সমস্যা কি তোর? একটুও শান্তিতে থাকতে দিবি না? মনে হচ্ছে তোর জন্য বাড়িতে আমি দুই দন্ড টিকতেও পারবো না। বাহিরে যাচ্ছি এখন শান্তিতে থাকতে পারবো।’

ধ্রুভ এই কথাগুলো বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। ধ্রুভের এরকম কথা শুনে মীরা যেন পাথর বনে গেছে। সে আর কোন টু শব্দও করে নি।

দেখতে দেখতে ধ্রুভের যাওয়ার দিন চলে আসলো। সবাই তাকে বিদায় দিতে আসলেও মীরা আসে নি। মীরা শুধু নিজের জানালা থেকে আড়াল হয়ে ধ্রুভের যাওয়ার পথ দেখছিলো।

কেটে গেছে পাঁচ বছর,

মীরা অনার্স শেষ করে মাস্টার্সের জন্য ভর্তি হতে হয়েছে। অনার্সে ঢুকে ঢুকে প্রত্যয়ের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়। মীরা বেষ্টফ্রেন্ড হয়ে উঠে প্রত্যয়। ধ্রুভের জন্য নিজের অনুভূতি গুলো কি ছিলো সেটাও জানতো প্রত্যয়।

প্রত্যয় মীরাকে মনে মনে এক তরফা ভালোবাসতে আরম্ভ করে কিন্তু মীরার চোখে প্রত্যয় খুবই ভালো বন্ধু। একদিন প্রত্যয় মীরাকে সাহস করে বলে দেয় নিজের অনুভূতির কথা। তখন মীরা শান্ত স্বরে জবাব দেয়।

  • ‘আমার দ্বারা ভালোবাসা হয়তো সম্ভব নয় কিন্তু তোকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি। বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দিস, তারা যা ডিসিশন নিবে তাই মেনে নিব আমি।’

সেদিন মীরার এরকম জবাব শুনে প্রত্যয় মীরাকে জাপটে ধরেছিলো। মীরার মনে মনে তখনো চলছিলো এই যে,
‘যে তোমার অপেক্ষা করে না, তোমার পথ চেয়ে থেমে নেই তার না বলার শহরের ভিড়ে তোমার থাকার অধিকারও নেই।’

ধ্রুভ লন্ডন যাওয়ার পর হাড়ে হাড়ে টের পায় যে মীরাকে সে কতোটা ভালোবাসে। মীরার প্রতি কতোটা আসক্ত হয়ে গেছে। মীরাকে এমন কোন দিন নেই যে সে মনে করে নি। সে মীরার সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলো কিন্তু মীরা সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।

পাঁচ বছর পর যখন সে দেশে ফিরলো। সিদ্ধান্ত নিলো যে মীরাকেই বিয়ে করবে যে করেই হোক তখনই এসে জানতে পারলো মীরার বিয়ে ঠিক। শুনে মেজাজ আরো গরম হয়ে গেছিলো যখন বিয়ের জন্য আসা অতিথি জানিয়েছিলো তাকে যে মীরা রিলেশন করে বিয়ে করছে। তখন তার একটাই ধারনা ছিলো এই যে,

  • ‘তার কাছে পাত্তা না পেয়ে সে অন্য কাওকে বেছে নিয়েছে।’
    কিন্তু মীরার বিয়েটা শেষমেশ প্রত্যয়ের সাথে হলো না, তার সাথে হলো।

অতীতের স্মৃতি থেকে ফেরত আসলো ধ্রুভ। এতোক্ষন ছাদে দাড়িয়ে সিগারেট ফুকতে ফুকতে চার প্যাকেট শেষ করে ফেলেছে। সে এইসবই ভাবছিলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত দুটো বাজে। নিশ্চয় মীরা একা একা ভয় পাচ্ছে। তাছাড়া, আজকে তার বাসর রাত আর আজকে দেরী করা চলবে না।

ধ্রুভ ছাদ থেকে নেমে ঘরের দিকে রওনা দিলো। ঘরে যেয়ে ধ্রুভ দেখলো মীরা ঘরে নাই। তাড়াতাড়ি করে নিচে যেয়ে দেখলো মীরা বাড়ি থেকে পালাচ্ছে।
ধ্রুভ দৌড়ে যেয়ে মীরাকে নিজের দিকে হ্যাচকা টান মেরে কষিয়ে থাপ্পড় মারলো। মীরা ছিটকে নিচে পরলো মার খেয়ে। এতো ঝটকা খেয়ে মনে হচ্ছে সে কাঁদতেও ভুলে গেছে।

ধ্রুভ তাকে হিড়হিড় করে টেনে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে। লেহেঙ্গার থেকে এখন নিজেকে ভারী লাগছে মীরার।

মীরা বললো,

  • ‘আমাকে ছাড়েন। আমার প্রত্যয় কে খুজতে হবে। প্রত্যয় আমার জন্য অপেক্ষা করছে।’

ধ্রুভ মীরার মুখে অন্য কারোর নাম শুনে আরো রেগে গেছে। ধ্রুভ মীরার মুখ এনে এতো জোরে চেপে ধরেছে মনে হচ্ছে গাল ভেদ করে আংগুল ঢুকে যাবে।

ধ্রুভ চিৎকার দিয়ে বললো,

  • ‘প্রত্যয় মারা গেছে। শুনেছিস তুই। কার এক্সিডেন্টে ইন্তেকাল করেছে তোর প্রেমিক।’

ধ্রুভের মুখ থেকে প্রত্যয়ের মারা যাওয়া শুনে মীরা থমকে গেছে। অসাড় হয়ে আসছে শরীর। যা বলছে তা কি সত্যি তবে?


পর্ব ৩

‘তুমি মিথ্যা কথা বলছো তাই না? বলো না তুমি মিথ্যা বলছো’
এইসব বলতে বলতে মীরা ধ্রুভের পা ধরে বসে পরলো। আর পাগলের মতো বিলাপ করতে লাগলো। ধ্রুভের মায়া হচ্ছে সেই সাথে প্রচন্ড রাগে ফুলছে। ধ্রুভ তার দুই বাহু টেনে তুলে বললো,
‘এটাই সত্যি মীরা। ইউ হ্যাভ টু একসেপ্ট দিস।’

মীরা অঝোরে কাদঁতে লাগলো। কাদঁতে কাদঁতে বললো,
‘তুমি মিথ্যা বলছো আমি জানি। তুমি আমাকে সেই ছোট থেকে দেখতে পারো না। এইজন্য তুমি প্রত্যয়কে মেরে মেরেছো তাই না।’

ধ্রুভের মেজাজ টা চট করে খারাপ হয়ে গেলো। সে মীরাকে দেয়ালে ঠেসে ধরে বললো,
‘প্রত্যয়কে আমি মারি নি। তবে আজকের পর থেকে কেও যদি তোর আর আমার মাঝে আসার চেষ্টা করে আমি তাকে মেরে ফেলবো। কারন, তুই শুধু আমার।’

মীরার কানে ধ্রুভের বলা কোন কথা যাচ্ছে না। চারিদিক ঝাপসা দেখছে সে। মনে হচ্ছে অতল সাগরের গভীরে তলিয়ে যাচ্ছে। তারপর আর কিছু মনে নেই।’
ধ্রুভ ঘাবড়িয়ে গেছে। মীরা অতিরিক্ত শক পেলে সেন্স হারিয়ে ফেলে। তারপরেও এতোকিছু গেছে আজকে ওর উপর দিয়ে। ধ্রুভ মীরাকে কোলে নিয়ে শুইয়ে দিলো। ডাক্তারকে কল দিতে লাগলো ধ্রুভ।

ধ্রুভ অচেতন অবস্থায় মীরাকে দেখে বললো,
‘কেন তুই আগের মতো বুঝিস না যে আমি তোকে কতোটা চাই।’

মিনিট দশেক পর ডাক্তার এসে দেখে গেলো মীরাকে। অতিরিক্ত স্ট্রেস সহ্য করতে না পারার ফলে মীরার প্রেশার ফল করেছে যার কারনে সে সেন্সলেস হয়ে গেছে। ঘুমের ইঞ্জেকশন দিলো মীরাকে। আজকে রাত টা আরাম পাক। সকাল হতে হতে ঠিক হয়ে যাবে সে।

ডাক্তার যাওয়ার পর ধ্রুভ মীরার লেহেঙ্গা বদলিয়ে নরমাল ড্রেসাপ করিয়ে দিলো।

ধ্রুভ মীরাকে চেঞ্জ করিয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘আজ যদি তুই অন্য কাওকে বিয়ে করার কথা না বলতি আমার জন্য অপেক্ষা করতি তোকে আজকে আদরে ভরিয়ে দিতাম আমি মীরা।’

ধ্রুভ বেশকিছুক্ষন মীরার দিকে তাকিয়ে শাওয়ার নিতে ঢুকে গেলো ওয়াশরুমে। দেয়াল হাত দিয়ে উদাম গা দিয়ে পানি বেয়ে চলছে ধ্রুভের শরীরে। মাথায় চলছে নানান চিন্তা। কিভাবে কি করবে। কিভাবে সামাল দিবে এইসব।

ধ্রুভ দেয়ালে হাত শক্ত করে রেখেই বললো,
‘তুই শুধু আমার মীরা। আর কাওকে না আসতে দিব না তোকে যেতে দিব।’

সকালবেলা পাখির কিচিরমিচির ডাকে ধ্রুভের আগেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে উঠে দেখে মীরা এখনো উঠে নি। সকালবেলার স্নিগ্ধতা যেন মীরাকে আরো মোহনীয় করে তুলছে। এক ধ্যানে চেয়ে রয়েছে সে মীরার দিকে। মীরা নাক মুখ চোখ সব মনে হয় কেও অনেক যত্ন নিয়ে নকশা করে এঁকে দিয়েছে।

মীরার মুখের উপর চুল এসে পরেছে। ধ্রুভ তা আলতো করে সরিয়ে দিলো। গালটাকে একটু ছুয়ে দিলো। ইচ্ছা করছে সমস্ত আদর দিয়ে উজাড় করে মীরাকে ভালোবাসতে কিন্তু ধ্রুভের পরক্ষণেই মনে পরে গেলো, মীরা তাকে ছেড়ে ওই প্রত্যয়কে বিয়ে করতে চেয়েছিলো।

ধ্রুভের কপালের রগটা ফুলে গেলো। এক লাফে নিচে নেমে পরলো বিছানা থেকে। ফ্রেশ হতে চললো ওয়াশরুমে।

মীরার ঘুম ভাঙলো বেলা এগারোটার দিকে। আড়মোড়া ভেঙ্গে এদিক সেদিক তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো সে কোথায় আছে।

পর মুহূর্তে সে বুঝলো সে তাদের বাগানবাড়িতে আছে যা ধ্রুভ এনেছে তাকে গতকাল রাতে। ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় চোখ গেলো তার।

নিজের জামা কাপড় চেঞ্জ দেখে মীরার চোখ কপালে। নিশ্চয় ধ্রুভ করেছে। খাট থেকে ধ্রুভ কোথায় আছে তা রেগেমেগে খুজতে গেলো মীরা।

ধ্রুভ নিচে বসে মোবাইলে টাইপিং করছে আর আরেক হাতে কফি খাচ্ছে। মীরা নিচে নেমে এসে ধ্রুভর কলার ধরে বললো,

‘আমার জামা কাপড় বদলোর অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? কে আপনি আমার’

ধ্রুভের এক তো মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে মীরা তার কলার ধরেছে তার উপর এইসব উদ্ভট কথা। ধ্রুভ উত্তর না দিয়ে মীরার চুলের মুঠি ধরে তার ঠোটে ঠোট বসিয়ে দিলো। শুরু হলো অত্যাচার মীরার ঠোটের উপর। কামড় দিচ্ছে জিদে ধ্রুভ মীরার ঠোটে। চুলের মুঠিটাও শক্ত তার।

মীরার হাত দুটো বেকিয়ে রেখেছে ধ্রুভ। চোখের একপাশ দিয়ে পানি গড়ছে। এই চুমুটা তার বেস্ট চুমু হতো যদি ধ্রুভ তার ভালোবাসাকে গ্রহন করে বিয়ে করতো এতোদিনে। ধ্রুভ তো তাকে কখনো চায় নি সে।

চুমুটা জেদ করে দিলেও ধ্রুভের কাছে মীরার ঠোট টা ওয়াইনের থেকেও নেশাক্ত মনে হচ্ছে এখন। মীরাকে নিয়ে সোফায় শুয়ে পরলো। সোফায় মীরাকে শুইয়ে সম্পূর্ণ ভর দিলো তার উপর ধ্রুভ। এতোক্ষন কামড় দিলেও এখন শুষে নিচ্ছে মীরার ঠোট ধ্রুভ। মীরার কোমর জুড়ে ধ্রুভের হাতের বিচরণ চলছে।

বেশকিছুক্ষন পর ঠোটের যুগলবন্দী থেকে মীরা মুক্তো পেলো। সে এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। সে কনফিউশনে আছে তাকে ভালোবেসে আদর করলো নাকি জেদে।
ধ্রুভ ফিসফিস করে বললো,
‘ভেবে এখন তুই আমার কে।’

মীরার চোখ তুলে তাকানোর সাহস নেই। ধ্রুভের বলা কোন জবাব তার কানের কাছে যাচ্ছে না। সে শুধু একটাই কথা ভাবছে,
‘ভালোবেসে কাছে না টেনে এখন সে আমাকে কি তবে জেদে বিয়ে করেছে?’

বুয়া এসে সকালে সব কাজ করে দিয়েছে। মীরা বসে বসে পরোটা মিস্টি গিলছে। বিয়ের চক্করে ঠিকঠাক খাওয়া হয়ে উঠে নি তার।
ধ্রুভ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মীরা খেতে খেতে বিষম খেলো। ধ্রুভ তাড়াহুড়ো করে পানি দিলো।
ধ্রুভ এক ধমক দিয়ে বললো,

‘খাবার তো পালিয়ে যাচ্ছে না। একটু আস্তেধীরে খেলেই হয়।’
মীরা আবারো মুখে পরোটা পুরে বললো,

‘নিজে তো ঠিকই খেয়েদেয়ে দিব্যি জিম করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমার খবর কি নিয়েছিলেন?’
ধ্রুভ ভ্রু নাচিয়ে বললো,
‘বিয়ের তালে তুই থাকলে সেখানে কি আমি না খেয়ে থাকবো?’

ধ্রুভের মুখে বিয়ে শব্দটা শুনে মীরার প্রত্যয়ের মুখটা ভেসে উঠলো। নাস্তা মনে হচ্ছে আর গলা দিয়ে নামবে না তার। কোনরকমে গ্লাসের পানি টুকু গলার ভিতরে ঠেলে দিয়ে ডাইনিং থেকে নিঃশব্দে উঠে পরলো সে।

ধ্রুভ বুঝতে পারলো না এতোক্ষন কি কারনে ও আপসেট হলো। বাট এখন একটু হলেও আন্দাজ করতে পারছে।


পর্ব

ছাদে বসে আছে মীরা হাটুর ভরে মাথা দিয়ে। কি থেকে কি হয়ে গেলো। জীবন টা নিমিষে বদলে গেলো।

ধ্রুভ ঘরে এসে দেখে মীরা নেই ঘরে। মীরাকে ঘরে দেখতে না পেয়ে ধ্রুভের মাথা খারাপ হয়ে গেলো। আবার পালালো কি না সেটাই ভাবছে সে। তাড়াহুড়ো করে বাহিরে আসলো তাও দেখতে পেলো না। দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলো সেও দেখে নাই, মীরাকে বাহিরে আসতে।

এদিকে ধ্রুভের টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে যে গেলো কোথায় সে। বাহিরে যায় নি তো কোথায় গেলো।

সন্ধ্যা পার হয়ে রাত হতে চললো তবুও মীরার খোজ পায় নি ধ্রুভ। ইব্রাহিম দাদু এরই মধ্যে দু’বার কল করে মীরাকে চেয়েছেন। বিভিন্ন বাহানা দিয়ে এড়িয়েছে সে ম্যাটারটা এখন কিভাবে এভোয়েড করবে?
বুকের বা’পাশ টা ভীষণ চিনচিন করছে। একবার মীরাকে হারিয়েছে। আজ যদি প্রত্যয়ের এক্সিডেন্ট না হতো মীরা ঠিকই এখন অন্য কারো ঘর করতো। অন্য কারো বউ হতো। মীরা অন্য কারো বউ হতো ভেবেই ধ্রুভের মেজাজ টা আবার খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মীরাকে ভুলার জন্য লন্ডনে ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড করতো তারপরেও মীরার মোহ সে ভুলতে পারে নি। জীবন বিচিত্র। যখন সাথে থাকে তখন আমরা ঘুরে তাকাই না আর দূরে থাকলে কলিজা ফাটাই দি চেচিয়ে।

মীরা মাথা নিচু করে এতোইবেশি মগ্ন ছিলো নিজের ভাবনাতে যে এদিকে যে সকাল থেকে রাত হয়ে গেছে তার কোন হুশ নেই। মীরা টের পেলো মশার কামড়ে। হাজার হাজার মশা তাকে কামড়ে টের পাওয়াচ্ছে, ‘এই মীরা বাড়ি যা নয়তো আজ তোরে আমরা উঠিয়ে নিয়ে যাবো! ‘

মশার দেয়া কামড় গুলোতে মীরা চুলকাচ্ছে আর নিচে নামছে। তার মাথাতেও নাই ধ্রুভের কি অবস্থা আছে। মীরা যখন ঘরে গেলো দেখতে পেলো মাথা নিচু করে তার দুই হাতের উপর ভর দিয়ে আছে। ধ্রুভের এরকম লুক দেখে মীরার আত্নার পানি শুকিয়ে গেলো। হালকা শুকনো ঢোক গিললো সে।

কারো পায়ের শব্দে ধ্রুভ মাথা উচু করে তাকালো। দেখলো মীরা দাড়িয়ে আছে। মীরাকে দেখে ধ্রুভ খুশি হলেও পরক্ষনে তার মাথা খারাপ হয়ে গেলো মীরার গায়েব হওয়া নিয়ে। সে শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,

‘কোথায় ছিলি?’
মীরা আমতা-আমতা করে জবাব দিলো,
‘ছাদে! ‘
মীরার মুখে কথা শুনে ধ্রুভ চিল্লিয়ে উঠলো এক প্রকারের,

‘তুই কি ভাবছিস তুই এরকম লুকোচুরি করবি আর আমি কুকুর হয়ে তোকে খুজবো? হ্যা তোকে আজকে সারাদিন আমি কুকুরের মতোই খুজেছি। আমাকে তো মানুষ মনে হয় না তোর। আমার তো অনুভূতি নাই। আমি তো রোবট না। বালের বিয়া আমার! ‘

ধ্রুভ এইসব কথা বলে মীরাকে ঝেড়ে ওখান থেকে চলে গেলো। মীরা থম মেরে দাড়িয়ে রইলো যে হলো টা কি?

‘দাদু কখন থেকে কল করেই যাচ্ছে এই লোক গেলো টা কোথায় নিজের মোবাইল রেখে।’

মীরা বলছে। কারন, ধ্রুভে ইব্রাহিম খান বারবার ফোন দিচ্ছে। তার ফোন তো দাদু বিয়ের দিন ভেঙ্গে দিয়েছিলো প্রত্যয়কে কল দিবে বলে জোর করছিলো যখন। আবারো ফোন বাজছে।
মীরা রিসিভ করলো এইবার। ফোন ধরে কিছু বলতে যাবে তার আগে থেকে ওইপাশ থেকে কর্কশ কন্ঠস্বরে কথা ভেসে উঠলো,
‘এতোক্ষন ধরে তোমাকে ফোন দিচ্ছি তুমি ধরছিলেন না কেন?’

মীরা বুকে দুই তিনবার ফু দিয়ে নিলো। সে নরম স্বরে বললো,
‘দাদু উনি ফোন রেখে বাহিরে গেছেন।’

মীরার কন্ঠস্বর শুনে ইব্রাহিমের বুকটা খা খা করতে লাগলো। তিনি মোমের মতো পুতুলের গায়ে হাত তুলেছিলেন গতকালকে। তিনি বললেন,
‘তোমাদের হয়েছে টা কি? একজন পেলে আরেকজনকে পাওয়া যায় না?’

মীরা কি বলবে বুঝতে পারছে না। সে থেমে বললো,
‘দাদু ও বাহির থেকে ফিরলে তোমাকে কল করতে বলবো।’

মীরা এই কথা বলে সালাম দিয়ে কল কেটে দিলো। ইব্রাহিম খান কে আর কিছু বলার সে সুযোগ দিলো না। মীরার এরকম ব্যবহার সম্পর্কে ইব্রাহিম খান অবগত। কারন, মীরা যখনি অভিমান করে পরিবারের কারো উপর তখনি সে সালাম দিয়ে ফোন কেটে দেয়।

ইব্রাহিম খান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
‘কবে যে তুমি বুঝবে তোমার ভালোর জন্য করেছি সব’

রাত তিন টা বাজে কিন্তু ধ্রুভের আসার কোন নামগন্ধ নেই। এদিকে মীরা এতোক্ষন গায়েব ছিলো আর এখন ধ্রুভ। মীরা কেদেঁ কেদেঁ নাক মুখ ফুলিয়ে দিয়েছে একদম তারপরেও ধ্রুভের খোজ পাচ্ছে না
একটু হেলতে দুলতে ঘরে আসছে ধ্রুভ। দরজার সাথে ঠেস মেরে দাড়িয়ে রয়েছে। সে যে ওভারলোডেড তার হেলদোল দেখে বুঝা যাচ্ছে।

ধ্রুভ নিভু আওয়াজে ডাকলো,
‘মীরু?’
মীরাকে কখনো এই নামে ধ্রুভ ডাকে নি। মীরু বলাতে মীরা যখন চোখ তুলে উপরে তাকালো দেখলো ধ্রুভ দাড়িয়ে আছে দরজাতে হেলান দিয়ে। চোখ অসম্ভব লাল তার।

মীরা জিজ্ঞেস করলো ফুপিয়ে,

‘আপনি কোথায় গিয়েছিলেন আমাকে ছেড়ে।’
ধ্রুভ এগিয়ে এসে মীরার মুখ টা উচু করে ধরে তার ঠোটে শক্ত করে একটা চুমু খেয়ে বললো,
‘আমাকে মিস করছিলি?’

মীরা থমকে যাই। হ্যা, সে এখনো ধ্রুভ নামক মানুষটাকে ভালোবাসে। ভালোবাসা কখনো হারায় না, অবহেলা আর ফেলনাতে সব হারিয়ে ফেলে মানুষ। ভালোবাসার তীব্র যন্ত্রণা সবাই কমবেশি জানে।
মীরা ধীর আওয়াজে বললো,
‘তুমি ড্রাংক করেছো?’

ধ্রুভ ম্লান হাসলো। তারপর বললো,
‘তোর মাঝে নেশা করতে চাই। দিবি করতে একটু?’

ধ্রুভের এরকম কথা শুনে মীরার বুকে তোলপাড় লাগিয়ে দিলো। বুকের ভেতর ধুকপুক করে জানান দিচ্ছে ভালোবাসার অতল সাগরে ভেসে যেতে। রক্তের কণাগুলো শিরশির করে সারা শরীত বয়ে যাচ্ছে।
মীরা সরে আসতে চাইলে ধ্রুভ তার কোমর আরেকটু কাছে টেনে বললো,

‘বল না মীরু তোর মাঝে একটু ডুব দিতে দিবি। প্রমিস সব টুকু দিয়ে দিব।’

মীরা বললো,
‘আপনি নেশার ঘোরে এইসব কি বলছেন। পরে ঘুম থেকে উঠে ঠিকই বলবেন যে, তুই আমার ইজ্জত লুটে নিয়েছিস।’

ধ্রুভ মীরাকে আরেকটু নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। তার কানের কাছে মুখ নিয়ে যেয়ে বললো,
‘তোর নেশার ঘোরে পরেছি। এমনভাবে আছাড় খেয়েছি আর যে উঠতে পারছি না রে। চল না প্রেম প্রেম খেলি।র


পর্ব ৫

‘এরকম খেলা আমি খেলবো না। সরেন।’
মীরা ধ্রুভকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বললো। ধ্রুভের কোন নড়চড় নেই। সে মীরার ঘাড় নিজের নাক ঘষতে ব্যস্ত। সে বললো,
‘মীরা কেন বুঝিস না তোকে কতোটা চাই আমি।’

ধ্রুভ কথাটা বলে মীরা গায়ে ঢলে পরলো। বেহুশ হলো নাকি নেশাতে বুদ হয়ে গেলো মীরা বুঝতে পারলো না। তবে, ধ্রুভের ভারী জিম করা শরীরের ভার মীরা নিতে পারছে না। সে আস্তে আস্তে ধ্রুভকে বেডে শুইয়ে দিয়ে বললো,

‘আমি তোমাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসি সেটা যদি তুমি বুঝতে তখন! ‘
মীরা প্রতিটা দীর্ঘশ্বাসে ধ্রুভের দেয়া অবহেলার নামক ক্লান্তি।

সকালবেলা মীরা উঠে গেছে রান্নাঘরে। রান্নাঘরে যাওয়ার কারন হলো আজকে নিজের হাতে সব বানাবে। ধ্রুভের ফেভারিট আলুর আর পরোটা আর নিজের জন্য আলু পরোটা আর পায়েশ। ব্যস, নেমে পরলো মিশনে।

ধ্রুভ ঘুম ভাঙলো যখন মাথাটা বেশ ভার লাগছে তার। মনে করার চেষ্টা করছে সে কোথায় আছে। কাল রাতে, মীরাকে বকাবকি করে নাইট ক্লাবে গেছিলো। সেখান থেকে ওভার ড্রাংক হয়ে এসেছে বাড়িতে। তারপর আর কিছু মনে নাই তার। পাশ ফিরে দেখে ঘড়িতে নয়টা বাজে। মীরাও নেই ঘরে গেলো কোথায়। এমনিতে কাল অনেক মিসবিহেভিয়ার করে ফেলেছিলো।

ধ্রুভ উঠে আগে ফ্রেশ হতে চলে গেলো ওয়াশরুমে। ফ্রেশ হওয়ার নিজের বাসি জামা-কাপড় চেঞ্জ করে নিচে যাচ্ছে মীরাকে খুজতে। ধ্রুভ সিড়ি বেয়ে নামছে আর বলছে,
‘এই মেয়ের লুকানো ছাড়া আর কোন কাজ নেই নাকি। আমাকে সি আই ডিয়ের মতো খুজাচ্ছে যে পাতা লাগাও। মীরাকা পাতা লাগাও।’

লাস্ট দুই ঘন্টা যাবৎ মীরা রান্নাঘরে আছে। পায়েশ আর আলুর দম হয়ে গেলেও ইউটুব দেখে কিন্তু পরোটা গুলা একটাও গোল হচ্ছিলো না। রাগে-দুঃখে মীরার কান্না আসছে। মুখে তার আটা মাখামাখি। হাতের বেশ খানিক জায়গা সে পুড়িয়ে ফেলেছে।

ধ্রুভ নিচে এসে আগে রান্নাঘরে নজর দিলো। রান্নাঘরে মীরার মুখে আটা মাখামাখি দেখে আর মীরাকে রান্নাঘরে দেখে ফিক করে হেসে দিলো ধ্রুভ। এই রুপেও মীরাকে মোহনীয় লাগছে ধ্রুভের কাছে। সে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো মীরার কাছে।

মীরা কোমরে আঁচল গুজে পরোটা বেলছে। কিন্তু যতবারই সে বেলছে ততবারই সেটা গোল হওয়া বাদে বিভিন্ন আকৃতি ধারন করছে। ধ্রুভ পরোটার আকৃতি দেখে মীরার উপর মায়া আসার বদলে তার আটার উপর মায়া আসলো উল্টো। ধ্রুভ পিছন থেকে বলে উঠলো,
‘তুই মনে হচ্ছে আটার মার্ডার করে ফেলবি। ইশ কি হাল ওদের।’

ধ্রুভের কথা শুনে মীরা চমকে উঠে পিছন ফিরে তাকাতে গেলে তার আগেই ধ্রুভ মীরার উদাম পেটে, তার নাভীর ভাজে নিজের দুই হাত দিয়ে পিছন থেকে ধরে ফেলে। মীরার গরমে ভিজা পিঠ লেগে আছে ধ্রুভের বুকে।

মীরার উন্মুক্ত গলাতে মুখ ডুবালো ধ্রুভ। ছোট ছোট অনেকগুলা চুমু খেলো। সেই চুমুতে ঘায়েল হচ্ছে মীরা। খালি পায়ে মনে হচ্ছে ফ্লোর টাকে কেম্নে দেবে ধরে আছে সে। ধ্রুভের হাত বিচরণ হচ্ছে মীরার উদাম পেটে।

হুট করে পুড়ার গন্ধ গেলো মীরার নাকে। সে আর্তনাদ নিয়ে চিল্লিয়ে উঠলো,
‘আল্লাহ আমার আলু পরোটা শেষ।’

মীরা এতো জোরে চিল্লিয়েছে যে ধ্রুভের জানটাও ধুকপুক করছে। ধ্রুভ মীরার কোমরে একটা চিমটি দিয়ে বললো,
‘মাথার সমস্যা টা কি তোর দিন দিন বাড়তেছে।’

এদিকে ধ্রুভ যেখানে চিমটি দিয়েছে ইতিমধ্যে সেখানে জ্বলা শুরু হয়েছে। মীরা দাঁতে দাঁত কেটে সহ্য করলেও হাতে তার ছিলো বেলন চাকি। সেটা দিয়ে ধ্রুভের কোমরে দিলো এক গুতা। ধ্রুভের লাগে নি তবুও ঠাট্টা সুরে বললো,
‘আমাকে মারতে পারলি তুই?’

মীরা রেগে বললো,
‘আপনার এই প্রেম প্রেম খেলার জন্য আমার পরোটা পুড়েছে বজ্জাত লোক।’
ধ্রুভ ভ্রু কুচকে বললো,
‘এটা কি খেলা?’

মীরা থতমত খেয়ে গেলো। আসলে ধ্রুভ যা বলেছে নেশার ঘোরে বলেছে তখন। সে কিছু বলতে যাবে তার আগে ধ্রুভ তার কোমরটাকে নিজের কাছে মিশিয়ে নিয়ে বললো,
‘এইসব খেলা দ্রুত শিখাবো। তুই শুধু সাপোর্ট দিতে থাক।’

মীরা অবাকের সপ্তম পর্যায়ে যেয়ে লাল-নীল হতে শুরু করেছে। মানে এই বজ্জাত লোকের সব মনে আছে। শুধু শুধু তার সামনে নাটক করছিলো। মীরা তাড়া দিয়ে বললো,
‘ছাড়ো আমার পরোটা হয় নি এখনো তোমার জন্য।’

ধ্রুভ ছাড়লো না আরো শক্ত করে ধরে বললো,
‘এইভাবে হবে না। চল তোকে নতুন পদ্ধতিতে পরোটা বানানো শিখাই।’

মীরা আস্তে করে বললো,
‘আপনার পদ্ধতি গুলো আপনার মতোনই ক্ষাতারনাক হবে তা আপনার বলার ভঙ্গিমা দেখে বুঝেছি।’

ধ্রুভ মীরার কোমর না ছেড়ে তার কোমরের ভেতর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে নিলো। অতঃপর সে মীরার দুই হাতের মাঝে নিজের হাত নিয়ে রুটি বেলতে আরম্ভব করলো। এইসব করতে করতে ধ্রুভ মীরার ঘাড়ে অসংখ্য চুমু দিয়েছে। মীরা শিউরে উঠে সরতে চাইলে, ধ্রুভের চোখ পাকানো দেখে থেমে গেছে। এইভাবে রুটি টেরাবেকা হলে, ধ্রুভ একটা স্টিলের বাটি তে আটার উপর চাপ দিয়ে কেটে ফেললো। যার ফলে রুটি গোলাকার হয়ে গেলো।

মীরার মুখটা বিস্ময়ে হা হয়ে গেছে। সে বললো,
‘এটা তো জানতামই না আমি। কি ইজি! ‘
ধ্রুভ বললো,

‘মাথায় গোবর থাকলে এইসব জানা লাগে না।’
ধ্রুভের কথায় মীরা না ফুলিয়ে উঠলো। সে বললো,
‘পদ্ধতিটা বললেই হতো। এতো ঢং না করে।’
ধ্রুভ মীরাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তার চুল কানের পিছে গুজে দিয়ে বললো,

‘এটাকে বলে প্রেম প্রেম খেলা পদ্ধতি। শুধু নমুনা দেখালাম তোকে। এখনো রুলস দেখিয়ে তোকে অংশগ্রহণ করানো বাকি আছে।’
মীরা চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। আর মীরার গোল গোল চোখ দেখে ধ্রুভ বাকা হেসে বললো,
‘লেটার’স বেবি।’

পর্ব ৬ (শেষ)

দিন যায়, মাস যায় কিন্তু ধ্রুভ আর মীরার সম্পর্কের কোন উন্নতি হয় না। ধ্রুভ কাছে আসতে চেয়েছে যতবার ততবারই মীরা তাকে বাধা দিয়েছে। তার কারন এই না যে সে প্রত্যয় কে ভালোবাসতো। প্রত্যয় শুধু তার বেষ্টফ্রেন্ড ছিলো। তার সুখ দুঃখ সকল কিছুর সাথী ছিলো প্রত্যয়।

একদিন সন্ধ্যায় বেলায় প্রচুর তুমুল বেগে বর্ষণ হচ্ছে। মীরা আজকে হলুদ রাঙা শাড়ি পরেছে। ধ্রুভ এখনো অফিস থেকে ফিরে নি। তারা বনানীর একটা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকছে। তার দাদাজান হয়তো চেয়েছিলেন এইভাবে কিছু একান্ত সময় কাটাতে যেন তারা একে অপরের ভুল বুঝাবুঝি দূর করতে পারে।

মীরা ওই সময়, ‘হুমায়ুন স্যারের”অপেক্ষা’বইটা পড়ছিলো। বাইরে ঝুমঝুম বৃষ্টি হচ্ছিলো খুব। মন টা এমনিতে বিষন্নতায় ভরপুর ছিলো তার উপর এরকম ঝুমঝুম বৃষ্টি নজর কাড়ছে বারবার। গুটি কয়েক পায়ে বারান্দায় যেয়ে মীরা দুই হাত মেলে বৃষ্টি উপভোগ করছে।

বৃষ্টির ফোটা মীরার সারা শরীর ভিজিয়ে দিয়ে একাকার করছে। শিফনের শাড়িটা ভিজে লেপটে লেগে একাকার হয়ে আছে মীরার শরীরে। বৃষ্টি উপভোগ করছে মীরা।

অফিস থেকে বেরিয়ে মাত্র গাড়ি নিয়ে ফ্ল্যাটে পৌছালো ধ্রুভ। আজকে বেশ লেট হয়ে গেছে। শেষ মুহূর্তে একটা জরুরি মিটিং পরাতে সব এলোমেলো করে দিলো।
ফ্ল্যাটে কলিংবেল বাজালো না ধ্রুভ। সে ভাবছে হয়তো এসময় মীরা ঘুমায় না হয় পড়তে বসে তাই ডিস্টার্ব না করে নিজেই ডোর আনলক করে ভেতরে গেলো সে। গায়ের কোর্ট টা খুলে সোফায় রাখলো। টাই টাও আলগা করে নিয়ে খুলে নিলো।

নিজের রুমে যেয়ে দেখলো ধ্রুভ মীরা কোথাও নেই। বুকটা কেমন ছেৎ করে উঠলো। শার্টের কয়েকটা বোতাম খুলে নিলো। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে, আর এই বৃষ্টিতে সে গেলো কোথাও ভেবে পাচ্ছে না।
ধ্রুভ বাহিরে দিকে বের হবে তার আগেই তার নজর গেলো বারান্দায় বৃষ্টি উপভোগ করার পরীর দিকে। বুকের হৃদস্পন্দন টা থমকে গেছে। পা টা নিজের অজান্তেই তার দিকে ছুটে চলছে।

যেতে যেতে মীরার পিছনে যেয়ে দাড়ালো ধ্রুভ। মীরা দাড়িয়ে বৃষ্টির পানিতে নিজেকে ভিজাচ্ছে।

ধ্রুভর নিজেকে বেসামাল লাগছে মীরাকে দেখে এই অবস্থায়। তার দুই হাত প্রসারিত করে মীরার কোমর জড়িয়ে ধরলো। ঠান্ডা হাত হয়ে গেছে বৃষ্টির কারনে কিন্তু মীরার পেট টা নরম তুলতুলে আর গরম হয়ে আছে। শিউরে উঠলো মীরা। অনূভতি জানান দিচ্ছে এটা আর কেও নয় ধ্রুভ ছাড়া। মীরা সামনের দিকে ঘুরে আসতে চাইলে ধ্রুভ কোমর টাকে নিজের সাথে মিশিয়ে দিয়ে বাধা দেয়।

ধ্রুভ ফিসফিস করে বলে মীরার কানের কাছে,

  • ‘শিসসস! ‘
    এরকম ফিসফিসিয়ে বলা মীরার বুকের ভেতরটা বারবার নাড়া দিয়ে উঠাচ্ছে। বুকের ভেতর প্রানপাখি টা ভালোবাসা পাবার জন্য ছটফট করছে। ধ্রুভ তার ঠোট দিয়ে মীরার ঘাড় থেকে সম্পূর্ণ পানি শুষে নিচ্ছ। যত চুমু খাচ্ছে ততই যেন এর তৃষ্ণা বাড়ছে। মীরার কোমর টা কেমন জোকের মতো ধরে আছে ধ্রুভ।

এইভাবে চুমু খেতে খেতে ধ্রুভ কেমন অস্থির হয়ে গেছে। মীরাকে টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে তার ঠোটের সাথে নিজের ঠোটের মিলন ঘটালো। মীরার কেন যেন বাধা দিতে ইচ্ছা করছে না। উজাড় করে ভালোবাসতে ইচ্ছা করছে তার ধ্রুভকে। সে ধ্রুভর চুল দুই হাত দিয়ে মুঠো করে ধরে। সেও ধ্রুভের ঠোট টা আকড়ে ধরে। চুমু খেতে খেতে তারা তাদের বেডরুমে চলে যায়। বাহিরে চলছে বিদ্যুতের আওয়াজ। আর এদিকের দুইজনের মনের ভেতর বেসামাল।

মীরার কাধ থেকে শাড়ি সরানোর সময়। ধ্রুভ থমকে গেলো। তার শ্বাস-প্রশ্বাস এতো দ্রুত চলছে যে চাইলেও আজকে সে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবে না। সে মীরার দিকে চেয়ে রইলো। মীরা চোখ বন্ধ করে ধ্রুভের ঘাড় ধরে আছে।

ধ্রুভ খুব আস্তে করে বললো,

  • ‘মীরু?’

এই ডাক টা যথেষ্ট ছিলো মীরার বুকে আবারো তোলপাড় করার জন্য। মীরা যখন ধ্রুভের চোখের দিকে তাকালো। সে সবুজ চোখ জোড়া তে হাজারো ভালোবাসা জানান দিচ্ছে যে এইসব তার। ডুবতে চাইছে তার মাঝে। সম্মতি চাইছে। তার কাছে। মীরা ধ্রুভকে আরেকটু কাছে টানলো। দুইজনের মুখোমুখি তে একটুও ফাকা নেই। মীরার নিঃশ্বাস খুব দ্রুত পরছে আর সেই গরম নিঃশ্বাস গুলো ধ্রুভের মুখে পরছে। তারা জানান দিচ্ছে। সে শুধু তোমার।

ধ্রুভ আর অপেক্ষা না করে মীরার ঠোটের মধ্যে নিজের ঠোট চেপে ধরলো। অস্থির হয়ে নিজের শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো। মীরার কাধ থেকে শাড়ি সরিয়ে দূরে ফেললো। হালকা করে পেটে চাপ দিলো। এরকম সুখে মীরার মরে যেতেই মন চাচ্ছে।

আলো নিভে গেলো। ভালোবাসার প্রজাপতি গুলো খেলা করছে। একে অপরের আলিঙ্গনে কেও ব্যস্ত আছে।

দুই বছর পর,
হাসপাতালের করিডোরে ধ্রুভ দাড়িয়ে আছে। একটু পর বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পাওয়া গেলো। একটা নার্স তোয়ালে তে একটা বাচ্চা নিয়ে আসছে। নার্সটা হাসিমুখে বললো,

  • ‘মেয়ে হয়েছে স্যার।’

ধ্রুভ বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে নার্সকে জিজ্ঞেস করলো,

  • ‘আমার মীরু?’
    নার্স মুচকি হেসে বললো,
  • ‘শি ইজ অলসো অলরাইট। আপনি দেখা করতে পারেন যেয়ে।’

নার্স ধ্রুভের হাতে বাচ্চা দিয়ে চলে গেলো। ধ্রুভ বাচ্চার দিকে তাকিয়ে তার কপালে চুমু দিলো। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে মীরার কাছে গেলো।
হাসপাতালের বেডে স্যালাইন ঝুলন্ত অবস্থায় মীরা চোখ বন্ধ করে আছে।

ধ্রুভ আস্তে করে যেয়ে ডাকলো,

  • ‘মীরু?’

মীরা চোখ মেলে দেখলো তার স্বামী আর সন্তানকে। ধ্রুভ তার সন্তানকে মীরার পাশে শুয়ে দিয়ে বললো,

  • ‘আমাদের মীধা।’

মীরা হাসলো ধ্রুভের নাম শুনে। মীরার ঠোটে একটা শক্ত চুমু খেয়ে ধ্রুভ বললো,

  • ‘আমার শুধু তুই।’

লেখা – তৃধা মোহিনী

সমাপ্ত

আরো পড়ুন – পরিবারের অবহেলা – কেন এমনটা হয়

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *