ম্যাডাম যখন বউ ২

ম্যাডাম যখন বউ – দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প – পর্ব ২

ম্যাডাম যখন বউ – দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প – পর্ব ২: গত পর্বে আমরা দেখেছি পলাশ একটি মেয়েকে প্রথম দেখায় ভালবেসে ফেলে কিন্তু ক্লাসে এসে দেখে যে ঐ মেয়েটি আর কেউ নয়, তার ক্লাসের ম্যাম! অনেকটা শকড খেয়েছিল বেচারা। এরকম অনেক ছেলে আছে যে ক্রাস খাওয়া বা প্রেমে পড়ার পর যখন দেখে যে সিনিয়র বা টিচার কেউ তখন সরে পড়ে সেই ভাবনা থেকে। কিন্তু আমাদের পলাশ কি করে সেটা দেখার পালা। চলুন দেখি কি হয়?

ম্যামের রাগ ও শাসন

এরপর আমাদের প্রিন্সিপাল স্যার কল্পনা ম্যাডামকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। কিন্তু পলাশ থ মেরে বসে আছে। সে ভাবতেছে, সে শেষ পর্যন্ত ম্যাডাম এর প্রেমে পড়ল। কল্পনা ম্যাডামকে মোটেও ম্যাডাম এর মত লাগে না। ওনাকে দেখলেই মনে হয় কলেজে পড়ে। চেহারায় কেমন একটা মায়াবী মায়াবী ভাব আছে ওনার। সত্যিই বলছি, ওনাকে দেখলে যে কেউ প্রেমে পড়ে যাবে। পলাশও পড়ছে। ম্যাডাম হোক আর যাই হোক প্রেম পলাশ এর সাথেই করবে।

ম্যাডাম একে একে সবার পরিচয় নিচ্ছেন। সবার শেষে পলাশের পরিচয় দেওয়ার পালা। কিন্তু পলাশ বসেই আছে।

কল্পনা ম্যাডামঃ এই ছেলে তুমি পরিচয় দিচ্ছ না কেনো?

পলাশঃ আমিতো তখন পরিচয় দিলাম।

কল্পনা ম্যাডামঃ আচ্ছা বেয়াদব ছেলে তো তুমি। তখনও বেয়াদবি করছো, এখনও করতেছো।

পলাশঃ জ্বী।

কল্পনা ম্যাডামঃ আবার স্বীকার করতেছো?

পলাশঃ যা সত্য তা স্বীকার করতে পলাশের লজ্জাবোধ করে না। আর লজ্জা মেয়েদের ভুষন, ছেলেরা, কেন লজ্জা পাবে?

কল্পনা ম্যাডামঃ বসো। নেক্সট টাইম বেয়াদবি করলে প্রিন্সিপাল এর কাছে নালিশ করব।

পলাশের বেয়াদবি দেখে কল্পনার রাগ হলো। প্রথম ক্লাস তাই কিছু বলল না। পলাশ পুরাটা ক্লাস ম্যাডামের দিকে তাকাইয়া ছিল। একটা মানুষ ক্যামনে এত সুন্দর হয়।

পলাশের ভালবাসার শক্তি

ক্লাশ শেষে পলাশ কাম্পাসে একা একা বসে আছে। এমন সময় রফিক আসল।

রফিকঃ মাম্মা, শেষ পর্যন্ত ম্যাডাম এর প্রেমে পড়লি। হি হি হি হি!

পলাশঃ শালা, হাসিস না। দাত ভাইংঙা দিমু। ম্যাডাম হোক আর যাই হোক, প্রেম আমি করমুই।

রফিকঃ মাম্মা, যদি বিবাহিত হয়?

পলাশঃ শালা, এইদিকে আয়।

রফিকঃ নাহ, গেলেই তুমি থাপ্রাইবা।

পলাশঃ ওই ম্যাডাম রে দেখলে কি বিবাহিত মনে হয়?

রফিকঃ না, তা মনে হইবো ক্যান? বুঝোস না ম্যাডাম বয়স ওতো বেশি।

পলাশঃ তোরে কইছে বয়স বেশি?

রফিকঃ আচ্ছা, মানলাম, ম্যাডাম অবিবাহিত। কিন্তু কারো সাথে যদি রিলেশন এ থাকে?

পলাশঃ ওর পা ভাইংগা হাতে ধরাইয়া দিমু?

রফিকঃ কার? ম্যাডামের?

পলাশঃ ম্যাডামের হইবো ক্যান? যার সাথে রিলেশন করবো তার।

রফিকঃ হুমমম, বুঝলাম।

পলাশঃ বাসায় যাব, যাবি তুই?

রফিকঃ নাহ, মিশু আসুক, ওর সাথে যাব।

পলাশঃ আচ্ছা, আমি গেলাম।

ম্যামকে প্রপোজ

বাসায় এসে পলাশের কিছু ভালো লাগতে ছিলো না। সারারাত ঘুমাইতে পারল না। ভোরে ঘুমাইয়া পড়ল। উঠতে উঠতে সকাল ৯ টা বেজে গেল। এই রে ১০ টা থেকে বাংলা ক্লাস শুরু। পলাশ তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে কলেজের দিকে রওনা হল। ক্লাসে আসতে আসতে ১০ টা ০৫ বেজে গেল।

ক্লাসে ঢুকতেই পলাশ অবাক। ম্যাডাম আজকে শাড়ি পড়ে এসেছে। খুব মানিয়েছে শাড়িটাতে। সিটে বসে পলাশ একদৃষ্টিতে ম্যাডামের দিকে তাকাইয়া আছে।

কল্পনা ম্যাডামঃ এই ছেলে, এই।

ম্যাডাম কতক্ষণ ধরে যে পলাশকে ডাকতেছিল পলাশ খেয়ালই করে নি। শেষে পলাশের কাছে এসে যখন ডাক দিল তখন টের পেল।

পলাশঃ জ্বী।

কল্পনা ম্যাডামঃ কি সমস্যা?

কোন সমস্যা নাই তো।

কল্পনা ম্যাডামঃ তাহলে এভাবে তাকাইয়া আছো কেনো?

পলাশঃ না মানে, আপনাকে সুন্দর লাগতেছে তাই।

কল্পনা ম্যাডামঃ এই যে, কি বলতেছো এইসব? বইয়ের দিকে মনোযোগ দাও।

পলাশঃ একটা কথা।

কল্পনা ম্যাডামঃ হুমম, বলো।

পলাশঃ আমি আপনাকে ভালবাসি।

পলাশ এর কথা শুনে পুরা ক্লাস পলাশ আর ম্যাডামের দিকে তাকাইয়া আছে। পলাশ ভুলেই গিয়েছিল যে সে ক্লাসে আছে।

কল্পনা ম্যাডামঃ খুব বাড় বেড়েছো দেখছি। কালকের বিহেভ কিছু বলিনি দেখে আজ এতো সাহস পেয়েছো। দাঁড়াও, তোমাকে কলেজ থেকে বের করার ব্যবস্থা করতেছি।

ম্যাডামের অভিযোগ

ম্যাডাম কথাগুলো বলে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে গেলেন। এইসব বেয়াদব ছেলেদের কলেজে রাখার মানেই হয় না। প্রিন্সিপাল স্যারকে বলে কলেজ থেকে বের করে দিতে হবে।
প্রিন্সিপাল স্যারকে সব কথা বলল কল্পনা। স্যার সব শুনে বললেন,

প্রিন্সিপাল স্যারঃ তুমি চাচ্ছো, আমি এখন পলাশকে কলেজ থেকে বের করে দেই?

কল্পনা ম্যাডামঃ জ্বী স্যার, এইসব ছেলেকে কলেজে রাখলে কলেজের মান সন্মান নষ্ট হবে। আপনি আজই বের করে দিন।

প্রিন্সিপাল স্যারঃ কিন্তু তাতো সম্ভব না।

কল্পনা ম্যাডামঃ কেনো, স্যার?

প্রিন্সিপাল স্যারঃ পলাশের বাবা এই কলেজের ম্যানেজিং কমিটির প্রেসিডেন্ট।

কল্পনা ম্যাডামঃ এর জন্যই ছেলেটা এত্ত বেয়াদব। তাই বলে স্যার আমি ওর বেয়াদবি সয়ে যাব?

প্রিন্সিপাল স্যারঃ আচ্ছা, তুমি এখন যাও। আমি ওর বাবার সাথে কথা বলব।

প্রিন্সিপাল স্যারের রুম থেকে বের হতেই পলাশের সাথে ম্যাডামের দেখা। ম্যাডামকে দেখে পলাশে মুচকি হাসি দিল। তা দেখে ম্যাডামের খুব রাগ হলো।

ম্যাডামকে লাভ লেটার

প্রতিদিন পলাশ ম্যাডামকে জ্বালায়। নানান ভাবে তাকে বিরক্ত করতে থাকে। এভাবেই কেটে গেল বেশ কিছুদিন। ইদানিং পলাশ কল্পনা কে বেশিই বিরক্ত করতেছে। কলেজের বাইরেও কল্পনাকে ফলো করে। কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বাইরে দেখা হলে ভাবি ডাকে। কল্পনা সহ্য করতে পারে না। ছোটবেলা থেকে তার শিক্ষকতা করার সপ্ন ছিলো কল্পনার। স্বপ্নটা পূরণ ও হইছে। কিন্তু পলাশ এর কারণে সেই স্বপ্নটা ভেংগে যাবে। কল্পনা কলেজ ছেড়ে দেয়ার প্লান করল।

একদিন কলেজ ছুটির সময় কল্পনাকে একটা লেটার দিল পলাশ।

কল্পনা ম্যাডামঃ এটা কি?

পলাশঃ লেটার।

কল্পনা ম্যাডামঃ কিসের লেটার?

পলাশঃ লাভ লেটার।

কল্পনা ম্যাডামঃ কেনো?

পলাশঃ কারণ, আমি আপনাকে ভালবাসি।

কল্পনা এবার আর রাগ কন্ট্রোল করতে পারল না। কষিয়ে একটা থাপ্পর মারল পলাশকে।

কল্পনা ম্যাডামঃ আর কত জ্বালাবে আমাকে? তোমার কারণে আমার স্বপ্ন ভেংগে যাচ্ছে। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। মা অনেক কষ্ট পড়াশোনা করিয়েছে। মা কে আর কষ্ট দিতে চাই না তাই চাকরীটা নিয়েছিলাম। কিন্তু তোমার কারণে চাকরীটা ছেড়ে দিতে হচ্ছে। আমি কলেজ ছেড়ে দিচ্ছি।

কথাগুলো বলে কল্পনা চলে গেল। পলাশ সেখানেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। তার চোখ দিয়ে পানি পরতেছে। নাহ, ম্যামকে আর ডিস্টার্ব করবে না পলাশ। ম্যাডাম যখন তাকে পছন্দ করে না তখন আর কখনো তার সামনে আসবে না। বাবাকে বল কলেজটা ট্রান্সফার করে দুরে কোথাও চলে যাবে। চলবে….

পরের পর্ব- ম্যাডাম যখন বউ – দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প – পর্ব ৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *