ভালোবাসার পরিনতি (শেষ খণ্ড) – New Pratilipi bengali love story

ভালোবাসার পরিনতি (শেষ খণ্ড) – New Pratilipi bengali love story: তোকে আর আমি জোর করবো না। জোর করে কোনো সম্পর্কে সুখী হওয়া যায় না। তাই তোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে করতে হবে না।


পর্ব ১০

রাত ১০টা সময় প্রচন্ড প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছি। মাকে ডাক দেওয়ার শক্তিটুকু পাচ্ছি না, রাফিসা ফোনে গেম খেলছে ওকে কোনো মতে বললাম,
~ তোমার নানুকে ডেকে নিয়ে আসো।
~ আচ্ছা।

রাফিসা মাকে ডাক দেওয়ার আগে মা গরম দুধ নিয়ে আসে। আমাকে এই অবস্থায় দেখে তাড়াতাড়ি হাত থেকে দুধের গ্লাস টেবিলের উপর রেখে ভাইয়া, ভাবিদের ডেকে আমাকে হসপিটালে নিয়ে গেলো।

জ্ঞান ফিরে দেখি সবাই বাচ্চাটাকে আদর করছে। কে কোলে নিবে সেটা নিয়ে তর্ক, এ বলছে এখন কোলে নিবো আবার ও বলছে আমি কোলে নিবো। সবাই খুব খুশি।
তিহান ভাইয়া আমার পাশে বসে আছে। আমার জ্ঞান ফিরেছে দেখে তিহান সবাইকে বললো,
~ ইভার জ্ঞান ফিরেছে বেবিটা ওর কাছে দেও।

মা এসে আমার কাছে বেবি দিলো। ছেলেটার মুখ দেখে সব কষ্ট এক নিমিশে ভুলে গেলাম। অনেক রাত হয়েছে তাই সবাই কিছুক্ষণ থেকে বাসায় চলে গেলো। রাতে তিহান একা থেকেছে।

খুব সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেছে। চোখ গেলো তিহানের দিকে ও চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে। মানুষটা সত্যি আমার জন্য অনেক করেছে পরিবারের সাপোর্টর সাথে ও আমার শক্তি ছিলো। ছায়ার মতো তিহান আমার সাথে ছিলো, অনেক বার মনে করেছি ও আমাকে দয়া করছে কিন্তু না আমার ভুল ভেঙ্গেছে। তিহান যা করছে সব মন থেকে ভালোবেসে করেছে।

আমি এক ধ্যানে তিহানের দিকে তাকিয়ে আছি ওর ঘুম ভেঙ্গে গেছে আমাকে বললো,
~ তোর কি অসুস্থ লাগছে?

~ না, আমি ঠিক আছি।
বাবুটাও ঘুম থেকে উঠে গেছে। তিহান কোলে নিয়ে হাটছে আর কতো কথা বলছে। মনে হচ্ছে বাবা ~ ছেলে কথা বলছে।

~ দেখ ইভা তোর ছেলের হাসি কি মিষ্টি, উম্মাহ আমার সোনা বাবা।
~ হাহাহাহ্ ভাইয়া তুমি তো ওর মতো বাচ্চা হয়ে গেছো।
~ একদম ভাইয়া বলবি না, ছেলের বাবা হয়ে গেলাম আর এখনও ভাই ভাই করে।

~ কি বলছো এসব ভেবে বলো।
~ আমি ঠিকই বলছি, ওর বাবা আমি হবো। এবার তোর আর কোনো কথা শুনবো না।
~ এটা হয় না।

~ হয় কি না তা আমি বুঝে নিবো।
~ একটা কথা ছিলো বলবো?

~ তোর হাজারটা কথা শুনতে রাজি আছি, তুই বল?
~ একটা স্কুলে জবের জন্য এ্যাপলাই করেছিলাম, ওনারা ইন্টারভিউ দিতে ডেকেছে।
~ খুব ভালো কথা, তুই জব করলে আমার কোনো আপত্তি নেই। তোকে আমি নিজে ইন্টারভিউ দিতে নিয়ে যাবো।
~ তুমি খুব ভালো ভাইয়া।

~ আবার ভাইয়া বললে মাইর দিবো।
~ হাহাহাহ্।
রাফিসা এসে ভাইকে কোলে নিয়ে কতো আদর করছে। তিন্নি, তিয়াসও কম না ওরাও ছোট ভাইকে নিয়ে খুব আদর করছে। একটা বাচ্চা আসায় সবার মুখে হাসি। কিন্তু যে বাচ্চার বাবা ছিলো সে খুশি হতে পারি নি। আজও তার কথা ভাবলে চোখে পানি আসে। মা আমার পাশে বসে বললো,
~ মা রে এই খুশির দিনে চোখে পানি আনতে নেই। ওরা তো তোর সব এখন আর কষ্ট পাওয়ার সময় না।
~ হ্যাঁ মা আমি আর কষ্ট পাবো না।

~ আমার সোনা মেয়ে।
চার দিন হসপিটালে সারাক্ষণ তিহান সাথে ছিলো, অনেক করে বলেছি বাসায় যেতে কিন্তু না তার এক কথা আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে তার ছুটি হবে তার আগে না। মা,বাবা,ভাইয়া বাবুকে নিয়ে আগে গাড়িতে গিয়ে বসেছে। আমি আর তিহান হসপিটাল থেকে বের হতে চোখ গেলো রোহানের দিকে সাথে নিশিতাও ছিলো।
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ওদের এরিয়ে যেতে লাগলাম তখন নিশিতার আমার কাছে এসে বললো,
~ কেমন আছো?

~ আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?
~ ভালো। সামান্য একটা কাজের মেয়ে হয়ে এতো নামি~ দামি হসপিটালে কি করছো?
~ সেটা আপনার না জানলেও চলবে।

রোহান এসে বললো,
~ যার তার সাথে পাবলিক প্লেসে কথা বলটা আমার একদম পছন্দ না, এখান থেকে চলো।
~ না দাঁড়াও শুনি ওর দিনকাল কেমন যাচ্ছে আর আমাদের বাসায় কাজের লোকের দরকার আছে ওকে রাখলে ভালো হয়।
তিহান এবার রেগে বললো,
~ আপনি কাকে কাজের লোক বলছেন হ্যাঁ? জানেন আপনার স্বামীর আসল কুকীর্তি কি? এই মেয়েটা আপনার স্বামীর প্রাক্তন স্ত্রী।
~ মানে কি?

~ মানে খুব সহজ আপনার স্বামীর প্রাক্তন স্ত্রী যাকে কাজের লোক বলছেন সে ছিলো তাকে ঠকিয়ে আপনাকে বিয়ে করেছে এবং আপনাকেও ঠকিয়েছে মিথ্যা কথা বলে। ইভা চার মাসের প্রেগনেন্ট ছিলো তখন ডিভোর্স দিয়েছে ভাবতে পারছেন কতোটা নিচু মনের মানুষ। আপনার টাকার লোভে পরে বিয়ে করেছে এখন আপনার থেকে বেশি টাকা আওলা মেয়েকে পেলে আবার যেনো বিয়ে না করে সেদিকে নজর রাখবেন।

~ তিহান চুপ করে, চলো এখন। (ইভা)
~ কাজটা ঠিক করিস নি (রোহান)
~ কাজটা ঠিক করেছি কি না তা আপনার থেকে জানার কোনো ইচ্ছে নেই (তিহান)
~ তোমার মতো খারাপ লোকের বেবি আমি রাখাবো না, আজ~ ই এবোয়শন করবো। (নিশিতা)
নিশিতা রেগে চলে যাচ্ছে, পিছনে রোহানও যাচ্ছে।

~ তোমার এতোটা রাগ হওয়া দরকার ছিলো না, ওদের মতো করে তো ওরা ভালো ছিলো।
~ ও তোকে কষ্ট দিবে আর আমি চোখের সামনে এসব সহ্য করতে পারবো না।
~ উপর আল্লাহ একদিন ঠিক শাস্তি দিবে তো।

~ আমিও চাই ওর কঠিন শাস্তি হোক।
~ শাস্তির আগুন তো তুমি শুরু করিয়ে দিলে।
~ হাহাহাহ্, এটা ওর প্রাপ্য ছিলো।
বাসায় সারাক্ষণ বাচ্চাদের হৈ~ হুল্লোড় লেগে আছে। তিহান বাসায় এসে কিছু সময় ঘুমিয়ে আবার লেগে পড়েছে বাচ্চাদের সাথে খেলতে।

ফুপি এসে বললো,
~ জানিস ইভা গত ছয় বছরে তিহানকে এরকম খুশি দেখি নি। তোর বাচ্চাদের নিয়ে আমার ঘর খুশিতে ভরে দে মা।
~ ফুপি তুমি আবার শুরু করলে।
~ মরার আগে তোদের সুখী দেখতে চাই, আমার কথাটা শোন।
~ আচ্ছা তোমার কথা শুনবো, এখন আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেও তো আমি ঘুমাবো।

~ হুম দিচ্ছি
তিন দিন পরে রোহানের মা বাবা দেখতে এসেছে। তারাও খুব খুশি হয়েছে। রোহানের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
রাতে বাবা আর ফুপি আমার রুমে এসে বললো,
~ দশ দিন পরে তোর আর তিহানের বিয়ে হবে, আমার কথার নড়চড় হবে না (বাবা)
~ না বাবা আমার একটু সময় চাই।

~ তোকে অনেক সময় দেওয়া হয়েছে, আর সময় দিতে পারবো না (ফুপি)
তিহান এসে বললো,
~ ওকে বিয়ের জন্য জোর করতে হবে না আমি আমেরিকা চলে যাচ্ছি খুব তাড়াতাড়ি।


পর্ব ১১

“ইভাকে আমার সবাই অনেক বুঝিয়েছি, অনেক সময় দিয়েছি এখন আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব না তাই বিদেশে চলে যাবো।”
“না বাবা তুই বিদেশে যাস না, আমরা সবাই আছি তো ইভা ঠিক বিয়েতে রাজি হবে।”

“না মামা জোর করে কারো মন পেতে চাই না, যে এতোদিনে আমাকে বুঝলো না সে আর কখনো বুঝতে পারবে না, মা সকলে আমরা বাসায় চলে যাবো রেডি থেকে।”
তিহান রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। এবার ফুপি বললো,
~ তোকে আর আমি জোর করবো না। জোর করে কোনো সম্পর্কে সুখী হওয়া যায় না। তাই তোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে করতে হবে না।

~ তোকে আমরা সবাই সুখী দেখতে চেয়েছি কিন্তু তুই আমাদের বিশ্বাস করতে পারলি না।
বাবা আমার রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, ফুপিও চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলো।

সকালে তিহান, ফুপি রেডি হয়েছে বাসায় যাওয়ার জন্য। রাফিসার সাথে তিহানের খুব ভাব। রাফিসা তিহানকে বললো,
~ তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে আমাকে কে ঘুরতে নিয়ে যাবে বলো?

~ ফুলি তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমারও কষ্ট হবে কিন্তু আমার অনেক কাজ আছে তাই যেতে হবে (তিহান রাফিসা আদর করে ফুলি ডাকে)
~ তোমার সাথে আমিও কাজ করবো আমাকে নিয়ে যাও।

~ না ফুলি, আমি কিছু দিন পরে আবার আসবো।
~ আবার আসলে আমাকে নিয়ে যাবে তো।

~ হুম।
তিহানের চোখ ঝল ঝল করছে। সবার সামনে নিজেকে কন্ট্রোল করছে সেটা বুঝতে পারছি।
আমি দরজার এক কোনে দাঁড়িয়ে আর আমার কোলে ছোট্ট ইশান আছে।

ছোট ভাবী আমাকে আসতে করে বললো,
~ বোন আমার তুমি তিহানকে যেতে দিও না এখনো সময় আছে তিহানকে আটকাও।
~ ভাবী আমি কি দ্বিতীয় বার সুখী হবে পারবো, কোনো গ্যারান্টি আছে?

~ খুব সুখী হবে, দেখেছো রাফিসার সাথে ভাইয়ার সম্পর্ক কতো ভালো। মনে হয় বাবা চলে যাচ্ছে তাই মেয়ে কাঁদছে আর বাবাও মেয়ের জন্য কাঁদছে।
বড় ভাবী বললো,
~ ইভা যাও তিহানকে আটকাও।
~ আচ্ছা তোমাদের সবার কথা রাখলাম।

তিহান শেষ বারের মতো ইশানকে কোলে নেওয়ার জন্য আমার কাছে এসে বললো,
“ইশানকে একটু কোলে নিবো”
“হুম নেও”
ইশানে কোলে নিয়ে খুব আদর করলো। তখন আমি সাহস করে বললাম,
“সারাজীবন বাচ্চাদের বাবার আদরে বড় করবে?”

তিহান আমার কথা শুনে এক গাল হাসি দিয়ে বললো,
“সত্যি তুই চাস আমি ওদের বাবা হই?”
“হুম চাই তুমি তোমার ফুলি আর পুচকের বাবা হও।”

তিহান ফুপির কাছে গিয়ে বললো,
~ মা ইভা বিয়েতে রাজি হয়েছে
~ সত্যি ইভা তুই রাজি হয়েছিস?

~ হুম বলে রুমে চলে এলাম। দ্বিতীয় বিয়ে তাও দুটো বাচ্চা নিয়ে সহ লজ্জা তো করবেই।

বাবা বাজার থেকে এসে শুনেছে আমি বিয়ে করতে রাজি হয়েছি তাতে খুব খুশি হয়েছে। ভাই, ভাবি, মা তারাও খুশি।
এখন সবার খুশিতে আমার খুশি হয়ে গেছে। নিজের জন্য আলাদা কোনো ভালো লাগা নেই। জীবনে সব ভালো লাগার রং মুছে গেছে। অনেক দিন হলো শাড়ি পড়ি না তাই আলমারি থেকে লাল ~ কালো কম্বিনেশন কালারের শাড়ি বের করে পরলাম। হাতে কয়টা চুড়ি, কানে ঝুমকো আর চুলগুলো খোপা করেছি।

এমন সময় বড় ভাবি এসে বললো,
~ ওয়াও, এতোগুলো কিউট লাগছে। দেখি দেখি কারো নজর যেনো না লাগে বলে একটু কাজল আমার কানের পাশে দিলো।
~ আরে ভাবী কি করছো? এই বুড়ো বয়সে আমার দিকে কেউ তাকাবে না আবার তো নজর।
~ ইসসস্, আমার ছোট বোনটাকে দেখতে কতো সুন্দর।

~ তোমাদের মতো ভাবী যেনো সবার ঘরে হয় তাহলে আমাদের মতো মেয়ের কোনো কষ্ট থাকবে না।
~ হাহাহাহ্ তোমার মতো মেয়েও যেনো সবার হয়।
~ চলো তোমার সাথে রান্না করবো।
~ আচ্ছা চলো।

ইশানকে কোলে নিয়ে তিহানকে বললাম,
~ ওনাকে নিয়ে বসে থাকেন আমার কাজ আছে।

তিহান আমার হাত টেনে ওর পাশে বসিয়ে বললো,
~ তোকে শাড়ি পরলে কতোটা সুন্দর লাগে জানিস আর এতো দিন কেমন ভুতুমপেঁচা হয়ে থাকতি।
~ তুমি আমার নামে একটু বেশি প্রশংসা করো।
~ হুহ আমার কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই যে তোর নামে প্রশংসা করবো, যেটা সত্যি আমি সেটা বলেছি পাগলী
~ হয়েছে আর বলতে হবে না। আমি রান্না করতে যাবো।

~ একটু সময় আমার কাছে থাক।
~ না এখন সময় নেই।
~ একটু কি ভালোবাসা যায় না?

~ বিয়ের পর সব ভালোবাসা পাবে এখন গেলাম।
হঠাৎ অঝোর ধারায় বৃষ্টি শুরু হলো তাই খিচুড়ি, ইলিশ মাছ ভাজা আর গরুর গোসত রান্না করলাম দু’ভাবী আর আমি।
আমার আর তিহানের বিয়ে ঠিক হলো পাঁচ দিন পরে। ঘরোয়া ভাবে আয়োজন হবে। দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই একসাথে বসে লিস্টি করছে বিয়েতে যা যা কিনতে হবে।

ওদিকে রোহান আর নিশিতার সাথে খুব ঝামেলা হচ্ছে। নিশিতা সব সত্যি জানার পর রোহানকে ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রোহান অনেক আকুতি মিনতি করছে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য তাই নিশিতা বলেছে ক্ষমা করতে পারে একটা শর্তে সেটা হচ্ছে বেবি এবোয়শন করবে তাহলে রোহানের সাথে থাকবে। নিশিতার সাথে থাকলে রোহান সব সম্পত্তি, বড়লোক বিলাসিতা উপভোগ করতে পারবে পাবে তাই বেবি এবোয়শন করতে রাজি হলো। নিশিতার এতো তাড়াতাড়ি বেবি নেওয়ার ইচ্ছে ছিলো না এখন যখন সুযোগ পেয়েছে বেবি এবোয়শন করার তাই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ফেললো।

বিয়ের সব কেনাকাটা করা কম্পিলিট। ঘরোয়া ভাবে বিয়ের আয়োজন হলেও কেনাকাটায় কোনো কমতি নেই।
বিয়ের দুদিন আগে স্কুলে জবের জন্য এ্যাপলাই করেছে সেটার ইন্টারভিউ দিতে যেতে হবে তাই তিহান এসেছে ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার জন্য।

ইন্টারভিউ খুব ভালো হয়েছে মনে হয় জবটা হবে। ফুপি বলেছে নাতিনাতনিদের সে সামলাবে, আমি জব করলে কোনো সমস্যা নেই। দিন শেষ আমি আর তিহান ভালো থাকলেই তারা সবাই ভালো থাকবে।

[কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না। একজন বিশ্বাস ঘাতকতা করছে বলে অন্যও করবে এমন কোনো কথা নেই। আমাদের সবার ভালো থাকার অধিকার আছে তাই ভালো থাকার পথ খুঁজে বের করে ভালো থাকতে হবে।


পর্ব ১২

আজ আমার দ্বিতীয় বিয়ে হলো। বাসর ঘরে দুটো বাচ্চা নিয়ে বসে আছি। কোনোদিন এভাবে থাকতে হবে ভাবি নি। নতুন করে আবার বিশ্বাস করতে শুরু করবো, নতুন সংসারে লোকজনকে মানিয়ে নিয়ে কাজ করা। সবাই আমার চেনা মানুষ হলেও আমি তাদেরর বাড়ির বৌ। আমার অনেক দায়িত্ব আছে, সব কিছু সামলে জব করা কঠিন হবে তাও আমাকে পারতে হবে। পরনির্ভরশীল হয়ে জীবনে একবার ঠকেছি তাই এবার পরনির্ভরশীল হয়ে থাকতে চাই না। আমার সন্তানদের বুঝাতে হবে জীবনে সব কঠিন সময় তাদের মা হেরে যায় নি সাফল্য হয়ে দেখিয়েছে।

~ এই যে ম্যাডাম।
~ ওহ্ হ্যাঁ, তুমি এসেছে আমি খেয়াল করি নি।
~ ভাবনার জগতে বাড়ি বানিয়ে রাখলে আমার বাড়িতে কে আছে না আছে তা দেখবে কি ভাবে?
~ তেড়া বেঁকা কথা সব সময় থাকবেই।

~ হুম তা একটু আছে।
আমি তিহানকে সালাম করলাম। তিহান আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~ আমি কখনো তোমার বিশ্বাসের অমর্যাদা করবো না। তোমাকে সুখী রাখার জন্য যা করতে হবে সব করবো কিন্তু কোনোদিন আমাকে ছেড়ে চলে যেও না।

তিহানের স্পর্শ অস্তিত্ব লাগলো কেনো জানি তাকে মন থেকে মেনে নিতে পারলাম না তাই ওকে ছাড়িয়ে বললাম,
~ শুধু আমার সন্তানদের বাবা ভালোবাসা দিলে খুশি হবো।
~ আমার ভালোবাসার অভিযোগ করার সুযোগ করতে পারবে না কথা দিচ্ছি কিন্তু আমার একটা রিকুয়েষ্ট আছে রাখবে?

~ চেষ্টা করবো রাখতে।
~ ফুলি, পুচকে আমার পরিচয় বড় হবে। কোনো খারাপ মানুষ ওদের বাবা ছিলো সে পরিচয়ে ওরা থাকবে না।
তিহানের কথা শুনে কেঁদে দিলাম। সে না চাইলে রোহানের সন্তান রোহানের পরিচয় থাকতো সারাজীবন ওরা খারাপ মানুষের পরিচয় নিয়ে থাকতো। তিহান সত্যি আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া।

~ শুভদিনে কাঁদতে নেই। আমি যদি কিছু ভুল বলে থাকি তাহলে মাফ করো। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে কিছু বলি নি।
~ না তুমি যে ওদের বাবার পরিচয় দিবে তাতে আমি খুব খুশি হয়েছে।
~ তুমি আমার স্ত্রী তাই ওরাও তো আমার সন্তান।

~ হুম।
~ পুচকেটা ঠিক করে শুইয়ে দিবে তো, দেখো কেমন কাঁধ হয়ে ঘুমিয়ে আছে। বলে তিহান ইশানকে ঠিক করে শুইয়ে দিলো। রাফিসা অনেক আগেই ঘুমিয়ে গেছে।
~ ম্যাডাম আবার কোথায় হারিয়ে গেলেন?

~ কোথাও না।
~ এখন ঘুমিয়ে পরো। খাট বড় আছে আমি কি এখানে ঘুমাতে পারি?
~ অবশ্যই পারো।

~ আমি জানি তুমি আমাকে মন থেকে স্বামী হিসেবে মানতে পারো নি তাই তুমি যতোদিন না চাইবে আমি জোড় করে স্বামীর অধিকার খাটাবো না।
~ হুম ঘুমাও।
তিহান আর আমার মাঝখানে রাফিসা, ইশান ঘুমিয়ে আছে। সারাদিনের ক্লান্তিতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলাম।

এদিকে তিহানের চোখে ঘুম নেই। ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেয়েও সে অনেক দূরে। কারো মনে ভালোবাসা তৈরি করতে অনেক সময় লাগে কিন্তু যতো সময় লাগার লাগুক আমি হাল ছেড়ে দিবো না। ইভাকে জীবন সঙ্গী করতে পেরেছি এটাই আমার জন্য অনেক কিছু।
রাফিসা ঘুম থেকে উঠে ইভাকে বললো,
~ আম্মু আমি ওয়াস রুমে যাবো, আমাকে নিয়ে যাও।

আমি বললাম,
~ আম্মুকে ডাকতে হবে না আমি আছি তো চলো তোমাকে নিয়ে যাই।
~ আচ্ছা।
রাফিসাকে ওয়াস রুমে নিয়ে গেলাম এর মধ্যে ইশান ঘুম থেকে জেগে উঠছে, ওকে কোলে নিয়ে হাঁটতে আবার ঘুমিয়ে গেলো। ইশান, রাফিসাকে মনে হয় ওরা আমার সন্তান। ওদের সাথে রক্তের সম্পর্ক আছে। কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম বুঝতে পারি নি।

সকালে ইভা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে ফুপির রুমে গেলো কিন্তু সে রুমে নেই তাই রান্না ঘরে গিয়ে দেখলো তরকারি কাটতে আছে।
~ এখন থেকে তুমি কোনো কাজ করবে না সব দায়িত্ব আমার, রান্না ঘর থেকে যাও।

~ আরে আমি তোকে একটু সাহায্য করে দেই, এখন একা এতো কাজ করা ঠিক না।
~ ফুপি তুমি শুধু আমাকে বলে দেও কোথায় কি কি আছে তাহলে হবে।
~ তুই আমাকে ফুপি ডাকবি না, আম্মা ডাকবি।

~ আসতে আসতে অবভ্যাস করবো।
~ এখনই বল।
~ আম্মা জান।
~ হুম এখন হয়েছে।

ফুপি আর আমি দুজনে মিলে সকালের নাস্তা রেডি করলাম। তিহান ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে ডাইনিং টেবিলে নাস্তা করার জন্য আসে তখন কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলে দেখে পাশের বাসার কয়েকজন আন্টিরা এসেছে,
~ আসসালামু আলাইকুম, সবাই কেমন আছেন?

একজন উত্তর দিলো,
~ ওয়ালাইকুম সালাম, আমরা ভালো আছে।
অন্য জন বললো,
~ আমরা নতুন বৌকে দেখতে এসেছি।
~ হ্যাঁ ভিতরে আসুন। (তিহান)
~ কই গো তিহানের মা, নতুন বৌকে নিয়ে আসো। (আন্টি)
ফুপি আমাকে নিয়ে তাদের সামনে গিয়ে বললো,

~ এই যে আমার ছেলের বৌ।
~ বৌ তো সুন্দরী আছে তাও স্বামীকে ধরে রাখতে পারলো না (আন্টি)
~ তোমার এমন সুন্দর ছেলের সাথে শেষ পর্যন্ত ডিভোর্সি মেয়েকে বৌ করে আনলে, আমাকে বললে এর থেকে বেশি সুন্দরী মেয়ে খুঁজে দিতাম। (অন্য একজন আন্টি)
~ হ্যাঁ তাই তো আবার শুনেছি বাচ্চাও আছে। (আন্টি)
~ দেখো তোমার আমার প্রতিবেশি তাই বলে আমার ছেলের বৌ কে হবে এইসব নিয়ে তোমাদের সাথে আলোচনা করতে চাই না। (ফুপি)

তাদের কথা শুনে চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পরছে। উনারা তো সত্যি বলেছে,আমি সুন্দরী হয়েও আমার স্বামীকে ধরে রাখতে পারি নি। তিহান তো আমাকে ডিজার্ভ করে না আমার থেকে ভালো মেয়ে ওর যোগ্য। তিহান আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,
~ আপনারা বৌ দেখতে এসেছেন নাকি সার্টিফিকেট দিতে এসেছেন?

ও কি আপনাদের কাছে কোনো পরীক্ষা দিয়েছে নাকি যে ওর সার্টিফিকেট আপনারা দিবেন? শুনেন আন্টিরা, আপনি একজন মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের কষ্ট বুঝেন না তাহলে আপনি কেমন মা? আপনার মেয়ের এরকম অবস্থা হলে কি তাকেও আপনি এসব বলবেন? আর ও কি আপনাদের বাসায় থাকবে নাকি আপনাদের টাকায় খাবে যে এতো মাথা ব্যাথা ওকে নিয়ে?

আপনাদের বাসায় কি হয় না হয় তা নিয়ে আমাদের বাসার কেউ কি কিছু বলতে যায় তাহলে আপনারা কেনো বলতে আসেন? বৌ দেখতে আসছেন ভালো কথা, মিষ্টি মুখ করে চলে যাবেন আপনাদের জ্ঞানের কোনো দরকার নেই। আর নিজেদের সংসার সামলান বলা তো যায় না কার জীবনে কখন কি হয়?সব থেকে বড় কথা হচ্ছে মানুষটা যেমনই হোক না কেনো তার সাথে সুখী হওয়া।

~ আমাদের এভাবে অপমান না করলেও পারতে, চলো সবাই। (আন্ট)
~ দাঁড়ান আমার বৌকে এতো সুন্দর সার্টিফিকেট দিয়েছেন তার বিনিময়ে আপনাদের কিছু দিবো না তা কি হয়? মা মিষ্টি নিয়ে এসো। আর হ্যাঁ অপমান কাকে বলে সেটা নিজের মনকে জিজ্ঞেস করে নিবেন। (তিহান)

ফুপি মিষ্টি নিয়ে এসে বললো,
~ নেও সবাই মিষ্টি খাও।
~ এতে অপমানের পর আবার আসছো মিষ্টি নিয়ে। (আন্টি)

~ চলো সবাই।
উনারা সবাই চলে গেলো তারপর তিহান আমাকে বললো,
~ আর কতো অপমান সহ্য করবে, একটু প্রতিবাদি হও।
~ মা রে তোকে কোনো কষ্ট পেতে দেখতে চাই না এবার থেকে তোকে কেউ কিছু বললে তার প্রতিবাদ করবি। আমরা তোর সাথে আছি। (ফুপি)
ফুপিকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
~ হুম করবো।

~ একটুও কাঁদবি না, চল নাস্তা খেয়ে নেই। (ফুপি)
আমি, ফুপি, তিহান একসাথে বসে নাস্তা খেয়ে নিলাম। একটু পরে আমার বাড়ির লোকজন আসলো।

[আশেপাশের লোকজনের কথা শুনে কষ্ট পাওয়ার কোনো মানে নেই তারা আমাদের সার্টিফিকেট দেওয়ার কেউ না, আমাদের পরিবারের লোকজন আছে তারা বলতে পারে আমাদের খারাপ দিক এবং ভালো দিক তাই প্রতিবাদি হয়ে নিজেকে অপমানিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।

পর্ব ১৩

“ইভা আমার ব্লু কালার পাঞ্জাবিটা খাটের উপর রেখেছিলাম এখন পাচ্ছি না কেনো?”
“ধুয়ে দিয়েছি, ছাদে আছে।”
“কেনো? ওটা তো ভালো ছিলো, ধুয়ে দেওয়ার দরকার ছিলো না?”

“দরকার ছিলো, কেমন জানি গন্ধ আসে তাই।”
“এর মধ্যে এতো খেয়াল রাখো।”
“হুম একটু তো রাখতেই হবে।”
“হুম, শুনো?”

তিহান আমার হাতটা ধরে বললো,
“আমার কাকা কাকিরা আজকে আসবে ওরা কোনো অপমানজনক কথা বললে কষ্ট পেয়েও না। প্রতিবাদ করবে বুঝলে।”
“উনার দু দিনের জন্য আসবে আবার তো চলে যাবে তাতে কি দরকার প্রতিবাদ করার আর সবাই তো সত্যি কথাই বলে”
“সবাই কি সত্যি কথা বলে বুঝাও আমাকে? তোমার সাথে রোহানের সংসার টেকে নি এটা তোমার দোষ?”
“আহ্ রাগ করো না, বাসায় লোকজন আছে।”

“রাগ করবো না তো কি আদর করবো তাহলে কাছে আসো।”
“কি সব যে বলো, মাথা পুরা খারাপ হয়ে গেছে।”

“হ্যাঁ তোমার জন্য আগেই পাগল ছিলাম এখন তো কোনো কথাই নেই পুরা পাগল।”
“আমার কপালে এতো সুখ সইবে না।”
“আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে, এখন আমি কোন পাঞ্জাবি পড়বো তা বেড় করে দেও।”
“হুম দিচ্ছি।”

“তুমি বেগুনি রঙের শাড়িটা পরবে।”
“আচ্ছা পড়বো তাহলে তুমিও বেগুনি রঙের পাঞ্জাবিটা পড়ো।”
“হুম।”
তিহানকে পাঞ্জাবি বেড় করে দিয়ে আমি ফুপির কাছে গেলাম। আজকে বৌভাতের অনুষ্ঠান বাসায় হবে। তিহানের কয়েকজন ফ্রেন্ড আসবে আর ওর কাকা কাকি, কাজিনরা আসবে।

ফুপি বললো,
~ তিহানের বাবা মারা যাওয়ার পর ওর চাচা আমাদের সাথে তেমন সম্পর্ক রাখে নি। বহু বছর পরে আজকে আমাদের বাসায় আসছে। শত হলেও ওরা আপনজন তাই বিয়ের দাওয়াত দিয়েছিলাম তখন বলে দিয়েছে আসবে না তারপর কালকে রাতে ফোন করে বললো আজকে আসবে।
~ হ্যাঁ আপনজনেরা আসবে এটাই তো স্বাভাবিক
~ আমার চিন্তা হচ্ছে তোকে নিয়ে, উনারা কখন কি বলবে।

~ ওসব নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না, আমি ঠিক সামলে নিবো৷
~ জানি তুই কষ্ট সহ্য করতে পারিস কিন্তু আর কতো কষ্ট সহ্য করবি?
~ তোমার আছো তো তাতে আমার সব কষ্ট ভুলে যাই।
~ হুম আল্লাহ তোদের সুখী করুক এটাই চাই।

ছোট ভাবী এসে বললো,
~ শ্বাশুড়ি, বৌ শুধু গল্প করলে কি হবে? আপনাদের রেডি হতে হবে সে খেয়াল কি আছে?
~ আমার মিষ্টি বউরা আমাকে রেডি করিয়ে দিবে তাতে আমার আবার কিসের চিন্তা?

~ হ্যাঁ তাহলে চলে শ্বাশুড়ি বউ মিলে রেডি হয়ে আসি। (আমি).
ভাবীরা আমাকে সাজিয়ে দিলো। তিহান রেডি হয়ে বাচ্চাদের ও রেডি করিয়ে দিছে। তিহানের কয়েকজন ফ্রেন্ডরা এসেছে। তিহানের কাকা, কাকি, কাজিনরা এসেছে। ওর কাকা বলে ফেললো,
~ একটা ডিভোর্সি মেয়েকে বউ করে এনেছো আবার আমাদের ঘটা করে দাওয়াত দেওয়ার কি দরকার ছিলো? এতো কষ্ট করে এই মেয়ের মুখ দেখতে এসেছি?

~ আপনি তিহানের চাচা তাই এমন কিছু বলবেন যেনো আমার বউয়ের অপমান হয়। (ফুপি)
~ তোমার ছেলের বউ এমন কোনো গুণ নেই যে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবো। (কাকি)
~ গুন না থাকলে না থাকবে কিন্তু কোনো অপমান করবেন না। (ফুপি)
আমি চুপ করে তাদের কথাগুলো শুনছি আর ভাবছি এতো অপমানিত হওয়ার থেকে তিহানকে বিয়ে না করা ভালো ছিলো। আমার জন্য ফুপির সারাদিন অপমানিত হতে হতো না।

দুপুরে সবার খাওয়া দাওয়া শেষ তখন তিহানের কাকা বললো,
~ বাচ্চা দুটো ইভার বাপের বাড়ি রেখে আসো, এতে সংসারের ঝামেলা কম হবে।
~ আমার বাবা মারা যাওয়ার পর কি আমাকে রেখে আমার মা চলে গিয়েছিলো নাকি? আপনারা আমাদের দুঃখের সময় কোথায় ছিলেন যে এখন এতো কথা বলছেন? (তিহান)
~ ছেলেটাকে বেয়াদব বানিয়েছো তাই তো ডিভোর্সিকে বিয়ে করেছে। (কাকা)
~ আপনার মেয়েও তো পালিয়ে গিয়েছিলো। তার ভালোবাসার মানুষের সাথে। তারপরও তো সংসার টেকে নি। আবার তো আপনারা ওর বিয়ে দিয়েছেন। আপনারা ভেবেছেন এসবের কিছুই আমরা জানি না। তাই না? (ফুপি)

~ শুনেন কাকা, আপনারা আমাদের দুঃখের সময় ছিলেন না। তাই এখন সুখের সময় আপনাদের কোনো দরকার নেই। তাই এরকম অপমান আমার বউ এবং আমার সন্তানদের করবেন না। (তিহান)
~ আমার মনে ছিলো না বাবা যে আমার মেয়ের এমন কোনো কাজ করছিলো তাই বলে ফেলেছি। (কাকা)
~ জানি, আপনারা বুঝতে পারেন নি যে আমরা আপনার মেয়ের কথা জানতে পারি তাই সুযোগ বুঝে অপমান করতে চেয়েছিলেন। (তিহান)
~ বয়স হয়েছে তো তাই সব কথা মনে থাকে না। (কাকি)

উনাদের সাথে আর কোনো তর্কে জড়ালো না। কারন যারা অন্যের দোষ নিয়ে পরে থাকে তাদের দোষ ধরিয়ে দিলে তারা তাদের দোষ এড়িয়ে যায়।
রাতে ঘুমানের সময় তিহান আমাকে বললো,
~ আজকে যে তোমাদের বাসায় যাই নি তাতে কি রাগ করেছো?.

~ নাহ্ রাগ করবো কেনো? কালকে তো আমাদের বাসায় যাওয়া হবে।
~ আমি ভেবেছি রাগ করছো,কাকা কাকি আজকে আমাদের বাসায় থেকেছে তাই যাওয়া হলো না।
~ কোনো সমস্যা নেই। তুমি ঘুমাও।

~ হুম তুমি ও।
আজকে রাফিসা ফুপির কাছে ঘুমিয়েছে। তাই আমি মাঝখানে শুয়েছি। তিহান ঘুমিয়ে গেছে তারপর ওর ফোনে একটা কল আসে। আমি ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি নাম্বার সেইভ করা না। তাই তিহানকে ডাক দিয়ে বললাম,
~ তোমার ফোনে কে জানো কল দিয়েছে রিসিভ করো।

তিহান ঘুম চোখে ফোনটা আমার হাত থেকে নিতে গিয়ে আমার হাত ধরে টান দিলো, ওর বুকের উপর আমি পড়লাম। ফোন বেজে কেটে গিয়েছে।
~ আমাকে ছাড়ো।

~ না তুমি আমার বুকের উপর ঘুমাবে,
~ উফফ ছাড়ো তো।
~ না চুপ করে থেকে ঘুমাও।

তিহানের আমার উপর অধিকার আছে তাই আর কিছু বললাম না ওর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে তিহানের আগে ঘুম ভেঙ্গেছে। ও দেখলো ইভার ওর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে তাই ঘুম থেকে উঠলো না। ইভাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকলো। কিছুক্ষণ পর ইভার ঘুম ভেঙ্গে দেখে তিহানের বুকে মাতা রেখে তাই তাড়াতাড়ি করে উঠে গেলো। কিছুটা লজ্জাও পেয়েছে।

সকালে নাস্তা খেয়ে তিহানের কাকা কাকি চলে গিয়েছে। বিকেলে ইভাদের বাসায় সবাই গেলো।
এক সপ্তাহ খুব ভালো করে কেটেছে। একটা কল আসে তিহানের ফোনে। কল রিসিভ করায় তিহানের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়।

পর্ব ১৪

“কে কল করেছে? তোমার চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেনো? কি হয়েছে?”
“কি ভাবে যে তোমাকে বলবো বুঝতে পারছি না?”
“কোনো খারাপ খবর আছে?”

“কথাটা শুনে তুমি সহ্য করবে পারবে না, তোমার মনে হবে।”
“যতো খারাপ খবর হোক, তুমি বলো?”

তিহান আমার দু’গালে হাত দিয়ে বললো,
“তোমার জব হয়ে গেছে, সামনের মাসের এক তারিখ জয়েন করতে পারবে হাহাহাহ্”
“সত্যি জব হয়ে গেছে ইয়য়য়ে।”বেশি খুশিতে তিহানকে জড়িয়ে ধরলাম।

“খুশির খবরে যদি এভাবে জড়িয়ে ধরো তহলে রোজ খুশির খবর দিবো।”
তিহানের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে ওকে ছেড়ে দিয়ে ফুপিকে খবরটা বললাম, শুনে তো খুশি হলো আর বললো রাতের জন্য বিরিয়ানি রান্না করবে। বাবা~ মাকে কল করে জানিয়েছি তারাও অনেক খুশি। সবাই আমাকে ভালো রাখার জন্য আপ্রান চেষ্টা করে। অনেক ভাগ্য করে শ্বশুর বাড়ি, বাবার বাড়ি পেয়েছি। সমাজের যেসব ডিভোর্সি মেয়ে আছে তাদের ভাগ্য আল্লাহ যদি আমার মতো করে দিতো তাহলে তাদের কোনো কষ্ট থাকতো না।

বিকেল বেলা তিহান,ইশান ঘুমাচ্ছে আর আমি, রাফিসা, ফুপি ছাদে গল্প করছি এবং অনেক গাছ আছে সেগুলোর পরিচর্যা করছি। রাফিসা হঠাৎ বলে উঠলো,
~ আম্মু দেখো এই মেয়েটা কতো কিছু কিনে এনেছে, আজ আমার বাবা থাকলে আমাকেও অনেক কিছু কিনে দিতো।
আমি ওর এমন কথার উওর কি দিবো বুঝতে পারছি না বাবা মায়ের অভাব তো কেউ পূরণ করতে পারে না। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে ফুপি বললো,
~ আমার মিষ্টি দাদুর কি লাগবে বলো, আমি কিনে এনে দিবো?

~ আমি এই মেয়েটার মতো নিজে দোকানে গিয়ে আমার যা পছন্দ তাই কিনবো।
~ আচ্ছা আমি তোমাকে দোকানে নিয়ে যাবো।
~ সত্যি নানু তুমি নিয়ে যাবে?

~ হুম তবে আমাকে দাদু বলবে নো নানু ওক্কে।
~ ওক্কে।
এর মধ্যে তিহান ইশানকে কোলে নিয়ে এসে বললো,
~ এই যে আপনার আরেক নাতি যে ঘুম থেকে উঠে গেছে তার কি খেয়াল আছে?

~ হ্যাঁ আমার দুই নাতি~ নাতনীদের আদর করতে হবে তো দে আমার কাছে।
~ এই নেও।
তিহান আমার কাছে এসে বললো,
~ কি তেমার মন খারাপ?

~ না।
~ না তুমি মিথ্যে বলছো, মুখ দেখলে বুঝা যায় তোমার মন খারাপ?
~ চা খাবে, এনে দিবো?
~ কথা না ঘুরিয়ে সত্যি বলো?

~ রাফিসা ওর বাবার কথা বলেছে, কোনোদিনও ওর বাবার অভাব পূরণ হওয়ার না।
~ তুমি চিন্তা করো না একদিন ঠিক আমি ওর বাবার জায়গা নিতে পারবো।
~ হলে ভালো।

~ ফুসকা খাবে?
~ না তোমার এখন বাইরে যেতে হবে না৷
~ আরে ওই দেখো রাস্তার ওখানে ফুসকার দোকান এসেছে।
~ থাক অন্য একদিন খাবো।

~ কেনো?তুমি কি আমার কাছে সুখ খুঁজে পাও না?আমি কি তোমাকে ভালো রাখার যোগ্য না?
~ এসব বলো না, তোমার সবাই ছিলে বলে আমি নতুন সুখের ঠিকানা পেয়েছি।
~ তাহলে আমাকে ভালোবাসো প্লিজ?

~ কি সব বলছো, এখানে মা আছে বাচ্চারা আছে তোমার কোনো লজ্জা সরম নেই?
~ নাহ্ বউয়ের কাছে আবার কিসের লজ্জা?
~ ধ্যাত, যাও ফুসকা নিয়ে আসো।

~ হুহ।
কিছুদিন পরে আমি জব জয়েন করি। সকালে উঠে নাস্তা রেডি করে খেয়ে স্কুলে যাই বাকি সব কাজ ফুপি করে। স্কুল থেকে এসে যতটুকু কাজ থাকে তা আমি করি। ইশানও ফুপির কাছে ভালো থাকে। ফুপি মায়ের অংশে কম না সবদিকে সে আগলে রেখেছে।
রাফিসাও স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। ওর বাবার নামের জায়গায় তিহানের নাম দেওয়া আছে।

নিশিতা রাগের বসে এবোয়শন করিয়ে খুব পস্তাচ্ছে। এখন মনে করে রোহান যদি কখনো বাচ্চার হাহাকারে নিশিতাকে ছেড়ে দিলে কি করবে? এত সম্পত্তি দিয়ে কি করবে যদি বাচ্চা না থাকে? নিশিতা মন মরা হয়ে থাকে বেশির সময়। পাঁচ বছর কেটে যায় তাও নিশিতার কোনো বেবি হয় না। নিশিতা বেবির জন্য পাগল হয়ে যায় তাই ঠিক করে যেভাবে হোক ইভার বেবি আনবে। উকিলের সাথে কথা বলে, যতো টাকা লাগুক তাই দিবে তাও আইনের মাধ্যমে বাচ্চা আনবে কারন রোহান বাচ্চাদের বাবা ওর অধিকার আছে।

পাঁচ বছরে ইভা, তিহানের সম্পর্ক আগের মতো নেই। ইভাও তিহানকে ভালোবাসে।
~ ও বউ, বউ।
~ কি হয়েছে কি?এতো চিৎকার করে ডাকছো কেনো?
~ একটা গুড নিউজ আছে।

~ কি?
~ আমাদের পাসপোর্ট, ভিসা রেডি। কবে টিকিট কাটবো সেটা বলো?
~ সবাই ছেড়ে আমার ইচ্ছে করছে না।
~ কয়েক বছর পর পর দেশে আসবো তো।
~ তাও ভালো লাগবে না।

~ আমরা আরও দুটো পুচকে সোনা লাগবে তাহলে তোমারও ভালো লাগবে।
~ ইসসসস্, এখান বাচ্চারা বড় হয়ে গেছে।
~ ওতো টাও বড় হয় নি।

~ উফফফ্ এখন হঠাৎ করে,
~ চুপ। বলে তিহান আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। দুজনে পবিত্র ভালোবাসায় আবদ্ধ হলাম।

সকালে গোসল করে খেয়ে বাচ্চাদের রেডি করিয়ে দিলাম স্কুলের যাওয়ার জন্য। রাফিসা এখন পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ে আর ইশান এবার প্রথম শ্রেনীতে পড়ে।
বাইরে শুনছি তিহানের সাথে কারো কথা কাটাকাটি হচ্ছে তাই আমি এগিয়ে দেখলাম সেই ছয় বছর আগের মানুষটি যে আমাকে ঠকিয়েছে।

পর্ব ১৫

ছয় বছর পরে রোহানের সাথে দেখা, ওর সাথে নিশিতাও এসেছে। আমাকে দেখা মাত্র রোহান বললো,
~ আমার মেয়ে কোথায়?
~ কার মেয়ে? কোন অধিকারে মেয়ের কথা জিজ্ঞেসা করো?

~ ওর সমস্ত অধিকার আছে ওর মেয়ের প্রতি তাই বলো ওর মেয়ে কোথায়? (নিশিতা)
~ তোমার সামনে তো আমাকে আর আমার মেয়েকে কাজের লোক বলেছিলো মনে আছে তাহলে আজ কেনো একটা কাজের লোকের মেয়েকে দরকার। (ইভা)
~ ওসব পুরোনো কথা না তুলে আমার মেয়েকে আমাকে দেও (রোহান)
~ যে বাবা সন্তানদের কোনো দায় দায়িত্ব নেয় নি। সে আজ সন্তান দাবি করবে। আর আমি দিবো সেই পুরোনো ইভাকেও ভুলে যা। ও (ইভা)
~ আমার সন্তানকে আমার কাছে রাখার সম্পূর্ণ অধিকার আছে এই দেখো আমি আইনের সাহায্য নিয়েছি। (রোহান)
রোহানের হাত থেকে তিহান পেপারটা নিয়ে ভালো করে পড়তে লাগলো।

~ প্রেগনেন্সির সময় আপনাদের আইন কোথায় ছিলো?তখন তো আমাকে আইন দেখাতে আসেন নি? যাকে এতো সম্পত্তি দেখে বিয়ে করেছো যার এতো এতো টাকা আছে সে একটা বাচ্চা দিতে পারে না?(ইভা)
~ যা খুশি রোহানকে বলো আমাকে কেনো অপমান করো? আমার তো কোনো দোষ নেই। (নিশিতা)
~ হাহাহাহ্ তোমার দোষ নেই তাই না, একটা পুরুষ মানুষ একা একটা ফ্ল্যাটে থাকে আর সেখানে একজন কাজের লোক আছে যে কি না প্রেগনেন্ট এবং ছোট বাচ্চা মেয়ে আছে, মালিককে বাবা বলে ডেকেছে এটা কি অস্বাভাবিক কিছু না? তারপর কি বলবে তুমি একটুও কিছু বুঝতে পারো নি একটা সুখের সংসার ভেঙ্গে দিচ্ছো। (ইভা)

~ ইভা এই পেপার টা দেখো। (তিহান)
আমি তিহানের হাত থেকে পেপারটা নিয়ে ছিড়ে টুকরো টুকরো করলাম।
~ পেপারটা ছিড়ে ফেললে কেনো? (রোহান)
~ ওটার কোনো দরকার নেই এখন আমার বাসা থেকে আপনারা বিদেয় হন। (তিহান)
~ আমাদের অপমান করা হচ্ছে কিন্তু। (নিশিতা)
~ এখনো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করি নি এটা তোমাদের কপাল। (ইভা)
~ তোমার এতো বড় সাহস আমাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করার কথা বলো। (রোহান)

~ গলা নামিয়ে কথা বলেন এটা আমার বাসা আর আমার স্ত্রীর সাথে কেউ খারাপ ব্যবহার করলে তাকে ছেড়ে দিবো না। (তিহান)
স্কুলে যেতে লেট হয়ে যাচ্ছে তাই রাফিসা, ইশান ড্রয়িং রুমে আসে আমাকে ডাকতে,
~ আম্মু স্কুলে যেতে লেট হচ্ছে তো, চলো যাই।

~ তুমি ভাইকে নিয়ে উপরে যাও, আমি একটু পরে আসছি (ইভা)
~ রাফিসা এই দেখো আমি তোমার আব্বু, তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যেতে এসেছি (রোহান)
~ তুমি আমার আব্বু না আমার আব্বু তো এই (রাফিসা তিহানের হাত ধরে বললো)
~ না তোমার আব্বু এই লোকটা না (নিশিতা)

~ তোমার মতো পঁচা লোক কারো আব্বু হয় না (রাফিসা)
~ শুনেছো তো, এখানে তোমার কোনো মেয়ে নেই (ইভা)
~ যে ভাবে হোক নেক্সট টাইম, আমার মেয়েকে আমি নিয়ে যাবো (রোহান)
~ সে গুড়ে বালি (তিহান)
রোহান, নিশিতা চলে গেলো। আমার অস্থির লাগছে, কেমন জানো মনে হচ্ছে আমার সন্তানকে এই বুঝি হারিয়ে ফেলি। রাফিসা, ইশানকে আজকে স্কুলে যেতে দিলাম না এবং নিজেও গেলাম না। আমার খুব বেশি খারাপ লাগছে তাই তিহান লেবুর সরবত বানিয়ে এনে বললো,
~ সরবতটা খাও তোমার ভালো লাগবে।

~ হুম কিন্তু কতোদিন আমি ওদের সাথে লড়াই করবো? ওরা আমাদের শান্তিতে থাকতে দিবে না।
~ আর মাত্র দশ দিন ওয়েট করো তারপর আমাদের ওরা খুঁজে পাবে না।
~ কেনো দশ দিন পরে কোথায় যাবো?

~ বিদেশে তো এক মাস পরে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু আজ যা হলো তারপরও দেশে থাকা ঠিক হবে না।
~ ওদের জন্য আমার পালিয়ে যাবো তা হয় না।
~ আমরা পালিয়ে যাচ্ছি না তো আমরা বিদেশে যাবো সেটা আগে থেকে ঠিক করা ছিলো, এখন শুধু সময়টা এগিয়ে এনেছি।
~ খুব খারাপ লাগছে, আমার জন্য কেউ শান্তিতে থাকতে পারে না।
~ এমন কথা একদম বলবে না।

ফুপি আমার বাবার বাড়ি গিয়েছে তাকে কল করে আসতে বলেছি। ফুুপি দুপুর বেলা আসে, মা আমাদের জন্য রান্না করে পাঠিয়েছে। সবাই এক সাথে খেতে বসেছি। আমি খেতে পারছি না কেমন না ভালো লাগে না গা গোলাচ্ছে, একটু খেতে আমি বমি করলাম। ফুপি তিহানকে বললো,
~ বিকেল বেলা ইভাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাস।

~ বাসায় তুমি একা বাচ্চাদের নিয়ে থাকবে আমার ভয় করছে, থাক এতোটুকু এতে ডক্টরের কাছে যাওয়া লাগবে না।
~ আমি কি বাচ্চা নাকি যে ওদের সামলাতে পারবো না
~ আম্মা ডক্টরের কাছে যেতে হবে না আমি এখন ঠিক আছি
~ বেশি কথা বলবি না, আমি যা বলেছি তাই হবে।

বিকেলে ডক্টরের কাছে গেলাম। আজকে এতোটা খারাপ লাগার পর এখন মনে হচ্ছে সব আবার সুখ খুঁজে পেলাম। আমি তৃতীয় বারের মতো মা হবে। তিহান এতো বেশি খুশি হয়েছে যে রাস্তায় যার সাথে দেখা হয়েছে তাকেই মিষ্টি দিয়েছে।
আর দশ দিন দেশে থাকবো তাই ঠিক করলাম এই ক’টা দিন সবাই এক সাথে থাকবো তাই পরের দিন সকালে বাবার বাড়ি গেলাম।
সবার সাথে সময়গুলো খুব ভালো যাচ্ছে কিন্তু ভয় থেকে যাচ্ছে কখন কি হয়।

দু দিন পরে রোহান আবার এসেছে,
~ কি ভেবেছো আমার থেকে পালিয়ে বাবার বাড়ি আসলেই আমার মেয়েকে আমি নিতে পারবো না?
~ রাফিসা যদি তোমার সাথে যেতে চায় তাহলে ওকে নিয়ে যাও আমি বাধাঁ দিবো না (ইভা)
~ জানি ও আজকে যাবে না তাই পনেরো দিন সময় দিলাম তার পরে আমি আমার মেয়েকে নিয়ে যাবো। (রোহান)
রোহান চলে যাওয়ার পর আমরা খুব হাসি পাচ্ছে এটা ভেবে, যে আমাকে একদিন ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিয়েছিলো, সন্তানকে অশিকার করেছে আজকে সে সন্তানের জন্য হাহাকার করে। লোভে পরে আসল সুখটা হারিয়ে ফেলেছে। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে, কিছু সময় কষ্ট দিয়ে আবার সুখের সন্ধান দেয়।
~ ইভা তুমি এখানে বসে আছে আর সারা বাড়ি তোমাকে খুঁজি।
~ কেনো?

~ আরে ব্যাগ গোছাচ্ছ তোমার দেখতে হবে তো সব কিছু ঠিক ঠাক নিয়েছি কি না।
~ ওহ্ হ্যাঁ চলো।
কয়দিন পরে দেশ ছেড়ে চলে গেলাম। ফুপিকেও আমাকে সাথে নিয়ে এসেছি। বাবা ~ মা, ভাইয়া ~ ভাবী সবার সাথে প্রতিদিন কথা হয়। পনেরো দিন পরে রোহান আমাদের বাড়িতে গিয়েছিলো কিন্তু আমাদের কোথাও তো খুঁজে পাবে না।

পর্ব ১৬

বিশ বছর পরে রোহানে বেশি কিছু ধরে হার্টের সমস্যায় হাসপাতালে শুয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। হার্টের আর্টারি এমন ভাবে ব্লকেজ হয়ে গেছে যেটা ঠিক হওয়া সম্ভাবনা খুব কম।

বিশেষজ্ঞ হার্টের সার্জেনরা মিলে বোর্ড মিটিং বসিয়েছে। বোর্ড মিটিংয়ে সবার মতামত, রোহানের বাঁচার সম্ভাবনা খুবই অল্প। এমন অবস্থায় তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব এবং বিপদজনক।
একজন ডক্টর বললো,
~ আমেরিকায় হার্ট সার্জেন ডক্টর আছে সুলতানা রহমান, শুনেছি উনি অনেক জটিল অপারেশন করে।

আরেক জন ডক্টর বললো,
~ তাহলে দেরি না করে তার সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা করো।
সুলতানা রহমান নিজের বাড়িতে বসে ল্যাপটপে কাজ করছেন তখন বাংলাদেশের একজন ডক্টর তাকে ইমেইল করেছে। তিনি দেখলেন হার্টের রোগীর অপারেশন সার্জারীর মতামত চাইছেন।

তিনি সব তথ্য দেখে ইমেইলের রিপ্লাই দিলেন,
“রোগীর একটি ছবি ও পরিবারের তথ্য দেন।”
ডক্টর কিছুক্ষন পরে রোহানের ছবি ও পরিবারের তথ্য দিলেন তারপর সুলতানা রহমান বললো,
“আমি নিজেই এই রোগীর অপারেশন করবো, পরশুদিন আমি বাংলাদেশ আসছি।”

ডক্টর নিশিতাকে বললেন,
~ আপনার স্বামীর অপারেশন করতে আমেরিকা থেকে একজন ডক্টর আসছে তাহলে বুঝতে পারছেন অনেক টাকার দরকার।
~ যতো টাকা লাগবে তাই দিবো আপনারা শুধু আমার স্বামীকে সুস্থ করে তুলুন।

~ পাঁচ লাখ টাকা ক্যাশে জমা করেন
~ আচ্ছা
নিশিতা বাসায় গিয়ে চেক বই বের করে তখন নাহিয়ান বললো,
~ আমাকে পঁচিশ লাখ টাকার একটা চেক লিখে দেও
~ এতো টাকা দিয়ে তুই কি করবি?

~ একটা ফ্ল্যাট বুকিং দিবো
~ তোর বাবার শরীরের অবস্থা ভালো না আর তুই এখন ফ্ল্যাট বুকিং দিবি? এখন অনেক টাকার দরকার
~ হ্যাঁ দিবো তোমাদের এই বাড়িতে আমি থাকবো না
~ তোকে আমি কোনো টাকা দিবো না
~ আমাকে টাকা না দিলে বাবার যতোটুকু চিকিৎসা হতো ওতোটুকু চিকিৎসাও হবে না।

~ ছিঃ ছিঃ সন্তান হয়ে বাবার ক্ষতি করতে একটুও বাজে না।
~ না, আমার টাকা চাই
~ তোর বাবা সুস্থ হওয়া না পর্যন্ত কোনো টাকা পাবি না
~ বুড়োটা অনেক বয়স হয়েছে এখন আর বাঁচতে হবে না।

নিশিতা নাহিয়ানের গালে একটা থাপ্পড় দিলো আর বললো,
~ এই মানুষটার জন্যই এতো টাকার দাপট দেখাতে পারিস নয়তো পঁচিশ পয়সাও চোখে দেখতি না।
নাহিয়ানের হাতে কাছে একটা গ্লাস ছিলো সেটা ছুড়ে মেরে চলে গেলো।
রোহান~ নিশিতার ছেলে নাহিয়ান। বয়স মাত্র বিশ বছর কিন্তু সব সময় অহংকার নিয়ে চলে ঠিক বাবা মায়ের মতো তবে এখন আর রোহান নিশিতার আগের সেই অহংকার নেই।

নিশিতা হসপিটালে গিয়ে পাঁচ লাখ টাকা জমা দিলো।
ইভা তিহান আমেরিকায় থাকে। বছরে একবার দেশে আসে। রাফিসা, ইশান বড় হয়ে গেছে। রাফিসার ডক্টর আর ইশান ইন্জিনিয়ারিং পড়ছে। ওদের একটা ভাইও আছে নাম ইয়ান।

আজ ইভা ~ তিহানের বিবাহ বার্ষিকী। এবারের বিবাহ বার্ষিকী অনুষ্ঠান নিজের দেশে, নিজের বাড়িতে করতে চেয়েছিলো কিন্তু এক সপ্তাহ পরে রাফিসার এনগেজমেন্ট তাই দেশে যাওয়া হলো না। ইভা ~ তিহানের বিবাহ বার্ষিকী ঘরোয়া ভাবে অনুষ্ঠান হবে তাতে রাফিসার হবু শ্বশুর বাড়ির লোকজন আর কিছু ফ্রেন্ডরা রয়েছে। বাসায় সবাই এসেছে তখন রাফিসা ওর মাকে আলাদা ডেকে বলে,
~ আম্মু আমাদের এনগেজমেন্ট আজকেই হবে, তুমি ব্যবস্থা করো।
~ কেনো?

~ আমি বলছি তাই প্লিজ আম্মু কিছু করো।
~ আরে এটা বললে হয় না। ওনারা কি মনে করবে।
~ কিছু মনে করবে না তুমি বলো।
তিহান এসে বললো,

~ মা মেয়ে সবাইকে রেখে এখানে এসে কি মিটিং করছে।
~ আরে দেখো তোমার মেয়ে বলছে আজকেই এনগেজমেন্ট করার কথা।
~ ওর কোনো চাওয়া পাওয়া আমি অপূর্ণ রাখি নি আজও ওর ইচ্ছে পূরণ করবো।
~ আমার সোনা আব্বু, এই জন্যে আমি তোমাকে বেশি ভালোবাসি। (রাফিসা)
~ বাহ্ আমার তো কারো খেয়াল নেই। (ইভা)

~ বুড়ো বয়সেও হিংসে গেলো না সবসময় বাবা মেয়ের মধ্যে থাকবে। (তিহান)
~ না না আমি তোমাদের দুজনেই খুব ভালোবাসি তোমরাই তো আমার সব। (রাফিসা)
~ এখন চলো এনগেজমেন্ট শুরু করি। (তিহান)

তিহান রাফিসার হবু শ্বশুর শ্বাশুড়ির সাথে কথা বলে তারাও রাজি হয়ে যায় এবং ঠিক করে এক মাস পরে বিয়ে হবে বাংলাদেশ এসে। এনগেজমেন্ট শেষ রাফিসার হবু বর সাদিক রাফিসাকে বললো,
~ তুমি হঠাৎ আজকেই এনগেজমেন্ট করার কথা বললে কেনো?
~ আমি দেশে যাবো।
~ কেনো?কিসের জন্য?

~ খুব ইচ্ছে দেশে আমার সব আপন লোকজন আমার বিয়েতে থাকবে।
~ তোমার মাথায় কখন যে কি পোকা ঢুকে বুঝি না।
~ পোকা না ভালো কিছু।
~ হুহ, এখন আসছি কালকে দেখা হবে।
~ হুম সাবধানে যেও।

রাতে সব গেস্টরা যাওয়ার পর ইভার রুমে রাফিসা গিয়ে বললো,
~ আম্মু তোমার একটা শাড়ি দিবে।
~ তোর যে শাড়িটি পছন্দ তুই সেটা নিয়ে পড়।
~ আচ্ছা আমি দেখছি তোমার কোন শাড়ি পড়া যায়, আলমারির চাবি দেও।
~ হুম, এই নে।

রাফিসা সব শাড়ি ভালো করে দেখে একটা শাড়ি বেড় করে বললো,
~ আমি এই শাড়িটা একদিন পড়বো।
শাড়িটি দেখে ইভার বুক কাঁপলো, সেই প্রথম ভালোবাসা পুরোনো স্মৃতি আজ ওর মেয়ে পড়তে চেয়েছে।
~ না তুই এই শাড়িটা পড়তে পারবি না।
~ কেনো?

~ যদি নষ্ট করে ফেলিস তাই।
~ আম্মু তুমি আজও ওইরকম খারাপ লোকের স্মৃতি আগলে রাখবে? তোমাকে তো আব্বু ভালোবাসায় কোনো কমতি রাখে নি তাহলে কেনো পুরোনো স্মৃতি আগলে রেখে কষ্ট পাও
~ শত হলেও উনি তোর জন্মদাতা পিতা সেটা ভুলে যাস না।
~ উনাকে ভুলি নি সব মনে আছে, প্রতিটা অপমান আজও স্পষ্ট মনে আছে।
রাফিসা চলে গেলো, ইভারও মন খারাপ হলো কিন্তু পুরোনো কথা ভেবে আর কি করবে শুধু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ভুলে যায়।

পর্ব ১৭ (অন্তিম)

তিহান চিঠিটা হাতে নিয়ে পড়া শুরু করলো,
“আমি তোমাদের না জানিয়ে দেশে চলে যাচ্ছি। ওখানে আমার অনেক জরুরি কাজ আছে। আমার উপর রাগ করো না। তোমার সবাই এক সপ্তাহের মধ্যে দেশে চলে এসে আর হ্যাঁ আমার বিয়ে দেশে থেকে হবে প্লিজ আমার এই ইচ্ছেটা পূরণ করো। নিজেদের খেয়াল রেখে আর আমার জন্য দোয়া করো আমি যেনো আমার কাজে সাফল্য অর্জন করতে পারি।”

চিঠিটা পরে তিহান ইভাকে ডাক দিলো,
~ ইভা তাড়াতাড়ি ড্রয়িং রুমে এসো।

~ হ্যাঁ আসছি।
~ রাফিসা দেশে চলে গেছে, দেখো এই চিঠি।
~ মেয়েটার বড্ড বেশি সাহস হয়ে গেছে সবসময় তোমার আদরে লাই পেয়ে গেছে।

~ শান্ত হও রাগ করো না। হয়তো কোনো পেসেন্টের জন্য যেতে হয়েছে।
~ তাই বলে আমাদের জানিয়ে যাবে না?
~ এখন আর রাগ করো না, চলো আমাদের অনেক কাজ আছে প্যাক করতে হবে তো।

~ আমি কিছু করতে পারবো না।
~ আচ্ছা তোমার কিছু করতে হবে না আমি করবো।
~ হুহহ্
~ তুমি সেই আগের মতো রয়ে গেলে, এখন বুঝতে হবে আমাদের ছেলে~ মেয়েরা বড় হয়েছে ওদের লাইফের ডিসিশন ওরা নিতে জানে।
~ ওরা ভুল ডিসিশন নিলো নাকি সঠিক ডিসিশন সেটা আমাদের দেখতে হবে তো।

~ আমরা ওদের সেভাবে মানুষ করি নি যে ওরা আমাদের কাজ থেকে কিছু লুকাবে। আমরা তো ওদের বন্ধুর মতো তাই রাফিসা যে কাজটা করতে গিয়েছে সেটা ভালোর জন্য করবে পরে দেখবে তোমাকে এসে সব বলবে।

~ তুমি আছো বলে আমাকে সবকিছু সহজ করে দেও।
~ খুব ভালোবাসি তো,
~ বুড়া বয়সে এতো প্রেম দেখাতে হবে না, ঘরে ছেলেরা আছে।

~ তো কি আমি আমার বউয়ের সাথে প্রেম করি ওরা ও ওদের বউয়ের সাথে প্রেম করবে।
~ ধ্যাত বুড়ো বয়সে ভীমরতিতে পেয়েছে।
~ আহহা্ শুনো, একটু গল্প করি।

~ নাহ্ আপনার মেয়ে অনেক কাজ রেখে গেছে সেগুলো করতে হবে।
~ ওহ্ হ্যাঁ তাই তো চলো।

রোহানের অপারেশন ভালো ভাবে হয়েছে। রোহান সুস্থ হয়ে একজন নার্সকে বললো,
~ আমার অপারেশন যে ডক্টর করেছে তার সাথে দেখা করবো।

~ স্যরি উনি আজকে হসপিটাল থেকে চলে গিয়েছে।
~ প্লিজ আপনি একটু ব্যবস্হা করুন ওনার সাথে আমি দেখা করবো।

~ আচ্ছা আমি দেখছি৷
কিছুক্ষন পরে নার্স এসে জানিয়ে দিলো যে,।”সুলতানা রহমান সন্ধ্যায় দেখা করতে আসবে।”

নিশিতা সারাক্ষণ হসপিটালে রোহানের সাথে থাকে কিন্তু তার ছেলে একটা বারের জন্যও বাবাকে দেখতে আসে নি। রোহান বিশ বছর আগে যেমন সারাক্ষণ টাকা, লোভ নিয়ে পরে থাকতো ঠিক তেমন নাহিয়ান টাকা ছাড়া কিছু বুঝে না।
সন্ধ্যা সাতটা সময় রোহানের কেবিনে সুলতানা রহমান এসে বলে,
~ আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন?

~ ওয়ালাইকুম সালাম, আপনার জন্য আমি আজ অনেক ভালো আছি।
~ সব আল্লাহর ইচ্ছে, উনি সব কিছুর মালিক।

~ আপনার মা ~ বাবা অনেক ভাগ্য করে আপনার মতো একজন মেয়ে পেয়েছে।
~ হাসালেন কথাটা বলে, জানতে চান আমার বাবা ~ মা কে?

~ হ্যাঁ তাদের সাথে দেখা করতে চাই, আপনার মতো মেয়ের মা~ বাবা নিশ্চয়ই অনেক ভালো।
~ যদি বলি আপনি আমার বাবা।
~ আমি আপনার বাবা হবো কি করে?

~ হ্যাঁ আপনি আমার জন্মদাতা পিতা। মনে আছে ইভা ইসলামের কথা যাকে আপনি প্রেগনেন্ট অবস্থায় ডিভোর্স দিয়েছিলেন। স্ত্রী, সন্তানকে কাজের লোক পরিচয় দিয়েছিলেন আবার অনাগত সন্তানকে নিজের সন্তান বলে অস্বীকার করেছিলেন।

আমি আপনার মেয়ে সুলতানা রহমান রাফিসা যাকে আপনি অন্য একটা মহিলার জন্য নিজের মেয়ের গায়ে হাত তুলেছেন। জানেন আমার মা আজও আপনার স্মৃতি আগলে রেখেছে, দেখেন আমার পড়নের এই শাড়িটা আপনি আমার মাকে দিয়েছিলেন সেটা এখনও অনেক সুন্দর করে যত্ন করে রেখে দিয়েছে। আমি শাড়িটা পড়লে নষ্ট হয়ে যেতে পারে সেজন্য পড়তে দিতে চায় নি।

ভালোবাসার পরিনতি কি পেয়েছিলো আপনার থেকে? কষ্ট ছাড়া কিছু দিতে পারেন নি তবে হ্যাঁ আমি, আমার মা খুব ভালো আছি। আমার মা তার পারফেক্ট লাইফ পার্টনার পেয়েছে। সে আমার মাকে এক সেকেন্ডের জন্য চোখের পানি ফেলতে দেয় নি এমন কি আমি বাবার অভাব বুঝতে পারি নি। আমার কোনো ইচ্ছে সে অপূর্ণ রাখে নি। দোয়া করবেন আমরা ভালো থাকি যেনো। আর আপনিও ঠিক মতো ওষুধ খাবেন।
~ রাফিসা মা আমার,
~ না না সুলতানা রহমান বলবেন।

~ আমাকে কি ক্ষমা যায় না?
~ যদি ক্ষমা করি তাহলে কি আমার মায়ের অপমানগুলো ফিরিয়ে দিতে পারবেন?
নিশিতা দরজা পাশে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছিলো এখন কেবিন ঢুকে বললো,
~ আমি আমার পাপের ফল পেয়েছি আমাকে ক্ষমা করে দেও।

~ এটা একটা হসপিটাল আপনাদের নাটকের জায়গা না তাই এমন কিছু করবেন না যাতে আমার মায়ের চরিত্র নিয়ে কথা হয় তাই আগে যা ঘটেছে তা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই। ডক্টর হিসেবে পেসেন্টের প্রতি যে দায়িত্ব আমি শুধু মাত্র সেটা পালন করেছি আর কিছু না। আপনারা ভালো থাকবেন এখন আসি।
রাফিসার চলে যাওয়া নিশিতা রোহান দেখছে তাদের কিছু বলার অধিকার নেই। রোহান নিজেই নিজের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। নিশিতা অন্যের সন্তানের অধিকার কেড়ে নিয়ে নিজের সন্তানকে কাছে পায় না। আল্লাহ সবার পাপের শাস্তি ঠিক সময় দিয়ে থাকেন।

নিশিতা হসপিটালের বিল পরিশোধ করতে গিয়ে দেখে বিল পরিশোধ করা হয়েছে এবং আগে যা টাকা দিয়েছে সেগুলো ফেরত দিয়েছে। সব টাকা রাফিসা দিয়েছে। রোহান অনেক খুঁজেছে ইভার বাসার ঠিকানা কিন্তু পায় নি। হসপিটাল থেকে বারন করে দেওয়া হয়েছে যেনো কাউকে রাফিসার ঠিকানা না দেয়।

তিহান, ইভা ও তাদের দুই ছেলেকে নিয়ে দেশে এসেছে আর রাফিসার হবু শ্বশুর বাড়ির লোকজন দেশে এসেছে। রাফিসার বিয়ে অনেক ধুমধাম করে হয়েছে। রাফিসা শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার সময় ইভা খুব কেঁদেছে তার থেকে বেশি তিহান কেঁদেছে। তিহানের সাথে ইভার বিয়ের পর এক দিনের জন্য ইভার চোখে পানি আসতে দেয় নি কিন্তু মেয়ে বিদায়ে চোখের পানি কন্ট্রোল করতে পারে নি। রাতে ইভা অন্ধকার করে রুমে বসে আছে তখন তিহান রুমের লাইট অন করে বললো,
~ এখানে বসে আছো আর তোমাকে আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি।
~ কেনো খুঁজতে আছো?

~ খেতে চলো।
~ খাবো না।
~ খাবে না বললেই তো হবে না খেতেই হবে।
~ আজকে জোর করো না।
~ ভালোবাসি বলে জোর করি।
~ উফফ তুমি না,

~ আমি কি বলো বলো।
~ কিছু না।
~ তাহলে চলো।
ইশান, ইয়ান এসে বললো,

~ আম্মু, আব্বু।
তিহান ইশান, ইয়ানকে কাছে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,
~ সবার মধ্যে রাফিসাকে মিস করবো।
~ আব্বু তুমি মন খারাপ করো না তাহলে তো আপু কষ্ট হয়।
~ দেখেছো ছেলেরা বড় হয়ে গেছে।

~ হ্যাঁ আমার দিকে তো তোমাদের কোনো খেয়াল নেই(ইভা)
তিহান ইভার কাছে গিয়ে কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বললো,
~ তোমাকে ভালোবাসার পরিনতি আমাকে জীবনের সব সুখ দিয়েছে।

ইশান,ইয়ান এক সাথে বললো,
~ তোমাদের মতো বাবা মা যেনো সবার হয়।

লেখা ~ ইভানা

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “ভালোবাসার পরিনতি – New Pratilipi bengali love story” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – ভালোবাসার পরিনতি (১ম খণ্ড) – Pratilipi bengali love story

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *