রোমান্টিক লাভ স্টোরি

টিউশন প্রেম – রোমান্টিক লাভ স্টোরি

টিউশন প্রেম – রোমান্টিক লাভ স্টোরি: ছাত্রীর প্রেমে পড়া খুব একটা কমন বিষয়। অনেক না বলা প্রেম ও ভালোবাসা কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে। কেউ পেয়েছে বা আবার কেউ হারিয়েছে। চলুন আজ এরকম একটি টিউশন স্যারের সাথে প্রেমের গল্প পড়ি।


পর্ব ১

_ ক্ষুধায় পেটটা ভালই নাড়াচাড়া দিচ্ছে। প্রাইভেট পড়াতে এসেছি সায়রাকে।

এই মেয়েটাকে সেই দশম শ্রেণী থেকেই পড়াচ্ছি। এখন ও এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে।

সায়রার বাবা সেনাবাহিনীর অফিসার এবং মা গৃহিণী।

_ আমি একজন সাধারণ মানুষ। অভাবী মানুষও বলা যায়। অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ি। আমার ইনকাম এর রাস্তা হলো টিউশনি করা।

টিউশনির টাকায় নিজে চলি,আর গ্রামে মায়ের কাছে কিছু টাকা পাঠাই।

_ আমার বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন।

গ্রামে মা আর ছোট ভাই থাকেন। আমার পাঠানো টাকায় তারা কোনমতে চালিয়ে নেন।

যা বলছিলাম, এখন সন্ধ্যা। ক্ষুধায় কাতর হয়ে গেছি। দুপুরে কিছু খাইনি।

অবশ্য প্রায়ই আমি দুপুরে কিছু খাইনা। এতে কিছু অর্থ বেচেঁ যায়।

অর্থ হাতে থাকলে কিছু কাজে লাগানো যাবে, খেলে তো শেষই হয়ে যায়, এটা আমার যুক্তি।

_ সায়রাকে প্রায় ৩ বছর ধরে পড়াচ্ছি। পড়ানোর প্রথম দিন থেকেই দেখতাম আমাকে কিছু নাস্তা দেয়া হতো।

এতে অনেক উপকার হয়েছে। দুপুরে অভুক্ত থাকি, নাস্তাটা পেয়ে তাই অখুশি হওয়ার কারণ নেই।

আজ হয়তো ব্যতিক্রম। আধঘণ্টা হয়ে গেল পড়াচ্ছি, এখনো নাস্তা নিয়ে কাজের মেয়েটা আসেনি।
নাস্তা হয়তো আসবে না, এই কথা মনে হতেই ক্ষুধাটা আরো বেড়ে গেল।

হয়তো একটু অন্যমনস্ক ছিলাম তাই সায়রা ডাক দিলো।

_ ভাইয়া!

_ হু, বলো।

_ আপনি কি কিছু ভাবছিলেন?

_ নাতো।

_ ও। আচ্ছা, আমি ইকটু ভিতরের ঘর থেকে আসছি।

সায়রা কেন ভিতরের ঘরে গেল কে জানে। এই মেয়েটাকে পড়িয়ে অনেক শান্তি পেয়েছি। মেধাবী ছাত্রী। কিছু বোঝানোর জন্য অত পরিশ্রম করতে হয়না।

খাবারের ট্রে হাতে সায়রা ঘরে ঢুকলো। আমি ইকটু লজ্জিত বোধ করলাম।
সায়রা কিছু বুঝে ফেললো নাকি।

সায়রা বলল,
_ আজকে কাজের মেয়েটা অসুস্থ তাই নাস্তা দিয়ে যেতে পারেনি।
_ আরে সমস্যা নাই। তুমি কষ্ট করে আনতে গেলে কেন?

সায়রা কিছু বললো না। ইকটু বাঁকানো হাসি দিলো। আমি খাবার হাতে নিলাম। ক্ষুধা নিয়ে অতদিকে তাকানোর সময় কই। চা, দুই টুকরো বিস্কুট এবং দুই টুকরো কেক।

আমার জন্য এইই বেশি। খাবার শেষ করে দেখি সায়রা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি বিব্রতবোধ করলাম। স্বাভাবিকের চেয়ে একটু অন্যভাবে হয়তো খাবার শেষ করে ফেলেছি। সায়রা বলল,

_ ভাইয়া, আজও আপনি সাদা শার্টটি পড়ে এসেছেন!
_ লাল শার্টটা ধুয়ে দিসি।

_ আপনার আর শার্ট নাই? শুধু লাল আর সাদা, লাল আর সাদা!
আমার আসলেই আর শার্ট নাই। এই দুটোই শার্ট। দুইদিন আগে দেখলাম, লাল শার্টটিও ইদুরে কেটে ফেলেছে।
এই কথা অবশ্য সায়রাকে বলা যায়না, তাই চুপ করে রইলাম।

সায়রা বলল,
_ আমি আপনাকে একটা শার্ট গিফট দিবো, কালো শার্ট।

_ আচ্ছা দিও। এখন পড়ায় একটু মনোযোগ দাও।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি। আজ সারাদিন ভার্সিটিতেই কাটালাম। জিতু, ইমরান, লাবণী দের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডাও দিলাম।
সন্ধ্যায় সায়রাকে পড়াতে গেলাম ওদের বাসায়।

সায়রার সাথে দেখা হলো না। ওর মা এর সাথে কথা হলো। সায়রার আংটি বদল হয়ে গেছে,
এক সেনাবাহিনীর অফিসারের সাথে। তাই আজ আর পড়বে না।

আমি ছুটি পেলাম। বাসার দিকে ফিরছি। ক্ষুধা মরে গেছে, চিন্তাশক্তিও ভোঁতা হয়ে গেছে।
কেন?
সায়রার জন্য?

আজ বুঝলাম সায়রাকে আমি পছন্দ করতাম ভালবাসতাম!
ব্যথিত মনে বাসায় ফিরলাম। বাসা বলতে ভাড়া বাসা। দুই রুমের বাসায় আমরা ছয়জন একসঙ্গে থাকি, সবাই ভার্সিটির স্টুডেন্ট।

সাদিত বলল, আমার নামে পার্সেল এসেছে। দেখলাম জুতার সাইজের মতো একটা বাক্স।

বাক্স টি খুলতেই একটি কালো শার্ট বেড়িয়ে পড়লো, সাথে একটি চিঠি। আমি চিঠিটি পড়া শুরু করলাম।

প্রিয় জিসান,

ভাই বলতে পারবো না। অন্য মানুষের সামনে ভাই বলার প্রয়োজন আছে কিন্তু চিঠিতে ভাই বলার প্রয়োজন নেই।

কারণ, কখনোই তোমাকে ভাই হিসেবে ভাবিনি। তুমি করেই বলছি, ঠিক আছে?

মনে আছে জিসান, একদিন বাবার সাথে রাগ করে অনেক কেঁদেছিলাম।

তখন অবুঝ ছিলাম। মাত্র টেনে পড়তাম, অবুঝ থাকাই স্বাভাবিক। তুমি পড়াতে এসে দেখলে আমি তখনো কাঁদছি।

তুমি কিছু বললে না, চুপচাপ বসে রইলে। কিছুক্ষণ পরে আমাকে একটি কবিতা লিখে দিলে,
আমি বলি, কাঁদিস কেন তুই?

তুই বললি, দুঃখ আমার সই!

আমি বলি, দুঃখ দিয়েছে কে?

বল আমায়,
বোমা মেরে সব উড়িয়ে দিবো কই!”
আমি সেদিন কবিতাটি পড়েই হেসে দিলাম। তোমাকে তখন থেকেই ভাললাগা শুরু হলো।
আজকে তোমার ভার্সিটিতে গিয়েছিলাম। দেখলাম তুমি এক মেয়ের সাথে অনেক হেসে হেসে কথা বলছো!

_ মেয়েটা কে?

_ তুমি কি মেয়েটাকে পছন্দ করো?

আমার এন্গেজমেন্ট হয়ে গেছে।

তোমাকে ভালবাসি।

তাই অন্য কাউকে বিয়ে করার প্রশ্নই আসেনা। তোমাকে জানিয়ে দিলাম।
তুমি যদি আমাকে এসে বলো, আমার সাথে যাবে? তাহলে আমি কিন্তু না করবো না।

ইতি,
সায়রা।

_ ব্যস্ত রাস্তার পাশ দিয়ে হাটছি আর ভাবছি, কি করা যায়। আমি অতি সাধারণ একজন মানুষ, আর সায়রা সেনাবাহিনীর অফিসারের মেয়ে।

এখন চাইলে সায়রাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে পারবো কিন্তু যেখানেই যাই সায়রার বাবা গিয়ে ধরে আনবে।
তখন দুজনের ভবিষ্যৎ কি হবে।

মোবাইলের রিংটোনে ভাবনায় ছেদ পড়লো।

_ হ্যালো!

_ হ্যালো, আমি মেজর কামাল। সায়রার বাবা। তুমি জিসান?

_ জ্বী আংকেল।

_ তুমি জানো তো সায়রার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে।

_ জ্বী জানি।

_ আজ সায়রা পাগলামি শুরু করেছে। ও নাকি বিয়ে করবে না, ও নাকি তোমাকে ভালবাসে, তোমাকে বিয়ে করবে।
আমি চুপ করে রইলাম।

_ জিসান?

_ জ্বী আংকেল।

_ তুমি এখন কি করবে?

_ আপনি বলুন, আপনি যা বলবেন তাইই করবো।

_ ঠিক তো?

_ জ্বী।

_ তোমার বাসায় আমি তোমার গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার ট্রেনের টিকিট পাঠিয়ে দিয়েছি। কাল সকালে ঢাকা ছেড়ে যাবে।
_ জ্বী আচ্ছা।

_ তোমাকে যেনো আর ঢাকা শহরে না দেখি।


পর্ব ০২

_ রেল স্টেশনে বসে আছি ট্রেনের অপেক্ষায়। আজ সায়রার দেয়া কালো শার্টটা পড়ে এসেছি।

সাথের বন্ধুদের কিছুই জানাই নি। জানলে ওরা মন খারাপ করবে।

সময় কাটছেনা, তাই একটা পত্রিকা কিনলাম। প্রথম পৃষ্ঠার লেখায় চোখ আটকে গেল।

আজ বিশ্ব ভালবাসা দিবস।

বুক পকেটে সায়রার দেয়া চিঠিটা ভাজ করে রাখা আছে। ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো, কিন্তু শেষ স্মৃতি হিসেবে রেখে দিলাম।

সাতপাচ ভাবতে ভাবতে পেপারটি হাতে রেখেই ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমের

মধ্যেই হয়তোবা নিঃশব্দে হু হু করে কেঁদে উঠলাম! কেউ দেখলো না গরীবের কান্না।
গরীবদের ভালবাসতে নেই।

হটাৎ ট্রেনের হুইসেলে বাস্তবে ফিরে এলাম,

_ নিজের অজান্তেই চোখের কোনে পানি জমে এসেছে, ট্রেনের যাত্রা শুরু,

ট্রেনে উঠতে যাব ঠিক তখনেই হাতটা কোথায় যেনো আটকা পড়ে গেলো,

হাতটা ছুটানোর জন্য পিছন ফিরে তাকাতে আমি অবাক হলাম, কারন সায়রা আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে।

_ তুমি এখানে? (আমি)

_ চলে যাচ্ছিলে আমাকে ছেড়ে, বাবা যখন তোমার সাথে ফোনে কথা বলছিলো তখন আমি লুকিয়ে শুনছিলাম,

যখন শুনলাম তুমি চলে যাবে, তখন খুব কেদেছি। তাইতো ছুটে এলাম তোমার কাছে! (সায়রা)

_ ।(আমি)

_ কি হলো চুপ করে আছো কেনো? আর কালো শার্টটা পড়ে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। (সায়রা)
_ আমি তোমাকে ভালোবাসি জিসান i Love You, (সায়রা)

_ দেখো সায়রা তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, তাছাড়া তোমার সাথে আমার যায়না। আমি গরীব ঘরের ছেলে

আমাদের ভালোবাসতে নেই! আমি বামূন হয়ে আকাশের চাদঁ ধরতে চাইনা, তার চেয়ে ভালো হবে তুমি ফিরে যাও।

(নিচের দিকে তাকি একমনে বলে ফেল্লাম কথা গুলো, আজ গরীব বলে বলতে পারিনি আমিও যে তোমাকে ভালোবাসি সায়রা)

_ হটাৎ বুকের সাথে কিছু লেপ্টে যাওয়ায় বাস্তবে ফিলে এলাম, তাকিয়ে দেখি সায়রা আমাকে
জড়িয়ে ধরে আছে আর কানের কাছে তার মুখটা এনে বলছে,

_ আকাশের চাদঁ যদি নিজে থেকে তোমার হাতে এসে ধরা দেয়, তাহলে কি তোমার কোনো আপত্তি আছে জিসান।

_ একভাবেই কথা গুলো বলে যাচ্ছে সায়রা, আর আমার ইচ্ছে হচ্ছে, নিজের বাহূডোরে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরি
সায়রাকে।

কিন্তু ধরতে পাড়লাম না, কারন সেই সামর্থ টা আমার নেই!

(অবারো ট্রেনের হুইসেলের শব্দে বাস্তবে ফিরে এলাম, ট্রেন চলছে তার নিজ গতিতে।)

_ সায়রাকে ছাড়িয়ে নিয়ে তার দুই গালে কষে দুইটা চর মারলাম। আর বললাম,

_ আমি তোমাকে ভালোবাসিনা সায়রা, আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারিনা, কারন আমি গরীব। চারদিক নিস্তব্ধ হয়ে গেলো,

সায়রা কাদঁছে, তার চোখ থেকে বের হওয়া পানি গুলো এক ফোটা করে মাটিতে পড়ছে, আর মাটি সেটা শুষে নিচ্ছে,

আর সেই মুহুরতে আমার মনে হচ্ছে আমার কলিজাটা কেউ যেন হাতুড়ী দিয়ে আঘাত করে টুকরো টুকরো করে দিচ্ছে।

চোখের কাজল তার গালে লেপ্টে লেগে আছে, খুব ইচ্ছে করছে তার গাল বেয়ে পরা পানি মুছে দিতে,
কিন্তু আমি পারিনি, মুছে দিতে পারিনি আমি গরীব বলে!

তখন খুব চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো, গরীবরা কি ভালোবাসতে পারেনা, গরীবদের কি ভালোবাসার আধিকার নেই?
সেই চিৎকার কেউ কখনো শুনেনি আর শুনতেও পারবেনা।

হটাৎ নিরবতা ভেঙ্গে সায়রা বলে উঠলো,

_ জিসান তুমি আমাকে মারলে, এই জিসান তুমি আমাকে আরো মারো তুবুও প্লীজ আমাকে ছেড়ে যেওয়া, আমি যে তোমাকে ছাড়া বাচবোনা।

প্লীজ জিসান আমাকে ছেড়ে যেওনা।

আমি তার কোনো কথা শুনলাম না, বুঝলাম না তার ভালোবাসার আর্তনাদের কান্না।

_ তুমি এখান থেকে চলে যাও সায়রা, আমি যে আর পারছিনা। প্লীজ তুমি এখান থেকে চলে যাও আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
_ সায়রা চলে যাচ্ছে যাওয়ার আগে শুধু একটা কথাই বলে গেলো,

_ আমি চলে যাচ্ছি জিসান! আর যাওয়ার আগে আমার একটা কথা ভালো করে শুনে নাও,

_ বিয়ে যদি করি তাহলে আমি তোমাকেই করবো, আর তোমাকে না পেলে আমি বাচবনা আমি মরে যাবো।

ভালো থেকে জিসান,

_ সায়রা চলে যাচ্ছে আর বার বার আমার দিকে ফিরে তাকাচ্ছে, হয়তো সে ভেবেছে আমি তাকে পেছন থেকে আটকাবো,

আর আমার মন বলে যাচ্ছে প্লীজ যেওনা থাকোনা আর কিছুটা সময় আমার সাথে,
কিন্তু আমি মুখ ফুটে বলতে পারিনি, আটকাতে পারি নি তাকে,

ওর চলে যাওয়ার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছি আমি, সে চলে গেলো।

_ আর আমি গ্রামের বাড়ি চলে যেতে পারলাম না, পারলাম চলে যেতে সায়রাকে ছেড়ে।


পর্ব ৩

_ আমি গ্রামের বাড়ি চলে যেতে পারলাম না, পারলাম চলে যেতে সায়রাকে ছেড়ে।
মেস (ভাড়া বাড়ি) এর উদ্দেশ্যে রাওনা দিলাম।

_ রাস্তা দিয়ে হাটছি, আর ভাবছি কি সুন্দর একটা মেয়ে, মায়াবী তার মুখ, হরিণীর মতো তার চোখ, যে কেউ দেখলেই তার প্রেমে পড়ে যাবে।

যেমন আমিও পড়েছিলাম প্রথম দিনি তার প্রেমে।

_ বাড়ির সামনে দাড়িয়ে কলিং বেল বাজাচ্ছি, বেশ কয়েকবার বাজালাম তবুও কেউ দরজা খুলছেনা,
আরেকবার বাজানোর জন্য হাত বাড়াতেই ভেতর থেকে দরজা খুলে গেলো।

আর ভেতরে একজন ভদ্র মহিলাকে দেখা যাচ্ছে, আর আমি মহিলাটির উদ্দেশ্যে বললাম।

_ আন্টি আপনি কি মেজর কামাল আংকেল এর স্ত্রী।

_ হ্যা, কিন্তু তুমি কে বাবা। তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না,

_ আন্টি আমি জিসান, আংকেল আমাকে পাঠিয়েছে আপনাদের মেয়ে সুমায়াকে পড়ানোর জন্য,

_ ওহ, তুমিই তাহলে জিসান, তোমার সম্পর্কে সব বলেছে আমাকে তোমার আংকেল, দাড়িয়ে আছো কেনো ভিতরে এসো বাবা।

_ আন্টিকে অনুষরণ করে ভিতরে গেলাম,

কি সুন্দর করে সাজানো বাড়িটা যেনো দেখেই পরান জুড়িয়ে যায়।

_ এখানে বসো বাবা (আন্টি)

_ জ্বী! আন্টি, (আমি)

_ আচ্ছা জিসান তোমার বাবা কি করে? (আন্টি)

_ আমার বাবা নেই, আমার বাবা মারা গেছেন।

_ ওহ, সরি জিসান, আমি আসলে বুঝতে পারিনি।

_ ঠিক আছে আন্টি সমস্যা নেই।

এরই মাঝে কাজের মেয়েটা নাস্তা নিয়ে চলে এলো

প্রথমত খেতে চাইনি তবুও পরে আন্টির অনুরোধে আর পেটের ক্ষিদায় খেয়ে নিলাম।

কাজের মেয়েটির উদ্দেশ্যে আন্টি বলল।

_ মা রুবিনা (আন্টি)

_ জ্বী, আপা (কাজের মেয়ে)

_ যাতো সায়রাকে ডেকে নিয়ে আয়,

_ ঠিক আছে আপা যাচ্ছি।

কাজের মেয়েটি চলে গেলো সায়রাকে ডাকতে,

কিছুক্ষণ পর সায়রা এলো,

_ আম্মু আম্মু তুমি আমাকে ডাকলে?

_ এই যে সামানে যে ছেলেটা বসে আছে সে কাল থেকে তোমাকে পড়াবে, পড়বে তুমি তার কাছে?

_ সায়রা আমার দিকে তাকালো, আর আমি আগে থেকেই তাকিয়ে আছি তার

দিকে, কি সুন্দর চোখ, চোখের উপর হলকা করে কাজল লাগানো আরো সুন্দর লাগছে তাকে,

সায়রা ঠোট বাকিয়ে ছোট্ট একটা হাসি দিলো, আর মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিলো সে পড়বে আমার কাছে।

আর সেই বাকাঁ ঠোঁটের হাসিতেই প্রথম প্রেমে পড়েছিলাম আমি।
হটাৎ পায়ের সাথে কিছু স্পর্শ হওয়ায় সকল ভাবনার ছেদ ঘটলো,

নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি একটি আঁট বছরের ছেলে আমার পাটা জড়িয়ে ধরে আছে, ছেলেটি আমাকে বলল,
_ ভাইয়া ২ টাকা দিবেন কাল থেকে কিছু খাইনি। খুব খিতে পেয়েছে

_ ছেলেটার কথা বুকে গিয়ে বাধলো,

খুব কষ্ট পেলাম তার কথায়, পা টা ছাড়িয়ে তাকে দাড় করালাম আর পকেট থেকে তাকে ১০ টাকার ১ টা নোট বেড় করে এগিয়ে দিলাম,

ছেলেটা টাকাটা পেয়ে দৌড়ে একটা দোকানের দিকে চলে গেলো,

তার যাওয়া দেখে আমি একটু হাসলাম, আর ভাবলাম পৃথিবীর মানুষ কতই না অসহায়।

প্রায় দুই ঘন্টা হাটার পর আমি মেসে ফিরে এলাম,

মেসের গেটের সামনেই বন্ধু রাকিবের সাথে দেখা হয়ে গেলো, আর রাকিব বললো।

_ কি রে জিসান তুই কোথায় গেছিলি, আমরা কতো ট্যানশন করতে ছিলাম তুই কি জানিস, আর তোর চোখগুলা এতো ফুলা ফুলা করছে কেনো? (রাকিব)
_ (আমি)

_ কিরে চুপ করে আছিস কেনো

_ কোনো কথা না বলেই রাকিবকে জড়িয়ে ধরেই কেদেঁ দিলাম।

_ কিরে কি হয়েছে তোর আমাকে বল, তুই কাদছিস কেনো?

_ কোনো কিছু না বলেই রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিলাম।

প্রায় ৩ ঘন্টা পর দরজা খুলে বাইরে এলাম।

সবাই আমার জন্য বসে বসে অপেক্ষা করছে,

_ কিরে কি হয়েছে তোর তুইতো আগে এমন ছিলিনা। (সবাই এক সাথে)
আমি সব কথা সবাইকে খুলে বললাম,

সবাই আমাকে শান্তনা দিয়ে বললো চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে,

আর তুই যত তারাতারি পারিস সায়রাকে ভুলে যা।

এতোক্ষনে রাত দশটা বেজে গেছে, সবাই যে যার মতো ঘুমাতে চলে গেলো,

আমি একাই বসে আছি, ঘুম আসছেনা আমার, আর ভাবছি কিভাবে ভুলবো তাকে,

নাহ আমি ভুলতে পারবোনা সায়রাকে, আমি যে তাকে ভালোবাসি।

_ হটাৎ ফোনটা বেজে ওঠায় চমকে উঠলাম, চেয়ে দেখি একটা অচেনা নাম্বার
ভাসছে,

ফোনটা রিসিভ করতেই একটা মেয়ের কন্ঠ ভেসে আসলো,
আর সেই কন্ঠটা আমার খুব পরিচিত, খুব চেনা একটা কন্ঠ।


পর্ব ৪

ওপাশ থেকে খুব চেনা, খুব পরিচিত একটা কন্ঠ ভেসে আসলো।

_ হ্যালো জিসান আমি সায়রা,

_ হুম বলো,

_ দেখো জিসান কালকে আমার বিয়ে তাই যা বলছি তা ভালো করে শোনো।

_ আচ্ছা বলো

_ কাল আমার বিয়ে! আর আমি যদি তোমাকে না পাই, তাহলে কেউ আমাকে পাবেনা।

শুধু এই কথাটা মনে রেখো,

_ টুত, টুত, টুত, ফোনটা কেটে গেলো।

_ কথাটা শোনেই যেন আমার মাথার উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়লো, সাথে সাথেই আবার সেই নাম্বরে ফোন দিলাম,

_ হ্যালো,

_ আপনি যেই নাম্বারে কল করেছেন,

তা এই মুহূরতে বন্ধ আছে, কিছুক্ষণ পর আবার কল করুন, ধন্যবাদ।

এভাবে প্রায় ১৬ থেকে ১৭ বার কল দিলাম, তবুও ফোন বন্ধ বলছে,

কি করব এখন আমি কিছুই ভেবে পাচ্ছিনা,

রাতের আধারে একা একাই বসে আছি,

ট্যানশনে আজ সারারাত ঘুম আসবেনা তা বুঝতে পারছি,
আবার কল করলাম, কিন্তু এবারো ফোন বন্ধ বলছে।

_ না মাথাটা আর কিছুই কাজ করছেনা, তাই নিজে নিজেই ভাবছি, বিয়েটা কি আটকাবো আবার ভাবছি নাহ আটকাবোনা,

সায়রার যেখানে বিয়ে হচ্ছে

সেখানেই হোক, আর সেখানেই সায়রা অনেক সুখে থাকবে।

কথাটা ভাবতেই চোখের কনে পানি জমে এলো।

_ কারন গরীবদের বিয়ে আটকানোর কোনো ক্ষমতা নেই, ক্ষমতা আছে শুধু লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার।

আবার ফোন দিলাম এবারো ফোন বন্ধ বলছে,

আর ভালো লাগছেনা আমার, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ২।৪৯ বাজে,

_ এপাশ ওপাশ হাটাহাটি করছি আর ফোন দিচ্ছি, কিন্তু প্রতিবারই ফোন বন্ধ বলছে!

এভাবে ফোন দিতে দিতে একসময় বিরক্ত হয়ে আবার চেয়ারে এসে বসলামা।

আর চেয়ারে মাথাটা হেলান দিতেই কখন যে চোখ দুটো লেগে এসেছে বুজতেই পারিনি।

হটাৎ শুনতে পেলাম কেউ একজন আমার নাম ধরে ডাকছে।

_ জিসান এই জিসান, এতো ঘুমায় নাকি, ওঠো তারাতারি, আরে ওঠো তারাতরি!

_ (চোখ ঘসতে ঘসতে) তুমি এখানে?

_ কেনো অবাক হলে নাকি,

_ হুম।

_ এসো আমার সাথে আরো অবাক করা জিনষ তোমায় দেখাবো।

এইবলে বলে সায়রা আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আমাকে টানতে টানতে কোথায় যেনো নিয়ে যাচ্ছ, আর আমিও যাচ্ছি তার সাথে।

কিছুক্ষণ হাটার পর সামনে একটা ঘর দেখতে পেলাম,

_ দাড়াও জিসান এখানে দাড়াও,

_ আমিও দাড়ালাম।

সে আমাকে ঘরের ভিতর ঢুকতে বলল,

আমরা দুজনে ঘরের ভিতর ঢুকলাম।

_ দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই আমি চমকে উঠলাম,

কারন কেউ একজন সিলিং ফ্যানে জলছে,
মানে গলায় দড়ি দিয়ে আত্নহত্যা করেছে।

_ সায়রা আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছো, আর কেইবা এটা? পিছন থেকে কোনো সারাশব্দ নেই,

তাই আমি পিছন ফিরে তাকালাম আর পিছন ফিরে তাকাতেই আমি আরো অবাক হলাম!

কারন সায়রা পেছনে নেই।

আমি এতো কিছু না ভেবেই লাশটাকে নামাতে শুরু করলাম, আর লাশটাকে নামিয়ে মাটির উপর শুইয়ে দিলাম।

লাশের মুখের দিকে তাকাতেই অনেকটা ভয় পেয়ে গেলাম, চোখ দিয়ে পানি পরতে শুরু করলো, আরে এটাতো সায়রা তার মানে সায়রা আত্নহত্যা করেছে।

ভাবতেই বুকটা চিনচিন করে উঠলো, সায়রার মাথাটা বুকের সাথে জড়িয়ে ধরেই চিৎকার দিয়ে উঠলাম।

আর সাথে সাথেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।
_ যাক বাচলাম তার মানে এতোক্ষন স্বপ্ন দেখছিলাম।

অমনি শুনতে পেলাম কিসের যেনো একটা আওয়াজ আসছে,

ভালোভাবে কান পেতে শুনলাম আযান দিচ্ছে,

তাই ওযু করে নামায পড়তে গেলাম। নামায পড়া শেষ।

চারদিকে তাকিয়ে দেখি সূর্যের আলো ফুটছে।

তখন সায়রাকে দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো, তাই রওনা দিলাম সায়রাদের বাসার উদ্দেশ্যে।

দাড়িয়ে আছি সায়রাদের বাসার সামনে।

কি সুন্দর করে সাজানো পুরো বাড়িটা।

চারদিকে শুধু ফুল আর ফুল। গেটের উপরে চোখটা আটকে গেলো, কারন সেখানে বড় করে

লেখা ছিলো “শুভ বীবাহআবারো বুকের বাম পাশে চিন চিন করে উঠলো।

আস্তে করে গেট খুলে বাড়ির ভেতরে ঢুকলামা।

ভিতরে অনেক মানুষ, কেউ ফুল সাজাচ্ছে,

কেউ রান্না করছে আর কেউ দেখিয়ে দিচ্ছে।

একটি ছোট মেয়েকে ডেকে জিঙ্গেস করলাম,

_ এই যে, ছোট মামনী, তুমি কি জানো তোমার সায়রা আপু কোথায়?

_ ভাইয়া, সায়রা আপুতো তার রুমে, আপুকে বউ সাজানো হচ্ছে।

কথাটা শুনেই বুকটা ধক করে উঠলো,

_ ভাইয়া আর কিছু কি বলবেন!

_ না ছোট মামুনি তুমি এখন যাও।

৩ বছর সায়রাকে প্রাইভেট পড়িয়েছি তাই কষ্ট হলোনা তার রুমটা খুছে পেতে,

সায়রার রুমের সামনে গিয়ে দাড়ালাম।

দরজাটা একটু ফাকা ছিলো তাই তাকে দেখতে কষ্ট হলনা। সায়রার আশে পাশে কয়েকটা মেয়ে বসে আছে।

সায়রা শাড়ি পড়েছে, চোখের উপরে টানা টানা কাজল, দুই হাত ভর্তি চুড়ি,

কপালে লাল একটা টিপ, পায়ে রক্ত আলতা তার সাথে নূপুর।

সায়রা গম্ভীর ভাবে বসে আছে! কারো সাথে কোনো কথা বলছেনা।

তার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে আছে।

তবুও তাকে এক তীল পরিমান অসুন্দর লাগছেনা, একদম অস্পরীদের মতো লাগছে।

_ হটাৎ কেউ একজন ঘাড়ে হাত রাখায় চমকে উঠলাম।

ফেছন ফিরে দেখি আংকেল (সায়রার বাবা ) দাড়িয়ে আছে।


পর্ব ৫

_ হটাৎ কেউ একজন ঘাড়ে হাত রাখায় চমকে উঠলাম।

ফেছন ফিরে দেখি আংকেল (সায়রার বাবা) দাড়িয়ে আছে।

_ জিসান তুমি এখানে? (আংকেল)

_ জ্বী আংকেল,

_ জিসান তোমাকে না গ্রামের বাড়ি চলে যেতে বলেছিলাম।

_ না মানে আংকেল সায়রা, সায়রাকে দেখতে এসেছিলাম।

_ ওহ তাই, আচ্ছা জিসান তুমি আমার সাথে এসো। আংকেল এর সাথে হাটছি, আর আংকেল আমার ঘাড়ে হাত দিয়ে রাখছে।

_ জিসান তোমাকে একটা কথা বলব?

_ জ্বী আংকেল বলেন,

_ তুমি কি সুমায়াকে পছন্দ করো, মানে ভালবাসো।

_ কি হলো চুপ করে আছো কেনো, বলো তোমার কোনো ভয় নেই, কোন সমস্যা হবেনা তোমার।

_ আংকেলের চোখের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ পর বললাম, জ্বী আংকেল ভালোবাসি।

(কথা বলতে বলতে বাইরে চলে এলাম)

_ একটু দাড়াও জিসান আমি শুধু ফোনে কথা বলে নিই,

_ ঠিক আছে আংকেল,

এই বলে আংকেল একটু দুরে গেল কথা বলতে, আংকেল কথা বলছে। কিন্তু কি বলছে। সেটা ঠিক আমি বুঝতে পারলাম না।
আংকেল ফোনে কথা বলা শেষ করে আমার কাছে আসলো,

তার সাথে সাথে ৫ জন সেনাবাহীনি আমাদের দিকে এগিয়ে আসলো।

কেনো আসলো সেটা জানিনা, তবে আংকেল সেনাবাহীনির বড় অফিসার হয়তো সে কারনেই এসেছে।
আর আংকেল আমাকে বলল।

_ জিসান সায়রাও কি তোমাকে ভালোবাসে,

_ মানে, না মানে।

_ কি এতো মানে মানে করছো (রাগ দেখিয়ে), তোমাকে না বলেছি তোমার ভয় পাবার কোনো কারধ নেই (মিষ্টি সুরে)

_ জ্বি আংকেল বাসে, সায়রাও আমাকে ভালোবাসে।

_ তো জিসান তুমি চাওনা সায়রা ভালো থাকুক, সুখে থাকুক।

_ হ্যা, আংকেল চাই।

_ যেহেতু তুমি চাও যে সায়রা সুখে থাকুক, তাহলে তোকে গ্রামের বাড়ি চলে যেতে বলার পরও তুই এখানে কেনো এসেছিস ফকিরের বাচ্চা।

কথাটা বলা শেষ না হতে দুই গালে দুইটা চর বসিয়ে দিলো।

সাথে সাথে দুইজন সেনাবাহিনী এসে আমার হাত দুইটা শক্ত করে ধরলো।

আংকেল আমাকে দেখিয়ে দিয়ে বলছে, এই কুত্তার বাচ্চাটাকে মার, আর এমন ভাবে মারবি যেনো উঠে দাড়াতে না পাড়ে। বলেই আংকেল চলে গেলো।

_ দুই জন আমাকে ধরে আছে, আর বাকি তিন জনের হাতে তিনটা রড, রড নিয়ে এগিয়ে আসছে আমার দিকে,

আর আমি পালানোর চেষ্টা
করছি, সাথে সাথেই একজন এসে আমার পায়ে মারলো,

এতো জোরে মারলো যে আর আমি দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না।

পড়ে গেলাম নিচে, দুই হাটু দিয়ে দাড়িয়ে আছি, আর ভাবছি।

এর কিছুই হয়তো সায়রা জানেনা, আর জানতেও পারবেনা।

তার আমাকে মারছে খুব মারছে, আমার চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো।

_ আমি চিৎকার করে বলছি, আমাকে মারো না।

আমি আর সয্য করতে পারছিনা, দয়া করে আমাকে ছেড়ে দাও, কিন্তু কেউ আমার কথা শুনছেনা,

শুনছেনা আমার আর্তনাদের কান্না, দেখছেনা আমার চোখের জল, দেখছেন
আমার শরীর বেয়ে পড়া রক্ত।

আমি আবারো চিৎকার করে বললাম।
_ গরীবরা কি মানুষ না, গরীবদের ভালোবাসা কি খুব বড় অপরাধ।

কথাটা শেষ না হতেই কেউ একজন আমার মাথায় খুব জোরে মারলো,
মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।

আর আমি মাটিতে উপুর খেয়ে পড়ে গেলাম।

মাথাটা ঘুরছে, চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো, আমি অঙ্গান হয়ে গেলামা।

_ এই চল সবাই, মনে হয় কুকুরে বাচ্চাটা মরে গেছে।

সবাই মিলে ধরে আমাকে রাস্তার ধারে ফেলে দিলো।

২ ঘন্টা পর ।

হটাৎ গাড়ির শব্দে হুস ফিরে এলো, ঠোট ফেটে গেছে, নাক দিয়ে তখনও রক্ত পরছে, মাথাটা বেশ ব্যাথা করছে,
উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু পারছিনা, তার পরও অনেক কষ্টে উঠে দাড়ালাম।

হাটতে খুব কষ্ট হচ্ছে, পাটা মাটিতে ফেলতে পারছি না।

তবুও আস্তে আস্তে করে হেটে নিরাপদ জায়গায় গিয়ে দাড়ালাম।

পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখি, বেশ কিছু জায়গায় ভেঙ্গে গেছে, ফেটে গেছে ডিসপ্লে, ফোনটাতে রক্তের দাগ লেগে আছে। ফোনটা পোকেটে রাখলাম।

হাতের দিকে তাকাতেই দেখি ঘড়িটা ভেঙ্গে গেছে, খুব শখের একটা ঘড়ি। অবশ্য ঘড়িটাও সায়রা দিয়েছিলো।
মনে পড়ে গেলো অতীতের কথা।

_ উফ, আজকে খুব দেড়ি হয়ে গেলো, তাই তারাতারি করে সায়রাদের বাসায় চলে এলাম।

_ এই যে, মিস্টার জিসান, আজকে এতো দেরি কেন? (সায়রা)

_ না মানে ঘড়ি নেই তো বুঝতে পারিনি কয়টা বাজে। তাই আরকি একটু দেরি হয়ে গেলো।

_ কিহ। আপনার ঘড়ি নেই?

_ হুম নেই,

_ বসেন আমি একটু আসছি, এই বলে সায়রা কোথায় যেনো গেলো,

কিছুক্ষন পর আবার এলো।

_ এই যে মিস্টার ধরেন, এটা আপনার জন্য।

_ (তাকিয়ে দেখি ঘড়ি) না না লাগবেনা, এমনি ঠিক আছে।

_ লাগবেনা বলেই হলো,

এই বলে সায়রা নিজে থেকেই ঘড়িটা আমার হাতে পড়িয়ে দিয়ে বলল,

বাহ কি সুন্দর লাগছে আপনাকে।

হটাৎ কারো চিৎকার শুনে ভাবনার ছেদ ঘটলো।

আর তখন চেচামেচি শুরু হয়ে গেছে বর এসেছে, বর এসেছে, এই শব্দে,
বুকের বাম পাশে চিন চিন করে উঠলো।

তাকিয়ে দেখি কয়েকটা গাড়ি সায়রাদের বাসার সামনে দাড়াল।

বর সহ বেশ কয়েকজন মানুষ সায়রাদের বাড়ির ভিতরে ঢুকলো।

_ আর আমি গেটের বাইরে দাড়িয়ে থাকলাম, শেষ বারের মতো এক নজর সায়রাকে দেখার জন্য।


পর্ব ৬

_ আমি বাইরে দাড়িয়ে আছি, মাথাটা খুব ব্যাথা করছে, পাটা মাটিতে ফেলতে পারছিনা। বেশ কয়েক জায়গা থেকে এখনও রক্ত পড়ছে।

অতীতের কথা গুলো মনে পড়ায় চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।

কষ্ট হচ্ছে আজ আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে,

বুকের বাম পাশের চিন চিন অনুভূতীটা বেড়েই চলছে,

মনে পড়ে গেলো সায়রার দেওয়া চিঠিটার কথা,

_ বুক পকেট থেকে চিঠিটা বেড় করলাম।

কয়এক জায়গায় ছিড়ে গেছে, রক্ত লেগে আছে, বলতে গেলে পুরো চিঠিটা লাল হয়ে গেছে।

_ খুব যত্ন সহকারে চিঠির ভাজটা খুললাম।

চিঠিটা নিরবে পড়তে লাগলাম, আর চোখ দুটো নিরবে অশ্রু ফেলতে লাগল।

চিঠিটা পড়া শেষ করে আবার যত্ন সহকার ভাজ করে বুক পকেটে রাখলাম।

বুকের বাম পাশটা এখনও চিন চিন করছে।

দুই ঘন্টা পর ।

এখনও দাড়িয়ে আছি গেটের সামনে। সায়রাকে শেষবারের মতো একবার দেখার জন্য,
এরই মাঝে বর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো তার সাথে সায়রাও এলো,

সায়রার পিছনে তার মা_ বাবা এবং বরের আত্নীয় স্বজন সবাই বেড় হয়ে এলো, বর সহ সবাই গাড়িতে গিয়ে বসলো,
সায়রা তার মাকে জড়িয়ে ধরলো আর জড়িয়ে ধরেই কেদে দিল।

আর আমিও দুর অদুর থেকে দাড়িয়ে দেখছি আর কাদছি।

সায়রা আর কারো সাথে কথা না বলেই গাড়িতে গিয়ে উঠল।

গাড়ি চলছে তার নিজ গতিতে, যত দির সম্ভব দেখা যায় ঠিক তার শেষ পর্যন্ত তাকিয়ে দেখলাম।
চোখ দুটো ঝপসা হয়ে এলো তাই আর দেখার সম্ভব হলোনা।

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, হাটা ধরলাম মেসের উদ্দেশ্যে।

আমাকে মেসে ফিরতেই হবে। পায়ে খুব ব্যাথা করছে, তবুও কষ্ট করে হাটছি।

হটাৎ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।

বৃষ্টি হচ্ছে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি। আমার কষ্ট দেখে হয়তো আকাশটাও সইতে পারেনি, তাই সে নিজেও কেদে ফেলেছে।

বৃষ্টির পানি আমার শরীরে লেগে থাকা রক্ত মুছে দিয়ে গেলো,

হটাৎ আবার বৃষ্টি থেমে গেল।

এভাবে কিছুক্ষণ হাটার পর মেসে পৌছে গেলাম।

মেসে ঢুকার সাথে সাথেই আবারও প্রথমেই বন্ধু রাকিবের সাথে দেখা।

_ কিরে জিসান তোর এই অবস্থা

কিভাবে হলো, আর তুই এভাবে হাটছিস কেনো তোর কি হয়েছে? (রাকিব)

_ আরে তেমন কিছু না, রিক্সা করে আসার সময় রিক্সাটা পাল্টি খেয়েছিলো তাই আরকি পড়ে গেছিলাম।

রাকিব আমাকে ধরে রুমে নিয়ে এলো, আর কিছু ঔষধ এনে আমাকে খাইয়ে দিলো।

রাত ১১টা বাজে, সবাই গভীর ঘুমে ব্যস্ত আমি একায় জেগে আছি।

সায়রার কথা ভাবছি কি করছে সে এখন,

হটাৎ করেই সায়রার একটা কথা মনে পড়ে গেল।

_ জিসান আমি যদি তোমাকে না পাই, তাহলে কেউ আমাকে পাবেনা। মরে যাব আমি।

কথাটা মনে পড়তেই খুব ভয় পেয়ে গেলাম, যদি ও কিছু করে ফেলে?
বিছানা থেকে উঠে বাইরে এসে বসলাম।

পকেট থকে সিগারেটের পেকেট টা বের করে একটা সিগারেট ধরালাম।

সিগারেট টানছি, টানতে খুব কষ্ট হচ্ছে, গলায় লাগছে খুব মাথাটা ঘুরছে।

কিন্তু তার চেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে সায়রার কথা মনে পড়লে।

একটার পর একটা সিগারেট জ্বালাচ্ছি, আর নিরবে কেদে যাচ্ছি,

_ কালো হচ্ছে ঠোঁট, পুড়ে যাক

কলিজা।

তবুও সিগারেটের প্রতিটি টানে উড়ে যাক কষ্টের সব ধুয়া।

কখন যে চোখ দুটো লেগে এসেছে বুঝতে পারিনি

হটাৎ ফোনের রিংটনে চমকে উঠলাম।

চারিদিকে সূর্য্যের আলো ছড়িয়ে পরেছে, মানে সকাল হয়েছে। ফোনের দিকে তাকাতেই আমি অবাক হলাম,
কারন সায়রার বাবা ফোন করেছে, ফোনটা ধরলাম না কেটে দিলাম।

আবার ফোন করেছে আমি এবারো কেটে দিলাম।

আবারো ফোন দেওয়ায় ভাবলাম সায়রার কিছু হলো নাতো, তাই তারাতারি ফোনটা রিসিভ করলাম,

_ হ্যালো জিসান,
_ জ্বি আংকেল বলেন!

_ তুমি তারাতারি হাসতাপাল চলে আসো আমরা সবাই হাসতালে আছি।

_ হাসপাতালে, কেন আংকেল কি হয়েছে?

_ সায়রা হাসপাতাল ভর্তি আছে, তুমি হাসতাল চলে আসো আর আসলে দেখতে পাবে কি হয়েছে।

_ জ্বি আংকেল যাচ্ছি বলেই ফোনটা কেটে দিলাম।

কথা শুনেই যেন মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে আসছে।

মেস থেকে হাসপাতাল বেশি দুরে না, তাই দ্রুত পায়ে হাসপাতালে পৌছে গেলাম।

হাসপাতাল পৌছাতেই দেখি সবাই কাদছে,

আমি সায়রার কাছে যেতেই সবাই রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।

_ সায়রা আমার দিকে তাকিয়েই ঠোট বাকিয়ে ছোট্ট একটা হাসি দিল, ঠিক যেভাবে হেসেছিল প্রথম দিন।

_ জিসান বাবাকে অনেক অনুরোধ করায়, বাবা তোমাকে এখানে আসাতে দিতে রাজি হয়েছে।

আমি আর বেশিক্ষন নেই জিসান, তাই যা বলছি মনোযগ দিয়ে শনো,

_ তোমাকে আমি বলছিলাম না তোমাকে আমি না পেলে কেউ আমাকে পাবেনা। গাড়িতে উঠার সময় দেখেছিলাম, তুমি
রাস্তার ধারে একটা কনে দাড়িয়ে ছিলে।

তাই তোমাকে দেখেই আম্মুকে জড়িয়ে ধরেই কেদেছিলাম।

আর গাড়িতে উঠেই ফল কাটা ছুড়ি দিয়ে হাতের রগ কেটে ফেলি।

তখন কষ্ট হচ্ছিল, খুব কষ্ট হচ্ছিলো তোমার কথা ভেবে, কারন তোমার খেয়াল রাখার আমি ছাড়াতো আর কেউ নেই তাই।

_ আমি কাদছি, চোখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে।

_ জিসান তোমাকে একটা কথা বলবো?

_ হুম, বলো,
_ একবার তোমার বুকে জড়িয়ে ধরবে?

_ কথাটা বলা শেষ না হতেই পাগলিটাকে নিজের বাহুডোরে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
_ জিসান আরেকটা কথা বলবো!

_ হুম বলো, তোমাকে কে বলতে মানা করেছে,

_ আজ একবার বলনা ভালোবাসি, না হলে যে আর কোনো দিন বলতে পারবেনা, প্লীজ বলনা জিসান।
সুমাই আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে।

আমি চোখ বন্ধ করে বললাম।

_ i love you sumaya। আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি, তোমাকে ছাড়া যে আমিও বাচবোনা।

সায়রার কোন শারা শব্দ নেই, তাই আমি চোখ খুললাম।

সায়রা নিশ্চুপ হয়ে গেছে, চলে গেছে অনেক দুরে।

_ ভালোবাসি কথাটা হয়তো সায়রা শুনেছে, হয়তোবা শুনতে পারেনি।

তার আগেই চলে গেছে আমাকে ফাকি দিয়ে।


পর্ব ৭ (শেষ পর্ব)

_ সায়রার কোন শারা শব্দ নেই, তাই আমি চোখ খুললাম। সায়রা নিশ্চুপ হয়ে গেছে, চলে গেছে অনেক দুরে।

_ ভালোবাসি কথাটা হয়তো সায়রা শুনেছে, হয়তোবা শুনতে পারেনি। তার আগেই চলে গেছে আমাকে ফাকি দিয়ে।

_ সায়রাকে জড়িয়ে ধরেই চিৎকার দিলাম, পৃথিবীটা যেনো এখানেই থমকে গেছে,
সব কিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে। সায়রার সাথে সাথে সব কিছু নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।

দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার, হার্টবিট চলছেনা, চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো, মাথাটা ঘুড়ছে।

সায়রাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার দিয়েই ফ্লোরে পড়ে গেলাম। উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করলাম পারলাম না,

শরীরে এক বিন্দু শক্তি নেই। চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গেল।

কেউ একজন চোখে পানি দেওয়ায় একটু করে চোখ খুললাম, চোখ খুলে আস্তে আস্তে করে উঠে দাড়ালাম।
কথা বলার মতো শক্তি নেই, সকল ভাষা হাড়িয়ে ফেলে নির্বাক হয়ে গেছি।

তাকিয়ে দেখি সায়রার দেহটা সাদা কাপর দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে, সবাই কাদঁছে,

আজ আংকেল কাদঁছে, খুব কাদঁছে, ঠিক যেভাবে কেদেছিলাম আমি।

এরই মাঝে আন্টি বেশ কয়েকবার সেন্স হাড়িয়েছে।

পলিশ এসেছে, সায়রার বাবা সেনাবাহীনির অফিসার হওয়াই কিছু না বলেই চলে গেলো তারা,

সায়রাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো তাদের বাসায়। আমিও গেলাম তাদের সাথে। সায়রার পাশে বসে আছি, আর আমি সায়রার হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছি।

আজ সায়রার বাবা একবারো বললোনা কেন এসেছি তাদের বাসায়, মারলোনা আমাকে।

আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছেনা, হয়তো চোখের পানি গুলাও শুকিয়ে গেছে।

আংকেল আমার পাশে বসে আমাকে বলল।

_ আমাকে ক্ষমা করে দিও জিসান, আমার জন্য আজ আমি আমার মেয়েটাকে হারালাম।

_ আমার মেয়েটা আমাকে ক্ষমা করবে তো জিসান,

কথাটা বলেই আংকেল আমাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলো।

কিছুক্ষণ পর সায়রাকে নিয়ে যাওয়া হলো গোসল করানোর জন্য।

আজ সায়রা আমার বুকে নেই, সায়রা আমার ঘাড়ে। ঘাড়ে করে নিয়ে যাচ্ছি সায়রাকে।

আর কনোদিন পাগলিটা বলবেনা একবার বুকে জড়িয়ে ধরবে জিসান।

মনটা নিরবেই হু হু করে কেদে উঠলো।

সায়রাকে মাটিতে রাখা হলো, শেষবারের মতো সায়রাকে একবার দেখে নিলাম।
পাগলীটার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে, তবুও মনে হচ্ছে সায়রা এখনো হাসছে ।

সায়রাকে মাটি দেওয়া শেষ।

এক এক করে সবাই চলে গেল, সায়রার কবরের পাশে বসে আছি,

আংকেল এসে আমার ঘাড়ে হাত রাখলো, কিন্তু কিছু না বলেই চলে গেলো।

বসে আছি সায়রার কবরের পাশে, চিৎকার করে কান্না করার ইচ্ছে করছে, কিন্তু পারলামনা। কথা বলার মতো বিন্দু মাত্র শক্তি নেই।

হটাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।

ঝির ঝির বৃষ্টি পড়ছে, উপরে কাদঁছে আকাশ আর নিচে কাদঁছি আমি।

আবারো চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম, ভালোবাসি সায়রা অনেক ভালোবাসি তোমাকে।

_ চোখের পানি মুছে আস্তে করে উঠে দাড়ালাম,

উঠে দাড়িয়ে আকাশ পানে তাকালাম, কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর অনেক জোরে একটা হাসি দিলাম আর বললাম,
_ আসছি সায়রা আমিও আসছি, তোমাকে ছাড়া যে এই পৃথিবীটা অনেক একা লাগে।

_ ঝিরি ঝিরি বৃষ্টতে ফাকা রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছি দুর বহু দুর, অজানা কোনো এক গন্তব্যে, উদ্দেশ্য সায়রা।

(সমাপ্ত)

লেখক – মোঃ রাকিব

পাঠক আপনাদের জন্যই আমরা প্রতিনিয়ত লিখে থাকি। আপনাদের আনন্দ দেয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ। তাই এই পর্বের “রোমান্টিক লাভ স্টোরি” টি আপনাদের কেমন লাগলো পড়া শেষে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

আরও পড়ুন – তুমি আমার ভালোবাসা – ভালোবাসার গল্প কথা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *