রোমান্টিক প্রেমের গল্প ১১

রোমান্টিক প্রেমের গল্প – বান্ধবী যখন বউ – পর্ব ১১

রোমান্টিক প্রেমের গল্প – বান্ধবী যখন বউ – পর্ব ১১: গত পর্বে আমরা দেখেছি মিরা ও কাব্যের প্রেম, স্বর্ণার কান্না। তবে কি স্বর্ণাকে খালি হাতে ফিরে যেতে হবে? পিকচার আভি বাকি হে মেরে দোস্ত। আপনার ভাবনাকে উল্টে দিতে হয়তো সক্ষম হবে আমাদের লেখক কাব্য সাহেব। চলুন দেখি কি হয়?

কাব্য ও ম্যাম

তারপর ম্যাম একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলে- কিছুদিন আগে মানে ঐদিন আমিও ঐ পার্কে আমার এক বান্ধবির সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তখনি দেখলাম। যাই বলুন কাব্য সাহেব, আপনার গার্লফ্রেন্ড কিন্তু দেখতে অনেক সুন্দর!

কাব্যঃ ম্যাম আপনি যেমন ভাবছেন তেমনটা ঠিক নয়। ও আমার গার্লফ্রেন্ড ঠিক আছে। কিন্তু আবার ও আমার গালফ্রেন্ড নয়।

ম্যাম অবাক হয়ে বলল,

কাব্যঃ ঠিক বুঝলাম না, কাব্য সাহেব।

আসলে হয়েছে কি ম্যাম….

তারপর ম্যামকে সব খুলে বলি। প্রথম থেকে স্বর্নার সাথে যা যা হয়েছে, ও আমার সাথে যে প্রতারণা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং ওর জন্য আজ আমি ছন্নছাড়া পরিবার হারা হয়েছি এগুলো সব এবং ওখান থেকে কিভাবে এ পর্যন্ত উঠে আসার গল্প বললাম।

আমার কথা শোনার পর দেখি ম্যামের দুই চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।

কাব্যঃ একি ম্যাম, আপনি কাঁদছেন কেন?

ম্যামঃ না না তেমন কিছুই না, কাব্য সাহেব। তারপর ম্যাম চোঁখের পানি মুছে বললো- আচ্ছা কাব্য সাহেব আপনি এখন যা করছেন তা কি ঠিক। যদি মিরা নামের মেয়েটা আপনাকে সত্যিই সত্যিই মন থেকে ভালোবাসে।

আর সে যদি কখনো জানতে পারে আপনি ওর সাথে ভালোবাসার নাটক করছেন। সত্যিকার অর্থে তাকে কখনো আপনি ভালোবাসেন না। একবারও কি ভেবে দেখেছেন মেয়েটা কতটা কষ্ট পাবে কতটা আঘাত পাবে? আর সে যদি এ কষ্টটা এ আঘাতটা সহ্য করতে না পেরে ভুল কিছু একটা করে বসে।

কাব্যঃ না না ম্যাম এমনটা কিছুই হবে না। আমি এমন কিছু হতে দিবো না। আজকেই আমি মিরাকে আমার সাথে দেখা করতে বলবো। আর দেখা করার পর আমি নিজেকে ওর কাছে এতটাই খারাপ প্রমাণিত করবো, এতটাই খারাপ ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবো যা মিরা কখনো কল্পনাও করতে পারবে না। আর আমি জানি মিরা আর যাই করুক একটা খারাপ মানুষের কারণে নিজের ক্ষতি করবে না। যাই হোক ম্যাম, আপনি কি যেন বলতে চাইছিলেন?

ম্যামঃ কিছুই না কাব্য সাহেব, আপনি এখন আসতে পারেন।

মিরার সাথে দেখা করার ভাবনা

তারপর আমি ম্যামের রুম থেকে বের হয়েই মিরাকে ফোন দিলাম। ফোন দেওয়ার কিছুক্ষণ পর মিরা ফোন ধরলো।

কাব্যঃ হ্যালো মিরা।

মিরাঃ হ্যাঁ ব ববব বলো কাব্য।

কাব্যঃ মিরা তোমার কি হয়েছে? আর তুমি কাঁদছো কেন? (হঠাৎ খুব চিন্তিত হয়ে বললাম আমি)

মিরাঃ না না কাব্য কিছুই হয় নি। আমার আবার কি হবে। এই একটু মুড়ি ভাজা মেখে খাচ্ছিলাম তাতে মরিচ একটু বেশি খেয়েছি তো এজন্য কণ্ঠশ্বর এমন শুনাচ্ছে। (মিরা ফোফাতে ফোফাতে বললো)

কাব্যঃ ওহ্ তাই বলো। আমি তো ভাবলাম তোমার হয়তো কিছু হয়েছে।

মিরাঃ আচ্ছা আমার কথা বাদ দাও। কি জন্যে ফোন দিলা সেটা বলো।

কাব্যঃ আজ আমার সাথে একটু দেখা করতে পারবে।

মিরাঃ হুম বলো কোথায় আসবো? আর কখন?

কাব্যঃ ….পার্কে ৪.৩০ আসবে। তোমার সাথে খুব জরুরি কথা আছে।

মিরাঃ আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসবো। বাই।

কাব্যঃ আচ্ছা বাই। (তারপর মিরা ফোন রেখে দিলে, আমি ভাবতে লাগলাম হঠাৎ মিরার কন্ঠশ্বর এমন শুনাচ্ছে কেন? ধুর মিরা তো বললো কি না কি খেয়েছে)।

তারপর অফিসের কাজ শেষ করে চার টায় সময় পার্কে ওর সাথে দেখা করতে চলে যাই। পার্কে গিয়ে দেখি মিরা আমার অনেক আগেই পার্কে চলে এসেছে। তারপর আমি ওর কাছে গিয়ে মিরা পাশে বসলাম আর বললাম।

কাব্যঃ কখন এসেছ মিরা?

মিরাঃ এইতো একটু আগে। কি যেন বলতে চাইছিলা আমাকে?

মিরার সাথে ব্রেকাপ

আমি মিরার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখ দুটো আগুনের মত লাল হয়ে আছে। তাই ওকে বললাম,

কাব্যঃ কি ব্যাপার মিরা তোমার চোখ দুটো এত লাল আর ফুলে আছে কেন? তোমার কি কিছু হয়েছে?

মিরাঃ না না আমার এখনো কিছু হয় নাই। তবে হয়তো কিছু একটা হতে বাকি আছে এখন। (মিরা খুব উদাশ হয়ে বললো কথাটা)

কাব্যঃ মিরা আমি ঠিক তোমার কথার মানে বুঝলাম না। (অনেকটা অবাক হয়ে)

মিরাঃ তোমাকে বুঝতে হবে না কাব্য, কি বলতে আমাকে এখানে ডেকেছো তা বলো? আর তাড়াতাড়ি বললে একটু ভালো হয়। বাড়িতে কাউকে কিছু বলে আসি নাই। বাড়ির সবাই আমার জন্যে চিন্তা করবে আবার।

কাব্যঃ হুম বলছি। দেখ মিরা আমি তোমাকে এখন যা বলবো তা তুমি ঠিক কিভাবে নিবে জানি না। হয়তো তুমি আমাকে ভুল বুঝবে কিন্তু বিশ্বাস করো মিরা আমার যে আর কিছুই করার নেই।

মিরাঃ কাব্য আমি তোমার কথা কিছুই বুঝতেছি না।

মিরাঃ মিরা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। তোমার সাথে আমার রিলেশন রাখা সম্ভব নয়। আর আজকের পর থেকে আমার সাথে কোন রকম যোগাযোগ করার চেষ্টাও তুমি করবে না।

হঠাৎ কাব্যর মুখে এমন একটা কথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না মিরা। আর যখন শুনলো তখন মনে হলো মিরার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। মিরা সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে ছিলো কিছুক্ষণের জন্য। তারপর হঠাৎ কেঁদে উঠে কাঁদতে কাঁদতে বললো,

মিরাঃ এসব তুমি কি বলছো, কাব্য? আমি কি কখনো কোনদিন তোমার কাছে কিছু ছেয়েছিলাম? চাই নাই তো। আর আমি যদি তোমার কাছে কোন অন্যায় করে থাকি তাহলে তুমি আমাকে মারো কাটো যাই ইচ্ছা হয় করো। কিন্তু এসব কি বলছো কাব্য?

কাব্যঃ হ্যাঁ আমি ঠিকি বলছি মিরা।

মিরাঃ না না কাব্য, আমি বিশ্বাস করি না, তুমি আমার সাথে মজা করছো না তো।

কাব্যঃ না, আমি মজা করছি না, যা বলছি সত্যি বলছি।

মিরাঃ না কাব্য, প্লিজ এমন করো না, তোমার কি হয়েছে বলবে প্লিজ। আর যদি আমি কোন ভুল করে থাকি তাহলে তুমি আমাকে শাস্তি দাও। আমি কিছুই বলবো না
তবুও প্লিজ তোমাকে ভুলে যেতে বলো না। (মিরা কাঁদতে কাঁদতে বললো)

কাব্যঃ না মিরা, তুমি কোন অপরাধ করো নাই। আসলে হয়েছে কি মিরা কলেজে আমাদের ফ্রেন্ডরা সবাই ওদের গার্লফ্রেন্ডদের সাথে রুমডেট করেছে। কিন্তু আমাকে দেখ আমি তোমাকে শুধু কিস ছাড়া আর কিছুই করতে পারি নাই। আর আমি তোমাকে এটা করতে জোড় করতেও পারবো না। (মানে ফিজিক্যাল রিলেশন) কারণ আমি জানি তুমি এতে রাজি হবে না। তাই মিরা দুঃখীত আমার পক্ষে তোমার সাথে রিলেশন রাখা সম্ভব নয়।

(বিশ্বাস করেন ভাই কথাগুলো বলার সময় মনে হচ্ছিলো আমি যেন নিজেই নিজের বুকে ছুরি দিয়ে আঘাত করছি)

বাসায় ম্যামের হটাৎ আগমন

তারপর মিরা কাঁদতে কাঁদতে বললো,

মিরাঃ তাহলে এটাই কি তোমার কারণ কাব্য যার জন্যে..

কাব্যঃ হ্যা এটাই কারণ। আর যদি তুমি আমার সাথে রিলেশন রাখতে চাও তাহলে আগামিকাল এই ঠিকানায় চলে আসিও। আমি তোমার জন্যে অপেক্ষা করবো। আর বাড়ির মালিক আগামীকাল বাড়িতে থাকবে না। এই বলেই আমি ওখান থেকে চলে আসি। আর এদিকে মিরা যেন পাথর হয়ে গেছে। মিরা ভাবতেও পারছে না কাব্য তাকে এমন কিছু একটা বলছে। ও অনেক কষ্টে ওখান থেকে বাড়িতে ফিরে আসে। আর বাড়িতে এসে কাঁদছে আর ভাবছে এটা কি সেই কাব্য যাকে মিরা মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসে।

এদিকে আমি বাড়িতে এসে অনেকক্ষণ যাবত ঘুমানোর চেষ্টা করছি কিন্তু চোখে ঘুম আসছে না। বারবার চোখের সামনে শুধু মিরার কান্নাভরা মুখটা ভেসে উঠছে। বুকের বা পাশে প্রচুর পরিমাণে ব্যথা হচ্ছে। কানে কে যেন ফিস ফিস করে বলছে, কাব্য তুই আজ যা করলি তা একদম ঠিক করিস নাই।

কাব্য তুই কি ভুলে গেছিস ভালোবাসার মানুষকে ভুলে থাকতে কতটা কষ্ট হয়। না না আমি যা করেছি ঠিক করেছি। আমি মিরার ভালোর জন্যই এমনটা করেছি।

জানি ও আমাকে আজকের পর ভুল বুঝবে। আর আগামীকাল ও এখানে আসবে না। এরকম হাজারো চিন্তা নিয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়ি।

পরের দিন ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে আমি পড়তে বসতেই বাড়ির কলিং বেলের শব্দ কানে আসে। ভাবলাম হয়তো পেপার ওয়ালা এসেছে পেপার দিতে। এটা মনে করেই দরজা খুলে আমি যাকে দেখলাম। তাকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম। কারণ দরজা খুলে দেখি অরিন ম্যাম। (মানে আমার অফিসের ম্যাম দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন)

ম্যামঃ কি ব্যাপার কাব্য সাহেব আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? ভিতরে আসতে বলবেন নাকি দরজা থেকে বিদায় করে দিবেন।

কাব্যঃ ছিঃ ছিঃ ম্যাম কি বলছেন এসব? আসুন ভিতরে আসুন। তারপর ম্যামকে আমার রুমে নিয়ে এসে বললাম, কি খাবেন ম্যাম চা না কফি?

ম্যামঃ কিছুই খাবো না, কাব্য সাহেব।

কাব্যঃ কেন ম্যাম কিছু তো অন্তত খান। আজ প্রথমবার এই গরিবের ঘরে আপনার পা পড়লো।

ম্যামঃ হুম হুম বুঝতে পারছি, কাব্য সাহেব। আমাকে তাড়াতাড়ি তাড়াতে চাচ্ছেন তাই খেতে বলছেন এতো, তাই না। (হাসতে হাসতে ম্যাম বললো)

কাব্যঃ না না ম্যাম আপনি ভুল বুঝতেছেন। আপনি এই প্রথম আসলেন আমার ঘরে। তাই আর কি! যাইহোক, আমি কি জানতে পারি আপনি হঠাৎ এই গরীবের ঘরে আপনার পা পড়ার কারণ?

ম্যামঃ হ্যাঁ হ্যাঁ কাব্য সাহেব অবশ্যই জানতেই পারেন। আসলে আপনার জন্য আমি একটা সারপ্রাইজ নিয়ে এসেছি আপনাকে দেওয়ার জন্য।

কাব্যঃ সারপ্রাইজ তাও আবার আমার জন্য। (খুব অবাক হয়ে বললাম)

ম্যামঃ হুম সারপ্রাইজ। আর তা কি সারপ্রাইজ সেটা জানতে হলে আপনাকে আপনার চোখ বন্ধ করতে হবে, চোখ বন্ধ করুন।

তারপর ম্যামের কথা মত আমি আমার চোখ বন্ধ করি এবং বেশ কিছুক্ষণ পর ম্যাম বললো,

ম্যামঃ কাব্য সাহেব এবার আপনার চোখ খুলুন।

আমি ম্যামের কথা মত চোখ খুলতেই যা দেখলাম, তা দেখে যেন আমি আকাশ থেকে পড়লাম।
কারণ….চলবে…

(কাব্য কি এমন দেখলো যে সে আকাশ থেকে পড়লো? আপনাদের মতামত দিয়ে যান)।

পরের পর্ব- রোমান্টিক প্রেমের গল্প – বান্ধবী যখন বউ – পর্ব ১২

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *