রোমান্টিক প্রেমের গল্প ৪

রোমান্টিক প্রেমের গল্প – বান্ধবী যখন বউ – পর্ব ৪

রোমান্টিক প্রেমের গল্প – বান্ধবী যখন বউ – পর্ব ৪: বিগত পর্বে আমরা দেখেছি কাব্যকে নিয়ে কলেজের স্যার থেকে শুরু করে বন্ধুরা পর্যন্ত তাচ্ছিল্য করেছে ভাল ও স্মার্ট পোশাক না পরার জন্য। আবার অন্যদিকে মিরার সৌন্দর্য নিয়ে কানাঘুষা। চলুন দেখি এরপর কি হয়?

সুন্দরী প্রতিযোগিতা

নীলাঃ আচ্ছা তোরা বলতো আমাদের কলেজের সব চাইতে সুন্দরি মেয়ে কে?

ওর এক বান্ধবীঃ কে আবার আমাদের মিরা। আর তুই কি চোখেও দেখিস না ওর আগে পিছে কত বড় লোকের ছেলেরা ঘুরঘুর করে।

ওদের মধ্যে অন্য একজনঃ ঐ থাম থাম শুধু কি বড়লোকের ছেলেরাই
আমাদের কলেজে যতো ছেলে আছে সবারি একই অবস্থা।

নীলাঃ নারে আমার তো মনে হয় না। আমাদের মিরা আমাদের এই কলেজের সব ছেলেদের ক্রাস আর সব চাইতে বেশী সুন্দরী।

রিয়াঃ ঐ কানার বৌ কানি। মনে হয় আজ সকালে তুই বুড়ীগঙার পানি দিয়ে তোর চোখ ধুয়েছিস। আর না হয় তোর মাথা ঠিক নেই।
জানিস না মিরা যদি শুধু একবার…

নীলাঃ ঐ থাম আর শোন আমার মাথা ঠিক আছে। আচ্ছা তোরা একটা জিনিস খেয়াল করেছিস।

কী (সবাই একসাথে)

ওদের এসব কথা শুনে মিরা শুধু হাসতেছে।

নীলাঃ বেশি কিছু না, তোরা কি জানিস আমাদের কলেজের এমন একজন বান্দা আছে যে আজ পর্যন্ত আমাদের কলেজের কোন মেয়ের দিকেই ভালো করে তাকিয়ে পর্যন্ত দেখে নাই। আর মিরাকে তো মনে হয় আরো একদমই দেখতেই পারে না।

রিয়াঃ ঐ তোর আজাইরা পেচাল বন্ধ কর।

নীলাঃ ঐ সালি কি বললি আমি আজাইরা পেচাল পারছি।

রিয়াঃ তা নয়তো কি? ঐ তোরাই বল আমি কি কিছু ভুল বললাম। (বাকি মেয়েদের উদ্দেশ্য করে)

অন্য বান্ধবীরাঃ না তুই তো একদম ঠিক বলেছিস। (রিয়াকে উদ্দেশ্য করে)

নীলাঃ ঠিক আছে মানলাম, আমিই ভুল আর তোরা সবাই ঠিক। কিন্তু সবাই একবার ভেবে দেখতো আমার ক্ষেত বাবু কাব্যর কথা।

কাব্যকে নিয়ে সমালোচনা

ওর কথা ভেবে আমরা কি করবো? আমাদের কি আর কোন কাজ নেই যে ঐ ক্ষেত মার্কা ছেলের কথা ভাববো। (সবাই এক সাথে)

নীলাঃ তোদের সময় কে নষ্ট করতে বলছে? আচ্ছা একটু ভেবে দেখতো, আমাদের ক্ষেত বাবু আজ পর্যন্ত কোন মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখেছে? আর আমাদের কথা ছাড়, যেখানে মিরার মত বড় লোক আর সুন্দরী মেয়ের সামনে পিছনে আমাদের কলেজের সব ছেলে ঘুড় ঘুড় করে সেখানে আমাদের ক্ষেত বাবু তো ওর দিকে ভুল করেও তাকায় না। আর তাই আমার তো মনে হয় মিরাও আমাদের মত আর দশ পাঁচ টা সাধারণ মেয়ের মতই।

মিরাঃ ঐ নীলার বাচ্চা তোর তো সাহস কম না তুই আমার সামনে থেকে আমাকেই বলছিস যে আমি আর দশ পাঁচ জন সাধারন মেয়ের মত। (রেগে গিয়ে)

নীলাঃ তা নয়তো কি। তুই যদি আমাদের মধ্যে সত্যি সত্যি সবচেয়ে বেশী সুন্দরী হতি। তাহলে ঐ ক্ষেত বাবু এতদিনে তোর প্রেমে হাবুডুবু খেতো।

মিরাঃ ঐ হারামি চুপ কর। তা না হলে কিন্তু তোরে আজকে আমি…

নীলাঃ তুই কিছুই করতে পারবি না। যদি পারিশ তাহলে ঐ ক্ষেত বাবুকে তোর রুপের প্রেমে আর প্রেমের জ্বালেয়ে ফাসিয়ে দেখা।

মিরাঃ ঠিক আছে ওকে যদি আমি যদি ২মাসের মধ্যে আমার প্রেমের জ্বালে না ফাসিয়েছি তাহলে আমার নামও মিরা নয়।

নীলাঃ মিরা তুই আর একবার ভেবে দেখ। পরে যেন বলিশনা…

মিরাঃ মিরার ভাবাভাবি শেষ ওকে আমি আমার প্রেমের জ্বালে ফাসিয়েই ছারবো।

নীলাঃ যদি না পারিশ কি করবি?

মিরাঃ মিরা পারেনা এমন কোন কাজ নেই। আর যদি সত্যি না পারি তাহলে তোরা যা খেতে চাইবি তোদেরকে আমি তাই খাওয়াব। আর যদি পারি তাহলে কিন্তু তোকে আমাদের সবাইকে খাওয়াতে হবে।

নীলাঃ ওকে ডান।

মিরাঃ ডান। আর চোখ খুলে দেখতে থাক এই মিরার খেলা সরি মিরার প্রেমের খেলা।

(আর এদিকে ওদের কথাবার্তা শুনে আমার মনে মেয়েদের প্রতি ঘৃনা আরো দ্বিগুণ বারতে থাকে। এই মেয়েরা আসলে কিভাবে নিজেকে?
তাদের আল্লাহতালা সুন্দর করে পূথিবীতে পাঠিয়েছে বলে কি তারা তাদের সৌন্দর্যের অহংকারে যা খুশি তাই করবে। তারা কি আমাদের মত সহজ সরল ছেলেদের খেলনা পেয়েছে। যে যখন যার ইচ্ছা হবে সে তার স্বার্থ পুরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের নিয়ে খেলবে। আর যখন ইচ্ছা হবে টিস্যু কাগজের মত ছুরে ফেলে দেবে। না তা হবে না। ভক্ত কখনো না। তোমরাদের যা ইচ্ছা তা ছেলেদের সাথে তোমরা করতে পারো না। আর মিরা তুমি যতো চেষ্টাই করনা কেন আমাকে কোন মিথ্যা মায়ায় ফেলতে পারবে না। হা হা হা। এসব ভাবতে ভাবতে বাড়িতে চলে আসি)

মিরার বাজি ধরা

কয়েক দিন পর….

আমি বেশ কয়েকদিন থেকেই লক্ষ করছি কে বা কারা যেন আমাকে ফলো করছে। তবে না কাউকে তো দেখতেই পাই না তাহলে?

মনে হয়, আমি এখানে একা একা থাকি আর কারো সাথে নিজের মনের ভিতর জমে থাকা কথাগুলো শেয়ার করতে পারছিনা বলে হয়তো কোন ভ্রমের ভিতর ডুবে যাচ্ছি।

আর আমি কার সাথেই বা কথা বলবো? কলেজে কেউ তো আমাকে সহ্যই করতে পারেনা।

তবে একটা বিষয় আমাকে খুব ভাবাচ্ছে!

মিরাকে আমি বেশি কদিন থেকে না জানলেও এ সামন্য কয়েক দিনেই যতটুকু ওর সম্পর্কে জেনেছি ও কিনা যদি একবার কিছু একটা করতে চায় তাহলে সেটা যে কোন কিছু বিনিময়ে হলেও করে ছারে।

কারণ ও নিজেকে নিজে মনে করে…। মিরা কারো কাছে হারতেই শেখে নাই আর কারো কাছে হারার জন্য জন্মেও নাই মিরা।

তাহলে?

কিন্তু মিরা ওর বান্ধবীদের সাথে বাজি ধরার পর আমাকে তেমন ইমপ্রেস করার মত কিছুই করে নাই কেন?

দূর হয়তো মিরা রাগের মাথায় ওর বান্ধবীদের সাথে বাজি ধরেছিলো। আর পরে হয়তো মিরা এটাও ভেবেছে যে আমার সাথে ওর তো কোন ভাবেই মানায় না। তাই ওর থেকে দুরেই থাকি।

তবে আজকে ক্লাস করার সময় হঠাৎ দেখি মিরা আমার দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে। আমার কাছে ব্যাপারটা কেমন যেন হজম হয় নি! খুব অদ্ভুত মনে হলো ব্যাপারটা…

আর আমি যখন ওর দিকে তাকাচ্ছি তখনি দেখি মিরা খুব লজ্জা পেয়ে ওর মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে।

মিরার দাপট

বুঝলাম কিছুই…
তারপর ক্লাস শেষ হলে যখন আমি ক্লাস রুম থেকে বের হবো। তখনি হঠাৎ মিরা আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।

তাই আমি ওকে যেই পাশ কেটে যাবো। তখনি ও আবার আমার সামনে এসে দাড়ায়।

কাব্যঃ কি ব্যাপার! আপনি এভাবে আমার সামনে বারবার আসছেন কেন? (মাথাটা নিচু করেই কথাটা বললাম)

মিরাঃ আমার ইচ্ছা হয়েছে, তাই। এতে তোর কোন অসুবিধা আছে। (রাগি ভাব নিয়ে)

কাব্যঃ দেখুন আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে। আপনার যদি কিছু বলার থাকে বলতে পারেন। আর যদি না থাকে তাহলে আমাকে দয়া করে যেতে দিন।

(আমিও একটু রাগি মুডে কথাগুলো বললাম। কারণ কেন জানি আজ আমার মনটা একদম ভাল নেই)

মিরাঃ OMG বাবু দেখছি রাগ করতেও জানে দেখছি। (বলেই হাসতে শুরু করলো)

(আমি মিরাকে আবারো পাশ কেটে যখনি যাবো)

মিরাঃ ঐ তোকে যেতে বলেছি কি?

কাব্যঃ না। কিন্তু…

মিরাঃ কিন্তু কি হ্যা। এটাইতো বলবি তোর দেরী হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তোকে তো এখন আমি যেতে দিচ্ছি না, বলেই আমার কলার ধরে বলতে লাগল, আগে আমাকে এটা বল তোর এতো ভাব কিসের, হ্যা?

কাব্যঃ আরে আপনি এভাবে আমার কলার ধরছেন কেন? আর আমি কখন আপনার সাথে ভাব নিলাম? আর কোথায় আমি আর কোথায় আপনি।

(কথাগুলো বলার সাথে সাথেই দেখলাম মিরার চোখগুলো সম্পূর্ণ লাল হয়ে গেছে রাগে, আমি মিরার এই লুক দেখে খুব ভয় পেয়ে গেলাম)

মিরাঃ ভাব নিস না মানে। আমিতো দেখি ১০০ বার ভাব নিস। আচ্ছা আর একটা কথা বল আমাদের এখানে যারা পড়তে আসে। তাদের প্রত্যেকের বন্ধু/বান্ধবী আছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তোর কোন ফ্রেন্ড/বন্ধু/বান্ধবী নেই কেন? এটা তোর ভাব ছাড়া আর কিই বা হতে পারে?

কাব্যঃ ফেফেফ্রেন্ড থাকা না থাকার সাথে ভাবের কি আছে, তাইতো বুঝলাম না। (ভয়ে ভয়ে)

মিরাঃ তোকে এত বেশী বুঝতে হবে না। কালকের মধ্যেই যেন আমি তোর একটা ফ্রেন্ড দেখতে পাই। বন্ধুত্ব করবি…

কাব্যঃ আরে আযব তো আমার ফ্রেন্ড দিয়ে কি কাজ হবে? তাছাড়া এখানে আমি যখন থেকে এসেছি তখন থেকেই সবাই আমাকে এড়িয়ে চলে। তাই এই কলেজে আমার কোন ফ্রেন্ড নেই। আর তাছাড়া এখানে এমন কোন ছেলেও নেই যে আমার সাথে বন্ধুত্ব করবে। (এক নিশ্বাসে বলে ফেললাম)

মিরাঃ কেন বন্ধুত্ব কি শুধু ছেলেদের সাথেই হয় মেয়েদের সাথে বুঝি হয় না?

কাব্যঃ তা হবে না, কেন? কিন্তু আমি চাইনা আমার জীবনে ২য় বার কোন মেয়ে বন্ধু হয়ে আসুক। আর তাছাড়া এ কলেজে যে মেয়েরা পড়ে তাড়া ভুল করেও।

মিরাঃ আমি এত কিছু শুনতে চাই না। তোর যখন কোন ফ্রেন্ড নেই তাহলে আজ থেকে আমি আর আমার এই চার বান্ধবী তোর ফ্রেন্ড।
আর আগামীকাল থেকে তাড়াতাড়ি কলেজে আসবি। যদি দেড়ি করিস তো তোর সাথে যে কি করবো?

প্রেমের ফাঁদ

কথাগুলো বলেই মিরা চলে গেলো। আর এদিকে যেন আমার দেহে প্রাণ ফিরে এলো। হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি পাজি মেয়েটা আমার সময়ের বারোটা বাজিয়ে দিছে। তাই তাড়াতাড়ি কলেজ থেকে বাড়ির দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। কারণ আপনারা তো জানেনই আমাকে আবার আমার কর্মস্থলে যেতে হবে।

নীলাঃ আচ্ছা মিরা তুই কি কিছু মিস করেছিলি বা করছিস বলে মনে হয়।

মিরাঃ আমি আবার কি মিস করলাম বা করছি বলে তোর মনে হচ্ছে।

নীলাঃ না এ জন্যই বলছি যে কিছুদিন আগেতো তুই আমাদের কাছে…

নীলাঃ স্যরি আমার কাছে আর এদের সামনে কিছু একটা নিয়ে বাজি ধরেছিলি।

মিরাঃ থাক থাক তোকে আর বলতে হবে না। আমি কিছুই ভুলি নাই বুঝলি বোকা মেয়ে। (নিলার মাথায় টোকা মেরে)

নীলাঃ হ্যাঁ তা তো নিজের চোঁখেই আজ সব দেখলাম। কেমন করে আমাদের সবার প্রিয় মিরা ক্লাসের ভিতর একটা ক্ষেত ছেলের দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছিলো। আবার ক্লাস শেষে সেই ক্ষেত ছেলেকেই নিজ থেকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলো।

মিরাঃ এতে অবাক হবার কি আছে তা বুঝলাম না? আর থাকলো তোর সাথে আমার বাজি ধরার কথা সেটা তো আমি কখনো ভুলবো না।
সেই জন্য আমি আমার প্লান নিজের মতো করে সাজিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

রিয়াঃ কেমন প্লান করেছিস, তা বুঝতেই পারছি? এমন যেন না হয় তুই নিজেই ঐ ক্ষেতটার প্রেমে পড়ে যাস। আর ও তোকে…।

মিরাঃ ঐ তুই থাম। এই মিরা কারো প্রেমে পড়বে তাও আবার ঐ ক্ষেতমার্কা একটা ছেলের.. কখনোই না… ওর তো আমার বাড়ির চাকর হবারো যোগ্যতাও নেই। নেহাৎ তোদের সাথে বাজি ধরেছি বলেই ওর সাথে আজ বন্ধুত্বটা করলাম। যাতে ওকে আমার প্রতি উইক করতে পারি।

রিয়াঃ আচ্ছা বন্ধুত্ব করলি ভালো কথা। তবে ও যে তোর প্রতি উইক হবে তা শিউর হচ্ছিস কিভাবে?

মিরাঃ সিউর হচ্ছি এই জন্যে যে…(হঠাৎ স্তব্ধ)

নীলাঃ কি হলো থেমে গেলি কেনো?

মিরাঃ তা জেনে তোদের কাজ নেই। তোদের কাজ হচ্ছে…চলবে…

পরের পর্ব- রোমান্টিক প্রেমের গল্প – বান্ধবী যখন বউ – পর্ব ৫

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *