জীবনের পরিহাস – অজানা কিছু কষ্টের কথা

জীবনের পরিহাস – অজানা কিছু কষ্টের কথা: বেশ কিছুদিন কাটতেই শুরু সমাজের কটু কথা। আমার পরিবার ব্যতীত সকল মানুষই আমার এই পরিস্থিতির জন্য আমায় দোষারোপ করেছিল।


মূলগল্প

~ কালনাগিনী! অপয়া! বন্ধ্যা জানি কথাকার। কোন অলক্ষুণে সময় যে তোরে এই বাড়িতে বউ করে আনছিলাম কে জানে। আমার সংসারের সকল সুখ শান্তি তুই নষ্ট করে দিলি। লজ্জা করে না এইখানে বসে বসে অন্যের অন্য ধ্বংস করতে?

এই বলে হাতে থাকা চায়ের পেয়ালাটা আমার পায়ের সামনে ছুঁড়ে মারে আর বিড়বিড় করতে করতে রুমে চলে যায়। আমি সেখানে দাড়িয়ে চোখের জল ফেলতে থাকি। সকালের চা দিতে একটু দেরি হয়েছে বলে এই কথাগুলো আমায় শুনতে হলো।

আমি পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি একটা কাঁচ পায়ে বিধে গেছে আর কিছু জায়গায় হাল্কা ছুঁলে গিয়েছে। গরম চা এতক্ষণে হাল্কা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ায় পায়ে ফোসকা পড়ে নি কিন্তু লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। কিন্তু এইসব তোয়াক্কা না করে আমি নিজের পা থেকে কাঁচটা একটানে বের করে ফেলি। সাথে সাথে মুখ দিয়ে চাঁপা এক আর্তনাদ বেড়িয়ে আসে। কিন্তু আমার এই আর্তনাদ দেখার যে কেউ নেই৷ আমি সব গুছিয়ে রান্না ঘরে চলে যাই। সেখানে গিয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ চেপে কান্না করতে থাকি। এছাড়া যে আমার কিছু করার নেই।

আজ পুরোটা দিন শ্বাশুড়ির কাছ থেকে আমায় এমন অহেতুক গালমন্দ শুনতে হয়। সাথে আরও কয়েক ধরনের কটু কথা। রাতে আমার স্বামী নিলয় আসার পর সেও যোগ দেয় শ্বাশুড়ির সাথে। যা নয় তাই বলতে থাকে। এমনকি কয়েকবার গায়ে হাতও তুলেন তিনি। অতঃপর ক্লান্ত হয়ে সে চলে যায় অন্যরুমে। আর আমি সেখানেই মাটিতে বসে হাটুতে মুখ গুঁজে ফুপিয়ে কান্না করতে থাকি।
আজ প্রায় ২ মাস হলো আমি তাদের এমন অমানবিক অত্যাচার সহ্য করছি। আগে তারা কেউ এমন ছিল না। সকলের ব্যবহারই ছিল শুভ্র আর স্নেহময়। আমার আর নিলয়ের অনেক সুখী এক সংসার ছিল। যেখানে কষ্ট, দুঃখের কোন ছাঁয়া ছিল না। শুধু ছিল ভালবাসা। শ্বাশুড়ির চোখের মনি ছিলাম আমি। মাথায় তুলে রাখতেন তিনি আমায়। কিন্তু কথায় আছে সুখে থাকলে ভূতে কিলায়। আমার বেলাও ঠিক একই কথাটা প্রযোজ্য হয়েছে। জীবনের এই এক অনাকাঙ্ক্ষিত সত্য যেন সবকিছু উলোট পালোট করে দেয়।

আমি নুসরাত জাহান মিরা। আমার নিলয়ের বিয়ের বয়স ৫ বছর। বিয়েটা আমাদের পারিবারিক ভাবেই হয়েছিল। বিয়ের পর আমরা দুইজন দুইজনকে ভালবেসে ফেলি। বিয়ের প্রথম ২ বছর খুব ভালো ভাবেই কেটে যায়। বিয়ের ২ বছর যখন শেষ পর্যায়ে চলে আসে তখন আমরা দুইজনে ঠিক করি একটা বেবি নেওয়ার। এর জন্য আমি আর নিলয় একটা বেবির নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকি। এইভাবেই চেষ্টা আর আশায় দেড়টি বছর কেটে যায়। কিন্তু কিছুতেই বেবি হচ্ছিল না। অতঃপর সকলের পরামর্শে নিলয় আমায় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার সকল কথা শুনে বলে যে আমার কিছু সমস্যা আছে। যার জন্য বাচ্চা হচ্ছে না। বাকি পরীক্ষা করালে সব ক্লিয়ারলি বুঝা যাবে। আমার পরীক্ষার সাথে তিনি নিলয়েরও কিছু টেস্ট দেন বুঝার জন্য আসলে কার সমস্যা।

ডাক্তার কিন্তু বলে নি আমি মা হতে পারবো না কিন্তু নিলয় ধরেই নিয়েছিল যে দোষ আমার মধ্যেই আছে। আমিই কখনো মা হতে পারবো না। আমি বন্ধ্যা! তার মধ্যে কোন দোষ নেই। সেই থেকে শুরু হয় নিলয় আর আমার শ্বাশুড়ি অমানবিক অত্যাচার। কথায় কথায় আমার গায়ে হাত উঠানো, গালমন্দ করা যেন তাদের স্বভাবে পরিনত হয়।
আমি অনেক বার নিলয়কে অনুরোধ করে বলেছিলাম,

~ প্লিজ একবার পরিক্ষাগুলো করিয়ে নেই আমরা। এর পর না হয় চিকিৎসা করিয়ে কোন উপায় বের করে দিব নে। প্লিজ আমার সাথে একবার চল হসপিটালে।
তারপর যদি দেখা যায় কোন উপায় নেই তখন আমরা বাচ্চা পালক নিয়ে নিব নে।
তখন তার উক্তি প্রায় এইরকম ছিল যে,

~ দোষ আমার মধ্যে না তোমার মধ্যে। ডক্টর তো বলেই দিয়েছে দোষ তোমার মধ্যে। তুমি কখনো মা হতে পারবে না। তাহলে আর পরীক্ষা করিয়ে কি হবে?
আর আমি যেহেতু নিজে বাচ্চা দেওয়ার ক্ষমতা বহন করি তাহলে আমি কেন অন্যের বাচ্চা পালক নিতে যাব?

অনেক বুঝিয়েছিলাম নিলয়কে কিন্তু সে বুঝতেই চায় নি। বার বার অপদস্ত করেই গিয়েছিল আমায়। বাড়ির সকল কাজের জন্য আগে যেখানে দুইটো কাজের লোক ছিল সেখানে আমাত শ্বাশুড়ি সবাইকে তাড়িয়ে দেয়। আর বাড়ির সকল কাজ আমাকে করতে বলে দেন। সেই সাথে কোন ভুল হলেই গালমন্দ করতেন আর আমার উপর জিনিস ছুঁড়ে মারতেন। ১ সপ্তাহ আগে আমার শ্বশুর হঠাৎ স্টোক করে মারা যায়। আর এর দোষও গিয়ে আমার উপর যে আমি তাকে খেয়ে ফেলেছি। সাথে বাড়ে অত্যাচারের মাত্রা। কিন্তু সবই মুখ বুঝে সহ্য করেছিলাম। আর যাই হোক একজন নারী হয়ে তো আর নিজের হাতে গড়া সংসার ভাঙ্গতে পারি না।

এইভাবে অত্যাচারের মধ্য দিয়ে আরও কয়েকটি দিন কেটে যায়। একদিন নিলয় এসে আমার মুখের উপর ডিভোর্স পেপারস ছুঁড়ে মারে। আর বলে আমি যাতে সাইন করে দেই আর ওকে মুক্তি দিয়ে দেই। সেইদিন অনেক আকুতি-মিনুতি করেছিলাম তার কাছে। বুঝিয়েছিলাম তাকে যে, “বাচ্চাই সব না। “কিন্তু সে শুনে না বরং আমাকে মারধর করে জোরপূর্বক ভাবে সাইনটা করিয়ে নেয়। আর এর পরেরদিনই তাদের বাসা থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। ভেবেছিলাম নিজের বাবা-মাও হয়তো আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে কিন্তু তারা নেয় নি বরং আমায় আগলে নিয়েছিল তারা। কিন্তু আমার সাথে হওয়া অত্যাচারের কোন বিচার হয় নি৷ বাবা-মা নিজের সম্মানের ভয়ে পুলিশ রিপোর্টটা করেন নি। কিন্তু এতে আমার আক্ষেপ ছিল না। থাকবেই বা কেন? কোন মেয়েই চাইবে না তার জন্য তার বাবা-মার সম্মান নষ্ট হোক। আর যদি সে হয় মধ্যবিত্তের মেয়ে তাহলে তো প্রশ্নই আসে না। কেন না এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরাই জানে তাদের কাছে তাদের মান-সম্মান ঠিক কতটা মূল্যবান। তারা নিজের জীবন দিয়ে দিবে অথচ মান-সম্মান নষ্ট হতে দিবে না। আর এইটাই সত্য!

এইদিকে সব শুনে বড় আপু আর দুলাভাই সিলেট থেকে ছুটে এসেছিল। আপু তো এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। আমার কষ্ট যেন সে সইতে পারছিল না। সবার মন তখন আমার জন্য কাঁদছিল। কিন্তু আমি কাঁদি নি। কেন না কান্না যে সব ফুরিয়ে এসেছিল। তাই তো নিজের ভাগ্য বলে মেনে নিয়াছিলাম।

বেশ কিছুদিন কাটতেই শুরু সমাজের কটু কথা। আমার পরিবার ব্যতীত সকল মানুষই আমার এই পরিস্থিতির জন্য আমায় দোষারোপ করেছিল। আমার দোষের কারণেই নাকি আমার স্বামী আমায় বের করে দিতে বাধ্য হয়েছে। অথচ সে আমার সাথে যে অমানবিক আচরণ করেছিল তা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। এদের কাছে যেন ওইটাই স্বাভাবিক ছিল। এইসব তো ছিল সাথেই যোগ হয় আমাকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাসা। মূহুর্তেই সকলের কাছে হাসির পাত্র হয়ে গিয়েছিলাম আমি। অনেকের খারাপ দৃষ্টি পড়তে শুরু করে আমার উপর। কথায় আছে, দুঃসময়ে মানুষ চিনা যায়। আজ কথাটার হাতে নাতে প্রমাণ পেলাম। কখনো বুঝি নি এতটা তিক্ত হবে এই সমাজ। আমার এই দুঃসময়ে বেড়িয়ে আসে ভালোবেশী মানুষের মুখোশ। কিন্তু তখন তাদের প্রতি ঘৃণা হয় নি বরং নিজের উপর ঘৃণা হয়েছিল এইভেবে যে আমি এমন এক নিম্ন সমাজের নাগরিক।

বাবা-মা এইসব সহ্য করতে না পেরে আমার দ্বিতীয় বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বাবা-মার সিদ্ধান্তের উপর কথা বলা কখনোই আমার স্বভাবে ছিল না। যার জন্য না চাওয়া সত্ত্বেও আমাকে সব মেনে নিতে হয়। ঠিক এইভাবেই হয়তো শত শত নারী চুপচাপ সব সহ্য
এতটাই অসহায় হয় একটি নারী মানুষের জীবন।

প্রায় কয়েকমাস পর আমার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি জানতাম না আমার স্বামী কে হতে চলেছে। অতঃপর বাসর রাতেই তার সম্পর্কে আমার জানার সৌভাগ্য হয়। তার নাম ছিল আশরাফ। তিনি আগে একটা বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু বিয়ের ১ সপ্তাহের মাথার তার স্ত্রী তাদের বাসার সকল গহনা,অর্থ চুরি করে পালিত হয়ে যায়। এর পর আর নাকি তার বিয়ে করার ইচ্ছেটাই হয় নি। কিন্তু তার মা দমে যাই নি। একদিন তার মা যখন আমার ছবি তাকে দেখায় সে এক পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আমাকে দেখে নাকি তার মনে ধরে যায়। অদ্ভুত একটান অনুভব করে আমার প্রতি। যার জন্য সে আর মানা করতে পারে নি।

সব শুনে আমি তখন তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলেছিলাম, “আপনি কি জানেন যে আমি হয়তো কখনো মা হতে পারবো না?”
সে মুচকি হেসে বলে,”হ্যাঁ জানি। “

আমি তখন অবাক হয়ে বলি, “সব জানা সত্ত্বেও আপনি আমায় বিয়ে করলেন? কিন্তু কেন? সকল পুরুষেই বাবা হওয়ার সুখটা চায়। কিন্তু আমি তো আপনাকে বাবা হওয়ার সুখটি দিতে পারবো। “
তখন সে সব শুনে হাল্কা হেসে বলে, “আমার হাতটা ধরে সারাটা জীবন পারি তো দিতে পারবেন তাই না?”
কথাটা শুনার সাথে সাথে আমার চোখ দুটো ছল ছল করে উঠে। সে আমার হাতটা ধরে বলে,

“আর আপনি এইসব বিষয় নিয়ে কিছু চিন্তা করবেন না। ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। আর আমার বিশ্বাস, আল্লাহ আমাদের জন্য নিশ্চয়ই ভালো কিছু রেখেছেন।
এখন আপনি কি রাজি জীবনের বাকি অংশটা আমার সাথে কাটিয়ে দেওয়ার জন্য?”

নিলয় আমাকে ছেড়ে দেওয়ার পর আমি কখনো ভাবি নি আমি আবার কাউকে নিজের জীবনে স্থান দিব। কিন্তু সেইদিন উনার কথায় কেন জানি মন ছুটে যাচ্ছিল তার দিকে। দ্বিতীয় সুযোগ দিতে ইচ্ছে করছিল জীবনকে। অবশেষে মনের কাছে হেরে গিয়ে তাকে নিজের জীবনে স্থান দেই। আর সেটাই হয়তো ছিল আমার জীবনের বেস্ট ডিসিশন। উনার সাথে আমার বিয়ের ৪ মাসের মাথায় জানতে পারি আমি অন্তঃসত্ত্বা। আমার মাঝে অন্য একটি অস্তিত্ব বেড়ে উঠছে। তখন আমার খুশির কোন সীমা ছিল না। কিন্তু আমার বেশি খুশি ছিলেন তিনি। নিজের খুশি সকলের মাঝে বিলাতেই তিনি প্রায় ১০ কেজি মিষ্টি বিলিয়েছিলেন আত্মীয় স্বজনের মাঝে। আর আমি তো শুধু মুগ্ধ হয়ে তাকে দেখছিলাম। তখন হুট করেই উনার প্রথম দিনের কথাটা মনে পড়ে।
“আল্লাহ আমাদের জন্য নিশ্চয়ই ভালো কিছু রেখেছেন। “

তখন ভাবি হ্যাঁ তিনি ঠিকই বলেছিলেন। সাথে এইটাও বুঝতে পারি সমস্যা আমার মধ্যে ছিল না। আমি বন্ধ্যা ছিলাম না। সমস্যা আমার আগের স্বামী নিলয়ের মধ্যে ছিল। আর সে কি না দিনের পর দিন আমায় দোষ গিয়েছিল। সেই অমানবিক অত্যাচার করেছিল। কথাটি ভেবেই তাচ্ছিল্যের হাসি হেসেছিলাম।

এইভাবেই দেখতে দেখতে কয়েকটি বছর কেটে যায়। আমাদের দুইটা বেবি হয়। আমার ছেলে হওয়ার ৩ বছর পরই আবার আমার একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়। দুই সন্তান নিয়েই উনার আমার ছোট সংসার বেশ চলছিল। যাকে বলে হ্যাপি ফ্যামিলি। এতটা বছর পর আমায় নিলয়কে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছিল। কেন না সে যদি আমায় না ছাড়তো তাহলে হয়তো তার মত মানুষকে আমি আমার জীবনে কখনোই পেতাম না। তাকে পেয়ে সত্যি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হয়।

এতটা বছরে আমি একবারও নিলয় বা তার সম্পর্কে কোন খোঁজ রাখি নি। দরকারবোধ করি নি। কিন্তু হুট করে একদিন নীলা এর ফোন আসে। নীলা হচ্ছে নিলয়ের বোন। প্রথমত ফোন তুলতে না চাইলেও ফোনটা ধরি। কেন না নীলা সবসময় আমাকে সাপোর্ট করতো। ওই বাড়িতে একমাত্র ওই ছিল যে কিনা আমাকে ভীষণ ভালবাসত। তাই তাদের সকলের প্রতি রাগ হলেও নীলার প্রতি আমার কোন রাগ ছিল না। অতঃপর নীলা এর কাছ থেকে জানতে পারি, নিলয় আমাকে বের করে দেওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করে। কিন্তু সেই ঘরেও বাচ্চা হয় না। তখন পরীক্ষা করানোর পর জানতে পারে ভাইয়ার মধ্যেই সমস্যা আছে। সব শুনে তার দ্বিতীয় বউ তাকে ছেড়ে চলে যায়। নীলয় নাকি পুরো ভেঙে পড়ে। পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছিল। এর কিছু মাস পরই নাকি নীলয়ের মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে। সে নাকি এখন মৃত্যুর পথের পথিক। তাদের সংসার নাকি এখন একদম ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

সব শুনে আমি কিছুই বলি নি। শুধু গোপনে দীর্ঘ শ্বাস নিয়েছিলাম। কথায় আছে, “পাপ কখনো মানুষকে ছেড়ে দেয় না। তুমি তোমার করা পাপের শাস্তি ঠিকই পাবেই। হইতো ইহকালে অথবা পরকালে। কিন্তু শাস্তি তুমি পাবেই। “

আরেকটা কথাও প্রযোজ্য আছে। আর তা হলো, “রিভেঞ্জ অফ নেচার। “প্রকৃতি কখনোই প্রতিশোধ নিতে ভুলে না। আমি প্রতিশোধ না নিলেও প্রকৃতি ঠিকই আমার প্রতিশোধটা নিয়েছে। আর এইভাবেই নিতে থাকে। এইটা যে যুগযুগান্তর ধরে চলে আসছে।

সেইদিন গাড়িতে করে ছেলেটিকে স্কুল থেকে আনতে যাচ্ছিলাম। মাঝে জ্যামে আটকে যাই। তখনই নজর পড়ে আমার প্রাক্তন স্বামীর শোরুমটি। শোরুমটির দরজা পুরো কাঁচের হওয়ার ভিতরের দৃশ্য দৃশ্যমান। ভিতরে বসে আছে আমার প্রাক্তন স্বামী। তার সুন্দর ভাসা চোখগুলোর নিচে আজ কালি জমে আছে। চুলগুলো উষ্কখুষ্ক। মুখ একদম রক্তশূণ্য। গায়ে পরিধানকৃত বস্তুও বড্ড আগোছালো। কি বিধ্বস্ত তার অবস্থা। তার এমন অবস্থা দেখে আমি চোখ সরিয়ে নেই। অতঃপর গাড়ি আবার চলতে শুরু করে আর আমার বুক চিরে বেড়িয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। চোখের সামনে ভেসে উঠে জীবনের সমীকরণটি। জীবনের কিছু অপ্রিয় সত্যটি।

আমার নিজের বড় বোন কিন্তু বন্ধ্যা। সে কখনো মা হতে পারবে না। এ বিষয় জানা সত্ত্বেও আমার দুলাভাই আমার বড় আপুকে ছেড়ে দেন নি। আপু তো একদম ভেঙে পড়েছিল। মেন্টালি ডিপ্রেসড ছিল। কিন্তু তিনি তখনও মুখ ফিরিয়ে নেন নি বরং আপুকে তিনি আগলে রাখেন। সবসময় তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। সবার সামনে সবসময় আপুর পক্ষ নিয়ে কথা বলতেন তিনি। কয়েক বছর আগেই তারা একটা মেয়ে সন্তান পালক আনেন। এখন বেশ চলছে তাদের জীবন।

অথচ নীলয় ছিল তার পুরো উল্টো। পুরো সত্যতা যাচাই না করেই আমার সাথে যা নয় তাই করেছে। সে যদি একবার এইসব বুঝতো আর আমার কথাগুলো শুনতো আজ হয়তো এই গল্পের পরিহাস অন্য হতো। আমাদের সকলের জীবন অন্যরকম হতো। হয়তো এমনটা হওয়াটাই আমাদের নিয়তিতে ছিল। এইটা ছিল আমাদের জীবনের পরিহাস।
“কিছু কিছু স্মৃতি চাইলেও ভুলা যায়। যেমন মানুষ প্রথম ভালবাসাকে যেমন ভুলতে পারে না তেমনেই প্রথম স্বামীকেও কখনো ভুলা যায় না। স্মৃতির এক কোনে তার বসবাস সবসময় রয়েই যায়। কিন্তু সেটা তুচ্ছ আকারে।

জীবনে অনেকেই অনেক কিছু পেয়েও হারায় আবার কেউ না পেয়েও হারিয়ে ফেলে। হয়তো এইটাই জীবনের পরিহাস। “

লেখা – আছফিয়া ইসলাম

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “জান্নাত জীবনের পরিহাস – জীবনের পরিহাস – অজানা কিছু কষ্টের কথা” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – সাঁঝের বেলার রাঙা গোধূলি (১ম খণ্ড) – Ekta bhalobasar golpo story

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *