স্বন্ধ্যাবেলা – শহরের ভালোবাসার গল্প

স্বন্ধ্যাবেলায় ছাদে এসে সিগারেট খাচ্ছি। আমার এইরকম সিগারেট খাওয়া দেখে, মুনতাহা আমার দিকে প্রখর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে, তার সামনে সিগারেট খেয়ে অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছি। সপ্তাহে এই একদিন ছাদে এসে সিগারেট খায়। আর বাকিদিন গুলো এই সময়টা টিউশনি করি।
আমি সিগারেটের ধোয়াগুলো বাতাসে ছেড়ে দিয়ে মুনতাহাকে বললাম,
‘আপনি মনে হয় অনেক রেগে আছেন? কিছু বলবেন?
‘নাহ। আর আমি কেনো রেগে থাকবো?

‘আসলে আমার উপর তো সব সময় রেগে থাকেন। তাই ভাবলাম আমার উপর এখনও রেগে আছেন হয়তো?
‘আপনার ধারনাটা অনেকটা ভুল। তবে আপনি একটা বেয়াদব ছেলে এইটা কি আপনি জানেন?
আমি আর কিছু বললাম না। সিগারেট খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিতে লাগলাম। চারদিকে অন্ধকার নেমে পড়ছে কিছুটা। এই সময়টা সিগারেটে নিজেকে পুড়িয়ে এই ব্যস্ত শহরটাকে দেখতে ভালোই লাগে।
সিগারেট টানতে টানতে মৃদু হেসে বললাম,
‘আপনি কি কখনো সিগারেট খেয়েছেন?

আমার এই প্রশ্ন শুনে মুনতাহা আমার দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে। কিছু সময় নিরব থেকে বললো,
‘মেয়েরা কি সিগারেট খায়?
‘খায় তো। আমি অনেক দেখেছি। যারা অল্পতেই রেগে যায়, তারা তাদের রাগ কমাতে সিগারেট খায়। আমি তো ভাবলাম আপনিও সিগারেট খেতে ছাদে এসেছেন।
‘এই আপনি চুপ করেন তো। আপনি যে সত্যিই বেয়াদব আজকে বুঝলাম। এইভাবে সিগারেট খাচ্ছেন একটা মেয়ের সামনে লজ্জা করছে না?
‘হিহিহিহিহি, লজ্জা তো মেয়েদের আছে ছেলেদের নেই। আর আমি তো ছেলে আমার লজ্জা পাওয়ার কিছুই নেই।
‘আপনার এই বিচ্ছিরি হাসি হাসবেন না তো।
আমি আর কিছু বললাম না। সিগারেট টা সম্পুর্ন খাওয়ার পর ফেলে দিলাম। পকেট থেকে আরেকটা সিগারেট বের করে মুনতাহার সামনে এগিয়ে দিয়ে বললাম,
‘আপনি ইচ্ছে করলে এই সিগারেট টা খেতে পারেন। আপনার সব রাগ দুর হয়ে যাবে আমার উপর থেকে।
‘আপনার সাথে কথা বলাটাই ভুল হয়েছে। আপনি যে অসভ্য অভদ্র একটা ছেলে।
মুনতাহা আমার উপর রাগ দেখিয়ে ছাদ থেকে চলে গেল। আমি আরেকটা সিগারেটে আগুন ধরিয়ে টানতে শুরু করলাম। এই মেয়েটা আমার উপর সব সময় রেগে থাকে। এই মেয়েটাকে আমি এমনিতেই রাগিয়ে দেয়। তার রাগি মুখটা দেখতে ভালোই লাগে।”
মুনতাহা হলো বাড়িওয়ালার মেয়ে। এই মেয়েটার সাথে সব সময় কথা কাটাকাটি হয়।

“দরজার সামনে দাড়িয়ে কলিংবেল বাজাতেই দরজা খুললো ইলা।
আমাকে দেখে মুখে লেগে থাকা হাসিটা নিমিষেই হাড়িয়ে গেলো।
মুখটা মোলিন করে বললো,
‘স্যার আজতো শক্রবার। আপনার তো আজকে আশার কথা ছিলো না?
আমি মৃদু হেসে বললাম,
‘তোমার সামনে পরীক্ষা। তাই এখন থেকে শক্রবারও এসে পড়াবো।
মনে একরাশ বিরক্তি নিয়ে ইলা পড়তো বসলো। ঝটপট যে পড়াগুলো ছিলো, সে গুলো আমাকে খুব তাড়াতারি দিয়ে বললো,
‘স্যার, আজকে আমাকে এখনি ছুটি দেন। আজকে আমরা সব বান্ধবীরা মিলে একটু ঘুরতে যাবো।
তখনি ইলার মা টেবিলে নাস্তা রাখতে রাখতে বললো,

‘দুইদিন পর পরীক্ষা এখন এত ঘুরাঘুরি কিসের? আগে ভালো একটা ভার্সিটিতে চান্স পাও তার পর যত ইচ্ছে ঘুরাঘুরি করো।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে আন্টি বললো,
‘বাবা ও অনেক ফাকিবাজ। ওর কথা তুমি শোনা না। ওকে তুমি পড়াও।
আন্টির কথা শুনে ইলা তখন কান্না করে দিলো। একহাত দিয়ে খাতায় লিখছিলো অন্যহাত দিয়ে চোখের কোনে লেগে থাকা পানি গুলো মুছছিলো।
ইলাকে যখন পড়ানো শেষ হলো। তখন স্বন্ধ্যা ৭টা বাজে। আমি বাসা থেকে যখন বের হবো তখন আন্টি বললো,
‘তাহসান, আজকে মুরগি গোসত রান্না করছিলাম। অল্প একটু খেয়ে না হয় যাও।

টিউশনি শেষ করে বাসার ভিতরে যেয়ে দেখি আমার রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে মুনতাহা। দেখে মনে হচ্ছে অনেক রেগে আছে। আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। আমার হাতে একটা সিগারেট আছে। পাঁচ টাকা দিয়ে কিনেছি রাস্তার টং দোকান থেকে। মুনতাহা বারবার সিগারেটের দিকে তাকাচ্ছে। আমি সিগারেট যখন ধরাতে যাবো, তখনি মুনতাহা আমার মুখ থেকে সিগারেট টা নিয়ে ফেলে দেয়।
মুনতাহা বললো,
‘এই তোর এত সাহস কিভাবে হয়, আমার নামে বাবার কাছে বাজে কথা বলিস।
আমি কিছুটা অবাক হয়ে মুনতাহার দিকে তাকিয়ে থাকি। এই বাড়িতে ৬মাস ধরে আছি কখনোই মুনতাহা আপনি ছাড়া তুমি বলেনি। আর এই মেয়েটা আজকে তুই করে বলছে।
মুনতাহা আবার বললো,

‘আমি বাহিরে যার সাথে ইচ্ছে হাত ধরে ঘুরে বেড়াবো তুই বাবার কাছে বলার কে? আর কখনোই যদি আমার বিষয় নিয়ে কিছু বলা দেখি, বাসা থেকে বের করে দিবো। বেয়াদব একটা ছেলে।
মুনতাহার কথা চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে হজম করলাম। অবশ্য কথাগুলো হজম করতে সময় লাগলো। মুনতাহার বাবাকে শুধু এইটা বলেছিলাম,
‘আপনার মেয়ের সাথে একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে।
অবশ্য এই কথা বলার কারণও আছে। মুনতাহার সাথে যে ছেলেটার সম্পর্ক, ওই ছেলেটা খুব একটা ভালো না। অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে ছেলেটার।
এই কথাটা বলার কারনে মুনতাহা এতো রেগে গেছে।

একদম ভোর সকালবেলা কে যেনো বারবার কলিংবেল বাজাচ্ছে। ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে দেখি বাড়িওয়ালা দাত বের করে হাসতেছে।
আমাকে দেখে বললো,
‘তাহসান বাবাজি ঘুম কেমন হলো।
‘জ্বি চাচা অনেক ভালো।
‘আজকে কত তারিখ মনে আছে কি?
‘জ্বি চাচা আজকে এক তারিখ।

‘গত মাসের বাড়ি ভাড়ার টাকা এখনও দাওনি। এই মাসের টাকা কবে দিবে?
‘জ্বি চাচা টিউশনি টাকা পেলেই দিবো।
‘দেখো বাবা, আমি এতো কিছু বুঝিনা। আমাকে তিন দিনের মধ্যে সব টাকা আমাকে দিবে। যদি না দিতে পারো তাহলে বাসা ছেড়ে চলে যাবে। এইটা আমার শেষ কথা।
মৃদু হেসে মুনতাহার বাবাকে বললাম,
‘আপনি সময় মতো টাকা পেয়ে যাবেন।
আমার দিকে কিছু সময় অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। হয়তো আমার কথাটা বিশ্বাস করেনি। কারন এই বাসায় ওঠার পর, কখনোই ঠিক মতো বাসা ভাড়া দিতে পারিনি। আগে তিনটা টিউশনি করতাম। এই বাসাতে ওঠার পর ভেবেছিলাম,৩টা টিউশনির টাকা দিয়ে বাসাভারা নিজের খরচ ঠিক মতো চলে যাবে। প্রথম মাসটা ঠিক মতো গেলে দ্বিতীয় মাসে ২টা টিউশনিতে আমাকে
আসতে না করে দেয়। তারপর থেকে ঠিকমতো বাসা ভারা দেওয়া হয়নি।

দুপুর থেকে আজ আকাশটা মেঘলা ছিলো। যখন বিকেল হলো তখন ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো।
ছোট থেকেই ইলার বৃষ্টিতে ভেজার খুব শখ। ইলা তার মাকে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে বৃষ্টিতে ভেজার অনুমতি পেল। খুশিতে গুনগুনিয়ে গান গায়ে যখন সে ছাদে উঠছিলো সে খেয়াল করলো, তার স্যার ড্রয়িং রুমে কাকভেজা হয়ে দাড়িয়ে আছে। ইলার মা ইলাকে বললো,
‘তোমার স্যার এসেছে। আজকে বৃষ্টিতে ভিজতে হবে না।
অন্য একদিন ভিজো।
সেদিন ইলাকে পড়ানোর সময় হঠাৎ ইলা বললো,
‘স্যার, আমি যে আপনার উপর প্রচন্ড বিরক্ত আপনি সেটা কি জানেন?
আমি কিছু না বলে চুপ করে থাকলাম।
ইলা বললো,

‘আমাকে পড়ানো বাদে আপনার কি কোনো কাজ নেই? সকাল নেই স্বন্ধ্যা নেই আমাকে পড়াতে এসে পড়েন। অন্য টিচাররা সপ্তাহে ৩দিন পড়ায় তাও আবার ৪০মিনিট করে। আর আপনি আমায় ঘন্টার পর ঘন্টা পড়ান তাও আবার সপ্তাহে ৭দিনই। আমায় যে ঘন্টার পর ঘন্টা পড়ান সেটা আমার বাবা মার ভালো লাগলেও আমার মোটেও ভালো লাগেনা। আপনার জন্য আমি বাহিরেও যেতে পারিনা। কখন না কখন আবার বাসায় এসে পড়েন। আর বাসায় আসলে আমায় না পেলে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেন। তারপর আমি বাসায় আসলে বাবা মার থেকে বকা শুনি। বৃষ্টিতে ভিজতেও পারিনা আপনার জন্য। বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে পড়াতে এসে পড়েন। আমি ছাত্রী হিসাবে যথেষ্ট ভালো। কোনো না কোনো পাবলিক ভার্সিটিতে আমার চান্স হয়ে যাবে। দয়া করে আমার উপর এতো চাপ দিবেন না।
ইলার কথাগুলো চুপচাপ বসে থেকে হজম করলাম। তারপর ওকে পড়ানো শেষ করে বললাম,
‘কালকে স্বন্ধ্যা ৭টার দিকে আসবো।

ইলার সারা শরীর কাপছে। এতো কথা শুনানোর পরও কিভাবে বলে কালকে আবার আসবো। এতো বেহায়া কেনো এই লোকটা। ইলার অনেক রাগ হচ্ছে এই লোকটার উপর।
পড়ানো শেষ করে যখন বাসা থেকে বের হবো তখন আন্টিকে বললাম,
আন্টি এই মাসের টিউশনির টাকা টা যদি দিতেন?
আন্টি বললো,
‘তাহসান দেখতেই তো পারছো এখন সময়কাল ভালো যাচ্ছে না। টাকা না হয় কিছুদিন পর নাও।
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। মাথা নাড়িয়ে বাসা থেকে বের হয়ে এলাম। কালকে বাসাভারার সম্পুর্ন টাকা দেওয়া লাগবে। এতো টাকা এখন কোথায় পাবো। তখন আমার বন্ধু আসিফ কে ফোন করে বললাম,
‘দোস্ত আমার কিছু টাকা প্রয়োজন ছিলো। তুই কিছু টাকা ধার দিতে পারবি?
ওপাশ থেকে বললো,
‘তকে যে টাকা গুলো যে দিবো। সেই টাকা যে আমাকে দিতে পারবি না।
আমি আর কিছু বললাম না। সাথে সাথে ফোনটা কেটে দিলাম। ও ইচ্ছে করলে টাকা গুলো আমাকে এমনিতেই দিতে পারতো। ও অনেক বড় লোকের ছেলে। সামান্য কিছু টাকা দিতে সাহস পেলো না। অথচ গত মাসে আমার থেকে ৫হাজার টাকা নিয়ে তার গার্লফ্রেন্ড কে গিফট করছে।
মনের মাঝে পৈশাচিক হাসি দিলাম।

‘জানেন আপনার জন্য সেই ছেলেটার সাথে সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে।
আমি মুনতাহার দিকে তাকালাম। এখন রাত ১০টা বাজে। রুমে একা থাকতে ভালো লাগছিলো না। তাই ছাদে এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তখন মুনতাহা ছাদে এসে আমাকে কথাটা বললো।
আমি বললাম,
‘কেনো?
‘বাহরে আপনি তো আব্বুরে সেই ছেলেটার কথা বলে দিছেন। আব্বু আবার সেই ছেলেটার সাথে দেখা করে। জানেন ওই ছেলেটা আব্বুর সাথে অনেক বাজে ব্যবহার করছে। তাই আমিও ওই ছেলেটার সাথে আর কোনো সম্পর্ক রাখিনি।
মুনতাহার কথাগুলো শুনে মৃদু হেসে দিলাম।
আমি আর তাকে কিছু বললাম। অনেক্ষন নিরব থাকলাম। আকাশের দিকে উদাস মনে থাকিয়ে থেকে
সাদিয়া আবার বললো,
‘আজ যে সিগারেট দেখছিনা?
আমি মৃদু হেসে বললাম,
‘ভেবে দেখলাম আমাকে সিগারেটে মানায় না। তাই সিগারেট খাওয়া বন্ধ করে দিছি।
‘বাহ আপনি দেখছি ভালো হয়ে যাচ্ছেন। তো আমাদের বাসা ছেড়ে কবে যাচ্ছেন?
‘আপাতত এই মাসে যাচ্ছি না। আরো দুইমাস এখানে থাকবো।
‘আপনি কি জানেন? আপনাকে আমার ভালো লাগে না অসহ্য লাগে। আপনি আমাদের বাসায় আশার পর আমার জীবনটা অভিশপ্ত হয়ে গেছে। দোয়া করে আমাদের বাসা ছেড়ে অন্য কোথায় চলে যাবেন আশা করি।
‘হিহিহিহিহি, দুইমাস পর এই বাসা ছাড়ছি তার আগে না।
মুনতাহা আমার দিকে করুন চোখে তাকালো। মনে হলো আমি এই বাসায় আছি দেখে সে অনেক বিরক্ত।

টিউশনি করার জন্য বাসা থেকে বের হচ্ছি। এমন সময় বাড়িওয়ালা সামনে এসে দাড়ালো।
আমাকে দেখে বললো,
‘তাহসান, আজ কত তারিখ মনে আছে?
‘জ্বি চাচা, আজকে দশ তারিখ।
‘আমাকে তিন তারিখে সব টাকার দেওয়ার কথা ছিলো এখনও দিলে না?
‘আসলে চাচা টিউশনির টাকা পায়নি।
‘এই শোনো আমাকে এইসব কথা শুনাতে আসবে না। তুমি যত তারাতারি পারো আমাদের বাসা ছাড়া চলে যাও।
আমি আর কিছু বললাম না। মাথা নিচু করে কথাগুলো শুনলাম।
এই শহরে টাকা না থাকলে পদে পদে মানুষের কথা হজম করতে হয়।

ইলাকে পড়ানো শেষ করে ইলাকে বললাম,
‘আমার কিছু কথা শোনার সময় হবে তোমার?
‘জ্বি স্যার বলেন।
আমি ইলাকে বলতে শুরু করলাম,
‘তোমাকে অযথা পড়ার চাপ দিচ্ছি। কি করবো বলো, তোমাকে ঘন্টার পর ঘন্টা পড়াই কারণ এতোক্ষন পড়ালে দুইবার নাস্তা পাই। মাঝে মাঝে কপাল ভালো হলে ভরপেট ভাত জুটে যায়। খুব দরিদ্র পরিবারের ছেলে আমি। এই টিউশনির টাকা দিয়ে গ্রামে ছোট বোনের পড়ার খরচ আমাকে দিতে হয়।
এই ঢাকা শহরে ৩বেলা খাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। সকালে শুরু হয় এককাপ চা দিয়ে আর ৫টাকার পাউরুটি দিয়ে। দুপুর শেষ হয় মুড়ি দিয়ে। কিন্তু বিকেল থেকে ক্ষুদার অসহ্য যন্ত্রণা আর সহ্য করা যায় না। তাই বিকেল থেকে স্বন্ধ্যা পর্যন্ত তোমাকে পড়াই শুধু খাবারের আশায়।
আমি আর কিছুই বললাম না। ইলা আমার দিকে কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
কিছুদিন পর ওর পরীক্ষা। আজকে শেষদিন ছিলো ইলাকে পড়ানো।
একটু পর আন্টি এসে বললো,
“বাবা এই নাও তোমার টিউশনির টাকা। এখানে পাঁচ হাজার টাকা আছে।
টাকাগুলো নিয়ে এক প্রকার কান্না করে দিলাম। বাসা থেকে বের হতে যাবো তখনি ইলা বললো,
‘স্যার মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় আসবেন কিন্তু।
আমি ইলার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বাসা থেকে বের হয়ে এলাম।”
পড়ন্ত বিকেল বেলায় ছাদের এক কোনে দাড়িয়ে আছে মুনতাহা। হাতে নীল রঙের ডায়েরি। অবশ্য ডায়েরিটা ভারাটিয়া ছেলেটার। গত দুদিন হলো বাসা ছেড়ে চলে গেছে। এই ডায়েরিটা ছেলেটা ভুলে হয়তো ফেলে গেছে। অন্যের ডায়েরিটা পড়া কখনোই ঠিক না। কিন্তু মুনতাহার মন কেন জানি পড়তে খুব ইচ্ছে করছে। এই বিদঘুটে ছেলেটা ডায়েরিতে কি লিখতে পারে সেটা জানার জন্যই ডায়েরিটা খুললো মুনতাহা।

ডায়েরিটা খুলে মুনতাহা অবাক।
ডায়েরির প্রথম পৃষ্ঠাতে সুন্দর করে পেন্সিল দিয়ে মুনতাহা নাম লেখা।
মুনতাহা দ্বিতীয় পৃষ্ঠা উল্টে দেখলো তাতে লেখা,
“দরিদ্র পরিবের থেকে ঢাকা শহরে এসেছিলাম ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করতে। কিন্তু এই শহর তো দরিদ্র ছেলেদের জন্য না। তারপরেও বৃথা চেষ্টা করতে থাকি একজনের মায়ায় পরে। ভাগ্যের পরিহাসে তার কাছেও অসহ্য বিরক্ত কর হয়ে গেছি।
চলে যাচ্ছি এই ব্যস্ত শহর থেকে।
মুনতাহা ডায়েরী বন্ধ করে আকাশের দিকে উদাস মনে থাকিয়ে থাকে।
দেখতে থাকে এই ব্যস্ত শহরটাকে।
এই শহর থেকে কত জনই তো হাড়িয়ে যায় স্বন্ধাবেলায়।

গল্প- স্বন্ধ্যাবেলা
লেখা- তাহসান আহমেদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *