প্রাপ্তির অপ্রাপ্তি (১ম খণ্ড) – প্রেমের দুঃখের গল্প

প্রাপ্তির অপ্রাপ্তি – প্রেমের দুঃখের গল্প: বাসর ঘরে বসে আছি আমি। আজ আমি মিসেস এলিজা লিনোর মাহমুদ চৌধুরী। একটু আগেও আমি মিস ছিলাম। ছিলাম বাড়ির মেয়ে। আর এখন আমি কিছু সময়ের ব্যবধানে মিসেস হয়ে গেলাম।


পর্ব ১

আহহ….।
এই কে কাগজ দিয়ে ঢিল ছুড়লো রে?

ক্লাস রুমে বসে আছি। ক্লাস থেকে স্যার চলে যাওয়ার সাথে সাথেই পিঠে একটা কাগজের ঢিল এসে লাগে। পেছনে তাকিয়ে দেখি আমার বজ্জাত হিরো দরজায় দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। ওর হাসি দেখে আমিও মনে মনে হেসে ফেললাম। কি সুন্দর করেই যে হাসে ও।

ওর হাসি দেখে প্রতিবার ক্রাস খাই আমি। বজ্জাত টা হাতের ইশারা করে ডাকছে আমায়। কিন্তু আমি তো এখন যাবো না মিস্টার। আপনি যতোই ডাকেন। নিজে ক্লাস বাদ দিয়ে ঘুরাঘুরি করবে আর আমাকেও করতে দিবে না। অবশ্য আমার আশেপেশেই ঘুরঘুর করে। যতক্ষণ আমায় দেখে ততক্ষণ ই নাকি তার নিশ্বাস ঠিক করে নিতে পারে। পাগল একটা।

জোহান ডাকার পর আমি আরো একটা ক্লাস করে বের হয়েছি। ওহ বলাই তো হয়নি। ও হচ্ছে জোহান। আমার প্রেম.. আমার আত্মা… আমার ভালোবাসা ..আমার দুনিয়া। জোহান অনার্স ফাইনাল ইয়ার এ কেমেষ্টি ডিপার্টমেন্টে পড়ে। আমি এলিজা। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে ইকোনোমিক্স ডিপার্টমেন্টে পড়ি। জোহান আর আমি একি কলেজে পড়ি।

আমি ক্লাস থেকে বের হয়ে হাটতে থাকি। একটু পর দেখি জোহান ও আমার পাশে হাটছে। ও যখন আমার পাশে হাটে তখন শুধু মনে হয় এই পথ যদি না শেষ হয়।
~ তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?

~ এইই তুমি আমার মনের কথা শুনতে পাও নাকি?
~ কই নাতো। আমি তো মনে মনে গান গাইছিলাম তাই প্রথম লাইনের পরের লাইনটা তোমায় শোনালাম আর কি। তুমিও বুঝি এই গানটিই গাইছিলে?
~ হুহ ডং।

~ ওহ তাই বুঝি। আজ কিন্তু একজন আমার দেওয়া পায়েল টা পড়ে এসেছে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
~ তো মিস্টার তুমি কি আমার আগা গোড়া খেয়াল করো নাকি? আমার সেলোয়ার দিয়ে তো পায়েল ঢাকা।
আমার কাছে এসে চশমাটা চোখ থেকে একটু নামিয়ে
~ তো অন্য কাউকে খেয়াল করবো বুঝি?

জোহান আগে আগে যাচ্ছে। আমার তো রাগ হলো একটু.. বেশি না তেমন। কারন আমি জানি অন্য কোন মেয়ের দিকে কখনোই তাকাবেনা। তবুও জোরে জোরে বললাম, করেই দেইখো না.. গলা টিপে মেরে ফেলবো একদম।
জোহান হাসতে হাসতে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেল।

কতো গুলো সীট ফটোকপি করে নিলাম। দোকান থেকে বের হয়ে দেখি কলেজের সামনে রিকশায় বসে বাদাম চিবোচ্ছে আমার হিরো। আমি পাশে যেতেই সিটি বাজিয়ে বললো
~ আমার নায়িকা কি আমার পাশে বসে রিকশায় হাওয়া খাবে না? হেসে দিলাম আমি। রিকশায় উঠে বসে বললাম
~ হাওয়া খেতে খেতে বাসায় যাবো।

জোহান আমার দিকে তাকিয়ে বললো
~ নায়িকার বাসার আগেই নেমে যেতে হবে। নইত নায়িকার বড়ো লোক বাবা আমার কোমড় ভাঙবে। আরো হাসি পেলো আমার। তেমন হাসলাম না। জোহান আমার দিক একটু মুখটা এগিয়ে বললো
~ তোমার ঐ চিরল দাতের হাসি বড্ড ভালোবাসি।

~ আহা কি রোমান্টিক। বাদাম খাবো। হা..।
জোহান বাদাম ছিলে আমাকে খাইয়ে দিয়ে থাকে। আর আমি চিবুতে চিবুতে হাওয়ায় কেশ উড়িয়ে একরাশ ভালোলাগা নিয়ে রিকশায় বসে থাকি।

বাসার একটু সামনে আসতেই জোহান রিকশা মামাকে বলে, মামা দাঁড়াও। রিকশা মামা রিকশা থামায়। আমার দিকে তাকিয়ে জোহান বলে
~ হৃদহরিনী আপনার বাসার কাছাকাছি এসে গেছি। এবার বিদায় দেন আমাকে। আপনার পিতা দেখিলে যে প্রবলেম হইবে।
~ সাবধানে বাসায় যেও আমার প্রাননা। গিয়ে আমাকে টেক্সট করিতে ভুলিও না।
~ যথা আজ্ঞা।

রিকশা মামার দিকে তাকিয়ে বললো
~ এই মামা.. সোজা ডান পাশ দিয়ে চলে যাও। একদম বাসার গেইটে নামিয়ে দিবা। আবার গলির সামনে নামিয়ে দিও না যেন।
রিকশা আলা মামা ~ আইচ্ছা।

রিকশা থেকে নেমে ডাইরেক্ট বাসায় ঢুকে পড়লাম। আম্মু দরজা খুলে দিল। ভিতরে ঢুকে দেখি ড্রয়িং রুমে পাপা কার সাথে বসে যেন কথা বলছে। বললে বলুক আমার কি? আমার পাপা নেতা মানুষ। কতো লোক যে এ বাসায় এসে এভাবে পাপার সাথে আলোচনা করে বলাই বাহুল্য। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রুমে চলে এলাম। ব্যাগ রেখে আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলাম। সুন্দর করে একটা সাওয়ার নিয়ে চেঞ্জ করে বেরিয়ে এলাম।

রুমে দেখি পানি নেই। পানি খাওয়ার জন্য ডাইনিং রুমে এলাম পানি খেতে। ফট করে সামনে এসে একজন দাঁড়িয়ে পড়ল। এই লোক তো পাপার সাথে কথা বলছিল। মুখের দিকে তাকিয়েই আমার আত্মা শুকিয়ে গেলো। সামনে স্বয়ং লিনোর মাহমুদ চৌধুরী দাঁড়িয়ে। অনেক বড় ক্ষমতাশালী লোক উনি। কিন্তু ইনি জোকের মতো আমার পিছু লেগেছেন। আজ দেখি বাসায় এসেছেন।

একদিন…

উনি এক্সিডেন্ট করে হালকা চোট পান। গাড়ি রেখে ফুটপাতে এসে দাড়ান। হাত থেকে রক্ত বেরোচ্ছিলো খুব। আর পায়ের চামড়াও ছিলে গেছে। উনি হাত বার বার চেপে ধরে রক্ত পড়া কমানোর চেষ্টা করছেন। আমি তখন সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। হটাৎ সামনে দেখি একটা লোক দাঁড়িয়ে উশ হাস করছে। আর তার হাত থেকে রক্তের ছিটে বের হচ্ছে। আমি এগিয়ে গেলাম লোকটির দিকে। দুপুরের কাঠ ফাটা রোদে কাওকেই সামনে পেলাম না। শুন শান নিরব জনমানবহীন এলাকা।

আমি কাছে গিয়ে বললাম, কিভাবে হলো আপনার এরকম?
উনি আমার দিকে না তাকিয়েই বললো, লিটিল এক্সিডেন্ট করেছি। আশে পাশে কোন হসপিটাল অর ফার্মেসিও নেই। প্লিজ হেল্প মি।

আমার খুবই মায়া হলো লোকটার উপর। কিভাবে আহতো হয়ে কষ্ট পাচ্ছে। আহারে বেচারা।
আমি উনাকে পাশেই একটা গাছের গুড়ির উপর বসতে বললাম। উনি বসলেন। আমিও গিয়ে উনার সামনে বসলাম। ব্যাগ থেকে মাম পট টা বের করে উনার হাতের রক্ত ধুয়ে দিলাম।

পানির ছোয়ায় হয়তো জালা করছিল তাই দেখলাম উনি দাতে দাত লাগিয়ে শক্ত করে রেখেছেন। তারপর বক্স থেকে এ্যন্টিসেপটিক বের করে লাগিয়ে দিলাম। ব্যান্ডেজ দিয়ে কোন মতে বেধে দিলাম। আমি আবার এতো ভালো ব্যান্ডেজ করতে পারি না। আর এই সব আমার ব্যাগে অলটাইম থাকে। আমার আম্মু এগুলো ঢুকিয়ে দেন। কখন কী জানি হয় বলাতো যায় না। এইযে আজ এই লোকটার উপকার হলো।

আমি উনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি একনজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। অদ্ভুত সেই দৃষ্টি। আমার অসস্থি লাগল একটু। আমিই বললাম, ব্যথা কি খুব বেশী করছে? উনি আমার জবাব না দিয়ে বললেন, নাম কি তোমার? আমি বললাম, এলিজা খান। উনি নিজে থেকেই বললেন, আমি লিনোর মাহমুদ চৌধুরী। উনার নাম শুনে আমি চমকে উঠলাম। এই নাম তো আমি শুনেছি আগে। বেল পাওয়ার ফুল লোক। ইনিই তাহলে উনি।

উনি আমাকে চমকে দিয়ে বলে, এলিজা বাসায় যাও। আর বাসায় গিয়ে তোমার বাবাকে আমায় কল দিতে বলবে। আমিও বাসায় এসে পাপাকে উনাকে কল দিতে বলেছিলাম। পাপা ফোন দিয়েছিল কিনা জানি না। তবে এই লোকটা লোক দিয়ে প্রায়ই আমার জন্য টেডি, লাভ লেটার এই সব পাঠায়। মাঝে মাঝে দেখি রাস্তায় ও দাঁড়িয়ে থাকে।

আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আই লাভ ইউ।
ও আমার আল্লাহ, এই লোক এতোদিন লেটার দিয়েছে আর এখন বাসায় এসে সরাসরি কোন ভনিতা ছাড়াই বলে দিলো। এখন আমি কি বলি? উনাকে কি বলবো আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি?

আআমি আসলে আপনাকে ভালোবাসতে পারবো _
তখনি পাপা ডাক দিলো, লিনোর বাবা এদিকে আসো। তোমার আন্টির সাথে পরিচিত হও।
~ আসছি আংকেল।

উনি যেতে যেতেই বললেন, তোমাকে নরমাল ড্রেসেই বেশি সুন্দর লাগে।
মাথা ঘুরতেছে। এইগুলা কোন উটকো ঝামেলা এসে জুড়লো আমার কপালে।

রাতে হেড ফোন কানে দিয়ে ফুল সাউন্ডে গান শুনছি আর আমার বজ্জাত হিরো টার সাথে চ্যাট করছি। তখন আম্মু এসে আমাকে ইশারায় ডেকে নিলেন। আমি ফোন রেখে হেড ফোন খুলে আম্মু পাপার রুমে এলাম। দেখি পাপা শুয়ে আছে আর আম্মু পাশে দাড়িয়ে আছেন। আমি ইশারা করতেই আম্মু বললেন, তোর পাপা তোর সাথে কথা বলবে।
পাপা আমাকে দেখে উঠে বসলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, এখানে বসো। আমিও বসলাম।

তারপর পাপা শুরু করলেন
“দেখো এলিজা তুমি বড়ো হয়েছো। আমাদের এখন উচিত তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করা। এসময় টানের সময়। এই বয়সে মেয়েদের বিয়ের জন্য জোর থাকে বেশি। তাই আমরা তোমাকে বিয়ে দিতে চাই। তুমি দেখেছো আজ বাসায় লিনোর মাহমুদ চৌধুরী এসেছিলেন। উনার সাথে পরিচিত থাকলেও তেমন সুসম্পর্ক ছিল না আমার। উনি অনেক বড় মাপের মানুষ।

প্রচুর ক্ষমতাশালী। মন্ত্রীদের সাথে উঠা বসা উনার। তোমার মাধ্যমেই আমার সাথে সুসম্পর্ক হয়েছে উনার। উনি তোমাকে পছন্দ করেন। তোমাকে বিয়ে করতে চায়। উনার মতো একজন তোমাকে বিয়ে করতে চায় এইটা আমাদের বড় সৌভাগ্য। লিনোরের সাথে এই নিয়ে কথা বললাম। ও আমাকে জানালো তুমি চলন বলন নাকি সুবিধার না। তাই কয়েকদিনের মধ্যেই তোমাকে বিয়ে করতে চায়।”

কিন্ত পাপা আমি _
“দাঁড়াও। আমি তোমার মতামত জানতে চায় নি। তুমি ভালো করেই জানো আমি যেহেতু ঠিক করেছি সেহেতু তোমাকে ওখানেই বিয়ে করতে হবে। কি নেই বলো লিনোর মাহমুদ চৌধুরীর। বাড়ি, গাড়ি, অর্থ, সম্পদ, ক্ষমতা সব আছে। তুমি রাজ রানী হয়ে থাকবে। ওর সাথে বিয়ে হলে আমার জায়গাটা কোথায় হবে ভাবতে পেরেছো তুমি? আমার মান সম্মান কতো উপরে উঠে যাবে। সামনের ইলেকশনেও দাঁড়াবো ভাবছি। যাও ঘরে যাও আর তোমার আম্মুর কাছ থেকে লিনোরের নাম্বার নিয়ে যেও। নতুন জীবন শুরু করো আর সুখী হও।”

এবার আমি কি করবো? লিনোর কে যে কিছুতেই বিয়ে করতে পারবো না। আমি যে জোহান কে ভালোবাসি। পাপাকে বলতেই হবে।
“পাপা আমি এই বিয়ে করতে পারবো না। আমি জোহানকে ভালোবাসি।”

পাপার দিক তাকিয়ে থাকতে পারলাম না। আমার কথা শুনা মাত্রই পাপার চেহারা পুরো লাল হয়ে গেছে। তবুও নিচ দিকে তাকিয়ে বলতে থাকলাম।
“পাপা জোহান ও আমাকে ভালোবাসে। ও আমার কলেজেই পড়ে। ফাইনাল ইয়ারে। কেমিস্ট্রি বিভাগে।”
“হুম। বাসা কোথায়?”

“কলেজের পাশেই”
“বাসায় কে কে আছেন?”
“ওর মা আর ওর চাচাতো বোন। বাবা নেই”
“সংসার চলে কিভাবে?”

“ওর বাবার পেনশনের টাকায়।”
“হুম ব্যবস্থা করছি আমি। যাও ঘরে যাও”
চলে এলাম আমি নিজের রুমে। পাপাতো বললো ব্যবস্থা করবে। কি করবে পাপা? কথা বলবে


পর্ব ২

উফ আজকে কলেজের অনেক লেট হয়ে গেল। রাতে ঠিক করে ঘুমোতে পারিনি। সারারাত শুধু পাপার কথাটাই মনে হয়েছে। ব্যবস্তা করবে। মানে কি? জোহান কে কি পাপা মেনে নিবে? আমার কেন জানি খুব অস্থির লাগছিল।

তাই ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে গেছে। রেড়ি হয়ে বের হবো তখনি আম্মু খাবার নিয়ে এসে মুখের মধ্যে কয়েকবার ঢুকিয়ে দিলো। পানি খেয়ে বাইরে চলে এলাম। আজকে গাড়ির ড্রাইভার টাও আসে নি যে তাড়াতাড়ির সময় গাড়ি নিয়ে বের হবো। একটা রিকশা ডেকে নিলাম।
রিকশা থেকে গেইট এর সামনে নামতেই তুষ্টি আমাকে টেনেই নিয়ে যেতে লাগলো।
~ আরে আরে তুষ্টি কি হয়েছে এভাবে টানছিস কেন?

~ কি হয়নি সেইটাই বল। জোহান ভাইয়াকে পুলিশে নিয়ে যেতে এসেছে। জোহান ভাইয়া নাকি একটা মেয়েকে খালি ক্লাস রুমে নিয়ে গিয়ে অসভ্যতামী করছিল। তখনি নাকি একটা স্যার দেখে ফেলে। তারপর পুলিশে খবর দেয়।
~ নাহহহহ এ হতে পারে না। জোহান কিছুতেই এই কাজ করতে পারে না। ও আমার দিক ছাড়া অন্য কারো দিকে সেই ভাবে তাকানো তো বাদ ভাবতেও পারে না। আমি বিশ্বাস করি না।

দৌড়াচ্ছি আমি। আমার পথ যেন শেষ ই হচ্ছে না। লিফটের কাছে গিয়ে আটকে গেলাম। লিফট এখন অনেক উপরে। তাই সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলাম। জোহানের ডিপার্টমেন্টে গিয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজছি কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না। তখনি একটা শক্ত হাতে আবদ্ধ হয়ে গেল আমার কোমল হাতটা। তাকিয়ে দেখি লিনোর আমার হাত ধরে আছে। আমার দিকে রাগী লুক দিয়ে বলে
~ জোহানকে ভুলে যাও।

ওর ছায়াও আজ থেকে তোমার উপরে পড়বেনা। কতবার বলেছি ভালোবাসি তবুও কেন ঐ ফকিরের পিছনে পড়ে আছো? ফুর্তি করতে চাইলে আমাকে বলতে পারো। কোন অংশে কম তো নয় বরং বেশিই যোগ্যতা আছে আমার।
~ চুপ করুন আপনি। ছিহ কতো নোংরা আপনি। আপনি আমাকে ভালবাসার অনেক আগে থেকে আমি জোহানকে ভালোবাসি। আর সারাজীবন ই বাসবো।

~ আর এক বার জোহানের কথা মুখে আনলে আমার থেকে কেউ হবে না এলিজা। ভুলে যাও ওকে।
~ কিছুতেই না। আমি জোহানকে ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি। আহহ..
~ আর একবার বলবিতো আরেকটা চড় দিবো। তোকে আর কলেজেই আসতে দেওয়া হবে না। চল আমার সাথে।
এই বলে উনি আমাকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছেন। আর আমি চিৎকার করে বলছি~ যাবো না আমি। ছাড়ুন আমাকে। আমি জোহানের কাছে যাবো।

~ আজ থেকে তোর বাড়ির বাইরে বের হওয়া বন্ধ। তিনদিনের মধ্যই তোকে বিয়ে করবো আমি। যতো তাড়াতাড়ি জোহানের নাম মন থেকে মুছে ফেলবি তোতো তোর জোহানের জন্য ভালো।
উনি বাধা গরুর মতো আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। সামনে একজন স্যার পড়লেন।

~ একি লিনোর সাহেব। একি করছেন আপনি? আপনার কথা মতো একটা ছাত্র কে পুলিশে দিয়ে দিলাম। আর এখন আপনি আরেকজন ছাত্রীকে এইভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের ছাত্র ছাত্রীর সাথে এরকম বিহেব করতে পারেন না আপনি।
~ আমার যা ইচ্ছা তাই করবো। নিজের লিমিটের মধ্যে থাকুন। কলেজে ডোনেশন দেয়া বন্ধ করে দিলে বুঝবেন লিনোর কে আটকানোর শাস্তি কিরকম।
স্যার চুপ হয়ে যায়।

আমাকে এনে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে গেট লক করে দেন। আমি ছটফট করছি উনার গাড়ি থেকে নামার জন্য। কিন্তু পারলাম না। আমাকে নিয়ে উনি আমার বাসায় চলে এলেন। আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে টানতে টানতে বাসায় নিয়ে আসে। পাপার সামনে এনে বলে
~ বিয়ের ব্যবস্থা করুন।

তিনদিনের মধ্যে বিয়ে হবে। আপনার মেয়ে যেন বাসা থেকে বের না হতে পারে। কোন উল্টাপাল্টা কিছু শুনলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। ভেবেছিলাম আপনার মেয়ে মর্ডান এ যুগের মেয়ে। মরীচিকা থেকে চক চক করা জিনিসে হাত দিবে। কিন্তু না আপনার মেয়ে বড্ড বোকা আর সেকেলে। নিজের ভালোটাই এখনো বুঝতে শিখে নি। আর ওকে বলে দিবেন জোহানের নাম ভুলে যেতে। লিনোর মাহমুদ চৌধুরীর নাম জপ করতে।

রুমে বসে কাঁদছি আমি। লিনোর চলে যাওয়ার পর পাপা অনেকগুলো কথা শুনিয়ে গেছে আমাকে। এদিকে জোহান লকাপে আর এইদিকে আব্বু ঐ লোকটার সাথে বিয়ে দিচ্ছে। ভাবতে পাচ্ছি না আমি আর। ভুবন জড়ানো কান্না আসছে আমার। না না এভাবে বসে থাকলে চলবে না আমার। জোহানের কাছে যেতে হবে আমাকে যেভাবেই হোক। আমি কিছুতেই ঐ লোকটার সাথে বিয়ের পিড়িতে বসবোনা।

রাতে আম্মু এসে দরজা ধাক্কাচ্ছে
~ এলিজা। আম্মু টা ভালো আমার দরজা টা খুল। সেই সকালে খেয়েছিস রাতে না খেয়ে ঘুমোলে শরীর খারাপ লাগবে মা।

আমি ভাবতে পারছিনা কিছুতেই আমি এদিকে কষ্টে মরে যাচ্ছি আর আমার খাওয়া নিয়ে পড়ে আছে উনারা। আম্মুও কি বুঝেনা তার মেয়ের কতোটা কষ্ট হচ্ছে। বার বার দরজা ধাক্কানোর জন্য আমি দরজা খুলে দিতেই আম্মু খাবার হাতে ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। টেবিলে প্লেট টি রেখে আমার কাছে এসে চোখের পানি মুছে দিলো। আম্মুর চোখ ও ছল ছল করছে।
~ কি করছিস মা কেঁদে কেটে। চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছিস। ঐ ছেলেটাকে তুই ভুলে যা মা।

জানিস তো তোর বাবা কেমন ধাচের মানুষ। তার স্বার্থের জন্য সে সব সময় এগিয়ে। লিনোর এর সাথে তোর বিয়ে যখন বলেছে দিবে তখন দিয়েই ছাড়বে। তোর আমার কিছুই করার নেই মা। তাছাড়া তোর বাবা কিন্তু তোকে খুব ভালোবাসে মা। ঐ ছেলেটার থেকে তুই লিনোরের কাছে ভালো থাকবি। রাজরানীর মতো থাকবি মা। আর ঐ ছেলেটাতো ভালো না। আজ নাকি পুলিশে ধরে নিয়ে গিয়েছে কি জানি কুকর্মো করার জন্য। এভাবে ভুল ভাল লোকের জন্য নিজেকে কষ্ট দিস না মা।

~ সব মিথ্যা কথা আম্মু সব মিথ্যা। জোহান খুব ভালো ছেলে মা। ও ঐসব করতে পারে না। লিনোর ওকে প্লান করে ফাসিয়েছে আম্মু। আম্মু প্লিজ তোমাদের পায়ে পড়ি আম্মু জোহানকে জেল থেকে বের করো। জোহানের কষ্ট হচ্ছে আম্মু। ওর মতো সহজ সরল লোক জেল, পুলিশ এসব সহ্য করতে পারবে না। নির্দোষ হয়ে ও কেন জেলে থাকবে। ওকে যদি পুলিশ রা মারে? না না আম্মু প্লিজ পাপাকে বলো ও নির্দোষ। ওকে ছেড়ে দিতে। প্লিজ __প্লিজ।

আম্মু কে জড়িয়ে হাওমাও করে কাঁদতে থাকলাম। বুকের ভিতর থেকে সমস্ত আর্তনাদ বেরিয়ে আসছে। কান্না এমনো কষ্টের হয় কখনো জানি ছিলো না আমার। ছোট বেলা থেকে এখন পর্যন্ত যত কেঁদেছি সব কান্নায় ছিল আমার ভাবের কান্না নযতো সুখের কান্না। আজ এই প্রথম কষ্টের কান্না করছি আমি।

ক্যাম্পাসে বসে আছি। কোথা থেকে যেন ধরফর করে জোহান এসে আমার সামনে হাটু মোড়া দিয়ে বসে পড়ল। চোখে মুখে আতঙ্ক ছড়িয়ে আছে। আমি বললাম, একি এমন দেখাচ্ছে কেন তোমাকে? কি হয়েছে তোমার?
~ তুমি রবিবার আমাকে যে বললে ঘুরতে গিয়েছিলে। কার সাথে ঘুরতে গিয়েছিলে তুমি? ফাহমিদা বললো তুমি নাকি ওর ভাইয়ের সাথে ঘুরতে গিয়েছিলে? হ্যাঁ। বলনা?

পিছনে তাকিয়ে দেখি মুখে হাত রেখে ফাহমিদা নিঃশব্দে হেসে কুটি কুটি। আমাকে চোখ টিপ দিতেই আমি বুঝে যাই। জোহানকে বললাম,
~ হা গিয়েছিলাম তো।

ফাহমিদা যেতে চেয়েছিল কিন্তু আমাকে আর ভাইয়াকে একটু প্লেস দেওয়ার জন্য বেচারি আর গেল না। তারপর আমি আর ভাইয়াই গেলাম। লং ড্রাইভে গিয়েছিলাম। হুয়াট এ ফিলিংস।
~ কেন এত ফিলিংস এর কি আছে? জড়িয়ে ধরেছিল তোমায়? আমাকে বললে আমি কি নিয়ে যেতাম না? আমি কি মরে গেছি যে অন্যপুরুষ নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে?

আমি চুপ হয়ে গেলাম। কি বললো ও? মরে যাওয়ার কথা কেন বললো? কলিজায় যে ধপ করে উঠলো সে কি বুঝলো না? পিছন থেকে ফাহমিদা জোরে জোরে হাসতে হাসতে বললো, ভাইয়া এটুকুতেই মরার নাম মুখে এনে নিলেন। সত্যই অবাক হই আপনার পাগলামো ভালোবাসা দেখে। মজাও বুজেন না দেখছি।

ফাহমিদা চলে গেলে জোহান আমার পাশে এসে বসে। চুপচাপ রাম গুরুদের ছানার মতো বসে আছে। আমার হাসি পেয়ে গেল। আমি হাসতে লাগলাম। বাব্বাহ একটু আগে কতটা আনাড়ি লাগছিল ওকে। এখন কতোটা স্বাভাবিক। আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো, সব সময় এতো হাসো কেন তুমি?

~ পরে কাঁদবো বলে।
~ হুম। আর সেই কান্না যেন শুধু আমার জন্য হয়। আমি ছাড়া অন্য কারো জন্য কখনো কাদবে না তুমি।
দেখ জোহান আজ আমি কাঁদছি।

তোমার জন্যই কাঁদছি। তোমার কষ্টে আমারো প্রচুর কষ্ট হচ্ছে। কেমন আছো তুমি ঐ চার দেয়ালের মাঝে? আমার জন্য আজ তোমাকে এতটা কষ্ট পেতে হচ্ছে। কিভাবে বের করবো আমি তোমাকে ঐ চার দেয়াল থেকে? আমি যে বন্দি। কিন্তু আমাকে যে তোমার সাথে দেখা করতে হবে। তোমাকে বের করতে হবে। এর জন্য থানায় গিয়ে তোমার সাথে দেখা করা উচিত আগে। আমাকে বের হতে হবে। যে করেই হোক।

বাড়িতে বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। ঘর ভর্তি লোকজন। এত লোকের মধ্য মিশে গিয়ে ভালোভাবেই বের হতে পারবো। এই ভেবে খুব সাবধানে বের হতে নিলাম।

যেই দরজার কাছে গিয়েছি তখনি ওপাশ থেকে নক হল। তারমানে বাইরে লোক আছে। আমি সরে এলাম ওখান থেকে। রুমে এসে ভাবতে লাগলাম কি করে বের হবো। জানলার দিকে চোখ আটকে যায়। মাথায় ঠিক করে ঘোমটা টেনে নিলাম। পার্সটা হাতে নিয়ে জানালায় বাধা ওরনা ধরে নিচে নেমে আসলাম। দু পাশে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। দৌড়ে গেইট দিয়ে বেরিয়ে এলাম।


পর্ব ৩

লকাবের সামনে গিয়ে দাড়াতেই আমার পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গিয়েছে। লাকাপের ভিতরে বিধ্বস্ত হয়ে শুয়ে থাকা মানুষ টিকে দেখে কলিজার ভিতর হাপর টানতে শুরু করেছে। এইভাবে নির্দোষ কাওকে কি পেটায়? আইনের নামে ক্ষমতাবান লোকের চামচা গিরি করা এখন পুলিশদের প্রধান কাজ।

আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে মোটা মোটা লোহার তৈরি রড গুলো ধরে দাড়ালাম। গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। তবুও কাপা কাপা গলায় জোহানকে ডাক দিলাম। জোহান আমাকে দেখে হুরমোড় করে উঠে বসতে গিয়ে ব্যথায় আহহ করে উঠলো। আমি আর থাকতে পারলাম না। চোখের জল কে মুক্ত করে দিলাম। জোহান আস্তে আস্তে উঠে বসলো।

দারগাকে গিয়ে বললাম আমি ভিতরে যেতে চাই। দারগা সাথে সাথে লকাব খুলে দিতে বললো। আমি অবাক হয়ে গেলাম। সাধারনত আমার জানা মতে লকাবের ভিতরে বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। যদিও বা দেওয়া হয় তার জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। কিন্তু আমি বলা মাত্রই পারমিশন দিয়ে দিল। লকাব খুলতেই আমি দৌড়ে জোহানের কাছে গেলাম।

জোহান ঠোটের কোনে হাসি ফুটিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বুঝতে না দিলেও আমি জানি জোহান তোমার এই হাসিটা আমার কলিজা ভেদ করছে। হাতে মারের দাগ গুলো স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। আমাকে কাঁদতে দেখে বলছে
~ কাদছো কেন হুম? তোমার হিরো কি এতই উইক যে এটুকুতেই ভেঙে পড়বে? তোমার হিরো অনেক স্ট্রং বুঝলে?

এবার আমার নিজেই নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছা করছে। আজ আমার জন্য আমার জান টার এই অবস্থা। ঐ লিনোর মাহমুদ চৌধুরী কে কখনো ক্ষমা করবো না আমি। হার্টলেস লোক একটা।
জোহান আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো
~ আমি কিছু করিনি এলিজা। আমায় ভুল বুঝো না।

~ আমি জানি। আমি সব জানি। আজ আমার জন্য তোমার এই অবস্থা। আমার জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য আমার পাপা আর ঐ লিনোর মাহমুদ চৌধুরী তোমাকে ফাসিয়েছে। আমাকে আটকে রেখে বিয়ে করতে চায় ঐ লিনোর লোকটা।

আমি পালিয়ে এসেছি তোমার কাছে। তুমি কোন চিন্তা করো না। আমি এখান থেকে বের করবো তোমায়। আমাকে উকিলের সাথে দেখা করতে হবে। আমি সব ব্যবস্থা করছি। তোমার কিচ্ছু হবে না।
~ তুমাকে খুজবেনা ওরা?

~ হ্যাঁ খুজবে। যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। আমি আসছি জোহান।
জোহানকে রেখে চলে আসছি তখনি দাড়িয়ে গেলাম। জোহানকে খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু কিভাবে সম্ভব এটা। আমি যে সব সময় গুটিয়ে থেকেছি। ভালবাসি বলে কখনো হাতটাও ধরিনি। তাতে কি হয়েছে? আমার ভালবাসাকে আমি ধরব এতে কোন বাধা থাকতে পারে না।

পিছন ফিরে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম জোহানকে। আমি এমন করবো জোহান ভাবতেও পারেনি। ও খুব অবাক হয়ে যায়। পরোক্ষনে বুঝতে পেরে সেও আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি কান্না করতে করতে বললাম
~ খুব মেরেছে না? খুব ব্যথা পেয়েছো?

~ পেয়েছিলাম। সব তুমি এসে শুষে নিলে যে। জানো আজ আমি সার্থক প্রেমিক। আমার প্রেমিকা আজ আমার বুকের মাঝে নিজে থেকেই এসেছে। এমন হবে জানলে আমি সেই কবেই পুলিশের মার খাওয়ার জন্য লকাবে এসে বসে থাকতাম।
~ বজ্জাত ছেলে কথাকার। আসছি আমি।

লকাব থেকে বাইরে এসে দারগার চেম্বার এর সামনে আসতেই দেখি পাপা বসে আছে। খুব শান্ত গলাম আমার সামনে এসে বললো বাসায় চলো। আমার হৃৎস্পন্দন তখন কয়েক গুন বেশী গতিতে উঠানামা করতে শুরু করেছে। আমি জানি আমার এই সাহসিকতা দেখানো আর পাপার শান্ত গলায় কথাবলার পরিণাম কি হতে পারে। আমাকে থম ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো
~ আমি অনেক ক্ষন আগেই একবার বলেছি। এখন আবার বলছি। বাসায় চলো।

আমি তো বাসায় যাবো না। বাসায় গেলে আমাকে মেরে ফেলবে পাপা। আর ঐ লিনোর জানতে পারলে আমার জোহানের ক্ষতি করে দিবে। যাবো না আমি।

~ পাপা আমি জোহান __
আর কিছু বলতে পারলাম না। পাপা আমাকে টেনে হিচড়ে থানার বাইরে নিয়ে এলো। গাড়িতে উঠিয়ে গাড়িতে একটা জোরে লাথি দিয়ে দিল। আমার আত্মা কেপে উঠলো। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি মাধু থানার ভিরতে ঢুকছে। মাধু মেয়েটা আমার এক ইয়ার জুনিয়র। জোহানের চাচাতো বোন। বাবা মা মারা যাওয়ার জন্য জোহানের মার কাছে মানুষ হয়েছে। এখন জোহানের বাসাতেই থাকে।

মাধু নামের একটা মেয়ে এসেছে আপনার সাথে দেখা করতে। আপনার বোন নাকি হয়।
কথাটা শুনেই দাড়িয়ে যায় জোহান। মায়ের জন্য বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার। সে ছাড়া যে তার মায়ের কেউ নেই।

মাধু এসে দাড়াতেই জোহান অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে
~ মাধু মা কেমন আছে? মা কি জেনে গেছে আমি এখানে? তুই একা এসেছিস? মা আসে নি?
মাধু জোহানের হাত দুটো ধরে কেদে ফেলে। জোহানের ক্ষত গুলোতে চোখ বুলিয়ে নেয়।

~ বড় মা ভালো নেই। আপনার কথা শুনে বড়মা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। ডাক্তার দেখিয়েছি। এখনো প্রেসার হাই। বার বার জোহান জোহান বলে কাঁদছে। আমাকে পাঠিয়েছে আপনাকে দেখতে।
~ আমি কিছু করিনি মাধু। বিশ্বাস কর।

~ আমি জানি জোহান ভাই। বড় মাও জানে। কিন্তু লোকের কথায় নিজেকে সামলাতে পারছে না। জোহান ভাই একি অবস্থা হয়েছে আপনার। আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে তাইনা? আপনি কি জানেন এ কষ্ট শুধু আপনার না। বড় মা আর আমারো কষ্ট। এলিজা আপুর বাবা এই কাজ করেছে আমি জানি।

বাড়ি গিয়ে বড় মাকেও কথা শুনিয়ে এসেছে। এতোদিন কিছু বলিনি জন্য যে আজো বলবোনা তা কিন্তু না। এলিজা আপুর সাথে সম্পর্ক হয়েছে থেকে আপুকেই আপনি আপনার দুনিয়া করে রেখেছেন। বড়মার থেকে অনেক দুরে সরে গিয়েছেন। বড়লোকের মেয়ের পিছে ঘুরে সময় নষ্ট করেছেন।

অভাবের সংসারে আমরা কষ্ট করে চলি আর আপনি প্রচুর টাকা আপুর পিছনে খরচ করেন। বড় বাবার টাকা গুলো শেষ হলে কি করে চলবেন আপনি? আপুকে ওর বাবা বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। আপনার আপুর আশাও করা উচিত হয়নি। তেতো হলেও সত্য আপনি বামন হয়ে চাদে হাত বাড়িয়েছেন। আপনার জন্য কি আর মেয়ে ছিল না? চোখের সামনে সারাদিন যে ঘুর ঘুর করে তাকেও চোখে পড়েনি কখনো?

~ কে ঘুর ঘুর করে?
মাধু চোখ মুছে বলে, কেউ না। কথার কথা বললাম। আসি আমি। বাড়ি গিয়ে বলবো বড়মা তোমার ছেলেকে খারাপ কাজ করার জন্য পুলিশরা বেদম মার মেরেছে। জামিন করে আনা অসম্ভব।

বাসায় আসতেই আম্মু কে দেখলাম চোখ মুখ লাল করে দাড়িয়ে আছে। গালে আঙুলের ছাপ বসে গেছে। আমার দিকে এগুনোর সাহস ও পাচ্ছে না। বাসার অনেক জিনিস ফ্লোরে পড়ে ভেঙে আছে। আত্মীয় স্বজন রা একজোড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাপা আমার হাত ধরে ঝটকা দিয়ে আম্মুর দিকে ঠেলে দেয়। আমি পড়ে যেতে নিলে আম্মু আমাকে ধরে নেয়।

~ শোন এলিজার আম্মু। মেয়ের এখন পাখা গজিয়েছে। বিয়ে ঠিক না হলে ওর পাখা দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দিতাম আমি। কেটে টুকরো টুকরো করে ভাসিয়ে দিতাম। আমি তা পারছিনা কারন ওকে আঘাত করলে আমি আর আমি থাকবো না। ও এখন লিনোরের জিনিস। তাই ওকে ছোতে পারছিনা আমি। মেয়েকে বোঝাও তুমি। লিনোর আসছে। বিয়ে আজি হবে।
আম্মু আমাকে রুমে আনতেই আমি আম্মুর সামনা সামনি হলাম।

~ তুমি দেখছোনা আমি কষ্ট পাচ্ছি। আমার কষ্ট কি তোমার লাগছেনা? কিচ্ছু করতে পারবেনা তোমার মেয়ের জন্য? কি করেছো কি সারাজীবন আমার জন্য? একটা সিদ্ধান্ত কখনো নিয়েছো তুমি? পাপা যখন যা বলেছে তখন তাই হয়েছে। কষ্ট করে ঐরকম লালন পালন তো আয়া ও করতে পারে। কেমন মা হয়েছো তুমি? আজো কি কোন অধিকার দেখাতে পারবেনা আমার উপর?

~ আমি পারিনারে মা __আমি পারিনা। আমায় ক্ষমা করে দে।
আম্মুও কাদছে আজ। আমি ও কাঁদছি। আম্মুর পায়ে পড়ে গেলাম।
~ আম্মু প্লিজ জোহানকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করো। প্লিজ। আমি এই বিয়ে করবোনা আম্মু। আমাকে ছেড়ে দাও তোমরা। আমি জোহানের কাছে যাবো।

এই বলে চিৎকার করে কাদছি আমি।
পাপা দরজার কাছে এসে বলল ~ এটা বিয়ে বাড়ি। মরা বাড়ি না যে কেউ মরা কান্না করবে।

ঘরে তিন জন মেয়ে ডুকলো কনের জিনিস পত্র হাতে। পাপা চলে যেতে নিলে আমি চিৎকার করে বললাম,
~ এখানে কি আমাকে মেরে দেওয়া হচ্ছে না?
পাপা রেগে আমার দিকে ধেয়ে এসে মুখ তুলে দাতে দাত চেপে বলল ~ তোর জন্ম দাতা কে?

লিনোরের সামনে সোফায় বসে আছি আমি। আশে পাশে সবাই বসে আছে। বিয়ে করবোনা আমি। অনেক চেষ্টা করেও আমাকে বউ সাজাতে পারেনি কেউ। আমি শুধু জোহানের জন্য বউ সাজবো অন্য কারো জন্য নয়। লিনোর মুখ খুললো
~ অনেকক্ষণ আগেই জানিয়ে দিয়েছিলাম বিয়ে হবে। বধু সাজ নি কেন?

~ করবোনা আমি আপনাকে বিয়ে। আমি জোহানকে ভালবাসি।
কথা টা বলার সাথে সাথে কোর্টের ভিতর থেকে রিভলবার বের করে আম্মুর দিকে তাক করে ধরল। চিৎকার দিয়ে উঠলাম আমি। কাজি সাহেবকে হুকুম করলো বিয়ে পড়ানোর জন্য। কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।

আম্মুর দিকে তাকিয়ে দেখি আম্মু অসহায় ভাবে পাপার দিক তাকিয়ে আছে। আমিও পাপার দিকে তাকালাম। পাপা আমাকে আর আম্মুকে অবাক করে দিয়ে বললো
~ আমার মেয়ের সুখের থেকে আর কিছুই বড়ো না আমার কাছে। কারো জীবন ও না।

আম্মুর দু চোখ বেয়ে পানি পড়তে শুরু করলো। আম্মু বললো, আমারো একি কথা। আমার মেয়ের সুখের থেকে বড় কিছুই না। নিজের জীবন ও না। আমি মরে গেলেও তুই এই বিয়ে করবিনা এলিজা।

দুজনের কথাতে আমি স্তব্ধ। কাজী বার বার কবুল বলতে বলছে আর আমার কানে আমার পাপা আম্মুর কথাটা বার বার রিপিট হচ্ছে। আমার রেসপন্স না পেয়ে লিনোর বললো, দেশের জনসংখ্যা বেড়ে গেলে। দুজন লোক কমলে অনেক ভালো হয়। দেশের জন্য কিছু করতে পারা সৌভাগ্যের ব্যপার।

আতকে উঠলাম আমি। দুজন মানে? আর কাকে মারবেন উনি?
লিনোর ফোনটা বের করে কোথা জানি ফোন দিলেন। ওপাস থেকে রিসিভ হতেই বলে উঠলেন
~ হ্যালো দারগা সাহেব। জোহান নামের ছেলে টাকে গুম করে দেন।

পর্ব ৪

বাসর ঘরে বসে আছি আমি। আজ আমি মিসেস এলিজা লিনোর মাহমুদ চৌধুরী। একটু আগেও আমি মিস ছিলাম। ছিলাম বাড়ির মেয়ে। আর এখন আমি কিছু সময়ের ব্যবধানে মিসেস হয়ে গেলাম। বাড়ির মেয়ে থেকে বউ হয়ে গেলাম। মেয়েদের জীবন কতো অদ্ভুত তাইনা? বিয়ের আগে বাবার হাতের পুতুল আর বিয়ের পর স্বামীর হাতের। নিজের চাওয়া পাওয়া বলতে কিছুই থাকে না।

যাকে ভালোবাসলাম তার জীবন বাচাতে নিজেকে মেরে ফেললাম। কেউ কি বুঝবে সেটা? কেউ কি দেখতে পাবে এই জীবন্ত মরে যাওয়া আত্মাকে? ভালোবাসলে বুঝি মরতে হয়? কই আশেপাশে তো কতো মানুষ ভালোবাসে তাদের তো মৃত্যু না। নাকি তাদেরও হয়? আমরা কেউ দেখতে পাইনা।

দরজা সামান্য নক করে দুজন মেয়ে ঢুকে গেল। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি। ওদের দেখে শান্ত হলাম। একটু আগে আমাকে একটা লাল শাড়ি, কিছু গহনা পরিয়ে সাজিয়ে দিয়ে গিয়েছিল ওরা। একজন আমার ননদ সাফিয়া আরেকজন সাফিয়ার বান্ধবী।

আমার কাছে এসে দাড়িয়ে সাফিয়া বললো
~ এই নাও ভাবি দুধ। এইটা ভাইয়া আসলে ভাইয়াকে খাইয়ে দিবে। আর এটা পান। তুমি খেও পান। হি হি হি।
সাফিয়ার বান্ধবী ~ ভাইয়া কিন্তু রুমেই আসছে। ভাইয়া আসলেই কিন্তু সালাম করবে পা ধরে। তারপর আর কিছু করতে হবে না যা করার ভাইয়াই করবে। আমরা গেলাম।

দুজনেই হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেল। আর আমার আত্মা শুকিয়ে কাঠ হওয়ার উপক্রম। বাসর খাটের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছি একনাগাড়ে। তখনি দরজায় শব্দ হলো। তাকিয়ে দেখি রুদ্রাক্ষ রুপ ধারণ করে উনি রুমে ডুকে খাটের দিকে আসছেন। কোর্ট খুলে ফেলে দিল। গলাবন্ধনী টা সহ শার্ট খুলে ফেলে দিল।

রাগে ফুসতে ফুসতে ওয়াশরুমে চলে গেল।
বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে আছি আমি। হিম হিম ঠান্ডা বাতাস সামনের চুল গুলো উড়িয়ে দিচ্ছে। আকাশে ইয়া বড় চাদ মামা জোৎস্না স্নান করাচ্ছে পৃথিবীকে। তোমাকে খুব মিস করছি জোহান। এরকম একটা বাসর রাত আমাদের দুজনের হওয়ার কথা ছিল।

বান্ধবীর রিতার বিয়ে তে এসেছি। বিয়ের দিন কনের সাথে বসে সেলফি তুলছি। ক্লিক করার সময় দেখি রিতা আর আমার মাঝে দাতগুলো বের করে জোহান হেসে পোজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পেছন দিকে ফিতে তো আমি অবাক। হাতে একটা গিফট বক্স বান্দা হাজির। রিতা খুশিতে গদ গদ হয়ে বলে
~ ভাইয়া আপনি অনেক লেইট করে ফেলেছেন কিন্তু।

~ নো নো শালিকা। ঠিক টাইমেই এসেছী। এখনো তো বর আসেনি।
~ এলিজাকে নিয়ে আগে খেয়ে আয়। পরে বর আসলে অনেক কাজ আছে।
~ ওক্কে।

জোহান আর আমি গিয়ে টেবিলে বসলাম। খাবার বারতে বারতে বললাম
~ তুমি আসবে কই আমাকে তো বলোনি।

~ তুমি যেখানে আমি সেখানে সেকি জানোনা..একি বাধনে বাধা দুজনে ছেড়ে যাবোনা।
~ চুপ চুপ। খাবার বসে গান। লোকে শুনে কি বলবে?
~ যা বলার বলুক। আমার কি? এই এলিজা শোন না।
~ বলো শুনছি।

~ এমন একটা দিনে আমাদের ও বিয়ে হবে।
আমি চুপ করে গেলাম। সেই সপ্ন তো আমিও দেখি।

জোহান আবার বললো
~ জানো সেদিন তুমি লাল বেনারসি পড়বে। বউ রুপে দেখবো তোমায়। আমার ছোট্ট কুটিরে পা রাখবে তুমি। আমার ঘরে পা রাখার সাথে সাথে আমাদের ভালবাসার সংসার শুরু হবে। আমাদের বাসর ঘরটা তোমার প্রিয় বেলীফুলে সাজাবো আমি।

অসম্ভব সুন্দর লাগবে। সারারাত জেগে গল্প করবো। আমার ছোট্ট বারান্দায় বসে কফি খেতে খেতে গল্প করবো। আর চাদ মামার আলোতে জোৎস্নাস্নান করবো।
আমি চুপ চাপ শুনছিলাম আর ভীষন লজ্জা পাচ্ছিলাম।

আজ দেখ বিয়ে হয়েছে আমার। বেলিফুলে আমার বাসর সাজানো হয়েছে। লাল বেনারসি পড়েছি আমি। চাদ মামাও তার পুর্ণরুপে দর্শন দিয়েছে। অথচো তুমি নেই। তুমি নেই। তোমার জায়গায় অন্য একজন আমার স্বামী। কিভাবে মেনে নিবো আমি?

ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখে এলিজা ঘরে নেই। বারান্দায় এসে দেখে আকাশের পানে চোখ রেখে চোখের জল ফেলছে। পাশে এসে দাঁড়িয়ে মিষ্টি সুরে ডাক দেয় ~ মিসেস লিনোর মাহমুদ চৌধুরী।

চমকে উঠি আমি। আমাকে ঘুরিয়ে চোখের জল মুছতে নিলে আমি সরিয়ে দেই।
~ ওহ মাই লাভলি ওয়াইফ। তোমাকে কত্তো সুন্দর লাগছে। কেদে কেটে চোখ ফুলিয়ে এই সৌন্দর্য নষ্ট করতে চাইছো যেন আমি উপভোগ না করতে পারি?

~ আমার সকল সৌন্দর্য জোহানের উপভোগের জন্য। মানি না আমি আপনাকে। জোর করে ব্লেকমেইল করে বিয়ে করেছেন আপনি আমাকে। আমি জোহানকে ভালোবাসি আর আমি শুধু জোহানেরই।

মুহুর্তেই উনার চক্ষু রক্তবর্ণ ধারন করলো। শক্ত হয়ে কাপতে লাগলেন। আমার চুলের মুঠি ধরে দাতে দাত চেপে বললেন
~ তার জন্য বুঝি জেলের ভিতরে গিয়ে জড়িয়ে ধরেছিলি। ভালবাসা নামে নষ্টামি। তোর ভালবাসার নষ্টামি ছোটাচ্ছি আমি। কাল থেকে আর মুখেও আনার সাহস পাবিনা ঐ ভিখারী বাচ্চার কথা।
~ আহ লাগছে ছাড়ুন আমাকে।
~ লাগার জন্যই ধরেছি।

এই বলে উনি আমাকে টানতে টানতে রুমে এনে খাটে ফেলে দিলেন।
ঘরের আলো নিভিয়ে খাটে বসে আছেন ইসমাইল হোসেন। শিল্পী বেগম কোন রুমে খুজে না পেয়ে এলিজার রুমে এসে লাইট জালিয়ে দেখেন হাত দিয়ে এলিজার ছবি বুকে জড়িয়ে নিরবে চোখের জল ফেলছেন ইসমাইল। ইসমাইল হোসেনের এমন কাজে হতবাক শিল্পী বেগম। এগিয়ে এসে কাধে হাত রাখতেই শব্দ করে কেঁদে ওঠেন ইসমাইল।

শিল্পী বেগমের হাত দুটো টেনে বলতে লাগলেন।
~ আমার প্রান পাখি চলে গেল শিল্পী। আমি নিজে তাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে এসেছি। আমার ঘর শুন্য হয়ে গেল। আমার কলিজাটা আমার ঘর শূন্য করে দিয়ে অন্যের ঘর পূর্ণ করতে চলে গেল।
শিল্পী বেগম নিজেও স্বামী কে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন।

সকালে চোখে রোদের হালকা আলোই ঘুম ভাঙলো আমার। উঠতে যাব তখন দেখি স্বয়ং লিনোর সাহেব তার সমস্ত শরীরের ভার আমার উপর দিয়ে বিভোরে ঘুমুচ্ছেন। গা টা ঘিন ঘিন করে উঠে আমার। রাতের কথা মনে হতেই দু চোখ বেয়ে পানি চলে আসে। এই লোকটার প্রতি দ্বিগুণ ঘৃনা বেরে যায় আমার।

নরপশু বললে এতটুকুও ভুল হবে না। সরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে একধাক্কায় উপর থেকে সরিয়ে দৌড়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলাম। শাওয়ার ছেড়ে নিজের শরীর ধুতে লাগলাম। ইচ্ছে করছে এই মুহুর্তে শরীরের সমস্ত চামড়া তুলে ফেলে দিলে একটু হলেও শান্তি পেতাম।

শরীরের সাবান দিলাম ইচ্ছা মতো। কিন্তু তার পর পরই জালা করতে লাগলো। আয়নায় তাকিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠি আমি। সারা শরীরে কামডের দাগ বয়ে গেছে। কেন? তখনি আমার জোহানের কথা মনে পড়ে যায়।
~ হি হি হি হি __
~ এলিজা কি হয়েছে তোমার? আবার হাসছো তুমি?

~ হাসবোনা বলো। আচ্ছা তুমি কি জানো লাভ কিস আছে আবার লাভ বাইট ও আছে। লাভ কিস দিতে দেখেছি বাট লাভ বাইট তো দিতে দেখিনি বাপু।
~ দেখবে দেখবে। সময় হলে ঠিক ই দেখবে।

~ কখন সময় হবে?
~ জানতে চাও?
~ হাতো।
জোহান আমার দিকে এগুতে থাকে ধীরে ধীরে। তার এমন কাজে আমি তো হতোবাক। পিছোচ্ছি আর বলছি ~ এএই তুতুতুমি এগোচ্ছছো কেন আমার দিকে?

জোহান একদম আমার কানের কাছে মুখটা এনে বলে
~ বিয়েটা হতে দাও জানু। লাভ বাইট কাকে বলে কতো প্রকার? কি কি? সব দেখিয়ে দিবো। বিয়ে তো হতে হবে আগে।
গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিলাম। আমার বিয়ে হয়ে গেছে জোহান। বিয়ে হয়ে গেছে। আমি লাভ বাইট দেখতে পাইনি জোহান। আমি আঘাত পেতে দেখেছি। অত্যাচার করতে দেখেছি।

রেস্টুরেন্টে সামনা সামনি চেয়ারে বসে আছে লিনোর আর মাধু। লিনোর ব্যাগ থেকে দুটো টাকার বান্ডিল বের করে টেবিলের উপর রাখে।
~ নাও নিয়ে নাও। এডভান্স করছি তোমাকে। পরে আরো পাবে।

~ আমার টাকা পয়সার প্রতি কোন আগ্রহ নেই লিনোর মাহমুদ চৌধুরী। আপনি শুধু জোহান ভাইকে ছেড়ে দিন।
~ আহা ছেড়ে তো দিবোই। কিন্তু আমাকে তো নিশ্চিত হতে হবে যাতে ভবিষ্যতে আর আমাদের মাঝে আসার চেষ্টা না করে। ওকে তো আটকাতে হবে। তার জন্য তোমাকে হায়ার করছি আমি।

~ আমাকে হায়ার করতে হবে না লিনোর সাহেব। আমি নিজেই জোহান ভাইয়াকে আমার ভালোবাসায় আটকাবো।
~ তার বিনিময়েই তো টাকা গুলি দিচ্ছি তোমাকে।

~ আমি জোহান ভাইকেভালোবাসি বলেই তাকে আটকানো। আপনার টাকার জোরে আটকাবোনা যে আপনি আমাকে হায়ার করবেন।

লিনোর কিছুক্ষণ মাধুর দিকে তাকিয়ে থেকে বুঝার চেষ্টা করে মাধু সিরিয়াস কিনা।
মাধু বুঝতে পেরে বলে, এতো ভাববার কিছু নেই। বিনা পয়সায় আপনার কাজ করে দিবো। ভাইয়াকে আজ বিকালের মধ্যই ছেড়ে দিবেন। আসছি।

পর্ব ৫

বাড়ি ফিরে এসেছে জোহান। এসেই মাকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে। মাও ছেলেকে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আদর করতে থাকে। পাশে দাঁড়িয়ে মাধু চোখের জল ফেলছে। কিছুক্ষন যাওয়ার পর মাধু বলে ওঠে
~ বড়মা জোহান ভাইয়া কে খেতে দেই?

~ দে দে। আমার কলিজাটা দুইটা রাত কতো কষ্টে ছিল। জোহান বাবা আমার ঐ মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তুই আর ঐদিকে এগুস না। কষ্ট পাস না বাবা। তোর কপালে হয়তো ছিল না।

~ আমি ভুলতে পারবো না মা।
~ ভুলতে যে হবেই বাবা।
তখনি মাধু আসে হাতে খাবার নিয়ে। মাধুর হাত থেকে খাবার নিয়ে মেখে খাইয়ে দেয়। জোহান কয়েক লোকমা খেয়ে আর খেতে পারে না। গলা দিয়ে নামে না আর খাবার। প্রিয়তমা কে হারানোর শোকে হৃদয়ে তোলপাড়।

জোহান বাড়ি থেকে বেরোতে নিলেই মাধু এসে সামনে দাঁড়ায়। জোহান মাধুকে বলে
~ মাধু সর। আমাকে যেতে দে। আমি বেরোবে।
~ আপনি যাবেননা জোহান ভাইয়া। আপনি বের হয়ে কোথায় যাবেন তা আমার জানা হয়ে গেছে। একটা মেয়ে নতুন জীবন শুরু করছে। সেখানে আপনার যাওয়া উচিত নয়।

~ সরে যা মাধু। এ বিয়ে মানিনা আমি। এলিজাকে ভালোবাসি আমি।
~ আর আমি যে আপনাকে ভালোবাসি।
~ মাধু। কি বলছিস এসব?

~ জোহান ভাই আপনার চোখে আমি কি এবং কতটুকু সবসময় সেটাই বুঝিয়ে এসেছেন। আপনি কোনদিন সত্যিকারে আমার চোখে কি এবং কতোখানি তা কোনদিন বুঝেননি। আপনার হয়তো অনেক আছে কিন্তু আমার বড়মা আর আপনি ছাড়া কেউ যে নেই। আমার এই অল্পবয়সের জীবনে আপনাকে ছাড়া কাউকে ভালোবাসিনি আমি।

আমার জীবন থেকে কিছুদিনের জন্য হয়তো আপনি হারিয়ে গিয়েছিলেন। এই সল্প হারানোর বেদনা যে কি তা আপনাকে কিভাবে বুঝাবো বলুন। আমার আল্লাহ আপনাকে আমার করে আবার ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি যে এতেই খুশি। আর হারাতে চাই না আপনাকে। নিজের করে পেতে চাই।
~ চুপ কর মাধু। চুপ কর তুই। আমি তোকে বোন ছাড়া কিচ্ছু ভাবি না।

~ সেটা কি আমার অজানা জোহান ভাই? আপনি বড় স্বার্থপর জোহান ভাই। আপনি এলিজা আপুর সাথে ভালো আছেন দেখে নিজেকে দুরে রেখেছিলাম। নিঃশ্বার্থে ত্যাগ করেছিলাম ভালোবাসাকে। কিন্তু আমি আপনাকে দেখে শিখেছি। আপনার মতোই স্বার্থপর হবো আমি। এবার যখন পেয়েছি তখন নিজের টা ঠিক ই বুঝে নিবো। নিজের আচলে বেধে রাখবো আপনাকে কোথাও যেতে দিবো না।

~ সরে যা মাধু। আমি তোকে ভালোবাসি না। আমি এলিজাকে ভালবাসি।
~ না। আপনি ভুলে যান সব। আমাকে ভালোবাসুন।
জোহান মাধুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বেরিয়ে যায়।

এবাড়িতে আসার পর থেকে শুধু সাফিয়ার সাথেই কথা হয়েছে। আর কেউ এখনো আমার সাথে পরিচিত হতে আসে নি। সাফিয়াকে সাথে করে আমাকে পার্লারে পাঠিয়েছে। আমি কিছুতেই পার্লারে আসতে চাচ্ছিলাম না। কিন্তু লিনোর সাহেবের এক কথা বিয়ের দিন আমি জিদ করে বউ সাজিনি তাই আজ সাজতেই হবে। লোকটা হিংস্র অনেক। তার কথা সবাই বলার সাথে সাথে করা শুরু করে। সাফিয়াকে হুকুম দিতেই জোর করে আমাকে পার্লারে নিয়ে আসে।

সাজ শেষে বাইরে এসে দাড়াতেই দেখি লিনোর সাহেব গাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে। একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে যেন কোন দিন দেখেনি এমন সাজে কাউকে। লিনোর মাহমুদ চৌধুরী তার নামের মতোই প্রেশিয়াজ। কাল সুট কোট এ ফর্সা গায়ের রং এ সুন্দর মানিয়েছে। কোটের বুক পকেটে বড় একটা গোলাপ লাগানো। হাত একটা প্যান্ট পকেটে গুজে স্টাইল করে দাঁড়িয়ে আছে।

গাল ভর্তি ছোট ছোট চাপ দাড়ি। চোখে সানগ্লাস। যে কোন মেয়েই দেখলে হার্টবিট ফাস্ট হয়ে যেতে বাধ্য। আমার তেমন কোন ফিলিংস ই হচ্ছে না। হবেই বা কিভাবে আমি যে হার্টবিট ফাস্ট করা কোন ছেলেকে দেখতে চাই না। আমি যে আমার সেই সহজ সরল নিষ্পাপ মুখী ভালোবাসাটাকে দেখতে চাই।

গাড়ির সামনের সিটে বসেছি আমি। পাশে লিনোর ড্রাইভ করছে। পেছনের সিটে সাফিয়া ফোন হাতে বসে। আমি শুধু তাকি তুকি করছি। অসহ্য লাগছে সামনে বসে। পেছনে বসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সাফিয়াটা জোর করে সামনে বসিয়ে দিল। আর সব থেকে বেশী অসহ্য লাগছে লিনোরের বার বার আড় চোখে তাকানোকে। একটু পর দেখি উনি আমাকে ডাকছেন। আমি জবাব দিলাম না।

ইচ্ছে করে না এই লোকের সাথে কথা বলতে। পিছনে তাকিয়ে দেখি সাফিয়া ফোনের ভিতর মুখ গুঁজে আছেন। তার পর উনি বলতে লাগলেন
~ জানো এলিজা আজ আমি কতোটা হেপি? তোমাকে বলে বুঝানো সম্ভব না। আমার বউ হয়ে আমার পাশে অপ্সরী সাজে বসে আছো তুমি।

পৃথিবীর সব পুরুষের কাছে এই পাওয়ার সুখ টা যে কতটা গভীর থেকে আসে তা মুখে বলে বুঝানো যায় না। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখ বাইরে কাঠ ফাটা রোদ্দুর। এমনি এক রোদ্দুর দুপুরে গাছের ছায়ায় দেখেছিলাম তোমায়। ভালবাসাটা তখনি শুরু হয়েছিল। আস্তে আস্তে যখন তুমি আমার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছিলে তখন আমি তোমার মাঝে ডুবে যাচ্ছিলাম। থাকতে পারতাম না তোমাকে না দেখে। তোমার পথে দাঁড়িয়ে তোমায় দেখতাম। তোমার পছন্দের টেডি তোমার বাসায় পাঠাতাম।

সাথে দিতাম অনেক গিফ্ট আর নিজের হাতে লেখা লাভ লেটার। মনের অব্যক্ত কথা গুলো কলমের কালিতে রুপ দিতাম। ভালোবাসাগুলো প্রকাশ করতাম। আর কি ভাগ্য দেখ তার একটাও তুমি পড়নি। পড়লে হয়তো বুঝতে কতটা ভালোবাসি তোমায়। ভালোবাসার মানুষ কে পাওয়া সত্যি খুব ভাগ্যের ব্যাপার। আমি খুব ভাগ্যবান এলিজা। তোমাকে আমার জীবনে পেয়েছি।

~ আর আমি পোড়াকপালী। ভালোবাসার মানুষ কে না পেয়ে। একজোড়া শকুনের চোখ আমার ভালবাসার উপর তার অগ্নিদৃষ্টিতে ছার খার করে দিয়েছে।

~ আজ আমাদের বিয়ের দ্বিতীয় দিন এলিজা। বৌভাতের অনেক বড় অনুষ্টান। আমাকে রাগিয়ে দিও না। আমি রাগলে কি হয় তা তুমি জানো না। ঐ ভিখারী টার কথা ভুলে যাও। আবারো বলছি ভুলে যাও। আমি তোমার স্বামী। আমার কথা ভাবো কোন পরপুরুষের কথা না ভেবে।

আমি আর কিছু বললাম না। নরপশুর কাছে আমার কষ্ট পৌছবেনা কখনোইনা। ভালোবাসা বুঝার জন্য লেটার পড়তে হয়না। জোহান আমার ভালোবাসা। কোন পরপুরুষ না। আমার শরীরের উপর জোড় করে দখলদারি করলেই স্বামী হওয়া যায় না। আপনার মতো অন্ধ লোক কে বোঝানো যাবে না। যে বুঝতে চায় তাকে বুঝানো যায়। যে চায় না তাকে কিছুতেই বুঝানো যায় না।

কমিউনিটি সেন্টারের উপর তলায় নিজেকে আরেকবার পারফেক্ট লুক দিতে এসেছে লিনোর। বারান্দায় তাকাতেই বাইরের থেকে একটু শোরগোলের আওয়াজ শুনে। নিচের দিকে তাকাতেই দেখে জোহান ভিতরে ঢুকার চেষ্টা করছে। যা ভেবেছিল তাই হচ্ছে। জেল থেকে ছাড়া পেতে না পেতেই এদিকে চলে এসছে। ভিখারীটার সাহস আছে বলতে হবে। ফোন বের করে সিকিউরিটি কে ফোন দেয়।

~ হ্যালো। ভিখারীটাকে লাথি দিয়ে ভাগিয়ে দাও। আর যেন এদিক মুখ না ঘুরায়।
সোফায় বসে আছি আমি। পাশে এসে বসে পড়লো লিনোর। ছবি তুলার যেন শেষ নেই ফোটোগ্ৰাফারের। আম্মু আর পাপা চলে এসেছে দূর থেকেই দেখতে পাচ্ছি। সাথে আত্মীয় স্বজন সবাই এসেছে।

পাপা আম্মু আমার কাছে এসে দাড়ায়। আম্মু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমিও আম্মুকে ধরে চোখের জল ছেড়ে দিলাম। পাপা লিনোরের সাথে কথা বলছে। লিনোর বন্ধুদের ডাকে ওদের কাছে যেতেই পাপা আমার কাছে এলো। আমার মাথায় নিজের হাত রেখে বলল ~ কেমন আছিস মা? তোর শশ্বুর বাড়ির সবাই ভালো তো?

এক ঝটকায় মাথা থেকে হাত সরিয়ে দিলাম। একটা নর পশুর হাতে মেয়েকে তুলে দিয়ে বলতে এসেছে ভালো আছি কিনা?
আমার ব্যবহারে আব্বু লজ্জা পেলেও কিছু বললো না। কিবা আর বলবে?

বিয়ের আগেই আমাকে লিনোর মাহমুদ চৌধুরীর সম্পদ বলে ঘোষণা করে দিয়েছে। কষ্টে ঘৃনায় আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিল। আমি নাকি সম্পত্তি। আমাকে মানুষ না ভেবে নিজের মেয়ে না ভেবে সম্পত্তি ভাবে। এতোদিন নিজের কাছে রেখেছে। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে অন্যজনের হাতে হস্তান্তর করেছে। ছিহ।
আম্মু বললো, লোকজন দেখছেতো। এমন করিস না মা পাপার সাথে।

~ আমার কোন পাপা নেই। পাপার দিকে তাকিয়ে বললাম”তা কতো দিয়ে বিক্রি করলেন আমাকে? যা পেলেন তা দিয়ে আপনার সারাজীবন চলবে তো? না চললে বলবেন আরো পাঠিয়ে দেব।”
পাপা অবাক হয়ে ~ এলিজা _আমি তোর পাপা।

~ যে ব্যক্তি নিজের স্বার্থের জন্য মেয়েকে একটা গুন্ডার কাছে বিক্রি করে দেয় সে কখনো কারো পাপা হতে পারে না। যার সামনে নিজের স্ত্রীকে খুন করতে নিলেও সে নিশ্চুপ হয়ে তামাশা দেখে সে কখনো কারো স্বামী হতে পারে না। আমার দৃষ্টিতে তাকে পুরুষ বলাই অন্যায়।

পাপার চোখ গুলো ঘোলাটে হয়ে এসেছে। আমি দৃষ্টি অন্য দিকে নিয়ে নিলাম। তাকাবোনা সেই চোখে। সেই চোখের বর্ষন হয়ে শুকিয়ে গেলেও আমি বিন্দু মাত্র বিচলিত হবো না।

অনুষ্ঠান শেষ করে পাপা আম্মু আমাকে আর লিনোর কে তাদের বাসায় নিয়ে আসে। আমি এসেই চেঞ্জ করে নেই। চেঞ্জ করার সময় দেখলাম শরীরের যতোটুকু জায়গা ঢাকা থাকে তার অনেকটাতেই কালো দাগ বসে গেছে। একটু ধরলেই ব্যথা লাগে। এখনো কমে নি সেই ব্যথা। এই ব্যথা তো কমেই যাবে। দাগ গুলোও একসময় মিলিয়ে যাবে। কিন্তু হৃদয়ের ব্যথা তার কি হবে? হৃদয়ের গভীরে যে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে তার ক্ষত কি কখনো মিশবে?

পর্ব ৬

রুমে শুয়ে আছি। আধ আধ ঘুম চেপে ধরেছে আমায়। ফোনটা বার বার ভাইব্রেট হয়ে থেমে যাচ্ছে। ঘুমের মধ্যই রিসিভ করে কানে দিলাম।

~ হ্যালো।
~ ঘুমপরী কি ঘুমের রাজ্যে চলে গেছে? আমি কি তাকে জোর করে আমার রাজ্যে আনার চেষ্টা করছি?
~ আমি তো তোমার রাজ্যেই থাকতে চাই রাজকুমার।

~ হুম। তো আমার রাজকুমারী কি আমার জন্য কষ্ট করতে পারবে?
~ তোমার রাজকুমারী তোমার জন্য সব কিছুই করতে পারবে।
~ তাহলে এতো কষ্ট দিচ্ছ কেন?

~ আহারে বাবুটা কষ্ট পাচ্ছে বুঝি? আস বাবু বুকে আসো।
~ সত্যিই? ? বুকে নিবে তো? ওকে আমি আসছি। এই উপরে উঠার কি কোন প্রসেস নেই? পেয়েছি পাইপ বেয়ে উঠতে হবে।
~ পাইপ বেয়ে উঠতে হবে মানে?
~ আমি তো নিচে দাঁড়িয়ে আছি।

এতক্ষনে খেয়াল হলো আমার। জোহান কি বলছে এসব? ঘুম যে কই উড়ে গেল কে যানে। একলাফে বিছানা ছেড়ে দৌড়ে বেলকনিতে এসে দাড়ালাম। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি জোহান রাস্তার উপর পা মুড়ে বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। রাস্তার সোডিয়াম লাইটের আলোতে ভালই দেখা যাচ্ছে। হেসে ফেললাম আমি। আমার দেখা দেখি ওও হেসে ফেলল। হাসি থামিয়ে বলল
~ শুক্সবার ছিলো তো। দেখতে তো পাই নি। আর থাকতে পারলাম না। চলে এলাম দেখার জন্য।

~ আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কখন এসেছো তুমি?
~ ২ঘন্টা ২২ মিনিট আগে। এসেই কল দিচ্ছি।
~ হায় হায় এত্ত ঘুম আমার।

~ জি ঘুম পরী। খুব রাগ হচ্ছিলো। জিদ করে বসেছিলাম আজ আর যাবো না এখান থেকে। দেখবো তুমি কেমন ঘুমাতে পারো।
~ সরি জান। ঠান্ডা পড়ছে তো। এবার বাসায় চলে যাও।
~ বুকে নাকি নিবে। নাওনা সব ঠান্ডা উবে যাবে।
~ যাও বজ্জাত ছেলে। বাসায় চলে যাও এবার। কাল দেখা হচ্ছে।

~ হুম। লাভ ইউ।
~ লাভ ইউ ট্রু।

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। বুকের ভিতর দিয়ে অস্থিরতা চরমে উঠে যাচ্ছে। আমার ভালবাসার বেলকনি। অনেক কিছুর সাক্ষী এই বেলকনি। রাতের পর রাত জেগে এই বেলকনিতে প্রেম জুগিয়েছি আমি। কতোরাত এখানে দাড়িয়ে প্রিয়তম র নজর কেড়েছি আমি। আজ কোথায় তুমি জোহান?

নিচের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আমার চোখ আটকে যায়। মুখে হাসি ফুটে উঠে। জোহান __জোহান এসেছে। সাথে মাধু ও আছে। জোহান আমার জন্য এসেছে এখানে। কিন্তু ও এমন টলছে কেন? মাধুই বা ওকে ধরে ধরে হাটছে কেন? জোহানকে ডাকতে হবে।

~ জো_উমম উমম।
তৎক্ষনাত লিনোর এসে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে। মুখ দিয়ে জোহানকে ডাকছিলাম সাথে সাথে ও মুখ চেপে ধরে।

লিনোর নিজের সাথে আমাকে মিশিয়ে ধরে বলে
~ ভয় পেও না আমি তো। একা একা দাড়িয়ে আছো কেন? আমাকে ডাকলেই তো পারতে মাই লাভ।
নিচের দিকে আবার তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। হয়তো চলে গেছে।

লিনোর আমার ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে ঠোটের পরশ দিতে থাকে। পিঠের দিকে নিচে নামতে থাকে। রাগে দুঃখে যন্ত্রণায় আমি দাতে দাত চেপে সহ্য করছি এসব। ব্লাউজের একটু কাপড় সরিয়ে ঠোঁট ছোয়াতেই ব্যথায় কাতরে উঠি আমি। আমি এমন করাতে লিনোর থেমে যায়। আমাকে জিজ্ঞাসা করে
~ কি হয়েছে? এমন করলে কেন? দেখি।

আমার গায়ে কাল কামড়ের দাগ গুলো দেখে যেন তার মাথা খারাপ হয়ে যায়। এপাশ থেকে ওপাশ হাটতে থাকে। ওহ শিট বলে ফুলের টবে এক লাথি দিয়ে টবটি ভেঙে ফেলে। আমার কাছে এসে বলে
~ সরি ডিয়ার। আই এম সরি। খুব ব্যথা করছে না? ওকে একটু ওয়েট আমি আসছি।
এই বলেই ও বাইরে চলে গেল। আমি চুপ হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছি। লিনোর সাহেবের কাজ কর্ম কিছুই মাথায় ঢুকে না আমার।

কিছুক্ষন পর উনি রুমে আসলেন। এসেই আমার হাত ধরে খাটে বসালেন। উনার হাতে দেখলাম একটা মলম জাতীয় কিছু। উনি আমার কাছে এসে যেখানে যেখানে দাগ হয়ে আছে খুব যত্ন নিয়ে সেখানে মলম লাগাচ্ছেন। আর আমি শব্দ করে কাঁদছি। উনি মলম লাগানো শেষ করে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি তখনো অনবরত কেঁদে যাচ্ছি। উনি আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললেন
~ খুব ব্যথা লাগছে বুঝি? একটু জলবে। সহ্য করো প্লিজ। ব্যাথা কমে যাবে।

এবার আমি আরো গলা ফাটিয়ে কাঁদতে লাগলাম। আমার শরীর জলবে তাই আপনি মলম লাগিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু আমার হৃদয়ে যে আগুন লেগে জালিয়ে পুড়িয়ে সব ছাই করে দিয়েছেন সেই জালা আপনি কি দিয়ে কমাবেন? আপনি আমার জীবনের অভিশাপ লিনোর। আমি আপনাকে কোনদিন ক্ষমা করবো না।

এক ধাক্কায় উনাকে সরিয়ে বালিশে মুখ গুজে কান্না করতে লাগলাম। কিছুতেই আমার কান্না কমবেনা। আমার এরকম কান্নায় আর ব্যবহারে উনি স্তব্দ হয়ে বসে রইলেন।

মদ খেয়ে এতখন ডুলতে ডুলতে হাটতে লাগলেও এখন অনেক টা ঠিক ভাবেই হাটছে জোহান। মাধু জোর করে ধরে রাস্তার পাশে পানির কলের নিচে বসিয়ে টেপ ছেড়ে দেয়। অনেকক্ষণ পানিতে ভিজার পর অনেক টা নেশা কেটে গেছে। তবুও চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। থম থম পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে। ভেজা শরীরে শার্ট শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। মাধুও কিছুটা ভিজে গেছে পানির ছিটা লেগে।

মাধু বলে, যা গেছে তার জন্য নিজেকে এতো কষ্ট দেওয়ার কিছু নেই। চাইলেই তো তাকে ফিরে পাবেন না।
~ তুই কি বুঝবি? আমার বুকের ভেতরে কি হচ্ছে না হচ্ছে। ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রনা টা কি।

~ আমিও বুঝি জোহান ভাই। আমি ও পুড়েছি এই যন্ত্রনায়। যখন আপনি এলিজা আপুর সাথে বড়মার দেখা করাতে এনেছিলেন সেদিন। এলিজাকে দেখিয়ে বড়মাকে যখন বলেছিলেন এই হচ্ছে তোমার বউমা তখন আমার এই যন্ত্রণা টা শুরু হয়েছিল। খুব করে চলতে থাকে। বড়মা কে শাশুড়ি আর আপনাকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার স্বপ্নে ছাই পড়ে। তবুও সহ্য করেছি। শুধু মাত্র আপনি সুখী হবেন বলে। দিনের পর সব যন্ত্রনা সহ্য করেছি। আমার যন্ত্রনা এখনো কমেনি জানেন? কারণ আপনি ভালো নেই।

আপনার সুখেই যে আমার সুখ।
~ আমাকে পাওয়ার চিন্তা মাথা থেকে দুর কর। বলেই জোহান জোরে হাটা দেয়। মাধুও জোরে হেটে জোহানের পায়ে পা মেলায়।
~ একবার আপনার পাশে আমাকে গ্রহণ করুন জোহান ভাইয়া। আমি সব সময় আপনার পাশে থাকবো। জীবনে চলার পথে আপনার পাশে থাকবো। আপনার পায়ে পা মেলাবো। কখনো পিছ পা হবো না।

জোহান কিছুনা বলে বাড়ির ভেতর ঢুকে যায়। নিজের রুমে গিয়ে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। কিছুতেই নিতে পারছে না আর এসব। তার ভালবাসাকে হারিয়ে সে নিষ্ষ হয়ে গেছে। আর এদিকে নিজের চাচাতো বোন তাকে প্রেমডোরে বাধতে চাইছে। আর সহ্য করতে পারছে না সে। হাটু ভাজ করে ফ্লোরে বসে পড়ে চিৎকার করে বলতে থাকে
~ আমি শুধু তোমার রাজকুমারী। ভালোবাসি তোমাকে প্রচুর। খুব করে চাই। আই লাভ ইউ __আই লাভ ইউ সো মাচ। এলিজা

কাদতে কাদতে সেখানেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে থাকে জোহান। দরজার এ পাশ থেকে মাধুও শুনতে পায় এলিজা বলে চিৎকার টাকে। সেও নিজের রুমে গিয়ে বালিশে মুখ চেপে কাঁদতে থাকে।

সকালে উঠেই সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছি। লিনোরের হুকুম আজি বাসায় চলে যাবে। ব্রেকফাস্ট করেই রওনা দিবে। ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসে বসে পড়লাম। খুব ক্ষিধে পেয়েছে। আমাকে একা আসতে দেখে পাপা জিজ্ঞাসা করল
~ জামাই কোথায়? জামাই কে এনে বসো।
আমি কিছু বললাম না। চুপ চাপ খেতে লাগলাম। লিনোর এসে বসতে বসতে বললো, সরি। একটা ফোন পিক করতে গিয়েছিলাম।

আমি কোন কিছু না বলে খেতেই থাকলাম। আম্মু লিনোরের প্লেটে খাবার দিতে গিয়ে দেখলাম কেমন যেন মুখ করে আছে আর হাত টাও কাপছে। কাপবেই তো। পরশু যার হাতে মরতে যাচ্ছিল আজ তাকে টেবিলে বসিয়ে জামাই আদর করতে হচ্ছে। আম্মুর কাপা হাত দেখে পাপা ধমক দিয়ে খাবার প্লেট নিয়ে নেয়। তার পর নিজে হাতে লিনোরের প্লেটে খাবার তুলে দেয়। লিনোর ও খুব উপভোগ করে জামাই আদর নিতে থাকে।

শশুর বাড়িতে এসেছি আমি। ডুকতে না ডুকতেই সকলে এসে ঘিরে ধরে। এখানে সাফিয়া, একজন বয়স্ক মহিলা, একজন মাঝ বয়সী মহিলা, একজন ইয়াং ছেলে আর একটা বাচ্চা ছেলেও আছে। সাফিয়া ছাড়া কাউকেই চিনি না আমি। সাফিয়া মাঝ বয়সী মহিলাটাকে দেখিয়ে বললো ভাবি ইনি হচ্ছেন তোমার শাশুড়ি। আমাদের মা। বয়স্ক মহিলা টাকে দেখিয়ে বললো ইনি তোমার দাদী শাশুড়ী।

আর ইয়ং ছেলেটাকে দেখিয়ে বললো ইনি তোমার ননদাই। আমার হাজবেন্ড স্বরাজ। বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে বললো ভাবি এই আমার ছেলে। সুপ্ত ইনি তোমার মামনি হয়।
মিষ্টি দেখতে বাচ্চা ছেলে একটা। কোলে নিতে ইচ্ছা করলো খুব। দু হাত এগিয়ে দিলাম কোলে নেওয়ার জন্য।

ঠিক তখনি আমার শাশুড়ী বলে উঠলেন
~ বাইরে থেকে এসেছো বউমা। ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। ফ্রেশ হয়ে কিচেনে এসো। নতুন বউ সব কিছু বুঝিয়ে দেই।
আমি মাথা নাড়িয়ে উপরে চলে আসলাম। লিনোর কে দেখলাম ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে। আমার আগেই চলে এসেছিল উনি উপরে।

পর্ব ৭

সাফিয়া কিচেন দেখিয়ে দেওয়ার পর কিচেনে গিয়ে দেখি শাশুরি মা দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে মুচকি হেসে কাছে এনে বলে
~ বাড়ির একমাত্র বউ তুমি। সবকিছু তোমাকেই দেখতে হবে।

আমার পরে তোমাকেই এই সংসার সামলাতে হবে। শোন মা আমরা রান্নার জন্য সেফ রাখি না। কারন আমরা বাইরের কারো হাতে খাবার খাই না। লিনোর তো বাড়ির খাবার ই খায়। এতোদিন এই দায়িত্ব আমি পালন করে এসেছি। এখন তুমি চলে আসছো আমার ছুটি। আমি এবার পায়ের উপর পা তোলে খাবো।

পেছন থেকে সাফিয়া বললো
~ মা ভাবি তো আজি আসলো। কাল থেকে রান্না করুক না।
~ তোর ভাবি তো আর অসুস্থ না যে একটু কাজ করতে পারবে না। নতুন বউ কেমন রান্না করে দেখি। ওর মা মেয়েকে কেমন রান্না শেখালো দেখি। বউদের তো সংসারী হতে হবে।

শ্বশুর বাড়ির সবার খেদমত করতে হবে, স্বামী ~সন্তান, রান্নাবান্না, সংসারের অনান্য কাজ কর্ম করতে হবে। নাও বউমা ভাত তো আমি বসিয়েই দিয়েছি। তুমি গরুর মাংস, ডাল, ডিম তরকারি, আর ভাজিটা করে ফেল দেখি। দুপুরে ঠিক দুটোই সবাই টেবিলে থাকে। তারা তারি করো।

~ কিন্তু মা __
~ উহু কোন কিন্তু না। কেউ হেল্প করবে না। দেখি কেমন লক্ষী মন্ত তুমি। তাড়াতাড়ি করো।
এই বলে শাশুড়ি চলে গেল। আমার আর বলাই হলো না যে আমি রান্না পারি না। কিন্তু এখন কি করবো? কেউ তো হেল্প ও করতে আসবেনা।

এতগুলো রান্না কিভাবে করবো আমি? লিনোর লিনোরের কাছে যাবো
এক দৌড়ে রুমে চলে আসলাম। হেল্প করলে লিনোর ই করতে পারে। এসে দেখি ল্যাপটপ এ বসে মন দিয়ে কাজ করছে। ডাকা কি ঠিক হবে? তবুও ডাকলাম
~ শুনুন। একটু হেল্প লাগবে।
~ মা কে বলো।

~ মা বলেছে হেল্প করবেনা। আপনি একটু হেল্প করুন না।
~ ইসস দেখছো তো কাজ করছি। কাজের সময় ডিস্টার্ব করবেনা একদম। এমনিতেই তোমাকে বিয়ে করতে গিয়ে তিন দিনের কাজ জমে গেছে তার মধ্যে এখন আসছে আবার ডিস্টার্ব করতে।

আমি আর কিছু বলার সাহস পেলাম না। ইউ টিউবে সার্চ দিয়ে দেখে দেখে রান্না করতে লাগলাম। কিন্তু পরিমানের বেশ কম বুঝতে পারছি না। কোন মতে রান্না শেষ করলাম। হাতের দুই জায়গায় দেখি পুড়েও গেছে। জালা করছে খুব।

দুপুরে সবাই টেবিলে আসলে আমি ভাত বেড়ে দেই সবাইকে। ননদাই কে ভাত বেড়ে দিচ্ছি তখন ননদাই বলে, ভাবি কি আজ প্রথম রান্না করলেন? হাত তো পুড়ে ফেলেছেন।

আমি বললাম ঐষধ লাগিয়ে নিবো। লিনোর চুপচাপ বসে আছে। দু লোকমা মুখে দিয়ে প্লেটে পানি ঢেলে দেয়। উঠে রুমের দিকে যেতে থাকে। শাশুড়িমা পেছন থেকে ডাকলে বলে
~ খাবার খাওয়ার উপযোগ্য নয়। এক কাপ কফি পাঠিয়ে দিও।

শাশুড়ি মা আমার দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, আমি রান্না জানিনা মা।
~ রান্না জাননা তো আগে বলবা নাকি। আমার ছেলে টা না খেয়ে চলে গেল। জোর করে বিয়ে করেছে বলে কি শোধ নিতে চাচ্ছ আমাদের উপর না খাইয়ে। যাও কফি নিয়ে উপরে যাও। নাকি ঐটাও পারো না?
~ পারি মা।

কিচেনে গিয়ে কফি করে উপরে চলে এলাম। এসে দেখি লিনোর ফোনে কথা বলছে। কথা শেষ করে আমার হাত থেকে কফি নিয়ে খেতে খেতে বললো
~ কফিটা কে করেছে?
~ আমি।

~ ভালোই বানাও। কাল দুপুর থেকে একজন শেফ আসবে তোমাকে রান্না শেখাতে। মাকে বলে দিব যেন মা ই রান্না করে। কাল থেকে তুমি করবে। দেখি এখানে বসো।
আমাকে বসিয়ে হাতে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে। মানুষটা কেমন যেনো। আমার কথা ভাবে নাকি ভাবে না কিছুই বুঝিনা। আসলে বুঝতে চাইনা।

লিনোর কে বললাম
~ তখন যদি আমার কথাটা শুনতেন তাহলে এমন হতো না।
~ আমি কাজে ছিলাম এলিজা। কাজের সময় আমি অন্যকিছু নিতে পারি না।

শেফ এসে আমাকে রান্নায় হেল্প করছে। আমি নিজ হাতেই সব করছি আর শুধু দেখিয়ে দিচ্ছে। সুপ্ত এসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে আমি কি কি করছি। ওর এতো মনোযোগ দিয়ে আমার কাজ করা দেখে বললাম
~ বাবা __ তোমাকে পায়েশ দেই একটু? খাবে?

ও মাথা নাড়িয়ে হা বললো। আমি একটা প্লেটে পায়েশ নিয়ে ওকে কোলে তোলে নিলাম সোফায় বসিয়ে দিয়ে আসবো বলে। ড্রয়িং রুমে যেতেই দেখি সাফিয়া বসে আছে আর শাশুড়ি আমাকে নিয়ে কথার ঝুলি খুলেছে
~ আমার এতো অল পারফেক্ট ছেলেটার কপালে এমন বউ জুটলো। শেষে কিনা বাড়িতে শেফ এসে রান্না শেখায়। জামাইয়ের টাকা তো দেখছে ফুটাঙ্গি করবেই। কোন লাট সাহেবের বেটি হে যে মায়ে কিছুই শেখায় নাই।

শিখবে কই থেকে শুয়ে বসে খাইছে, পড়ার নামে সেজেগুজে কলেজ গেছে আর ফকিন্নি ছেলেদের সাথে সারাদিন প্রেম করে বেড়াইছে।
আর শুনতে পারলাম না। সুপ্ত কে গিয়ে বসতে বলে চলে এলাম ঐখান থেকে।

জোহান : আরে আরে একি করেছো তুমি? আজ প্রথম এলে আমার বাসায়। এসেই কফি বানিয়ে ফেললে __।
~ ইয়েস মি. আপনার জন্য স্পেশাল কফি।
~ হাতটা যদি পুড়ে যেত?

~ তাহলে কি আমাকে রান্নাবান্না করতে হবে না বুঝি? সংসার চলবে কি করে?
~ ওমনেই চলবে বুঝছো। দরকার হলে আমি কাজ করে দিবো তবুও তোমার এই নরম হাত শক্ত হাতে দেব না।
~ বিয়ের আগে সবাই বলে এসব।

~ আমি মিথ্যা বলিনা। মাকে জিজ্ঞাসা করে দেখো আমি কয়েকদিন থেকে রান্না শিখছি।
~ সত্যিই? ? তাহলে আজ তো তোমার রান্না খেতেই হবে।
~ কি খাবে? নুডলস বানিয়ে দেই?
~ চলো চলো।

বিছানায় শুয়ে আছি গা এলিয়ে দিয়ে। হাতের পোড়া জায়গাটা অনেকটা ভালো হয়ে গেছে। যাস্ট একটু দাগ আছে। ফোন টা বেজে উঠলো। স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখি জোহানের নাম্বার। তারাহুরা করে রিসিভ করে বারান্দায় চলে এলাম। লিনোর ভাগ্যিস বাসায় নেই। ফোন কানে তুলতেই দেখি কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে।

আমার জোহান কাঁদছে। আমিও কেঁদে দিলাম। কেউ কিছু বলতে পারছি না। আমি এবার বললাম
~ এতোদিন পর মনে পড়লো তোমার?
~ আই লাভ ইউ।

~ আই লাভ ইউ টু।
~ কেমন আছো?
~ মরেও বেঁচে আছি।
~ একটু দেখা করবে প্লিজ।

~ হুম করব।
পিছন থেকে লিনোর বলে উঠল ~ কার সাথে কথা বলছো?
আমি আমতা আমতা করে বললাম আম্মু ফোন দিয়েছে।

~ হা হা হা। তার জন্য এতো কাদছো বুঝি? পাপা তো সিলেট গেছে কি একটা কাজে। আম্মুর হয়তো একা লাগছে। কাল সকালে গিয়ে ঘুরে এসো। এখন কান্না বন্ধ করে শোবে এসো।
~ আপনি যান আমি আসছি কথা শেষ করে।
~ হুম।

লিনোর চলে যেতেই আবার কানে ফোন তুললাম। জোহানকে বললাম, কাল সকালে আসছি পার্কে।
সকাল বেলা লিনোর বাসার গলির সামনে ড্রপ করে চলে গেল। একটা রিকশা ডেকে উঠে বসলাম। আম্মুকে একটা টেক্সট করে দিলাম যেন লিনোর ফোন করলে বলে যে আমি বাসাতেই আছি।

পার্কে নামতেই দেখি জোহান দাঁড়িয়ে। আমাকে টেনে নিয়ে একপাশে গিয়ে বসাল। হাতদুটো ধরে বললো
~ আমি বাচবোনা তুমি ছাড়া। প্লিজ চলে আসো আমার কাছে। আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। তুমি জানোনা আমার এই কয়টা দিন কিভাবে কেটেছে। আমাকে এতো বড়ো শাস্তি কেন দিলে এলিজা? কি দোষ ছিল আমার?

~ আমি নিরুপায় ছিলাম জোহান। আমাকে ক্ষমা করো। আমি ইচ্ছে করে এ বিয়ে করিনি। আমায় জোড় করে করেছে।
~ আমার কাছে আসবেনা তুমি? আমি যে তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।

~ আমি তোমার কাছে কি নিয়ে আসবো জোহান আমার যে আর তোমাকে দেওয়ার মতো কিছু নেই। আমার সব ঐ লিনোর __
উঠে কাঁদতে কাঁদতে চলে আসলাম। আমি আর পারলাম না জোহানের সামনে থাকতে।

পিছন থেকে অনেকবার জোহান ডেকেছে আমি আর ফিরে তাকায়নি।
বাসায় এসে নক করতেই আম্মু দরজা খুলে দিলো। আমাকে টেনে ভিতরে এনে বললো
~ কই ছিলি এতোক্ষন?

লিনোর বার বার ফোন দিচ্ছে। আমি এটা ওটা বাহানা দিতে দিতে শেষ হয়ে যাচ্ছি। ফোন কর ওকে। আগে হাত মুখ ধুয়ে আয়। কি অবস্থা করেছিস মুখটার কেদে কেটে।
আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেই আবার কল এলো আম্মুর ফোনে। কানে ধরতেই ধমক দিয়ে বলল
~ কোথায় ছিলে?

টেনশনে টেনশনে আমি শেষ আর ও ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এক সের। কেন ঘুমের মধ্যেই কি একটু ফোনটা কানে ধরা যায় না? কোন দেশী ঘুম ঘুমাও তুমি?
আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম। তাহলে আম্মু ঘুমের কথাই বলেছে। লিনোর না বললে তো আমি কি না কি বলতাম পরে ধরা পড়ে যেতাম।

~ ঐ একটু ঘুঘুমম _
~ আমি বিকালে আসছি। রেডি থেকো বাসায় চলে যাবো।
~ ওকে।

বিকালে লিনোর আসলো। আম্মু না খেয়ে যেতে দিবে না। তাই দুজনেই খেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। সন্ধ্যার আগে বাসায় পৌঁছে গেলাম। বাসায় ঢুকতেই সুপ্ত এসে আমার কোলে উঠলো। আমি কোলে নিতেই বলল
~ জানো মামনি পাপা না চলে যাচ্ছে। মাম্মা কাঁদছে।

সাফিয়া চলে যাবে শুনে খারাপ লাগলো। সুপ্তকে বললাম, সন্ধ্যা তো হয়ে আসছে। কখন যাবে তোমরা?
~ আমরা তো যাবো না। আমরা তো এখানেই থাকি। পাপা যাবে।
ওহ তার মানে সাফিয়া এখানেই থাকে শশুর বাড়িতে থাকে না। যাক ভালোই হলো আমার একজন সাথী হলো।

পর্ব ৮

রান্না করছিলাম। হুট করে পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরল। এ স্পর্শ এ কয়দিনে আমার ভালোই চেনা হয়ে গেছে। বুঝতে পেরে বললাম
~ কখন এসেছেন আপনি? লাঞ্চের টাইম তো এখনো হয়নি।

~ হুম তাই এলাম। আজকাল ভালোই রান্না শিখে গেছো তুমি। আমার তিন চার জন বন্ধু আসবে। লাঞ্চ করবে দুপুরে। ওদের জন্যও রান্নাটা করে ফেলো মাই ডিয়ার। ওরা রওনা হয়ে গেছে।

হাতের দিক কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। রান্না শিখে গেলেও হাতে অনেকবার ছেকা খেয়েছি। ঠুসা পড়ে গেছে কয়েক জায়গায়। জালা করছে খুব। কোন মতে কষ্ট করে নিজেদের রান্না টা সেরে নিচ্ছিলাম।

এখন আবার মেহমানদের জন্য রান্না করব কিভাবে বুঝতে পারছি না। যাই হোক রান্না তো করতে হবে। রওনা দিয়ে দিয়েছেন উনারা। উনি তো বলেই চলে গেছেন। হেল্প করতে বলবো কি কাউকে? সাফিয়া তো বাসায় নেই। শাশুড়ীতো আর আসবেন না আমাকে হেল্প করতে। কি করি?
কষ্ট করে রান্না শেষ করে টেবিলে এনে সাজিয়ে নিলাম।

উপরে রুমে এসে চেঞ্জ করে নিলাম। সবুজ কালার শাড়ির উপর মেজেনটা সুতো দিয়ে কাজ। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছি শুধু। শাড়িতে বউ বউ লাগছে। এরকম বউ সাজে দেখার অধিকার তো আমি একজনকেই দিয়েছিলাম। আজ অনেকেই আমার এই বউ রুপ দেখে কিন্ত যাকে দেখাতে চেয়েছিলাম সেইতো দেখতে পেল না।

ফাল্গুনের রুপমাধুরী প্রকৃতিতে বিরাজমান। ফাগুনের প্রথম দিনে জুটি বেধেছে প্রেমজগতের প্রেমিক প্রেমিকারা। আমি আর জোহান ও বাদ দেই নি। কলেজে বড় করে অনুষ্টান হচ্ছে। ছেলেরা নীল পাঞ্জাবি আর মেয়েরা বাসন্তী শাড়িতে নিজেদের সাজিয়ে নিয়েছে। আমি শাড়ি পড়িনা স্বভাবতই। তাই পছন্দের হলুদ রঙের চুড়িদার পড়ে সেজে গুজে কলেজে চলে আসি।

কলেজে আসতেই দেখি জোহান নীল পাঞ্জাবি পড়ে গেইটের সামনে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমাকে দেখেই মুচকি হাসি দিল। আমি সামনে যেতেই পেছন থেকে হাত দুটো সামনে এনে আমার সামনে ধরল। ওর হাতে একটা শপিং ব্যাগ। আমার হাতে দিতেই আমি জিজ্ঞাসা করলাম কি এটা?

জোহান আবারো হেসে উঠল। বলল ~ আমি তো জানতাম তুমি শাড়ি পড়বেনা। তাই এই ছোট্ট আয়োজন। প্যাকেট খুলে দেখি নীল কালার একটা খুব সুন্দর সুতি শাড়ী। আমি হেসে দিলাম। কিন্তু আমি যে পড়তেও পারি না। এখন কিভাবে পড়ব। আমার মুখের চিন্তা ছাপ ফুটে ওঠে। জোহান অবাক করে দিয়ে আমাকে নিয়ে ওর ডিপার্টমেন্টে সেমিনারে যায়। ওখানে দেখি ওর দুজন বান্ধবী দাড়িয়ে আছে।

জোহান আমাকে রেখে চলে যেতেই আপু দুজন আমাকে ভিতরে নিয়ে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দেয়। শাড়ি পড়া অবস্থায় নিজেই নিজেকে চিনতে কষ্ট হচ্ছে। আপুরা আমাকে নিয়ে বাইরে আসে। দেখি জোহান দাঁড়িয়ে আছে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে। লজ্জায় যেন আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি।

আমার কাছে এসে হাত দুটো ধরে সোজা ক্যম্পাসের ভিতরে নিয়ে আসে। আমি উপর দিকে তাকাতে পারছিনা লজ্জায়। ও ওর পা টা ভাজ করে বসে হাতে একটা আংটি নিয়ে সুন্দর করে প্রপোজ করে। আমি ওর হাত থেকে আংটি পড়ার পর বলে
~এইটা কি হলো?
~ কি হলো মানে?

~ তুমি কি জানো না হিরোরা প্রোপোজ করার পর হিরোইন রা যখন প্রোপোজ এক্সেপ্ট করে তখন হিরো দাঁড়ানোর সাথে সাথে হিরোইন হিরোকে জড়িয়ে ধরে। তাহলে আমার হিরোইন হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলেনা কেন?
হাতের তালুতে জোড়ে একটা চিমটি কেটে বললাম
~ শুধু জড়িয়ে ধরার ধান্দা তাইনা?

জোহান মুখ ফুলিয়ে বলে
~ ধান্দা তো হবেই। কখনো তো আর সেটা পেলাম না। তবে আজ খুব করে চেয়েছিলাম। শাড়ি পড়ে বউ সেজে আছো তুমি। যখন আমাকে জড়িয়ে ধরবে না তখন হেব্বি একটা ফিলিংস আসবে। মনে হবে আমার বউ আমাকে জড়িয়ে ধরেছে।

~ আগে তোমার বউ হই নাকি। তারপর দেখো তুমি সারাদিন ছাড় ছাড় বলে চেচাবে।
~ শাড়িতে তোমায় অনেক সুন্দর লাগে। অসম্ভব সুন্দর। বিয়ের পর কিন্তু শাড়ি ছাড়া আর কিছুই পড়বেনা বলে দিলাম।
~ যা তুমি চাইবে __

লিনোরের বন্ধুরা অনেক আগেই চলে আসছে। লিনোর তাদের সঙ্গ দিচ্ছে। আমি গিয়ে সালাম দিলাম। আমাকে বসতে বলে লিনোর ওদের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলো। তিনজন এসেছে। তিনজন ই ছেলে। ওর বন্ধুদের মধ্য একজন নাম ফাহাদ আমার সাথে হাত মেলানোর জন্য হাত এগিয়ে দিলো।

আমার কেন জানি ভালো লাগছে না। ফাহাদ কেমন জানি করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তবুও অপারগ হয়ে হাত মেলাতে হলো তার সাথে। হাত বাড়িয়ে দিতেই ধরে নিল খপ করে। আমি হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলে আরো জোরে হাত ধরে ফেলে। আমি লিনোরের দিকে তাকালাম।

কিন্তু তার কোন খেয়াল ই নেই এই দিকে। লিনোরের বাকি দু বন্ধু কিন্তু ঠিকই খেয়াল করেছে কিন্তু ভাব সাব এমন যেন কিছুই জানে না। ফাহাদ আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়েই লিনোর কে বললো
~দোস্ত তোর বউটা মাশাআল্লাহ। দোয়া করি অনেক সুখে থাক তোরা। একি ভাবি দেবর হইতো __হাতটা ছাড়ুন।

একটানে হাত ছাড়িয়ে নিলাম। প্রথমেই মনে হয়েছিল লোকটা ভালো না। লিনোর কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে যেন ওর মাথা নতো হয়ে গেছে।

ওনার আরেকজন বন্ধু বলে উঠল
~ আরে আরে ভাবি ওমন তাকি তুকি করছেন কেন? ফিল নরমাল। হয় হয় এমন হয়। সালা ফাহাদ যে পরিমাণ হ্যান্ডসাম __ আমাদের বিবিরাও কিন্তু প্রথমে ফাহাদকে দেখে হা হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে বলেও যে আমার আগে ফাহাদকে দেখলে ওকেই বিয়ে করে নিতো।

সবাই সজোরে হেসে উঠল। আমার ওদের হাসির শব্দে গা ঘিন ঘিন করছে। উঠতে হবে এখান থেকে। এই অসভ্য দলে নিজেকে মানাতে পারছি না। তাই বললাম
~ আপনাদের লাঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফ্রেশ হয়ে আসুন।

আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি তখন সবাই এসে বসে পড়লো। আমার শাশুড়ী কেও নিয়ে খেতে বসেছে সবাই। বুঝলাম এদের বন্ধুত্ব অনেক দুর অব্দি গভীর। লিনোরকে বললেও বিশ্বাস করবে না। ফাহাদের কাছে গিয়ে প্লেটে তরকারি দিতেই হাত দিয়ে কৌশলে বাটিতে হাত লাগায়। আমার হাত থেকে বাটি টি ফসকে যায়।

কিছুটা তরকারি ফাহাদের শার্টে পড়ে যায়। আমিও স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যাই। লিনোর সহ শাশুড়ী মা রেগে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ভয়ে আমার কলিজা কেপে উঠে এই হিংস্র মানুষ দুইটার দিকে তাকিয়ে। ফাহাদ নাক ছিটিয়ে বললো
~ ইস ভাবি দেখেন তো কি করে দিলেন। ওয়াশ করতে হবে এখন। চলুন ওয়াশ রুমটা দেখিয়ে দেন। আমি কিন্তু ওয়াশ করতে পারি না। আপনাকেই করে দিতে হবে।

আমি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলাম। চাকর নাকি আমি এই বেটার? নিজেইতো ফেলে দিল তরকারি। এখন আবার আমি নাকি শার্ট ওয়াশ করে দিবো? বেটা লুচুর ঘরে লুচুর হাড্ডি। তখনি শাশুড়ি চেচিয়ে উঠল
~ এভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও ফাহাদকে উপরে নিয়ে যাও। আমি খাবার দিচ্ছি এদেরকে।

ফাহাদকে রুমে নিয়ে আসলাম। ওয়াশ করার জন্য শার্ট টা চাইতেই উনি শার্ট খুলে আমার হাতে না দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিল। আমি কিছু বলতে যাবো তখনি আমার মুখ চেপে ধরলো। আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু পাচ্ছি না।

একহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো
~ সোনা পাখি তুমি তো খুবি সুন্দরী। আমাদের বউদের মধ্যে তুমিইই সুন্দরী বেশি। ওদেরকে তো কেউ টেস্ট করা বাকি রাখিনি। তাহলে তোমাকে কেন আমরা রাখবো? তোমার হাজবেন্ড লিনোরকে বললে ও কিছুই বলতে পারবেনা। ওয়তো আমাদের বিবির সাথে কম টাঙ্গি ফাঙ্কি মারেনি। শুধু শুধু তুমি কেন এত তেজ দেখাচ্ছ? তোমার হাজবেন্ড এর থেকে অনেক বেটার আমি।

আসনা একটু আসনা __
ফাহাদের কথা আর কাজে আমি তো মরে যাচ্ছি। ছাড়ানোর চেষ্টা করছি বার বার। কিন্তু কিছুতেই পারছি না। ফাহাদ আরো জোরে চেপে ধরছে। উপায় না পেয়ে ছেড়ে দাও ছেড়ে দাও বলে চিৎকার করতে লাগলাম।

আমার চিৎকার শুনে নিচ থেকে সবাই উপড়ে চলে এসে দেখে আমি আর ফাহাদ বেডে শুয়া অবস্থায় একপ্রকার জড়াজড়ি করছি আর আমি চিল্লাচ্ছি। লিনোর এলিজা বলে জোরে চিৎকার করে উঠে। ফাহাদ তারাতারি উঠে লিনোরের সামনে যায়। আমিও কাঁদতে কাঁদতে বিছানা ছেড়ে শাড়ি ঠিক করে নেই।

ফাহাদ লিনোরকে বলে
~ কেন যে সব মেয়ে আমার উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে বুঝিনা। শুনেছি তুই কোন মর্ডান মেয়েকে বিয়ে না করে মার্জিত একটা মেয়েকে বিয়ে করেছিস। এখন তো দেখছি তোর বউই বেশি ডেঞ্জেরাজ। ছিহ। আসছি থেকেই দেখছি আমার সাথে এমন করছে।

এখন রুমে পেয়ে _
লিনোর চোখ মুখ খিচে ফাহাদের হাত ধরে বললো
~ সরি দোস্ত। আমি তো এসব কিছু ভাবিই নি কখনো।

~ তুই ভাবিসনি ঠিক আছে। কিন্তু তোর বউতো ঠিক ই ভেবেছে। আমি না না করছিলাম আর তোর বউ বলে কিছুই হবে না। লিনোর কি আপনার বউয়ের কাছে যায় না?

আমি তো পুরো স্তব্ধ শুনে। এমন লোক ও পৃথিবীতে আছে __আগে জানতাম না। ইভেন লিনোরের সাথে দেখা না হলে কিছুই দেখতাম না এসবের। খারাপ লোকের বন্ধু তো খারাপই হবে। এটাই তো স্বাভাবিক। আমার পাপাও তো এদেরি দলের।
লিনোর ফাহাদের কাছে ক্ষমা চাইতে চাইতে বাইরে চলে গেল। শাশুড়ি মা ছিহ বলে মুখ বাকা করে চলে গেলো।

রাতে আর ডিনারে কেউ ডাকলো না আমায়। খুব ক্ষুধা লেগেছে। সে দিকে খুব কমই খেয়াল আমার। ফোনে বার বার টুং টুং করে এস এম এস আসছে। জানি জোহান দিচ্ছে সব এস এম এস। সারাদিনে অনেক গুলো করে এস এম এস দেয়। শুধু সিন করি। রিপ্লাই দেই না। এই মুহুর্তে মাথায় শুধু একটা কথাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
“লিনোর ওর বন্ধুর বউ এর কাছে যায়”।

দু চোখ ভরে যায় নোনা জলে আমার। লিনোরের মুখোমুখি হতে হবে আমার। ওকে জিজ্ঞাসা করতে হবে। ও যদি এই কাজ না করতো তাহলে ঐ ফাহাদ কিছুতেই আমার কাছে আসার সাহস দেখাতো না লিনোর এতো ভয়ংকর জেনেও।
হটাৎ মাথায় ব্যাথা পেলাম। পিছনে তাকাতে না তাকাতেই লিনোর আমার চুলের মুঠি ধরে ঘুরিয়ে নিলো।

আমি ব্যথায় চিৎকার করে উঠলাম। লিনোর হুংকার দিয়ে বললো
~ খুব শখ না তোর চিৎকার করার তাও পর পুরুষ কে বিছানায় টেনে নিয়ে। আমার মান সম্মান নষ্ট করতে চাস তুই। ওদের জানাস আমি তোকে সুখ দিতে পারি না তাইনা? বিয়ের আগে ঐ ভিখারীর সাথে নষ্টামি করেছিস আর এখন আমারি বন্ধুর সাথে লেগেছিস। আজ দেখব তোর কত তেজ।

পর্ব ৯

জানালার পাশে দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে আছি আমি। শরীর ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। বন্ধুর কথা বিশ্বাস করে প্যান্ট এর বেল্ট খুলে ইচ্ছামতো মেরেছে আমায়। আমার আর্তনাদ আর সত্য কথা তার কান অব্দি পৌঁছায় নি। নিষ্ঠুরতা কাকে বলে এ যাত্রায় বুঝে গেলাম আমি। এ কোন মরন যন্ত্রনার ফাদে পড়েছি আমি। মানুষ এতো হিংস্র হয় কি করে? আল্লাহ এখানে আর থাকতে চাই না আমি। মুক্তি দাও আমাকে লিনোর নামের এই অভিশাপ থেকে।

সাওয়ার নিয়ে নিচে আসলাম। শরীর খারাপ লাগছে খুব। ব্যাথা করছে প্রচুর। সুপ্ত আমার গায়ের দাগ গুলো খুব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। একটু ছোয়ে দিতেই ব্যথায় উহ করে উঠলাম আমি। ও ভয় পেয়ে বলে উঠল
~মামনি তোমার কি হয়েছে? এতো দাগ কেন এখানে ওখানে?

আমার উত্তর পাওয়ার জন্য হা করে মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলবো এখন আমি এই বাচ্চা ছেলেটাকে? তখনি শাশুড়ি মা চেঁচিয়ে বলে উঠলেন
~ কলঙ্গের দাগ বুঝলে নানুভাই। কলঙ্কিনী মেয়ে বিয়ে করে এনেছে তোমার মামা।

সাফিয়া ধমকে বলে উঠে
~ আহ মা। চুপ করো না। ছোট্ট তো আমার ছেলেটা। ওর সামনে এসব না বললে হয় না কি?
শাশুড়ি মা চুপ করে গেলেন। আমি চোখ বন্ধ করে কথাটা ভোগ করে নিলাম। কিচেনে গিয়ে দেখি ব্রেকফাস্ট অলরেডি রেড়ি হয়ে গেছে। আমার দেরি দেখে হয়তো করে ফেলেছে। শাশুড়িমা আমার সামনে থেকে বাটি গুলো নিয়ে টেবিলে চলে গেল। আমি বললাম
~ আমি নিয়ে যাই মা।

~ না মা তোমাকে আর নিতে হবে না। কাল থেকে সকাল নয়টা পর্যন্ত ঘরেই থেকো। আমি নয়তো সাফিয়া গিয়ে তোমাকে খাবার দিয়ে আসবো। আমার ছেলের আদরের বউ কিনা _
হাতে পেটে কাল দাগ গুলো দেখে চোখের জল ছেড়ে দিলাম। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম
~ কেমন আদরের দেখছেনই তো মা।

~ তো তোমার মতো মেয়ের সাথে আর কতো ভালো ব্যবহার করবে বলো মা __। আমার ছেলের জীবন টাকে শেষ করার জন্যই তো এসেছো। একটু দয়া করো মা। আমার ওতো ভালো ছেলেটাকে ভোলাভালা পেয়ে এইভাবে মানুষের সামনে হেনস্তা করো না। কপাল কপাল সবি কপাল।
শাশুড়িমা বির বির করতে করতে সবাইকে নিয়ে ব্রেকফাস্ট করছে। আমি না করেই উপরে চলে এলাম।

রুমে এসে দেখি লিনোর এখনো ভুস ভুস করে ঘুমোচ্ছে। কি সুন্দর লাগছে ঘুমের মধ্যে। এগিয়ে গিয়ে উনার মুখের কাছে বসে পড়লাম। লিনোরকে এই প্রথম এত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি আমি। প্রশস্ত কপাল এর নিচে জোড় ভ্রু। ছেলেদের জোড় ভ্রুতে মেয়েদের থেকেও কম সুন্দর লাগে না। বড় বড় পাপড়ি, লম্বা নাক, গাল ভর্তি দাড়ি, ফর্সা রঙে একদম তুরষ্কির মতো চেহারা। কতো নিষ্পাপ লাগছে তাকে। নিষ্পাপ _ হাস্যকর শব্দটা।

জোরে শব্দ করে হেসে উঠলাম আমি। হাসি কিছুতেই যেন থামাতে পারছিনা। শাশুড়ী মার কথা গুলো মনে করে আরো বেশি হাসি পাচ্ছে আমার। আমি নাকি তার ছেলের জীবনকে শেষ করতে এসেছি। তার ছেলে নাকি ভোলাভালা। আর এই নিষ্পাপ মুখ খানা। হায়রে দুনিয়া __ এই ছিল আমার কপালে?

হাসি কোন মতে থামালাম। চোখের কোনে পানি চলে আসছে আয়নায় দেখে মুছে নিলাম। উঠতে যাবো তখনি হাতের টান পড়ল। দেখি লিনোর উঠে বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আমি কি জিজ্ঞাসা করতেই বলে
~ পাগলের মতো হাসছো কেন এইভাবে?
~ আপনাকে দেখে।
~ কেন আমাকে কি সারকাসের মতো লাগে যে তুমি হাসবে?

আমার আবার হাসি পেয়ে গেলো। হাসতে হাসতে লিনোরের মুখের একদম কাছে চলে আসলাম। লিনোরের নিশ্বাস গুলো আমার মুখে এসে বারি খাচ্ছে। আমার এরকম কান্ডে লিনোর পুরো শকড। নাকটা একটু টেনে দিয়ে বললাম
~ আপনার মুখ সারকাস কেন হবে? আপনি অনেক সুন্দর। তুর্কিশদের মতো চেহারা। ঘুমোলে কতো নিষ্পাপ লাগে আপনাকে। আপনার মা বললো আপনি নাকি ভোলাভালা।

অনেক ভালো। আমি নাকি আপনার জীবন শেষ করে দিতে এসেছি। আচ্ছা আমি এসেছি নাকি আপনি এনেছেন? সে যাই হোক। আপনার ঐ বন্ধুটা আছে না? ফাহাদ _। ও না আপনার থেকেও লম্বা, হেন্ডসাম, সুন্দর। আমি না পছন্দ করে ফেলছি। কালতো আপনার জন্য ওকে কাছেই পেলাম না। আরেকদিন ডাকুন না প্লিজ। ওকে চাই আমার একবার হলেও বিছানায় চাই।

লিনোর আমার কথা শুনে নিজের মাথা খামচে ধরল। তারপর দু হাতে আমার মুখ ধরে বলল
~ এই এলিজা জান আমার। কি বলছো এসব? ফাহাদ কে পছন্দ হয়েছে মানে কি? মজা করছো আমার সাথে? আমি জানি তুমি মজা করছো। তুমি এমন করতেই পারো না। আমি চিনি তোমায়।

এক ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে বললাম
~ কিসের চিনেন আপনি? চিনেন তাহলে এই কাল দাগ গুলো কিসের? আমার কথা শুনেছেন আপনি কাল? শোনেন নি তাই না? কান পর্যন্ত পৌঁছায় নি আপনার হিংস্র জানোয়ার এর গর্জনে। নিজের বউ এর কাছে এসেছে জন্য খুব লেগেছে তাই না? ওদের বউদের কাছে তো ঠিকই যান। তাইতো ওরাও আপনার বউ এর কাছে আসার সাহস করে।

লিনোর চুপ করে আমার কথা শুনছে। কিছুই বলছে না। ওর চুপ করা দেখে আমি মুখ দিয়ে যা ইচ্ছা তাই বলে যাচ্ছি। লিনোর শুধু চূপ করে কিছুক্ষণ শুনে চলে গেল রুম থেকে।

অন্ধকার রুমে মেঝের এক কোনে চোখ বন্ধ করে বসে আছে জোহান। জীবন থেমে গেছে যেন তার। কারো সাথে কথা বলে না। মাঝে মাঝে ঘর থেকে বের হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে এলিজার বাবার বাসার সামনে। অপেক্ষায় প্রহর গুনে একটি মুখ দেখার জন্য। কিন্ত হায় সে মুখ তো সে আর দেখতে পারে না। তবুও যেন কিসের আশায় তাকিয়ে থাকে সেই বেলকনির দিকে যদি একবার তার প্রেয়সি একবার উকি দেয়।

মাধু ভাত নিয়ে এসে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দরজাটা আবার ভেজিয়ে দিয়ে দেয়। জোহানের সামনে এসে বসে ফ্লোরে ভাতের থালা টা রাখে। হাত দিয়ে মাথার চুল গুলো ঠিক করে দেয়। জোহান এক ধেন এ মাধুর দিকে তাকিয়ে আছে। অনুভুতি শূন্য আজ। মাধু ভাত মেখে জোহানের সামনে ধরে। জোহান মুখে তুলে নেয় প্রতিটি লোকমা।

খাওয়ার পর জোহান উঠে রেড়ি হতে থাকে। মাধু জিজ্ঞাসা করে
~ আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
জোহান কোন উত্তর দেয় না। না দিয়েই বেরিয়ে যেতে নেয়। মাধু দরজা আটকে দাড়ায়।

~ জোহান ভাই অনান্য দিনের মতো আজো শুধু শুধু ঐ বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন। আবার তৃষ্ণার্ত হয়েই এ বাড়ি ফিরে আসবেন। কেন শুধু শুধু এতটা কষ্ট পাচ্ছেন? যার জন্য কষ্ট পাচ্ছেন সেতো ঠিকি সুখে আছে। আপনার কথা কি সে ভাবে একবারো? আপনার এস এম এস এর রিপ্লাই পর্যন্ত দেয় না। এরকম বোকামো কেন করছেন বলুনতো। যে আপনার কথা ভাবে না তার কথা কেন ভাবছেন?

জোহান এবার মাধুর দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে
~ আমার আশা ছেড়ে দে মাধু। মাকে বল একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দিবে। স্বামী সংসার নিয়ে সুখী হ।

~ যেদিন থেকে আপনাকে ভালোবেসেছি সেদিন থেকেই আপনাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি। আপনাকে ভালো রাখার সমস্ত দায়িত্ব নিজের ঘারে নিয়ে নিয়েছি। আপনার হাসিতে হেসেছি আপনার বেদনায় কেঁদেছি। আমার সব কিছু জুড়ে আপনার স্থান।

আমি কিভাবে অন্যকে বিয়ে করে সুখী হবো বলেন তো?
~ তোর প্রশ্নের উত্তর গুলো তুই নিজেই দিয়ে দিলি। এখন তুই বল এলিজা জায়গাটা তোকে আমি কিভাবে দিবো? এটা কি সম্ভব?

মাধু চুপচাপ দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে ফুপিয়ে কাদতে রইলো। জোহান বেড়িয়ে এল দরজা দিয়ে। মাধুর কান্না দেখার কোনো ইচ্ছা নেই তার। সেই কান্না শুনবেনা সে কিছুতেই। মাধু যে কান্না কাদছে সে কান্না ও নিজেও কাদছে। জোহান জানে এই কান্না কতোটা ভয়ংকর.. কতোটা যন্ত্রনাময়।

বহুদিন পর নিজের রুমে এলাম আমি। রুমটা যেন মরেও বেঁচে আছে আমারি মতো করে। প্রান হারিয়ে ফেলেছে একদম। আম্মুকে বলে পাপাকে দিয়ে লিনোরকে ফোন করিয়ে এখানে আসার জন্য রাজি করিয়েছি আমি। পাপা গিয়ে গাড়ি করে নিয়ে এসেছে আমায়।

ঐ বাড়িতে আর এক মুহুর্ত থাকতে পারছিলাম না। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। ফুলের গাছ গুলো যত্মের অভাবে আধমরা হয়ে গেছে। শেষ কবে ফুল ফুটেছিল কে জানে? হটাৎ ই একটা আওয়াজ ভেসে আসলো। আমি চমকে উঠলাম।

কয়েকমাস পর এই কন্ঠ আমার কানে আসছে। আশে পাশে তাকিয়ে খুজার চেষ্টা করছি। আবার ডাক শুনলাম এলিজা __ বলে। নিচে তাকিয়ে দেখি জোহান দাঁড়িয়ে। বার বার হাত নাড়িয়ে ডাকছে আমাকে। ভালোবাসার মানুষ টাকে এতোদিন পর দেখে আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। বুকের মধ্যে হাপর টানতে শুরু করেছে। ক্রমশ অস্থির হয়ে উঠছে।

এক দৌড়ে নিচে নামলাম। গেইট থেকে বের হতেই দেখলাম জোহানকে। চেহারাটা মলিন হয়ে গেছে। শার্টের সামনের বোতাম গুলো খুলা, উশখো খুশকো চুল, লাল দৃষ্টি, আমার হিরোর আজ ব্যর্থ চেহারা ফুটে উঠেছে। মনে হলো কখন গিয়ে আমি জোহানকে বুকে জড়িয়ে ততক্ষনে আমার বুকের এই অস্থিরতা কমবে। জোহানো এগিয়ে আসছে আমার দিকে।

জোহানকে জড়িয়ে ধরবো এই মুহুর্তে ছিটকে পড়ে গেলাম আমি। দেখি পাপা আর পাপার সাথে দুইটা সিকিউরিটি। আমি উঠতে উঠতেই জোহানকে মারা শুরু করে দিয়েছে সিকিউরিটি দুজন। আমি চিৎকার করে গিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি। পাপা এসে আমাকে টেনে দুরে গিয়ে দাঁড়ালো। কিছুই বলতে পারলাম না আমি জোহানকে। অনেক কথাই জমানো ছিল মনে।

বলতে পারলাম না তোমায়। পাপাকে বার বার রিকুয়েষ্ট করছি যেন জোহানকে ছেড়ে দেয়। পাপা আমাকে ধমক দিয়ে বললেন
~ চুপ থাক তুমি। মেরে ভাসিয়ে দিবো আজ ওকে। ওর সাহস কি করে হয় আমার বাড়ির সামনে এসে তোমাকে ডাকে। আবার যদি কোন দিন না আসতে পারে তার ব্যবস্থা টা করবো আজ আমি।

লেখা – লাবিবা তানহা লিজা

চলবে

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “প্রাপ্তির অপ্রাপ্তি – প্রেমের দুঃখের গল্প” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ। )

আরো পড়ূন – প্রাপ্তির অপ্রাপ্তি (শেষ খণ্ড) – প্রেমের দুঃখের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *