হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প ১৬

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ১৬ | Love Story

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ১৬: গত পর্বে নীল ও প্রিয়ন্তির মাঝে মিষ্টি কিছু সময় কাটানো দেখেছি, আরো দেখেছি প্রিয়ন্তির না বলা চোখের ভাষা কিভাবে নীলের দিকে চেয়ে আছে। নীল কি তবে তার সিদ্ধান্তে অটল থাকবে? চলুন দেখি কি হয়।

ভালবাসার নিবেদন

ঘড়ির কাটায় সাতটা বেজে গেল। প্রিয়ন্তী উঠতে চাইলে নীল বলল আর কিছুক্ষন থাকি প্লিজ। আটটার মধ্যে দিয়ে আসব।
প্রিয়ন্তী কিছু বলল না। ওর দম বন্ধ হয়ে আসছিল। চারপাশের সুন্দর পরিবেশকেও ওর বিরক্ত লাগছিল। এমন একটা দিন সে কতকাল ধরে চেয়েছিল তবে সেই দিনের শেষটা এমন হবে কল্পনাও করেনি কখনো। ও কি নীলকে আবার একবার অনুরোধ করবে?
যদি নীল বুঝতো?
কেন যেন আত্নসম্মান বোধটাও লোপ পেল। কোন কিছু নিয়ে আর পরোয়া করেনা ও।

শেষ একবার নীলকে ডেকে বলল,
: শুনেন
: হ্যা বলো?
: একটা বার কি চেষ্টা করা যায়না? অতীতে খারাপ কিছু ঘটেছে মানেই কি এখনো একই ঘটনাই ঘটবে?
: দেখো প্রিয়ন্তী, তুমি আমায় বোঝার চেষ্টা করো। সম্পর্কের এসব বাধা ধরা নিয়ম আমার পছন্দ না।
: আর আমি যদি কোন নিয়মই না দেই?
নীল এ কথা শুনে হেসে দিল। প্রিয়ন্তীর হাত ধরতে চাইলেই প্রিয়ন্তী বেশ কান্নামাখা কণ্ঠে বলল,
: দেখেন আজকের দিনটা নষ্ট করবেন না প্লিজ। আমি চাইনা আজ নেগেটিভ কোন কথা শুনতে। পজেটিভ কিছু না শুনে আমি যাচ্ছি না।
: তাই?
: হ্যা তাইই তো। অন্য কে কবে আপনার সাথে কি খারাপ করেছে তার শাস্তি আমি কেন পাবো? আমার ভালোবাসা কি এতটাই মূল্যহীন?
: তা নয়। কিন্তু তুমি আমাকে ভুল বুঝছো।
: আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা ডাক্তার বাবু। দেবনা কোনো বাধা ধরা নিয়ম, রাখবোনা আটকে কোন জালে শুধু আপনি আমার হয়ে যান?
নীল এ কথা শুনে প্রায় নিশ্চুপ। কোন উত্তর নেই।
প্রিয়ন্তী বুঝতে পারছে নীলের উত্তর টা কি!
তবু অনেক আশা নিয়েই নীলের চোখ জোড়ায় তাকিয়ে ছিল সে।
নাহ নীল কিছুই বলছেনা।
প্রিয়ন্তী অন্য পাশে মুখ ঘুরালো। সামনে নদীর ঢেউ এর কলকল শব্দ, পিছনের হাইওয়ে তে গাড়ীর শব্দ, এক পশলা বৃষ্টির পানি ছুয়ে যাচ্ছে ওকে! এই প্রকৃতিটাও না! কি করে বুঝে গেল ওর মনের অবস্থাটা!
নাহ ভাবতে পারছেনা ও এসব। নীল কি কিছুই বলবেনা আর?

মায়া মাখা মুখের অভিব্যক্তি

হঠাৎ নীল প্রিয়ন্তীর হেলমেট টেনে ওকে নীলের দিকে ঘুরালো।
প্রিয়ন্তী নিচে তাকিয়ে আছে।আর তাকাবেনা সে ওই সর্বনাশা চোখের দিকে।
নীল বলে উঠলো,
: সত্যিই চাও একবার চেষ্টা করি? কিছু জানো আমার ব্যাপারে? আমার জীবনের ব্যাপারে?
: চাইনা আমি কিচ্ছু জানতে। শুধু যেটা জানতে চাচ্ছি সেটা জানান প্লিজ। আমি আর নিতে পারছিনা।
নীল হঠাৎ করেই প্রিয়ন্তীর কপালে চুমু খেল। প্রিয়ন্তী চোখ দুটি বন্ধ করে আছে।
ইশশ! কেন বোঝনা নীল? আমি যে এই তোমাকে আমার করে চাই শুধু।
তারপর নীল বলল,
: তাকাও আমার দিকে। এমন দুষ্টু মিষ্টি মেয়েটা মুখ ভার করলে বড্ড বেমানান লাগে তো।
: তাহলে মেয়েটাকে হাসি খুশি রাখুন। আপনি তো চাইলেই পারেন।
: ওকে ওকে চেষ্টা করে দেখতে পারি। তবে এতে তুমিই কষ্ট পাবে। কারণ আমি বাকী দশটা বফের মতো হয়ে পারবোনা।
: চলবে। চাইনা সবার মতো বফ আমার!
প্রিয়ন্তী যেন পুরো দুনিয়ার সব আনন্দ খুজেঁ পেল।
এই ছেলেটা এতটুক বুঝে নিলে কি এমন হয়?

তারপর দুজন বাইক নিয়ে ফেরার পথে রওনা দিল। নাহ এবার প্রিয়ন্তী নীলকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেই বসেছে যেন কেউ এসে নিয়ে যাবে নীলকে। ওর মনে ফাগুনের পূর্নিমা রাতের মতো আলো ঝলকানি দিচ্ছে। ইচ্ছে হচ্ছে গলা ছেড়ে গান গায়,
এই পথ যদি না শেষ হয়
তবে অবশ্যই ভালো হয়,

নীল প্রিয়ন্তীকে নামিয়ে দিয়ে তাকিয়ে আছে। কেন যেন নীল আজ বিদায় দিচ্ছেইনা!
প্রিয়ন্তী শেষে বলেই ফেলল,
: এভাবে রাস্তার মাঝে তাকিয়ে থাকলে আমার কিন্তু সত্যিই আর বাসায় ফিরতে ইচ্ছে হবেনা।
নীল হেসে বলল,
: তুমি যাও উপরে।
: না আগে আপনি যান।
: আরে আমার আর যেতে কি? তুমি গেলেই বাইক ঘুরাবো।
প্রিয়ন্তী হেসে এক ছুটে উপরে চলে গেল।

একটুখানি শান্তির পরশ

মায়ের একটু বকুনি খেলেও আজকের সন্ধ্যাটা সে কক্ষনো ভুলবেনা। দেরী হোক তবু যায়নি সময়! নীল যদি তার হয় সে যেমন চাইবে প্রিয়ন্তী তেমনি মানিয়ে নেবে। শুধু নীলকেই চায় সে এর বেশী কোন আশা অভিলাষ নেই তার।

বারান্দায় গিয়ে প্রিয়ন্তী গান ধরল,
মন বোঝেনা মন কে আর!
মন শুধু খোঁজে তোমাকে…
দু:খে এখন আর ভয় হয়না,
সুখ খুজি তোমার দেয়া দু:খে।

অন্যরকম ভাল লাগছে আজ। রুমে এসেই অর্নকে কল দিয়ে সবটা বলল। অর্ন শুনেই বলল,
: বলছিলাম না? তুইতো যেতেই চাচ্ছিলি না। শুনো আভিতো শুরু হুই হেয়।
ধীরে ধীরে দেখবা ছেলে নিজেই পাগল হয়ে যাবে তোমার জন্য।
আহহহ প্রিয়ন্তী খুশি ধরে রাখতে পারছেনা।
ফোন রাখতেই নীল ম্যাসেজ দিল,
: খেয়েছো রাতে?
প্রিয়ন্তী অবাক হয়ে গেল। নীল কি সত্যিই এতোটা বদলে গেল এতটুকু সময়ে?
অবিশ্বাস্য তবু ভালো লাগার,
(চলবে)

পরের পর্ব- হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ১৭

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *