হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প ২০

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ২০ | Love Story

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ২০: গত পর্বে আমরা নীল ও প্রিয়ন্তির মাঝে আরেকটি সুন্দর সন্ধ্যা উপভোগ করার আনন্দ দেখেছি। দুজন দুজনের অনেক কাছে এসেছে, চোখে চোখ রেখেছে। মনের কথাগুলো অপলক চোখের কোণে ভেজা অশ্রু দিয়ে বোঝাতে চেয়েছে প্রিয়ন্তী। কিন্তু নীল কি সেটা বুঝতে পেরেছে? নীলের মধ্যে কি প্রিয়ন্তীর জন্য কোন ভাবনার উদয় হয়েছে? চলুন তবে দেখার চেষ্টা করি।

উত্তাল ভালোবাসা

সন্ধ্যার পর পরই নীল প্রিয়ন্তীকে বাসায় দিয়ে এলো।

সামনে প্রিয়ন্তীর মিড এক্সাম। তাই ব্যস্ততায় কাটলো এক সপ্তাহ।
নিহার বিয়ের সময় ঘনিয়ে এলো। চার বান্ধুবী মিলে বহু আয়োজন আর প্ল্যানিং করতে লাগল। নীলের সাথে মাঝে মাঝে অল্প স্বল্প কথা হয়। প্রিয়ন্তীও ব্যস্ত।দুজনের ব্যস্ততায় আগের মতো ঘোরাফেরা হচ্ছেনা।

আর মাত্র এক সপ্তাহ পরেই তানু আর নিহার বিয়ের প্রোগ্রাম। শপিং থেকে শুরু করে সব আয়োজনে তার বান্ধুবীরা আছেই।
রোজ রোজ শপিং,পার্লার কিংবা ডেকোরেশন প্ল্যানিং চলছে।

আজ বিকালে প্রিয়ন্তী ফুলের দোকানে ফুলের কিছু কালেকশন দেখছিল। হঠাৎ একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন এলো।
প্রিয়ন্তী ফোন ধরতেই জানলো তুরিন আপুর নাম্বার এটা।
: হ্যাই প্রিয়ন্তী। কেমন আছো?
: ওহ আপু! সরি আপনার নাম্বারটা ছিল না। তাই বুঝতে পারিনি। আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালোই। ফ্রেন্ডের বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত।
আপনি কেমন আছেন?
: আমিও ভালোই আছি। শোনো না যে কারনে ফোন দিলাম।
: জ্বী আপু বলেন না?
: আমরা মাওয়া যাবার জন্য যে প্ল্যান করেছিলাম। সেটাতো আর হলোনা। কাল তোমার ভাইয়া ফ্রী। তাই ভাবছিলাম ঘুরে আসি। তুমি কি সময় দিতে পারবে?
: জ্বী আপু। বিয়ে বাড়ীতেই কাজ থাকে তবে আপনারা গেলে আমি ম্যানেজ করে নেব সময়।
: তুমি ব্যস্ত থাকলে প্রয়োজন নেই। নীলকেও বলেছিলাম। ওর কাল অফ।
(প্রিয়ন্তী ভাবলো আহা ডাক্তারবাবুও ফ্রী। এই চান্স কি মিস করা যায়? শুধু ফ্রেন্ড এর বিয়ে দিলেই হবে? নিজেরও তো দরকার)
: না আপু আমি পারব।
: আচ্ছা আমি নীলকে বলে দিচ্ছি তোমাকে ও পিক করবে।
: আচ্ছা আপু।
: তা তোমাদের কতদূর এগোলো? কিছু তো জানিও না।
: আরে আপু কি যে বলেন।
: হয়েছে কালই দেখে নেব। আর লজ্জা পেয়োনা। আর শোনো মনের কথা চেপে না রেখে বলে ফেলো।

প্রিয়ন্তী ভাবছে,
সত্যিই কি আবার বলবে সে নীলকে! যদি এই ভাল সম্পর্কটা নষ্ট হয়! ভয় হয় ওর।

প্রিয়ন্তী এখন নিহার বাসায়ই থাকে। রাতে নিহাদের বলল সকালে বের হবার কথা। রাকা আর অর্ন ও বলল,
: যাচ্ছো যাও। কাজ কর্ম আমরাই সামলাবো। কিন্তু শর্ত একটাই কাল কিছু একটা ভাল খবর চাই আমাদের। ডাক্তারবাবুকে এবার তো মনের কথাটা বলতেই পারো।
প্রিয়ন্তী লজ্জা পেয়ে বলল,
: হয়েছে হয়েছে দেখা যাবে।

মাতাল মনে প্রেমের ছোঁয়া

রাতে খেতে বসেছে সবাই একসাথে। হঠাৎ নীল প্রিয়ন্তীকে ফোন দিল। প্রিয়ন্তীর হাসি দেখেই টেবিলে উপস্থিত সবাই মজা নিতে শুরু করল।
অর্ন: আহা আহা নায়ক যখন নাইকাকে ফোন দেয়। এমন হাসিই তো দেখা যাবে।
নিহা: হ্যা হ্যা সেটাই। যাও মেয়ে আজ তোমারই দিন।
রাকা : জি লে আপনি জিন্দেগী,

প্রিয়ন্তী ফোন নিয়ে উঠে বারান্দায় গেল।
ফোন ধরতেই,
: মিস প্রিয়ন্তী কেমন আছো? ব্যস্ত?
: আলহামদুলিল্লাহ। না না ব্যস্ত না।
আপনি কেমন আছেন?
: আমিও ভাল। তা কি করছিলে?
: তেমন কিছুনা। নিহার বিয়ে সামনের সপ্তাহে।
: বাহ বাহ বেশ। তুমি কবে বিয়ে করছো?
(প্রিয়ন্তী মনে মনে ভাবল, আপনি যেদিন করবেন)
: সময় হলে হবেই।
: আচ্ছা আচ্ছা আপু কি তোমায় বলেছে কালকের ব্যাপারে?
: জ্বী বলেছে।
: আচ্ছা আমি তাহলে সকালে তোমায় পিক করব।
: আমিতো নিহার বাসায় আছি আপনাকে এড্রেসটা পাঠিয়ে দেব।
: আচ্ছা ঠিক আছে। ভালো থাকো।
: আপনিও। আল্লাহ হাফেজ।
: আল্লাহ হাফেজ।

সারারাত প্রিয়ন্তীর ঘুম হলো না বললেই চলে। ভোরে উঠেই গান ছাড়ল,
বর্নে গন্ধে ছন্দে গীতিতে
হ্রদয়ে দিয়েছো দোলা।
রঙেতে রাঙ্গিয়া রাঙ্গাইলে মোরে,
এ কি তব হরি খেলা!
তুমি যে ফাগুন,
রঙ্গেরই আগুন,
তুমি যে রসেরও ধারা।
তোমার মাধুরী,
তোমার মদিরা,
করে মোরে দিশেহারা।
মুক্তো যেমন শুক্তিরও বুকে,তেমনি আমাতে তুমি,
আমার পরানে প্রেমের বিন্দু তুমি শুধু তুমি।

হঠাৎ নীলের ফোন এলো।
: শুভ সকাল। তৈরী হয়ে নেও। আমিও একটুপরেই বের হচ্ছি।
: জ্বী আচ্ছা।

প্রিয়ন্তী একটা আকাশী রঙ্গের ড্রেস পড়লো। কপালে কালো একটা টিপ আর ঠোঁটে হালকা মিষ্টি রঙ্গের লিপ্সটিক, হাতভর্তি কাচের চুড়ি।
রেডি হয়ে বারান্দায় যেতেই দেখল আকাশটা আজ অনেক সুন্দর।
ভোরের আকাশ বুঝি এতটাই সুন্দর হয়!
মনে হচ্ছে আকাশের নীল রঙ থেকে এক মুঠো নীল প্রিয়ন্তী গায়ে জড়িয়েছে।
নিহা আর রাকা উঠে প্রিয়ন্তীকে দেখেই চমকে গিয়ে বলল,
: আজ তোকে ভীষন সুন্দর লাগছে রে। ঘটনা কি?
প্রিয়ন্তী হেসে দিল।

কিছুক্ষনেই নীল এসে পড়ল। প্রিয়ন্তী নিচে নামতেই নীল ওর দিকে হা করে তাকিয়ে রইল।
তারপর বাইক স্টার্ট হলো তাদের পথ ধরে..

নীল হঠাৎ গেয়ে উঠলো,
আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব,
হারিয়ে যাব আমি তোমার সাথে,
প্রিয়ন্তী বাতাসের গন্ধে মুগ্ধ চোখে আকাশ দেখছে। আর মাঝে মাঝে লুকিং গ্লাসে নীলকে দেখার চেষ্টা করছিল। (চলবে)

পরের পর্ব- হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ২১

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *