ডাকপিয়ন – Short sad love story

ডাকপিয়ন – Short sad love story: মেয়েটার চুল উড়ছে। রামিম তাকায় মেয়েটার দিকে, মেয়েটা ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। একটা মানুষের মধ্যে এতটা মায়া কিভাবে থাকে? নাকি আমরা যাকে ভালোবাসি তার মধ্যেই শুধু মায়াটা দেখতে পাই?


পর্ব ১

  • তোর বাবা মায়ের নাম জানিস তুই? যে আমাকে প্রোপোস করতে এসেছিস? জন্মের ঠিক নেই প্রেম করতে এসেছে।
    কথাটা বলেই তিন্নি রামিমকে চড় মারতে গিয়েও মারলোনা। নাক সিটকিয়ে চলে গেলো।
    রামিম ঠায় দাড়িয়ে রইলো মাথা নিচু করে।

এরকম কতশত বার তিন্নি রামিমকে অপমান করেছে তার হিসেব নেই।
এরকমই একদিন পরপর দুইবার ধাক্কা লাগার পর তিনবারের বার মেয়েটা চেঁচিয়ে উঠলো,

  • বাসের মধ্যে সুযোগ পেলেই মেয়েদের ওপর ঢলে পড়তে ইচ্ছা করে তাইনা? বাসায় মা বোন নেই?

এগিয়ে এলো কিছু জনদরদি মানুষ, কিছু বলার আগেই চড় থাপ্পড় মেরে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হলো রামিমকে।
বাস ভর্তি মানুষের সামনে এই অপমান সহ্য করার মতো নয়।
মাথা নিচু করে রামিম চায়ের দোকানে বসলো।
তিন্নি মেয়েটার শরীর রাগে গজগজ করছে এখনো।

একবার দু বার ভুল হতে পারে অথবা বাসের ঝাঁকুনিতে ধাক্কা লাগতে পারে তাই বলে পরপর তিনবার একই ভুল হতে পারেনা। এটা ইচ্ছাকৃত ছিলো। তবে পেছনের কাহিনিটা একটু আলাদা।
বাসের ঠিক মাঝামাঝি অবস্থানে তিন্নি তার ঠিক পেছনে রামিম আর রামিমের পেছনে দুজন বৃদ্ধ।
প্রথমবার ঝাঁকুনিতে বৃদ্ধ দুইজন রামিমের কাধে হাত রাখে।

দ্বিতীবার রামিম সামলানোর চেষ্টা করে তবে শেষবার বৃদ্ধ দুজন রামিমের ওপর এসে পড়ে ধাক্কা লেগে যায় তিন্নির।
এরপরই তিন্নি চেঁচিয়ে উঠে। যদিও তিন্নিও বুঝতে পেরেছিলো এটা ইচ্ছাকৃত নয় তবে কিছুক্ষণ পরে, ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে। তবুও তিন্নি অনুশোচিত নয় কারন এই রামিম ছেলেটাকে সে দেখতেই পারেনা, একদমই দেখতে পারেনা।

রামিম চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ভাবে, বৃদ্ধ লোকগুলাও তো কিছু বললোনা। আসলে এই যুগে কারো উপকার করতে নেই।
হাত সরিয়ে দিলেই এই অপমানটা হতে হতোনা।

একটার পর একটা বাস আসছে যাচ্ছে, রামিমের আর ইচ্ছা হচ্ছেনা বাসে চড়ার। একঘন্টা হেঁটে গেলে কেমন হয়?
মেয়েটাকে রামিম চেনে। মেয়েটার নাম তিন্নি।
প্রাইভেট ভার্সিটির একই ডিপার্টমেন্টে পড়ে দুজন।

এই তিন্নি মেয়েটা ভার্সিটির বড় ভাই থেকে শুরু করে এলাকার মাস্তানের হাতেও মার খাইয়েছে রামিমকে।
তবুও রামিম মেয়েটার পিছু ছাড়েনি। তিন্নিকে রোজ ভার্সিটি শেষে বাসার গেট পর্যন্ত পৌছে দেওয়া যেনো রামিমের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যত যাই হোক রামিম যাবেই। তবে আজ যাওয়ার ইচ্ছা নেই।
আজ রামিমের বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করতেছে যদিও এখন শীতকাল তাই বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
এখন বৃষ্টি নামা আর তিন্নি মেয়েটার ভালোবাসা দুইটাই পুরোপুরি অনিশ্চিত।

তবুও ভাগ্য বলে একটা জিনিস থাকে রামিম সেটার আশায়ই পড়ে থাকে।
যদি ভাগ্য একটু ভালো হয় তবে প্রেমটা হয়ে যাবে।
তিন্নি মেয়েটা যে রামিমকে প্রচন্ড পরিমান অপছন্দ করে এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

রামিমের জানা নেই কেনো তিন্নি এমন করে অথচ প্রায় সব মেয়েই রামিমের সাথে বন্ধুত্ব করতে চায় শুধুমাত্র তিন্নি বাদে। আর কেনো যানি রামিম এই অহংকারী, গম্ভীর মেয়েটাকেই পছন্দ করে। মাঝে মাঝে রামিম ভাবে হুট করে গায়েব হয়ে গেলে কেমন হয়?

মেয়েটা কি খুঁজবে রামিমকে?
আবার ভাবে গায়েব হয়ে গেলে যদি অন্যকারো হয়ে যায়? বলা তো যায়না আমি না থাকলে আবার অন্য কাওকে পছন্দ হলে?

এসব ভেবেই কিছু করা হয়না রামিমের। বেহায়ার মতো নিরবে পাহারা দিয়ে যায় তিন্নিকে।
পাশাপাশি বাসায় থাকে রামিম তিন্নি। রামিম একা থাকে আর তিন্নি পরিবারের সাথে।
তিন্নি মেয়েটা রামিমকে বেশি কিছু বলতে পারেনা তাকে অনুসরন করা নিয়ে কারন দুজনের বাসা একই জায়গায় তাই ক্লাস শেষে দুজনকে একসাথেই ফিরতে হয়।

রামিম যেখানে থাকে সেই বাসাটা পুরো খালি। খালি বলতে বাসাটা তার বড় খালার।
খালু মারা যাওয়ার পর খালা কানাডা চলে যাওয়ায় বাসাটা খালিই থাকে। অনেকবার বিক্রি করতে গিয়েও বিক্রি করেনি। খালা কানাডা যাওয়ার আগে এই বাসাটা রামিমের নামে লিখে দিয়ে গেছে।

৮ তলা একটা বিল্ডিং শুধু শুধু কেউ দেয়? রেখা বেগম (রামিমের খালা) তার জিবনে সবচেয়ে বড় আফসোস সে কখনো মা হতে পারবেনা। রামিমের খালু অনেক ভালো মানুষ ছিলো তাদের প্রেমের বিয়ে ছিলো তিনি আর বিয়ে করেননি সন্তানের আশায়। এই রামিম ছেলেটাকেই সেই ছোটবেলা থেকে মানুষ করেছেন নিজের হাতে। রামিমের বাবা মা কে রামিম সেটা জানেনা।

আট বছর বয়স থেকে রামিম এই খালা খালুর সাথে আছে। বাবা মা বলেনি কখনো এই দুজনকে তবে তারা ঠিকই রামিমকে নিজের ছেলের মতোই আদর স্নেহ করেছেন।
রেখা বেগম আর আফসার সাহেব দুজনের কেউই তাকে ভালোবাসার কমতি হতে দেয়নি।

প্রয়োজনের আগেই সবকিছু উপস্থিত থাকতো রামিমের সামনে তবুও কেনো জানি রামিম বাবা মা বলে ডাকতে পারেনি তাদের। রামিমের বাবা মানে আফসার সাহেব তার জন্য ব্যাংকে কয়েক কোটি টাকা রেখে গেছেন আর তার মৃত্যুর পর রেখা বেগম এই বিশাল বাসাটাও রামিমকেই লিখে দিয়ে গেছেন।

বড় অভিমান করেই চলে গেছেন তিনি, ১৪ বছর ধরে একটা ছেলেকে নিজের ছেলের মতো ভালোবেসে এসেছেন তিনি কোনো স্বার্থ ছাড়াই তবুও ছেলেটা কখনো তাকে মা বলে ডাকলোনা।
আফসার সাহেব মারা যাওয়ার পর রেখা বেগম আর থাকেননি বাংলাদেশ। থাকার কোনো কারন ছিলো কি? ছেলেটা একবারের জন্যও তাকে মা ভাবেনি তবে কেনো এই ছেলেটার জন্য দেশে পড়ে থাকবেন তিনি?

ছাদে বসে একটা সিগারেট ধরায় রামিম। পাশের বাসার ওপরতলায় থাকে তিন্নিরা বাকিটা ভাড়া দেওয়া।
সন্ধ্যে হওয়ার আগে আকাশটা একটু বেশিই পরিষ্কার দেখা যায়। তখন মেঘের ভিতরে আরো কিছু মেঘ দেখা যায়।

আকাশে পাহাড় দেখা যায়। রামিম সেগুলাতেই মনোযোগ দিতে চায়। তিন্নি মেয়েটা বেজন্মা বলেছে এতে কি আসে যায় তার? সত্যি কথাই তো বলেছে। রামিম নিজেও জানেনা তার বাবা মায়ের নাম। তবে বাকি সবাই তো জানে রেখা বেগমই তার মা আর আফসার বেগম বাবা তবে তিন্নি কিভাবে জানলো সে তাদের ছেলে না?
জেনেই যখন গেছে তখন আর তার পিছে ঘুরে লাভ নেই। অন্তত বাবা মায়ের নাম না জানা একটা ছেলেকে ভালোবাসা যায়না।

তিন্নি ছাদে আসে। দমকা বাতাসে সিগারেটের গন্ধ এসে নাকে পৌছায় তিন্নির।
নতুন কিছুনা রোজই হয় এমন। ছেলেটাকে এজন্যই আরো বেশি অপছন্দ তিন্নির।

তবে রামিমের একাকীত্ব কেউ বোঝেনা সবাই তার খারাপ দিকটাই দেখে। নিজের আসল বাবার নাম যে না জানে সেই তো বুঝে কতটা কষ্ট পরিচয়হীনতায়। একটা চিন্তা সবসময় কুড়ে কুড়ে খায় রামিমকে আর রামিম খায় সিগারেট।
পরিবেশটা থমথমে হয়ে আসে। মাগরিবের আজান পড়ে যায়।

সিগারেট ফেলে অযু করে মসজিদের দিকে পা বাড়ায় রামিম।
( নামাজ কায়েম করুন। )
রামিমের এই একটা জিনিস ভালোলাগে তিন্নির। সারাদিন ব্যস্ত থাকলেও ফজর আর মাগরিবের নামাজটা মিস দেয়না রামিম।

প্রতিবার নামাজের শেষে রামিম একটাই দোয়া করে যেনো তার বাবা মা কে খুঁজে পায় আর তিন্নি মেয়েটা তাকে ভালোবাসুক। বাবা মা এর আশা ছেড়ে দিয়েছে রামিম এতদিনে হয়তো মরে গিয়েছে।
তবে যেই মেয়েটাকে নিয়ে এত মোনাজাত সেই মেয়েটাই বেজন্মা বলে গালি দিলো।

রামিম মুচকি হাসে আর ভাবে আমিইতো বোকা নইলে কি অবজ্ঞা করা মেয়েটাকেই এত ভালোবাসি? তার খেয়াল রাখি?


অন্তিম পর্ব

শীতের রাত, বেশ ঠান্ডা পড়েছে। কুঁয়াশায় ছেয়ে গেছে চারপাশ।
ল্যাম্পপোস্টের আলোতে ৫ হাতের দুরের বেশিকিছু দেখা যায়না।
একটাসময় আলো ফুরিয়ে আসে, অন্ধকারে আরো ঠান্ডা লাগে রামিমের।
সিগারেটের আলোতে পথ চলা যায়?

নয়টা বেজে গেছে। একটু পরপর শোঁশোঁ করে গাড়ি যাচ্ছে, সেটার বাতাসে আরো ঠান্ডা লাগে রামিমের।
রাস্তার পাশে একটা কুকুর খাবার খুঁজছে, সারাদিন হয়তো কিছু পায়নি।
সেই কুকুরের সামনে একটা ছোট ছেলে (বছর সাতেক হবে) ছেড়া একটা হাফপ্যান্ট পড়ে আরামসে ঘুরে বেরাচ্ছে।
দিনের বেলায় ছেলেটার শরীরের হারগুলো গুনা যাবে।

রামিম ইশারায় ডাকে, এদিকে আয়।
ছেলেটা আসে।
কি আশ্চর্য, ছেলেটার কোনো ঠান্ডা নেই।

ছয় বছর বয়সে রামিমও এরকম ঘুরে বেড়াতো। তখন তার ঠিকানা ছিলোনা কোনো। অথচ আজ সে কোটি টাকার মালিক। জিবন কখন কি দেয় তা কেউ জানেনা। একটা মুহুর্তই দরকার জিবন বদলানোর জন্য তাই হাল না ছেড়ে লেগে থাকতে হয়।
পকেট থেকে হাজার টাকার একটা নোট বের করে ছেলেটার হাতে দেয় রামিম।

নতুন কেনা চাদরটাও দিয়ে দেয়। ছেলেটার হাসিটা এতটা মুগ্ধ করে রামিমকে।
তিন্নির কথা ভুলে যায় সে। তৃপ্তিদায়ক সেই মুহুর্তে রামিম একটা কথাই ভাবে,
এই ছেলেটাও একদিন বড় হবে।

কথাটা অর্ধলাইনের হলেও গভীরতা অনেক। কিছু মানুষ বুঝবে কিছু বুঝবেনা।
রুমে ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হয়। রাতে আর খাওয়া হয়না রামিমের।
গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে যায় রামিম।
আপাতত দুদিন রুমে পড়ে থাকাটাই ভালো।

বাইরের বেরুলে তিন্নির সাথে দেখা হবে, হয়তো কথা বলতে ইচ্ছা হবে রামিমের তবে রামিম আর চাচ্ছেনা সেদিকে এগুতে। অতিরিক্ত কিছুই ভালোনা, না ভালোবাসা না অবহেলা।
রামিম বুঝে গিয়েছে তিন্নি মেয়েটার সাথে তার মিল নেই।
মেয়েটা বড় অহংকারী, তাকে ভালোবাসা দিয়ে বোঝানো সম্ভবনা।

দুদিন দেখা হয়না রামিম তিন্নির। রামিম যেনো নিজের চাইতেও বেশি ভাবতে শুরু করে তিন্নিকে নিয়ে। তিন্নি কি ভাবছে, কি করছে, কোনো ছেলের সাথে কথা বললো কিনা!
ঠিক তখনই রামিমের ফোনে কল আসে।
অনেক আগে তিন্নির বান্ধবীর থেকে তিন্নির নাম্বার নিয়েছিলো রামিম, সেভকৃত নাম্বারটা থেকে এই প্রথমবার কল আসলো।

রামিম কি ভেবে কলটা ধরেনা। আবারো ফোনটা বেজে উঠে।
এবার আর না ধরে থাকতে পারেনা রামিম।

ওপাশ থেকে তিন্নির সেই পরিচিত কন্ঠে একটা অপরিচিত শব্দ ভেসে আসে।

  • আগামিকাল রাত বাঁরোটায় আমার বাসার সামনে থাকবা, আমি পালাবো।
    রামিম কিছু বলার আগেই লাইনটা কেটে যায়।

রামিম ভুলে যায় এই তিন্নিই দুদিন আগে তাকে বেজন্মা বলেছে।
ভালোবাসাটা এতটাই বেশি যে সেসব আর মনে থাকেনা তার।
তিন্নির সাথে তবে মিল হচ্ছে এবার।

রামিম আল্লাহকে ধন্যবাদ দেয়।
এতদিনের স্বপ্ন পূরন হচ্ছে তবে।
সে রাতেই ব্যাগ গুছিয়ে নেয় রামিম, কার্ডেও এড করে নেয় কয়েক লাখ টাকা।
সে রাতে ঘুম হয়না রামিমের।

রামিম ভাবে তিন্নি মেয়েটা যে অবশেষে বুঝতে পেরেছে তার ভালোবাসা এটাই অনেক।
আসলেই জিবন বদলাতে অনেক সময় লাগেনা। কয়েক মুহুর্ত হলেই চলে।
কলটা না আসলে হয়তো আজকের রাতটাও সিগারেট টেনেই কেটে যেতো কিন্তু এই রাতটাই শত কল্পনা করে কেটে যায় রামিমের।

পালিয়ে কোথায় যাবে, যে মেয়েটাতে এতটা ভালোবেসে এসেছে, তাকে কি সে ছুঁয়ে দেখতে পারবে?
মেয়েটা কি রামিমের কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যাবে?
দেখা হওয়ার পর কি রামিম তিন্নিকে চুমু খাবে?
এই ভেবেই রাত পার হয়ে যায়।

সকাল হতেই ছাদে গিয়ে অপেক্ষা করে তিন্নির।
মেয়েটা আজ আসেনি ছাদে।
রামিমের মন খারাপ হয়না, রাত হলেই পালাবে দুজন।
একটা দুরে থাকা ভালোবাসার কাছে আসার সময় হবে।

তিন্নি মেয়েটাকে খুব দেখতে ইচ্ছা হয় রামিমের।
লুকিয়ে তোলা ছবিটা দেখে মনকে শান্ত করে রামিম তবে অশান্ত মন কি এত সহজে শান্ত হয়?
দিন ফুরায়, রাত হয়।
বাঁরোটা বাজতে খুব বেশি দেরি নেই।

মেয়েটা নামছেনা কেনো? রামিম অস্থির হয়ে উঠে।
কয়েক মিনিট পর তিন্নি নামে। রামিম ছন্নছাড়া ভঙিতে দেখে তিন্নিকে।
মেয়েটার ঠোঁটের নিচের তিলটা এই রাতের বেলায়ও চোখে পড়ে রামিমের।

এই মায়াবি মুখটা এতটা ভালোবাসায় ঘেরা যে রামিম তাকিয়েই থাকতে চায় সারাজিবন।
সেই সুযোগটাই পেতে চলেছে সে।
হাত ধরে টান দেয় তিন্নি, ঘোর কাটে রামিমের।
হাজারো অনুভুতিরা তখন সারা দেয়। রামিম শক্ত করে হাতটা ধরে তিন্নির।
আর ছাড়বেনা সে এ হাত।

সিএনজির গতির কাছে বাতাস হার মানতে বাধ্য হচ্ছে।
তবুও মেয়েটার চুল উড়ছে। রামিম তাকায় মেয়েটার দিকে, মেয়েটা ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। একটা মানুষের মধ্যে এতটা মায়া কিভাবে থাকে? নাকি আমরা যাকে ভালোবাসি তার মধ্যেই শুধু মায়াটা দেখতে পাই?

রেলস্টেশনে পৌঁছাতে পৌঁছাতে এক ঘন্টা লেগে যায়।

রামিম খেয়াল করে তিন্নি মেয়েটার চোখজোড়া অন্য কাওকে খুঁজছে।
কারোর আসার কথা কি?
শেষ ট্রেনটা এসে গেছে, তিন্নি মেয়েটার চোখ হঠাৎ চকচক করে উঠে।
অনেকদিন পর কোনো প্রিয়জনকে দেখলে যেমন হয় ঠিক তেমনই।

মেয়েটা রামিমের দিকে এগিয়ে আসে।
মেয়েটা কি রামিমকে জড়িয়ে ধরবে?
চোখ বন্ধ করে ফেলে রামিম এই সময়টা অনুভব করতে চায় সে।
প্রথমবার আলিঙ্গন করার অনুভুতি সে মিস করতে চায়না।

রামিমের বুকের সাথে কেউ মিশে যায়না, দুঃস্বপ্নের মতো তিন্নি আরেকটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে।
রামিম পেছনে তাকায়।
পায়ের নিচের মাটি সরে যায় রামিমের, তিন্নি কি রামিমকে ধোকা দিলো?
ছেলেটা রামিমকে বলে,

  • থ্যাংকস ম্যান। আপনার সাহায্য খুব দরকার ছিলো।
    তিন্নিও বলে উঠে,
  • ধন্যবাদ রামিম, আমাদের জন্য দোয়া করো।
    রামিমের কয়েক মুহুর্ত লাগে আসল ঘটনাটা বুঝতে।

রামিম মুচকি হেসে বিদায় দেয় তাদের।
ট্রেন ছেড়ে দেয়, তিন্নি কি ছেলেটার কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে?
শীতের রাতেও আজ বৃষ্টি নামে।
অভাবনীয় কিছু হয়ে গেলো যে, শীতের রাতে বৃষ্টি নামা আর এমন কি?

রামিম একটা ডাকপিয়ন ছিলো, তিন্নি ছিলো চিঠি।
রামিম ভেবেছিলো চিঠিটা তার ঠিকানায়ই এসেছে তবে হলুদ খামের ওপর ঠিকানাটা পড়ে দেখেনি সে।
বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাধিয়ে বসবে রামিম, ঠান্ডাও লেগে যাবে।

দির্ঘশ্বাসে বেরিয়ে আসবে তামাক পোড়ানো ধোঁয়া।
রাস্তার পাশে হাফপ্যান্ট পড়া ছেলেটাকে আজ আর দেখা যায়না, আজ ডাকপিয়নের ছুটি।

লেখা – Ramim Istiaq

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “ডাকপিয়ন – Short sad love story” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন –

গজদন্তিনী – বিধবা মেয়ের প্রেমের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *