অনেক কষ্টের গল্প

হারিয়ে খুজবে আমায় – কষ্টের লেখা গল্প

হারিয়ে খুজবে আমায় – কষ্টের লেখা গল্প: সবাই কি ভালোবাসা পায়? কেউ বা পায় আবার কেউ বা হারায়! অনেক আশা আর স্বপ্ন নিয়ে যখন কাউকে মনে জায়গা দিয়ে সে আবার হারিয়ে যায় তখন তাঁর থেকে কষ্ট কি আর হতে পারে? চলুন এরকম একটি হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার গল্প পড়ি।

পর্ব ১

স্বামীকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে যায় রুবিনা। তার স্বামী একটি মেয়ের সাথে বিবস্ত্র অবস্থায় শুয়ে আছে। হঠাৎ দরজায় খোলার আওয়াজে দুজনেই ফিরে তাকায় ও চমকে যায়। তাড়াতাড়ি করে এলোমেলো ভাবে কাপড় নিয়ে মেয়েটি ওয়াশ রুমে চলে যায় রুবিনার স্বামী সিয়াম কোন রকম কাপড় পরে রুবিনাকে প্রশ্ন করে

সিয়ামঃ রু…রুবি..রুবিনা তু..তুমি আজকে? তোমা.. তোমার তো পরশু আসার কথা ছিল।

রুবিনার বুক ফেটে কান্না আসছে তারপরেও নিজে কান্না কে সংযত রেখে সে বলল।
রুবিনাঃ কেন আজকে এসে তোমাদের এই অবস্থায় দেখে কি খুব বেশি সমস্যা করে দিলাম?
সিয়ামঃ দেখো রুবিনা আই ক্যান এক্সপ্লাইন..

এরই মাঝে ওয়াশরুম থেকে মেয়ে টি বেরিয়ে এল রুবিনা আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না অঝোরে কান্না করতে লাগল আর আচমকা গিয়ে মেয়েটির গালে চর দিতে লাগলো আর চিল্লিয়ে বলতে লাগলো
রুবিনাঃ এই মেয়ে তুমি কে? এখানে এভাবে কি করছিলে? আর কতদিন ধরে চলছে এইসব? তোমাদের লজ্জা করে না এসব করতে?

এইবার সিয়ামের দিকে ফিরে। আপনার শরীরে এতই তেজ যে তিন দিন বাপের বাড়ি যাওয়াতে আর থাকতে পারছিলেন না। যে শরীরের তেজ মিটাতে পতিতা ঘরে তুললেন?
এইবার মেয়ে টি ফুসে উঠে বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল।

মেয়েঃ সিয়াম তুমি চুপ করে বসে আছ কেন? তোমার স্ত্রী সেই কখন থেকে আমাকে যা তা বলে যাচ্ছে তুমি কি তাকে কিছু বলনি আমাদের সম্পর্কের কথা আর তোমাদের ডিভোর্স ব্যাপারে?
কথাটি শুনে রুবিনার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরল।

সিয়ামঃ মারিয়া সোনা আসলে আমি সময় পাইনি ওকে বলার। আমি ঠিক করেছিলাম ও বাবা বাড়ি থেকে ফিরলেই ওর সাথে ডিভোর্সের ব্যপারে কথা বলবো।
এর আগেই..

রুবিনাঃ ডিভোর্স কিসের ডিভোর্স সিয়াম কি বলছে এই রাস্তার মেয়েটা। একটা রক্ষিতার কথায় তুমি আমা..ঠাসসসস
আর কিছু বলতে পারল না রুবিনা তার আগেই সিয়াম এলোপাথাড়ি মারতে লাগল।

সিয়ামঃ তোর সাহস তো কম না তুই আমার সামনে আমার মারিয়াকে বাইরের মেয়ে বলছিস রক্ষিত বলছিস। আজকের পর আমি আর তোর মুখ দেখতে চাই না আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাবি সারা জীবনের জন্য আর কিছুদিনের মধ্যেই ডিভোর্স লেটার পেয়ে যাবি। বলে আর সিয়াম ঘরে থাকলো না বাইরে বের হয়ে গেল।
এবার মারিয়া রুবিনার সামনে গেল

মারিয়াঃ দেখলে তো কার স্থান কোথায়। হুহ
তারপর মারিয়াও বের হয়ে গেল ঘর থেকে।

দরজার পাশে বসে কান্না করছে রুবিনা ওঠার শক্তি টুকু নেই শরীরে এর আগে কখনো গায়ে হাত তোলে নি সিয়াম। কখনো জোর গলায় কথা পর্যন্ত বলনি। আর আজ সব শেষ হয়ে গেল কি কমতি ছিল তার মধ্যে?

কিছুদিন ধরেই রুবিনা সিয়ামের ব্যবহার লক্ষ করছিল আগে রুবিনা দুষ্টুমি করলে সিয়াম খুশি হতো আর এখন বিরক্ত হয়। প্রত্যেকটা কাজে নানান ধরনের কথা সোনায় যার তার সাথে তুলনা করে আর খারাপ ব্যবহার করে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার মাফ চেয়ে নিত বলতো কাজের চাপে মাথা গরম থাকায় এরকম ব্যবহার করে। তাই রুবিনা সিয়ামের ব্যবহারগুলো মেনে নিয়েছিল।

সিয়াম আর রুবিনা বিয়ে ছিল প্রেমের বিয়ে। দুই বছর সম্পর্কের পর সিয়াম আর রুবিনা পালিয়ে বিয়ে করে। সিয়াম বেকার থাকায় রুবিনার পরিবারের লোক তাকে মেনে নেয়নি। তাইতো 22 বছরের ভালোবাসাকে পায় ঠেলে সিয়ামের হাত ধরে পালিয়ে গিয়েছিল ভেবেছে কিছুদিন পর সবাই মেনে নেবে আর মেনে নিয়েছিল তাদের বিয়ের এক বছর পর।

সিয়ামের পরিবার বলতে ওর মা বড় ভাই ভাবি ছিল কিন্তু চাকরি হবার পর সিয়াম আলাদা হয়ে যায়। রুবিনার শাশুড়ি রুবিনাকে পছন্দ করতেন না। উঠতে-বসতে নানা ধরনের কথা শোনা তো। ভালো ব্যবহার করতেন না কিন্তু তবুও কখনোই তার মুখের উপরে কোন কথা বলেনি। তার সব কথা মানতে চেষ্টা করতো রুবিনা। যথেষ্ট সম্মান করতো রুবিনা তার শাশুড়িকে।

সিয়ামের ভাবির সাথে ভালো সম্পর্ক ছিল রুবিনার। সম্পর্কে জা হলেও রুবিনা আর লামিয়ার সম্পর্ক ছিল দুই বোনের মত। রুবিনা ভাবীর নাম লামিয়া। রুবিনা বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান আর লামিয়া রুবিনাকে নিজের ছোট বোনের মত স্নেহ করতো। আর সিয়ামের বড় ভাই জাহিদ তাকে ছোট বোনের মত আদর করত।

বিয়ের এক বছর পর রুবিনার পরিবার মেয়েকে মেনে নেয় রুবিনাকে তাই প্রায়ই যাওয়া-আসা করত কিন্তু থাকতে পারত না সিয়ামের কারণে। তাঁর কথামতো রুবিনার বুকে মাথা রেখে না ঘুমালে তার ঘুম হয় না। তাই রুবিনা সারাদিন তার বাবার বাসায় থাকলেও রাতে সিয়াম তাকে নিয়ে যেত।

কিন্তু রুবিনার মায়ের শরীর খারাপ থাকার কারণে কিছু দিনের জন্য থাকতে গিয়েছিল। আর দুদিন পর আসার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যায় তারপর ডাক্তার দেখানো হলে ডাক্তার কিছু টেস্ট দেয়। রিপোর্ট পাওয়ার পর জানতে পারে রুবিনা প্রেগন্যান্ট। তার জন্যই রুবিনা সিয়ামকে সারপ্রাইজ দিতে দুদিন আগেই বাসায় এসেছিল কিন্তু তারপর যা হল তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা।

রুবিনার শরীরের আঘাতের থেকে মনের আঘাত টা বেশি ছিল সে সিয়ামের এমন পরিবর্তন মেনে নিতে পারছে না।
বহুকষ্টে উঠে দাঁড়ালো রুবিনা। তারপর বারান্দায় দোলনায় বসে পরলো। তার প্রেগনেন্সির খবর আর দেওয়া হলোনা সিয়ামকে। সিয়ামের সাথে কথা বলতেই হবে তার পর সে যাবে সিয়ামের জীবন থেকে সারা জীবনের জন্য কিন্তু তার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে সিয়ামকে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল রুবিনা জানেনা।

অন্যদিকে সিয়াম ভাবছে…..


পর্ব ২

সিয়াম ভাবছে কি করে পারল ও রুবিনার গায়ে হাত তুলতে দোষ তো তারই ছিল। গায়ে হাত না তুলে বোঝানো উচিত ছিল যে সে থাকতে চায় না তার সাথে হয়তো ভালোবাসাটা নেই আগের মত। আচমকা সিয়াম তার হাতে আঘাত করতে লাগলো এই হাত দিয়ে সে রুবিনাকে মেরেছে কেন জানি তার বুকে চিনচিন ব্যথা করছে কিন্তু সেতো রুবিনাকে ভালবাসেনা তাহলে কেন এমন হচ্ছে ? মায়ায় পরে? হয়তো অনেকগুলো দিন একসাথে থাকার কারণে হয়তো মায়া হয়েছে তাই তার কষ্ট হচ্ছে।

মেয়েটার তো কোন দোষ নেই ও তো তার সর্বোচ্চ দিয়ে সংসারটাকে আগলে রেখেছে সিয়ামের ভালোলাগা খারাপ লাগা নজর দিয়েছে। অসুস্থ হলে সেবা করা। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে সবকিছু গোছগাছ করা। রাত্রে নিজে না খেয়ে ডিনারের জন্য অপেক্ষা করা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন মেয়েটা।

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে কিভাবে জানে ভালোবাসাটা হারিয়ে গেছে মন থেকে। প হয়তো মারিয়ার ঝাঁঝালো রুপ দেখে। তার স্টাইল দেখে কথাবার্তার আচরণ সবকিছুতেই সিয়াম মুগ্ধ হয় যা আগে রুবিনার জন্য হত।
রুবিনা মেয়েটা বড্ড সেকেলে সবসময় শাড়ি পড়ে থাকে।

বিবিএ কমপ্লিট করার পরেও চাকরি না করে সংসার সামলানোর জন্য ঘরে থাকে রান্না করে। সব কাজের জন্য সিয়ামের ওপর নির্ভর থাকে। সবকিছুতে তাই রুবিনামতি লাগবে নিজস্ব কোন স্বাধীনতা নেই মেয়েটার মাঝে। বেশি সাজগোজ পছন্দ না তার হালকা কাজল আর কপালে টিপ।

কাচের চুড়ি আর হালকা লিপস্টিক এই তার সাজ। সবসময় সাধারণ থাকতে পছন্দ করে সে। অফিসে কোনো পার্টিতে গেলেও সে বড্ড সাধারণ সাজে যেত। তার বন্ধুদের সাথে ভালোভাবে কথা বলতে চাইত না। মিশতে চাইতো না। যা মাঝে মাঝে সিয়ামকে বিব্রত করে দিত। তাইতো সে তাকে পার্টিতে নিত না।

অন্যদিকে মারিয়া মেয়েটা যেন কোন মডেলের থেকে কম নয় অফিসে সব সময় টিপ টপ করে চলে সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলে যে কোন পার্টিতে সে থাকে মধ্যমণি তার রূপের চর্চা সবার মুখে মুখে আর সেই মেয়েটা সিয়াম কে প্রপোজ করে তাইতো সে রুবিনাকে বাদ দিয়ে তার দিকে ঝুকেছে। আর সব থেকে বড় যা সিয়ামকে মুগ্ধ করেছে তা হলো স্বাধীনতা মেয়েটা স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পছন্দ করে কারো উপর নির্ভর না।

ফিজিক্যাল রিলেশনে যেতে চাইনি সিয়াম ডিভোর্সের আগে কিন্তু মারিয়াক জোরজবস্তি করায় সে আর না করতে পারেনি এমনিতেই সে মারিয়ার রূপে মুগ্ধ তারপর কোন ঘোরে জানো তাদের মধ্যে সম্পর্কটা হয়ে যায়।

কিন্তু প্রত্যেকবার শারীরিক সম্পর্কের পর সিয়াম বিষণ্নতায় ভুগত তার মনে হতো সে রুবিনাকে ধোকা দিচ্ছে। কই রুবিনার সাথে মিলনের পর তো কখনই এমন বিষন্নতায় ভুগত না যেন মনটা আরো ফুরফুরে হয়ে যেত। তাই তারপর থেকেই সিয়াম রুবিনার সাথে কারনে অকারনে খারাপ ব্যবহার শুরু করে কিন্তু কেন জানি আবার গিলটি ফিল হত যে মেয়েটার কোন দোষ নেই তাই সে ক্ষমা চেয়ে নিত নানান বাহানায়।

তা ঠিক একমাস পর আজ রুবিনা সব জেনে যায়।
আরেকটা বিষয় সে লক্ষ করেছে রুবিনাকে ছাড়া তার ঘুম হয় না হয়তো অনেক দিনের অভ্যাস তাই। তাও পরিবর্তন হয়ে যাবে মারিয়াকে পেয়ে।
মারিয়াকে সে কথা দিয়েছে খুব তাড়াতাড়ি রুবিনাকে তাদের সম্পর্কের কথা বলে ডিভোর্স দিয়ে দেবে আর তাকে বিয়ে করবে তাইতো এতদূর আগানো।

সে সঠিক সময়ে অপেক্ষায় ছিল কিন্তু রুবিনার মায়াভরা মুখ দেখে সে আর কিছু বলতে পারতো না। রুবিনা খুব ফর্সা না হলেও উজ্জল শ্যামলা চোখ দুটো টানা টানা সরু নাক আর পাতলা ঠোঁট দুটো গোলাপের পাপড়ির ন্যয় লাল। অসম্ভব মায়া তার চেহারায়।

হয়তো যে কেউ তার মায়া পড়ে যাবে যেমন ভার্সিটি প্রথম দিনে সিয়াম তার মায়ায় পড়েছিল। রুবিনা প্রচণ্ড চঞ্চল মেয়ে আর প্রচুর দুষ্টু এই জিনিসটাই টানত সিয়ামকে তার মায়াবতীর দিকে। কিন্তু ইদানিং কেন জানো মায়াবতীর দুষ্টুমি গুলোও তার বিরক্তের কারণ হতো।

এসব কথা ভাবতে ভাবতে সিয়াম বাড়িতে পৌঁছালো বাড়িতে ঢুকে দেখলো মেন দরজা খোলা সে তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকলো রুমটা ফাঁকা দেখে হঠাৎ তার বুকে ধুক করে উঠলো কি যেন নেই রুমটাতে তাহলে কি সত্যি মায়াবতী চলে গেছে তাকে ছেড়ে হঠাৎ সে বুঝতে পারল সেকি ভাবছে সেতো রুবিনাকে ভালবাসেনা না রুবিনার কথা ভাববে না সে আর এখন থেকে শুধু মারিয়ার কথাই ভাববে।

কিন্তু তার কেন জানি মনে হচ্ছে রুবিনা এই ঘরেই আছে। রুবিনার উপস্থিতি সে বুঝতে পারে। তাই সে প্রত্যেকটা ঘর আর ওয়াশরুম চেক করলো কিন্তু রুবিনাকে পেল না তাই হতাশ হল। হঠাৎ বেলকুনি কথা মনে পরল সে দ্রুত বেলকুনিতে গেল গিয়ে দেখে রুবিনা দোলনায় শুয়ে আছে তাই শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারের দাগ কিছু কিছু জায়গা কেটে গেছে রক্ত পড়ছে। চোখের জল শুকিয়ে দাগ পড়ে গেছে মুখে।

রুবিনার অবস্থা দেখে সিয়ামের চোখ থেকে আপনা আপনি দুই ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল। রুবিনার বাবা-মা কখনোই রুবিনার গায়ে ফুলের টোকাও দেয়নি তাদের একমাত্র সন্তান বলে আর আজকে সে জানানোর মতো পিটিয়েছে রুবিনাকে। তাও কোন দোষ ছাড়াই।

কোন নারীই তার স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে চায়না। কেউ এটা মেনে নেয় না তাইতো তার রাগটা স্বাভাবিক কিন্তু সিয়াম নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। কথাটা ভেবে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল সিয়াম।
তারপর রুবিনা…


পর্ব ৩

তারপর রুবিনা কে কোলে নেয় সিয়াম। রুবিনার গায়ে হাত দিয়ে শফিন বুঝতে পারে ওর গা প্রচন্ড গরম হয়ে আছে। সে তাড়াতাড়ি তাকে বিছানায় শুইয়ে দেয় তারপর একটি পাত্রে হালকা গরম পানি এনে ঘা গুলো মুছে দিয়ে সেখানে ওষুধ লাগিয়ে দেয় ও আরেকটি বাটিতে পানি নিয়ে জলপট্টী দিতে থাকে।

বেশ কিছুক্ষণ জলপট্টি দেওয়ার পর রুবিনা মিটমিট করে চোখ খুলে তাকায়। আর রুবিনার তাকানো দেখে সিয়াম খাবার নিয়ে আসে আনুকে খাওয়ানোর জন্য। সিয়াম রুবিনাকে ডাকতে থাকে।

সিয়ামঃ রুবিনা এই রুবিনা খাবার টা খেয়ে নাও। তারপর মেডিসিন নিতে হবে তো রে বাবা। রুবিনা উঠো সোনা।
রুবিনাঃ না না না রুবিনা সোনা খাবে না। তুই পচা তুই ভাল না। এএএ.. আব্বু আমারে সিয়াম্নায় মারছে এএএ..। তোর সাথে কথা নাই আরি। হুহ। আমি আমার বাবু কে বলে দিবো তার বাবা পচা। হুহ।

সিয়াম জানে জ্বরের ঘোরে রুবিনা নানান ধরনের কথা বলে। কিন্তু পরের দিন সকালে কিছু মনে থাকে না। কথাটা ভেবেই সিয়াম মুচকি হাসল। এমনিতে আরো বেশি পাগলামি করে। কিন্তু আজকে হয়ত শরীর খারাপ থাকায় আস্তে আস্তে কথা বলছে।

সিয়ামঃ ওকে এই দেখ আমি কান ধরে ক্ষমা চাচ্ছি। আর কখনো তোমাকে মারবো না। এবার খাবারটা খেয়ে নাও। খাবার খেয়ে মেডিসিন নিতে হবে নইলে তো জ্বর কমবে না।
রুবিনাঃ আমরা তোকে কখনো ক্ষমা করব না। না না না। তুই পচা এমন পচা বাবুর পাপা আমাদের লাগবে না।
হঠাৎ রুবিনা কান্না করতে লাগলো। রুবিনার কান্না দেখে সিয়াম ব্যস্ত হয়ে পরলো। রুবিনার কান্নায় জেন সিয়ামের বুক ফেটে যাচ্ছে।

সিয়ামঃ কি হয়েছ কান্না করছ কেন আমি সরি বললাম তো। প্লিজ কান্না করে না তুমি আমাকে যা খুশি শাস্তি দাও কিন্তু কান্না করো না। তোমার কান্না সহ্য করতে পারিনা।

কথাটা বলেই সিয়াম রুবিনাকে বুকে টেনে নিল। রুবিনাও তাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। আর বলে
রুবিনাঃ আমি আপনাকে কখনো ক্ষমা করব না সিয়াম। সারা জীবনের জন্য দূরে চলে যাব আমরা। হারিয়ে খুঁজবেন আমায়। কিন্তু তখন খুব দেরি হয়ে যাবে। তারপর সিয়ামকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।

আমার শরীর খুব ব্যাথা করছে সিয়াম। আমি সহ্য করতে পারছি না। (কান্না করতে করতে)
রুবিনার প্রত্যেকটা কথা সিয়ামের বুকে তীরের মত বিদল”সারা জীবনের জন্য দূরে চলে যাব আমরা” কথাটা সিয়ামের কানে বার বার বাজছে।
রুবিনা কেন নিজেকে বার বার আমরা আমাদের বলছে? কিন্তু পরক্ষণেই ভাবল জ্বরের ঘোরে হয়তো আবল তাবল বকছে।

তারপর সে রুবিনাকে শান্ত করল।
সিয়ামঃ ওকে চল..চলে যেও কিন্তু আগে খাবার টা খেয়ে নাও। খাবার খেয়ে মেডিসিন নিলে ব্যথা কমে যাবে। এই দিকে এসো আমি খাইয়ে দি। হা কর।

সিয়ামের কথা শুনে রুবিনা বাধ্য মেয়ের মতো খাবার খেয়ে নিল। তারপর মেডিসিন নিয়ে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লো।
সিয়াম প্লেটগুলো রেখে রুমে এসে দেখে রুবিনা ঘুমিয়ে আছে তাই সেও কি যেন মনে করে রুবিনাকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পড়ল। হয়তো এইটা শেষ জরিয়ে ধরা। আর শেষ ঘুম তার মায়াবতীর সাথে।

সারা জীবনের জন্য দূরে চলে যাবো কথাটা বার বার কানে বাজছে তার কেন জানি কথাটা সহ্য হচ্ছে না। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেল সে নিজেও জানে না।
সকালে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে রুবিনা নিজেকে ভারি ভারি রুবিনাভব করল। পাশে ফিরে দেখা সিয়াম তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। ঘুমের মধ্যে ছেলেটাকে কত নিষ্পাপ দেখায়। হঠাৎই কালকের ঘটনা কথা মনে পরল রুবিনার।

ধাক্কা দিয়ে শাফিরকে নিজের থেকে সরিয়ে দিল। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। শরীর টা ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে। সারারাত সে সিয়াম এর সাথে ছিল কথাটা ভাবতেই রুবিনার গা গুলিয়ে উঠলো।

সে কোনরকম দৌড়ে ওয়াশরুমে গেল আর গরগর করে বমি করে দিল। রুবিনার ধাক্কায় সিয়ামের ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল। রুবিনার ধাক্কায় সিয়াম অপমানিত বোধ করলো। আগে তো প্রত্যেকদিন সে রুবিনাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে তখন ধাক্কা দেয়নি।

রুবিনার বমি করা দেখে সে ভাবল হয়তো জ্বরের কারণে বমি হচ্ছে। তাই সে উঠে ওয়াশরুমে গেল রুবিনাকে ধরতে কিন্তু তার আগেই আনু তাকে হাত উঠিয়ে ধরতে মানা করে দেয়। তাই সে সেখান থেকে বাড়ির বাইরে চলে যায়।

রুবিনা ইগনোরেন্স সহ্য হচ্ছেনা সিয়ামের। হঠাৎ সে ভাবতে লাগবো সে কি রুবিনাকে ছাড়া থাকতে পারবে? একবার রুবিনার সাথে কথা বলতে হবে। সে রুবিনাকে ডিভোর্স দিবে না সেও থাকবে মারিয়াও থাকবে। কিন্তু সে থাকবে বন্ধু হয়ে। কিন্তু মারিয়া কি ব্যাপারটা মেনে নেবে? আর রুবিনাই বা মানবে কেন বন্ধু হয়ে থাকতে। সেও তো একজন লাইফ পার্টনার চায়।

তাহলে ডিভোর্স এর পরে কি আবার বিয়ে করবে। অন্য কেউ রুবিনার উপর অধিকার খাটাবে কথাটা ভাবতেই কেন জানো সিয়ামের রাগ উঠে গেলে। জেন কেও তার ভেতর থেকে বলছে রুবিনা শুধু তার রুবিনার উপর অধিকার শুধুই তার।
তারপর সে বাসায় রওনা দেয় তার রুবিনার সাথে কথা বলতে হবে…


পর্ব ৪

তারপর সে বাসায় রওনা দেন রুবিনা সাথে কথা বলতে হবে। মানুষ তো দুটো বিয়ে করে সংসারও করে। হয়তো আগের মত ভালবাসতে পারবে না কিন্তু চেষ্টা করবে।
মারিয়া এবং সে আলাদা আলাদা থাকবে। তাদের সব চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করবে। সে দুজনের সাথে সুখে থাকবে। তাহলে মারিয়াকে পাবে আর কোন রুবিনা অন্য কারো কাছে যেতে পারবেনা তার হয়েই থাকবে।

কথাটা ভেবেই সিয়ামের ভালো লাগছে। আগে রুবিনাকে মানাতে হবে। তারপর সে মারিয়ার সাথে কথা বলবে এই বিষয়ে। তার বিশ্বাস রুবিনা মেনে নেবে তার সব শর্তে। কারণ রুবিনা তাকে ভীষন ভালবাসে। এখন চিন্তা শুধু মারিয়াকে নিয়ে।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে সে ঘরে ঢুকে যায় দরজা যেভাবে খোলা ছিল সেভাবেই খোলা আছে তাই ঘরে ঢুকতে সমস্যা হয়নি।

তারপর সে রুবিনাকে খুঁজতে থাকে ওয়াশরুম থেকে পানির আওয়াজ আসছে হয়তো রুবিনা শাওয়ার নিচ্ছে। তাই সে অপেক্ষা করতে থাকে রুবিনার।

অপরদিকে রুবিনা এক ঘন্টা যাবত শাওয়ারের নিচে কান্না করছে আর ভাবছে তার জীবনটা তো অন্যরকম হওয়ার কথা ছিল তাহলে কেন এমন করল সিয়াম তার সাথে। সব প্রশ্নের উত্তর তাকে দিতে হবে তারপর সে যাবে।
আর বেশিক্ষণ থাকল না সে কারণ এতে তার বাচ্চার সমস্যা হতে পারে বাচ্চাটার তো কোন দোষ নেই তবে সে কেন কষ্ট পাবে।

আর কাঁদবে না সে। এই তার শেষ কান্না বাচ্চাটার জন্য হলেও তাকে বাঁচতে হবে। বাচ্চাটা না থাকলে হয়তো সে এতক্ষণ মরেই যেত। বাচ্চাটাই হচ্ছে বাঁচার একমাত্র অবলম্বন সে তাকে আঁকড়ে ধরে সারা জীবন থাকতে পারবে তাকে মানুষ করার জন্য সিয়ামের মত বাবার দরকার নেই কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো সিয়াম খাটের উপর বসে তার দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

সে তার দিক থেকে চোখ সরিয়ে আয়নার সামনে বসে চুল মোছায় মনোযোগ দিল।

বাথরুমের দরজা খোলার আওয়াজ এ সেদিকে তাকায় সিয়াম। রুবিনা মাত্র গোসল থেকে বের হয়েছে চুল দিয়ে টপটপ পানি পড়ছে মলিন চেহারাটা স্নিগ্ধ হয়ে আছে। ঘোরের মাঝেই সে উঠে এসে রুবিনাকে পিছন থেকে আকরে ধরে ওর ভেজা চুলে মুখ ডুবিয়ে দিলো।

আচমকা এমন স্পর্শে রুবিনা থ বনে গেল দেখল সিয়াম তার চুলে মুখ ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে দ্রুত উল্টো দিকে ঘুরে সিয়ামকে বেশ জোরে ধাক্কা দিলো আর বলতে লাগলো।

রুবিনাঃ লজ্জা করে না আপনার এতকিছুর পরেও আপনি আমাকে স্পর্শ করছেন। মেয়ে মানুষের শরীর দেখলে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেন না তাইতো?
অন্যর ধাক্কাতে সিয়ামের হুশ ফিরে। আর তার কথাতে সিয়ামের রাগ উঠে যায় তারপরেও নিজেকে যথেষ্ট সংযত রেখে সে রুবিনাকে বলে।

সিয়ামঃ দেখো রুবিনা কালকের জন্য আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি
ভুলটা আমারই ছিল। মারিয়ার কথা তোমাকে আগে বলা উচিত ছিল আর আমার মনে হয় আমি এখন আর তোমাকে ভালোবাসি না। আমি মারিয়াকে ভালোবাসি তাই জোর করে সম্পর্ক রাখার কোনো মানেই হয় না।

“আমি তোমাকে ভালোবাসি না” কথাটা শুনে রুবিনা কান্নায় ভেঙে পড়ল আর সিয়ামকে প্রশ্ন করল।
রুবিনাঃ কি দোষ ছিল আমার যার কারণে আপনি আমার সাথে এমন করলেন। কি কমতি রেখেছিলাম আমি। সব সময় আপনার চাওয়া-পাওয়াকে প্রধান্য দিয়েছি।

আপনার ভালোলাগা খারাপ লাগা নজরে রেখেছি। আপনার সব কাজে আপনাকে একজন ভালো বন্ধুর মতো সাপোর্ট করেছি। তাহলে কেন আপনি এমন করলেন? কেন সিয়াম কেন আমাকে এত বড় শাস্তি দিলেন?
আপনার এক কথায় আপনাকে বিশ্বাস করে নিজের বাবা মায়ের ভালোবাসাকে পায়ে ঠেলে আপনার হাত ধরে আপনার সাথে চলে এসেছি বিশ্বাসের এই মর্যাদা দিলেন?

ভাববেন না কালকে আপনার ওইসব কথা শুনেও আপনার সাথে সংসার করবো বলে পরে আছি শুধুমাত্র প্রশ্নের উত্তরগুলো জন্যই এখানে থাকা।
একবার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে দিন আর কখনোই আপনার সামনে আসব না চিরদিনের জন্য চলে যাব আপনার জীবন থেকে।

শেষ কথাটা শুনে সিয়াম মাথা উঁচু করে রুবিনার দিকে তাকাল।
সিয়ামঃ আমার পুরো কথা টা তো একবার শোন..

রুবিনাঃ না আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
এবার সিয়াম রেগে যায় রুবিনা কখনোই তার কথা আগে পুরোটা শুনতে চায় না কথার মাঝে কথা তোকে বলতেই হবে। আগে পুরো কথাটা তো শুনবে তা না আগে তার প্রশ্নের জবাব দাও। তাই সিয়াম রাগের মাথায় দাঁতে দাঁত চেপে বলে দেয়।

সিয়ামঃ কি আছে তোমার না চেহারা না কোন যোগ্যতা শুধু পারো কতগুলো অখাদ্য রান্না করতে। সারাদিন শাড়ি পড়ে ঘুরে বেড়াও। কোন বড় পার্টিতে নিয়ে গেলে বুড়ো সেজে বসে থাক। আমার বন্ধুদের সাথে ভালোভাবে কথা পর্যন্ত বলোনা কতটা বিব্রত হতে হয় আমাকে তোমার জন্য জান। যখন আমার বন্ধুরা বলে তোর বউটা বড্ড সেকেলে।

আমার বিষয়ে খেয়াল রাখা কথা বলছো তো? তোমার আর সারাদিন বাসায় কাজই বা কি থাকে তাইতো আমার ভালো লাগা খারাপ লাগার বিষয়ে নজর রাখো। সারাদিন বাসায় থাক আর আমার অন্ন ধংস কর। প্রতিদিন রাত্রে বাসায় আসলে কানের সামনে মশা মাছির মত ভন ভন করতে থাকো। আজকে একটা হয়েছে সেটা করেছে হ্যান ত্যান। ফ্রাইডে হলে ঘুরতে যাবো রিকশায় চড়ব যত লো ক্লাস মেন্টালিটির আদিখ্যেতা।

দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে চাও না সামান্য রোমান্স করতে গেলে পালাই পালাই করো। ইউ ডোন্ট এভেন স্যাটিস্ফাইড মি ইন্টু বেড। তোমার বেড পারফরম্যান্সও অতো ভালো না। আর মারিয়াকে দেখো যেন সাক্ষাৎ একজন মডেল যেমন রূপ তেমনি গুন একজন স্বাধীন নারী এমন মেয়ে আমি সবসময় চাইতাম আমার লাইফ পার্টনার হিসেবে। ইভেন তার বেড পারফরম্যান্স তোমার থেকে হাজার গুণ ভালো।

বেডে সে আমাকে তোমার থেকে ভালো সাপোর্ট করে। ঠিক এইসব কারণে। এসব কারণে আমি তোমার কাছ থেকে মুক্তি চাই শুনতে পেরেছ তুমি এখন আমার চোখের সামনে থেকে দূর হও তোমার ওই মুখ কখনো আমাকে দেখাবে না। ডিসকাস্টিং..

বলেই সিয়াম কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ওয়াশ রুমে ঢুকে যায়। তার মাথা ঠান্ডা করতে হবে কি বলতে চেয়েছিল আর কি কি হয়ে গেল। উফফফ।

অন্যদিকে রুবিনা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কি বলে গেল সিয়াম তাকে ছি ছি। সে বসে বসে অন্ন ধংস করছে। সে শাড়ি পড়ে তাই সে সেকেলে। সে সিয়াম কে বিছানায় সুখ দিতে পারেনি? নিজের ওপর ঘৃনা হচ্ছে এই লোকটাকে সে এতদিন ভালবেসেছিল। একসাথে থেকেছে আর এত বিশ্বাস করেছে আর সে কিনা তাকে এসব কথা বলে গেল। রুবিনার ভালোবাসাগুলো তার কাছে আদিখ্যেতা মনে হয়।

তার চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি পড়ছে। চোখের পানি বাধ মানছে না সে তার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছে আর এক মুহূর্ত থাকবে না সে এখানে।
কোন কিছু না নিয়ে সে বাসা থেকে বের…


পর্ব ৫

কোন কিছু না নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল রুবিনা। রাস্তায় এলোমেলোভাবে হাটছে সে বারবার সিয়ামের কথাগুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত খাবারের খোটা তাকে শুনতে হলো।
এত ভালোবাসার এই ফল পেল সে? তার ভালোবাসা তো কোন খাদ ছিল না। এখন সে কোথায় যাবে বাবা মায়ের কাছে যাবার মুখ নেই তার। তাদের কথা অমান্য করেই তো সে সিয়ামের সাথে গিয়েছিল এখন কোন মুখে সে বাবা-মায়ের কাছে আছে আশ্রয় চাইবে?

এসব কিছু ভাবতে ভাবতেই সে পাশের একটা পার্কে গিয়ে বসে। সকাল থেকে কিছুই খাওয়া হয়নি তার ওপরে শরীরে অসম্ভব ব্যথা ও জ্বর।

কিছুক্ষণ বসে থাকার পর হঠাৎ সে শুনতে পেল কেউ তার নাম ধরে ডাকছে পিছনে ফিরে সে দেখতে পেল সামিম ভাই।

প্রায় ৩০ মিনিট শাওয়ারের পর সিয়ামের মাথা ঠান্ডা হলো। সাথে সাথে তার মাথায় এলো রাগের মাথায় সে রুবিনাকে কি সব বলেছে। প্রায় সাথে সাথেই সে কোনরকম টাওয়াল পেচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো।

বের হয়ে দেখল রুবিনা ঘরে নেই। বিছানার উপর থেকে ফোনটা নিয়ে তাড়াতাড়ি রুবিনা নম্বরে ডায়াল করলো কিন্তু ফোনটা ড্রেসিন টেবিলের সামনে বাড়ছে। তাই ভাবল সে হয়তো ঘরেই আছে তাই সে জোরে জোরে রুবিনার নাম ধরে ডাকতে লাগল কিন্তু কোন সাড়া পাওয়া গেল না।

এইবার সে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। সে উপলব্ধি করতে পারছে সে অনেক ভুল করেছে যার কোন ক্ষমা হয় না। সে কি করে মুখ দেখাবে রুবিনা সামনে। কোন মুখে যাবে তার সাথে কথা বলতে বা ক্ষমা চাইতে।

সে কি তার শর্ত মেনে নেবে? থাকবে তার বন্ধু হয়ে? মনে হয় শেষ আশাটাও যে সে নিজ হাতে হত্যা করেছে।

রুবিনা বাচ্চামো সভাবের হলেও আত্মসম্মান টা খুব বেশি। একবার সিয়াম রুবিনাকে আইসক্রিম খাওয়া নিয়ে কথা শোনায় তারপর থেকে সে আর শত রুবিনারোধের পরেও আর ক্ষমা চাওয়ার পরেও আর আইসক্রিম খাইনি। যেখানে আইসক্রিম সবচেয়ে প্রিয় খাবার। সে সবকিছু কে না করতে পারলেও আইসক্রিম কে না করতে পারত না।

সিয়ামের নিজেকে এখন জুতা পিটা করতে ইচ্ছে করছে। কি করে পারল রুবিনাকে এসব কথা বলতে যা একটাও সত্যি না। কথা গুলো সিয়াম মন থেকে বলেনি। রাগের মাথায় বলে ফেলেছে। নাহ যে করেই হোক তার রুবিনা কাছে মাফ চাইতে হবে মাফ চাইলে তো কেউ ছোট হয়ে যায় না।

রুবিনা হয়তো তাকে মাফ করে দেবে কারণ ও তো জানে সিয়াম রাগের মাথায় কি বলে তা নিজেও জানেনা পরে ঠিকই সে তার ভুল বুঝতে পারে।

সিয়ামের রাগটা বরাবরের মতোই বেশি। যা মাঝে মাঝে সিয়ামকে বিপদে ফেলে দেয় একবার রাগ উঠলে সে আর নিজের মধ্যে থাকে না যা নয় তাই বলে ফেলো। রুবিনা তার রাগ কন্ট্রোল করার জন্য সব সময় বলতো। আরো বলতো এই রাগের কারণেই হয়তো একদিন সবকিছু হারাবে।

তাহলে কি সে রুবিনাকে সারা জীবনের জন্য হারিয়ে ফেলল…

সামিম রুবিনার আপন মামাতো ভাই। সে তার ছেলেকে নিয়ে এখানে খেলতে এসেছে। সে আশেপাশেই থাকে। তার ছেলেকে জন্ম দেওয়ার সময় সামিম ভাইয়ের স্ত্রী মারা যায় তারপর সে আর বিয়ে করেনি। এখনো স্ত্রীকেই ভালোবাসেন তিনি। ছেলেকে নিয়ে দিন কাটে তার। সামিমের ছেলের বয়স চার বছর নাম সাদ। ভীষণ মিষ্টি দেখতে আর সারাদিন পাকা পাকা কথা বলে ঘর মাতিয়ে রাখে।

সামিম রুবিনার ভাই কম বেস্ট ফ্রেন্ড বেশী। সে তার জীবনের সব কথাই তাকে বলতো। কিন্তু বিয়ের পর তার সাথে আর বেশি যোগাযোগ হয়নি কারণ সিয়াম তার সাথে কথা বলা পছন্দ করত না। আর সিয়াম পছন্দ করে না এমন কোনো কাজই রুবিনা দ্বিতীয় বার করত না।

সামিম সব সময় রুবিনাকে একজন গাইড এর মত প্রটেক্ট করত। সকল বিষয়ে ভালো পরামর্শ দিত যদিও সে রুবিনার থেকে বয়সে প্রায় 10 বছরের বড় ছিল।

সামিম কে দেখে রুবিনা আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না হঠাৎ জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করল।
এমন আচরণে সামিম হতচকিয়ে গেল তারপর সে আস্তে আস্তে তাকে শান্ত করল।
সামিমঃ হয়েছে রুবিনা আর কাঁদে না বাচ্চাটা। কি হয়েছে তোর? আমাকে বল কান্না থামা কথা বল আমার সাথে সিয়ামের সাথে কিছু হয়েছে?

তারপরেও রুবিনা কান্না করতে থাকলো। এবার সামিম একটু জোরে ধমক দিল
সামিমঃ চুপ একদম চুপ কান্না থামা কান্না থামা বলছি। তারপর রুবিনা আস্তে আস্তে শান্ত হলো।
এবার বল কি হয়েছে কেন কান্না করছিস?

সিয়ামের সাথে রিলেশনের সব কথাই সে জানতো এবং কি বিয়ে পরেও কয়েকদিন ভালো সম্পর্ক ছিল তাদের কিন্তু আস্তে আস্তে রুবিনা নিজেকে গুটিয়ে নেয়।
এবার রুবিনা শুরু থেকে একে একে সব ঘটনা সামিমকে বলে দেয়।

সব কথা শুনে সামিম খুব রেগে যায়। সে খুব ভরসা করে রুবিনাকে সিয়ামের হাতে তুলে দিয়েছিল। সিয়ামও রুবিনাকে ভালো রাখার আশ্বাস দেয় সামিম কে। তাহলে এই কি তার ভালো রাখার নমুনা প্রেগনেন্ট অবস্থায় একটা মেয়েকে ছেড়ে দেওয়া।

সে অগ্রসর হয় সিয়ামের কাছে যাওয়ার জন্য কিন্তু রুবিনা বাধা দেয় সে চায় তার ভালোবাসার মানুষটি ভালো থাকুক। আর তা যদি হয় তাকে ছেড়ে তাহলে সে নাইবা থাকল তার জীবনে। বেঁচে থাকার অবলম্বন তো আছে তার আর কি চাই?

তারপর সামিম তাকে জোর করে তাদের বাসায় নিয়ে যায়। আর কিছু খাইয়ে বিশ্রাম নিতে বলে সে রুবিনাদের বাসায় অগ্রসর হয়। তারপর রুবিনা বাবা-মায়ের কাছে সব খুলে বলে। তারা মেয়ের এমন অবস্থার কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে সামিম তাদের সামলায় এবং নিজেদের রুবিনার জন্য শক্ত হতে বলেন।
কারণ রুবিনার এখন আপনজনদের খুব প্রয়োজন। তাকে তার লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করতে হলে তাদের সাপোর্টের দরকার হবে।

আর রুবিনা খাবার খেয়ে মেডিসিন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সারাদিন ক্লান্ত থাকায় বিছানার সাথে গা এলিয়ে দিতেই দুচোখে রাজ্যের ঘুম নেমে আসে।
তার ঘুম ভাঙ্গে সন্ধ্যায় মাথায় কারো ঠান্ডা হতে স্পর্শে। স্পর্শটি তার খুব চেনা এটি তার মায়ের হাতের স্পর্শ। আচ্ছা মমতা স্পর্শগুলো কি এমনই হয়?
অন্ধকার ঘরে বসে আছে সিয়াম…


পর্ব ৬

অন্ধকার ঘরে বসে আছে সিয়াম। ঘরটা কেমন যেন নিস্তব্ধ হয়ে আছে। কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা ঠিক যেমন সিয়ামের মনটার মত। কিন্তু এটা তো হওয়ার কথা ছিল না সে তো এটাই চাইছিল রুবিনা জেন চলে যায় তাহলেই তো সে আর মারিয়া ভালো থাকবে।

অন্য সাধারন দিনগুলোর হলে সিয়াম এতক্ষণে অফিস থেকে ফিরত। রুবিনা হাসিমুখে দরজা খুলত। ঘামের জর্জরিত শরীরে সিয়ামকে রুবিনা জড়িয়ে ধরত যা ইদানিং সিয়ামের বিরক্ত করে তুলতো। তারপর হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যেত। কাবার্ড থেকে কাপড় নিয়ে সিয়ামকে ঠেলে ওয়াশরুমে ঢুকাতো আর তার কাপড়-চোপড় মানিব্যাগ ঘড়ি সঠিক জায়গায় রেখে দিত। সিয়াম শাওয়ার থেকে বের হলে টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছে দিত।

তারপর তার সারাদিনে কাজকর্ম গুলো হাসিমুখে সিয়ামের সাথে শেয়ার করত কিন্তু সিয়াম আগে বিরক্ত না হলেও মারিয়ার সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর কেন যেন এগুলো বিরক্ত লাগত মাঝে মাঝে রুবিনাকে ধমক দিয়ে চুপ করাত। তারপর দুজনে ডিনার করে শুয়ে পরতো। আর যেদিন মারিয়ার সাথে বাইরে থেকে ডিনার করে আসত সেইদিন রুবিনা না খেয়ে শুয়ে থাকত। তাই রুবিনাকে খাওয়ানোর জন্য সামান্য হলেও সিয়াম খাবার খেতো।

সিয়ামের খুব ইচ্ছে করছে রুবিনার সাথে দেখা করতে একটু কথা বলতে কিন্তু না সে বলবে না তাই সে মারিয়ান নাম্বারে ডায়াল করল কিন্তু ফোন অপর পাশ থেকে ব্যস্ত দেখাচ্ছে ঘন্টা দুয়েক আগেও মারিয়ার সাথে কথা হয়েছে ওর।

তার বেশিরভাগ কথাই ছিল হানিমুনে কোথায় যাবে এঙ্গেজমেন্ট রিং কেমন হবে। তাদের ওয়েডিং কেমন হবে। বিয়ের পর কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবে এসব নিয়ে। আর আসল বিষয় ছিল কিভাবে রুবিনাকে ডিভোর্স দিতে হবে।

সে নাকি তার পরিচিত ভালো ডিভোর্স লয়ার এর সাথে কথা বলে রেখেছে কালকে সকালে যাবে তারা লয়ারের সাথে সরাসরি কথা বলতে।

কিন্তু সত্যিই সে চায় রুবিনাকে ডিভোর্স দিতে? তার মাথায় নানান জিনিস ঘুরপাক খাচ্ছে। না সে আর ভাবতে চায়না সে আবার মারিয়ার নম্বরে ডায়াল করে কিন্তু এবারও ব্যস্ত দেখায় তাই সে চুপচাপ বেলকুনিতে গিয়ে সিগারেট ধরায়।

রুবিনা থাকা অবস্থায় সিয়ামকে কখনো সিগারেট খেতে দিত না। রুবিনা সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারত না। তাই সিয়াম প্রায় সিগারেটের স্বাদ ভুলে গিয়েছিল। কিন্তু আজকে সারাদিনে সে এক প্যাকেট সিগারেট শেষ করেছে। এসব ভাবনার মাঝেই মারিয়া ফোন ব্যাক করে।

রাত 10:30 মিনিট।
রুবিনাকে নিয়ে তার বাবা-মা বাড়ি ফিরেছে। আরো আগেই আসার কথা ছিল কিন্তু সামিম ডিনার না করিয়ে ছাড়লো না তাদের। তারা বেশ কিছুক্ষণ ঘরে আড্ডা ও দিল রুবিনার ছোটবেলা নিয়ে তাকে কিভাবে সব সময় সামিম শায়েস্তা করত তা নিয়ে বেশ হাসাহাসি করলো। এসবের মধ্যে রুবিনা প্রায় চুপি ছিল মাঝে মাঝে দু একটা কথা বলেছে আর বেশিরভাগ সময় চুপ থেকে মুচকি হেসেছে।

রুবিনা ছোটবেলা থেকেই ভীষণ দুষ্টু ছিল সারাদিন দুষ্টুমি করে বেড়াতো আর সামিম সব সময় তাকে দুষ্টুমির জন্য শাস্তি দিত। শাস্তি পেয়ে রুবিনা মাঝে মাঝে কান্না করত তারপর আবার সবাই মিলে তাকে হাসাতো। এই সবই ছিল রুবিনাকে সিয়ামের দেওয়া কষ্ট থেকে কিছু সময়ের জন্য দূরে রাখার চেষ্টা মাত্র।

বাসায় এসে রুবিনা নিজের ঘরে ফ্রেশ হল। বিকেলে ঘুমানোর কারণে এখন আর ঘুম আসছে না তার সারা সন্ধ্যায় কান্না আটকে রাখতে পারলেও এখন আর কান্না বাঁধ মানছে না সে বালিশে মুখ গুঁজে চিৎকার করে চিৎকার করে কান্না করতে লাগলো। এরই মাঝে হঠাৎ দরজায় কেউ কড়া নাড়লো সে তাড়াতাড়ি কান্না বন্ধ করে দরজা খুলে দেখল তার মা দাঁড়িয়ে আছে।

রুবিনাঃ মা তুমি এত রাতে কোন প্রয়োজন ছিল কি?
রুবিনার মা বুঝতে পারলো রুবিনা এতক্ষণ কান্না করছিল চোখ-মুখ লাল হয়ে আছে চোখ গুলো ফুলে গেছে তার মেয়ের জীবনটা কেন এমন হলো ভেবেই সে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো সে জানতো রুবিনা একা থাকলে কান্না করবে তাইতো সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যতদিন পর্যন্ত নিজেকে শক্ত না করতে পারে ততদিন পর্যন্ত সে রুবিনার সাথে থাকবে তাকে সাপোর্ট করবে।

কারণ এই সময়ে মায়ের মানসিক চাপের কারণে বাচ্চাদের সমস্যা হয়ে থাকে যা মোটেও ভালো না সে জানে বাচ্চাটা রুবিনার বেঁচে থাকার একমাত্র চাবিকাঠি। সামিম এর কথা রুবিনাযায়ী সিয়াম তাকে ডিভোর্স দিবে বলেছে। তাই একটা ডিভোর্সী মেয়ের একটা বাচ্চা দুনিয়াতে আনতে হযলে রুবিনাকে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে। তার জন্য তার প্রচুর সাপোর্টের দরকার আর মোটিভেশনে দরকার যা রুবিনার বাবা-মা ও সামিম দিবে।

রুবিনাকে বোঝাতে হবে ভালো থাকার জন্য কোন সিয়ামের মত কোন পুরুষ মানুষের প্রয়োজন নেই। তাই সে বলল।
রুবিনার মা (রাবেয়া):কেন কোন দরকার ছাড়া কি আমি আমার মেয়ের কাছে আসতে পারিনা বুঝি? আমি এমনিতেই এসেছি তোর সাথে থাকব বলে কত দিন হয় তোর সাথে থাকি না।

রুবিনা বুঝতে পারল তার মা হয়তো বুঝতে পেরেছে সে এখন কান্না করছে। তাই তার সাথে থাকতে এসেছে যাতে সে কান্না করতে না পারে। এরই মাঝে রুবিনার বাবা হাতে করে গরম দুধ নিয়ে প্রবেশ করে।
রুবিনাঃ আরে বাবা তুমি তোমার হাতে দুধ কেন?

রুবিনার বাবা (মিজানুর):তোমার জন্য মামনি এখন তোমার সাথে অন্য আরেকজন আছে তাকে তো সুস্থ হয়ে ঘরে আসতে হবে নাকি তার জন্য তো বেশি বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে আমি কিন্তু না শুনবো না তাড়াতাড়ি করো দুধটুকু ফিনিশ করো।
রুবিনাঃ কিন্তু আমি তো দুধ খাই না তুমি তো জানো প্লিজ বাবা জোর করে না।

মিজানুর:আমি তোমার কোন কথা শুনবো না আমিতো তোমাকে খেতে দিচ্ছি না আমি তো আমার নাতি নাতনীকে খাওয়াচ্ছি আমার সাথে খেলতে হলে তো তাদের যথেষ্ট শক্তির প্রয়োজন তাড়াতাড়ি শেষ করে তাড়াতাড়ি।

রুবিনা বুঝতে পারলো এখন আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই অজ্ঞাত রুবিনাকে নাক চেপে দুধটুকু খেয়ে ফেলতে হল বরাবরই দুধ রুবিনার অপছন্দনীয় খাবার। তাকে জোর করে দুধ খাওয়ানো যায় না কিন্তু তার সন্তানের ভালোর জন্য তো এতটুকু করতেই পারে যেখানে তার বাবা-মা তাকে দূরে ঠেলে না দিয়ে এত আপন করে নিয়েছে তার সন্তানের জন্য। সেখানে দুধ খাওয়ার কি এত বড় কাজ।

ঠিক সেই মুহূর্তে থেকে সে প্রতিঙ্গা করল। সিয়াম কে মনে করে সে আর কান্না করবে না। যে তাকে ভালোবেসে না তার জন্য সে কান্না করে তাকে যারা ভালবাসেন তাদের কেন কষ্ট দিচ্ছে।
রুবিনা তার বাবা-মা কে জোরিয়ে ধরল আর তাদের জীবনে এগিয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিল। যেখানে থাকবে না কোন সিয়াম নামের কোনো পিছুটান।

ভালো থাকার জন্য প্রথমে যা করতে হবে তা হল এ শহর থেকে দূরে থাকা কারণ এই শহরের আনাচে-কানাচে তারা প্রেম করে বেরিয়েছে তাই এখানকার প্রত্যেকটা জায়গায় সিয়ামকে মনে করিয়ে দেয়। তাই সে শহর থেকে দূরে চলে যাবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেয় সে লেখাপড়া চালিয়ে যাবে।

কারণ সিয়াম তার যোগ্যতায় প্রশ্ন তুলেছে। তার থেকে বেশি যোগ্য হয়ে তবেই সে সিয়ামের সামনে দাঁড়াবে আর দেখিয়ে দেবে সিয়াম কখনো তার যোগ্য ছিল না। আর অতীতকে ভোলানো সবথেকে ভালো উপায় হচ্ছে নিজেকে ব্যস্ত রাখা এত ব্যস্ত রাখা যাতে অতীত নিয়ে ভাবার সময়ই না থাকে আর এর সব থেকে ভাল মাধ্যম হচ্ছে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া।

সিয়াম নামে যে কেউ একজন তার জীবনে ছিল তা একবারের জন্য মুছে ফেলতে চায় রুবিনা। কিন্তু চাইলেই কি সবকিছু মন থেকে মুছে ফেলা যায়? ঠিক কোন এক গভীর রাতে দীর্ঘ নিঃশ্বাস হয়ে বেরিয়ে আসে কালো অতীত গুলো। সাথে কিছু সুখময় স্মৃতি। সিয়ামের সাথে খুব তো খারাপ ছিল না সে।

রুবিনা বিবিএ কমপ্লিট করার পর বিয়ে করে। তারপরে আর পড়াশোনা বা চাকরির দিকে ঝুকেনি সে কারণ রুবিনার সব সময় ইচ্ছে ছিল বিয়ের পর সে চাকরি করবে না সংসারী হবে সিয়ামের পছন্দমত রান্নাবান্না করবে ঘর গোছাবে বাচ্চা পালবে আর সিয়ামের খেয়াল রাখবে। তাই আর নিজেরও পড়াশোনা কন্টিনিউ করেনি বা সিয়াম ও আগ্রহ দেখায়নি।

মারিয়ার কল দেখে তাড়াতাড়ি রিসিভ করে সিয়াম ফোন ধরতেই জিজ্ঞেস করে।

সিয়ামঃ কার সাথে কথা বলছিলে এতক্ষণ যাবৎ? সেই কখন থেকে ফোন দিচ্ছি বারবার বিজি দেখাচ্ছে?
সিয়ামের এ কথাটাই যথেষ্ট ছিল মারিয়াকে রাগাবার জন্য। সেও বলে ফেলে

মারিয়াঃকেন এখন কি তোমার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে আমার ফোনে কথা বলতে হবে? কার সাথে কথা বলছি? কি কথা বলছি? কতক্ষণ ধরে কথা বলব? সবকিছু তোমাকে বলতে হবে? আমাকে কি রুবিনা পেয়েছ। যে সবকিছুর কৈফত আমি তোমাকে দেবো। সবকিছুতে তোমার পারমিশন চাইবো।

হঠাৎই সিয়াম দমে গেল সে শান্ত স্বরে মারিয়াকে বলল

সিয়ামঃ সরি মারিয়া ভুল হয়ে গেছে। আসলে মাথা ঠিক ছিল না তারপর আমি তোমাকে অনেকক্ষণ যাবৎ ফোন দিচ্ছি বারবার বিজি দেখাচ্ছে তাই হুট করে মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। ভুলে বলে ফেলেছি তুমি যার সাথে খুশি কথা বল আমার কোন সমস্যা নেই। জানোই তো রাগ উঠলে আমার মাথা ঠিক থাকেনা যা তা বলে ফেলি।
এবার মারিয়া স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল।

মারিয়াঃ আমি রুবিনা না যে তোমার রাগের ধার ধরে বসে থাকবো। যাক গে আসলে এক পুরনো ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলাম তাই তোমার ফোন খেয়াল করিনি কি জন্য ফোন দিয়েছো বল? কিছুক্ষণ আগেই না কথা বললাম তোমার সাথে?

সিয়াম দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল সে রুবিনাকে মনে না করার জন্য মারিয়াকে ফোন দিয়েছে কিন্তু মারিয়াও বারবার রুবিনার কথা তুলে ওর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
সিয়ামঃ কেন তোমার সাথে কথা বলার জন্য বুঝি কারণ থাকতে হবে? এমনিতে কথা বলা যাবে না? আর কিছুক্ষণ আগে কেন বলছ? প্রায় 2 ঘণ্টা আগে কথা বলেছি আমরা। তোমার কথা মনে পড়ছিল তাই ফোন দিলাম। এই মারিয়া চলো না তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলি একা একা থাকতে ভালো লাগছে না। চলো কালই বিয়ে করে ফেলি।

মারিয়াঃ বললেই হলো নাকি কালই বিয়ে করে ফেলি। আর তাছাড়া বিয়ে ছাড়াই তো সব পাচ্ছো তাহলে সমস্যা কোথায় আমরা আরো কিছুদিন এভাবেই থাকি তারপর না হয় বিয়ের কথা ভাববো আগে তোমাদের ডিভোর্সটা তো হোক। আমার কত শপিং করতে হবে। ফ্রেন্ডদের ইনভাইট করতে হব।

কত প্ল্যানিং আছে আমার বিয়ে নিয়ে? তোমার হয়তো এটা দ্বিতীয় বিয়ে কিন্তু আমার তো প্রথম আমারও তো কিছু শখ আছে নাকি। আর শোনো তোমার ফালতু কথা শোনার আমার এখন সময় নেই আমার কিছু কাজ আছে পরে কথা বলব কোন দরকার থাকলে বল। আর ফালতু টাইম স্পেন এর জন্য আমাকে ফোন দিবে না রাখি বাই।

কট করে ফোনটা রেখে দিলো মারিয়া। সিয়াম বারান্দায় দেয়াল ঘেঁষে বসে পরলো রাত প্রায় বারোটার কাছাকাছি চোখে ঘুম নেই তার ঘুম যেন তার অবাধ্য হয়ে গেছে। তার চোখ থেকে অন্য কারো বুকে চুপটি করে বসে আছে। আর ঘুমানোর জন্য সেই ব্যক্তিটা কে দরকার।
রাতটানির্ঘুম সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে কাটিয়ে দিল সে।
সকালে।

বরাবরের মতো খুব সকালেই ঘুম ভাঙলো রুবিনার। রুবিনার সকালে ওঠার অভ্যাস আছে। তাই সে তাড়াতাড়ি করে অজু করে নামাজে বসে পরল আর আল্লাহর কাছে তার সন্তানের সুস্থতা কামনা করল। কাল রাতে ভালো ঘুম হয়েছে তাই মনটা সকাল থেকেই হালকা লাগছে যেন খুব বড় একটা পাথর নেমে গেছে বুক থেকে। কাল অনেক রাত পর্যন্ত সে ভেবে নিয়েছে আগামীতে কি করতে হবে তাই সে তার বাবা-মায়ের ঘুম থেকে জাগায় অপেক্ষা করতে লাগলো।

কিছুক্ষণ ছাদে হাঁটাহাঁটির পর পিছনে কিচেনে গিয়ে সকালে নাস্তা বানাতে আরম্ভ করলো এটা তার প্রতিদিনের অভ্যাসে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়া তারপর ছাদে কিছুক্ষণ হাটা তারপর নাস্তা তৈরি করা। মাঝে মাঝে ছুটির দিনে সিয়ামো তার সাথে যোগ দিতো ভাবতেই চোখ থেকে দুই ফোটা জল গড়িয়ে পরল। যা সাথে সাথে মুছে ফেলল রুবিনা।

সকলেই ডাইনিং টেবিলে বসতেই হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো। রুবিনা দরজা খুলে দেখল সামিম ভাই আর সাদ এসেছে। তাদের দেখে রুবিনা একটা মিষ্টি হাসি দিল। সাদা পিমনি বলে লাফ দিয়ে রুবিনার কোলে ওঠার চেষ্টা করলো কিন্তু তার আগেই সামিম তাকে থামিয়ে দিল।

সামিমঃ সাদ বাবা এমন করে না তোমার পিমনি তো অসুস্থ। তোমার পিমনির পেটে একটা বাবু আছে। ছোট্ট বাবু তুমি লাফ দিলে তো বাবুটা কষ্ট পাবে তুমি কি চাও ছোট্ট প্রিন্সেস কষ্ট পায়।
সাদ মাথাটা দুই পাশে হেলে না বোঝাল আর উপরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল মানে সে কোলে উঠতে চায়।

রুবিনা হাত বাড়িয়ে সাদ কে কোলে নিল আর ডাইনিংয়ে বসিয়ে দিল সাথে সাদকে নিজ হাতে খাবার খাইয়ে দিল।
অল্প সময়ের মধ্যেই রুবিনা আর সাদের মধ্যে ভালো বন্ডিং হয়ে গেল। মাঝে মাঝে ছেলেটাকে দেখলে খুব মায়া হয়

রুবিনার। মা কি জিনিস তা হয়তো কখনোই বুঝবে না সে বাবা তো বাবাই হয় মা তো হতে পারেনা সে যতই ভালোবাসুক

মা এর ভালোবাসাটাই আলাদা। যেমন মায়ের ভালোবাসা বাবা দিতে পারে না ঠিক বাবার ভালোবাসাও মা দিতে পারে না। কথাটা ভাবতেই রুবিনার বুকে ছ্যাঁত করে উঠলো। তার সন্তান ও তো বাবার আদরের থেকে বঞ্চিত থাকবে।

খাবার পরে রুবিনা সবার উদ্দেশ্যে বলল।
রুবিনাঃ আমার তোমাদের সাথে কিছু কথা আছে।

সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে ভোরের দিকে চোখ লেগে গেছিল সিয়ামের হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজে ঘুম ভাঙলো তার। মাথাটা ভার হয়ে আছে।
কোনরকম উঠে দাঁড়িয়ে সে রুবিনাকে ডাকতে লাগলো দরজা খোলার জন্য তারপর হঠাৎ এই আস্তে আস্তে গত দুই দিনের কথাগুলো মনে পরল তার। তারপর সে নিজে অগ্রসর হলো দরজা খুলতে। দরজা খুলেই দেখে মারিয়া বেশ পরিপাটি হয়ে বিরক্তিকর মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।

মারিয়াঃ প্রায় বিশ মিনিট যাবত বেল বাজাচ্ছি। কি করছিলে তুমি? শব্দ শুনতে পাওনি? দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যথা করছে। দেখি সর সামনে থেকে আমাকে ভিতরে যেতে দাও।

মারিয়া ঘরে গিয়ে দেখলো রুমের প্রায় নাজেহাল অবস্থা সারা ঘরে কাপড়চোপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সিগারেটের খোসা ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে মারিয়া তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে আসে বলল।

মারিয়াঃ ছিঃ তোমার রুমের এ অবস্থা কেন? তুমি এত নোংরা? আমার সাথে থাকতে হলে সব সময় ঘর গুছিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ নিজে করবে আর তুমি কি ভুলে গেছো আজকে আমারা লয়ারের কাছে যাবো দশটার এপোয়েন্টমেন্ট। অলরেডি সাড়ে নয়টা বাজে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো। যাও।
সিয়াম বিনাবাক্যে কাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল একদম শাওয়ার নিয়ে বের হবে সারা শরীর থেকে সিগারেটের বাজে গন্ধ আসছে এভাবে বেরোনো যায় না।

সিয়াম কে শাওয়ার থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে মারিয়া সামনের দিকে আগায় আর সিয়ামের ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। অন্য সময় হলে সে নিজেও তাল মিলাতো কিন্তু এখন কেন যেন এগুলো বিষের মত লাগে তাই সে মারিয়াকে সরিয়ে দেয়।
তারপর তারা রওনা দেয় লয়ারের কাছে যাবার উদ্দেশ্যে….


পর্ব ৭

সিয়াম ল’য়ারের কেবিনে বসে আছে। সিয়াম রুবিনা এবং তার ব্যাপারে বিস্তারিত সব খুলে বলে। লয়ার কাগজপত্র তৈরি ও সকল ফর্মালিটি পূরণ করতে দুই মাস সময় চায়। তারপর তারা কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে নেয়।

একটা শপিং মলে গিয়ে কিছু কেনাকাটার পর তারা যার যার বাড়ির দিকে রওনা দিল।

বসার ঘরে পিনপতন নীরবতা। সবাই রুবিনার বিষয়টা ভাবছে। রুবিনার কথা মতে সে মাস্টার্স টা দেশের বাইরে করতেছে করতে চায় এতে শহর থেকে দূরেও থাকা হবে আবার দেশে এসে ভালো পজিশনে কাজ করতে পারবে। কিন্তু তার বাবা-মা তার সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ তারা রুবিনার এই অবস্থায় রুবিনাকে দেশের বাইরে যাওয়ার রুবিনামতি দিতে চাচ্ছে না রুবিনা একা হলেও কথা ছিল তাছাড়া প্রেগনেন্সির সময় বিভিন্ন সমস্যা হয় যা রুবিনার পড়ালেখাও ইফেক্ট করবে। আর এমনিতেও রুবিনাকে তারা একা ছাড়তে চাচ্ছেনা।

কিন্তু রুবিনার কথাতেও যুক্তি আছে তার কথাগুলো একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো না। আর সামিম ও রুবিনার কথায় সায় দিয়েছে তার মতে রুবিনার সিদ্ধান্ত সঠিক। তাই রুবিনার বাবা-মা বাচ্চাটার কথা বলায় সাদা তাদের বুঝিয়ে বলে।

সামিমঃ দেখো মামা মামি আমি তোমাদের চিন্তাটা বুঝতে পারছি কিন্তু তোমরা রুবিনার বাচ্চাটাকে তার দুর্বলতা কেন ভাবছো বাচ্চাটাই হবে তার আসল শক্তি আর বাইরে যাবার পর রুবিনার কথা তোমাদের ভাবতে হবেনা সব আমার উপর ছেড়ে দাও। রুবিনার দেখাশোনার দায়িত্ব আমি নিলাম।

আমি আজই কিছু ভার্সিটিতে এপ্লাই করব বাকি সব চিন্তা আমার। তোমরা শুধু রুবিনাকে সাপোর্ট করবে।
অনেক চেষ্টার পর রুবিনার বাবা মাকে রাজি করাতে পেরেছে সামিম। অন্যদিকে রুবিনার টেনশন হচ্ছে সাদত ভাই কি তার বাবা মাকে রাজি করাতে পারবে? অনেকক্ষণ যাবৎ সাদ তার সাথে খেলছে আর নানান ধরনের প্রশ্ন করছে বেবি ব্যাপারে। রুবিনা তা হাসিমুখে উত্তর দিচ্ছে।

সামিম দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রুবিনা আর সাদের দিকে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে ভাবছে কি করে সিয়াম রুবিনার মত মায়াবতী কে ছেড়ে অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারল কই সে তো পারলো না তার প্রিয়তমার জায়গা অন্য কাউকে দিতে। হয়তো সিয়ামের ভালোবাসাটা সত্য ছিল না তাইতো সে রুবিনাকে ছেড়ে দিল। কিন্তু রুবিনার ভালোবাসাটা সত্যি ছিল তাই শত কষ্টের পরেও ভালোবাসা মানুষের ক্ষতি করতে দিল না।
রুবিনার কথায় ধ্যান ভাঙলো সামিমের।

রুবিনাঃ কি হলো সামিম ভাই কি বলল বাবা মা তারা কি মেনে নিয়েছে। আমাকে যেতে দেবে তো?
সামিম ভাবল একটু মজা নেওয়া যাক তাই সে মন খারাপ করে বলল।

সামিমঃ নারে রুবিনা অনেক চেষ্টা করলাম তাদের বোঝানোর কিন্তু তারা বুঝলো না। তারা তোকে কিছুতেই একা ছাড়তে চাচ্ছেনা। কিন্তু রুবিনামতি দিয়েই দিল।

রুবিনা প্রথমে কথাটা ধরতে না পারলে না পেরে মন খারাপ করলো যখন বুঝতে পারল সে তাড়াতাড়ি সামিমের দিকে তাকাল সামিম মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝলাম রুবিনার খুশিতে চোখে জল এসে গেল আর সামিমকে মারতে থাকলো তার সাথে মজা করার শাস্তি।
সামিম রুবিনার হাত ধরে তাকে থামাল।

সামিমঃদেখ রুবিনা মামা মামিকে খুব কষ্টে আমি বুঝিয়েছি শুধুমাত্র তোর জন্য। আমি তোর ভালো থাকার সুস্থ থাকার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েছি। তাই তোকেও কথা দিতে হবে আমাকে যথাযথ সাপোর্ট দিবি।

কোন কিছুতে হেঁয়ালি চলবে না খাওয়া-দাওয়া করবি রেস্ট করবি আর তোকে কিছু বই দিচ্ছি সেগুলো এখন থেকে পড়া শুরু করে দিবি কারণ এপ্লাই এর পরে তোকে এক্সাম দিতে হবে এক্সাম এ ভালো রেজাল্ট করলে তবেই চান্স পাবি। আর আমাকে আরো কথা দিতে হবে সব সময় তুই এখন যেমন আছিস তেমন থাকবি। আমার সব শর্তে রাজি তো?

রুবিনাঃ উফফফ…এত বড় লেকচার ওকে ওকে আমার বাপ তোর সব কথা মেনে চলবো সব সময় হাসি খুশি থাকব ঠিকমতো খাব রেস্ট করবো আর পড়ালেখা করবো এবার খুশি তো।
সামিম মুচকি হেসে হু। চল তোর বই নিয়ে আসি আর ডাক্তারের কাছেও যেতে হবে তাইনা। আর সব থেকে বড় দায়িত্ব আমি তোকে দিলাম আমার প্রিন্সেসের খেয়াল রাখা। আমার প্রিন্সেসের সেবাযত্নে যদি কোন ত্রুটি হয় তবে গিয়ে তোর কান ধরে দেশে নিয়ে আসবো।

রুবিনাঃ তোকে কে বলেছে প্রিন্সেস হবে। আমার তো একটা প্রিন্স চাই ঠিক শফি.. আর কিছু বলল না বলল না রুবিনা। অন্য দিকে ঘুরে গেল।

সামিম কথা ঘুরানোর জন্য বলল চল চল জলদি জলদি রেডি হ তোদের তো আবার আটা ময়দা মাখতে সব সময় চলে যায়।

প্রতিউত্তরে রুবিনা কিছু বলল না। 10 মিনিটের মধ্যে রুবিনা আর সামিম বেরিয়ে গেল বই কেনার উদ্দেশ্যে তারপর সেখান থেকে হসপিটাল যাবে।

মারিয়াকে কিছুদূর এগিয়ে দিয়ে সিয়াম যেই রাস্তা পার হতে যাবে অমনি কিছুদূর হসপিটালে গেটের সামনে তাকিয়ে সে থমকে গেল। রুবিনা একটা ছেলের সাথে বেশ হাসাহাসি করে হসপিটাল গেট থেকে বের হচ্ছে।

ছেলেটাকে চিনতেও বেশি সময় লাগলোনা সিয়ামের ছেলেটা সামিম। রুবিনার মামাতো ভাই। রুবিনা আর সে খুব বেশি ফ্রেন্ডলি তাই সিয়াম সামিম কে পছন্দ করত না। আর রুবিনাকেও নিষেধ করে দিয়েছিল সামিমের সাথে যোগাযোগ রাখতে। রুবিনা একবাক্যে মেনে নিয়েছিল।

তাহলে হঠাৎ কেন সে সামিমের সাথে হসপিটালে এল কোন সমস্যা হয়নি তো রুবিনার।
সে এগিয়ে গেল রুবিনার দিকে কিন্তু তাদের কাছে পৌঁছার আগেই তারা একটি রিকশা নিয়ে চলে গেল।

সিয়াম কয়েকবার রুবিনার নাম ধরে পেছন থেকে ডাকলো কিন্তু সে শুনতে পেল না দেখতে দেখতেই সিয়ামের দৃষ্টি থেকে চলে গেল তারা।

বাইরে বের হওয়ার পর থেকেই রুবিনা কিছুটা মনমরা হয়ে ছিলো। তাই সামিম তাকে নানা কথা বলে হাসানোর চেষ্টা করছিল। বিভিন্ন ধরনের কৌতুক বলছিল হাসির ঘটনা বলছিল আর সেগুলো শুনেই রুবিনা খিলখিল করে হাসছিল। সামিম এর সাথে থাকলে কিছু সময়ের জন্য হলেও সে সিয়ামের দেয়া কষ্টের কথা ভুলে যায় রুবিনা।

কিন্তু সে জানে এই হাসিমুখে পেছনে রয়েছে আরেকটা মুখ যেখানে রয়েছে ভালবাসার মানুষটাকে কাছে না পাওয়ার বেদনা। যে মানুষটার দুনিয়াতে কোন অস্তিত্ব তাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসা। কিছু ভালোবাসা মনে হয় এমনই হয় মানুষের অস্তিত্ব না থাকলেও তার স্মৃতি নিয়ে সারা জীবন বেঁচে থাকা যায়।

ডাক্তারের সাথে দেখা করার পর ডাক্তার তাকে নানা ধরনের উপদেশ দেয় এবং বেশি বেশি ফলমূল ও সবজি খেতে বলে। আর কোন ধরনের দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করে। এতে বেবির সমস্যা হতে পারে। আর কিছু মেডিসিন দিয়ে দেয় নিয়মিত খাবারের জন্য আর প্রতি মাসে কমপক্ষে একবার করে চেকআপের জন্য পরামর্শ দেয়।

হসপিটাল থেকে বের হবার পর রুবিনার বারবার মনে হচ্ছিল সিয়াম হয়তো আশেপাশেই আছে। সে তার অস্তিত্ব বুঝতে পারে কিন্তু কথাটা সামিম ভাইকে বলার সাথে সাথেই সে তা তার ভুল ধারণা বলে চালিয়ে দেয়। তারপর একটা রিকশায় ডাক দিয়ে তাতে উঠে পড়ে। রিকশায় ওঠার পরেও রুবিনার মনে হচ্ছিল সিয়াম দূর থেকে তার নাম ধরে ডাকছে।

পরক্ষনেই আবার ভাবল সিয়াম এখানে কোত্থেকে আসবে তাও আবার এই সময়। এ সময় তো সে অফিসে থাকে তাই সে মনের ভুল ভেবে আর তাকে নিয়ে মাথা ঘামানো না।

কিন্তু সে যদি একবার পেছন ফিরে দেখতো তাহলে বুঝতে পারতো কেউ একজন তার দিকে রাগ আর ভয় মিশ্রিত চোখে চোখে তাকিয়ে আছে।
রুবিনাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে সামিম সাদকে নিয়ে চলে গেল তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে বলে। মিসেস রাবেয়া অনেক করে লান্চ করে যেতে বলল সে অন্য একদিন বলে চলে গেল। তিনি আর কথা বাড়ালো না। রুবিনা ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণের জন্য শুয়ে পড়ল। আজ বেশ হাঁটাহাঁটি হয়েছে তার তাই ক্লান্ত সে।

সিয়াম বাড়িতে পৌঁছানোর পর আর স্থির থাকতে পারছেনা। তার মাথায় বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। রুবিনা কি অসুস্থ? কি হয়েছে তার ? সে হসপিটালে কেন গেল? আর কেনইবা সামিম এর সাথে এত হাসিখুশি ভাবে কথা বলছিল।

রুবিনাকে সে যতটুকু চিনে রুবিনা খুবই খুবই ইমোশনাল মেয়ে কোন কিছু মনে আঘাত করলে তা সহজে ভুলে না। তাহলে কি রুবিনা সিয়ামের দেওয়া আঘাত গুলো ভুলে গেছে? সব ভুলে গিয়ে কি সে সামিমের সাথে নতুনভাবে শুরু করতে চায়?

কথাগুলো মনে হতেই সে আরও অস্থির হয়ে গেল। সে সারা ঘরময় পায়চারী করতে লাগলো। রুবিনার উপরে তাহলে অন্য কেউ অধিকার খাটাবে। রুবিনা অন্য কারো সংসার করবে। সিয়ামের মত করে কি রুবিনা অন্য কারো কেয়ার নেবে। অন্য কেউ রুবিনাকে খাইয়ে দিবে? না আর ভাবতে পারছে না সে। মাথার ভেতরে সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। মাথার রগ গুলো যেন ছিড়ে যাচ্ছে।

থাক না ভালো রুবিনা অন্য কারো সাথে। এটাই তো সে চায়। সেও তো মারিয়ার সাথে ভালো আছে তাহলে রুবিনা কেন ভালো থাকবে না। তারওতো ভালো থাকার অধিকার আছে। আর শফিন নিজেই তো তাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তাহলে এখন কেন রুবিনার জন্য তার মনে পুড়ে।

কথাগুলো মুখে বললেও মন মানতে নারাজ। মন বলছে রুবিনা শুধুই তার। রুবিনার উপর অধিকার শুধুমাত্র সিয়ামের আছে। রুবিনাকে শুধু সিয়াম ছুতে পারবে। আনু শুধু সিয়ামকে ভালবাসবে অন্য কাউকে না।

এবার সিয়াম ভাবছে সত্যিই কি সে মারিয়াকে ভালোবাসে নাকি শুধুই মোহ মারিয়ার সাথে কেউ হেসে হেসে কথা বললে তো তার রাগ হয় না। মারিয়াকে অসুস্থ দেখলে তো তার চিন্তা হয় না। মারিয়ার আনন্দে তো সে আনন্দিত হয় না। সে শুধু খুশি হওয়ার চেষ্টা করে।

সিয়াম ফোন বের করে গ্যালারি ওপেন করল। এখানেই বন্ধি হয়ে আছে তার আর রুবিনার হাজারো স্মৃতি। হাতে হাত ধরে হাঁটা রিকশায় চড়া রুবিনার ফুচকা খাওয়ার ভঙ্গি নদীর পাড়ে কাঁধে মাথা রেখে বসে থাকা আরো নানা স্মৃতি আছে তাদের। এক সময় এইসব জিনিস গুলো উপভোগ করত সে।

রুবিনার চাওয়াগুলো বরাবরই খুব সাধারণ ছিল। নদীর পাড়ে হাটতে যাওয়া। ফুচকা খাওয়া। একসাথে বসে মুভি দেখা। মাঝে মাঝে রুবিনাকে খাইয়ে দিতো সিয়াম। পাগলিটা যে তার হাতে খেতে খুব পছন্দ করে। খুশি করার জন্য একটা জবাই যথেষ্ট ছিল। অন্যদের মতো গোলাপ নয় জবা তার প্রিয় ফুল ছিল। আর তার রাগ ভাঙ্গানোর জন্য একটা আইসক্রিম।

ইঁদুর খুব ভয় পেত সে। ইঁদুর দেখলেই চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুলে নিত। তাই মাঝে মাঝে সে ইঁদুরের ভয় দেখিয়ে রুবিনাকে দিয়ে তার বাড়তি কাজ আদায় করে নিত। কথাগুলো ভেবে সিয়াম হেসে উঠলো।

সিয়ামের মনে হচ্ছে কত যুগ পার হয়ে গেছে সে রুবিনাকে দেখেনা। এরই মধ্যে মারিয়ার ফোন আসে।
সিয়ামঃ হ্যালো মারিয়া বল।

মারিয়াঃকি করছ তুমি? আর তোমার গলার আওয়াজ এমন লাগছে কেন?
সিয়ামঃ ও কিছু না এমনি। বেশিক্ষণ শাওয়ারে ছিলাম তো তাই গলাটা একটু বসে গেছে। তুমি বলো তোমার কি খবর কি জন্য ফোন দিয়েছো।

মারিয়াঃওহ আসল কথা তো বলতে ভুলেই গেলাম। আগামী সপ্তাহে আমার এক ফ্রেন্ডের বার্থ ডে। সেখানে আমার কিছু ফ্যামিলি ফ্রেন্ডরাও থাকবে। আমি তোমার কথা ওদের বলেছি। তাই তুমিও ইনভাইটেড। আমি চাচ্ছি তোমাকে সবার সাথে ইন্ট্রোডিউস করাতে। আর সেখানে আমার আমাদের এংগেজমেন্টের কথা বলবো বাবা মায়ের সাথে।
সিয়ামঃ ওহ। আচ্ছা ঠিক আছে। সময় আর প্লেস বলে দিও তাহলেই হবে।

মারিয়াঃ ‘ওহ’ মানে কি সিয়াম? তুমি এক্সাইটেড না? আমি তোমাকে আমার ফ্যামিলির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাচ্ছি। এনগেজমেন্ট এর কথা বলতে যাচ্ছি আর তোমার মধ্যে সামান্যতম এক্সাইটমেন্ট নেই। তো শুধু ‘ওহ’ বলছো? লাইফ সিরিয়াসলি শফিন। তুমি জানো আমি কতটা এক্সাইটেড?

সিয়াম সত্যি করে বলোতো তুমি কি আমার নিয়ে সিরিয়াস তো? নাকি বউ যাওয়ার শোকে পাগল হয়ে গেছো?
শফিন: আরে না কি বলছ এইসব তুমি? আমি আসলে একটু নার্ভাস তো তাই এমন করে বললাম। তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো। আচ্ছা বল তোমার কি গিফট চাই পার্টির জন্য?

সিয়াম জানে কিভাবে মারিয়াকে শান্ত করতে হয়। গিফটের কথা শুনে মারিয়া শান্ত হলো। তারপর তারা বার্থডে পার্টির প্ল্যানিং নিয়ে কিছু কথাবার্তা বলল। কথা শেষে সিয়াম বলল।
মারিয়া চলনা তাড়াতাড়ি বিয়েটা করে ফেলি।

মারিয়াঃ কেন আমার বাবুটার বুঝি কষ্ট হচ্ছে আমাকে ছাড়া থাকতে? তুমি বললে আমি এখনই তোমার বাসায় চলে আসব।

সিয়ামঃ না বিয়ের পরে তোমাকে একদম বৈধভাবে নিজের করে পেতে চাই। অবৈধভাবে আর না। বিয়ের পর একেবারে বেঁধে ফেলবো আর বাবার বাড়ি যাওয়া চলবে না। শফিউলের কথা শুনে মারিয়া লজ্জা পেয়ে ফোন রেখে দিল।
এভাবেই চলছিল সিয়াম আর রুবিনার দিনগুলো।

সিয়ামের দিন যায় অফিস আর মারিয়াকে নিয়ে আর রাত গুলো নির্ঘুম রুবিনার ভাবনা নিয়ে।
অন্যদিকে রুবিনার দিনগুলো যাচ্ছে তার পরিবার পড়ালেখা আর তার ভেতরে থাকা ছোট্ট প্রাণটা কে নিয়ে।


পর্ব ৮

রুবিনাদের বাসা থেকে বেরিয়ে সেদিন সন্ধ্যায় কানাডার বিভিন্ন ভার্সিটিতে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করে সামিম। কারণ কানাডাতে সামিমের বড় চাচা ফুল ফ্যামিলি নিয়ে থাকেন। সেখানেই বিজনেস তার। রুবিনা সেখানে গেলে সে নিশ্চিন্ত থাকতে পারবে।

কারণ তার বড় চাচা চাচী খুবই অমায়িক লোক। আমাদের একটা মেয়েও আছে আর তারা রুবিনা কেও নিজের মেয়ের মত দেখবে খেয়াল রাখবে এটা তার বিশ্বাস। তাছাড়া সে তাদের সাথে কথা বলেছেন এবং তারা তাকে আশ্বাস দিয়েছে রুবিনার সম্পূর্ণ খেয়াল রাখার। আর রুবিনার খোঁজখবরও তাদের কাছ থেকে সহজে পাওয়া যাবে।

দেখতে দেখতে রুবিনার এক্সাম এর রেজাল্ট দিয়ে দিল। বিবিএর রেজাল্টে পয়েন্ট ভালো থাকায় আর এক্সাম ভালো দেয়ায় সে তিনটি ভার্সিটিতে টিকল। এই কয়দিন রুবিনা দিনরাত এক করে শুধু পড়েছে। আর তার ফলও সে পেয়েছে। তার বাবা-মা এবং সামিম ভাই তাকে সাপোর্ট করেছেন। যেসব বিষয়গুলো জটিল ছিল তা নিমিষেই সাতদ ভাই সমাধান করে দিয়েছেন।

সামিম এর চাচ্চুর বাসা থেকে কিছুদূর যে ভার্সিটি আছে সেখানেই এডমিশন ফরম ফিলাপ করে মেইলের মাধ্যমে এবং তারা সকল আনুষ্ঠানিক নিয়ম-কানুন জানিয়ে দেয়। ভিসার ও অন্যান্য কাগজপত্র তৈরীর জন্য এক মাস থেকে ২মাস সময় লাগতে পারে বলে জানান হয়।

এরমধ্যে রুবিনা আর সামিম ব্যস্ত হয়ে যায় সকল কাগজপত্র পাসপোর্ট সহ সব কিছুর ব্যবস্থা করার জন্য।
এভাবেই রুবিনার দিনগুলো কাটেতে থাকে।

দেখতে দেখতে মারিয়ার ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টির দিন এসে পড়ে। সেদিনের রাগ ভাঙ্গানোর ভর্তুকি হিসেবে মারিয়াকে নীল রঙের দামি গাউন কিনে দিতে হয় যেটা সে আজ পড়বে। আর সিয়ামের ড্রেসকোড নীল স্যুট প্যান্ট ও ব্ল্যাক শু সেট করে দেয় মারিয়া।

সকাল থেকেই ফোনে সিয়ামকে এটা সেটা বলে যাচ্ছে মারিয়া কিন্তু সিয়াম তা কানে নিচ্ছে না সেটা সে বেশ ভালই বুঝতে পারছে শুধু হু হা আর না তে উত্তর দিচ্ছে সে। সে কয়েকদিন ধরে সিয়ামকে লক্ষ করছে আগের মতো সেই দুষ্ট প্রাণোচ্ছ্বল ছেলেটা আর নেই সে যাকে দেখে মারিয়া প্রেমে পড়েছিল। চেহারাও কেমন যেন মিলিয়ে গেছে চোখ দেখে মনে হয় কত রাত ঘুমায় না সে। কথাবার্তাও কম বলে। আগের মত ঘুরতে বের হয়না অফিস টাইম এরপর ডিনারে যায় না। কিছু বললেই বিয়ের কথা বলে। তাই মারিয়া ও কথা বাড়ায় না।

এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চায় না সে। আগে লাইফটাকে এনজয় করতে চায়। সে জানে বিয়ে করলেই বাঁধা পড়ে যাবে। মারিয়া ফোনটা রেখে এইসব ভাবতে থাকে।
মারিয়ার সাথে কথা বলে যেই সিয়াম ফোনটা রাখতে যাবে তখনই কলিং বেল বেজে উঠল। দরজা খুলে দেখল তার মা দাঁড়িয়ে আছে। এই কয়দিনে সে তার কথা ভুলেই গিয়েছিল। আনু থাকতে তার সাথে নিয়মিত কথা বলত। নিজের জন্য না হলেও রুবিনার জন্য।

মিসেস রাবেদা রুবিনা পছন্দ করেন না বিধায় রুবিনার সাথে ঠিক ভাবে কথা বলতেন না। তাই সিয়াম কে দিয়ে কথা বলাত। রুবিনার কথা রুবিনাযায়ী এখানে এক কাজে দুই কাজ হত। খোঁজ খবরও নেয়া হল আবার মা ছেলের সম্পর্ক ভালো হল। এ বিষয় টি মিসেস রাবেদা ঠিক বুঝতেন কিন্তু কখনো কিছু বলে নি। আচ্ছা মা রুবিনার কথা জিজ্ঞেস করলে তাকে কি জবাব দিবে। পরক্ষনেই ভাবল মা তো রুবিনা কে পছন্দ করেন না তাই বেশি সমস্যা হবে না। পরে না হয় একসময় মারিয়ার সাথে দেখা করিয়ে দেবে।

ছেলেকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তার দিকে একটানা তাকিয়ে থাকতে দেখে মিসেস রাবেদা ভ্রু কুচকালো।
রাবেদাঃ ঘরে ঢুকতে দিবি নাকি আবার চলে যাব? মায়ের কথায় সিয়ামের ধ্যান ভাঙল। সে দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালো।

ঘরে ঢুকার সাথে সাথে মিসেস রাবেদার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। একি হাল ঘরের? জিনিসপত্র এখানে-সেখানে ছড়ানো-ছিটানো সারা ঘরে সিগারেটের ছাই আর ময়লা পড়ে আছে। চিপসের প্যাকেট বিস্কিটের প্যাকেট বাসি খাবার দিয়ে ডাইনিং রুম ভরা। সেখানে মাছি ভনভন করছে। তারপর সে কোনরকম ব্যাগ রেখে সিয়ামের ঘরে গেল।

এখানেও একই অবস্থা কাপড়চোপড় সারা ঘর ছিটিয়ে রাখা সিগারেটের ছাই ফেলা মিজানুরারি আর কাবার্ডের জিনিসপত্র এলোমেলো হয়ে আছে। এবার সে সামনের দিকে তাকানো। সিয়াম মাথা নিচু করে দারিয়ে আছে।

রাবেদাঃ ঘরের এক কি অবস্থা সিয়াম? যেন কয়েক বছর ধরে ঘরটা খালি পড়ে আছে? তুই এইসব ছাইপাশ কবে থেকে খাওয়া শুরু করেছিস? আর রুবিনা কই তার মা কি সুস্থ হয়নি প্রায় 20 দিন যাবত তুই আমাকে ফোনও দিচ্ছিস না। ফোন দিলে ফোন ধরিস না কথা বলিস না কি হয়েছে তোর। আর চেহারার এই অবস্থা কেন?

মায়ের একের পর এক এ প্রশ্ন শুনে সিয়াম থতমত খেয়ে গেল।
সিয়ামঃ আসলে মা ব্যস্ত ছিলাম ফোন দিতে পারিনি। আর ফোনের দিকে তো খেয়াল করিনি কখন ফোন দিয়েছো। আর চেহারা তো ঠিকই আছে। আর ঘর গোছানোর কেউ ছিল না তো তাই এই অবস্থা তুমিতো জানাই আমি কতটা অগোছালো। হতাশ কার কন্ঠে উত্তর দিল সিয়াম।

রেহালা: সিয়াম কি হয়েছে তোর এমন করে কথা বলছিস কেন। রুবিনার সাথে কি কিছু হয়েছে? আর তুই যে কতটা অগোছালো তাতো আমি জানি তাই রুবিনাকে রেখে নিশ্চিন্তে গিয়েছিলাম কিন্তু একি হাল করে রেখেছিস তোর? আর রুবিনাই বা কোথায়? আমি কয়েকবার ওর নাম্বারে ফোন দিয়েছি তুই ফোন ধরছিলি না দেখে কিন্তু প্রত্যেকবার নাম্বার বন্ধ পেয়েছি।

সিয়ামঃ রুবিনা নেই মা চলে গেছে।
রেহালা: চলে গেছে মানে ঝগড়া হয়েছে তোদের? ঝগড়া করে চলে যাওয়ার মত মেয়ে তো রুবিনা না। আর ঝগড়া করলেই চলে যেতে হবে কেন। ঝগড়া তো সব স্বামী স্ত্রীর মধ্যে হয়। সত্যি করে বল বাবু রুবিনা কোথায় আর তুই কি বলেছিস রুবিনাকে যে মেয়েটা রাগ করে চলে গেল কদিন হয়েছে সে গেছে? সিয়াম ছোট্ট করে উত্তর দিল। প্রায় তিন সপ্তাহ।

কথাটা শুনে রেহালা আৎকে উঠলো। যে ছেলের রুবিনাকে ছাড়া একদিন থাকতে পারে না সে ছেলে আজকে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে একা থাকছে তাইতো চেহারার এই অবস্থা। রুবিনা মেয়েটার উপর রাগ হচ্ছে তার। সবকিছু জেনে বুঝে সে তার ছেলের সাথে এমন করতে পারল ? এবার আসলে বেশ করে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দেবে সে।

সাহেলা সামনাসামনি যতই কথা বলুক না কেন মনে মনে রুবিনা কে খুব ভালোবাসে সে জানে তার ছেলে এবং সংসারের জন্য রুবিনা ঠিক আছে কিন্তু আদর করলে যদি মাথায় উঠে যায় তাই সে সব সময় টাইট দিয়ে রাখে। কথায় আছেনা শক্তের ভক্ত নরমের যম। কিন্তু এবারের রুবিনার টা কাজটা শাহেলার পছন্দ হয়নি যত রাগ থাকুক না কেন তার ছেলেকে একা রেখে চলে যাবে এটা কেমন কথা।

শাহেলা: ফোন দে ওকে আমি কথা বলব ওর সাথে আর বল রেডি হয়ে থাকতে কালকে আমি আনতে যাচ্ছি ওকে। তারপর দুজনের কথা শুনে বিচার করব।
ফোন নেই মা বাসায় রেখে গেছে। সে আর আসবেনা আমার কাছে আমি নিজে তাকে তাড়িয়ে দিয়েছি।
শাহেলা: তাড়িয়ে দিয়েছিস মানে?

সিয়ামঃ তাড়িয়ে দিয়েছি মানে তাড়িয়ে দিয়েছি ভালোবাসি না আমি ওকে। ওকে আর ভালো লাগেনা আমার আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি আর তাকে বিয়ে করতে চাই। তাই তাকে তাড়িয়ে দিয়েছি খুব জলদি আমাদের ডিভোর্স হয়ে যাবে। আর তুমি এত ব্যস্ত হচ্ছ কেন ওর জন্য। তুমি তো তাকে দু’চোখে দেখতে পারো না তোমার তো খুশি হওয়ার কথা। ঘর থেকে একটা আপদ বিদায় হয়েছে। ঘরে আর কোন অশান্তি হবে না। তুমি তো এটাই চাইছিলে।

শাহেলা: শাহেলা এসব কথা শুনে অবাক এর চরম পর্যায়ে চলে গেল কি বলছে তার ছেলে সে রুবিনাকে ভালবাসে না। কথাটা বলার সময় ও তো তাই চোখ টলমল করছিল তার জন্য ভালোবাসা দেখতে পারছিল সে শুধু মুখ দিয়ে অস্বীকার করছে।
আমাকে সব খুলে বল সিয়াম কি হয়েছিল? কেন এসব কথা বলছিস বাবু? তারপর সিয়াম শুরু থেকে সব খুলে বলে শুধু মারিয়াকে তার সাথে দেখে ফেলায় কথাটা কৌশলে এড়িয়ে যায়।

ছেলের মুখে এসব কথা শুনে শাহেলা নিজেকে ঠিক রাখতে পারলোনা সে কষে একটা চড় লাগিয়ে দিল সিয়ামের গালে।

শাহেলা: তুই আমার ছেলে ভাবতেও গা ঘিন ঘিন করছে আমার। ছি ছি আমি এমন ছেলে জন্ম দিয়েছি যে কিনা একটা মেয়ের জীবন নিয়ে খেলা করছে। না আর এক মুহূর্ত না এখানে। এখনি চলে যাব শুধু যাওয়ার আগে একটা কথা বলবো খুব বড় ভুল করছিস তুই। একদিন পস্তাবি খুব করে পস্তাবি মুখে ভালোবাসি না বললেও আমি স্পষ্ট তোর চোখে ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছি তুই এই মুহূর্তে অন্ধ হয়ে গেছিস।

কোনটা ভালোবাসা আর কোনটা মোহ তুই চিনতে পারছিস না। মোহকে ভালোবাসা ভেবে আঁকড়ে ধরতে চাচ্ছিস আর ভালোবাসা কে দূরে ঠেলে দিচ্ছিস। চিন্তা করিস না তোর পস্তানোর দিন বেশি দূরে নেই। যখন সব মোহ কেটে যাবে। কাউকে পাবি না বেঁচে থাকার জন্য ভালোবাসার জন্য। সেদিন আমি তোকে ফিরিয়ে দেবো না বেশি কষ্ট হলে আমার কাছে চলে আসবি। আসি।

সিয়ামঃ মা তুমি এই প্রথম আমার গায়ে হাত তুললে। হয়তো তোমার কথাগুলো ঠিক। আমি একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করেছি। কিন্তু আমি সত্যিই মারিয়াকে ভালোবাসি রুবিনাকে না। ভালোবাসাহীন সম্পর্কে শুধু শুধু নিজেকে আটকে রাখার কোনো মানেই হয় না তাই তাকে মুক্ত করতে চাইছি। আর তুমি কোথাও যাবে না আমি একা থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছি। আর না। তুমি একবার মারিয়ার সাথে কথা বল তুমি দেখো ও একদম আমার জন্য পারফেক্ট রুবিনা না। তুমি একবার কথা বললেই বুঝতে পারবে প্লিজ মা।

ছেলের এমন অবস্থা দেখে সোহেল আর কিছু বলবো না শুধু মনে মনে আফসোস করতে লাগলো তার ছেলের পরিণতির কথা ভেবে। তারপর কোন কথা না শুনেই বাসা ত্যাগ করল। সে জানে তার ছেলে তার ভুল বুঝতে পেরে খুব জলদি আসবে তার কাছে আনুকে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু তখন হয়তো খুব দেরি হয়ে যাবে সে রুবিনাকে হারে হারে চেনে। এতকিছুর পর রুবিনা তার কাছে কখনোই ফিরবেনা।

ঘন্টাখানেক পর আবার কলিংবেল বেজে উঠল। সিয়াম দরজা খুলে দেখে মারিয়া একটা মোটামুটি বয়সের মহিলা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারা ভিতরে ঢুকলো। আর মহিলাটিকে মারিয়া ঘর পরিষ্কারের কাজে লাগিয়ে দিল। সিয়াম দেখল মারিয়া তার দেওয়া গাউনটা পড়েছে মুখে ভারী মেকআপ আর চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। করা পারফিউমের স্মেল আসছে শরীর থেকে।

নিজের বিষন্ন মনকে শান্ত করার জন্য সে তাকে জড়িয়ে ধরতে গেল কিন্তু তার আগেই মারিয়া তাকে সরিয়ে দিল। সে পরিপাটি হয়ে এসেছে এখন সিয়ামের সাথে জরাজরি করলে সব নষ্ট হয়ে যাবে। এত কষ্ট করে মেকওভার করেছে ফ্রেন্ডদের কাছ থেকে প্রশংসা না শুনেই তা নষ্ট করতে চায় না সে।

তাই তাকে ঠেলে ওয়াশরুমে পাঠালো গোসলের জন্য তারপর সিয়ামের জন্য আনা কাপড় গুলো বের করে রাখলো। 10 মিনিটের মাথায় সিয়াম গোসল করে শুধুমাত্র একটা টাওয়াল পরে বের হলো।

চুল থেকে পানি পড়ছে ফর্সা গায়ে বিন্দু বিন্দু পানি গুলো মুক্তার মত ছড়িয়ে আছে। মারিয়ার ইচ্ছে করছে সিয়ামকে খেয়ে ফেলতে। ছেলেটা এত সুন্দর কেন চোখ দুটো দেখলে ডুব দিতে ইচ্ছে করে আর ঠোট টা তো একদম মেয়েদের মত। মেকআপ নষ্ট হওয়ার ভয়ে আর কিছু করল না শুধু হালকাভাবে সিয়ামের ঠোটে ঠোট লাগালো। তারপর তাকে রেডি হতে পাঠিয়ে দিল।

সিয়াম রেডি হয়ে বের হল তারপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুল ঠিক করতে লাগলো। মারিয়ার তো বেহুস হবার দশা। সিয়ামকে নীল স্যুটে অসম্ভব সুন্দর লাগছিল। সিম্মি মনে মনে ভাবল নীল রুবিনার পছন্দের রং ছিল যখনই সিয়ামের জন্য কাপড় কিনত তার নীল রংয়ের কিছু না কিছু থাকতোই। সিয়ামের ফর্সা গায়ে নীল রংটা মানাতো বেশ।

রাত নয়টার সময় তারা বের হল পার্টির উদ্দেশ্যে। প্রায় সাড়ে নটার দিকে তারা হল রুমে পৌঁছালো। হলরুমে পৌছেই এরা দৌড়ে গিয়ে একটা ছেলেকে টাইট ভাবে হাগ করল ছেলেটাও তাকে বিশ্রী ভাবে জড়িয়ে ধরল। যেটা সিয়ামের মোটেও ভালো লাগলো না।

মারিয়ার ডাকে সিয়াম সেদিকে এগিয়ে গেল। সে তাকে পরিচয় করিয়ে দিল অন্য পাশে থাকা ব্যক্তিটিকে ব্যক্তির সাথে।
মারিয়াঃ সিয়াম মীট মাই ফ্রেন্ড আয়াজ। এন্ড আয়াজ(সিয়ামের হাতে হাত রেখে। আয়াজের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে) হি ইজ মাই ফিয়ান্সে সিয়াম। Isn’t he so handsome and good looking.

আয়াজ বাঁকা হেসে সিয়ামের সাথে হাত মিলালো তারপর মারিয়াকে বলল।
আয়াজ: ইয়াহ তোমাদের দেখে যে কেউ বলবে মেড ফর ইচ আদার। হি ইজ এ চার্মিং গাই এন্ড ডিভোর্সি অলসো। সরি টু সে বাট সত্যিটাই বললাম।

আয়াজের কথা শুনে মারিয়ার মুখের হাসি মিলিয়ে গেল আর সিয়াম চরম অপমানিত বোধ করলো। সে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে “তোমরা কথা বলো আমি আসছি” বলে চলে গেল বার সাইডে।

এ কথাটা কি ওর সামনে বলা খুব প্রয়োজন ছিল আয়াজ আমি তো জেনে শুনেই ওর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছি তাহলে কেন অপমান করলি। তুই জানিস ও কতটা হাট হয়েছে?

আয়াজ বাঁকা হেসে মারিয়াকে বলল কুল বেবি কুল যা সত্যি তাই বলছিলাম সে কষ্ট পাবে জানলে বলতাম না কিন্তু একটা কথা ভেবে দেখ ওর আগে বিয়েটাও ছিল প্রেমের বিয়ে সেখানে দুই বছর রিলেশন এর পর বিয়ে করল আর বিয়ের দুই বছর এই ভালবাসার সব শেষ হয়ে গেল। আর তোদের রিলেশনে বয়স মাত্র দুমাস তোকে যে সে দুই মাস ইউজ করে তার প্রথম স্ত্রীর মতো ফেলে দেবে না তার কি ভরসা আছে? বলেই সে চলে গেল অন্যদিকে তার কাজ যতটুকু ছিল সে করে ফেলেছে বাকিটা মারিয়া নিজেই করবে।

আয়তের কথাগুলো শুনে মারিয়া ভাবনায় পড়ে গেল আয়াজের কথাগুলো ফেলে দেওয়ার মতন নয় যেখানে দুই বছরের ভালোবাসা টিকলো দুই বছর তাহলে তাদের দুই মাসে ভালোবাসা আর কদিনই বা টিকবে। সে রুবিনার গায়ে হাত তুলতে দুমিনিট ভাবলো না এমনকি ভরসা আছে কদিন পর তারা একই অবস্থা হবে না।

তার সিয়ামের সাথে কি আগানো উচিত? না কি সে বেশি ভাবছে। সিয়াম খুব ভালো ছেলে রুবিনা তার যোগ্য ছিল না তাই সে তাকে ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু মারিয়ার তো সব যোগ্যতা আছে তাহলে তাকে কেন ছাড়বে ভেবেই আয়াজের বলা কথাগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলল। তারপর সিয়ামের খোঁজে বেরিয়ে পড়ল…


পর্ব ৯

রুবিনার বাইরে যাওয়ার জন্য কাগজপত্র সম্পুর্ন রেডী শুধু ভিসা আসার অপেক্ষায় আছে। সেটাও 15-20 দিনের মধ্যে পৌঁছে যাবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তাই সে বাকি দিনগুলো তার বাবা মার সাথে কাটাচ্ছে। বাবার কাছে ছোট বাচ্চাদের মত চকলেটের আইসক্রিমের আবদার করে।

মায়ের কাছে বিভিন্ন রান্নার আবদার করে। যদিও কিছু ভাল মত খেতে পারেনা। খাওয়ার সাথে সাথে গড়গড় করে বমি করে দেয়। কিন্তু অন্যদের মত রুবিনার প্রেগনেন্সিতে অত সমস্যা হয়না শুধু মাঝেমাঝেই বমি হয়। তেল দিয়ে দেয়া ঘুমানোর সময় বিলি কেটে দেয়া তার নিত্যদিনের আবদার। প্রতিদিন সকাল-বিকাল বাবার সাথে হাঁটতে যায় আর নানান বিষয় নিয়ে গল্প করে। মাঝামাঝে সামিম ভাই সাদকে নিয়ে আসে। আড্ডা দেয় গল্প করে আর

বাচ্চাদের মত রুবিনাকে এটা-সেটা বুঝায়। রুবিনা ও অবুঝ বাচ্চার মত শুধু হুম হা করে মাথা নারে। আর তাদের এসব কান্ড দেখে রুবিনার বাবা মা মিটিমিটি হাসে।

রুবিনার মা মনে মনে ভাবে ইস যদি ছেলে মেয়ে দুটোকে একসাথে করে দেওয়া যেত সারা জীবনের জন্য তাহলে হয়তো তারা সবসময় এমন হাসিখুশি থাকতো। কিন্তু সে জানে রুবিনা কখনোই তার কথা শুনবে না কারণ ছোটবেলা থেকেই রুবিনা সামিমকে বেস্ট ফ্রেন্ড এর মতো ভাবে আর সামিম তো বিয়ে করবে না সে তার স্ত্রীকে এখনো ভালোবাসে ভাবতেই একটা চাপা নিশ্বাস ছাড়লো।

হঠাৎ তার হাতে ফোনটি কেঁপে উঠলো স্ক্রিনে নম্বর দেখে রাবেয়া অবাক হয়ে গেল এটা রুবিনার শাশুড়ির নম্বর মাঝেমাঝেই কথা হতো তাদের মহিলা বেশি কথা বলতে চাইতেন না কিন্তু তার কথা শুনে বোঝা যেত সে রুবিনার যথেষ্ট খেয়াল রাখে। তিনি অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর মিসেস রেহানা প্রায়ই তার খবর নিতেন।
ফোনটা বাজতে বাজতে বন্ধ হয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ড পর আবার ফোনটা বেজে উঠল সে কাঁপা কাঁপা হাতে রিসিভ করল ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে আসলো কিছু কথা।

রাবেদাঃ আসসালামুয়ালাইকুম আপা কেমন আছেন আপনার শরীরটা এখন কেমন? কথাগুলো বেশ মিনমিন করে বলল রাবেদা “কেমন আছেন” কথাটা জিজ্ঞেস করতেও কেমন যেন সংকোচ হচ্ছে তার। কিন্তু তার তোর রুবিনার সাথে কিছু কথা বলতে হবে। তার তো ফোন বন্ধ তাই তার মার কাছে ফোন করা। সে খবর পেয়েছে রুবিনা তার মায়ের কাছেই আছে।

রাবেয়া সালামের উত্তর নিল।
রাবেয়াঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম আপা। আপনার ছেলে আমাদের যেমন রেখেছেন ঠিক তার থেকেও ভালোই আছি। একটা মেয়ের এই অবস্থায় যখন তার স্বামী তাকে ছেড়ে দেয় তারপর তার বাবা-মা যতটুকু ভালো থাকার কথা তার থেকে অনেক ভালো আছি। আর কিছু শুনতে চান ? কি জন্য ফোন করেছেন কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন।

রাবেদাঃ এই অবস্থায় বলতে কি হয়েছে রুবিনার কি কোন সমস্যা।

আমাকে বলতে পারেন। আমি কালি ওদের ব্যাপারে জানলাম বিশ্বাস করুন আমি ওর সাথে যতই কঠোর হই না কেন আমি মন থেকে রুবিনাকে খুব ভালোবাসি আমি জানি ও কতটা লক্ষীমেয়ে। কিন্তু আমার ছেলে যে হীরাকে কাজ ভেবে ফেলে দিবে তা আমি জানতাম না। আমি নিজেও ওর বাসা থেকে চলে এসেছি আমার নিজেরই ঘৃণা হচ্ছে ওর উপর। আমি আমার ছেলের সাফাই গাইতে ফোন দেইনি আমি রুবিনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই। রুবিনাকে কি ফোনটা কিছুক্ষণের জন্য দেওয়া যাবে আমি কিছু কথা বলেই রেখে দেবো।

রাবেয়াঃ দেখুন আমার মেয়েটা সবেমাত্র এইসব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়েছে। নিজেকে তৈরি করার জন্য শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন আপনি যদি এই সময় কোন রকম কথা বলে পুরনো ঘা খুটিয়ে তোলেন তাহলে ও ভেঙে পড়বে। আমি চাইনা এমন কিছু হোক। তারপর রাবেয়া তাকে রুবিনার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে খুলে বলে। রাবেয়া কথাগুলো শুনে খুশি হয়।

রাবেদাঃ আপনি চিন্তা করবেন না আপা আমি এমন কিছুই বলবো না যা ওর ভবিষ্যতে নষ্ট করবে। আমি এমন কিছু কথা বলব যাতে সে আরো শক্ত হয়ে উঠতে পারে। আমি রুবিনার আরেকটা মা হয়ে তার সাথে কথা বলবো আর মায়েরা কখনোই সন্তানের খারাপ চাইবেনা। আপনি আমার কথা বিশ্বাস করতে পারেন।

রাবেদার কথাগুলো রাবেয়ার ভালো লাগলো তাই সে ডাইনিং রুমে গিয়ে রুবিনাকে ফোনটা দিয়ে বলল কথা বল।
রুবিনা জিজ্ঞেস করল’ কে মা। রাবেয়া কিছু বললেন না। সেরুম ত্যাগ করল। রুবিনা ফোন হাতে নিয়ে নিল।

রুবিনাঃ আসসালামুআলাইকুম কে বলছেন? রাবেদার খুব আফসোস হলো। রুবিনার মত একটি মিষ্টি মেয়ে তার দরকার ছিল। তার বড় ছেলের বউ ও ভালো কিন্তু একটু কথা বেশি বলে মেয়েটা তার তুলনায় রুবিনা বেশ শান্তশিষ্ট। কি মিষ্টিৎকরে কথা বলে মিষ্টি করে সালাম দেয়। আর মেয়েটার সাথে তার ছেলে এমন করল। সে নিজেও তো কম করেনি। যখন তখন মেয়েটাকে যাতা শুনিয়ে দিয়েছে।

রাবেদাঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। জিজ্ঞেস করব না কেমন আছিস শুধু এতোটুকুই বলব নিজেকে এমন ভাবে গড়ে তোল যেন কেউ তোর দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে কথা বলতে না পারে। সবার কথা উচিত জবাব দিতে শেখ। অন্যের উপর এতই নির্ভরশীল হোসনা যে নিজেকেই ভুলে যাস। সবাইকে বুঝিয়ে দে কে কার কতটা যোগ্য। আর সব সময় মনে রাখবি তোর এই মা সব সময় তোর পাশে আছে।

কথাগুলো বলতে বলতেই রাবেদার গলা ধরে এল। অন্যদিকে রুবিনা নিশব্দে চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছে যে মহিলা তার সাথে ভালোভাবে কথা বলতো না উঠতে-বসতে কথা শোনাতো। সে তাকে তার ছেলের বিরুদ্ধে সাপোর্ট করছে। রুবিনা সবসময় জানত তার শাশুড়ি মা সামনাসামনি যতই কঠোর হোক না কেন আড়ালে ঠিকই রুবিনাকে ভালবাসতো। প্রতি বেলায় খাবার খেতে বসে খোঁজ নেয়া রুবিনা খেয়েছে কিনা। বাইরে গেলে “সাবধানে থেকো” বলে যাওয়া।

রুবিনা অসুস্থ হলে কারণে-অকারণে রুমে যাওয়া। মাঝে মাঝে তাকে শাসন করা সব কিছুর মধ্যেই রুবিনা ভালোবাসা দেখতে পেত তাইতো সে কখনো তার শ্বাশুড়ীর সাথে উঁচু বাক্যে কথা বলেননি। শায়লা আবার বলতে শুরু করল
শাহেলা: রুবিনা মা আমার আমি তোর সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি।

অনেক কথা শুনেছি কিন্তু বিশ্বাস কর একটাও মন থেকে বলিনি। তুই আমার মেয়ের মত যেকোন সিদ্ধান্ত আমাকে তুই পাশে পাবি। আজ থেকে তুই আমার মেয়ে আর তোর দুই দুটো মা। আর জার দুটো মা আছে তার আবার কিসের চিন্তা। রুবিনা আমি জানি তুই কান্না করছিস। চুপ কর আর এক ফোটা জল যেন তোর চোখ থেকে না পড়ে। যারা তোর এই কষ্টের জন্য দায়ী তাদের উচিত শিক্ষা দিতে হবে তার জন্য তোকে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে। আর পারলে ওইসব আচরণের জন্য তোর এই মাকে ক্ষমা করে দিস।

এবার রুবিনা বলল। ছি ছি এসব কি বলছেন আমি কখনোই এগুলো মনে নেই আমি জানতাম আপনি আমাকে কতটুকু ভালোবাসেন। মেয়ে বলেছেন তাহলে আবার মেয়ের কাছে বারবার মাফ কেন চাইছেন। মায়েরা কি মেয়েদের শাসন করে না। মাফ চেয়ে আমাকে ছোট করবেন না মা দোয়া করবেন আমাদেরকে আমি আর আমার সন্তান যেন সবকিছু উপেক্ষা করে এগিয়ে চলতে পারি।

সন্তানের কথা শুনে রাবেদার মাথায় যেন বাজ পড়লো।
রাবেদাঃ সন্তান মানে কি রুবিনা ? রুবিনা তুই কি প্রেগনেন্ট? রুবিনা প্রশ্নের উত্তর দেয় না। রাবেদা বলল সিয়াম কি জানে এই খবর।

রুবিনাঃ না জানানোর জন্যই তো গিয়েছিলাম তার আগেই এসব হয়ে গেল।
রাবেদাঃ তোমার জানানো উচিত ছিল। তাহলে হয়তো সিয়ামের মনটা ঘুরে যেত হয়তো ওই মেয়েকে ছেড়ে যেত তোমাদের ভবিষ্যতের সন্তানের কথা ভেবে।

রুবিনা সামান্য হাসলো।
রুবিনাঃ না মা এমনটা হতো না যেখানেই আমার ভালবাসার অস্বীকৃতি জানিয়েছে সেখানে বাচ্চাটাকে মানতো না আর বাচ্চাটার কথা ভেবে সংসার করলেও সেখানে ভালোবাসা থাকতো না। সেটা হতো দয়ার সংসার। আর আমি এতই ফেলনা হয়ে যায়নি যে আমাকে ওর মত দুশ্চরিত্রের সাথে সংসার করতে হবে। আর আমি আমার সন্তানের জন্য চরিত্রহীন বাবা চাইনা।

রাবেদাঃ ঠিক বলেছ রুবিনা কিন্তু আমার মনে হয় সিয়ামকে তার বাবা হওয়ার কথাটা বলা উচিত তাও তো অধিকার আছে। বাকিটা তোমার যা ভালো মনে হয়। আমি সব সময় তোমার সাথে আছি। আমার সাথে যোগাযোগ রেখো মাঝেমাঝেই এই মা টার খবর নিউ। আর কোন ধরনের সমস্যা হলে আমাকে জানিয়ো। আজ তাহলে রাখি মাঝে মাঝে ফোন দিব।

শাশুড়ির সাথে কথা বলে রুবিনা বারান্দায় গেলো। রুবিনা জানত তার শাশুড়ি তাকে ভালোবাসে সে তার চোখে তার জন্য মায়া দেখেছে ভালোবাসা দেখেছে। এই মায়া ভালবাসা তো সে সিয়ামের চোখেও দেখে ছিল তাহলে সে কেন বলল তাকে ভালোবাসে না। তাহলে কি রুবিনা মানুষের চোখ পড়তে জানে না?

সিয়ামকে পাওয়া গেল বার সাইডে একটা লোকের সাথে কথা বলছে। কথা বলছো বললে ভুল হবে কোন রুবিনারোধ করছে লোকটা তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। মারিয়া তাদের সামনে গেল সে শুনতে পেল সিয়াম বলছে”প্লিজ ভাইয়া অন্তত তুই তো আমাকে বোঝো।

প্লিজ ভাই সবাই আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে আমি কিভাবে থাকবো”লোকটি বলছে তোকে আমার নিজের ভাই বলতেও ঘৃণা হচ্ছে তোকে আমি ভালো জানতাম। মনে মনে সবসময় তোকে নিয়ে আমি গর্ব করতাম তুই এমন একটা কাজ করতে পারলি আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি। “এ মাধ্যেই মারিয়া সেখানে উপস্থিত হল।

মারিয়াঃ সিয়াম কে লোকটা যার সাথে তুমি এভাবে কথা বলছ। আর উনি বা কেন তোমার সাথে এমন বিহেভ করছে?
সিয়ামঃ মারিয়া ভালোভাবে কথা বল। উনি আমার বড় ভাই জাহিদ।

মারিয়াকে দেখে জাহিদের মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠল তার সামনে একটি মেকাপের স্তুপ দাঁড়িয়ে আছে। এই মেয়েটির কারণে তার ভাই আজ বিপথে। এবার জাহিদ মারিয়াকে একবার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে নিল। মেয়েটিকে দেখেই একটা জঘন্য ফিলিংস আসে। জাহিদ সিয়ামর উদ্দেশ্যে বলল।

জাহিদঃহুহ এই তোর মারিয়া যার কথা এতক্ষণ বলছিলি। তুই একে রুবিনার সাথে তুলনা করছিস? শোন ভাই মানুষের চেহারা দেখলেই তার ক্যারেক্টার সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা করা যায়। আমার কাছে ভালো চোখের ডাক্তারের নম্বর আছে একবার ওনার সাথে কথা বলে নিস চোখটা ঠিকঠাক জায়গায় আছে কিনা।

পার্টিতে থাকার ইচ্ছাটাই মরে গেছে হুহ। বলেই জাহিদ হল রুম ত্যাগ করল সে তার বন্ধুর ছোট ভাইয়ের বার্থডের ইনভিটেশনে এসেছিল সেখানে তার শাহিনের সাথে দেখা। মা তাকে সিয়াম আর রুবিনার ব্যাপারে সব বলেছেন তিনি প্রচুর কান্নাকাটিও করেছেন। জাহিদ ও রুবিনাকে নিজের বোনের মত ভাবতো খুব মিষ্টি ছিল মেয়েটা কিন্তু তার ভাইয়ের যে কি হলো কে জানে। চকচক করলেই সোনা হয় না তা তার অজানা নয়।

আর এইদিকে মারিয়া ফুঁসছে সিয়ামের সামনেই তার ভাই তাকে অপমান করে গেল আর সে কিছু বলল না।
মারিয়াঃ তোমার সামনে দাঁড়িয়ে তোমার ভাই আমাকে এতগুলো কথা বলে গেল। যাতা কমেন্টস করে গেল আর তুমি কিছু বললে না।

সিয়ামঃ প্লিজ মারিয়া সে আমার বড় ভাই। তাকে আমি কি বলতে পারব? আর তাছাড়া ওরা রুবিনাকে খুব ভালোবাসতো তাই ওর সাপোর্ট করছে। তুমি চিন্তা করো না একবার আমাদের বিয়েটা হতে দাও তারপর দেখবে তোমাকে আপন করে নেবে। ভাইয়ার মনে অনেক ভালো। আর মাও তোমাকে মেনে নেবে মা এমনিতেও রুবিনাকে বেশি পছন্দ করতেন না। আর অপমানের কথা বলছো তো? তোমার ফ্রেন্ড ওতো তোমার সামনে আমাকে অপমান করল তুমিওতো একটা কিছু বললে না।

মারিয়াকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে। এসব কথা বাদ দাও প্লিজ রাগকরে থেকো না নিজেদের মধ্যে রাগ করলে বিষয়টি আরো জটিল হয়ে যাবে। তার থেকে ভালো সবার সাথে পরিচয় হওয়া যাক।
মারিয়াও সিয়ামের কথায় সায় দিল রাগ করে সে এই সুন্দর মুহূর্তটাকে নষ্ট করতে চায় না তাই সে সিয়ামকে তার বাবা-মায়ের কাছে পরিচয় করাতে নিয়ে গেল।

সিয়াম সবার সাথে হাসিখুশি ভাবে কথা বলল। মারিয়ার বাবা-মাও খুশি। মারিয়া তাদের একমাত্র মেয়ে সে যদি সিয়ামের সাথে ভালো থাকে তাহলে তাদের কোনো আপত্তি নেই। আর সিয়াম ছেলেটাও তাদের কাছে ভালো মনে হচ্ছে। তারা দু সপ্তাহ পর মারিয়া আর সিয়ামের এংগেজমেন্ট ঠিক করল আর কয়েক মাস পর বিয়ে। মারিয়া তার বাবা-মাকে সিয়ামের প্রথম বিয়ের কথা বলল না এড়িয়ে গেল। তারপর কিছু ফ্রেন্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।

বেশ হাসি আনন্দের মধ্যেই তাদের রাতটা কেটে গেল মারিয়া তার বাবা-মার সাথে চলে গেছে। সে আজকের রাতটা সিয়াম সাথে কাটাতে চাইছিল কিন্তু সিয়াম কৌশলে মানা করে দিয়েছে। সিয়াম রাত আরাইটায় এসে বাসায় ঢুকলো কোনরকম কাপড় চেঞ্জ করে শুয়ে পড়লো শরীর ক্লান্ত থাকায় সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়ল।

রুবিনা লাল পেড়ে সাদা শাড়ি পড়ে হাঁটছে। সাথে হাতে হাত রেখে হাঁটছে সিয়াম। পরনে তার সাদা পাঞ্জাবি। দুজনের মুখে হাসি। চারপাশে জবা ফুলের বাহার হঠাৎই কোত্থেকে যেন এক ঝাঁক প্রজাপতি সাথে কারো ডাক ভেসে উঠলো কেউ তাকে ডাকছে বাবা বাবা করে। পেছনে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে দৌড়ে তার কাছে আসছে।

সেই হাত বাড়ানোর আগেই রুবিনা তাকে কোলে নিয়ে পেছনে যেতে লাগলো সিয়াম ধরার জন্য হাত বাড়ালো তার পা নড়ছে না এক জায়গায় থেমে আছে রুবিনা পিছিয়ে যাচ্ছে একটা অন্ধকারের দিকে বহুদূর। সে রুবিনাকে চিৎকার করে ডাকছে কিন্তু রুবিনা শুনছে না আস্তে আস্তে রুবিনা বাচ্চাটাকে নিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। সিয়াম রুবিনা বলে চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে উঠলো সারাগায়ে ঘামের জর্জরিত ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি চারটা বেজে 30 মিনিট আজান দিচ্ছে।

সে শুনেছে ভোরের স্বপ্ন সব সময় সত্যি হয়। তাহলে এই স্বপ্নের মানে কি। আর বাচ্চা মেয়েটাকে? আর রুবিনা তাকে কেন নিয়ে যাচ্ছে। এই স্বপ্নের মানে কি সে খুব অস্থির হয়ে উঠল কিছু ভালো লাগছে না তার। তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। তারপর সে শাওয়ার নিয়ে মসজিদে গেল নামাজ পড়তে এতে যদি তার কষ্ট কিছু লাঘব হয়। বান্দার কষ্ট নাকি আল্লাহই ভাল বোঝেন।


পর্ব ১০

রুবিনা আনমনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে সিয়ামের সাথে কাটানো প্রত্যেকটা মুহূর্তে কথা চিন্তা করছে। কত ভালোবাসতো সে রুবিনাকে। সব সময় বলতো রুবিনাকে ছাড়া সিয়াম অসম্পূর্ণ সিয়ামকে সম্পন্ন করতে হলে রুবিনাকে চাই।

তাহলে এই তিন সপ্তাহের সিয়াম কইছিল একবার একটি ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করেনি সে কোথায় আছে। খবর পর্যন্ত নেইনি। ভালোবাসা নাই ছিল কিন্তু সামান্য দায়িত্ববোধের কারনে তো একবার ফোন দিতে খবর নিতে পারতো। হয়তো এখনো সিয়ামকে পূর্ণ করতে রুবিনার প্রয়োজন নেই এখন তার পূর্ণ করার জন্য তার প্রিয়সি এসে গেছে যে তার যোগ্য ও স্মার্ট। তাই খবর নেওয়া প্রয়োজন মনে করেনি।

কথাগুলো মনে করতে চায় না রুবিনা কিন্তু কিভাবে যেন আপনার আপনি মনে এসে পড়ে যখনই একা থাকে সিয়ামের স্মৃতিগুলো তাকে তাড়া করে কিছু সুখমায় স্মৃতি আর কিছু দুঃখের। স্মৃতিগুলো চাইলেও সে কোনদিন ভুলতে পারবেনা।
হারিয়ে যাব একদিন আকাশের এককোণে।

পাবেনা আমায় সেদিন খুঁজবে সব খানে।
হাসবো সেদিন ভাসবো তোমার চোখের জ্বলে। সেদিন বুঝবে কি ছিলাম তোমার জীবনে…

সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিয়ামের ভাবনার মগ্ন থাকা রুবিনার নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু সে হয়তো জানেনা দূর থেকে কেউ একজন তাকে খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আর সে কেউ একজন আর কেউ না সিয়াম নিজেই।

সিয়ামের বাসা থেকে ওদের বাসা খুব বেশি দূরে না প্রায় 30 মিনিটের রাস্তা। ভোরের স্বপ্ন দেখার পর সিয়াম অস্থির হয়ে পড়েছিল রুবিনাকে দেখার জন্য। নিজের মনকে আর আটকে রাখতে পারল না সে। অস্থির মনটাকে শান্ত করার জন্য হলেও রুবিনাকে একনজর দেখার প্রয়োজন। সকাল থেকেই মনটা তাকে দেখার জন্য আকুপাকু করছে। তাই উনিশ বিশ না ভেবেই নামাজ পড়ে রওনা দেয় ওদের বাসার উদ্দেশ্যে। সেদিন সামিমের সাথে দেখেই সে ধারণা করেছিল রুবিনা তার বাবা-মার বাসায় আছে।

সাড়ে পাঁচটার সময় সিয়াম ওদের বাড়ির সামনে পৌঁছায়। রুবিনাদের বাড়ি টা খুব বেশি বড় না হলেও মোটামুটি বড় বলা যায় দোতলা বাড়িটি। দোতালায় পূর্ব দিকে রাস্তার পাশে রুবিনার ঘর। ঘরের লাগোয়া একটি বারান্দা আছে। সেখানেই তারা কত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি। সিয়াম নিচে দাঁড়িয়ে থাকতো রুবিনা বারান্দায় দাঁড়িয়ে তার সাথে ফোনে কথা বলত লুকিয়ে লুকিয়ে। একবার তো ধরা পড়ে গিয়েছিল তারপর তাকে বেশ কিছুদিন ঘর থেকে বের হতে দেয়নি বারান্দাও লক করে দিয়েছিল রুবিনার বাবা।

সিয়াম নিজেকে আড়াল করে এমন জায়গায় দাঁড়ায় যেখান থেকে রুবিনার ঘরের বারান্দা স্পষ্ট দেখা যাবে। রুবিনার এক নজর দেখতে পাওয়া ও কম কি।

সিয়ামের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রায় 20 মিনিট পর রুবিনা বারান্দায় দাঁড়িয়ে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে মুখ করে রুবিনা কি যেন ভাবছে আবার বিড়বিড় করে কি যেন বলছে। সিয়াম কিছুই শুনতে পাচ্ছ না।

এখন তার আকাঙ্ক্ষাটা আরও বেড়ে গেল তার রুবিনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কিভাবে বলবে? সে একবার রুবিনাকে ভালোভাবে লক্ষ্য করলো। পরনে সাদা রঙের একটি সালোয়ার-কামিজ চুলগুলো ছাড়া এলোমেলো হয়ে আছে ঘুম থেকে উঠার কারণে চোখ গুলো ফুলে আছে।

রুবিনাকে বিয়ের পর আর সালোয়ার-কামিজ পরতে দেখা যায়নি। বেশ চিকন হয়ে গেছে দেখলেই বোঝা যায় কিন্তু চেহারায় যেন লাবন্যতা বেড়েই চলছে হঠাৎ যেন রুবিনা খুব সুন্দর হয়ে গেছে। রুবিনা আপন-মনে কিছুক্ষণ বিড় বিড় করে বারান্দা থেকে চলে গেল ওর চলে যাওয়া দেখে সিয়াম ধ্যান ভাঙলো।

সে চাইল রুবিনাকে একবার ডাকতে যেন এখনই চলে না যায় কিন্তু পরবর্তীতে আবার চুপ হয়ে গেল সে আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল রুবিনা বারান্দায় আসে কিনা দেখার জন্য কিন্তু তাকে আসতে না দেখে বাধ্য হয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিল। সময় নষ্ট করলে চলবে না অফিসে যেতে হবে সামনের সপ্তাহে মারিয়া আর তার ইংগেজমেন্ট তখন তার ছুটির প্রয়োজন এখন ছুটি নিলে পরবর্তীতে আর পাওয়া যাবে না।

সিয়াম বাসায় গিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। সেখানে মারিয়ার সাথে দেখা হলকিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে যার যার কাজে মনোযোগ দিল।

লাঞ্চ আওয়ারে মারিয়ার জন্য অপেক্ষা করছে সিয়াম। অন্যদিন হলে মারিয়া অপেক্ষা করত তারপর একসাথে লাঞ্চ করত। তারপর সে বেরিয়ে পড়ে মারিয়াকে খুঁজতে কিন্তু কেবিনে তাকে পায় গেল না। তাই সে একাই লাঞ্চ করে নিল। লাঞ্চ আওয়ারের 10 মিনিট ওভার হওয়ার পর মারিয়া ডেস্ক এল। সিয়াম তার কাছে জিজ্ঞেস করল এতক্ষণ কোথায় ছিল হঠাৎই সিয়ামকে সামনে থেকে মারিয়া হতচকিয়ে গেল।

সিয়ামঃ লাঞ্চ আওয়ারে কই ছিলা তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
মারিয়া চোখ লুকিয়ে জবাব দিল। এইতো সামনে একটা আর্জেন্ট কাজে গিয়েছিলাম।

সিয়ামঃ কি এমন একজন কাজ ছিল আমাকে বলে যেতে পারলে না? আমাকে বললে আমি হেল্প করতাম। একসাথে লাঞ্চ করতাম।
মারিয়াঃ তুমি কি আমাকে জেরা করছো সিয়াম? এখন আমি কোথায় যাবো না যাবো সেটা তোমার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে যেতে হবে?

সিয়ামঃ আমি সে কথা বলিনি মারিয়া। আমি এমনি জিজ্ঞেস করছিলাম আচ্ছা বাদ দাও লাঞ্চ করেছো?
মারিয়াঃ হ্যাঁ। এখন যাও নিজের ডেস্কে যাও এভাবে বেশিক্ষণ থাকলে সমস্যা হবে।
সিয়াম নিজের ডেস্কে ফিরে এল আর মারিয়া যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। ছুটির সময় মারিয়া ওভারটাইম করবে বলে থেকে গেল তাই সিয়াম আর কথা বাড়ায়নি একাই বেরিয়ে গেল।

বেশ কিছুদিন ধরেই মারিয়ার পরিবর্তন লক্ষ্য করছে সিয়াম। আগে ফোন দিলে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতে চাইতো। সিয়ামের সাথে এখানে সেখানে ঘুরতে যাওয়া রেস্টুরেন্টে খাওয়া শপিংয়ে যাওয়া কখনোই মিস করেনা সে আর এখন সিয়াম আগ বারিয়ে বললেও সে ভালো লাগছেনা বলে এড়িয়ে যায়।

প্রায় সময় ফোন এনগেজ থাকে। জিজ্ঞেস করলে চিল্লাপাল্লা করে নানান বাহানা দেয়। এসব বিষয়ে সিম্মি কোন আগ্রহ নেই কিন্তু কোথায় যেন একটা খটকা লাগে। ইদানিং মারিয়া ওভারটাইম বেশি করে অফিস ছুটির পর সিয়াম একাই বের হয়।

কিন্তু হঠাৎ একদিন কিছু কাজ থাকায় সে আশে পাশে থাকে। হঠাৎই তার চোখ যায় একটা বাইকে করে আয়াজ আর মারিয়া যাচ্ছে। সে প্রায় সাথে সাথেই মারিয়াকে ফোন দেয়
সিয়ামঃ হ্যালো এটা কই তুমি?

মারিয়াঃ কই তুমি মানে আজব প্রশ্ন। আধঘন্টা আগেই তো বললাম তোমাকে আজকে ওভারটাইম করব তাই অফিসেই আছি।

সিয়ামঃ ও সরি ভুলে গিয়েছিলাম আচ্ছা রাখি পরে কথা বলব। সিয়াম স্পষ্ট দেখেছে আওয়াজের সাথে এটা মারিয়াই ছিল তাহলে সে কেন মিথ্যা বলছে? একবার কি অফিসে গিয়ে খোঁজ নেবে? তারপর সে আবার অফিসের দিকে রওনা দেয়। ভিতরে যেতে চাইলে দারোয়ান তাকে বাধা দেয়

দারোয়ান: জ্বি কাকে চাই অফিসে ঢুকতে পারবেন না। অফিস টাইম শেষ।
সিয়ামঃ আমি এখানে কাজ করি। এইযে আমার আইডি আসলে আমার এক ফ্রেন্ড ভিতরে আছে ওভারটাইম করছে জরুরী কিছু প্রয়োজনে তার সাথে দেখা করতে এসেছি।

আইডি থেকে দারোয়ান আর তাকে আটকায় না। সে ভিতরে গিয়ে দেখে অনেকেই রয়েছে কিন্তু সেখানে মারিয়াকে দেখতে পেল না তাই সে অন্য এক কলিগ জিজ্ঞেস করল। আরিফ মারিয়া কই ওর তো ওভারটাইম করার কথা ছিল। কিন্তু ওকে তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি না? আরিফ কিছুক্ষণ ভেবে বলল।

আরিফ: মারিয়া নাহ মারিয়াকে তো বস ওভারটাইম দেয়নি। তো সে এখানে কেন থাকবে?
সিয়ামঃ কি বলিস আজ 5 দিন যাবৎ মারিয়া ওভারটাইম করছে আর তুই বলিস বলছিস মারিয়াকে ওভারটাইম দেয়নি। তুই বোধ হয় খেয়াল করিস নি।
আরিফ:দিলে তো জানতামই আমি দেখলাম মারিয়াকে একটা ছেলের সাথে বাইকে করে চলে যেতে। প্রায় প্রতিদিনই তো যায়।
সিয়ামঃ কখন বের হয়?

আরিফ: অফিস ছুটি হওয়ার ঠিক দশ মিনিট পর।
সিয়ামঃ ধন্যবাদ দোস্ত। আজ তাহলে আসি পরে কথা হবে।

সিয়াম ভাবনায় পড়ে যায় মারিয়া তাকে এতদিন মিথ্যা কথা বলে আসছে। সে আয়াজের সাথে প্রতিদিন অফিসারের পরে বেরিয়ে যায় আর তাকে মিথ্যে বলে ? কেন? সে কি কখনোই তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে? সিয়াম তো বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা করতে বাড্ডা দিতে তাকে নিষেধ করিনি তাহলে কেন লুকোচুরি ? সিয়ামকে খুঁজে বের করতে হবে।

পরেরদিন যথাসময়ে অফিস ছুটি হয় ও রীতিমতো মারিয়া সিয়ামকে ওভারটাইম বলে বিদায় করে কিন্তু সিয়াম নিচে অপেক্ষা করে থাকে কখন মারিয়া নামবে। সবার ছুটির প্রায় দশ মিনিট পর মারিয়া ফোনে কথা বলতে বলতে নিচে নেমে আসে এক দু মিনিটের মধ্যেই আয়াজ একটা বাইক নিয়ে আসে আর মারিয়া তাকে পেছন থেকে চেপে ধরে বাইকে উঠে পড়ে। মারিয়া কে ফলো করার জন্য সিয়াম তার বন্ধু থেকে একটা বাইক নিয়ে আসেছে।

তার মন বলছে পিছু করাটা অন্যায় কিন্তু আবার এটাও বলছে অন্তত ডাউট ক্লিয়ারের জন্য হলেও ফলো করা উচিত। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই সিয়াম মারিয়াদের পিছনে যাওয়া শুরু করলো।

তাদের বাইক একটা রেস্টুরেন্টে সামনে থামালো এটা তারা আর মারিয়ার প্রিয় রেস্টুরেন্ট। মারিয়া আয়াজকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের ঢুকলো এবং প্রাইভেসির জন্য একটা কর্নারের টেবিলে বসলো। সিয়াম তাদের পিছু পিছু একটা টেবিলে বসলো যেখান থেকে তাদের দেখা যায়। রেস্টুরেন্ট হালকা আলো জ্বলছে। আসে হালকা আলোয় সিয়াম দেখতে পাচ্ছে দুজন ছায়ামূর্তি একে অপরকে আলিঙ্গন করে আছে এবং আস্তে আস্তে আরও গভীরে যাচ্ছে বাকিটুকু দেখার মত শক্তি সিয়াম জোগাতে পারল না দ্রুত রেস্টুরেন্ট ত্যাগ করল।

সে বিশ্বাস করতে পারছে না মারিয়া তাকে এভাবে ধোকা দিল। সে তার জন্য রুবিনাকে ছাড়লো। আর এক সপ্তাহ পর তাদের এঙ্গেজমেন্ট সে কিভাবে এই কাজ করতে পারল ? না তার সাথে কথা বলতে হবে সবকিছু মিটমাট করেই আগাবে সে। তা জানতে হবে মারিয়া কি চায়?

পরেরদিন অফ থাকায় সে মারিয়াকে বাসায় আসতে বলল কিন্তু সে আসতে নারাজ তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে বলে এড়িয়ে যেতে চাইল তবুও সিয়াম জোর করলো সিয়ামের সাথে না পেরে মারিয়াকে আসতে হল। মারিয়া বাসায় হাজির হলো সকাল দশটায়।

সিয়ামঃ তা কি খবর কেমন চলছে দিন কাল? আজকাল তো দেখি আমাকে মনে পড়ে না। তোমায় আমি ফোন না দিলে ফোন দাও না খোঁজখবর নাও না কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়না। সামনের সপ্তাহে আমাদের এঙ্গেজমেন্ট তোমার তো কোনো এক্সাইটমেন্ট দেখতে পাচ্ছি না তুমি সত্যি কি আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন তো?

মারিয়াঃ এগুলো কি ধরনের হেঁয়ালি কথা সিয়াম। আর বিয়ে করতে চাইবো না কেন ? একটু ঝামেলায় আছি অফিসে ব্যস্ত কাজের চাপ বেশি তাই তোমার সাথে বেশি কথা হয় না বাইরে যেতে পারি না। তার মানে এই না যে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই না।

সিয়াম মারিয়ার দুই হাত নিজের হাতে নিল।
সিয়ামঃ মারিয়া আমি আজকে তোমার কিছু কথা বলব আগে আমার সম্পূর্ণ কথা শুনবে তারপর কথা বলবে। রাগ করতে পারবে না। কারণ আমি কোন কিছু প্রমাণ ছাড়া করিনা। ওকে আমাকে প্রমিস করো।

মারিয়াঃকি এমন কথা বলবে যে আমাকে প্রমিস করতে হবে। ওকে যাও রাগ করবো না বল কি বলবে?
তারপর সিয়াম তাকে গত দুই দিনের ঘটনা বলে ও মারিয়া এসব কিছুই সরাসরি অস্বীকার করে। কিন্তু পরবর্তীতে সিয়াম আরিফের কথা রেকর্ডিং রেস্টুরেন্টে ঢোকার সময় আয়াজ ও মারিয়ান ছবি দেখায়। তারপর আর কোন রাস্তা না পেয়ে মারিয়া সব স্বীকার করে।

মারিয়াঃ প্লিজ সিয়াম আমাকে মাফ করে দাও। আমি চাইনি তোমার সাথে এমন করতে। কিন্তু কিভাবে যেন আমি ওর কথায় এসে যাই। সে আমাকে বলে তুমি আমার যোগ্য না। আমি তুমি তুমি ডিভোর্সি তুমি নাকি বিয়ের পর আমাকে রুবিনার মত করে মারবে।

বকবে আমার সব স্বাধীনতা কেড়ে নেবে। আমি যেন তোমার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দেই। তারপর আস্তে আস্তে আমি ওর সাথে ক্লোজ হয়ে যাই। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ভালোবাসি সিয়াম। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। আমাকে এবারের মত মাফ করে দাও আর হবেনা। প্লিজ আমাকে আর একটা সুযোগ দাও।

শফিনও মারিয়াকে মাফ করে দেয় আর আয়াজের সাথে যোগাযোগ করতে নিষেধ করে দেয়। আর মারিয়াও সব মেনে নেয়।
তারপরে আবার সবকিছু আগের মতোই হয়ে যায়। অফিসে যাওয়া মারিয়ার সাথে লাঞ্চ ছুটির পর মারিয়াকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া। আর রাতে রুবিনার বাড়ির রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা।
এক সপ্তাহ পর।

এই দু সপ্তাহ সিয়াম প্রতিদিন রাতে রুবিনার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো সকালে চলে যেত মাঝে মাঝে রুবিনাকে রাতেও দেখা যেত। আবার মাঝে মাঝে শুধু সকালে। তার অভ্যাস যেন একদিনেই খারাপ হয়ে গেছে। রুবিনার ঘুমু ঘুমু চেহারাটা দেখা তার নেশা হয়ে গেছে।

আজ তার এনগেজমেন্ট আর তাই হয়তো আর আসা হবে না ভেবেই চলে যেতে নেবে হঠাৎই সে সামিমকে দেখল বাড়ির ভিতরে যেতে হাতে কিছু কাগজপত্র সে ভাবল বাইরে অপেক্ষা করা যাক। সামিম কে রুবিনার থেকে দূরে থাকতে বলতে হবে। তাই সে অপেক্ষা করতে লাগল এক ঘন্টা পর সামিম বের হল যেই সেদিকে এগোবে পেছনে রুবিনাকেও বেরোতে দেখল। তারা কোন বিষয়ে জানি কথা বলছে কথা বলছে বললে ভুল হবে সামিম বলছে আরনু মনোযোগ সহকারে শুনছে। তারপর সামিম একটা রিক্সা নিল।

সিয়াম ও তাদের ফলো করতে শুরু করলো। সামিমের রিক্সা গিয়ে থামল সিটি হসপিটালের সামনে। তারা নেমে পড়ল তারপর রুবিনা গাইনি বিভাগের ডাক্তারের কেবিনের সামনে বসে পরলো। সিয়াম চুপিচুপি কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে সেখানে দাঁড়ালো দেখার জন্য রুবিনা হসপিটালে কেন এসেছে। কিছুক্ষণ পর রুবিনার ডাক পড়লো সে সামিমকে নিয়ে ভিতরে গেল এবং 10 মিনিট পর বেরিয়ে পড়ল আর ফার্মেসি থেকে কিছু ওষুধপত্র কিনে আবার বাড়ির দিকে রওনা দিল।

সিয়াম প্রথমে ফার্মেসিতে গেল জিজ্ঞেস করতে রুবিনা কিসের ওষুধ নিয়েছে সেখান থেকে জানা গেল কিছু ভিটামিন ও আয়রন ট্যাবলেট নিয়েছে। সে সঠিক তথ্য নেওয়ার জন্য কেবিনে গেল এবং পিওনকে কিছু টাকা দিয়ে ঢুকলো তারপর ডক্টরকে জিজ্ঞেস করল।

সিয়ামঃ আসসালামুয়ালাইকুম ম্যাম আমি সিয়াম আহমেদ কিছুক্ষণ আগে যে পেশেন্ট কেবিনে আসলো তার হাজবেন্ড। আসলে আমার ওয়াইফ দু মাস যাবৎ আপনার কাছে আসে কিন্তু আমাকে বলছে না তার কারণ কি? আপনি কি কাইন্ডলি একটু বলবেন রুবিনার কি কোন সমস্যা হয়েছে? সিয়াম কৌশলে জিজ্ঞেস করল যেন ডক্টর সব তথ্য দিয়ে দেয়। সফিনা কথা শুনে ডক্টর জবাব দিল।

ডক্টর: আপনি কোন পেশেন্টের কথা বলছেন? সিয়াম রুবিনার পুরো নাম বলল। ও রুবিনা কথা বলছেন আপনি। কেন আপনি জানেন না রুবিনা আপনাকে বলেনি যে ও প্রেগনেন্ট। আপনার ওয়াইফ থ্রি মান্থস প্রেগন্যান্ট আর আপনি জানেন না। কেমন হাজব্যান্ড বউয়ের খোঁজ খবর রাখেন না রুবিনা শরীরে প্রচুর ভিটামিন এ’র অভাব আর রক্তশূন্যতা ও আছে। আর প্রচুর দুশ্চিন্তা করে মেয়েটাকে দেখে রাখবেন ডেলিভারির সময় নয়তো সমস্যা হবে। মা ও বেবি দুজনেরই লাইফে রিস্ক।

রুবিনা প্রেগন্যান্ট কথাটা শুনে সিয়াম আকাশ থেকে পড়ল। তার চোখ থেকে দু ফোটা জল অবাধ্য জল গড়িয়ে পড়ল। সে বাবা হতে যাচ্ছে আর রুবিনা একবার তাকে বলার প্রয়োজন মনে করেনি। এত বড় কথাটা সে কিভাবে লুকাল। তার কি অধিকার নেই তার বাচ্চার কথা জানার। এতদিনে সে তার স্বপ্নের ব্যাখ্যা বুঝতে পেরেছে। তাহলে কে স্বপ্নের মতো সত্যি সত্যি রুবিনা তার সন্তানকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবে সিয়াম চাইলেও তাদের ধরে রাখতে পারবে না?


পর্ব ১১

ডাক্তারের কেবিল থেকে বের হয়ে কোনরকম একটা সিএনজি নিয়ে বাসায় যায় সিয়াম। তারপর খুশিতে চিৎকার করে কতক্ষণ। সিয়াম বাবা হতে যাচ্ছে। আচ্ছা বাবা হওয়ার রুবিনাভূতি গুলো কি সত্যিই এমন অসাধারণ হয় যেন পৃথিবীটাই হাতের মুঠোয় পেয়ে গেছি। বেঁচে থাকার জন্য এর থেকে বড় সুখ আর কিছু চাইনা কিন্তু কিছু একটা ভেবে মুখের হাসি নিমিষেই শেষ হয়ে যায় তার।

রুবিনাকি ফিরবে তার কাছে ? নাকি তার বাচ্চাকে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেবে। তার প্রথম সন্তান প্রথম বাবা হওয়ার রুবিনাভূতি সব কি কেড়ে নেবে রুবিনা? পরক্ষণেই ভাবল না কিভাবে কেড়ে নেবে বাচ্চাটা কি তার একার নাকি তারও তো অধিকার আছে বাচ্চার উপর। সিয়ামের জন্য না হলেও বাচ্চাটার জন্য হলেও রুবিনা তার কাছে থাকতে বাধ্য। সে বাধ্য করবে রুবিনাকে তার সাথে থাকতে। সে এই রুবিনাভূতি টাকে হাতছাড়া করতে চায়না। আর রুবিনা যদি থাকতে না চায় তাহলে বাচ্চাটা সিয়ামকে দিয়ে দিতে হবে।

এরপর সিয়াম সিদ্ধান্ত নেয় সে রুবিনাকে ডিভোর্স দিবে না আর মারিয়া কেও বোঝাবে যে বাচ্চাটা সিয়ামের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ আর বাঁচ্চার জন্য হলেও রুবিনাকে প্রয়োজন। আর মারিয়া যদি না রুবিনাকে রাখতে না চায় তবে অন্য ব্যবস্থা আছে সে কোর্টে বাচ্চার কাস্টাডি জন্য আবেদন করবে তারপর সে আর মারিয়া মিলে বাচ্চাটা বড় করবে। আগে ভালোয় ভালোয় আজকের এনগেজমেন্টটা হয়ে যাক তারপর সব দেখা যাবে।

ভেবেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো সিয়াম।
তার অনেক কাজ করতে হবে এঙ্গেজমেন্ট সকল দায়িত্ব সিয়ামের একার কোন আত্মীয় স্বজন বা কাছে বন্ধুবান্ধব সিয়ামকে সাপোর্ট করেনি তারা আসতে নারাজ। কিছু কলিগ ও কয়েকটা বন্ধুবান্ধব নিয়ে সে রুবিনাষ্ঠানটা করছে। তাই সব দায়িত্ব সিয়ামের একার। সে বেরিয়ে পড়লো হলরুমের উদ্দেশ্যে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে তারপর সে রেডি হয়ে আবার আসবে আর ইংগেজমেন্ট এর পরপরই মারিয়ার সাথে কথা বলবে।
সন্ধ্যে সাতটা।

সকল গেস্ট রা এসে পড়েছে মারিয়ার বাবা-মাও এসেছে তারা সিয়ামের সাথে কথা বলছে। সকল আত্মীয়-স্বজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। সবাই যার যার মত পার্টি ইনজয় করছে কিন্তু এরমধ্যে একবারও মারিয়ার দেখা মিলল না। বেশ কয়েকবার সিয়াম ফোন দিয়েছে কিন্তু ফোন রিসিভ করছে না সে ভাবছে হয়ত ব্যস্ত তাই ফোন ধরছো না। রাত নটার দিকে সবাই এনগেজমেন্ট এর জন্য তাড়া দিতে থাকলো।

কিন্তু মারিয়ার কোন খোঁজ খবর নেই তার বাবা-মাও তাকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু ফোন বন্ধ তারপর হঠাৎ এই একটা মেয়ে এসে সিয়ামের হাতে একটা কাগজ দিল সে আস্তে আস্তে কাগজটি খুললো।

এটা একটা চিঠি যা মারিয়া লিখেছে। চিঠিটা সম্পূর্ণ পড়ে সিয়ামের চেহারার রং বদলে গেল। চিঠিটা মারিয়ার মায়ের হাতে দিয়ে তারপর সে কাউকে কিছু না বলে হল রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
তারপর তার মা চিঠিটা খুলল চিঠি লেখা ছিল।

প্রিয় সিয়াম।
শুরুতেই প্রিয় লিখলাম কিন্তু তুমি আমার প্রিয় কিনা জানিনা কিন্তু আজ কাল তোমাকে আমার বিরক্ত লাগে। কথায় কথায় আবেগী হয়ে পড়া শাসন করা এখানে যেও না তার সাথে কথা বলো না এইসব শুনতে শুনতে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম।

আমি তোমাকে খুব স্মার্ট একজন ছেলে ভাবতাম কিন্তু তোমার জন্য ওই রুবিনাই ঠিক আছে আমি নই। আমি কার সাথে চ্যাটিং করি চলাফেরা করি কথা বললি সবকিছুতেই তোমার হস্তক্ষেপ।

ভাগ্য ভালো সময়মতো আয়াজ আমাকে সব বুঝিয়ে দিয়েছে। যে ছেলে বউ রেখে অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক করে এমন কি বিশ্বাস আছে যে তুমি আমাকে ছেড়ে আরো সুন্দর কেউ দেখলে তার কাছে চলে যাবে না? তোমাকে আমি বিশ্বাস করিনা। আর ভালোবাসি না তাই এঙ্গেজমেন্ট আর বিয়েটা করা আমার পক্ষে সম্ভব না। যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে বিয়ে তো অসম্ভব।

আমি আয়াজকে ভালবাসি আর ওকেই বিয়ে করব ও তোমার মত অত মেন্টালি সিক না আমাকে বোঝে। তোমাকে আজকের এই দিনে এতগুলো মানুষের সামনে অপমান করতে চাইনি কিন্তু আমার কোন উপায় ছিল না শেষ মুহূর্তে আর পারলাম না নিজের সাথে যুদ্ধ করতে।

তাই ভালোবাসার মানুষটি হাত ধরে চলে যাচ্ছি। আমি আজকে বুঝতে পারছি আমি তোমার পার্সোনালিটি কে ভালোবেসেছিলাম তোমাকে না।

পারলে মাফ করে দিও আর রুবিনা কি নিয়ে সুখে থাকো। আমি জানি তুমি এখনো রুবিনাকে ভালোবাসো। আর সেও তোমাকে ভালোবাসে তাই তার কাছে মাফ চেয়ে আবার সবকিছু ঠিক করে নিও ভালো থেকো।
ইতি -মারিয়া

সম্পূর্ণ চিঠিটা পড়ে তার বাবা-মা স্তব্ধ হয়ে গেল। তার মেয়ে একটা বিবাহিত পুরুষকে বিয়ে করতে যাচ্ছিল এই ছেলের আগেও একটা স্ত্রী আছে জেনেও। এত অধঃপতন হয়েছে তার শেষ পর্যন্ত একটা পবিত্র সম্পর্ককে নষ্ট করল তাদের মেয়ে ভাবতেও অবাক লাগছে।

তারা মারিয়াকে কখনো কোন কিছুর জন্য বাধা দেয়নি সবসময় স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে দিয়েছে তাই বলে মেয়ে এত নিচে নামবে তারা ভাবতে পারিনি। আজ এতগুলো মানুষের সামনে শুধু সিয়ামকে না তার বাবা-মাকেও অপমান করল সে।

বাসায় পৌঁছে সিয়াম কোনরকম দরজা লাগিয়ে চিৎকার করে কান্না করতে শুরু করল।

কার জন্য সে কান্না করছে জানেনা শুধু এতোটুকুই জানে যার জন্য সে রুবিনা কে ঠকালো রুবিনার গায়ে হাত তুলল এমনকি তাকে ডিভোর্স দিতে যাচ্ছিল তার বাবা হওয়ার সংবাদ থেকে বঞ্চিত হল আর সেই তাকে একা ফেলে চলে গেল তাকে বিশ্বাস করে না বলে? কি দোষ করেছিল সে ? সেতো মারিয়ার সব কথাই মেনে নিয়েছে যখন যা বলেছে তাই করেছে কখনো তো স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেনি।

কোন কিছুর জন্য জবাবদিহিতা করেনি। এমনকি এত বড় একটা ঘটনার পরেও মারিয়াকে মাফ করে দিয়েছিল। তাহলে কেন এমন করল। কি সুন্দর করে বলে দিল সিয়াম কে ভালোবাসে না বিশ্বাস করে না অন্য কাউকে ভালোবাসি।

তাহলে কি তার রুবিনাকে দেওয়া আঘাত প্রকৃতি তাকে ফিরিয়ে দিল। সেও তো রুবিনাকে একই কথা বলেছিল আরো জঘন্য ভাবে। রুবিনা কি এমন কষ্ট পেয়েছিল নাকি আরো বেশি?

তার মারিয়ার জন্য কষ্ট লাগছে না কষ্ট লাগছে নিজের জন্য রুবিনার জন্য। সে রুবিনার কাছে কোন মুখে যাবে তাকে ফিরিয়ে আনতে। কিভাবে ক্ষমা চাইবে ? আদৌ কি রুবিনা ফিরবে তার কাছে। সিয়ামের নিজেকে অসহায় লাগছে খুব একা একা মনে হচ্ছে। ঘরে থাকলে যেন তার দম বন্ধ হয়ে যাবে। এই ঘরে রুবিনার সাথে তার কত স্মৃতি রয়েছে ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তার। তার এখন রুবিনাকে প্রয়োজন খুব প্রয়োজন সে বুঝতে পারছে রুবিনাকে ছাড়া তার চলবে না।

কিন্তু রুবিনা তো নেই দূরে চলে গেছে সিয়াম নিজে তাকে দূর করে দিয়েছে কিন্তু এখন তার কাউকে প্রয়োজন যে তার কষ্ট বুঝবে।
তারপরই হঠাৎ তার মায়ের কথা মনে পড়লো সে উঠে দাঁড়ালো তার মায়ের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। এখন তার কাউকে প্রয়োজন খুব করে প্রয়োজন কাউকে জড়িয়ে ধরে অশান্ত মনকে শান্ত করতে হবে। রুবিনা থাকলে কাজটা বেশি ভালো হতো কিন্তু আপাতত তার মাকে চাই। একমাত্র মাই পারবে সবকিছু ঠিক করতে।

রাত পৌনে একটা দরজায় বারবার কে যেন কলিং বেল বাজাচ্ছে আর সমানে দরজা ধাক্কাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে ছিল জাহিদ আর রিদি। কিন্তু দরজা ধাক্কা আর কলিং বেলের আওয়াজে তারা দুজনি হুড়মুড় করে উঠে পরলো। আর কলিংবেলের বাজে আওয়াজে মিসেস রাবেদা ঘুম থেকে জেগে গেল। জাহিদ দরজা খুলে অবাক হয়ে গেল তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার ছোট ভাই চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে যেন এইমাত্র কান্না করে এসেছে শাটের অর্ধেক ইন করা বাকি অর্ধেক ছাড়ানো।

এত রাতে সেখানে কি করছে আজ না তার এঙ্গেজমেন্ট ছিল মারিয়ার সাথে তাহলে সে এখানে কেন আর চেহারার এই হাল কেন? বেশ কয়েকটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জাহিদের মাথায়।

বড় ভাইকে দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না সিয়াম ক্লান্ত পায়ে সামনে এগিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেই চিৎকার করে কান্না করতে শুরু করল সে আর বলতে লাগল আমার পাপের ফল আমি পেয়েছি ভাই তোদের কথা সত্যি হয়েছে। আল্লাহ আমাকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না ভাই আমার রুবিনাকে চাই। ও আমার সব কষ্ট দূর করে দেবে ওর কাছে জাদু আছে ভাই। আমাকে আমার রুবিনা এনে দে।

ছেলের এমন অবস্থা দেখে রাহিলা কান্না করে দিল তার ধারণা সঠিক হয়েছে ছেলে তার ভুল বুঝতে পেরেছে। সে এগিয়ে যায় ছেলের দিকে মাকে দেখে সে ভাইকে ছেড়ে মায়ের পায়ের কাছে বসে পরলো। তারপর পা জড়িয়ে ধরে বলল।

আমার রুবিনাকে চাই মা আমার রুবিনাকে চাই। আমি আমার বাচ্চাকে চাই। আমি ওদের ছাড়া বাঁচবো না মা। আম..আমি আমার রুবিনাকে চাই। তোমার ছেলেকে রুবিনা এনে দাও মা। আর কক্ষনো সে রুবিনার অমর্যাদা করবেনা। গায়ে হাত তুলবে না।

বাজে কথা বলবে না। আমরা বাচ্চাকে নিয়ে খুব সুখে থাকবো। রুবিনার কথা মতো আমাদের একটা ছেলে বাবু হবে আমার মেয়ে বাবু চাইনা আর চাই না। রুবিনা যা চাইবে তাই হবে। আমাদের মধ্যে আর কেউ কখনো আসবে না।
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মা।

অনেক চেষ্টা করেছি রুবিনাকে ভুলে যাবার কিন্তু পারেনি মা তুমি ঠিক বলেছিলে আমি রুবিনাকেই ভালোবাসি মারিয়াকে না দেখো মারিয়া চলে গেছে কিন্তু আমার একটুও আফসোস হচ্ছে না আরো ভালো লাগছে যে আমার আর রুবিনার মধ্যে আর কেউই নেই। হ্যা আমি রুবিনাকে ভালবাসি। তাইতো একদিন জন্যও আমি তাকে মনের আড়াল করতে পারিনি প্রতিদিন রাতে তার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থেকেছি তাকে এক নজর দেখার জন্য। প্রতিটা রাত নির্ঘুম কাটে রুবিনার স্মৃতিতে। আমি ওকে ভালোবাসি মা আমার রুবিনাকে এনে দাও।

আমার কিছু চাইনা মা। কিচ্ছু চাইনা।

মিসেস রাবেদা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ছেলের কষ্ট তার সহ্য হচ্ছে না সে জানেনা আগে কি হতে চলেছে। তার ভুলের মাশুল তো তাকে দিতেই হবে। রুবিনা যে তাকে মাফ করবে না সেটা সিওর। আর মাফ করলেও কখনোই সিয়ামে কাছে ফিরবে না সেটা তার কথা দ্বারাই বুঝতে পেরেছে। কিন্তু রুবিনাকে না পেলে তো তার ছেলেটা পাগল হয়ে যাবে। কি করবে সে এখন সেতো রুবিনাকে কথা দিয়েছে রুবিনা যা সিদ্ধান্ত নিবে তিনি সব সময় তার পাশে থাকবে। আর ভাবতে পারল না সে আগে সিয়ামকে শান্ত করতে হবে।

অন্যদিকে রীধি সিয়ামের আচরণে বিরক্ত হয়ে গেল। এতকিছু করার পর তার রুবিনাকে চাই। হুহ। বাইরে ফষ্টিনষ্টি করার সময় এসব কথা মনে ছিল না সে রুবিনাকে ছাড়া বাঁচবে না। এখন মারিয়া ডাইনীটা ছেড়ে গিয়েছে বলে তার রুবিনা চাই। রুবিনাতো মুড়ির মোয়া চাইলেই পাওয়া যাবে। যেন তার কোন আত্মসম্মান নেই। যত সব নাটক। সাইকো একটা মনে মনে আরও অসংখ্য গালি দিয়ে রুমে চলে গেল সে।

এতদিন কঠোর থাকলেও। তার ভাইকে কান্না করতে দেখে কঠোর হতে পারল না জাহিদ। সিয়াম কখনোই এমন ছিলনা কেন যে এসব হয়ে গেল বুঝতে পারছে না সে। কিন্তু ভুল যেহেতু করেছে মাসুল তো তাকে দিতেই হবে। আর জাহিদের মনে হয় না রুবিনা সিয়ামের কাছে ফিরবে। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে সিয়ামের কাছে যায় জাহিদ। ছোট ভাইয়ের কষ্ট দেখতে পারবেনা সে। প্রথমে তাকে শান্ত করার প্রয়োজন।

সকালে সামিম ভাই এসেছিল। রুবিনার ভিসা কাগজ এসে পড়েছে জানাতে। প্রায় সপ্তাহখানেক পরের টিকিট কেটেছে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আর শপিং করতেই এক সপ্তা লেগে যাবে। তাই তাকে এই মাসে চেকআপ করতে নিয়ে যায় সামিম।

প্রায় ঘন্টাখানিক পর তারা বাসায় ফিরে আসে। আর রুবিনার ভিসা আসার খুশিতে বাসায় একটা ছোটখাটো পার্টি দেয় রুবিনার মা মিসেস রাবেয়া সাথে সাদও আছে।

সামিম রুবিনার সাথে তার পড়াশোনার ব্যাপারে ডিসকাস করছে। রুবিনা তা মনোযোগ সহকারে শুনছে। একগাদা উপদেশ দিচ্ছে। ঠিকমতো খাবি ঠিকমতো ঘুমাবি প্রপার রেস্ট নিবি। প্রতিদিন ফোন করবি সবার সাথে কথা বলবি। টাইম মতো ওষুধ খাবি বেশি রাত জেগে থাকবি না কান্না করতে পারবি না আরো গাদা গাদা উপদেশ। রুবিনা সেগুলো খুব মনোযোগ সহকারে শুনছে মাথা দোলাচ্ছে আর তার করা শাসন দেখে মিটমিট হাসছে।

সামিম এর সাথে প্রয়োজনীয় কথা শেষ করার পর সে সাদের কাছে গেল। রুবিনাকে দেখেই একগাদা প্রশ্ন ছুড়ে দিল সাদ। বাপ বেটা দুটোই এক একটা প্রশ্ন করতে করতে মারে আরেকজন উপদেশ দিতে দিতে
মারে। রুবিনা পড়েছে বিশাল ঝামেলায়।

সাদঃ পি মনি আমাদের প্রিন্সেস কবে দুনিয়াতে আসবে আমি তার সাথে খেলা করব।
রুবিনাঃ তোমাকে কে বলেছে আমাদের প্রিন্সেস হবে? প্রিন্সও তো হতে পারে নাকি।

সাদঃ বাবাই তো বলল আমাদের একটা প্রিন্সেস হবে তারপর আমি বড় হলে প্রিন্সেস কে বিয়ে করবো আর এখন সারাদিন প্রিন্সেস এর সাথে খেলবো। ও শুধু আমার প্রিন্সেস হবে আর কারো না।

রুবিনাঃ ও বাবা প্রিন্সেস হবে নাকি প্রিন্স হবে তারই খবর নেই আর সে বড় হয়ে বিয়ে অব্দি চলে গেছে।
সাদঃ আরে বাবা তুমি দেখো আমাদের প্রিন্সেস ই হবে আর আমি তার সাথে খুব খেলা করব। তারপর বিয়ে করে পুতুলের মত করে সাজিয়ে রাখবো বাবা বলেছে তো আর বাবা যাই বলে তাই সত্য হয়।

রুবিনা হেসে দিল তার পাকা পাকা কথা শুনে। তারপর সে সামিমের কাছে গেলে। সে কিছু কাগজপত্র ঘাটাঘাটি করছে।
রুবিনাঃ কি করছেন সামিম ভাই কোন সমস্যা আপনাকে বেশ চিন্তিত লাগছে।

সামিমঃ আর বলিস না মাথা থেকে একটা আপদ বিদায় করব বলে ভেবেছি। তাই আপদটা যেন তাড়াতাড়ি বিদায় হয় সেই কাজই করছি।
রুবিনা বুঝতে পারল সামিম ভাই তাকে নিয়ে মজা করছে তাই সে তাকে পাত্তা না দিয়ে সামিমকে জিজ্ঞেস করল।
রুবিনাঃ তুমি কি আমার সাথে যাবে?

সামিমঃ হে তোকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। পৌঁছে দিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক করে চাচ্চু আর চাচির সাথে কথা বলে পরেই আসবো নাহলে দেখা যাবে তুই বেশি আদরে আদরে বাঁদর হয়ে গেছিস আর খাওয়া-দাওয়া। নিজের খেয়াল রাখা সব গোল্লায় গেছে। দায়িত্ব যখন নিয়েছি পূরণ করে তবেই ছাড়বো। শুনিস নি ডাক্তার কি বলল তোর শরীরে প্রচুর ভিটামিনের অভাব আর রক্তশূন্যতা আছে। তোর তো নিজের প্রতি কোন ধ্যানই নেই তাই আমাকেই সব করতে হবে নাকি।

সামিমের কথা গুলো রুবিনা মুগ্ধ হয়ে শুনছে লোকটা কি সুন্দর করে কথা বলে সবকিছু মজা ছলে উড়িয়ে দিলেও বেশ প্রয়োজনীয় কথা তারমধ্যে বলে ফেলো এই যে দায়িত্বে র কথাটা।

সে সিয়ামের দায়িত্ব ছিল জেনেও সিয়াম সৌজন্যতার খাতিরেও খোঁজ নেই নি। আর এই যে সামিম ভাই সামান্য কথা দিয়েই সবকিছু নিঃস্বার্থভাবে করে যাচ্ছে। রুবিনাকে মেন্টালি সাপোর্ট দিচ্ছে আবার নিজ দায়িত্বে দূর দেশে চেনা মানুষের কাছে রেখে আসছে আজকালকার আপন ভাইয়েরাও এরকম করে না যতটুকু না সামিম তার মামাতো ভাই হয়ে করছে সে এই লোকটার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবে।

বেশ হাসি তামাশা মধ্য দিয়ে রাতটা কেটে গেল তাদের। সামিম আর সাদ রাতে বাসায় চলে গেল। কিন্তু কে জানত কালো অতীত গুলো রুবিনার জীবনে আবার হানা দিবে সবকিছু এলোমেলো করে দিতে।


পর্ব ১২

প্রতিদিনের মতোই সকালে নামাজ পড়ে বারান্দায় গেলো রুবিনা। এখনো পূর্বের আকাশে সূর্য উঁকি দেয়নি চারোদিকে হালকা আলো ছড়িয়ে আছে। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে সিয়ামের চিন্তায় মগ্ন হঠাৎ তার চোখ গেল সামনের রাস্তার দিকে। কেউ একজন তার দিকে তাকিয়ে আছে একধ্যানে। তাকে চিনতে বেশি বেগ পেতে হলো না রুবিনার। রাস্তায় সিয়াম দাঁড়িয়ে আছে হঠাৎ রুবিনার কলিজার পানি শুকিয়ে গেল সিয়াম এখানে কি করছে।

সবেমাত্র সবকিছু গুছিয়ে এগিয়ে ছিল সে তাহলে এখন সেখানে কেন এসেছে সবকিছু এলোমেলো করতে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না সে দৌড়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে গেল বারান্দার দরজা লাগিয়ে দিল। চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করল।

অন্যদিকে রুবিনার ঘরে যাওয়া দেখে সিয়াম তাকে ডাকতে শুরু করলো। কিন্তু অনেক ফিরেও তাকালো না।
হঠাৎ রুবিনার কান্নার আওয়াজ শুনে রুবিনার মা ঘরে দরজা ধাক্কাতে লাগলো মাত্র নামাজ পড়ে উঠেছিল সে আচমকা রুবিনার কান্নার আওয়াজ শোনে সে তারাতারি রুবিনার রুমে গেল।

রাবেয়াঃরুবিনা মা কি হয়েছে তোর? কান্না করছিস কেন দরজা খোল কি হয়েছে আমাকে বল। রুবিনা দরজা খোল মা।
কিন্তু অন্য দরজা খুললো না। এবার রাবেয়া খাতুন গেল ঘাবড়ে গেল। সে তাড়াতাড়ি গিয়ে ঘর থেকে রুবিনার রুমের চাবিটা নিয়ে এলো। রুবিনার বাবা নামাজে গেছেন তাই যা করার তাকে করতে হবে।

দরজার লকটা খুলে কোনরকম রুবিনার কাছে গেল গেল। রুবিনার কাঁধে হাত রাখতে রুবিনা ঘুরে মাকে জড়িয়ে ধরে ধরল। রুবিনার মাও কান্না করে দিল।

রাবেয়াঃকি হয়েছে মা কান্না করছিস কেন বাজে স্বপ্ন দেখেছিহ? এমন করে কান্না করলে তো বাচ্চা সমস্যা হবে আর কান্না করে না আমাকে বল কি দুঃস্বপ্ন দেখেছিস। রুবিনার সারা শরীর কাঁপছে সে শুধু মুখ দিয়ে উচ্চারণ করলো শা..শাফফ…ফিন। সে ফিরে এসেছে আমাকে ডাকছে ও বারান্দায় মা। ও কেন এসেছো মা। ভালোই তো ছিলাম আমি মা ওকে আমার চোখের সামনে থেকে চলে যেতে বল।

হঠাৎ নিচ থেকে রুবিনার বাবার আওয়াজ শোনা গেল সে কাউকে ধমকাচ্ছে। সে রুবিনাকে নিয়ে উঠে দাঁড়াল তারপর বাইরে বেরোলো দেখার জন্য কি জন্য সাত সকাল বেলা রুবিনার বাবা চেঁচাচ্ছেন।
কিন্তু নিচে নেমে যা দেখলও তার জন্য তারা মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা সিয়াম হ্যাঁ সিয়াম বাবার পায়ে ধরে আকুতি-মিনতি করছে।

সিয়ামঃ প্লিজ বাবা শুধু একবার একবার আমি রুবিনার সাথে কথা বলব। ওর সাথে একবার দেখা করব বাবা। নইলে আমি মরে যাব বাবা। আমি আপনার কাছে ভিক্ষা চাইছি রুবিনাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন।

মিজানুর(রুবিনার বাবা): কোন সাহসে তুমি আমার বাড়ি এসে আমার মেয়েকে হ্যনাস্তা করছো। আর কি মনে করো তুমি নিজেকে এত কিছুর পরেও আমি তোমাকে রুবিনার সাথে দেখা করতে দিব। সবেমাত্র সবকিছু থেকে বের করতে পেরেছি মেয়েটাকে।

তুমি এসেছ সাথে কথা বলতে ওর সাথে দেখা করতে কোন অধিকারে। এক্ষুনি চোখের সামনে থেকে চলে যাও আর কখনো যেন তোমাকে বাড়ি আশেপাশে না দেখি।

সিয়ামঃ প্লিজ বাবা এমন করবেন না। আমাকে একটা সুযোগ দিন। আমি আর অভিযোগের সুযোগ দেব না। আমাকে রুবিনা ফিরিয়ে দিন আমার বাচ্চাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন। বাবার কাছ থেকে তার সন্তানকে কেড়ে নেবেন না।
মিজানুর: কিসের বাবা তোমার বাবা হওয়ার কোনো যোগ্যতাই নেই।

তোমার মত চরিত্রহীন লোকের কাছে আমি আমার মেয়েকে দেব না আর না দেব তার অনাগত বাচ্চাকে। তোমাকে ভালো মানুষ ভেবেছিলাম তাই মেয়েকে তোমার কাছে রেখে ছিলাম। কিন্তু তুমি কি করলে পরকীয়া করে আমার মেয়েকে মেরে ঘর থেকে বের করে দিলে।

তুমি আর এমন করবে না তার কি ভরসা আছে। তোমাকে আমি বিশ্বাস করিনা। ভালই ভালই এখান থেকে চলে যাও নইলে আমি হাত তুলতে বাধ্য হব। তোমার গায়ে হাত তুলতে আমার ঘৃণা হচ্ছে।

সিয়ামঃ আমি সবকিছু জন্য মাফ চাচ্ছি বাবা। আপনার যত ইচ্ছা আমাকে মারুন আমার কোন সমস্যা নেই কিন্তু আমাকে একটা সুযোগ দিন। আমি রুবিনার অমর্যাদা করবোনা আমি আমার পরিবার ফেরত চাই বাবা।

এসবের মধ্যে রুবিনার মা রাবেয়া আর রুবিনা একদম নীরব দর্শক। তার মেয়ের জীবনে কেন এমন হচ্ছে। সিয়াম তাকে ছেড়ে দিয়েছিল তাহলে কেন আবার ফিরে এসেছে। যখন দেখল সিয়ামকে কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না সে রুবিনার শাশুড়ির নাম্বারে ডায়াল করলো।

ছেলেকে শান্ত করে রুমে রেখে এসে ছেলের চিন্তা করতে করতে কখন যে চোখ লেগেছিল বুঝতেই পারিনি সে হঠাৎ করে ফোনের রিংটোনে আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙে গেল। ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখল ছটা বাজে এত সকালে কে ফোন দিল। ফোনের নম্বর দেখেই বুঝতে পারল কোন কোন সমস্যা হয়েছে সে তাড়াতাড়ি রিসিভ করতে শোনা গেল।

রাবেয়াঃহ্যালো আপা সাত সকালে আপনার ছেলে বাড়ির সামনে এসে পাগলামি করছে কোন ভাবেই তাকে থামানো যাচ্ছে না এদিকে রুবিনা কান্না করতে করতে অস্থির হয়ে যাচ্ছে। দয়া করে আপনার ছেলেকে এখান থেকে নিয়ে যান নইলে একটা না একটা কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। আমরা পুলিশ ডাকতে বাধ্য হব।

রাবেদাঃ আমার ছেলে মানে সিয়াম সিয়াম তো এতক্ষণ ঘরে ছিল। তাহলে কখন গেল সেখানে?

রাবেয়াঃ আমি কিচ্ছু জানি না আপা আপনার ছেলে পাগলামো শুরু করে দিয়েছে। প্রচুর চেঁচামেচি করছে রুবিনা কে নিয়ে যাবার জন্য তাড়াতাড়ি কিছু করুন আপনার ছেলে কে নিয়ে যান রাখি।

রাবেদা হতভম্ব হয়ে বড় ছেলের রুমের সামনে দরজা নক করলো কয়েকবার নক করার পর জাহিদ জেগে গেল।
জাহিদঃ কি হয়েছে মা এত সাত সকালে ডাকাডাকি মণকরছো কেন কিছুক্ষণ আগেই তো ঘুমালাম।

রাবেদাঃ জাহিদ বাবা সিয়াম রুবিনাদের বাড়ির সামনে গিয়ে ঝামেলা করছে তুই তাড়াতাড়ি যা। ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাসায় নিয়ে আয় আল্লাহই জানেন আমার ছেলেটার কি হবে বলেই মনে করে কেঁদে উঠলো সে।

এদিকে রুবিনার মা সাতসকালেই এসব ঝামেলা দেখে সামিমকে ফোন করলে ফোন পেয়ে সে 10 মিনিটের মধ্যে বাসায় চলে আসলো। এসে দেখলো সিয়াম এক প্রকার ঝামেলা বাধিয়ে দিয়েছে রুবিনার বাবার সাথে রুবিনাকের নিয়ে যাবার জন্য জড়াজড়ি করছে। রুবিনার মা আপাতত রুবিনার সাথেই আছে। রুবিনার কান্না থেমে গেছে।

সামিম প্রায় ধাক্কা দিয়ে সিয়ামকে সরিয়ে দিতে যাচ্ছে কিন্তু সিয়াম যেন বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছে কোন কিছুই তার গায়ে লাগছে না। সদাতের সাথে এক প্রকার গন্ডগোল বেধে গেল।
এই মধ্যে সিয়ামের ভাই জাহিদ ও তার মা পৌঁছে গেল আমাদের বাসায়।

“চুপ সবাই চুপ”হঠাৎ রুবিনার আওয়াজে সিয়াম শান্ত হয়ে গেল। সে রুবিনাকে দেখে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগল সামিম বাধা দেওয়ায় রুবিনা ইশারায় নিষেধ করে দিল। সিয়াম রুবিনার ঠিক সামনে গিয়ে ওর হাত ধরতে চাইলে রুবিনা হাত সরিয়ে নিল। সিয়াম কিছু মনে করল না সে তার তৃষ্ণা মেটাচ্ছে কতদিন পর সে রুবিনাকে এত কাছ থেকে দেখতে পারছে এটাই কম কিসে।

এবার রুবিনা কথা বলল
রুবিনাঃ কি চাই কেন এসেছ এখানে?

রুবিনা সিয়ামকে তুমি বলে সম্বোধন করাতে কিছুটা অবাকই হল। কারণ এ দু বছরে রুবিনাকে হাজার বলেও তুমি করে বলতে পারিনি তুমি করে বলতে বললেই সে একটা কথাই বলতো।

রুবিনাঃ তুমি কথাটা কেমন যেন পরপর লাগে। আপনি আমার কাছে ভালো লাগে যেদিন আপনি আমার পর হয়ে যাবেন সেদিন থেকে আপনাকে আমি তুমি করে বলবো। তাই সিয়াম আর কথা বাড়ায়নি সিয়াম কাছেও রুবিনার মুখে আপনি ডাকটা সবথেকে মধুর ডাক মনে হতো।

কিন্তু আজকে রুবিনা তাকে তুমি করে বলছে তাহলে কি রুবিনা তাকে পর করে দিয়েছে। হ্যা পরইতো সে। সে নিজেই রুবিনাকে পর করে দিয়েছিল। তাই অভিমান তো হবেই। কিন্তু এইবার অভিমান ভাঙতে তার বেশ কাঠঘর পোড়াতে হবে। এবার সে খুব বেশি আঘাত দিয়েছে রুবিনাকে। ভাবতেই মুচকি হাসলো সে।

রুবিনাঃ কি হলো কথা বলছো না কেনো। কেন এসেছ এখানে কি চাই?
সিয়ামঃ সিয়াম অকপটে বলে দিল তোমাকে। তোমাকে চাই আমার।

রুবিনাঃ কেন আমাকে কেন চাই আমার মত সেকেলে আনস্মার্ট পরনির্ভরশীল একটা মেয়েকে কেন চাই তোমার। আমারতো যোগ্যতাই নেই তোমার সাথে থাকার। তুমি নিজে আমাকে তোমার লাইফ থেকে দূর করে দিয়েছে তাহলে এখন কেন ফিরে এসেছ। আর তোমার মারিয়া কই?

সিয়াম হতাশ কণ্ঠে বলল মারিয়া নেই চলে গেছে সে অন্য কাউকে ভালোবাসে।

রুবিনাঃ ওওওও মারিয়া চলে গেছে। তাই এখন আমার প্রয়োজন আবার যখন আমার থেকে ভালো অন্য কাউকে পাবে তখন আবার এভাবে ছেড়ে দেবে? আর তুমি ভাবলে কি করে এত কিছুর পর আমি তোমার কাছে ফিরবো।

আমাকে কি তোমার মানুষ মনে হয় না। খেলার পুতুল ভাবো আমাকে যখন চাইবে ছুঁড়ে ফেলবে আবার যখন চাইবে কাছে টেনে নেবে।

এতদিন রুবিনার ভালোবাসা দেখেছো এবার ঘৃণা দেখবে।
সিয়ামঃ রুবিনা শোন আমি মারিয়াকে কোনদিন ভালোবেসে নেই আমি শুধু ওর মুহূর্তে আটকে ছিলাম বিশ্বাস করো আমি সব সময় তোমাকে ভালবেসেছি।

রুবিনাঃ ব্যাস অনেক হয়েছে আর না আপনার মুখ থেকে একটা কথাও শুনতে চাচ্ছি না। ভালোবাসা কথা বলছেন ভালোবাসার কথা আপনার মুখে মানায় না আপনি এক্ষুনি আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবেন। বলে আর এক মুহূর্ত দাড়ায় না সে সে সে আরো কিছু ভয়ানক কথা বলতে চেয়েছিল কিন্তু বড়রা সামনে আছে বলে কিছু বলতে পারলো না।

শআনুর যাওয়া দেখে সিয়াম তাকে ধরতে গেল তার আগেই সাদাকে সাদা তাকে টেনে ধরল আর মাথার ইশারা করে না করলো কিন্তু সিয়াম থামল না সে চিৎকার করে বলতে লাগল।

সিয়ামঃ রুবিনা প্লিজ যেওনা আমাকে আরেকটা সুযোগ দাও আমি সব আগের মত ঠিক করে ফেলব। রুবিনা প্লিজ ফিরে চলো তুমি যা চাইবে যেভাবে চাইবে সব তেমনই হবে। আমার জন্য না হয় অন্তত আমাদের বাচ্চার জন্য হলেও ফিরে চলো। তাকে কেন বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করছো। ওর কি দোষ। প্লিজ রুবিনা।

সিয়ামকে কোনভাবে আটকানো যাচ্ছিল না তাই সুমন সামনে এগিয়ে আসলো। আর মিসেস রাবেদা থেকে ছেলের পাগলামি গুলো দেখে যাচ্ছে। নাহ এর একটা বিহিত করতেই হবে।
সেভ সিয়ামকে শান্ত করার জন্য বলল।

শাহেলা: সিয়াম শান্ত হ বাবা আমি কথা বলছি ওনার সাথে। আমরা বোঝাব রুবিনাকে।
মায়ের কথা শুনে আশ্বস্ত হলো সিয়াম।

সে চুপ হয়ে গেল। এবার সে রুবিনার বাবা মায়ের দিকে ফিরল।
আমার কিছু কথা আছে আপনাদের সাথে। দয়া করে আগে আমার সম্পূর্ণ কথাটা শুনবেন।

মিজানুর:আমার মনে হয় না এ ব্যাপার নিয়ে আমাদের আর কোনো কথা থাকতে পারে। দয়া করে আপনারা আপনাদের রাস্তা দেখুন। আর খেয়াল রাখবেন আপনার ছেলেকে যেন আর আমাদের বাড়ির আশেপাশে না দেখি।
তাহলে আমাদের পুলিশ ডাকা ছাড়া আর কোন রাস্তা থাকবে না। আপনারা আসতে পারেন বলে মিজানুর সাহেব উপরে চলে গেল তার মেয়ের কাছে। তার মেয়ের এখন তাকে প্রয়োজন খুব বড় একটা আঘাত পেয়েছে সে। তাকে শান্ত করতে হবে।

শাহেলা: আপা আপনি অন্তত আমার কথাটা তো শুনুন। আমাকে একবার রুবিনা সাথে কথা বলতে দিন। তারপরও যে সিদ্ধান্ত নিবে আমরা মেনে নেবো আমি নিজের চোখের সামনে আমার সন্তানের এ অবস্থা সহ্য করতে পারছি না আর রুবিনাও সিয়ামকে ছাড়া ভালো নেই আমি জানি। তাছাড়া বাচ্চাটার কথা তো অন্তত ভাবুন সে কেন কষ্ট পাবে। আর সমাজে সিঙ্গেল মাদারের অনেক সমস্যা ফেস করতে হয়।

দোষ যতই ছেলেদের হোক না কেন মেয়েদেরকেই দোষারোপ করে আমি জানি। আমি চাইনা রুবিনার উপরে কেউ আংগুল তুলুক। আপনি দয়া করে একবার আমাকে রুবিনার সাথে কথা বলার রুবিনামতি দিন। ওর সাথে কথা বলি আমরা চলে যাব।

রুবিনার মা ভাবলো রুবিনা যদি সিয়ামের কাছে ফিরে যেতে চায় তাহলে আর সমস্যা কোথায়। তাছাড়া বাচ্চাটার কথা তো চিন্তা করতে হবে। বাবা ছাড়া বাচ্চা মানুষ করতে তার মেয়ের কষ্ট হয়ে যাবে সমাজের লোক নানান কথা বলবে।

রুবিনাপ এই সবাই দোষারোপ করবে। তাই রুবিনা কাছ থেকে জানা উচিত সে কি চায়। তাই সে রেহালা কে রুবিনার সাথে কথা বলার রুবিনামতি দিল।

সে ঘরের সামনে গিয়ে দেখলো বাবা মেয়ে বসে আছে তাই দরজা নক করল। রুবিনার বাবা বলে উঠলো
মিজানুর:আপনি এখানে কেন আপনাকে তো বলা হয়েছে যে আমরা কোন কথা শুনতে চাই না। আমাদের মেয়ে এতো ফেলনা হয়ে যায়নি যে আপনার চরিত্রহীন ছেলের কাছে তাকে ফেরত পাঠাতে হবে।
রুবিনা বাবাকে থামিয়ে দিল।

রুবিনাঃ আসতে দাও ওনাকে বাবা তুমি চিন্তা করো না উনি হয়তো আমার সাথে কথা বলতে চান।
মেয়ের কথা শুনে মিজানুর সাহেব আর কথা বাড়ালেন না রুবিনার ঘর ত্যাগ করলেন। আর মিসেস রাবেদা গিয়ে রুবিনার পাশে বসে আমায় হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে নিল।

রাবেদাঃ রুবিনা মা আমার। আমি জানি আমি এখন যে কথা গুলো বলবো তুই আমাকে স্বার্থপর ভাববি।

হ্যাঁ আমি স্বার্থপর নিজের সন্তানের জন্য। হয়তো প্রত্যেক মা-ই তার সন্তানের জন্য স্বার্থপর হয়। দেখ রুবিনা জীবনে কেউই একা চলতে পারে না সবারই একটা না একটা সঙ্গীর প্রয়োজন। তার সুখ-দুখ হাসি-কান্না সবকিছু ভাগাভাগি করার জন্য।

আমার ছেলেটার তোকে প্রয়োজন। সে তোকে অসম্ভব ভালোবাসে। আর পুরুষ মানুষ একটু আকটু এসব করেই। ওকে এবারের মত মাফ করে দে রুবিনা। তোরা আবার আগের মত হয়ে যা। আর তাছাড়া একবার বাচ্চাটার কথাতো ভাব।

সে কেন বাবা থাকতে এতিমের মতো বড় হবে। তারও তো বাবার প্রয়োজন। আমার ছেলে টাকে মেনে নে রুবিনা।
শাশুড়ির কথাগুলো শুনে রুবিনা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল।

রুবিনাঃ আপনি প্রমান করে দিলেন মা শাশুড়ি কখনোই মা হয় না। যদি আজকে আমার জায়গায় আপনার মেয়ে থাকতো তাকে কি শাহিনের মত ছেলের হাতে তুলে দিতেন। আর জীবন একা চলার কথা বলছেন তো কে বলেছে আমি একা আমার পাশে আমার বাবা মা আছে আমার সন্তান আছে আর কি চাই বেঁচে থাকার জন্য।

আর একটা কথা কি জানেন মা। ভালোবাসা মূল ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস।

আর একবার বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলে সেখানে আর ভালোবাসা তৈরি হয় না। বিশ্বাস হচ্ছে কাচের মত। ভেঙ্গে গেলে খুব কষ্টে হয়তো জোড়া লাগানো যায় কিন্তু দাগ সারাজীবন থেকে যায়। এই দাগ নিয়ে আর যাই হোক সংসার করা যায়না।

আমাকে মাফ করবেন আমি আপনার কথাটা রাখতে পারলাম না। কথাটা বলেই রুবিনা উঠে যাচ্ছিল কিন্তু আগে শাহিনের মারুবিনাকে আটকে দিল।

রাবেদাঃরুবিনা আজ এই মা তোর কাছে হাত পাতচ্ছে আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিস না ও মরে যাবে তোকে ছাড়া বাঁচবে না। ওকে একটা সুযোগ দে অন্তত বাচ্চাটার জন্য একটা সুযোগ দে।

রুবিনা হাত ছাড়িয়ে নিল আমার পক্ষে সম্ভব না বলে আর দাঁড়ালো না সে ওয়াশ রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিল তাঁর প্রচুর কান্না পাচ্ছে কিন্তু তাকে তো ভেঙে পড়লে চলবে না শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে। তাকে তো সিয়ামের অপমানের কড়া জবাব দিতে হবে।

সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে যে ভালো থাকার জন্য কোন সঙ্গীর প্রয়োজন নেই। সে একবার বিশ্বাস করে ঠেকেছে আর না। এইবার তো সামলে নিয়েছে পরের বার হয়ত মরেই যাবে।


পর্ব ১৩

সারা ঘর সমানে পায়চারি করছে সিয়াম। একবার ঘরে যাচ্ছে আবার সিঁড়ির কাছে যাচ্ছে। কখন মা আসবে সে রুবিনার খবর নিতে পারবে এই আশায়। তার চিন্তার অবসান ঘটিয়ে তার মা এল। কিন্তু তার চোখ-মুখ ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে।

তার বুকটা ধ্বক করে উঠলো তাহলে কি মা রুবিনাকে মানাতে পারেনি। না না মা তাকে বলেছে রুবিনার সাথে কথা বলবে আর মা কিছু বললে রুবিনা তা কখনোই অমান্য করবেনা সে জানে তাই কৌতুহল ধরে রাখতে না পেরে সে জিজ্ঞেস করল

সিয়ামঃ মা কথা হয়েছে তোমাদের কি বলেছে রুবিনা? ও আমার কাছে ফিরবে বলেছে তাই না?

আমি জানতাম ও তোমার কথা ফেলতে পারেনা। ও ঠিক চলে আসবে। তোমার তো খুশি হওয়ার কথা তোমার মুখটা এমন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে কেন? ওহ তুমি তো আবার ওকে পছন্দ করো না।

মা একটু এডজাষ্ট করে নাও প্লিজ রুবিনা অনেক ভালো মেয়ে তোমাকে অভিযোগের কোন সুযোগ দেবেনা। একবার ওকে আসতে দাও আমরা সবাই আবার একসাথে থাকব এই সময় তো সবার একসাথে থাকার প্রয়োজন। আমি তো সারাদিন অফিসে থাকব ওর দেখাশোনা করতে হবে।

তাহলে আমরা এক কাজ করি রুবিনা কবে আসবে বলেছে? আমি কালি জিনিসপত্র সব স্বিফট করে ফেলি নয়তো দেখবে রুবিনা এই অবস্থায় কাজ করা শুরু করে দেবে। নিজের খেয়াল তো রাখেই না কি জানি আমার বাবাটার কি খেয়াল রাখছে। আচ্ছা তাহলে আমি উঠি মালপত্র গুলো সেট করার ব্যবস্থা করি।

রাবেদাঃরুবিনা ফিরবে না। সিয়াম উঠে যাচ্ছিল মায়ের কথা শুনে আবার তার দিকে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকালো।
সিয়ামঃ রুবিনা ফিরবে না মানে?

রাবেদাঃ ফিরবে না মানে ফিরবে না। ও তোর সাথে সংসার করতে ইচ্ছুক না।

সিয়ামঃ সংসার করতে ইচ্ছুক না মানে কি? ওর ইচ্ছা-অনিচ্ছা কি আসে যায় আমি সংসার করতে ইচ্ছুক। সংসার তো আর ওর একার না আমারও তাহলে ও একা কেন সিদ্ধান্ত নেবে। আমি ওর সাথে কথা বলব আমি যাচ্ছি।
সিয়ামের কথা শুনে জাহিদ বলে উঠলো।

জাহিদঃ যাচ্ছি মানে কই যাচ্ছিস। আগে মায়ের পুরো কথাটা শুনে যা। কি কথা হয়েছে তাদের মধ্যে। তারপর মিসেস রাবেদা তারার রুবিনার কথাগুলো বিস্তারিত বলল। আর রুবিনা যে সিয়ামের কাছে ফিরবে না তা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিল।

ঠিকই তো করেছে ওর জায়গায় আমাদের বোন থাকলে আমি নিজেই সারাজীবন ওকে ঘরে বসিয়ে রাখতাম তারপরেও চরিত্রহীন পুরুষের সংসার করতে দিতাম না। আমার মতে রুবিনা ঠিক কাজ করেছে। আর আমি জানি ও ঠিক নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারবে। আর মা তুমি বা কিভাবে এসব কথা রুবিনাকে বলতে পারলে।

এতদিন তো ঠিক মেয়ে মেয়ে করেছ এখন ছেলের অভিনয় দেখেই পর করে দিলে। রুবিনা যদি তোমার মেয়ে হত তাহলে কি পারতে তাকে সিয়ামের মত লোকের কাছে ফেরত পাঠাতে। বা সিয়ামের জায়গায় যদি রুবিনা হত তাহলে কি সিয়াম তাকে মেনে নিত ?

কখনোই না তাহলে রুবিনা কেন মানবে মেয়ে বলে ? মেয়েদের কি আত্মসম্মান নেই যে তারা এত অপমানের পরেও সিয়ামের মত মানুষের সাথে সংসার করবে। ওর বাবা মা ভালো মানুষ বলে এখন পর্যন্ত সিয়াম কে কিছু করেনি আমি হলে জ্যান্ত পুঁতে দিতাম।

আর বারবার সে এতো ভালোবাসা ভালোবাসা করছে আজকে যদি মারিয়া তাকে মাঝরাস্তায় ফেলে না যেত তাহলে সে এতক্ষণে মারিয়ার পেছনে ঘুরত। রুবিনার কথা মুখেও আনত না। এখন মারিয়া নেই বলে রুবিনাকে চাই। কি বিশ্বাস আছে ওর যে অন্য মারিয়াকে পেয়ে আবার রুবিনাকে ছেড়ে যাবে না?

সিয়াম সম্পূর্ণ নীরব হয়ে আছে মাথা নিচু করে মা আর ভাইয়ের কথাগুলো শুনছে ঠিকই তো বলছে তারা। খুব তো অন্যায় করছে সে রুবিনার সাথে। তাই বলে কি ক্ষমা হয় না? একবার কি মাফ করা যায় না?

সে তো তার ভুল বুঝতে পারছে আর কষ্টও হচ্ছে। রুবিনাকে যে করেই হোক ফিরিয়ে আনতে হবে দরকার হলে পায়ে ধরবে। যতক্ষণ না পর্যন্ত মাফ করবে ততক্ষণ পর্যন্ত হাল ছাড়ছে না সে। সে তার অনাগত বাচ্চাও রুবিনাকে নিয়ে সুখে থাকতে চায়।

তারপর ভাবল আজকে আর না এমনিতেই অনেক ধকল গেছে রুবিনার উপর। তাই আর আজকে যাবে না সে রুবিনার কাছে কাল যাবে। একদিনে বেশি উত্তেজিত হলে রুবিনা অসুস্থ হয়ে যাবে। এমনিতেই ডক্টর নিষেধ করেছে বেশি মানসিক চাপ না দিতে।

দুদিন পর। সকাল 4 টা
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে আছে রুবিনার বাবা-মা রুবিনা ও সামিম। তারা রুবিনাকে সি অফ করতে এসেছে। রুবিনার মা প্রচন্ড কান্না করছে কান্না দেখে মনে হচ্ছে রুবিনা সারা জীবনের জন্য চলে যাচ্ছে।

রুবিনাঃ হয়েছে মা আর কত কাঁদবে আমি তো আর সারা জীবনের জন্য যাচ্ছি না। তুমি এমন করে কাঁদালে আমি কি যেতে পারবো ? আমারও তো কষ্ট হচ্ছে কই আমি তো কাঁদছি না আর তাছাড়া প্রতিদিন কথা হবে তোমাদের সাথে। খুব বেশি খারাপ লাগলে চলে যাবে আমাকে দেখতে। খুব কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছি। কান্না বন্ধ করো নয়তো আমি যাচ্ছি না।

অনেক কষ্টে রাবেয়ার কান্না থামে। একমাত্র মেয়ে কয় বছরের জন্য বিদেশ যাচ্ছে। তাছাড়া মেয়েটা একা এত দূরে পরদেশে গিয়ে কি মেয়ে ভালো থাকবে? কি খাবে না খাবে কে যত্ন নিবে তার? এ নিয়ে বেশ চিন্তা হচ্ছে তার যদিও সামিম তাকে আশ্বস্ত করেছে রুবিনার কোন ধরনের অসুবিধা হবে না তবুও মায়ের মন তো।

আরো কয়েকদিন থাকতে পারতো সে কিন্তু সিয়াম ছেলেটা আবার এসে সব গন্ডগোল করে দিল তাই বড় কিছু হওয়ার আগেই রুবিনামান এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যেতে চায়। অনেক কষ্টে সামলেছে নিজেকে কিন্তু সিয়াম বারবার এসে তাকে লন্ডভন্ড করে দিয়ে যায়।

আর গতকালকে ব্যবহার তো সে চাইলেও জীবনেও ভুলতে পারবে না। সিয়ামের জন্য রুবিনার মনে যে সম্মান টুকু ছিল তাও শেষ হয়ে গেল।
গতকাল ভোরের কথা।

রুবিনা মাত্র নামাজ থেকে উঠেছে এ মধ্যেই সে শুনতে পেল বাইরে থেকে কে যেন তার নাম ধরে ডাকছে রুবিনার বুঝতে দেরী হলো না এটা কার গলা। সে চুপচাপ বসে রইল সিয়ামের ডাকগুলো সে শুনেও না শোনার ভান করে থাকলো কিন্তু তার আকুতি মিনতি ভরা কন্ঠ শুনে আর তাকে উপেক্ষা করতে পারল না। প্রথম ভালোবাসা বলে কথা। সে বারান্দায় বেরিয়ে এলো।

রুবিনাঃ বলুন কি বলতে চান। কালকেই তো সব ক্লিয়ার করে দিয়েছি আমি আপনার সংসার করছি না আপনাকে মুক্তি দিয়ে দিয়েছি। আমার মুখ আর আপনার দেখার প্রয়োজন পড়বে না।

সিয়ামঃ রুবিনা প্লিজ এভাবে বলোনা তুমি তো জানো কতটা অগোছালো আমি। রাগের মাথায় আমি কি বলে ফেলি নিজেও জানিনা। রুবিনা আমি ভুল করেছি এবারের মত মাফ করে দাও। আবার আগের মত হয়ে যাই।

রুবিনা বারান্দায় আর সিয়াম নিচে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। তাই সুবিধার জন্য সিয়াম রুবিনাকে নিচে নামতে বললো। নীচে নেমে সিয়ামের মুখোমুখি দাঁড়ালো রুবিনা।

রুবিনাঃ কত সহজ না মুখে বলতে সবকিছু ভুলে যাও আবার আগের মত হয়ে যাই।

কিন্তু সত্যিই কি এত সহজ। আপনার কি মনে হয় এত তাড়াতাড়ি অমি আমার অপমানের কথা আমি ভুলে যাব। আপনি আমার যোগ্যতা নিয়ে আমার লাইফ স্টাইল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খাওয়া নিয়ে খোটা দিয়েছেন ইভেন আমাদের ভালোবাসা মুহূর্তটাকে আপনি সেটিসফেকশন এর নাম দিয়ে জঘন্য করেছেন।

একটা বাইরের মেয়ের সাথে আমার তুলনা করেছেন। এতকিছুর পরেও মনে হয় আপনার কাছে আমি ফিরব? এ কয়েক বছরে এই চিনেছেন আমাকে। সত্যি কথা বলতে আপনি আমাকে ভালোবাসেননি। ভালোবাসাটা একতরফা শুধু আমার পক্ষ থেকে ছিল।

আপনার সবগুলো প্রশ্নের জবাব নিয়ে আমার যোগ্যতা প্রমাণ দিয়ে তবে আমি আপনার সামনে আসব কিন্তু আপনার স্ত্রী হিসেবে না সে তো সেদিনই মারা গেছে যেদিন তার স্বামী তাকে রেখে অন্য নারীকে নিয়ে মেতে উঠেছে।

সিয়ামঃ প্লিজ রুবিনা সেগুলো একটাও সত্যি কথা ছিল না আমি মন থেকে একটা কথা বলিনি। রাগের মাথায় বলে ফেলেছি তুমি তো জানোই রাগ উঠে আমি একটা জানোয়ার হয়ে যাই।

প্লিজ রুবিনা অন্তত আমাদের বাচ্চাটার কথা ভাবো আমার বাবা ডাক থেকে বঞ্চিত করো না। আমি যখন জানতে পেরেছি আমার কেমন যে রুবিনাভূতি হয়েছিল তোমাকে বলে বোঝাতে পারবোনা আমার কাছ থেকে আমার এই রুবিনাভূতিকে কেড়ে নিও না। আমি একজন ভালো বাবা হতে চাই ভালো স্বামী হতে চাই।

আমার সন্তানের সব দায়িত্ব পালন করতে চাই। আমাকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখো কখনোই তোমার অমর্যাদা করবো না। তোমার কাছ থেকে দূরে গিয়ে আমি বুঝতে পেরেছি তুমি আমার জন্য কি।

তুমি বিশ্বাস করবে না কিনা জানিনা তুমি যাওয়ার পর একটা রাত আমি ঘুমাতে পারিনি। তোমাকে আমি ভালোবাসি রুবিনা।
কোন উত্তেজিত হয়ে উঠলো।

রুবিনাঃ আপনার এই ভালোবাসা কোথায় ছিল যখন আপনি অন্য মেয়ের সাথে রাত কাটিয়েছেন। এই ভালোবাসা কোথায় ছিল যখন আমার গায়ে হাত তুলেছেন। আপনার ভালোবাসা কই ছিলো যখন আপনি আমাকে অপমান করেছিলেন।

ভালোবাসার মানুষকে আর যাইহোক কষ্ট দেওয়া যায় না কই আমি তো পারিনি এত কিছুর পরেও আপনার ক্ষতি করতে কারন আমার ভালোবাসাটা সত্যি ছিল।

আর আপনি আমাকে কেন নিতে চাচ্ছেন আমি তো আপনার যোগ্যই না আপনাকে শারীরিক দিক দিয়ে সুখী করতে পারি নি এখন তো আরো পারবোনা প্র্যাকটিস নেই তো অনেক দিনের তাই আমাকে নিয়ে লাভ হবে না। তাছাড়া প্রেগনেন্ট অবস্থায় পারফরম্যান্স ভালো হবে না।

তার থেকে ভালো যে আপনার যোগ্য স্টাইলিশ মডেলের মত দেখতে হবে। আপনাকে প্রপার ভাবে স্যাটিসফাই করতে পারবে। বসে বসে আপনার অন্ন ধ্বংস করবে না। স্বাধীনভাবে চলাফেরা করবে এমন মেয়েকে বিয়ে করা উচিত। যাকে দেখে আপনার ফ্রেন্ডরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ করবে আর আমি থাকলে তো আপনি বারবার তাদের কাছ থেকে অপমানিত হবেন বিব্রত হবেন।

এবার সিয়ামের মেজাজ গরম হয়ে যাচ্ছে। সে কি বোঝাতে চাচ্ছে বারবার আর রুবিনা কি করছে এর মধ্যেই হঠাৎ আগমন হয় সামিমের।

সামিমঃ রুবিনা তুই এত সকালে বাইরে তাও আবার এই লোকটার সাথে। আর তোর সাহস কিভাবে হল আবার রুবিনার সাথে কথা বলতে। তোকে না আমি নিষেধ করেছিলাম এই এলাকায় না আসতে আর রুবিনার আশেপাশে না ঘেঁষতে (সিয়ামের কলার ধরে)

এবার সিয়াম আর নিজের রাগকে ধরে রাখতে পারলো না তাই সে সামিমের নাক বরাবর ঘুসি দিল সামিম ও কম না। দুজনের মধ্যে মারামারি লেগে গেল। রুবিনা তাদের থামাতে চেষ্টা করছে। শেষে না পেরে সে সিয়ামের গালে চড় মারল।

এই রাগটাই সিয়ামের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো আর রুবিনার চর যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করলো।
সিয়ামঃ ও তাহলে এই ব্যাপার এজন্যই তুমি আমার কাছে যেতে চাচ্ছো না নতুন নাগর জুটিয়েছো। এসব তো আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল।

এই সত্যি কথা বলতো বাচ্চাটাকি আমার নাকি তোমার সামিম ভাইয়ের? না মানে তুমি তো তাই প্রায় মায়ের নাম করে এখানে আসো তখন হয়তো তোমাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়ে গেছে। আমি তো আর তোমাকে পাহারা দিয়ে রাখতাম না।

আর এসব কুকীর্তি কারে প্রেগনেন্ট হলে আর বাচ্চাটাকে আমার নামে চালিয়ে দিচ্ছো। আর মারিয়া তো একটা ইস্যু মাত্র আমার কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য। এবার আমি সব ঘটনা বুঝতে পারছি। কেন তুমি এতকিছুর পরও বেশ হাসিখুশি ছিলে।

কথাটা শুনে রুবিনা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল সে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না শেষ পর্যন্ত এই অপবাদ শুনতে হলো নিজের চরিত্র নিয়ে। আর অন্য দিকে সামিম কথাগুলো শোনা মাত্রই ইচ্ছেমতো সিয়ামকে পিটিয়ে পুলিশ খবর দিল আগে থেকেই তার নামে জিডি থাকার কারণে সহজ হলো।

কারণ সামিম জানত সিয়াম এত সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নয় সে আবার আসবে। আর রুবিনা বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ল।

রুবিনা সারাদিনে আর একটা কথাও বলেনি সবাই তাকে নানান ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু সে একদম নির্বাক শুধু একটা কথাই বলল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই পারলে আজকেই।

তারপর থেকেই সামিম টিকিটের জন্য অনলাইনে ঘাঁটতে লাগল যেহেতু ভিসা আছে যেকোনো সময় যেতে পারবে কিন্তু টিকিট দুইদিন পরের পাওয়া গেল।

আর তাই আজ তারা দেশ ছাড়ছে নির্ধারিত সময়ের তিন দিন আগে। এ দুইদিন সিয়াম জেলে ছিল তাই ওর সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি।


পর্ব ১৪

স্পিকারে চমৎকার সুরেলা কন্ঠে বেল্ট বাধার নির্দেশনা দিচ্ছে। এতক্ষণ কালকে কথাগুলো মনে করছিলো রুবিনা। পাশের সিটে বসে আছে সামিম ভাই। সে রুবিনাকে বেল্ট বাঁধতে সাহায্য করলেন। সামিম ভাই একা এসেছেন সাদকে রুবিনার মায়ের কাছে রেখে এসেছেন।

সাদও বেশ খুশি সে দাদা-দাদীর কাছে থাকবে। বাবার বকুনির শুনতে হবে না স্কুলে যেতে হবে না। দাদার সাথে খেলতে পারবে আর কি চাই তার।

রুবিনার খুব ক্লান্ত লাগছে রাত দুরাত ঘুমাতে পারিনি সে সামিম ব্যাপারটা বুঝতে পেরে রুবিনাকে ঘুমিয়ে থাকতে বলল। এখনো ভোর কিছুক্ষণের মধ্যেই প্লেন ছেড়ে দেবে। রুবিনা তার মাতৃভূমি কে পাশাপাশি তার অতীতকে ছেড়ে যাবে ছিল চিরদিনের জন্য।

চোখ বন্ধ করে ঘুমের অতল গহ্বরে তলিয়ে গেলো রুবিনা। মাঝ খানে সামিম ভাই কয়েক বার ডেকেছিলো খাওয়ার জন্য। কিন্তু সাড়া দেয় নি। খুব গভীর ঘুম পেয়েছে তার ঘুমানোর প্রয়োজন। বেশ কয়েক ঘন্টা পর হালকা একটা ঝাকুনিতে রুবিনার ঘুম ভেঙে গেল।

মনে হচ্ছে বেশিক্ষণ হয় নি ঘুমিয়েছে। তাই আবারো চেষ্টা করল ঘুমানোর জন্য। কিন্তু পারলো না সামিম ভাইয়ের জন্য উনি জোর করে খাওয়ালো রুবিনাকে। সকালে শুধু এক গ্লাস জুস আর একটা পাউরুটি খেয়ে এসেছে।

স্পীকারে আবারো সেই সুরেলা কন্ঠ ভেসে এলো। তারা দুবাই পৌছে গেছে। এরপর এখান থেকে সোজা কানাডা। আরো বেশ কিছু সময়। রুবিনা পাশের সিটে তাকিয়ে দেখল সামিম ভাই ঘুমাচ্ছে মুখ হা করে এটা তার অভ্যাস রুবিনার খুব হাসি পেল। সামিম ভাই সজাগ থাকলে গল্প করতো কিন্তু তার ঘুম নষ্ট করতে ইচ্ছে করছে না।

হঠাৎ তার মনে পড়ল আসার সময় সে ব্যাগে করে কিছু বই নিয়ে এসেছে তারপর এক এয়ার হোস্টেসের সাহায্যে ব্যাগটা নামিয়ে সেখান থেকে বই বের করে আবার ব্যাগটা রেখে দিল তারপর বই পড়ায় মনোযোগ দিল। বেশ কিছুক্ষণ পরে সামিম ভাইয়ের ঘুম ভেঙে যায়। সে নাস্তা করে রুবিনার সাথে টুকটাক কথা বলে তারপর রুবিনা আবারো বইয়ের দিকে মনোযোগ।

একটা ঝাঁকুনি দিয়ে প্লেন টা মাটি স্পর্শ করলো। লম্বা একটা জার্নি ছিল। সবাই ধীরে ধীরে বেড়িয়ে যাচ্ছে। তাই সামিম ভাই আড়মোড় ভেঙে আমার ব্যাগ টা নিয়ে ধীরে ধীরে বেড়িয়ে এল। বিমান থেকে পা টা কানাডার মাটিতে রাখতেই শরীরে কেমন যেন একটা শিহরন বয়ে গেল।

হালকা বিশুদ্ধ বাতাসে রুবিনার ভিতর টাকে ছেদ করে ছুয়ে গেল। রুবিনা বুক ভরে একটা নিঃশ্বাস নিলো। আর মনে মনে বলল

“আমি এসে গেছি আমার যোগ্যতা অর্জন করতে নতুন করে নিজেকে গড়ে তুলতে সিয়ামকে তার অপমানের জবাব দিতে”

তারা যে এয়ার পোর্টে এসে দাড়িয়েছে সেটা স্বর্নের তৈরি কোনো বিশাল ম্যানশনের মত মনে হচ্ছে। যেন উজ্জল কোন সোনালি আভা ছড়াচ্ছে।

নাম Winnipeg James Armstrong Richardson International Airport.

তারপর তারা একটা ক্যাব ভাড়া করে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে গেল। সামিমের কথামতো তার চাচা চাচি সত্যিই খুব অমায়িক খুব ভালো ভাবে সমাদর করলো তাদের।

আর সামিমের কাজিন নেহা প্রায় রুবিনার সাথে লেগেই থাকল মেয়েটা প্রচুর চঞ্চল তা তার কথাতেই বোঝা যাচ্ছে। নেহা রুবিনার থেকে 5 থেকে 6 বছরের ছোট হবে। আসতে না আসতেই রুবিনাকে সবাই আপন হয়ে নিল।

তারপর কিছুক্ষণ কথা বলে বিশ্রামের জন্য পাঠিয়ে দিলো এমনিতেই অনেক জার্নি করে এসেছে তারা বেশিক্ষণ থাকলে শরীর খারাপ করবে।

রাতে রুবিনা আর ডিনার করল না প্রচন্ড ক্লান্ত থাকায় আর ঘর থেকে বের হল না আর সামিমো তার চাচা চাচীকে সবকিছু খুলে বলল তারা রুবিনার সাথে ঘটে যাওয়া সব কিছু নিয়ে খুব দুঃখ প্রকাশ করল।

পরের দিন সামিম ইউনিভার্সিটি গিয়ে রুবিনার এডমিশন যাবতীয় কাজ কমপ্লিট করে এলো সামনের সপ্তাহ থেকে ক্লাস শুরু হবে রুবিনাকে তার ডিপার্টমেন্ট দেখিয়ে দিল লাইব্রেরী দেখিয়ে দিল তারপর বাড়িতে চলে এল।

ঘুরাঘুরি আর আড্ডায় মাধ্যমেই সত দিন চলে গেল। সামিম যাওয়ার সময় অভ্যাসবশত একগাদা উপদেশ দিয়ে গেল আর রুবিনাকে তা চাচা-চাচীর কাছে রেখে এলো।

প্রথম দিন একটু নার্ভাস ছিল রুবিনা। কিন্তু তা কিছুক্ষণের মধ্যেই কেটে গেল সে দুজন বাঙালি ফ্রেন্ড পেল ও একজন ইন্ডিয়ান। এছাড়াও কয়েকজন ব্রিটিশ আর লোকাল ছেলে মেয়েদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেল। তারা সারা দিন গল্প আড্ডায় মেতে থাকতো।

রুবিনা আস্তে আস্তে তাদের সাথে ফ্রি হয়ে গেল। তাছাড়া বাড়তি কোন সমস্যাই ছিল না কোনরকম প্রয়োজন হলে তার লোকাল ফ্রেন্ডরা থাকে হেল্প করত। রুবিনার চঞ্চলতায় মুগ্ধ হয়ে অনেকেই রুবিনাকে প্রপোজ করে কিন্তু রুবিনা এসব বিষয় খুব সুন্দর ভাবে হ্যান্ডেল করত। সে সম্পর্কে ভয় পায় আর কারো সাথে জড়াতে চায় না সে।

দিন এভাবে যেতে লাগলো ভার্সিটি ফ্রেন্ড নেহার সাথে আড্ডা পড়ালেখা মা-বাবার সাথে কথা বলা আর সামিম ভাইয়ের উপদেশ সবকিছু মিলেই রুবিনার দিন বেশ ভালই কাটতেলাগলো শুধু মাঝে মাঝে সিয়ামের কথা মনে পড়লেই বুকে চিনচিন ব্যথা হতো।

দেখতে দেখতে রুবিনার ডেলিভারি টাইম হয়ে গেল রুবিনার মা রুবিনা ডেলিভারি 1 মাস আগে কানাডা আসলো সে রুবিনাকে নিয়ে অন্য কোথাও থাকার জন্য জোর করলেও সামিমের চাচি দিল না রুবিনাকে তারা নিজের মেয়ের মতোই ভাবে।

রুবিনার প্রেগনেন্সিতে কিছু সমস্যা থাকার কারণে তার সিজার করতে হলো অপারেশন রুমে যাওয়ার আগে একবার হলেও শাহিনের মুখ দেখতে খুব ইচ্ছা করেছিল যদি আর দেখা না হয় আর বেঁচে না ফিরে।

রুবিনার একটা ফুটফুটে মেয়ে হল। এই সময় সিয়াম থাকলে হয়তো খুব খুশি হতো। সে সব সময় একটা মেয়ে চাইতো। তারপরে সেদিনের কথাই ভেবে রুবিনার চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল কারণ সিয়াম নিজেই তার সন্তানকে অস্বীকার করেছে।

রুবিনা তার মেয়ের নাম রাখল তুহিন। তুহিন রুবিনার জীবনে এসেছিল অন্যরকম হয়ে তাই এই নাম রাখা। কয়েক মাস পরেই তার পরীক্ষা তাই মেয়ে আর পড়ালেখা নিয়ে তার দিন কাটছিল।

পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলো এবং সেখানে একটা ভালো চাকরির অফার পেল এবং তার বাবাকেও একবারের জন্য এখানে নিয়ে আসলো তারা আলাদা বাসায় উঠল। রুবিনার ছোট সংসার গরে উঠলো। বাবা মা আর মেয়েই তার দুনিয়া। যেখানে সিয়ামের কোন অস্তিত্বই নেই।

সবারই অতীত থাকে। সেই অতীতে হাজারো কষ্ট লুকিয়ে থাকে। তীব্র যন্ত্রণা থাকে। কিন্তু ধীরে ধীরে মানুষ শোক ভুলে যায়। সেই শোক শক্তিতে পরিণত হয়। জীবনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। আল্লাহ এভাবেই মানুষকে তৈরি করেছেন। তানাহলে কষ্টে মানুষের জীবন থেমে যেত। পৃথিবী তার নিজস্ব গতি হারাত।
চার বছর পর।

রুবিনা তার জীবনে এগিয়ে গেলেও সিয়াম এগোতে পারেনি। সময় বহমান তার সাথে মানুষ মানুষের জীবনও। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সে আবার রুবিনার কাছে গিয়েছিল তার কাছে ক্ষমা চাইতে কিন্তু তাকে বাড়ির সামনে থেকে তাকে বিদায় করে দিয়েছিল রুবিনার বাবা।

রুবিনাকে এক পলক দেখার আশায় রোজ রাতে রুবিনার বাড়ির সামনে দাড়িয়ে থাকতো কিন্তু রুবিনার দেখা মিলত না। সে চাকরি ছেড়ে দেয় দিনরাত ওদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।

রুবিনার বাবা মায়ের কাছে রুবিনার কথা জানতে চায় কিন্তু তারা বলতে নারাজ। তারপর তার মায়ের কাছ থেকে জানতে পারল রুবিনা লেখাপড়ার জন্য রুবিনা বিদেশ গিয়েছে। তারপর থেকেই সে কয়েক মাস নিজেকে গৃহবন্দী করে ফেলল।

দিনরাত রুবিনার কাপড়-চোপড় আর ছবি নিয়ে পড়ে থাকত ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতো না। কিন্তু আস্তে আস্তে সে স্বাভাবিক হয়ে গেল আবার অফিস জয়েন করলো কিন্তু রাত হলেই রুবিনার স্মৃতি নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতো

সে দিনরাত রুবিনা কথা ভাবে তার বাচ্চার কথা ভাবে। নিশ্চয়ই তার সন্তান পৃথিবীতে এসেছে সেকি ছেলে নাকি মেয়ে সে কি আর রুবিনাকে আর তার সন্তানকে চোখে দেখতে পারবে না।

ছেলের বিষণ্নতা ও মন খারাপ দেখে সিয়ামের মা প্রায়ই তাকে বিয়ের কথা বলে মেয়েদের ছবি দেখায় কিন্তু সে বিয়ে করতে নারাজ সে রুবিনাকে ভালোবাসে। রুবিনা ছাড়া তার মনে অন্য কারো জায়গা হবে না।

অন্য কাউকে বিয়ে করলে অবশ্যই তাকে ভালবাসতে হবে নয়তো তাকে ঠকানো হবে কিন্তু সিয়াম আর কাউকে ঠকাতে চায় না। একবার ঠকানোর ফল সে হারে হারে পাচ্ছে। নিজের সন্তান থাকতেও আজ চার বছরে সে তার মুখ দেখতে পারেনি বাবা ডাক শুনতে পারেনি তার থেকে বড় হতভাগা আর কে আছে।

আর সবই তার কর্মের ফল। সে নিজে এসবের জন্য দায়ী। হয়তো রুবিনা ঠিকই করেছে সে রুবিনাকে ডিজার্ভ করে না। রুবিনা যে কতটা পবিত্র তা সিয়ামের থেকে ভালো হয়তো কেউই জানেনা তারপরেও সে সেদিন রুবিনার চরিত্র নিয়ে কথা বলেছেন। তার কোন অধিকারই নেই রুবিনার সাথে থাকার।

সেদিন পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। মাথা ঠান্ডা হওয়ার পর সে বুঝতে পারে সে রুবিনাকে কি বলে ফেলেছে রুবিনার চরিত্রে দাগ দিয়েছে।

তারপর সে পুলিশকে অনেকবার ছাড়ার জন্য রুবিনারোধ করেছে তার বাবা-মাকে খবর দেওয়া হয়েছিল তারাও চেষ্টা করেছে সিয়ামকে ছাড়ানোর শেষ পর্যন্ত না উপায় না পেয়ে টাকা অফার করেছে কিন্তু দুই দিনের আগে পুলিশ তাকে ছাড়েনি। আর যখন ছাড়া পেল তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে রুবিনা তার থেকে দূরে চলে গেছে।

রুবিনা যাওয়ার একবছর পর সিয়াম তখন স্বাভাবিক ছিল। হঠাৎই অফিসে যাওয়ার সময় মারিয়ার সাথে দেখা হয়ে গিয়েছিল। মেয়েটা আর আগের মত নেই অত মেকআপ নেই মুখে সাধারন একটা সালোয়ার কামিজ পড়েছে চোখের নিচে কালো চেহারা আর আগের মত লাবণ্য নেই কেমন যেন মিলিয়ে গেছে।

মারিয়াকে দেখে সিয়াম সৌজন্যতার খাতিরে ডাক দিল প্রথমে মারিয়া তাকে দেখে না দেখার ভান করল কিন্তু সিয়াম সামনে যাওয়ার পর তাকে উপেক্ষা করতে না পেরে সৌজন্যতার খাতিরে মুচকি হাসি দিলো। সিয়ামই প্রথমে জিজ্ঞেস করল।
সিয়ামঃ কেমন আছো?

মারিয়াঃ দেখতেই তো পাচ্ছো কেমন আছি। পাপের ফল ভোগ করছি। পারলে আমাকে মাফ করে দিও তোমাকে ঠকানোর জন্য আমি চাইনি তোমাকে ঠকাতে কিন্তু কিভাবে জানো সবকিছু চেঞ্জ হয়ে গেল।

সিয়ামঃ সে কবেই তোমাকে মাফ করে দিয়েছি তুমি ধোকা না দিলে তো বুঝতেই পারতাম না আমি কত বড় ভুল করেছি। ছাড়ো এসব কথা এখানে কেন আর এই অবস্থায়

মারিয়াঃ তোমার কাছ থেকে যাওয়ার পর আমি আয়াজকে বিয়ে করি সবকিছু ভালই চলছিলো। কয়েক মাস পর তাদের বাবা-মা নাতি নাতনির মুখ দেখতে চাইছিল আমরাও কোন সমস্যা ছিল না।

তাছাড়া চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম সংসারের সব কাজ আমাকে করতে হতো কিন্তু কয়েক মাস চেষ্টা করার পরেও যখন বাচ্চা হল না তখন ডাক্তার দেখালাম সেখান থেকে জানতে পারলাম আমি কোনদিন মা হতে পারব না কারণ এর আগে আমি দুইবার এবরশন করিয়েছি ভুল অপারেশনের কারণে দ্বিতীয় বার আমার জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে।

এরপর থেকেই সবকিছু আস্তে আস্তে পরিবর্তন হতে লাগলো আয়াজ আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতো গায়ে হাত তুলতে আমাকে সহ্য করতে পারত না এমনকি তার বাবা-মাও না।

তারপর একদিন আমাকে ডিভোর্স লেটার দেয় কিন্তু আমি ওকে সত্যিই ভালোবাসি তাই ডিভোর্স দিতে অস্বীকার করি সেদিন আমাকে প্রচুর মারে তারপরেও কিছু বলিনি। তারপরের দিনই আয়াজ একটা মেয়েকে বিয়ে করে আনে এখন সতীনের সংসার করি।

একবার মা-বাবার কাছে চলে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু তারা আমাকে তাদের কাছে রাখেনি। তাই আবার চলে এসেছি ভালোবাসার মানুষটাকে চোখের সামনে দেখাটাই কম কি। থাক না সে অন্য কাউকে নিয়ে ভালো। আসি ভালো থেকো পারলে মাফ করে দিও আর রুবিনাকেও বলো মাফ করে দিতে।

সেদিন সিয়াম শুধু দাঁড়িয়ে মারিয়ার কথাগুলো শুনছিল।

আর শেষ কথাটা তার মাথায় বারবার আসছিল মারিয়াতো তবুও তার ভালোবাসাকে চোখের সামনে দেখতে পায় আর সিয়াম তো তাও পারে না। কিন্তু সেই অপেক্ষায় আছে রুবিনার অপেক্ষায় ফিরে না আসুক অন্তত মাফ করবেন সে যে অন্যায় করেছে তার মাফ হয় না। রুবিনাকে হারিয়ে খুঁজছে সিয়াম। খুব করে দেখতে চাচ্ছে তাকে।


পর্ব ১৫

রুবিনা একটা এনজিওতে কাজ করছে প্রায় তিন বছর যাবত। সেখানেই তার ট্রান্সফারের জন্য কাগজপত্র জমা দিয়ে আসলো। ভিনদেশে আর থাকতে চায় না সে। আর তাছাড়া দিন শেষে পাখি যেমন নীড়ে ফিরে তেমনি একটা সময় পর সবারই যার যার মাতৃভূমিতে ফিরতে হয়।

তার এনজিওর বাংলাদেশ একটি শাখা রয়েছে সেখানেই তার ট্রান্সফারের আবেদন করেছে। এবং কর্তৃপক্ষ তার আবেদন মঞ্জুর করে নেয়।

15 দিন পর জয়নিং আর ৭ দিন পর এই দেশে ফিরবে। তাই তার কলিগরা তার জন্য ফেয়ারওয়েল পার্টি রাখল এবং রুবিনা সেখানে সাখাওয়াত চাচা। মনি মা (সামিমের চাচা চাচি)ও নেহা কেও ইনভাইট করলো।

সামিমের চাচি মালিহা রুবিনাকে নিজের মেয়ের মত স্নেহ করেছে একজন মায়ের মত ভালোবেসেছে প্রেগনেন্সির সময় খেয়াল রেখেছে শাসন করেছে আর রুবিনাও তাকে মায়ের মত দেখে। আর তাকে মনি মা বলে ডাকে।

ফেয়ারওয়েল পার্টি রুবিনার বাড়ির গার্ডেনে করা হচ্ছে। সে একটা মিষ্টি কালারের জামদানি শাড়ি পরেছে চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া কপালে ছোট্ট টিপ আর হালকা রঙের একটি লিপস্টিক ও হাতে কাচের চুড়ি। আর তুহিন পড়েছে বেবি পিংক কালারের একটি ফ্রক। তাকে একদম রাজকন্যার মত লাগছে।

টুকটুক করে মায়ের সাথে হেটে আসছে সে।
আনন্য দেখতে একদম মায়ের মতোই হয়েছে কিন্তু গায়ের রংটা পেয়েছে সিয়ামের ধবধবে সাদা আর চেহারায় প্রচন্ড মায়া। আর সাথে দুষ্টু অনেক। সারা ঘর মাতিয়ে রাখে তার দুষ্টুমি আর পাকা পাকা কথায় মায়ের খুব ভক্ত সে।

সন্ধ্যায় মা বাসায় ফিরলেই তাকে জাপটে ধরবে এটা ওটা জিজ্ঞেস করবে আর মায়ের আঁচল ধরে ঘুরবে। বাইরের আবহাওয়া থাকার কারণে তুহিন কে একদম ফরেনার মনে হয় সে কিছুটা ইংলিশও বলতে পারে ফ্রেন্ডেদের সাথে ইংলিশে কথা বলে সে।

এখনো তুহিন তার মায়ের পিছু পিছু ঘুরছে হঠাৎ তার এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে যায় আর সে তার দিকে দৌড় দেয়।
রুবিনাঃ অন আস্তে দৌড়াও বাবা পড়ে যাবে তো। কে শোনে কার কথা সে দৌড়ে তার ফ্রেন্ডের কাছে চলে যায়। (রুবিনা তার মেয়েকে সংক্ষেপে অন বলে ডাকে)

আনঃ হ্যালো রেইন হাউ আর ইউ?
রেইন: আ’ম ফাইন। বাট আই উইল মিস ইউ আফটার ইউর লিভ। বাই দ্যা ওয়ে ইউ লুকিং সো প্রেটি।
অন: থ্যাঙ্ক ইউ। আই উইল মিস ইউ টু রেইন। (মন খারাপ করে)

এরমধ্যে হঠাৎই রেইন এর বাবা তাকে ডাক দিল সে দৌড়ে তার বাবার কোলে উঠে গেল। তার বাবা হাসিমুখে তাকে কোলে নিল আদর করতে থাকল। এইসবের দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকলো তুহিন। বিষয়টা লক্ষ্য করলো রুবিনা।

সে মেয়ের কাছে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিল আর তুহিন রুবিনাকে জড়িয়ে ধরল।

তুহিনার বয়স সাড়ে তিন বছর বেশ কিছু না বুঝলেও বাবা কি তা বোঝে মাঝে মাঝেই বাবার কথা বলে জিজ্ঞেস করে কিন্তু রুবিনা কিছু বলতে পারেনা।

রাতে সবাই খাওয়া-দাওয়া করে কিছুক্ষণ আড্ডা দেয় তারপর যাওয়ার সময় একেকজনকে একেক টা গিফট দিয়ে যায় রুবিনাকে। তুহিনর ফ্রেন্ডরাও তাকে বিভিন্ন গিফট দেয় তারপর সবাই বিদায় নিয়ে চলে যায়।

সবকিছু গোছগাছ করতেই এক সপ্তাহ চলে যায় তারপর তারা সিয়ামের চাচা চাচি থেকে বিদায় নিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

সামিম আর সদ এয়ারপোর্ট এসেছে রুবিনাদের রিসিভ করতে। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়েই রুবিনা সামিমকে দেখতে পায় তাকে ডাক দেওয়ার আগেই তুহিন কোল থেকে নেমে দৌড়ে যায় সামিম এর কাছে। সে তার সামিম মামাই কে ভালো করে চেনে।

সামিম মামাই তার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। প্রতিদিন কথা হয় তার সাথে। তুহিন কে রুবিনা বকে দিলে সামিম রুবিনাকে বকে দেয়। তাইতো সে সবচেয়ে বেশি প্রিয়।

এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছে সিদাত কোত্থেকে যেন এক জোড়া ছোট ছোট হাত তার পা জাপটে ধরে পেছন ফিরে দেখে তার ছোট্ট পরী।

সামিমঃ কেমন আছে আমার লিটল প্রিন্সেসটা। তুমি তো অনেক বড় হয়ে গেছো।
তুহিনঃ খুব ভালো। তুমি কেমন আছো মামাই।

সামিমঃ আমিতো বিন্দাস আছি। তো বলতো আসার সময় মা তোমাকে বিরক্ত করে নিত।
তুহিনঃ একদম না শুধু একবার বকুনি দিয়েছিল। মুখ গোমরা করে।

সামিমঃ কি! এত বড় সাহস আমার প্রিন্সেসকে বকুনি দেয় আজ ওর একদিন কি আমার একদিন। বলেই
সে মুচকি হেসে তুহিনকে কোলে তুলে সামনে তাকায় রুবিনা এবং বাকি সবাইকে আসতে দেখে সেদিকে আগায়।

আগের থেকে কিছুটা মোটা ও সুন্দর হয়ে গেছে রুবিনা। চেহারায় আগের মত আর দুষ্টুমি ছাপ নেই আছে গম্ভীরতা। এই কয়েক বছরে যেন বড় হয়ে গেছে মেয়েটা। সে তুহিন কে রুবিনার কোলে দিয়ে মামাকে জড়িয়ে ধরে
সামিমঃ আসার সময় কোনো সমস্যা হয়নি তো।

রুবিনার বাবা: না বাবা কোন সমস্যাই হয়নি।

সামিমঃ আপনার হয়তো বেশ ক্লান্ত চলুন যাওয়া যাক এখান থেকে লাভ নেই। কিরে রুবিনা তুই এত মোটা আর বিচ্ছিরি দেখতে হয়েছিস কেন। খাবার মজা পেয়ে কি সারাদিন খেতি নাকি কাজকর্ম কিছু করতি? কি হাল করেছিস নিজের দেখলে মোটা মানুষও লজ্জা পাবে।

এবার রুবিনার রাগ উঠে গেল কি সমস্যা লোকটার সবসময় খোঁচা দিয়ে কথা বলতে হবে কি মোটা হয়েছে সে মাত্র ৬০ কেজি তার ওজন বয়সের তুলনায় ঠিকই আছে। লোকটার কোনদিন ভালো হলো না। তাই সে আর কথা না বলে মুচকি হাসলো।

হঠাৎ তার পেছন থেকে একটা 7-8 বছরের ছেলে বেরিয়ে এলো। রুবিনার তাকে চিনতে বেশি বেগ পেতে হলো না এত সাদ সে তাকে হাতের ইশারা করলো সামনে আসার জন্য।

সাদৎতার পিমনির ইশারা পেয়ে দৌড়ে তার সামনে গেল রুবিনা তাকে জড়িয়ে ধরে বলল কেমন আছে আমার বাবাটা?
সাদঃ খুব ভালো তুমি কেমন আছো পিমনি। আমি তোমাকে খুব মিস করতাম।

রুবিনাঃ আমিও তোমাকে খুব মিস করছি সোনা।
এতক্ষণ সবকিছু দেখছিল তুহিন তার মাকে অন্য কেউ জড়িয়ে ধরতে দেখে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো সে সাদকে তার মায়ের থেকে দূরে সরিয়ে দিল।

তুহিনঃ কে তুমি আমার মাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে ছিলে কেন তুমি জানো না আমার মা শুধু আমাকে ভালবাসে।
সাদঃ আমি তোমার পিমনিকে চুপ জড়িয়ে ধরেছি তুমি কে ছোট পিচ্চি।

তুহিনঃ আমি পিচ্চি নই ওকে আমি মামাস বিগ গার্ল। হুহ।
সাদঃ পিমনি এই মেয়েটাকে সে কখন থেকে আমার সাথে ঝগড়া করে যাচ্ছে।

এতক্ষণ সবাই তাদের ঝগড়ার শুনে মিটমিট হাসছিল। তারপর রুবিনা বলল..

রুবিনাঃ সাদ বাবা ও হচ্ছে তোমার বোন তুহিন। আর তুহিন সাদ তোমার বড় ভাই হয়। তার সাথে ভালো ভাবে কথা বল। ভাইয়াকে হাই বল।
তুহিনঃ আমার এমন পচা ভাইয়া লাগবে না। আমার মাকে নিয়ে যায়।

সাদঃ আমারও তোমার মত পচা বোন লাগবেনা।

তারপর বহু কষ্টে তাদের দুজনের ঝগড়া থামিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। তারা নিজ বাসায় উঠল আগে থেকেই সামিম লোক দিয়ে ঘর পরিষ্কার করে রেখেছে। তারপর তারা কোন রকম ফ্রেশ হয়ে যার যার রুমে বিশ্রামের জন্য চলে গেল আর সামিম ডিনারের ব্যবস্থা করতে গেল।

রাতে খাওয়া দাওয়া করে সবাই ঘুমিয়ে গেল। খুব লম্বা জানি পর ক্লান্তি আসাটাই স্বাভাবিক।
সিয়াম এই কয়েক বছরে অভ্যাসবশত প্রায়ই রাতে রুবিনাদের বাড়ির সামনে যায়।

যদি রুবিনার সাথে একবার দেখা হয় সেই আশায়। আজ কেন জানি সিয়ামের মন বাড়িতে টানছে। বারবার মনে হচ্ছে আজ রুবিনার দেখা মিলবে। তাই আর দেরি না করে রুবিনাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। আধঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে গেল।

সেখানে যাওয়ার পর সিয়ামের খুশির সীমা রইল না রুবিনাদের বাড়ি আলো জ্বলছে রুবিনার ঘরের বারান্দায় আলো জ্বলছে তাহলে কি রুবিনা ফিরে এসেছে। সারারাত শেয়ার দুচোখের পাতা এক করল না এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো রুবিনার বারান্দার দিকে যদি একবার দেখা হয় সেই আশায়।

কিন্তু সকাল 9 টা পার হওয়ার পরেও রুবিনার দেখা মিলল না। হঠাৎই কোত্থেকে একটা বল এসে সিয়ামের পায়ের কাছে থাকল। সেবল টা হাতে তুলতেই একটা তিন থেকে সাড়ে তিন বছরের বাচ্চা মেয়ে দৌড়ে সামনে এসে দাঁড়ালো।

মেয়েঃ তুমি আমার বলটাকে হাতে কেন নিয়েছো। ডোন্ট ইউ নো দ্যাট অন্যের জিনিস না বলে নেওয়া ব্যাডম্যানার। (কোমরে হাত দিয়ে)
সিয়াম নিচু হয়ে বাচ্চাটি গাল টেনে দিল।

মেয়েঃ ওফফো ডোন্ট টাচ মাই চিক। আই ডোন্ট লাইক ইট।

সিয়ামঃ ওরে বাবা আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম। সরি আর হবে না। তা কি নাম তোমার?
মেয়েঃ আমি তোমাকে আমার নাম কেন বলব। মা বলেছেন ডোন্ট টক উইথ স্ট্রেঞ্জারস।

কেন যেন সিয়ামের বাচ্চা মেয়েটিকে খুব আপন লাগছে তার যদি একটা মেয়ে হতো তাহলে নিশ্চয়ই ও সমান বড় হত। হঠাৎই কেউ একজন বাচ্চাটিকে ডাক দিল বাচ্চাটি স্বপ্নের হাত থেকে বল নিয়ে তাকে বাই বাই দিয়ে চলে গেল।

আর সিয়াম বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কারণ বাচ্চা মেয়েকে রুবিনার বাবা নানু ভাই বলে ডাক দিয়েছে। সিয়ামের যা বোঝার তা বুঝে গেছে এতক্ষণ সাথে কথা বলছিল অথচ তাকে চিনতে পারল না।

সিয়াম ভাবল আপাতত তার বাড়ি যেতে হবে অনেক কাজ পড়ে আছে। বাড়ি গিয়ে তার খুশীর সীমা রইল না সে তার মাকে জড়িয়ে ধরে বারবার বলছে।

সিয়ামঃ মা অনূঢ়া ফিরে এসেছে যেন আমার একটা মেয়েও আছে একদম বাচ্চা পুতুল কি সুন্দর করে কথা বলে আমাকে বলে কি জানো মা নিষেধ করেছেন স্ট্রেঞ্জারদের সাথে কথা বলতে।

চেহারা একেবারে রুবিনামত টুকটুক করে হাটে কথা বলে। মা ও আমার মেয়ে আমার আর রুবিনার মেয়ে। বলতে বলতেই স্বপ্ন চোখে খুশিতে পানি এসে পড়লো।
আর তার মা প্রতিউত্তরে কিছু বলল না।

বাড়ি এসে প্রথমেই সে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নিল। রুবিনার সাথে কথা বলতে হবে তার। একবার হলেও মাফ চাইতে হবে। তার জন্য সুযোগ আর সময় দুটোই প্রয়োজন।


পর্ব ১৬

বিকেলে তুহিনর বায়নায় রুবিনা তাকে সামনের পার্কে নিয়ে গেল সাথে সাদ ও আছে। সকাল থেকেই পিমনির পিছনে পড়ে আছে সে। আর তাকে দেখে তুহিন রেগে আগুন। এই ছেলে কেন তার মায়ের সাথে থাকবে। এ নিয়ে কয়েক দফা ঝগড়া হলো তাদের দুজনের মধ্যে। কিন্তু এক পর্যায়ে বিষয়টি খারাপের দিকে যায়।

তুহিনঃতুমি সব সময় আমার মায়ের কাছে থাক কেন তোমার কি মা নেই? গো টু ইউর মাদার। হোয়াই আর ইউ টেকিং মাই মাদার ফ্রম মি?

মায়ের কথা শুনে সাদ চুপ হয়ে গেল তারপর দৌড়ে অন্যদিকে চলে গেল। রুবিনা তাকে থামাতে পারল না। রুবিনা সাদের মন খারাপের কারণ বুঝতে পারল।

জন্মের পর থেকে ছেলেটা মাকে কাছে পাইনি মায়ের আদর পায়নি তাই তো একটু মমতার জন্য পিমনির কাছে আসা। সারাদিন তার পিছনে পিছনে ঘোরা রুবিনা বেশ বুঝতে পারে। তাই ভাবে আগে তাদের দুজনের মধ্যে বোঝাপড়া করাতে হবে। তাই আগে সে অন্যের কাছে গেল।

রুবিনাঃ তুহিন এগুলো কেমন ধরনের ব্যবহার হু? সাদ তোমার বড় ভাই হয়। আর আমি সাদের পিমনি হই। তোমার যেমন বাবাই নেই তাদেরও তেমন মা নেই তুমিও তো তোমার মামাইর সাথে থাকো তখন কি সাদ তোমাকে কিছু বলে?

তুহিন মন খারাপ করে অপরাধীর মতো মাথা নাড়লো। তারপরে বলল।
তুহিনঃ সাদ ভাইয়ার মা কোথায় গেছে মা?

রুবিনাঃ উনিতো আকাশের তারা হয়ে গেছে।
তুহিনঃ তাহলে তাকে সেখান থেকে আসতে বল তাহলেই তো আর তোমার কাছে বারবার আসবেনা।

রুবিনাঃ সেখান থেকে তো কেউ ফিরে আসতে পারে না বাবা যে একবার চলে যায় আর কখনো ফিরে আসেনা।
তুহিনঃ তাহলে কি আমার বাবা আকাশের তারা হয়ে গেছে মা। হি ডোন্ট ইভেন কাম টু আস।

তুহিনর বাবার কথা শুনে রুবিনা আর কিছু বলতে পারলো না কথা ঘুরানোর জন্য বলল।
রুবিনাঃ যাও সাদভাইয়া মন খারাপ করেছে তাকে গিয়ে সরি বলে আসো। তুমি কি চাও তোমার জন্য কেউ মন খারাপ করুক।

তারপরে তুহিন সাদকে সরি বলে আর সেও সরি মেনে নিয়ে খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছে। সাদ এখন তুহিনকে পরী বলে ডাকে। দুজনের মধ্যে খুব ভাব হয়ে গেছে। দুজনেই সারাদিন খেলা করে এখন বায়না ধরেছে তাদের নিয়ে ঘুরতে যেতে তাই বাধ্য হয়েই বাইরে আসা।

রুবিনা বাচ্চা দুটোকে নিয়ে বাড়ির সামনে পার্কে গিয়ে বসলো।

তারা অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে খেলা শুরু করলো। কিন্তু সাদ তার পরীকে কারো সাথে খেলতে দিচ্ছে না। সে শুধু তার সাথে খেলবে বলে এক প্রকার জোর করেই তার সাথে খেলতে লাগলো। আর এসব দেখে রুবিনা একা একাই জোরে হাসতে লাগল।

“আজ চার বছর পর তোমার মুখের হাসিটা দেখতে পেলাম খুব মিস করতাম তোমার হাসি-হাসি মুখ। এই হাসিটা দেখার অপেক্ষায় তো ছিলাম আজ সারা দিন চার চারটা বছর। আমার অপেক্ষাটা তাহলে সার্থক হলো”

সকালে সিয়াম ছুটির জন্য ইমেইল দিয়ে তারপর কোনো রকম হাত মুখ ধুয়ে আবার বেরিয়ে পড়ল রুবিনাদের বাসার উদ্দেশ্যে খাওয়া-দাওয়া আর করল না।

তারপর সেই সকাল থেকে অপেক্ষা করতে লাগল রুবিনার বাইরে আসার জন্য কিন্তু সে বের হয়না।

দুপুরের একবার বারান্দায় এসেছিল গোসল করে কাপড় শুকাতে। সিয়াম তখন আড়ালে চলে গিয়েছিল নয়তো রুবিনা আর ঘর থেকে বের হবেনা সিনক্রেট করবে।

আগে থেকে যথেষ্ট সুন্দরী হয়ে গেছে রুবিনা। স্বাস্থ্য কিছুটা বেড়েছে। আর গোসল করে আসার কারনে মুখটা স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে আজ কতদিন পর সে রুবিনাকে দেখল। আড়ালে দাঁড়িয়ে তার চোখের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে সিয়াম।

কিন্তু রুবিনা বেশিক্ষণ থাকলো না। তারপর একেবারে বিকেলে বেরিয়েছে সে বাচ্চাদের নিয়ে। তখন সে তাদের পেছনে যায় কথা বলতে কিন্তু পরবর্তীতে ভাবে রাস্তায় কথা বলাটা ঠিক হবে না। তাই তাদের পিছু নেয়।

তাদের একটা পার্কে ঢুকতে দেখে সেও রুবিনার পেছনে পেছনে যায়। আগে দূর থেকে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ দেখে সে রুবিনাকে। রুবিনাকে হাসতে দেখে তখন আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারল না সামনে চলে আসলো।

আর কথাটা বলে ফেলল।
আচমকা কারো কন্ঠ শুনে রুবিনার মুখের হাসি মিলিয়ে গেল পেছন ফিরে দেখল সিয়াম দাঁড়িয়ে আছে।

আগের থেকে অনেকটা শুকিয়ে গেছে চুলগুলো অগোছালো চোখ গুলো লাল হয়ে আছে যেন কত রাত ধরে ঘুমায় নি।

মুখটা শুকিয়ে আছে কিন্তু চোখের গভীরতা সে আগের মতোই মনে চায় বারবার ডুব দিতে। এ ছলনাময়ী চোখের কারণেই সে বারবার ধোকা খেয়েছে। আর না।

হঠাৎ সিয়ামকে চোখের সামনে দেখে কেমন যেন শুরু হলো মনের মধ্যে কিন্তু বাইরে নিজেকে শক্ত রেখে মুখে মুচকি হাসি বজায় রেখে সিয়ামকে বলল।

রুবিনাঃ হাসিটা সরে যাবার কারণটাও তো আপনি ছিলেন তা নয় কি? কথাটা শুনে সিয়াম চোখ নামিয়ে নিল।

তারপর রুবিনা বলল ওইসব কথা বাদ দিন অতীতকে টেনে হিঁচড়ে সামনে আনে মুড খারাপ করার কোন মানেই হয়না। তা কেমন আছেন। আর আপনার স্ত্রী বাচ্চারা কেমন আছে?

স্ত্রী আর বাচ্চার কথা শুনে সিয়াম মুচকি হেসে বলল।

সিয়ামঃ আমি কেমন আছি তা তো আমার চেহারা দেখে তুমি ভালো বলতে পারবে। কারণ আমাকে তো আমার চেয়ে বেশি তুমি চেনো। আর স্ত্রী আর বাচ্চার কথা বলছো তো সেটাও তুমি ভালো জানো তুমি কেমন আছো আমাদের মেয়ে কেমন আছে?

সিয়ামের কথার মানে রুবিনা বুঝলো না তাই সে আবার জিজ্ঞেস করল।

রুবিনাঃ আপনি কেমন আছেন তা আপনি ভালো বলতে পারবেন আমি না। কারণ মানুষ ভালোবাসার মানুষের চেহারা দেখেই বলতে পারে সে কেমন আছে তার মনে কি চলছে। আর আপনি আমার ভালোবাসার মানুষ নন।

আপনার জন্য আমার মনে কোন ধরনের রুবিনাভূতি বেঁচে নেই ভালোবাসা বা ঘৃণা কোনটাই নেই। আপনাকে তো আমি চিনিনা।

আর আপনার স্ত্রী কেমন আছে আপনার মেয়ে কেমন আছে তা আমি কিভাবে বলবো মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি?

“আমার মনে আপনার জন্য কোন রুবিনাভূতি বেঁচে নেই ভালোবাসা বা ঘৃণা কোনটাই না” কথাটা শুনে সিয়ামের সিয়ামের বুকটা মোচর দিয়ে উঠল তার পরেও মুখে হাসি বজায় রেখে বলল।

সিয়ামঃ আমার স্ত্রী তো তুমি। আর তুমি কেমন আছো তা তো তোমার থেকে ভালো আর কেউ বলতে পারবেনা। আর আমার মেয়েও খুব ভালো এবং হাসিখুশি আছে তা তো দেখতেই পাচ্ছি।

তাহলে কি সিয়াম বিয়ে করেনি ? কেন? সে কি কারো অপেক্ষায় ছিল নাকি তাদের ডিভোর্স হয়নি বলে বিয়ে করতে পারছে না? (মনে মনে) কিন্তু মুখে বলল।

রুবিনাঃ তারমানে আপনি বিয়ে করেননি কেন ডিভোর্স হয়নি এই কারণে। সমস্যা নেই আপনি পেপার পাঠিয়ে দেবেন আমি সাইন করে দেব। যেখানে মনে সম্পর্কটা শেষ হয়ে গেছে তাহলে শুধু শুধু কাগজে-কলমে সম্পর্কটা রেখে লাভ কি।

আর আপনি বিয়ে করে নিলেও আমি ঝামেলা করতাম না দেশে ফিরেই ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিতাম।
প্রতিউত্তরে সিয়াম কিছু বলল না এসব কথাই আশা করেছিল সে।

এখন আর আগের মত সব সময় সব কথায় রাগ ওঠেনা। ধরতে গেলে কোন কথায় রাগ উঠে না। রাগ মানুষকে ধ্বংস করে দেয় তা সে নিজে ধ্বংস হওয়ার পরে বুঝেছে।

কিন্তু ততক্ষণে সে সব হারিয়ে ফেলেছে আগেই যদি সে রুবিনার কথামতো রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো তাহলে হয়তো এতগুলো বছর তাঁর স্ত্রী-সন্তানের থেকে দূরে থাকতে হতো না। আগেই সব শান্তশিষ্ট ভাবে মিটমাট করে নিতে পারত।

সিয়ামঃ রুবিনা এসব কথা বাদ দাও যার জন্য এসেছি। তোমার সাথে কি আমি কিছুক্ষণ কথা বলতে পারি? প্লিজ বেশি সময় নেবো না শুধু কিছু কিছু কথা বলব। কথাগুলো শুনে তুমি যে ডিসিশন নেবে আমি রাজি থাকব কোন ধরনের বিরোধিতা করবো না।

সিয়ামের শান্তস্বরে কথাগুলো শুনে রুবিনা খুব অবাকই হল কারণ রুবিনা যে কথাগুলো বলেছে অন্য সময় হলে সিয়াম এতক্ষনে রেগে কোন কোন কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলতো আর সেই সুযোগে রুবিনা বাচ্চাদের নিয়ে বাড়ি চলে যেত।

কিন্তু এখন সে কিছু করছে না বলে আর না করতে পারলো না। সে নিরব রইল। আর নিরবতাই সম্মতির লক্ষণ ভেবে সিয়াম ঝটপট রুবিনার হাত ধরে নিল।

সিয়ামের হাত ধরা দেখে সে জড়াজড়ি শুরু করল ছোটার জন্য কিন্তু সিয়াম রিকোয়েস্ট করলো

সিয়ামঃ খুব বেশি সময়ের জন্য ধরবো না শুধু কিছু সময় ধরে থাকতে দাও অনেকদিনের তৃষ্ণার্ত আমি। কিছু কথা বলবো তারপর হাত ছেড়ে দেবো তুমি চাইলে আবার ধরবো না চাইলে জোর করবো না।

রুবিনা আর কিছু বলল না চুপচাপ বসে রইল সিয়াম বলা শুরু করলো।

সিয়ামঃ রুবিনা আমি জানি আমি অন্যায় করেছি অন্যায় বললে ভুল হবে অনেক বড় পাপ করেছি আর তার প্রায়শ্চিত্ত আমি করছি। একটা সময় ধোঁয়াশার পিছনে ছুটে এসেছি কিন্তু জানতাম না ধোঁয়াশা শেষ হলেই বাস্তবতা আমাকে এভাবে পিষে মারবে।

আমি তোমাকে অনেক অপমান করেছি গায়ে হাত তুলেছি এমনকি ঘর থেকে বের করে দিয়েছি। কিন্তু বিশ্বাস করো একটাও আমি মন থেকে করিনি রাগের মাথায় এসব করেছি।

তোমার সাথে এমন করে আমিও ভালো ছিলাম না অনেক ডিপ্রেসড ছিলাম একটা রাত ঠিকঠাক ঘুমাতে পারতাম না আমি। তারপর বাধ্য হয়ে তোমার বাড়ির সামনে সারারাত অপেক্ষা করতাম সকাল পর্যন্ত যদি তোমার এক ঝলক দেখা যায়।

আর যে দিন আমি জানতে পারি আমি বাবা হবো আমার থেকে বেশি খুশি হয়তো আর কেউ ছিল না বিশ্বাস করো সে রুবিনাভূতিটা যদি তোমাকে বোঝাতে পারতাম।

কিন্তু সেই রুবিনাভূতিটা কে আমি নিজ হাতে শেষ করে দিয়েছি সেদিন রাস্তায় সামিম এর সাথে তোমাকে দেখে মাথা ঠিক ছিল না তাই এসব কথা বলে ফেলেছি। কিন্তু আমিতো জানি তুমি কতটা পবিত্র।

সবকিছুর জন্যই আমি তোমার কাছ থেকে ক্ষমা চাইছি রুবিনা তুমি বললে তোমার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইবো আমাকে কি একটা সুযোগ দেওয়া যায় না? তোমাকে আর আমার সন্তানকে খুব প্রয়োজন আমার। তুমি ভেবেচিন্তে উত্তর দিও আমি অপেক্ষা করব দরকার পড়লে সারা জীবন।

তোমার কাছ থেকে একটা রুবিনামতি চাইব দেবে?

এতক্ষণ রুবিনা সিয়ামের কথাগুলো মন দিয়ে শুনছিল হঠাৎ সিয়াম রুবিনামতি চাওয়ায় তার দিকে ফিরল।
রুবিনাঃ কি রুবিনামতি এমন কোন কিছু চাইবেন না যেটা আমি দিতে পারব না।

সিয়ামঃ আমি আমার মেয়ের সাথে কিছুক্ষণ খেলা করতে চাই। প্লিজ আমি তো ওর বাবা আমারও তো অধিকার আছে।

সিয়ামের ছল ছল চোখের চাউনি দেখে আনু আর না করতে পারল না রুবিনামতি পেয়ে সিয়াম যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল সে সারা বিকেল তুহিন সাথে খেললো। তারপর সন্ধ্যার দিকে তাদের নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিল। এই মধ্যে তুহিন আর সাদের সিয়ামের সাথে ভাব হয়ে গেছে যাওয়ার সময় তুহিন সিয়ামের কোল থেকে নামতে চাচ্ছিল না।

আর সিয়ামের ও মন মানছিল না তাকে ছেড়ে যেতে কিন্তু রুবিনা ধমক শুনে তুহিন বাধ্য হয়ে কল থেকে নেমে গেল তারপর কেঁদেকেটে বাড়িতে গেল। আর সিয়াম নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে আজ সে একটা শান্তির ঘুম দিবে। রুবিনাকে সে চোখের দেখা হলেও দেখেছে। তৃষ্ণার্ত মন কিছুটা হলেও শান্ত হয়েছে।


পর্ব ১৭

সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পর থেকেই রুবিনার আর কোন কাজে মন বসাতে পারছে না।

অন্যমনস্ক হয়ে চলাফেরা করছে। এক কাজ দুইবার করে করছে এমনকি ডিনারের সময়ও অন্যমনস্ক হওয়ার কারণে রুবিনা সবজি মাংস মাছ বাদ দিয়ে শুধু ডাল দিয়ে খেয়েছে। খেয়েছে বললে ভুল হবে শুধু প্লেটের দিকে তাকিয়ে নাড়াচাড়া করেছে।

রুবিনার বাবা-মা ও কিছু জিজ্ঞেস করেনি হয়তো সময় হলে সে নিজেই বলবে। কিন্তু সে কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত তা বেশ ভালই বুঝতে পারছে। কিন্তু মেয়েকে আর ঘাটায়নি তারা।

সিয়ামের কথাগুলো বারবার মনে হচ্ছে তার। তাকে কি একটা সুযোগ দেওয়া উচিত নাকি উচিত না। মন দোটানায় ভুগছে। চার বছর দূরে থেকেও একদিনের জন্য মনের আড়াল করেনি সে। সিয়ামকে রুবিনা আগেও ভালবাসত এখনো ভালোবাসে আর ভবিষ্যতেও ভালো বাসবে।

সিয়াম ই তার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা। কিন্তু তার করা অপমানের কথাগুলো এখনো রুবিনার কানে স্পষ্ট বাজে। চাইলেও সে কোনদিন তা ভুলতে পারবেনা এখনো ভুলতে পারিনি।

আর যতবারই সিয়ামের কথা মনে পড়ে সাথে সাথেই সিয়াম আর মারিয়ার নগ্ন শরীর চোখের সামনে ভেসে উঠে। তখন আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলনা সে।

রাতে তুহিন কে ঘুম পাড়িয়ে। নিজে আর ঘুমুতে পাড়ানি। সারারাত নির্ঘুম কাটনোর পর সে সিদ্ধান্ত নিল তার বাবা মা আর সামিম ভায়ের সাথে কথা বলে জানবে তার কি করা উচিত? তারা হয়তো ভালো পরামর্শ দিতে পারবেন।

ভাবতে ভাবতেই ফজরের আজান শোনা যায় তারপর রুবিনা শোয়া থেকে উঠে অজু করে নামাজ পড়ে নেয়। তার মাথাটা বড্ড যন্ত্রণা করছে একটা ঘুমের প্রয়োজন ঘুম আসছেনা দেখে একটা হাল্কা পাওয়ারের স্লিপিং পিল খেয়ে নেয়। আর দশ মিনিট পরেই ঘুমের দেশে চলে যায় রুবিনা।

রাতে দেরি করা করে ঘুমানোর সুবাদে সকালে উঠতে বেশ দেরি হলো। তুহিন সকাল থেকে কয়েকবার ডেকে গেছে মাকে কিন্তু রুবিনা ঘুম থেকে উঠো নি। ঘুমের ওষুধ টা কাজে
দিয়েছে।

রুবিনার ঘুম ভাঙলো বেলা 11 টায়। তারপর ফ্রেশ হয়ে গোসল করে একেবারে নিচে গেল তুহিন খোঁজে সে খেয়েছে কিনা জানার জন্য।

সারা ঘর খুঁজেও রুবিনা তুহিনকে পেল না। তারপর তার মাকে রান্নাঘরে পাওয়া গেল সে তাকে তুহিনর কথা জিজ্ঞেস করল।

রুবিনাঃ মা তুহিন কই বাসায় দেখতে পাচ্ছি না যে।

রাবেয়াঃ তুহিন তো সামিম আর সাদের সাথে বাইরে গেছে আইসক্রিম খাবে বলে বায়না ধরছিল মেয়েটা।

রুবিনাঃ আহা তুমি ওকে যেতে দিলে কেন তুমি জানো না আইসক্রিম খেলে ওর গলায় সমস্যা হয়। আর সকালের নাস্তা খেয়েছে মেয়েটা?

রাবেয়াঃ হ্যাঁ তুই ঘুম থেকে উঠে ছিলে না বলে আমি খাইয়ে দিয়েছি। আর এখনতো তুইও উঠে গিয়েছিস আয় টেবিলে বস খাবার খেয়ে নে।

রুবিনাঃ না মা এখন খেতে ইচ্ছে করছে না একেবারে দুপুরে খাব। আর তোমাদের সবার সাথে আমার জরুরী কথা ছিল সামিম ভাই কখন আসবে?

রাবেয়াঃ কি এমন জরুরী কথা বলবি রে রুবিনা কাল থেকে তোকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে কিছু কি হয়েছে।

রুবিনাঃ কি জরুরী কথা তা তো কিছুক্ষণ পরে জানতে পারবে আগে সামিম ভাই আর বাবা আসুক পরে না হয় বলবো আমি উপড়ে যাচ্ছি আরো কিছুক্ষণ ঘুমাবো। ঘুম পুরোপুরি হয়নি আমার।

জোহরের নামাজ শেষে সবাই একসাথে খেতে বসলো খাওয়া শেষ করেই রুবিনা সবার উদ্দেশ্যে বলল।

আসলে বাবা মা সামিম ভাই আপনাদের সাথে আমার কিছু কথা ছিল সিয়ামকে নিয়ে।
সিয়ামের নাম শুনেই সবাই কৌতুহলী দৃষ্টিতে রুবিনার দিকে তাকালো।

রুবিনাঃ আসলে কালকে পার্কে সামিন ওর সাথে আমার দেখা হয়। তারপর রুবিনা তাদের বিস্তারিত সবকিছু খুলে বলে। সবকিছু শোনার পর রুবিনার বাবা জিজ্ঞেস করে

মিজানুর: এখন তুই কি চাইছিস? আবার ওই ছেলেটার সাথে সংসার করতে।

রুবিনাঃ না বাবা আসলে তা না আমি আসলে দোটানায় ভুগছি আমার মাথা কাজ করছে না। আমার কি করা উচিত আমি বুঝতে পারছি না তাই তোমাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে চাইলাম। এখন তোমরা যা ভালো বুঝবে আমি তাই মেনে নেব। এতক্ষণে সামিম মুখ খোলে।

সামিমঃ দেখ রুবিনা যেহেতু তোদের মধ্যে ডিভোর্স হয়নি তাই এখনো তোরা স্বামী স্ত্রী। তুই যদি সিয়ামকে মাফ করে দিয়ে আবার তার কাছে ফিরে যেতে চাস তাহলে আমাদের কোন আপত্তি নেই।

তুই ভাব আরো সময় নে তোর যেটা ভালো মনে হয় তুই তাই কর। তুই যথেষ্ট বুদ্ধিমতী মেয়ে তোর যে কোন ডিসিশনে আমার সাপোর্ট পাবি।

আর সিয়াম হয়তো সত্যিই রুবিনাতপ্ত। ওর সাথে আর প্রায়ই দেখা হত আর প্রত্যেকবারই তোর কথা জিজ্ঞেস করত আর ঐদিনের ব্যবহারের জন্য হাজার বার সরি বলেছে আমার মনে হয় সে রুবিনাতপ্ত। বাকিটা তোর উপর।

সামিম এর কথাগুলো সাথে রুবিনার বাবাও সায় দিল। তার মেয়ে যথেষ্ট এডাল্ট এবং বুদ্ধিমতী মেয়ে যে ডিসিশন নিবে সেটাই তিনি গ্রহণ করবেন বলে জানান।

বিকেলে বাড়ির কলিং বেল বেজে ওঠে রুবিনা নিচে ড্রইং রুমে ছিল তাই দরজা খুলে দেখে বাইরে সিয়াম দাঁড়িয়ে আছে মুখে র মধ্যে হাসি হাসি ভাব। রুবিনা তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই সে বলল।

সিয়ামঃ আমি আসলে তুহিনর সাথে কিছু সময় কাটাতে চাই প্লিজ মানা করো না। তুমি যে কোন ডিসিশন নাও আমি রাজি আছি কিন্তু শর্ত একটাই আমার মেয়েকে আমার থেকে দূরে রাখতে পারবে না।

রুবিনা আর কিছু বলল না দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ালো আর সিয়াম প্রায় দৌড়ে গিয়ে তুহিন কে কোলে তুলে নিল তুহিনও সিয়ামকে পেয়ে বেশ খুশি।

রুবিনাও চায়না তুহিন তার বাবার আদর ছাড়া বড় হোক তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় অন্যকে সত্যি কথা বলার একসময় না একসময় ঠিক জানতে পারবে তার বাবাকে। তাহলে শুধু শুধু লুকোচুরি করে কি লাভ।

রুবিনাঃ তুহিন মা তুমি সব সময় বাবাকে খুঁজতে না। মায়ের কথায় তুহিন মন খারাপ করে মাথা নাড়ায়। তারপর রুবিনার সিয়ামকে উদ্দেশ্য করে বলে ইনি তোমার বাবা।

রুবিনার কথা শুনে শাকিল অবাক হয়ে তার দিকে তাকায় তাহলে কি রুবিনা তাকে মেনে নিয়েছে। আর অন্যদিকে তুহিন সিয়ামকে জিজ্ঞেস করে

তুহিনঃ তুমি আমার বাবা হও? তুহিন কথা শুনে সিয়ামের চোখে পানি এসে পড়ে সে মাথা নাড়য়। তাহলে এতদিন কোথায় ছিলে আমাদের ছেড়ে? ডু ইউ নো হাউ মাচ আই ফাইন্ড ইউ? আমার সব ফ্রেন্ডের বাবা আছে শুধু আমার বাবাই ছিলনা।

বাট নাও আই অলসো হ্যাভ এ ফাদার। ইয়ে ইয়ে কি মজা আমার বাবা আছে আমার বাবা আছে।

রুবিনা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়ে আর বাবার হাসিমুখ দেখছিল। সাথে রুবিনার মাও যখনই সে সিয়ামকে কিছু বলতে যাবে রুবিনা তাকে থামিয়ে দেয় নিষেধ করে কিছু বলা জন্য।

রাবেয়াঃ তুহিন সাথে সিয়ামকে কেন কি মিসতে দিলি তুই। ও তোর সাথে কি কি করেছে সব ভুলে গেলি। এমনকি বাচ্চাটা কেউ অস্বীকার করেছে। আর এখন বাচ্চার জন্য ভালোবাসা উতলে উঠছে।

রুবিনাঃ না মা কিছু ভুলিনি সবই মনে আছে। কিন্তু তার বাচ্চার কাছ থেকে আমি তাকে আলাদা করতে পারিনা তুহিনর উপর আমার যতটুক অধিকার আছে সিয়ামের অধিকার আছে। সে তুহিনর বাবা আমি বা তুমি চাইলেই এটা মিথ্যে হবে না।

আর আমিও চাইছি না তুহিনকে ওর বাবার আদর থেকে বঞ্চিত হোক। আমার মেয়েটা কেন বাবা থাকতে বাবার আদর ছাড়া বড় হবে।

মিসেস রাবেয়া আর কথা বাড়ালোনা মেয়ের কথায় যুক্তি আছে তাই সে স্থান ত্যাগ করল।
সারা বিকেল তারা ভালোই খেলাধুলো করেছে। তুহিনার সাথে সাথে সিয়াম ও যেন বাচ্চা হয়ে গেছে। দুজন খেলছে আর প্রাণ খুলে হাসছে। রুবিনা একবার তাদের নাস্তা দিয়ে গেছে।

সেগুলো গল্প বলে বলে তুহিন কে কোলে বসিয়ে খাওয়াচ্ছে আবার তুহিন মাঝেমাঝে তাকে খাইয়ে দিচ্ছে।

সন্ধ্যায় সিয়াম চলে যাওয়ার কথা থাকলেও তুহিনর কারণে যেতে পারেনি সে যে ধরে বসেছে বাবার সাথে আরও খেলবে অজ্ঞত সিয়ামের বেরোতে বেরোতে রাত হয়ে গেল রুবিনা তাকে সৌজন্যতার খাতিরে একবার খেতে বলল কিন্তু সে খেলে না।

ওই বাড়িতে যতক্ষণ ছিল সে যেন অদৃশ্য মানব কেউ যেন তাকে দেখেও না দেখার ভান করেছিল যেন তার এখানে হওয়াতে কারো কিছু যায় আসে না। এক দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে কারো কথা সম্মুখীন হতে হয়নি তার।

নইলে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো কিন্তু রুবিনা তাকে এত তাড়াতাড়ি তুহিন সাথে থাকার রুবিনামতি দিবে তা সে ভাবতে পারিনি।

সে তার মেয়ের সাথে দেখা করতে পারছে এই অনেক। সিয়াম চলে আসার সময় রুবিনার কাছে তার ডিসিশন এর কথা জিজ্ঞেস করেছিল সে ভেবেছিল হয়তো সেসিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণ করে রুবিনা আরো কিছুদিন সময় চাইল।

আর সিয়াম ও তুহিন সাথে প্রতিদিন অফিস ছুটির পর খেলার রুবিনামতি চাইল। আর রুবিনাও নির্ধিদ্ধায় রুবিনামতি দিয়ে দিল।

পরের দিন যথারীতি অফিস ছুটির পর সিয়াম ওদের বাড়িতে এলো। তুহিন সাথে খেলা করলো গল্প করল তাকে খাইয়ে দিল। তারপর যাওয়ার সময় রুবিনা তাকে ডাক দেয়।

রুবিনাঃ সিয়াম কথা ছিল আপনার সাথে। আপনি সেদিন বলেছিলেন আমার সিদ্ধান্ত পজেটিভ নেগেটিভ যাই হোক না কেন আপনি মেনে নেবেন।

সিয়ামঃ হ্যাঁ তোমার সিদ্ধান্ত পজিটিভ হলে তো কোন কথাই নেই আমি একজন দায়িত্বশীল স্বামী আর পিতা হয়ে দেখাবো আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো তোমাদের সুখে রাখার।

আর যদি নেগেটিভ হয় তাহলে আমি মেনে নেব হয়তো তুমি আমার ভাগ্যে নেই। কিন্তু যদি নেগেটিভ হয় তাহলে আমারও শর্ত আছে।

আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না।
রুবিনা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলা শুরু কর।

রুবিনাঃ সিয়াম আমি দুইদিন অনেক ভেবেছি আমার পরিবারের কাছ থেকে পরামর্শ চেয়েছি। তারা আমার মনোভাবকে আমার ইচ্ছা কে প্রাধান্য দিয়েছে। আমি এ কদিন অনেক দোটানায় ভুগছিলাম। কিন্তু এখন আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি আমার কি করতে হবে।

সিয়াম আমি চাইনা আমার মেয়েটা বাবার আদর থেকে বঞ্চিত হোক। বাবা থাকতেও এতিমের মতো বড় হোক। একজন সন্তানের জন্য বাবা এবং মা উভয়েই প্রয়োজন তাই আমি চাই তুমি তুহিন বেস্ট বাবা হয়ে দেখাও কিন্তু তোমার সাথে থাকা সম্ভব না।

সেদিন তোমাকে মিথ্যে বলেছিলাম তোমাকে আমি ভালোবাসি ঠিকই কিন্তু তোমার সাথে সংসার করার মত মন মানসিকতা আমার হারিয়ে গেছে।

যতবারই মনে হয়েছে তোমার সাথে থাকা উচিত ততোবারই সেদিনের ঘটনা মনে পড়ে যায়। আমি তা সহ্য করতে পারিনা। আর আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে খুব ভয় পাই আমি আর ঠকতে চাই না।

একটা সংসারের মূল ভিত্তি হচ্ছে ভালোবাসা আর ভালোবাসা টিকে বিশ্বাসের উপর আমি তোমাকে কখনো বিশ্বাস করতে পারবোনা। দূর থেকেও একে অপরকে ভালোবাসা যায় সিয়াম। আমি দূর থেকে তোমাকে ভালোবাসতে চাই।

তোমার সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। আমাকে মাফ করে দিও আর পারলে ভালো একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করে নিও ডিভোর্স দেওয়া না দেওয়া সম্পূর্ণ তোমার ব্যাপার আমি কখনোই তোমাদের মাঝে যাব না। তুমি চাইলে আমরা বন্ধুর মতো থাকতে পারি আমার কোন আপত্তি নেই।

আর রইল তুহিনর ব্যাপার তো তুমি ওর বাবা ওর উপর আমার যতটুকু অধিকার আছে তোমারও আছে। তুমি চাইলে যে কোন সময় এখানে আসতে পারো ওকে সাথে করে নিয়ে যেতে পারো কিন্তু রাতে বাইরে থাকা হবে না।

আর তোমার কাছে একটাই রিকুয়েস্ট তুহিন কে কখনো বাবার কমতি রুবিনাভব করতে দিওনা। এ কয়দিনে সে তোকে খুব ভালোবেসে ফেলেছে।

এতক্ষণ সিয়াম চুপ করে রুবিনার কথাগুলো শুনছিল। মনে হচ্ছে তার ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে উনি রুবিনা তার সাথে থাকতে চায় না কথাটা শোনার পর থেকেই চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি বের হচ্ছে সে চেষ্টা করছে সেটা থামানোর কিন্তু চোখটা যেন তার কথা মানছে না।

তার মনে একটা ক্ষীণ আশা ছিল হয়তো রুবিনা তার কাছে ফিরবে।

আজ সেটাও শেষ হয়ে গেল। কিন্তু তুহিন কে পেয়েছে রুবিনাকে বন্ধুরূপে পেয়েছে তাই খারাপ কি জীবনে হয়তো আর রুবিনা কাউকে বিয়ে করা হবে না। সে তার মেয়ের মুখ দেখেই কাটিয়ে দেবে সারা জীবন আর রুবিনা তো আছেই।

সেদিন সিয়াম প্রতিউত্তরে রুবিনাকে আর কিছুই বলতে পারেনি তার গলায় কথা কান্না কারণে আটকে গিয়েছিল। রুবিনারো মনে হচ্ছিল তার কলিজাটা কেউ কেটে ফেলছে। কিন্তু তার কিছু করার ছিল না সেও নিরুপায়।

সেদিনের পর সিয়াম আর অন্যকে ফিরে যাওয়ার জন্য রুবিনারোধ করেনি।

রুবিনার সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়েছে কিন্তু বিয়ে আর করা হয়নি প্রতিদিন সন্ধ্যায় তুহিন সাথে সময় কাটানো রুবিনার আর সামিমের সাথে আড্ডা দেওয়া আর ছুটির দিন তিনজন ঘুরতে যাওয়া তাদের রুটিন হয়ে গেল বেশ ভালই চলছিল দিনগুলো।

দেখতে দেখতে আরো 5 বছর কেটে যায়। এরমধ্যে সিম্মি সামিমের মধ্যেও বন্ধুত্ব হয়ে গেল। বেশ ছিল তারা কিন্তু হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় আবার সব শেষ করে দিল।

সিয়ামের মা আর রুবিনার জোরাজুরিতে সিয়াম বিয়ে করতে রাজি হলো। খুবই সাধারণ একটা মেয়েকে রুবিনা নিজে পছন্দ করছে। তাই সিয়াম ও আর আপত্তি করেনি।

সিয়ামের বিয়ের সব আয়োজন করা শেষ পড়শু বিয়ে। তাই বিয়ের আগেরদিন সিয়াম রুবিনার কাছে আবদার করে বসে শেষ একটা দিন সে রুবিনার সাথে কাটাতে চায়।

রুবিনা আর কথা বাড়ায়নি হয়তো এটাই তার সিয়ামের সাথে শেষ ঘুরা হবে তারপর হয়তো তার স্ত্রীকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে তাদের কথা মনে পরবে না তাই সেও সুযোগটাকে মিস করলো না।

সেদিন রুবিনা সিয়ামের দেওয়া লাল পেড়ে সাদা শাড়ি পরেছে হাতে লাল চুড়ি চুল খোপা করা তাতে কয়েকটা জবাফুল কোত্থেকে যেন সিয়াম এগুলো নিয়ে এসেছে। হালকা সাজ আর সিয়াম পড়েছিল সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা। আর তুহিনর জন্য লাল ফ্রক।

ঠিক সিয়ামের স্বপ্নের মত। তিনজন বেশ ঘোরাঘুরি। খাওয়া-দাওয়া করেছে। সারা রাস্তায় একবারের জন্যও সিয়াম রুবিনার হাত ছাড়েনি এমন ভাবে ধরেছে যেন ছাড়লেই দূরে চলে যাবে রুবিনা ও বিরোধিতা করেনি। এরমধ্যে সিয়াম আরেকটা আবদার করে রুবিনার কাছে।

সিয়ামঃ হয়তো আর এভাবে বলা হবেনা একটা শেষ রিকুয়েস্ট করবো রাখবে? একবার জড়িয়ে ধরতে দেবে রুবিনা শেষবারের মতো।

সিয়ামের কথা গুলো কেন জানি খুব অদ্ভুত লাগছিল রুবিনার কাছে। আর এই কথাটা বলার সময় সামনের গলা ধরে আসছিল। তারও খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করেছিল। নিজের চোখে ভালোবাসার মানুষটির বিয়ে দেখা খুব কষ্টের। তার পরেও সে তার কষ্ট কাউকে বুঝতে না দিয়ে হাসি মুখে সিয়ামের বিয়ের সব কাজ করে যাচ্ছে।

রুবিনা নিজে গিয়ে সিয়ামকে কে জরিয়ে ধরল। হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে দেখল তুহিন রাস্তার মাঝে দৌড় দিয়েছে তার বেলুন আনার জন্য।

সামনে একটা গাড়ি। গাড়ি দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে তার দিকে সে রুবিনাকে কোনরকম ধাক্কা দিয়ে তুহিনের কাছে যায় তখন অনেক দেরি হয়ে যায় অন্যকে বাঁচাতে পারলেও সিয়াম নিজে গাড়ির নিচে পড়ে যায় আর রুবিনা চিৎকার দিয়ে উঠে।

রুবিনাঃ সিয়ামননননন…রুবিনার পুরো শাড়িতে রক্তের ছিটা পড়ে যায় সে দৌড়ে সিয়ামের কাছে যায় গিয়ে দেখে সাদা পাঞ্জাবি রক্তে ভরে গেছে। রুবিনাকে ইশারায় সামনে যেতে বলে সিয়াম। রুবিনা তাড়াতাড়ি করে তার মাথাটা কোলে নিয়ে বসে।

কিচ্ছু হবে না তোমার কিছু হতে দেব না আমি। কাল না তোমার বিয়ে এখন এসবের মানে কি। ওঠো ওঠো যেতে হবে। আরে আশ্চর্য তো আপনার এখানে দাড়িয়ে আছেন কেন তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। কোন এমন অস্থিরতা দেখে কষ্টের মধ্যেও সিয়াম মুচকি হাসে তারপর রুবিনার হাত ধরে বলে।

সিয়ামঃ আমার কাছে সময় নেই রুবিনা হসপিটাল নিয়ে গিয়েও কোনো লাভ হবে না। দেখেছ আল্লাহ কখনই চাইনি আমরা যেন আলাদা হই তাই তো তোমার কাছ থেকে আলাদা হওয়ার আগেই আল্লাহ আমাকে নিয়ে নিচ্ছে। খুব ভালোবাসি তোমায় খুব ভালোবাসি।

তারপর খুব কষ্টে বলল তুহিনকে দেখে রেখো নিজের জীবনে এগিয়ে যাও আর তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি তার জন্য ক্ষমা করে দিও। ভালোবাসার টান থাকলে ওই পারে দেখা হবে বিদায়। তারপর হঠাৎ করেই ওকে টান দিয়ে বুকের মধ্যে নিয়ে নিল তারপর তাকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় আস্তে আস্তে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল সিয়াম।

রুবিনা কান্না করছে। চিৎকার দিয়ে ডাকছে সিয়ামকে কিন্তু তার কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। আস্তে আস্তে সেই ও নিস্তেজ হয়ে গেলো। জ্ঞান হারালো রুবিনা। আশেপাশের লোকজন রুবিনার ফোন নিয়ে প্রথমে সামিমের নাম্বার দেখতে পেল তারপর তাকে ফোন দিল।

এরই মধ্যে এম্বুলেন্স এসে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যায় সামিমো সেখানে পৌঁছে যায়। হসপিটাল ডাক্তাররা সিয়ামকে মৃত ঘোষণা করে। তুহিন তার মায়ের বেডের সামনে কান্না করছে। আর বারবার বাবাকে ডেকে যাচ্ছে।

১৫ বছর পর।
আজ সাদ আর তুহিনর বিয়ে। সাদ তার কথা রেখেছে সে তার পরী কে নিজের করে নিয়েছে। এখন পরী শুধু তার।

দূরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে রুবিনা আর একা একাই কি যেন বিড়বিড় করছে।

রুবিনাঃ দেখেছ সিয়াম আমি তোমার কথা রেখেছি জীবনে অনেক এগিয়ে এসেছি। আজ আমার নিজের একটা প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে অনেক অসহায় মেয়েদের কাজ শিখিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলি। তাদের উৎসাহ করি।

যান আমাদের মেয়ে খুব বড় হয়ে গেছে আজ তার বিয়ে। জানো কার সাথে। হা হা হা মনে আছে সাদ তোমাকে বারবার বলতো পরীকে সেই বিয়ে করবে।

আর তুমি তাকে ধমক দিতে। সে কথা রেখেছে এইমাত্র আমাদের মেয়েকে বিদায় করে দিলাম। আমার আর কোন চিন্তা নেই।

কিন্তু সবকিছু থেকেও কি যেন একটা নেই বুকের মধ্যে চিনচিন ব্যথা করে আমি তার কারণটা খুঁজছি। তুমি অপেক্ষা করো খুব জলদি তোমার কাছে ফিরে আসব একা একা আর ভালো লাগেনা এখন আমার সব দায়িত্ব শেষ।

এখন শুধু তোমার অপেক্ষায় আছি একদিন সময় করে নিয়ে যেও তোমার কাছে। হারিয়ে খুজি তোমায় সিয়াম। হারিয়ে খুঁজছি।
হারিয়ে খুঁজছি তোমায়।

পাঠক আপনাদের জন্যই আমরা প্রতিনিয়ত লিখে থাকি। আপনাদের আনন্দ দেয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ। তাই এই পর্বের “কষ্টের লেখা গল্প” টি আপনাদের কেমন লাগলো পড়া শেষে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

সমাপ্ত

আরো পড়ুন – রোদ বৃষ্টি – ভালোবাসার অনুভূতি গল্প

1 thought on “হারিয়ে খুজবে আমায় – কষ্টের লেখা গল্প”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *