প্রেমের গল্প ২

প্রেমের গল্প – দুই বোনের এক প্রেমিক – পর্ব ২ | ত্রিভুজ প্রেম

প্রেমের গল্প – দুই বোনের এক প্রেমিক – পর্ব ২: গত পর্বে আপনারা দেখেছেন কি অদ্ভুত ঘটনা আমার সাথে ঘটে চলেছে। প্রেমিকার বড় বোন আমাকে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এদিকে আমার পরিবার ও গার্লফ্রেন্ড তো রেগেমেগে ফায়ার হয়ে আছে। কি জানি কি হয় এরপর দেখি তাহলে।

উভয় সংকটে আমি

আমরা যখন স্টেশনে পৌছালাম তখন সময় ৬:২০। বসে আছি একটা বেঞ্চে। আমার চোখের ঘুম এখনো কাঁটেনি। আমি আন মনে ঘুমাতে ব্যস্ত। বার বার মোহনা আপুর ডাকে ঘুমটার ব্যাঘাত ঘটছে।

মোহনা আপুঃ এই জিসান তুই ঘুমাস কেন?

আমিঃ রাতে ঘুম হয়নি ভালোভাবে, কি হয়েছে তোমার?

মোহনা আপুঃ আরে আমার ভয় লাগছে, আব্বুর লোকজন যদি এসে পরে।

আমিঃ আরে আসবে না।

মোহনা আপু চুপ করে রইলো। এরে মধ্যে আমি একটু ঘুমিয়ে নিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি ৭:৫ বেজে গেছে। পাশে মোহনা আপুকে না দেখতে পেয়ে ভয় পেয়ে গেলাম। আমাকে না বলে চলে গেলো। নাকি মোহনা আপুর বাবা এসে নিয়ে গেলো। আরে মোহনা আপুর আব্বু আসলে তো আমি এখানে থাকতে পারতাম না, আমাকে জেলে পাঠাতো।

মোহনা আপুর মোবাইলে অনেক বার নক করেছি, রিং হয় কোনো উত্তর আসে না।

আমি ভাবলাম, বয় ফ্রেন্ডের সাথে তাই আমার ফোন উঠাতে পারছে না।

স্টেশনে আস্তে আস্তে মানুষ আসা শুরু করছে সবাইকে জিজ্ঞাস করলাম, “ভাই ট্রেন কি আসছিলো?” সবার উত্তর না। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। ট্রেন না আসলে মোহনা আপু কোথায় যাবে? সে তো ট্রেনেই যাওয়ার কথা।

মোবাইল এর রিংটোনের আওয়াজ পেলাম। সুমি ফোন দিয়েছে।

সুমিঃ ওই বদমাইশ, বেইমান, আমার বুবুর সাথে কথা বলবো। মোবাইল দে বুবুর কাছে, আর বুবুর মোবাইল ফোন বন্ধ কেনো?

আমিঃ আরে তোমার বুবুকে খুঁজে পাচ্ছি না। আমার সাথে স্টেশনে আসছিলো, এখন আর পাইনা খুঁজে।

সুমিঃ স্টেশন? স্টেশন কি করিস?

আমিঃ তোমার বোনের বয়ফ্রেন্ড আসার কথা, কিন্তু ট্রেনই এখনো আসেনি।

সুমিঃ বুবুর বয়ফ্রেন্ড, তুই না?

আমিঃ আরে কি আবল তাবল বলছো? আমি হতে যাবো কেনো? আমি তো তোমাকে ভালোবাসি।

সুমিঃ তাইলে পালালি কেন বুবুকে নিয়ে?

আমিঃ আমি পালাইনি, তোমার বুবু আমাকে নিয়ে এসেছে তাকে হেল্প করার জন্য।

সুমিঃ বুবুর বয়ফ্রেন্ডের নাম কি?

আমিঃ নামটা তো বলে নি?

আমিঃ তুই আবার মিথ্যা কথা বলেছিস, তুই বুবুকে পোটিয়ে বাসা থেকে পালিয়ে নিয়ে গেছোস। আমি সব কিছু শুনেছি। গ্রামের সবাই দেখেছে। আর এখন আমার সাথে কথা বলার জন্য নতুন নাটক তৈরী করেছিস। ১০ মিনিটের মধ্যে যদি বুবুর সাথে কথা না বলতে পারি তাহলে আমি বাবাকে বলে দিবো তোরা স্টেশনে আছিস।

প্রেমের প্রতারণা

সুমি ফোনটা রেখে দিলো। এখন আমি পরেছে মাইনকার চিপায়। মোহনা আপু ফোন ধরছে না। আমি একা এখন কোথায় খুঁজবো?

রাকিব, রাসেল, সোহাগ এবং আশিক কে ফোন দিয়ে স্টেশন আসিতে বললাম।

ওরা সবাই এক সাথে আসলো।

রাকিবঃ কিরে, কি হয়েছে তোর?

আমিঃ কথা রাখ আগে মোহনা আপুকে খোঁজ কর?

আশিকঃ কি হয়েছে তার?

আমিঃ আরে আমার সাথে ছিলো এখন আর দেখছিনা?

রাসেলঃ বাহ, পাশ থেকে বউ হারিয়ে যায় আর তুমি বলতে পারো না কিসের বয় ফ্রেন্ড হয়েছো তুমি?

আমিঃ আরে এই সব কথা পরে বলবো, আগে খোঁজ কর?

এরপর সবাই মিলে মোহনা আপুকে খুজতে লাগলাম। কোথায় যেতে পারে মেয়েটা? দূর এই ভেজাল আর ভালোলাগে না!
অনেক্ষণ খুঁজার পর পেলাম তাকে এক কোণে বসে বসে কাঁদছে।

দৌড়ে গেলাম তার কাছে!

আমিঃ কি হয়েছে, কাঁদেন কেনো?

কোনো কথা বলছেনা কোনো।

রাকিবকে ফোন করে বললাম, মোহনা আপুকে খুঁজে পেয়েছি। তুই সবাইকে নিয়ে চলে আয়।

আমি মোহনা আপুর পাশে বসে রইলাম। কোনো কথা বলছিনা। আর মোহনা আপু কেঁদেই চলছে।

সবাই চলে আসলো।

মোহনা আপুর কাঁন্না দেখে সবাই হুলুস্তুল করে কাঁন্না করার কারণ জানতে চাইলো।

আমি রাকিবকে থামিয়ে দিয়ে মোহনা আপুকে জিজ্ঞাস করলাম,

আমিঃ কি হয়েছে আপনার?

মোহনা আপুঃ ও আর আসবে না!

আমিঃ কে আসবে না?

মোহনা আপুঃ রিজবি?

আমরা একজনের মুখের দিকে অন্য একজন তাকালাম।

আমিঃ রিজবিটা কে?

মোহনা আপুঃ আমার, বয়ফ্রেন্ড!

রাকিবঃ বয়ফ্রেন্ড? তাহলে জিসান তুই কি, আমরাতো জানি তুই মোহনা আপুর বয় ফ্রেন্ড!

আজব রিলেশন

রাকিবের গালে ঠাস করে একটা চোড় বসিয়ে দিলো মোহনা আপু ।

মোহনা আপুঃ ওই ফাজিল, জিসান আমার বয় ফ্রেন্ড হতে যাবে কোন দুঃখে, ওতো জাস্ট হেল্প করতেছে।

রাকিব গালে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকালো,

আমিঃ তোকে সব বলবো।

আমিঃ তো কি বললো আপনার বয়ফ্রেন্ড?

মোহনা আপুঃ সে তার বাবা মার অবাধ্য হতে পারবে না, আমাকে বাসায় ফিরে যেতে বলেছে।

রাকিবঃ রিলেশন কত দিন?

মোহনা আপুঃ তিন মাস।

আমরা সবাই অবাক হয়ে গেলাম মোহনা আপুর কথা শুনে।

আমিঃ মাত্র তিন মাসের রিলেশনে আপনি বাসা থেকে বের হয়ে গেছেন। আর আমার যে সুমির সাথে দেড় বছরের রিলেশন তারপরও তো একটা কিস করতে পারলাম না।

মোহনা আপু আমার মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

মোহনা আপুঃ তুই সুমির সাথে রিলেশন করিস আর আমাকে জানাস নি?

আমিঃ পরিস্থিতি ছিলোনা বলার, এখন বলেন কোথায় যাবেন?

মোহনা আপুঃ জানি না।

রাকিবঃ জানিনা মানি কি?

আমিঃ আগেই বলেছি যে আর একটু ভেবে বাসা থেকে পালান। তখন কি হলো আমার গালে একটা চোড় বসিয়ে বললেন “আমাকে জ্ঞান দেওয়া লাগিবে না।” এইবার আপনিও মরেছেন সাথে আমাকেও মারছেন।

মোহনা আপুর চোখে পানি টলমল করছে, মুখে কোনো কথা নেই।

রাকিবঃ অতিরিক্ত আবেগের ফল দেখন এখন। সেইদিন বিয়েটা হলে কত ভালো হতো, আমরা ভালোমন্দ খেতে পারতাম। আর ছেলেটাও নাকি সরকারী কর্মকর্তা ছিলো। তাকে রেখে পালিয়ে আসলেন কোন জাগার কোন রিজবির সাথে। সাথে আমার আমার বন্ধুটাকেও ফাঁসালেন।

আমিঃ রাখতো এইসব কথা, এখন কোথায় যাবো কই থাকবো তার একটা সাজেশন দে?

কি করি ভেবে না পাই

এরে মধ্যে খবর পেলাম মোহনা আপুর বাবা তার গ্যাং নিয়ে স্টেশন আসতেছে। এই কথা শুনে সবাই চমকে উঠলাম। ধরতে পারলে সবগুলোকে জবাই করবে।

মোহনা আপুঃ এখন কি হবে?

রাকিবঃ চল, মর্তুজাদের বাসায় যাই।

আমিঃ কালকে সারারাত তো সেই বাসায়ই ছিলাম।

আশিকঃ তাতে কি হয়েছে?

আমিঃ এক রাতের জন্য বলেছিলাম, ওদের বাসায় থাকবো। আর এখন যদি যাই আঙ্কেল কি বলবে?

আশিকঃ আরে যা বলে বলুক আমাদের বাঁচতে তো হবে।

রাকিবঃ তাহলে আর দেরি করিস না চল, শত্রুদল এখনই এসে পরবে!

এরপর আমরা সবাই মিলে মর্তুজাদের বাসায় গেলাম। চলবে….

পরের পর্ব- প্রেমের গল্প – দুই বোনের এক প্রেমিক – পর্ব ৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *