হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প ৪

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ৪ | Love Story

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ৪: গত পর্বে আমরা দেখেছি প্রিয়ন্তী অনেক চেষ্টা আর সাহস করে নীলকে ডাকতে পেরেছে। নীলের একটু কম কথা বলা ও ব্যক্তিত্বের পরিচয় দেয়ায় প্রিয়ন্তীর বেশ রাগ হয়। কারণ তার মনে হচ্ছে এই ছেলে তার সাথে ভাব নিয়ে কথা বলছে। তাই সে ফুলে ফেঁপে বসে আছে, দেখা যাক কি হয় আজ?

নীলকে শায়েস্তার ফন্দি

রাকাদের দেখেই প্রিয়ন্তী তাদের কাছে এগিয়ে এলো। কি হয়েছে জানতে চেতেই প্রিয়ন্তী গতকালের সব ঘটনা খুলে বলল। সব শুনে অর্ন বলে উঠল, “এটা কোন ব্যাপার হলো? প্রিয়ন্তী আজ অবধি কত ছেলেকে ঘুরাইলি আর এই ছ্যাবলা ডাক্তার এর কাছে হার মেনে গেলি?” প্রিয়ন্তী বলল, “কক্ষনো নাহ! দেখ না এই ছ্যাবলাকে যদি আমি না ঘুরাইছি সেদিন বলিস।” তারপর তিনজন মিলে বুদ্ধি বের করতে লাগল কিভাবে নীলকে বাগে আনা যায়। যে করেই হোক প্রিয়ন্তী নীলকে ঘুরিয়েই ছাড়বে। কিছুতেই এই অপমান সহ্য করবেনা সে। এটাই ফাইনাল কথা।

প্রিয়ন্তী একটা রয়্যাল ব্লু কালারের থ্রি-পিস পড়ল। হাতে নীল চুড়ি, কপালে নীল একটা টিপ, চোখে গাঢ় কাজলের ছোঁয়া আর ঠোঁটে হালকা পিঙ্ক লিপ্সটিক!
বাসা থেকে বের হতেই গলির সামনের সব ছেলেগুলো ওর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে! এসব নতুন কিছু না! তবে যার জন্য এত সাজ, সে এভাবে তাকালেই হয়!

হসপিটালের ইমার্জেন্সি গেটের বাম দিকেই রিসিপশন কাউন্টার। সেখানে গিয়েই প্রথমে ডাক্তার নীলের একটা ভিজিটিং কার্ড নিয়ে নিল সে। তারপর নীলের কেবিনের সামনে গিয়েই দেখন নীল ফোনে কথা বলছে। প্রিয়ন্তী কেবিনে গিয়েই বসে পড়ল।

নীল ফোন রেখে কিছুটা অবাক হয়ে গেল।
মেয়েটার আবার কি হলো! ভেবে ভেবে নীল জিজ্ঞেস করল, “কিছু বলবেন ম্যাম?”
প্রিয়ন্তী: “সরি ফর লাস্ট ডে! আই এম এক্সট্রেমলি সরি। আমার সেদিন ওভাবে রিয়্যাক্ট করাটা মোটেই ঠিক হয়নি! কিন্তু আমি আসলেই ভেবে চিন্তে বলিনি।”
নীল দু’সেকেন্ড চুপ থেকে আবার বলল, “চা খাবেন? অথবা কফি?”
প্রিয়ন্তী আবারো বলল, ” আই এম সেয়িং সরি টু ইউ।”
নীল : “আপনি সরি বলতেই এসেছেন নাকি আর কোন প্রয়োজন?”
প্রিয়ন্তী জবাব দিল না এমনিই আসতে ইচ্ছে হলো তাই। আচ্ছা আমি না হয় আজ আসি, ভাল থাকবেন।

প্রিয়ন্তী হসপিটাল থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসের দিকে গেল। রাকা, নিহার সাথে মিট করল। প্রায় অনেকক্ষন আড্ডা শেষে বাসায় চলে গেল।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে প্রিয়ন্তী ছাদে চলে যায়। আজ অসম্ভব সুন্দর একটা চাদঁ আকাশ জুড়ে স্থান পেয়েছে! জ্যোৎস্নার আলোয় আশেপাশের সব কেমন অন্যরকম সুন্দর দেখাচ্ছে।

প্রিয়ন্তীর প্রথম কল

এমন একটা সুন্দর রাতে যদি এমন একজন পাশে থাকতো যার সাথে গল্প করে সারারাত জ্যোৎস্না দেখেই পাড় করে দিত সে! কিন্তু এখনো এমন কেউ তার জীবনে আসেনি। নিহা আর তানুর ছয় বছরের সম্পর্কের প্রত্যক্ষদর্শী সে। ওদের লাভ বার্ডস দের মতো ভালোবাসা দেখলে নিজেকে আসলেই অসহায় মনে হয় মাঝে মধ্যে!

ঠিকই তো,জীবনে এমন কাউকে তো প্রয়োজন যাকে দিন শেষে নিজের যেকোন পরিস্থিতিতেই পাশে পাওয়া যাবে! ফের চাদঁ এর দিকে তাকিয়ে ভাবনায় ডুবে গেল প্রিয়ন্তী। কবে এমন একজন তার জীবনেও আসবে? কবে কাউকে নিজের এমন ইচ্ছেগুলোর কথা জানাবে সে?

প্রায় রাত দুইটার পর নিজের রুমে গেল প্রিয়ন্তী। কেন যেন আজ ঘুমই আসছেনা! হঠাৎই নীলের ভিজিটিং কার্ডটা নজরে পড়ল। ইচ্ছে করছে বাজে ছেলেটাকে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করতে আবার মনে হলো এত রাতে ফোন দেয়াটা কি ঠিক হবে!

শেষে ফোনের ডায়ালে নাম্বারটা তুলেই নিল সে আর কল দিতেই রিং বাজতে লাগল। প্রিয়ন্তীর হার্টবিট বেড়ে গেছে!

ছেলেটা কি ফোনটা ধরবে? নাকি ছ্যাবলাটা ঘুমিয়েছে? আর যদিও সে ফোন পিক করে প্রিয়ন্তী নিজের কি পরিচয় দেবে কিংবা কিই বা বলবে কেন ফোন দিয়েছে সে!
এসব ভাবনার ঠিক মাঝেই ফোনটা রিসিভ করল নীল। প্রথমেই একটা মিষ্টি ভয়েসে সালাম ভেসে আসলো অপর দিক থেকে।

প্রিয়ন্তী যেন তার একটা বিট মিস করল হার্ট এর! হঠাৎই কি বলবে প্রিয়ন্তী গুলিয়ে যাচ্ছিল! নীল দ্বিতীয় বার হ্যালো বলতেই প্রিয়ন্তী সালামের জবাব দিল এবং জিজ্ঞেস করল কেমন আছেন? নীল উত্তর দিয়েই পুনরায় জিজ্ঞেস করল, “জ্বী আপনি কে বলছেন? আমি ঠিক চিনতে পারলাম না। কিছু মনে করবেন না আপনার পরিচয়টা?”
প্রিয়ন্তী কি বলবে!

বলল : “আপনি আমায় চিনবেন না আমি আপনাকে চিনি।তাই পরিচয় দিয়েও লাভ নেই।”
নীলের জবাব: “লাভ নাকি লোকসান পরে ভেবে দেখব।নিজের পরিচয় না দিলে ফোন দিয়েছেন কেন? আমি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলিনা, রাখছি”…
প্রিয়ন্তী কিছু বলার আগেই ফোনটা কেটে দিল নীল। (চলবে)

পরের পর্ব- হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ৫

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *