হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প ৬

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ৬ | Love Story

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ৬: গত পর্বে আমরা দেখেছি ফুল কিনতে গিয়ে রাস্তায় এক্সিডেন্টে পড়ে থাকা একটি মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে আসে আমাদের প্রিয়ন্তী। বান্ধবীর বিয়ে উপেক্ষা করে সে মানবিক দায়িত্ব পালন করেছে। চলুন দেখি আজকে কি হয়?

মনের গহীনে ঠাই

ছেলেটির সামনে যেতেই চোখ কপালে উঠার অবস্থা হলো প্রিয়ন্তীর। নীল! এই ডাক্তার এখানে কি করে!
নীল তার দিকে তাকাতেই নিজেও অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, ” আপনিই আপুকে নিয়ে এসেছেন হসপিটালে?”
প্রিয়ন্তী আস্তে জবাব দিল, “জ্বী, উনি আপনারই বোন?”
নীল জানাল তার একমাত্র বড় বোন তুরিন।
তারপর প্রিয়ন্তী সব ঘটনা খুলে বলল নীলকে।

কিছুক্ষন পর ডাক্তার এসে জানাল পেশেন্ট আউট অফ ডেঞ্জার তবে বেশ কিছুদিনের রেস্ট দরকার পুরোপুরি সুস্থ হতে। নীল আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করল আর প্রিয়ন্তীকেও ধন্যবাদ দিল। প্রিয়ন্তীর খুব ভাল লাগল নীল তার বোনকে কতটা ভালবাসে দেখে!

তুরিন আপুর এখনো জ্ঞান ফেরেনি। তাই দূর থেকে একবার দেখে নিল প্রিয়ন্তী। আর নীলকে বলল সে আগামীকাল আসবে, আজ দেরী হয়ে গেছে অনেক। নীল নিজেই দিয়ে আসতে চাইলেও প্রিয়ন্তী মানা করল। তাই বাধ্য হয়েই নিচে গাড়ী অবধি গেল নীল।

ড্রাইভ করতে করতে প্রিয়ন্তী ভাবল এই ছেলেটার থেকে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছে সে। কিন্তু আজ কেন যেন অন্যরকম ফিল হচ্ছে। নীলকে সামনাসামনি দেখলেই তার এই ফিলটা হয় সেই প্রথম দিন থেকে।
কেন হয় তা প্রিয়ন্তী নিজেও বুঝে উঠতে পারছেনা।

বাসায় গিয়েই রুমে ঢুকে ফ্রেশ হতে গেল প্রিয়ন্তী। তারপর রুমে এসে নীলকে ফোন দিল নিজেই। নীল প্রথমে রং নাম্বার ভেবে কথা বলতে না চাইলেও পরে চিনতে পারায় সরি বলে। কারন নীলেরই উচিত ছিল প্রিয়ন্তীর নাম্বারটা রাখা। না রাখার কারনেই প্রিয়ন্তীর বাসায় পৌঁছানোর ব্যাপারটাও জানতে পারছিল না সে। নীল আবার ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন রেখে দিল।

প্রিয়ন্তী বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই চাদঁ এর আলো তার গায়ে পড়ল। কেমন একটা অচেনা মায়া কাজ করছে নীলের উপর। একটা তিরতিরে অনুভূতি মনের শিরায় শিরায় ছড়িয়ে পড়ছে। চেষ্টা করেও তা থেকে পরিত্রানের পথ খুজেঁ পাচ্ছেনা প্রিয়ন্তী। কোন একটা প্রতিক্রিয়া হচ্ছে তবে কেন হচ্ছে তা ওর জানা নেই। হঠাৎই এক ভাললাগা আক্রান্ত করল তাকে। পর মুহুর্তেই ভাবল কিসব ভাবছে সে এসব!

আনমনে প্রিয়ন্তী

পরদিন সকালে নাস্তা নিয়ে প্রিয়ন্তী হসপিটালে গেল। গিয়ে দেখল নীল আপুর পাশেই বসে আছে। সে যেতেই নীলের বোন নিজে থেকে তাকে ধন্যবাদ জানাল। তারপর অনেক গল্প করল ওর সাথে।

এরপর নীল নিজেই প্রিয়ন্তীকে ওর ক্যাম্পাসে ড্রপ করে দিল। প্রিয়ন্তী গাড়ী থেকে নেমে নীলকে থ্যাঙ্কস দিল। সামনে যেতেই রাকার সাথে দেখা হলো। রাকা তো সেই মজা করা শুরু করল।
“কি রে? এসবই চলে তাইনা?
খুব তো বলছিলি ডাক্তার ডাক্তার! এদিকে বফ নিয়ে ঘুরে বেড়াও?”
প্রিয়ন্তী কিচ্ছু বলতে পারছিল না শুধু বলল, ইনিই সেই ডাক্তার।
রাকা : “তার মানে? বান্ধুবীইইইই আমাদের না জানিয়ে এত্তদূর? এজন্যই কাল প্রোগ্রামে ছিলানা বুঝেছি তো! ওয়েট নিহা আর অর্নকে জানাতে হবে তুই এভাবে আমাদের পর করে দিলি?”
প্রিয়ন্তী বলল, “তুই একটু বেশীই বুঝতেছিস।”
রাকা: “লুক সামোয়ান ইজ ব্লাশিং, ওয়াহ শেষে আমাদের প্রিয়ন্তীও ডাবল হয়েই গেল?”
প্রিয়ন্তীর কেন যেন রাকার কথার প্রতিবাদ করতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। কেন এভাবে মেনে নিচ্ছে কথাগুলো তাও জানেনা সে! তবে ভাল লাগছে এমন হলেও তো হতে পারেল এ কথা সত্যিই যে ছেলেটার চোখজোড়া তো অনেক আগেই প্রিয়ন্তীর মন কেড়েছিল! ঐ চোখে তাকালে যেকোন মেয়ে নিজেকে হারাবে বারবার!

পরদিন আবার প্রিয়ন্তী হসপিটালে গেল আপুকে দেখতে। আজ নীল নেই। ইশ ও ভেবেছিল হসপিটালে আসলে নীলের সাথে দেখা অন্তত হবে। কিন্তু স্যার নাকি ডিউটিতে গেছেন। মন খারাপ হয়ে গেল প্রিয়ন্তীর।

তারপর আপুর সাথেই বেশ অনেক সময় আড্ডা দিল। গল্পের মাঝেই প্রিয়ন্তী জিজ্ঞেস করল, “আপনার ভাই বিয়ে করেনি আপু?”
তুরিন হেসে উত্তর দিল, “না ওই পাগল করবে বিয়ে! ওকে কত্ত বলে মা কিন্তু তার এক কথা সে কখনোই বিয়ে করবেনা”।
কথাটা যেন প্রিয়ন্তীর বুকে লাগল।
এ কেমন কথা কখনোই বিয়ে করবেনা নাকি এখন করবেনা বলে এই কথা বলে!

লজ্জাবতী প্রিয়ন্তী

যাইহোক অনেক কথাই জানলো আজ নীলের পরিবারের ব্যাপারে, নীলের ব্যাপারে! বের হবার ঠিক আগ মুহুর্তে তুরিন আপু প্রিয়ন্তীকে ডেকে জিজ্ঞেস করল, “একটা কথা জিজ্ঞেস করব সত্যি সত্যি উত্তর দেবে তো?”
প্রিয়ন্তী হ্যা সূচকভাবে মাথা নাড়ল। সে বুঝতেছেনা আপু হঠাৎ এভাবে কেন বলছে!

তুরিন: “তুমি কি নীলকে আগে থেকেই চেনো? আর আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তুমি নীলকে অনেক পছন্দ করো! আমি জানিনা আমার ধারনাটা কতটা ঠিক তবে আমার এটাই মনে হচ্ছে বারবার।”
প্রিয়ন্তী প্রায় অবাক বনে গেল। ও মোটেই প্রস্তুত ছিলনা এমন একটা প্রশ্নের জন্য! কি বলবে আপুকে ও! ও নিজেই তো এখনো নিশ্চিত না কি হচ্ছে!
তবু প্রিয়ন্তী মুচকি হেসে বলল: “জ্বী আপু ওনার সাথে আগেও ওনার হসপিটালে আমার দেখা হয়েছিল। কিন্তু অমন ভাবে পরিচয় নেই। আর হ্যা ভাল লাগে ওনাকে এমনিতে, অন্য কিছুনা আপু।”
তুরিন হেসে বলল বুঝেছি বুঝেছি আর লজ্জা পেতে হবেনা। তোমাকে আমার কিন্তু বেশ ভাল লেগেছে। মাশাল্লাহ অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে তুমি। আমার পাগল ভাইটা যদি তোমাকে বিয়ে করে আমি খুশিই হব।
প্রিয়ন্তী কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না! তাই দ্রুত বিদায় নিয়ে হসপিটাল থেকে বের হয়ে গেল।

বাসায় ঢুকেই ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া শেষ করে নিল প্রিয়ন্তী। বেশ ক্লান্ত লাগছে তাই বিছানায় শুয়ে পড়ল। মিউজিক সিস্টেমটা অন করতেই গান ভেসে আসল:
আমারো পরাণো যাহা চায়,
তুমি তাই!তুমি তাই গো।
আমারো পরাণো যাহা চায়।
তোমা ছাড়া মোর কেহ নাই, কিছু নাই গো….

হঠাৎই প্রিয়ন্তীর ফোন বেজে উঠলো। স্ক্রিনে নীলের নাম্বার ভেসে উঠতে দেখেই প্রিয়ন্তীর হার্টবিট বেড়ে গেল। ফোন ধরতেই নীল সালাম দিল। প্রিয়ন্তী সালামের জবাব নিতেই নীল জিজ্ঞেস করল “কেমন আছে সে!
আজ হসপিটালে এসেছিলেন বলল আপু।”
প্রিয়ন্তী ছোট্ট করে জবাব দিল, ‘জ্বী গিয়েছিলাম।’ (চলবে)

পরের পর্ব- হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ৭

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *