এলিয়েন রহস্য পর্ব ১৪

এলিয়েন রহস্য পর্ব ১৪ – এলিয়েন মানবের গল্প | Alien Story

এলিয়েন রহস্য পর্ব ১৪ – এলিয়েন মানবের গল্প: আমি যখনি কোন প্ল্যান করি তখনি এই প্রযুক্তি টিম আমার দফা রফা করে ছাড়ে? তাদের কে বোঝাবে যে আমিও এই পৃথিবীর মানুষের ভালোর জন্য লড়াই করছি। আমিও চাই ভিলেন এলিয়েনের হাত থেকে পৃথিবীর মানুষ মুক্তি পাক। জানি না কি হবে, এই টিম বেশ শক্তিশালী এবং কড়া নজরদারী রাখছে আমার উপর। দেখি কি হয় এরপর?

বিদ্ধস্ত শ্রাবণ ও ক্লান্ত স্নেহা

শ্রাবণের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে অলিভিয়া সুমিষ্ট কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

ডু ইউ নিড এনি হেল্প?

শ্রাবণ কোন উত্তর দিতে পারে না। অলিভিয়ার হাতে নিজের রক্তাক্ত হাত রেখেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

প্রায় দশ ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পরে শ্রাবণের বাসায় থাকা ডাক্তার মেয়েটির ঘুম ভাংগে। ঘুম থেকে উঠে দেখতে পায় শ্রাবণ তার বাসার কোথাও নেই। বাইরে থেকে দরজায় তালা লাগিয়ে চলে গিয়েছে কোথাও। স্নেহা অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় পরে ঘুমাচ্ছে এখনো৷ এটাই হয়ত উপযুক্ত সুযোগ সাদিকা খাতুনের হাতে।

এমার্জেন্সি নম্বর এ কল করে সবকিছু বলে দিলেই মিলিটারি সদস্যরা তাকে উদ্ধার করতে চলে আসবে। ফোনটা কোথায় রাখা আছে কে জানে! তন্ন তন্ন করে খোঁজার পর গেস্ট রুমের ড্রয়ারে নিজের ফোন খুঁজে পায় সে। ইতিমধ্যেই জেগে গিয়েছে স্নেহাও। ঘুম ভাংগার পর ই প্রচন্ড পানির পিপাসা লাগে স্নেহার কাতর শ্রাবণকে ডেকে পানি চায় সে।

“ট্রিপল জিরো”এমার্জেন্সি নম্বর ততক্ষণে ডায়াল করে ফেলেছিল সাদিকা। কল করতে যাবে এমন সময়ে স্নেহার কাতর কন্ঠে পানি চাওয়ার বিষয়টি সে উপেক্ষা করতে পারে না একদমই। ফোনটা নিজের এপ্রোণের পকেটে রেখে স্নেহার কাছে পানির গ্লাস নিয়ে ছুটে যান তিনি।
শত হলেও সাদিকা একজন ভালো ডাক্তার। রোগীর সেবা করাটা শুধু তার দায়িত্ব না কর্তব্য এবং অভ্যেসও।

বিছানা থেকে একটু উঠিয়ে নিজের কোলে আধশোয়া করে স্নেহাকে শুইয়ে দেয় সাদিকা। স্নেহার শরীর এবং মাথা থেকে প্রচন্ড দুর্গন্ধ আসছে। তাইসন অনেক দিন পর্যন্ত স্নেহার শরীরে থাকলেও স্নেহার শরীরের উপযুক্ত পরিচর্যা করে নি একদমই৷

স্নেহার যত্ন

নিজের কোলে আধশোয়া করে শুইয়ে নিয়ে পানির গ্লাস মুখে ধরতেই স্নেহা পরম তৃপ্তি নিয়ে ঢক ঢক করে সব পানিটুকু গিলে ফেলে। সাদিকা খুব ভালো ভাবেই জানতো মিলটারিরা স্নেহাকে দেখা মাত্রই মেরে ফেলবে। সুতরাং সে এমার্জেন্সি নম্বর এ কল দিয়ে সাহায্য চাইবে কিনা সেটাও একটা বড় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তার কাছে।

একজন আদর্শ ডাক্তার এর কাছে নিজের জীবনের চেয়েও একজন মুমূর্ষু রোগীর জীবন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয় সাদিকা, স্নেহাকে সে সুস্থ করে তুলবে। বাসায় খাওয়ার কিছুই ছিল না। প্রচন্ড ক্ষুধা পায় সাদিকার। স্নেহা ও অনেকটা সময় ধরে না খাওয়া অবস্থায় রয়েছে। শরীরে ভিটামিনের স্যালাইন দিয়ে রাখায় তেমন একটা সমস্যা হয় নি।

কিন্তু সাদিকার তো খেতে হবে কিছু। কিচেনে চলে যায় সে। রান্না করার জন্য উপযুক্ত উপকরণ রয়েছে। কিন্তু সমস্যা এক জায়গায় ছিলো। সাদিকা তার লেখাপড়ার দিকে এতটাই গুরুত্ব দিয়েছিল যে নিজে ঠিকভাবে রান্নাটাও করতে পারে না। তবুও ইউটিউব ঘেটে কোন রকমে পিঁয়াজ রসুন কেটে রান্না বসিয়ে দেয় চুলায়।

একদম কম আঁচ এ রান্না বসিয়ে দেয়ার পরে সে স্নেহার কাছে আসে। স্নেহা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। কোন প্রকারের রোগ না থাকলেও তার গায়ের চামড়া গুলো ফেটে গিয়েছে। গায়ে প্রচন্ড ময়লা, ছোট বয়কাট কিরা চুল গুলোতে জট ধরেছে এবং সে শারিরীকভাবে ও প্রচন্ড দুর্বল। সাদিকা ঠিক করে স্নেহাকে সে নিজ হাতে গোসল করিয়ে দিবে।

স্নেহা বার বার সাদিকার কাছে শ্রাবণের ব্যপারে জিজ্ঞেস করেও কোন প্রকারের সদুত্তর পায় না। সাদিকার কাঁধে ভর দিয়ে সে কোন রকমে বাথরুমে গিয়ে ঢুকে। দুঃখজনক একটি বিষয় হলো নিজের দেহের ভর বহন করার মত ক্ষমতা স্নেহার পায়ে ছিলো না। সাদিকা স্নেহার পুরো গায়ে সাবান মাখিয়ে দেয়। গায়ের ফেটে যাওয়া চামড়ায় সাবান পানি লাগতেই খুব বিশ্রিভাবে জ্বলে উঠে স্নেহার গায়ে। চোখ বন্ধ করে সে অসহ্য যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকে। সাদিকা বেশ অনেকক্ষণ ধরে যত্ন করে শ্যাম্পু লাগিয়ে চিড়ুনি দিয়ে আঁচড়ে স্নেহার চুল থেকে জট ছাড়িয়ে দেয়।

নাক মুখ এবিং পুরো শরীর সাবান দিয়ে খুব ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করার সাথে সাথে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় অতিরিক্ত পরিমানে বেড়ে যাওয়া লোম গুলো ও পরিষ্কার করে দেয় অতি সাবধানে। পুরো শরীর একদম ফ্রেশ করে টাওয়েল জড়িয়ে নিয়ে এসে স্নেহাকে বিছানায় শুইয়ে স্যালাইন পুশ করে দেয় স্নেহার শরীরে। সংবাদ পত্র ও মিডিয়ার মাধ্যমে সাদিকা খুব ভালো ভাবেই জানে স্নেহার পরিবারের সবাইকেই হত্যা করে ফেলা হয়েছে। কিন্তু সব কিছু জানার পরেও অত্যন্ত বুদ্ধীমত্তার সাথে একদম ই নিশ্চুপ থাকে সে।

শ্রাবণ ও অলিভিয়া

বেগুনি রঙের চোখের মনি নিয়ে বড় বড় করে শ্রাবণের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অলিভিয়া। শ্রাবণের রক্তমাখা হাত সে যে হাত দিয়ে ধরেছিল সেখান থেকে চামড়া উঠে গিয়েছে একদম। এছাড়াও শ্রাবণকে তুলে আনতে গিয়ে যেখানে যেখানে রক্ত লেগেছে সেখানকার চামড়াও পুড়ে গিয়েছে। অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছিল অলিভিয়ার। কারো রক্ত গায়ে লাগলে যে এমন হতে পারে সেটা সম্পর্কে আগ থেকে কোন ধারণাই ছিলো না তার। এজন্যই অবাক হয়ে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে থাকা।

আরো একটা অবাক করা বিষয় হচ্ছে শ্রাবণের ক্ষতস্থান গুলো আস্তে আস্তে নিজ থেকেই সেরে যাচ্ছে। শ্রাবণের শরীরের ভেতরকার মাংস খুবলে অনেক জায়গা থেকে উঠে গিয়েছিল। মানুষের গায়ের ভেতরকার রক্ত মাংসের রং যে সবুজ ও হয় তা একদম ই জানা ছিল না অলিভিয়ার। ব্যাপারগুলো একদম ই তার কাছে নতুন লাগছে।

নাকে বেশ দৃঢ় দুর্গন্ধ এসে ঢুকে যাচ্ছে। নাক চোখ কুঁচকে আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায় শ্রাবণ। নোংরা একটি নর্দমার গা ঘেঁসে অবস্থিত বিশাল ডাস্টবিনের পেছনের অংশে রাখা বড় মোটা একটা পাইপের মত সিমেন্ট এর রিং এর ভেতরে শুয়ে আছে সে।পুরো শরীর ব্যথায় টনটন করছে তার। ডান হাতে ভর দিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করে সে।

পরক্ষনেই বুঝতে পারে নরম কোন কিছুর উপরে তার হাতের তালু অবস্থান করছে। ঘার ঘুরিয়ে দেখা মাত্রই টোটালি একটা শক খায় শ্রাবণ, দ্রুত গতিতে নিজ হাত সরিয়ে নেয়। তার পাশেই শুয়ে আছে পুতুলের মত দেখতে অসম্ভব সুন্দরী একটি মেয়ে। বুকের উপর থেকে হাত সরাতেই হাতের তালুর নিচে ঢাকা পরা নাম ফলকের উপর চোখ যায় শ্রাবণের, “অলিভিয়া”।

অদ্ভুত সুন্দর মেয়েটির ঠোঁট গুলো খুব ছোট হলেও দেখে মনে হচ্ছে সমুদ্রের ভিতরকার কোন উঁচু ঢেউ পরষ্পর বিপরীত দিক থেকে এসে ধাক্কা খেয়ে থেমে আছে। এরকম সুন্দরী পরিপাটি একটি মেয়ে ডাস্টবিনের পেছনে শ্রাবণের পাশে কেন ঘুমিয়ে আছে সেটা ভাবতে গিয়ে বেশ দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়তে হয় শ্রাবণ কে!

শ্রাবণ ও তার শক্তি

আস্তে আস্তে মনে পরে গত রাতের কথা। জ্ঞান হারানোর ঠিক আগ মুহুর্তে শ্রাবণ এই মেয়েটির হাতের উপরই হাত রেখে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। শ্রাবণের রক্তমাখা হাত এই মেয়েটির হাতে লেগেছে! তার মানে?

ঝটপট করে শ্রাবণ ঘুমিয়ে থাকা মেয়েটির ডান হাতের তালু চেক করে। সাদা ব্যান্ডেজ করে রাখা হয়েছে সেখানে। ইশ! তার জন্য এত সুন্দর মেয়েটার হাত ঝলসে গেলো! শ্রাবণের আফসোস হয়।

তার এখন মানুষের দেহ থেকে শক্তি শোষণ করা খুব জরুরি হয়ে পরেছে। পাশেই শুয়ে আছে অলিভিয়া। কিন্তু অলিভিয়া তার জীবন বাঁচিয়েছে। সুতরাং অলিভিয়াকে কোন প্রকারের ক্ষতি করার ইচ্ছে নেই শ্রাবণের।

ডাস্টবিনের পাশে খাবার খুঁজতে খুঁজতে সেখানে হাজির হয় দুটি কুকুর। শ্রাবণের বুকের উপরে থাকা সবুজ চিহ্ন থেকে কেঁচোর মত একে বেঁকে বের হয়ে আসে দুটি শোষক পাইপ। লম্বা হতে হতে শোষক দুটি কুকুরের শরীর পর্যন্ত চলে যায়।

মানুষের মত কুকুর বেশি শক্তি যোগান দিতে সক্ষম না হলেও, অসময়ে তিলকেও ও তালের মত বড় লাগে। কুকুরদুটি বাতাসহীন বেলুনের মত চুপসে পরে আছে মাটিতে। আগের থেকে কিছুটা ভালো বোধ করছে শ্রাবণের শরীর।

কিছুক্ষন পরে ঘুম ভাংগে অলিভিয়ার। উঠে আড়মোড়া ভাংগে সে। চুল এবং চোখের মনির রং এ অদ্ভুত মিল রয়েছে মেয়েটির। দুটোই হালকা বেগুনী।

শ্রাবণকে দেখেই অলিভিয়া চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করে, আর ইউ ওকে নাউ?

শ্রাবণ উত্তর দেয়, “ইয়েস আই এম।”

  • ইউ আর সাচ এ স্ট্রেঞ্জ হিউম্যান।

শ্রাবণ কোন কথা না বলে চুপচাপ বসে থাকে।

অলিভিয়া বেশ কিছুক্ষণ পরে জিজ্ঞেস করে,

আপনাকে কি বাসায় পৌঁছে দিব?

ডার্ক ডেভিলের সাথে লড়াই প্রস্তুতি

শ্রাবণের কাছে অলিভিয়ার মুখে বাংলা শব্দের উচ্চারণ অনেকটা অদ্ভুত লাগে।

শ্রাবণ জবাব দেয়-

শ্রাবণঃ “না ঠিক আছে। পৌঁছে দিতে হবে না। আপনি কোথায় থাকেন?”

অলিভিয়াঃ দিস রিং ইজ মাই হোম।

এই উত্তরটি শুনে শ্রাবণ বেশ বিরক্ত হয়, এরকম একটা সিমেন্ট এর রিং কি কারো বাসা হতে পারে! তাকে মিথ্যে বলার কি আছে? বলার ইচ্ছে না থাকলে না বললেই চলে। শ্রাবণ রিং থেকে বের হয় বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে। কিন্তু রিং এর বাইরে পা রাখতেই সূর্যের আলো লেগে শ্রাবণের শরীর জ্বলে উঠে। নিচের দিকে তাকিয়ে শ্রাবণ খেয়াল করে তার পরিধেয় বস্ত্রের মাত্র দু একটুকরা ই গায়ের সাথে কোনরকম লেগে আছে।
হাত দিয়ে আড়াল করে দ্রুত দৌড়ে রিং এ ফিরে আসে সে।

অলিভিয়া এ দৃশ্য দেখে হাসতে হাসতে ফ্লোরে গড়িয়ে পরে। অলিভিয়ার মিহি কন্ঠের খুব মিষ্টি হাসিটাও শ্রাবণের জন্য এই সিচুয়েশনে চরম অপমানজনক।

একজন সাধারণ মানুষ হয়েও হ্যাভিওয়েট ব্যাটলফিল্ড এ উপস্থিত থাকার মত ভুল বর্ণ করবে না। সে শ্রাবণকে তাইসনের হাত থেকে এন্টি টর্চ এর মাধ্যমে বাঁচিয়ে দিলেও এন্টিটর্চটি মূলতো তার একটি ড্রোণের সাথে লাগানো ছিল। তবে বর্ণের জন্য সবথেকে বড় দুঃসংবাদটি হলো ড্রোনের উপর হামলা চালিহে এন্টিটর্চটি নিজের করে নিয়েছে তাইসন। বর্ণকে খুন না করতে পারলেও একটুও আফসোস নেই তাইসনের।

ন্যাশের শরীরে ভড় করে সে যে কত বেশি শক্তিশালী হয়ে গিয়েছে তা একদম কল্পনার ও বাইরে। তার উপর আবার এন্টি টর্চ ও এখন তাইসনের হাতে। অতি অত্যাধুনিক টেকনলোজির সাথে বেশ ভালো ভাবেই পরিচিত হয় তাইসন। এণ্টিটর্চ হাতে পাওয়া মাত্রই তাইসন ন্যাশের মেধাশক্তি কাজে লাগিয়ে ছোট খাট একটা গবেষনার কাজ শুরু করে দেয়। ছোট এন্টি টর্চের ফর্মূলা কাজে লাগিয়ে বড় একটি এন্টি টর্চ বানানো দরকার তার।

কারণ বড় কোন এন্টিটর্চ সে একবার বানিয়ে ফেলতে পারলে, পৃথিবীর কোন শক্তি ই তাকে আর থামাতে পারবে না। এমন কি সে তার ধ্বংসযজ্ঞ দিনের আলোতেও সমান ভাবে চালাতে পারবে। অন্ধকারের একমাত্র পরাক্রমশালী ডার্ক ডেভিলের শক্তি ডার্কনেস। অন্ধকারে তার সাথে পেরে ওঠার মত ব্যক্তি আর দ্বিতীয়টি নেই৷ বড় করে একটি এন্টি টর্চ তৈরি করে ফেললেই সবাইকে নিজের দাসত্বের শিকলে আটকে ফেলতে সক্ষম হবে দ্যা ডার্ক ডেভিল তাইসন। চলবে…

পরের পর্ব- এলিয়েন রহস্য পর্ব ১৫ – এলিয়েন মানবের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *