এলিয়েন রহস্য পর্ব ১৬

এলিয়েন রহস্য পর্ব ১৬ – এলিয়েন মানবের গল্প | Alien Story

এলিয়েন রহস্য পর্ব ১৬ – এলিয়েন মানবের গল্প: স্নেহা সুস্থ্য হয়ে উঠেছে, আমিও সুস্থ্য আছি। আফাদত বিপদ আপদ মুক্ত আছি এখন তাইসনকে খুঁজে বের করতে হবে আর কোন কিছু না ভেবে তাকে শেষ করতে হবে। এক মহাযুদ্ধ হতে চলেছে তার সাথে আমার। দেখি কে জয়ী হয়?

অনুসন্ধান ও প্ল্যান

প্রচন্ড বৃষ্টির সন্ধ্যায় স্নেহা, সাদিকা এবং শ্রাবণ তিনজনই গোল হয়ে বসে চীনা বাদাম খুটে খুটে খাচ্ছিলো। স্নেহা এবং সাদিকা গল্প জুড়ে দিয়েছে। শ্রাবণ তাদের সাথে হু হা করে তাল মিলাচ্ছে। খুব ছোট খাট বিষয় নিয়েও হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে স্নেহা এবং সাদিকা। ডাঃ সাদিকার চিকন ঠোঁটের হাসি এবং মিষ্টি শব্দ ঝুম বৃষ্টির শব্দের সাথে মিলে নতুন এক মাদকতা সৃষ্টি করেছে। শ্রাবণের মন ও ছিল ফুরফুরে।

হাশি খুশি আড্ডার মধ্যেই সাদিকা জোর গলায় ঘোষণা দেয় সে শ্রাবণ ও স্নেহাকে তার একটা স্পেশাল রেসিপি রান্না করে খাওয়াবে। কিন্তু এই কথা শোনা মাত্রই শ্রাবণের হাসি উবে যায়। কারণ সাদিকার রান্না করা খাবার এতটাই জঘন্য, মুখে একবার একটু দিলে খাওয়াদাওয়ার প্রতি মানুষের ডিপ্রেশন সৃষ্টি হয়ে যাবে। কিন্তু শ্রাবণ কিভাবে জানে ডাঃ সাদিকার রান্না কেমন!

তাইসনের সাথে যুদ্ধ শেষে বাসায় ফিরে, বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হওয়ার সময়, পেটে ক্ষুধা থাকায় সবার অগোচরে চুপি চুপি গিয়ে সাদিকার রান্না করে রাখা খাবার চামচ দিয়ে মুখে দিয়েছিল শ্রাবণ। রান্নার স্বাদ এতটাই বাজে ছিলো যে শ্রাবণেরইচ্ছে হচ্ছিল তার চিরশত্রু তাইসন কে পুরো খাবার টা খাওয়াতে পারলে একদম উপযুক্ত প্রতিশোধ নেয়া হয়ে যেত৷

সাদিকার ধাক্কায় শ্রাবণ কল্পনার ভাবনার থেকে বাইরে আসে। শ্রাবণকে সাদিকা জিজ্ঞেস করছে তোমার সবথেকে পছন্দের খাবার আইটেম কি? আমাকে বলো। আমি খুব যত্ন করে রান্না করব। সাদিকার এ শুনেই শ্রাবণের পেটে ব্যথা শুরু হয়ে যায়। সে পেটে হাত দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে প্রস্থান করে। স্নেহা এবং সাদিকা একে অন্যের দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে আবার নিজেদের গল্পে মেতে উঠে।

জলাবদ্ধতা ঢাকার একটা বিকট সমস্যা৷ মুষলধারে বৃষ্টিপাতে চারদিকে বেশ ভালোই পানি জমে গিয়েছে। তাইসন সে দিন রাতে নিজের ভয়ানক তান্ডব চালাতে আর বের হয় না। অবশ্য সে উপায়ও একদমই নেই। বের হতে গেলেই তাইসনের মাটির নিচে বানানো আস্তানায় পানি ঢুকে তার গবেষণার সমস্ত উপাদান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।

ডার্কসিটির রাজ্য

চারদিকে খুব জোড়ে বজ্রপাত হচ্ছে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সিমেন্টের মোটা পাইপের উপরে পা ঝুলিয়ে বসে আছে অলিভিয়া৷ খোলা আকাশের নিচে ঝুম বৃষ্টিতে ভেজার ভাগ্য সবার হয় না। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সে। বৃষ্টির ফোঁটা এসে গালে নাকে ঠোঁটে মৃদু স্পর্শ দিয়ে ভেজা চুল বেয়ে পুরো শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে।

বৃষ্টির পানির অসাধারণ ক্ষমতা, পারমিশন ছাড়াই দেহের অভ্যন্তরীন জায়গাগুলোতে অবাধে ঢুকে পরে। শুধু বৃষ্টির পানিই নয়। সকল তরল ও বায়বীয় বস্তুরই এ ক্ষমতা রয়েছে। সৃষ্টিকর্তা ছেলেদের তরলে রূপান্তরিত হওয়ার ক্ষমতা না দিয়ে বেশ ভালই করেছেন। তরল হতে পারলে অনুমতি না নিয়েই তারা মেয়েদের শরীরে ঢুকে পরত। কি বিশ্রী একটা অবস্থা!

হাঁটু সমান নোংরা পানি জমে গিয়েছে চারদিকে। রাতটা ভীষন দীর্ঘ মনে হচ্ছে অলিভিয়ার কাছে। পুরো রাতটা তাকে হয়ত জেগেই কাটাতে হবে।

ডার্কসিটি তে আজ বৃষ্টির রাজত্ব। বর্ণ চাদর গায়ে জড়িয়ে টিম টিমে ডিম লাইটের আলোয় বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে। লিন্ডার সমস্যার সমাধানের জন্য জিওম্যাট্রি প্রাকটিস করেছিলো বর্ণ। তার সে ক্ষমতা পুরোপুরিভাবে প্রয়োগ করার সময় এসেছে হয়ত। তবে বর্ণর মাথা কিছুক্ষনের জন্য চিন্তামুক্ত করে দিয়েছে অদ্ভুত বর্ষা। বারান্দা থেকে সামনের দিকে তাকালে দেখা যায় কেবলই শূন্যতা। বর্ণ ও শূন্য মাথায় দাঁড়িয়ে সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে চলেছে।

শ্রাবণ টেবিল ল্যাম্প এর আলোয় ডায়েরির বুকে লিখে চলেছে একান্তই নিজের কিছু কথা। শ্রাবণ সবার কথাই মনোযোগ দিয়ে শোনে। কিন্তু তার কথাগুলো শোনার মত কেউ নেই। ডায়েরির দাগ টানা লাইনগুলোর সাথেই নিজের অব্যক্ত কথাগুলো বলে ফেলে সে। তাইসন ন্যাশের পকেটে থাকা একটা লকেটের দিকে অনেক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছে। লকেটের মাঝে ন্যাশ এবং লিন্ডার ছবি।

সবারই পরিবার থাকে। কিন্তু তাইসনের কোন পরিবার নেই৷ পরিবার তো দূরে থাক, নিজের বাবারই ঠিক নেই তাইসনের। অদ্ভুত এক কষ্ট ভর করে তার মনে। বর্ণের বাবার মনেও দাগ কাটে এই বৃষ্টি। পাশেই ঘুমিয়ে আছে তার দ্বিতীয় স্ত্রী। অথচ বর্ণের মা যখন ছিল, এরকম বৃষ্টি হলেই বারান্দায় গিয়ে তার কাঁধে মাথা রেখে আধশোয়া হয়ে থাকত। বৃষ্টির ভাষা নাকি বুঝত সে। বারবার বলত, একদিন মেঘের দেশে চলে যাবে।

প্রযুক্তি টিমের তৎপরতা

জহির আংকেল তার স্ত্রীর বিছানায় থাকা বড় পুতুলটার দিকে তাকিয়ে থাকেন একনাগাড়ে। মনে মনে ভাবেন বুড়ি হয়ে গেলো মেয়েটা পুতুল খেলার অভ্যেস এখনো যায় নি।

জহির আংকেল হয়ত বুঝেনই না,প্রতি রাতেই পুতুলটিকে সন্তানস্নেহে জড়িয়ে ধরে ঘুমান সুমা রহমান। হয়ত জহির আংকেল ব্যপারটা বুঝেন। কিন্তু তিনি যে বুঝেন সেটা তার মনকে বুঝতে দেন না। চারদিকে অদ্ভুত বিষন্নতা ভর করে সবার মাঝে। ঝুম বৃষ্টি আসোলেই সব পরিবেশ হঠাৎ বদলে দেয়। মানুষ কোন কারণ ছাড়াই মন খারাপ করে থাকে।
কিন্তু সবার থেকে আলাদা হয়ে আছে তুরান। রুম বন্ধ করে সে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে সে।ডান হাতে একটা ক্রিস্টাল পেপার ওয়েট চোখের সামনে নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে অনেক কিছু ভেবে চলছে তুরান।

একটু আগে ঘুম ভেংগেছে তার। খুব অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখেছে সে।

স্বপ্নে দেখেছিল, অন্ধকার একটা ঘরে পায়ের উপর পা তুলে বসে, ক্রিস্টাল পেপার ওয়েট চোখের সামনে নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে পর্যবেক্ষণ করছে সে। আর ঠিক যখন ঘড়িতে রাত তিনটা তখন জহির আংকেল হঠাৎ চিৎকার করে উঠে, “বর্ণকে কারা যেন গুলি করেছে” সবাই ছুটে গিয়ে দেখতে পায়, রক্তাক্ত অবস্থায় বারান্দার সামনে পরে ছিল বর্ণের নিথর দেহ।

তুরাণের ষষ্ঠইন্দ্রিয় বলছে রাত তিনটায় তার স্বপ্ন হয়ত সত্য হতে যাচ্ছে।

লিন্ডার শরীর প্রচণ্ড পরিমানে খারাপ হয়ে পরায় বায়োসিটি থেকে বার বার ন্যাশের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে সে। কিন্তু কোন প্রকার উত্তর না পেয়ে একেবারেই হতাশ হয়ে পরে লিন্ডা।

বর্ণের সাথে যোগাযোগ করার ও কোন প্রকারের রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না সে। পাবেই বা কিভাবে বর্ণের বাসার সব যন্ত্রপাতিই তাইসন নষ্ট করে ফেলেছে। লিন্ডার মাঝে উদ্বিগ্নতা ভর করে। বেশি দিন বাকি নেই লিন্ডার সন্তান এ পৃথিবীর মুখ দেখবে। বেশ অনেক দিন হয়ে গেল ন্যাশ নেই। লিন্ডার মন খারাপ করে ছোট্ট একটা বাসায় আবদ্ধ হয়ে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

সত্যিই বায়োসিটি তে লিন্ডার একেবারে জেলখানায় আবদ্ধ হয়ে থাকার মতই থাকতে হয়। বাইরে বের হওয়াটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ন্যাশ লিন্ডাকে নিয়ে নিজ কামরার বাইরে বের হত না। কিন্তু ন্যাশ সাথে থাকায় লিন্ডা কখনো আবদ্ধ হয়ে থাকার জন্য মন খারাপ করত না। ন্যাশ যখন নেই, লিন্ডা তখন এক সমুদ্র একাকিত্বে ভুগতে থাকে। নিজেকে বার বার জিজ্ঞেস করতে থাকে, জীবনের মানেই কি এটা!

এত সুন্দর দুনিয়ায় কেউ চিরস্থায়ী নয়। যতটুকু সময় মানুষ জীবদ্দশায় পায়, তার প্রতিটা সেকেন্ড প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করে যাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যুদ্ধের সূচনা

এক বুক অস্থিরতা নিয়ে লিন্ডার সময়গুলো পার হতে থাকে ধীরে ধীরে। মাঝে মাঝে পেটে প্রচিন্ড ব্যথা হয় তার। কিন্তু লিন্ডার এ ব্যথাটা বোঝানোর মত কোন মানুষ নেই তার কাছে।

ইদানীং মুখের রুচি বেড়ে গিয়েছে। ফুড ক্যাপসুল কেমন একঘেয়েমি লাগে। সব মিলিয়ে একটাবার পৃথিবীতে ঘুরে আসা লিন্ডার জন্য খুব জরুরী হয়ে উঠেছে। কি করবে ভেবে পায় না সে। ন্যাশের মত তার এসব বিষয়ে এত অগাধ জ্ঞান নেই যে চাইলেই একটা ওয়ার্মহোল তৈরি করে পৃথিবীতে চলে আসতে পারবে। তাও একেবারে হাত পা গুটিয়ে তো বসে থাকা যায় না! ন্যাশের ল্যাবরেটরিতে গিয়ে আস্তে আস্তে অনুসন্ধান শুরু করে সে, হতেও পারে পৃথিবীতে ল্যান্ড করার কোন একটা উপায় পেয়ে যাবে হয়ত।

রাত তিনটা বাজতে আর মাত্র কিছুক্ষণ বাকি। তুরাণ প্রচুর ঘামছে। চাইলেই বারান্দা থেকে ডেকে এনে বর্ণকে নিজের রুমে বসিয়ে রাখতে পারে তুরাণ। কিন্তু সে দেখতে চায় সামনে কি হয়! তার স্বপ্ন আসলেই সত্যি হয়ে যায় কিনা।

অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছে না তার। ঘড়ির কাটা ঘুরতে ঘুরতে সময় আস্তে আস্তে নিজ গতিতে বয়ে চলে। যখন রাত ঠিক তিনটা, তখনই একদম স্বপ্নের মতই তুরাণের কানে ভেসে আসে জহির আংকেলের ভয়ার্ত চিৎকার।

” বর্ণকে কারা যেন গুলি করেছে।”

একবার হলে শোনার ভুল ধরে নেয়া যেত। কিন্তু না। জহির আংকেল বর্ণের রক্তাক্ত অবস্থা দেখে প্রলাপ বকে চলেছে।

রুমের দরজা খুলে খুব দ্রুত ছুটে বের হয় তুরাণ। বের হতেই দেখতে পায় বাইরের পরিবেশ বেশ শান্ত শিষ্ট। কোন ডাকাডাকি নেই।

জহির আংকেল গালে হাত দিয়ে সোফায় বসে আছেন। পাশেই বসে আছেন সুমা রহমান। তুরাণ জহির আংকেলের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে আরে আপনি এখনো এখানে বসে আছেন? বর্ণকে গুলি করা হয়েছে ও বারান্দায় আহত অবস্থায় পরে আছে। ওকে বাঁচাতে হবে তো।

জহির আংকেল চোখ লাল করে তাকান তুরাণের দিকে। জহির আংকেলের এমন অগ্নি দৃষ্টি আগে কখনো দেখে নি তুরাণ। লাল লাল চোখ দেখে অনেকখানি ভড়কে যায় সে।

চলবে…

পরের পর্ব- এলিয়েন রহস্য শেষ পর্ব – এলিয়েন মানবের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *