ভয়ানক ভৌতিক গল্প ১২

ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ১২

ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ১২: যে ভাবেই হোক আমার ভাইটাকে বাঁচাতে হবে। ওর শরীরে ভর করা প্রেত আত্মাকে বিনাশ করতেই হবে। এজন্য কি করব জানিনা তবে যেকোন কিছু করতে প্রস্তুত আছি। সালার ভূতের একদিন তো আমার!

ভয়ানক পিশাচ

হুজুরের এমন অবস্থা দেখে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তাই দৌড়ে গিয়ে আমি রুমের ভিতরে ঢুকে পড়লাম এবং দেখলাম যে ছোট একটা বাচ্চা ৪ থেকে ৫ বছরের হবে।

এরকম একটা বাচ্চাকে রাসেল ছিড়ে খেয়ে পেলেছে। বাচ্চাটার হাত এবং পা গুলো শরীর থেকে আলাদা করে রুমের মধ্যে ছিটিয়ে রেখেছে।

বাচ্চাটার মাথার উপর দিয়ে খেতে খেতে গর্ত করে ফেলেছে এবং বাকিটুকু জায়গায় জায়গায় ছিঁড়ে ছিটকে রয়েছে। পুরো রুমের দেওয়াল রক্ত দিয়ে লাল করে ফেলেছে এবং রাসেলের দিকে তাকিয়ে দেখি রাসেলের পুরো শরীর রক্ত দিয়ে ভেজা।

মুখের মধ্যে এখনো সেই বাচ্চাটার নাড়িভুঁড়ি ঝুলে আছে আমি এগুলো দেখে নিজেই বমি করে দেওয়ার মোডে চলে এসেছি।

তারপর দৌড়ে গিয়ে রাসেলকে বললাম,

শাফিনঃ এসব কি করেছিস ভাই?

রাসেলঃ আমি কিছু করিনি, ভাইয়া। আমার তো কাল রাতের পর কিছুই মনে নেই। আরে ভাইয়া, আমার রুমে এত রক্ত কেন? এগুলো কার হাত পা?

শাফিনঃ কিছু না ভাই আমার। তোর মুখের মধ্যে রক্ত আছে। আয়নায় গিয়ে দেখ। (রাসেল নিজের মুখে নিজে রক্ত দেখে ঘাবড়ে গেছে। আমি গিয়ে সান্তনা দিলাম।)

রাসেলঃ তোর কিছু হবে না, ভাই। ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। হুজুর সব ঠিক করে দেবে।

শাফিনঃ কিন্তু আমার কি হয়েছে ভাইয়া?

রাসেলঃ তোর কিছুই হয়নি, বললাম তো। তুই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।

কিন্তু রাসেল বিছানা থেকে যখনই উঠলো, তখনই ধপাস করে ফ্লোর এর মধ্যে পড়ে গেছে।

আমি দৌড়ে গিয়ে কোলে তুলে বিছানায় রাখলাম আবার।

হুজুর এসে রাসেলের মুখ ফ্রেশ করার পর বলল, রুম থেকে কাটা হাত পা গুলো পরিষ্কার করার জন্য।

আমি একটা থলিতে ঐ সমস্ত কাটা হাত পাও এবং মুন্ডুটা ঢুকলাম। তারপর বাড়ির পিছনে একটা গর্ত করে সে গর্তের মধ্যে পুতে দিলাম। এদিকে হুজুর কি যেন তাবিজ দিতে লাগল।

রাসেলের নিঃশ্বাস চলছে। কিন্তু কোনো কথা বলতেছে না। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে, রাসেলের কিছু হবে না তো?

ভয়ানক ভৌতিক পরিস্থিতি

হুজুর রুমের মধ্যে অনেকক্ষণ রাসেল এর চিকিৎসা করে। তারপর বাহির হয়ে আসলো।

শাফিনঃ হুজুর, কি হয়েছে রাসেলের? রাসেল ঠিক হবে তো?

হুজুরঃ আত্মাটা রাসেলের শরীরে প্রবেশ করেছে। তার জন্য কিছু হচ্ছেনা।

কিন্তু রাসেলের শরীরে প্রবেশ করে সে বাচ্চাটি কে খুন করেছে। আবার তাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়ে
ফেলেছে। এখন রাসেল যত কিছুই করুক। সেগুলো তো এখন রাসেলের পেটের মধ্যে আছে।

একটা মানুষের মাংস যদি আর একটা মানুষের পেটে যায় তাহলে অবশ্যই ক্ষতি হবে। ওর শরীর এখন ভালো নেই। তাকে ভালো করে দেখে শুনে রাখো। আমি সেই আত্মার তো একটা ব্যবস্থা করবোই।

শাফিনঃ হুজুর, যা করবেন একটু ফাস্ট করুন। আমার ভাই অনেক কষ্ট পাচ্ছে। তাকে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিন, প্লিজ।

হুজুরঃ একটু ধৈর্য ধরো, শাফিন। যদি আজ তোমার সাথে এমন হতো তাহলে তো আরো ভয়ঙ্কর কিছু হতো। এখন তোমার ভাইয়ের হয়েছে
দেখে ভালই হয়েছে। যে আমরা এর একটা সমাধান খুজে বের করতেছি। যদি তোমার সাথে হত তাহলে তো অনেক বড় কিছু হয়ে যেত। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করো যে তোমার সাথে হয়নি এবং রাসেলকে ঠিক করার ব্যবস্থা আমি করতেছি। বাকিটা উপরওয়ালার কাছে।

হুজুরের কথা শুনে মনে হচ্ছে এখন শুধু ধৈর্য ধরা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

রুমে গিয়ে দেখলাম, রাসেল শুয়ে আছে।

চোখ দুটো বন্ধ। আমার ভাইয়ের একটা নিষ্পাপ মুখ, মায়া ভরা মুখের দিকে তাকালে আমার যত কষ্টই থাকতো না কেন, সব গুলো নিমিষেই মুছে যেত।

সে ভাই আজ রাক্ষসের মত একটা বাচ্চাকে খেয়ে ফেলেছে। ভাবতেই কলিজা ফেটে যাচ্ছে।

এমন সময় রনি ফোন দিয়ে বলল,

রনিঃ শাফিন, সর্বনাশ হয়ে গেছে।

শাফিনঃ কেন কি হয়েছে?

রনিঃ আমার খালাতো বোনের বাচ্চাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

(কথাটা শুনে আমার মাথার মধ্যে একটা চক্কর দিল।)

তারপর আবার জিজ্ঞেস করলাম,

শাফিনঃ কখন থেকে পাওয়া যাচ্ছে না?

রনিঃ কাল রাত থেকে। কাল রাতে আমার খালাতো বোন বাথরুমে গিয়েছিল। বাথরুম থেকে এসে দেখে তার বাচ্চা রুমের মধ্যে নেই এবং সে সময় থেকে এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

শাফিনঃ তোর খালাতো বোনের বাচ্চার বয়স কত রে?

রনিঃ পাঁচ বছর …

ব্যথা ভরা মন

এবার আমার আরো ভয় হতে লাগল। তার মানে রাসেল কালকে রাতে রনির খালাতো বোনের বাচ্চাকে খেয়েছে?

শাফিনঃ রনি, তোর সাথে আমার পার্সোনাল কথা আছে। আমার বাসায় চলে আয় এক্ষুনি।

রনিঃ আমি আমার খালাতো বোনের বাচ্চাকে খুঁজতে হবে। তোর সাথে পরে দেখা করলে হয় না?

শাফিনঃ তোর খালাতো বোনের বাচ্চার ব্যাপার নিয়ে কথা বলবো, তবে হ্যাঁ কাউকে কিছু বলিস না। শুধুমাত্র তুই আয় আমার কাছে।

রনিঃ ঠিক আছে, আমি ১০ মিনিটের মধ্যে আসতেছি।

ফোনটা রেখে কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ড্রয়িংরুমে এসে সোফায় বসে চিন্তা করতেছি, এখন কি করবো? রাসেল তো অনেক বড় একটা কাজ করে ফেলেছে।

এরই মধ্যে কিছুক্ষণ পর কলিং বেল বেজে উঠলো। উঠে দরজা খুলতেই রনি বলল,

রনিঃ আমার খালাতো বোনের বাচ্চাকে পেয়েছিস তুই?

শাফিনঃ তোকে কি করে বলব দোস্ত, আমি বুঝতে পারছি না!

রনিঃ কেন কি হয়েছে?

শাফিনঃ আয় আগে ভিতরে আয়।

রনিকে সোফায় বসিয়ে আমি রাসেল এর ব্যাপারে বললাম যে রাসেলের শরীরে সে আত্মা ভর করেছে।

কাল রাতে জানালা দিয়ে পালিয়ে গেছে এবং কিছুক্ষণ পরে এসেছে একটা বাচ্চাকে নিয়ে। আমি এইটা জানতাম না বাচ্চাটা কে। কিন্তু রাসেল সে বাচ্চাটাকে রাতেই খেয়ে ফেলেছিল। আত্মাটা রাতের বেলায় রাসেলের শরীরে ভর করে এবং দিনের বেলায় ছেড়ে দেয়।

রাসেল একটা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। আমি জানি এ ব্যাপারটা যদি জানাজানি হয়। তবে পুলিশ কেস নিয়ে তান্ডব শুরু হবে এবং রাসেলের উপর আঘাত চলে
আসতে পারে। সেজন্য আমি তোকে বাসায় এনে সবগুলো বলেছি। প্লিজ, একটু বোঝার চেষ্টা কর।

নিজের চিন্তা শক্তি কিছুই কাজ করতেছে না। কালকে রাতে রাসেলের সাথে কি হয়েছে, সে নিজেও জানে না। আমি তোকে কি বলব বুঝতে পারছি না।

রনিঃ বাসার মধ্যে যদি সবাই জানে রাহুল (বাচ্চাটি) মারা গেছে। তাহলে অনেক ভেঙ্গে পড়বে সবাই। তার চেয়ে বরং তাকে নিখোঁজ অবস্থায় রাখি। সেটাই ভালো হবে।

শাফিনঃ ওকে।

রনিঃ আমি ব্যাপারটা নিয়ে কাউকে কিছু বলব না।

শাফিনঃ তুইও কাউকে বলিস না, দোস্ত।

রনিঃ তোর ভাই মানে আমার ভাইয়ের মতো।

শাফিনঃ ধন্যবাদ দোস্ত।

বিপদের ঘনঘাটা

যাই হোক, হুজুর কিছু করেনি এখনো?

শাফিনঃ হুজুর সকাল ভোরে কিছু করবে বলে বেরিয়ে পড়েছে। এখনো আসেনি, জানিনা কি করে?

রনিঃ আত্মাটা না যাওয়া পর্যন্ত আমি তোর বাসায় থাকবো।

শাফিনঃ না দোস্ত, রাত হলে রাসেল অনেক ভয়ঙ্কর ভাবে আচরণ করে।

রনিঃ তোর কিছু হয়ে গেলে আবার আরেক ভেজাল।

শাফিনঃ আমি সামলে নেব। তুই বাসা থেকে চলে যা, দোস্ত।

রনিঃ কোন কথা বলিস না, তোর কোন বিপদে আমি ছিলাম না এমনটা হয়েছে কি? এখনো আছি, চিন্তা করিস না।

শাফিনঃ কিন্তু দোস্ত, যদি তোর কিছু হয়?

রনিঃ কোন কিন্তু না, আমার কিছু হবে না।

শাফিনঃ আমাকে নিয়ে এত চিন্তা করতে হবে না। আচ্ছা, এখন বাসায় কি বলবি তুই?

রনিঃ এক মিনিট দাঁড়া ….

(পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে রনি। ওর আম্মুকে ফোন দিল।)

রনিঃ আম্মু ….আমি শাফিনের বাড়িতে ১০-১৫ দিন থাকবো। ইন্টারনেটে একটা চাকরি পেয়েছি। সেটা শাফিনের সাথে বসে বসে করতে হবে। ১০-১৫ দিন বাসায় আসবো না। তোমরা চিন্তা করো না।

(এটা বলেই রনি ফোন কেটে দিল।)

শাফিনঃ এইটা তুই কি করেছিস, দোস্ত। তোর কিছু হয়ে যেতে পারে। তুই বাসায় চলে যা।

রনিঃ তুই একটু বেশি বুঝিস। আমার যদি কিছু হয় তো হয়েছে। তাতে তোর কি? আর কোন কথা বলিস না। তোর বাসায় থাকলে কি আমাকে খাওয়াতে কোন প্রবলেম হবে?

শাফিনঃ আরে ব্যাটা কি বলিস!

রনিঃ যদি খাবার নিয়ে প্রবলেম হয় তাহলে আমি নিজে বাজার করব। তার পরেও আমি এই বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছি না।

শাফিনঃ আচ্ছা, কি বলতো? এমন ভাবে কথা বলছিস কেন? নিজের জীবন বাজি রাখতেছিস কেন?

রনিঃ তুই তো জানিস শাফিন রাসেলকে তুই যতটা ভালোবাসিস ততটা আমিও ভালোবাসি। তাকে এ বিপদে ফেলে আমি কি করে যাই বল? চল, রাসেলকে একটু দেখে আসি

(আমি আর রনি রাসেলের রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি চোখ দুটো বন্ধ করে শুয়ে আছে। মুখের দিকে তাকাতেই ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। আমার এমন একটি মাসুম ভাই। তার উপর এরকম অত্যাচার চলতেছে। আর আমি কিছুই করতে পারছি না। রনি গিয়ে রাসেলের মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিল।)

তারপর বললো,

রনিঃ রাসেল খুব শীঘ্রই ভালো হয়ে যাবে। আল্লাহ ভরসা।

আমি বললাম,

শাফিনঃ আচ্ছা, দুপুর হয়ে গেছে। তুই হাত মুখ ধুয়ে নে। খাবার খেতে চল।

রনিঃ রাসেলকে নিয়ে যাবি না?

শাফিনঃ কিভাবে নিব বল? ওর তো এখনো জ্ঞান ফেরেনি।

রনিঃ ঠিক আছে, জ্ঞান ফিরলে খাইয়ে দিব। এখন চল।

গায়েবি আওয়াজ

আমি আর রনি খাবার টেবিলে বসে খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম। কিছুক্ষণ পর রাসেলের রুম থেকে শব্দ আসতে লাগল। আমি আর রনি ছুটে গেলাম রাসেলের রুমের দিকে। গিয়ে দেখলাম রাসেল চোখ মেলে আছে। অনেক ক্ষুধার্ত বুঝা যাচ্ছে। তারপর আম্মুকে বলে প্লেটে করে এক প্লেট ভাত দিলাম। কোনরকম খেয়ে আবার শুয়ে পড়লো।

বুঝতে পারলাম, শরীর অনেক অসুস্থ। জ্ঞান ফিরেছে দেখে হুজুরকে ফোন করে ডাক দিলাম। কিছুক্ষণ পরেই হুজুর বাসায় চলে আসলো। হুজুর এসে রাসেলের হাতের মধ্যে দুইটা তাবিজ বেঁধে দিচ্ছে।

আমাকে বলল,

রনিঃ শাফিন, তাবিজগুলো হাত থেকে ভুলেও খুলবি না। তাবিজ দুটো রাসেলের হাতে যতক্ষণ থাকবে, সে আত্মা রাসেলের দেহে প্রবেশ করতে পারবে না।

শাফিনঃ ঠিক আছে, হুজুর। আমি ভুলেও তাবিজ খুলছি না।

এরপর হুজুর চলে গেছে। এদিকে বিকেল পার হয়ে সন্ধ্যা নেমেছে। চারদিকে অন্ধকার নেমে আসছে।

আস্তে আস্তে রাসেল কেমন যেন ব্যবহার করতে শুরু করেছে। ওর হাতে তাবিজ দেওয়ার জন্য হয়তো কোন কিছু করতে পারছেনা।

আমিও ওর রুমের বাহির থেকে লক করে দিছি। এরপর ড্রইং রুমে বসে আমি এবং রনি এ ব্যাপারে কথা বলতেছি।

কিভাবে ঠিক করা যায় রাসেলকে?

এমন সময় একটা শব্দ “ঠাসসসসসসসসস।”

আমি চমকে উঠলাম। দৌড়ে গিয়ে রাসেলের দরজা খুলে দেখলাম রুমের মধ্যে রাসেল নেই। তাবিজ দুটো রুমের ফ্লোরে পড়ে আছে। রাসেলের জানালাটা ভাঙ্গা।

দৌড়ে গিয়ে বাহিরে খেয়াল করলাম, রাসেল এক লাফ দিয়ে দেওয়াল টপকে দেওয়ালের বাহির হয়ে চলে গেছে। চলবে…

পরের পর্ব- ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ১৩

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *